ইষ্টের পুস্তক বর্ণনা করে কিভাবে মাদিয়-পারস্য রাজা অহশ্বেরসের (গ্রীক নাম: Xerxes I, ৪৮৪-৪৬৪ খ্রীঃপূঃ) রাজত্বের সময়ে যিহূদীরা একটি ভয়ংকর হুমকির মুখে পড়ে এবং এই বিপদ কিভাবে কেটে যায়।
কিছু যিহূদীরা ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে সরুব্বাবিলের নেতৃত্বে যিহূদায় ফিরে গিয়েছিল, কিন্তু অনেক যিহূদীরা নির্বাসনে থেকে মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শহরে বাস করে, এমন কি শূশন শহরেও, যেখানে রাজা অহশ্বেরসের রাজবাড়ী অবস্থিত।
ইষ্টের পুস্তকের শুরুতে রাজা অহশ্বেরস সাম্রাজ্যের নেতাদের ও সামরিক কর্মচারীদের তার ধন দেখানোর জন্য একটি বড় ও বিলাসিতার ভোজ দেন (ইষ্টের ১:১-৯)। পারস্য ও গ্রীক ইতিহাসবিদদের লেখা থেকে জানা যায় যে এই ভোজ ৪৮৩ খ্রীষ্টপূর্বে ঘটে এবং ভোজের কারণ হল যে রাজা অহশ্বেরস গ্রীস দেশের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান চালানোর জন্য নেতাদের ও সৈন্যের সমর্থন অর্জন করতে চান। এই ভোজে একটি অপরিকল্পিত ঘটনা ঘটে: মাতাল রাজা নেতাদের ও সামরিক কর্মচারীদের তার রাণী বষ্টীর সৌন্দর্য্য দেখাতে চান। বষ্টী তা করতে প্রত্যাখ্যান করেন। রাজা অহশ্বেরস তাতে অপমানিত ও রাগী হন। তিনি তার পরামর্শদাতাদের কথা অনুসারে বষ্টীকে রাণীর পদ থেকে নামান যেন সাম্রাজ্যে স্ত্রীরা বষ্টীর মত তাদের স্বামীদের অমান্য না করে (ইষ্টের ১:১৯-২২)।
৪৮৩ থেকে ৪৮০ খ্রীষ্টপূর্বে অহশ্বেরস গ্রীসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালান কিন্তু সালামীতে একটি নৌযুদ্ধে তিনি সম্পূর্ণ পরাজিত হয়ে যান। ইষ্টের পুস্তক এর বর্ণনা করে না কিন্তু গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস (Herodotus) বলেন যে এই লজ্জার পরাজয়ের পরে রাজা অহশ্বেরস নিজেকে মহিলাদের দিয়ে ব্যস্ত রেখেছিলেন।
এখানে (৪৭৯ খ্রীঃপূঃ) ইষ্টের পুস্তক আবার গল্পের বর্ণনা দেয়: রাজা অহশ্বেরস আফসোস করেন যে তিনি বষ্টীকে সরিয়ে ফেলেছিলেন। তার পরামর্শদাতারা প্রস্তাব দেন, সাম্রাজ্যে সুন্দরী কুমারী মেয়ে খুঁজে রাজার কাছে নিয়ে আসা যেন তাদের মধ্য থেকে তিনি একটি নতুন রাণী পছন্দ করতে পারেন (ইষ্টের ২:১-৪)। অহশ্বেরস প্রস্তাবে রাজি হন। শূশন শহরেও কুমারী মেয়েদের সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের বারো মাসের সৌন্দর্য বাড়ানোর ব্যবস্থা দেওয়ার পরে এক রাতের জন্য রাজার কাছে পাঠানো হয়। কুমারীদের সংগ্রহের মধ্যে একটি যিহূদী অনাথ মেয়েও পড়ে, যার নাম ইষ্টের। ইষ্টেরের নিকট আত্মীয় মর্দখয়, যিনি রাজবাড়ীর ফটকে কাজ করেন, তিনি ইষ্টেরকে দত্তক নিয়েছিলেন। ইষ্টের শুধুমাত্র সুন্দরী না, তার একটি নম্র ও ভাল মনোভাবও আছে। সবাই তাকে পছন্দ করে, এমন কি রাজাও তাকে পছন্দ করেন এবং তাকে ৪৭৮ খ্রীষ্টপূর্বে মাদিয়-পারস্যের রাণী হিসাবে নিযুক্ত করেন (ইষ্টের ২:১৭-১৮)। এক সময় মর্দখয় রাজার বিরুদ্ধে একটি খুন করার পরিকল্পনার খবর পেয়ে ইষ্টের দ্বারা রাজাকে সাবধানবাণী দেন এবং তিনি এভাবে রাজাকে বাঁচাতে সক্ষম হন (ইষ্টের ২:১৯-২৩)।
পরবর্তীতে রাজা অহশ্বেরস হামন নামে একজন কর্মচারীকে সর্বোচ্চ পদে নিযুক্ত করেন। ইষ্টের পুস্তকে হামনকে ‘অগাগীয়’ বলা হয়, যার অর্থ হতে পারে যে তিনি যিহূদীদের পুরাতন শত্রু অমালেক জাতির রাজা অগাগের একজন বংশধর। কিন্তু ‘অগাগ’ নামে পারস্যের একটি এলাকা আছে বলে হামন হয়তো এই এলাকার পারস্য লোক ছিলেন। হামন খুব শক্তিশালী হয়ে উঠার পরেও মর্দখয় তাকে বিশেষ সম্মান দেখাতে রাজি নন, হতে পারে কারণ হামন অমালেকীয় ব্যক্তি অথবা কারণ মর্দখয় তার মনোভাব ও আচরণ পছন্দ করেন না। যখন লোকেরা হামনকে জানায় যে মর্দখয় তাকে বিশেষ সম্মান দেখান না তখন হামন অপমানিত হন। রাগে তিনি শুধুমাত্র মর্দখয়কে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন না বরং মর্দখয়ের পুরো জাতিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন। তিনি রাজা অহশ্বেরসকে এমনভাবে প্রভাবিত করেন যে রাজা একটি আইন পাশ করেন যাতে সারা মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যে যিহূদীদের এক নির্দিষ্ট দিনে মেরে ফেলা যায়। অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য তিনি যিহূদীদের সম্পত্তি লূট করার অনুমতিও দেন (ইষ্টের ৩:১-১৫)।
সাম্রাজ্যে যত জায়গায় আইনের খবর পৌঁছায় যিহূদীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। মর্দখয় ইষ্টেরকে আইনের বিষয় জানান এবং তাকে চ্যালেঞ্জ করেন যেন তিনি রাজার কাছে তার যিহূদী পরিচয় প্রকাশিত করে তার জাতির জন্য বিনতি করেন: “এই কথা মনে কোরো না যে, রাজার ঘরে আছ বলে সমস্ত যিহূদীদের মধ্যে কেবল একা তুমিই রক্ষা পাবে। কিন্তু এই সময় যদি তুমি চুপ করে থাক তবে অন্য দিক থেকে যিহূদীরা সাহায্য ও উদ্ধার পাবে, কিন্তু তুমি তো মরবেই আর তোমার বাবার বংশও শেষ হয়ে যাবে। কে জানে হয়তো এই রকম সময়ের জন্যই তুমি রাণীর পদ পেয়েছ” (ইষ্টের ৪:১৩-১৪)। যদিও ইষ্টেরকে বড় ঝুঁকি নিতে হচ্ছে এবং তার বিনতি সফল হওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই, তবুুও ইষ্টের রাজি হন এবং রাজার আদেশ ছাড়া তার সামনে আসেন (ইষ্টের ৪)। তিনি রাজা ও হামনকে একটি ভোজ খাওয়ার নিমন্ত্রণ দেন, যেখানে তিনি তাদের পরের দিনে আরো একটি ভোজ খাওয়ার নিমন্ত্রণ দেন (ইষ্টের ৫:১-৮)।
হামন নিমন্ত্রণ পাওয়ায় খুশি কিন্তু মর্দখয়ের বিরুদ্ধে তার রাগ ধরে রেখে তিনি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য একটি বাইশ মিটারের ফাঁসিকাঠ প্রস্তুত করার আদেশ দেন (ইষ্টের ৫:৯-১৪)। সব ঘটনার পিছনে ঈশ্বরের হাত প্রকাশিত হয়: রাজা সেই রাতে ঘুমাতে পারেন না। তিনি সাম্রাজ্যের ইতিহাস পড়ানোর আদেশ দেন এবং শুনে তিনি বুঝতে পারেন যে মর্দখয় দ্বারা খুনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য মর্দখয়কে কোন পুরস্কার দেওয়া হয় নি। তিনি একজন হতভম্ব হামনের কাছে তা করার আদেশ দেন (ইষ্টের ৬)। একই দিনে সেই দ্বিতীয় ভোজে ইষ্টের তার যিহূদী পরিচয় প্রকাশ করে নিজের জাতির জন্য রাজার কাছে বিনতি করেন। রাজা রাগান্বিত বুঝতে পেরে যে হামন তাকে কৌশল করে নিজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি মর্দখয়ের জন্য প্রস্তুত করা ফাঁসিকাঠে হামনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। রাজা মর্দখয়কে হামনের পদে নিযুক্ত করেন (ইষ্টের ৭)।
মর্দখয় ও ইষ্টের একটি দ্বিতীয় আইন পাশ করেন যা যিহূদীদেরকে সেই আক্রমণের দিনে আত্ম-রক্ষা করার অনুমতি দেয়। যিহূদীদের বিষয়ে ভয় সবার উপর পড়ে এবং সর্বনাশের দিন জয়ের দিনে পরিণত হয় (ইষ্টের ৮-৯)। ঈশ্বরের এই অদ্ভূত উদ্ধার স্মরণ করার জন্য ইষ্টের ও মর্দখয় বাৎসরিক পূরীম পর্ব স্থাপন করেন।
ঐতিহাসিক পরিস্থিতি ইষ্টের ১ অধ্যায়
ইষ্টের পুস্তক বর্ণনা করে কিভাবে মাদিয়-পারস্য রাজা অহশ্বেরসের (গ্রীক নাম: Xerxes I, ৪৮৪-৪৬৪ খ্রীঃপূঃ) রাজত্বের সময়ে যিহূদীরা একটি ভয়ংকর হুমকির মুখে পড়ে এবং এই বিপদ কিভাবে কেটে যায়। ইষ্টের পুস্তকে অহশ্বেরসের রাজত্বের দশ বছরের বর্ণনা দেয়, প্রায় ৪৮৩ থেকে ৪৭৩ খ্রীষ্টপূর্বে।
কিছু যিহূদীরা ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে সরুব্বাবিলের নেতৃত্বে যিহূদায় ফিরে গিয়েছিল, কিন্তু অনেক যিহূদীরা নির্বাসনে থেকে মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শহরে বাস করে, এমন কি শূশন শহরেও, যেখানে রাজা অহশ্বেরসের রাজবাড়ী অবস্থিত।
ইষ্টের পুস্তকের শুরুতে রাজা অহশ্বেরস সাম্রাজ্যের নেতাদের ও সামরিক কর্মচারীদের তার ধন দেখানোর জন্য একটি বড় ও বিলাসিতার ভোজ দেন (ইষ্টের ১:১-৯)। পারস্য ও গ্রীক ইতিহাসবিদদের লেখা থেকে জানা যায় যে এই ভোজ ৪৮৩ খ্রীষ্টপূর্বে ঘটে এবং ভোজের জন্য অহশ্বেরসের উদ্দেশ্য হল গ্রীস দেশের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান চালানোর জন্য নেতাদের ও সৈন্যের সমর্থন অর্জন করতে চান। অহশ্বেরসের বাবা দারিয়াবস-১ তার রাজত্বের সময়ে গ্রীকদের আক্রমণ করেছিলেন কিন্তু তিনি পরাজিত হলেন। হয়তো অহশ্বেরস তার বাবার পরাজয়ের জন্য প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন অথবা তিনি নতুনভাবে সিংহাসনে ওঠা রাজা হিসাবে নিজের ক্ষমতার প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। ভোজের সময়ে একটি অপরিকল্পিত ঘটনা ঘটে: মাতাল রাজা নেতাদের ও সামরিক কর্মচারীদের তার রাণী বষ্টীর সৌন্দর্য্য দেখাতে চান। বষ্টী তা করতে প্রত্যাখ্যান করেন। রাজা অহশ্বেরস তাতে অপমানিত ও রাগী হন। তিনি তার পরামর্শদাতাদের কথা অনুসারে বষ্টীকে রাণীর পদ থেকে নামান যেন সাম্রাজ্যে স্ত্রীরা বষ্টীর মত তাদের স্বামীদের অমান্য না করে (ইষ্টের ১:১৯-২২)।
৪৮৩ থেকে ৪৮০ খ্রীষ্টপূর্বে অহশ্বেরস একটি বিরাট সৈন্যদল নিয়ে গ্রীসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান – এর বর্ণনা ইষ্টের পু্স্তকে দেওয়া হয় নি। তিনি তার সৈন্যদল নিয়ে হেল্লেস্পন্ট্ সাগর পার হয়ে উত্তর দিক থেকে গ্রীস দেশকে আক্রমণ করেন। তিনি প্রথমে থের্মোফিল্যা নামে একটি জায়গায় এবং পরবর্তীতে রাজধানী এথেন্সে গ্রীকদের উপরে জয়লাভ করেন। কিন্তু অবশেষে গ্রীকেরা তাকে সাইপ্রাস দ্বীপের সালামী শহরের কাছাকাছি একটি নৌযুদ্ধে পরাজিত করে।
গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস (Herodotus) বলেন যে, এই লজ্জার পরাজয়ের পরে রাজা অহশ্বেরস নিজেকে ‘মহিলাদের নিয়ে ব্যস্ত’ রাখেন।
ইষ্টের রাণী হয়ে যান ইষ্টের ২ অধ্যায়
গ্রীকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরে, অর্থাৎ ৪৭৯ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ইষ্টের পুস্তকে ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা আবার পাওয়া যায়: রাজা অহশ্বেরস আফসোস করেন যে, তিনি রাণী বষ্টীকে রাণীর পদ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। তার পরামর্শদাতারা প্রস্তাব দেন, সাম্রাজ্যে সুন্দরী কুমারী মেয়ে খুঁজে রাজার কাছে নিয়ে আসা, যেন তাদের মধ্য থেকে তিনি একজন নতুন রাণী পছন্দ করতে পারেন (ইষ্টের ২:১-৪)। আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, অহশ্বেরস এই ধরণের আত্ম-বিলাসিতার প্রস্তাব পেয়ে তা খুশি মনে গ্রহণ করেন। সারা সাম্রাজ্যে এবং রাজধানী শূশনেও কুমারী মেয়েদের সংগ্রহ করা হয়। মেয়েদের কি জোর করে নেওয়া হত? না কি তারা তা সম্মানের বিষয় ও ভাল সুযোগ হিসাবে দেখত? ইষ্টের পুস্তক এই প্রশ্নের উত্তর দেয় না। মেয়েদেরকে ১২ মাসের সৌন্দর্য বাড়ানোর ব্যবস্থা দেওয়ার পরে তাদের এক রাতের জন্য রাজার কাছে পাঠানো হত এবং এই এক রাতেই তাদের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ জীবন ঠিক হত। মেয়েরা এই এক রাতের জন্য পছন্দের মত অলংকার দাবি করতে পারত এবং এই অলংকার তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে যেত। আমরা সহজেই কল্পনা করতে পারি এই ধরণের পরিস্থিতিতে কত হিংসা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অহংকার, নিরাশা ও স্বার্থপরতা চলত এবং রাজার মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য মেয়েরা কত কৌশলই না করত।
কুমারীদের সংগ্রহের মধ্যে একটি যিহূদী অনাথ মেয়েও পড়ে, যার নাম ইষ্টের। ইষ্টেরের নিকট আত্মীয় মর্দখয়, যিনি রাজবাড়ীর ফটকে কাজ করেন, তিনি ইষ্টেরকে দত্তক নিয়েছিলেন। ইষ্টের শুধুমাত্র সুন্দরী না – সবাই সুন্দরী! – তিনি এই উত্তেজিত পরিস্থিতিতে এমন একটি নম্র, সন্তুষ্ট ও ভাল মনোভাব দেখাতে সক্ষম হন যে সবাই তাকে পছন্দ করে। এমন কি রাজাও তাকে পছন্দ করেন এবং তিনি ইষ্টেরকে ৪৭৮ খ্রীষ্টপূর্বে মাদিয়-পারস্যের রাণী হিসাবে নিযুক্ত করেন (ইষ্টের ২:১৭-১৮)। এক সময় মর্দখয় রাজার বিরুদ্ধে একটি খুন করার পরিকল্পনার খবর পেয়ে ইষ্টের দ্বারা রাজাকে সাবধানবাণী দেন এবং তিনি এভাবে রাজাকে বাঁচাতে সক্ষম হন (ইষ্টের ২:১৯-২৩)।
হামন ক্ষমতায় ওঠেন ইষ্টের ৩ অধ্যায়
প্রায় ৪ বছর পরে, অর্থাৎ ৪৭৪ খ্রীষ্টপূর্বে রাজা অহশ্বেরস হামন নামে একজন কর্মচারীকে সর্বোচ্চ পদে নিযুক্ত করেন। ইষ্টের পুস্তকে হামনকে ‘অগাগীয়’ বলা হয়, যার অর্থ হতে পারে যে তিনি যিহূদীদের পুরাতন শত্রু অমালেক জাতির রাজা অগাগের একজন বংশধর (১ শমূয়েল ১৫:৩২)। কিন্তু ‘অগাগ’ নামে পারস্যের একটি এলাকা আছে বলে হামন হয়তো এই এলাকার পারস্য লোক ছিলেন। হামনের বাবার নাম হল হম্মদাথা, একটি পারস্য নাম।
হামন খুব শক্তিশালী হয়ে উঠার পরেও মর্দখয় তাকে বিশেষ সম্মান দেখাতে রাজি নন। তার এই ব্যবহারের কারণ কি হতে পারে? হয়তো হামন একজন অমালেকীয় বলে তিনি তাকে অতি সম্মান দিতে চান না। অথবা তিনি হামনের মনোভাব ও আচরণ পছন্দ করেন না। মর্দখয় এই বিষয়ে যথেষ্ট ঝুঁকি নেন এবং তার ব্যবহারে কিছুটা জেদও প্রকাশ পায় কিন্ত সাথে তার সাহস ও সততাও প্রকাশ পায়। তিনি রাজার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন খুনের পরিকল্পনা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কিন্তু এখানে বুঝা যায় তিনি নিজের সুবিধার জন্য শক্তিশালীদের বা মন্দদের তোষামোদ করতে রাজি না। মর্দখয় হামন নিয়ে তার অমত বা অসম্মান খুব প্রকাশিতভাবে দেখান, তা না। অন্যরা বিষয়টি হামনের মনোযোগে নিয়ে না আসা পর্যন্ত তা হামনের চোখে পড়ে নি (ইষ্টের ৩:৪)। কিন্তু একবার হামন বিষয়টি খেয়াল করেন তার অহংকার কুচা পেয়ে তিনি রাগান্বিত হন। যদিও তিনি পদ-মর্যাদা ক্ষেত্রের মর্দখয়ের চেয়ে অনেক উঁচু, তিনি বিষয়টি ছেড়ে না দিয়ে বরং অপমানিত হন। তিনি খোঁজ নিয়ে বুঝের যে মর্দখয় যিহূদী এবং তিনি তার রাগে শুধুমাত্র মর্দখয়কে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন না বরং মর্দখয়ের পুরো জাতিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন।
রাজার আদেশ ইষ্টের ৩ অধ্যায়
হামন রাজার কাছে অস্পষ্ট তথ্য দিয়ে বলেন যে “আপনার রাজ্যের সমস্ত বিভাগের বিভিন্ন জাতির মধ্যে একটা জাতি ছড়িয়ে রয়েছে। অন্য সব জাতি থেকে তাদের নিয়ম-কানুন আলাদা এবং তারা রাজার আইন মানে না। কাজেই তাদের বাঁচতে দেওয়া রাজার পক্ষে ভাল হবে না” (ইষ্টের ৩:৮)। তিনি ধ্বংসের একটি দিন ঠিক করতে প্রস্তব দেন যখন যে কেউ এই জাতির লোকদের আক্রমণ, লূটপাত ও খুন করতে অনুমোদিত। হামন রাজাকে বড় পরিমাণে টাকার প্রতিজ্ঞাও দেন যেন বিষয়টি তার চোখে আরো আকর্ষণীয় হয়।
অহশ্বেরস হামনের উপর এত বিশ্বাস আছে যে তিনি এখানে প্রশ্ন করেন না জাতি আসলে কোনটা এবং ঠিক কিভাবে তারা রাজার আইন অমান্য করে। সাধারণত মাদিয়-পারস্য রাজারা সংখ্যালঘু জাতিদের প্রতি বড় মন দেখাতেন কিন্তু এখানে রাজা হামনের প্রস্তাবে রাজি হন না বুঝে যে হামন তাকে কৌশল করে তার ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়ে ব্যবহার করা হয় (ইষ্টের ৩:৭-১৫)।
হামন ও রাজা পর্বরতীতে যে আইন পাশ করে তা বিশেষভাবে মন্দ কারণ তা আক্রমণের অনুমতি মাত্র না, আসলে তা আক্রমণ করার আদেশ (ইষ্টের ৩:১৩)। তাই এর পর্যন্ত জাতিগুলো শান্তভাবে পাশাপাশি বাস করার পরেও এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বন্দ্ব ও রক্তপাত উষ্কিয়ে দেওয়া হয়। হামন উভয় রাজাকে এবং আক্রমণকারীদের লোভ দেখিয়ে এই কৌশলে বাধ্য করেন কারণ লূটপাতের অনুমতি না থাকলে কেন শান্ত প্রতিবেশীকে আক্রমণ করব? হামন গুলিবাঁট – পারস্য ভাষায় ‘পূর’ – করে দিনটি ঠিক করতে গিয়ে প্রায় ১১ মাস পরের একটি তারিখ ঠিক হয় (৪৭৩ খ্রীঃপূঃ)। হামন ও রাজার আদেশটি মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যে সব প্রচলিত ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং সাম্রাজ্যের ১২৭টি প্রদেশে পাঠানো হয়। এখানে মাদিয়-পারস্যদের কার্যকারী ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি একজন হিংস্র লোক এবং একজন যত্নহীন রাজার হাতে ভয়ংকর একটি যন্ত্রে পরিণত যায় (ইষ্টের ৩:৭-১৫)।
বিলাপ ইষ্টের ৪ অধ্যায়
বিশাল মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যে আদেশটি যত জায়গায় পৌঁছায় সবখানে যিহূদীরা হতভম্ব। তারা কান্না করে, বিলাপ করে, উপবাস করে (ইষ্টের ৪:১-৩)। তাদের মধ্যে প্রথম মর্দখয়ও, সম্ভবত তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তার ব্যবহার এবং এই আদেশের একটি সংযোগ আছে যদিও তিনি অবশ্য এই ধরণের একটি বিরাট মন্দ কৌশল কল্পনা করতে পারেন নি। তিনি মনে করলেন যে তিনি সততার কারণে ব্যক্তিগত একটি ঝুঁকি নিচ্ছেন, কিন্তু এখন তা পরিণত হয়েছে জাতীগত সর্বনাশে।
ইষ্টেরের সাড়া ইষ্টের ৪ অধ্যায়
মর্দখয় সাথে সাথে ইষ্টেরকে আইনটি সম্বন্ধে জানান (ইষ্টের ৪:৪-৮)। তিনি ইষ্টেরকে রাজার সামনে উপস্থিত হয়ে যিহূদী হিসাবে তার পরিচয় প্রকাশিত করতে এবং রাজার কাছে যিহূদীদের জন্য বিনতি করতে বলেন। মর্দখয় ইষ্টেরকে কঠোরভাবে চ্যালেঞ্জ করেন কিন্তু তিনি সম্মান সহকারে ইষ্টেরকে এমন ব্যক্তি হিসাবে কথা বলেন, যিনি এই বোঝা বহন করতে এবং হুমকির মুখে শক্তিশালীভাবে দাঁড়াতে পারেন। যদিও মর্দখয় সব সময় ইষ্টেরের রক্ষক ও যত্নকারী ছিলেন (ইষ্টের ২:৭,১১) তিনি বুঝতে পারেন যে, এখন এমন সময় এসে গেছে যখন পরামর্শদাতা হিসাবে ইষ্টেরকে আত্ম-গোপন করে চুপ করে থাকতে বলা আর ঠিক হবে না। ইষ্টেরকে ভালবাসলেও তিনি তাকে এগিয়ে আসতে বলেন “এই কথা মনে কোরো না যে, রাজার ঘরে আছ বলে সমস্ত যিহূদীদের মধ্যে কেবল একা তুমিই রক্ষা পাবে। কিন্তু এই সময় যদি তুমি চুপ করে থাক তবে অন্য দিক থেকে যিহূদীরা সাহায্য ও উদ্ধার পাবে, কিন্তু তুমি তো মরবেই আর তোমার বাবার বংশও শেষ হয়ে যাবে। কে জানে হয়তো এই রকম সময়ের জন্যই তুমি রাণীর পদ পেয়েছ” (ইষ্টের ৪:১৩-১৪)।
মর্দখয়ের এই কথায় ঈশ্বরের উপর তার বিশ্বাস ও নির্ভরতা প্রকাশ পায়: ঈশ্বরের রক্ষা করার ক্ষমতা আছে, তিনি নিশ্চয়ই যিহূদীদের উদ্ধার করবেন। কিন্তু ঈশ্বরের এই অসীম ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বকে তিনি নিস্ক্রিয় থাকার অজুহাত হিসাবে দেখেন না। মানুষেরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে – এবং এই দায়িত্ব যে ঈশ্বরের সর্বক্ষমতার কারণে বাতিল হয়, এমন নয়। মানুষের সিদ্ধান্ত, ভূমিকা পালন ও অংশ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইষ্টের নিজেকে এখানে এমন একটি অবস্থায় ও পদে খুঁজে পান (যদিও তা তারই কৌশলে হয়েছে, এমন নয়) যেখানে তিনি হয়তো একটি ভাল প্রভাব ফেলতে পারেন (যদিও এর নিশ্চয়তা নেই) এবং তা চেষ্টা করা হল তারই দায়িত্ব।
ইষ্টের চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেন: যদিও তাকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিতে হয় এবং যদিও তার প্রচেষ্টা সফল হওয়ার নিশ্চয়তা নেই তবুও তিনি সাহসের সাথে দায়িত্ব গ্রহণ করেন: রাজা তাকে না ডাকলেও ইষ্টের তার সামনে উপস্থিত হন। রাজা তার প্রবেশ অপমান হিসাবে না দেখে বরং ইষ্টেরের ভোজের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন (ইষ্টের ৫:২)। এই ভোজে ইষ্টের তার অনুরোধ প্রকাশ করেন না, বরং রাজা ও হামনকে পরবর্তী দিনে আর একটি ভোজে নিমন্ত্রণ দেন (ইষ্টের ৫:১-৮)। কেন ইষ্টের এই দু’টি ভোজের ব্যবস্থা করতে সিদ্ধান্ত নেন? আমরা তার চিন্তা জানি না কিন্তু এই বিষয়ে ঈশ্বরের হাত পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়।
ঈশ্বরের উদ্ধারের হাত ইষ্টের ৫-৬ অধ্যায়
হামনের কৌশল এগিয়ে যাচ্ছিল এবং তিনি রাণী ইষ্টেরের নিমন্ত্রণ পান বলে খুব খুশি হন। রাজবাড়ী থেকে বের হওয়ার পরে মর্দখয়কে দেখে তিনি প্রচন্ড আক্রশে মর্দখয়কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য বাইশ মিটারের একটি ফাঁসিকাঠ প্রস্তুত করেন (ইষ্টের ৫:৯-১৪)। এই অতি লম্বা ফাঁশিকাঠ দ্বারা হামনের অহংকার, হিংস্রতা ও অতিরিক্ত প্রতিশোধ নেওয়ার মনোভাব প্রকাশিত – ফাঁশিকাঠ ছিল তার আসন্ন জয়ের একটি চিহ্নস্বরূপ।
এই আশাহীন মুহূর্তে গল্পটি মোড় নেই এবং সব ঘটনার পিছনে ঈশ্বরের হাত প্রকাশিত হতে শুরু করে: রাজা অহশ্বেরস সেই রাতে ঘুমাতে পারেন না। তিনি সাম্রাজ্যের সরকারি নথি পড়ে শোনানোর আদেশ দেন। মর্দখয় কিভাবে রাজার বিরুদ্ধে খুনের পরিকল্পনা প্রতিরোধ করেছিলেন, ঠিক এর বর্ণনা রাজাকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি লক্ষ্য করেন যে, মর্দখয়কে তার বিশ্বস্ততার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয় নি। সকালে তিনি হামনকে জিজ্ঞাসা করেন একজন ব্যক্তিকে অনেক সম্মান দেখানোর কি পদ্ধতি আছে। হামন মনে করে যে, রাজা তাকেই সম্মান দেখাতে চান, তাই তিনি বড় আকারের একটি প্রস্তাব দেন। রাজা তাকে ঠিক সেইভাবে মর্দখয়ের জন্য ব্যবস্থা করতে বলেন। হামন হতভম্ব হয়ে দুর্দশাগ্রস্ত একটি দিন কাটান: যে মর্দখয়কে তিনি অত্যন্ত ঘৃণা করেন ঠিক তাকেই সবার সামনে সম্মানিত করতে হয় (ইষ্টের ৬:১-১১)। যারা হামন ও মর্দখয়ের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানত, সম্ভবত তারা বিষয়টিকে নিয়ে রসিকতার সাথে কিছু মন্তব্য করেছিল।
লক্ষণীয় বিষয় যে, হামনের পরিবার যখন হামনের দুর্দশার ঘটনা সম্বন্ধে শুনতে পায় তখন তারা কুসংস্কার হিসাবে বিষয়টিকে ভয়ংকর চিহ্ন মনে করে (ইষ্টের ৬:১২-১৩)।
হামনের কৌশল প্রকাশিত ইষ্টের ৭ অধ্যায়
ঠিক সেই সময় হামনকে ইষ্টেরের দ্বিতীয় ভোজে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজা ইষ্টেরকে তার অনুরোধ প্রকাশ করতে বলেন এবং ইষ্টের খুব নম্রভাবে নিজের জীবন ও তার জাতির জীবন রক্ষার জন্য বিনতি করেন। তার রাণীর জীবন হুমকির সম্মুখে – এই কথা শুনে রাজা জিজ্ঞাসা করেন, এমন দুঃসাহস কে করছে। ইষ্টের নিজের যিহূদী পরিচয় দিয়ে হামনের দুষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশিত করেন। রাজা রাগান্বিত হয়ে ভোজের আসন ত্যাগ করেন, তিনি ইষ্টেরকে ভালবাসেন বলে, কিন্তু আরো বেশি কারণ তিনি বুঝতে পারেন যে, হামন তাকে নিজের কৌশলের জন্য ব্যবহার করেন। রাজার রাগ দেখে হামন নিশ্চিত যে, রাজা তাকে মেরে ফেলার আদেশ দেবেন। এজন্য তিনি ইষ্টেরের কাছে নিজের জীবন রক্ষার জন্য জবরদস্তি করতে থাকেন। রাজা ফিরে এসে হামনকে এই অবস্থায় দেখে রাগান্বিত হয়ে বলেন “এই লোকটা কি আমার সামনে রাণির ইজ্জত নষ্ট করবে?” (ইষ্টের ৭:৮)। একজন কর্মচারী যখন হামনের তৈরি ফাঁশিকাঠ উল্লেখ করেন, রাজা হামনকে তাতে মেরে ফেলার আদেশ দেন (ইষ্টের ৭:৯-১০)।
মর্দখয়কে পদ-মর্যাদা দান ইষ্টের ৮ ও ১০ অধ্যায়
রাজা মর্দখয়ের বিশ্বস্ততা ও সমর্থনকারী মনোভাব বুঝতে পেরে ইষ্টেরের অনুরোধ অনুসারে তাকে হামনের পদ-মর্যাদা দান করেন। হামনের পরিবারের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার তিনি ইষ্টের ও মর্দখয়কে দেন এবং সেই ধ্বংসাত্মক আদেশের বিরুদ্ধে যা করা যায়, তা-ই করতে বলেন (ইষ্টের ৮:১-৮)।
আদেশের ক্ষতি কমানোর প্রচেষ্টা ইষ্টের ৮-৯ অধ্যায়
হামন যে আদেশ পাশ করিয়েছিলেন, তা সহজেই বাতিল করা যায় না। মাদিয়-পারস্যের আইন অনুসারে রাজার মাধ্যমে পাশ করা আইন ছিল একটি স্থায়ী আইন এবং এমন কি রাজা নিজেও তা বাতিল করতে পারেন না (ইষ্টের ৮:৮)। একারণে ইষ্টের ও মর্দখয়ের মাত্র একটি উপায় থাকে: তারা দ্বিতীয় একটি আইন পাশ করেন, যা যিহূদীদের আক্রমণের দিনে নিজেদের সুরক্ষা করার অনুমতি দেয়।
ইষ্টের ও মর্দখয় এই নতুন আইন খুব যত্নের সঙ্গে তৈরি করেন: তারা আইনটি এমনভাবে বসান যে, শুধুমাত্র যদি কেউ যিহূদীদের আক্রমণ করে তবে যিহূদীরা পাল্টা আক্রমণ করে নিজেদেরকে সুরক্ষা করতে পারে, অর্থাৎ আক্রমণের মুখোমুখি না হলে যিহূদীদের পাল্টা আক্রমণের অনুমতি নেই (ইষ্টের ৩:১৩, ৮:১১)। ইষ্টের ও মর্দখয়ের এই কৌশল খুব প্রজ্ঞার, কারণ এতে দ্বন্দ্ব, হিংস্রতা বা আক্রমণ শুরু থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়, উভয় অযিহূদী এবং যিহূদীদের ক্ষেত্রে। এছাড়া এসব এক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়, শুধুমাত্র শূশন শহরে দুই দিন চলে।
যখন ৪৭৩ খ্রীষ্টপূর্বে আক্রমণের সেই দিন আসে তখন যিহূদীরা তাদের আক্রমণকারীদের উপরে জয়লাভ করতে সক্ষম হয় (ইষ্টের ৯:২,৯-১০,১৫,১৬)। লক্ষ্য করুন, যদিও যিহূদীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে আক্রমণকারীদের বাড়ীগুলো লুটপাট করতে, তারা তা করে না (ইষ্টের ৯:১০,১৫)। হয়তো ইষ্টের ও মর্দখয় যিহূদীদের তা না করতে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যেন লোভ হিংস্রহতার অনুপ্রেরণা না হয়। হামন কিন্তু তার দুষ্ট পরিকল্পনায় লুটপাট করার অনুমতি দিয়েছিলেন, সম্ভবত যিহূদীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ উৎসাহিত করার জন্য (ইষ্টের ৩:১৩)।
পূরীম পর্ব স্থাপন ইষ্টের ৯ অধ্যায়
ঈশ্বরের এই অদ্ভূত উদ্ধার উৎযাপন ও স্মরণ করার জন্য ইষ্টের ও মর্দখয় পূরীম নামে একটি বাৎসরিক পর্ব স্থাপন করেন (‘পূর’, একটি পারস্য ভাষার শব্দ যার অর্থ হল ‘গুলিবাঁট’)। তারা মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের সমস্ত যিহূদীদের কাছে আদেশ পাঠান, যেন তারা অবশ্যই এই পর্ব বছরের পর বছর ধরে পালন করতে থাকে। এভাবে তারা নিশ্চিত করতে চান যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যিহূদীরাও জানে যে, ঈশ্বর তার জাতির জন্য কি করেছেন। সম্ভবত, এই সময়েই ইষ্টের ও মর্দখয় ইষ্টের পুস্তকটি লেখেন, যেন পর্বটির পিছনের ইতিহাস, অর্থাৎ উদ্ধারের এই ঘটনা কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করা হয়।
পরবর্তী শতাব্দীতে ইষ্টের পুস্তক
আজ পর্যন্ত যিহূদীরা বছরের পর বছর ধরে খুব আগ্রহের সঙ্গে পূরীম পর্ব পালন করে। প্রতি বছর পর্ব পালনের সময় সমস্ত যিহূদীদের ইষ্টের পুস্তক পড়ে শোনানো হয়। আমাদের যুগের দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে ইষ্টের পুস্তক যিহূদীদের চোখে আবারও অতি গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ হামন যেমন তার যুগে যিহূদী জাতি ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছিলেন ঠিক তেমনি বিংশ শতাব্দীতে হিটলার তা-ই করতে চেষ্টা করেন। যিহূদীদের মধ্যে ইষ্টের পুস্তকের সব সময় একটি জনপ্রিয়তা ছিল যদিও খ্রিষ্টানরা পুস্তকটিকে অতি গুরুত্ব দেয় নি। মণ্ডলীর আদিপিতারা বাইবেলের সব পুস্তক থেকে ঘনঘন উদ্ধৃতি করতেন কিন্তু ইষ্টের পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি খুবই কম। তারা অনেক পুস্তকের ভাষ্য (commentary) লিখতেন কিন্তু শুধুমাত্র ৭ম শতাব্দীতে ইষ্টের পুস্তকের একটি ভাষ্য পাওয়া যায়।
হয়তো তার একটি কারণ হল যে, নতুন নিয়মে ইষ্টের পুস্তক থেকে একটাও উদ্ধৃতি পাওয়া যায় না। হয়তো এর অন্যতম আর একটি কারণ হল পুস্তকের জাতীয়তাবাদী ভাব। এছাড়া এমন বিষয়গুলো যা অধিকংশ পুস্তকে গুরুত্ব পায়, সেগুলো ইষ্টের পুস্তকে একবারও উল্লেখ করা হয় নি (যেমন: মোশির আইন-কানুন, প্রার্থনা, উৎসর্গ, উপাসনা-ঘর, পুরোহিত, লেবীয় ও ভাববাদী)। আশ্চর্যের বিষয় যে, ইষ্টের পুস্তকে এমন কি ঈশ্বরের নাম একবারও উল্লেখ করা হয় নি!
কিন্তু হয়তো ঠিক তা হল এই পুস্তকের লেখার ধরণের একটি কৌশল। ইষ্টের পুস্তক হল অতি চমৎকারভাবে বলা একটি গল্প, যাতে প্রতিসাম্য কাঠামো, অতি সাজানো সুষম ঘটনাগুলো, আকর্ষণ, সঠিক সময়ে সঠিক ঘটনা, মোড় নেওয়ার মুহূর্ত রয়েছে। এসব দ্বারা লেখক নিশ্চিত করেন যে, ঘটনাগুলোর পিছনে ঈশ্বরেরই হাত রয়েছে, পাঠকেরা যেন তা দেখতে পায়। ঈশ্বর ধীরে ধীরে নিরবে সঠিক সময়ে মঞ্চের পিছন থেকে কাজ করেন, তিনি সব ঘটনার নিয়ন্ত্রণকারী এবং তিনিই তাঁর জাতির উদ্ধারের গল্পের অদৃশ্য বীর।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।