ইস্রায়েলের ১৩তম রাজা যারবিয়াম-২-এর রাজত্বের সময়ে ইস্রায়েল দেশের সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা আর একবার বৃদ্ধি পায়, যদিও সঙ্গে বৃদ্ধি পায় গরীবদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও সামাজিক অন্যায়। এই নকল সুঅবস্থার কারণে ইস্রায়েলে মিথ্যা নিশ্চয়তা ও নকল ধার্মিকতা তৈরি হয়, যা ভাববাদী আমোষ তার কঠোর ধ্বংসবাণী দ্বারা ভেঙ্গে দেন।
আমোষ ছিলেন যিহূদা দেশের গরীব এলাকার একজন রাখাল ও মৌসুমি চাষী। তাই তিনি গরীবদের অবস্থা ও কষ্ট ভালভাবে বুঝতে পারতেন। আমোষের বাণীর মূল সংবাদই ছিল এই: দেশে গরীবেরা ক্রমশই অত্যাচারিত হচ্ছে, একারণে ঈশ্বরের ক্রোধ ইস্রায়েল দেশের উপরে শীঘ্রই নেমে আসবে। আমোষ তার আহ্বান সম্বন্ধে বেশি কিছু বলেন না, প্রকৃতপক্ষে তিনি নিজের পরিচয় হিসাবে ভাববাদী হওয়ার বিষয় প্রায় অস্বীকার করেন (আমোষ ৭:১৪-১৫)। কিন্তু যখন ঈশ্বর তাকে কথা বলতে বলেন, তিনি ঈশ্বরের কথায় বাধ্য হয়ে যিহূদা ছেড়ে উত্তরের প্রতিবেশী দেশ ইস্রায়েলে যান এবং বৈথেল শহরে সম্ভবত বড় বাৎসরিক অনুষ্ঠানে একটি কঠোর ধ্বংসবাণী ঘোষণা করেন (আমোষ ৭:১৩)। বৈথেল ছিল ইস্রায়েলের রাষ্ট্রীয় ধর্মের প্রধান কেন্দ্র, যেখানে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভু এবং একটি সোনার বাছুর উভয়কে পূজা করত (১ রাজা ১৪:২১-১৪)। প্রকৃতপক্ষে বৈথেলের পূজা স্থাপন হয়েছিল যিরূশালেমে ঈশ্বরের আরাধনার প্রতিদ্বন্দিতা হিসাবে। অর্থাৎ বৈথেলের বেদী, উৎসর্গ, যাজকত্ব ও পর্বগুলো ছিল যিরূশালেমে সদাপ্রভুর আরাধনা নকল করার পদ্ধতি। আমোষ ঝুঁকি নিয়ে ইস্রায়েলের প্রধান পূজার স্থানে এসে ঈশ্বরের ধ্বংসবাণী ঘোষণা করেন। এ দ্বারা বুঝা যায় আমোষের সাহস ও ত্যাগ-স্বীকার যথেষ্ট ছিল। বৈথেলের নকল মহাপুরোহিত আমোষের বাণী শুনে তাকে হুমকি দেন এবং রাজাকে জানান যে, একজন ভাববাদী দেশের বিরুদ্ধে বাণী ঘোষণা করছেন (আমোষ ৭:১০)।
রাজা যারবিয়াম-২ (৭৮২-৭৫৩ খ্রীঃপূঃ) ছিলেন একজন শক্তিশালী শাসনকর্তা, যার অধীনে ইস্রায়েল দেশ আরো একবার শক্তি ফিরে পেয়ে হারানো ভূমি পুনরায় দখল করতে এবং বেচাকেনার মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় (২ রাজা ১৪:২৩-২৭)। কিন্তু এই শক্তি ও উন্নয়ন ছিল প্রকৃতপক্ষে চোখ ভুলানোর মত এবং এ কারণে ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে মিথ্যা নিশ্চয়তা, মিথ্যা নিরাপত্তা ও মিথ্যা ধার্মিকতা তৈরি হয়: ইস্রায়েলীয়েরা খুব ধর্মকর্ম করত (সদাপ্রভু ও বিভিন্ন দেবতা উভয়ের পূজা), এরই সাথে গরীবদের অত্যাচারও করত। দেশের বর্তমান সুঅবস্থা দেখে তারা নিশ্চিত ছিল যে, ঈশ্বর তাদেরকে নিয়ে খুব খুশি আছেন। ইস্রায়েলীয়দের এই মিথ্যা নিশ্চয়তা ঈশ্বর আমোষের তীব্র বাণীর মধ্য দিয়ে ভাঙ্গতে চেষ্টা করেন।
বৈথেলের পূজার স্থানে এসে আমোষ ইস্রায়েলের চারিদিকের দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিচারবাণী ঘোষণা করতে শুরু করেন। তিনি সিরিয়া, পলেষ্টীয় এলাকা, সোর, ইদোম, অম্মোন, মোয়াব এবং যিহূদার বিরুদ্ধে এক একটা করে নির্দিষ্ট ধ্বংসবাণী ঘোষণা করেন। ইতিহাসে কোনো না কোনো সময়ে এই সব দেশগুলো ইস্রায়েলকে অত্যাচার করেছিল। তাই যখন আমোষের শ্রোতারা এই বিচারবাণী শুনে, তারা অবশ্যই সেগুলো খুশি হয়ে গ্রহণ করছিল। কিন্তু আমোষ সেখানে থেমে যান না, তিনি হঠাৎ করে ইস্রায়েলের দোষও ধরতে শুরু করেন: ইস্রায়েল জাতি গরীবদের অত্যাচার করে, তারা মিশানো পূজা করে, তারা অহংকারী ও অতি নিশ্চয়তার লোক কারণ তারা দেশের বর্তমান ভাল অবস্থা ঈশ্বরের অনুমোদন হিসাবে দেখে।
আমোষ খুব কঠোর দোষারোপের কথা বলেন: “তার লোকেরা টাকা-পয়সার জন্য সৎ লোকদের এবং পায়ের এক জোড়া জুতার জন্য অভাবীদের বিক্রি করে। ধুলা মাড়াবার মত করে তারা গরীবদের মাড়ায় এবং পথ থেকে অভাবীদের ঠেলে সরিয়ে দেয়… তোমরা তো ন্যায়বিচারকে তেতো করে তুলছ এবং সততাকে মাটিতে ফেলছ… তোমরা গরীবকে অত্যাচার কর এবং জোর করে তার কাছ থেকে শস্য আদায় কর… তোমরা তো সৎ লোকদের উপর অত্যাচার কর ও ঘুষ খাও; শহরের ফটকে (যেখানে বিচার করা হত) তোমরা গরীবদের ন্যায়বিচার পেতে দাও না… তোমরা হাতীর দাঁতের কাজ করা খাটে শোও আর তোমাদের বিছানায় অলসভাবে গা টান কর… কিন্তু তোমরা যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের ধ্বংসের জন্য দুঃখিত হও না” (আমোষ ২:৬-৭, ৫:৭,১২, ৬:৪-৬)।
বিশেষভাবে ইস্রায়েলের সেই মিশানো পূজা ও নকল ধার্মিকতার বিরুদ্ধে আমোষের খুবই তীব্র কথা আছে: “আমি তোমাদের পর্বগুলো ঘৃণা করি, অগ্রাহ্য করি; তোমাদের সভাগুলো আমি সহ্য করতে পারি না। তোমরা আমার উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করলেও আমি সেগুলো গ্রহণ করব না… তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর… তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক” (আমোষ ৫:১৮-২৪)।
আমোষ খুব কঠোর, লজ্জাদায়ক ও কট্টর উক্তি ভরা কথা দিয়ে ইস্রায়েলেীয়দের সেই মিথ্যা নিশ্চয়তা ভেঙ্গে দেন: “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমরা কি আমার কাছে কূশীয়দের মত নও?” … তোমরা অস্দোদ ও মিসরের সব দুর্গের লোকদের কাছে বল, “তোমরা শমরিয়ার পাহাড়গুলোর উপরে জড়ো হও; দেখ, তার মধ্যে কত গোলমাল! তার লোকদের মধ্যে কত অত্যাচার!” (আমোষ ৯:৭, ৩:৯)।
আমোষের ধ্বংসবাণী ছিল ঈশ্বরের কাছ থেকে ইস্রায়েল জাতির জন্য শেষ ডাক। ঈশ্বর ভাববাদী পাঠিয়েছেন, তার মানে এই যে, লোকদের এখনও মন ফিরানোর সুযোগ আছে। এমন কি ধ্বংসের ঘোষণা হল মন ফিরানোর একটি ডাক। তাই আমোষ অনুরোধ করেন “তোমরা আমার কাছে এস, তাতে বাঁচবে। তোমরা বৈথেলে কিম্বা গিল্গলে কিম্বা বের্-শেবায় যেয়ো না… তোমরা সদাপ্রভুর কাছে যাও তাতে বাঁচবে; তা না হলে তিনি আগুনের মত করে যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে জ্বলে উঠবেন” (আমোষ ৫:৪-৬)।
আমোষ তার পুস্তক একটি আশাবাণী দিয়ে শেষ করেন: ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন যে, ইস্রায়েল জাতির বিচারের ওপারে তিনি একটি পুনরুদ্ধার ঘটাবেন: “সেই দিন আমি দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর আবার উঠাব। আমি তার ভাংগা জায়গাগুলো মেরামত করব, ধ্বংসস্থানগুলো ঠিক করব” এবং আগে যেমন ছিল তেমনি করে তা তৈরী করব” (আমোষ ৯:১১)। কিন্তু ঈশ্বর কাদের জন্য এবং কোথায় পুনরুদ্ধার ঘটাবেন? তিনি “দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর” নিয়ে পুনরুদ্ধার ঘটাবেন, তবে দেবতাপূজারী শমরিয়া বা মিশানো পূজার বৈথেল নিয়ে নয়। দায়ূদের বংশের মধ্যেই আশা আছে, আর কোথাও আশা নেই।
হয়তো আমোষের কিছু শ্রোতারা তার বিচারবাণীতে গুরুত্ব দিয়ে ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বের ধ্বংসের আগে ইস্রায়েল দেশ ছেড়ে দক্ষিণে যিহূদায় বাস করতে আসে, যেখানে সেই সময়েও ঈশ্বর ভক্তি ও ন্যায্যতা বজায় ছিল। অবশেষে, যিহূদাকেও বিচার করে নির্বাসিত করা হয় (৫৮৬ খ্রীঃপূঃ)। তবে যিহূদার লোকেরা নিজের দেশে ফিরে আসার সুযোগ পায় (৫৩৬ খ্রীঃপূঃ)। এই ফিরে আসা যিহূদীদের মধ্য থেকেই যীশু জন্মগ্রহণ করেন, যাঁর মধ্য দিয়ে দায়ূদের ঘর উঠানো হবে এবং এই আশাবাণী পূর্ণ হবে। আমোষের ঠিক এই পদগুলো দ্বারা প্রেরিতেরা যিরূশালেমের সভায় বুঝতে পারেন যে, যীশুর দ্বারাই ঈশ্বর সমস্ত জাতির কাছে পরিত্রাণ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন (প্রেরিত ১৫:১৬-১৭ উদ্ধৃতি করে আমোষ ৯:১১)।
লেখক
লেখক নিজের পরিচয় হিসাবে তার নাম, পেশা ও গ্রাম এভাবে উল্লেখ করেন: “তকোয়ের রাখালদের মধ্যে আমোষ” (আমোষ ১:১)। তার আর একটি বর্ণনা আমোষ ৭:১৪ পদে পাওয়া যায়: “আমি নবীও ছিলাম না, নবীর শিষ্যও ছিলাম না; আসলে আমি ছিলাম একজন রাখাল, আর আমি ডুমুর গাছের দেখাশোনাও করতাম”। “রাখাল” শব্দটি উভয় ‘মেষপালের মালিক’ অথবা ‘মেষপাল দেখাশোনাকারী’ বুঝাতে পারে। “ডুমুর গাছ” শব্দটি ইব্রীয়তে বিভিন্ন ডুমুর গাছের একটি নির্দিষ্ট জাতের গাছ বুঝায়, যার ফল মাত্র গরীবেরা খেত। তকোয় ছিল যিরূশালেম শহর থেকে দক্ষিণ দিকের পাহাড়ে একটি ছোট প্রাচীর ঘেরা শহর যাতে বেশি বৃষ্টি হত না। প্রকৃতপক্ষে, তকোয় এলাকায় ডুমুর গাছ হত না বরং যিরূশালেম শহর থেকে আরো পশ্চিম দিকের নিচু টিলাতে সেই ডুমুর গাছ পাওয়া যেত। তাই সম্ভাবনা বেশি যে, আমোষ ছিলেন একজন গরীব চাষী যিনি একজন রাখালও ছিলেন এবং মৌসম ভেদে অন্যান্য এলাকাতেও মৌসুমী কাজ করতেন। এছাড়া তিনি খুব পরিষ্কারভাবে বলেন যে, যারা আয়ের জন্য ভাববাণী দেয়, তিনি তাদের একজন নন (আমোষ ৭:১২-১৪)। তিনি কোন দলে যুক্ত নন বরং ভাববাদী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন যে, তিনি বাধ্য হয়ে ভাববাদী হলেন: “সিংহ গর্জন করলে কে না ভয় করবে? প্রভু সদাপ্রভু বলতে বললে কে নবী হিসাবে কথা না বলে পারবে?” (আমোষ ৩:৮)। সম্ভবত তার ভাববাদী হওয়ার আর একটি বিষয় হল যে, তিনি মোশির আইন-কানুন বুঝে যুক্তি ভিত্তিক উপসংহারে আসেন: তিনি ইস্রায়েল দেশের উপর বেশ কয়েকটি দুর্যোগ আসতে দেখেন (আমোষ ৪:৬-১২) এবং মোশির আইন-কানুনে যেমন লেখা আছে, তা তিনি ঈশ্বরের আংশিক বিচার হিসাবে বুঝতে পারেন, যাতে ইস্রায়েল জাতি কোনো গুরুত্ব দেয় না: “তেমনি বুঝেন: “তবুও তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে না। … সেইজন্য হে ইস্রায়েল, তোমার ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াবার জন্য তুমি প্রস্তুত হও”। আমোষের লক্ষ্য ও চিন্তা করার চিত্র একটি বিখ্যাত শিল্পকর্মে সুন্দরভাবে প্রকাশিত (ডানের ছবি দেখুন, Gustave Dore ‘Amos’)।
আমোষ পুস্তক লেখার তারিখ ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
আমোষ নিজের ভাববাণীর তারিখ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়াম-২ (৭৮২-৭৫৩ খ্রীঃপূঃ) এবং যিহূদার রাজা উষিয়কে (৭৬৭-৭৫০ খ্রীঃপূঃ) উল্লেখ করেন (আমোষ ১:১)। তিনি কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করেন, যার উল্লেখ বাইবেলের বাইরেও পাওয়া যায়: একটি রোগ (আমোষ ৪:৯-১০, যা আসিরিয়ার খোদাই করে লেখায় উল্লিখিত, ৭৬৫ খ্রীঃপূঃ), (সম্ভবত) একটি সূর্যগ্রহণ (আমোষ ৮:৯, যার তারিখ হল ৭৬৩ খ্রীঃপূঃ) এবং একটি ভূমিকম্প (আমোষ ১:১) যা ভাববাদী সখরিয় (সখরিয় ১৪:৫) এবং যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাস্ ফ্রাভিয়াস্ উভয়ই উল্লেখ করেন, যদিও এর কোন সাল আর জানা যায় না। তাই উপসংহারে আসা যায় যে, আমোষ প্রায় ৭৬৭-৭৫৩ খ্রীষ্টপূর্বে ভাববাণী বলেন এবং সেগুলো লিখে রাখেন।
আমোষ উত্তরের ইস্রায়েল দেশের লোকদের কাছে বাণী বলেন যখন যারবিয়াম-২, অর্থাৎ যিনি শক্তিশালী ও সফল একজন রাজা হিসাবে তাদের উপর রাজত্ব করেন। ঐসময়ের পরিস্থিতি বুঝার জন্য ইস্রায়েলের ইতিহাসে আগের কিছু ঘটনাগুলো বুঝা দরকার:
- ৯৩১ খ্রীঃপূঃ রাজা যারবিয়াম-১ মন্দ
- ইস্রায়েল যিহূদা থেকে আলাদা হয়ে যায়।
- ইস্রায়েলের নেতারা দায়ূদের রাজপরিবার অগ্রাহ্য করে পরিবর্তে ইফ্রয়িম বংশের যারবিয়াম-১-কে তাদের রাজা হিসাবে নিযুক্ত করেন।
- যদিও যারবিয়াম ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি চমৎকার প্রতিজ্ঞা পান, তবুও তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে যিরূশালেমে সদাপ্রভুর আরাধনার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বৈথেল ও দান শহরে বাছুরের পূজা স্থাপিত করেন।
- তিনি সেখানে রাষ্ট্রীয় পূজা হিসাবে যিরূশালেমে অনুশীলনের ঠিক সমান্তরালে বাছুরের মূর্তি, তার আরাধনা, বেদী, পুরোহিত, উৎসর্গ ও পর্বগুলো স্থাপন করেন।
- তিনি লোকদেরকে যিরূশালেমে যাওয়ার জন্য বাধা তৈরি করেন এবং বৈথেল শহরকে রাষ্ট্রীয় পূজার স্থান ও বাছুর পূজা রাষ্ট্রীয় ধর্মে পরিণত করেন (১ রাজা ১২)।
- ৮৪১-৮১৪ খ্রীঃপূঃ রাজা যেহূ ভাল-মন্দ মিশানো
- সেনাপতি যেহূ ঈশ্বরের একজন ভাববাদীর কাছ থেকে বাণী পেয়ে সেই সময়ে ইস্রায়েলের বর্তমান রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, রাজার পরিবার নির্মূল করেন এবং নিজেকে নতুন রাজা হিসাবে ঘোষণা করেন।
- তিনি ইস্রায়েল দেশ থেকে বাল পূজা নির্মূল করতে উদ্যোগ নেন। একারণে ঈশ্বর তাকে একটি প্রতিজ্ঞা দেন যে, তার রাজপরিবার চার পুরুষ পর্যন্ত স্থির থাকবে (২ রাজা ১০:৩০)।
- ইস্রায়েলের অধিকাংশ রাজপরিবার এক দুই প্রজন্মের বেশি স্থির ছিল না কিন্তু যেহূর রাজবংশ ইস্রায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী রাজবংশ হয়ে যায়।
- ৮১৪-৭৯৮ খ্রীঃপূঃ রাজা যিহোয়াহস মন্দ যেহূ থেকে ১ম প্রজন্ম
- যখন সিরিয়া ইস্রায়েলকে আক্রমণ করে, তখন মন্দ রাজা যিহোয়াস ঈশ্বরকে ডাকেন এবং ঈশ্বর তাকে একজন “উদ্ধারকারী”’ দান করেন (২ রাজা ১৩:১-৬), যা সম্ভবত আসিরিয়ার রাজা আদাদ্-নিরারীকে বুঝায় যিনি ইস্রায়েলের শত্রু সিরিয়াকে পরাজিত করেছিলেন এবং এভাবে ইস্রায়েল কিছুটা রেহাই পেয়েছিল।
- ৭৯৬-৭৮২ খ্রীঃপূঃ রাজা যিহোয়াশ মন্দ যেহূ থেকে ২য় প্রজন্ম
- ৭৮২-৭৫৩ খ্রীঃপূঃ রাজা যারবিয়াম-২ মন্দ যেহূ থেকে ৩য় প্রজন্ম
২ রাজা ১৪:২৫-২৭ পদে বলা আছে যে, ইস্রায়েলের সবাই ভীষণভাবে কষ্ট পাচ্ছিল, এর জন্য ঈশ্বর তাদেরকে যারবিয়াম, অর্থাৎ একজন শক্তিশালী রাজা দান করেছিলেন।যদিও যারবিয়াম মন্দ রাজা তবুও তিনি ইস্রায়েলের অনেক জমি পুনরায় দখল করতে সক্ষম হন, তিনি শান্তি রক্ষা করতে ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বেচা-কেনা সড়কের উপরে নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করতে পারেন।যারবিয়ামের সময় ইস্রায়েল দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত হয়।তখন সমাজের শুধুমাত্র অল্প কিছু লোকেরা ধনী থেকে আরো ধনী হয়ে উঠছিল, গরীবেরা আরো গরীব হয়ে যাচ্ছিল এবং দুর্বলদের অধিকার সুরক্ষিত ছিল না।এই ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুঅবস্থা’র কারণে ইস্রায়েলে একটি মিথ্যা আত্ম-নির্ভরতা, নিরাপত্তার ভাব এবং একটি নকল ধার্মিকতা তৈরি হয়।ইস্রায়েলের লোকেরা দেবতা পূজায় আসক্ত ছিল (আমোষ ৫:২৬, ৮:১৪), তারা সদাপ্রভুর এবং বৈথেলের সোনার তৈরি বাছুর উভয়কে পূজা করত (আমোষ ৭:১০)।তারা ধর্মকর্মে অত্যন্ত ব্যস্ত ছিল (আমোষ ৫:২১-২৩)। কিন্তু একই সময়ে তারা গরীবদের নির্যাতন করত এবং সমাজে সংঘটিত অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কিছু করত না।প্রকৃতপক্ষে, যারবিয়াম-২-এর রাজত্বের স্থিরতা ছিল তার পূর্ব-পুরুষ রাজা যেহূর বাধ্যতার কারণে ‘থেকে থাকা আশীর্বাদ’ মাত্র, যা বেশিদিন স্থায়ী থাকে না। লক্ষণীয় বিষয় হল, বর্তমান যুগের আধুনিক পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদেরকে একই অবস্থায় খুঁজে পায়: তারা ‘আগের আশীর্বাদ’ উপভোগ করছে কিন্তু তাদের মধ্যে ঈশ্বর ভক্তি আর নেই।নিজের ধার্মিকতা উপস্থাপনা করা এবং সাথে সাথে গরীবদের অত্যাচার করা – এই দু’টি একসাথে ঈশ্বরের চোখে একদম ঘৃণার জিনিস এবং তিনি আমোষের মুখ দিয়ে ইস্রায়েল জাতিকে ঠিক তা-ই জানান। অন্যায়-লাভ দ্বারা ধন, আত্ম-সন্তোষ এবং বাহ্যিক ধার্মিকতা এই সব বিষয় নিয়ে লোকদের দোষ ধরে আমোষ তার চেতনাদায়ক, অপ্রিয় সংবাদ ঘোষণা করেন। যখন ইস্রায়েলের লোকেরা খুব নিশ্চিত যে, সব কিছু ‘ঠিক আছে’, সেই সময় তিনি তার কামড় দেওয়ার মত বাণী দিয়ে তাদের নকল ধার্মিকতা ও মিথ্যা নিরাপত্তা ভেঙ্গে দেন।আমোষ হয়তো বেশ সাধারণ একজন চাষী ছিলেন, কিন্তু তিনি সাহসী ও বাধ্যও ছিলেন। ঈশ্বরের আদেশে তকোয় ত্যাগ করে তিনি বৈথেলে ইস্রায়েলের আত্মিক কেন্দ্রে যান। সম্ভবত, বাৎসরিক অনুষ্ঠানের সময় যখন অনেক লোক উপস্থিত, তখন সেখানে তিনি ইস্রায়েলের কাছে ঈশ্বরের বিচারবাণী ঘোষণা করেন।
বৈথেলে আমোষ
ধরুন, আপনি একজন ইস্রায়েলীয় ব্যবসায়ী যিনি এইমাত্র ইস্রায়েলের বড় বাৎসরিক অনুষ্ঠান পালন করতেরাষ্ট্রীয় পূজার স্থানে অর্থাৎ বৈথেলে এসেছেন। বর্তমান সময়ে আপনার ব্যবসা খুব ভাল চলছে, তাই আপনি নতুন করে উঁচু শ্রেণীতে উঠতে পেরে নিজেকে ধনীদের একজন হিসাবে পরিচয় দিতে পারেন। তাই এই অনুষ্ঠানে আপনি বড় উৎসর্গ দিতে পরিকল্পনা করেছেন, বাধ্যতামূলক উৎসর্গের চেয়েও আরো অনেক কিছু দান করবেন। বৈথেলে আপনি অনেক নামীদামী লোকদের সাথে মিশতে পারবেন, এটি অনুষ্ঠানে আসার কারণ হিসাবে অন্যতম আর একটি আকর্ষণের বিষয়। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, শুধুমাত্র আপনারই অবস্থা যে ভাল, তা নয়, রাজা যারবিয়ামের নেতৃত্বে সম্পূর্ণ দেশের রাজনৈতিক স্থিরতা ও অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভাল দিকে গিয়েছে, দেশের সীমানা সুরক্ষিত এবং ক্রয়-বিক্রয়ের লাভ ক্রমশই অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সব দেখে আপনি নিশ্চিত যে, সদাপ্রভু দেশকে সব দিক দিয়ে আশীর্বাদ করছেন এবং অবশেষে ইস্রায়েল প্রতিবেশি যিহূদা দেশের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ইস্রায়েল দেশের মধ্যই সদাপ্রভুর আশীর্বাদের নিশ্চয়তা পেয়ে কেন যিরূশালেমে উৎসর্গ দিতে যাবেন? ঈশ্বর তো ইস্রায়েলকে প্রাধান্য দিচ্ছেন এবং এখানেই তাঁর অনুগ্রহ দেখা যায়। সদাপ্রভু হয়তো এখন সেই সময় নিয়ে আসবেন, যখন ইস্রায়েল সব শত্রুদের উপরে জয়লাভ করবে এবং ইস্রায়েল তাদের উপরে রাজত্ব করবে, সেই পরাক্রমশালী “সদাপ্রভুর দিন” যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। আপনি অনুষ্ঠানের সভায় সামনে দিকে আসন গ্রহণ করেছেন, যেখানে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ লোক বসতে পারে। ভাল এবং ধার্মিক মানুষ হিসাবে আপনি মনোযোগ সহকারে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
আকস্মিকভাবে একজন লোক উঠে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার কণ্ঠস্বরে ও শক্তিশালী ভাষায় সদাপ্রভুর নামে চারিদিকের জাতিদের বিরুদ্ধে বিচারবাণী দিতে শুরু করেন: সিরিয়া, পলেষ্টীয় এলাকা, সোর, ইদোম, অম্মোন ও মোয়াবের বিরুদ্ধে (আমোষ ১:৩-২:৩)। এই সব জাতি হল ইস্রায়েলের সেই প্রতিবেশী জাতিরা, যারা ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ইস্রায়েলকে আক্রমণ ও লূটপাট করে। আমোষ যে শুধুমাত্র বিচারবাণী ঘোষণা করেন, তা নয়, তিনি বিচারের কারণও ব্যাখ্যা করেন: সিরিয়া ইস্রায়েলকে “লোহার কাঁটাযুক্ত মাড়াই-যন্ত্র দিয়ে সে গিলিয়দকে মাড়াই করেছে” (আমোষ ১:৩), পলেষ্টীয় এলাকা ও সোর “কতগুলো গ্রামের সমস্ত লোককে বন্দী করে ইদোমের হাতে তুলে দিয়েছে” (আমোষ ১:৬,৯)। ইদোম ভাই ইস্রায়েলের “সমস্ত মায়া-মমতা ত্যাগ করে সে তলোয়ার নিয়ে … তাড়া করেছে। এছাড়া তার ভয়ংকর রাগ অনবরতই দেখা দিয়েছে আর সে তা পুষে রেখেছে” (আমোষ ১:১১), অম্মোন ইস্রায়েলের পূর্ব এলাকার “গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের পেট চিরে দিয়েছে” (আমোষ ১:১৩), মোয়াবীয়েরা ইদোম দেশের রাজার হাড় অসম্মান করেছে (আমোষ ২:১)। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী একজন ইস্রায়েলীয় হিসাবে শত্রু জাতিগুলোর বিরুদ্ধে এই সব বিচারবাণী শুনে আপনার হৃদয় অত্যন্ত আনন্দে ও উত্তেজনায় ভরে ওঠে। হয়তো আজকে সেই দিন যখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্য জাতিদের উপর প্রতিশোধ নেবেন? হয়তো আজকে তিনি “সদাপ্রভুর দিন” নিয়ে আসবেন? আপনার চারিদিকে সবাই উত্তেজনার এই একই ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে।
সেই কণ্ঠস্বর চলতে থাকে এবং এখন যিহূদার বিরুদ্ধে বাণী দিচ্ছে। যিহূদার বিরুদ্ধে? এতে আপনার একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব লাগে, যিহূদা কি সদাপ্রভুর আপন জাতি হওয়া নিয়ে গর্ব করছে না? প্রকৃতপক্ষে তারা যথেষ্ট অহংকারী এবং তারা অন্য সবাইকে নিচু চোখে দেখছে, তাই তারা যে ধমক ও মার খাবে, তা নিয়ে আপনার কোন আপত্তি নেই (আমোষ ২:৪-৫)।
আপনার চিন্তা শেষ না হতেই কণ্ঠস্বরটি চলতে থাকে এবং এখন কি?? … সে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে বিচার ঘোষণা করে! “ইস্রায়েলের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব। তার লোকেরা টাকা-পয়সার জন্য সৎ লোকদের এবং পায়ের এক জোড়া জুতার জন্য অভাবীদের বিক্রি করে। ধুলা মাড়াবার মত করে তারা গরীবদের মাড়ায় এবং পথ থেকে অভাবীদের ঠেলে সরিয়ে দেয়” (আমোষ ২:৬-৭)।
এসব শুনে আপনি এমন হতভম্ব যে, আপনি নড়াচড়াও করতে অক্ষম। কণ্ঠস্বর চলছেই, পরিষ্কারভাবে ও অত্যন্ত জোরের সঙ্গে সে ঘোষণা করছে যা কেউ চিন্তাও করতে পারে না, বিশ্বাসও করতে পারে না, একটি লম্বা ও তীব্র বিচারবাণী – অন্য জাতিদের চেয়েও খুবই অমঙ্গলের বাণী – ইস্রায়েল দেশের একের পর এক বিষয়ের দোষ ধরার বাণী। আপনার মধ্যে হতভম্ব ভাব অবিশ্বাসে এবং অবিশ্বাস অত্যন্ত অসহনীয় ক্রোধে পরিণত হচ্ছে। চারিদিকের সবার মধ্যে একই রকম উত্তেজনা চলছে। এই লোকটি কে? নিজেকে সে কি মনে করে? কত দুঃসাহস তার! তাকে থামানোর কি কেউ নেই?
জাতিদের বিরুদ্ধে বিচার
আমোষ তার ভাববাণীর শুরুতে ইস্রায়েলের চারিদিকে ৮টি দেশ বা জাতির বিরুদ্ধে বিচার ঘোষণা করেন। ঈশ্বর কেন তাদের বিচার করবেন, তিনি এর কারণও ব্যাখ্যা করেন। তিনি প্রত্যেকটি দেশের জন্য একই ধরণের ধারাবাহিকতা ও কথাগুলো ব্যবহার করেন:
“সদাপ্রভু বলছেন (ঈশ্বরের অধিকার ঘোষণা) … “(জাতির নাম, রাজধানীর বা প্রধান শহরগুলোর নাম)-এর তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব (বিচারের নিশ্চয়তা), কারণ … (বিচারের কারণ) … সেইজন্য আমি … (বিচারের বর্ণনা) … ”
আমোষ কাদের বিরুদ্ধে বিচারবাণী ঘোষণা করেন? তিনি প্রথমে ইস্রায়েলের চারিদিকের ৬টি জাতির (ইস্রায়েলের শত্রু) বিরুদ্ধে বিচারবাণী ঘোষণা করেন (আমোষ ১:৩-২:৩)। পরবর্তীতে তিনি ইস্রায়েল জাতির ‘বোন’ যিহূদার বিরুদ্ধে বিচারবাণী ঘোষণা করেন এবং সর্বশেষে ইস্রায়েল দেশের বিরুদ্ধেও ঈশ্বরের বিচার ঘোষণা করেন। এই ধারাবাহিকতা বা ক্রমবৃদ্ধি আমোষ নিশ্চয়ই পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করেন: তিনি চারিদিকে ঘুরে শেষে তার আসল লক্ষ্যে পৌঁছান: ইস্রায়েল। এভাবে আমোষের শ্রোতা ইস্রায়েল তাদের ভুল মনোভাবের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ পায়: তারা শত্রুদের বিরুদ্ধে বিচারবাণী শুনে আনন্দিত হয় কিন্তু পরবর্তীতে বুঝা যায় যে, আমোষ প্রাথমিকভাবে তাদেরই দোষ ধরার জন্য এবং তাদের অহংকারী মনোভাব ভাঙ্গার জন্যই তার কথা বলার এই কৌশল ব্যবহার করেন। এতে নতুন নিয়মে যীশুর দৃষ্টান্ত বলার কৌশলের সাথে মিল আছে, যীশু একটি গল্পে ঠিক এমন একটি কৌশল ব্যবহার করেন যেখানে শ্রোতারা নিজেদের একটি ভুল প্রক্রিয়ায় খুঁজে পায়।
কিন্তু জাতিদের বিরুদ্ধে বিচারের কারণগুলো ঠিক কি ছিল? এটা ভাল করে দেখার লাভ আছে:
- সিরিয়া / অরাম
- প্রধান শহর: দামেস্ক, আবনের উপত্যকা, বৈৎ-এদন রাজা হসয়েল, রাজা বিন-হদদ
- বিচারের কারণ: “লোহার কাঁটাযুক্ত মাড়াই-যন্ত্র দিয়ে সে গিলিয়দকে মাড়াই করেছে” (আমোষ ১:৩)।
- ব্যাখ্যা: অতিরিক্ত হিংস্র ব্যবহার / সীমানার বাইরে যাওয়া গন্ডগোল (২ রাজা ৮:১২)।
- বিচার পূর্ণ হয়: ৭৩২ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া (রাজা তিগ্লৎ-পিলেষর) দামেস্ক দখল করে, অরামীয়দের নির্বাসনে নিয়ে যায়।
- পলেষ্টীয় এলাকা
- প্রধান শহর: গাজা, অসদোদ, অস্কিলোন, ইক্রোণ
- বিচারের কারণ: “সে কতগুলো গ্রামের সমস্ত লোককে বন্দী করে ইদোমের হাতে তুলে দিয়েছে” (আমোষ ১:৬ )।
- ব্যাখ্যা: বিবেচনা ও চেতনাবোধ ত্যাগ করে দখল করা লোকদের দাস হিসাবে বিক্রি (শান্তির সময়ে)।
- বিচার পূর্ণ হয়:
- গাজা ৭৩৪ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া গাজা পুড়িয়ে ফেলে (রাজা তিগ্লৎ-পিলেষর), পরে ধ্বংস হয়
- অসদোদ ৭১১ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া দ্বারা দখলকৃৃত (রাজা সর্গোন-২)
- অস্কিলোন ৭৩৪/৩৩, ৭০১ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া দ্বারা দখলকৃৃত
- ইক্রোণ গ্রীস (সেলুকিয়েরা) দ্বারা দখলকৃৃত, পরে মাক্কাবীয়দের দ্বারা দখলকৃৃত
- ফৈনীকিয়া
- প্রধান শহর: সোর
- বিচারের কারণ: “ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের চুক্তি অগ্রাহ্য করে সে কতগুলো গ্রামের সমস্ত লোককে বন্দী করে ইদোমের হাতে তুলে দিয়েছে” (আমমো ১:৯)।
- ব্যাখ্যা: বিবেচনা ও চেতনাবোধ ত্যাগ করে দখল করা লোকদের দাস হিসাবে বিক্রি (শান্তির সময়ে), ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের চুক্তি অগ্রাহ্য (দায়ূদ-সোর শহরের রাজা হীরম)।
- বিচার পূর্ণ হয়:
- ৭০১ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া দ্বারা ঘেড়াও (সনহেরীব), পরে আসিরিয়া দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া (অশূর-বনিপল)
- ৩২২ খ্রীঃপূঃ গ্রীস দ্বারা দখল ও ধ্বংস (আলেকজান্ডার)
- ইদোম
- প্রধান শহর: তৈমন, বস্রা
- বিচারের কারণ: “সমস্ত মায়া-মমতা ত্যাগ করে সে তলোয়ার নিয়ে তার ভাইকে তাড়া করেছে। এছাড়া তার ভয়ংকর রাগ অনবরতই দেখা দিয়েছে আর সে তা পুষে রেখেছে” (আমেষ ১:১১)।
- ব্যাখ্যা: ভাই-ভাইকে (অর্থাৎ, ইস্রায়েলকে) মায়া-মমতা ত্যাগ করে তাড়া, অতিরিক্ত (আঘাতের চেয়ে বেশী) প্রতিশোধ, দাস হিসাবে ক্রয়-বিক্রয় পলেষ্টীয়া ও ফৌনীকিয়ার সাথে।
- বিচার পূর্ণ হয়: ৭১১ এবং ৭০১ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া দ্বারা দখলকৃত (রাজা সর্গোন-২ / রাজা সনহেরীব)
- অম্মোন
- প্রধান শহর: রাব্বা
- বিচারের কারণ: “তার সীমানা বাড়াবার জন্য সে গিলিয়দের গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের পেট চিরে দিয়েছে” (আমোষ ১:১৩)।
- ব্যাখ্যা: অতিরিক্ত হিংস্র ব্যবহার / সীমানার বাইরে যাওয়া গন্ডগোল জমি লাভ করার জন্য, যারা সেনা নয় অর্থাৎ বেসামরিক লোকদের মেরে ফেলা, গণহত্যা।
- বিচার পূর্ণ হয়: ৫৮৬ খ্রীঃপূঃ বাবিল দ্বারা দখলকৃত (রাজা নবূখদনিৎসর)
- মোয়াব
- প্রধান শহর: করিয়োত
- বিচারের কারণ: “সে ইদোমের রাজার হাড়গুলো পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে” (আমোষ ২:১)।
- ব্যাখ্যা: লাশ / কবরস্থান অপবিত্র করে ফেলা, অসম্মান করা
- বিচার পূর্ণ হয়: ৭১৫ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া দ্বারা দখলকৃত (রাজা সর্গোন-২)
- যিহূদা
- বিচারের কারণ: “তার লোকেরা সদাপ্রভুর আইন-কানুন অগ্রাহ্য করেছে, আর তাঁর নিয়মগুলো পালন করে নি। তাদের পূর্বপুরুষেরা যে মিথ্যা দেব-দেবতার পিছনে গিয়েছিল তারাও সেইভাবে বিপথে গিয়েছে” (আমোষ ২:৪)।
- ব্যাখ্যা: ঈশ্বরের কাছ থেকে যত প্রকাশ বা জ্ঞান (আইন-কানুন) পেয়েছে, তত দায়ী
- বিচার পূর্ণ হয়: ৫৮৬ খ্রীঃপূঃ বাবিল দ্বারা দখল ও ধ্বংস (রাজা নবূখদনিৎসর)
- ইস্রায়েল
- প্রধান শহর: শমরিয়া, বৈথেল, গিলগল
- বিচারের কারণ: আমোষ পুস্তকের বাকি অধ্যায়গুলোতে বর্ণিত রয়েছে।
- ব্যাখ্যা: আমোষ পুস্তকের বাকি অধ্যায়গুলোতে বর্ণিত রয়েছে
- বিচার পূর্ণ হয়: ৭২২ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া দ্বারা দখলকৃত, ধ্বংস ও নির্বাসিত (রাজা শলমনেষর-৫ ও রাজা সর্গোন-২)।
সারাংশে বলা যায় যে, ঈশ্বর জাতিদেরকে চুক্তি ভাঙ্গা, মানুষ অপহরণ বা দাস ক্রয়-বিক্রয়, যুদ্ধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিংস্রতা, অতিরিক্ত প্রতিশোধ গ্রহণ, গণহত্যা ও মৃতকে অসম্মানের জন্য দায়বদ্ধ রাখেন। এই সব হল এমন আচরণ যাতে সমস্ত জাতি একমত যে, সেগুলো ঠিক নয়, অর্থাৎ যদি অন্য কেউ তাদের বিরুদ্ধে এই আচরণগুলো করত তবে তারা তা ‘অন্যায়’ বলত। এই সব জাতিদের কাছে ঈশ্বরের কাছ থেকে কোন বিশেষ প্রকাশ ছিল না (আইন-কানুন, ভাববাদী) তাই ঈশ্বর তাদেরকে মানবীয় চেতনার রব অনুসারে একটি সাধারণ মানদণ্ডে দায়বদ্ধ রাখেন। যীশু নতুন নিয়মের একই বিষয় এভাবে বলেন “লোকের কাছ থেকে তোমরা যেমন ব্যবহার পেতে চাও তোমরাও তাদের সংগে তেমনই ব্যবহার কোরো” (‘সোনালী নিয়ম’, লূক ৬:৩১)। মথি একই নীতি এভাবে প্রকাশ করেন “যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধর সেইভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে” (মথি ৭:১-২) এবং পৌল বলেন যে, “মানুষের আর কোন অজুহাত নেই” (রোমীয় ১:২০)।
অথচ যিহূদা ও ইস্রায়েল ঈশ্বরের বিশেষ প্রকাশ লাভ করেছিল, তারা আইন-কানুন জানত। একারণে ঈশ্বর তাদেরকে সেই মানদণ্ড অনুসারে বিচার করেন। তারা জেনে বুঝেও ঈশ্বরকে আরাধনা করে নি, আইন-কানুন পালনও করে নি। এখানে একটি নীতি দেখা যায়: একটি জাতি যত প্রকাশ পেয়েছে, তা অনুসারে সেই জাতি দায়ী। ঈশ্বরের বিচারই ন্যায্য।
আর একটি বিষয় প্রকাশ পায়: যদিও ইস্রায়েল ও যিহূদা ‘ঈশ্বরের মনোনীত জাতি’ হিসাবে আহ্বান পেয়েছিল, তবুও সব জাতিদের সাথে ঈশ্বরের সম্পর্ক থাকে এবং তিনি সব জাতিদের ইতিহাসে হস্তক্ষেপ করেন:
- আদি পুস্তক, প্রেরিত ১৭:২৬ ঈশ্বর জাতিদের অস্থিত্ব দেন বা স্থাপন করেন।
- যাত্রা ৯:২৪, দ্বিতীয় বিবরণ ২ ঈশ্বর প্রতিটি জাতির ইতিহাস জানেন।
- দ্বিতীয় বিবরণ ২, আমোষ ৯:৭ ঈশ্বর জাতিদের কিছুটা ভূমির উপর অধিকার দান করেন। তিনি জাতিদের আহ্বান করেন।
- প্রেরিত ১৭:২৬ ঈশ্বর জাতিদের সীমানা ও থাকার অধিকার দান করেন (ভূমি ও সময়)।
- প্রেরিত ১৭:২৬ ঈশ্বর জাতিদের সঙ্গে চুক্তি করেন।
- লেবীয় ১৮, আমোষ ১-২, ওবদিয় ঈশ্বর জাতিদেরকে তাদের আচরণের জন্য দায়বদ্ধ রাখেন।
- আদি ১৫:১৬ ঈশ্বর জাতিদের পাপ বা অন্যায়ের পরিমাপ জানেন।
- অনেক পদে ঈশ্বর জাতিদের বিচার করেন।
- অনেক পদে, হবককূক ১ ঈশ্বর এক জাতি ব্যবহার করেন আর এক জাতিকে বিচার করার জন্য।
- লেবীয় ১৮, হবককূক ১, ওবদিয় যদি কোনো জাতি মন্দ কাজ ও অন্যায় করতেই থাকে, অবশেষে ঈশ্বর তার অস্তিত্ব বাতিল করেন > এই জাতিগুলো আর নেই।
এই বিষয়টি সান্ত্বনাদানকারী: ঈশ্বর প্রত্যেকটি পাপ, অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচার দেখেন। তিনি সব জাতিদের তাদের আচরণের জন্য দায়বদ্ধ রাখেন। যা আমরা আগে থেকে জানতাম না, তার জন্য আমরা দায়ী নই, কিন্তু যা জানতাম (অর্থাৎ যা নিয়ে অন্যদের দোষ ধরতাম) তার জন্য আমরা দায়ী। ঈশ্বর নীতি রক্ষাকারী এবং ন্যায্যতায় সম্পূর্ণ সমর্পিত।
একটি মন্তব্য: আধুনিক যুগে ‘জিনিভা কনভেন্সন’ (Geneva convention, 1949 AD) জাতিগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি স্থাপন করে, যাতে যুদ্ধের ক্ষেত্রে কি করা অনুমোদিত এবং কি করা অনুমোদিত নয়, তা বাইবেলের নীতির উপর স্থাপিত হয় (আমোষ ১-২, দ্বিতীয় বিবরণ ১৯-২১)।
সব জাতিদের উপরে ঈশ্বর গুরুত্ব দেন, এটা ইস্রায়েল ও যিহূদা জাতির জন্য নত হওয়ার/ অহংকার ভাঙ্গার বিষয়, কারণ তারা নিজেদেরকে বিশেষ ও ঈশ্বরের প্রিয় মনে করে। আমোষের মূল সংবাদ মেনে নেওয়ার জন্য নত হওয়া প্রয়োজন: ইস্রায়েল দোষী, পাপে আসক্ত এবং অন্য জাতিদের তুলনায় ভিন্ন বা ঈশ্বরীয় আর নয়। তাই ঈশ্বর কঠোরভাবে অনুতপ্ত হওয়ার শেষ ডাক দেন, ধ্বংস কাছে এসে গেছে।
ইস্রায়েলের কাছে আমোষের চেতনাদায়ক সংবাদ
আমোষ রূপক অর্থে ইস্রায়েলের সামনে ‘আইনা’ ধরে রাখেন, তিনি চেতনায় ‘কামড় দেওয়ার মত’ তাদের পাপ ও লজ্জা প্রকাশ করেন এবং এভাবে তাদের আত্ম-সন্তোষ ভেঙ্গে দেন। তিনি কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন:
সামাজিক অন্যায়
আমোষ ইস্রায়েল জাতির যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা, তাদের মিশানো ধর্ম ও দেবতাপূজা নিয়েও নিন্দা করেন, কিন্তু প্রধানভাবে তিনি ইস্রায়েলের সামাজিক অন্যায় নিয়ে দোষ ধরেন, যেমন:
- আমোষ ২:৬-৭ “তার লোকেরা টাকা-পয়সার জন্য সৎ লোকদের এবং পায়ের এক জোড়া জুতার জন্য অভাবীদের বিক্রি করে। ধুলা মাড়াবার মত করে তারা গরীবদের মাড়ায় এবং পথ থেকে অভাবীদের ঠেলে সরিয়ে দেয়।”
- আমোষ ৫:১০-১২ “যে লোক শহরের ফটকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তোমরা তো তাকে ঘৃণা কর এবং যে সত্যি কথা বলে তাকে তুচ্ছ কর। তোমরা গরীবকে অত্যাচার কর এবং জোর করে তার কাছ থেকে শস্য আদায় কর। কাজেই তোমরা যদিও পাথরের বড় বড় ঘর তৈরী করে থাক তবুও তোমরা তাতে বাস করতে পারবে না … আমি জানি তোমাদের অন্যায় কত বেশী এবং তোমাদের পাপ কি ভীষণ! তোমরা তো সৎ লোকদের উপর অত্যাচার কর ও ঘুষ খাও; শহরের ফটকে তোমরা গরীবদের ন্যায়বিচার পেতে দাও না।”
- আমোষ ৫:২৩-২৪ “তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর। তোমাদের বীণার বাজনা আমি শুনব না। তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক।”
- আমোষ ৮:৪-৬ “তোমরা যারা অভাবীদের পায়ে মাড়াচ্ছ আর গরীবদের শেষ করে দিচ্ছ, তোমরা শোন। তোমরা বলছ, “কখন অমাবস্যা চলে যাবে যাতে আমরা শস্য বিক্রি করতে পারি? কখন বিশ্রাম দিন শেষ হবে যাতে আমরা বাজারে গম বেচতে পারি? আমরা মাপের টুকরি ছোট করব, দাম বাড়াব, ঠকামির দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করব, রূপা দিয়ে গরীবকে এবং এক জোড়া জুতা দিয়ে অভাবীকে কিনে নেব আর ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেওয়া গম তাদের কাছে বিক্রি করব।”
মনে করা যায় যে, আমোষ এখানে একজন গরীব হিসাবে ধনীদের সুঅবস্থা নিয়ে হিংসা করে তাদের দোষ ধরে। কিন্তু আসলে তা না। তিনি ধনী হওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেন না (মোশির আইন-কানুনও তা করে না)। প্রকৃতপক্ষে, পুস্তকের শেষে আমোষ একটি অতি সুন্দর আশাবাণী দেন, যেখানে ইস্রায়েলের বাকি লোকদের পুনরুদ্ধারের বর্ণনায় তিনি অনেক অর্থনৈতিক আশীর্বাদও উল্লেখ করেন (আমোষ ৯:১১-১৫)।
এর চেয়ে আমোষ তাদের যে আচরণের বিষয়ে দোষ ধরেন, তা হল: অতি ধনী হওয়া, এমন সময়ে যখন অধিকাংশ লোক অতি গরীব ও বঞ্চিত। অন্যায়-লাভ, ঘুষ, ন্যায়বিচারের বিকৃতি, সাধারণ লোকদের অধিকার নষ্ট করা, দুর্বলদের অত্যাচার, ঠকানো, যত্নহীনতা ও অতি বিলাসিতা নিয়ে তিনি তাদের দোষ ধরেন। যারা ন্যায্যতার পক্ষে কিছু করতে পারত কিন্তু কিছু করে না, তিনি তাদের দোষ ধরেন। যদি কেউ এই সব করার পরে নিজেকে বড় করে ধার্মিক লোক হিসাবে উপস্থাপনা করে, তবে তা গরীবদের মুখে থুথু ফেলার মত হয়ে যায়, অথবা ঈশ্বরের মুখে থুথু ফেলার মত – প্রকৃতপক্ষে এই দু’টি বিষয় একই।
যৌন অনৈতিকতা
- আমোষ ২:৭-৮ “বাবা ও ছেলে একই মেয়ের সংগে ব্যভিচার করে এবং এইভাবে আমার পবিত্র নামের অসম্মান করে। তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায় …”
যদিও যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা আমোষ পুস্তকে বেশি উল্লিখিত নয় তবুও তা অন্যান্য অন্যায়ের সাথে সম্পর্কিত। অনেক বার অনৈতিকতা প্রকৃতপক্ষে গরীব বা দুর্বলদের যৌন নির্যাতন হিসাবে দাঁড়ায়। অনেক বার তা দেবতা পূজার সাথে সম্পর্কিত (যৌনতা দিয়ে উর্বরতা দেব-দেবীর পূজা, মন্দিরে বেশ্যা দাসী) অথবা একটি মিথ্যা ধার্মিকতার সাথে সংযুক্ত, যেখানে বড় উৎসর্গ দিলে নৈতিকতার আর কোন দাবি আসে না।
ঈশ্বর ও তাঁর আইন-কানুনকে ভুল ব্যাখ্যা করা এবং মিথ্যা ধার্মিকতা
- আমোষ ৫:২১-২৪ “সদাপ্রভু বলছেন, “আমি তোমাদের পর্বগুলো ঘৃণা করি, অগ্রাহ্য করি; তোমাদের সভাগুলো আমি সহ্য করতে পারি না। তোমরা আমার উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করলেও আমি সেগুলো গ্রহণ করব না। যদিও তোমরা মোটাসোটা পশু দিয়ে যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর তবুও সেই দিকে আমি চেয়েও দেখব না। তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর। তোমাদের বীণার বাজনা আমি শুনব না।”
- আমোষ ৪:৪-৫ “তোমরা যখন বৈথেলে গিয়ে পাপ করতে চাইছ তখন যাও, পাপ কর; গিল্গলে গিয়ে আরও বেশী করে কর। প্রতিদিন সকালে তোমাদের উৎসর্গের জিনিস এবং প্রতি তিন দিনের দিন তোমাদের দশ ভাগের এক ভাগ জিনিস নিয়ে যাও। তোমরা ধন্যবাদের উৎসর্গ হিসাবে খামি দেওয়া রুটি দাও ও তোমাদের নিজের ইচ্ছায় দেওয়া উৎসর্গের জিনিস নিয়ে বড়াই কর, কারণ হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা তো তা করতে ভালবাস। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”
আমোষ শক্তিশালীভাবে মিথ্যা ধার্মিকতা, অর্থাৎ এমন ধর্মকর্ম যা প্রকৃতপক্ষে বাহ্যিক অনুশীলন বা নিয়মমাত্র কিন্তু অন্তরে পরিবর্তন নেই, মুখে মাত্র ঈশ্বরের নাম ব্যবহার কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে দুর্বলদের উপর অত্যাচার এই সবগুলোর দোষ ধরেন।
আত্ম-সন্তোষ এবং মিথ্যা নিরাপত্তা
- আমোষ ৬:১৩ “তোমরা … বলে থাক, “আমরা কি নিজের শক্তিতে কর্ণয়িম (যার মানে ‘শক্তিশালী শিং’) অধিকার করি নি?”
- আমোষ ৬:৮ “আমি যাকোবের অহংকার এবং তার দুর্গগুলো ভীষণ ঘৃণা করি ..”
- আমোষ ৯:১০ “আমার সব পাপী লোকদের মধ্যে যারা বলে, ‘অমংগল আমাদের নাগাল পাবে না কিম্বা আমাদের কাছে আসবে না,’ তারা সবাই যুদ্ধে মারা পড়বে।”
যখন একটি দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুঅবস্থা থাকে তখন সাধারণত তৈরি হয় অহংকার, আত্ম-নির্ভরতা, ঈশ্বর ভক্তিহীনতা এবং মিথ্যা নিরাপত্তা।
ইস্রায়েল অন্য জাতিদের তুলনায় আর ভিন্ন নয়
হয়তো এই বিষয় হল আমোষের সবচেয়ে কঠোর কামড়: তিনি ইস্রায়েলকে দেখান যে তারা আদর্শ জাতি নয়, প্রকৃতপক্ষে তারা অন্য জাতিদের মত হয়ে গেছে, তারা নিজের আহ্বান নষ্ট করেছে, তারা নিজের মনোয়ন নষ্ট করেছে।
- আমোষ ৩:৯ “তোমরা অস্দোদ ও মিসরের সব দুর্গের লোকদের কাছে বল, “তোমরা শমরিয়ার পাহাড়গুলোর উপরে জড়ো হও; দেখ, তার মধ্যে কত গোলমাল! তার লোকদের মধ্যে কত অত্যাচার!”
আমোষ এখানে পলেষ্টীয় ও মিসরীয়দের সাক্ষী হিসাবে ডাকেন, যেন তারা অবাক হয়ে দেখে ইস্রায়েলের মধ্যে কি মন্দ কাজ চলছে। কথাটি কত লজ্জাদায়ক! কতটা কামড়ের মত!
- আমোষ ৯:৭-৮ “সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমরা কি আমার কাছে কূশীয়দের মত নও? আমি কি মিসর থেকে ইস্রায়েলীয়দের, ক্রীট থেকে পলেষ্টীয়দের এবং কীর থেকে অরামীয়দের নিয়ে আসি নি? আমার চোখ অবশ্যই এই পাপে পূর্ণ রাজ্যের উপর রয়েছে।”
ঈশ্বর এখানে ইস্রায়েলকে কট্টর চ্যালেঞ্জমূলক প্রশ্ন করেন, তাদের আহ্ববান বা মনোনয়ন কোথায়? ঈশ্বর দাবি করেন যে, তিনি যা ইস্রায়েলের জন্য করেছেন, তা তিনি সব জাতিদের জন্য করেছেন, তাই অহংকার বা নিজেকে বিশেষ কিছু মনে করার একেবারেই কোনো কারণ নেই। ঈশ্বর তাদের মনোনীত করেছিলেন, এ কারণে তাদের মধ্যে নম্রতার প্রকাশ, ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা, আহ্বান পূর্ণ করার আগ্রহ এবং সমর্পণ তৈরি করার কথা ছিল। দুঃখের বিষয় হল, এই ধরণের মনোভাব ইস্রায়েলের মধ্যে একদমই নেই।
আমোষের দর্শনগুলো ও বিনতি
আমোষ ৫টি দর্শন দেখেন (আমোষ ৭:১-৯, ৮:১-৯:৪): পঙ্গপাল, আগুন, ওলনদড়ি, পাকা ফলের টুকরি এবং বেদী ও মন্দিরের থামগুলোকে আঘাত। দর্শনগুলোর মধ্যে একটি লক্ষণীয় ক্রমবৃদ্ধি দেখা যায়:
- প্রথম দর্শনে ঈশ্বর ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল প্রস্তুত করছেন। দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৩৮ পদ অনুসারে ইস্রায়েলীয়েরা অবাধ্য হলে ঈশ্বর এই ধরণের আংশিক বিচার ঘটানোর মাধ্যমে তাদের মন ফিরানোর ডাক দেন। আমোষ পঙ্গপালের দর্শন দেখে বিনতি করেন: “হে প্রভু সদাপ্রভু, ক্ষমা কর। যাকোব কি করে বেঁচে থাকবে? সে তো খুবই ছোট।” ঈশ্বর আমোষের বিনতি শুনে বলেন যে, “ঐ রকম ঘটবে না” (আমোষ ৭:২-৩)। আমোষের ইস্রায়েলীয় শ্রোতারা “সে তো খুবই ছোট” এই কথা শুনে খুশি হবে না যেহেতু তারা নিজেকে অনেক কিছু মনে করে, কিন্তু আমোষ ইস্রায়েলের দুর্বলতা বুঝে ঈশ্বরের করুণা প্রার্থনা করেন।
- দ্বিতীয় দর্শন ঠিক প্রথম দর্শনের মত: ঈশ্বর আগুন ডাকেন, আমোষ বিনতি করেন এবং ঈশ্বর এই বিচার ঘটানোও বাদ দেন।
- তৃতীয় দর্শনে আমোষ একটি ওলনদড়ি দেখেন এবং ওলনদড়ি সম্বন্ধে ঈশ্বরের কথা শোনেন “আমার লোক ইস্রায়েলের মধ্যে আমি একটা ওলনদড়ি রাখছি; আমি আর তাদের রেহাই দেব না” (আমোষ ৭:৮)। ওলনদড়ি হল একটি যন্ত্র, যা দ্বারা একটি দেওয়াল আসলে সোজা কিনা, তা মূল্যায়ন করা হয়। ওলনদড়ি দেখে আমোষ ঈশ্বরের কাছে আর বিনতি করেন না: তিনি জানেন ইস্রায়েল জাতি কত মন্দ ও স্বৈরাচারী হয়ে গেছে। তিনি বুঝেন যে, বিচার না করা মানে অন্যায় চলতে দেওয়া এবং অন্যায়কে আরো চলতে দেওয়া তা আর করুণার বিষয় নয়।
- পাকা ফলের টুকরি এবং মন্দিরের থামে আঘাত এই দু’টি শেষ দর্শন হল শীঘ্রই আসা বিচারের ঘোষণা। অর্থাৎ, ইস্রায়েলের বিচার আর বাদ দেওয়া যায় না এবং পিছানোও আর সম্ভব না। ন্যায্যতা এখন বিচার দাবি করে।
কেউ কেউ হয়তো বলবে যে, আমোষের আরো করুণা দাবি করা উচিত ছিল। অনেক বার আমরা এভাবে (বেশ অন্ধভাবে) ‘বিনতি’ করতে থাকি: ‘ঈশ্বর, তুমি কেন আমাদের দয়া দিচ্ছ না? বেচারা মানুষদের কেন বিচার করবে?’ কিন্তু এই ধরণের বিনতি হয়তো সঠিক বিনতি নয়, কারণ এতে ঈশ্বরকে দোষারোপ করা হয় এবং ঈশ্বরকে কেন বিচার করতে হয়, তা বুঝার মনোভাব নেই। বিনতি মানে না একজন অনিচ্ছুক ঈশ্বরকে ‘জোর করে দয়াময় বানানো’, ঈশ্বর অত্যন্ত দয়াবান এবং যদি দয়া দেখানোর একটি ন্যায্য পথ আছে, তবে তিনি অবশ্যই দয়া দেখাবেন। আমোষ ঈশ্বরকে বুঝতে পারেন। যদিও বিচারের ঘোষণা দিতে তার খারাপ লাগে, তিনি ঈশ্বরের সাথে একমত যে, আর উপায় নেই, বিচার করা দরকার। এর জন্য:
ইস্রায়েলের ধ্বংসের ঘোষণা
- আমোষ ৯:১-৪ “আমি প্রভুকে বেদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তিনি বললেন, “থামগুলোর মাথায় আঘাত কর যাতে সেগুলো কেঁপে উঠে সেখানকার সমস্ত লোকদের মাথার উপর ভেংগে পড়ে। যারা বেঁচে থাকবে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমি তাদের মেরে ফেলব। কেউ চলে যেতে কিম্বা পালাতে পারবে না। তারা মৃতস্থানের গভীর পর্যন্ত খুঁড়ে সেখানে গেলেও আমার হাত সেখান থেকে তাদের নিয়ে আসবে … তারা কর্মিল পাহাড়ের চূড়ায় নিজেদের লুকালেও সেখান থেকে আমি তাদের খুঁজে বের করে ধরব। তারা আমার কাছ থেকে সমুদ্রের তলায় লুকালেও সেখানে তাদের কামড়াবার জন্য আমি সাপকে আদেশ দেব। শত্রুদের দ্বারা বন্দী হয়ে তারা অন্য দেশে গেলেও সেখানে তাদের মেরে ফেলবার জন্য আমি তলোয়ারকে আদেশ দেব। মংগলের জন্য নয় কিন্তু অমংগলের জন্যই আমি তাদের উপর আমার চোখ স্থির রাখব।”
যদিও রাজা যারবিয়াম-২-এর সময়ের শ্রোতাদের কানে এই ধ্বংসবাণী অবিশ্বাস্য ছিল, তবুও তা ইতিহাসে বেশ তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়। যারবিয়াম-২-এর মৃত্যুর পরে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজারা খুবই দুর্বল ছিলেন এবং তাদের প্রায় সবাইকে খুন করে সিংহাসন থেকে সরানো হয়। এভাবে ইস্রায়েল দেশ সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়ে এবং মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে আসিরিয়ার সম্রাট সলমনেষর ইস্রায়েলকে দখল করেন এবং রাজধানী শমরিয়াকে ঘেরাও করেন। আসিরিয়ার পরবর্তী সম্রাট সোর্গন-২ শমরিয়কে দখল ও ধ্বংস করেন এবং ইস্রায়েল দেশের যতজন বেঁচে থাকে, তাদের সবাইকে তিনি জোর করে নির্বাসনে নিয়ে যান। সেখানে তারা অন্যান্য জাতিদের মধ্যে মিশে গিয়ে হারিয়ে যায় এবং ইতিহাসে তাদের আর খবর পাওয়া যায় না। ইস্রায়েলের সেই দশ গোষ্ঠি আর কখনও প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে আসার সুযোগ পায় না (২ রাজা ১৭:৫-৬)।
আমোষের আশারবাণী
বর্তমান যুগের জন্য আশা
যদিও আমোষ ইস্রায়েলকে শক্তিশালীভাবে ও অত্যন্ত কঠোরভাবে দোষারোপ করেন তবুও তার জরুরী ডাক মানে হল, এখনও আশা আছে: “ইস্রায়েলের লোকদের সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা আমার কাছে এস, তাতে বাঁচবে। … তোমরা সদাপ্রভুর কাছে যাও তাতে বাঁচবে; তা না হলে তিনি আগুনের মত করে যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে জ্বলে উঠবেন। সেই আগুন গ্রাস করবে এবং বৈথেলের কেউ তা নিভাতে পারবে না। … তোমরা যাতে বাঁচতে পার সেইজন্য ভালোর পিছনে যাও, মন্দের পিছনে নয়; তাহলে যেমন তোমরা বলে থাক তেমনি সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু সত্যিসত্যিই তোমাদের সংগে থাকবেন” (আমোষ ৫:৪,৬,১৪)। ঈশ্বর থেকে ভাববাদী পাঠানোর অর্থ হল এখনও অনুতাপের সুযোগ আছে, কারণ আশা যদি আর না থাকত তবে ভাববাদীর আর কথা বলার প্রয়োজন ছিল না।
আমোষ পরিষ্কারভাবে বলেন যে, দেশ হিসাবে ইস্রায়েল নিশ্চিত ধ্বংস হবে কিন্তু ইস্রায়েল দেশের কোন ব্যক্তি যদি এখনও অনুতপ্ত হয় তবে ঈশ্বর অনুতাপের সাড়ায় তার জন্য একটি পথ খুলে দেবেন। যদিও ভাববাদী হোশেয় ও ভাববাদী আমোষ উভয়েই ইস্রায়েল দেশের নিশ্চিত ধ্বংস ঘোষণা করেন, তবুও ইস্রায়েল দেশের ঈশ্বর ভক্ত লোকদের জন্য তাদের বাণীর অর্থ এই: ইস্রায়েল দেশ ত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশ যিহূদায় আশ্রয় নেওয়ার শেষ ডাক।
ইস্রায়েলের ইতিহাসে মোট দু’টি সময়ের উল্লেখ পাওয়া যায়, যখন ইস্রায়েল দেশের ক্রমশই মন্দতা বৃদ্ধির কারণে সেখানকার ঈশ্বর ভ্ক্ত লোকেরা ইস্রায়েল ত্যাগ করে যিহূদা দেশে চলে এসেছিল (২ বংশা ১১:১৩-১৭, ২ বংশা ১৫:৮ দেখুন)। এছাড়া দেখা যায় যে, যিহূদা দেশের রাজা হিষ্কিয় (২ বংশা ৩০:১১) এবং আরো অনেক পরের রাজা যোশিয় (২ রাজা ২৩:১৫-২০) ইস্রায়েল দেশের বাসিন্দাদের ঈশ্বরের দিকে নিয়ে আসতে চেষ্টা করেন।
আমোষ, যিনি ইস্রায়েল দেশে গিয়ে সেখানে ধ্বংসের এই বাণী দিয়েছিলেন, সম্ভাবনা বেশী পরবর্তীতে তিনি যিহূদায় ফিরে এসে যিহূদার লোকদের কাছে তার ভাববাণী লিখিত রাখেন (আমোষ ১:২, ৩:১, ৬:১, ৭:২, ৭:৯), যার কারণে আমোষ নামক পুস্তক বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। পরবর্তীতে এই যিহূদাকেও নির্বাসিত করা হয় (৫৮৬ খ্রীঃপূঃ), তবে যিহূদা দেশের লোকেরা নির্বাসন থেকে ফিরে আসার বড় সুযোগ পায় (৫৩৬ খ্রীঃপূঃ) এবং সেই ফিরে আসা যিহূদীরা আমোষের ভাববাণী (এবং অন্যান্য ভাববাদীদের লেখাগুলো) পবিত্র শাস্ত্র হিসাবে সুরক্ষিত রেখেছিল।
ভবিষ্যৎ আশা
পুস্তকটির শেষাংশে আমোষ একটি আশা বাণী যুক্ত করেন, যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদ পাওয়া যায় (আমোষ ৯:১১-১২): “সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন আমি দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর আবার উঠাব। আমি তার ভাংগা জায়গাগুলো মেরামত করব, ধ্বংসস্থানগুলো ঠিক করব এবং আগে যেমন ছিল তেমনি করে তা তৈরী করব, যাতে ইস্রায়েলীয়েরা ইদোমের বাকী অংশ এবং আমার অন্য সব জাতিদের দেশ অধিকার করতে পারে।” সদাপ্রভু, যিনি এই সব কাজ করেন, তিনি এই কথা বলছেন।”
দেবতাপূজারী ও অননুতপ্ত অবস্থায় ইস্রায়েল যে দেশ হিসাবে নতুন একটি শুরু উপভোগ করবে, তা নয়। বরং ঈশ্বর “দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর”-এর পুনরুদ্ধার করবেন। এই বাণী শুনে আমোষের শ্রোতারা, অর্থাৎ ইস্রায়েল দেশের ঈশ্বর ভক্ত লোকেরা হয়তো বুঝতে পারে যে, শুধুমাত্র যিহূদার উপরে, অর্থাৎ “দায়ূদের ঘর” বা দায়ূদের বংশের উপরে এই মশীহ সম্বন্ধীয় আশা রয়েছে। যদিও পরবর্তীতে যিহূদা দেশকেও ধ্বংস করা হয় ও তার বেঁচে থাকা লোকসংখ্যা নির্বাসিত করা হয়, তবুও তাদের উপরেই এই পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা রয়েছে এবং পরবর্তীতে এই যিহূদীরা নির্বাসন থেকে ফিরে আসার সুযোগ পায়। প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে আসা যিহূদী বংশধরদের মধ্যে যীশু একদিন জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর দ্বারাই “দায়ূদের ঘর আবার উঠানো হবে” অর্থাৎ, যীশু দ্বারাই এই প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা।
নতুন নিয়মের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমোষের এই আশা বাণী (আমোষ ৯:১২) উদ্ধৃতি করা হয়: ৪৯ খ্রীষ্টাব্দে যখন প্রেরিতেরা যিরূশালেমে একত্রিত হয়ে একসাথে একটি কঠিন প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন, তারা আমোষের এই পদ থেকে সমর্থন পেয়ে উপসংহারে আসেন যে, ঈশ্বর শুরু থেকে অন্যান্য জাতিদের পরিত্রাণে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন (প্রেরিত ১৫:১৬-১৭)। তা-ই প্রকৃতপক্ষে সুখবর!