পৌল তীমথিয়কে ইফিষ মণ্ডলীতে ভাল নেতৃত্ব দিতে উৎসাহিত করেন, যেন তিনি মণ্ডলীর জন্য নেতা নিযুক্ত করেন, একটি নির্দিষ্ট মহিলা-শিক্ষিকাকে সাহায্য করেন এবং অনৈতিক ভ্রান্ত শিক্ষকদের প্রভাব বন্ধ করেন।
পৌল এই পালকীয় চিঠি তার বহুদিনের সহকর্মী ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু তীমথিয়ের কাছে লেখেন, যার কাছে তিনি ইফিষ মণ্ডলীর দায়িত্ব দিয়ে চলে গিয়েছেন (১ তীম ১:১-৩)।
পৌল যে তীমথিয়কে ইফিষ শহরে রেখে চলে গিয়েছেন, পৌলের যাত্রার তথ্যের সাথে (যতদূর প্রেরিত পুস্তকে উল্লিখিত) তা সহজে মিলানো যায় না। তাই অনেকে চিন্তা করে যে ১ তীমথিয় চিঠি লেখা হয়েছে প্রেরিত পুস্তকে উল্লিখিত ঘটনার পরে। প্রেরিত পুস্তকে শেষ কথা হল যে পৌল দুই বছর রোমে হাল্কা বন্ধনে আছেন (৬০-৬২ খ্রীঃ) এবং তার শীঘ্রই মুক্তি পাওয়ার আশা আছে (ফিলিপীয় ২:২৪)। তাই চিন্তা করা যায় যে পৌল বন্ধন থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে রোম থেকে গ্রীস এবং এশিয়া মাইনরের দিকে রওনা দেন, যেখানে মণ্ডলীতে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। হয়তো সে সময় (৬৩-৬৪ খ্রীঃ) পৌল তীমথিয়কে ইফিষ শহরে রেখে চলে যান এবং তাকে ১ তীমথিয় চিঠি লেখেন। তীমথিয় দ্বিতীয় প্রচার যাত্রা বা ৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে পৌলের সাহায্যকারী, তাই ১ তীমথিয় চিঠি লেখার সময়ে পৌল ও তীমথিয় তেরো বা চৌদ্দ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করে এসেছেন।
ইতিমধ্যে তীমথিয় বেশ কয়েকটি মণ্ডলীকে দেখাশুনা করেছেন এবং পৌলের জন্য নানা কাজ করেছেন। কিন্তু হতে পারে তীমথিয়ের লাজুক ব্যক্তিত্ব এবং এখনও তুলনামূলকভাবে যুবক বয়সের কারণে (১ তীম ৪:১২) পৌলের এই চিঠি তারপরেও প্রয়োজন। যেহেতু ইফিষীয় মণ্ডলী বড় ছিল এবং যেহেতু একটি মণ্ডলীতে উপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত করা হল কঠিন দায়িত্ব, ১ তীমথিয় চিঠিতে পৌলের সে উৎসাহ, দিক-নির্দেশনা ও অধিকার দান তীমথিয়ের জন্য অনেক সাহায্যকারী ছিল।
হতে পারে আকিলা ও প্রিষ্কিল্লা ইফিষ মণ্ডলীকে স্থাপন করেন (প্রেরিত ১৮:১৮-১৯) এবং অল্পক্ষণের মধ্যে পৌল ও অন্যান্য ভাল শিক্ষক (যেমন আপোল্ল, প্রেরিত ১৮:২৪-২৮) সেখানে পরিচর্যার অংশ গ্রহণ করেন। পৌল ৫৩ থেকে ৫৫ খ্রীষ্টাব্দে ইফিষ তার পরিচর্যার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করেন (প্রেরিত ১৯:৮-১০)। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে সেখানে প্রচার, শিক্ষা দান, কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সম্পূর্ণ জেলায় বহিঃপ্রচার করেন। যখন এক বছর পরে তিনি ইফিষ মণ্ডলীর প্রাচীনদের সাথে দেখা করেন, পৌল দাবি করেন যে তিনি তাদের “ঈশ্বরের সমস্ত মন্ত্রণা জ্ঞাত” করিয়েছিলেন (প্রেরিত ২০:১৭-৩৫)। তিনি আরো বলেন যে ভবিষ্যতে ইফিষ মণ্ডলীতে ভ্রান্ত শিক্ষকদের প্রভাব বিস্তার একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে (প্রেরিত ২০:২৯-৩০)।
ইফিষ শহর ছিল গ্রীক দেবতাপূজা, কালো যাদু, গুপ্ত ভ্রান্ত দল ও নস্টিক শিক্ষার একটি কেন্দ্র এবং শুরু থেকে ইফিষ মণ্ডলীকে অনেক চ্যালেঞ্জ ও শক্তিশালী বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় (প্রেরিত ১৯:১১-৪১, ২ করি ১:৮-৯)। ইফিষ মণ্ডলীকে অনবরতভাবে ভ্রান্ত শিক্ষা ও ভ্রান্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়। পৌল এমন কি পাঁচজন ভ্রান্ত শিক্ষকের নাম উল্লেখ করেন: হুমিনায়, আলেকসান্দর (১ তীম ১:২০), ফুগিল্ল, হর্মগিনি (২ তীম ১:১৫) এবং ফিলীত (২ তীম ২:১৭)। দুইজনকে তিনি এমন কি দুইবার উল্লেখ করেন।
তাই পৌল গুরুত্বের সঙ্গে তীমথিয়কে ঈশ্বরীয় নেতৃত্বে আদর্শ হতে বলেন। পৌল তাকে উৎসাহিত করেন যেন তিনি “খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসের যে সত্য ও নির্ভুল শিক্ষা” মেনে চলে “তাতে পাকা হয়ে খ্রীষ্ট যীশুর একজন উপযুক্ত সেবাকারী” হন (১ তীম ৪:৬), যেন তিনি “ঈশ্বর ভক্তির অভ্যাস” করে “প্রাণপণে পরিশ্রম… এবং আগ্রহের সঙ্গে কাজ” করেন, যেন তিনি “বিশ্বাসীদের কাছে আদর্শ” হন এবং “পবিত্র শাস্ত্র পড়ে শোনানো, প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিজেকে ব্যস্ত” রাখেন (১ তীম ৪:৬-১৬)।
পরে পৌল তীমথিয়কে মণ্ডলীর জন্য ভাল নেতৃত্ব নিযুক্ত করার নির্দেশনা দেন। মণ্ডলীর পরিচালক ও অধ্যক্ষদের এমন লোক হতে হয় যারা সৎ ও স্বনিয়ন্ত্রিত, যারা পবিত্রভাবে জীবন-যাপন করে এবং যাদের অতিথি সেবার মনোভাব আছে (১ তীম ৩:১-১৩)।
পৌল তীমথিয়কে আরো দিক-নির্দেশনা দেন যেন তিনি এমন লোক যারা ভ্রান্ত শিক্ষা দেয়, তাদের চ্যালেঞ্জ করেন এবং – যদি তারা সংশোধনে ভাল সাড়া না দেয় – তবে যেন তিনি তাদের শিক্ষা দানের অধিকার বন্ধ করে দেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আইন-কানুন, বংশ তালিকা ও যিহূদী কাহিনীর উপরে অতি জোর দেয়, কেউ কেউ খাবার ও বিবাহ থেকে দূরে থাকতে বলে। যারা স্বার্থপরতায় (কামনা, নিন্দা, লোভ বা দমনের উদ্দেশ্যে) অন্যদের উপর প্রভাব ফেলে, পৌল তীমথিয়কে তাদের কাজও বন্ধ করতে বলেন।
এমন ভ্রান্ত শিক্ষক যারা সত্যে সাড়া দেয় না এবং যাদের অনুতপ্ত হওয়ার আর আশা নেই, পৌল এই চিঠিতে তাদের চিহ্নিত রাখেন। তারা সবই পুরুষ লোক ছিলেন। পৌল সাধারণভাবে এমন বিধবাদের যারা যেভাবে খুশী জীবন কাটায়, বাড়ী বাড়ী ঘুরে অলস হয়, বাজে কথা বলে এবং পরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তাদের তিনি ধমক দেন (১ তীম ৫:৬, ১৩-১৫)। তা ছাড়া তিনি নির্দিষ্টভাবে ইফিষ মণ্ডলীর একটি মহিলার কথা বলেন, যার নাম উল্লেখ করেন না, যিনি ভ্রান্ত শিক্ষায় ভূমিকা পালন করে। পৌলের আশা আছে যে মহিলাটি সত্য শিক্ষা ও সংশোধন পেয়ে ভাল সাড়া দেবে, তাই তিনি তীমথিয়কে ঠিক তা করতে বলেন (১ তীম ২:১১)। কিন্তু এই মুহূর্তে মহিলাকে মণ্ডলীতে শিক্ষা দানের অনুমতি দেওয়া যাবে না (১ তীম ২:১১-১২)। পরের পদগুলিতে পৌল কিছু প্রচলিত যিহূদী মিথ্যা কাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলেন যার কারণে মহিলাদের দ্বারা ভ্রান্ত শিক্ষা আরো উৎসাহ পেয়েছিল (১ তীম ২:১৩-১৫)। উদাহরণ: একটি যিহূদী কাহিনী বলে যে মহিলারা পুরুষদের আগে সৃষ্টি হয়েছে এবং তারাই হল প্রজ্ঞার উৎস: পুরুষরা মহিলাদের দ্বারা আলোকিত হয়। কাহিনীটি হল আদি ৩:৬ পদের একটি মিথ্যা ব্যাখ্যা যা দাবি করে যে হবার দ্বারা আদম ফল খেয়ে আলোকিত হলেন। তার সংশোধনে পৌল বলেন যে হবা দ্বারা আদমের কাছে প্রজ্ঞা বা জ্ঞান আসে নি, বরং এসেছে পাপ ও প্রতারণা (তীম ২:১৩)। কিন্তু পৌল আদি ৩:১৫ পদে উল্লিখিত উদ্ধারকর্তার প্রতিজ্ঞাও উল্লেখ করেন: মহিলা দ্বারা একটি সন্তান প্রসব করা হবে (যীশু) যার মাধ্যমে শয়তান পরাজিত হবে এবং মানুষের জন্য পরিত্রাণ আসবে (১ তীম ২:১৫)।
চিঠির লেখক ও প্রাপক
প্রেরিত পৌল তার বিশ্বস্ত ও দীর্ঘদিনের সহকর্মী তীমথিয়কে একটি পালকীয় চিঠি লেখেন, যার উপর তিনি ইফিষ মণ্ডলী দেখাশুনার ভার দিয়েছিলেন (১ তীম ১:১-৩)।
চিঠির লেখার তারিখ
১ম তীমথিয় চিঠির লেখার তারিখ খুঁজে বের করা কঠিন কারণ পৌল যে তীমথিয়কে ইফিষীয় মণ্ডলীর দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েই চলে গিয়েছিলেন, এই ঘটনা সমজেই প্রেরিত পুস্তকে উল্লিখিত ঘটনার সাথে মিলানো যায় না। কেউ কেউ মনে করে পৌল যখন তার তৃতীয় প্রচার যাত্রায় যখন তিন বছর ইফিষ শহরে কাটান (৫৫-৫৩ খ্রীঃ) হয়তো তখন তিনি তীমথিয়কে ইফিষ মণ্ডলীর দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েই একটি অল্পদিনের যাত্রায় বের হন। আবারও কেউ কেউ মনে করে যখন করিন্থ মণ্ডলীকে নিয়ে বিরাট একটি দ্বন্দ্ব চলছে এবং পৌল জরুরীভাবে গ্রীস ও করিন্থে রওনা দেন (৫৫ খ্রীঃ, ২ করি ১:১৫-২:৪) হয়তো তখন তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন। কিন্তু চিঠিটিতে পৌল তীমথিয়কে বিশেষভাবে ভ্রান্ত শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বলেন এবং সম্ভাবনা কম যে পৌল এই বিষয়ে হাত না দিয়ে চলে যান এবং এই কঠিন দায়িত্ব যুবক তীমথিয়কে দেন।
একারণে আবারও কেউ কেউ মনে করে যে ১ তীমথিয় চিঠি ও চারিদিকে ঘটনাগুলি প্রেরিত পুস্তকে বর্ণনা করা সময়ের পরে ঘটে। প্রেরিত পুস্তকের শেষে পৌল দুই বছর রোম শহরে হাল্কা ব্ন্ধন আছেন (৬০-৬২ খ্রীঃ, প্রেরিত ১৮:১৬,৩০-৩১) এবং আশা করেন যে তাকে শীঘ্রই মুক্ত করা হবে (ফিলি ২:২৪, ফিলীমন ২২)। সম্ভাবনা বেশি যে পৌলকে জেল থেকে মুক্ত করা হল এবং তিনি রোম ছেড়ে গ্রীস ও এশিয়া মাইনের দিকে রওনা দেন, যেখানে বিভিন্ন মণ্ডলীতে সমস্যা দেখা দিল। তাই যদি হয় তবে পৌল চিঠিটি প্রায় ৬৩-৬৪ খ্রীষ্টাব্দে তার ‘চথুর্ত প্রচার যাত্রায়’ লিখেছিলেন এবং তবে বুঝা যেত কিভাবে মণ্ডলীতে ভ্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল (পৌল ৫৬-৬২ খ্রীঃ পর্যন্ত বন্দী ছিলেন বলে তিনি সেখানে যেতে পারেন না)। কিন্তু এই তারিখের সাথে ৫৬ খ্রীষ্টাব্দে পৌলের কথার সাথে মিল নেই যখন তিনি বলেন যে তার ইফিষ মণ্ডলীর সাথে আর দেখা হবে না (প্রেরিত ২০:২৫,৩৮)। ৬৩ খ্রীষ্টাব্দে যদি তীমথিকে ইফিষে রেখে চলে যান তবে পৌল তো পুনরায় ইফিষে গেলেন।
তীমথিয়ের জীবনের একটি সময় তালিকা
যাত্রা | সাল | পদ | বর্ণনা |
১ম | ৪৮-৪৯ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৮:১-২৩, ২ তীম ৩:১০-১১ | তীমথিয়ের পৌল ও বার্ণবার সঙ্গে দেখা হয়, সুসমাচার পান ও বিশ্বাসী হয়ে যান। |
২য় | ৫০ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৬:১-৩ | তীমথিয়ের সুনাম আছে। তিনি পৌল ও সীলের দলে যোগ দেন। পৌল তাকে সুন্নত করেন। |
৫০ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৭:১৪-১৫ | তীমথিয় ও সীল বিরিয়াতে থাকে যখন পৌল এথেন্সে যান। | |
৫০ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৮:৫ | তীমথিয় ও সীল এথেন্সে ও করিন্থে যান, পৌলের সাথে আবার মিলিত হয় | |
৫০ খ্রীঃ | ১ থিষ ৩:২, ৩:৬ | তীমথিয়কে অত্যাচারিত থিষালনীকীয় মণ্ডলীর কাছে ফিরে পাঠানো হয় যেন খোঁজ নেন তারা কেমন। | |
৫০ খ্রীঃ | ১ থিষ ১:১ | তীমথিয় পৌলকে রিপোর্ট দেন, ১ম থিষলনীকীয় চিঠির সহ-লেখক হন ও হতে পারে চিঠিটি পৌঁছিয়ে দেন। | |
৫১ খ্রীঃ | ২ থিষ ১:১ | তীমথিয় পৌলকে রিপোর্ট দেন, ২য় থিষলনীকীয় চিঠির সহ-লেখক হন ও হতে পারে চিঠিটি পৌঁছিয়ে দেন। | |
৫১-৫২ খ্রীঃ | তীমথিয় পৌল, সীল, প্রিস্কা ও আকিলার সঙ্গে করিন্থ শহরে পরিচর্য্যা করেন। | ||
৫২ খ্রীঃ | তীমথিয় পৌল ও সীলের সঙ্গে ইফিষ, যিরূশালেম ও আন্তিয়খিয়ায় যান। | ||
৩য় | ৫৩ খ্রীঃ | তীমথিয় পৌল ও তার দলের সঙ্গে ইফিষে যান ও পরিচর্য্যা করেন। | |
? | প্রেরিত ১৯:২২ | পৌল তীমথিয় ও ইরাস্তকে ম্যাসিদোনিয়ায় পাঠান। | |
৫৫ খ্রীঃ | ১ করি ৪:১৭ ১ করি ১৬:১০ | করিন্থ মণ্ডলী সম্বন্ধে খারাপ রিপোর্ট পেয়ে পৌল তীমথিয়কে করিন্থে পাঠান দেখার জন্য তার চিঠি (১ করিন্থীয়) কেমন মেনে নেওয়া হয়েছে। | |
৫৬ খ্রীঃ | ২ করি ২:১ | তীমথিয় করিন্থ থেকে খারাপ রিপৌর্ট নিয়ে আসে। উত্তরের পৌল তাড়াতাড়ি করিন্থে যান। | |
৫৬ খ্রীঃ | ২ করি ১:১ | পৌল ও তীমথিয় তীতের অপেক্ষায় ত্রোয়া ও ম্যাসিদোনিয়ায় যান। তীমথিয় ২য় করিন্থীয় চিঠির সহলেখক হন। | |
৫৭ খ্রীঃ | প্রেরিত ২০:৪-৫ | করিন্থে যাওয়ার পরে তীমথিয় পৌলের সঙ্গে ম্যাসিদোনিয়া, ত্রোয়া ও যিরূশালেমে যান। | |
৫৭-৬২ খ্রীঃ | কিছু উল্লেখ নেই। হয়তো তিনি কৈসরিয়ায় ও রোমে বন্দী পৌলের সঙ্গে থাকেন। | ||
৪র্থ | ৬২ খ্রীঃ | পিলী ১:১, কল ১:১, ফিলী ১ | তীমথিয় রোমে পৌলের সঙ্গে আছেন। তিনি ফিলিপীয়, কলসীয় ও ফিলীমনের চিঠির সহ-লেখক হয়ে যান। |
৬২-৬৪ খ্রীঃ | ১ তী ১:৩ | পৌল তীমথিয়কে ইফিষে রেখে যান (?)। | |
৬৪ খ্রীঃ | ২ তী ৪:৯ | পৌল তীমথিয়কে অনুরোধ করেন যেন তিনি তার মৃত্যুর আগে তার কাছে আসেন। ত্রোয়ার কার্প থেকে জিনিষ-পত্র নিয়ে আসতে বলেন। | |
৬৪ খ্রীঃ ? | ইব্রীয় ১৩:২৩ | তীমথিয় বন্দী করা হয়েছে, উদ্ধার আবারও পেয়েছেন। | |
৮১ খ্রীঃ | মণ্ডলীর ঐতিহ্য | ইফিষে একটি দেবতা-পূজার পর্বে তীমথিয়কে লাঠি দিয়ে মেরে ফেলা হয়। |
তীমথিয়ের জীবন ও চরিত্র
তীমথিয় হলেন লূস্ত্রা শহরের একজন যুবক। তার বাবা গ্রীক ও তার মা যিহূদী, তবুও তাকে সুন্নত করা হয় নি। লূস্ত্রা ও কাছের ইকনিয় শহরে তীমিথিয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে (প্রেরতি ১৬:১-৩)। যদিও মণ্ডলীর স্থাপন থেকে পৌলের দ্বিতীয় পরিদর্শন পর্যন্ত বেশি সময় যায় নি (সর্বোচ্চ ২ বছর) যুবক তীমথিয় ইতিমধ্যে একজন মনে-প্রাণের ও আদর্শ বিশ্বাসী হয়ে গেছেন। তিনি সবার সামনে তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন (১ তীম ৬:১২)। তীমথিয় দিদিমা লোয়ী ও তার মা উনীকীর হতে পারে তার আগে বিশ্বাসী হয়েছিলেন (২ তীম ১:৫) এবং তারা তীমথিয়কে ছোটবেলা থেকে গুরুত্বের সঙ্গে যে পবিত্র শাস্ত্রের বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন যা “উদ্ধার পাবার জ্ঞান দিতে পারে” (২ তীম ৩:১৫)। তা ছাড়া তীমথিয় পৌল থেকে শিক্ষা লাভ করতে থাকে; তিনি তার “চালচলন, উদ্দেশ্য, বিশ্বাস, সহ্যগুন ও ধৈর্য ভাল করে লক্ষ্য” করার যথেষ্ট সুযোগ। তিনি হতে পারে এমন কি লূস্ত্রায় পৌলের প্রায়-মৃত্যু নিজের চোখে দেখেছেন এবং তাই ভাল জানেন প্রেরিত হওয়া মানি কি (২ তীম ৩:১০-১১, প্রেরিত ১৪, ৪৭-৪৮ খ্রীঃ)। লক্ষণীয় বিষয় যে তীমথিয় অল্প বয়স ও একটু লাজ্জুক যুবক হলেও পৌলের শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ও তার ত্যাগ-স্বীকারের জীবন দেখে ভয় পায় না।
তীমথিয়ের বসয় কত যখন পৌল তাকে সহকর্মী হিসাবে নিযুক্ত করেন? তা সম্পূর্ণ জানা যাচ্ছে না কিন্তু বেশ কিছু বছর পরে (হয়তো এমন কি চোদ্দ বছর পরে, তা ১ তীমথিয় চিঠি লেখার তারিখের উপর নির্ভর করে) পৌল তীমথিয়কে এখনও বলেন: “তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে” (১ তীম ৪:১২)। তাই বুঝা যায় যে তীমথিয়ের বয়স আসলে খুব কম যখন তিনি পৌলের দলে প্রথম যোগ দেন।
দেখা যায় যে তীমথিয়ের কিছু উৎসাহ প্রয়োজন যেন তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে পরিচর্যার কাজে দিয়ে দেন। পৌল তাকে বলেন “মণ্ডলীর নেতারা যখন তোমার উপরে তাঁদের হাত রেখেছিলেন তখন নবী হিসাবে কথা বলবার মধ্য দিয়ে যে বিশেষ দান তোমাকে দেওয়া হয়েছিল সেই দান তুমি অবহেলা কোরো না” (১ তীম ৪:১৪) এবং “তোমার উপর আমার হাত রাখবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তোমাকে যে বিশেষ দান দিয়েছেন তা আবার জাগিয়ে তোলো” (২ তীম ১:৬)। পৌল তীমথিয়ের ক্ষেত্রে এই আদেশ দিতে প্রয়োজন মনে করেন: “তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে। কথায়, চালচলনে, ভালবাসায়, বিশ্বাসে এবং পবিত্রতায় তুমি বিশ্বাসীদের কাছে আদর্শ হও” (১ তীম ৪:১২)। তিনি তাকে আরো চ্যালেঞ্জ করেন যেন তিনি প্রচার, শিক্ষা দান এবং “পবিত্র শাস্ত্র পড়ে শোনানোর” ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যান (১ তীম ৪:১৩-১৫)। পৌল করিন্থীয় বিশ্বাসীদের বলেন যেন তারা তীমথিয়ের প্রতি ভাল ব্যবহার করেন (১ করি ১৬:১০)। তিনি তীমথিয়কে এমন একজন কাজের লোক হতে বলেন “যে নির্ভুল ভাবে সত্যের বাক্য শিক্ষা দেয়” (২ তীম ২:১৫) এবং তাকে উৎসাহিত করেন যে “ঈশ্বর আমাদের ভয়ের মনোভাব দেন নি; তিনি আমাদের এমন মনোভাব দিয়েছেন যার মধ্যে শক্তি, ভালবাসা ও নিজেকে দমনে রাখবার ক্ষমতা রয়েছে” (২ তীম ১:৮)। এই পদগুলি দেখে বুঝা যায় যে তীমথিয় তেমন স্বক্রিয় বা দুসাহসী প্রেরিত, সুযোগ খুঁজে পাওয়া, সামনে দাঁড়ানো বা নেতৃত্ব ধরার কোন লোক ছিলেন না, হাসি-খুশি নিশ্চিন্তে কিছু ঘটানোরও লোক ছিলেন না বরং শান্ত, একটু লাজ্জুক ও সংকোচের লোক। তাই যদিও পৌল ও তীমথিয়ের ব্যক্তিত্ব বা স্বভাব বেশ ভিন্ন ছিল তবুও পৌল ঠিকই তাকে দলের জন্য নিযুক্ত করেন। তারা বেশ ভিন্ন লোক হলেও তারা বহুবছর একসাথে কাজ করেন এবং তাদের মধ্যে গভীর একটি বন্ধুত্ব ছিল।
পৌল তীমথিয়কে দলে নিযুক্ত করার সাথে সুন্নত করেন যেন তার পরিচর্যা যিহূদীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে (প্রেরিত ১৬:৩)। তিনি তাড়াতাড়ি পৌলের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মী হয়ে যান এবং পৌল তাকে নানা দায়িত্ব দান করেন: পৌল তাকে নতুন স্থাপিত থিষলনীকীয় মণ্ডলীর সাথে রেখে দেন (প্রেরিত ১৭:১), তাকে সীলের পাশে নতুন স্থাপিত বিরিয়ার মণ্ডলীর সাথে রেখে দেন (প্রেরিত ১৭:১৪-১৫), পৌল তাকে দুই বার থিষলনীকীয়ায় ফিরে পাঠান (১ থিষ ৩:৬), তিনি তাকে ইফিষ থেকে ম্যাসিডোনিয়ায় (প্রেরিত ১৯) এবং করিন্থ শহরে (১ করি ৪:১৭, ১৬:১০) এবং রোম থেকে ফিলিপীতে পাঠান (ফিলি ২:১৯) এবং এই চিঠি লেখার সময় পৌল তাকে ইফিষ মণ্ডলীর জন্য দেখাশুনার ভার দিয়ে চলে গেছেন (১ তীম ১:৩)।
তীমথিয় বিভিন্ন দায়িত্ব বা পরিচর্যা দেওয়া হয়: মণ্ডলী নতুন স্থাপন করতে সাহায্য করা, স্থাপিত মণ্ডলীগুলির কাছে বেরাতে যাওয়া ও তাদের খোঁজ নেওয়া (১ থিষ ৩:৬), ভুল চিন্তার সংশোধনের উদ্দেশ্যে শিক্ষা দান (১ তীম ১:৩), ভ্রান্ত শিক্ষকদের সংশোধন করা বা বের করা (২ তীম) এবং পৌল সম্বন্ধে মণ্ডলীদের খোঁজ দেওয়া (ফিলি ২:২৩)।
পৌল তীমথিয়ের ক্ষেত্রে খুব সুন্দর সুপারিশ দেন তার সহকর্মী হিসাবে (রোমীয় ১৬:২১), তার ভাই হিসাবে (২ করি ১:১, কল ১:১, ১ থিষ ৩:২, ইব্রীয় ১৩:২৩), ঈশ্বরের সহ-দাস হিসাবে (ফিলি ১:১) এবং তার “প্রিয় ও বিশ্বস্ত সন্তান” হিসাবে (১ করি ৪:১৭)। পৌল তীমথিয় সম্বন্ধে বলেন: “আমার সংগে এমন আর কেউ নেই, যে তীমথিয়ের মত করে সত্যিই তোমাদের জন্য চিন্তা করে। অন্য সকলে যীশু খ্রীষ্টের ব্যাপারে ব্যস্ত না থেকে নিজেদের ব্যাপারেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তোমরা জান যে, তীমথিয় তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, কারণ যেভাবে ছেলে বাবার সংগে কাজ করে সেইভাবেই তিনি আমার সংগে যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচারের কাজে পরিশ্রম করেছেন” (ফিলি ২:২০-২২)।
পরিচর্যার ক্ষেত্রে তীমথিয় বৃদ্ধি পেতে থাকেন বলে পৌল তাকে আরো বেশি অধিকার ও আরো কঠিন দায়িত্ব দেন: “তুমি ইফিষ শহরেই থাক, যাতে কতগুলো লোককে নির্দেশ দিতে পার যেন তারা আর ভুল শিক্ষা না দেয়” (১ তীম ১:৩), “তুমি এই সব বিষয়ে আদেশ ও শিক্ষা দাও” (১ তীম ৪:১১), “যে দাস খ্রীষ্টে বিশ্বাসী মনিবের অধীন সে যেন বিশ্বাসী ভাই বলেই সেই মনিবকে তুচ্ছ না করে বরং আরও ভালভাবে তাঁর সেবা করে, কারণ তার সেবায় যিনি উপকার পাচ্ছেন তিনি তো বিশ্বাসী এবং তার প্রিয়। এই সব বিষয় শিক্ষা দাও এবং উপদেশ দাও” (১ তীম ৬:২), “এই সব কথা লোকদের মনে করিয়ে দিতে থাক। ঈশ্বরের সামনে তাদের সাবধান করে দাও” (২ তীম ২:১৪) এবং “ঈশ্বরের বাক্য প্রচার কর; সময়ে হোক বা অসময়ে হোক, সব সময়েই প্রচারের জন্য প্রস্তুত থাক; খুব ধৈর্যের সংগে শিক্ষা দিয়ে লোকদের দোষ দেখিয়ে দাও, তাদের সাবধান কর ও উপদেশ দাও” (২ তীম ৪:২)।
১ তীমথিয় চিঠির প্রয়োজনীয়তা
৫০ খ্রীষ্টাব্দে দ্বিতীয় প্রচার যাত্রা থেকে পৌল এবং তীমথিয় একসাথে কাজ করছেন। যখন পৌল ১ তীমথিয় চিঠি লেখেন, তীমথিয় ইতিমধ্যে পৌলের নির্দেশে নানা কাজ ও বিভিন্ন মণ্ডলীর দেখাশুনা করেছেন। সে বড় ইফিষ মণ্ডলীতে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তীমথিয়ের লাজ্জুক ব্যক্তিত্ব এবং তার বয়স কম হওয়ার কারণে আসলে কঠিন ছিল (১ তীম ৪:১২)। তাই এই চিঠিতে পৌল তীমথিয়কে বেশ শক্তিশালীভাবে উৎসাহ, অধিকার ও নির্দেশনা দিতে হচ্ছে।
১ তীমথিয় চিঠিকে ‘পালকীয় চিঠি’ বলা হয় (যেমন ২ তীমথিয় ও তীত চিঠিও) যার অর্থ এই যে পৌল পালক তীমথয়ের উদ্দেশ্যে লেখেন, কিন্তু সাথে সাথে মণ্ডলীর উদ্দেশ্যেও লেখেন। চিঠি যে মণ্ডলীর কাছেও লেখা তা বিভিন্ন পদে বুঝা যায়, যেমন ১ তীম ২:১। পৌল চান যেন ইফিষীয় বিশ্বাসীরা শুনে পৌল তীমথিয়কে কি কি নির্দেশ দেওয়া হয় যেন তারা তীমথিয়ির আচরণ ও আচরণের প্রয়োজনীয়তা বুঝে, তার নেতৃত্ব গ্রহণ করে এবং তাকে সমর্থন করে যখন তিনি নেতাদের নিযুক্ত করেন এবং মণ্ডলীতে খারাপ প্রভাবগুলি বন্ধ করেন।
ইফিষ শহরের ও ইফিষ মণ্ডলীর ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
ইফিষ ছিল একটি প্রাচীন নৌবন্দর, সাগর থেকে একটু ভিতরে নদীর কায়ষ্টারের পাড়ে অবস্থিত। ইফিষ নৌবন্দর থেকে একটি রোমীয় মহাসড়ক পূর্বদিকে যেত, প্রথম কলসী শহরের দিকে, যা দিয়ে রোম রাজ্যের সম্পূর্ণ পূর্ব অঞ্চলে যাওয়া যেত। ইফিষ এলাকায় বন কাটার এবং অতিরিক্তি ছাগল পালার করণে বৃষ্টিতে নদী কায়ষ্টার এমনভাবে পলিমাটি দিয়ে ভরত যে নৌবন্দর বন্ধ হওয়ার পথে ছিল। তাই ইফিষ শহরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমত এবং শহরটি অনেক ক্ষেত্রের ‘আগের মহিমার’ কারণে বেঁচে ছিল।
৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ইফিষ শহরে একটি বিরাত আর্তিমিস (বা ডিয়ানা) মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল। তা ছিল সে যুগের সর্ববৃহৎ মন্দির এবং বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের কার্যের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটি। তাই ইফিষ ছিল আর্তিমিস পূজার বড় একটি কেন্দ্র এবং প্রতিমাপূজার সাথে আসত লাভজনক ব্যবসা এবং মন্দিরের পতিতাদের সাথে ব্যভিচার। পৌলের প্রচারের কারণে যখন এই ব্যবসা কমে গেল তখন ইফিষে বিরাত একটি আন্দোলন হল (প্রেরিত ১৯:২১-৪১)। তা ছাড়া ইফিষ শহর ছিল যাদু বিদ্যা, গুপ্ত ভ্রান্ত দল ও মিশানো ধর্মের একটি কেন্দ্র (প্রেরিত ১৯:১১-২০)।
তাই অবাক লাগে না যে শুরু থেকে ইফিষ মণ্ডলীকে অনেক চ্যালেঞ্জ ও নানা বিরুদ্ধীয় লোকের সম্মুখীন পড়তে হত (প্রেরিত ১৯:১১-৪১, ২ করি ১:৮-৯) এবং তা ছাড়া বিভিন্ন ভ্রান্ত শিক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হত। পাঁচজনই ভ্রান্ত শিক্ষক পৌল নাম ধরে উল্লেখ করেন: হুমিনায় ও আলেক্সান্দর (১ তীম ১:২০), ফুগিল্ল ও হর্মগিনি (২ তীম ১:১৫), আবারও হুমিনায় ও ফিলীত (২ তীম ২:১৭) এবং আবারও আলেকজান্দার (২ তীম ৪:১৪-১৫)। হতে পারে এই আলকজান্দার এবং প্রেরিত ১৯:৩৩ পদে আন্দোলনের ক্ষেত্রে উল্লিখিত আলেকজান্দার হল একটি ব্যক্তি।
ইফিষ মণ্ডলীর সঙ্গে পৌলের ইতিহাস
কমবেশি মণ্ডলীর স্থাপন থেকেই পৌল পরিচর্যায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন, সে চমৎকার সহকর্মী আকিলা ও প্রিসিল্লার সঙ্গে (প্রেরািত ১৮:১৮-১৯) এবং আপল্লোর সঙ্গে (প্রেরিত ১৮:২৪-২৮)। পৌলের তৃতীয় প্রচার যাত্রার সময়ে (৫৩-৫৫ খ্রীঃ) ইফিষ শহর সারা এশিয়া এলাকার পরিচর্যার ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করেন এবং তিনি প্রচার, শিক্ষা দান, কর্মী গঠণ এবং চারিদিকে মণ্ডলী স্থাপন কাজে যথেষ্ট সময় বের করেন। প্রেরিত পুস্তকে পৌলের এই সময় এভাবে সারাংশ করা হয়: “দু’বছর এইভাবেই চলল। তাতে যে যিহূদী ও গ্রীকেরা এশিয়া প্রদেশে থাকত তারা সবাই প্রভুর বাক্য শুনতে পেল” (প্রেরিত ১৯:৮-১০)। প্রকাশিত বাক্যে উল্লিখিত এশিয়ার সাতটি মণ্ডলীগুলি হতে পারে সে সময় স্থাপিত, অথবা পৌলের মধ্য দিয়ে অথবার এমন কর্মীদের মধ্য দিয়ে যাদের পৌল প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ইফিষে, যেমন ইপাফ্রা ও ফিলীমন (প্রকাশিত ২-৩, কল ১:৬-৮, ফিলী ১-৭)।
যখন এক বছর পরে পৌল ইফিষ মণ্ডলীর নেতাদের সাথে কথা বলেন (প্রেরিত ২০:১৭-৩৫) তিনি দাবি করেন যে তিনি তাদের “ঈশ্বরের সমস্ত মন্ত্রণা জ্ঞাত করিতে সঙ্কুচিত হই নাই”, মানে তিনি তাদের সম্পূর্ণভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তার তুলনায় পৌল বেশ কয়েকটি মণ্ডলী খুব তাড়াতাড়ি স্থাপন করেন (যোমন ফিলিপী ও থিষলনীকীয়ায়, প্রেরিত ১৬-১৭)। নেতাদের সাথে পৌলের কথায় তিনি ভবিষ্যদ্বাণী দেন যে ইফিষ শহরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে ভ্রান্ত শিক্ষকদের প্রভাব (প্রেরিত ২০:২৯-৩০), যা পরে ঠিক সেভাবে ঘটে। যখন যোহন প্রকাশিত বাক্য লেখেন যীশু ইফিষ মণ্ডলীেক প্রশংসা করেন কারণ তারা ভ্রান্ত শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল: “আমি জানি তুমি মন্দ লোকদের সহ্য করতে পার না, আর যারা প্রেরিত্ না হয়েও নিজেদের প্রেরিত্ বলে দাবি করে তাদের পরীক্ষা করে দেখেছ এবং তারা যে মিথ্যাবাদী তার প্রমাণও পেয়েছ … নীকলায়তীয়েরা যা করে তা তুমি ঘৃণা কর, আর আমিও তা ঘৃণা করি” (প্রকাশিত ২:২, ২:৬)।
আদর্শ নেতা হিসাবে তীমথিয়
তাই পৌল প্রথমত তীমথিয়কে ঈশ্বরীয় মনোভাবে ও নেতৃত্বের একটি আদর্শ হতে। তিনি তাকে আশা দেন: “খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসের যে সত্য ও নির্ভুল শিক্ষা তুমি মেনে চলেছ, তাতে পাকা হয়ে খ্রীষ্ট যীশুর একজন উপযুক্ত সেবাকারী হবে” এবং তাকে চ্যালেঞ্জ করেন “তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে। কথায়, চালচলনে, ভালবাসায়, বিশ্বাসে এবং পবিত্রতায় তুমি বিশ্বাসীদের কাছে আদর্শ হও” যিনি প্রচার করতে ও শিক্ষা দিতে সক্ষম (১ তীম ৪:৬-১৬)। যখন তিনি মণ্ডলীতে ভাল নেতৃত্ব নিশ্চত করতে চেষ্টা করবেন তখন তারই সে আদর্শ স্বভাব-চরিত্রই হবে তার অধিকারের ভিত্তি।
মণ্ডলীতে নেতা নিযুক্ত
পৌল তীমথিয়কে নির্দেশ দেন কোন ধরণের চরিত্রের ব্যক্তিকে মণ্ডলীর নেতা হিসাবে নিযুক্ত করা দরকার। তিনি দুই ধরণের নেতাদের বর্ণনা করেন: পরিচালক (সাধারণ) বা প্রাচীন (কেরী) ১ তীম ৩:১-৭ পদে এবং পরিচারক (সাধারণ ও কেরী) ১ তীম ৩:৮-১৩ পদে।
পরিচালক বা প্রাচীনদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন “পরিচালককে সেইজন্য এমন হতে হবে যেন কেউ তাঁকে দোষ দিতে না পারে। তাঁর মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে। তিনি নিজেকে দমনে রাখবেন এবং তাঁর ভাল বিচারবুদ্ধি থাকবে। তিনি ভদ্র হবেন ও অতিথি সেবা করতে ভালবাসবেন। অন্যদের শিক্ষাদান করবার ক্ষমতা তাঁর থাকবে। তিনি যেন মাতাল ও বদ্মেজাজী না হন, বরং তাঁর স্বভাব যেন নম্র হয় এবং তিনি যেন ঝগড়াটে বা টাকার লোভী না হন। তিনি যেন উপযুক্তভাবে তাঁর নিজের বাড়ীর সব কিছু পরিচালনা করেন এবং তাঁর ছেলেমেয়েরা যেন বাধ্য ও ভদ্র হয়। যিনি তাঁর নিজের বাড়ীর ব্যাপার পরিচালনা করতে জানেন না তিনি কি করে ঈশ্বরের মণ্ডলীর দেখাশোনা করবেন? মণ্ডলীর পরিচালক যেন নতুন বিশ্বাসী না হন, কারণ নতুন বিশ্বাসী হলে তিনি হয়তো অহংকারে ফুলে উঠবেন এবং শয়তানকে দেওয়া শাস্তির যোগ্য হবেন। বাইরের লোকদের কাছে তাঁর সুনাম থাকা দরকার, যেন তিনি দুর্নামের ভাগী না হন এবং শয়তানের ফাঁদে না পড়েন” (১ তীম ৩:২-৭)।
পৌল যদি বলেন যে “তাঁর মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে” অথবা “এক স্ত্রীর স্বামী” হতে হবে (কেরী) তবে তার অর্থ কি? কেউ কেউ বলেন যে তার মানে সব নেতাদের বিবাহিত হতে হবে। কিন্তু তা দাবি করলে যীশু বা পৌল নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত এবং একজনের স্ত্রী মারা গেলে তবে সাথে সাথে তাকে নেতৃত্ব থেকে নামাতে হবে। এর চেয়ে কথাটির মানে এই: বহুবিবাহের লোক নেতা হতে পারে না কারণ বহুবিবাহ আদর্শ নয়। যদি একজন ইতিমধ্যে কয়েকটি বিবাহ করেছে এবং পরে বিশ্বাসী হয়ে যায় তবে তাকে মণ্ডলীতে গ্রহণ করা উচিত, কিন্তু তাকে আদর্শ বানানো যাবে না।
মণ্ডলীর একজন নেতার “অতিথীপরায়ন” হওয়া দরকার, এমর একজন যিনি মানুষদের পছন্দ করে, যিনি সম্পর্কে গুরুত্ব দেন, যিনি খোলা ও স্বাগতম জানানোর লোক, যিনি লোকদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে না, যিনি নতুন ও ভিন্ন যা গ্রহণ করতে রাজি। তার বড় মনের লোক হওয়া দরকার যিনি নতুন কিছু মুক্ত করতে আগ্রহী।
“স্বনিয়ন্ত্রণ” বা “নিজেকে দমন” হল নেতার ক্ষেত্রে আবশক: ‘তাঁর স্বভাব যেন নম্র হয় এবং তিনি যেন ঝগড়াটে না হন”। মণ্ডলীর নেতার এমন একজন হতে হবে যিনি যত্নশীল, নম্র এবং যিনি অন্যদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেন।
মণ্ডলীর নেতার “টাকার লোভী”, হওয়া চলবে না কারণ লোভ নেতাকে প্রলোভনে ফেলবে নিজের পদ, প্রভাব বা ক্ষমতা নিজের সুবিধায় ব্যবহার করতে। লোভ আস্তে আসতে ঈশ্বরের প্রতি তার সমর্পণ এবং সততা নষ্ট করবে। পরিচর্যার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের সেবার চেয়ে অন্য উদ্দেশ্য থাকলে পরিচর্যা অবশ্যই ভেঙ্গে যাবে। একজন নেতার জন্য প্রধান প্রলোভনগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দীতে একই থেকে গেছে: টাকা-পয়সা, যৌনতা ও দমন। নেতা নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে তার হৃদয়ের উদ্দেশ্যগুলি মূল্যায়ন করা দরকার। কিভাবে আমরা নিজের হৃদয়ে লোভের টান কমাতে পারি? কৃতজ্ঞতা, সন্তোষ ও বিশ্বাস্ততা যদি দৈনিক অভ্যাস বানাই তবে তা সম্ভব।
মণ্ডলীর নেতারা যেন ‘নিজের বাড়ীর সব কিছু পরিচালনা” করেন এবং ছেলেমেয়েদের জন্য এমন আদর্শ হন যাতে এই পরিবারে পরস্পরকে সম্মান ও স্বাধীনতা থাকে এবং যাতে ছেলেমেয়েরা ফুটে উঠে। একটি ঈশ্বরীয় পরিবার হল শক্তিশালী একটি সাক্ষ্য। এই অবস্থা তৈরি হতে পারে না স্ত্রীকে ও ছেলেমেয়েদের দমন করা দ্বারা। ঈশ্বর কখনও জোর করেন না এবং নেতার ক্ষেত্রেও তা চলবে না। যদিও এখানে ছেলেমেয়েদের উপযুক্তি জীবন একটি শর্ত হিসাবে রাখা আছে, ছেলেমেয়েদের নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা আছে এবং তাদের সিদ্ধান্ত সরলভাবে ‘মা-বাবার দোষ’ বলা যাবে না। মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা বলতে কিছু আছে।
একজন নেতার “নতুন বিশ্বাসী না হন, কারণ নতুন বিশ্বাসী” হওয়া উচিত নন। এই ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা দরকার যে পৌল অনেক বার খুব তাড়াতাড়ি নতুন মণ্ডলী স্থাপন করেন এবং বেশ তাড়াতাড়ি নেতাদের নিযুক্তও করেন (প্রেরিত ১৩-১৪ দেখুন)। এমন না যে তিনি ভাল উদ্দেশ্যের ও ঈশ্বরীয় চরিত্রের যুবকদের নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করেন (উদাহরণ: তীমথিয়)। কিন্তু তারপরেও বেশি তাড়াতাড়ি নেতৃত্ব দিলে তা নেতার জন্য অহংকারের প্রলোভন হিসাবে দাঁড়ায় এবং ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তারা ভাল না করার ফলে অনেকে আঘাত পাবে। একজন নতুন বিশ্বাসীর আনন্দ, আগ্রহ, সাহস ও অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সুসমাচার শেয়ার করার ক্ষমতা বেশি, কিন্তু একজন মণ্ডলীর নেতার ভূমিকা বেশ ভিন্ন।
পরিচারকদের নিযুক্ত
পরিচারকদের ক্ষেত্রে পৌলের নির্দেশ এই (১ তীম ৩:৮-১৩): “তেমনি করে পরিচারকেরাও যেন সম্মান পাবার যোগ্য এবং এক কথার লোক হন। তাঁরা যেন মাতাল না হন, আর অন্যায় লাভের দিকে যেন তাঁদের ঝোঁক না থাকে। তাঁরা যেন পরিষ্কার বিবেকে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসের গুপ্ত সত্য ধরে রাখেন। তাঁদের আগে যাচাই করে দেখতে হবে, তারপর যদি তাঁরা নির্দোষ বলে প্রমাণিত হন তবে পরিচারক হতে পারবেন। ঠিক সেইভাবে তাঁদের স্ত্রীরাও যেন সম্মানের যোগ্যা হন। তাঁরা যেন অন্যের দুর্নাম করে না বেড়ান এবং নিজেদের দমনে রাখেন। সব বিষয়ে যেন তাঁদের বিশ্বাস করা যায়। পরিচারকেরও মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে। তিনি যেন ভাল ভাবে তাঁর ছেলেমেয়েদের ও সংসার পরিচালনা করেন। যে পরিচারক ভাল ভাবে কাজ করেন তিনি সম্মান লাভ করেন এবং খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসের দরুন তাঁর অন্তর সাহসে পূর্ণ হয়।”
পরিচালকদের মত পরিচারকদের ক্ষেত্রেও পৌল দাবি করেন যে তারা নিজেকে দমন করেন (জিহ্বার বিষয়ে, মদের বিষয়ে, ইত্যাদি)। পরিচারকদের ক্ষেত্রে তিনি আরো বলেন যেন তারা সম্মান পাওয়ার যোগ্য ব্যবহার করেন, কথা রক্ষা করেন ও আদর্শ জীবনের লোক হয়। আবারও একবিবাহের দাবি করা হয়, বহুবিবাহ একজন পরিচারকের জন্য চলবে না।
পৌল ১১ পদে এভাবে শুরু করেন “ঠিক সেইভাবে …” বা কেরী অনুবাদে “তদ্রূপ স্ত্রীলোকেরাও…”। আসলে এই পদের দুইটি ব্যাখ্যা করা সম্ভব: কেউ কেউ মনে করেন যে পৌল পরিচারকদের স্ত্রীদের বুঝান। আবারও কেউ কেউ মনে করেন যে তিনি পরিচারিকাদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ নির্দেশনা দেন। প্রথম দল তাই বলেন যে পরিচারকের হতে হবে পুরুষ, দ্বিতীয় দল বলে যে এখানে বুঝা যায় যে মণ্ডলীতে মহিলা পরিচারক ছিল। আসলে পৌল একটি তার আর একটি পরিচারিকার খুব সুন্দর সুপারিশ দেন, কিংক্রিয়ার ফৈবীকে (রোম ১৬:১)।
মণ্ডলীতে ভান্ত শিক্ষকদের প্রভাব থামানো
পৌল তীমথিয়কে নিশ্চিত করতে বলেন যে ভুল শিক্ষা মণ্ডলীতে ছড়িয়ে না পড়ে। কে সে লোক যারা ভুল শিক্ষা দেয়? পৌল কম পক্ষে পাঁচজন নাম নিয়ে উল্লেখ করেন: হুমিনায় ও আলেক্সান্দর (১ তীম ১:২০), ফুগিল্ল ও হর্মগিনি (২ তীম ১:১৫), আবারও হুমিনায় ও ফিলীত (২ তীম ২:১৭) এবং আবারও আলেকজান্দার (২ তীম ৪:১৪-১৫)। হতে পারে এই আলকজান্দার এবং প্রেরিত ১৯:৩৩ পদে আন্দোলনের ক্ষেত্রে উল্লিখিত আলেকজান্দার হল একটি ব্যক্তি। তারা এমন লোক যাদের পৌল বিভিন্নভাবে সংশোধন করতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তারা ভাল সাড়া দেয় নি, নম্র হয় নি ও শিখতে রাজি ছিল না। হতে পারে পৌল তাদেরকে মণ্ডলীতে আর শিক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন নি এবং অনেক নিষ্ফল প্রচেষ্টার পরে তাদেরকে মণ্ডলী থেকে বেরও করেছিলেন, যেমন আমরা ১ করিন্থীয় ৫ অধ্যায় পৌলের নির্দেশনার একটি উদাহারণ দেখি।
তারা আসলে কি শিখিয়েছিলেন? তারা “ভুল শিক্ষা” দেন (১ তীম ১:৩)। তারা “মিথ্যা জ্ঞানের ভক্তিহীন বাজে কথা ও স্ববিরোধী শিক্ষা”র উপর গুরত্ব দেয় (১ তীম ৬:২০)। তারা “গল্প-কথায় ও বড় বড় বংশ-তালিকা” নিয়ে ব্যস্ত (১ তীম ১:৩) যা “ঈশ্বরের কাজ বাদ দিয়ে নানা তর্কাতর্কির সৃষ্টি করে” (১ তীম ১:৪) এবং “রাগ বা ঝগড়ার মনোভাব” তৈরি হয় (১ তীম ২:৮)। তারা নিজেরাই না বুঝলেও “মোশির আইন- কানুনের শিক্ষক হতে চায়” (১ তীম ১:৭) এবং “এরা মানুষকে বিয়ে না করবার আদেশ দেয় এবং কোন কোন খাবার খেতে মানা করে” (১ তীম ৪:৩)। চিঠিতে পৌল কি কি শেখান তা দেখে আরো বুঝা যায় যে তারা শিক্ষা দিত যে শুধুমাত্র বিশেষ লোক পরিত্রাণ পায়। তারা উত্তরে পৌল গুরুত্বের সঙ্গে বলেন যে “তিনি চান যেন সবাই পাপ থেকে উদ্ধার পায় এবং খ্রীষ্টের বিষয়ে সত্যকে গভীরভাবে বুঝতে পারে” (১ তীম ২:৪) এবং “তিনিই সব মানুষের উদ্ধারকর্তা” (১ তীম ৪:১০)। তাই পৌল চান যেন সব বিশ্বাসীরা নিজেকে প্রার্থনায়, ভাল কাজে ও ফলবান পরিচর্যায় সমর্পিত করে (১ তীম ২:১-৭)। হতে পারে ভ্রান্ত শিক্ষকরা ঈশ্বরকে একটি দেবতা মাত্র হিসাবে বর্ণনা করত কারণ পৌল উত্তরে ঈশ্বরকে নিয়ে খুব শক্তিশালীভাবে বলেন যে “ঈশ্বর মাত্র একজনই আছেন” (১ তীম ২:৫), যে তিনি “সমস্ত যুগের রাজা, যাঁর কোন ক্ষয় নেই এবং যাঁকে দেখা যায় না, চিরকাল সেই একমাত্র ঈশ্বরের সম্মান ও গৌরব হোক। আমেন” (১ তীম ১:১৭)। তিনি “সেই পরম ধন্য ঈশ্বর, যিনি একমাত্র শাসনকর্তা, যিনি রাজাদের রাজা” (১ তীম ৬:১৫), সে “একমাত্র ঈশ্বরই মৃত্যুর অধীন নন। তিনি এমন আলোতে বাস করেন যেখানে কোন মানুষ যেতে পারে না। কোন মানুষ কোন দিন তাঁকে দেখেও নি, দেখতে পায়ও না। সম্মান এবং ক্ষমতা চিরকাল তাঁরই। আমেন” (১ তীম ৬:১৬)।
পৌল যতজন ভ্রান্ত শিক্ষক নাম দিয়ে উল্লেখ করেন, ততজনই পুরুষ। তারা পৌল থেকে সত্য ও সংশোধন পাওয়ার পরেও সাড়া দেয় নি। কিন্তু ভ্রান্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে মহিলাদেরও একটি ভূমিকা ছিল। পৌল এমন বিধবাদের সংশোধন করতে প্রয়োজন মনে করেন যারা শুধুমাত্র “খুশী জীবন” কাটাতে ব্যস্ত, যারা “বাজে কথা বলতে ও পরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শেখে এবং যা তাদের বলা উচিত নয় সেই সব কথা বলে” এবং যারা নিন্দা করে (১ তীম ৫:৬, ১৩-১৫)। তা ছাড়া চিঠি থেকে বুঝা যায় যে একটি নির্দিষ্ট মহিলাও ছিল, যিনি ভুল শিক্ষা দিয়েছিলেন যার ফলে মণ্ডলীর উপর একটি খারাপ প্রভাব এসেছিল। এই নির্দিষ্ট মহিলার নাম পৌল উল্লেখ করেন না, হতে পারে করণ তার বিষয়ে পৌল আশা আছে যে সত্য ও সংশোধন পেয়ে তিনি ভাল সাড়া দেবেন – একটি আশা যা সে উল্লিখিত পুরুষ ভ্রান্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তার আর নেই। পৌল তীমথিয়কে এই মহিলাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সরাসরি আদেশ দেন: স্ত্রীলোকটি “শিক্ষালাভ করুক” (১ তীম ২:১১)। কিন্তু সংশোধন মেনে নেওয়া ও আরো শিক্ষা লাভ করা পর্যন্ত পৌল তীমথিয়কে নিশ্চিত করতে বলেন যে মহিলাটি মণ্ডলীতে আর শিক্ষা না দেয় (১ তীম ২:১১-১২)। আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য পরবর্তী অংশ দেখুন।
তীমথিয় ২:১-১৫: চিঠির কঠিন একটি অংশ
আসলে তীমথিয় ২:১-১৫ পদ হল চিঠির কঠিন একটি অংশ যাতে অনেক প্রশ্ন এবং কিছু অতি সরু ব্যাখ্যাও সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম সম্পূর্ণ অংশ একসাথে দেখা ভাল: পৌল শুরুতে একটি সাধারণ নীতি দেন, পরে তিনি তার প্রয়োগ হিসাবে দুইটি উদাহরণ দেন: পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ। মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সময় তিনি প্রথম বহুবচনে কথা বলেন (মহিলারা), পরে একবচর ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট মহিলার ক্ষেত্রে প্রয়োগ দেন এবং পরে ফিরে গিয়ে আবার সব মহিলাদের নিয়ে কথা বলেন।
পৌল নীতি দেন (১ তীম ২:১-৭): তিনি সবার জন্য, বিশেষভাবে রাজা ও ক্ষমতাশালীদের জন্য বিনতি করতে বলেন যেন বিশ্বাসীরা “স্থির ও শান্তিপূর্ণ জীবন” কাটাতে পারে (১ তীম ১:১-২)। এভাবে বিশ্বাসীরা একটি ইতিবাচক ও কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে পারবে ঈশ্বরের স্বপ্ন পূর্ণ করার জন্য যে “যেন সবাই পাপ থেকে উদ্ধার পায় এবং খ্রীষ্টের বিষয়ে সত্যকে গভীরভাবে বুঝতে পারে” (১ তীম ২:৩-৪)। “সবাই” বলে পৌল গ্রীকে এমন একটি শব্দ ব্যবহার করেন (‘anthropos’) যা পুরুষ ও মহিলা উভয়কে বুঝায়।
সবার কাছে প্রার্থনা করার আদেশ তিনি পুরুষদের ক্ষেত্রে এভাবে প্রয়োগ করেন (১ তীম ২:৮): তারা যেন “সব জায়গায় পুরুষেরা রাগ বা ঝগড়ার মনোভাব না রেখে খাঁটি অন্তরে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে”। পৌল পুরুষদের দেখান তাদের কষ্টের সময় বা অত্যাচারিত হলেও কিভাবে সাড়া দেওয়া উচিত: বিপ্লব বা আত্ম-রক্ষার চেয়ে আত্ম-সমর্পণ ও সবার মঙ্গল করতে প্রচেষ্টা।
পরের পদে পৌল মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রার্থনার আদেশ প্রয়োগ করেন (১ তীম ২:৯-১০): “ঠিক তেমনি মহিলারাও” বা “সে প্রকারে নারীগণও…” “দ্রভাবে ও ভাল বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে উপযুক্ত কাপড়-চোপড় পরে। তারা যেন নানা রকমে চুলের বেনী বেঁধে, সোনা ও মুক্তার গয়না পরে আর দামী দামী কাপড়-চোপড় দিয়ে নিজেদের না সাজায়। তার বদলে যেন তারা ভাল ভাল কাজ দিয়ে নিজেদের সাজায়। যে স্ত্রীলোকেরা নিজেদের ঈশ্বরভক্ত বলে থাকে সেই স্ত্রীলোকদের পক্ষে সেটাই হবে উপযুক্ত কাজ”। রোমীয় ও গ্রীক সংস্কৃতিতে বেশি সাজ-গোজ ছিল অনৈতিক মহিলাদের চিহ্ন। রোমীয়রা বিশেষভাবে এমন চুলের ষ্টাইল পছন্দ করত যা তৈরি করতে ঘন্টা পর ঘন্টা লাগত। মুক্তা ছিল সবচেয়ে দামী অলংকার, যেমন আধুনিক যুগে হীরা। পৌল মহিলাদের বাহ্যিক বিষয়ে ব্যস্ত থাকার চেয়ে এমন ব্যক্তি হতে বলেন যারা ঈশ্বরভক্ত এবং ভাল কাজে ব্যস্ত যেন তারা মণ্ডলীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।
পৌল পরে একবচন ব্যবহার করে বলেন যে মহিলা “কথা না বলে এবং সম্পূর্ণভাবে বাধ্য থেকে … শিক্ষালাভ করুক” (১ তীম ২:১১-১২)। বাংলা সাধারণ অনুবাদ এখানে “স্ত্রীলোকেরা” রাখা আছে, কিন্তু গ্রীক ভাষায় একবচনই ব্যবহৃদ। ১ করিন্থীয় ৫ অধ্যায়ে দেখা যায়, যখন পৌলের আশা আছে যে ভ্রান্ত শিক্ষায় পড়ে গেছে একজন ব্যক্তি সত্য ও সংশোধন পেয়ে ভালভাবে বাড়া দেবেন তখন তিনি ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন না। ঠিক তেমনি ১ তীমথিয় ২ অধ্যায়ে তিনি মহিলার নাম উল্লেখ করেন না, কারণ তিনি তাকে লজ্জা না দিয়ে বরং নিশ্চিত করতে চান যে তিনি সত্য শিক্ষা ও সংশোধন পাবেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে মণ্ডলীতে শিক্ষা দেওয়া বন্ধ করা দরকার – কারণ তার শিক্ষা ঠিক না। পৌল কখনও নিষেধ করেন না যে ঈশ্বরীয় মহিলারা মণ্ডলীতে কথা বলে (১ করি ১১:৫), তিনি ঈশ্বরীয় মহিলাদেরও শিক্ষা দিতে নিষেধ করেন না (প্রেরিত ১৮:২৬)। পৌল এখানে মহিলাটিকে শিক্ষা দিতে বন্ধ করার আদেশ দেন না কারণ তিনি মহিলা, বরং কারণ তিনি ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন। যখন পৌল বলেন “কথা না বলে এবং সম্পূর্ণভাবে বাধ্য থেকে” শিক্ষালাভ করুক, পৌল গ্রীক একটি শব্দ ব্যবহার করেন (‘hesuchia’) যার অর্থ হল নম্র ও ইচ্ছুক, সমর্পিত ও মেনে নেওয়ার একটি মনোভাব। যিহূদী রব্বিদের লেখাগুলিতে এই একই শব্দ একজন রব্বির সত্যিকারের শিষ্যের মনোভাবের বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত। বাংলা অনুবাদে বলা আছে “শিক্ষালাভ করুক”। অনুবাদটি বেশি শক্তিশালী হয় নি। পৌল তীমথিয়কে আদেশই দেন, এই মহিলাকে শিক্ষা দিতে। গ্রীক ভাষার ব্যাকরণে দুই ধরণের আদেশ আছে, সাধারণ আদেশ ও শক্তিশালী আদেশ। এখানে (১ তীম ২:১১) শক্তিশালীটি আদেশ ব্যবহৃত (‘অবশ্যই তাকে শিক্ষা দাও!’)। আরো আশ্চর্য: ১ তীমথিয় চিঠিতে যত আদেশ পাওয়া যায়, সব হল সাধারণ আদেশ। শুধুমাত্র এই এক আদেশটিই শক্তিশালী আদেশ! পৌল নিশ্চিত করতে চান যে মহিলাটি উপযুক্ত শিক্ষা পান এবং যেন সম্পূর্ণ সংশোধিত হয়ে আবার শিক্ষা দিতে পারেন। কিন্তু এমন সময় পর্যন্ত তার শিক্ষা বন্ধ করতে হয়।
আমরা বাইবেলের বাইরে যিহূদী অন্যান্য লেখাগুলি থেকে জানি যে সে সময়ে নানা ধরণের যিহূদী কাহীনি প্রচলিত ছিল, যার বিরুদ্ধে পৌল ১ তীমথিয় ১:১৪ পদে সাবধাণবাণী দেন। একটি উদাহরণ: একটি প্রচলিত কাহীনি পাপে পতনের ঘটনা (আদি ৩:১-৬) ভিত্তি করে দাবি করত যে মহিলাই পুরুষদের জন্য জ্ঞানের উৎস এবং পুরুষরা শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা জ্ঞান লাভ করতে পারে। অন্য কাহীনি বলত যে মহিলা পুরুষের আগেই সৃষ্টি এবং যে মহিলা দ্বারাই পুরুষ পুরুষ হিসাবে সৃষ্টি হয়েছে। আসলে গ্রীক দেবতা পুজায় বেশ প্রচলিত ছিল যে একজন পুরুষ ‘ধর্মীয় অভিজ্ঞতা’ বা ‘আত্মিক প্রকাশ’ পাওয়ার জন্য দেবীর মন্দিরে গিয়ে আলোকিত হওয়ার জন্য মন্দির বেশ্যার সাথে যৌন সম্পর্ক রাখবে। পৌল এই বিভ্রান্ত গল্পগুলির উত্তরে বলেন “প্রথমে আদমকে ও পরে হবাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল” (১ তীম ২:১৩)। তিনি আরো বলেন যে হবা দ্বারা জ্ঞান বা প্রজ্ঞা আসে নি বরং এসে গেছে পাপ ও প্রতারণা (১ তীম ২:১৪)। পৌলের পরবর্তী পদ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন “তবে তিনি সন্তান জন্ম দেবার মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাবেন” (১ তীম ২:১৫ক)। এই কথার অর্থ কি? যদি আমরা মনি করি তা সব মহিলাদের বিষয়ে সাধারণ নীতি (“মহিলারা সন্তান জন্ম দেওয়ার মধ্য দিয়েই পাপ থেকে উদ্ধার পায়”) তবে পৌলের বাকি লেখাগুলির সাথে এই পদের অমিল: পৌল তার সব লেখাগুলিতে গুরুত্বের সঙ্গে বলেন যে মানুষ তার কাজ বা প্রচেষ্টা দ্বারা কখনও উদ্ধার পেতে পারে না বা ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না (যেমন গালা ২:১৬)। তাই এই ব্যাখ্যা ভুল (চিন্তা করুন এই ব্যাখ্যা আর কত সমস্যা সৃষ্টি করে: তা ঠিক হলে তবে একটি নিঃসন্তান বা অবিবাহিতা মহিলা অথবা একটি ছোটবেলায় মারা যাওয়া মেয়ে কখনও পরিত্রাণ পেতে পারত না!)।
কিন্তু পৌল তাহলে কি বলতে চান? পাশাপাশির পদগুলি লক্ষ্য করলে তা পরিষ্কার হয়ে যায়: পৌল ইফিষ মণ্ডলীতে একটি নির্দিষ্ট মহিলা নিয়ে কথা বলেছিলেন (একবচন), যিনি প্রতারিত। তিনি তাকে হবার সাথে তুলনা করেন, যিনিও প্রতারিত ছিলেন (একবচন)। পতনের পরেই ঈশ্বর হবার কাছে একটি উদ্ধারের প্রতিজ্ঞা দিয়েছিলেন যে তারই বংশ থেকে একটি সন্তান জন্ম নেবেন যিনি সাপের বা শয়তানের মাথা পিষে দেবে (আদি ৩:১৫)। এই উদ্ধারের প্রতিজ্ঞা যীশুই দ্বারা পূর্ণ। যীশুই সে সন্তান যার “জন্ম দেবার মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার” হবা পরিত্রাণ পাবে (১ তীম ২:১৫ক) – এবং মহিলারা পরিত্রাণ পাবে – এবং সবাই পরিত্রাণ পাবে। পৌল বহুবচনের ফিরে এসে বলেন “অবশ্য স্ত্রীলোকদের ভাল বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে বিশ্বাস, ভালবাসা ও পবিত্রতায় চলতে হবে”। পরিত্রাণ পেয়ে অবশ্যই একটি ঈশ্বরীয়ভাবে জীবন-যাপন করা দরকার, এবং এই প্রতারিত ইফিষীয় মহিলার ক্ষেত্রে তার অর্থ এই যে তিনি এখন সে তিনি ভাল শিক্ষা লাভ করে সংশোধিত হন এবং যে তিনি তা হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়ার বারণ মেনে নেন।
সারাংশ করে বলা যায় যে বাইবেলে একটি কঠিন অংশ পেয়ে আমাদের পরিষ্কার শিক্ষার আলোতে তা ব্যাখ্যা করতে হবে। পরিষ্কার পদগুলি অপরিষ্কার পদগুলি ব্যাখ্যা করে, বিপরীত নয়। পৌল এখানে হঠাৎ করে তার সাধারণ শিক্ষার বিপরীত কিছু দাবি করবে না, মানুষের কোন কাজ দ্বারা পরিত্রাণ আসবে না। তা ছাড়া পৌল কোন ঈশ্বরীয় মহিলাকে শিক্ষা দিতে নিষেধ করেন না, শুধুমাত্র ভ্রান্তদের (পুরুষ বা মহিলা হোক) তিনি শিক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন না। তীমথিয়ের কাছে পৌলেরদুইটি পদ দিয়ে তা আরো পরিষ্কার হয়ে যায়: ২ তীমথয় ২:২ পদে পৌল বলেন “অনেক সাক্ষীর সামনে আমার মুখে যে সব শিক্ষার কথা তুমি শুনেছ সেই শিক্ষা ধরে রাখবার জন্য তুমি তা এমন সব বিশ্বস্ত লোকদের দাও যাদের অন্যদের শিক্ষা দেবার যোগ্যতা আছে” । যদি পৌল দাবি করতেন যে শুধুমাত্র পুরুষরা শিক্ষা দানে অনুমদিত তবে তিনি এখানে “লোকদের” পরিবর্তে “পুরুষদের” বলতে পারতেন। কিন্তু গ্রীক ভাষায় যে শব্দ তিনি এই পদে ব্যবহার করেন তা পুরুষ ও মহিলা উভয় বুঝায়। তাই বাংলা অনুবাদ তা উপযুক্তভাবে দেখিয়েছে: “লোকদের”, পুরুষ বা মহিলা হোক। আর একটি উদাহারণ হল ২ তীম ১:৫ ও ৩:১৪-১৫, যেখানে পৌল তীমথিয়কে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি তার দিদিমা লোয়ী ও তার মা উনীকী থেকে কি শিক্ষা পেয়েছে: “কিন্তু তুমি যা শিখেছ এবং নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেছ তাতে স্থির থাক, কারণ কাদের কাছ থেকে তুমি সেগুলো শিখেছ তা তো তুমি জান। ছেলেবেলা থেকে তুমি পবিত্র শাস্ত্র থেকে শিক্ষালাভ করেছ। আর এই পবিত্র শাস্ত্রই তোমাকে খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জ্ঞান দিতে পারে” । এখানে দুইজন ঈশ্বরীয় মহিলা একজন পুরুষকে উপযুক্ত ভাবে ও কার্যকারী ভাবে ঈশ্বরের বাক্য শিখিয়েছেন এবং পৌল তার জন্য তাদের প্রশংসা করেন।
বিধবার বিষয়ে দিকনির্দেশনা
ইফিষ মণ্ডলীতে একটি সমস্যা দেখা দিল: মণ্ডলী অনেকজন বিধবাদের অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন করত এবং তাদের মধ্যে কিছু বিধবা আদর্শ জীবনের ছিল না। বিধবাদের প্রতি মণ্ডলীর দায়িত্ব আসলে কি? সব বিধবাদের প্রতি এই দায়িত্ব আছে না তা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও আচার-ব্যবহারের উপর নির্ভর করে?
পৌল বলেন যে বিধবাদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব ভিত্তিকভাবে তাদের পরিবারের। কোন সন্তান বা নাতী-নাতনী থাকলে দায়িত্ব তাদের (১ তীম ৫:৪,৮,১৬)। যদি একজন বিধবার কেউ নেই তবে মণ্ডলীর দায়িত্ব নেওয়া দরকার। বিধবার প্রতি মণ্ডলীর এই পরিচর্যা গুরুত্বের সঙ্গে করা দরকার (প্রেরিত ৬:১-৬)। কিন্তু পৌল বিধবাদের আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক দাবি করেন: “ভাল কাজের জন্য তার সুনাম থাকতে হবে। এই সব ভাল কাজের মধ্যে রয়েছে-ছেলেমেয়ে মানুষ করা, অতিথি সেবা করা, ঈশ্বরের লোকদের পা ধোওয়ানো, যারা কষ্টে পড়েছে তাদের সাহায্য করা, আর অন্যান্য সৎ কাজে যোগ দেওয়া” (১ তীম ৫:১০)। তিনি আরো দাবি করেন “সে ঈশ্বরের উপরেই তার আশা রেখে দিনরাত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ও অনুরোধ করতে থাকে” (১ তীম ৫:৫)। তাই অন্যদের দিকে না তাকিয়ে বিধবাদের ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে হবে এবং তাদের উপকার করার আগ্রহ এবং একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে, যেমন প্রার্থনা দ্বারা। কিন্তু এমন বিধবাদের যাদের আচার-ব্যবহার ভাল না, তাদের সমর্থ করা র জন্য মণ্ডলী (এবং হয়তো পরিবারও) দায়ী নয়: “কিন্তু যে বিধবা যেভাবে খুশী জীবন কাটায় সে জীবিত অবস্থায়ও মরার মত … এছাড়া তারা বাড়ী বাড়ী ঘুরে অলস হতে শেখে। তারা যে কেবল অলস হয় তা নয়, কিন্তু বাজে কথা বলতে ও পরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শেখে এবং যা তাদের বলা উচিত নয় সেই সব কথা বলে” (১ তীম ৫:৬,১৩)। এই ক্ষেত্রে আমরা বাইবেলের একটি প্রচলিত নিয়মের প্রয়োগ দেখি: প্রত্যেক দায়িত্বের একটি সীমানা আছে, প্রত্যেক অধিকারের একটি সীমানা আছে।
নেতাদের সংশোধন ও সম্মান
পৌল নির্দেশনা দেন যেন মণ্ডলী ভাল নেতাদের সম্মান দেওয়া হয়: “মণ্ডলীর যে সব প্রধান নেতারা ভালভাবে মণ্ডলীর পরিচালনা করেন, বিশেষ করে যাঁরা ঈশ্বরের বাক্য প্রচার ও শিক্ষা দান করবার জন্য পরিশ্রম করেন, তাঁদের পাওনা দ্বিগুণ হওয়া উচিত” (১ তীম ৫:১৭-১৮)। প্রাচীনরা মণ্ডলীকে অনেক সেবা করে ও সবার মঙ্গল চেষ্টা করে, তাই তারা সম্মান পাওয়ার যোগ্য। পৌল নেতাদের সংশোধনের বিষয়ে বলেন “দুই বা তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্য ছাড়া মণ্ডলীর কোন প্রধান নেতার বিরুদ্ধে কোন দোষের কথায় কান দিয়ো না” (১ তীম ৫:১৯-২২)। মণ্ডলীর নেতারা যে মূল্যায়নের বা দায়বদ্ধতার উর্ধ্বে তা নয়। যদি তারা ভাল করেন, তারা দ্বিগুণ সম্মানের যোগ্য। যদি তারা পাপ করে বা সমস্যার কারণ হয়ে যায়, তবে একটি ন্যায্য প্রক্রিয়ায় আসা দরকার (যেমন মথি ১৮:১৫-২০ পদে বা তীত ৩:১০)। পৌল সাবধান করেন যেন মণ্ডলীর সদস্যরা একজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ অতি সহজে গ্রহণ করে না। কিন্তু যদি কয়েজন সাক্ষীর সাক্ষ্য দোষ প্রমাণিত হয় তবে তা অবশ্যই সংশোধনে আনতে হবে এবং লুকিয়ে রেখে অস্বীকার করা যাবে না (উদাহরণ: মণ্ডলী নেতা দ্বারা যৌন নির্যাতন)।
দাসদের কাছে কথা
পৌল দাসদের কাছে বলেন: “যে সব দাসদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তারা সবাই তাদের মনিবদের সমস্ত সম্মান পাবার যোগ্য বলে মনে করুক, যেন কেউ ঈশ্বরের নামের এবং আমাদের শিক্ষার নিন্দা করতে না পারে। যে দাস খ্রীষ্টে বিশ্বাসী মনিবের অধীন সে যেন বিশ্বাসী ভাই বলেই সেই মনিবকে তুচ্ছ না করে বরং আরও ভালভাবে তাঁর সেবা করে, কারণ তার সেবায় যিনি উপকার পাচ্ছেন তিনি তো বিশ্বাসী এবং তার প্রিয়” (১ তীম ৬:১-২)। পৌল নিশ্চিত করেন যেন দাসরা নিজেকে অসহায় বা “বেচারা” মনে না করে বরং যেন তারা বুঝে যে তাদের ভুমিকাই হচ্ছে মনিবদের সামনে ঈশ্বরের নাম বহন করতে এবং তাদের স্বভাব-আচরণ দ্বারা যীশুর জন্য শক্তিশালী সাক্ষী হয়। এমন দাসদের যাদের মনিব বিশ্বাসী তাদেরকে পৌল চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা তা হাল্কা কাজ করার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার না করে বরং তাদেরকে আরো মনে-প্রাণে সেবা করেন।
ধনীদের কাছে কথা
পৌল বিশ্বাসীদের বেশ কড়া সাবধানবাণী দেন যেন তারা ধনের অনুসন্ধান দিয়ে পরিচালিত না হয়। কিন্তু পৌল বিষয়টি ইতিবাচকভাবেও বলেন: “কিন্তু আসলে সন্তুষ্ট মনে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস অনুসারে চললে মহা লাভ হয়”। যারা ধনী তাদেরকে পৌল সঠিক মনোভাব রাখার কিছু ব্যবহারিক নির্দেশনা দেন: ‘যেন তারা অহংকার না করে ও অস্থায়ী ধনের উপর নির্ভর না করে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে। তিনিই ভোগের জন্য সব জিনিস খোলা হাতে আমাদের দান করেন। ধনীদের নির্দেশ দাও যেন তারা অন্যের উপকার করে, সৎ কাজে ব্যস্ত থাকে, খোলা হাতে দান করে এবং তাদের ধন-সম্পত্তির ভাগ অন্যদেরও দেয়। এতে তারা নিজেদের জন্য এমন ধন জমা করবে যা ভবিষ্যতে তাদের পক্ষে একটা শক্ত ভিত্তির মত হবে, যেন সত্যিকারের যে জীবন তা তারা শক্ত করে ধরে রাখতে পারে” (১ তীম ৬:১৭-১৯)। পৌল ধনী হওয়া জন্যই ধনীদের দোষ ধরেন, তা নয়। কিন্তু যেমন তিনি দাসদের ক্ষেত্রেও নির্দেশনা দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি ধনীদের ক্ষেত্রও বলেন যে অবস্থায় তারা নিজেকে খুঁজে পায় না কেন তা যেন তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় দ্বারা ঈশ্বরের রাজ্যের বিস্তারের জন্য ব্যবহার করে।
পৌল একটি চ্যালেঞ্জ দিয়ে তার চিঠি সমাপ্ত করেন: তীমথয়কে এবং আমাদেরকে (১ তীম ৬:২০-২১): “যা রক্ষা করবার জন্য তোমাকে দেওয়া হয়েছে তা ভাল করে রক্ষা কর।”
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।