শিক্ষা ০৭ – গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গী বনাম বাইবেলীয় দুষ্টিভঙ্গী

 
আধুনিক পশ্চিমা দেশের সংস্কৃতির দুইটি শিকড়
  • ইউরোপে (এবং তা দ্বারা আমেরিকা ও বিভিন্ন উপনিবেশে) দর্শনের দুইটি বড় শিকড় আছে: বাইবেলীয় চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি এবং গ্রীক চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি।
  • এই দুইটি দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বিষয়ে একেবারে বিপরীত এবং পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্বে আছে।
  • সারা ইতিহাসে দেখা যায় যে ইউরোপ এই দুই শিকড়ের মধ্যে দুলছে, এক সময় বেশি একদিকে, অন্য সময় বেশি ঐদিকে। বর্তমানে যুগে ইউরোপীয় সংস্কৃতি আবার গ্রীক চিন্তার দিকে যাচ্ছে।
 
গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি বা গ্রীক দর্শন
  • গ্রীসের সোনার যুগের গ্রীকরা জ্ঞানকে অনেক প্রাধান্য দিত। তারা জ্ঞান, প্রজ্ঞার ও দর্শনের প্রশ্ন নিয়ে আগ্রহের সঙ্গে যুক্তি-তর্ক করত।
  • গ্রীকরা জ্ঞান, বুদ্ধি, যুক্তি, কথা বলার ক্ষমতা ও দক্ষতা পছন্দ করত।
  • পৌল যখন এথেন্স শহরে ছিলেন তখন তিনি এই মনোভাবের সম্মুখীন হলেন যখন আরোপাগ নামে একটি যুক্তি-তর্ক করার স্থানে গ্রীকদের সাথে কথা বলেন: ‘তখন ইপীকুরীয় ও স্তোয়িকীয় দলের কয়েকজন শিক্ষক পৌলের সংগে তর্ক জুড়ে দিলেন’ (প্রেরিত ১৭:১৮)।
  • প্রেরিতের লেখক মন্তব্য করেন: ‘তাঁরা এই কথা বললেন কারণ এথেন্সের সব লোকেরা এবং সেই শহরে যে বিদেশীরা থাকত তারা কেবল নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলে এবং শুনে সময় কাটাত’ (প্রেরিত ১৭:২১)।
  • পৌল ১ করিন্থীয় চিঠিতে এই ধরণের চিন্তার বিরুদ্ধে বলেন যে মানবীয় (গ্রীক) প্রজ্ঞা চালাক হতে চায়, নিজেকে ভালভাবে উপস্থাপনা ও প্রশংসা আকৃষ্ট করতে চায়। কিন্তু ঈশ্বরকে জানা, অন্যদের সেবা করা ও একতা রক্ষা করার দিকে এই প্রজ্ঞার কোনো মন নেই।
  • ১ করিন্থীয় চিঠিতে পৌল তার শ্রোতাদেরকে ১০০এর চেয়েও বেশি চেতনা দায়ক প্রশ্ন করে তাদের চ্যালেঞ্জ করেন যে যত আত্মিক দান (এবং অহংকার!) থাকুক না কেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটা – প্রেম – তাদের নেই।
  • তিনি শক্তির সঙ্গে দাবী করেন যে খ্রিষ্টই হলেন আসল প্রজ্ঞা: ‘যিহূদীরা চিহ্ন হিসাবে আশ্চর্য কাজ দেখতে চায়, গ্রীকেরা জ্ঞানের খোঁজ করে, কিন্তু আমরা ক্রুশে দেওয়া খ্রীষ্টের কথা প্রচার করি। সেই কথা যিহূদীদের কাছে একটা বাধা আর অযিহূদীদের কাছে মূর্খতা, কিন্তু যিহূদী হোক আর গ্রীকই হোক, ঈশ্বর যাদের ডেকেছেন তাদের কাছে সেই খ্রীষ্টই ঈশ্বরের শক্তি আর ঈশ্বরের জ্ঞান।’  (১ করি ১:২২-২৪)।

 

দ্বৈতবাদ বা দ্বিখণ্ডিত চিন্তা (Dualism)

  • গ্রীক দার্শনিকরা আত্মা ও আত্মিক বিষয়ের উপরে এত জোর দিত যে তাদের বস্তু জগত ও শরীর সম্বন্ধে একটি নেতিবাচক দৃষ্টি হয়েছিল। তা মনে করলে দুইদিকে প্রয়োগ করা সম্ভব:
    • ‘যা চাই তাই’: যদি বস্তু জগত ও শরীর নিচু ও গুরুত্বহীন বিষয় তবে শরীর নিয়ে যা করি তা আমার আত্মার উপরে প্রভাব ফেলতে পারে না। অনৈতিকতা বা ব্যভিচার সমস্যা নেই কারণ শরীর ও আত্মার কোনো সম্পর্ক-সম্বন্ধ নেই।
    • ‘সন্ন্যাস’: যেহেতু শরীর ও বস্তু জগত খারাপ, আমার আত্মা এই নিচু জগত থেকে মুক্ত করা আবশ্যক যেন আমি আত্মিক হতে পারি এবং আরো আত্মিক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি। তাই শরীরকে দমন ও বশীভূত করা দরকার। কিভাবে? উপবাস করব, ভাল খাবার  খাব না, শরীরকে যন্ত্রণা দেব, যৌন সম্পর্ক ও বিবাহ নিষেধ করব।
  • দার্শনিক প্লেটো: বস্তু জগত হল আত্মিক জগতের চেয়ে নিকৃষ্ট বা নিচু। বস্তু জগত হল আসল আত্মিক জগতের ছায়া মাত্র, ও ঈশ্বর থেকে দূরে। ‘ঈশ্বর’ ব্যক্তি নন বরং একটি নৈর্ব্যক্তিক নীতি বা শক্তি। বস্তু জগত ঈশ্বরের চেয়ে একটি নিচু দেবতা দিয়ে সৃষ্টি। ঈশ্বর যদি বস্তু জগতে প্রবেশ করতেন, তাই তিনি দূষিত হতেন।
  • দার্শনিক অ্যারিস্টটল:  ঈশ্বর এমন উঁচু ও দূরে যে তিনি বস্তু জগত সম্বন্ধে কিছু জানেন না। এই চিন্তা থেকে একটি শক্তিশালী দ্বৈতবাদ সৃষ্টি হয়: এক পাশে আত্মিক জগত (যা ভাল, বাস্তব, গুরুত্বপূর্ণ, নিখুঁত, যোগ্য ও কমনীয়) এবং ওপাশে বস্তু জগত (যা মন্দ, কম বাস্তব ও গুরুত্বহীন)। তাই মানুষের উদ্দেশ্য হল এই বস্তু জগত থেকে আত্মিক জগতে পালানো।
  • গ্রীকরা বিশ্বাস করত যে আত্মা মরণশীল নয়। মৃত্যুর পরে আত্মা আকাশে উঠে ও তারার মত উজ্জ্বল হয়ে যায়। পৌল যখন যীশুর শারীরিক পুনরুত্থান নিয়ে কথা বলে, গ্রীকরা তা গ্রহণ করতে চায় না। তাদের চিন্তা যে শারীরিক পুনরুত্থান হল অসম্ভব এবং চাওয়ার মত কিছু না: আত্মিক জগত যদি আসল হয়, কে চিরকাল পর্যন্ত থাকা একটি শরীর চাইবে?
 
‘জ্ঞান’ মানে কি?

গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিতে জ্ঞান

  • গ্রীক দর্শন অনুসারে জ্ঞান পাওয়া হল সর্বোচ্চ লক্ষ্য ও সম্মানের বিষয়। জ্ঞানকে দেবতার মত দেখা হত। তথ্য জানা যথেষ্ট। জ্ঞান লাভ করার পদ্ধতি হল যুক্তি, বিচার বুদ্ধি ও কারণ-ফলাফল বুঝা।
  • গ্রীক দর্শনের ছিল দ্বিখণ্ডিত চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি: সব বিষয়গুলি দুই ভাগে ভাগ করা হত ও মনে করা হত যে সে দুইটি ভাগের মধ্যে সম্পর্ক-সম্বন্ধীয় নেই। এক ধরণের বিষয়গুলি অন্য বিষয়গুলির উপরে প্রভাব নেই। যেমন: আত্মা ও শরীর আলাদা।
  • মধ্যযুগের পণ্ডিত থোমাস্ আকুইনাস (Thomas Aquinas) বলছিলেন: ‘প্রকাশ রবিবারের জন্য, যুক্তি সোমবারের জন্য’, যাতে সে একই দ্বিখণ্ডিত চিন্তা প্রকাশিত।
  • গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি মণ্ডলীর উপরে একটি শক্তিশালী ও ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছে (সে যুগে এবং আজ পর্যন্ত) এবং ফলে সে দ্বিখণ্ডিত চিন্তা (আত্মা = ভাল, বস্তু জগত বা শরীর = খারাপ) এখনও প্রচলিত।

বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে জ্ঞান

  • বাইবেলীয় চিন্তা বলে: জ্ঞান = জানা = বিশ্বাস করা = করা = অনুশীলন করা = অভিজ্ঞতা করা = ভালবাসা = শারীরিক মিলন। কেরী অনুবাদে তা দেখা যায়: ‘সে তার স্ত্রীর পরিচয় লইলেন’
  • বাইবেলীয় চিন্তা কোন বিষয় আলাদা মনে করে না। সব কিছু একই বাস্তবতার অংশ, সব কিছুর মধ্যে সম্পর্ক আছে, সব কিছু সব কিছুর উপরে প্রভাব ফেলে।
  • বাইবেলীয় চিন্তা অনুসারে ‘জানা’ ও ‘পালন করার’ মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, মতবাদ ও অনুশীলনের মধ্যে কোন তফাৎ নেই।বাইবেলীয় চিন্তা বলে: যদি আপনি একটি নীতি পালন না করেন, তবে সে নীতি আপনি জানেনও না, বুঝেনও নি। যিহূদীরা জীবনে কোনো ‘ভাগ’ দেখত না বরং সব কিছুর সম্পর্ক-সম্বন্ধীয় আছে।

সারাংশ

  • গ্রীক চিন্তা বলে: জ্ঞান = জানা = এই সম্বন্ধে জানা = তথ্য জানা (মনের বিষয় মাত্র)।
  • বাইবেলীয় চিন্তা বলে: জ্ঞান = জানা = বিশ্বাস করা = করা = অনুশীলন করা = ভালবাসা (জীবনের বিষয়)।
 
‘প্রজ্ঞা’ মানে কি?

গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রজ্ঞা

  • গ্রীক শব্দ ‘প্রজ্ঞা’ হল ‘সোফিয়া’ (Sophia)। ‘দর্শন’, – ইংরেজিতে ‘ফিলসফি’ (Philosophy), – মানে ‘সোফিয়াকে ভালবাসা’ মানে ‘প্রজ্ঞাকে ভালবাসা’।
  • প্রজ্ঞা, জ্ঞান, শিক্ষা, পড়াশুনা, যুক্তি, বিচার-বুদ্ধি, যুক্তি-তর্ক ও কথা বলার ক্ষমতায় অনেক গুরুত্ব ও সম্মান দেওয়া হয়। প্রজ্ঞা মানে বুদ্ধি, জ্ঞান, ভাল বিচার-বুদ্ধি ও তর্ক করার ক্ষমতা। তাই প্রজ্ঞা হল দক্ষতার বিষয়।
 

বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রজ্ঞা

  • প্রজ্ঞা মানে ভাল-মন্দ বুঝা, সত্য-মিথ্যা বুঝা এবং যা ভাল ও সৎ তা পছন্দ ও পালন করা। তাই প্রজ্ঞা হল চরিত্রের বিষয়।
  • প্রজ্ঞা একটি ভাল, কার্যকর, ফলবান ও উপকারী জীবন করা। প্রজ্ঞা অন্যদের সঙ্গে আচরণ ও ব্যবহারে প্রকাশিত। প্রজ্ঞা হল নৈতিক ও ব্যবহারিক প্রজ্ঞা বাস্তব জীবনে প্রমাণিত।
 

সারাংশ

  • গ্রীক চিন্তা বলে: প্রজ্ঞা = জ্ঞান, বুদ্ধি, যুক্তি।
  • বাইবেলীয় চিন্তা বলে: প্রজ্ঞা = ভালটা পছন্দ করা।
 
ভালভাবে কথা বলার ক্ষমতা

গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি

  • একজন কিভাবে কথা বলে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: সুন্দর, আরামপ্রদ, উঁচু শিক্ষিত ভাবের শব্দের ব্যবহার, সাবলীলতা, বাগ্মিতা, ভাল গ্রীক বলার স্টাইল, ঝকঝকে ভাব, কৃত্য উক্তি, বুদ্ধি দেখানো, যুক্তি-তর্কের ক্ষমতা।
  • গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘কিভাবে বলব?’ তা হল ‘কি বলব’ এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘ভালভাবে বলা হয়েছে?’ তা হল ‘যা বলা হয়েছে তা সত্য?’ তাই সত্যের চেয়ে উপস্থাপনাই গুরুত্বপূর্ণ। যা বলা হয় তা হতে হয় নতুন, ভিন্ন, আকর্ষণীয়, স্মার্ট, বুদ্ধি সুড়সুড়ি, ভালভাবে উপস্থাপিত, মনকে চ্যালেঞ্জ করার মত।
  • আবারও: প্রেরিতের লেখক তার বর্ণনা দেন প্রেরিত ১৭:২১ পদে ‘তারা এই কথা বললেন কারণ এথেন্সের সব লোকেরা এবং সেই শহরে যে বিদেশীরা থাকত তারা কেবল নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলে এবং শোনে সময় কাটাত’

বাইবেলীয় দুষ্টভঙ্গি

  • সত্যই প্রাধান্য পায়। ‘কিভাবে বলা হয়েছে?’ তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: ‘কথা সত্যি কিনা?’
  • কথার অর্থ ও সত্য হল কথা বলার ধরণ ও উপস্থাপনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে বাইবেলে চমৎকার কথা বলার ধরণ পাওয়া যায় না। আসলে বাইবেলের ইষ্টের, রূত ও আদিপুস্তকে যোষেফের গল্প হল চমৎকারভাবে বলা গল্প। ইয়েব পুস্তক হল একটি সুন্দর সাজানো নাটকের মত। গীতগুলো হল শক্তিশালী ও আবেগপ্রবণ কবিতা। নহূম পুস্তক সম্বন্ধে বলা হয় যে তা পুরাতন নিয়মের সবচেয়ে চমৎকার পদ্য। ভাববাদীরা আবেগপূর্ণ শব্দ, প্রাণবন্ত বর্ণনা, শক্তিশালী রূপক ও বিভিন্ন নাটকীয় লেখার ধরণ ব্যবহার করেন যেন তারা তাদের শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে।
সৌন্দর্য

গ্রীক দৃষ্টভঙ্গি

  • সৌন্দর্য হল প্রাথমিকভাবে বাহ্যিক বিষয়: সুন্দর একটি মুখ, প্রতিসাম্য আকৃতি, ভাবভঙ্গি ও শরীরের গঠন।
  • সৌন্দর্য হল চেহারার, উপস্থাপনার বা দক্ষতার বিষয়।
  • সৌন্দর্যের একটি মাত্র মানদণ্ড আছে – যদি একজনের চেহারা তবে সে সুন্দর, অন্য চেহারা থাকলে সে সুন্দর না।
  • বয়স বাড়লে সৌন্দর্য কমে যায়।
  • গ্রীকরা বিশ্বাস করত যে একজন বিকালঙ্গ মানুষের মধ্যে অবশ্যই একটি মন্দ প্রাণ বাস করে।
 

বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গি

  • সৌন্দর্য হল প্রাথমিকভাবে অন্তরের বিষয়: ঈশ্বরীয় চরিত্র, ভাল মনোভাব, নম্রতা, প্রজ্ঞাপূর্ণ ব্যবহার।
  • সৌন্দর্য প্রকাশিত একজনের স্বভাব চরিত্রে, মনোভাবে ও আচরণে। প্রজ্ঞা, নম্রতা, দয়া ও বিশ্বাসযোগ্যতাই সুন্দর।
  • সৌন্দর্যের বিভিন্ন প্রকাশ আছে, যে কোন মানুষ সুন্দর মনোভাবের মানুষ হতে পারে।
  • একজনের মুখের বা শরীরের সৌন্দর্য বেশি বা কম থাকুক, বয়স যত বাড়বে তার মনোভাব ও চরিত্র তার মুখে প্রকাশ পাবে।
  • অবশেষে মিশুক ও দয়ালু মুখ হল সুন্দর মুখ।
  • সৌন্দর্য সময়ের সাথে বাড়তে পারে।
  • যীশু হলেন সর্বোচ্চ আদর্শ কিন্তু চারটি সুসমাচারে আমরা তাঁর মুখের বা চেহারার একটাও বর্ণনা পাই না।
কোথায় প্রাধান্য বা গুরুত্ব দেওয়া হয়?

গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়:

বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়:

সৌন্দর্যচরিত্র
চেহারাঅন্তর
দান, দক্ষতামনোভাব, আচরণ
তালন্ততালন্তের ব্যবহার
কথা বলার বা তর্ক করার ক্ষমতাসত্য
তর্ক করার ক্ষমতাসত্য জানার আকাঙ্ক্ষা
বাইরের চেহারাঅন্তরের চেহারা
আকার বা যেমন দেখা দেয়যেমন আসলে হয়
উপস্থাপনাবাস্তবতা
সুনামসততা বা বিশুদ্ধতা
পদ, পদমর্যাদাযোগ্যতা
প্রশংসা বা মানুষ যা ভাল বলেঅনুমোদন বা যা আসলে ভাল হয়
বুদ্ধিইচ্ছুক মন
যুক্তিপ্রকাশ
মতবাদঅনুশীলন
দক্ষতাবাধ্যতা, নৈতিকতা
নিষ্পাদন, সম্পাদনবিশ্বস্ততা
চালাকিসমর্পণ
চোখ, ছবি, দৃশ্যকান, কথা, অদৃশ্য
এখন, বর্তমানসব সময়, অনন্ত
 
গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাবিত করিন্থীয় মণ্ডলী

গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি যখন খুব প্রভাব ফেলে তখন বিশ্বাসীদের মধ্যে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তার একটি উদাহরণ আমরা পাই যখন আমরা পৌল ও করিন্থীয় মণ্ডলীর গল্প দেখি। অনেক করিন্থীয় বিশ্বাসীদের পৌলের বিষয়ে সংকোচ ছিল। তারা পৌলের প্রৈরিতিক অধিকার নিয়ে আপত্তি উঠাল:

  • পৌল, তেমন ‘আত্মিক’ নন, তার তেমন প্রজ্ঞাও নেই।
  • পৌলের কথা বা উপস্থাপনা তেমন ভাল নয় (১ করি ২;৪, ২ করি ১০:১০)। হতে পারে পৌল গ্রীক ধরণের উপস্থাপনা বা যুক্তি-তর্ক করতেন না বা কম করতেন। অন্য চমৎকার বক্তার চেয়ে (যেমন আপল্লো) পৌলের কথা বলার ক্ষমতা কম ছিল (প্রেরিত ১৮:২৪-২৮, ১ করি ৩:৪-৯)।
  • বিখ্যাত গ্রীক শিক্ষকরা শিক্ষার জন্য টাকা দাবী করত, একজন শিক্ষক যত ভাল তত বেশি টাকা দাবী করতে পারত। পৌল টাকা নেন নি বলে কেউ কেউ বলত যে তার শিক্ষার মান কম (১ করি ৯)। তিনি পরিবর্তে নিজের হাতের কাজ দিয়ে আয় করত (তাম্বু সেলাই) যা অনেক করিন্থীয়রা নিচু চোখে দেখত (প্রেরিত ১৮:১-২)
  • পৌল কষ্টভোগ করত, যা গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে একজন সত্যি আত্মিক লোকের করা প্রয়োজন হবে না।
  • গ্রীক চিন্তার ফলে করিন্থীয় মণ্ডলীতে বিভিন্ন শিক্ষকের চারিদিকে দল সৃষ্টি হয়েছিল, ফলে মণ্ডলীতে তুলনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও একতার অভাব দেখা দিত (১ করি ১:১২)। পৌলের সাথে মণ্ডলীর সম্পর্ক প্রভাবিত হল (যেমন ১ করিন্থীয় চিঠিতে বুঝা যায়)।
  • পৌলের দ্বিতীয় দর্শনে আরো সমস্যা দেখা গেল। সম্পর্ক আবার ঠিক করার জন্য পৌল সহকর্মী তীতকে তাদের কাছে পাঠান এবং ২ করিন্থীয় চিঠি লিখেন।
  • করিন্থীয় মণ্ডলীর বিশ্বাসীরা আত্মিক দান, প্রজ্ঞা ও চমৎকার বক্তৃতায় এমন গুরুত্ব দিত যে তারা পৌলের নম্রতা ও ত্যাগ স্বীকারের জীবন নিচু চোখে দেখত। ফলে মণ্ডলীতে বিভেদ, অহংকার, তুলনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অনৈতিকতা দেখা দিল।
 
প্রয়োগ
  • এই যুগে আমাদের সংস্কৃতি গ্রীক চিন্তার দিকে ঝুঁকে পড়ে: আমরা সৌন্দর্য, দান-দক্ষতা ও উপস্থাপনাকে অনেক গুরুত্ব দেই।
  • যদি আমরা না জানি বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গি কি, আমরা গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গির চাপ এড়িয়ে যেতে পারব না, প্রতিরোধও করেত পারব না।