অর্থনীতি ০২ – ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা মালিকানা

ঈশ্বর ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখার অধিকার দিয়েছেন
  • চুরি কোরো না = একজনের তার ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপরে অধিকার আছে।
  • ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষকে এই মানবীয় অধিকার দিয়েছেন।
  • ঈশ্বর মালিক > আমাদেরও মালিক হতে দেন।
  • যিনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনি সব কিছুর মালিক।
  • ঈশ্বরই মালিক > মালিকানা ভাল জিনিষ, মন্দ কিছু না।
  • ঈশ্বর আমাদের মালিকানা চান।
  • ঈশ্বর আমাদের মালিকানা রক্ষা করেন।          

তাই: চুরি করো না!

 
কেন ঈশ্বর চান আমাদের মালিকানা থাকুক? মালিকানা দ্বারা আমরা কি শিখি?
  • সম্পত্তির উপযুক্ত ব্যবহার … সম্পত্তির ভাল করে যত্ন নেওয়া।
  • মালিকানা আমাদের শেখাবে ভাল তত্ত্বাবধান, ভাল রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক সময়ে মেরামত।
  • মালিকানা আমাদের শেখাবে বিশ্বস্ত ও দায়িত্ববান হতে।
  • মালিকানা হচ্ছে জিনিষের যত্ন বা দায়িত্ব নেওয়া > নেতৃত্ব শেখার প্রথম ধাপ।
  • সঠিকভাবে যত্ন বা রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের জিনিষের মূল্য বা গুরুত্ব দিতে শেখাবে।
 
মালিকানা দাবি করা কি স্বার্থপরতা?
  • আমার মালিকানার অধিকার রক্ষা করা বা দাবী করা, এটা কি স্বার্থপরতা নয়?
  • ঈশ্বর দানশীল হতে বলেছেন … কিন্তু আপনি কোন কিছুর মালিক না হলে কাউকে কিছু দিতে পারেন না।
  • ঈশ্বর প্রথমে আমাদের মালিকানার অধিকার রক্ষা করেন > ফলে আমাদের কিছু দেওয়ার ক্ষমতা থাকে।
 
মানুষের প্রথম কাজের বর্ণনা – আদি ১:২৮ ও ২:১৫

“তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হও, আর নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে পৃথিবী ভরে তোলো এবং পৃথিবীকে নিজেদের শাসনের অধীনে আন। এছাড়া তোমরা …মাছ…পাখী … প্রত্যেকটি…প্রাণীর উপরে রাজত্ব কর …ঈশ্বর মানুষকে এদন বাগানে রাখলেন যাতে তিনি তাতে চাষ করতে পরেন ও তার দেখাশোনা করতে পারেন।”

  • ঈশ্বর পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ও তাই পৃথিবীর ও সব কিছুর আইনগত আসল মালিক।
  • সৃষ্টির শুরু থেকে ঈশ্বর মানুষকে পৃথিবীর দায়িত্ব ও যত্ন নিতে বলেছিলেন।
  • তাই আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে দেখাশোনা কারী বা রক্ষণাবেক্ষণকারী হওয়ার অধিকার ও দায়িত্ব পেয়েছি
  • ঈশ্বর আমাদেরও তার মত মালিক বানিয়েছেন, মালিকানা দিয়েছেন, আমরা তাঁর পক্ষে দেখাশোনা কারী।
  • ঈশ্বর অধিকার ও দায়িত্ব দিয়েছেন: পৃথিবীতে কাজ করা, তা ব্যবহার করা, উন্নত করা, উপভোগ করা।
  • ঈশ্বর অধিকার সীমিত রেখেছেন: আমাদের ধ্বংস করার অধিকার নেই, কারণ আমরা আসল মালিক নই।
 
মালিকানার বিভিন্ন ধরণ?
  • ‘আমার লেখা কবিতা’ … ‘আমার কলম’ … ‘আমার জমি’ … ‘আমার ছাগল’ … ‘আমার সন্তান’… ‘আমার স্ত্রী’ … ‘আমার দেশ’ … ‘আমার ঈশ্বর’। প্রত্যেকটির  বিষয়ে আমার মালিকানা ভিন্ন।
  • বিভিন্ন জিনিস বা ব্যক্তির প্রতি আমার মালিকানা, কর্তৃত্ব, অধিকার ও দায়িত্ব ভিন্ন।
মালিকানা এবং উন্নয়ন – হিতো ২৭:২৩-২৭

“তোমার ছাগল-ভেড়ার পালের অবস্থা তুমি ভাল করে জেনে রেখো, আর তোমার পশুপালের দিকে মনোযোগ দিয়ো; কারণ ধন চিরস্থায়ী নয়, … ক্ষেত থেকে যখন খড় কেটে ফেলা হবে এবং নতুন ঘাস গজাবে …ভেড়ার বাচ্চারা তোমার কাপড় যোগাবে, আর ছাগল দেবে নতুন জমির দাম … তুমি যথেষ্ট দুধ পাবে; তোমার যুবতী চাকরাণীরাও তা খেয়ে পুষ্ট হবে।”

  • পদটির মধ্যে পাওয়া যায়: শ্রমের মূল্য, পরিকল্পনা করা আবশ্যক, বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়, ধৈর্যের প্রয়োজন, স্বনিয়ন্ত্রণ থাকলে লাভ আসে, পুনরায় বিনিয়োগ, দীর্ঘদিনের চিন্তা, উন্নয়ন, অন্যদের জন্যও যোগান ইত্যাদি ।
  • আমরা প্রত্যেকে কিছু না কিছুর মালিক: টাকা-পয়সা, জিনিষ, সময়, স্বাস্থ্য, কিছু করার শক্তি, প্রার্থনা ইত্যাদি।
  • আপনি কিভাবে তা ব্যয় করেন? আপনি কিভাবে তা ব্যবহার করেন? আপনি কি বিশ্বস্ত তত্ত্বাবধায়ক?
  • মথি ২৫:১৪ … তালন্তের দৃষ্টান্ত: আপনার ধন কত আছে এটা কোন ব্যাপার না, কিন্তু: অল্প যা আছে তা নিয়ে যদি বিশ্বস্ত হন তাহলে ঈশ্বর অনেক ধন নিয়েও আপনার উপর নির্ভর করতে পারেন।
  • আপনি যদি একটি সামান্য জিনিসের যত্ন নিতে না পারেন, কিভাবে ঈশ্বর আপনাকে বেশী কিছুর দায়িত্ব দেবেন? কিভাবে ঈশ্বর আপনাকে লোকদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেবেন (নেতৃত্ব)?
  • ঈশ্বর তাঁর দেখাশোনা করতে দেয়া জিনিষের হিসাব চান, তিনি বৃদ্ধি দাবি করেন … আমাদের হাতে যে জিনিষগুলি আছে তার বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়োজন পরিমাণে, গুণগত মানে, অগ্রগতিতে, ব্যবহারের দিকে …।
 আরো চাওয়া অথবা আরো পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের পথ

লূক ১২:৪৮ … “যাকে বেশী দেওয়া হয় তার কাছ থেকে বেশী দাবি করা হবে” আর লোকে যার কাছে বেশী রেখেছে তার কাছে তারা বেশীই চাইবে।”

  • আমরা জিনিষ পেতে চাই, কিন্তু জিনিষের সাথে যে দায়িত্ব আসে, তা নিতে চাই না। হাহাকার করবেন না অনেক পাওয়ার জন্য!
  • বাইবেলে: নেতৃত্ব = কর্তৃত্ব = অধিকার = কঠোর পরিশ্রম = দায়িত্বশীলতা = দায়বদ্ধতা।
  • যদি কাজ করতে না চান, সেবা করতে না চান, দায়িত্ব নিতে না চান, তাহলে নেতা হবেন না।
  • উদাহরণ: বিশাল অংকের লটারী জিতা … ১৫ বছরের মধ্যে সবার অর্থনৈতিক অবস্থা আগের তুলনায় এখন আরো খারাপ… কি করে সম্ভব!? কেন তা হবে? ঈশ্বর তার পরিবর্তে কি চান?
  • হিতো ১৩:১১ “পরিশ্রম না করে যে টাকা পাওয়া যায় তা কমে যায়, কিন্তু যে লোক পরিশ্রম করে টাকা জমায় তার টাকা বেড়ে যায়।”
  • হিতো ১৩:২২ “ভাল লোক তার নাতিপুতিদের জন্য অধিকার রেখে যায়, কিন্তু পাপীর ধন ঈশ্বরভক্তদের জন্যই জমা করা হয়।”
  • ঈশ্বরের নকশা: ধীরে ধীরে বৃদ্ধি জিনিসের, চরিত্রের, প্রজ্ঞার, ব্যবস্থাপনার, আত্ম-নিয়ন্ত্রণের। তিনি চান যে একটি পরিবার সব ক্ষেত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বৃদ্ধি পাক।
  • ঈশ্বর ‘তাড়াতাড়ি ধনী হব’ এই ধরণের কৌশলকে আশীর্বাদ করেন না। এই ধরণের কৌশলে বিশ্বাস রাখবেন না, অংশ গ্রহণ করবেন না।
সীমানার গুরুত্ব
  • আমাদের যত অধিকার দেওয়া হয়েছে তার সীমাও আছে।
  • বাইবেলে ‘অধিকারের সীমা’র বিষয়ে অনেক দৃঢ় পদ পাওয়া যায়:
    • সম্পত্তি ক্ষেত্রে     ২য় বিবরণ ১৯:১৪     “পূর্বপুরুষদের রাখা কোন সীমানা-চিহ্ন তোমরা সরাবে না।”
    • দেশের ক্ষেত্রে     ২য় বিবরণ ২:৫        “এষৌর দেশের কোন অংশই তোমাদের দেব না।”
    • সম্পর্কের ক্ষেত্রে   ২য় বিবরণ ৫:১৮       “ব্যভিচার কোরো না।”
  • আমার জানা প্রয়োজন কি করতে পারব ও কি করতে পারব না … আমার জানা প্রয়োজন কি আমার তত্ত্বাবধানের মধ্যে ও কি তত্ত্বাবধানের মধ্যে নয় > পরিষ্কার সীমানা প্রয়োজন।
  • সীমানা দেখিয়ে দিবে, আমার দায়িত্ব কোন পর্যন্ত এবং কোথায় আমার কর্তৃত্ব বা অধিকার শেষ।
  • উদাহরণ: অফ্রিকার কিছু এলাকার কৃষক। কেউ তাদের জমির সীমানা জানে না তাই অন্যদের জমির কাছে চাষাবাদ করতে ভয় পায় > মাত্র ৫০% জমি চাষাবাদ হয়। এইটা একটি ‘অর্থনৈতিক মূর্খতা’!
  • সীমানা ভাল ও ঈশ্বর কাছ থেকে দেওয়া বিষয়:
  • আমি সব কিছুর জন্য সমানভাবে দায়ী নই, কিন্তু কিছু বিষয়ের জন্য আমি ঠিকই দায়ী।
  • অবশ্যই জানা প্রয়োজন কোন পর্যন্ত আমি দায়ী এবং তা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পরিশ্রম করতে থাকা > তা না জানলে কিভাবে বুঝতে পারব আমি বিশ্বস্ত কিনা?
  • অবশ্যই জানা প্রয়োজন আমার সীমা কোথায় ও কি করা ঠিক না > তা না জানলে কিভাবে বুঝতে পারব আমি ভুল বা পাপ করছি কিনা?
ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার যেখানে অগ্রাহ্য করা হয়

সাম্যবাদী দেশ (Communist countries)

  • সাম্যবাদী চিন্তা ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার অগ্রাহ্য করে > পরিবর্তে: ‘সব কিছু সবার’।
  • সাম্যবাদী দেশ (আছে বা ছিল): সোভিয়েত ইউনিয়ন, কূবা, মজাম্বিক, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম …।
  • ‘সব কিছু সবার’ = ‘সব কিছু সরকারের’ = ‘সব কিছু শক্তিশালী সরকারী নেতাদেরই’।
  • ‘শ্রেণীহীন বা বর্ণহীন সমাজ’ একটি ভাল চিন্তা কিন্তু বাস্তবে সাম্যবাদী দেশে অনেক উঁচু-নিচু আছে: অধিকাংশ লোক হল সাধারণ নাগরিক। তার উপরে একটি শাসনকারী শ্রেণী আছে যাদের জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন।
  • এর তুলনায় গণতান্ত্রিক দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংখ্যা বেশী > অধিকাংশ লোকদের অবস্থা মোটামুটি ভাল।
  • লেনিন ক্ষমতা ধরার ৪ বছরের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন কঠোর দুর্ভিক্ষে নামল (১৯১৭>১৯২১)…কেন?
যেখানে মানবীয় অধিকার কম: সেখানে গরীব লোক বেশি, ধনী লোক অল্প
যেখানে মানবীয় অধিকার সুরক্ষিত, সেখানে অধিকাংশ লোকের অবস্থা বেশ ভাল, গরীব অল্প আ‌ছে এবং ধনীও অল্প মাত্র।
  • ‘সব কিছু সবার’ = ‘আমি কাজ করি বা না করি পার্থক্য করবে না’ = ‘উৎপাদন হ্রাস পায়’ > দুর্ভিক্ষ
  • ‘ধনীদের থেকে নিয়ে সবার মধ্যে ভাগ করব’ কার্যকারিতার বোধ আছে কিন্তু বাস্তবে এর অর্থ ‘বিতরণ ততক্ষণ পর্যন্ত করা যতক্ষণ বিতরণ করার আর কিছু থাকে না’। সাথে তৈরী করার কোন উৎসাহ নেই > উৎপাদন কম > অভাব > দারিদ্রতা।
সমাজতান্ত্রিক দেশ (Socialist countries)
  • সমাজতন্ত্র বলে: ‘ধনীদের থেকে বেশী কর নিয়ে গরীবদের জন্য বিনামূল্যে সেবার ব্যবস্থা করব’।
  • ফলে সমাজতান্ত্রিক দেশে ধনী বা পরিশ্রমীদের থেকে ৭০, ৮০, ৯০ ভাগ আয় কর হিসাবে তোলা হয় > যদি পরিশ্রম করে বা না করে আমার মোট আয় একই হয় > কেন পরিশ্রম করব?
  • কঠোর পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, হিসাবী, দক্ষতা শীল ও বুদ্ধিমান লোকদের নিরুৎসাহিত করলে দেশের উন্নয়ন কিভাবে হবে? যৌথ পরিবার (Extended families)।
  • পরিবারে আমরা অলস ও দায়িত্বহীনদের  রক্ষা করতে থাকি। কিভাবে তা করি? পরিবারের পরিশ্রমী, হিসাবী ও দায়িত্বশীলদের  থেকে দাবি করতে থাকি। যে খারাপ কাজ করে, তার আচরণের কুফল পড়ে আরেক জনের উপর। তাহলে অলস বা দায়িত্বহীনেরা  কেন পরিবর্তিত হবে?
বিশ্বব্যাপী চিন্তা
  • যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখার অধিকার নেই সাধারণত সেখানে অন্যান্য মানবীয় অধিকারও নেই।
  • সব মিলিয়ে দেখে বুঝা যায়: যেখানেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখার অধিকার সুরক্ষিত > উন্নয়ন, উচ্চ উৎপাদন, তুলনামূলক অর্থনৈতিক সুঅবস্থা বিরাজমান।
  • আপনি একটি সমাজে লোকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখার অধিকার নিষেধ করতে পারেন, কিন্তু ফলাফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তা আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন না।
চুরি করার বিশেষ বা ভিন্ন পথ
  • কিস্তিতে অভিলাষের জিনিষ কেনা (financing) > সব মিলিয়ে দ্বিগুণ দাম দিচ্ছি।
  • ব্যক্তিগত ঋণ = নিজের ভবিষ্যৎ থেকে চুরি।
  • অভিলাষের জন্য কিছু কেনার ঋণ (consumer loan)। এই ধরণের মনোভাব নিয়ে সাবধান হোন: ‘আমার প্রয়োজন মেটানোর জন্য ঈশ্বর আমাকে যথেষ্ট দেননি, তাই নিজের জন্য ব্যবস্থা করব।’
  • বহুবছরের পারিবারিক ঋণ টানা > শেষে তা হচ্ছে ‘নিজ সন্তানদের প্রাপ্য থেকে চুরি’।
  • জাতীয় ঋণ = ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের কাছ থেকে চুরি।
  • মুদ্রাস্ফীতি = আরো টাকা ছাপানো > টাকার মূল্য হ্রাস = হিসাবী সঞ্চয়কারীদের কাছ থেকে চুরি।
  • অসম বাণিজ্যিক চুক্তি।