অর্থনীতি ১৭ – আঙ্গুর ক্ষেতের দৃষ্টান্ত
দৃষ্টান্তের পরিস্থিতি
- যীশু এই দৃষ্টান্ত তার পরিচর্যার শেষের দিকে যিরূশালেমে যাওয়ার পথে বলেন যেখানে তিনি কষ্টভোগ করবেন ও ক্রুশীয় মৃত্যুবহন করবেন।
- পরের অধ্যায়ে (মথি ২১) আমরা যীশুর যিরূশালেমে প্রবেশ করার বর্ণনা পাই।
- ইতিমধ্যে যীশু দুইবার ঘোষণা করেছেন যিরূশালেমে তার বিষয়ে কি হবে (কষ্টভোগের ভবিষ্যদ্বাণী (মথি ১৬:২১-২৩, ১৭:২২-২৩) যদিও তার শিষ্যদের মন-মানসিকতা এমন যে তারা এই ঘোষণাগুলো শুনেও গ্রহণ করে না।
- আংগুর ক্ষেতে মজুরদের দৃষ্টান্তের ঠিক আগে যীশুর সে ধনী যুবকের সাথে দেখা হয় (মথি ১৯:১৬-২২) এবং ফলে শিষ্যদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনাও হয় (মথি ১৯:২৩-৩০)।
- দৃষ্টান্তের প্রথম কথা হল “কেননা স্বর্গ রাজ্য এমন…” (কেরী), তাই দৃষ্টান্ত পরিষ্কারভাবে আগের পদের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
- আগেরই পদে যীশু বলেন: “যারা প্রথম সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে শেষে পড়বে, আর যারা শেষের সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে প্রথম হবে”।
- যীশু এইমাত্র সে ধনী যুবককে তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে বলেছেন “তারপর এসে আমার শিষ্য হও” (মথি ১৯:২১)।
- পরে যীশু শিষ্যদের বলেন: “ধনী লোকের পক্ষে স্বর্গ-রাজ্যে ঢোকা কঠিন হবে”, (মথি ১৯:২৩)।
- তা শুনে তারা ভীত হয়ে বলেন: ‘তাহলে কে পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারে?” (মথি ১৯:২৫)।
- হতে পারে তাদের চিন্তার ভিত্তি হল যা অধিকাংশ যিহূদী পুরাতন নিয়ম পড়ে মনে করত: ধার্মিকেরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ পায়।
- তাই সবচেয়ে ধনী লোক সবচেয়ে আশীর্বাদ-প্রাপ্ত লোক।
- কিন্তু এখন যীশু বলেন যে ধনীরা স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না! তা হলে তবে কে পারবে?
- কিন্তু যীশুর চিন্তা ভিন্ন: তিনি স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করা ধন বা আর্থিক সুঅবস্থার সাথে যুক্ত করেন না।
- বরং সব কিছু (সম্পত্তি, পরিবার) ছেড়ে তাঁকে অনুস্মরণ করার সাথে তিনি তা যুক্ত করেন (মথি ১৯:২৮-২৯)।
- এবং তা বলে তিনি শেষে যোগ দেন: “যারা প্রথম সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে শেষে পড়বে, আর যারা শেষের সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে প্রথম হবে”।
- তাই যীশু মোট কথায় শিষ্যদের বলতে চান না ‘তোমরা স্বর্গ রাজ্য ঢুকতে পারবে না’ বরং তার বিপরীত: ‘তোমরা ঢুকবে, এবং যদিও এখন লোকেরা তোমাদের সব কিছু ছেড়ে দেওয়ার জন্য মূর্খ বলবে, তোমরা শেষে লজ্জিত হবে না বরং প্রমাণিত হবে।’
তাই প্রাথমিকভাবে যীশু আংগুর ক্ষেতে মজুরদের দৃষ্টান্ত দ্বারা বলতে চান: হঠাৎ করে সব কিছু অন্য রকমভাবে দেখা দিতে পারে।
যীশুর দৃষ্টান্ত ‘আংগুর ক্ষেতে মজুরদের পরিশ্রম’ মথি ২০:১-১৬

‘১ স্বর্গ-রাজ্য একজন গৃহস্থের মত। তিনি একদিন ভোর বেলায় ক্ষেতের কাজে মজুর লাগাবার জন্য বাইরে গেলেন। ২ তিনি মজুরদের সংগে ঠিক করলেন যে, দিনে এক দীনার করে দেবেন। এর পর তিনি তাদের তাঁর আংগুর ক্ষেতে পাঠিয়ে দিলেন। ৩ প্রায় ন’টার সময় আবার তিনি বাইরে গেলেন এবং বাজারে আরও কয়েকজনকে বিনা কাজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। ৪ তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরাও আমার আংগুর ক্ষেতে কাজ করতে যাও। আমি তোমাদের উপযুক্ত মজুরি দেব।’ ৫ তাতে সেই লোকেরাও কাজ করতে গেল। “সেই গৃহস্থ আবার প্রায় বারোটায় এবং তিনটায় বাইরে গিয়ে ঐ একই রকম করলেন। ৬ প্রায় পাঁচটার সময় বাইরে গিয়ে অন্য কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা কাজ না করে সারাদিন এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’ ৭ “তারা তাঁকে বলল, ‘কেউ আমাদের কাজে লাগায় নি।’ “তিনি সেই লোকদের বললেন, ‘তোমরাও আমার আংগুর ক্ষেতের কাজে যাও।’ ৮ “পরে সন্ধ্যা হলে আংগুর ক্ষেতের মালিক তাঁর কর্মচারীকে বললেন, ‘মজুরদের ডেকে শেষ জন থেকে আরম্ভ করে প্রথম জন পর্যন্ত প্রত্যেককে মজুরি দাও।’ ৯ “বিকাল পাঁচটার সময় যে মজুরদের কাজে লাগানো হয়েছিল তারা এসে
এক এক দীনার করে নিয়ে গেল। ১০ এতে যাদের প্রথমে কাজে লাগানো হয়েছিল তারা বেশী পাবে বলে মনে করল, কিন্তু তারাও প্রত্যেকে এক এক দীনার করেই পেল। ১১ তাতে তারা সেই মালিকের বিরুদ্ধে বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে লাগল, ১২ ‘আমরা সারা দিন রোদে পুড়ে কাজ করেছি। কিন্তু যাদের শেষে কাজে লাগানো হয়েছিল তারা মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করেছে, অথচ তাদের আপনি আমাদের সমান মজুরি দিলেন।’ ১৩ “তখন মালিক তাদের মধ্যে একজনকে বললেন, ‘বন্ধু, আমি তোমার উপর তো অন্যায় করি নি। তুমি কি এক দিনারে কাজ করতে রাজী হও নি? ১৪ তোমার পাওনা নিয়ে চলে যাও। তোমাকে যেমন দিয়েছি, এই শেষের জনকেও তেমনই দিতে আমার ইচ্ছা। ১৫ যা আমার নিজের, তা আমার খুশীমত ব্যবহার করবার অধিকার কি আমার নেই? নাকি আমি দয়ালু বলে তোমার চোখ টাটাচ্ছে?’ ” ১৬ গল্পের শেষে যীশু বললেন, “এইভাবেই শেষে যারা তারা প্রথম হবে, আর প্রথম যারা তারা শেষে পড়বে।’
দৃষ্টান্তের অর্থ
- দৃষ্টান্ত দেখায় যে ঈশ্বর বড় মনের ঈশ্বর এবং তিনি সবাইকে গ্রহণ করে তাঁর দয়া ও পরিত্রাণ দেন।
- যারা নিজেকে অন্যদের চেয়ে গ্রহণযোগ্য বা ভাল মনে করে, এমন লোকদেরকে দৃষ্টান্ত দেখায় যে ঈশ্বর তাদের এই ভিত্তিতে গ্রহণ করেন না বরং সবাইকে এমনি দয়া দেন।
- দৃষ্টান্ত আবারও দেখায়: যারা ঈশ্বরের দয়ার উপর নির্ভর করে, যারা অনেক কিছু যা জগতের চোখে মূল্যবান তা ত্যাগ করে, যারা ঈশ্বরের অনুস্মরণকারী হয়েছে (যেমন: শিষ্যেরা), ঈশ্বর তাদের লজ্জিত হতে দেবেন না, বরং তাদেরকে অবশেষে সম্মানিত করে আশীর্বাদ করবেন।
অর্থনৈতিক বিষয়গুলি চিন্তা করে এই দৃষ্টান্তের শিক্ষা
- এই দৃষ্টান্ত দ্বারা যীশু প্রাথমিকভাবে অর্থনীতি সম্বন্ধীয় শিক্ষা দিতে চেয়েছেন, তা নয়।
- কিন্তু তারপরেও অর্থনৈতিক বিষয়গুলি এই দৃষ্টান্তে আসে এবং তা থেকে আমরা কিছু শিখতে পারে।
- আসুন প্রথম দৃষ্টান্তের বিভিন্ন ব্যক্তি লক্ষ্য করি:
আংগুর ক্ষেতের কর্তা
- তিনি ভোরে বের হন এবং সাধারণ মজুরীতে (এক দীনার) রাজী হয়ে কিছু মজুরদের কাজে লাগান।
- ৯টার সময়ে তিনি “বাজারে আরও কয়েকজনকে বিনা কাজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন”।
- তিনি তাদেরও কাজে লাগান ও তাদের প্রতিজ্ঞা দেন “উপযুক্ত মজুরি দেব’।
- ১২টায় ও ৩টায় ‘আবার প্রায় বারোটায় এবং তিনটায় বাইরে গিয়ে ঐ একই রকম করলেন”।
- ৫টায় “বাইরে গিয়ে অন্য কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা কাজ না করে সারাদিন এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’ ‘তারা তাঁকে বলল, ‘কেউ আমাদের কাজে লাগায় নি”।
- তিনি তাদেরও কাজে লাগান।
- ক্ষেতের কর্তা ভোরে মজুরদের কাজে লাগাতে বের হন, সাধারণ সময়ে তা করেন, সাধারণ মজুরীতেই তা করেন।
- ক্ষেতের কর্তা হিসাবী ও খেয়ালী, তিনি নিজের ধন-সম্পদ ও অন্যদের বিষয়েও অবহেলা করেন না।
- ৯টায় হতে পারে তিনি লাগানোর উদ্দেশ্যে বের হন নি বরং অন্য কারণে (“তিনি বাইরে গেলেন এবং দেখলেন”)।
- পরে বের হয়ে তিনি আরো পরিকল্পিতভাবে যান (ইংরেজী: “তিনি বাইরে গিয়ে আরও লোক পেয়ে তাদের লাগিয়েছেন”), তাদের নির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করেন এবং লাগান।
- তিনি চান যেন লোকেরা কাজ পায়, তিনি বুঝতে পারেন যে তাদের কাজ, আয় ও যোগান কত প্রয়োজন যেন দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারে।
- তিনি তাদের এক ধরণের ধমক দেন: “তোমরা কাজ না করে সারাদিন এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?” কিন্তু তিনি তাদের বিচার করার চেয়ে কারণ জানতে চান।
- এই মজুরেরা কি ভোর থেকে দাঁড়িয়েছিল?
- তারা কি দেরি করে এসেছিল?
- হয়তো কর্তা তাদের সকাল থেকে দেখছেন, কিন্তু শুধু মাত্র এখন কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন?
- তিনি এমনভাবে জিজ্ঞাসা করেন যে তাদের স্বীকার করতে হয় যে তাদের কাজে লাগানো হয় নি।
- নিজের লজ্জা বা অগ্রাহ্য করা তাদের স্বীকার করতে হয়।
- পরে যখন মজুরেরা আপত্তি উঠায়, তিনি তাদের কথা শোনেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজের ব্যবহার বা সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
- তিনি নালিশ পেলেও ভদ্র হতে থাকেন এবং বলেন:“বন্ধু, আমি তোমার উপর তো অন্যায় করি নি।”), তিনি যুক্তি দেখান এই আশায় বা নিশ্চয়তায় যে তারা যুক্তি শুনে তার ব্যবহারের কারণ বুঝতে পারবে ও রাজি হতে পারে।
প্রথম লাগানো মজুরেরা
- তারা ভোরে উঠে কাজের খোঁজে বের হয়, তারা সাধারণ মজুরীতের রাজি হয়ে চুক্তি অনুসারে সারা দিন সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত শ্রম করে।
- যখন তারা দেখে যে অন্য মজুরেরা পূর্ণ মজুরী পায় যদিও তাদের দেরি করে কাজে লাগানো হয়েছিল, তারা আশা করে যে তারা মজুরীর চেয়ে বেশি পাবে।
- যখন তারা ‘মাত্র’ সাধারণ মজুরী পায় তারা বিরক্ত হয়ে উঠে কারণ তারা অন্যদের চেয়ে বেশি ক্ষণ শ্রম দিল কিন্তু তাদের চেয়ে বেশি মজুরী পেল না। তারা নালিশ করে: “যাদের শেষে কাজে লাগানো হয়েছিল তারা মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করেছে, অথচ তাদের আপনি আমাদের সমান মজুরি দিলেন”।
- তারা অপমানিত হয় এবং এই পার্থক্য মালিককে চ্যালেঞ্জ করার জন্য যথেষ্ট কারণ মনে করে। তারা ঠিকই বলছে যে তারা সারা দিন কাজ করেছে: “আমরা সারা দিন রোদে পুড়ে কাজ করেছি”।
শেষে লাগানো মজুরেরা
- তারা ৩টা বা ৫টা বাজলেও এখনও কাজের আশায় দাঁড়িয়ে আছে।
- হয়তো প্রথমদিকে তারা একটু দেরি করে বের হয়েছিল, কিন্তু এখন তারা প্রমাণ করে যে তারা আসলেই কাজ চায় কারণ ৩টা বা ৫টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা এবং সাথে সে লজ্জা লাগা মেনে নিতে রাজি (‘কেউ আমাদের চায় নি’, ‘অগ্রাহ্য করা হয়েছে’, অন্যরা তা দেখে হাসবে বা দয়া-মায়া করবে)।
- কাজের সুযোগ হারানোর চেয়ে তা করা ভাল। তারা ধৈর্য্যশীল, সমর্পিত, আগ্রহী, ইচ্ছুক।
- তারা কাজ পাওয়ার জন্য ত্যাগ-স্বীকার করতে রাজি।
- তাদের আসলে কাজ দরকার।
- তারা ৩টা বা ৫টায় কাজ শুরু করতে রাজি যদিও তারা এত অল্প ঘন্টা কাজের জন্য আর বেশি টাকা পাওয়ার আশা করতে পারে না।
- তারা বলে না: ‘আর পার্থক্য করে না, বাসায় যাই’।
- তারা বরং বলে: ‘যে কোনো কাজ হল কাজ না করার চেয়ে ভাল’।
দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যায় কিছু চিন্তা
এই দৃষ্টান্ত কি কি মূল্যবোধ দেখায়
- মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক, কাজের গুরুত্ব, কাজের সম্মান, সময়ের মূল্য, শ্রমিকের মূল্য, কাজের চুক্তির গুরুত্ব, কাজের চুক্তি পালন করার গুরুত্ব, মৌখিক চুক্তি ভাঙ্গা যায় না, বস্তু জগত ও দৈনন্দিন প্রয়োজন, কাজের মধ্য দিয়ে যা প্রয়োজন, তা অর্জন করা, ন্যায্যতার গুরুত্ব, নালিশ করার অধিকার, কথা বা আপত্তি শোনার গুরুত্ব, আপিল করার অধিকার, ব্যাখ্যা পাওয়ার অধিকার, ভদ্রতার সঙ্গে যোগাযোগ, যুক্তি, যুক্তি ভিত্তিক আচরণ, ন্যায় ব্যবহার পাওয়ার অধিকার, ন্যায্যতার চেয়ে বেশি দানশীল হওয়ার অধিকার, দয়ার অনুমোদন।
এই দৃষ্টান্তের আচমকানোর বা ফাঁদে ফেলার মুহূর্ত
- আমরা তা অন্যায় মনে করি যখন অন্যদের দয়া দেখানো হয়, বিশেষভাবে যখন আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি (ন্যায্য ব্যবহার পেলেও)।
- আমরা তুলনা করি। আমরা নিজেকে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মনে করি।
এই দৃষ্টান্ত কি কাজের মনোভাব নষ্ট করে না? পরিশ্রম কি নীচু চোখে দেখে না? পরিশ্রমীদের নিরুৎসাহিত করে না? ন্যায় ব্যবহার যারা করে, তাদের বিরক্ত করে তুলে না? – দয়া কি অন্যায়?
- চাইলে বলা যায় যে দয়া দান হল ‘ন্যায্য’ না, এই অর্থে যে দয়ার অর্থ তো ঠিক এই যে আমি আমার যোগ্যতার চেয়ে বা কাজের চেয়ে ভাল কিছু পাই।
- কিন্তু এই দৃষ্টান্ত আসলে অন্যায় করা হয় না, কাউকে ঠকানো হচ্ছে না, কোনো চুক্তি ভাঙ্গা হচ্ছে না, সবাইকে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার দেখানো হয়।
- তাই যদি হয়, আমরা তারপরেও কেন এই দৃষ্টান্তের বিষয়ে একটি ‘অন্যায় ভাব’ উপলব্দি করি? কারণ আমরা চিন্তা করি যে ন্যায্য মানে একই কাজ = একই মজুরী।
- বোধ হয় যে এই দৃষ্টান্ত দ্বারা ঈশ্বর বলতে চান: পরে লাগানো শ্রমিকদের সে কাজ পাওয়ার সমর্পণ ও ত্যাগ-স্বীকার, তা হল পরিশ্রম করার সমান। তারা কাজ চেয়েছে, কাজ পেলে কাজ করত, কিন্তু কাজ পেল না।
- পার্থক্য এই নয় যে এক পাশে দাঁড়ায় পরিশ্রমী লোক এবং ঐপাশে দাঁড়ায় অনিচ্ছুক লোক।
- পার্থক্য ছিল যে এক দল লোক সুযোগ পেয়েছে এবং অন্যেরা সুযোগ পায় নি।
- পার্থক্য ছিল না মনোভাব, পার্থক্য ছিল পরিস্থিতি।
- যারা দেরি করে দাঁড়িয়েছে তারা তো ঠিক কাজ পাওয়ার উদ্দেশ্যেই দাঁড়িয়েছে।
- ক্ষেতের কর্তার আচরণ ভবিষ্যতের উপর কি প্রভাব ফেলবে?
- যে শ্রমিকেরা বিশেষ দয়া পেয়েছিল, তারা কি আগামীকাল সঠিক সময় কাজের খোঁজে দাঁড়াবে না?
- হয়তো তাই ঘটবে, দয়া ভুল বুঝা সম্ভব, দয়া ভুলভাবে ব্যবহার করাও সম্ভব।
- দয়াকে ভুল বুঝার কারণে এক মুহূর্তের জন্য বোধ হয় যে ‘কাজের মনোভাব’ নষ্ট করা হয়।
- কিন্তু বেশি দিন তা হবে না: যদি তারা আগামীকাল দেরি করে দাঁড়ায় এবং ফলে কাজ না পায় (অথবা দেরি করে কাজ শুরু করার কারণে মজুরী কম পায়) তবে দয়ার ভুল বুঝাবুঝি সাথে সাথে থামবে।
- তাই কি বলা যায় যে বার বার দয়া করা ভুল?
- বার বার দয়া করা কি কাজের মনোভাব নষ্ট করে?
- পরিশ্রমীদের নিরুৎসাহিত করে?
- বার বার দয়া করা ভুল হতে পারে না কারণ ঈশ্বর বার বারই দয়া করেন।
- আসলে তিনি সব সময় দয়ালু, যদিও সাথে সব সময় ন্যায্য।
- আগামীকাল বিষয়টা ভিন্ন হবে: যদি কেউ দেরি করে দাঁড়ায় সে আশায় যেন অল্প কষ্টে একই পরিমাণে মজুরী পাবে, যদি এভাবে কাজের মনোভাব কমে আসে তবে তারা হয়তো দয়া আর পাবে না, কারণ এখন দয়া করা হয়ে গেছে অলসতাকে উৎসাহিত করা।
- অথবা তা কি ঠিকই দয়ার একটি ঝুঁকি, যে মানুষ তা ভুল বুঝতে পারে এবং ফলে অলসতা বা বিলাসিতার মনোভাব তৈরি হয়? এবং তাতে তেমন কিছু করার নেই? ঈশ্বর কি আমাদের নিয়ে একই সংকটে পড়েন?
- আমরা ক্ষমা পেয়ে সহজেই পাপকে ‘হাল্কা বিষয়’ মনে করতে পারি কারণ আমার সে শাস্তি ও লজ্জা মুছে দেওয়া হয়েছে এবং আমি পরিষ্কার চেতনা পাই।
- কিন্তু পাপের কিছু ফলাফল মুছে ফেলা হয় না এবং সেগুলি ক্ষমার ভুল ব্যবহার সীমিত করে ফেলে।
- এবং যদি আমার এই ধরণের ভুল মনোভাব আছে তবে তা আমাকে খারাপ সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলবে এবং তাতে পরিষ্কার চেতনা তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যাবে ও লজ্জা লাগবে।
- এটা সে পুরানো প্রশ্ন: আমি কি দানটা চাই, বা দাতাকে চাই?
- ঈশ্বর আশীর্বাদ ঠিকই দেবেন, তিনি ফলে হয়তো আরাধনা পাবেন।
- কিন্তু দীর্ঘদিন দেখলে মাত্র যারা আরাধনা করে তারা আসলে আশীর্বাদিত।
এই দৃষ্টান্তের একটি বিষয় যা আমরা অনেক বার দেখি না
- এই দৃষ্টান্তের একটি বিষয় যা আমরা অনেক বার দেখি না, তা হল ঈশ্বরের দয়া বেকার লোকদের নিয়ে, যারা কাজ পাচ্ছে না এবং ফলে কাজের সে সম্মান ও তৃপ্তি পায় না।
- ঈশ্বরের দয়া এমন লোকদের জন্য যাদের মনোভাব ঠিক, যারা ইচ্ছুক ও সমর্পিত কিন্তু কাজ পায় না। কাজ এমন মূল্যবান বিষয় যে যদি একজন ইচ্ছুক লোক কাজ করার সুযোগ না পায়, তবে তা ঈশ্বরের দয়া ডেকে আনবে।
- এখানেও বুঝা যায় যে ঈশ্বরের চোখে ‘কাজের উৎপাদনের’ চেয়ে হৃদয়ের মনোভাব ও উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ।
- ঈশ্বর আমাদের এমন কিছু নিয়ে বিচার করেন না বা দোষ ধরেন না যাতে আমাদের কোনো কিছু করার নেই বরং তিনি আমাদের যে কোনো একটি পরিস্থিতিতে আমরা কি করলাম, তা নিয়ে বিচার করেন।
- এই অর্থে যদি ক্ষেতের কর্তা পরে লাগানো লোকদের মজুরী কম দিতেন, তা হত অন্যায়।
- কারণ তিনি লোকদের এমন কিছুর জন্য ‘শাস্তি’ দিচ্ছেন যাতে তাদের কোনো কিছু করার ছিল না।
- ঈশ্বর আমাদের এভাবে বিচার করেন না।
- একটি অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ লোক থেকে ঈশ্বর শ্রম দাবি করেন না যেমন তিনি একজন সাধারণ শ্রমিক থেকে করেন।