পরিবার ১৩ – যীশু ও তাঁর পরিবার

যীশুর ছোটবেলা

লূক ২:১৯, ২:৫১                         মরিয়ম যীশুর বিষয়ে ভাববাণী মনে গেঁথে রাখেন

‘কিন্তু মরিয়ম এই কথা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়ে সব সময় এবিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন।’

  • যীশুর মা মরিয়ম মনোযোগ ও গুরুত্বের সাথে যীশুর বিষয়ে যা বলা হয়েছে তা ধরে রাখলেন।
  • তার সন্তান কে হবেন এবং এই সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে মরিয়মের কি ভূমিকা আছে, তা তিনি এই বাক্যগুলি থেকে বুঝতে ও নির্দেশনা পেতে চেষ্টা করলেন।

 

লূক ২:৩৩-৩৫                             শিমিয়োন: ছোরার আঘাতের মত দুঃখ তোমার অন্তরকে বিঁধবে
‘তাঁর বিষয়ে যা বলা হল তা শুনে যোষেফ ও মরিয়ম আশ্চর্য হয়ে গেলেন৷ এরপর শিমিয়োন তাঁদের আশীর্বাদ করে যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, “ইনি হবেন ইস্রায়েলের মধ্যে বহু লোকের পতন ও উত্থানের কারণ৷ ঈশ্বর হতে আগত এমন চিহ্ন যা বহু লোকই অগ্রাহ্য করবে৷ এতে বহু লোকের হৃদয়ের গোপন চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে৷ যা যা ঘটবে তাতে তোমার হৃদয় বিদীর্ণ হবে৷”

  • এই শিশু ও তাঁর কাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্বন্ধে আশ্চর্য ভাববাণী বলা হচ্ছে। কেউ কেউ তাঁকে গ্রহন করবে, আবার কেউ কেউ তাঁর বিরোধিতা করবে, কিন্তু তাঁর বিষয়ে প্রত্যেক মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
  •  যীশুর আহবান এমন যে তাঁর বার্তার বিরোধিতা নিশ্চিত এবং তিনি না চাইলেও এর প্রভাব তাঁর পরিবারের উপর পড়বে।
  • একজন ব্যক্তির আহবানের দ্বারা সব সময় একটি প্রভাব তার পরিবারে আসে। কখনও কখনও তার সম্মান, কিন্তু কখনও কখনও বিরোধিতাও তাদের উপর পড়ে। পরিবারেরও এর মূল্য দিতে হয়, কিন্তু আহবান প্রাপ্ত ব্যক্তিকে আরো বেশি মূল্য দিতে হয়।
  • ছোরার আঘাতের মত দুঃখ তোমার অন্তরকে বিঁধবে, তার অর্থ কি? হতে পারে মরিয়ম ও পরিবার যে মূল্য দেয় তা বুঝায় যখন লোকেরা যীশুকে ‘পাগল’ বলে, যখন আত্মিক নেতারা তাঁকে প্রতারক ঘোষনা করেন, যখন তাঁকে অপরাধী হিসাবে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি দেওয়া হয়, যখন তাঁকে যন্ত্রনা ও ক্রুশে দেওয়া হয়।
  • হতে পারে তা বুঝায় যে মশীহ হিসাবে যীশুকে গ্রহণ বা অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত মরিয়মেরও নিতে হবে। তিনি এর বাইরে নন।
  • কেউই তার পরিবারকে প্রভাবিত করা ছাড়া ঈশ্বরের বাধ্য হতে পারে না। একজন ব্যক্তি তার আহবানে সাড়া দিলে পরিবারের প্রভাব বা ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত করতে সক্ষম হবে না। কিন্তু ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন এইটা উত্তম হবে এবং ধীরে ধীরে আহবানের সুফল পরিবারের উপরও আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।

 

লূক ২:৪২-৫১                                 যীশু কিশোর হিসাবে মন্দিরে
‘যীশুর বয়স যখন বারো বছর, তখন তাঁরা যথারীতি সেই পর্বে যোগ দিতে গেলেন৷ ৪৩ পর্বের শেষে তাঁরা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বালক যীশু জেরুশালেমেই রয়ে গেলেন, এবিষয়ে তাঁর মা-বাবা কিছুই জানতে পারলেন না৷ ৪৪ তাঁরা মনে করলেন যে তিনি দলের সঙ্গেই আছেন৷ তাঁরা এক দিনের পথ চলার পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন৷ ৪৫ কিন্তু তাঁকে না পেয়ে তাঁরা যীশুর খোঁজ করতে করতে আবার জেরুশালেমে ফিরে গেলেন৷ ৪৬ শেষ পর্যন্ত তিন দিন পরে মন্দির চত্বরে তাঁর দেখা পেলেন৷ সেখানে তিনি ধর্ম শিক্ষকদের সাথে বসে তাঁদের কথা শুনছিলেন ও তাঁদের নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন৷ ৪৭ যাঁরা তাঁর কথা শুনছিলেন তাঁরা সকলে যীশুর বুদ্ধি আর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া দেখে অবাক হয়ে গেলেন৷ ৪৮ যীশুর মা-বাবা তাঁকে সেখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন৷ তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাছা, তুমি আমাদের সঙ্গে কেন এমন করলে? তোমার বাবা ও আমি ভীষণ ব্যাকুল হয়ে তোমার খোঁজ করে বেড়াচ্ছি৷”৪৯ যীশু তখন তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না যে যেখানে আমার পিতার কাজ, সেখানেই আমাকে থাকতে হবে?” ৫০কিন্তু তিনি তাঁদের যা বললেন তার অর্থ তাঁরা বুঝতে পারলেন না৷ ৫১ এরপর তিনি তাঁদের সঙ্গে নাসরতে ফিরে গেলেন, আর তাঁদের বাধ্য হয়ে রইলেন৷ তাঁর মা এসব কথা মনের মাঝে গেঁথে রাখলেন৷।’

  • এই গল্প দেখায় যোষেফ এবং মরিয়ম যীশুর উপর বেশী নিয়ন্ত্রণ, তাঁর বিষয়ে অতি সুরক্ষিত মনোভাব ও অতি দুশ্চিন্তা করতেন না। মনে হচ্ছে তারা বিশ্বাস করতেন যে যীশু নিজের যত্ন নিতে ও সঠিকভাবে আচরণ করতে সক্ষম। শুধুমাত্র যখন তারা এক দিনের যাত্রা পথে গিয়ে তাঁকে খুঁজে না পান তখন তারা দুশ্চিন্তা করেন।
  • ‘তিন দিন পরে’ তাঁকে মন্দিরে খুঁজে পায় মানে যে পুরোহিত বা ধর্ম শিক্ষকেরা তাকে মোটামুটি ৪ দিন ধরে খাবার ও থাকার জায়গা দিয়েছেন। যীশু কি চার দিনের মধ্যে একবারও চিন্তা করেন নি যে তার বাবা-মা তাঁর ব্যবহারের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন?
  • মরিয়মের কথায় তার দুশ্চিন্তা, স্নেহ,স্বস্তি, স্বস্তির পরিবর্তে রাগ, যীশুর ‘দৃশ্যমান অবহেলায়’ আঘাত প্রকাশিত হয় যখন তিনি যীশুর দোষ ধরেন। আমরাও মরিয়মের সাথে একমত।
  • যীশু দোষারোপের চাপ গ্রহণ করেন না এবং ক্ষমা চাওয়া বা কারণ বুঝানোর প্রয়োজন মনে করেন না। ‘তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে?’ এই প্রশ্নে প্রায় অবহেলার মনোভাব দেখা যায়। তিনি কি আসলে প্রত্যাশা করেন যে তার বাবা-মা জানবে তিনি কোথায়? অথবা তাদের দুশ্চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করেন যে তাদের ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা উচিত ছিল।
  •  যীশু এখানে ১২ বছর বয়সে নিজের উদ্যোগে ও নিজের যুক্তিতে কাজ করেন, মনে করে তার আচরন উপযুক্ত এবং প্রত্যাশা করে তার বাবা-মা তা জানবেন ও বুঝবেন। তিনি তাদের দুশ্চিন্তা, অতি যত্ন ও ভয়ের সাথে একমত নন। বরং তার কথা শক্তিশালীভাবে প্রকাশ করে তাঁর ঈশ্বরের উপরে নির্ভরতা ও তার বিশ্বাস যে ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোন কিছুই ঘটে না।
  • ‘তাদের বাধ্য হয়ে রইলেন’। যীশু ১২ বছর বয়সে বাবা-মায়ের নেতৃত্ব মেনে নেন, তাদের ঈশ্বর থেকে কর্তৃত্ব হিসাবে গ্রহন করেন কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁর নিজস্ব চিন্তা আছে। যীশু যিনি পাপ বিহীন এই পর্যন্ত তাঁর জীবনের জন্য ঈশ্বর থেকে দেওয়া কর্তৃত্ব ভাল বলে গ্রহণ করেন।

যীশু প্রাপ্ত বয়সে

যোহন ২:১-১১                                              মরিয়ম আশ্চর্য কাজের জন্য ডাকেন

‘তৃতীয় দিনে গালীলের কান্না নগরে একটা বিয়ে হচ্ছিল … যখন সমস্ত দ্রাক্ষারস ফুরিয়ে গেল, তখন যীশুর মা তাঁর কাছে এসে বললেন, “এদের আর দ্রাক্ষারস নেই৷” যীশু বললেন, “হে নারী, তুমি আমায় কেন জিজ্ঞাসা করছ কি করা উচিত? আমার সময় এখনও আসেনি৷” তাঁর মা চাকরদের বললেন, “ইনি তোমাদের যা কিছু করতে বলেন তোমরা তাই কর৷ … যীশু সেই চাকরদের বললেন, “এই জালাগুলিতে জল ভরে আন।”’

  • মরিয়ম চিন্তিত। হতে পারে এইটা কাছের আত্মীয়ের বিয়ে। অথবা তিনি চিন্তিত কারণ সামাজিক লজ্জা কেমন লাগে তা ভাল জানেন। অথবা তিনি যীশুর মা হিসাবে অন্যদের জন্য খুব যত্নশীল।
  • লেখক যোহন কান্না নগরে এই আশ্চর্য কাজকে যীশুর ‘প্রথম চিহ্ন’ বলেন (যোহন ২:১০), কিন্তু নিশ্চিত বলা যায় না যে যীশু এর আগে আশ্চর্য কাজ করেন নি। আশ্চর্য কাজের জন্য মরিয়মের ইতিবাচক প্রত্যাশা দেখা যায়। তিনি যীশু সাড়া না দেওয়ার পরেও দাসদের নির্দেশনা দেন।
  • কেন? যীশু কি পরিবারের মধ্যে আগেও আশ্চর্য কাজ করেছিলেন? যদি হয় তবে সীমিতভাবে মাত্র কারণ যোষেফ বেশ আগে মারা যান এবং যীশু সাধারণভাবে কাজ করে পরিবারকে খাওয়ান। অথবা মরিয়ম মনে করেন যে এখন যীশুর পরিচর্যার সময় হয়েছে এবং কিভাবে শুরু হবে তার অপেক্ষায়।
  • ‘আমার সময় এখনও হয় নি’। যীশু এই উত্তরের দ্বারা মরিয়মকে চাপ নিতে ও চাপ না দিতে বলেন। কিছু বছর পরে তিনি তার ভাইদের একই কথা বলেন ‘আমার সময় এখনও হয় নি’ (যোহন ৭:৬)। যেহেতু যীশু তাঁর পরিচর্য্যার মাঝামাঝি সময়েও এই একই কথা বলেন তাতে বুঝা যায় যে এটা ‘পরিচর্য্যা শুরু করার’ কোন কথা নয় বরং প্রত্যেক মুহূর্তে স্বর্গস্থ পিতার বাধ্য থাকার প্রকাশ।
  • যীশুর উত্তর সীমানা বুঝারও একটা উদাহণ: ‘এই ব্যাপারে তোমার সাথে আমার কি সম্বন্ধ?’ যীশু মনে করেন না যে প্রত্যেকটা প্রয়োজনই তাঁর পূরণ করা দরকার, যে প্রত্যেকটা দায়িত্বই তাঁকে নিতে হয়। যীশু পাপ বিহীন এই চিত্র আমাদের দেখায় যে আমরাও সব প্রয়োজন না মিটালেও ঈশ্বরীয়, যত্নশীল মানুষ হতে পারি। আমরা মনে করি: যীশু সব কিছু করতে সক্ষম তাই তাঁর সব কিছু করা উচিত। যীশু এর সঙ্গে একমত নন।
  • দেখে মনে হয় যে কিছুক্ষণ পরে যীশু তাই করেন যা মরিয়ম তাকে করতে অনুরোধ করেছিলেন: তিনি বিষয় হাতে নেন, আশ্চর্যভাবে যোগান দেন। মনে হচ্ছে হটাৎ ‘তার সময় এসে গেছে’। এইটা কিভাবে সম্ভব। যীশু তার কৌশলী মায়ের দ্বারা চালিত নন, তিনি সব সময়ই যত্নশীল, তিনি পাপ বিহীন বলে এই ঘটনা এইভাবে বুঝানো উপযুক্ত:
  • মরিয়মের সাথে কথা বলার পর যীশু প্রার্থনায় স্বর্গস্থ পিতাকে জিজ্ঞাসা করেন: আমার এইটা কি করা উচিত? আমার সময় কি এসে গেছে? কিভাবে এইটা করব? বোধ হয় যে স্বর্গস্থ পিতা ইতিবাচক ভাবে সাড়া দিলেন ও যীশু বাধ্য হয়ে প্রথম আশ্চর্য কাজ করলেন।
  • এটি গুরুত্বপূর্ণ যে যদিও মরিয়মের অনুরোধ যত্নশীল ও স্বার্থহীন ছিল তবুও যীশু ‘এইটাতে অবশ্যই সাড়া দেওয়া উচিত’, এমন মনে করেন নি। শুধুমাত্র যখন তিনি বুঝলেন স্বর্গস্থ পিতা তাকে বলছেন তখন তিনি এগিয়ে গেলেন।
  • প্রয়োজন বলেই এর মানে না যে, ঈশ্বর আমাকে তা করতে বলেন। কিছু করার ক্ষমতা আমার আছে মানে না যে ঈশ্বর আমাকে তা করতে বলেন। এমন কি বাবা-মায়ের যত্নশীল ও স্বার্থহীন অনুরোধ বলেই মানে না যে ঈশ্বর আমাকে তা করতে বলেন। পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে যীশু খুব সাবধাণতার সাথে ঈশ্বর দ্বারা পরিচালিত ও বাধ্য। প্রাপ্ত মানুষের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা আর ঈশ্বরের দাবী নয়। পাপবিহীন যীশু প্রথম তাঁর মা মরিয়মের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন।

 

যোহন ২:১২                              পরিবারের সাথে যীশুর সহভাগিতা
‘পরে তিনি তাঁর মা, ভাইদের ও শিষ্যদের সঙ্গে কফরনাহূম শহরে গেলেন৷ সেখানে তাঁরা অল্প কিছু দিন থাকলেন।’

  • কান্না নগরে বিয়ের পরে যীশু তাঁর পরিবার ও শিষ্যদের সঙ্গে কফরনাহূমে যান।
  • যাওয়ার কারণ উল্লেখ নেই। হতে পারে এইটা পারিবারিক যাত্রা (যেমন কান্না নগরে বিয়ে) অথবা যীশু কফরনাহূমে যান তাঁর পরিচর্যা শুরু করার জন্য।
  • এখানে যীশুর পরিবার এবং শিষ্যরা উভয় যীশুর সঙ্গে যাত্রা করে। পরে দেখা যায় যে যীশুর সঙ্গে পরিবার আর নেই।

 

মথি ১০:৩৫-৩৭, লূক ১৪:২৬              যীশু পরিবারের মধ্যে বিরোধিতা নিয়ে আসবেন
‘আমি এই ঘটনা ঘটাতে এসেছি: ‘আমি ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌমাকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি৷ ৩৬ নিজের আত্মীয়েরাই হবে একজন ব্যক্তির সবচেয়ে বড় শত্রু৷’ ৩৭ “যে কেউ আমার চেয়ে তার বাবা-মাকে বেশী ভালবাসে সে আমার আপনজন হবার যোগ্য নয়৷ আর যে কেউ তার ছেলে বা মেয়েকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে, সে আমার আপনজন হবার যোগ্য নয়।’
‘যদি কেউ আমার কাছে আসে অথচ তার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, এমন কি নিজের প্রাণকেও আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সে আমার শিষ্য হতে পারবে না।

  • উভয় মথি এবং লূক সুসমাচারে এই পদগুলি ঈশ্বরের আহবানে সমঝোতা না করে সম্পূর্ণ বাধ্য থাকার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • এই বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজন দেখানোর জন্য উভয় মথি এবং লূক সুসমাচারে যীশু অতিরঞ্জিত কথা (hyperbole) ব্যবহার করেন:
  • মথির অতিরঞ্জন হল: ‘বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি…’.। এমন নয় যে ঈশ্বর বিরোধিতা সৃষ্টি করেন বরং বিরোধিতা শুরু যখন পরিবার তার একজন সদস্যের আহবান না বুঝে থামাতে চেষ্টা করে।
  • লূকের অতিরঞ্জন হল: ‘যদি কেউ …তার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান…আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সে আমার শিষ্য হতে পারবে না।’ (সাধারণ) ‘আপন পিতা, মাতা…অপ্রিয় জ্ঞান না করে’ (কেরী) ‘Whoever … does not hate’। গ্রীকে এই শব্দটির অর্থ হল ‘ঘৃণা’। এমন নয় যে ঈশ্বরে ঘৃণা করতে আদেশ দেন বরং তিনি বুঝান যে বাবা-মা যদি আহবানের বিরোধিতা করেন, স্বামী যদি আহবানের বিরোধিতা করেন, সন্তানরা যদি বিরোধিতা করেন তবে ঈশ্বরকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
  • পরিবারের সদস্যরা যদি ঈশ্বরীয় হয় তবে তারা একজন ব্যক্তির আহবানকে সমর্থন ও উৎসাহিত করবে আহবানে সাড়া দিতে ও বাধ্য থাকতে। এমন সময়েও যখন এর ফলে তাদেরও মূল্য দিতে হবে (দূরত্ব, ঝুঁকি, অর্থনৈতিক ক্ষতি)।
  • পরিবারের সদস্যরা যদি সমর্থন না করে তবে ব্যক্তিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরিবারকে খুশী করার চেয়ে ঈশ্বরের বাধ্য হতে। পরিবার ভুল বুঝতে পারে, হতাশ হতে পারে, নিজেকে অবহেলিত মনে করতে পারে, কিন্তু তা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এইটা তাদেরই জন্য ঈশ্বরের চ্যালেঞ্জ, মন পরিবর্তন ও বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ এবং আশা করা যে এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হবে।
  • একজন ব্যক্তি কখনই সবাইকে খুশী করতে পারি না। অনেক সময় পরিবারকে খুশী করা মানে ঈশ্বরের আহবানকে ত্যাগ করা। এমন করবেন না। যীশু এমন করেন নি।

 

মার্ক ৩:১৯-২২                              যীশুর পরিবার তাঁকে বাধা দিতে চেষ্টা করে
‘এবং যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয় (যে যীশুকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল৷) ২০ তিনি ঘরে ফিরে এলে সেখানে আবার এত লোকের ভীড় হল, যে তাঁরা খেতেও সময় পেলেন না৷ ২১ যীশুর বাড়ির লোকরা এইসব বিষয় জানতে পেরে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য এলেন, কারণ লোকরা বলছিল যে তিনি পাগল হয়ে গেছে৷ ২২ জেরুশালেম থেকে যে ব্যবস্থার শিক্ষকরা এসেছিলেন তাঁরা বললেন, “যীশুকে বেলসবুবে পেয়েছে, ভুতদের রাজার সাহায্যে যীশু ভূত ছাড়ায়।’

  • যীশুর পরিচর্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে তাঁর আশ্চর্য কাজের কারণে আকর্ষিত হয়ে লোকেদের ভীর বাড়তে থাকে এবং তাদের দাবীও বাড়তে থাকে। তারা চাপাচাপি করে তাঁর উপর পড়ে (মার্ক ৩:৯), এমন ভীড় জমে যে তিনি খাবার সুযোগও পান না (মার্ক ৩:২০) এবং তারা তাঁকে জোর করে রাজা বানানোর চেষ্টা করে (যোহন ৬:১৫)।
  • অন্যদিকে তাঁর সুনাম ও জনপ্রিয়তার জন্য যিরূশালেমের আত্মিক নেতারা যীশুর বিষয়ে গভীর তদন্ত শুরু করেন।
  • কেউ কেউ বলতে শুরু করে ‘ও পাগল হয়ে গেছে’ এবং যীশুর পরিবার তা শুনতে পায়। হতে পারে এরা যীশুর আত্মীয়, পরিচিত লোক বা কফরনাহূমের প্রতিবেশীরা। এতে দেখা যায় যে এইমুহূর্তে তার নিকট পরিবার যীশুকে অনুসরণ করছে না।
  • তার পরিবার এই খবর শুনে দুশ্চিন্তিত হন এবং মনে করেন তাদের কিছু করা দরকার: তারা যীশুকে ‘বের করে নিতে আসলেন’। হতে পারে তারা যীশুর প্রতি যত্নবান হয়ে এমন করেন, কিন্তু তাছাড়া পরিবারের সম্মান নষ্ট হচ্ছে ও এর ফলাফল তাদের ভোগ করতে হচ্ছে ভেবে তা করেন।
  • হতে পারে যীশুকে টেনে বের করতে না পেরে বরং তারা জরুরীভাবে আবেগের সাথে তাঁকে অনুরোধ করেন। বিশেষভাবে মরিয়ম বা মরিয়মের পক্ষে তার ভাইয়েরা তা করে।
  • যীশু এই অনুরোধ মেনে নিয়েছেন এমন কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাঁর পরিবারের বিশেষ চিন্তা বা যত্ন, মতের অমিল, জরুরী অনুরোধ বা বিরোধিতার পরেও তিনি ঈশ্বরের বাধ্য থেকেছেন।

 

মার্ক ৩:৩১-৩৫, মথি ১২:৪৬-৪৯          যীশু তার পরিবারের দাবি অগ্রাহ্য করেন
‘সেই সময় তাঁর মা ও ভাইরা তাঁর কাছে এলেন এবং বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা যীশুকে লোক মারফত্ ডেকে পাঠালেন৷ ৩২ তখন তাঁর চারদিকে ভীড় করে যে লোকরা বসেছিল, তারা তাঁকে বলল, “দেখুন, আপনার মা, ভাই ও বোনেরা আপনার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন৷”৩৩ তার উত্তরে তিনি তাদের বললেন, “কে আমার মা? আমার ভাইরা বা কারা?” ৩৪ যাঁরা তাঁকে ঘিরে বসেছিল তাদের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “এরাই আমার মা ও ভাই৷ ৩৫ যে কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার মা, ভাই ও বোন।’

  • মার্ক এবং মথি সুসমাচারে এই ঘ্টনা ঘটে যখন যিরূশালেমের ধর্ম শিক্ষক ও ফরীশীরা তাঁর দোষ ধরে।
  • ধর্ম শিক্ষকদের নিয়ম ছিল যে কোন ভ্রান্ত শিক্ষক উঠলে তারা প্রথমে লোক পাঠিয়ে দেখবে ও শুনবে সে কি শিক্ষা দেয় ও কি করে। খবর পেয়ে এবং তাঁকে বিপজ্জনক মনে করলে তারা ওই ভ্রান্ত শিক্ষের সাথে তর্ক করার জন্য ২য় দল পাঠাবে ।
  • তাই এখানে ধর্ম শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা যীশুর সাথে তর্ক করে মানে যে তারা ইতিমধ্যে তাকে বিপজ্জনক ও ভ্রান্ত মনে করেন (Fruchtenbaum)।
  • যীশুর বিরোধিতা এমন পর্যায় চলে গেছে যে এই বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। হতে পারে এটি তাঁর পরিবারের এই বিষয়ে হাত দেওয়ার আর একটি কারণ।
  • এই প্রথম বার যীশুর বোনদের কথাও উল্লেখ করা হয়। পুরো পরিবার একসাথে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে আসে। কেন বোনেরা? হতে পারো মহিলা হিসাবে বড় ভাইয়ের দূর্নাম দ্বারা তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত।
  • খেয়াল করুন যীশুর পরিবারের ব্যবহারে তাঁর প্রতি কোন ভদ্রতা বা সম্মান দেখা যায় না: তারা ভিতরে যায় না, তারা বসেও না, তারা তাঁর শিক্ষা শুনেও না, তারা তাঁর শিক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষাও করে না। বরং তারা একজনকে ভিতরে পাঠিয়ে তাঁকে ডেকে আনতে বলেন।
  • মূলত তারা যীশুর সাড়া দাবী করে – এবং তাৎক্ষনিক সাড়া – এই ভিত্তিতে যে তারা যীশুর আপন পরিবার: তাদের দাবী যে যীশুর শিক্ষা বন্ধ করা উচিত, অনুসরণকারীদের রেখে বের হয়ে তাদের সাথে দেখা করা উচিত। কেন? কারণ তাদের সাথে যীশুর রক্তের সম্পর্ক।
  • এই ঘটনাটি সব অনুসরণকারীদের চোখের সামনে ঘটে, এবং তাঁর পরিবার তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের ব্যবহার দ্বারা তারা লোকদের উপর ক্ষমতা দেখায় (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে)।
  • যীশু কোন রকম তাদের দাবীতে সাড়া দেন না, এমন কি বেশ কঠোর কথা বলেন। যেহেতু তারা সকলের সামনে দাবী করেন তাই যীশু সকলের সামনে উত্তর দেন: তিনি তাদের দাবী পূরণ করবেন না, তিনি শিক্ষা বন্ধ করবেন না, পরিবার বলে তাদের বিশেষ প্রাধান্য দেবেন না, তিনি সাধারন অনুসরণকারীদের উপর ক্ষমতা খাটানো প্রতিরোধ করে পরিবারের চাপকে অগ্রাহ্য করেন।
  • “যে কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার মা, ভাই ও বোন।’” এখানে যীশু সমতা নিয়ে আসে। তিনি পরিবারের দাবী ও মর্যাদার চেয়ে যে কোন সাধারণ ব্যক্তির স্বইচ্ছায় হৃদয়ের সাড়াকে বেশি মূল্য দেন। ঈশ্বরের কাছে আসার একটি পথ মাত্র। তা হল ঈশ্বরের দয়া গ্রহণ করে হৃদয় থেকে সাড়া প্রদান: বিশ্বাস ও বাধ্যতা। যীশুর পরিবারও আমন্ত্রিত, কিন্তু আসতে চাইলে এই পথেই আসতে হবে।
  • হতে পারে যীশুর পরিবার এই ব্যবহারে অপমানিত হল, যদিও তারা হয়তো মেনে নিয়ে অপেক্ষা করেছিল তাঁর শিক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁর সাথে দেখা করতে পারে।
  • যদিও এই মুহূর্তে তারা অপমানিত, অবশেষে তারা যীশুর ব্যবহার বুঝতে পারে: তারা আমন্ত্রিত কিন্তু রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে বা বিশেষ দাবীতে নয়। পরবর্তীতে যখন তারা যীশুর অনুসরণকারী হয়ে যায় (প্রেরিত ১:১৪) অন্য অনুসরণকারীদের মত তখন আর বিশেষ অধিকার বা সুবিধা আর দাবী করে না।
  • সুতরাং মরিয়ম অবশ্যই পরিত্রান প্রাপ্ত, এই কারণে নয় যে তিনি যীশুকে জন্ম দিয়েছেন বরং যীশুর অনুসরণকারী হওয়ার কারণে। মরিয়ম শেষ পর্যন্ত নম্রতা, বিশ্বাস ও বাধ্যতায় যীশুর প্রতি সাড়া দেন যেমন যীশুর সমস্ত শিষ্যরা।
  • এই গল্প থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে যীশু প্রাপ্ত মানুষ হিসাবে পরিবারের দাবী – এমন কি তাঁর মায়ের ইচ্ছাকেও – মেনে নেন না। দুই ক্ষেত্রে বা কারণে যীশু এখানে পরিবারের অবাধ্য হন: প্রাপ্ত বয়সের সন্তান হিসাবে পরিবারের দাবী মেনে নেওয়া আবশ্যক নয়। পরিবারের দাবী যদি ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় তবে সেখানে পরিবারের প্রতি বাধ্য হওয়া উচিত নয়।

যোহন ৭:১-৯                                 যীশু ভাইদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করেন
‘এই সময় ইহুদীদের কুটিরবাস পর্ব এগিয়ে আসছিল৷ তখন তাঁর ভাইরা তাঁকে বলল, “তুমি এই জায়গা ছেড়ে যিহূদিয়াতে ঐ উৎসবে যাও যাতে তুমি যে সব অলৌকিক কাজ করছ তা তোমার শিষ্যরাও দেখতে পায়৷ কারণ কেউ যদি প্রকাশ্যে নিজেকে তুলে ধরতে চায় তবে সে নিশ্চয়ই তার কাজ গোপন করবে না৷ তুমি যখন এত সব মহত্ কাজ করছ তখন নিজেকে জগতের কাছে প্রকাশ কর৷ যেন সবাই তা দেখতে পায়৷” তাঁর ভাইরাও তাঁকে বিশ্বাস করত না৷ যীশু তাঁর ভাইদের বললেন, “আমার নিরূপিত সময় এখনও আসে নি; কিন্তু তোমাদের যাওয়ার জন্য যে কোন সময় সঠিক, এখনই তোমরা যেতে পার৷ জগত সংসার তোমাদের ঘৃণা করতে পারে না, কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে৷ কারণ পৃথিবীর লোকেরা, যারা মন্দ কাজ করে, সেই সব লোকদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিই৷ তোমরা পর্বে যাও, আমি এখন এই উৎসবে যাচ্ছি না, কারণ আমার নিরূপিত সময় এখনও আসে নি৷” এই কথা বলার পর তিনি গালীলেই রয়ে গেলেন৷ ১০ তাঁর ভাইরা উৎসবে চলে গেল৷ পরে তিনিও সেখানে গেলেন, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে সেই পর্বে না গিয়ে গোপনে সেখানে গেলেন।’

  • পরিবারের সাথে যীশুর সম্পর্কের নতুন অধ্যায়: তারা এখন যীশুকে সমর্থন করে কিন্তু নিজের বুদ্ধিতে তাঁকে চালানোর চেষ্টা করে।
  • কান্না নগরের বিয়েতে মরিয়মের অনুরোধ ও এখানে যীশুর ভাইদের পরামর্শ দুটি বিষয়ের বেশ মিল আছে: তাঁর পরিবার যীশুকে কিছু করতে বলে, তিনি তা অগ্রাহ্য করেন, বলেন যে তাঁর সময় এখনও আসে নি কিন্তু তারপরেও তাঁর মত কাজ করেন। দুই সময়ে পরিবারের প্রস্তাব সমর্থনকারী স্বাভাবিক চিন্তা থেকে আসে, কিন্তু তা ঈশ্বর থেকে আসে না।
  • দুইটি অনুরোধ ভিন্ন উদ্দেশ্যে করা হয়: মরিয়মের অনুরোধ হতে পারে বর-কনেকে লজ্জা থেকে রক্ষা করার জন্য কিন্তু ভাইয়েরা তাদের প্রস্তাব করে যীশুর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য।
  • লেখক যোহনের উক্তি ‘তাঁর ভাইরাও তাঁকে বিশ্বাস করত না।’ দেখায় যে ভাইয়েরা অবশেষে মেনে নেয় যে তাদের ভাই ‘বিশেষ একজন’ ও তারা তাঁকে সমর্থন করে কিন্তু যোহন একে ‘বিশ্বাস’ বলেন না। কারণ আশ্চর্য কাজ করার ক্ষমতা দেখার পরেও তারা ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস না করে নিজের কৌশলে তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার চেষ্টা করেন।
  • যীশু আবারও পরিবারের ‘ভাল পরামর্শকে’ অগ্রাহ্য করেন। তিনি ভাইদের উদ্দেশ্য ও কৌশলের সাথে রাজী না ও তাদের পরিচালনাকে মেনে নেন না।

যোহন ১৯:২৫-২৭                        যীশু তাঁর মায়ের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন
‘যীশুর ক্রুশের কাছে তাঁর মা, মাসীমা ক্লোপার স্ত্রী মরিয়ম ও মরিয়ম মগ্দলিনী দাঁড়িয়েছিলেন৷ ২৬ যীশু তাঁর মাকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন আর যে শিষ্যকে তিনি ভালোবাসতেন, দেখলেন তিনিও সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন৷ তখন তিনি তাঁর মাকে বললেন, “হে নারী, ঐ দেখ তোমার ছেলে৷” ২৭ পরে তিনি তাঁর সেই শিষ্যকে বললেন, “ঐ দেখ, তোমার মা” আর তখন থেকে তাঁর মাকে সেই শিষ্য নিজের বাড়িতে রাখার জন্য নিয়ে গেলেন।’

  • ঈশ্বরীয় সন্তান হিসাবে যীশু নিশ্চিত করেন মৃত্যুর পর তাঁর মায়ের সঠিকভাবে দেখাশুনা করা হবে। এইভাবে তিনি যতদূর সম্ভব তার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেন যদিও তাঁর অকালে মৃত্যু তাঁর আহবানেরই অংশ যা তিনি প্রতিরোধ করতে পারেন না, করবেনও না।
  • যীশুর চারজন ছোট ভাই থাকার পরেও কেন তিনি শিষ্য যোহনকে তাঁর মায়ের দায়িত্ব দিয়ে যান? হতে পারে কারণ সে সময় তাঁর ভাইয়েরা এখনও বিশ্বাসী নয়, যদিও পরে বিশ্বাসী হয়।
  • খ্রীষ্টে বিশ্বাসীরা পরিবারে পরিণত হয় (মার্ক ১০:৩০, লূক ১৮:৩০) এবং তাদের পরিবারের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া যায়। এখানে আদর্শ স্থাপন ‘একে অপরের প্রতি যত্ন নেওয়া’। যীশু দ্বিধাবোধ করেন না যোহনকে দায়িত্ব দিতে যদিও তা যোহনের জন্য বড় অঙ্গিকার।
  • ঈশ্বরের আহবানের সীমানার মধ্যে থেকে ও ঈশ্বরের নীতি রক্ষা করে একজন আহবান প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবারের দায়িত্ব পালনের সর্বোচ্চ করা উচিত। ‘কোন লোক যদি তার আত্মীয় স্বজন আর বিশেষ করে তার পরিবারের লোকদের ভরণপোষন না করে, তার মানে সে বিশ্বাসীদের পথ থেকে সরে গেছে, সে তো অবিশ্বাসীর চেয়েও অধম৷’ (১ তীমথিয় ৫:৮)।

পরবর্তী বছরগুলিতে যীশুর পরিবার

প্রেরিত ১:১৪                                     মরিয়ম ও যীশুর ভাইএরা যীশুর শিষ্য হয়ে যান

‘প্রেরিতরা সকলেই একসঙ্গে সেখানে একই উদ্দেশ্যে সর্বদা প্রার্থনা করছিলেন৷ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন স্ত্রীলোক, যীশুর মা মরিয়ম ও তাঁর ভাইরা।’

  • যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পরে যীশুর পরিবার তাঁর অনুসরণকারী হয়ে যায় অন্য সকল বিশ্বাসীদের মত: রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে নয় বরং বিশ্বাস ও বাধ্যতায়।
  • অনুমান করা যায় যে প্রথম মণ্ডলী যীশুর মা ও ভাইদের প্রতি সম্মানের সাথে আচরণ করত কিন্তু নতুন নিয়মের কোন পুস্তকে তাদের প্রতি বিশেষ ভক্তি বা বিশেষ স্থান দেওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায় না।
  • যীশুর আপন ভাই যাকোব (চারজন ভাইদের মধ্যে বড়জন মথি ১৩:৫৫, মার্ক ৬:৩) ধীরে ধীরে (পিতরের পরে) যিরূশালেম মণ্ডলীর একজন সম্মানিত ও প্রভাবশালী নেতা হয়ে যান।
  • যাকোব মোশির আইন-কানুন খুব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন এবং ফলে তিনি প্রথম দিকে অযিহূদীদের সুন্নত করার পক্ষে দাড়ান (গালাতীয় ২:১২, প্রেরিত ১৫:১).
  • যখন সুন্নতের প্রশ্ন যিরূশালেম সভায় সঠিকভাবে আলোচনা করার পর (প্রেরিত ১৫) যাকোব উপসংহার করেন যে অযিহূদীদের মোশির আইন-কানুন পালন করা আবশ্যক নয় ‘তাই আমার বিচার হল …’ (প্রেরিত ১৫:১৯) এবং সবাই তার সঙ্গে একমত হন।
  • কেন যাকোব দ্বারা? হতে পারে কারণ তিনি যিরূশালেম মণ্ডলীতে অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু এর চেয়ে তিনি সুন্নত করার পক্ষের প্রধান সমর্থনকারী ছিলেন। তাই তার মন পরিবর্তন অন্য সকলকে দেখায় যে পৌল ও বার্ণবা যা বলেছেন তা সঠিক (গালাতীয় ২:১১-১৪, প্রেরিত ১৫:১-২)।
  • যীশুর ভাই যাকোব হলেন যাকোব পুস্তকের লেখক। তিনি তার চিঠির শুরুতে নিজেকে এইভাবে পরিচয় দেন ‘আমি যাকোব, ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস…’ (যাকোব ১:১)। তিনি যীশুর ভাই হিসাবে নিজের পরিচয় দেন না।
  • তখনকার সময়ে যিহূদীদের অন্যান্য লেখায় যাকোবের জীবনকে অসাধারণ ভক্তি ও প্রার্থনার জীবন হিসাবে বর্ণনা করেন। এমন কি যে যিহূদীরা মণ্ডলীর বিপক্ষে তারাও যাকোবকে সম্মান করত। যোষিফাস ফ্লাভিয়াস (Josephus Flavius) যিহূদীদের হাতে যাকোবের শহীদ মৃত্যুর বর্ণনা দেন।
  • যীশুর সবচেয়ে ছোট ভাইয়ের নাম যিহূদা (মথি ১৩:৫৫, মার্ক ৬:৩) যিনি যিহূদা পুস্তকের লেখক। চিঠির শুরুতে নম্রতার সঙ্গে তিনি নিজের পরিচয় এভাবে দেন: ‘আমি যিহূদা, যীশু খ্রীষ্টের দাস এবং যাকোবের ভাই’ । তিনি যীশুর আপন ভাই হওয়ার দাবী করেন না (যিহূদা ১)। দেখা যায় যে যীশুর দুজন ভাই তাঁর কথা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন ও মেনে নিয়েছেন।