সরকার ১২ – আদিপুস্কে মামলা ও বিচার

 

শিক্ষাটি ল্যান্ডা কোপের বই “ঈ্বশর এবং সরকারের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা” (Landa Cope, God and Political Justice) তার প্রথম অংশের একটি সারাংশ।

বিচার ১                   ঈশ্বর বনাম আদম ও হবা                     বিষয়: আইন ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত

প্রথম বিচারের পিছনের গল্প

  • আইন কি এবং আইন ভঙ্গ করার পরিণতি কি, ঈশ্বর তা মানুষকে শিখিয়েছিলেন (আদি ২:১৬-১৭)।
  • আদম ও হবা আইন ভঙ্গ করে। তা হল প্রথম আইন ভঙ্গ করার কাজ এবং তা মানুষ ও পৃথিবীর উপর পরিণতি বয়ে নিয়ে আসে: ঈশ্বরের সঙ্গে, নিজের সঙ্গে, অন্য মানুষের সঙ্গে এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ভগ্ন।
  • অভিযুক্ত বা দোষীদের খুঁজে বের করে ঈশ্বর প্রক্রিয়া শুরু করেন (আদি ৩:৮-১০)।
  • ঈশ্বর আদম ও হবার কাছ থেকে সাক্ষ্য নেন (আদি ৩:৯-১২)।
  • তারা উভয়ে একমত যে তারা আইন ভঙ্গ করেছে (অপরাধ স্বীকার করে) যদিও তারা তাদের ভুলের দায়িত্ব কেউই আসলে নিচ্ছে না (আদি ৩:১২-১৩)।
  • ঈশ্বর সর্বজান্তা বলে তিনি সমস্ত সত্য জানেন, এমনকি তাদের সাক্ষ্য ছাড়াই তিনি সমস্ত সত্য জানেন। তারপরও তিনি তাদের সাক্ষ্য শোনার জন্য জিজ্ঞাসা করেন। কেন?
    • অপরাধ স্বীকার করা হল মুক্তির প্রক্রিয়ায় একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ।
    • অপরাধ সৎভাবে স্বীকার করা নায্যতা পুনঃস্থাপন করার প্রক্রিয়ার একটি প্রয়োজনীয় ধাপ।
  • মানুষ পাপ করার সংগে সংগেই স্বাভাবিক পরিণতি অভিজ্ঞতা লাভ করে: ভয়, লজ্জা, অপরাধ বোধ।
  • ঈশ্বর স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় সংশোধন যোগ করেন: তাদেরকে (এবং তাদের বংশ) অবশ্যই বাগান ত্যাগ করতে হবে। কেন?
    • পাপটি কত ক্ষতিকারক তা রায়ের কঠিনতা থেকে বুঝা যায়: তারা ঈশ্বরের দৃষ্টি হারিয়েছে এবং এই লোকসানের পরিণতি তীব্র। এই প্রথম আইন ভঙ্গ বা অনাচারের কারণে পৃথিবীর এবং সারা মানব জাতির উপরে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভয়ানক ধ্বংসাত্মক ফলাফল আসবে (আদি ও সম্পূর্ণ বাইবেল দেখুন)।
  • ঈশ্বর দ্রুতগতিতে কাজ করেন পরবর্তী ধ্বংস প্রতিরোধ করতে: তিনি জীবন গাছের কাছে যাওয়া-আসার সীমা টেনে দেন (আদি ৩:২২-২৪), যার মানে তাদের জন্য চিরকাল বাঁচার পথ বন্ধ। তা দ্বারা ঈশ্বর নিশ্চিত করেন যেন মন্দ মানুষের ধ্বংস করার ক্ষমতার সময়ের একটি সীমানা থাকবে।
  • নিজের উপরে মানুষের সিদ্ধান্তের দুঃখের প্রভাব কমানোর জন্য ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করেন: তাদের উলঙ্গতা ঢাকার জন্য ঈশ্বর কাপড় দেন, যাতে তাঁর প্রিয় পশুর একটি উৎসর্গ করতে হচ্ছে (আদি ৩:২১)।
  • এটি দ্বারা ঈশ্বর পাপের ফলাফল দেখান (> মৃত্যু)। পাপ, অপরাধবোধ ও বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে কিভাবে উদ্ধার সম্ভব হবে, ঈশ্বর তাও দেখান (> ক্রুশ)।
  • অপরাধের ফলাফল হিসাবে ঈশ্বর শয়তানকে এবং পুরুষ ও মহিলাকে বাগান থেকে বের করে দেন।
  • এর মানে হল কঠোর পরিশ্রম বহুগুণে বৃদ্ধি (আদি ৩:১৭-১৯), প্রসবে বেদনা (আদি ৩:১৬) এবং শেষ পর্যন্ত শারীরিক মৃত্যু (আদি ৩:১৯) যা আসল সৃষ্টির অংশ ছিল না।

প্রথম বিচারের উপাদানসমূহ

  • সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা – সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা হল ঈশ্বরের রাজ্যের বাস্তব অংশ। এই স্বাধীন সিদ্ধান্ত প্রতিরোধও করা হয় না, তার ফলাফল মুছে দেওয়াও হয় না। বরং সিদ্ধান্তের বাস্তবতা ও এর পরিণতি এই গল্পে পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে।
  • আইন – মানুষদের স্বাধীনতার একটি সীমানা আছে। ঈশ্বর আইন স্থাপন করেছিলেন ও তা নিয়ে পরিষ্কারভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।
  • দায়িত্ব – মানুষকে যে স্বাধীনতা দেওয়া ও যে সীমানা জানানো হয়েছে, তার জন্য মানুষ দায়ী।
  • সাক্ষ্য – দোষীদের তাদের অপরাধ স্বীকার করা ও অপরাধের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হল উদ্ধার প্রক্রিয়ার একটি অংশ।
  • বিচার ও শাস্তি – অপরাধের বিচার ও শাস্তি দ্বারা উদ্ধার প্রক্রিয়ার দুইটি কাজ হয়: প্রথম একটি অবসান আসে: বিষয়টি গেল। দ্বিতীয়ত অপরাধের কারণে সীমানা নতুনভাবে টানা হয়। পরিষ্কারভাবে বলা হয় ভবিষ্যতে কি সীমানা প্রযোজ্য।
  • পরিণতি – মানুষ বুঝতে পারে যে তার সিদ্ধান্ত বাস্তব ও অপরিবর্তনীয়, সিদ্ধান্তের ফলাফলও বাস্তব।
  • সংশোধন বা শাস্তির মাপ – অপরাধের কারণে সমাজের যত ক্ষতি বা ধ্বংস (এখন ও ভবিষ্যতে) তত বড় শাস্তির মাফ। এখানে (আদি ৩) ক্ষতি অনেক বেশি, তাই শাস্তির মাপও বড়।
  • সহানুভূতি – শাস্তি প্রয়োজন হলেও ভুলে যাওয়া যাবে না যে দোষীরা হল ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে মূল্যবান মানুষ। তাই তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় বা হিংস্র ব্যবহার করা চলবে না।
  • মূল্য স্বীকার – মানুষ অপরাধ করার পরেও মানুষ মূল্যবান। তা স্বীকার করা দরকার।
বিচার ২                        ঈশ্বর বনাম কয়িন                        বিষয়: ভ্রাতৃঘাতক

দ্বিতীয় বিচারের পিছনে গল্প

  • আদম ও হবা দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন, তাদের অনেক ছেলেমেয়ে হয়েছিল। আদিপুস্তকে সে যুগের সব ঘটনাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তা না বরং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি মাত্র উল্লিখিত।
  • এক প্রজন্মের মধ্যেই ঈশ্বরের সহভাগিতা, দৃষ্টি ও পরিচালনা ত্যাগ করার ফলে মানুষের মূল্যবোধ কমতে থাকে, এমন কি ভাইকে খুন করা পর্যন্ত।
  • কয়িন ও হেবল বুঝে যে ঈশ্বর বলতে কেউ আছেন, কিন্তু তারা আর বুঝে না ঈশ্বর কি চান। ঈশ্বরের আশীর্বাদের আশায় তারা উৎসর্গ দেয়।
  • ঈশ্বর হেবলের রক্ত উৎসর্গ গ্রহণ করেন কিন্তু কয়িনের শস্য উৎসর্গ গ্রহণ করেন না। তা কয়িনকে প্রত্যাখান করার জন্য ঈশ্বর তা করেন না বরং তাকে দেখানোর জন্য তাঁর ইচ্ছা বা দাবী কি: রক্ত উৎসর্গ হল পাপের পরিণতি ও উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পথের চিহ্ন স্বরুপ।
  • কয়িন তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেয়ে প্রতিবাদী ও রাগী হয়ে যায়। সে ঈশ্বরের নির্দেশনা অন্যভাবে নেয় এবং তা ‘ঈশ্বরের চোখে আমার মূল্য কম’ বা ‘আমাকে অগ্রাহ্য করা হয়’ (পরিচয়ের সন্দেহ) হিসাবে ব্যাখ্যা করে।
  • কয়িন নয় বরং ঈশ্বর যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি কয়িনকে বলেন বিষয়টি অন্যভাবে না নিতে: তার উৎসর্গ গ্রহণযোগ্য নয় মানে না যে ঈশ্বর তাকে অগ্রাহ্য করেছেন। ঈশ্বর কয়িনকে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা এবং সাথে তার দায়িত্ব দেখান: এই প্রলোভনকে অতিক্রম করা সম্ভব। ঈশ্বরের নির্দেশনা মানলে কয়িন বিষয়টির উপর কর্তৃত্ত্ব করতে সক্ষম হত।
  • কয়িন ঈশ্বরের কথা ও দৃষ্টি গ্রহণ করতে রাজি না। বরং সে রাগ করে, বিরক্ত হয় ও খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিচার ২

  • ঈশ্বর প্রক্রিয়া শুরু করেন: তিনি তদন্তের খোঁজে কয়িনকে সাক্ষী হিসাবে প্রশ্ন করে তার সাক্ষ্য চান: ‘তোমার ভাই হেবল কোথায়?’
  • কয়িন মিথ্যা বলে ‘আমি জানি না’। কয়িন ঈশ্বরকে প্রশ্ন করে ‘আমার ভাইয়ের রক্ষক কি আমি?’ কয়িন তার প্রশ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করে যে সে কারোর জন্য দায়ী নয়, এমন কি তার ভাইয়ের জন্যও দায়ী নয়।
  • মাটিতে রক্ত পেয়ে ঈশ্বর বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ দেন। বস্তু জগত বাস্তব। অপরাধের প্রমাণ পাও‍য়া যায়। দোষ ও নির্দোষ বাস্তব। তদন্ত করে সে প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়। সত্য ও ন্যায্য রায় সম্ভব। কয়িনের সত্যের বিকৃতি ও ঘটনার মিথ্যা উপস্থাপনা (ইচ্ছাকৃত হোক বা না হোক) যে অপরাধ আসলে সমর্পিত হয়েছে তা পরিবর্তন করতে পারে না। ঈশ্বর প্রমাণকে মূল্যায়ন করেন ও রায় দেন: কয়িন দোষী।

আপিল

  • কয়িন ঈশ্বরের রায়ের প্রতি আপিল করে এবং ঈশ্বর তার আপিল শুনতে রাজি।
  • কয়িন মনে করে অপরাধের তুলনায় তার শাস্তি অনেক বেশি: দেশ, পরিবার ও সুরক্ষা হারানো। যে কেউ তাকে খুন করতে পারে। এই দাবী এমন একজনের মুখ থেকে যে এইমাত্র একজন নির্দোষীকে মেরে ফেলেছে একটু অন্য রকম লাগে!
  • কিন্তু ঈশ্বর তার সাথে একমত হন যে, ‘মানুষের জীবনের মূল্য আছে’ এবং তার জীবনেরও মূল্য আছে। অপরাধ যে মূল্যবোধ দেখাল (খুন = মানুষের জীবনের মূল্য নেই) তার থেকে অপরাধের দন্ড অন্য ধরণের মূল্যবোধ দেখানো উচিত (মানুষের জীবন মূল্যবান)।
  • ঈশ্বর কয়িনকে চিহ্নিত করেন যাতে নির্বাসনে অন্য মানুষদের থেকে সে সুরক্ষিত থাকে। সাত নম্বর সংখ্যা সিদ্ধতার চিহ্ন > অন্য মানুষের চেয়ে সাত গুণ বেশি মূল্যবান কয়িনের জীবন, যা অর্থ প্রকাশ করে অন্যদের জীবনও তার জীবনের চেয়ে সাত গুণ মূল্যবান। মোট কথা: জীবন হল পুরোপুরি পবিত্র এবং তা নষ্ট করা নিষিদ্ধ।

দ্বিতীয় বিচারে উপাদানসমূহ

  • আগের মতই – স্বাধীন ইচ্ছা, আইন, দায়িত্ব, পরিণতি, পরীক্ষা, সাক্ষ্য, রায় ও দণ্ড, ফলাফল, সংশোধন, সহানুভূতি, মানুষের জীবনের মূল্য স্বীকার।
    যা যুক্ত হয়েছে:
  • আপিল পদ্ধতি – এমনকি দোষী ও রায়প্রাপ্ত লোকদেরও কথা বলার অধিকার আছে।
  • দণ্ডের বিবেচনা – রায়কে পুনরায় বিবেচনা করা উদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে।
  • বিজ্ঞানসম্মত ও আদালতীয় প্রমাণ – বস্তু জগত মিথ্যা বলে না। প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়।
  • রায়প্রাপ্ত লোকের জীবনের সুরক্ষা – সকল মানুষের জীবন পবিত্র।
বিচার ৩                        ঈশ্বর বনাম মানুষ প্রজাতি                        বিষয়: আইনকে সম্পূর্ণ অস্বীকার

বিচার ৩ এর পিছনের গল্প

  • আদম থেকে মাত্র ৮ প্রজন্মের মধ্যে (কয়িন থেকে সাত প্রজন্ম) সহিংস্রতার তীব্র বৃদ্ধি: লেমক গর্ব করে যে তাকে কেউ থাপ্পর মারলে তাকে সে হত্যা করতে পারে এবং তার জীবন নিলে প্রতিশোধে ৭৭ জনের মৃত্যু দরকার হবে (আদি ৪:২৩)।
  • কয়িনের প্রতি ঈশ্বর যে দয়া দেখিয়েছিলেন, তা থেকে মানুষ নম্রতা বা জীবনের মূল্য শিখে নি বরং তারা এই দয়া ভুল ব্যাখ্যা করে স্বার্থপরতায় পরিণত করেছে। একটা খুন দিয়ে শুরু হল কিন্তু এখন একটি সহিংস্রতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। মানুষের প্রজাতি ধীরে ধীরে ও নৃশংসভাবে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে।
  • আদি ৬:৫-১৩ মানুষ প্রজাতি নিয়ে ঈশ্বরের মূল্যায়ন: পদ বড় পাপ, দুষ্টতা বেড়ে গেল, প্রত্যেকজনের অন্তরের সব চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই কেবল মন্দের দিকে ঝুঁকে আছে।
  • ১১ পদ গোটা দুনিয়াটাই পাপের দুর্গন্ধে ও অত্যাচার-অবিচারে ভরে, দুর্নীতি, সহিংস্রতায় পূর্ণ।
  • যদি ঈশ্বর হস্তক্ষেপ না করেন মানুষ প্রজাতি ধীরে ধীরে ও নৃশংসভাবে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে।
  • এই পরিস্থিতিতে ন্যায্যতা কি? দয়া কি? ঈশ্বর কিভাবে সহিংস্রতা থামাবেন কিন্তু একই সময়ে মানুষের সিদ্ধান্ত এবং মানুষ প্রজাতি সুরক্ষিত করবেন?
  • ঈশ্বরের দয়া দাবী করে দ্রুত পরিবর্তন আনা এবং সবচেয়ে ভাল মানুষ যাকে খুঁজে পাওয়া যায়, তাকে দিয়ে পুনরায় শুরু করা (লেমকের পুত্র নোহ)। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ধ্বংস নয় বরং উদ্ধার।

বিচার ৩

  • ঈশ্বর মানুষ প্রজাতির মধ্যে খুন, গণহত্যা, দুর্নীতিগ্রস্ত চিন্তা কথা ও কাজে খুঁজে পান। তিনি এই অপরাধের রায় হিসাবে মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেন।
  • প্রায় সকল মানুষ প্রজাতিকে এবং সৃষ্টির এত বড় অংশ ধ্বংস করায় ঈশ্বরের কোন আনন্দ নেই। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন আর কখনও এরকম করবেন না (আদি ৮:২১-২২)।

বিচার ৩ এর মৃত্যুদণ্ড

  • আদম থেকে শুরু করে সকলের ব্যক্তিগতভাবে পাপের ফল মৃত্যু।
  • শুরুতে মানুষের প্রজাতির মধ্যে খুনী পাওয়া যেত, এখন মানুষ প্রজাতি এমন নীচুতে নেমেছে যে সহিংস্রতা ও খুন হল সমাজের সাধারণ অবস্থা। একটি হিংস্রতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
  • ঈশ্বর যোগ্য রায় দেন, এমন রায় যাতে সহিংস্রতা নিরুৎসাহিত হবে ও কমবে।
    • ১ মহা ধ্বংস (শেষ বার এখানে)।
    • ২ মানুষের আয়ূ আরো কমে যাওয়া।
    • ৩ আবারও ঈশ্বর মানুষের কারণে জীব-জন্তু উৎসর্গ করেন: শুধুমাত্র বন্যার মধ্যে নয় কিন্তু মাংস খাওয়ার অনুমতির মধ্যে দিয়ে (সম্ভবত ঈশ্বর পশুর মাংস খাওয়ার অনুমতি দেন কারণ বন্যার পূর্বে নরমাংস ভক্ষণ প্রথা সাধারণ হয়েছিল)। ঈশ্বর মানুষকে মাংস খাবার অনুমতি দেন কিন্তু রক্ত খাওয়ার অনুমতি দেন না। ঈশ্বর মানুষের মধ্যে সহিংস্রতা থামাতে এবং জীবনের অতুলনীয় মূল্যের বিষয় বুঝাতে চেষ্টা করছেন (আদি ৯:১-৭)।
  • নোহ ও তার পরিবারের মাধ্যমে ঈশ্বর মানব ইতিহাস নতুনভাবে শুরু করেন।

বিচার ৩ এর উপাদানসমূহ

  • আগের মতই – স্বাধীন ইচ্ছা, আইন, দায়িত্ব, পরিণতি, সংশোধন, সহানুভূতি, মানুষের মূল্য স্বীকার।
  • আরো যোগ হয়েছে সামাজিক দোষ – যে পরিবেশ সহিংস্রতা সৃষ্টি করে বা উৎসাহিত করে, তার জন্য শুধুমাত্র ব্যক্তি নয় কিন্তু সমাজও দায়ী।
  • স্থায়ী পরিণতি – মানুষের আয়ু আরও হ্রাস পায়।
  • ঈশ্বর নতুন শুরু করার প্রচেষ্টা, তিনি এভাবে আর করবেন না।
বিচার ৪                 ঈশ্বর বনাম বাবিল                        বিষয়: স্বৈরশাসন বা সাম্রাজ্যবাদ

বিচার ৪ এর পিছনের গল্প

  • আদিপুস্তক ১১ অধ্যায়ে দেখা যায় যে মানুষ একটা নতুন ধরণের সহিংস্রতা উৎপন্ন করে: মানুষের হৃদয়ের অহংকারে রাজনৈতিক স্বৈরশাসন ও একটি কেন্দ্রীয় সম্রাজ্য, যাতে ঈশ্বরের আদর্শ (ছড়িয়ে পড়তে ও বৈচিত্র আনতে) অগ্রাহ্য করা হয় (আদি ১১:৪, ১:২৮)
  • একটি দেশ, একটি সরকার, একটি অর্থনীতি, একটি সংস্কৃতি ও একটি ভাষা পৃথিবীর উপর শাসন করুক, ঈশ্বর তা চান না।
  • সম্রাজ্যের স্বপ্ন প্রথম এখানে দেখা যায় এবং তা ইতিহাসে চলতে থাকে: আসিরিয়া, চীন, বাবিল, মাদিয়-পারস্য, ভারত, রোম, রাশিয়া, জাপান, ভাইকিং, মঙ্গল, আজটেক, অটোমান, আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা…
  • ভাষা উন্নত ও ভিন্ন হয়ে যাবে (যদিও পরস্পরকে এখনও বুঝা যায়) তা হল সময় ও দূরত্বের সাধারণ ফল। ভাষাগুলির মধ্যে বৈচিত্র থাকা, তা মন্দ বিষয় নয়, ঈশ্বর বৈচিত্রতা ভালবাসেন। ঈশ্বরের রাজ্যে বিভিন্ন ভাষা থাকবে, তা হল উদ্ধার করা জাতিদের একটি আনন্দের ছবি (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯)।
  • কিন্তু এখানে বিষয় ভিন্ন: ঈশ্বর নিশ্চিত করতে চান যেন মানুষ ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং যেন বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির উন্নতি হতে থাকে। তাই তিনি ভাষার মধ্যে এমন বিশৃংঙ্খলা তৈরি করেন যে তারা পরস্পর্কে আর বুঝতে পারে না।
  • এখানে রাজনৈতিক বিষয়ে দুইটা মেরু দেখা যায় (যেমন ইতিহাসেও বার বার দেখা য়ায়): বন্যার পূর্বে আইন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য এবং বন্যার পরে রাজনৈতিক দমন বা স্বৈরাচার। উভয় পদ্ধতিই অবিশ্বাস্য সহিংস্রতার তৈরি করে।
  • ঈশ্বর চান যেন স্ব-শাসন ও স্বাধীনতা থাকে, কিন্তু এমনভাবে যেন এটি ভুল ব্যবহার করা না হয়।
  • প্রশ্ন এই নয়: মানুষের কি স্বাধীন ইচ্ছা থাকা উচিত বা তাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত? এই উত্তর পরিষ্কার: স্বাধীন ইচ্ছা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। ঈশ্বরের প্রশ্ন এই: মানুষ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হয়েছে বলে এবং তার স্বাধীন ইচ্ছা রক্ষা করতে হবে বলে, কিভাবে নিশ্চিত করা যায় যেন মানুষ নিজেকে ধ্বংস না করে?

বিচার ৪ এর উপাদানসমূহ

  • স্বাক্ষ্য – বাবিলীয়দের নিজের কথা।
  • প্রতিজ্ঞা – ঈশ্বর বন্যার পরে প্রতিজ্ঞা দিয়েছেন যে তিনি পৃথিবী আর নষ্ট করবেন না। পরিবর্তে সহিংস্রতার প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়?
  • স্থায়ী পরিণতি – ভাষার বিশৃংঙ্খলা > ক্ষমতার অতিরিক্ত ভুল ব্যবহার অসম্ভব করে তোলা, সার্বজনীন স্বৈর-শাসনের সম্ভাবনা কমানো হয়।
বিচার ৫                        ঈশ্বর বনাম ইস্রায়েল                                      বিষয়: গণহত্যা

বিচার ৫ এর পিছনের গল্প

  • আদি ১২ অধ্যায়ে ঈশ্বর একজন ব্যক্তি দিয়ে পুনরায় শুরু করেন: অব্রাহাম। ঈশ্বর তাঁর সব জাতির উদ্ধারের ও সুসম্পর্কে আনার মহাপরিকল্পনা অব্রাহামের কাছে প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর প্রতিমূর্তিতে পরিবার ও জাতি তৈরির নকশাও প্রকাশ করেন। অব্রাহামের বংশধরের মধ্যে ঈশ্বর এমন একজনকে নিয়ে আসবেন যিনি মানুষ ও ঈশ্বরের সাথে পূনর্মিলন সম্ভব করে তুলবেন: যীশু।
  • শুরুতে অব্রাহাম ‘বিশেষ’ বা ‘অন্যদের চেয়ে ভিন্ন’ কেউ নন, শুধুমাত্র এই বিষয় ভিন্ন: তাকে আহ্বান করা হয়েছে। তার লোকদল ও সংস্কৃতি ছিল ‘কলদীয়’। তিনি ছিলেন ঊর শহরের বাসিন্দা। তার ছিল অন্যদের মত জিন এবং অন্যদের মত চিন্তা-ভাবনা।
  • অব্রাহামের পরিবার সমস্যা ছাড়া নয়: বিদেশী রাজাদের কাছে মিথ্যা বলা, জমির জন্য লড়াই, পরিবারের মধ্যে যুদ্ধের এবং ভবিষ্যৎ গোষ্ঠিগত দ্বিধাদ্বন্দের বীজ বপন (ইশ্মায়েল–ইসহাক), বিদেশী রাজাদের কাছে আরো মিথ্যা, পরিবারের মধ্যে প্রতারণা, লাবণের ক্ষমতার নিষ্ঠুর ব্যবহার ইত্যাদি।
  • তাতে বুঝা যায়: একটা নতুন জাতি তৈরি করার জন্য ইস্রায়েলের আহ্বান আছে কিন্তু কিভাবে তা করতে হবে এই বিষয়ে তাদের ঈশ্বরের প্রকাশ নেই। তারা আহ্বান প্রাপ্ত কিন্তু তারা প্রজ্ঞার লোক নয়, ভাল নয় ও অন্যদের চেয়ে তেমন ভিন্নও নয়। ঈশ্বরের আহ্বানে ফল ধরার জন্য অবশ্যই ঈশ্বরীয় চিন্তা ও দৃষ্টি যুক্ত হওয়া দরকার।
  • আদি ৩৪ অধ্যায়ে যাকোবের মেয়ের ধর্ষণ ঘটে। যদিও শিখিমের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সাথে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্মিলনের প্রচেষ্টা ছিল, অব্রাহামের গোষ্ঠী সহিংস্রতায় নেমে যায়। যাকোবের পুত্রেরা প্রতারণামূলকভাবে তাদের শুধুমাত্র ধর্মীয় পর্ব অপব্যবহার করে: তারা সুন্নত দাবী করে। কিন্ত সুন্নতের কারণে দুর্বলতার সময়ে তারা শিখিম শহরকে আক্রমণ ও লুট করে এবং তার লোকসংখ্যার গণহত্যা ঘটায়।
  • ঈশ্বরের দয়ার কাজ (চুক্তি স্থাপন, সুন্নত দ্বারা চিহ্নিতকরণ) তারা মানুষের বিরুদ্ধে সহিংস্রতা করার একটা কৌশল পরিণত করে। এবং কে তা করে? ঈশ্বরের মনোনীত লোকেরা। কি বিপর্যয়!
  • পরিণতি হল কনানীয়দের দ্বারা ধ্বংস হওয়ার ভয় এবং বেথেলে পালানোর প্রয়োজনীয়তা (আদি ৩৪:৩০)।
  • শুধুমাত্র ঈশ্বরের দয়ায় তারা সে সময় সুরক্ষা পায় এবং কেউ তাদের আক্রমণ করে না।
  • অব্রাহামের গোষ্ঠীতে সহিংস্রতা চলতে থাকে: ঈর্ষা ও মানুষের জীবনে মূল্য না দেওয়া (ভাইয়েরা যোষেফকে প্রায় খুন করে, পরে পরিবর্তে তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে)।
  • সহিংস্রতার সংস্কৃতি পরিবর্তন করার জন্য ঈশ্বরের সংশোধন:
    •  তাদের অহংকার ও স্বেচ্ছাচারিতা ভেঙ্গে দেওয়া: গোষ্ঠী হিসাবে তারা ৩০০ বছর ধরে দাসত্বে থাকে।
    • মোশীর দ্বারা আইন-কানুন দান।

বিচার ৫ এর উপাদানসমূহ

  • গোষ্ঠীগত অপরাধ নিয়ে ঈশ্বর কাজ করেন > উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর তাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম দাসত্বে ও স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতায় রাখেন যেন তারা সংস্কৃতিগত সংশোধন পায়।
  • ঈশ্বরের প্রশ্ন: কিভাবে মানুষকে উদ্ধার ও তার স্বাধীন ইচ্ছা রক্ষা করা যায় কিন্তু একই সময়ে তাদের নিজেকে বা অন্যদেরকে ধ্বংস করা প্রতিরোধ করা যায়?
  • ঈশ্বর যাবজ্জীবন দন্ড দেন: ৪৩০ বছর মিশরে, তার মধ্যে মোটামুটি ৩০০ বছর দাস হিসাবে। পরে আমরা বার বার একই স্মরণ করার কথা শুনব: ‘মনে রেখো তোমরা মিশরে দাস ছিলে’। তা দ্বারা ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের প্রভাবিত করতে চান যেন তারা ভাঙ্গা হৃদয়ের লোকদের প্রতি ন্যায্য ব্যবহার করে। উদাহরণ: দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৫, ৪র্থ আজ্ঞা।
  • ঈশ্বর মোশির সময়ে আইন-কানুনে স্থাপন করবেন যে সরকার গঠণের অধিকার ও দায়িত্ব জনগণেরই। জনগণ বলুক কাদের দ্বারা, কিভাবে ও কোন ক্ষেত্রে তারা শাসিত হবে। এই পদ্ধতি দ্বারা ঈশ্বর ইতিহাসে সর্বোচ্চ জীবনের মান এবং ব‌্যক্তি, পরিবার ও সমাজের মূল্য সম্বন্ধীয় সর্বোচ্চ প্রকাশ নিশ্চিত করবেন।
  • কিন্তু নেতিবাচকভাবে একই বিষয় এভাবে বলা যায়: ঈশ্বর মানুষদের তার নিজের পথে যাওয়ার অনুমতি দেন যেন তারা বুঝে তাদের হৃদয় কত মন্দ এবং তাদের আচরণ কত ক্ষতিকারক।