পৌল তার দ্বিতীয় প্রচার যাত্রায় সীল ও তীমথিয়ের সঙ্গে করিন্থীয় মণ্ডলী স্থাপন করেন (৫০-৫২ খ্রীঃ)। তিনি দেড় বছর করিন্থ শহরে থেকে মণ্ডলীকে সময় দেন। এত বেশি সময় তিনি এর পর্যন্ত কোন মণ্ডলী স্থাপনের পিছনে দেন নি (প্রেরিত ১৮:১-১১)। তাই করিন্থীয় মণ্ডলী পৌল এবং তার সহকর্মী প্রিষ্কিল্লা ও আকিলা দ্বারা অনেক শিক্ষা ও শিষ্যত্ব পায়। তিন বছর পার হওয়ার জন্য পৌল ৫৫ খ্রীঃ ১ করিন্থীয় চিঠি লিখেন।
করিন্থ এমন একটি শহর ছিল যা বিশ্বাসীদের জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জস্বরূপ। করিন্থ ছিল বড় একটি নৌবন্দর এবং তার প্রতিমাপূজা, অনৈতিকতা ও পতিতালয়ের জন্য বিখ্যাত। করিন্থের প্রধান দেবী ছিল আফ্রদিত (সৌন্দর্য, কামনা, যৌনতা ও পতিতাদের দেবী)। প্রধান দেব ছিল পোসাইদন (সমুদ্র ও নাবিকদের দেব)। তা ছাড়া আপোল্লর (ভবিষ্যদ্বাণী, গান-বাজনা, শিল্প, মেডিকেল বিজ্ঞান ও দর্শনের দেব) এবং ডিয়োনিসসের পূজা প্রচলিত ছিল (মদ, মাতাল হওয়ার ও হৈ-হুল্লার দেব)।
যখন পৌল ইফিষ শহরে, করিন্থীয়দের কাছ থেকে একটি চিঠি পান, যাতে তারা উপাসনা, মহিলাদের কাপড়, দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা মাংস, প্রভুর ভোজ ও আত্মিক দানের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশ্ন করে (১ করি ৭:১)। হতে পারে স্তিফান, ফর্তুনাত ও আখায়িক, করিন্থীয় মণ্ডলী থেকে একটি দল, এই চিঠি পৌলের কাছে পৌছায় (১ করি ১৬:১৭)। কিন্তু আরো চিন্তাশীল করিন্থীয়রা পৌলের কাছে এসে কথা বলেন, যেমন ক্লোয়ী, একটি মহিলা (১ করি ১:১১)। ক্লোয়ী মণ্ডলীতে কিছু ঘটনা দেখে তিনি দুশ্চিন্তিত, যেমন নেতাদের বিষয়ে মণ্ডলীর মধ্যে বিভেদ, অহংকার, একজন ব্যভিচারী পুরুষ ও বিশ্বাসীদের মধ্যে মামলা।
উত্তরে পৌল একটি চেতনাদায়ক চিঠি লিখেন (১ করিন্থীয়), যেন তারা তাদের অহংকার, স্বার্থপরতা, আত্ম-উপস্থাপনা ও বড় কথা নিয়ে চ্যালেঞ্জ পায় এবং যেন বুঝে যে তার কারণে সেই প্রেমহীন ব্যবহার, তুলনা করার মনোভাব, বিভেদ ও উপাসনায় উৎশৃখলা তৈরি হয়েছে। ১ করিন্থীয় চিঠিতে পৌল তাদের চেতনা দেওয়ার জন্য একশোর চেয়েও বেশি প্রশ্ন করেন যেন তারা বুঝে তাদের ভুল চিন্তা তাদের কোন দিকে নিয়ে গেল। পৌল শক্তিশালীভাবে গ্রীক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ান। গ্রীক সংস্কৃতি বেশি গুরুত্ব দিত একজনের সৌন্দর্য, কথা বলার ক্ষমতা, জ্ঞান-বুদ্ধি ও জনপ্রিয়তা। পৌল দেখান যে খ্রীষ্টীয় মনোভাব হল সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয়: পবিত্র জীবন, পরস্পর্কে প্রেম ও গড়ে তোলা এবং একতা রক্ষা করার প্রচেষ্টা ও নম্রতা।
যত বিভিন্ন ধরণের বিষয় উঠে এসেছে তিনি তা নিয়ে কথা বলেন: মণ্ডলীর মধ্যে বিভেদ, নেতার বড় নাম নিয়ে তর্ক, যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা, মহিলাদের তুচ্ছ করার মনোভাব, বিবাহের বিষয়ে ভুল চিন্তা, প্রতিমা পূজায় উৎসর্গ করা মাংস, শিক্ষকদের টাকার দাবি, আত্মিক দান (অন্য ভাষা, ভাববাণী) এবং পুনরুত্থানের নিশ্চয়তা। তিনি বার বার দেখান যে তাদের সব সমস্যার সমাধান হল স্বার্থহীন প্রেম ও অন্যকে সেবা করার মনোভাব।
করিন্থীয় মণ্ডলীর কিছু সদস্যরা বিশ্বাস করত যে শারীরিক পুনরুত্থান বাস্তব কিছু না। হতে পারে তারা গ্রীক দর্শন দিয়ে প্রভাবিত ছিল যাতে আত্মিক বিষয়ে অতি গুরুত্ব দেওয়া হত (‘কে একটি শারীরিক পুনরুত্থান চাইবে??’ বা ‘আত্মিক হলে পুনরুত্থান কিসের জন্য দরকার??’)। পৌল নিশ্চিত বলেন যে যীশুর শারীরিক পুনরুত্থান হল একটি ঐতিহাসিক বাস্তব ঘটনা যা অনেকে নিজের চোখে দেখেছে। যীশুর পুনরুত্থান চরম গুরুত্বের বিষয়: তা দ্বারা ঈশ্বর ক্রুশে যীশুর ত্যাগ-স্বীকারের মৃত্যুর উপর এবং যীশুতে মানুষের পরিত্রাণের উপর সীলমোহর করলেন।
লেখক
পৌল নিজেকে “ঈশ্বরের ইচ্ছায় তাঁরই আহ্বানে … খ্রীষ্ট যীশুর একজন প্রেরিত” এবং করিন্থীয় চিঠির লেখক হিসাবে চিহ্নিত করেন (১ করি ১:১)। তিনি সোস্থিনিকে ভাই এবং সহ-লেখক হিসাবে উল্লেখ করেন। খুব সম্ভবত সোস্থিনি এমন কেউ ছিলেন যাকে করিন্থীয় মণ্ডলীর লোকেরা চিনত। সম্ভবত তিনি নিজেই করিন্থীয়ের লোক ছিলেন। হতে পারে তিনি ছিলেন ক্লোয়ীর লোকদের মধ্যে একজন যিনি পৌলকে মণ্ডলীর ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন (১ করি ১:১১)। নতুন নিয়মে শুধু আরেকজন সোস্থিনি উল্লিখিত যিনি ছিলেন করিন্থীয় যিহূদী সমাজঘরের কর্তা, যিহূদীরা পৌলকে আক্রমণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে একে মারধর করেছিল (প্রেরিত ১৮:১৭)। হয়তো এই সোস্থিনি পরবর্তীতে বিশ্বাসী হয়ে মণ্ডলীতে যোগ দিয়েছিলেন, তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায় না।
করিন্থীয় মণ্ডলীর ইতিহাস
পৌলের দ্বিতীয় প্রচার যাত্রায় তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা মিলে করিন্থীয় মণ্ডলী স্থাপন করেন। এইসময় তাঁর সঙ্গী ছিল সীল, তীমথিয় এবং দম্পত্তি আকিলা ও প্রিষ্কিল্লা। এই দম্পত্তির সঙ্গে তিনি থাকতেন এবং তাম্বু তৈরির কাজ করতেন (প্রেরিত ১৮:১-২)।
অত্যাচারের কারণে ফিলিপী এবং থিষলনীকী থেকে পৌলকে তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলতে হয়েছিল। যখন পৌল করিন্থ শহরে দীর্ঘসময় থাকার জন্য ঈশ্বর থেকে আদেশ পান এবং একই সাথে প্রতিশ্রুতি পান যে করিন্থ শহরে বিরোধিতা থাকলেও ঈশ্বর রক্ষা করবেন (প্রেরিত ১৮:৯-১০), তখন পৌল এবং তাঁর সহকর্মীরা সেখানে দেড় বছর সময় কাটান এবং মণ্ডলীতে শিষ্যত্ব প্রদান করেন (প্রেরিত ১৮:১১)। সেই সময় স্থাপিত অন্যান্য যে কোন মণ্ডলীর চেয়ে তিনি করিন্থ শহরে দীর্ঘ সময় ছিলেন।
তবুও সেখানে যিহূদীদের পক্ষ থেকে বিরোধিতা ছিল। রোমীয় শাসনকর্তা গাল্লিয়ো দ্বারা যিহূদীরা পৌলকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল (প্রেরিত ১৮:১২-১৭)। সম্রাট নীরোর শিক্ষক সেনেকার শৎ-ভাই গাল্লিয়ো শুধু একবছরের জন্য করিন্থের শাসনকর্তা ছিল (গ্রীষ্ম ৫১- গ্রীষ্ম ৫২ খ্রীঃ), তাই শাসনকর্তা গাল্লিয়োর এই ঘটনা করিন্থে পৌলের সময়কাল বের করতে অনেক সাহায্য করে।
করিন্থ ত্যাগ করার পরে পৌল যিরূশালেমে ফিরে যাওয়ার পরে তার তৃতীয় প্রচার যাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রায় তিনি ইফিষ শহরে আড়াই বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেন। ইফিষ শহর ছিল করিন্থ থেকে এ্যাগিয়ান সাগরের ওপারে অবস্থিত এবং দু’টি শহরের মধ্যে নৌ-সংযোগ ছিল। পৌল প্রায় তিন বছর ইফিষে কাঠানোর পরে, অর্থাৎ ৫৫ খ্রীষ্টাব্দে তখন তিনি করিন্থীয় মণ্ডলীকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি তাদের সতর্ক করেন, মণ্ডলীর বিশ্বাসীরা যেন অনৈতিক বিশ্বাসীদের সাথে মেলামেশা না করে (খুব সম্ভবত ১ করি ৫:৯ পদে উল্লিখিত অনৈতিক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়)। চিঠিটি বাইবেলে সংরক্ষিত নেই। এই চিঠির কথা দ্বারা মণ্ডলীতে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় যে সাধারণভাবে অনৈতিক লোকদের, অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের সাথে মেলামেশা করা উচিত নয়। ১ম করিন্থীয় চিঠিতে পৌল করিন্থীয় মণ্ডলীর এই ভুল ধারণা সংশোধন করেন (১ করি ৫:১০-১১)।
পরবর্তীতে করিন্থীয় বিশ্বাসীরা পৌলের কাছে একটি চিঠি লেখে যেখানে তারা মণ্ডলীর উপাসনার বিষয়ে বেশ কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করে (১ করি ৭:১)। পৌল ৭ অধ্যায় থেকে শুরু করে সামনের অধ্যায়গুলোতে এই সমস্যাগুলো নিয়ে ১ করিন্থীয় চিঠিতে উত্তর দেন। বিষয়গুলো হল: বিবাহ সম্পর্কিত বিষয় (৭ অধ্যায়), প্রতিমার কাছে উৎসর্গকৃত খাবার বিষয় (৮ অধ্যায়), শিক্ষকদের সম্মানী বিষয়ক (৯ অধ্যায়), মহিলাদের মাথায় কাপড় দেওয়া এবং মণ্ডলীতে তাদের পরিচর্যা কাজের বিষয় (১১ অধ্যায়), প্রভুর ভোজের বিষয় (১১ অধ্যায়), পবিত্র আত্মার দান এবং মণ্ডলীতে এর ব্যবহারের বিষয় (১২, ১৪ অধ্যায়) এবং পুনরুত্থান ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, এই ভুল ধারণার বিষয় (১ করি ১৫:১২)।
এছাড়া করিন্থীয় বিশ্বাসীদের একটি প্রতিনিধি দল পৌলের কাছে গিয়েছিল, এরা হলেন স্তিফান, ফর্তুনাত ও আখায়িক (১ করি ১৬:১৭)। তাদের ছাড়া ক্লোয়ীর পাঠানো লোকও পৌলের সাথে দেখা করে (১ করি ১:১১)। ক্লোয়ী ছিলেন করিন্থীয় মণ্ডলীর একজন মহিলা যিনি মণ্ডলীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। পৌল খুব সম্ভবত তাদের প্রতিবেদনের উপরে ভিত্তি করেই চিঠির প্রথম অর্ধেক অংশ লেখেন (১-৬ অধ্যায়), সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করেন, যেমন: মণ্ডলীতে নেতা নিয়ে বিভেদ, দলাদলি (১-৪ অধ্যায়), অহংকার (১ অধ্যায়), নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির যৌন-অনৈতিকতা (৫ অধ্যায়) এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা (৬ অধ্যায়)।
পৌল এতটাই চিন্তিত যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি করিন্থে যেতে চাইলেন, তিনি পঞ্চাশত্তমী পর্যন্ত ইফিষে অবস্থান করার পরে ম্যাসিডোনিয়া হয়ে করিন্থে যাওয়ার পরিকল্পনা নেন। তিনি নিজে যাওয়ার আগে তীমথিয়কে পাঠানোর কথা বিবেচনা করেন যেন তীমথিয় গিয়ে দেখতে পারেন, করিন্থীয় মণ্ডলী তার ১ করিন্থীয় চিঠির প্রতি কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে (১ করি ১৬:১০-১১, প্রেরিত ১৯:২২)।
করিন্থীয় মণ্ডলীর ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
সেই সময় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে করিন্থ ছিল রোমীয় প্রদেশ আখায়ার প্রধান শহর, উভয় রাজনৈতিকভাবে আখায়া প্রদেশের রোমীয় সদর হিসাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে এলাকের প্রধান সমুদ্র বন্দর এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসাবে। এছাড়াও প্রতি দু’বছর পর পর করিন্থ “ইস্টমিয়ান খেলা”র আয়োজন করত (Isthmian games) যা ছিল সেই সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খেলাধুলার প্রতিযোগিতা।
করিন্থ শহর তার সম্পদ, প্রতিমাপূজা এবং বেশ্যাবৃত্তির জন্য অনেক বিখ্যাত ছিল। এক কথায় করিন্থ ছিল গ্রীসের ‘পাপ শহর’।
- করিন্থ শহরের সবচেয়ে প্রিয় দেবী ছিল আফ্রদিত, সৌন্দর্য, প্রেম, প্রলোভন, যৌন-কামনা এবং পতিতাবৃত্তির দেবী। এই দেবীর আরাধনার সময় মন্দির পতিতাদের সাথে যৌনক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল, আর মন্দিরে পতিতাদের সংখ্যা হাজার পর্যন্তও চলে যেত।
সাধারণত বেশ্যাবৃত্তির সাথে সংযুক্ত মহিলারা মাথা অনাবৃত রাখত এবং আফ্রদিত মন্দিরের পতিতারা তাদের মাথা কামাত, অর্থাৎ মাথায় চুল রাখত না। পৌল খুব সম্ভবত এই কারণেই সেই করিন্থীয় বিশ্বাসী মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন (১ করি ১১:৬) কারণ ঢাকা মাথা ছিল আভিজাত্যের মহিলাদের একটি লক্ষণ) এবং সেই সাথে তিনি লম্বা চুল রাখাকে প্রাকৃতিক বিষয় বলে উল্লেখ করেন (১ করি ১১:১৪-১৫) - করিন্থ শহরের প্রধান পুরুষ দেবতা ছিল সমুদ্র, নৌচালনা এবং নাবিকদের দেব পোসাইদন। তার সম্মানেই ইস্টমিয়ান খেলা অনুষ্ঠিত হত।
- আপল্লো বা এপোলো ছিল ভবিষ্যদ্বাণী, সংগীত, বাজনা, মেডিকেল চিকিৎসা, চারুকলা, দর্শন, আইন, পুরুষ সৌন্দর্য এবং সমকামিতার দেব। বিজ্ঞান, যুক্তি এবং দর্শনের বিষয়ে গ্রীকদের মুগ্ধতার মধ্যে এই দেবতার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
- দিয়োনিসস্ ছিল একজন পুরুষ দেবতা যাকে লম্পটতা, অবাধ যৌনতা এবং বুনো আচরণ সহকারে আরাধনা করা হত। দিয়োনিসসের উৎযাপনে বুনো আচরণের অংশ ছিল মহিলাদের খোলা চুল রাখা, এছাড়া বিপরীত যৌনতা গ্রহণ, বিপরীত লিঙ্গের কাপড় পরা, পুরুষদের ক্ষেত্রে লম্বা চুল রাখা এবং মহিলাদের মাথা কামানো। সম্ভবত এই ধরণের পূজার সাথে যেন মণ্ডলীতে কোন সম্পর্কিত ব্যবহার দেখা না যায় পৌল ১ করি ১১:১-১৬ পদে চুলের বিষয়ে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।
গ্রীক সমাজে দেব-দেবীদের পূজা করা এবং মন্দিরের উৎসবে উপস্থিত থাকা ছিল জীবনের একটা মূল বিষয়। পারিবারিক অনুষ্ঠান মন্দিরেই উৎযাপন করা হত, ব্যবসায়িক চুক্তি করার জন্য পেশাগত দেবতার মন্দিরে অনুষ্ঠান করা হত এবং এই ধরণের অনুষ্ঠানে প্রায়ই প্রতিমার কাছে খাবার উৎসর্গ মাংস খাওয়া (৮-১০ অধ্যায়) এবং এমন কি আনুষ্ঠানিক পতিতাবৃত্তিও সংযুক্ত থাকত (৫-৬ অধ্যায়)।
গ্রীক দর্শন ও সংস্কৃতি
গ্রীক দর্শনে জ্ঞানকে অনেক মূল্য দেওয়া হত, জ্ঞানকে এমন কি দেবী হিসাবে পূজা করা হত। তথ্য, জানা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি, যুক্তি ও যুক্ত-তর্ক করার ক্ষমতাও গ্রীক দর্শনে অতি মূল্যবান হিসাবে দেখা হত। তাত্ত্বিক জ্ঞান একাই যথেষ্ট বলে বিবেচনা করা হত, কিন্তু প্রতিদিনের জীবনে জ্ঞানের প্রয়োগকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হত না। বুদ্ধিমত্তা আছে মানেই সে পণ্ডিত এবং প্রজ্ঞাবান। প্রজ্ঞা ছিল মূলত দক্ষতার বিষয়, চরিত্রের বিষয় নয়। বাইবেলের মত ভাল এবং মন্দ বুঝে ভালটা গ্রহণ করা প্রজ্ঞাবানের পরিচয় ছিল না, বরং জানা ও যুক্তি দেখানো আসলটা মনে করা হত।
গ্রীক দর্শনে বাকপটুতাকেও মূল্যবান হিসাবে দেখা হত। যা বলা হয় তা কি সত্য কিনা, এটা বিষয় নয়, বরং যা বলা হয় তার উপস্থাপনা ভাল কিনা, এটা হল আসল বিষয়। উপস্থাপনা, কথা বলার ক্ষমতা, সাবলীলতা এবং যুক্তিভিত্তিক তর্কগুলোকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হত।
সৌন্দর্যকেও অনেক মূল্য দেওয়া হত। ভেতরের চরিত্রের সাথে সৌন্দর্যের কোন সংযোগ ছিল না। সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক চেহারার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। সৌন্দর্য না থাকলে তা মন্দ মনে করা হত, যেমন: বিকলাঙ্গ মানুষদের মন্দ মনে করা হত।
গ্রীক দর্শন ছিল দ্বৈতবাদী, অর্থাৎ বাস্তবতা দ্বিখণ্ডিত মনে করা হত। আধ্যাত্মিক জগত ভাল ও আকর্ষণীয় মনে করা হত কিন্তু বস্তু বা দৈহিক জগত নিকৃষ্ট হিসাবে ঘোষণা করা হত। আর এই মতবাদ দুইটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নিয়ে যায়: উদারতাবাদ এবং তার বিপরীত সন্যাসবাদ। উদারতাবাদপন্থীরা বলে যেহেতু বস্তু জগত এবং দেহ আত্মার চেয়ে নিম্নতর, তাই একজন ব্যক্তি তার দেহের সাথে যা-ই করুক না কেন, তা আত্মাকে প্রভাবিত করতে পারে না। অতএব অনৈতিকতা এবং পতিতাবৃত্তি কোন সমস্যা নয়।
অন্যদিকে সন্যাসবাদ বলে যেহেতু বস্তু জগত ও দেহ মন্দ, তাই এই দেহকে বশীভূত করে আত্মাকে মুক্ত করা দরকার। কিভাবে দেহকে বশীভূত করব? কঠিন উপবাস, শরীরকে ব্যাথা ও কষ্টের মাধ্যমে শাস্তি দান এবং বিবাহকে অস্বীকার করা দ্বারা দেহকে আত্মায় বশীভূত করার চেষ্টা করা হত।
১ম করিন্থীয় চিঠির বিভিন্ন অংশে গ্রীক দর্শন ও সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গর্ব করে বিবাহ অস্বীকার করা ও মহিলাদের সমস্যা মনে করা, এই মনোভাবকেপৌল ১ করিন্থীয় চিঠিতে চ্যালেঞ্জ করেন (১ করি ৭:১-২)। আরো তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন পতিতাবৃত্তির বিষয়ে (১ করি ৬:১২-১৯), অনৈতিকতার বিষয়ে (১ করি ৫:১-১৩), মিথ্যা প্রজ্ঞা ও অহংকারের বিষয়ে (১-৩ অধ্যায়), আত্মিক দানের স্বার্থপর ও নিজেকে উপস্থাপনা করার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিষয়ে (১২,১৪ অধ্যায়) এবং আশেপাশের প্রতিমাপূজার সাথে সমঝোতা/আপোষ করার বিষয়ে (৮,১০ অধ্যায়)। উভয় যারা মহিলাদের বাদ দিতে চান এবং যারা মহিলাদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান, তাদেরকে পৌল বিভিন্ন অংশে কথা লেখেন। এছাড়াও তাদের দলাদলি ভেদাভেদের বিষয়, ভালবাসাহীনতার বিষয় এবং ঈশ্বরের দেওয়া দানের স্বার্থপর ব্যবহারের কথাগুলো ক্রমাগত উল্লেখ করেন।
পৌলের কেন্দ্রীয় উত্তর ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়
গ্রীক দর্শন দিয়ে প্রভাবিত করিন্থীয় মণ্ডলীতে শ্রেষ্ঠত্ব, স্ব-উপস্থাপনা, প্রতিযোগিতা এবং দলাদলির সব প্রচলিত ছিল। এর বিপরীতে পৌলের উত্তর খুবই সহজ: আর তা হল ভালবাসা, ঈশ্বরীয় ভালবাসা, আত্ম-ত্যাগমূলক ভালবাসা, অন্যদের গ্রহণ করার ও গড়ে তোলার/সংশোধনে সাহায্য করে ভালবাসা। তিনি একটি রচনাংশে ভালবাসার একটি অতি চমৎকার বর্ণনা দেন, যা চিঠিটির সমস্ত অংশে সূর্যের বিকিরণের মত ছড়িয়ে পরে। এটি হল সেই নামকরা ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়।
ভালবাসা হল সেই “আরো ভাল পথ” (১ করি ১২:৩১)। অহংকারযুক্ত জীবন এবং শ্রেষ্ঠত্বের দলাদলিতে ভালবাসাই হল উত্তর। সমস্ত আত্মিক দানের সঠিক ব্যবহার একমাত্র ভালবাসা দিয়েই পরিমাপযোগ্য। আত্মিক দানের ব্যবহারের উদ্দেশ্য হতে হয় অন্যকে ভালবাসা। যদি আত্মিক দানের এমন ব্যবহার হয় যে তাতে অন্যকে বৃদ্ধি দান করা না হয়, তাকে গড়ে তোলা না হয় বা উৎসাহিত করা না হয় তাহলে এই দানটি ভুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভালবাসাই অনন্তকাল স্থায়ী হবে, স্থায়ী হবে এমন সময় যখন আত্মিক দানগুলো আর প্রয়োজন নয় (১ করি ১৩:৮-৯)।
আত্মিক দান, জ্ঞান, বুঝার ক্ষমতা, প্রজ্ঞা, বিশ্বাস, আত্ম-ত্যাগ এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, এই সমস্ত আকর্ষণীয় বিষয়গুলো ভালবাসা ছাড়াই মূল্যহীন (১ করি ১৩:১-৩)।
জ্ঞান নয়, স্মার্টনেস নয়, বাকপটুতা বা অতি আত্মিকতা নয় বরং ভালবাসাই হল আসল মানদণ্ড যা দ্বারা সবকিছু পরিমাপ করা প্রয়োজন। এই কারণেই পৌল তার এই চিঠিটি একটি আহ্বান ও চ্যালেঞ্জ দিয়ে শেষ করেন যে “তোমরা যা কিছু কর না কেন ভালবাসার মনোভাব দিয়েই করো” (১ করি ১৬:১৪)।
বিভেদ বা দলাদলি বনাম ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা ১ করিন্থীয় ১ অধ্যায়
পৌল তার চিঠির শুরুতে করিন্থীয় বিশ্বাসীদের একটি ভুল চিন্তা সংশোধন করেন: যাদের কাছ থেকে তারা প্রথম সুসমাচার শুনেছে এবং যাদের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছে, এই বিষয় নিয়ে তারা অহংকার করছে। পৌল, বাকপটু আপল্লো (প্রেরিত ১৮:২৪-২৮), পিতর (১ করি ১:১২) এবং অন্যান্যদের নিয়ে তারা ব্যস্ত, ঠিক যেমন গ্রীক সংস্কৃতিতে বড় পদযুক্ত মানুষের নামের প্রতি একটি আকর্ষণ কাজ করত। ফলে মণ্ডলীতে বিভেদ এবং উঁচু-নীচু ভাব সৃষ্টি হয়েছে। এর বিপরীতে পৌল বলেন যে, কার কাছ থেকে তারা সুসমাচার পেয়েছে অথবা কার কাছে বাপ্তিস্ম নিয়েছে, এর গুরুত্ব খুবই কম, বরং আসল প্রশ্ন হল তারা যীশুর প্রতি সাড়া দিয়েছে কিনা।
পৌল ঈশ্বরীয় জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাথে জগতে প্রচলিত অহংকারী, গ্রীক ধরণের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার তুলনা করেন। তিনি ১ করি ১:২৪-২৫ পদে বলেন “কিন্তু যিহূদী হোক আর গ্রীকই হোক, ঈশ্বর যাদের ডেকেছেন তাদের কাছে সেই খ্রীষ্টই ঈশ্বরের শক্তি আর ঈশ্বরের জ্ঞান। ঈশ্বরের মধ্যে যা মূর্খতা বলে মনে হয় তা মানুষের জ্ঞানের চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞানপূর্ণ, আর যা দুর্বলতা বলে মনে হয় তা মানুষের শক্তির চেয়ে অনেক বেশী শক্তিপূর্ণ”।
নম্রতা এবং ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা ১ করিন্থীয় ২ অধ্যায়
পৌল করিন্থীয়দের স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি কিভাবে করিন্থে এসে তাদের সাথে প্রথমে যীশুর সুসমাচার সহভাগিতা করেছিলেন। রহস্যময় কিছুর মাধ্যমে অথবা সুন্দর ভাষা অথবা খুব জ্ঞানী লোকের মত কথা দ্বারা নয় বরং কেবলমাত্র ক্রুশে দেওয়া খ্রীষ্টকে জানানোর মাধ্যমে, দুর্বলতায়, ভয়ে এবং কাঁপুনির মধ্যে তিনি প্রথম তাদের কাছে প্রচার করেছিলেন (১ করি ২:১-২)।
সংশোধনে একতায় কাজ ১ করিন্থীয় ৩ অধ্যায়
করিন্থীয় বিশ্বাসীরা আত্মিক দানের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন এবং তারা নিজেদের আধ্যাত্মিকতা নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। কিন্তু পৌল তাদের বলেন “যারা আত্মিক সেই রকম লোকদের কাছে যেভাবে কথা বলা উচিত, আমি সেইভাবে কথা বলতে পারি নি, বরং যারা পাপ-স্বভাবের অধীনে আছে তাদের কাছে যেভাবে কথা বলা উচিত, সেইভাবেই তোমাদের কাছে কথা বলেছিলাম। খ্রীষ্টিয় জীবনে তোমরা তো একেবারে শিশুর মত” (১ করি ৩:১)। “তোমাদের মধ্যে যখন হিংসা আর ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে তখন কি তোমরা পাপ-স্বভাবের অধীন নও? আর তোমাদের চালচলন কি একেবারে সাধারণ লোকদের মতই নয়?” (১ করি ৩:৩)। তাদের আত্মিক দান রয়েছে, কিন্তু পবিত্র আত্মার মত আচরণ অথবা তাঁর মনোভাবে সেই দানগুলোর ব্যাবহার করা – তা তাদের নেই।
আত্মিক হওয়ার আসল অর্থ কি, পৌল তার সংজ্ঞা দেন। আত্মিক হওয়া মানে এই নয় যে আত্মিক দান পাওয়াই যথেষ্ট বরং পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হওয়া, আত্মার ফল প্রদর্শন করা, খ্রীষ্টের মত হওয়া, নিঃস্বার্থ, প্রেমময়, সেবা এবং নম্রতার পরিচয় দেখানো, তা-ই হল আত্মিক হওয়া। জাগতিক (পৃথিবীকেন্দ্রিক/অনাধ্যাত্মিক) হওয়া মানে আত্ম-কেন্দ্রিক হওয়া, স্বার্থপর এবং অহংকারী হওয়া। এই সংজ্ঞা অনুসারে করিন্থীয়রা নিজেকে যত ‘আত্মিক’ মনে করে না কেন এবং আত্মিক বিষয়ে যত গুরুত্ব দেয় না কেন, তারা আসলেই বেশি ‘আত্মিক’ নয়, একেবারেই নয়।
পৌল ব্যাখ্যা করেন যে প্রতি প্রেরিতেরই নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে তবে ঈশ্বরই বৃদ্ধি দান করেন। একজনই বীজ বুনেন, আর একজনই পানি দেন, সবাই অংশগ্রহণ করেন যদিও প্রত্যেকের ভূমিকা ভিন্ন। এখানে পৌল নিজের ভূমিকা নিয়ে বড় কথা বলার পরিবর্তে বিভেদের প্রতিরোধ (অস্বীকার) করেন। তিনি দেখান যে মণ্ডলী এবং বিশ্বাসীর ব্যক্তিগত বৃদ্ধি হয় না যখন প্রত্যেকজন নিজের গৌরব প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে অন্য বিশ্বাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে, বরং আত্মিক বৃদ্ধি ঘটে যখন বিশ্বাসীরা একতায় পরস্পর্কে সেবা করে (১ করি ৩:৬-৭)।
আসল প্রেরিতেরা ১ করিন্থীয় ৪ অধ্যায়
করিন্থীয় মণ্ডলীর লোক এবং যারা তাদের সেবা করে সেই প্রেরিতদের মধ্যে পৌল একটি বিদ্রূপাত্মক তুলনা দেখান। করিন্থীয়রা “সব পেয়ে গেছে” এবং তারা “ধনী” (১ করি ৪:৮) কিন্তু প্রেরিতদের বর্ণনায় তিনি বলেন “আমাদের মেরে ফেলা হবে বলে … শেষে রাখা হয় … আমরা সারা জগতের কাছে, অর্থাৎ স্বর্গদূত আর লোকদের কাছে যেন ঠাট্টার পাত্র হয়েছি। আমরা খ্রীষ্টের জন্য মূর্খ হয়েছি … আমরা দুর্বল … আমরা অসম্মান পেয়েছি, আমাদের কাপড়ের অভাব আছে, আমরা ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, আমাদের ঘরবাড়ী নেই এবং আমরা নিজেদের হাতে কাজ করে ক্লান্ত। লোকেরা গালাগালি দিলেও ওদের মংগল কামনা করি, যখন অন্যেরা কষ্ট দেয় তখন সহ্য করি, যখন নিন্দা করে তখন নম্রভাবে উত্তর দেই” (১ করি ৪:৯-১৩)। প্রেরিত হিসাবে পৌল করিন্থয়ীয়দের কাছে পবিত্র আত্মার শক্তি দেখিয়েছেন, তিনি তাদের সামনে সত্যিকারা আধ্যাত্মিকতার আদর্শও দেখিয়েছেন: নিঃশর্ত ভালবাসা, সেবা ও আত্ম-ত্যাগ।
জঘন্য অনৈতিকতা ১ করিন্থীয় ৫ অধ্যায়
১ করিন্থীয় ৫ অধ্যায়ে পৌল মণ্ডলীর আরেকটি সমস্যার সংশোধন করেন, এমন একটি বিষয় যা করিন্থীয়েরা কোন সমস্যা বলেই মনে করে না – ঠিক যেমন তারা অহংকার, দলাদলি ও বিভেদও সমস্যা মনে করে না)। মণ্ডলীর একজন সদস্য নিজের বাবার স্ত্রীর সাথে (অর্থাৎ তার সৎ-মায়ের সাথে অথবা এমন কি তার আপন মায়ের সাথে) যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পৌল এই বিষয়কে এমন একটি অনৈতিক আচরণ বলে উল্লেখ করেন যা এমন কি অযিহূদীরাও করে না (১ করি ৫:১)। বিশৃঙ্খল করিন্থীয় সমাজে অনৈতিকতা এবং ব্যভিচার কোন সমস্যা মনে করত না, কিন্তু এই বিশ্বাসীর আচরণ এমন যে অবিশ্বাসী করিন্থীয়দের কাছেও তা আপত্তিকর! অথচ মণ্ডলী তার এই আচরণ শুধু অনুমোদনই করেছে, তা নয় বরং তারা তাকে খ্রীষ্টিয় স্বাধীনতার জয়চিহ্ন হিসাবে উৎযাপন করছে: “কোন কিছু করা আমার পক্ষে অনুচিত নয়” বা “সব কিছু বৈধ” (১ করি ৬:১২)।
পৌল এই বিষয়টিকেই খুব সম্ভবত তার আগের চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন যা আর সংরক্ষিত নেই। সেখানে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, যারা অনৈতিকভাবে জীবন যাপন করে, তাদের সাথে যেন মণ্ডলীর লোকেরা মেলামেশা না করে (১ করি ৫:৯-১১)। অবিশ্বাসী অনৈতিক মানুষের সাথে মেলামেশা বন্ধ করার কথা পৌল বলেন নি, কিন্তু মণ্ডলীর লোকেরা পৌলকে ভুল বুঝেছিল এবং এই অনৈতিক লোকের বিষয় তখন সমাধান করা হয় নি।
পৌল মণ্ডলীকে নির্দেশ দেন “সেই লোককে শয়তানের হাতে দিয়ে দিতে হবে, যেন তার দেহ ধ্বংস হয় কিন্তু আত্মা প্রভু যীশুর আসবার দিনে উদ্ধার পায়” (১ করি ৫:৫)। পৌল এই ব্যক্তিকে তার মঙ্গলের জন্যই এবং তার অনুতাপের আশায় মণ্ডলী থেকে বিতাড়িত করতে বলেন। এটি হল মণ্ডলীগতভাবে একটি শৃঙ্খলার পদ্ধতি। তাকে বিতাড়িত করা হয়েছে মানে যে এখন তাকে আর খ্রীষ্টেতে ভাই হিসাবে দেখব না, বরং একজন অবিশ্বাসী হিসাবে, এমন একজন যাকে ঈশ্বরের জন্য জিততে হবে।
বিশ্বাসীদের মধ্যে মামলা ১ করিন্থীয় ৬ অধ্যায়
করিন্থীয় বিশ্বাসীরা দ্বন্দ্বের কারণে পরস্পরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করছে। এই বিষয়ে লজ্জিত করার জন্য পৌল তাদের বলেন “তোমাদের মধ্যে সত্যিই কি এমন কোন জ্ঞানী লোক নেই, যে ভাইদের (বিশ্বাসীদের) মধ্যে গোলমালের মীমাংসা করে দিতে পারে?” (১ করি ৬:৫)। এমন একটি মণ্ডলীর জন্য যা নিজেদেরকে প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ মনে করে, কথাটি হল তীব্র একটি তিরস্কার।
পৌল ব্যাখ্যা করেন যে পতিতাদের কাছে যাওয়া কেন বিশ্বাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্য বিষয় হতে পারে না। করিন্থীয় মণ্ডলী গ্রীক দর্শনের দ্বৈতবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল, যাতে দাবি করা হয়ে যে একজন মানুষ নিজের দেহকে নিয়ে কি করে, তা তার আত্মার উপরে কোন প্রভাব ফেলে না। পৌল দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করেন।
বিবাহিত ক্ষেত্রে দায়িত্ব এবং অধিকার ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়
গ্রীক সংস্কৃতির বা দর্শনের প্রভাবে করিন্থীয় বিশ্বাসীরাও মহিলাদের প্রতি নিচু দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। কেউ কেউ মহিলাদের পতিতা হিসাবে ব্যাবহার করতে সমস্যা মনে করে না (১ করি ৬:১২-২০), আবারও কেউ কেউ তাদেরকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে চায় “যদি কেউ বিয়ে না করে তবে সে ভালই করে” (১ করি ৭:১)।
এই অধ্যায়ে পৌল বিবাহ বিষয়ে করিন্থীয় মণ্ডলীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিন। গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে পরিবারের স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবারের সবকিছুর উপরে একমাত্র স্বামী পরিবারের পিতা হিসাবে সম্পূর্ণ ক্ষমতা রাখে। ঐসময়ের গ্রীক লেখাগুলো থেকে বুঝা যায় যে পরিবারে স্বামীর ছিল সব সুযোগ ও অধিকার এবং স্ত্রীর ছিল সব দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু পৌল এর বিপরীতে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়কে অত্যন্ত সমানভাবে অধিকার এবং দায়িত্ব প্রদান করেন।
পৌল আরো একটি অত্যন্ত সাহসী কাজ করেন। তিনি বলেন যে বিবাহ করা ভাল তবে বিবাহ করা বাধ্যতামূলক নয়। একজন পুরুষ বা মহিলা “প্রভুর বিষয়ে চিন্তা করতে পারে“ (১ করি ৭:৩২-৩৪)। এই বিষয়টি একটি সম্পূর্ণ নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য।
পৌল মণ্ডলীতে আরো কয়েকটি দল অথবা পরিস্থিতির বিষয় নিয়ে নির্দেশনা দেন: অবিবাহিত, যারা সম্পর্কে জড়িত, যারা বিবাহিত, যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ কিন্তু যাদের সঙ্গী এখনও বিশ্বাসী হয় নি এবং যারা বিধবা হয়েছে, ওদের বিষয়। তার প্রাথমিক নির্দেশ হল “যে যেমন আছে তেমনই থাকুক” (১ করি ৭:২১-২৪)। তবে যে কেউ বিবাহ করার জন্য মুক্ত। যারা অবিশ্বাসীদের সাথে ইতিমধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ, তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের অনুরোধ করা উচিত নয় তবে সঙ্গী যদি তালাক দেয় তাহলে তাদের বিচ্ছেদের পরে পুনরায় বিবাহ করতে অনুমতি আছে – যদিও তাদের অবশ্যই বিশ্বাসীকে বিবাহ করতে হবে।
প্রতিমাপূজাবিহীন স্বাধীনতা ১ করিন্থীয় ৮ ও ১০ অধ্যায়
গ্রীক সমাজে মন্দিরে প্রতিমাপূজার সময় পশু উৎসর্গ ছিল প্রচলিত প্রথা। এই উৎসর্গের মাংসগুলো প্রথমে প্রতিমার সামনে সমর্পণ করা হত, এরপরে মন্দিরের অনুষ্ঠানে খাওয়া হত অথবা স্থানীয় মাংসের বাজারে বিক্রি করা হত। বিশ্বাসীদের কি এই ধরণের মাংস খাওয়া উচিত হবে?
পৌল উত্তরে বলেন যে মাংস হল শুধুই মাংস এবং এই প্রতিমাগুলো আসলে সাধারণ পাথরের মূর্তি মাত্র। তাই নীতিগতভাবে এই ধরণের মাংস খেতে কোন নিষেধ নেই। সত্যিই “কোন কিছু করা আমার পক্ষে অনুচিত নয়”। কিন্তু যদি একজন বিশ্বাসীর বিবেকে এটা আপত্তিকর মনে হয় তাহলে তার পক্ষে এরকম মাংস খাওয়া উচিত নয়। অথবা যদি একজন বিশ্বাসীর এই ধরণের মাংস খাওয়ার স্বাধীনতা অন্য একজন বিশ্বাসীর বিবেকে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং তার মধ্যে বিবেকের চেতনা অগ্রাহ্য করার প্রলোভন তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে ভালবাসা নির্দেশ দেয় যে অন্য বিশ্বাসীদের বিবেচনা করেই এটা না খাওয়া ভাল।
দেখে মনে হচ্ছে যে করিন্থীয় মণ্ডলীর বিশ্বাসীরা নিজেদের স্বাধীনতা নিয়ে ‘অতিমাত্রায় নিশ্চিত’ ছিল, তাই দশম অধ্যায়ে পৌল কঠোরভাবে তাদেরকে প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন (১ করি ১০:১৪-২২)। যদিও মাংস খাওয়ার বিষয়ে স্বাধীনতা আছে, কিন্তু তারপরেও যে কোন রকম মূর্তিপূজায় অংশগ্রহণ করা করিন্থীয় বিশ্বাসীদের পক্ষে কখনওই উচিত হবে না।
নিঃস্বার্থ প্রেরিতত্ব ১ করিন্থীয় ৯ অধ্যায়
গ্রীক সংস্কৃতিতে একজন ভাল বক্তা বা দর্শনের শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাল পরিমাণে অর্থ দাবি করতে পারতেন। যে শিক্ষক যত বেশি অর্থ দাবি করতে পারতেন তাকে তত সফল ও শক্তিশালী শিক্ষক হিসাবে বিবেচনা করা হত।
পৌল এই ধরণের কাঠামোতে নিজেকে রাখতে রাজি নন। একজন প্রেরিত তার পরিচর্যা দ্বারা যোগান পেতে পারে, পৌল এই অধিকার সমর্থন করেন। মণ্ডলীতে প্রচলিত অনুশীলন থেকে, শাস্ত্র থেকে এবং সাধারণ জ্ঞান বিবেচনা করে পৌল তার এই কথা প্রমান করেন। কিন্তু তিনি নিজের ক্ষেত্রে বলেন যে করিন্থীয়দের মধ্যে থাকার সময় তিনি তার এই অধিকার দাবি করেন নি (প্রেরিত ১৮:৩) এবং যে তিনি তা গৌরবের বিষয় হিসাবে দেখেন (১ করি ৯:১৫-১৮)। যারা তার সমালোচনা করতে চান, তাদের বিপরীতে তিনি এইভাবে নিজের প্রেরিতত্ব এবং আত্মত্যাগের পরিচর্যা রক্ষা করেন (১ করি ৯:১৯-২৩)।
মহিলাদের পোশাক এবং প্রভুর ভোজ ১ করিন্থীয় ১১ অধ্যায়
করিন্থীয় মণ্ডলী যেভাবে তাদের গির্জা সমাবেশে কার্যক্রম চালায়, এই অধ্যায়ে পৌল তা সংশোধন করেন। গির্জা সমাবেশ চলাকালে প্রথমে তিনি মহিলাদের উপযুক্ত আচরণের বিষয়ে নির্দেশ দেন এবং পরে প্রভুর ভোজের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
করিন্থীয় মণ্ডলীর কার্যক্রমে মহিলাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি পৌল খুশি, এবং তিনি সবার সামনে প্রার্থনা এবং ভাববাণী বলার বিষয়েও মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত রাখেন এবং তাদের ভূমিকা পালন করার বিষয়ে সমর্থন দেন (১ করি ১১:৫)। তবে তিনি মহিলাদের এইসমস্ত কার্যক্রমের সময় মাথা ঢেকে রাখার জন্য অনুরোধ করেন এবং মাথা না ঢাকা, খোলা চুল রাখা, মাথা কামানো বা ছোট করে চুল কাটা, এই সমস্ত বিষয়ে আপত্তি জানান। গ্রীক সংস্কৃতিতে উচ্চবিত্ত মহিলারা পরদা পরত কিন্তু দাসীরা পরদা ছাড়া থাকত। এছাড়া পতিতারা তাদের চুল খোলা রাখত এবং আফ্রদিত দেবতার পতিতাদের মাথা কামানো হত। দিয়োনিসস দেবের অনুষ্ঠানগুলোতে খোলা চুল রাখা ছিল বন্য জীবন-যাপনের চিহ্ন। পৌল এই ধরণের নিয়ম বসানোর মাধ্যমে গির্জার কাজে সম্মানজনক উপায়ে মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন এবং তাদেরকে পরিচর্যায় উপযুক্তভাবে ভূমিকা পালন করতে সুযোগ নিশ্চিত করেন। তিনি এমন উপায় খোঁজেন যাতে সমাজ কোনভাবেই মনে করতে না পারে যে, মণ্ডলীর মহিলারা কোন ধরণের অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত আছে। মহিলারা যে মণ্ডলীতে তাদের মধ্যে পরিচর্যা করছে এরজন্য পৌল পুরুষদের গর্বিত হতে বলেন (১ করি ১১:৭, ইংরেজী অনুবাদ)।
তিনি করিন্থীয়দের আবারও সংশোধন করেন কারণ তারা প্রভুর ভোজ (যা রাতের খাবারের অংশ হিসাবে নেওয়া হত) স্বার্থপরভাবে গ্রহণ করছে। তারা একে অপরের জন্য অপেক্ষা করত না, এছাড়া তারা নিশ্চিত করত না যে সবাই প্রভুর ভোজের খাবারে অংশ পায়।
আত্মিক দানের এবং মণ্ডলীর সমাবেশে উপযুক্ত ব্যবহার ১ করিন্থীয় ১২ ও ১৪ অধ্যায়
করিন্থীয় বিশ্বাসীরা নিজেদের/তাদের আধ্যাত্মিক দান নিয়ে গর্বিত ছিল, তারা এই ক্ষমতা প্রকাশ্যে লোকদের দেখাতে ভালবাসত, মাঝে মাঝে স্বার্থপর এবং বিশৃঙ্খল উপায়েও তারা এগুলো দেখাতে পছন্দ করত।
পৌল এর বিপরীতে ব্যাখ্যা করেন যে আধ্যাত্মিক দান আসলে অহংকার করার মত কিছু নয় এবং এখানে যোগ্যতারও কোন বিষয় নেই, বরং এগুলো কেবল উপহার। যেমন এর আগে পৌল বলেছিলেন “তোমার এমন কি আছে যা তুমি দান হিসাবে পাও নি?” (১ করি ৪:৭)। পবিত্র আত্মা তাঁর ইচ্ছানুসারে যে কোন বিশ্বাসীকে যে কোন দান দিতে পারেন (১ করি ১২:৪-৬)। পৌল দেহের বিভিন্ন অঙ্গের বিষয় রূপক আকারে ব্যাবহার করে বুঝান যে প্রতিজনেরই ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ (১ করি ১২:১২-২৬)।
পৌল পর ভাষায় বা ভিন্ন ভাষায় কথা বলার দানকে স্বীকৃতি দেন, কিন্তু তিনি আরো ব্যাখ্যা করেন যে পর ভাষায় কথা বললে যারা এই ভাষা বুঝে না, তাদেরকে কোন সেবা করা হয় না। লাভ শুধু তারই হয় যে বুঝে অথবা যে নিজেই বলে। তাই প্রকাশ্যে সকলের সামনে অথবা মানুষের মনোযোগ আকর্ষনের উদ্দেশ্যে এই দান ব্যাবহার করা উচিত নয়। পৌল দেখান যে ব্যাখ্যা সহ ভাববাণি অথবা ব্যাখ্যা সহ পর ভাষা বেশি কাম্য, কারণ এর দ্বারা অন্যদের সেবা করা হয়।
তাদের সমাবেশে কার্যক্রম যেন কম বিশৃঙ্খল হয়, এরজন্য পৌল নির্দেশনা দেন যে এক সময়ে মাত্র ২ থেকে ৩ জন ভাববাণী দেয় (১ করি ১৪:২৯)। একইভাবে যদি ব্যাখ্যা করার মত মানুষ থাকে তবে মাত্র কয়েকজন যেন পর ভাষায় কথা বলে (১ করি ১৪:২৭-২৮)। যদি ব্যাখ্যা করার মানুষ না থাকে তাহলে তাদের নীরব থাকা উচিত। তিনি মহিলাদেরও উৎসাহিত করেন গির্জা সমাবেশের সময়ে নয় বরং ঘরে যেন তারা স্বামীদের উপসাসনার শিক্ষনীয় বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করে (১ করি ১৪:৩৫) এবং এভাবে গির্জার সমাবেশ কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা কমে। ভাববাদী এবং পর ভাষায় কথা বলা লোকদের কাছে নির্দেশের মত, মহিলাদের নীরব থাকার নির্দেশ চিরস্থায়ী কোন নির্দেশ নয়, বরং এটা সাময়িক নির্দেশ। এটা হল একটা পরিস্থিতিগত নির্দেশ, যা গির্জা সমাবেশে শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য সাময়িকভাবে মানুষকে সীমাবদ্ধ রাখে।
শারীরিক পুনরুত্থান ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়
করিন্থের কিছু বিশ্বাসী বলছিল যে পুনরুত্থান বলতে কিছু নেই (১ করি ১৫:১২)। খুব সম্ভবত তারা আশেপাশের গ্রীক সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল যে সংস্কৃতি আধ্যাত্মিকতায় ছিল মুগ্ধ। এই সংস্কৃতিতে দেহের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হত না বরং আত্মাই ছিল পছন্দের বিষয়। তাই পুনরুত্থানে যে যীশু আবার দেহ ধারন করেছে (এবং বিশ্বাসীদেরকেও ভবিষ্যতে নতুন দেহ দেওয়া হবে), গ্রীক সংস্কৃতিতে তা ছিল আকর্ষণীয় বা কাম্য কোন বিষয় নয়, বরং একটি মূর্খতা। সম্ভবত এই ধারণার ফলাফল হিসাবে মণ্ডলীতে ‘অতি আধ্যাত্মিকতা’ এসেছিল, তারা মনে করত যে ইতিমধ্যে তারা সব পেয়ে গেছে।
নিজের সাক্ষ্য দ্বারা এবং আর অনেক সাক্ষীদের কথা দ্বারা পৌল যীশুর শারীরিক পুনরুত্থানের বিষয়টি ঐতিহাসিক বাস্তবতা হিসাবে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন (১ করি ১৫:৩-১১)। এরপরে তিনি দেখান যে যদি পুনরুত্থান না থাকে, তাহলে যীশুর মৃত্যু একটি দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং সুসমাচার আসলেই অকার্যকর। যীশুর পুনরুত্থানই হল তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর ও তাঁর পরিত্রাণের নিশ্চয়তা ও সীলমোহর।
পৌল দেখান যে, যীশু যেমন প্রথমে পুনরুত্থিত হয়েছেন, শেষ সময়ে যীশুতে যুক্ত সমস্ত মানুষও এরকম শারীরিক পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে যাবে (১ করি ১৫:২৩)। সবাই পুনরুত্থিত হবে, এর অর্থ এই যে মৃত্যু বলতে আর কিছু নেই, মৃত্যুকে ধ্বংস করা হয়েছে (১ করি ১৫:২৬)। সবকিছু যীশুর পায়ের নিচে রাখা হবে (১ করি ১৫:২৭)।
কিন্তু শারীরিক পুনরুত্থান দেখতে কেমন হবে? পৌল উত্তর ব্যাখ্যা করেন যে (১ করি ১৫:৩৫-৫৪) পুনরুত্থিত শরীর হবে আগের শরীরের ধারাবাহিকতা তবে আগের শরীরের চেয়ে নতুন শরীরের বৈশিষ্টগুলো হবে আরো অনেক মহান (যেমন একটি বীজ থেকে গাছ হয় – বীজ ও গাছের মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে কিন্তু বীজের চেয়ে গাছটি অনেক মহান)। সে নতুন শরীর হবে চিরস্থায়ী এবং অমর। পৌল করিন্থীয় বিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ করে তার পুনরুথানের শিক্ষা শেষ করেন যে “শক্ত হয়ে দাড়াও, কোন কিছুই যেন তোমাদের নড়াতে না পারে। সব সময় প্রভুর কাজের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দিয়ে দাও, কারণ তোমরা জান, তাঁর কাজে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়“ (১ করি ১৫:৫৮)।
দানশীলতা এবং ভ্রমণের পরিকল্পনা ১ করিন্থীয় ১৬ অধ্যায়
পৌল তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যেন তারা যিরূশালেম মণ্ডলীর জন্য নিয়মিত ভালবাসার দান দিতে থাকে। তাদের সাথে শীঘ্রই দেখা করার জন্য পৌলের যে ভ্রমণের পরিকল্পনা আছে, তাও তিনি তাদেরকে জানান। তিনি ১ করি ১৬:১৪ পদে তার চিঠির একটি স্মরণীয় সারাংশ দেন “তোমরা যা কিছু কর না কেন ভালবাসার মনোভাব নিয়েই কোরো”।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।