অর্থনীতি ১১ – ধনসম্পদ ও প্রথম ফসল

ধনসম্পদের বিষয়ে কিছু প্রশ্ন
  • ঈশ্বর কি চান আমরা দরিদ্র থাকি? না কি চান আমরা ধনী হই?
  • ধনীরা কি ধনী কারণ অন্যরা গরীব? সম্পদ, খনিজ বা যোগানের উৎস কি সীমিত?
  • ঈশ্বর কি তাঁর আইন-কানুনে ধনসম্পদের সীমানা দিয়েছেন? ঈশ্বর কি প্রত্যেককে কি একই পরিমাণে দান দেন?
বেশি পরিমাণে ধনসম্পদ থাকলে কি কি সুবিধা?
  • আমি আমার এবং আমার পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে পারি (খাবার, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা)
  • আমার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
  • আমার এই ক্ষেত্রে মানসিক প্রশান্তি থাকে, তাই আমি অন্য বিষয়ে চিন্তা করার সুযোগ পাই।
ধনসম্পদ থাকলে সমস্যা কি কি?
  • বিলাসীতায় জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হই। পরে এই মানদন্ড ছেড়ে দিতে কঠিন মনে হয়।
  • ধনসম্পদের উপর বা নিজের উপর নির্ভরতা বাড়ে। মিথ্যা নিরাপত্তা অনুভব করি। আমিত্বভাব চলে আসে।
  • অবহেলা করা, অপচয় করা বা অলস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • কৃপণ হওয়া বা অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রলোভন বাড়ে।
  • অহংকারী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এগুলো এড়িয়ে যাওয়া খুব কঠিন। না চাইলেও এগুলো এমনিতেই চলে আসে। সহজে অবচেতন মনে এগুলো করি।
এগুলোর ভালদিক থাকলেও খারাপদিকে যেতে পারে:

  • প্রত্যেক দিন নিয়ে দুশ্চিন্তা না করা               > > > > > > > >    অবহেলা বা অযত্ন
  • জানি যে আমি আমার প্রয়োজন মেটাতে পারি     > > > > > > > >    অলসতা
  • জানি যে আমি আমার প্রয়োজন মেটাতে পারি     > > > > > > > >    আমিত্ব
  • বেশী কষ্ট করতে হয় না                        > > > > > > > >    মিথ্যা নিরাপত্তার অনুভব
ধনসম্পদ পেলে কিভাবে নিশ্চিত করব যেন খারাপ দিকে নিয়ে না যায়? কিভাবে অহংকার প্রতিরোধ করব?
  • আমি কি করতে পারি যেন যে আশীর্বাদ ঈশ্বর আমাকে মঙ্গলের জন্য দিয়েছেন, তা যেন আমাকে প্রলোভনে না ফেলে? আশির্বাদ যেন বিপদ হয়ে না যায়?

দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৬-১০    ‘তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ পালন করবে, তাঁর পথে চলবে এবং তাঁকে ভক্তি করবে … তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে চমৎকার দেশটিতে তোমাদের নিয়ে যাচ্ছেন… তোমরা সেখানে খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হবার পর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া ঐ চমৎকার দেশটির জন্য তাঁর গৌরব করবে।

  • ধনী হওয়ার পরেও বাধ্য হতে থাকো! ঈশ্বরকে গৌরব করো! দাতাকে স্বীকার করো!

দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১১-১৪    ‘তোমরা সতর্ক থাকবে যেন আজ আমি তাঁর যে সব আদেশ, নির্দেশ ও নিয়ম তোমাদের দিচ্ছি তা অমান্য করে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে না যাও। ১২ যদি তোমরা সতর্ক না থাক, তবে তোমরা যখন খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হবে আর সুন্দর সুন্দর বাড়ী-ঘর তৈরী করে সেখানে বাস করতে থাকবে, ১৩ যখন তোমাদের পালের গরু-ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে যাবে আর তোমাদের অনেক সোনা-রূপা হবে এবং তোমাদের সব কিছু বেড়ে যাবে, ১৪তখন তোমরা অহংকারী হয়ে উঠবে এবং যিনি মিসর দেশের গোলামী থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন তোমাদের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তোমরা ভুলে যাবে।’

  • সতর্ক থেকো ! ভুলে যেও না! নিজে নিজেকে মনে করাও কি পেয়েছ ! স্মরণ কর কোথা থেকে এসেছ! অহংকারী হইও না! ঈশ্বরকে স্বীকার কর !

দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১৭         ‘তোমরা হয়তো কেউ মনে মনে বলতে পার, ‘আমার নিজের শক্তিতে, নিজের হাতে কাজ করে আমি এই সব ধন-সম্পত্তি করেছি।’

  • ধনকে নিরাপত্তা মনে করো না! অস্থায়ী জিনিসের উপর নির্ভর করো না! স্বয়ংসম্পূর্ণ হইও না!
  •  আমিত্ব ভাব করো না! অহংকার করো না! মনে রেখো যে ঈশ্বরই তা সম্ভব করেছেন!
  • সাবধানবাণী: পশ্চিমা দেশগুলিদের উদাহরণ – কিভাবে তারা ধনী হওয়ার পরে ঈশ্বরবিহীন হয়ে পড়েছে।
  •  কিভাবে ধনের ক্ষেত্রে সঠিক মনোভাব ধরে রাখতে পারি? আমি নিজেকে কিভাবে প্রলোভনে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করব?
অগ্রিমাংশ (ফসলের প্রথম অংশ বা প্রথম জাত) সম্বন্ধীয় আইন            দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:৪, ২৬:১-১১

দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:৪        ‘তোমাদের প্রথমে তোলা ফসল, নতুন আংগুর-রস ও তেল আর ছাগল-ভেড়ার গা থেকে প্রথমবার কেটে নেওয়া লোম তোমরা পুরোহিতদের দেবে।’

  • ফসলের প্রথম অংশ দেওয়ার মাধ্যমে ঈশ্বরকে দাতা হিসাবে স্বীকার করা।
  • প্রধান ফসল তোলার আগে, এখনও আমার কোন নিশ্চয়তা নেই যে সব ফসল তুলতে পারব কিনা, তখন ঈশ্বরকে অগ্রিমাংশ দেওয়া। ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা প্রকাশ করা।
  • ফসল দিয়ে আমার প্রয়োজনগুলি মেটানোর আগেই ঈশ্বরকে দেওয়া।

দ্বিতীয় বিবরণ ২৬:১-১১     ‘তোমরা সেটা দখল করে যখন সেখানে বাস করতে থাকবে …প্রথমে তোলা কিছু ফসল টুকরিতে রাখবে ….যে জায়গাটা তাঁর বাসস্থান হিসাবে বেছে নেবেন সেই ফসল তোমরা সেখানে নিয়ে যাবে…স্বীকার করছি যে, তিনি যে দেশটা আমাদের দেবেন বলে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করেছিলেন সেই দেশে আমি এসে গেছি … তোমরা, লেবীয়েরা এবং তোমাদের মধ্যেকার বিদেশী বাসিন্দারা আনন্দ করবে।’

  • কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদের হৃদয় প্রকাশ করো! ঈশ্বর আগে যা করেছেন ও যুগিয়েছেন, তা ঘোষনা করো! ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা স্বীকার করো!
  • সহভাগীতা করো! আনন্দ করে খাও! উপভোগ করো!
    কেন ঈশ্বর অগ্রিমাংশ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন?
  • যেন দাতাকে স্মরণ করি ও তাঁকে দাতা হিসাবে স্বীকার করি। যেন মনে রাখি কোথা থেকে যোগান পেলাম।
  • অগ্রিমাংশ ঈশ্বরকে দেওয়া যেন লোভ এবং ধনের প্রতি আসক্ত ও দাবীদার হওয়ার মনোভাব ভেঙ্গে যায়।
  • যেন পরবর্তী যোগান ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনগুলো নিয়ে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করি।
  • যেন স্বীকার করি যে সবকিছুই ঈশ্বরের, এবং তাঁর কাছ থেকে এসেছে; যে অগ্রিমাংশ দিয়েছি তা বেশী কিছু নয়।
  • যেন ঈশ্বরের উপর আমার বিশ্বাস ও নির্ভরতা ঘোষনা করি: ঈশ্বর ছাড়া কিছুই হয় না।
  • অগ্রিমাংশ দিয়ে আমার মনোভাব বা উদ্দেশ্য পরীক্ষিত ও প্রকাশিত হয়।
  • অগ্রিমাংশের পরিমাণ সম্বন্ধে কোনো নিয়ম নেই। তা হল হৃদয়ের বিষয় যে কতটুকু দেব।
    অগ্রিমাংশ কখন দেব?
  • কনান দেশ অধিকার করার পরে একবার এবং পরবর্তীতে বাৎসরিক ফসল সংগ্রহ করার আগে অগ্রিমাংশ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
    এখন আমরা কিভাবে এই আইনের প্রয়োগ করতে পারি?
  • যে কোনো কিছু (দান, যোগান, নতুন চাকরী, বেতন বৃদ্ধি) ঈশ্বরকে ধন্যবাদ সহকারে গ্রহণ করা।
  • এই মনোভাব রাখা যে আমার যা কিছু আছে, তা সবই ঈশ্বরের।
  • ঈশ্বরের কাছে জিনিসপত্র সমর্পিত করা। নিজেকে প্রশ্ন করা: কিভাবে এটা ব্যবহার করব? আনন্দিত মনে উপভোগ করা।
  • জিনিসপত্র আঁকড়ে ধরে না রাখা, বরং শেয়ার করা, এমন কি উপহার দেওয়ার জন্য রাজী থাকা।
ধনীদের প্রতি পৌলের উপদেশ              ১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯

‘যারা এই জগতে ধনী তাদের এই নির্দেশ দাও যেন তারা অহংকার না করে ও অস্থায়ী ধনের উপর নির্ভর না করে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে। তিনিই ভোগের জন্য সব জিনিস খোলা হাতে আমাদের দান করেন। 18 ধনীদের নির্দেশ দাও যেন তারা অন্যের উপকার করে, সৎ কাজে ব্যস্ত থাকে, খোলা হাতে দান করে এবং তাদের ধন-সম্পত্তির ভাগ অন্যদেরও দেয়। 19 এতে তারা নিজেদের জন্য এমন ধন জমা করবে যা ভবিষ্যতে তাদের পক্ষে একটা শক্ত ভিত্তির মত হবে, যেন সত্যিকারের যে জীবন তা তারা শক্ত করে ধরে রাখতে পারে।’

  • এইগুলি হল নিজেকে পরীক্ষা করার ব্যবহারিক বিষয়: অহংকারী হইও না! ধনসম্পদের উপর আশা না রেখে ঈশ্বরের উপর আশা রাখো! সৎ কাজ করো! উদার হও! অন্যদের দিতে প্রস্তুত থাকো!
  • এই বিষয়গুলো করতে পারলে, তখন ধনসম্পদ আমাকে আঘাত করতে বা ফাঁদে ফেলতে পারবে না।
ধনীদের প্রতি সতর্কবাণী                      যাকোব ৫:১-৬

‘ধনীরা, তোমরা শোন। তোমাদের উপর যে কষ্ট আসছে তার জন্য কাঁদ ও হাহাকার কর। 2 তোমাদের ধন নষ্ট হয়ে গেছে এবং তোমাদের কাপড়-চোপড় পোকায় কেটেছে। 3 তোমাদের সোনা ও রূপাতে মরচে ধরেছে, আর সেই মরচে তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এবং আগুনের মত করে তোমাদের মাংস খেয়ে ফেলবে। এই শেষ দিনগুলোতে তোমরা ধন-সম্পত্তি জমা করেছ। 4 তোমাদের ক্ষেতে যে মজুরেরা ফসল কেটেছে তোমরা তাদের মজুরি দাও নি; আর দেখ, সেই মজুরি এখন চিৎকার করে তোমাদের দোষী করছে। সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভুর কানে সেই মজুরদের চিৎকার গিয়ে পৌঁছেছে। 5 এই পৃথিবীতে তোমরা খুব আরামের মধ্যে দিন কাটিয়েছ এবং উচ্ছৃঙ্খলতার হাতে নিজেদের ছেড়ে দিয়েছ। জবাই করবার দিনের জন্য তোমরা নিজেদের কেবল তাজাই করেছ। 6 তোমরা নির্দোষীদের দোষী করেছ এবং মেরে ফেলেছ, আর তারা তোমাদের বাধা দেয় নি।’

  • সমস্যা কি কি? অব্যবহৃত অর্থ, রেখে দেওয়া অর্থ, অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ, বিলাসীতার জীবন-যাপন, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং শোষণ করা।