সরকার ০১ – নেতা নিযুক্তকরণ

দ্বিতীয় বিবরণ: মোশির বিদায়কালীন বক্তৃতা

মৃত্যুর আগে মোশি ইস্রায়েলের কাছে শেষ কথাগুলি বলেন এবং তাদের চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ দেন। এর লিখিত রেকর্ড হল ‘দ্বিতীয় বিবরণ’। মোশির লিখিত পুস্তকগুলির মধ্যে দ্বিতীয় বিবরণ হল শেষ পুস্তক ও আগের পুস্তকের একটি সারাংশ। মোশি ইস্রায়েলীয়দের তাদের ইতিহাস স্মরণ ও আগে ঈশ্বরের দ্বারা দেওয়া নিয়ম-কানুনের পুনরালোচনা করেন। মরুভূমিতে ইস্রায়েলের প্রথম প্রজন্ম মারা যাওয়ার পরে মোশি ২য় প্রজন্মের সাথে ঈশ্বরের চুক্তি স্থাপন করেন: দ্বিতীয় বিবরণ হল এই চুক্তির দলিল। ৩০ অধ্যায় হল পুস্তকের শীর্ষ অধ্যায়।

সরকারের প্রয়োজনীয়তা ও সরকারের উদ্দেশ্য – ২য় বিবরণ ১:৯ ও ১:১২
  • এটা খুবই স্বাভাবিক যে খারাপ উদ্দেশ্য না থাকলেও লোকদের মধ্যে ঝগড়া ও দ্বন্দ থাকবে। আর খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে সেখানে তো এগুলি নিশ্চিতভাবে হবেই।
  • ঈশ্বর দাবি করেন নি ‘ঝগড়া না হোক’। কিন্তু ঈশ্বর দাবি করেন যে একটি সমাজে ন্যায় বিচার অবশ্যই পাওয়া যাক।
  • সরকারের প্রধান কাজ বা উদ্দেশ্য হল লোকদের জন্য ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করা। একটি সমাজে ন্যায় বিচার থাকা = আইনের প্রয়োগ = আইন-শৃঙ্খলা।
  • ন্যায় বিচার এবং আইন-শৃঙ্খলা = ‘মন্দ লোকদের সীমিতকরণ এবং ভাল লোকদের শান্তিতে বাস করতে দেওয়া’।
  • সমস্যা: একজন বিচারক কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি। এতে বিচার করতে করতে মোশি ক্লান্ত হন এবং এতে ইস্রায়েলীরা দেরীতে বিচার পায়।
  • ন্যায় বিচার পেতে হলে যদি অতিরিক্ত সময় লাগে তা নতুন অন্যায় সৃষ্টি করে। উদাহরণ: ঝুলে থাকা মামলা বা আসামীকে বহুদিন ধরে রাখা যদিও তার দোষ প্রমাণিত হয় নি।
  • বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘দেরী বিচার মানে অন্যায় বিচার’।
  • কিন্তু বিপরীত সমস্যাও আছে: তাৎক্ষণিক বিচার হলে তা নতুন অন্যায় সৃষ্টি করে। উদা: সঠিক তদন্ত করার সময় নেই, ‘মাথা গরম’ অবস্থায় বিচার, আপীল করার সুযোগ নেই।
  • প্রতিটি দেশে এটাই বড় চ্যালেঞ্জ: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সঠিক ও ন্যায় বিচার দেওয়া।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আরো সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন – ২য় বিবরণ ১:১০-১১
  • ঈশ্বর জনসংখ্যাকে আশীর্বাদ বলেছেন। ঈশ্বর জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেও আশীর্বাদ বলেছেন!
  • আদি ১:২৮ পদে ঈশ্বর মানুষকে আদেশ দিয়েছেন পৃথিবী পরিপূর্ণ করতে। ঈশ্বর কি পরে আদেশটি বাতিল করেছেন? আমরা আজকাল লোকসংখ্যা বৃদ্ধিকে বড় সমস্যা মনে করি।
  • ২য় বিবরণ ১:১০-১১ আদেশটি পুনরায় স্থাপন করেন: ‘ঈশ্বর আরও হাজার গুণ বাড়িয়ে দিন!’
  • সে সময় ইস্রায়েলের লোকসংখ্যা কত ছিল? যাত্রা ১২:৩৭ পদে পাওয়া যায় যে সেই সময় ইস্রায়েলে ৬ লক্ষ পুরুষ ছিল, তাই মহিলা ও বাচ্চা সহ তারা কম পক্ষে ২০ লক্ষ ছিল। হাজার গুণ বৃদ্ধি মানে ২০০ কোটি! এবং এটা এক জাতির কথা মাত্র!
  • খেয়াল করা দরকার যে বেশী জনসংখ্যা নিয়ে আমরা যতটা চিন্তিত ও আতঙ্কিত, ঈশ্বর মোটেও ততটা চিন্তিত বা আতঙ্কিত নন।
  • কিন্তু: জনসংখ্যা বৃদ্ধি হলে অবশ্যই আরও নেতৃত্ব ও সরকার প্রয়োজন যেন ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব হয়।
সরকারের নেতা নিযুক্তিকরণ ২য় বিবরণ ১:১৩
  • মোশি ইস্রায়েলকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, প্রস্থানের পরে তারা কিভাবে নেতা নিযুক্ত করেছিলেন। যাত্রা ১৮:১৩-২৭ পদে ঘটনাটির বর্ণনা পাওয়া যায়।
 
সরকারের ক্ষেত্রে: জনগণ দ্বারা নেতাদের নিযুক্তি আবশ্যক – ২য় বিবরণ ১:১৩
  • ১ম প্রশ্ন: কে নেতা বা সরকারি কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করেন?
  • ১৩ পদে উল্লেখ আছে যে ‘তোমরা নিযুক্ত কর’ এর মানে জনগণ নেতাদের নিযুক্ত করেন। ঈশ্বর নন। মোশিও নন।
  • তাই ঈশ্বর লোকদেরকে শাসন করার অধিকার দেন। লোকেরা তাদের অধিকার কিছু নিযুক্ত নেতাদের হাতে দিতে পারে।
  • সরকারের অধিকার আসলে নীচ থেকে উপরে দেওয়া হয়। জনগণ সরকারকে অধিকার দেয়।
  • একটি সরকারের আসলে কি অধিকার আছে বা একটি সরকার আইনসঙ্গত কিনা, তা কিভাবে বুঝা যায়?
  • যদি লোকেরা সরকারটি চায়। লোকেরা সরকারটি না চাইলে মানে যে সরকারটির অধিকার নেই।
  • অধিকার বনাম ক্ষমতা: একজন সৈনিক প্রধান যিনি সৈন্য দ্বারা দেশের সরকারকে জোর করে বাতিল করেন তার হয়তো এটা করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু তার রাজত্ব করার কোনো অধিকার নেই।
  • কিভাবে বুঝতে পারব লোকেরা কি চায়? সহজ উত্তর: তাদের জিজ্ঞাসা করুন!
  • লোকদের মতামত নিতে হবে, তা ‘আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন’ বা গ্রামের স্থানীয় লোকদের ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ সভা’ যাই হোক না কেন, প্রধান বিষয় হল: সবাইকে জিজ্ঞাসা করা।
  • আরেকটি নীতি এর মধ্যে পাওয়া যায়: একজন লোকের মাত্র একটি ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। কারও ভোট দানের অধিকার অন্যদের চেয়ে বেশী নয়।
সরকারের হতে হয় প্রতিনিধিত্বমূলক – ২য় বিবরণ ১:১৩
  • ২য় প্রশ্ন: লোকেরা কোথা থেকে নেতা নিযুক্ত করবে?
  • ১৩ পদে উল্লেখ আছে ‘প্রত্যেকটা গোষ্ঠী থেকে’ নীতি হল: সরকারকে অবশ্যই প্রতিনিধিত্বমূলক হতে হবে। একটু বিশদভাবে দেখলে বলা যায়: প্রত্যেক গোষ্ঠী, প্রত্যেক লোকদল, প্রত্যেক সংস্কৃতি, প্রত্যেক ধর্ম, প্রত্যেক পেশা, প্রত্যেক জাতি বা বর্ণ, প্রত্যেক লিঙ্গ থেকে।
  • যদি প্রতিনিধিত্বমূলক হয় তবে লোকদের সমস্যাগুলো শোনা হবে এবং তাদের প্রয়োজন বা চাহিদাগুলো মেটানো হবে।
  • যদি তা না হয় লোকদের কথা শোনা হবে না, তাদের মূল্য দেওয়া হবে না ও তাদের অবহেলিত করা হবে। ফলে তারা সেই সরকারকে তাদের নিজের বলে মনে করবে না এবং তারা আলাদা হওয়ার ও নিজস্ব সরকার গঠন করার আন্দোলন শুরু করবে।
  • যে পরিমাণে প্রতিনিধিত্ব = সে পরিমাণে দেশে শান্তি বা স্থিরতা।
  • এটা একটি সার্বজনীন সত্য।
  • উদাহরণ: সুইজারল্যান্ডের সংসদে কৃষক, রং মিস্ত্রী ও নানা সাধারণ পেশার এম.পি. আছে। নিয়ম হল: সংসদ ভবনে প্রত্যেক জেলা, প্রত্যেক জাতীয় ভাষা ও প্রত্যেক জাতীয় পার্টি থেকে লোকসংখ্যা অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণে সংসদ সদস্য থাকতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের অবশ্যই চরিত্রবান ও দক্ষতা সম্পন্ন হতে হবে – ২য় বিবরণ ১:১৩
  • ৩য় প্রশ্ন: কোন ধরণের ব্যক্তিকে জনগণ দ্বারা নির্বাচন করা উচিত?
  • ১৩ পদে ৩টি বর্ণনা দেওয়া আছে (বিভিন্ন অনুবাদে): ১ জ্ঞানী, জ্ঞানবান, প্রজ্ঞাপূর্ণ … বুদ্ধিমান, দক্ষতাশীল, সক্ষম… ৩ সম্মানিত, অভিজ্ঞ, সুনামধন্য,পরিচিত
  • ২ বুদ্ধিমান, দক্ষতাশীল, সক্ষম মানে এমন ব্যক্তি যে জানে কিভাবে একটি কাজ করতে হয়, সক্ষম লোক।
  • ১ জ্ঞানী, জ্ঞানবান, প্রজ্ঞাপূর্ণ মানে এমন ব্যক্তি যে ভালটা জানে। যে জানে কি করা উচিত, কি করা ভাল। এমন ব্যক্তি যার চরিত্র ভাল, যার প্রজ্ঞা ও আত্মসংযম আছে।
  • ৩ সম্মানিত, অভিজ্ঞ, সুনামধন্য, পরিচিত মানে এমন ব্যক্তি যাদের অন্যরা ভাল বলে বা ভাল বলে জানে।
 
সরকার ও সরকারের পদ্ধতি লোকদের চোখে গ্রহণযোগ্য হতে হবে – ২য় বিবরণ ১:১৪
  • ১৪ পদে ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের জিজ্ঞাসা করেন তারা এই প্রস্তাব করা সরকারের পদ্ধতিতে রাজী কিনা।
  • ঈশ্বর এইমাত্র সরকার ঠিক করার অধিকার জনগণকে দিলেন। তাই তিনি এখন তাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সম্মান করেন।
  • ১ শমূয়েল ৮:১৯-২২ পদে ইস্রায়েল একটি রাজতন্ত্র দাবি করেন। ঈশ্বর তা হতে দেন যদিও তিনি রাজী না।
  • লোকেরা সম্পূর্ণ অমত হলে একটি সরকার রাজত্ব করতে পারে না।
সরকারের আকৃতি ও পরিধি হবে প্রয়োজন অনুসারে – ২য় বিবরণ ১:১৫
  • সরকারের আকৃতি (ধাপ বা স্তর) হবে জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে।
  • মোশির সময় ইস্রায়েলের ২০ লক্ষ লোকের জন্য সম্ভবত চার স্তর বিশিষ্ট সরকার পদ্ধতি ছিল।
  • খুবই অল্প পরিমাণ নেতা থাকলে > প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও কাজগুলো করা সম্ভব নয়।
  • খুব বেশী পরিমাণ নেতা থাকলে > ব্যয়বহুল এবং অকার্যকারী সরকার।
আমাদের সরকার এই নীতিগুলোর ক্ষেত্রে কেমন করছে?
  • নির্বাচিত সরকার?
  • প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার? রাজনৈতিক শ্রেণী থেকে অধিকাংশ নেতা আসছে? রাজনৈতিক শ্রেণী কতদূর জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে?
  • নেতারা কি জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান ও সুনামের?
  • সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?
  • সরকারের কি প্রধান কাজ হিসাবে আইন-শৃঙ্খলা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করছে?