পরিবার ০৭ – বাবা-মায়ের অধিকার ও অধিকারার সীমানা

বাবা-মায়ের অধিকার

দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৬, যাত্রা পুস্তক ২০:১২ বাবা-মাকে সম্মান কর

‘তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করে চলবে। তাতে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া দেশে তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকবে এবং তোমাদের মঙ্গল হবে।’

  • এখানে ব্যবহৃত “সম্মান” শব্দটি যাত্রা ১৪:১৭-১৮ পদেও পাওয়া যায়: ফরৌণ হবে ঈশ্বরের “গৌরবের” প্রকাশ।
  • মা-বাবাকে সম্মান করার অর্থ কি? তাদের শ্রদ্ধা করা,ভালবাসা, গ্রহণ করা, কৃতজ্ঞতা স্বীকার, মূল্য দেওয়া, সম্পর্কে থাকা, কথা শোনা, গুরুত্ব দেওয়া, বাধ্য হওয়া।
  • কোন কোন সন্তান বাবামায়ের বাধ্য হয় কিন্তু সম্মান করে না। আবার কোন কোন সন্তান সম্মান করে কিন্তু বাধ্য থাকে না। বাধ্যতা ও সম্মান ঠিক একই বিষয় নয়।
  • কেন বাবা-মাকে সম্মান দেওয়া উচিত?
    • কারণ তারা আমাদের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন এবং সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করেন।
    • তারাই আমাদের জন্মদাতা, তাদের মধ্য দিয়ে আমরা পৃথিবীতে আসি, তারাই আমাদের পরিচয়
    • আমরা যদি তাদের সম্মান না করি তাহলে আমরা নিজেরই পরিচয় বা উৎস অস্বীকার করি। তাদের সম্মান করা মানে নিজেকে সম্মান করা। যদি তাদের সম্মান না করি, আমার নিজেকে নিয়ে শান্তি থাকবে না, আত্মবিশ্বাস থাকবে না।
    • এমন কি আমার বাবা-মা মন্দ কাজ বা আমাকে অবহেলা করলেও তারা একটাই ভাল কাজ করেছেন যে আমাকে জন্ম দিয়েছেন।
  • সব ক্ষেত্রে বা সব সময় কি বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়া উচিত? বাধ্যতার কি কোনো সীমানা আছে? > ২য় অংশ দেখুন!
  • এই আদেশের গুরুত্ব কি যা ১০ আজ্ঞার মধ্যে আছে? কারণ ঈশ্বরের চোখে পরিবার, পরিবারের মধ্যে শান্তি ও সুসম্পর্ক, জীবনের মূল্য, সন্তানদের সুরক্ষা ও উন্নয়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবার হচ্ছে সমাজের ভিত্তি। পরিবার যেভাবে গঠিত হবে সমাজ সেভাবে পরিচালিত হবে।
  • ১০ আজ্ঞার মধ্যে শুধুমাত্র এই আজ্ঞাতেই একটি প্রতিজ্ঞা যুক্ত আছে: বেশি দিন বেঁচে থাকা ও মঙ্গল।
  • সুসম্পর্কে থাকার মধ্য দিয়ে আশীর্বাদ আসবে। ‘আমার জাতি ভাইয়েরা যখন এক মন নিয়ে একসঙ্গে বাস করে তখন তা কত ভাল ও কত সুন্দর লাগে!..সদাপ্রভু সেখানে আশীর্বাদ করেছেন, আর সেই আশীর্বাদ হল চিরকালের জীবন। (গীত ১৩৩).
  • বাবা-মা থেকে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত একটা প্রভাব থাকে। প্রভাব নেতিবাচক হলে ঈশ্বর তা তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্ম পর্যন্ত সীমিত রাখেন, কিন্তু ইতিবাচক প্রভাব হলে ঈশ্বর তা হাজার প্রজন্ম পর্যন্ত রাখেন। ‘তিনি মোশির সামনে দিয়ে এই কথা ঘোষণা করতে করতে গেলেন, “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, তিনি মমতায় পূর্ণ দয়াময় ঈশ্বর। তিনি সহজে অসন্তুষ্ট হন না। তাঁর অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার সীমা নেই। ৭ তাঁর অটল ভালবাসা হাজার হাজার পুরুষ পর্যন্ত থাকে। তিনি অন্যায়, বিদ্রোহ ও পাপ ক্ষমা করেন, কিন্তু দোষীকে শাস্তি দিয়ে থাকেন। তিনি পিতার অন্যায়ের শাস্তি তার বংশের তিন-চার পুরুষ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন।” (যাত্রা ৩৪:৬-৭)।
  • বাবা-মায়ের প্রভাব যদিও থাকে, তার পরেও প্রত্যেকজনের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। (যিহিষ্কেল ১৮:২০)
  • রাজাবলিবংশাবলিতে রাজ পরিবারের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়: কিছু ভাল রাজার অনেক মন্দ সন্তান আছে (যেমন যিহোষাফৎ, হিষ্কিয়, যোশিয়)। আবার কিছু মন্দ রাজার অনেক ভাল সন্তান আছে (আহস, আমোন)।
  • বাবা এবং মা উভয়কে সমানভাবে সম্মান করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। হয়তো সন্তানের প্রতি বাবা ও মায়ের ভূমিকা ভিন্ন কিন্তু দুইজনের ভূমিকাই প্রয়োজন ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য ।
  • অনেক সময় দেখা যায় ভাঙ্গা পরিবারের সন্তানেরা বেশি উচ্ছৃঙ্খল যার ফলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
  • বাবা-মা হিসাবে সন্তানদেরকে ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব, সুযোগ বা উৎসাহ দিতে পারেন কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। যেমন ঈশ্বর আদম ও হবাকে (আদি ১:২৮, ২:১৮) পৃথিবীর দেখাশুনার আহবান ও অধিকার দেন, কিন্তু তিনি তাদের এই কাজে নিয়ন্ত্রণ করেন না। ঠিক তেমনি বাবা-মা সন্তানদের নীতিমালা, উৎসাহ, শৃঙ্খলা ও সাহায্য দিতে পারেন যাতে তারা নিজেদের আহবান আবিষ্কার ও পূর্ণ করতে পারে।
  • প্রশ্ন : পরিবার থেকে সন্তানদের আলাদা করা কি ঠিক? যেমন: পড়াশুনার জন্য সন্তানদের কে হোস্টেলে দেওয়া। সন্তানের কোন বয়স থেকে তা উপযুক্ত হতে পারে? তার পরিবর্তে যদি গ্রামে গ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন করা হয় তাহলে কেমন হয়?
  • প্রশ্ন: এতিমখানার চেয়ে বাচ্চা দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা করা কি ভাল হত না? এখানে সহজ উত্তর নেই।

দ্বি বি ২৭:১৬ “সেই লোক অভিশপ্ত, যে মা কিম্বা বাবাকে অসম্মান করে।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’”

  • এই অভিশাপ কি ঈশ্বরের হাত দিয়ে যুক্ত করা একটি শাস্তি ? বা এই অভিশাপ বাবা-মাকে অগ্রাহ্য করার সাধারণ ফলাফল? বাবা-মাকে অগ্রাহ্য করা মানে নিজের পরিচয় অস্বীকার করা, নিজেকে সম্মান না করা, তাদের শাসন, পরামর্শ ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত , সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়া, দায়বদ্ধতায় না থাকা।

লেবীয় ২০:৯ “যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। সেই অশ্রদ্ধার দরুন সে নিজের মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী।”

  • যেহেতু মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার একমাত্র সরকারের, এখানে সরকারের একটি ভূমিকা বর্ণনা করা আছে।
  • এই পদ কি শুধুমাত্র শক্তিশালী সাবধানবাণী? না বাবা-মায়ের সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি? মামলা করা কি ঠিক? মামলা করা কি উচিত?
  • আশ্চর্য লাগে যে এই ধরণের ব্যবহারে ঈশ্বর মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন! তা পরিষ্কারভাবে দেখায় যে ঈশ্বর পরিবারকে, বাবা-মায়ের অধিকার ও তাদের সম্মান করার উপরে কত গুরুত্ব দেন।
  • চিন্তা করা যায় যে এই পদ আগের পদগুলির সাথে যুক্ত। ঠিক আগে সন্তান উৎসর্গে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয় (মোলক পূজা) ও গণকের কাছে কিম্বা মন্দ আত্মার সঙ্গে সম্বন্ধ রাখলেও মৃত্যুদন্ডের আদেশ। হয়তো বাবা-মাকে অশ্রদ্ধা করার একটি পদ্ধতি ছিল তাদের বিরুদ্ধে যাদু-মন্ত্র করা।
  • বাংলাদেশেও যাদু-মন্ত্র নিয়ে অনেক ভয় ও বিশ্বাস আছে যে তা এমন শক্তিশালী যে প্রতিরোধ করা যায় না: বাতাস লাগা, আছর দেওয়া, অভিশাপ দেওয়া, অসুস্থ করে ফেলা, প্রেমে আকৃষ্ট করা, মেরে ফেলা। যারা এতে লিপ্ত তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণের বাইরে ও খারাপভাবে মৃত্যু হয়।

 

ইফিষীয় ৬:১-৪ মা-বাবার বাধ্য হও, বাবারা ছেলেমেয়েদের বিরক্ত করে তুলো না
“ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবেই তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল, কারণ সেটাই হওয়া উচিত। পবিত্র শাস্ত্রে প্রথম যে আদেশের সংগে প্রতিজ্ঞা রয়েছে তা এই-“তোমার মা-বাবাকে সম্মান কর, যেন তোমার মংগল হয় এবং তুমি অনেক দিন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পার।” তোমরা যারা বাবা, তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের বিরক্ত করে তুলো না, বরং প্রভুর শাসন ও শিক্ষায় তাদের মানুষ করে তোল।”

  • ছেলে-মেয়েরা বাধ্য হও! বাধ্য হওয়া সঠিক। যেহেতু অধিকাংশ সময় বাবা-মায়েরা বেশি প্রজ্ঞাপূর্ণ ও অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত এবং কোন কিছু নিষেধ করলে, তা সন্তানের মঙ্গলের জন্য করেন, ঈশ্বর বাবা-মায়ের অধিকার রক্ষা করেন।
  • ঈশ্বর পরিবার, পরিবারের কাঠামো, পরিবারের নেতৃত্ব, বাবা-মায়ের ভূমিকা ও কর্তৃত্ব দেন ও তা রক্ষা করেন।
  • এই আদেশ দেওয়া হয়েছে ছেলে-মেয়েদের, এর অর্থ কি যে যখন তারা প্রাপ্ত বয়সের, তখনও কি তাদের একইভাবে বাধ্য হওয়া প্রয়োজন?
  • “প্রভু যেভাবে চান” যার মানে ‘প্রভুর বাইরে নয়’, ‘প্রভুর ইচ্ছার বাইরে’ নয়, তাই বাবা-মা আদেশ করলেও সন্তা-নের কোন অনৈতিক কাজ, আইনগত অপরাধ বা ঈশ্বরকে অস্বীকার করে, এমন আদেশে বাধ্য হওয়া যাবে না।
  • এখানে বাবাদের প্রতি আদেশ সন্তানকে বিরক্ত করে না তুলতে, তাদের ক্ষমতা সন্তানদের টিটকারি, বিরক্ত বা রাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যবহার না করতে। যারা একসঙ্গে বসবাস করে, তারা জানে একে অন্যকে রাগিয়ে তোলা যায়, কিন্তু তা করা যাবে না। কেন একজন বাবা তা করবেন? ক্ষমতার খেলা? স্বার্থপরতা? বিনোদন?যাই হোক না কেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। নেতৃত্ব দান মানে অনুসরণকারীর সর্বোচ্চ মঙ্গল চাওয়া, তাকে বিরক্ত করে তোলা নয়।
  • এর মানে বাবা-মায়েদের দায়িত্ব হল নির্দেশনা দেওয়া, ভাল কি, মন্দ কি, তা বুঝানো, শাস্তি দিয়ে তার কারণ
  • বুঝানো, নীতিমালা অনুসারে আচরণ করা, তাই শাস্তি দেওয়ার আগে জানানো যে এই ব্যবহারে এই শাস্তি। কি ভুল করেছে না জেনে যদি কোনো সন্তান মার খায়, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এক দিন ভুল করে শাস্তি না পেয়ে কিন্তু পরের দিন একই ভুলে শাস্তি পেলে সন্তান বুঝবে না কেন যা করেছে তা ভুল, বরং শুধুমাত্র বুঝবে যে তার চেয়ে বাবা-মায়ের ক্ষমতা বেশি, নৈতিকতা বা নীতি শিখবে না, বরং সব কিছু ভাগ্যের উপর।
  • ঈশ্বর উভয় বাবা-মা ও সন্তানকে আদেশ দিয়েছেন, তাই বাবা-মায়ের কর্তৃত্ব সুরক্ষিত ও তার সীমানাও নির্ধারিত।
  • প্রত্যেক ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি। তাই আমার সন্তান প্রথমত ঈশ্বরের অমূল্য সৃষ্টি, ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি, এমন একজন যার জন্য যীশু জীবন দিয়েছেন, প্রভুতে আমার ভাই বা বোন, যিনি সকল ক্ষেত্রে ভালবাসা, সেবা ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য। বাবা-মা হিসাবে এমন কিছু করবেন না বা দাবী করবেন না যা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির বিরুদ্ধে যায় অথবা যা সন্তানের মূল্যকে কমায়।
  • বাবা-মায়ের কখনই সন্তানের সামনে তর্ক বা ঝগড়া করা উচিত নয়, একে অন্যের কর্তৃত্ব কমানো উচিত নয়। কখনই বাবা-মায়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা করা যাবে না সন্তানের কাছ থেকে বেশি ভালবাসা পাওয়ার জন্য, এক অভিভাবক সন্তানের সাথে অন্য অভিভাবকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা যাবে না, ‘তুমি কাকে বেশি ভালবাস, বাবা না মাকে?’ বা ‘মায়ের কাছে চাও, বাবার কাছ থেকে চাবে না’ এই ধরণের প্রশ্ন বা কথা নিষেধ।
  • লূক ২:৫১ পদ বলে যে যদিও যীশুর এমন প্রজ্ঞা ছিল যে ধর্ম নেতারা আশ্চর্য হলেন, যীশু বাবা-মায়ের বাধ্য হন: “এর পরে তিনি তাঁদের সংগে নাসরতে ফিরে গেলেন এবং তাঁদের বাধ্য হয়ে রইলেন।” যখন যীশু প্রাপ্ত বয়স্ক তখন সব সময় বাবা-মায়ের দাবীর বাধ্য নাও হন (মার্ক ৩:২১, ৩:৩১-৩৫, যোহন ২:৪, ৭:৩-৯)।

কলসীয় ৩:২০-২১ মা-বাবার বাধ্য থেকো, বাবারা ছেলেমেয়েদের মন তেতো করে তুলো না
“ছেলেমেয়েরা, তোমরা সব বিষয়ে মা-বাবার বাধ্য থেকো, কারণ এতে প্রভু খুশী হন। তোমরা যারা পিতা, তোমাদের ছেলেমেয়েদের মন তেতো করে তুলো না, যেন তারা উৎসাহহীন হয়ে না পড়ে।”

  • কখন একজন সন্তান উৎসাহহীন হয়ে পড়ে? চেষ্টা করার পরেও বাবা-মায়ের চোখে ব্যর্থ হলে, তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারলে, অন্যায্য ব্যবহার পেলে (যেমন অন্য ভাই-বোনদের বেশি প্রাধান্য দিলে)।
  • কেন এই বিরক্ত না করার আদেশ আবারও বাবাদের প্রতি? কেন মায়েদের প্রতি নয়? হতে পারে অনেক সংস্কৃতিতে পুরুষদের হাতে কর্তৃত্ব বেশি থাকে, তারা সারা দিন পেশাগত কাজে প্রাপ্ত লোকদের সাথে যুক্ত থাকে যা পারিবারিক সম্পর্কের চেয়ে অনেক ভিন্ন। মায়েরা সন্তানের সাথে বেশি সময় কাটান, তাই তাদের অভিজ্ঞতা বেশি সন্তানের কি প্রয়োজন ও কিভাবে সন্তানদের সামলাতে হয়।
  • বেশিরভাগ সময় বাবারা কাজের জন্য অনুপস্থিত থাকে। তাতে বুঝা যায় যে আমরা অর্থনীতিকে পরিবারের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেই।
  • বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশ ছেলে-মেয়েদের প্রতি, কিন্তু বাবা-মাকে সম্মান করার আদেশের ক্ষেত্রে বয়সের সীমানার কোনো উল্লেখ নেই। তাই বোধ হয় যে প্রাপ্ত বয়সী হিসাবে আমি সব ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের বাধ্যতার
  • আদেশের নীচে আর নয়, কিন্তু বাবা-মাকে সম্মান করার আদেশের নীচে।

 

লূক ১১:১১-১৩ ঈশ্বর আসল পিতা, কিন্তু মা-বাবারাও ভাল দান দিতে জানে
“তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কে আছে, যে তার ছেলে রুটি চাইলে তাকে পাথর দেবে, কিম্বা মাছ চাইলে সাপ দেবে, কিম্বা ডিম চাইলে বিছা দেবে? তাহলে তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে যারা স্বর্গস্থ পিতার কাছে চায়, তিনি যে তাদের পবিত্র আত্মাকে দেবেন এটা কত না নিশ্চয়!”

  • ঈশ্বর এই পদগুলিতে তাঁর হাতে স্থাপিত পরিবার ও পরিবারের ক্ষেত্রে সন্তানদের উপর বাবা-মায়ের ভূমিকা ও কর্তৃত্বকে পূর্ণ সমর্থন করেন। মূলত বলা যায় যে ঈশ্বর বাবা-মাকে সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভাল অভিভাবক মনে করেন।
  • ঈশ্বর শুধুমাত্র তখনই এই কর্তৃত্ব তুলে নেন যখন পরিবারে দুরবস্থা হয়। পৃথিবীতে খারাপ পরিবার আছে। অনৈতিকতা, অবহেলা, কৌশলে চালনা, দমন, শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার, মন্দতা দ্বারা পরিচালিত পরিবারও আছে। এই ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা তাদের অধিকার ধ্বংস করে এবং কর্তৃত্ব অন্য কোনো ক্ষেত্রে দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু কোথায় দেব? সমাজ কর্মীদের (সরকার)? শিক্ষকদের (শিক্ষা)? ডাক্তারদের (বিজ্ঞান)? এই উত্তর সহজ নয়। এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অধিকারের ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়।

 

লূক ৭:২-১০ অধিকারের অধীনে থাকা, অধিকার আছে
“৬ প্রভু, আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি যে আমার বাড়ীতে ঢোকেন তার যোগ্য আমি নই।…৭ আপনি কেবল মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস ভাল হয়ে যাবে। ৮ আমি এই কথা জানি, কারণ আমাকেও অন্যের কথামত চলতে হয় এবং সৈন্যেরাও আমার কথামত চলে। আমি একজনকে ‘যাও’ বললে সে যায়, অন্যজনকে ‘এস’ বললে সে আসে আর আমার দাসকে ‘এটা কর’ বললে সে তা করে। ৯ এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন।”

  • শতপতি বুঝতে পারেন যে যীশু অধিকার মানেন এবং এর জন্য তাঁর অধিকার আছে, যেমন শতপতি হিসাবে তারও আছে।
  • যারা অধিকার মানে তাদের অধিকার আছে, যারা কারও অধিকার মানে না, তাদের অধিকার নেই। আমি যদি অন্যদের অধিকার বা বিভিন্ন ধরণের অধিকারের গুরুত্ব বা ভূমিকা বুঝতে না চাই, তবে আমি আমার নিজের অধিকারও বুঝব না। উদাহরণ: একজন সত্যিকারের প্রধান মন্ত্রী বিমানে উঠলে অবশ্যই একজন বিমানবালার নির্দেশনার বাধ্য হবেন।
  • যারা কখনও কারও বাধ্য হয় না, তারা কখনও বিশ্বাস করে না যে মানুষ বাধ্য হতে পারে। বিদ্রোহীরা বা আইন-ভঙ্গকারীরা সবাইকে তাদের মত মনে করে। লেখক জীন এডওয়ার্ডস বলেন: ‘একজন শৌল সব অনুসরণকারীদের অবশালোম হিসাবে দেখে, দায়ূদ হিসাবে নয়। একজন অবশালোম সব নেতাদের শৌল হিসাবে দেখে, দায়ূদ হিসাবে নয়।’

 

বাধ্যতার মনোভাব অত্যন্ত প্রয়োজন

  • সন্তান হিসাবে আমাকে জানতে ও বুঝতে হয় যে কিছু বিষয় আছে, যা সত্য ও গুরুত্বপূর্ণ, যদিও তা এই মুহূর্তে আমি বুঝতে পারি না।
  • আমার অন্যদের কাছ থেকে শেখার আগ্রহ ও নম্রতা থাকা প্রয়োজন। যদি আমি ‘সবার চেয়ে ভাল জানি’ তবে কারও কাছ থেকে কখনই কিছু শিখতে পারব না। সব ক্ষেত্রে আমার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাবে।
  • শেখার জন্য এমন মনোভাব প্রয়োজন যা অন্যদের চিন্তা, শিক্ষা বা সংশোধন মেনে নিতে আগ্রহী।
  • অধিকার অগ্রাহ্য করা মানে নিজের বৃদ্ধি বা উন্নয়ন অগ্রাহ্য করা।
  • অধিকার অগ্রাহ্য করা মানে নিজের অধিকার অগ্রাহ্য করা।
  • বিদ্রোহীরা কখনও ভাল নেতা হয় না, বরং তারা নিয়ন্ত্রণকারী নেতা হয়ে যায়, যারা সব সময় অনুসরণকারীদের বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্র করার ভয়ে তাদের চেপে রাখে।
  • দায়বদ্ধতা ছাড়া একক ‘খ্রীষ্টান’ পরিচর্যার নেতাদের নিয়ে সাবধানবাণী: এমন নেতা সাধারণত ‘ঈশ্বরের আহবানে’ নতুন একটি পরিচর্যা শুরু করে কারণ তারা যত পরিচর্যায় বা যত নেতার অধীনে কাজ করেছে, সব জায়গায় দ্বন্দ্ব করে চলে গেছে।
  •  

বাবা-মায়ের অধিকার সীমাবদ্ধ

আগাম সারাংশ
বাবা-মায়ের অধিকারের বা বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশের কি কোনো সীমানা আছে? কখন বাধ্য হওয়া ঠিক না? সারাংশ হিসাবে কিছু নীতিমালা:

  • বাবা-মা যদি আমাকে অনৈতিক কাজে জোর করে তাহলে বাধ্য হওয়া উচিত না (উদাহরণ: বাবা যদি কন্যাকে পতিতা হিসাবে তার মাতাল বন্ধুদের দেন)।
  • বাবা-মা যদি আমাকে অবৈধ কাজে জোর করে তাহলে বাধ্য হওয়া উচিত না (উদাহরণ: বাবা যদি ছেলেকে নেশা ক্রয়-বিক্রয় করতে বলে)
  • বাবা-মা যদি এমন কাজ করে যা সন্তানের সম্মানের হানি, স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর বা জীবনের ঝুঁকি (উদাহরণ: অতিরিক্ত বকাবকি, মার, তুচ্ছ করা, ইত্যাদি)
  • বাবা-মা মন্দ কাজ করলে বিরুদ্ধে দাঁড়ানো বা কিছু বলা (উদাহরণ: বড় মেয়ে বাবার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে যেন তার ছোট বোনদের মন্দ কাজে ব্যবহার না করে)
  • বাবা-মা আদেশ বা চাপ দিলেও যীশুকে অস্বীকার করা চলবে না।

এই নীতিগুলি বাইবেলে কিভাবে পাওয়া যায়? নীচে এমন পদগুলি দেওয়া হয়েছে যাতে নীতিগুলি প্রকাশিত:

 

দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:৬-১১ প্রতিমা পূজা নিষিদ্ধ এমন কি পরিবারের ছলনায়ও
“পূর্বপুরুষদের অজানা সেই দেব-দেবতার দিকে যদি তোমার নিজের ভাই কিম্বা তোমার ছেলে বা মেয়ে কিম্বা প্র্রিয় স্ত্রী কিম্বা তোমার প্রাণের বন্ধু তোমাকে একা পেয়ে বিপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে, ‘চল, আমরা গিয়ে দেব-দেবতার পূজা করি,’ তবে তার ডাকে সাড়া দিয়ো না বা তার কথায় কান দিয়ো না। তাকে কোন দয়া দেখাবে না; তাকে রেহাই দেবে না, কিম্বা তাকে রক্ষাও করবে না। ৯ তাকে মেরে ফেলতেই হবে। তাকে মেরে ফেলবার কাজটা তুমি নিজের হাতেই আরম্ভ করবে, তারপর অন্য সবাই যোগ দেবে।”

  • এক মত হবেন না, বাধ্য হবেন না, যুক্ত হবেন না, প্রতিমা পূজায় সাড়া দেবেন না বরং এর বিপক্ষে দাঁড়ান, প্রতিরোধ করেন, আইনগত ব্যবস্থা নেন, নিজের পরিবারের লোক হলেও।
  • পরিবারের চেয়ে ঈশ্বর গুরুত্বপূর্ণ, যদি পরিবার ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যেতে আদেশ বা চাপ দেন, তবে অবশ্যই পরিবারের চেয়ে ঈশ্বরের বাধ্য হতে হবে।
  • এখানে পরিষ্কারভাবে বাবা-মা, স্বামী বা স্ত্রী অথবা আত্মীয়ের প্রতি বাধ্যতার সীমানা দেখানো হয়।
  • “তুমি নিজের হাতেই আরম্ভ করবে” … অনেক সময় ঈশ্বর, ন্যায্যতা বা সত্যের চেয়ে আমরা পরিবারের অনৈতিকতাকে সমর্থন করি বা মেনে নেই। উদাহরণ: একজন অপরাধী ছেলের মা তাকে রক্ষা করার জন্য যে কোনো কিছু করতে রাজী (অনৈতিক বা অবৈধ হলেও): তার পক্ষে মিথ্যা বলা, নির্দোষীকে দোষী বানানো, লুকানো, সত্যের পক্ষে না দাঁড়ানো, চুপ করে থাকা।

 

দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৭ “খুন কোরো না”

  • বাবা-মায়ের কোনো অধিকার নেই সন্তানকে ক্ষতি বা খুন করার বা সন্তানের জীবন বা সুস্বাস্থ্যের উপর।
  • খুন না কিন্তু যদি বাবা-মা সন্তানকে কথা দ্বারা বা শারীরিক বা যৌন নির্যাতন করার ক্ষেত্রে বাইবেল কি বলে?
    • সন্তানের সত্যিকার জীবনদাতা হলেন ঈশ্বর।
    • সন্তানের আসল মালিক ঈশ্বর, তাই ঈশ্বরের সম্পত্তি নষ্ট বা ক্ষতি করার অধিকার কারও নেই।
    • বাবা-মা হলেন ঈশ্বরের অধীনে সন্তানের দেখাশুনাকারী মাত্র এবং তারা তাদের ব্যবহারের জন্য দায়বদ্ধ।
  • আপনার সন্তান খ্রীষ্টেতে আপনার ভাই বা বোন, তাই একজন ভাই বা বোনের প্রতি ব্যবহারের যে আইন তা সন্তানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

 

দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১১ সন্তানদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ দেওয়া নিষেধ
“তোমাদের মধ্যে যেন এমন কোন লোক না থাকে যে তার নিজের সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে, যে গোণাপড়া করে কিম্বা মায়াবিদ্যা খাটায় কিম্বা লক্ষণ দেখে ভবিষ্যতের কথা বলে, যে যাদু করে, যে মন্ত্রতন্ত্র কাটায়, যে ভূতের মাধ্যম হয়, যে খারাপ আত্মার সঙ্গে সম্বন্ধ রাখে এবং যে মৃত লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।”

  • বাবা-মায়ের কোনো অধিকার নেই সন্তানকে কোনো মন্দ কাজ বা মন্দ ধর্মকর্মে (তাবিজ, ক্ষতিকারক ঝাড়ফুঁক, সন্তান উৎসর্গ, পূজার কাজে ব্যবহার, কুমারীদের দেবী বানানো, সন্তানকে আত্মার অধীনে দেওয়া, সন্তানকে আহত করা, দেব-দেবীর কাছে সন্তানকে বলিদান) যুক্ত করা।

 

দ্বি বি ২৩:১৭-১৮ সন্তানদের মন্দির পূজার পতিতা হিসাবে দেওয়া নিষেধ
“কোন ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোক যেন মন্দির-বেশ্যা না হয়; কোন ইস্রায়েলীয় পুরুষও যেন মন্দির-বেশ্যার জীবন না কাটায়। পুরুষ হোক বা স্ত্রীলোক হোক যে বেশ্যার জীবন কাটায় তার রোজগারের টাকা মানত পূরণের জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘরে আনা চলবে না, কারণ এই রকম পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের সদাপ্রভু ঘৃণা করেন।”

  • বাবা-মায়ের কোনো অধিকার নেই সন্তানকে মন্দির পতিতা কাজের জন্য জোর করা, দিয়ে দেওয়া বা বিক্রি করার।
  • এই মন্দ কাজ দ্বারা আয় করা অর্থ ঈশ্বরকে গৌরব দেয় না, ঈশ্বর গ্রহণও করেন না। তা জঘন্য বিষয়। এই অর্থ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দান করলেও পাপ বা অন্যায্যতা মুছিয়ে দেবে না, ঈশ্বর উৎসর্গ নয় বাধ্যতা চান (১ শমূ ১৫:২২)।

 

লেবীয় ১৮:৬-২৩ সন্তান বা নাতী-নাতনীদের যৌন সম্পর্কে ব্যবহার করা নিষেধ

  • একজন সন্তান বা নাতী-নাতনীকে যৌন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা নিষেধ। যারা বয়সে ছোট এবং একজন প্রাপ্ত বয়সের আত্মীয়কে প্রতিরোধ করতে অক্ষম, বিশেষভাবে তাদেরকে সুরক্ষা করার জন্য এই আইন।

 

লেবীয় ১৮:২১ মোলক দেবতার কাছে সন্তান পুড়িয়ে উৎসর্গ করা নিষেধ
“তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার ছেলে বা মেয়েকে মোলক দেবতার কাছে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ না করে কিম্বা অন্য কোন ভাবে নিজের ঈশ্বরের নামের পবিত্রতা নষ্ট না করে। আমি সদাপ্রভু।”

  • বাবা-মায়ের কোনো অধিকার নেই সন্তানকে উৎসর্গ করতে, খুন করতে, ধর্মের নামে সন্তানদের শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতি করার। উদাহরণ: কনানীয় মোলক পূজা, হিন্দুদের সাগর পূজা অথবা দালান, দেওয়াল বা সেতু নির্মাণের জন্য বাচ্চা উৎসর্গ।

 

অন্য ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতার সীমানা

আগাম সারাংশ

  • আগে দেওয়া পদগুলির সারাংশ হিসাবে আমরা বলতে পারি: যদিও প্রত্যেক বিষয় উল্লিখিত নয়, ঈশ্বর খুব পরিষ্কারভাবে দেখায় যে বাবা-মায়ের অধিকারের সীমানা আছে, বিশেষভাবে যখন তারা মৌখিক, শারীরিক বা যৌন ক্ষেত্রে নির্যাতনে লিপ্ত অথবা যদি সন্তানকে অতি দমন করা হয়, যদি তারা সন্তানকে অনৈতিকতায় লাগাতে চায় অথবা যদি তারা সন্তানের ধর্মীয় স্বাধীনতা না মানে।
  • কিন্তু এই ধরণের অবস্থা বাদ দিলে বাবা-মায়ের অধিকারকে আর কোনো সীমানা দেওয়া আছে কিনা? ঈশ্বর কি বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশ প্রাপ্ত বয়সের সন্তানকেও দেন? তাদের সাথে এখনও বাস করার সময়ে? তাদের উপর আর্থিকভাবে নির্ভর করলে? যদি আমি প্রাপ্ত বয়সের মানুষ হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালন করি ও স্বয়ং চলি, ঈশ্বর কি এখনও বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা দাবী করেন? বিবাহের পরে আমি কি আগের মত বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য থাকতে দায়ী?

বিবাহ করলে
আদি ২:২৪ “এজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু’জন একদেহ হবে।”

  • এই পদে ঈশ্বর পরিষ্কারভাবে বলেন যে বিয়ে করার পরে একজনের প্রথম দায়বদ্ধতা হবে তার স্ত্রী বা স্বামীর প্রতি এবং তারা একে অন্যের কেন্দ্র হবে। বাবা-মাকে ছেড়ে যাওয়া আবশ্যক। বিয়ে করলে আমার জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা পরিবর্তিত হবে। ঈশ্বর আগের পরিবারের চেয়ে নতুন পরিবারকে অধিকার ও প্রাধান্য দেন। ঈশ্বর নতুন পরিবারকে আগের পরিবারের চাপ থেকে রক্ষা করেন।
  • এর অর্থ তা নয় যে বিবাহের পরে বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে হয় বা আরো ঘনিষ্ঠ থাকতে পারে না। কিন্তু বাবা-মায়ের ভূমিকা পরিবর্তিত হবে: তারা এখন পরামর্শদাতা, সমর্থনকারী বা মঙ্গলকারী, কিন্তু তারা আর অধিকার দাবী করতে পারবে না।
  • ঈশ্বর বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশ বিবাহে বাতিল করেন। বিবাহিত মানুষ হিসাবে যে অধিকার আমার এখন মানতে হবে হল স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গের সিদ্ধান্ত। বাবা-মায়ের আর বাধ্যতা চাওয়া উচিত নয়, নতুন পরিবারকে দমন করা বা অতিরিক্ত দাবী করা উচিত নয়।
  • ঈশ্বরের এই আদেশ বাংলাদেশী সংস্কৃতিতে অনেক বার অমান্য করা হয়। বিশেষভাবে যদি স্বামী বাবা-মা না ছাড়ে বরং নতুন স্ত্রীকে স্বামীর বাবা-মায়ের সংসারে নিয়ে আসে, এমন একটি সংসার যা বহুবছর তার বাবা-মা দিয়ে পরিচালিত। সবদিকে যদি ভাল সম্পর্ক হয়, তাতে হয়তো বেশি ক্ষতি হয় না, কিন্তু তারপরেও এই সংসারে নতুন স্ত্রীর কোনো সিদ্ধান্ত বা অধিকার নেই। সব সিদ্ধান্ত অন্যরা করে ফেলে: কি রান্না করা হবে, কিসের জন্য টাকা খরচ করা হবে, বাচ্চার টিফিন বক্সে কি থাকবে। যেহেতু স্ত্রীর সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই, তার দুটি সুযোগ মাত্র: মেনে নেওয়া অথবা কৌশলে তার ইচ্ছা পূর্ণ করা।
  • চিন্তা করুন বাংলাদেশে কত কষ্ট ও নির্যাতনের প্রতিরোধ করা সম্ভব হত যদি আমরা শুধুমাত্র এই একটি আদেশ পালন করতাম: বিয়ের পর বাবা-মায়ের সংসার ছেড়ে নিজেরা অন্য কোথাও নতুন সংসার শুরু করা!

নিজের দায়িত্ব নেওয়ার প্রাপ্ত বয়সী ব্যক্তি

  • ঈশ্বর কি প্রাপ্ত বয়সের সন্তানকে বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতার আদেশ দেন? বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতায় একটি বয়সের কি সীমানা আছে?
  • যদি আমি এখনও বাবা-মায়ের সংসারে থাকি এবং আর্থিক দিকে তাদের উপর নির্ভর করি, তবে বেশিরভাগ বাধ্য থাকার আদেশ থেকে যায়।
  • যদি আমি প্রাপ্ত বয়সের হই এবং স্বয়ং চলতে পারি, তবে কেমন? ঈশ্বর বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা আর দাবী করেন না, কিন্তু একজন প্রজ্ঞাবান সন্তান অবশ্যই প্রজ্ঞাবান বাবা-মায়ের কথায় গুরুত্ব দেবে। কিন্তু বিষয় ভিন্ন হয়েছে: প্রাপ্ত স্বাবলম্বী ব্যক্তি হিসাবে আমি বাবা-মায়ের কথার প্রজ্ঞা দেখলে রাজী হয়ে তা করব, বাধ্যতার দাবীর কারণে না বরং মঙ্গল বলে। বাবা-মা এখন পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করে।

বাইবেলে আমরা এই নীতি কোথায় দেখতে পাই?

  • ভিত্তিকভাবে প্রশ্ন করা দরকার: সন্তান মানুষ করলে আমার লক্ষ্য আসলে কি? আমার লক্ষ্য কি যে আমার সন্তান প্রশ্ন ছাড়া এবং অন্ধভাবে সারা জীবন আমার প্রত্যেকটি দাবিতে বাধ্য থাকবে? যদিও সন্তানের বাধ্যতা বড় হওয়ার সময় একটি প্রয়োজনীয় মনোভাব, তবুও সন্তানের বাধ্যতা আমার শেষ লক্ষ্য নয়।
  • বরং আমার শেষ লক্ষ্য হল আমার সন্তান যেন প্রজ্ঞাবান ও দায়িত্বশীল মানুষ হয়। এমন ব্যক্তি যে ভাল- মন্দ বুঝে ভালটা ও মঙ্গলটা নিজেই পছন্দ করবে – আমার আদেশে না, বরং নিজের ইচ্ছায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে।
  • উদাহরণ: একজন ৩০ বছরের পুরুষ যে সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম এবং প্রত্যেক বিষয়ে বাবা-মায়ের কাছে দৌড়ায় তা ভাল বিষয় নয়।
  • যীশু যখন প্রাপ্ত বয়সী তিনিও পরিবারের বা মায়ের প্রত্যেক দাবী পূর্ণ করেন না। যদিও তারা (বেশিরভাগ) ভাল উদ্দেশ্যে দাবি করে এবং তাদের দাবী অনৈতিক বা আইনের বাইরে নয়, যীশু তাদের দাবী অগ্রাহ্য করেন, জেনে যে ঈশ্বর তাকে এই আদেশ দেন নি। এর বিস্তারিত বর্ণনা ‘পরিবার ১৩ – যীশু এবং তাঁর পরিবার‘-এ পাবেন (মথি ৩:২১, ৩:৩১-৩৫, যোহন ৭:১-৫)।
  • অনেক লোক চিন্তা করে যে ‘নিজের দায়িত্ব নেওয়ার প্রাপ্ত মানুষ’ বলতে কিছু নেই, বিশেষভাবে মহিলা হলে। কিন্তু বাইবেল সমর্থন দেয় যে প্রাপ্ত বয়সের মহিলারা অবিবাহিত হিসাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে ও বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পারে। সলফাদের মেয়েদের বলা হয় ‘যাকে খুশি তাকে বিয়ে করতে পারে’ (গণনা ৩৬:৬)। তাতে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে ঈশ্বর তাদের অবিবাহিত প্রাপ্ত বয়সের মহিলা হিসাবে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছেন।

 

বাবা-মায়ের চেয়ে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশ
মথি ১০:৩৭ “যে কেউ আমার চেয়ে মা-বাবাকে বেশি ভালবাসে সে আমার উপযুক্ত নয়। আর যে কেউ ছেলে বা মেয়েকে আমার চেয়ে বেশি ভালবাসে সে আমার উপযুক্ত নয়।”

  • ঈশ্বরকে অবশ্যই পরিবারের চেয়ে (বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে) বেশি সম্মান, ভালবাসা ও বাধ্যতা দিতে হবে।
  • সাধারণত এমন হওয়ার কথা নয়, কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে পরিবার এবং ঈশ্বরের মধ্যে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
  • উদাহরণ: একজন ধর্মান্তরিত লোক যিনি নিজের পরিবারের উপর হতাশা, লজ্জা, এমন কি ঝুঁকি নিয়ে আসেন। একজন সন্তান যিনি আকর্ষণীয় চাকরীর উপরে ঈশ্বরের রাজ্যে কাজ করতে সিদ্ধান্ত নেন। একজন মা যিনি সাক্ষ্য দেন তার সন্ত্রাসী ছেলের বিরুদ্ধে। একটি নতুন দম্পতি যারা বর্ধিত পরিবারের দাবী পূর্ণ করা ভুল মনে করেন। একজন কর্মজীবী যিনি দুর্নীতি করতে প্রত্যাখ্যান করেন যদিও তার পরিবার তাকে অন্যায় ভাবে উপার্জনের জন্য পদের ভুল ব্যবহার করতে চাপ দেন।
  • কিন্তু আত্মিক কাজে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে বা ঈশ্বরের কাজের অজুহাতে পরিবারকে অবহেলা করবেন না। যে সেবায় পরিবার ধ্বংস হয় সে সেবা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করে না।
  • আবারও পেশা, ক্যারিয়ার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাফল্য ও সুজীবনকে প্রাধান্য দিলে আমরা নিজের জন্য একজন কঠোর মনিবকে বেছে নেই।


মথি ১০:৩৪-৩৬ যীশু পরিবারের মধ্যে অশান্তি, বিভেদ বা অত্যাচার নিয়ে আসবেন
“আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে কোরো না। আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি।”
লূক ১২:৪৯-৫৩ যীশু পরিবারের মধ্যে অশান্তি, বিভেদ বা অত্যাচার নিয়ে আসবেন
“আমি পৃথিবীতে আগুন জ্বালাতে এসেছি; যদি তা আগেই জ্বলে উঠত তবে কত না ভাল হত! ৫০ আমাকে একটা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে হবে, আর যতদিন পর্যন্ত তা না হয় ততদিন পর্যন্ত আমার দুঃখের শেষ নেই। ৫১ তোমাদের কি মনে হয় যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি? না, তা নয়। আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। ৫২ এখন থেকে এক বাড়ীর পাঁচজন ভাগ হয়ে যাবে, তিনজন দু’জনের বিরুদ্ধে আর দু’জন তিনজনের বিরুদ্ধে। ৫৩ তারা এইভাবে ভাগ হয়ে যাবে-বাবা ছেলের বিরুদ্ধে ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে, মা মেয়ের বিরুদ্ধে ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে, শাশুড়ী বউয়ের বিরুদ্ধে ও বউ শাশুড়ীর বিরুদ্ধে।”

  • যীশু পরিষ্কারভাবে বলেন যে ঈশ্বর এবং পরিবার একে অন্যের বিরুদ্ধে যেতেও পারে। তা হলে ঈশ্বরকে প্রাধান্য দিতে হবে পরিবার, পরিবারের অনুমোদন, পরিবারের জনপ্রিয়তা, পারিবারিক সম্পর্ক ও শান্তির উপর।
  • যদিও ঈশ্বর পরিবারকে অনেক গুরুত্ব দেন, তবুও পরিবারের স্থান দ্বিতীয়। ঈশ্বরকে সর্বোচ্চ স্থান দিলে অন্য সমস্ত কিছু তার সঠিক স্থান ও প্রাধান্য পায়। ঈশ্বরের অবাধ্য হয়ে পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ করতে পারব না। ঈশ্বরের বাধ্য হলেই আমি আমার পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ আশীর্বাদ নিয়ে আসতে পারি।
  • আবারও ঈশ্বরকে যখন প্রথম স্থান দেই তখন তিনি আমাকে শেখান, আমার স্বামী বা স্ত্রীকে ভালবাসতে, সন্তানদের যত্ন নিতে, ইত্যাদি।
  • ঈশ্বরের চেয়ে পরিবারকে বেশি প্রাধান্য দিলে আমি আমার পরিবারের উপর সমস্যা বা অভিশাপ নিয়ে আসব।
    • উদাহরণ: একজন অতি ত্যাগ-স্বীকারকারী মা, যিনি সন্তানকে প্রায় প্রতিমার স্থানে বসান এবং শেষ পর্যায় সন্তান অতিরিক্ত চাপে বিদ্রোহী হয়ে যায়।
    • উদাহরণ: স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় যখন তারা পরস্পরের প্রতি এমন প্রতিজ্ঞা, আশা বা দাবী করেন যা নিজেরাই পূরণ করতে অক্ষম বলে ভালবাসা আঘাত ও হতাশায় পরিণত হয় (‘তুমি আমার আকাশের চাঁদ’)।
    • উদাহরণ: একটি দম্পতি বর্ধিত পরিবারের অতিরিক্ত চাপ বা দাবীর কারণে সমস্যায় পড়ে।
    • উদাহরণ: ভুল বিবাহের কারণে ঈশ্বরের আহবান থেকে সরে যাওয়া।
  • যদি আমি ঈশ্বরের কারণে বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হতে না পারি তবে ‘বাবা-মা কে সম্মান’ কেমন দেখাতে পারি? > তাদের ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা, মূল্য দেওয়া, তাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনা, তাদের যত্ন নেওয়া, তাদের কাছে দায়িত্বশীল হওয়া, সম্পর্কে থাকা, যদিও আমি এক বিষয়ে হয়তো বা হতে পারব না।
    • উদাহরণ: অবিশ্বাসী পরিবারে একজন বিশ্বাসী সন্তান যাকে যীশুকে অস্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।