পরিবার ০৮ – বিদ্রোহী কিশোর
দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৮-২১ বাইবেলে কঠিন অনুচ্ছেদ
“যদি কারও ছেলে একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী হয়, যদি সে কিছুতেই মা-বাবার কথা না শোনে এবং তাদের শাসন না মানে, তবে তার মা-বাবা তাকে তাদের গ্রাম বা শহরের ফটকে বৃদ্ধ নেতাদের কাছে নিয়ে যাবে। তারা সেই বৃদ্ধ নেতাদের বলবে, ‘আমাদের এই ছেলে ভীষণ একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী; সে আমাদের অগ্রাহ্য করে চলে। সে মাতাল এবং টাকা-পয়সা উড়িয়ে দেয়।’ তখন সেই জায়গার সমস্ত পুরুষেরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে। এইভাবে তোমাদের মধ্য থেকে সেই মন্দতা শেষ করে দিতে হবে। তাতে ইস্রায়েলীয়েরা সবাই এই কথা শুনে ভয় পাবে।”
- এটা পুরাতন নিয়মের সবচেয়ে কঠিন ও ভয়ঙ্কর অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে একটি!
- আমরা কি করি যখন আমরা বাইবেলের অর্থ বুঝতে পারি না? ঈশ্বর অথবা তাঁর চরিত্র নিয়ে কি সন্দেহ করব? বাইবেল বা তার লেখা নিয়ে কি সন্দেহ করব (কিন্তু ঈশ্বরকে নিয়ে নয় এই ভেবে যে লেখাটি ঈশ্বর থেকে নয়)?
- অনুচ্ছেদটি কি ভুলে যাব? যে অনুচ্ছেদগুলো বুঝি মাত্র সেই অনুচ্ছেদগুলোই কি পড়ব? অথবা বলব সেই অনুচ্ছেদটি আর প্রযোজ্য নয়? যে পুরাতন নিয়ম আর প্রয়োজন নেই?

- কিভাবে কঠিন অনুচ্ছেদগুলো বুঝব?
- যে অনুচ্ছেদগুলো সহজে বুঝা যায় সেগুলো দিয়ে কঠিন অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা করব, উল্টোভাবে নয়
- অনুচ্ছেদটির অর্থ কখনই সারা বাইবেলের সত্যগুলোর বিপরীত হবে না।
- অনুচ্ছেদটির অর্থ কখনই ঈশ্বরের চরিত্রের বিপরীত হবে না।
- জিজ্ঞাসা করুন: আইনটির উদ্দেশ্য কি? আইনটিতে কি নীতিমালা পাওয়া যায়? আইনটি দিয়ে কি কি মূল্যবোধ সুরক্ষা করা হচ্ছে? কেন এই আইন প্রয়োজন?
দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৮,২০ পরিস্থিতি কি? কার সম্বন্ধে বলা হচ্ছে?
“যদি কারও ছেলে একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী হয়, যদি সে কিছুতেই মা-বাবার কথা না শোনে এবং তাদের শাসন না মানে’ …’সে আমাদের অগ্রাহ্য করে চলে। সে মাতাল এবং টাকা-পয়সা উড়িয়ে দেয়।”
- ছেলে
- একগুঁয়ে, বিদ্রোহী, কথা শুনে না, শাসন মানে না, মাতাল, টাকা-পয়সা উড়ায়, নিজের অভিলাষে ব্যস্ত
- তার বয়স এমন যে নিজে নিজে মদ পান করতে, নিজের সুনাম হারাতে, টাকা উড়াতে ও বা-মাকে অগ্রাহ্য করতে সক্ষম।
- তার বয়স এমন যে আইন অনুসারে সে প্রাপ্ত বয়স্ক নয়, এখনও বাবা-মার অধীনে আছে।
- বাবা-মা
- আর বাধ্য রাখতে পারছেন না, শাসন আর কাজ করছে না।
- এটা হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের উপর বাবা-মার কর্তৃত্ব ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনা।
- ছেলেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, দায়িত্বহীন, নিজের ও অন্যদের জন্য বিপজ্জনক, স্বেচ্ছাচারী
উচ্ছৃঙ্খল কিশোর (in today’s language: a psychopath)।
দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৯-২০ বাবা-মা কি করতে বাধ্য হবেন?
“তবে তার মা-বাবা তাকে তাদের গ্রাম বা শহরের ফটকে বৃদ্ধ নেতাদের কাছে নিয়ে যাবে। তারা সেই বৃদ্ধ নেতাদের বলবে, ‘আমাদের এই ছেলে ভীষণ একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী; সে আমাদের অগ্রাহ্য করে চলে। সে মাতাল এবং টাকা-পয়সা উড়িয়ে দেয়।”
- আমরা কি করি যখন আমরা বাইবেলের অর্থ বুঝতে পারি না? ঈশ্বর অথবা তাঁর চরিত্র নিয়ে কি সন্দেহ করব? বাইবেল বা তার লেখা নিয়ে কি সন্দেহ করব (কিন্তু ঈশ্বরকে নিয়ে নয় এই ভেবে যে লেখাটি ঈশ্বর থেকে নয়)? অনুচ্ছেদটি কি ভুলে যাব? যে অনুচ্ছেদগুলো বুঝি মাত্র সেই অনুচ্ছেদগুলোই কি পড়ব? অথবা বলব সেই অনুচ্ছেদটি আর প্রযোজ্য নয়? যে পুরাতন নিয়ম আর প্রয়োজন নেই?
- বাবা-মা হিসাবে নিজের কাছে ও সবার কাছে স্বীকার করতে হবে যে তারা তাদের ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
- এটা হবে তাদের জন্য খুব লজ্জাজনক, খুব বিব্রতকর এবং শেষ অবলম্বন মাত্র।
- তাই আইনটা এখানে ‘আরেকবার চেষ্টা করব’, ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা করব’, এই রকম একটি আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করতে চায়।
- শুধুমাত্র তখনই তারা এমন করবে যখন তাদের আর কোন আশা বা অন্য কোন পথ নেই।
- বাবা-মাকে অবশ্যই সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং দায়িত্ব নিয়ে কিছু একটা করতে হবে।
- যদি তাদের কর্তৃত্ব আর কাজ না করে তবে কাউকে সে কর্তৃত্ব দিতে হবে: শহরের বৃদ্ধ নেতাদের কাছে হস্তান্তর।
- বাবা-মা শুধুমাত্র ‘ছেলে ভাল হওয়ার আশা’ নিয়ে বসে থাকতে পারবে না, ছেলেটি বিপজ্জনক বলে তাদের ছেলেকে হস্তান্তর করতে হবে যেন অন্যরা সুরক্ষা পায়।
- এখান থেকে আমরা কি শিখতে পারি?
- ঈশ্বর সন্তানদের উপর কর্তৃত্ব বাবা-মাকে দিয়েছেন।
- সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ঈশ্বর বাবা-মাকে তার জন্য দায়বদ্ধ রাখেন।
- যদি বাবা-মার কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায় তাহলেও তারা এর দায় এড়াতে পারবেন না, তাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে এবং কর্তৃত্বটি অন্য কাউকে দিতে হবে।
- লজ্জা পাওয়ার ভয়ে বাবা-মা ধৈর্য ধরবে এবং সন্তানকে ফিরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
- কর্তৃত্ব অবশ্যই কারও হাতে থাকতে হবে (যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক নয়)।
দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৯-২১ শহরের বৃদ্ধ নেতারা কি করবেন?
“তখন সেই জায়গার সমস্ত পুরুষেরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে।”
- পাথর ছুড়ে মেরে কিশোরকে শাস্তি দিবে।
- বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পদ্ধতি কি? ফাঁসি, সাধারণ মানুষের সামনে তা করা হয় না।
- যিহূদীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পদ্ধতি কি ছিল? উপস্থিত সবাই পাথর নিক্ষেপ করার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ড।
- সবাই উপস্থিত থেকে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হত।
- সবার সম্মতিতে শাস্তি: সবাই একমত হতে হবে যে এই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ঠিক।
- কাউকে পাথর ছুড়ে মারলে সমাজে উপর শক্তিশালী প্রভাব:
- সবাই দেখতে পাবে অন্যায় ও মন্দের শাস্তি হয়।
- সবাই দেখবে মন্দ কত ধ্বংসাত্মক।
- সবাকে বিচারের রায়ে একমত হতে হবে।
- সবাকে বিচারে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে।
- সবার ভিতর মন্দ করার পরিবর্তে ঈশ্বর ভয় বাড়বে।
- আমার কি বিচার করার অধিকার আছে? > সবার বিবেক জাগ্রত হবে।
- ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা দেখে সমস্যার সমাধান ও শান্তি।
দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৯-২১ শহরের বৃদ্ধ নেতাদের কি করতে হবে
“তবে তার মা-বাবা তাকে তাদের গ্রাম বা শহরের ফটকে বৃদ্ধ নেতাদের কাছে নিয়ে যাবে। তারা সেই বৃদ্ধ নেতাদের বলবে, ‘আমাদের এই ছেলে ভীষণ একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী; সে আমাদের অগ্রাহ্য করে চলে। সে মাতাল এবং টাকা-পয়সা উড়িয়ে দেয়।’ তখন সেই জায়গার সমস্ত পুরুষেরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে। এইভাবে তোমাদের মধ্য থেকে সেই মন্দতা শেষ করে দিতে হবে। তাতে ইস্রায়েলীয়েরা সবাই এই কথা শুনে ভয় পাবে।”
- শহরের বৃদ্ধ নেতাদের কি করতে হবে?
- সাবধানতার সাথে ছেলের পরিবার সম্পর্কে তদন্ত করবেন।
- দুই পক্ষের কথা শুনবেন: বাবা-মা ও কিশোরের।
- বাবা-মা ও কিশোরের আচরণ সম্বন্ধে লোকদের কাছ থেকে খবর নিবেন
- তারা খুঁজে বের করবেন কিশোরটি কি সত্যিকার অর্থে দোষী, আশাহীন এবং ‘সাহায্যের বাইরে’
- কিশোরটি মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য এই সিদ্ধান্তে একমত হবেন
- মৃত্যুদন্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন
- শহরের বৃদ্ধ নেতাদের উপর কি প্রভাব পড়বে?
- যদি এখনও আশা থাকে যে এই কিশোরকে সংশোধন করা সম্ভব > তারা পাথর ছুড়ে মারার জন্য একমত হবেন না।
- কিশোরের কথা শুনবেন। বাবা-মা ছাড়া অন্য লোকদের কাছ থেকে সাক্ষ্য ও মূল্যায়ন গ্রহণ করবেন। তাই কিশোরকে ২য় সুযোগ দেবেন। হতে পারে বাবা-মাই দোষী, কিশোর নয়।
- নেতারা অভিজ্ঞ, প্রাচীন, যোগ্য নেতা। তারাই সফল শিষ্য গঠনকারী।
- সম্ভাবনা বেশি যে একজন নেতা বলবেন: ‘এই কিশোর কিছুদিন আমার বাড়িতে থাকুক এবং দেখি সে কি আসলে সংশোধনের ঊর্ধ্বে কিনা ‘
- কিশোরের জন্য ভিন্ন কর্তৃত্বের অধীনে নতুন একটি সুযোগ।
- পদে তা সরাসরি উল্লেখ নেই কিন্তু এই প্রক্রিয়া দ্বারা এধরণের কিশোরের আচরণ পরিবর্তনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা উৎসাহ পায়।
- শুধুমাত্র যদি সবাই একমত হয় যে কিশোরটি সত্যি সংশোধনের ঊর্ধ্বে ও বিপজ্জনক তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
এই ভয়ঙ্কর গল্প থেকে আমরা কি শিখতে পারি?
- পিতা-মাতারাই কিশোর-সন্তানের কার্যকলাপের জন্য দায়ী এবং তাদেরই সন্তানের আচরণ সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে, তা আইনগত ভাবে বা অন্য যেকোন ভাবে হোক।
- যদি কোন একটি ক্ষেত্রের কর্তৃত্ব ভেঙ্গে পড়ে (এখানে: পরিবার) তবে অন্য একটি ক্ষেত্রকে কর্তৃত্বটি দিতে হবে (এখানে: শহরের প্রাচীন, সরকার)। যেহেতু সে কিশোর (প্রাপ্ত বয়স্ক নয়) কারও দায়িত্ব নিতেই হবে, কর্তৃত্ব অন্য কারও হাতে আসতে হবে। সে যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তবে সব কিছু তার দায়িত্ব এবং তার আচরণের জন্য সে শাস্তি পাবে।
- ঈশ্বর, যিনি পরিবারকে অনেক বড় অধিকার দিয়েছেন, তিনি আবার পরিবারের অধিকারকে সীমাবদ্ধও রেখেছেন: পরিবারকে অধিকার দেওয়া হয় নি সদস্যদের বিচার, রায় বা মৃত্যুদণ্ড দিতে। এই অধিকার শুধুমাত্র সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
- এই আইনের মধ্য দিয়ে বিশেষভাবে ‘পরিবার প্রধানের’ ক্ষমতা সীমিত করা হচ্ছে: তাকে সরকারের মত কর্তৃত্ব দেওয়া হয় নি। বিচার, রায় বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয় নি। রেগে গিয়ে চরম শাস্তি দেওয়ার অনুমতি তাকে দেওয়া হয় নি। শুধুমাত্র যদি মা ও প্রাচীনেরা রাজি হয়, যদি এই আইন অনুসারে প্রক্রিয়া পালন করা হয় তবে শাস্তি কার্যকর হবে।
- কিশোরকে অবশ্যই কোন নিরপেক্ষ পক্ষের শুনানির মধ্যদিয়ে যেতে হবে।
- অনেক দেশে পরিবার নিজের সন্তানকে খুন করে যদি সে ‘পারিবারিক সম্মান’ নষ্ট করে (honor killings)। উদাহরণ হতে পারে: বিয়ের বাইরে সন্তানের যৌন সম্পর্ক, ধর্ম পরিবর্তন, পরিবার প্রধানদের ইচ্ছা মেনে না নেওয়া ইত্যাদি। আইনটি ‘সম্মান রক্ষা করার জন্য সন্তানকে খুন’ করা প্রতিরোধ করে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার পরিবারের নেই।
- বাইবেলে কোন ঘটনা পাওয়া যায় না যেখানে এই আইনের প্রয়োগ করা হয়েছিল। এটা দেখায় যে এই আইনের উদ্দেশ্য সন্তানদের দমন করা নয়, বরং পিতার স্বেচ্ছাচারীতা সীমিত রাখা।
- শর্তাবলী: বিদ্রোহী, অবাধ্য, শাসন অগ্রাহ্য করে, মাতাল, টাকা উড়িয়ে দেয়।
চরম পরিস্থিতিতে
- যদি কিশোর সত্যি সাহায্যের ঊর্ধ্বে হয় তাহলে কি হবে? এমন কিশোর কি আছে?
- আমেরিকা: কলোরাডো, লিটেল্টন স্কুলে গোলাগুলি …
- বাংলাদেশ: একটি আদিবাসী গ্রামে একজন যুবককে শিশু চুরি করতে থাকায় মেরে ফেলা
- আপনি চরম পরিস্থিতিতে কি করবেন? ভারসাম্য রক্ষা করা চেষ্টা করুন:
- সমাজের সুরক্ষা <=> কিশোরের জীবন
- পরিবারের গুরুত্ব, বাবা-মায়ের কর্তৃত্ব <=> সন্তানের বা কিশোরের জীবনের মূল্য
- সন্তানের উপর বাবা-মায়ের কর্তৃত্বের সীমা <=> সন্তানের উপর সরকারের কর্তৃত্বের সীমা
- সকল চরম পরিস্থিতিতে: আপনি যত ভাল চেষ্টা করেন, বিষয়টি অনেক জঘন্য।