যোগাযোগ ০৭ – যীশুর কথা বলার ধরণ: অভিষেক দানকারী মহিলা

প্রত্যেকটি সুসামচারে এমন একটি গল্প দেওয়া যেখানে একটি মহিলা যীশুকে অভিষিক্ত করে:

পদগুলি

মথি ২৬:১৩

মার্ক ১৪:

লূক ৭:৩৬৫০

যোহন ১২:

কোথায়

বৈথনিয়া

বৈথনিয়া

গালীল, আগেই উল্লিখিত: নায়িন

বৈথনিয়া

কার বাড়ীতে

কুষ্ঠ/চর্মরোগী শিমোন

কুষ্ঠ/চর্মরোগী শিমোন

ফরীশী শিমোন

লাসার, মার্থা ও মরিয়ম

কার উপস্থিতি উল্লিখিত

যীশু, শিষ্যরা, অন্যান্য লোকেরা, শিমোন

যীশু, শিষ্যরা

যীশু, শিষ্যরা, শিমোন, অন্যান্য লোকেরা

যীশু, শিষ্যরা, বন্ধুরা, অন্যান্য লোকেরা

মহিলার বর্ণনা

একজন স্ত্রীলোক

একজন স্ত্রীলোক

একজন খারাপ স্ত্রীলোক

মরিয়ম

দান

একটি সাদা পাথরের পাত্রে খুব দামী আতর

একটি সাদা পাথরের পাত্রে খুব দামী ও খাঁটি আতর

সাদা পাথরের পাত্রে করে আতর

কমবেশ তিনশো গ্রাম খুব দামী, খাঁটি সুগন্ধি আতর

অভিষেক কিভাবে

যীশুর মাথায় ঢেলে

যীশুর মাথায় ঢেলে

কেঁদে, চোখের জলে পা ভিজাল, চুমু দিল, চুলে মুছিয়ে দিল, আতর

পায়ে ঢেলে নিজের চুল দিয়ে পা মুছে দিলেন। সুগন্ধে ঘর ভরে গেল।

কি প্রশ্ন উঠানো হয়

এই দামী জিনিস কেন নষ্ট করা হচ্ছে?

এইভাবে আতরটা নষ্ট করা হল কেন?

যদি নবী হত তবে জানতে পারত, কি রকম স্ত্রীলোক তার পা ছুঁচ্ছে

তিনশো দীনারে গরীবদের দেওয়াকেন তা হল না?

কে প্রশ্ন উঠায়

শিষ্যরা

যারা উপস্থিত কয়েকজন

ফরীশী শিমোন

যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ

আবেগ

রাগ

রাগ

অবজ্ঞা

 

কি প্রস্তাব করা হয়

অনেক দামে বিক্রি করে গরীবদের দেওয়া

বিক্রি করলে তিনশো দীনারেরও বেশী > গরীবদের

এ কে, যে পাপও ক্ষমা করে?

তিনশো দীনারে বিক্রি > গরীবদের দেওয়া যেত।

কি প্রতিক্রিয়া

একে অন্যকে বলতে লাগলেন

একে অন্যকে বলতে লাগলেন, স্ত্রীলোকটিকে বকাবকি

মনে মনে চিন্তা

আপত্তি উঠানো

যীশুর আপত্তি

এই স্ত্রীলোকটিকে দুঃখ দিচ্ছ কেন?

থাম, কেন তোমরা ওকে দুঃখ দিচ্ছ?

অথিতিসেবা বাদ দেওয়া, মহিলাকে মনে বিচার করা

ওর মনে কষ্ট দিয়ো না। কবর দেবার ও রেখেছিল

যীশু কোন কারণ দেখান

গরীবেরা সব সময় আছেকবরের জন্য প্রস্তুত করেছে।

গরীবরা সব সময় আছেকবরের জন্য প্রস্তুত করতে আতর ঢেলে দিয়েছে।

দুইজনের ঋণ ক্ষমা > যার অল্প ক্ষমা করা হয় সে অল্প ভালবাসে

গরীবরা সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে

প্রতিজ্ঞা

এই স্ত্রীলোকটির এই কাজের কথাও বলা হবে

সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা ওর এই কাজের কথাও বলা হবে।

  
  • সাবধাণভাবে লক্ষ করলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে দুইটি অভিষেকের গল্প আছে: একটি গালীলে একজন ফরীশীর বাড়ীতে (লূক), এবং আর একটি যীশুর মৃত্যুর কিছুদিন আগে বৈথনিয়ায় (মথি, মার্ক, যোহন)।
  • অভিষেকের কারণে সে তর্ক হয়, তা দুইটি ঘটনায় বেশ ভিন্ন: লূকের গল্পে আপত্তি উঠানো হয় যে যীশু একটি পাপী মহিলার স্পর্শ গ্রহণ করেন এবং যীশু উত্তরে ফরীশীর আত্ম-ধার্মিকতাকে চ্যালেঞ্জ করেন। বৈথনিয়ার অভিষেকে টাকা নষ্ট করার বিষয়ে আপত্তি উঠানো হয়। উত্তরে যীশু মহিলার দানশীলতা প্রশংসা করেন এবং অভিষেককে তার শীঘ্র মৃত্যুর কারণে উপযুক্ত বলেন।

 

এই অধ্যয়নে শুধুমাত্র লূকে সুসমাচারে বর্ণনা করা গালীলে ফরীশীর বাড়ীতে সে অভিষেকের গল্প দেখা হবে:

একটি পাপী মহিলা যীশুকে অভিষিক্ত করে (লূক ৭:৩৬-৫০)
  • এই ঘটনার সময়ে যীশু এখনও তার পরিচর্যার শুরুরদিকে গালীলে শিক্ষা দেন ও সুস্থ করেন। ইতিমধ্যে তিনি বড় আশ্চর্য কাজ করেছেন, কিছুদিন আগে তিনি নায়িন শহরে একটি বিধবার ছেলেকে মৃত্যু থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।
  • ইতিমধ্যে গালীলের কিছু ফরীশীরা যীশুর কাজে অবাক হয়ে গেছে। তারা গুরুত্বের সঙ্গে যীশুর কথা শোনে কারণ যীশুকে দেখে তাদের মধ্যে মশীহের আশা জেগে উঠেছে। কিন্তু যীশু যখন শনিবার পালন করার বিষয়ে, নিজেকে পাপীদের থেকে আলাদা করার বিষয়ে এবং ধার্মিক জীবন-যাপনের বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেন না, তারা যীশুর বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে।

“৩৬ একজন ফরীশী যীশুকে তাঁর সংগে খাবার নিমন্ত্রণ করলেন। তখন যীশু তাঁর বাড়ীতে গিয়ে ভোজে যোগ দিলেন।”

  • কেন ফরীশী শিমোন (লূক ৭:৪০ পদে তার নাম উল্লিখিত) যীশুকে নিমন্ত্রণ দেন? হয়তো কৌতূহলের কারণে? তিনি কি খোলা-মনের একজন ফরীশী ছিলেন যিনি নতুন কিছু দেখে ভয় পান না? হয়তো তিনি নিজের জন্য নিশ্চিত জানতে চেয়েছেন এই নতুন গুরু কি ধরণের বা তাঁর ব্যবহার কেমন? তিনি কি নিজেকে যীশুর ঊর্দ্ধে মনে করেন, যীশুকে সহজেই সামলাতে পারেন মনে করেন? তা নিশ্চিত বলা যায় না। সাহস থেকে হোক, কৌতূহল থেকে হোক, অহংকার থেকে হোক তিনি যীশুকে নিমন্ত্রণ দেন, যা অনেকে করে নি।
  • কিন্তু তিনি অতিথিকে সম্মান দেখানোর কিছু প্রচলিত কাজগুলি বাদ দেন (লূক ৭:৪৪-৪৬)। নিমন্ত্রণটির সম্বন্ধে অনেক লোক জানে (লূক ৭:৩৭)। হয়তো শিমোন নিমন্ত্রণটি দিলেন নিজের সুনাম বা গুরুত্ব দেখানোর জন্যও। যীশুর সাথে ফরীশী নীকদীম যখন দেখা করেন তা বেশ ভিন্ন: নীকদীম রাতের বেলা মোটামুটি গোপনে যীশুর কাছে আসলেন (যোহন ৩:২)।

“৩৭ সেই গ্রামে একজন খারাপ স্ত্রীলোক ছিল। সেই ফরীশীর ঘরে যীশু ভোজে যোগ দিয়েছেন জানতে পেরে সে একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে আতর নিয়ে আসল। ৩৮ পরে সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল এবং তাঁর পায়ের উপর চুমু দিয়ে সেই আতর ঢেলে দিল।”

  • ‘খারাপ স্ত্রীলোক’ মানে এমন একজন মহিলা, যার অনৈতিক জীবন-যাপনের কারণে দুর্নাম ছিল, হয়তো শহরে একজন ব্যভিচারীণী অথবা একটি পতিতা।
  • হতে পারে মহিলাটি ঠিক গরীব নয়, কারণ সে বেশ চেনা একজন ব্যক্তি এবং তার হাতে দামী সুগন্ধি তেল আছে। কিন্তু হতে পারে এই দুর্নাম ও পরিচিতি নিয়ে বাস করা মানে যে সে বেশ শক্ত ও নির্লজ্জ হয়ে গেছে।
  • কিভাবে সে অনৈতিকতার সাথে লিপ্ত হয়েছে (তার কি দোষ ছিল বা তাকে ভুল ব্যবহার করা হয়েছে), তা উল্লিখিত নয়, এবং তা কেউ জানতে চায়ও না।
  • মনে হয় মহিলাটির ইতিমধ্যে যীশুর সাথে দেখা হয়েছিল। হয়তো যীশু তাকে সুস্থ করেছিলেন, হয়তো যীশু তার থেকে মন্দ আত্মা তাড়িয়েছিলেন, বা সে যীশু দ্বারা একটি নতুন আশা, একটি অন্য ধরণের ব্যবহার, একটি সম্মান পেয়েছিল যা তার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। যীশু মহিলার অভিষেককে ক্ষমার জন্য কৃতজ্ঞতা হিসাবে বুঝেন (লূক ৭:৪৭)। তাতে বুঝা যায় যে তাদের আগে দেখা হয়েছিল।
  • যীশু মহিলাকে নিশ্চয়তা দেন যে তার পাপ ক্ষমা হয়েছে ও সে উদ্ধার পেয়েছে (লূক ৭:৪৮, ৫০)।
  • একজন পরিচিত’খারাপ স্ত্রীলোক’ হিসাবে একজন ফরীশীর বাড়ীতে প্রবেশ করা ছিল সাহসের কাজ। মহিলাটি ভালভাবেই জানে যে ফরীশীরা পাপীদের নীচু চোখে দেখে ও ‘দূষিত’ না হওয়ার জন্য নিজেকে পাপীদের থেকে আলাদা করতে চেষ্টা করে। মহিলাটি তারপরেও এই বাড়ীতে প্রবেশ করে কেন?
  • হতে পারে যীশু যে সম্মান ও গ্রহণ তাকে দেখিয়েছেন তা মহিলাটির হৃদয়কে এমনভাবে স্পর্শ করেছে যে সে মুক্তি ও সাহস পেয়েছে। কারও খারাপ কিছু বলার আছে কিনা, মহিলাটি তাতে আর গুরুত্ব দেয় না।
  • মহিলার কান্না, যীশুকে স্পর্শ, পায়ে চুমু দেওয়া ও চুল দিয়ে মুছা, এই সব আচরণগুলি সাংস্কৃতিকভাবে কোনো রকম গ্রহণযোগ্য ছিল না এবং আগে এভাবে ঘটেও নি।
  • যিহূদীরা প্রায় চেয়ারে বসে খেত না বরং এক পাশে হেলে বিছানায় শুয়ে খেত। তাই পিছন থেকে এসে যীশুর পাই স্পর্শ করাটাই মহিলার জন্য সবচেয়ে সহজ ছিল।
  • যীশুর পা এভাবে ধরা, চুমু দেওয়া ও চুল দিয়ে মুছে দেওয়া প্রকাশ করে মহিলাটি কত মনে-প্রাণে যীশুকে আদর করে ও সম্মান দেখায়। আরো বুঝা যায় যে মহিলাটি আসলে অনৈতিক জীবনে অভ্যস্ত ছিল, কারণ এই ধরণের কাজ ছাড়া সে যীশুকে ‘খুশি করার’ আর কোনো পথ জানে না।

“৩৯ যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি এ দেখে মনে মনে বলতে লাগলেন, ‘যদি এই লোকটা নবী হত তবে জানতে পারত, কে এবং কি রকম স্ত্রীলোক তার পা ছুঁচ্ছে; স্ত্রীলোকটা তো খারাপ।”

  • ফরীশীরা নিজেকে পাপী মানুষ থেকে আলাদা করে পবিত্র রাখতে চেষ্টা করত। তাই নিমন্ত্রণকর্তা হিসাবে শিমোন প্রথমদিকে মহিলার উপস্থিতি ও কাজ দেখে খুব লজ্জা পান (‘অনেকের উপস্থিতিতে একটি পাপী মহিলা আমার বাসায়!)। কিন্তু যখন শিমোন দেখেন যে যীশু মহিলাকে প্রত্যাখ্যান করেন না এবং নিজেকে তার থেকে আলাদাও করেন না, তখন তার লজ্জা রাগে পরিণত হয়: তিনি যীশুকে অবজ্ঞা করেন এবং তাকে একজন ধার্মিক গুরু বা নবী আর মনে করেন না।
  • লোকেরা যীশুকে প্রায়ই ‘নবী’ মনে করত বা তাঁকে ‘নবী’ বলে ডাকত। শিমোন উপযুক্তভাবে দাবী করেন – যীশু যদি আসলে নবী হন – যে তিনি বুঝবেন মহিলাটি কি ধরণের। আসলে তা বুঝার জন্য নবী হওয়ার প্রয়োজন নেই, এমনিও তা বুঝা যায়।
  • ফরীশীরা পাপীদের থেকে দূরে থাকত এবং মনে করত যে একজন ব্যক্তি ধার্মিক হলে সে অবশ্যই তাদের মত করবে। মহিলা যে পাপী, তা হয়তো বাস্তব কথা। কিন্তু ফরীশীদের আত্ম-ধার্মিকতা, পাপীদের নীচু চোখে দেখা, মনে করা যে তারা অনেক ভিন্ন, যে তারা তার চেয়ে ভাল, এই মনোভাব ভুল।
  • যীশুর ব্যবহার দেখে শিমোন উপসংহারে আসেন যে যীশু ধার্মিক নন, ঈশ্বর থেকেও নন, প্রজ্ঞার লোক নন এবং নিজেকে মন্দ থেকে আলাদা রাখতেও জানেন না। যীশুর ব্যবহার দেখে তার এখন এমন লজ্জা ও রাগ লাগে যে তিনি এই নিমন্ত্রণ দেওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট আফসোস করছেন।
  • পাশে একটি প্রশ্ন: লেখক লূক কিভাবে জানেন শিমোন ‘মনে মনে বলতে লাগলেন’ ? কিভাবে লূক জানেন যা শিমোন ভাবলেন কিন্তু বলেন নি?
  • হয়তো সমস্ত ফরীশীরা এমনভাবে চিন্তা করত তাই এখানে অবাক লাগার কিছু নেই। কিন্তু হতেও পারে যে শিমোন পরে বিশ্বাসী হয়েছিলেন এবং মণ্ডলীতে এই গল্প নিজের সাক্ষ্য হিসাবে বলতেন। প্রেরিত পুস্তক উল্লেখ করে যে অনেক পুরোহিত (প্রেরিত ৬:৭) এবং কম পক্ষে কিছু কিছু ফরীশী (প্রেরিত ১৫:৫) পরে বিশ্বাসী হয়ে প্রথম মণ্ডলীতে যুক্ত হয়েছিল।

“৪০ যীশু সেই ফরীশীকে বললেন, ‘শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলবার আছে।’ শিমোন বললেন, ‘গুরু, বলুন।”

  • একবার শিমোন এই উপসংহারে আসেন, তিনি যীশুর কাছ থেকে কিছু শুনতে আর রাজি নন। ঠিক তখনই যীশু তাকে ভদ্রভাবে কিন্তু এমন নির্দিষ্টভাবে কথা বলেন যে তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না।
  • যীশু শিমোনের মনের চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করেন যখন শিমোন সেগুলি এখনও প্রকাশ করেন নি। তাতে যীশু দেখান যে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান আছে। তিনি শিমোনের উপসংহার যে যীশু নবী নন, তা চ্যালেঞ্জ করেন।

“৪১ যীশু বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দু’জন লোক টাকা ধারত। একজন ধারত পাঁচ শো দীনার আর অন্যজন পঞ্চাশ দীনার। ৪২ তাদের কারও ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা ছিল না বলে তিনি দয়া করে দু’জনকেই ক্ষমা করলেন। তা হলে বল দেখি, তাদের দু’জনের মধ্যে কে সেই মহাজনকে বেশী ভালবাসবে?” ৪৩ শিমোন বললেন, “আমার মনে হয়, যার বেশী ঋণ ক্ষমা করা হল সে-ই।” যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।”

  • যীশু একটি দৃষ্টান্ত বলেন। তার শ্রোতার হৃদয় ‘বন্ধ’ বলে এবং শিমোন ‘রক্ষার দেওয়াল’ দ্বারা নিজেকে ঘিরিয়ে রেখেছেন বলে, যীশু একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে ‘দেওয়াল’ ভাঙ্গতে চেষ্টা করেন।
  • দৃষ্টান্ত অতি সরল, অতি সহজ ও তার চেতনাদায়ক প্রয়োগও অতি পরিষ্কার: দুইজন ব্যক্তির মনোভাবের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়।
  • যীশু শিমোনকে অংশ গ্রহণ করতে ও উত্তর দিতে বাধ্য করেন। শিমোনের অনিচ্ছুক মনোভাব, এমন কি বিরক্ত তার উত্তরে বুঝা যায়: ‘আমার মনে হয়’। শিমোন বিরক্ত তাকে কি দৃষ্টান্ত শুনতে হয়, তিনি আরো বিরক্ত তার কি উত্তর দিতে হয়। তিনি বিরক্ত হন যে এভাবে তাকে ধরা হয়। কে তাকে এভাবে ধরেন, তা নিয়ে তিনি আরো বিরক্ত হন।
  • যীশু দৃষ্টান্তের দ্বারা কি বুঝায়? যাদের বেশি ক্ষমা করা হয়েছে তারা বেশি ভালবাসে। কিন্তু আবারও দৃষ্টান্তের দুইজন ব্যক্তিদের মধ্যে এত পার্থক্য নাও: একনজের ঋণ ৫০০ দীনার, অন্যের ঋণ ৫০ দীনার, কিন্তু দুই জনই ঋণী, দুইজনই ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম, দুইজনেরই ঋণ ক্ষমা করা হয়।
  • যীশু শিমোনের মনের চিন্তাগুলি চ্যালেঞ্জ করেন: যে তিনি মহিলার চেয়ে অনেক ভিন্ন, যে তিনি তার মত নন, যে তিনি তাকে বিচার করতে পারেন, মোট কথা তার আত্ম-ধার্মিকতা।
  • কিন্তু যীশু এই বিরক্তির দৃষ্টান্তের পরে আরো সরাসরি কথা বলতে শুরু করেন:

“৪৪ তারপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে মুখ ফিরিয়ে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে তো দেখছ। আমি তোমার ঘরে আসলে পর তুমি আমার পা ধোবার জল দাও নি, কিন্তু সে চোখের জলে আমার পা ভিজিয়ে তার চুল দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছে। ৪৫ তুমি আমাকে চুমু দাও নি, কিন্তু আমি ঘরে আসবার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিচ্ছে। ৪৬ তুমি আমার মাথায় তেল দাও নি, কিন্তু সে আমার পায়ের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে। ৪৭ তাই আমি তোমাকে বলছি, সে বেশী ভালবাসা দেখিয়েছে বলে বুঝা যাচ্ছে যে, তার পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে। যার অল্প ক্ষমা করা হয় সে অল্পই ভালবাসা দেখায়।”

  • যীশু স্বীকার করেন যে মহিলাটি আসলে পাপী ছিল (‘তার পাপ অনেক’), কিন্তু যীশু তাকে অনুমোদন দেন, এমন কি প্রশংসা করেন কারণ সে ক্ষমা চেয়েছে, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে ও সাড়ায় মনে-প্রাণে ভালবাসা দেখিয়েছে। মহিলাটির যীশুর সাথে দেখা হয়েছে, সে তার অনুগ্রহ পেয়েছে, সে সাড়া দিয়েছে ও চিরকালের জন্য পরিবর্তিত হয়েছে। ‘তার পাপ অনেক হলেও…’। অথবা কেরী অনুবাদে ‘ইহার যে বহু পাপ, তাহার ক্ষমা হইয়াছে’ । তার পাপ আসলে ছিল, কিন্তু এখন তার পাপ আসলে ক্ষমা হয়েছে।
  • কথাটির ধার আছে কারণ ফরীশীরা ঠিক এই উদ্দেশ্যে আইন শিক্ষা দিত: মানুষ যেন পরিবর্তিত হয়, যেন ঈশ্বরকে মানে ও বাধ্য হয়।
  • এখানে একজনের জীবন সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে ভালদিকে যায় কিন্তু ফরীশী শিমোন তা নিয়ে বিরক্ত হন। যীশু কার্যকারীভাবে করেছেন যা ফরীশীরা করতে চায় কিন্তু তেমন সফল হয় না: জীবন পরিবর্তন।
  • শুধুমাত্র মহিলার নয়, শিমোনেরও যীশুর সাথে দেখা হয়েছে, কিন্তু তিনি পরিবর্তিত হন নি, তিনি যীশুকে সম্মান দেখান নি বরং মনে মনে তাকে বিচার করে অগ্রাহ্য করেছেন। তিনি সাড়া দেন নি, এখনও দেন না।
  • ‘যার অল্প ক্ষমা করা হয় সে অল্পই ভালবাসা দেখায়’ হয়তো এই কথায় বিদ্রূপ মিশানো আছে: আসলে শিমোনের পাপ কম না, তার মনোভাব মহিলার চেয়ে অনেক খারাপ। মহিলা চমৎকারভাবে সাড়া দিয়েছে, কিন্তু শিমোন, যদিও ফরীশী, তার আত্ম-ধার্মিকতার কারণে ভাল সাড়া দেন নি।
  • যীশু এখন সরাসরিভাবে দোষ ধরেন: অথিতিসেবা বাদ দেওয়ার পিছনে শিমোনের সে মনোভাব, আত্ম-গুরুত্ব, নিজেকে উপস্থাপনা কিন্তু যীশুকে অসম্মান।
  • যীশু এখানে সবার সামনে নিমন্ত্রণকর্তাকে লজ্জা দেন, যদিও শিমোনের এই সমাজে একটি ভূমিকা ও গুরুত্ব ছিল। একজন অতিথি তার নিমন্ত্রণকর্তাকে এত অপমান করে, তা সাংস্কৃতিকভাবে কোনো রকম গ্রহণযোগ্য ছিল না। যীশু এখানে একজন কঠোর শত্রু বানাতে ঝুঁকি নেন।

‘৪৮ পরে যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তোমার পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।” ৪৯ যারা যীশুর সংগে খেতে বসেছিল তারা মনে মনে বলতে লাগল, “এ কে, যে পাপও ক্ষমা করে?” ৫০ যীশু তখন সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তুমি বিশ্বাস করেছ বলে পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। শান্তিতে চলে যাও।”

  • যীশু অপমান করতে থাকেন: তিনি মহিলাকে নিশ্চয়তা দেন যে তার পাপ ক্ষমা হয়েছে ও তাকে গ্রহণ করা হয়েছে। যীশু তা দ্বারা ক্ষমা করার অধিকারও দাবী করেন, যা নিয়ে আগেও কঠোর তর্কাতর্কি হয়েছে (পঙ্গুকে সুস্থ করা, মার্ক ২:৭)। যীশু তর্ক, অপমাণ বা ঝুঁকি এড়িয়ে যান না। কি সুন্দর, মধু, শান্ত, আরামের পরিদর্শন!
  • মহিলাটিকে অনুমোদন না করার চেয়ে যীশু নিজের সুনাম হারাতে রাজি, শত্রু বানাতেও রাজি।
  • শিমোনের আত্ম-ধার্মিকতাকে ধাক্কা না দেওয়া এবং তাকে নতুন চিন্তা না দেওয়ার চেয়ে যীশু অপমান করতে রাজি – সে আশায় যে কেউ আসলে বুঝবে ও নতুন সুযোগ পাবে।