ওবদিয় পুস্তক হল ইদোম দেশের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ধ্বংসবাণী। লেখকের জীবন সম্বন্ধে পুস্তকে তেমন কোন তথ্য পাওয়া য়ায় না, অর্থাৎ ওবদিয় নিজের নাম ছাড়া কোন পরিচয় দেন না। হয়তো নিজের বিষয়ে মনোযোগ আকৃষ্ট করার চেয়ে তিনি বাণীতে গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। তিনি তার বাণীতে কোন তারিখ অথবা রাজা বা পুরোহিতকে উল্লেখও করেন না। ফলে পুস্তকে উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো ও পুস্তকের লেখার তারিখের বিষয়ে বাইবেল পণ্ডিতেরা বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়, প্রায় ৮৪০ থেকে ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্ব পর্যন্ত।
বাণীর তারিখের বিষয়ে বিভিন্ন মতামত থাকলেও একটি বিষয় পরিষ্কার বুঝা যায়, ওবদিয় একটি খুব নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে কথা বলেন: যিরূশালেমকে আক্রমণ, দখল ও লূটপাট করা হয়েছে এবং পলাতক লোকদেরকে বন্দী করা হয়েছে। এই আক্রমণ ইদোম জাতি দ্বারা হয় নি বরং আর একটি জাতি দ্বারা হয়েছে, যার নাম উল্লেখ নেই। এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে: কেন ঈশ্বর ওবদিয়ের বাণীতে অন্য জাতিটিকে উল্লেখ না করে বরং ইদোম জাতিরই দোষ ধরেন? অন্য জাতিটির কাছে ঈশ্বরের বাণী এখানে দেওয়া হয় নি। কিন্তু ঈশ্বের ওবদিয়ের মধ্য দিয়ে খুব নির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করেন, যিহূদার সেই দুর্দশার দিনে ইদোম জাতির ঠিক কোন আচরনের কারণে ঈশ্বর তাদের দোষ ধরেন:
“তোমার ভাই যাকোবের বিরুদ্ধে অত্যাচারের জন্য তুমি লজ্জায় ঢাকা পড়বে; তুমি চিরকালের জন্য ধ্বংস হবে। অন্য দেশের লোকেরা যখন যাকোবের ধন-সম্পদ নিয়ে যাচ্ছিল…তখন তুমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলে; তুমি তাদের একজনের মত হয়েছিলে। তোমার ভাইয়ের দুর্দশার দিনে তুমি খুশী হয়েছ, যিহূদার লোকদের ধ্বংসের দিনে তাদের বিষয় নিয়ে আনন্দ করেছ এবং তাদের কষ্টের দিনে গর্ব করেছ। আমার লোকদের বিপদের দিনে তুমি তাদের ফটকগুলো দিয়ে ঢুকেছ, তাদের ধ্বংসের দিনে তাদের বিপদ দেখে তুমি খুশী হয়েছ এবং তাদের ধন-সম্পদ দখল করেছ, তাদের পালিয়ে যাওয়া লোকদের মেরে ফেলবার জন্য তুমি তাদের পালাবার রাস্তায় রাস্তায় অপেক্ষা করেছ, আর তাদের কষ্টের দিনে তাদের রক্ষা পাওয়া লোকদের শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছ। এই সব করা তোমার উচিত ছিল না” (ওবদিয় ১০-১৪)।
অন্য একটি জাতি দ্বারা যিহূদার পরাজয়ের ও সর্বনাশের দিনে ইদোম নির্লজ্জভাবে লূটপাট করেছে এবং যিহূদার পলাতক লোকদেরকে শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছে। ইদোমের সেই আনন্দ, বিদ্বেষ, ঘৃণা, প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, বড়াই করা ও অন্যের ক্ষতিতে খুশি হওয়া, এসব নিয়েই ঈশ্বর তাদের দোষ ধরেন। আরো বেশি তিনি তাদের দোষ ধরেন কারণ প্রকৃতপক্ষে যিহূদা ও ইদোম ছিল একই পূর্বপুরুষ থেকে আসা জাতি, অর্থাৎ নিকটতম আত্মীয়, বাণীতে ঈশ্বর যিহূদাকে “তোমার ভাই যাকোব” বলে চিহ্নিত করেন।
এটা হল আদিপুস্তক ২৫:১৯-২৮ পদ থেকে নেওয়া একটি কথা। ইসহাক ও রিবিকার যমজ ছেলে সন্তান হয়েছিল, এষৌ ও যাকোব। যাকোব থেকে ইস্রায়েল জাতি সৃষ্টি হয়েছে (৯৩১ খ্রীষ্টাব্দে ইস্রায়েল বিভক্ত হয়ে দু’টি দেশ তৈরি হয়, ইস্রায়েল ও যিহূদা)। এষৌ, যার অন্য নাম হল ‘ইদোম’ (যার অর্থ হল ‘লাল’, আদি ২৫:৩০), তার কাছ থেকে ইদোম জাতি সৃষ্টি হয়েছে। শুরু থেকেই এই দুই ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা ছিল (আদি ২৫-২৮) কিন্তু সম্পর্কের পুনর্মিলনও ঘটে (আদি ৩২-৩৩)। পরবর্তীতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দুই জাতির মধ্যে শত্রুতা বাড়তে থাকে।
কেউ কেউ ওবদিয়ের বাণীর ব্যাখ্যা এভাবে দেয়: ঈশ্বর প্রত্যেকটি জাতিকে বিচার করবেন যারা তাঁর মনোনীত ইস্রায়েল জাতির বিরুদ্ধে অন্যায় করে (আসল বিষয় হল: মনোনীত হওয়া)। আবারও কেউ কেউ ওবদিয়ের বাণীর ব্যাখ্যা এভাবে দেয়: যদি জাতিদের মধ্যে অন্যায় ঘটে তবে ঈশ্বর তা বিচার করেন। অন্য জাতির ধ্বংস নিয়েই আনন্দ করা, দুর্বল অবস্থায় একটি জাতিকে আরো অত্যাচার করা বা ক্ষোভ ও প্রতিশোধের মনোভাবকে ঈশ্বর বিচার করেন – যে জাতি তা করুক না কেন (আসল বিষয় হল: অন্যায্য আচরণ)। যেভাবে হোক, ওবদিয় পুস্তক হল অক্ষমা, ক্ষোভ, অন্যের কষ্ট নিয়ে আনন্দ করা ও দুর্বলকে অত্যাচার করার বিরুদ্ধে একটি কঠোর সাবধানবাণী এবং এই সাবধানবাণী সব যুগে প্রযোজ্য।
ইদোম কিভাবে এই ভুল মনোভাবে পৌঁছিয়েছিল? ওবদিয় এই বিষয়ে ইদোমের অহংকার, তাদের স্বনির্ভরতা, আত্ম-বিশ্বাস এবং নিজের ক্ষমতার বিষয়ে মিথ্যা বিশ্বাস উল্লেখ করেন: “তুমি পাথরের পাহাড়ের ফাটলে বাস কর এবং উঁচু উঁচু জায়গায় থাক আর মনে মনে বল, ‘কে আমাকে মাটিতে নামাতে পারবে?’ কিন্তু তোমার অন্তরের অহংকারই তোমাকে ঠকিয়েছে। যদিও তুমি ঈগল পাখীর মত উঁচুতে বাসা বাঁধ… তবুও আমি সেখান থেকে তোমাকে নামিয়ে আনব” (ওবদিয় ৩-৪)। ওবদিয় এখানে ইদোম দেশের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে কথা বলেন: ইদোম ছিল আধুনিক যুগের যর্দন দেশে অবস্থিত একটি শুকনা ও পাহাড়ী এলাকা। প্রকৃতপক্ষে ইদোমীয়েরা “ইগল পাখির মত” বড় বড় পাথর খোঁড়ে বাসস্থান ও শহরগুলো বানাত। ফলে তাদের দেশ সহজে আক্রমণ করা যেত না। আজকের বিখ্যাত পর্যটনকারী জায়গা ‘পেত্রা’ ছিল একটি ইদোমীয় শহর। শুধুমাত্র ইদোমের ক্ষেত্রে নয় বরং সব যুগে অহংকার ও মিথ্যা নিশ্চয়তার বিষয়ে ওবদিয়ের সাবধানবাণী প্রযোজ্য।
ওবদিয় কি স্বশরীরে ইদোম দেশে গিয়ে এই বাণী সরাসরিভাবে তাদের কাছে দিয়েছিলেন? অথবা তিনি বাণীটি ইদোমীয় রাষ্ট্রদূতদের কাছে বলেছিলেন (যেমন যিরমিয় করেন, যির ২৭:৩-৪)? অথবা তিনি কি তার বাণী যিহূদার কাছে বলেছিলেন? তাদের বিরুদ্ধে ইদোমের অন্যায় ঈশ্বর দেখেছেন এবং বিচার করবেন, এই সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তিনি কি বাণীটি যিহূদার কাছে বলেছিলেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিশ্চয়তার সঙ্গে দেওয়া যায় না।
ইদোমের বিরুদ্ধে ওবদিয়ের এই ধ্বংসবাণী পূর্ণ হয়: বাবিল ৫৮২ খ্রীষ্টপূর্বে ইদোমকে দখল করে এবং পরবর্তীতে ৪৫০ খ্রীষ্টপূর্বে নাবাতীয়েরা তাদেরকে সেই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যিহূদার দক্ষিণে নেগেভ্ এলাকায় বাস করতে শুরু করে (একারণে নতুন নিয়মে এলাকাটি ‘ইদুমীয়া’ নামে পরিচিত)। ৭০ খ্রীষ্টাব্দে যিহূদী-রোমীয় যুদ্ধের পরে ইদোমীয়েরা ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়।
লেখক ওবদিয়
ওবদিয় নিজের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি নিজের বিষয়ে কোন তথ্য দেন না। ওবদিয়ের নাম মানে ‘সদাপ্রভুর দাস’। নামটি বেশ প্রচলিত ছিল বলে, পুরাতন নিয়মের ওবদিয় নামে আর ১৩জনকে উল্লেখ করা হয়েছে (১ রাজা ১৮:৩-৭, ১ বংশা ৩:২১, ৭:৩, ৮:৩৮, ৯:১৬, ৯:৪৪, ১২:৯, ২৭:১৯, ২ বংশা ১৭:৭, ৩৪:১২, ইষ্রা ৮:৯, নহি ১০:৫, ১২:২৫)। ভাববাদী ওবদিয় নিজের বিষয়ে আর কোনো তথ্য (যেমন বাবার বা গ্রামের নাম) উল্লেখ করেন না, যার কারণে এই ১৩জন ওবদিয়ের মধ্যে একজন নির্দিষ্ট ওবদিয়ের সাথে লেখকের মিল থাকার বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। আসলে লেখক নিজেকে ‘ভাববাদী’ও বলেন না (ওব ১)। সম্ভবত তিনি নম্রভাবে নিজের বিষয়ে মনোযোগ আকৃষ্ট না করে বরং তার বাণীকে গুরুত্ব দিতে চান: বাণীটি ঈশ্বরের কাছ থেকে, তাই বাণীটি গুরুত্বপূর্ণ।
লক্ষণীয় বিষয় যে, মূল চিন্তা ও ভাষার ক্ষেত্রে ওবদিয়ের বাণীটির সাথে যিরমিয় পুস্তকের কিছু পদের বেশ মিল আছে (যির ৪৯:৭-২২)। এই বিষয়ে অবশ্যই কিছু প্রশ্ন আসতে পারে: ওবদিয় ও যিরমিয় পুস্তক কিভাবে সংযুক্ত? তারা কি সমসাময়িক ভাববাদী? ওবদিয় কি যিরমিয়ের কিছু বাক্য নিয়ে সেগুলো নিজের পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন? নাকি যিরমিয় ওবদিয়ের একটি বাণী উল্লেখ করেছিলেন? প্রকৃতপক্ষে যিরমিয় পুস্তকের সেই অধ্যায়গুলোতে (যির ৪৬-৫১ অধ্যায়) যিরমিয় বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে বিচার বাণী সংগ্রহ করে লেখেন। ইদোম দেশ সম্বন্ধে যিরমিয় যখন বাণী সংগ্রহ করেন তখন তিনি ওবদিয়ের বাণীটি সাথে উল্লেখ করেন, তা অবশ্যই সম্ভব।
ওবদিয় কাদের কাছে কথা বলেন বা লেখেন?
ওবদিয় তার বাণীর শুরুতে (ওব ১) পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেন যে, তিনি ইদোম জাতির কাছে কথা বলছেন এবং তিনি তাদেরকে “তোমরা” বলে পুস্তকের প্রায় শেষ পর্যন্ত কথা বলতে থাকেন (ওব ১-১৬)। তিনি ইদোম দেশের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের নিশ্চিত ধ্বংসবাণী ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে দেখান, ঠিক কি মনোভাব ও আচরণের কারণে ঈশ্বর তাদেরকে বিচার করবেন।
ওবদিয় কি স্বশরীরে ইদোম দেশে গিয়ে বাণীটি সরাসরিভাবে তাদের কাছে দিয়েছিলেন? ভাববাদী যোনা যেভাবে অন্য একটি জাতির কাছে গিয়ে কথা বলেছিলেন, ওবদিয়ও কি সেভাবে করেছিলেন? তা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায় না। অথবা ওবদিয় কি সংবাদটি ইদোমীয় রাষ্ট্রদূতদের কাছে বলেছিলেন (যেমন যিরমিয় করেন যির ২৭:৩-৭)? অথবা তিনি তার বাণী কি যিহূদার কাছে দিয়েছিলেন? যিহূদার বিরুদ্ধে ইদোমের অন্যায় ঈশ্বর যে দেখেছেন এবং শীঘ্রই বিচার করবেন, ওবিদিয় কি যিহূাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যই বাণীটি বলেছিলেন? তা নিশ্চিত বলা যায় না।
সম্ভাবনা বেশি যে, তিনি বাণীটি যিহূদার কাছে প্রকাশ করেন, যারা ইদোমীয়দের দ্বারা অনেক অত্যাচারিত হয়েছে। যিহূদার লোকদের জন্য পুস্তকটি প্রকৃতপক্ষে একটি সান্ত্বনার বাণী: তাদের বিরুদ্ধে হিংস্র আচরণ করা হয়েছে, দুর্বলতার সময়ে তাদের আক্রমণ করা হয়েছে, চুক্তি ভেঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে, ঈশ্বর তা ঠিকই দেখেছেন। ঈশ্বর অত্যাচারীদের অবশ্যই বিচার করবেন এবং ন্যায্যতা পুনরায় স্থাপন করবেন। পুস্তকের শেষ পদগুলোতে ওবদিয় ভৌগলিক ভাষায় সান্ত্বনাদানকারী একটি প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করেন: ঈশ্বর যিহূদাকে চারিদিকে জাতিদের উপরে জয়ী হতে দেবেন।
ওবদিয় পুস্তকে উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনার তারিখ
ওবদিয় তার পুস্তকের শুরুতে কোন রাজা বা পুরোহিত উল্লেখ করেন না। তবুও ওবদিয় একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে কথা বলেন: যিরূশালেম শহরকে আক্রমণ, দখল ও লূটপাট এবং লোকদেরকে বন্দী করা (ওব ১১-১৩), ইদোম জাতি তা করেন নি বরং অন্য একটি জাতি তা করেছে, যার নামের উল্লেখ নেই।
এই ঘটনাটি কখন ঘটেছিল? প্রথমে মনে পড়ে ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিলীয়দের দ্বারা যিরূশালেম শহরকে দখল, লূটপাট ও ধ্বংস। কিন্তু এর বিপরীতে বলতে হয় যে, যদিও ওবদিয় শহরের ফটকে প্রবেশ করা, লূটপাট ও লোকদের বন্দী করার বিষয় উল্লেখ করেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে শহরের এবং বিশেষভাবে সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘরের ধ্বংস বর্ণনা করেন না। একারণে কেউ কেউ মনে করে যে, ওবদিয় পুস্তকে উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনা হল ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে ধ্বংসের আগেই যিরূশালেম শহরের একটি পরাজয়। ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্ব ছাড়া ইতিহাসে অন্য কোন কোন সময়ে যিরূশালেমকে দখল ও লূটপাট করা হয়েছিল? নিচে ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বের ঘটনা ছাড়া আর তিনটি ঘটনা দেওয়া হয়েছে:
- ৮৪০ খ্রীঃপূঃ
- যখন মন্দ রাজা যিহোরাম যিহূদার উপর রাজত্ব করেন (৮৪৮-৮৪১ খ্রীঃপূঃ) পলেষ্টীয়েরা ও আরবীয়েরা যিরূশালেমের ফটকে প্রবেশ করতে এবং শহরটি লূটপাট করতে সক্ষম হয়।
- তারা সেই সময়ে রাজার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদেরও অপহরণ করে।
- ইদোম ঐসময় খারাপ ভূমিকা যে পালন করেছিলেন, তার কোন উল্লেখ নেই, কিন্তু তা অসম্ভব কিছু নয়।
- পরবর্তীতে যারবিয়ামের স্ত্রী অথলিয়া যিহূদার উপরে রাজত্ব করেন (৮৪১-৮৩৫ খ্রীঃপূঃ)।
- ওবদিয় যে তার পুস্তকে রাজার নাম উল্লেখ করেন না, তার কারণ হতে পারে যে, তিনি অথলিয়াকে দায়ূদের রাজবংশের অধিকারগত শাসক হিসাবে দেখেন না।
- ইব্রীয় শাস্ত্রে ওবদিয় পুস্তক যোয়েল, আমোষ ও হোশেয় পুস্তকের সাথে রাখা আছে (যারা সবাই ৯ম ও ৮ম শতাব্দী খ্রীষ্টপূর্বের ভাববাদী), যা এই তারিখ সমর্থন করে। আর একটি বিষয়: ওবদিয় ১৯-২১ পদে উল্লিখিত শত্রুরা (ফৈনীকীয়া ও পলেষ্টীয়া) ছিল যিহূদার ঐ শতাব্দীগুলোর শত্রুরা। পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ায় আসিরিয়া ও বাবিল, যাদের ওবদিয় উল্লেখ করেন না। এই বিষয়টিও আগের তারিখ সমর্থন করে।
- ৭৩০ খ্রীঃপূঃ
- যখন মন্দ রাজা আহস যিহূদার উপর রাজত্ব করেন (৭৩১-৭১৫ খ্রীঃপূঃ) তিনি ইস্রায়েলের রাজা পেকহ এবং সিরিয়ার রাজা রৎসীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
- এই সর্বনাশা যুদ্ধের সময়ে আহসের বিশাল সৈন্যদল পরাজিত করা হয়, ১.২ লক্ষ সেনাদের মেরে ফেলা হয় এবং আরো অনেক লোবদেরকে বন্দী করা হয় (২ বংশা ২৮:৬)।
- যিহূদার দুর্বলতা দেখে ইদোম ঠিক সেই সময় এলৎ শহর দখল করে এবং যিহূদায় সামরিক অভিযান করে লোকদেরকে বন্দী করে (২ রাজা ১৬:৫-৬, ২ বংশা ২৮:১৬-১৮)।
- পলেষ্টীয়েরা সেই একই সময় যিহূদার কয়েকটি শহর দখল করে।
- ৫৯৭ খ্রীঃপূঃ
- যখন মন্দ রাজা যিহোয়াকীম যিহূদার উপরে রাজত্ব করেন (৬০৯-৫৯৭ খ্রীঃপূঃ) তিনি বাবিলের অধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।
- বাবিল যিহূদার এলাকা দখল করে এবং যিরূশালেম শহরকে ঘেরাও করে (২ রাজা ২৪:১৩-১৭, ২ বংশা ৩৬:১০)।
- ইদোম যে এই সময় কোন হস্তক্ষেপ করেছিল, তার কোন উল্লেখ নেই কিন্তু তা অসম্ভব কিছুও নয়।
- ৫৮৬ খ্রীঃপূঃ
- যখন মন্দ রাজা সিদিকিয় যিহূদার উপর রাজত্ব করেন (৫৯৭-৫৮৬ খ্রীঃপূঃ) তিনি বাবিলের অধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।
- বাবিল তৃতীয় বার যিহূদা এলাকা দখল করে এবং এই বার যিরূশালেম শহারকে শুধু ঘেরাও, দখল ও লূটপাট করে না বরং যিরূশালেম শহর, তার দেওয়াল ও সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে।
- বেঁচে থাকা লোকদেরকে বাবিলে নির্বাসিত করা হয় (২ রাজা ২৫:৮-২১, ২ বংশা ৩৬:১৭-২১)।
- পরাতন নিয়মের অন্যান্য লেখা থেকে বুঝা যায় ইদোম সেই সময় কি ধরণের মনোভাব ও আচরন দেখিয়েছিল (গীত ১৩৭:৭, যিহি ২৫:১২-১৪, ৩৫:১-১৫, বিলাপ ৪:২১)।
- উদাহরণ হিসাবে গীত ১৩৭:৭ পদ: “হে সদাপ্রভু, যিরূশালেমের ধ্বংসের দিনে ইদোমীয়েরা যা করেছিল তা মনে করে দেখ; তারা বলেছিল, “ধ্বংস কর, একেবারে এর ভিত্তি পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেল।”
ইদোমের দোষ
তবে ঈশ্বর ইদোমকে ঠিক কি মনোভাবে ও আচরনের জন্য দোষী বলে বিচার করবেন? ওবদিয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ইদোমের বিচারের কারণ দেখান:
“তোমার ভাই যাকোবের বিরুদ্ধে অত্যাচারের জন্য তুমি লজ্জায় ঢাকা পড়বে; তুমি চিরকালের জন্য ধ্বংস হবে। অন্য দেশের লোকেরা যখন যাকোবের ধন-সম্পদ নিয়ে যাচ্ছিল…তখন তুমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলে; তুমি তাদের একজনের মত হয়েছিলে। তোমার ভাইয়ের দুর্দশার দিনে তুমি খুশী হয়েছ, যিহূদার লোকদের ধ্বংসের দিনে তাদের বিষয় নিয়ে আনন্দ করেছ এবং তাদের কষ্টের দিনে গর্ব করেছ। আমার লোকদের বিপদের দিনে তুমি তাদের ফটকগুলো দিয়ে ঢুকেছ, তাদের ধ্বংসের দিনে তাদের বিপদ দেখে তুমি খুশী হয়েছ এবং তাদের ধন-সম্পদ দখল করেছ, তাদের পালিয়ে যাওয়া লোকদের মেরে ফেলবার জন্য তুমি তাদের পালাবার রাস্তায় রাস্তায় অপেক্ষা করেছ, আর তাদের কষ্টের দিনে তাদের রক্ষা পাওয়া লোকদের শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছ। এই সব করা তোমার উচিত ছিল না” (ওবদিয় ১০-১৪)।
অন্য একটি জাতি দ্বারা যিহূদার পরাজয়ের ও সর্বনাশের দিনে ইদোম নির্লজ্জভাবে লূটপাট করেছে এবং পলাতক লোকদেরকে শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছে। ইদোমের আনন্দ, বিদ্বেষ, ঘৃণা, প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বড়াই করা ও অন্যের ক্ষতিতে খুশি হওয়া, একারণেই ঈশ্বর তাদের দোষ ধরেন।
ঐসময় প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল? যিরূশালেম শহরকে আক্রমণ, দখল ও লূটপাট করা হয়েছে, ইদোম দ্বারা নয় বরং “অন্য দেশের লোকদের” দ্বারা (ওব ১১ )। সাধারণত যে জাতি জয়ী হয়, তারাই লূটপাট করে। কিন্তু এখানে ইদোম লূটপাট করার সুযোগ কিভাবে পেয়েছে (ওব ১৩)?
হয়তো ইদোম আক্রমণকারী জাতির সাথে কোনো রকম মৈত্রী চুক্তি বা ‘যুদ্ধে হস্তক্ষেপ না করার’ চুক্তি করেছিল। ওবদিয় ১১ পদ বলে “তুমি দূরে দাঁড়িয়েছিলে”। হয়তো ইদোম আক্রমনকারী জাতিকে পলাতক লোকদের বন্দী করতে সাহায্য করেছিল এবং এভাবে সেই জাতির অনুগ্রহ অর্জন করেছিল (ওব ১৪)। হয়তো ইদোম দেরি করে যুদ্ধে যোগ দিয়ে ইস্রায়েলকে অন্য দিক থেকে আক্রমণ করেছিল এবং এভাবে আক্রমণকারী জাতির ‘পাশে দাঁড়িয়েছিল’। অথবা তাদের অনুমতি নিয়ে অন্য পাশ থেকে আক্রমণ করেছিল। হয়তো ইদোম ঐজাতির লূটপাটে অংশ গ্রহণ করে নি কিন্তু যিহূদার দুর্বলতা দেখে অন্য কোনো শহরকে লূটপাট করেছিল।
যেভাবে হোক, তারা কোনভাবে আক্রমণকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে যিহূদার সবচেয়ে দুর্বল সময়ে আনন্দ ও গর্ব করেছে। তারা হিংস্র ব্যবহার করেছে, তারা পলাতকদের ধরিয়ে দিয়েছে, তারা যিরূশালেমের ফটকে প্রবেশ করেছে ও লূটপাট করেছে।
যিহূদা ও ইদোমের সম্পর্কের ইতিহাস
প্রকৃতপক্ষে, ইদোম ও ইস্রায়েল ছিল একই পূর্বপুরুষ থেকে আসা জাতি। একাণে ইদোমের হিংস্র আচার-ব্যবহার আরো দোষের একটি গুরুতর কারণ। ইদোমের কাছে এই বাণীতে ঈশ্বর যিহূদাকে “তোমার ভাই যাকোব” বলে চিহ্নিত করেন (ওব ১০)।
এটা হল আদিপুস্তক ২৫:১৯-২৮ পদ থেকে নেওয়া একটি কথা। ইসহাক ও রিবিকার যমজ ছেলে সন্তান হয়েছিল, এষৌ ও যাকোব। যাকোব থেকে ইস্রায়েল জাতি সৃষ্টি হয়েছে (৯৩১ খ্রীষ্টাব্দে ইস্রায়েল বিভক্ত হয়ে দু’টি দেশ তৈরি হয়, ইস্রায়েল ও যিহূদা)। এষৌ, যার অন্য নাম হল ‘ইদোম’ (যার অর্থ হল ‘লাল’, আদি ২৫:৩০), তার কাছ থেকে ইদোম জাতি সৃষ্টি হয়েছে। শুরু থেকেই এই দুই ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা ছিল (আদি ২৫-২৮) কিন্তু সম্পর্কের পুনর্মিলনও ঘটে (আদি ৩২-৩৩)। পরবর্তীতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দুই জাতির মধ্যে শত্রুতা বাড়তে থাকে।
- ১৪০৫ খ্রীঃপূঃ ইস্রায়েল যখন ইদোম দেশে পার হয়ে যেতে চায় তখন ইদোম তা প্রক্যাখ্যান করে। ইস্রায়েল ইদোমের সীমানাকে সম্মান করে মরুভূমিতে ইদোমের চারিদিকে যাত্রা করে (গণনা ২০:১৪-২১)। মোশির আইন-কানুনে ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে এই আদেশ দেন: “ইদোমীয়দের তোমরা ঘৃণা করবে না, কারণ তারা তোমাদের ভাই” (দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:৭-৮)।
- ১২০০ খ্রীঃপূঃ ইদোম পেত্রা নামে সেই বিখ্যাত শহর, সাথে মন্দির ও পানির সর্বরাহও নির্মাণ করে। অনুমান করে বলা যায় যে, সেই সময় পেত্রা শহরে ২০ থেকে ৩০ হাজার বাসিন্দা ছিল।
- ১০৩০ খ্রীঃপূঃ শৌল ইদোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন (১ শমূয়েল ১৪:৪৭)।
- ১০০০ খ্রীঃপূঃ দায়ূদ ইদোমকে দখল করে সেখানকার পুরুষদের হত্যা করেন এবং ইদোম নিজের দমনে আনার জন্য দুর্গ স্থাপন করেন (২ শমূ ৮:১৪, ১ রাজা ১১:১৫-১৬, ১ বংশ ১৮:১০-১৩, গীত ৬০:৮)
- ৯৪০ খ্রীঃপূঃ ইদোমীয় হদদ শলোমনের শত্রু হয়ে ওঠে (১ রাজা ১১:১৪-২২)।
- ৮৫০ খ্রীঃপূঃ যিহূদা, ইস্রায়েল ও ইদোম একসাথে মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে (২ রাজা ৩:৮)।
- ৮৪৫ খ্রীঃপূঃ মন্দ রাজা যিহোরামের সময় ইদোম বিদ্রোহ করে এবং যিহূদার অধীনতা থেকে মুক্ত হয় (২ রাজা ৮:২০-২২, ২ বংশা ২১:৮-১০)।
- ৮৩০ খ্রীঃপূঃ ভাববাণী: ইদোম জনশূণ্য মরুভূমি হবে। বিচারের কারণ: যিহূদার বিরুদ্ধে হিংস্রাতা ও লোকদেরকে মেরে ফেলা (যোয়েল ৩:১৯)।
- ৭৯০ খ্রীঃপূঃ যিহূদার রাজা অমৎসিয় ইদোমকে পরাজিত করেন এবং ১০ হাজার সেনাদের হত্যা করেন (২ রাজা ১৪:৭, ২ বংশা ২৫:৫-১৩)।
- ৭৩০ খ্রীঃপূঃ ইদোম বার বার যিহূদাকে পরাজিত করে এবং লোকদেরকে বন্দী করে। ফলে রাজা আহস আসিরিয়াকে ডাকেন (২ বংশা ২৮:১৬)।
- ৭৩০ খ্রীঃপূঃ ভাববাণী: ঈশ্বর নিজ হাতে ইদোমকে বিচার করবেন (যিশাইয় ৬৩:১)।
- ৬০০ খ্রীঃপূঃ যিরমিয় অন্য দেশের রাজদূতদের বাবিলের অধীনতা মেনে নিতে বলেন। তা না করলে বিচার আসবে (যিরমিয় ২৭:৩)।
ওবদিয়ের বাণীতে কি নীতি প্রকাশিত?
ঈশ্বর ঠিক কোন কারণে ইদোমের দোষ ধরেন? প্রকৃতপক্ষে, ইস্রায়েলীয়েরা যেভাবে ঈশ্বরের বিশেষ প্রকাশ, অর্থাৎ মোশির আইন-কানুন ও ভাববাদীদের বাণী পেয়েছিল, ইদোম সেই রকম কোনো প্রকাশ পায় নি। প্রকাশ না পেলে তবে ঈশ্বর তাদেরকে কি মানদণ্ডে দায়ী করছেন? কয়েকটি উত্তর দেওয়া সম্ভব:
- কেউ কেউ ওবদিয়ের বাণীর ব্যাখ্যা এভাবে দেন: যত জাতি ঈশ্বরের মনোনীত জাতি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে অন্যায় করে তত জাতিকে ঈশ্বর বিচার করবেন (আসল বিষয় হল: মনোনীত হওয়া)।
- আবারও কেউ কেউ ওবদিয়ের বাণীর ব্যাখ্যা এভাবে দেন: ইদোম এমন একটি জাতিকে আক্রমণ করেছে যা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে, অর্থাৎ ভাইদের মধ্যে চুক্তি ভেঙ্গে আক্রমণ করেছে (আসল বিষয় হল: চুক্তি ভেঙ্গে আক্রমণ বা কাছের জাতিকে আক্রমণ)।
- আবারও কেউ কেউ ওবদিয়ের বাণীর ব্যাখ্যা এভাবে দেন: জাতিদের মধ্যে অন্যায় ঘটলে ঈশ্বর তা বিচার করেন। অন্যের ধ্বংসের দিনে আনন্দ করা, দুর্বল অবস্থায় অন্যকে অত্যাচার করা বা ক্ষোভ ও প্রতিশোধের মনোভাব, এসব ঈশ্বর বিচার করেন – যে জাতি আক্রমণ করুক না কেন এবং যে জাতিকে আক্রমণ করা হোক না কেন (আসল বিষয় হল: অন্যায্য আচরণ)।
প্রথম উত্তর নিয়ে কিছু চিন্তা: প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে ‘নিজের জাতি’ হিসাবে ঘোষণা করেন “আমার লোকদের বিপদের দিনে …” (ওব ১৩) এবং “আমার পবিত্র পাহাড়ে” (ওব ১৬)। কিন্তু পুরাতন নিয়মের বেশ কয়েক বার ঈশ্বর অন্য একটি জাতিকে ইস্রায়েল বা যিহূদার সাথে যুদ্ধে জয়ী হতে দেন। তিনি এমন কি অন্য জাতিদেরকে ‘ডেকে’ তাঁর জাতিকে আক্রমণ করার আদেশ দেন (যেমন ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে আসিরিয়াকে ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে এবং ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিলকে যিহূদার ক্ষেত্রে)।
দ্বিতীয় উত্তর নিয়ে কিছু চিন্তা: প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর ইদোমের দোষ ধরেন যে, তারা “ভাই যাকোবের বিরুদ্ধে” অন্যায় করেছে (ওব ১০) এবং যে, তারা তাদের “ভাইয়ের দুর্দশার দিনে” খুশি হয়েছে (ওব ১২)। এছাড়া ঈশ্বর চান যে, ইস্রায়েল বিশ্বস্তভাবে চুক্তি পালন করুক (যিহো ৯, ২ শমূ ২১:১-৩)। কিন্তু এই উপসংহারে আসা ঠিক হবে না যে, দু’টি জাতি যদি রক্তের সম্পর্ক না থাকে তবে যে কোন ব্যবহার অনুমোদিত। রক্ত-মাংস সম্পর্ক যে নৈতিকতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এমন নয় (গালা ৩:২৮)। এছাড়া বাইবেল বলে যে, সব জাতি একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে, তাই সব জাতিদের মধ্যে রক্ত-মাংসের সম্পর্ক আছে।
তৃতীয় উত্তর নিয়ে কিছু চিন্তা: মনোনিত হওয়া বা না হওয়া, ঈশ্বরের নিজের জাতি হওয়া বা না হওয়া, জাতিদের মধ্যে আত্মীয়ত্ব বা রক্ত-মাংসের সম্পর্ক, এসব কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নৈতিকতা, ন্যায্যতা এবং চেতনায় সাড়া দেওয়া। অন্য একটি জাতির বিরুদ্ধে যদি একটি জাতি এমন ব্যবহার করে যা নিজের বিরুদ্ধে ঘটলে তারা অন্যায় বলত, তবে এই ধরণের ব্যবহার তারাই যদি করে তবে তা দোষ হিসাবে দাঁড়ায়। অথবা উল্টাভাবে বললে: যদি একটি জাতি নিজের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য বলে তবে সেই ব্যবহার যদি অন্য একটি জাতি তাদের বিরুদ্ধে করে, তবে তারা তা নিয়ে আপত্তি উঠাতে পারবে না। এটাকে ‘সোনালী নিয়ম’ বলা হয় এবং যীশু ঠিক এই একই শিক্ষা দেন (লূক ৬:৩১) সব জাতির আচরনের একটি ন্যায্য মানদণ্ড আছে, সব জাতির একটি চেতনা বা সৎজ্ঞান আছে। ঈশ্বর ইদোমকে একটি মানদণ্ড অনুসারে দোষী বলে বিচার করেন যা তারা জানত না, এমন নয়। তিনি তাদেরকে শুধুমাত্র এমন আচরনের জন্য দোষ ধরেন, যা তারাও ‘অন্যায়’ বলত যদি তাদের বিরুদ্ধে করা হত। ঈশ্বরই ন্যায্যা।
সোনালী নিয়ম এবং প্রয়োগের কিছু চিন্তা
প্রকৃতপক্ষে, সোনালী নিয়ম ওবদিয় পুস্তকে কমবেশি ৪ বার (!) উল্লেখ করা হয়েছে:
- ওব ১৫ “তুমি যেমন করেছ তোমার প্রতি তেমনই করা হবে; তোমার কাজের ফল তোমারই মাথার উপর ফিরে আসবে।”
- ওব ১৬ “আমার পবিত্র পাহাড়ে তুমি যেমন মদ খেয়েছ তেমনি সমস্ত জাতি অনবরত আমার ক্রোধের মদ খাবে।”
- ওব ১৭ “যাকোবের বংশ তাদের পাওনা সম্পত্তি পাবে”। ইংরেজি: “যে লোকেরা যাকোবের পাওনা সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছে, যাকোব তাদেরই সম্পত্তির অধিকারী হবে।”
- ওব ৭,১০,১ ইদোম ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাই ঈশ্বরের আদেশে ইদোমের মিত্ররা তার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করবে।
এখানে উদাহরণগুলো নেতিবাচক, কিন্তু তারপরেও তাতে ন্যায্যতা প্রকাশ পায়।
বাইবেলে একটি চমৎকার উদাহরণ পাওয়া যায়, দুর্দশার দিনে ভাল বা ঈশ্বরীয় আচরণ মানে কি (২ বংশা ২৮:৬,৮-১৫): ইস্রায়েল যিহূদাকে পরাজিত করেছে এবং যিহূদার অনেক লোকদেরকে বন্দী করে নিয়েছে। তা দেখে ইস্রায়েলের একজন সাধারণ ব্যক্তি (ওদেদ) জয়ী ইস্রায়েলের রাজাকে বন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ করেন। ওদেদ বলেন যে, জয়ী হলেও ইস্রায়েলের যথেষ্ট দোষ আছে।
ভাববাদী ওবদিয়ের সংবাদ তাহলে কি? তিনি একটি কঠোর সাবধানবাণী দেন যে: অক্ষমা, ক্ষোভ ধরে রাখা, অন্যের দুর্দশা নিয়ে আনন্দ করা এবং দুর্বলের প্রতি ভুল ব্যবহার করা; এসব ঈশ্বরের কাছে হল বিচারযোগ্য। এই সাবধানবাণী আমাদের যুগেও প্রযোজ্য।
যদি ওবদিয় পুস্তকের জন্য ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বের তারিখ ধরা হয় তবে আর একটি বিষয় শেখা যায়: বাইবেল পরিষ্কারভাবে বলে যে, বাবিলের মাধ্যমে যিরূশালেমের ধ্বংস ঈশ্বরের ইচ্ছা ও অগ্রিম ঘোষণা অনুসারে ঘটেছিল। তাই বলা যায় যে, যদিও যিহূদার বিচার ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে ঘটে, তারপরেও তা নিয়ে আনন্দ বা গর্ব করা একদম গ্রহণযোগ্য নয়। আধুনিক যুগেও যদি যুদ্ধ বা দুর্দশা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে এবং অনেকে তা ‘ঈশ্বরের বিচার’ বলে ঘোষণা করে, তবে ‘ঈশ্বরের বিচার’ হলেও তা নিয়ে আনন্দ করা নিষেধ। ওবদিয় বলেন: “তাদের পালিয়ে যাওয়া লোকদের মেরে ফেলবার জন্য তুমি তাদের পালাবার রাস্তায় রাস্তায় অপেক্ষা করেছ, আর তাদের কষ্টের দিনে তাদের রক্ষা পাওয়া লোকদের শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছ। এই সব করা তোমার উচিত ছিল না” (ওব ১৪)। একটি বিচার ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে যদিও হয়, তারপরেও বিচারিত লোকদেরকে দয়া দেখানো দরকার! যিশাইয় একই বিষয় ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করেন: “পরামর্শ দাও; কি করা উচিত বল … যারা পালিয়ে যাচ্ছে তাদের লুকিয়ে রাখ, আর যারা রক্ষা পাবার জন্য আশ্রয় চায় তাদের ধরিয়ে দিয়ো না। মোয়াবের পালিয়ে যাওয়া লোকদের তোমাদের সংগে থাকতে দাও; ধ্বংসকারীদের সামনে থেকে তাদের আড়াল করে রাখ” (যিশা ১৬:৩-৪)।
কিভাবে ইদোমীয়েরা এই ভুল মনোভাবে পৌঁছিয়েছিল?
কিভাবে ইদোমীয়েরা এই ভুল মনোভাবে পৌঁছিয়েছিল? ওবদিয় এই বিষয়ে ইদোমের অহংকার, তাদের স্বনির্ভরতা, আত্ম-বিশ্বাস এবং নিজের ক্ষমতার উপর মিথ্যা বিশ্বাস উল্লেখ করেন: “তুমি পাথরের পাহাড়ের ফাটলে বাস কর এবং উঁচু উঁচু জায়গায় থাক আর মনে মনে বল, ‘কে আমাকে মাটিতে নামাতে পারবে?’ কিন্তু তোমার অন্তরের অহংকারই তোমাকে ঠকিয়েছে। যদিও তুমি ঈগল পাখীর মত উঁচুতে বাসা বাঁধ… তবুও আমি সেখান থেকে তোমাকে নামিয়ে আনব” (ওবদিয় ৩-৪)। ওবদিয় এখানে ইদোম দেশের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে কথা বলেন: ইদোম হল আধুনিক যুগের যর্দন দেশের একটি শুকনা ও পাহাড়ী এলাকা। প্রকৃতপক্ষে ইদোমীয়েরা “ইগল পাখির মাত” বড় বড় পাথর খোঁড়ে বাসস্থান ও শহরগুলো বানাত। ফলে তাদের দেশ সহজে আক্রমণ করা যেত না। আজকের বিখ্যাত পর্যটনকারী জায়গা ‘পেত্রা’ ছিল একটি ইদোমীয় শহর। শুধুমাত্র ইদোমের ক্ষেত্রে মাত্র নয় বরং সব যুগে অহংকার ও মিথ্যা নিশ্চয়তা বিরুদ্ধে ওবদিয়ের সাবধানবাণী প্রযোজ্য।
অহংকার কিভাবে ক্ষতি করছে, ওবদিয় তা দেখান :
- অহংকার আমাদেরকে প্রতারিত করে। যদি আমি নিজেকে বুদ্ধিমান, অন্যদের চেয়ে স্মার্ট, জ্ঞানী ও শক্তিশালী মনে করি তবে অনেক কিছু যা আমার দেখা, বুঝা বা শেখা দরকার, তা আমি দেখি না। অহংকার আমাকে ভুল ধারণায় বা ভুল উপসংহারে নিয়ে যায়।
- অহংকার আমাকে আত্ম-নির্ভরতায় নিয়ে যায়। যদি আমি নিজেকে অন্যদের চেয়ে স্মার্ট, জানী ও শক্তিশালী মনে করি, যদি আমি মনে করি আমি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তবে এটা আমাকে মিথ্যা আত্ম-বিশ্বাস, বিপথগামী সাহস এবং নিজের ক্ষমতা ও নিরাপত্তা বিষয়ে ভুল ধারণা দেয়। ফলে আমি কৌশল করি, ক্ষমতার লড়াই নামি বা ষঢ়যন্ত্র করি এবং প্রায়ই আমার দক্ষতা ও জ্ঞানের চেয়ে শক্তিশালীদের হতে চাই, যাতে অনেক বার নিজেকে লজ্জায় ফেলি।
- অহংকার করলে আমি অন্যদের নিচু চোখে দেখি। নিচ দিকে তাকালে আমি নিজের চেয়ে যা ভাল বা বড়, তা দেখতে পাই না। আমি সবাইকে আমার কৌশলে, আমার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চেষ্টা করি, অন্যদের প্রয়োজন বা অধিকারের বিষয়ে আমি সচেতন হই না। অহংকার আত্ম-কেন্দ্রিক মনোভাব তৈরি করে।
- অহংকার আমাকে প্রতিশোধ নেওয়া প্রলোভনে ফেলে। অহংকারী মানুষ যদি অপমান বোধ করে বা নিজেকে লজ্জায় ফেলে তবে তাদের কোন রসিকতা, ন্যায্যতার চিন্তা বা বড় মনে ছেড়ে দেওয়ার মনোভাব থাকে না। অহংকারী মানুষ নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং মনকে অতিরিক্ত রাগ, হিংসা, তিক্ততা, ক্ষোভ ও প্রতিশোধ নেওয়ার মনোভাবে ভরিয়ে তোলে। প্রতিশোধ, এমন কি অতিরিক্ত প্রতিশোধ না দেখা পর্যন্ত তারা সন্তুষ্ট হয় না।
অহংকারের এই ফলাফলগুলো ওবদিয় পুস্তকে বিভিন্ন পদগুলোতে প্রকাশ পায়। উদাহরণস্বরূপ: অহংকার যে প্রতারিত করে, তা এই পদে দেখা যায়: “তোমার বন্ধুরা তোমাকে ঠকাবে এবং বশে আনবে; যারা তোমার খাবার খায় তারা তোমার জন্য ফাঁদ পাতবে, কিন্তু তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না” (ওব ৭) অথবা “সেই দিন আমি কি ইদোমের জ্ঞানী লোকদের এবং এষৌর পাহাড়গুলো থেকে বুদ্ধিমান লোকদের ধ্বংস করব না?” (ওব ৮)।
সব যুগের মানুষের জন্য অহংকার হল বড় প্রলোভন। অহংকার যেমন ইদোম জাতিকে ভুল পথে নিয়ে গেছে ঠিক তেমনি অহংকার আধুনিক যুগেও মানুষকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। নিজের জীবনে অহংকারের প্রতিরোধ কিভাবে করতে পারি? সততা, কথা শোনা, অন্যদের মতামত বিবেচনা করা, অন্যদের সম্মানের চোখে দেখা, সংশোধন গ্রহণ করা, অন্যের সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করা, নিজের উপসংহার পরীক্ষা করতে রাজি হওয়া, ক্ষমা করতে থাকা, ক্ষোভ ছেড়ে দেওয়া, এসব হল বিশ্বাসীর আত্মিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য সাহায্যকারী। ওবদিয় পুস্তকে আমরা ‘অন্যদের নিজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা’ নিয়ে একটি সাবধাণবাণী পাই: যাদের আমি ‘ব্যবহার’ করি, তাদেরকে আমি সম্মান করতে পারি না। যাদের আমি দমন করি, তাদেরকে ভালবাসতে পারি না।
ইদোমের বিরুদ্ধে বিচার বাণীর পূর্ণতা
ইদোম দেশের বিরুদ্ধে ওবদিয়ের এই ধ্বংসবাণী ইতিহাসে পূর্ণ হয়:
- বাবিল ইদোমকে ৫৮২ খ্রীষ্টপূর্বে, অর্থাৎ যিরূশালেমের মাত্র ৪ বছর পরেই দখল ও ধ্বংস করে।
- ৪৫০ খ্রীষ্টপূর্বে আরব জাতিরা ইদোমীয়দের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
- ৩১২ খ্রীষ্টপূর্বে নাবাতীয়েরা পেত্রা শহরকে দখল করে। কিছু ইদোমীয়েরা যিহূদার দক্ষিণে নেগেভ্ মরুএলাকায় বাস করতে শুরু করে (যার ফলে নতুন নিয়মে এলাকাটির নাম ‘ইদুমীয়া’ হয়ে যায়)।
- ১৩৫-১০৫ খ্রীষ্টপূর্বে মাক্কাবীয় রাজবংশের নেতৃত্বে নেগেভে বাসকারী ইদোমীয়দের জোর করে যিহূদী বানানো হয় (বাধ্যতামূলক সুন্নত, যিহূদীদের সাথে বিবাহ) যদিও তাদের সংস্কৃতি যিহূদীদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন ছিল।
- আন্তিপাটের, যিনি ইদোমীয়, তিনি রোমীয়দের সাথে হাত মিলিয়ে যিহূদার উপরে রাজা হয়ে যান (রাজত্ব ৪৮-৪৩ খ্রীঃপূঃ)।
- তার ছেলে হোরোদ মহান-এর জীবনে (রাজত্ব ৩৭-৪ খ্রীঃপূঃ) ইদোমের দুটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়: দালান নির্মাণে গুরুত্ব দান এবং তার অধীনে থাকা লোকদের প্রতি হিংস্রতা।
- যিহূদী-রোমীয় সর্বনাশা যুদ্ধের পরে (৬৬-৭০ খ্রীঃ) ইদোমীয়েরা ইতিহাসে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ওবদিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী
তার পুস্তকের শেষ পদগুলোতে (ওব ১৫-২১) ওবদিয় ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বলেন যে, ইদোম ও যিহূদা উভয় দেশের বর্তমান অবস্থা বিপরীতে পরিণত হবে:
- ইদোম বর্তমানে জয়ী ও লাভজনক হয় > ইদোমের স্থায়ী ও অনন্তকালীন পরাজয় হবে।
- যিহূদার বর্তমান লোকসান ও লজ্জা > যিহূদার স্থায়ী ও অনন্তকালীন জয়।
ওবদিয় ১৫-১৬ পদে ওবদিয় বলেন যে, ভবিষ্যৎ ঘটনাগুলো ঠিক ‘সোনালী নিয়ম’ অনুসারে হবে, অর্থাৎ ‘যেমন তুমি করেছ, ঠিক তেমনি তোমার বিরুদ্ধে করা হবে।’
পরবর্তী পদগুলো (ওব ১৭-২১) ব্যাখ্যা করা সহজ না। ওবদিয় মাথা ঘুরানোর মত বর্ণনা করেন যে:
- ওব ১৭ “কিন্তু সিয়োন পাহাড়ে কতগুলো লোক রক্ষা পাবে; তারা … আলাদা করা লোক। যাকোবের বংশ তাদের পাওনা সম্পত্তি পাবে।”
- ওব ১৮ “যাকোবের বংশ হবে আগুন, আর যোষেফের বংশ হবে আগুনের শিখা; এষৌর বংশ হবে নাড়া আর সেই আগুন তা পুড়িয়ে ফেলবে। এষৌর বংশের কেউই বেঁচে থাকবে না।”
- ওব ১৯ “নেগেভে থাকা ইস্রায়েলীয়েরা এষৌর পাহাড়গুলো দখল করে নেবে
এবং নীচু পাহাড়ী এলাকার লোকেরা পলেষ্টীয়দের দেশ অধিকার করবে।
তারা ইফ্রয়িম ও শমরিয়ার জায়গাগুলো দখল করবে
এবং বিন্যামীন গিলিয়দ এলাকা অধিকার করবে।” - ওব ২০ “বন্দীদশায় থাকা ইস্রায়েলীয়দের দল এসে সারিফৎ পর্যন্ত কনানীয়দের দেশটা অধিকার করে নেবে;
বন্দীদশায় থাকা যিরূশালেমের যে লোকেরা সফারদে আছে তারা এসে নেগেভের গ্রামগুলো অধিকার করবে।” - ওব ২১ “শাসনকর্তারা (আক্ষরিক অনুবাদ: উদ্ধারকারীরা) সিয়োন পাহাড় থেকে এষৌর পাহাড়গুলোর লোকদের শাসন করবে, আর সদাপ্রভুই রাজত্ব করবেন।”
এই পদগুলো (কে কি জমির অধিকার পাবে) যদি আক্ষরিক অর্থে ব্যাখ্যা করা হয়, তবে প্রশ্ন উঠে আসে, ইতিহাসে তা আসলে পূর্ণ হয়েছে কিনা। প্রকৃতপক্ষে আজ পর্যন্ত তা পূর্ণ হয় নি। হয়তো বলা যায় যে, তা শেষ কালে, অর্থাৎ যীশুর দ্বিতীয় আগমনে কোন সময়ে পূর্ণ হবে, কিন্তু তারপরেও সমস্যা থেকে যায়: কেন ইস্রায়েল জাতির এক গোষ্ঠির উত্তরাধিকার আর এক গোষ্ঠিকে দেওয়া হবে (যেমন ওব ১৯ পদে বিন্যামীন গোষ্ঠি গিলিয়দের এলাকা (=গাদ গোষ্ঠি) অধিকার করবে)? তার অর্থ কি?
আক্ষরিক ব্যাখ্যার পাশাপাশি পদগুলো আর কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? পদগুলো রূপক অর্থেও অর্থাৎ নতুন নিয়মের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথম একটি লক্ষণীয় বিষয় বিবেচনা করুন: ইব্রীয় ভাষায় ‘ইদোম’ শব্দটি (אֱדוֹם אֱדֹם) এবং ‘আদম’ শব্দটি (אָדָם, যার অর্থ হল ‘মানুষ’) প্রায় একই। সম্ভবত এই পদগুলোতে ‘ইদোম’ রূপক অর্থে মানে ‘মানুষ’, অহংকারী, স্বনির্ভর, আত্ম-বিশ্বাসী, ঈশ্বর থেকে বিছিন্ন মানুষ। অপর পক্ষে ‘যাকোব’ শব্দটি এখানে মানে: নম্র, ইচ্ছুক, বাধ্য, ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা মানুষ। ‘ইদোমের উপরে ঈশ্বরের জয়’ তাহলে ‘মানুষের অহংকারী হৃদয়ের উপরে ঈশ্বরের জয়’ বুঝায়। এই রূপক ব্যাখ্যা অনুসারে নিচে ওবদিয়ের একই পদগুলো আর একবার দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে বেগুনী রঙ্গে নতুন নিয়মের ভাষায়ও যোগ দেওয়া হয়েছে:
- ওব ১৭ “কিন্তু সিয়োন পাহাড়ে কতগুলো লোক রক্ষা পাবে; তারা … আলাদা করা লোক। যাকোবের বংশ তাদের পাওনা সম্পত্তি পাবে।”
কিন্তু সিয়োন পাহাড়ে কতগুলো লোক পরিত্রাণ পাবে; তারা … পবিত্র করা লোক। … তারা উত্তরাধিকারী হবে, সুখবর ছড়াবে। - ওব ১৮ “যাকোবের বংশ হবে আগুন, যোষেফের বংশ শিখা; এষৌর বংশ হবে নাড়া, আগুন তা পুড়িয়ে ফেলবে। কেউই বেঁচে থাকবে না।”
সুখবর লোকদের হৃদয় স্পর্শ ও জয় করবে, লোকদেরকে আগুনে খাঁটি করা হবে (ক্ষমা করা হবে), অর্থাৎ মন্দতা পরাজিত করা হবে। - ওব ১৯ “নেগেভে থাকা ইস্রায়েলীয়েরা এষৌর পাহাড়গুলো দখল করে নেবে
এবং নীচু পাহাড়ী এলাকার লোকেরা পলেষ্টীয়দের দেশ অধিকার করবে।
তারা ইফ্রয়িম ও শমরিয়ার জায়গাগুলো দখল করবে
এবং বিন্যামীন গিলিয়দ এলাকা অধিকার করবে।”
যীশু, মণ্ডলীর বৃদ্ধি ও সুখবরের জয়ের একটি ছবি: সুখবর যিরূশালেম থেকে চারিদিকের এলাকায় এবং পরজাতি এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। তা মানুষদের দখল করে নেবে এবং যারা নম্র তারা পরিত্রাণ / উত্তরাধিকার / জমি / ঈশ্বরের রাজ্যে নাগরিকত্ব পাবে। - ওব ২০ “বন্দীদশায় থাকা ইস্রায়েলীয়দের দল এসে সারিফৎ পর্যন্ত কনানীয়দের দেশটা অধিকার করে নেবে;
বন্দীদশায় থাকা যিরূশালেমের যে লোকেরা সফারদে আছে তারা এসে নেগেভের গ্রামগুলো অধিকার করবে।” - ওব ২১ “শাসনকর্তারা (আক্ষরিক অনুবাদ: উদ্ধারকারীরা) সিয়োন পাহাড় থেকে এষৌর পাহাড়গুলোর লোকদের শাসন করবে, আর সদাপ্রভুই রাজত্ব করবেন।”
যারা পরিত্রাণ পেয়েছে তারা পাপ ও অহংকারের উপরে জয়লাভ করবে, সুখবর আরো লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে এবং এভাবে সদাপ্রভুর রাজ্য বিস্তার হবে।
বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা সম্ভব, কিন্তু পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, ঈশ্বরের পুনরুদ্ধারের নিশ্চয়তা দেওয়ার মধ্য দিয়ে ওবদিয় শ্রোতাদেরকে সান্ত্বনা ও উৎসাহ দান করেন এবং এভাবে তার পুস্তকটি সমাপ্ত করেন।