পৌল তার নির্ভরযোগ্য সহকর্মী তীতের কাছে এই চিঠি লেখেন যাকে তিনি নতুন স্থাপিত ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলোর উপর নেতৃত্ব দিয়েছেন। পৌল চান যেন তীত মণ্ডলীগুলোতে নেতা নিযুক্ত করেন এবং বিশ্বাসীদের আরো শিষ্যত্ব দেন যেন তারা দয়ায় পরিত্রাণ পাওয়ার সঙ্গে দয়ায় পরিবর্তিত মানুষ হয়, যারা ভাল কাজ করতে আগ্রহী।
পৌল তার বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য বহুদিনের সমকর্মী তীতকে এই চিঠি লেখেন। সাথে সাথে চিঠিটি ক্রীটীয় মণ্ডলীর কাছেও লেখা, যাদের তীত এই মুহূর্তে দেখাশুনা করছেন (তীত ১:৫)।
পৌল ও তীত গ্রীসের ক্রীট দ্বীপে একসাথে কয়েকটি মণ্ডলী স্থাপন করেছেন। পৌলকে কোন জরুরী কারণে ক্রীট দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে হয়। তিনি তীতের কাছে নেতৃত্ব দিয়ে যান যেন তীত যে কাজ এখনও পূর্ণ হয় নি, তা শেষ করতে পারেন (তীত ১:৫)। পৌলের এই চিঠি লেখার উদ্দেশ্য হল তীতকে ব্যবহারিক দিক-নির্দেশনা দান এবং তীতকে মণ্ডলীর সামনে নেতৃত্বের অধিকার ও ভার দেওয়া। এতে তীত শিক্ষা ও শিষ্যত্ব দিতে এবং প্রত্যেক মণ্ডলীতে নেতা নিযুক্ত করার প্রক্রিয়া দেখাশুনা করতে সাহায্য পাবেন। তীতকে পৌল যত বিষয়ে দায়িত্ব দেন, তিনি মণ্ডলীকে তত আদেশ দেন তীতকে কাজে সমর্থন করতে।
ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলোর স্থাপন বা পৌল ক্রীট দ্বীপে সময় কাটান, প্রেরিত পুস্তকে তার কোন উল্লেখ নেই। তাই ক্রীট মণ্ডলীর স্থাপনের তারিখ সহজে দেওয়া যায় না। হতে পারে তা ঘটে যখন পৌল দ্বিতীয় প্রচার যাত্রায় দেড় বছর করিন্থ শহরে কাটান (৫০-৫২ খ্রীঃ), যখন তৃতীয় প্রচার যাত্রায় প্রায় তিন বছর ইফিষ শহরে থাকেন (৫৩-৫৬ খ্রীঃ) অথবা যখন তিনি রোম শহরে হাল্কা বন্ধনের পরে (৬০-৬২ খ্রীঃ, প্রেরিত ২৮:৩০-৩১) মুক্ত হন (ফিলি ২:২৪, ফিলীমন ২২)।
ক্রীট হল গ্রীসের সমচেয়ে দক্ষিণের দ্বীপ এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী সেখানে নৌ-ক্ষমতার অধিকারী জাতিরা বাস করত। সুদূর ইতিহাসে বাইবেলে ক্রীট দ্বীপের নাম ছিল কিত্তীম (আদি ১০:৪) এবং যে পলেষ্টীয়রা যারা ইস্রায়েলের সঙ্গে শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ করত তারা আগে ক্রীট দ্বীপের বাসিন্দা ছিল। পৌল এপিমেনিডেস্ নামে (Epimenides, ৬০০ খ্রীঃপূঃ) একজন ক্রীটীয় নবীকে উদ্ধৃতি করেন যিনি ক্রীটীয় লোকদের এমন বর্ণনা করেন: “বরাবরই মিথ্যাবাদী, বুনো পশুর মত এবং অলস ও পেটুক” (তীত ১:১২)। ক্রীটীয়রা মিথ্যা বলার জন্য এত বিখ্যাত ছিল যে গ্রীক ভাষায় ‘মিথ্যা বলা’ সে শব্দ ‘ক্রীট’ শব্দের সাথে মিল আছে। ১৪০ খ্রীঃপূঃ থেকে ক্রীট দ্বীপে যিহূদী বাসিন্দা পাওয়া যায়।
তীত চিঠিতে ক্রীটীয় সংস্কৃতির প্রভাব পরিষ্কারভাবে দেখা যায়: পৌল বিশ্বাসীদের বলেন যেন তারা শুধুমাত্র দয়ায় পরিত্রাণ পাওয়া লোক না হয়, বরং দয়ায় পরিবর্তিত লোকও যেন হয় (তীত ২:১১-১২)। তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা অন্যদের সেবা করতে, মঙ্গল করতে ও দানশীল হতে শিখে (তীত ২:১৪)। যখন মণ্ডলীতে প্রাচীনদের নিযুক্ত হয়, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় গুণ হল ভাল চরিত্র ও স্বনিয়ন্ত্রণ (তীত ১:৫-৮) এবং সত্য বা নিরাময় শিক্ষা দানের ক্ষমতা (তীত ১:৯)। যারা ভাল চরিত্রের অধিকারী নয় অথবা যারা ভ্রান্ত শিক্ষা দেয়, তাদের “মুখ বন্ধ” করতে হয় যেন তারা বিশ্বাসীদের উপরে ভুল প্রভাব না ফেলে (তীত ১:১০-১৬)। পৌল তীতকে নির্দিষ্টভাবে বলেন যেন তিনি যিহূদীদের খারাপ প্রভাব প্রতিরোধ করেন, এমন যিহূদী যারা সুন্নতের উপর, বংশ তালিকার উপর বা আইনের উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয় (তীত ১:১০, ৩:৯)।
নেতাদের ক্ষেত্রে ঈশ্বরীয় আচরণ-চরিত্রের প্রয়োজন, পৌল এই নীতি আরো প্রয়োগ করেন: যে আচরণ-চরিত্র নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রয়োজন, তা সব বিশ্বাসীদেরও থাকা দরকার। পৌল নির্দিষ্টভাবে একটার পর একটা দলের জন্য, বুড়ো, বুড়ি, যুবক, যুবতী ও দাস, সে প্রয়োজনীয় গুণাবলি উল্লেখ করেন। তিনি তীতকেও বিশ্বাসীদের কাছে ভাল কাজের আদর্শ হতে বলেন। এই আদর্শ মনোভাব, চরিত্র ও আচরণ দ্বারা একজন নেতার অধিকার হয়ে উঠে, তা তীতের অধিকারের ক্ষেত্রে হোক (তীত ২:৮, ২:১৫) বা মণ্ডলীর প্রাচীনদের অধিকারের ক্ষেত্রে হোক (তীত ১:৫-৯)।
চিঠির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে পৌল – যেমন তিনি সব সময় করেন – যীশুর দয়াকে উঁচু করে তুলে ধরেন, সে দয়া যা সবার জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসে এবং যে দয়া যার মধ্যে সবাইকে পরিবর্তিত করার ক্ষমতা আছে। তীত ২:১২ পদে পৌল বলেন “দয়া আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা ও জগতের কামনা-বাসনাকে অগ্রাহ্য করে এই জগতে নিজেদের দমনে রেখে ঈশ্বর ভক্তির সঙ্গে সৎ জীবন কাটাই”। এই পরিত্রাণ বা গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বাসীরা নিজের প্রচেষ্টা দ্বারা বা আইন পালনের উপর নির্ভর করে অর্জন করতে পারবে না, বরং দয়া সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করে এবং দয়াকে নিজের জীবনে সম্পূর্ণভাবে কাজ করতে দেওয়া দ্বারা বিশ্বাসীরা পবিত্র জীবন করতে সক্ষম হয় এবং এমন লোক হয়ে যায় যা “কেবল তাঁরই হবে এবং যারা অন্যদের উপকার করতে আগ্রহী হবে” (তীত ২:১৪)।
চিঠির প্রাপক তীত
প্রেরিত পৌল চিঠিটি তার সহকর্মী তীতকে লেখেন, যাকে তিনি খুব সুন্দরভাবে “আমার সঠিকারের সন্তান তীত” হিসাবে চিহ্নিত রাখেন (তীত ১:৪)। তীত যিহূদী নন বরং গ্রীক। হতে পারে তিনি মণ্ডলীর ছড়ানোর শুরুদিকে দেবতা-পূজা থেকে একজন ধর্মাবল্বী, সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় যিহূদী-অযিহূদী মিশানো মণ্ডলীর সদস্য ও কর্মী (গালা ২:১-৩)। পৌল তাড়াতাড়ি তীতের চরিত্রের মাণ ও ভাল নেতৃত্ব সম্ভাবনা বুঝতে পারেন এবং তাকে পরিচর্যার কাজে লাগান। যখন একটি দুর্ভিক্ষের সময়ে পৌল যিরূশালেম মণ্ডলীর জন্য একটি আর্থিক দান পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে একটি ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করেন তিনি তীতকে সঙ্গী হিসাবে পছন্দ করেন (৪৭ খ্রীঃ)।
৫৫ খ্রীষ্টাব্দে একটি ঘটনার সময়ে তীতের নাম আবার উল্লেখ করা হয়। তিনি সে সময় পৌলের পরিচর্যায় একজন অতি বিশ্বাসযোগ্য সহকর্মী। যখন করিন্থীয় মণ্ডলীর সাথে পৌলের একটি খুব জটিল দ্বন্দ্ব ঘটে যাচ্ছে এবং মণ্ডলী পৌলের অধিকার ও সংশোধন অগ্রাহ্য করে, তিনি তীতকে মধ্যস্থকারী হিসাবে তাদের কাছে পাঠান (২ করি ২:১৩)। এই অতি কঠিন সময়ে তীত করিন্থীয় মণ্ডলীর সাথে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করতে এবং তাদের মধ্যে একটি অনুতাপ ঘটাতে সক্ষম হন। তীত করিন্থ শহর ছেড়ে পৌলের দিকে রওনা দেন এবং পৌলকে তার বিষয়ে করিন্থ মণ্ডলীর মন পরিবর্তনের সুখবর জানান (২ করি ৭:৬-৭, ৭:১৩-১৫)। পৌল খবরটি পেয়ে অতি আনন্দিত কারণ একটি বড় বিপদ কেটে গেল। তিনি তীতের হাত দ্বারা মণ্ডলীকে আর একটি চিঠি পাঠান, যা আমরা “২ করিন্থীয়” বলি।
যতদূর জানা যায় এই দ্বন্দ্বে মধ্যস্থকারী হওয়ার আগে তীত করিন্থীয় মণ্ডলী লোকদের চিনতেন না (২ করি ৭:১৪)। তাই পৌল যে তাকে এই জটিল অবস্থায় পাঠান, তা থেকে তীতের মনোভাব-চরিত্র সম্বন্ধে অনেক কিছু বুঝা যায়: তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার উপর পৌলের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে, যিনি মাথা ঠাণ্ডা একজন, যার সুসম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষমতা ও ভাল বিচার বুদ্ধি আছে। তিনি পৌলের সত্যিকারের একজন প্রতিনিধি, কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব পৌলের চেয়ে বেশ ভিন্ন, যার ফলে করিন্থীয়দের চোখে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। হতে পারে তিনি ভাল শ্রোতা, তার মধ্যে কোন পক্ষপাত নয় বরং সুবিচার আছে। তিনি সহজে একজনের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন, তার ভাষা উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য, এমন একজন যিনি লোকদের মধ্যে ভালটা দেখতে পান এবং যিনি উৎসাহ জাগাতে জানেন।
সমস্যা সমাধান করার দায়িত্বের পাশাপাশি পৌল এই স্পর্শকাঠর সময়ে তীতকে করিন্থীয়দের একটি বড় আর্থিক দানের দেখাশুনার ভারও দেন (২ করি ৯:২)। তা থেকে বুঝা যায় যে তিনি সম্পূর্ণ সৎ ও লোকদের চোখে বিশ্বাসযোগ্য।
এই ঘটনার বেশ কিছু বছর পরে (কমবেশি ৬৪ খ্রীষ্টাব্দে) তীত প্রেরিত হিসাবে পরিচর্যা এগিয়ে নিয়ে একটি নতুন এলাকায় যান, ডালমাটিয়া (২ তীম ৪:১০)। এমন একটি সময়ে যখন পৌল জেলে এবং তার মুক্ত হওয়ার আর আশা নেই তার সত্যিকারের সন্তান তীত সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যায়!
ক্রীট দ্বীপের পরিচর্যার দায়িত্ব হস্তান্তর
পৌলের ও তীতের পরিচর্যার যে ঘটনার কারণে তীত চিঠি লেখা হয় তা করিন্থীয় মণ্ডলীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের বেশ কিছু বছর পরে কিন্তু তীত ডালমাটিয়া যাওয়ার আগে ঘটে। পৌল ও তীত একসাথে ক্রীট দ্বীপে কয়েকটি মণ্ডলী স্থাপন করেছেন যখন পৌলকে কোন কারণে তাড়াতাড়ি চলে যেতে হয়। তিনি তীতের কাছে নতুন স্থাপিত মণ্ডলীগুলোর দেখাশুনার ভার হস্তান্তর করে তাকে “ক্রীট দ্বীপে যে কাজ এখনও অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে” তা ঠিক করতে এবং “প্রত্যেক শহরের মণ্ডলীতে প্রধান নেতাদের কাজে বহাল” করতে বলেন (তীত ১:৫)। পৌল চিঠিটি তীতের কাছে লেখেন যেন তিনি তার দায়িত্ব বোঝেন এবং সাহায্যকারী ব্যবহারিক নির্দেশনা পান। একই সাথে চিঠিটি ক্রীট দ্বীপের মণ্ডলীগুলোর কাছেও লেখা: পৌল তাদের জানান যে ভাল স্থানীয় মণ্ডলীর নেতৃত্ব নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি তীতেরই কাছে নেতৃত্ব ও অধিকার হস্তান্তর করেছেন। তিনি চান যেন বিশ্বাসীরা তীতকে সম্মান ও সমর্থন করে যখন তিনি পৌলের নির্দেশনা অনুসারে মণ্ডলীতে মণ্ডলীতে নেতাদের নিযুক্ত করেন এবং আরো শিক্ষা দেন (তীত ২:১৫)। যেহেতু চিঠিটি উভয় নেতা তীতের এবং একই সাথে মণ্ডলীগুলোর কাছে লেখা হয়েছে সেহেতু তা “পালকীয় চিঠি” বলা হয়।
ক্রীট দ্বীপের মণ্ডলীর স্থাপন
প্রেরিত পুস্তক ক্রীট দ্বীপের মণ্ডলীগুলোর স্থাপনের বিষয় উল্লেখ করে না। প্রেরিত পুস্তকে শুধুমাত্র উল্লেখ আছে যে পৌল খুব অল্পক্ষণে ক্রীট দ্বীপ পা দেন যখন তাকে ৫৯ খ্রীষ্টাব্দে বন্দী হিসাবে রোমে নেওয়া হয় (প্রেরিত ২৭:৮-১৪)। কিন্তু সে সময় তার মণ্ডলী স্থাপন করার কোন সুযোগ ছিল না এবং নিকোপলিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করাও সম্ভব ছিল না (তীত ৩:১২)। একারণে তীত চিঠির লেখার তারিখ খুঁজে বের করা কঠিন। কিছু সম্ভাবনা দেওয়া যায়:
• হয়তো পৌল যখন দের বছর করিন্থ শহরে কাটান (২য় প্রচার যাত্রা, ৫০-৫২ খ্রীঃ) তখনই কিছু সময়ের জন্য ক্রীটে যান।
• হয়তো পৌল যখন আড়াই বছর ইফিষ শহরের কাটান (৩য় প্রচার যাত্রায়, ৫৩-৫৬ খ্রীঃ) তখনএ কিছু সময়ের জন্য ক্রীটে যান।
• হয়তে তিনি রোমে হালকা বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে পূর্বদিকে রওনা দেন এবং সে সময় ক্রীট দ্বীপে পরিচর্যা করেন (৬২-৬৪ খ্রীঃ, প্রেরিত ২৮:৩০-৩১, ফিলিপীয় ২:২৪, ফিলীমন ২২)।
নীকোপলিতে শীতকাল কাটানো পৌলের পরিকল্পনা (তীত ৩:১২) সহজে প্রচার যাত্রাগুলোর সাথে মিলানো যায় না বলে অনেকে মনে করে যে হতে পারে তৃতীয় সম্ভাবনা আসলটা। তাই যদি হয় ক্রীটিয় মণ্ডলীগুলোর স্থাপন এবং তীত চিঠির লেখার তারিখ ৬২-৬৪ খ্রীষ্টাব্দে ঘটে।
ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
ক্রীট হল গ্রীসের সবচেয়ে দক্ষিণের দ্বীপ। ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে পড়া দ্বীপ হিসাবে ক্রীট ছিল শতাব্দির পর শতাব্দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর। পুরাতন নিয়মের প্রথমদিকে একটি বংশ তালিকায় (আদি ১০:৪) কিত্তিম নামে একজনকে উল্লেখ করা হয় যার বংশ ক্রীটে বাস করতে লাগল এবং দ্বীপকে নাম দিল। কমবেলি ১৫০০ খ্রীষ্টপূর্বে ক্রীট দ্বীপে অবস্থিত মিনোয়ান রাজ্য ও সংস্কৃতি (Minoan culture) চারিদিকে এলাকার উপর প্রভাব ফেলে। পুরাতন নিয়মে উল্লিখিত পলেষ্টীয়রা যাদের সাথে ইস্রায়েল জাতি অনেক শতাব্দ ধরে যুদ্ধ করে (যেমন রাজা শৌল ও রাজা দায়ূদের সময়ে) তারা ছিল ক্রীট দ্বীপে এসে একটি নৌক্ষমতা।
তীত চিঠিতে পৌল একজন ক্রীটিয় নবী থেকে একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন: “ক্রীট দ্বীপের লোকেরা বারবরই মিথ্যাবাদী, বুনো পশুর মত এবং অলস ও পেটুক” (তীত ১:১২)। নবীর নাম হল এপিমেনিডেস (Epimenides, কমবেশি ৬০০ খ্রীঃপূঃ)। ক্রীটিয়রা মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে এমন দুর্নাম ছিল যে গ্রীক ভাষায় “মিথ্যা বলা”সে শব্দটি হল “kretizo“, মানে “ক্রীট করা”। ১৪০ খ্রীষ্টপূর্বে থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে ক্রীট দীপে যিহূদীরা বাস করতে শুরু করেছে এবং তীত চিঠিতেও তাদের উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রীক দেবতা কাহিনী অনুসারে গ্রীক প্রধান দেব জিউস ক্রীট দ্বীপেই জন্ম নিয়েছিলেন। জিউস বিখ্যাত ছিলেন তার মিথ্যা বলা, প্রতারণা এবং ব্যভিচারের জন্য (বিভিন্ন দেবী ও মরণশীল মহিলাদের সঙ্গে ব্যভিচারের দ্বারা তার ডজনের চেয়েও বেশি সন্তান হয় গ্রীক কাহিনী বলে)। এর জন্য পৌল তীত চিঠিটির শুরুতে ঈশ্বরের অতি ভিন্ন মনোভাব ও আচরণ দেখান: “ঈশ্বর, যিনি মিথ্যা বলেন না” (তীত ১:২)। ক্রীটীয়রা জিউস তাদের প্রধান দেবতা হিসাবে মানত বলে ক্রীট সংস্কৃতি বিখ্যাত ছিল মিথ্যা, বিশ্বাসঘাতকতা, অনৈতিকতা ও নিষ্ঠুর ব্যবহারের জন্য। দ্বীপের অধিকাংশ পুরুষ এক সময় না অন্য সময় বেতনভোগী সৈন্য ছিল।
পৌল চান যেন বিশ্বাসীরা ক্রীটিয় সংস্কৃতির দুর্বলতা থেকে উঠে আসে: পৌল দাবি করেন তারা যেন যীশুর দয়া দ্বারা শুধুমাত্র পরিত্রাণ পায়, তা না বরং যেন তারা সে দয়া দ্বারাই শিক্ষাও পায় ও পরিবর্তিত হয়ে যায় (তীত ২:১১-১২)। পৌল চান যেন তারা এভাবে দানশীল, দায়িত্বশীল ও সেবাকারী মনোভাবের লোক হয়ে উঠে (তীত ২:১৪)। নেতা নিযুক্ত করার বিষয়েও পৌল নেতাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দাবি করেন: ভাল আচরণ ও চরিত্র, নিজেকে দমনে রাখার (তীত ১:৫-৮) ও সঠিক শিক্ষা ধরে রাখার ক্ষমতা (তীত ১:৯)। যারা ভাল চরিত্রের অধিকারী নয় এবং যারা ভুল শিক্ষা দেয়, তাদের মণ্ডলীতে প্রভাব ফেলার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না (তীত ১:১০-১৬)। পৌল তীতকে নির্দিষ্টভাবে আদেশ দেন এমন যিহূদীদের ভুল প্রভাব প্রতিরোধ করতে যারা সুন্নত, বংশ তালিকা ও আইনের উপর জোড় দেয় (তীত ১:১০: ৩:৯)। চিঠিতে পৌল তীতকে এই সব কাজগুলি করতে আদেশ দেন বলেই তিনি সাথে সাথে তীতকে তার অধিকারও দান করেন এবং তিনি মণ্ডলীকে বলেন যেন তারা তীতকে এই কাজগুলিতে সমর্থন করে।
নেতাদের নিযুক্ত
প্রথম পৌল তীতকে বিভিন্ন শহরের মণ্ডলীতে নেতা নিযুক্ত করতে বলেন (তীত ১:৫)। নেতাদের কি চরিত্র, গুন ও আচারণ থাকা আবশ্যক, পৌল তার বিষয়ে তালিকা দেন (নীচে দেখুন)। প্রার্ম্ভিকা হিসাবে বলা যায় যে নেতাদের ক্ষেত্রে সে ভালগুনগুলি আবশ্যক, সে একই স্বভাব-চরিত্র প্রত্যেক বিশ্বাসীর জীবনেও থাকা দরকার। পৌল যে ঈশ্বরীয় চরিত্র বর্ণনা করেন, তা সবার অর্জন করতে চেষ্টা করা উচিত।
কেউ কেউ বলেন যে তীত ১:৫-৯ পদে হল নেতাদের প্রয়োজনীয় গুনগুলির একটি লম্বা তালিকা। আবারও কেউ কেউ বলে যে তালিকার দুইটি অংশ আছে: প্রথম নেতা বা প্রাচীনদের প্রয়োজনীয় গুনগুলি উল্লিখিত (তীত ১:৫-৭, ৫টি শর্ত) এবং পরে ধনাধক্ষ্য বা অধ্যক্ষদের প্রয়োজনীয় গুনগুলি উল্লিখাত (তীত ১:৭-৯, ১৪টি শর্ত)। যে ভাবে হোক, একটি বিষয় খুব পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যায়: আমরা মনে করি একজন নেতা যত উচুঁ পদের তত বেশি তার “যা চাই তাই” করার ক্ষমতা আছে। যত উচুঁ নেতা তত কম তাকে দায়বদ্ধতায় আনা যায়। কিন্তু তীত চিঠির মাধ্যমে ঈশ্বর ঠিক এর বিপরীত বলেন: সাধারণ বিশ্বাসীদের জন্য শুধুমাত্র এক শর্ত রাখা আছে, যীশুতে বিশ্বাস যদি করে তবে তারা মণ্ডলীর সদস্য। কিন্তু নেতা হতে চাইলে ঈশ্বর আর অনেক চরিত্র ও আচরণ শর্ত রাখেন। যত উঁচু একজনের নেতৃত্ব তত বেশি তার উপর ঈশ্বরের দাবি, তত বেশি তার দায়বদ্ধ এবং তত কঠোর তাকে বিচার করা হবে। নেতাদের জন্য প্রায় ২০টি গুন দাবি করেন ঈশ্বর:
- কেউ তার নিন্দা করতে পারে না / অনিন্দনীয় … এর অর্থ এই নয় যে নেতাকে পাপহীন হতে হবে বরং যেন নেতা একটি সৎ, স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ জীবন করেন, চেতনায় সাড়া দেন এবং পাপে পড়লে অনুতপ্ত হন।
- মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে … এই কথার অর্থ কি? তা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কেউ কেউ বলে: এর অর্থ হল যে শুধুমাত্র পুরুষ প্রাচীন হতে পারে। কেউ কেউ বলে: এর অর্থ হল যে শুধুমাত্র বিবাহিত ব্যক্তি প্রাচীন হতে পারে। তাই যদি হয় তবে একজন প্রাচীনের স্ত্রী মারা গেলে তাকে নেতা হিসাবে বাদ দিতে হবে এবং পৌল বা যীশুকেও অবিবাহিত ব্যক্তি হিসাবে বাদ দিতে হবে। দেখা যায় যে ব্যাখ্যাটি বেশি সরু হয়েছে। তবে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? “মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে” মানে প্রাচীনকে একবিবাহের লোক হতে হবে, যৌন ক্ষেত্রে স্বনিয়ন্ত্রিত ও বিবাহে সমর্পিত। একজন বহুবিবাহের লোক বিশ্বাসী হওয়ার পরে স্ত্রী-ত্যাগ করতে হবে তা নয়, কিন্তু বহুবিবাহের লোককে আদর্শ হিসাবে দাঁড়ানো যায় না। তবে কথার অর্থ এই নয় যে পুরুষ হতে হবে, বিবাহিত হতে হবে বরং যে যৌন ক্ষেত্রে অনিন্দনীয় হতে হবে: বিবাহিত হলে আপন পাত্রের প্রতি বিশ্বস্ত, অবিবাহিত হলে তবে যৌনত্যাগ। কিন্তু ঈশ্বরীয় চরিত্রের অবিবাহিত একজন মহিলা, বিপত্নীক বা বিধবা অবশ্যই প্রাচীন হতে পারে।
- তার ছেলেমেয়ে যেন খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হয়, যেন তারা নিজেদের খুশীমত না চলে এবং অবাধ্য না হয় … এমন একজনকে নেতা হিসাবে নিযুক্ত করা দরকার যিনি ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছেন। যখন একজন এমন কি তার নিজের পরিবারকে ভাল নেতৃত্ব দিতে না পারেন তবে তিনি অন্যদের নেতৃত্ব কিভাবে দেবেন? এই পদের কারণে প্রায়ই পালকের বা নেতাদের ছেলে-মেয়েদের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি হয়, মনে করে যে তাদের সব কিছু মেনে নিতে হয় যেন বাবার সম্মান নষ্ট না হয়। কিন্তু এই পদে উল্লিখিত নীতিটি ছেলে-মেয়েদের উপর চাপ হওয়া উচিত নয় বরং মা-বাবার উপরে চাপ। নেতা হিসাবে তাদের আদর্শ হওয়া দরকার এবং পরিবারে এমন আবহওয়া সৃষ্টি করা উচিত যাতে ছেলে-মেয়েরা উৎসাহ পায়, ফুটে উঠে ও স্বাধীনভাবে একটি ঈশ্বরীয় জীবন পছন্দ করে।
- দায়িত্বভার পাওয়া লোক … দায়িত্বভার পাওয়া লোক মানে না মালিক, মানে না “যা চাই তাই” করার লোক। দায়িত্বভার পাওয়া লোকের ঈশ্বর থেকে অধিকার দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অধীনে একজন এবং ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ। তার কাজ হল দায়ত্বশীল ও যত্নশীল হওয়া যেন তার অধীনে লোকেরা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে বৃদ্ধি পায় ও উন্নত হয়।
- একগুঁয়ে না হওয়া … একগুঁয়ে মানে এমন লোক যিনি শুধুমাত্র নিজের মতে গুরুত্ব দেয়, অন্যদের চিন্তা বা মত বিবেচনা কম করে, জেদী হয় ও নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করতে ব্যস্ত আছে। তাই একগুঁয়ে না হওয়া মানে অন্যদের কথা ভালভাবে শোনা, আত্ম-কেন্দ্রিক না হওয়া এবং নিজের বিষয়ে মূল্যায়ন বা সংশোধন গ্রহণ করা ইচ্ছুক হওয়া।
- রাগী না হওয়া … রাগী মানুষ হল ভয়ংকর মানুষ। রাগ দ্বারা রাগীরা নিজের ইচ্ছা বিস্তার করে এবং অন্যদের বশে আনে। রাগী হওয়া মানে স্বনিয়ন্ত্রণ হারানো। তাতে ভয়ের ও অনিশ্চয়তার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়: কখনও জানা যায় না পরের মুহূর্তে কি যে ঘটবে। মাস পর মাসের ভাল ব্যবহার দ্বারা সে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা হয় তা এক মুহূর্তের রাগ প্রকাশে নষ্ট হতে পারে। স্বনিয়ন্ত্রণ হারানো মানে বিশ্বাস ও বিশ্বাসযোগ্যতা ভাঙ্গা। রাগ আবেগ হিসাবে কোন মুহূর্তে যে কোন একজনের লাগতে পারে কিন্তু রাগ যদি পুনরুক্তি বা ইচ্ছাকৃত আচরণ বা ব্যবহার হয়ে যায় তবে তা একজন নেতার জন্য চলবে না।
- মাতাল না হওয়া … কেউ কেউ বলে যে তার অর্থ হল মদ খাওয়ার সম্পূর্ণ নিষেদ্ধাজ্ঞা। অনেকে বলে যে মদ খাওয়ার নিশেদ্ধাজ্ঞা দেওয়া হয় নি কিন্তু মাতাল হওয়া, স্বনিয়ন্ত্রণ হারানো ও আশক্ত হওয়ার নিষেদ্ধাজ্ঞা। আশক্ত হওয়া মানেই ভুল বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া, নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করতে ব্যস্ত থাকা, মানে না পেলে রাগ প্রকাশ, মানে প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে দেওয়া ও নির্ভরযোগ্যতা হারানো। মাতাল লোকদের ছেলে-মেয়েরা কখনও জানে না বাসায় ফিরলে তারা বাবাকে (বা মাকে) কি অবস্থায় খুঁজে পাবে। সব কিছু এক এক সময় এক এক রকম, কথা বার বার ভাঙ্গা হয়। তারা ভয়ে বাস করে ও প্রায়ই নির্যাতিত হয়।
- বদমেজাজী না হওয়া (ইংগ্রেজি: হিংস্র না হওয়া) … তা হল রাগের আরো বড় পর্যায়: স্বীমানা পার হওয়া, লোকদের নিয়ন্ত্রণ বা দমন করা, লোকদের হুমকি দিয়ে বশে আনা, লোকদের মানসিক না শারীরিক আঘাত করা, এইগুলি সব একজন নেতার ক্ষেত্রে কোনভাবে চলবে না।
- অন্যায় লাভের ঝোঁকে না পড়া … এইটি আবশ্যক বিষয়। যদি একজন নেতার মধ্যে লোভ কাজ করে তবে যত চমৎকার আহ্বান, অদ্ভুত তালন্ত বা সফল পরিচর্যা থাকুক না কেন, তা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাবেই। যেমন প্রবাদ বলে: “টাকা-পয়সা হল ভাল দাস কিন্তু খারাপ মনিব”। কয়েকটি বিষয়গুলি মানুষের হৃদয় প্রলোভিত করে: যৌনতা, ক্ষমতা, টাকা-পয়সা বা খ্যাঁতির লোভ। দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৬-২১ পদে ঈশ্বর রাজার ক্ষেত্রে এই চারটি বিষয় নিষেধ করেন: বেশি স্ত্রী, বেশি ঘোড়া, বেশি ধন ও বেশি সম্মানের লোভ।
অতিথি সেবা ভালাবাসা … নেতার একজন মিশুক, খোলা, ইচ্ছুক, গ্রহণকারী ও বড় মনার ব্যক্তি হওয়া দরকার, যিনি নতুন বা অন্য বা ভিন্ন কিছু গ্রহণ করতে এবং অন্যদের মুক্ত করতে আগ্রহী। - দয়ার কাজ ভালবাসা … বাইবেলের সংজ্ঞা অনুসারে ভালবাসা মানেই অন্যদের সেবা করা ও তার মঙ্গল চাওয়া। নেতার একজন যত্নশীল ও সেবাকারী ব্যক্তি হতে হয়, যিনি অন্যদের বুঝতে পারেন, যত্ন নেন এবং স্বক্রিয়ভাবে অন্য মানুষদের প্রয়োজন মেটান। ভালবাসা হল ব্যবহারিক বিষয়।
- ভাল বিচারবুদ্ধি ... নেতার প্রজ্ঞাপূর্ণ ও মাথা ঠাণ্ডা ব্যক্তি হওয়া দরকার, যিনি সুবিবেচক ও ন্যায্য। একজনের পক্ষে নেওয়া বা মনে করা যে “এ কোন ভুল করতে পারে না এবং ও কোন কিছু ঠিক করতে পারে না”, তা চলবে না।
- সৎ … নেতার হওয়া দরকার সৎ, খোলা, স্বচ্ছ, যা সত্য ও ভাল তাতেই সমর্পিত একজন।
- ঈশ্বরের বাধ্য … নেতার হওয়া দরকার ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের বাধ্য ও সমর্পিত, বিশ্বস্ত ও মনেপ্রাণের লোক। আদর্শ হতে গেলে, তার ঈশ্বরের ও তাঁর নীতির অত্যন্ত বাধ্য হতে হবে, এমন কি মানবীয় প্রতিষ্ঠা ও মানুষের প্রতি বাধ্য হওয়ার চেয়েও। আমরা বলি যে অনুসরণকারীদের বাধ্য হওয়া দরকার কিন্তু ঈশ্বর আগে নেতাদেরই বাধ্য হতে বলেন। নিজেই বাধ্য না হলে তিনি নিজের অধিকার ভেঙ্গে দেন।
- নিজেকে দমনে রাখা … যদি একজন নেতাকে সুবিধার চেয়ে সত্যে সমর্পিত থাকতে হবে, নিজের স্বার্থের চেয়ে অন্যদের প্রয়োজন মেটাতে সমর্পিত থাকতে হবে, সেবা পাওয়ার চেয়ে অন্যদের মঙ্গল করার জন্য পরিশ্রমী হতে হবে, তবে স্বনিয়ন্ত্রণ বা নিজেকে দমনে রাখা আবশ্যক।
- ঈশ্বরের বিশ্বাসযোগ্য বাক্য শক্ত করে ধরে রাখা … উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার এবং ভুল শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা একজন নেতার থাকা দরকার। তার নিজেই সত্য জানা দরকার, তা চর্চা করা দরকার, তা শেয়ার করার ক্ষমতা থাকা দরকার, তা বুঝিয়ে দেওয়ার এবং তর্কে রক্ষা করার ক্ষমতাও থাকা দরকার। ঈশ্বরীয় নীতির পক্ষে এবং ভ্রান্ত শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জ্ঞান-বুদ্ধি একজন নেতার ক্ষেত্রে আবশ্যক।
লক্ষ্য করুন যে নেতাদের প্রয়োজনীয় গুনগুলির মধ্যে প্রায় সব কিছু হল স্বভাব-চরিত্রের বিষয়; দক্ষতা বা শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয় নেই বলে চলবে (শুধুমাত্র তীত ১:৯)। আমরা যখন মণ্ডলীর জন্য নেতা নিযুক্ত করি তখন আমরা ঠিক তার বিপরীত করি: আমরা দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাই গুরুত্ব দেয়, কিন্তু মনোভাব, চর্চা ও ঈশ্বরীয় চরিত্রে কম গুরুত্ব দেই। ফলে আমরা অনেক বার ভুল লোকদেরকে নেতৃত্ব দিতে থাকি এবং পরে অবাক হই যখন মণ্ডলীতে সমস্যা দেখা যায়।
মণ্ডলীর মধ্যে বিভিন্ন দলের কাছে কথা
কিন্তু পৌল যে শুধুমাত্র নেতাদের নির্দেশনা দেন, তা নয়। পৌল সাধারণ বিশ্বাসীদেরও কথা বলেন এবং তাদের ঈশ্বরীয় স্বভাব-চরিত্রে চলতে বলেন। তিনি যথেষ্ট নির্দিষ্টভাবে মণ্ডলীতে প্রত্যেক দলটিকে নিজেকে মূল্যায়ন করার কিছু বিষয় দেন:
বৃদ্ধেরা তীত ২:২
- নিজেকে দমনে রাখা … লক্ষণীয় বিষয় যে পৌল এইটাই প্রথম উল্লেখ করেন। পুরুষদের যখন বয়স ও অভিজ্ঞতা বাড়ে তখন তাদের এমনি এমনি নেতা হিসাবে দেখা হয় যদিও তারা স্বভাব-চরিত্রের জন্যই নিযুক্ত হয় নি। পৌল তাই তাদের ক্ষেত্রে প্রথমই স্বনিয়ন্ত্রণ দাবি করেন, যেমন নেতাদের ক্ষেত্রেও দাবি করেছিলেন – এবং একই কারণে তা করেন। আমাদের সংস্কৃতিতে বয়স্কোদের গুরুত্ব দেওয়া হয়, বিশেষভাবে পরিবারের প্রধান পুরুষকে। তাকে সম্মান করা হয়, তার কথায় লোকেরা বাধ্য থাকে, সবাই মনে করে যে তাকে “না” বলা যায় না। তাই যদি হয় তবে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে নিজেকে দমনে রাখা আরো কত আবশ্যক! নিজের স্বার্থে চিন্তা না করা, নিজের ইচ্ছা পূর্ণ না করা, নিজেকে স্বেচ্ছায় দায়বদ্ধ রাখা, নিজের মধ্যে সে “যা চাই তাই” মনোভাব বৃদ্ধি হতে না দেওয়া, এইগুলি সব হল অত্যন্ত কঠিন ও প্রয়োজন।
- সম্মান পাওয়ার যোগ্য … বৃদ্ধদের এমন ব্যক্তি হতে হবে যাকে আসলে সম্মান দেওয়া যায়। সম্মান দাবি করা ঠিক নয় বরং সম্মানজনক ব্যবহার করতে করতে অন্যদের চোখে সম্মানযোগ্যতা অর্জন করতে হয়। বৃদ্ধরা যদি প্রজ্ঞার লোক হন, যদি তারা স্বার্থহীন, ন্যায্য ও মঙ্গলে সমর্পিত হন, যদি তারা কারো পক্ষে নেন না বরং ভাল বিচার-বুদ্ধি দেখান তবে তারা আসলেই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। যদি তারা পরিবারে প্রধান কিন্তু প্রজ্ঞার লোক নয় তবে তাদের দুর্বলতা পরিবারের সবার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এবং পরিবারে যারা ভাল করতে চায়, তাদের জন্য বাধাস্বরূপ তারা হয়ে দাঁড়ায়। একজন প্রজ্ঞাশূন্য যুবক হল দুঃখের বিষয়, একজন প্রজ্ঞাশূন্য বৃদ্ধ হলেন আর অনেক দুঃখের ও লজ্জার বিষয়।
- ভাল বিচারবুদ্ধি … যেহেতু তাদের সম্মান ও প্রভাব বেশি ঠিক সে কারণেই তাদের ভাল বিচারবুদ্ধি থাকা আবশ্যক।
- সত্য বিশ্বাস, ভালবাসা ও ধৈর্যগুণ … সেবা দাবি করা বা নিজের স্বার্থ পূর্ণ করার চেষ্টা করা বৃদ্ধদের উচিত নয় বরং তাদের একটি ভাল আদর্শ হওয়া উচিত, যাতে যাদের বয়স কম, তারা সঠিক ব্যবহারে উৎসাহ পায়। এমন বৃদ্ধরা যারা অন্যদের মঙ্গলের জন্য জীবন-যাপন করেছেন, যারা শক্তিশালী ও আশীর্বাদের পাত্র, তারা শেষ পর্যন্ত একটি চমৎকার প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন।
তাই পৌল বৃদ্ধদের – সে এমনি এমনি নেতৃত্ব-প্রাপ্ত লোকদের – অনেক কিছু বলেন এবং তাদের থেকে অনেক কিছু দাবি করেন! আবারও আমরা এই নীতি পায়: “যত উঁচু একজন নেতা তত বেশি ঈশ্বর তার মনোভাব-চরিত্রের ক্ষেত্রে শর্ত বা দাবি করেন”।
বৃদ্ধারা তীত ২:৩-৪
- চালচলনে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি … পৌল দাবি করেন যেন তারা ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয়ে চলেন ও মানুষদের প্রতি সম্মানের ও ভদ্র ব্যবহার দেখান।
নিন্দা না করা নিন্দা করা বিশেষভাবে মহিলাদেরই জন্য প্রলোভন, হয়তো কারণ তারা পরিবার ও সম্পর্কের উপর বেশি গুরুত্ব দেন; অথবা কারণ তাদের তা ছাড়া তেমন কোন রব দেওয়া হয় না অথবা কারণ পুরুষের চেয়ে মহিলাদেরকে সম্পর্কের ভিত্তিতে মূল্যায়ন ও বিচার করা হয়। - মাতাল না হওয়া … একবার ছেলে-মেয়ে বড় হলে পরিবারে বৃদ্ধাদের সরাসরি দায়িত্ব ও ভূমিকা কমে যায়, হয়তো একারণে বৃদ্ধারা নিজেকে একটু “ফেলে দেন” এবং এতবছর অন্যদের সেবা করার পরে সেবা পেতে চান। হয়তো এভাবে আশ্যক্ত হওয়ার প্রলোভনও বাড়ে অথবা নিজের ভূমিকা কমে গেছে বলে তাদের একঘেয়েমি লাগে।
- ভাল শিক্ষা দেন – যুবতীদের … ঈশ্বর চান যেন বৃদ্ধারা নিজের গুরুত্ব বোঝেন এবং নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: শিক্ষা দান, আদর্শ দেখানো, ঈশ্বরীয় প্রভাব ফেলা এবং উপকারী হয়ে সময় ভালভাবে ব্যবহার করা। ঈশ্বর আদেশ দেন যেন বৃদ্ধারা শিক্ষা দেন। কেউ কেউ বলেন যে এখানে মহিলাদের শুধুমাত্র মহিলাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন নিয়মের অন্যান্য পদগুলি দেখে বুঝা যায় যে এই ব্যাখ্যা অতি সরু। ঈশ্বর বৃদ্ধাদের বলেন যে তাদের দান দেওয়ার মত অনেক কিছু আছে: তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের প্রজ্ঞা, তাদের সেবা ও তাদের সময়।
অনেক বার দেখা যায় এমন বিশ্বাসী বৃদ্ধারা যারা ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পরে সম্পূর্ণ টি.ভি., সিরিয়ালে ও আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন – তা হল সময় ও জীবনের কি অপচয়! তারা কত শক্তিশালী ও মঙ্গলের ভূমিকা পালন করতে পারতেন যদি তারা ভাল শ্রোতা, উৎসাহদানকারী ও প্রজ্ঞাপূর্ণ পরামর্শদাতা হতেন।
যুবতীরা তীত ২:৪-৫
- স্বামী ও ছেলেমেয়েদের ভালবাসা, সংসারের দিকে খেয়াল করা … আবারও: যে ভূমিকায় তারা নিজেকে খুঁজে পায় তাতে বিশ্বস্ত হওয়া, অন্যদের সেবা ও মঙ্গল করা, সুযোগ সর্বোচ্চ কাজে লাগানো, যা পায় তা নিয়ে দায়িত্বশীল হওয়া, প্রাণপণে কাজ করা।
নিজেকে দমনে রাখা, সতী থাকা, দয়ালু হওয়া … নিজকে দমনে রাখা আগে যেমন চাওয়া হয়েছে, এখন যুবতীদের ক্ষেত্রেও দাবি করা হয়, কারণ তা ছাড়া পরিবারের সুঅবস্থা ও স্থিরতা রক্ষা করা সম্ভব না। - স্বামীদের অধীনে থাকা যেন ঈশ্বরের বাক্য অসম্মান করা না হয় … স্বামীদের অধীনতা মেনে নেওয়া কি স্ত্রীদের জন্য অনন্ত নীতি বা সাংস্কৃতিক পরিবেশের কারণে প্রয়োজন? এখানে পৌল সংস্কৃতি কারণ হিসাবে দেখান: “যেন বাক্য অসম্মান করা না হয়”। পরস্পর্কের প্রতি বশীভূত হওয়া আদেশ মনে রাখতে হয় (ইফি ৫:২১) এবং স্মরণ করতে হয় যে বশীভূত হওয়া মানে দুইজন সমান মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় একটি সিদ্ধান্ত।
যুবকরা তীত ২:৬
- নিজেকে দমনে রাখা … শুধুমাত্র এই একটি শর্ত পৌল রাখেন? প্রাথমিকভাবে সেই শর্ত কারণ যুবকদের ক্ষেত্রে তা-ই হয়তো এক নম্বর প্রলোভন, পাপের দিকে যাওয়া ও খারাপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রথম বিষয়।
দাসরা তীত ২:৯
আধুনিক যুগে হয়তো দাস-দাসী কম পাওয়া যায় (যদিও এখনও পৃথিবীতে যথেষ্ট নির্যাতন পাওয়া যায়)। কিন্তু বাইবেলে যে পদগুলি দাসদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সেগুলি কাজের মনোভাব, নিয়োগকর্তা ও কর্মচারী সম্পর্ক, আধুনিক চাকরী বা স্বেচ্চায় কাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য:
- সব ব্যাপারে মনিবদের অধীনে থাকা, মনিবদের খুশী করতে চেষ্টা করা … পৌল কর্মীদের মনে-প্রাণে ও চমৎকারভাবে কাজ করতে, স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নিতে, “কোন রকম”, “সর্বনিম্ন মাত্র” বা “অর্ধেক মনা” কাজ না করতে, অভিযোগের মনোভাবে কাজ না করতে।
কথার উপর কথা না বলা … পৌল বিষয়টি উল্লেখ করেন কারণ দাসদের বেশি ক্ষমতা বা অধিকার না থাকলেও কথা বলার ক্ষমতা আছে। পৌল দাসদের তা ভুল ব্যবহার না করতে বরং বাধ্য, ইচ্চুক ও সাহায্যকারী হতে বলেন। - জিনিষ চুরি না করা … একজন দাস তার দাসত্ব চুরি করার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না বরং পৌল দাসদের বিশ্বস্ত ও বিশ্বাসযোগ্য কর্মী হতে বলেন, এমন কর্মী যাদের উপর মনিব নির্ভর করতে পারেন।
- সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্যতর প্রমাণ যেন ঈশ্বরের শিক্ষা সুন্দর করে তোলা … দাসদের বেশি স্বাধীনতা না থাকলেও তাদের কাজের মনোভাব ও বিশ্বস্ততা হল যীশুর গৌরবের জন্য মনিবদের কাছে শক্তিশালী সাক্ষ্য।
এমন কি একজন দাসের একটি শক্তিশালী ভূমিকা, যীশুর উদ্দেশ্য শক্তিশালী সাক্ষ্য দান করার একটি আহ্বান ও দায়িত্ব আছে। দাসরা আদর্শ হতে পারে। যদিও মনিব তাদের বশীভূত হতে বাধ্য করতে পারেন তবুও তারা তাদের মনেপ্রাণে চমৎকার কাজ দ্বারা শক্তিশালী একটি সাক্ষ্য দিতে পারে। মণ্ডলীর ইতিহাস থেকে জানা যায় যে রোমীয় রাজ্যে দাসদের মধ্য দিয়েই সুখবর উঁচু শ্রেণী লোকদের কাছে পৌঁছিয়েছিল।
নেতা হিসাবে তীত তীত ২:২, ৭-৮
পৌল তীতকে ভাল কাজের একটি আদর্শ হতে এবং সত্য শিক্ষা দিতে বলেন, এমন শিক্ষা যাতে সৎ উদ্দেশ্য থাকে, যাতে হালকা মনোভাব না থাকে বরং যার দোষ ধরা যায় না। নেতার ক্ষেত্রে পৌল যত কি বলেছেন না কেন, তা অবশ্যই তীতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি চিন্তা করি তীতের কতটি দলদেরকে দিক-নির্দেশনা দিতে এবং আদর্শ দেখাতে হচ্ছে তবে পরিষ্কার হয়ে যায় তার দায়িত্ব কত বড়:
ছবি
চিঠির মূল অংশগুলি
এই চিঠিতে পৌল যতগুলি ব্যবহারিক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন, যা বাহ্যিক আচার-ব্যবহারের উপরে জোড় দেয়। কিন্তু এই ভাল আচার-ব্যবহারের ভিত্তি কি? ব্যবহারিক দিক-নির্দেশনা কিভাবে বাস্তবভাবে পালন করা সম্ভব? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পৌল তার চিঠিতে গাছের উপমা ব্যবহার করে দেন: ভাল কাজ বা আচার-ব্যবহার হল একটি চোখে পড়ার মত বাহ্যিক ফলাফল। কি সের ফলাফল? প্রথমই দরকার সঠিক বিশ্বাস, যাতে সঠিক মূল্যবোধ ও সঠিক চিন্তা সৃষ্টি হয় … এবং তারই ফলাফল হল ভাল আচরণ।
ছবি
পৌল এই চিঠিতে মোট তিন বার এই ভিত্তিক শিক্ষা পুনরুক্তি করেন। যখন পৌল তীতকে মণ্ডলীকে “সত্য শিক্ষা” দিতে বলেন, তিনি ঠিক সে শিক্ষাটি বুঝান।
তীত ২:১১-১৩
“ঈশ্বরের যে দয়ার দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তা সব মানুষের কাছেই প্রকাশিত হয়েছে। এই দয়াই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা ও জগতের কামনা-বাসনাকে অগ্রাহ্য করে এই জগতেই নিজেদের দমনে রেখে ঈশ্বরভক্তির সংগে সৎ জীবন কাটাই, আর আমাদের মহান ঈশ্বর এবং উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের মহিমাপূর্ণ প্রকাশের আনন্দ-ভরা আশা পুর্ণ হবার জন্যই আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করি।”
- “ঈশ্বরের দয়া প্রকাশিত হয়েছে“ … যীশু পৃথিবীতে আসলেন, এইটি তার রূপক বর্ণনা। আমাদেরই দিয়ে সব কিছু শুরু হয়, তা নয় বরং ঈশ্বর দিয়েই, এমন একজন ঈশ্বর যিনি দয়ালু এবং যিনি নিজেকে দান করেন।
- “যে দয়ার দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তা সব মানুষের কাছেই প্রকাশিত হয়েছে” … পৌলের সুখবরের প্রচারে সব সময় এই বিষয় থাকে: ঈশ্বরের দয়া বা পরিত্রাণ সবার জন্যই। যতজন সাড়া দেয় ততজনকেই স্বাগতম।
- “এই দয়াই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে” … দয়া শুধুমাত্র উদ্ধার করে না, দয়া আমাদের মধ্যে একটি শিক্ষা, একটি প্রশিক্ষণ একটি পরিবর্তন ও একটি শুচিকরণ শুরু করে দেয়।
- “এই দয়াই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা ও জগতের কামনা-বাসনাকে অগ্রাহ্য করে এই জগতেই নিজেদের দমনে রেখে ঈশ্বরভক্তির সংগে সৎ জীবন কাটাই” … দয়ার ফল বা যীশুতে পরিত্রাণ পাওয়ার ফল হল একটি পরিবর্তিত জীবন, ঈশ্বরীয় চরিত্র ও ত্যাগ-স্বীকারের সেবা।
- “আর আমাদের মহান ঈশ্বর এবং উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের মহিমাপূর্ণ প্রকাশের আনন্দ-ভরা আশা পুর্ণ হবার জন্যই আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করি।” … “পরিত্রাণ” তিনটি বিষয় বুঝায়: প্রথম গ্রহণযোগ্য হওয়া (justification), পরে পবিত্র হওয়া (sanctification) এবং মহিমান্বিত হওয়া (glorification)। আমাদের একবারই গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে, আমরা দিনে দিনে পবিত্র জীবন করতে শিখি এবং ঈশ্বর আমাদের অবশেষে মহিমান্বিত করবেন। গ্রহণযোগ্য হওয়া হল এক দিনে যা হয়েছে (“পরিত্রাণ পেলাম”), পবিত্র হওয়া হল আমাদের দৈনিক চ্যালেঞ্জ এবং মহিমান্বিত হওয়া হল ঈশ্বরের নিশ্চিত দান, যে পুরস্কার যা আমাদের বিশ্বস্তভাবে জীবন-যাপন করার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়।
তীত ২:১৪
পৌল আর একবার একই বিষয় সারাংশ করে বলেন: ” যীশু খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন, যেন সমস্ত পাপ থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারেন এবং তাতে এমন একদল লোককে শুচি করতে পারেন যারা কেবল তাঁরই হবে এবং যারা অন্যদের উপকার করতে আগ্রহী হবে।”
তীত ৩:৪-৫
পৌল আর একটি বার একই বিষয় অন্য কথায় বলেন: “কিন্তু যখন আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের দয়া ও ভালবাসা প্রকাশিত হল তখন তিনি পাপ থেকে আমাদের উদ্ধার করলেন। কোন সৎ কাজের জন্য তিনি আমাদের উদ্ধার করেন নি, তাঁর করুণার জন্যই তা করলেন। পবিত্র আত্মার দ্বারা নতুন জন্ম দান করে ও নতুন ভাবে সৃষ্টি করে তিনি আমাদের অন্তর ধূয়ে পরিষ্কার করলেন, আর এইভাবেই তিনি আমাদের উদ্ধার করলেন।”
কেন ঈশ্বর চান যেন তাঁর বিশ্বাসীরা সে পবিত্র ও ঈশ্বরীয় জীবন-যাপন করেন? কারণ এভাবে আমরা সব সময় ঈশ্বরের সঙ্গে সুসম্পর্কে ও সহভাগিতায় থাকতে পারি।
কেউ কেউ বলে যে পৌল তীত চিঠি লেখেন নি কারণ অন্যান্য পুস্তকে পৌল ঈশ্বরের নিঃশর্ত দয়ার উপর বেশি গুরুত্ব দেন কিন্তু তীত চিঠিতে ভাল আচরনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই চিন্তা আসলে ভুল। পৌল সব সময় উভয়ই শিক্ষা দেন:
- বিশ্বাসীরা যীশুর উপর নির্ভর করে তাঁর দয়ায় নিঃশর্তভাবে পরিত্রাণ পায় এবং
- এই চমৎকার পরিত্রাণ পেয়ে বিশ্বাসীর জীবন পরিবর্তিত হওয়ার কথা।
পৌল তার পাঠকদের প্রয়োজন অনুসারে এক চিঠিতে এই বিষয়ের এবং আর এক চিঠিতে ঐ বিষয়ের উপর বেশি জোড় দেন কিন্তু তিনি সব সময় দুইটি বিষয় উল্লেখ করেন। সারাংশে বলা যায়:
দয়া
দয়া আমাদের উদ্ধার করে দয়া আমাদের শিক্ষা দেয়
> নির্দোষ বলে গ্রহণ > পরিবর্তিত জীবন
গ্রহণযোগ্যতা পবিত্রকরণ
যীশুর উপর বিশ্বাস করে যীশু ও পবিত্র আত্মার উপর নির্ভর করে
পাপের শাস্তি থেকে মুক্তি পাপের ক্ষমতা থেকে মুক্তি
এক সময়, সব সময়ের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত অনবরত চলতে থাকবে
নিঃশর্ত আবশ্যক ফলাফল
উদ্ধারকারী দয়া পরিবর্তনকারী দয়া
গালাতীয় পুস্তকে বেশি জোড় পায় তীত পুস্তকে বেশি জোড় পায়
গালাতীয়দের প্রলোভন: নিজের প্রচেষ্টা দ্বারা অর্জন করা ক্রীটীয়দের প্রলোভন। আগের মত চলা
প্রটেস্টেনটরা তার উপর বেশি জোড় দেয় ক্যাথলিকরা তার উপর বেশি জোড় দেয়
আমাদের দুইটি সত্য একসাথে সুখবরের ভিত্তিক শিক্ষা হিসাবে বুঝা, ধরে রাখা ও মানা উচিত। তা যদি করি তবে আমরা হব সে সুসাস্থ্যের গাছ, যা সঠিক বিশ্বাসে দাঁড়ায়, যাতে যথেষ্ট পবিত্র আত্মার ফল পাওয়া যায় এবং যা দ্বারা অন্যরা উপকার পায়।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।