অর্থনীতি ০৩ – লোভ কোরো না
দ্বিতীয় বিবরণ ৫:২১
“অন্যের স্ত্রীর উপর লোভ কোরো না। অন্যের ঘর-দুয়ার, জমা-জমি, দাস-দাসী, গরু-গাধা কিম্বা আর কিছুর উপর লোভ কোরো না।”
- লোভ কোরো না: প্রতিবেশীর স্ত্রী, বাড়ী-ঘর, মাঠ, দাস, গরু-মহিষ, গাধা, জিনিস-পত্র।
- উদাহরণগুলি একটি চাষ নির্ভর সমাজের … গরু = লাঙ্গল টানা, গাধা = বেচা-কেনার জন্য পরিবহন
- বর্তমান সময়ের উদাহরণ: মোবাইল, বিভিন্ন ছোটখাটো যন্ত্র, ল্যাপটপ … নারী, গাড়ী, বাড়ী, শাড়ী।


লোভ বনাম আকাঙ্ক্ষা
- ‘লোভ’ মানে কি? লোভের কি কোন ইতিবাচক দিক নেই?
- হ্যাঁ, কোন অনুকরণীয় লোক দেখলে আমাদের অবশ্যই তাকে অনুকরণ করার চ্যালেঞ্জ নেওয়া উচিৎ।
- আকাঙ্ক্ষা ভাল যদি আমি তা পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা, সময় ব্যয় ও পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক।
- ‘যদি সে এটা শিখতে সক্ষম হয়েছে আমিও একই প্রচেষ্টা করে তা শিখতে পারব’
- কিন্তু সাধারণত ‘লোভ করা’ মানে শুধু ঈর্ষা করা; আমি সেই ব্যক্তিকে দেখে কিছু শিখি না অথবা সেই ব্যক্তির মত পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক নই।
মনে মনে পাপ
- কেন এই আদেশ দশ আজ্ঞার মধ্যে একটি? লোভ করার মধ্যে এমন কি খারাপ বা ক্ষতি আছে?
- যখন আমি লোভ করি তা তো ‘মনে মনে মাত্র’, তার মধ্য দিয়ে কারও কোন ক্ষতি করি না, ঠিক?
- ভুল, ঈশ্বর এটাকে পাপ বলে অভিহিত করেছেন। মনে মনে পাপ করা সম্ভব। কেউ না জানলেও তা পাপ
- আর এটা শুধু এখানেই থেমে থাকবে না। এটা পাপেপূর্ণ কাজের দিকে নিয়ে যাবে।
লোভ কিভাবে ধ্বংসাত্মক?
- প্রায়ই পাপ করার প্রথম ধাপ হিসাবে লোভ ধ্বংসাত্মক। লোভ পাপের পথে নিয়ে যায়:
- লোভ > > > টাকার ভুল ব্যবহার, ভুল ভাবে টাকা আয়ের চিন্তা, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি।
- লোভ > > > সম্পর্ক নিয়ে দ্বন্দ্ব, হিংসা, ব্যভিচার, দমন।
- লোভ কিভাবে কাজ করে? আমার চোখ কোথায়? আমি কিসে খেয়াল করি?
- অসীম মানসিক চক্র:
- ‘যদি আমি এই এই হতাম, তবে এটা করতে পারতাম’।
- ‘যদি আমার এই এই থাকত, তবে এটা করতে পারতাম’।
- এর পিছনে আরেকটি চক্র লুকায়: ‘কিন্তু আমার এই এই নেই, তাই তা করতে পারি না’
- লোভ আমার দৃষ্টি নিয়ে যায়:
- আমি যা নই তাতে।
- যা পাই নি বা যা আমার নেই তাতে।
- যা আমার পক্ষে সম্ভব নয় বা করতে পারি না।
- এটা যা অবাস্তব ও অসম্ভব তা দিয়ে আমার মন ভরিয়ে তুলে, যা আমাকে নিয়ে যায়:
- অসন্তোষ, অভিযোগ, তুলনা, হিংসা, ঈর্ষার দিকে
- অন্যদের জন্য প্রার্থনা বন্ধ করি এই চিন্তা করে যে ইতিমধ্যেই তাদের অনেক বেশী আছে।
- তীব্র অসন্তোষ, বিরক্তি, তিক্ততা, পরিস্থিতির স্বীকার মনে করা, কৃপণ স্বভাব, স্বার্থপরতা।
- অলসতা, দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা, পঙ্গুত্ব, আশাহীন, নিজেকে ‘বেচারা’ বা ‘অক্ষম’ ভাবা।
- লোভ আপনার মন ছোট করবে, বন্ধ করবে।

প্রতিষেধক হিসাবে ধন্যবাদের মনোভাব (কৃতজ্ঞতা)
- ধন্যবাদের মনোভাব হচ্ছে লোভের বিপরীত। ঈশ্বরের একটি পুনরুক্তি করা আদেশ: ‘ধন্যবাদ দাও!’
- ধন্যবাদের মনোভাব আমার মনে কি তৈরী করে? আমার চোখ কোথায় থাকে? কিসে খেয়াল করি?
- ধন্যবাদের মনোভাব আমার চোখ রাখতে সাহায্য করে:
- আমি কি হতে পেরেছি।
- আমার কি আছে বা আমি কি পেয়েছি।
- এই গুলি পেয়েছি বলে কি করা সম্ভব।
- ধন্যবাদের মনোভাব আমাকে সচেতন করে: বাস্তবতা কি, আমার কি করা সম্ভব, আমার সক্ষমতা সম্পর্কে > এটা আমার জন্য আরো সুযোগ খুলে দেয়। তা দ্বারা আমি বুঝতে পারি আমার পক্ষে কি কি করা সম্ভব।
- ধন্যবাদের মন বলে: ‘আমার হয়তো অনেক কিছু নেই, কিন্তু যা আছে তা দিয়ে অনেক কিছু করতে পারি’।
- বিশ্বস্ততার মন বলে: ‘আমার যা আছে তা নিয়ে কাজ করব’।
- প্রায়ই আমরা ঈশ্বরকে স্বার্থপর মনে করি যখন আমাদের তিনি বলেন তাঁকে ধন্যবাদ দিতে। তিনি অবশ্যই আমাদের হৃদয় থেকে দেওয়া ধন্যবাদে খুশি হন এবং ধন্যবাদের মনোভাব থাকা উপযুক্ত।
- কিন্তু ধন্যবাদের মনোভাব হচ্ছে একটি শৃঙ্খলা বা সুশাসন যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখে।
- নতুন নিয়ম অনুসারে ধন্যবাদের মনোভাব ও বিশ্বস্ততা: মথি ২৫ … তালন্তের দৃষ্টান্ত।
- আপনার যা নেই তা নিয়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হবেন না…তার চেয়ে আপনার যা আছে তা নিয়ে বিশ্বস্ত হোন।
- স্মরণ করুন: মালিকানা = দায়িত্বশীলতা = দায়বদ্ধতা … বেশী পাওয়ার জন্য কান্না করবেন না।
- উদাহরণ: বস্তির ২জন মা। বস্তির ২জন ঘর। ঈশ্বর হলেন একজন ‘বিনিয়োগ মহাজন’।
- আপনি কার সঙ্গ চান, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির না কি লোভী ব্যক্তির?
যদি যা লোভ করি তা পাই
- কি হয় যদি একজন লোভী যা লোভ করে বা পেতে চায়, তাই পায়? সন্তুষ্টি বা শান্তি?
- না, অথবা এই সন্তুষ্টি স্থায়ী নয় > অসীম চাওয়া বা দাবি, কোন কিছুই যথেষ্ট ভাল মনে না করা।
- জার্মান প্রবাদ: ‘যদি একটি চাহিদা পূর্ণ হয়, সাথে সাথে আরো কয়েকটি নতুন চাহিদার জন্ম হয়’।
- সন্তুষ্টিটা হচ্ছে একটি পছন্দ বা মনোভাব, অসন্তুষ্টিটাও তাই … তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে না।
- বাংলা প্রবাদ: ‘আমি যা চাই তা পাই…তারপর মনে হয় কি যেন নাই’।

চাহিদা বা দাবি এবং দোষারোপ
- নাটক: ‘তোমরা গরীব বাংলাদেশী, তোমাদের অনেক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় হয় (সত্য), ব্রিটিশরা তোমাদের অনেক শোষণ করেছে (সত্য), তোমাদের সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত (তাও সত্য)…।
- বাংলাদেশী হিসাবে এটা শুনে আপনার কেমন লাগে?
- ভাল, দয়া-মায়া পাচ্ছি, আশা করি তারা আরো সাহায্য করবে।
- সমস্যাটা কি? – আপনার সাথে শিশুর মত আচরণ করছে, সব দায়িত্ব বা কিছু করার অধিকার নিয়ে নিচ্ছে।
- এই ধরণের চিন্তা করলে এই পর্যায় চলে আসে: “আমি ছাড়া সবাই দোষী। সবাই দায়ী। সবাই সমস্যা… আমি বাদে!”
- এটা পরিচালিত করে চাহিদা ও দোষারোপমূলক মনোভাবের দিকে: ‘যদি তারা করত’ ‘তারাই সমস্যা’ > পরিবেশকে দোষ দেওয়া > নিজের চেয়ে বাইরের বিষয়গুলিতে দোষ দেওয়া > ‘আমার কিছু করার নেই’ > দায়িত্ব বোধহীন, অসাড়তা, পরাধীনতা … এবং: সবার উপরে ক্রোধ, তিক্ততা, আক্রমণাত্মক মনোভাব।
- চাহিদা বা দাবী হচ্ছে একটি ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক পথ,… এমন পথে ঈশ্বর কাজ করেন না।
- ঈশ্বর সর্বদা দৃষ্টি আমার উপর নিয়ে যান: ‘কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তুমি কি করবে ?’
- যে মুহূর্তে আমি দোষারোপ না করে পরিবর্তে নিজের জন্য দায়িত্ব নেই সে মুহূর্তে উন্নয়ন শুরু।
মানবাধিকার দাবি করা?
- আমরা লোকদের অধিকার আদায়ের শিক্ষা দেই। এটা কি তাহলে ভুল? মানবাধিকার কি বাইবেলীয় নয়?
- মানবাধিকারের চিন্তা প্রথম এসেছিল বাইবেলীয় চিন্তা থেকে এবং সার্বিকভাবে বলা যায়: যে দেশে খ্রিষ্টান চিন্তার প্রভাব বেশি ছিল সেই দেশে মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত।
- কিন্তু বাইবেলে অধিকার দাবি করার কথা কম শুনবেন (‘আমি আমার অধিকার দাবি করি’ এবং তোমাকে অবশ্যই আমার অধিকার রক্ষা করতে হবে’), বরং অন্যের অধিকার রক্ষা করার আদেশই পাওয়া যায়। মোট কথা: মানবাধিকার বাইবেলে দাবি হিসাবে পাওয়া যায় না বরং অন্যের প্রতি আমার দায়িত্ব হিসাবে। স্বার্থপরতা নয় বরং অন্যের প্রতি চিন্তাশীলতা।
- বাইবেলে সব কিছু প্রথম ঈশ্বর দিয়ে শুরু, দ্বিতীয় স্থানে আছেন আপনি এবং আপনার অধিকার, তৃতীয় স্থানে আমি।
- আসলে এই ক্রম (প্রথম ঈশ্বর, পরে আপনি, শেষে আমি) এমন কি ইব্রীয় ব্যাকরণে প্রকাশ পায়। সাধারণ ব্যাকরণ অনুসারে আমরা বলি: „আমি করি, আপনি করন, তিনি করেন”। ইব্রীয় ভাষায় ক্রম উল্টা: ”তিনি করেন, আপনি করেন, আমি করি”।
- এই একই ক্রম বাইবেল পদেও প্রকাশ পায়: মার্ক ১২:৩০ “তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে এবং তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে” প্রথমে ঈশ্বর (তিনি), তারপর প্রতিবেশী (আপনি), তারপরে আমি।
