ইব্রীয় চিঠি এমন যিহূদী বিশ্বাসীদের কাছে লেখা যারা অত্যাচারিত ও যিহূদী ধর্মের মধ্যে ফিরে যাওয়ার প্রলোভনে আছে। লেখক তাদের দেখান যে যীশুর মধ্যে যিহূদী ধর্মের সব বিষয় পূর্ণ হয়, তাই যীশুকে অস্বীকার করা মানে সব কিছু হারানো।
ইব্রীয় পুস্তক কে লিখেছেন, তা অজানা। সম্ভাব্য লেখক হল পৌল, বার্ণবা, আপোল্ল, আকিলা ও প্রিষ্কিল্লা, ইত্যাদি, কিন্তু নিশ্চয়তার সঙ্গে কিছু বলা যায় না। কিন্তু ইব্রীয় পুস্তক পড়ে কেউ এই পুস্তকের লেখকের কথা বলার অধিকার, তার গভীর জ্ঞান ও আগ্রহ নিয়ে সন্দেহ করে না।
ইব্রীয় পুস্তক এমন যিহূদী বিশ্বাসীদের কাছে লেখা যারা আগে একবার অত্যাচারিত হয়েছে (ইব্রীয় ১১:৩২) এবং যারা বর্তমানে আবারও ভয়ংকর অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। হতে পারে এই অত্যাচারটা হল রোমীয় বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ৬৪ থেকে ৬৭ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট নীরোর অত্যাচার। নীরো নির্দিষ্টভাবে ‘খ্রিষ্টানদের’ টার্গেট করেছিলেন, তাই রোমীয় মণ্ডলীর একটি যিহূদী গৃহ মণ্ডলী এই কঠোর অত্যাচার এড়িয়ে যেতে পারত যদি তারা নিজেকে ‘যিহূদী মাত্র’ হিসাবে পরিচয় দেয়, যদি তারা যীশুকে অস্বীকার করে যিহূদী ধর্মে ফিরে লুকায় (ইব্রীয় ১২:৪)। পুস্তকের লেখক তাদের একটি শক্তিশালী সাবধাণবাণী দেন যে যীশুকে অস্বীকার করলে তারা সব কিছু হারাবে, এমন কি সে যিহূদী ধর্মও হারাবে।
এই কথা প্রমাণ করার জন্য লেখক অনেক অধ্যায় ধরে একটি বড় তুলনা দেখান: তিনি যিহূদী ধর্ম যত কিছু খুব সম্মানের চোখে দেখা হত, ততটা তিনি যীশুর সঙ্গে তুলনা করে প্রমাণ করেন যে যীশু তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং যীশুই তার পূর্ণতা।
যীশুই যিহূদী ভাববাদীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ: তারা ঈশ্বরের বাক্য বলেছিলেন কিন্তু যীশু ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে মাত্র ঈশ্বরের বাক্য বলেন না কিন্তু তিনিই পিতার প্রতিনিধি (ইব্রীয় ১:১-৪)।
যীশু স্বর্গ দূতদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ: স্বর্গ দূত হল ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য সেবক, কিন্তু যীশুকে ঈশ্বরের ডানদিকে বসতে বলা হয়েছে এবং তিনি “রাজমুকুট হিসাবে তাকে দান” করেছেন “গৌরব ও সম্মান” (ইব্রীয় ১:৫-২:১৩), তার পদ এমন যা কোন দূতকে দেওয়া হয় নি।
যীশু মোশির চেয়েও শ্রেষ্ঠ, যিনি দাস হিসাবে ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের দেখাশুনা কাজে বিশ্বস্ত ছিলেন, কিন্তু যীশু পুত্র হিসাবে ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের দেখাশোনার কাজে বিশ্বস্ত ছিলেন (ইব্রীয় ৩:১-৬)।
যীশু প্রতিজ্ঞাত দেশের চেয়েও শ্রেষ্ঠ: যিহোশূয় ইস্রায়েলকে প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিকার দিয়ে তাদের বিশ্রাম দিয়েছেন। কিন্তু যে ‘প্রতিজ্ঞাত দেশ’ বা ‘বিশ্রাম’ বিশ্বাসীরা যীশুর মধ্য দিয়ে পায়, তা হল আরো অনেক মহান ও চিরস্থায়ী: পরিত্রাণ (ইব্রীয় ৪:১-১১)।
যীশু মহা পুরোহিতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ: আইন-কানুন অনুসারে স্থাপন করা যাজকত্বের পদ্ধতিতে এমন পুরোহিত উৎসর্গ দিতেন যারা ছিল মরণশীল ও পাপী। তাদের বছরের পর বছর একটি মানুষের হাত দিয়ে তৈরি তাম্বুতে নিজের এবং অন্যদের জন্য উৎসর্গ দিতে হত। তারা মরণশীল বলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নতুন পুরোহিত দাঁড়াতে হত। কিন্তু যীশু ছিলেন সে পাপহীন মহাপুরোহিত যিনি একবার সব সময়ের জন্য সে এক উৎসর্গ দিয়েছেন যাতে পাপের ক্ষমা হয়: তিনি নিজেকে ক্রুশে উৎসর্গ দান করেছিলেন। যীশু হারোণের বংশধর নয়, কিন্তু তিনি মল্কীষেদক ধরণের পুরোহিত। মল্কীষেদকের যাজকত্ব হল হারোণের যাজকত্বের চেয়ে পুরানো ও মহান (আদি ১৪:১৭-২১, গীত ১১০:৫)। তাই যীশু হলেন আরো শ্রেষ্ঠ চুক্তি বা ব্যবস্থার মধ্যস্থকারী।
এভাবে ইব্রীয় পুস্তকের লেখক প্রমাণ করেন যে যীশু সর্বশ্রেষ্ঠ ও যিহূদী ধর্মের সব কিছুর পূর্ণতা। তাই যীশুকে অস্বীকার করা মানে যিহূদী ধর্মকে অর্থহীন বানানো। যীশুকে হারানো মানেই যিহূদী ধর্মকে হারানো। যীশুকে বাদ দিলে যিহূদী ধর্ম হয়ে যায় ‘খালি খোসা মাত্র’।
লেখক খুব আবেগ ও গুরুত্বের সঙ্গে পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করেন: “বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের যে আশা আছে, এস, আমরা স্থির হয়ে তাঁর কথা স্বীকার করতে থাকি, কারণ যিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি বিশ্বাসযোগ্য” (ইব্রীয় ১০:২৩)। তিনি তাদের বিশ্বস্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য পুরাতন নিয়মের অনেক লোকদের উল্লেখ করেন যারা খুব কঠিন অবস্থায় বিশ্বাসে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা ধরে রেখে ও ধৈর্য্য ধরে শেষে প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা লাভ করেছিলেন (ইব্রীয় ১১)।
তিনি বিশ্বাসীদের আরো চ্যালেঞ্জ করেন দাম দিতে রাজী থাকতে: যেন তারা ঝুুঁকি হলেও অন্য বিশ্বাসীদের সাথে দেখা করে (ইব্রীয় ১০:২৫), যেন তারা জেলে বন্দীদের কাছে যায় ও যারা যন্ত্রনা পায়, তাদের স্মরণ করে (ইব্রীয় ১৩:৩) এবং যেন তারা অপরিচিতদের প্রতি অতিথিপরায়ন হয়, হতে পারে বিশেষভাবে পলাতক মানুষের কারণে তা বলেন (ইব্রীয় ১৩:১)। এই সব সৎ আচরণ যিহূদী বিশ্বাসীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়ায় কারণ তা করলে তারা অত্যাচারী সরকারের মনোযোগ নিজের উপর নিয়ে আসে। লেখক পাঠকদের আরো উৎসাহিত করেন যেন তারা নেতাদের আদর্শ স্মরণ করে যারা তাদের আগে শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন এবং যেন তারা তাদের মত বিশ্বাস ধরে রাখতে থাকে (ইব্রীয় ১৩:৭)।
ইব্রিয় পুস্তকের লেখক
ইব্রীয় পুস্তকের লেখক নিজের পরিচয় দেন না, নিজের বিষয়ে কোন তথ্যও দেন না। মণ্ডলীর আদিপিতাদের লেখাগুলি থেকেও কোন তথ্য আসে না। তাই ইব্রীয় হল নতুন নিয়মের শুধুমাত্র পুস্তক যার লেখক সম্পূর্ণ অজানা।
কিন্তু ইব্রীয় পুস্তক পড়লে কেউ এই চিঠির authenticity, অধিকার বা ক্ষমতা সন্দেহ করে না। ইব্রীয় হল ঘনঘন বাইবেলীয় মতবাদ এবং সুসমাচারের একটি চমৎকার উপস্থাপনা। নতুন নিয়মে ইব্রীয় পুস্তকের মত আর কিছু নয়, শুধুমাত্র রোমীয় পুস্তক তার কাছাকাছি আসে।
ইব্রীয় পুস্তকের লেখক অজানা হলেও পুস্তকে তার সম্বন্ধে কিছু না কিছু বুঝা যায়:
- তিনি যীশুর একজন সরাসরি চোখের সাক্ষী নন, কিন্তু তিনি চোখের সাক্ষীদের থেকে শুনেছিলেন (ইব্রীয় ১:১)।
- তিনি তীমথিয়কে চিনেন এবং তার সঙ্গে যাত্রাও করেন (ইব্রীয় ১৩:২৩)।
- তিনি যিহূদী একজন বিশ্বাসী এবং তার পুরাতন নিয়মে সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান আছে।
- তিনি পুরুষ, কারণ ইব্রীয় ১১:৩২ পদে যখন লেখক “আমি” বলেন তিনি পুরষের সর্বনাম (male participle) ব্যবহার করেন।
- তিনি চমৎকার stylish গ্রীক লিখেন। ইব্রীয় হল নতুন নিয়মের পুস্তকদের মধ্যে সবচেয়ে চমৎকার গ্রীক।
বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়েছে, লেখক কে হতে পারে: বার্ণবা, পৌল, আপল্লো, আকিলা এবং আরো অনেকে। আপল্লোকে আসলে লেখক হিসাবে ধারণা করা যায়: তিনি ছিলেন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের একজন যিহূদী বিশ্বাসী, অত্যন্ত দক্ষ্য ও আগ্রহী passionate একজন শিক্ষক। তার চমৎকার শিক্ষার মূল বিষয় ছিল কিভাবে যীশু যিহূদী ধর্মের পূর্ণতা (প্রেরিত ১৮:২৭-২৮)।
ইব্রীয় পুস্তকের পাঠকরা এবং তাদের বর্তমান অবস্থা
আমাদের বাইবেলে চিঠিটির শিরোনাম দেওয়া আছে “ইব্রীয়দের কাছে লেখা চিঠি”। কিন্তু সবচেয়ে পুরাতন আবিষ্কৃত দলিলে এই শিরোনাম ছিল না বরং তা পরে যোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিঠিটি পড়লে নিঃসন্দেহে বুঝা যায় যে তা যিহূদী পাঠকদের জন্য লেখা হয়েছে কারণ চিঠি পুরাতন নিয়মের উদ্ধৃতি বা বিষয়ে ভরা। যত যা যিহূদী ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ বা প্রিয় ততটা নিয়ে এই চিঠিতে আলোচনা করা হয়।
তা ছাড়া ইব্রীয় ৫:১২ পদ থেকে বুঝা যায় যে পাঠকরা অল্পক্ষণ মাত্র কোন বিশ্বাসী নয়। লেখক তাদের ধমক দেন: “এত দিনে তোমাদের শিক্ষক হয়ে ওঠা উচিত ছিল, কিন্তু তার বদলে ঈশ্বরের বাক্যের গোড়ার কথাগুলোই আবার তোমাদের শিক্ষা দেবার জন্য শিক্ষকের দরকার হয়ে পড়েছে। শক্ত খাবারের বদলে ছোট ছেলেমেয়েদের মত আবার তোমাদের দুধ খাওয়া দরকার হয়ে পড়েছে।”
কিন্তু এই যিহূদী মণ্ডলী কোথায় অবস্থিত? মণ্ডলীতে যদিও যিহূদী বিশ্বাসী ইব্রীয় ২:৩ পদ থেকে বুঝা যায় যে তারা যীশুকে নিজের চোখে দেখে নি, তাই তারা যিহূদিয়া, গালীলে বা প্যালেষ্টাইনের লোক নয়। তা ছাড়া, এত চমৎকার, চাকচক্য গ্রীক ভাষা লেখক কেন ব্যবহার করবেন যদি পাঠকরা ইব্রীয় ভাষার যিহূদী?
চিঠি থেকে আরো বুঝা যায় যে পাঠকরা এমন একটি মণ্ডলী যাকে বর্তমানে অত্যাচার করা হচ্ছে এবং যা নিজেকে অনেক চাপে খুুঁজে পায় আবার যিহূদী ধর্মে ফিরে যেতে।
আরো বুঝা যায় যে পাঠকরা আগে একবার অত্যাচারিত হয়েছিল এবং সে সময় তারা চাপ হলেও অনেক বিশ্বস্ত ছিল। লেখক তা এভাবে বর্ণনা করেন (ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪): “আগের দিনগুলোর কথা মনে করে দেখ। তখন আলো পেয়ে দুঃখভোগের ভীষণ কষ্টের মধ্যেও তোমরা স্থির ছিলে। কোন কোন সময় সকলের সামনে অপমান ও অত্যাচার সহ্য করে তোমরা ঠাট্টার পাত্র হয়ে দুঃখভোগ করেছিলে; যাদের উপর ঐ রকম ব্যবহার করা হয়েছিল তাদের সংগে দুঃখভোগ করেছিলে; আর যারা জেলে গিয়েছিল তাদের দুঃখে দুঃখী হয়েছিলে। তোমাদের জিনিসপত্র লুট হয়ে যাওয়া তোমরা আনন্দের সংগেই মেনে নিয়েছিলে, কারণ তোমরা জানতে যে, আরও ভাল ও স্থায়ী ধন তোমাদের জন্য রয়েছে। ”
কি মণ্ডলী এভাবে দুইবার অত্যাচারিত হল? একটি মণ্ডলী যা সম্বন্ধে আমরা এই ধরণের অবস্থা জানি ছিল রোম শহরের মণ্ডলী: ৪৯ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট ক্লৌদিয় সমস্ত যিহূদীদের রোম ও ইটালী ছেড়ে যেতে বলেন কারণ “খ্রেস্টস” নামে একজনের কারণে একটি আন্দোলন হয়েছিল। হতে পারে তা ছিল এমন একটি ঘটনা যা আমরা প্রেরিত পুস্তকে বার বার দেখি: যখন সুসমাচার প্রচার হয় ও অনেক যিহূদীরা খ্রীষ্টতে বিশ্বাসী হয়ে যায় তখন স্থানীয় যিহূদীরা এই নতুন মণ্ডলীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালায়। স্রাটের আদেশের কারণে যিহূদীদের জরুরীভাবে চলে যেতে হয়েছিল, যিহূদী-যুহূদী হোক না যিহূদী-বিশ্বাসী হোক, সবার সব কিছু ফেল রেখে বা বিক্রি করে অন্য প্রদেশে চলে যেতে। যখন সম্রাট ক্লৌদিয় ৫৪ খ্রীষ্টাব্দে মারা যান এই আদেশ আস্তে আস্তে বাতিল হয়ে পড়ে এবং যিহূদীরা রোমে ফিরে আসতে শুরু করে। হতে পারে এইটা ছিল সে আগরের অত্যাচার যাতে ইব্রীয় চিঠির পাঠকরা ভাল করেছে।
কিন্তু যখন ৬৪ খ্রীষ্টাব্দে নতুন সম্রাট নীরো রাজধাণী রোমে আগুন লাগান তখন তিনি এই সর্বনাশের দোষ একটি ছোট, অপরিচিত দলের উপরে চাপিয়ে দেন: খ্রিষ্টানদের উপর। তিনি একটি ভয়ংকর অত্যাচার চালান, যাতে পিতর, পৌল এবং আরো এক হাজার বিশ্বাসীরা শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেন।
আমরা রোমীয় ১৬ অধ্যায় থেকে জানি যে রোম মণ্ডলী ছিল এই বড় শহরে ছিটিয়ে পড়া অনেক গৃহমণ্ডলী। হতে পারে ইব্রীয় চিঠির পাঠকরা হল এই ধরণের একটি গৃহ মণ্ডলী, যার সদস্যরা সব যিহূদী। চিন্তা করুন এই মণ্ডলীর উপর কত চাপ ছিল নিজেকে “যিহূদী মাত্র” হিসাবে ঘোষণা করতে, কারণ এই বার অত্যাচার শুধুমাত্র খ্রিষ্টানদের উপরে নামছিল, যিহূদীদের উপরে না। তাই যদি এই যিহূদী মণ্ডলী নিজেকে তাদের যিহূদী পরিচয়ে লুকিয়ে রাখে তবে তারা অত্যাচার সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু যদি তারা যীশুকে স্বীকার করে তবে তাদেরও জীবন দিতে হবে!
আমরা আরো কিভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে পাঠকরা হল রোম শহরে একটি গৃহ মণ্ডলী? মণ্ডলীর ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে ইব্রীয় চিঠি প্রথমে রোমীয় বিশ্বাসীদের কাছে জানা ছিল এবং মণ্ডলীর আদিপিতা রোম শহরের ক্লীমেন্ট ছিলেন প্রথম যিনি ইব্রীয় চিঠি থেকে উদ্ধৃতি করেন (৯৬ খ্রীঃ)। রোমীয় মণ্ডলী তীমথিয়কেও চিনতেন।
পাঠকদের এই কঠিন পরিস্থিতি বুঝে ইব্রীয় চিঠির প্রধান বিষয় এবং এমন কি চিঠিতে ব্যবহারিক আদেশগুলির গুরুত্ব আরো বুঝা যায়: লেখক তার পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করেন “কোন কোন লোকের যেমন অভ্যাস আছে তাদের মত আমরা যেন সভায় একসংগে মিলিত হওয়া বাদ না দিই, বরং খ্রীষ্টের আসবার দিন যতই কাছে আসবে ততই যেন আমরা একে অন্যকে আরও উৎসাহ দিতে থাকি” (ইব্রীয় ১০:২৫)। এই আদেশের অর্থ শুধুমাত্র এই নয় যে রিতিমত গির্জায় যাওয়া উচিত কিন্তু এর চেয়ে খুব বড় একটি চ্যালেঞ্জ নিজেকে অত্যাচারিত বিশ্বাসী ভাইদের থেকে আলাদা না করতে যেন নিরাপদ থাকি বরং ঝুঁকি হলেও নিজেকে না লুকাতে এবং তাদের সাথে সহভাগিতা করতে। লেখক পাঠকদের আরো বলেন “যারা জেলে আছে তাদের সংগে যেন তোমরাও কয়েদী হয়েছ, আর যারা অত্যাচারিত হচ্ছে তাদের সংগে যেন তোমরাও অত্যাচারিত হচ্ছ, এইভাবে তাদের কথা মনে কোরো” (ইব্রীয় ১৩:৩)। আবারও তার অর্থ এই যে আমি কষ্টভোগে ভাইদের প্রতি ভালবাসা ও সেবা দিতে থাকি যদিও তা করলে নিজের জন্য ঝুঁকি।
আমরা রোমীয় ইতিহাস থেকে জানে যে নীরোর অত্যাচার ছিল হিংস্র: তিনি খ্রিষ্টানদের বড় স্টেডিয়ামে সর্বসমক্ষে খেলা-ধূলা হিসাবে মেরে ফেলত (রাক্ষুসে জন্টুদের সম্মুখে ফেলা, ক্রুশে দেওয়া, বাতি হিসাবে পুড়ানো ইত্যাদি)। যখন লেখক ১১ অধ্যায়ে বিশ্বাসের বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে কথা বলেন তিনি বলেন: “লোকে তাঁদের পাথর মেরেছিল, করাত দিয়ে দু’টুকরা করে কেটেছিল এবং ছোরা দিয়ে খুন করেছিল (পৌল!)। তাঁরা অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার পেয়েছিলেন, আর অভাবে পড়ে ভেড়া ও ছাগলের চামড়া পরে ঘুরে বেড়াতেন। তাঁরা মরুভূমিতে মরুভূমিতে, পাহাড়ে পাহাড়ে, গুহায় গুহায় এবং গর্তে গর্তে পালিয়ে বেড়াতেন। এই লোকদের স্থান দেবার যোগ্যতা জগতের ছিল না” (ইব্রীয় ১১:৩৭-৩৮)। হতে পারে ইব্রীয় পুস্তক লেখার সময় পিতর ও পৌল ইতিমধ্যে শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন কারণ ইব্রীয় ১৩:৭ পদে লেখক বলেন: “যাঁরা তোমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বলতেন তোমাদের সেই নেতাদের কথা মনে রেখো। তাঁদের জীবনের শেষ ফলের কথা ভাল করে চিন্তা কোরো এবং তাঁদের মত করে তোমরাও বিশ্বাস কোরো”। লেখত পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা তাদের জীবন দিতে রাজি থাকেন যেমন নেতারা তাদের চোখের সামনে আদর্শ হিসাবে করেছিলেন।
লেখকের কি পাঠকদের এত করা চ্যালেঞ্জ করা কি ঠিক? তার কি অধিকার আছে দূরে থেকে চিঠির মাধ্যমে পাঠকদের মারা যেতে উৎসাহিত করতে? ইব্রীয় ১৩:২৩ পদে উত্তর পাওয়া যায়: “আমাদের ভাই তীমথিয় খালাস পেয়েছেন। তিনি যদি শীঘ্র আসেন তবে তাঁকে সংগে করে তোমাদের দেখতে আসব”। এর অর্থ হল যে লেখক শিঘ্রই রোম শহরের আসবে, তীমথিয়ের সঙ্গে, এবং তারা এই কষ্টের অবস্থায় মণ্ডলীর সাথে যোগ দেবেন। এইটি কি ভেরাতে যাওযার জন্য সুবিধার সময়?
কিন্তু যদিও লেখক রোমে আসতে সক্ষম হন নি বা এই অত্যাচারে মারা যান নি (আসলে অধিকারংশ প্রেরিত ও সুসমাচারের কর্মীরা এক সময় না অন্য সময় শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করতেন) তবুও যীশু বিশ্বাসীদের নিজের জীবন উৎসর্গ করার যোগ্য – সবার শহীদ না হলেও অথবা ভিন্ন সময়ে শহীদ হলেও।
ইব্রীয় পুস্তকে একটি বিষেষ লেখার ধরণ: সিন্ক্রিসিস্
তাই লেখক তাদের পাঠকদের দেখাতে চান যে খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হিসাবে তারা যিহূদী ধর্মে ফিরে যেতে পারবে না। তিনি দেখান যে যিহূদী ধর্ম যত যা আছে না কেন, সব হল যীশুর দিকে একটি ছবি এবং সব যীশুতেই পূর্ণ হয়েছে।
তিনি শক্তিশালীভাবে দেখান যে যীশুকে অস্বীকার করে যিহূদী ধর্মে ফিরা যাওয়া মানে সব কিছু হারানো: যেহেতু যিহূদী ধর্ম সব কিছু যীশুর দিকে ছবি ছিল তবে তাঁকে বা দেওয়া মানে যিহূদী ধর্মের হৃদয়ও হারানো, থাকে শুধুমাত্র খালি খোসা।
লেখক দশ অধ্যায় ধরে একটি বড় তুলনা দেখান: তিনি যিহূদী ধর্ম যতজন বা যা গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত, প্রত্যেক বিষয় তিনি যীশুর সাথে তুলনা করেন ও প্রমাণ করেন যে যীশু তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই লেখার ধরণ সিন্ক্রিসিস্ বলা হয়, মানে তুলনা করে একটি বিষয়ের শ্রেষ্ঠতার প্রমাণ দেখানো। বামের ছবি দেখুন।
সিন্ক্রিসিসের ক্রমবৃদ্ধ এভাবে শুরু:
- লেখক দেখান যে যীশু পুরাতন নিয়মের ভাববাদীদের চেয়ে মহান: তারা ঈশ্বরের বাক্য বিশ্বস্তভাবে বলতেন কিন্তু যীশু এসে শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাক্য বলেন না, তিনি বাক্য হন, তিনি প্রতি ক্ষেত্রে স্বগস্থ পিতার প্রতিনিধি (ইব্রীয় ১:১-৪)।
- তিনি দেখান যে যীশু স্বর্গ দূতদের চেয়ে মহান: দূতরা হলেন ঈশ্বরের বাধ্য সেবক, কিন্তু যীশুকে ঈশ্বরের দান হাতে বসানো হয়েছে এবং তাকে মহিমা ও সম্মান দেও হয়েছে (ইব্রীয় ১:৫-২:১৩), এমন একটি পদ যা কোন দূত বাদি করতে পারে না।
- তিনি দেখান যে যীশু মোশির চেয়ে মহান। মোশি দাস হিসাবে ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের দেখাশোনার কাজে (বা “ঈশ্বের ঘরে”) অবশ্যই বিশ্বস্ত ছিলেন, কিন্তু যীশু পুত্র হিসাবে তাতে বিশ্বস্ত ছিলেন (ইব্রীয় ৩:১-৬)।
- তিনি দেখান যে যীশুতে বিশ্বাসীরা প্রতিজ্ঞাত দেশ, উত্তরাধিকার বা বিশ্রামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু পায়: যিহোশূয় প্রতিজ্ঞাত দেশ দখল দ্বারা ঈশ্বরের লোকদেরকে এক ধরণের বিশ্রাম দিয়েছিলেন কিন্তু যীশু বিশ্বাসীদের জন্য আরো শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার বা বিশ্রাম অর্জন করেছেন: পরিত্রাণ (ইব্রীয় ৪:১-১১)।
- পরে লেখক যীশুকে লেবীয় পরিবারের মহাপুরোহিতের সাথে তুলনা করে তাঁকে শ্রেষ্ঠ হিসাবে প্রমাণিত করেন: যীশুই আসল মহাপুরোহিত। এই কথা শুনে যিহূদীদের মনে সাথে সাথে একটি আপত্তি উঠাবে: প্রত্যেক যিহূদী জানেন যে পুরোহিত শুধুমাত্র এমন একজন হতে পারেন যিনি লেবীয় বংশের এবং হারণের বংশধর। কিন্তু যীশু তো যিহূদা বংশের এবং দায়ূদের বংশধর (দানের ছবি দেখুন)। লেখক এই অমিল কিভাবে ব্যাখ্যা করেন?
- তিনি দেখান যে যীশুর যাজত্ব হল হারণের যাকত্বের চেয়ে ভিন্ন ও শ্রেষ্ঠ। কিন্তু যীশুর যাজত্ব কোথা থেকে? লেখক দেখান যে হারণ পুরোহিত হওয়ার আগে ছিল মল্কিষেদকের যাজক্ব । মল্কিষেদকের গল্প বাইবেলে শুধুমাত্র চারটি পদে দেওয়া আছে (আদি ১৪:১৭-২০)। মল্কিষেদকের বর্ণনা হল এই: তিনি শালেমের রাজা এবং যখন অব্রাহাম জয়ী হিসাবে ফিরে আসেন তিনি তাকে রুটি ও আঙ্গুর-রস খাওয়ান। তাকে “মহান ঈশ্বরের পুরোহিত” বলা হয় (আদি ১৪:১৮) এবং তিনি অব্রাহামকে আশীর্বাদ করেন। অব্রাহাম তাকে সব কিছুর দশম অংম দেন যা দ্বারা তিনি মল্কিষেদক আত্মিক নেতা হিসাবে মানেন।
- ইব্রীয় পুস্তকের লেখক এই পদগুলি এভাবে ব্যাখ্যা করেন (ইব্রীয় ৭:১-৪): মল্কিষেদকের নামের অর্থ হল “ন্যায়ের রাজা”। তিনি শালেমের রাজা (শালেম ছিল যিরুশালেমের আগের নাম)। শালেম শব্দের অর্থ “শান্তি” তাই তিনি “শান্তির রাজা”। তার “মা-বাবা বা কোন বংশ-তালিকা ছিল না। ঈশ্বরের পুত্রের মত তাঁর জীবনের আরম্ভও ছিল না, শেষও ছিল না; তিনি চিরকালের পুরোহিত”। অব্রাহাম তাকে নিজের চেয়ে মহান হিসাবে চিহ্নিত করেন যদিও ঈশ্বরের সব প্রতিজ্ঞা তাঁরই উপরে রয়েছে।
- সঙ্গে লেখক গীত ১১০:৪ পদ উদ্ধৃতি করেন “তুমি চিরকালের জন্য মল্কীষেদকের মত পুরোহিত” এবং বুঝান যে এই পদ যীশুতে পূর্ণ হয়েছে। তিনি দেখান যে মল্কিষেদকের যাজত্ব (এবং সাথে যীশুর যাজত্ব) হল হারণের যাজত্বের চেয়ে পুরান এবং তার চেয়ে মহান কারণ অব্রাহাম (এবং তার মধ্যে অব্রাহামের বংশধর হারণ) তার প্রতি বশীভুত হলেন, তাকে দশম অংশ দিয়েন এবং তা আশীর্বাদ পেলেন। তাই যীশুকে আসলে মহাপুরোহিত বলা যায়, মল্কিষেদকের যাজত্ব অনুসারে, একটি আরো প্রাচীন ও আরো শ্রেষ্ঠ যাজত্ব।
- লেখক দেখান যে হারণের (বা লেবীয়ের) যাজকত্বের পুরোহিত ছিলেন পাপী, মরণশীল ও অস্তায়ী। এই ধরণের পুরোহিতদের অনবরত উৎসর্গ দিতে হত – নিজের জন্য ও অন্যদের জন্য – একটি মানুষ দিয়ে তৈরি আবাস-তাম্বুতে। পুরোহিত মরণশীল বলে তাদের মৃত্যুর পরে তাদের বদলে নতুন পুরোহিত লাগত।
- কিন্তু যীশুই হলেন নিষ্পাপ, তাঁকে আগে নিজের জন্য উৎসর্গ দিতে হত, তা নয়। যীশু মৃত্যু দ্বারা পুরোহিত-পদ থেকে বাদ যান না, তাই তার যাজকত্ব হল চিরস্থায়ী। তিনি একবারেই সবার জন্যই সে একটিই উৎসর্গ দিলেন যাতে আসলে ক্ষমা হয়: তিনি নিজেকে ক্রুশে উৎসর্গ করেছিলেন। যীশুই মহা পুরোহিত, যীশুই উৎসর্গ।
- যীশু মহা পুরোহিত হিসাবে “দয়ালূ ও বিশ্বস্ত” হতে পারেন কারণ তিনি “সব দিকে থেকে তাঁর ভাইদের মত” হলেন (ইব্রীয় ২:১৭) কারণ তিনি সঠিকারের অর্থ পাপীর প্রতিনিধি, তিনি নিজেই সব প্রলোভন ও পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিলেন “অথচ পাপ করেন নি” (ইব্রীয় ৪:১৫)। তিনি “দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে বাধ্যতা শিখেছিলেন” (ইব্রীয় ২:১০, ৫:৮) যেমন সব বিশ্বাসীদেরও শিখতে হবে। তিনি বিশ্বাসীদের মত “নিজেই পরীক্ষা সহ্য করে কষ্টভোগ করেছিলেন”, সেইজন্য তিনি “তাদের সাহায্য করতে পারেন” (ইব্রীয় ২:১৮)। তিনি আমাদেরই আগে গিয়েছিলেন।
তাহলে ঈশ্বর কি চান?
এই লম্বা সিন্ক্রিসিস প্রমান দেখানোর মাঝখানে লেখক বেশ কয়েকবার পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা যা শুনেছিলেন ও বিশ্বাস করেছিলেন এর থেকে “দূরে সরে না” যায় (ইব্রীয় ২:১), যেন তারা “পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য ঈশ্বর এই যে মহান ব্যবস্থা করেছেন” তা অবহেলা না করে (ইব্রীয় ২:৩), যেন তাদের এমন মন না হয় যা “জীবন্ত ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়” (ইব্রীয় ৩:১২), যেন তারা “খোলাখুলিভাবে ঈশ্বরের পুত্র যীশুর উপর” তাদের বিশ্বাসকে স্বীকার করে যায় (ইব্রীয় ৪:১৪) এবং যেন তারা এমন মাটি হয় যা “বার বার বৃষ্টির জল চুষে নিয়ে চাষীদের দরকারী শাক-সব্জী জন্মায়” এবং তাই আশীর্বাদ পায় (ইব্রীয় ৬:৭)। তিনি তাদেরকে তাদের আগের বিশ্বস্ততার জন্য প্রশংসা করেন, যে তারা “দুঃখভোগের ভীষণ কষ্টের মধ্যেও” স্থির ছিল (ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪) এবং তারা সে “কাজ আর তাঁর লোকদের সেবা-যত্ন করে” ও ভালবাসা দেখাচ্ছে, “তা তিনি ভুলে যাবেন না” (ইব্রীয় ৬:১০)। তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা এমন লোক হয় যারা “বিশ্বাস ও অটল ধৈর্যের দ্বারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা করা আশীর্বাদের অধিকারী হয়” (ইব্রীয় ৬:১২)।
লেখক একটি লম্বা অধ্যায়ে (ইব্রীয় ১১) পুরাতন নিয়মের অনেক আদর্শ ব্যক্তিদের বিষয় তোলেন যারা বিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন এবং যারা বিশ্বাস দ্বারা প্রতিজ্ঞার অধিকারী হয়েছিলেন, হেবল নিয়ে শুরু করে ভাববাদীদের পর্যন্ত। এই আদর্শ ব্যক্তি যে নিষ্পাপ বা সব সময় বাধ্য ছিলেন, তা না, কিন্তু তারা সব কিছুর মাঝখানো কোন রকম ঈশ্বরকে এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলি ধরে রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বড় জয় লাভ করতে পেরেছিলেন (এমন বিশ্বাস যা যুদ্ধ করে অনেক কিছু অর্জন করে, ইব্রীয় ১১:৩৩-৩৫ক) কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক কষ্টভোগও করেছিলেন (এমন বিশ্বাস যা কষ্টভোগে ও নিষ্ফল হওয়ার সময়ও বিশ্বস্ত থাকে, ইব্রীয় ১১:৩৫খ-৩৮)। উভয় ধরণের বিশ্বাস ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করে।
লেখক বিশ্বাসের বর্ণনা এভাবে দেন: “আমরা যা পাব বলে আশা করে আছি তা যে আমরা পাবই এই নিশ্চয়তাই হল বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের দ্বারা আমরা নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারি যে, আমরা যা দেখতে পাচ্ছি না তা আসলে আছে” (ইব্রীয় ১১:১)। ঠিক কি বিশ্বাসে ধরে রাখব? বিশ্বাস করা দরকার যে ঈশ্বরই আছেন এবং যে তিনি মঙ্গলময়: “যারা তাঁর ইচ্ছামত চলে তারা তাঁর হাত থেকে তাদের পাওনা পায়” (ইব্রীয় ১১:৬)।
তিনি চিঠির সারাংশ হিসাবে তাদের হাত ধরে অনুরোধ করেন: “সেইজন্য বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে যে নিশ্চয়তা আসে, এস, আমরা সেই পরিপূর্ণ নিশ্চয়তায় খাঁটি অন্তরে ঈশ্বরের সামনে যাই … বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের যে আশা আছে, এস, আমরা স্থির হয়ে তার কথা স্বীকার করতে থাকি, কারণ যিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি বিশ্বাসযোগ্য” (ইব্রীয় ১০:২২-২৩)।
তা ছাড়া লেখক ঈশ্বরকে ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে বেশ কঠোর সাবধাণবাণী দেন: “তাহলে ঈশ্বরের পুত্রকে যে ঘৃণা করেছে, যে রক্তে সে শুচি হয়েছে ঈশ্বরের সেই ব্যবস্থার রক্তকে যে অপবিত্র মনে করেছে এবং যিনি দয়া করেন সেই পবিত্র আত্মাকে যে অপমান করেছে, ভেবে দেখ, সে আরও কত বেশী শাস্তির যোগ্য!” (ইব্রীয় ১০:২৯)। “সাবধান! যিনি কথা বলছেন তাঁর কথা অগ্রাহ্য কোরো না। মোশি ঈশ্বরের সাবধানবাণী পৃথিবীতে জানাবার পর লোকেরা তাঁর কথা অগ্রাহ্য করেছিল বলে যখন রেহাই পায় নি, তখন যিনি স্বর্গ থেকে আমাদের সাবধান করছেন তাঁর কথা অগ্রাহ্য করলে আমরা যে কিছুতেই রেহাই পাব না তাতে কোন সন্দেহ নেই। … আমাদের ঈশ্বর ধ্বংসকারী আগুনের মত” (ইব্রীয় ১২:২৫, ২৯)।
তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে তাঁর শাসন ভালভাবে মেনে নেয়: “কারণ প্রভু যাকে ভালবাসেন তাকেই শাসন করেন, আর সন্তান হিসাবে যাদের গ্রহণ করেন, তাদের প্রত্যেককে তিনি শাস্তি দেন” (ইব্রীয় ১২:৬) এবং “তোমরা এই সব কষ্ট শাসন হিসাবে ভোগ করছ। ঈশ্বর তোমাদের প্রতি পিতার মতই ব্যবহার করছেন। এমন ছেলে কি কেউ আছে যাকে তার বাবা শাসন করেন না? ” (ইব্রীয় ১২:৭)।
তিনি উপসংহারে অনেক ব্যবহারিক আদেশও দেন: পবিত্রভাবে জীবন-যাপন করা এবং ভালবাসা দেখানো (ইব্রীয় ১৩:১), অত্যাচারিত বিশ্বাসীদের সাথে সহভাগিতা রাখা (ইব্রীয় ১০:২৫) এবং জেলে যারা আছে বা অত্যাচারিত যারা হচ্ছে তাদের সঙ্গে তারাও কষ্ট পাচ্ছে, তা মনে করা (ইব্রীয় ১৩:৩)। এমন একটি সময় যখন অনেকে পলাতক লোক আছে লেখক তাদের অতিথিপরায়ন হতে বলেন (ইব্রীয় ১৩:২)।
লেখক তার চিঠি একটি আশার কথা দিয়ে শেষ করেন: তীমথিয় এইমাত্র খালাস পেয়েছেন (ইব্রীয় ১৩:২৩)। হতে পারে তীমথিয় অন্য জায়গায় এবং অন্য কারণে জেলে ছিলেন কিন্তু তারপরেও তা সান্ত্বনাদানকারী: অত্যাচার চিরকাল থাকবে না।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।