যোগাযোগ ১৫ – ভুল যোগাযোগ ও দ্বন্দ্ব সমাধান (যিহোশূয় ২২)

যিহোশূয় ২২ অধ্যায়ে একটি চমৎকার গল্প পাওয়া যায় কিভাবে ইস্রায়েলের বংশদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল এবং তারা তা কিভাবে সমাধান করেছিল।

ঐতিহাসিক পরিস্থিতি

  • মোশির নেতৃত্বে ইস্রায়েল জাতি যর্দনের পূর্বের এলাকা দখল করে এবং জমিটা আড়াই বংশের মধ্যে ভাগ করে (রূবেণ, গাদ, পূর্ব মনঃশি) যেমন তারা অনুরোধ করেছে (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২)।
  • মোশি তাদের এই অনুরোধ পূর্ণ করেন কিন্তু তিনি দাবী করেন যে তারা অবশ্যই সাহায্য করবে যখন বাকি সারে দশ বংশ যর্দনের পশ্চিম দিকের জমি দখল করবে (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:২৫-২৭)।
  • মোশির মৃত্যুর পরে এই আড়াই বংশ তাদের প্রতিজ্ঞা অনুসারে যিহোশূয়ের নেতৃত্বে অন্য বংশদের সাথে যর্দন পার হয়ে পশ্চিম এলাকা দখল করে।

যিহোশূয় ২২:১-৯                           ইস্রায়েলে শাস্তি ও মতের মিল

  • শিলোতে (যেখানে ঐ সময় তাম্বু উপস্থিত) যিহোশূয় যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পরে সে আড়াই বংশদের (রূবেণ, গাদ, পূর্ব মনঃশি) শান্তিতে ছেড়ে দেন এবং তাদের বিশ্বস্ততার জন্য প্রশংসা করেন (যিহোশূয় ২২:১-৩), তাদের ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকতে উৎসাহ দেন (যিহোশূয় ২২:৫), তাদের আশীর্বাদ করেন (যিহোশূয় ২২:৬) এবং তাদের কনান দখলের লুট করা মালে একটি অংশ দেন (যিহোশূয় ২২:৮)।
  • এই সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাশের বংশদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভাল: তারা পরস্পরকে সমর্থন করেছেন, তারা একসাথে ঈশ্বরের জয় ও আশীর্বাদ দেখেছেন ও মিলে মিশে জমি ভাগ করেছেন। আগের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা হয়েছে। তারা পরস্পরকে বিশ্বাস করে ও পরস্পরকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে।

যিহোশূয় ২২:১০-১১                       পূর্ব বংশগুলো যর্দনের পাড়ে বেদী বানায়

‘তারপর তারা কনান দেশের যর্দন এলাকায় উপস্থিত হয়ে নদীর কাছেই সকলের চোখে পড়বার মত বড় একটা বেদী তৈরী করল। ১১ বাকী ইস্রায়েলীয়েরা যখন শুনল যে, তাদের জায়গায় কনান দেশের সীমায় যর্দন এলাকার নদীর কাছে তারা একটা বেদী তৈরী করেছে…।’

কি ঘটেছিল?

  • যখন পূর্বের বংশরা তাদের নিজের এলাকায় যাওয়ার পথে যর্দনে আসে তারা নদীর পশ্চিম পাড়ে একটি বড় বেদী তৈরি করে।

এই বেদী বানানোর কারণ কি হতে পারে?

  • উৎসর্গ দেওয়ার জন্য?
  •  ঈশ্বরকে আরাধনা করার জন্য?
  •  কিছু স্মরণ করার জন্য?
  •  কিছু স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য?

 কেন এই বেদীর বিষয়ে আপত্তি উঠতে পারে?

  • ঈশ্বর দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকে বার বার আদেশ দেন যেন সমস্ত উৎসর্গ তাম্বুর বেদীতে এবং শুধুমাত্র সে একটাই বেদীতে করা হয়। বর্তমানে তাম্বু শীলোতে, পরে তা যিরূশালেমে থাকবে।
  • এই আদেশ সমস্ত উৎসর্গের বিষয়ে বলা হয়েছে (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৫,১১)। কিন্তু বিশেষভাবে উল্লিখিত হল: নিজের ইচ্ছায় করা উৎসর্গ (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:১৮), দশমাংশ দান (দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:২৩-২৫), প্রথম জাতকে উদ্ধার করার উৎসর্গ (দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:২০), নিস্তার বা উদ্ধার-পর্বের উৎসর্গ (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:২,৬-৭), সাত সপ্তাহের পর্ব (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১১), কুঁড়ে-ঘরের পর্ব (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৫), বছরে তিন বার যিরূশালেমে আসার পর্বের ক্ষেত্রে উৎসর্গ (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৬), প্রথম ফসলের উৎসর্গ (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:২)। শহরে উৎসর্গ না দিয়ে বরং তাম্বুতে উৎসর্গ করার আদেশ দ্বিতীয় বিবরণ ১২:২১-১৬ পদে পাওয়া যায়।
  • পরিষ্করভাবে বুঝা যায় যে তা আইন-কানুনে একটি শক্তিশালীভাবে পুনরুক্তিত আদেশ। হারোণের পরিবারের পুরোহিত ছাড়া ও তাম্বুতে বেদী ছাড়া কোনো উৎসর্গ অনুমোদিত নয়।
  • কেন? ঈশ্বর ইস্রায়েলের জন্য একটি আত্মিক কেন্দ্র চান। তিনি চান যেন বংশগুলির মধ্যে একতা থাকুক: এইটা হল তাদের একসাথে ভিত্তি ও পরিচয়। তিনি চান যে মাত্র এমন পুরোহিত যারা আইন-কানুন জানে ও পালন করে উৎসর্গ দেন, এমন পুরোহিত যারা অভিষিক্ত, বাধ্য ও যাদের আইন-কানুন শেখানোর দক্ষতা আছে।
  • যদি ঈশ্বর অনুমতি দিতেন যে ‘সবাই নিজের উঠানে উৎসর্গ দেয়’ তবে তা খুব তাড়াতাড়ি দেবতা পূজা, শিক্ষার অভাব, আইন-কানুন না জানা ও পালন না করা এবং ইস্রায়েলের একতা ভাঙ্গার দিকে পরিণত হত।
  • তাই যর্দনের পাড়ে একটি বেদী তৈরি করা হল একটি ঝামেলার বিষয় ও আইন-কানুন ভাঙ্গার সম্ভাবনা।

যিহোশূয় ২২:১১-১২             পশ্চিম বংশদের প্রতিক্রিয়া

‘বাকী ইস্রায়েলীয়েরা যখন শুনল যে, তাদের জায়গায় কনান দেশের সীমায় যর্দন এলাকার নদীর কাছে তারা একটা বেদী তৈরী করেছে, ১২তখন বাকী ইস্রায়েলীয়েরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার জন্য শীলোতে জড়ো হল।’

বেদীর কথা শুনে পশ্চিমের বংশগুলির প্রতিক্রিয়া কি?

  • তারা পূর্বের আড়ায় বংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য শিলোতে একত্রিত হয়।
    কেন তাদের প্রতিক্রিয়া এত জরুরী ও শক্তিশালী?
  • তারা ভয় করে যে পূর্বের বংশগুলি এত তাড়াতাড়ি (!) আবারও (!) দেবতা-পূজায় লিপ্ত হয়েছে।

তাদের ভয় ঠিক কি?

  • তারা ভয় করে যে পিয়োরের বাল দেবের ঘটনার মত (গণনা ২২:১৭) অথবা আখনের সময়ের মত (যিহোশূয় ৭) ঈশ্বরের ক্রোধ সারা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে উঠবে।
  • তারা ভয় করে যে ঈশ্বর তাদের বিচার করবেন, তারা দুর্বল হয়ে পরাজিত হবে, তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ হারাবে ও জাতির একতা ভেঙ্গে যাবে।

যিহোশূয় ২২:১৩-১৪              পশ্চিম বংশগুলো একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়

‘তারা পুরোহিত ইলিয়াসরের ছেলে পীনহসকে গিলিয়দে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের কাছে পাঠাল। ১৪ তারা তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন করে মোট দশজন নেতাকে পীনহসের সংগে পাঠাল। এই দশজনের প্রত্যেকে ছিলেন ইস্রায়েলীয় বংশের কর্তা।’

পশ্চিমের বংশগুলো কিভাবে শুরু করে?

  • যদিও তারা একত্রিত হয়েছে পূর্বের বংশগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তারা সিদ্ধান্ত নেয় আগে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে: পীনহস (যিনি বর্তমানে মহাপুরোহিত) এবং প্রত্যেক বংশ থেকে একজন নেতা।
  • পীনহসকে প্রতিনিধি হিসাবে পাঠানো হল ভাল বুদ্ধি কারণ সমস্ত বংশের আত্মিক নেতা হিসাবে তিনি সবার প্রতিনিধি, তিনি আইনও জানেন, চেতনাও দিতে পরেন এবং তিনি আগের একটি গল্পে নিজেকে প্রমাণিত করেছেন (গণনা ২৫)।
  • প্রত্যেক বংশ থেকে একজন নেতা নেওয়া ও বুদ্ধির কাজ, হুমকিসরূপ একটি অতি বড় দল নয় বরং ১১ জন প্রতিনিধি। দলটি ‘কিছু বিরক্ত প্রতিবেশী মাত্র নয় বরং একটি গুরুত্বের সঙ্গে পছন্দ করা প্রতিনিধি দল।

যিহোশূয় ২২:১৫-২০              দোষারোপ ও প্রস্তাব

‘তাঁরা গিলিয়দে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের কাছে গিয়ে বললেন, ১৬ “সদাপ্রভুর সমাজের সকলেই বলছেন, ‘আপনারা কেমন করে এইভাবে ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন? কেমন করে আপনারা আজ সদাপ্রভুর পথ থেকে সরে গেলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজেদের জন্য এই বেদী তৈরী করলেন? ১৭ পিয়োরে আমরা যে পাপ করেছিলাম তার জন্য সদাপ্রভুর সমাজের লোকদের মধ্যে মড়ক দেখা দিয়েছিল; আজও আমরা সেই পাপ থেকে নিজেদের শুচি করি নি। সেই পাপের ফলে কি আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা হয় নি যে, ১৮ এখন আবার আপনারা সদাপ্রভুর পথ থেকে সরে যেতে চাইছেন? আজকে যদি আপনারা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন তবে কালকেই তিনি আমাদের গোটা ইস্রায়েলীয় সমাজের উপর ক্রোধ প্রকাশ করবেন। ১৯ যে দেশ আপনাদের অধিকারে রয়েছে তা যদি অশুচি হয়ে গিয়ে থাকে তবে আপনারা পার হয়ে সদাপ্রভুর দেশে আসুন। এখানে সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বু রয়েছে। আপনারা আমাদের সংগেই বাস করুন। কিন্তু আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেদী ছাড়া আর কোন বেদী নিজেদের জন্য তৈরী করে সদাপ্রভুর এবং আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন না। ২০ যে সব জিনিস ধ্বংসের অভিশাপের অধীন ছিল সেই সম্বন্ধে সেরহের ছেলে আখন অবিশ্বস্ত হয়েছিল বলে সদাপ্রভুর ক্রোধ কি গোটা ইস্রায়েল সমাজের উপর পড়ে নি? সে তো তার পাপের জন্য একা মারা যায় নি।’

পাঠানো দলের লোকেরা কি করে?

  • তারা দ্বন্দ্বের বিষয়টি তুলে ধরে: একটি বেদী তৈরি করা হয়েছে।
  • তারা তাদের ব্যাখ্যা দেন: তারা পশ্চিমের বংশগুলোর দোষ ধরে যে তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
  • তারা সাবধাণবাণী দেন, ধমক দেন, ব্যাখ্যা করেন, ফলাফল কি হবে, তা বুঝান ও অনুরোধ করেন।
  • তারা তাদের চিন্তা, দুশ্চিন্তা ও ভয় খোলামেলাভাবে বলেন। তারা সরাসরিভাবে, সৎভাবে ও গুরুত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সে আশায় যে তারা পশ্চিমের বংশগুলোকে রাজী করাতে পারে।
  • তারা আগের সমস্যার গল্প স্মরণ করিয়ে দেন (বাল পিয়োর, আখন) এবং তারা ফলাফলের বিষয়ে আলোচনা করে।
  • তারা একটি ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তাব দেয়: তারা পাপ হতে দেওয়ার চেয়ে তাদের জমি পশ্চিম বংশগুলির সাথে শেয়ার করতে রাজি। এই প্রস্তাবে প্রমাণিত যে তাদের উদ্দেশ্য ভাল: যত কষ্ট হোক, তারা পাপের প্রতিরোধ করবেন।
  • তারা বেশ ভাল করেছেন। শুধুমাত্র এক বিষয় সমস্যা: তারা বেদী তৈরির কারণ জিজ্ঞাসা করার চেয়ে দোষ ধরেছেন।

যিহোশূয় ২২:২১-২৯                        পশ্চিমের বংশরা নিজের আচরণ ব্যাখ্যা করে

‘এই কথা শুনে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকেরা এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকেরা উত্তরে ইস্রায়েলীয় বিভিন্ন বংশের কর্তাদের বলল, ২২ “সর্বমহান ঈশ্বর সদাপ্রভু! সর্বমহান ঈশ্বর সদাপ্রভু! তিনি তো জানেনই আর ইস্রায়েলীয়েরাও জানুক। এটা যদি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহ কিম্বা অবাধ্যতার কাজ হয়ে থাকে তবে আপনারা আজকে আমাদের রেহাই দেবেন না। ২৩ যদি আমরা সদাপ্রভুর পথ থেকে সরে যাবার জন্য এবং পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ কিম্বা যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার উদ্দেশ্যে নিজেদের জন্য এই বেদী তৈরী করে থাকি তবে সদাপ্রভু নিজেই আমাদের শাস্তি দিন। ২৪ “আমরা এই বেদীটা তৈরী করেছি এই ভয়ে যে, হয়তো বা কোনদিন আপনাদের বংশধরেরা আমাদের বংশধরদের বলবে, ‘ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সংগে তোমাদের কি সম্বন্ধ? ২৫ রূবেণীয় ও গাদীয়েরা, সদাপ্রভু তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে যর্দন নদীকে সীমানা হিসাবে রেখেছেন। সদাপ্রভুর উপর তোমাদের কোন দাবি নেই।’ এইভাবে হয়তো আপনাদের বংশধরেরা সদাপ্রভুর প্রতি আমাদের বংশধরদের ভক্তির মনোভাব নষ্ট করে দেবে। ২৬ “কাজেই আমরা বলেছিলাম, ‘এস, আমরা একটা বেদী তৈরী করি।’ কিন্তু সেটা কোন পোড়ানো-উৎসর্গ কিম্বা অন্যান্য পশু-উৎসর্গের উদ্দেশ্যে নয়। ২৭ এটা আপনাদের ও আমাদের মধ্যে এবং আমাদের বংশধরদের মধ্যে এই সাক্ষ্যই দেবে যে, আমরা সদাপ্রভুর সামনেই আমাদের পোড়ানো-উৎসর্গ ও অন্যান্য পশু-উৎসর্গ এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তাঁর উপাসনা করব। তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের বংশধরেরা আমাদের বংশধরদের এই কথা বলতে পারবে না, ‘সদাপ্রভুর উপর তোমাদের কোন দাবি নেই।’ ২৮ “আমরা ভেবেছিলাম যে, তারা যদি আমাদের বা আমাদের বংশধরদের ঐ কথা বলে তবে তার উত্তরে আমরা বলব, ‘সদাপ্রভুর বেদীর মত দেখতে অবিকল এই বেদীটার দিকে তোমরা চেয়ে দেখ। পোড়ানো-উৎসর্গ এবং অন্যান্য পশু-উৎসর্গের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা এটা তৈরী করেন নি কিন্তু করেছিলেন তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এটা যেন একটা সাক্ষী হয়ে থাকে।’ ২৯ “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর সামনে যে বেদী আছে সেটা ছাড়া পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ এবং অন্যান্য পশু-উৎসর্গ করবার জন্য অন্য কোন বেদী তৈরী করে আমরা যে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে তাঁর পথ থেকে আজ সরে যাব তা আমাদের কাছ থেকে দূরে থাকুক।’

পশ্চিমের বংশগুলোর উত্তর কি?

  • প্রথম তারা সদাপ্রভুকে ঈশ্বর হিসাবে স্বীকার করে।
  • তারা ঈশ্বরকে ডেকে বলে তিনি জানেন তাদের উদ্দেশ্য আসলে কি ছিল। তারা ঈশ্বরের ক্রোধ মেনে নিতে রাজী যদি আসলে তারা করতেন যা দোষারোপ করা হয়েছে। তারা দাবী করে যে তারা কিন্তু তা করে নি।
  • তারা ব্যাখ্যা করে বেদী তৈরির জন্য তাদের উদ্দেশ্য আসলে কি ছিল।
  • তারা পশ্চিম বংশদের বিচারের সাথে একমত যে উৎসর্গের উদ্দেশ্যে বেদী বড় পাপ।
  • কিন্তু তারা দাবী করে যে এই উদ্দেশ্যে তারা বেদীটি তৈরি করে নি।
  • তারা খোলামেলাভাবে বলে তাদের চিন্তা, যুক্তি ও উদ্দেশ্য কি ছিল।

কিভাবে তারা পীনহসকে সন্তুষ্ট করে?

  • ঈশ্বরকে ডাকা, পশ্চিম বংশগুলোর উপসংহারে রাজী হওয়া, পশ্চিম বংশগুলোর চিন্তা মিথ্যা হিসাবে প্রমাণ করা এবং খোলামেলাভাবে তাদের চিন্তা ও যুক্তি শেয়ার করার মাধ্যমে তারা পীনহসকে সন্তুষ্ট করে।
  • তারা সহজেই অপমানিত হয় না, তারা মাথা গরম করে না, তারা প্রমাণ ছাড়া উল্টা উপসংহারে নামে না।

তাদের উত্তর কিভাবে দ্বন্দ্বের বিষয়ে পার্থক্য তৈরি করে?

  • কোন উদ্দেশ্যে একটি কাজ করা হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ।
  • যেহেতু সবার উদ্দেশ্য ভাল ছিল তারা এখানে আইন অতি আক্ষরিকভাবে প্রয়োগ করে না, ও সবাই তাতে একমত।

যিহোশূয় ২২:৩০-৩১             পশ্চিমের বংগুলি পূর্ব বংশগুলোর ব্যাখ্যা গ্রহণ করে

‘রূবেণ, গাদ ও মনঃশি-গোষ্ঠীর লোকেরা পুরোহিত পীনহস এবং ইস্রায়েলীয় সমাজের নেতাদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয় বংশগুলোর কর্তাদের যা বলল তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট হলেন। ৩১ পুরোহিত ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস তাঁদের বললেন, “আজকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, সদাপ্রভু আমাদের সংগেই আছেন, কারণ আপনারা এই ব্যাপারে সদাপ্রভুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করেন নি। আপনারা সদাপ্রভুর হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের বাঁচালেন।’

যখন পাঠানো দল শিলোতে ফিরে ও শেয়ার করে কি ব্যাখ্যা ও ব্যবহার তারা পেয়েছে, পশ্চিমের বংশগুলির প্রতিক্রিয়া কি?

  • তারা দলের কথা ও ব্যাখ্যা বিশ্বাস করে ও সত্য হিসাবে গ্রহণ করে।
  • তারা তাদের সন্দেহ, অবিশ্বাস ও নেতিবাচক উপসংহার ধরে রাখে না বরং উপযুক্ত ব্যাখ্যা শুনে তারা তা গ্রহণ করতে রাজী।
  • তারা ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট ও তারা আনন্দ প্রকাশ করে। তারা খুশি: যে মন্দ তারা মনে করেছে সে মন্দ হয় নি।
  • যুদ্ধে নামার জন্য তাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল, তাই তারা বিশ্বাস করতে পারে যে অন্যদের উদ্দেশ্যও ভাল ছিল, যদিও ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। নতুন নিয়মে যেমন বলা হয়: ভালবাসা “মন্দ কিছু নিয়ে আনন্দ করে না বরং যা সত্য তাতে আনন্দ করে” (১ করি ১৩:৬)।

যিহোশূয় ২২:৩২-৩৪           দ্বন্দ্ব সম্পূর্ণ সমাধান হয়

‘এর পর ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস এবং নেতারা গিলিয়দে রূবেণীয় ও গাদীয়দের কাছ থেকে কনান দেশে ফিরে গিয়ে সব কথা ইস্রায়েলীয়দের জানালেন। ৩৩ তা শুনে তারা খুশী হল এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিল। রূবেণীয় এবং গাদীয়েরা যে দেশে বাস করত তা ধ্বংস করে দেবার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার কথা তারা আর বলল না। ৩৪ রূবেণীয় ও গাদীয়েরা সেই বেদীটার নাম দিল, “আমাদের মধ্যে এটাই হল সাক্ষী যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।”’

পশ্চিমের বংশগুলির প্রতিক্রিয়া কি?

  • পাঠানো দল যেমন প্রতিক্রিয়া করেছেন, তেমন পশ্চিমের বংশগুলির লোকেরাও প্রতিক্রিয়া করে: তারা পূর্বের বংশগুলিকে বিশ্বাস করে, তাদের আচরণের ব্যাখ্যা গ্রহণ করে ও সন্তুষ্ট হয়।
  • তারা ঈশ্বরকে প্রশংসা করে ও যুদ্ধের পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়।


বংশদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের উপর ঘটনাটি কি প্রভাব ফেলবে?

  • তারা তাড়াহুড়া বিচার করা নিয়ে আরো সাবধান হবে, যুদ্ধের আগে যোগাযোগ করা ও অন্যদের উদ্দেশ্য জেনে নেওয়ার গুরুত্ব শিখবে।


আমরা এই গল্প থেকে কি শিখতে পারি?

  •  অন্যরা একটি কাজ কোন উদ্দেশ্যে করে তা নিয়ে ভুল ধারণা করা সহজ, তাই সাবধান থাকা দরকার।
  •  দোষারোপ করা বা আক্রমণ করার আগে সরাসরি যোগাযোগ করা, জিজ্ঞাসা করা ও বুঝতে চেষ্টা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
  •  অন্য পাশ থেকে ব্যাখ্যা শুনলে একটি গল্পের ভাব বা আচরণের অর্থ সম্পূর্ণ অন্যভাবে দেখা দিতে পারে।