অর্থনীতি ১৬ – বন্ধক নেওয়া

যাত্রা ২২:২৬ প্রয়োজনীয় জিনিস বহুক্ষণের জন্য বন্ধক নেওয়া যাবে না
“যদি তুমি কারও গায়ের চাদর বন্ধক রাখ তবে সূর্য ডুবে যাবার আগেই তা ফিরিয়ে দিতে হবে।”
দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:৬ প্রয়োজনীয় জিনিস বন্ধক নেওয়া যাবে না
“ঋণের বন্ধক হিসাবে কারও জাঁতা কিম্বা তার উপরের পাথরটাও নেওয়া চলবে না, কারণ তাতে লোকটির বেঁচে থাকবার উপায়টাই বন্ধক নেওয়া হবে।”
দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৭ প্রয়োজনীয় জিনিস বন্ধক নেওয়া যাবে না
“বিদেশী বাসিন্দা কিম্বা অনাথের প্রতি অন্যায় বিচার হতে দিয়ো না। কোন বিধবার কাছ থেকে বন্ধক হিসাবে তার গায়ের কাপড় নিয়ো না।”

  • একজনের পোষাক বন্ধক নেওয়ার উদাহরণ বুঝায় যে তার সংসারে মূল্যবান আর কিছু নেই, অভিলাসের জিনিসও নেই, মাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস আছে।
  • তাই লোকের আসলে অভাব চলচ্ছে্ ও ফলে বন্ধক নেওয়ার অধিকার সীমিত।
  • যদি তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হয় ৭ বছরের মাথায় তার ঋণ বাতিল করতে হবে (দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:১-২)।
  • যদি বাসায় কোন অভিলাসের জিনিস থাকত, তবে তা বন্ধকে নেওয়া যাবে।
  • প্রয়োজনীয় জিনিস শুধুমাত্র অস্থায়ীভাবে বন্ধক নেওয়া যায়, রাতে (প্রয়োজনের সময়ে) ফেরত দিতে হবে।
  • উল্লিখিত দল হল বিদেশী, অনাথ, বিধবা, এমন লোক যারা অভাবী। আইনটি তাদের বিশেষভাবে রক্ষা করে।

দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১০-১৩ বন্ধক নেওয়ার জন্য ঋণ গ্রহীতার বাসায় যাওয়া নিষেধ
“কাউকে কিছু ধার দিয়ে বন্ধক হিসাবে কোন জিনিস নেবার জন্য তার বাড়ীর মধ্যে যেয়ো না। ১১ তোমরা বাইরে থেকো এবং যাকে তুমি ধার দিচ্ছ তাকেই বন্ধক দেবার জিনিসটা বাইরে তোমাদের কাছে নিয়ে আসতে দিয়ো। ১২ লোকটি যদি গরীব হয় তবে তার বন্ধক রাখা কাপড়টা নিজের কাছে রেখে দিয়ে ঘুমাতে যেয়ো না। ১৩ সন্ধ্যার সময় তাকে তা ফিরিয়ে দিতেই হবে যাতে সে তা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে পারে। এতে সে তোমাদের মংগল কামনা করবে, আর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে সেই ফিরিয়ে দেবার কাজটা হবে তোমাদের পক্ষে তাঁর ইচ্ছামত চলা।”

  • লোকে অভাবে পড়ে যাওয়ার পরেও তার সম্মান রক্ষা করতে হবে: বন্ধক নেওয়ার জন্য জোর করে কারও বাসায় ঢোকা নিষেধ। ঋণ গ্রহীতা নিজেই বন্ধক নেওয়ার মত কিছু জিনিস বের করবে।
  • আবারও: জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস বন্ধক নেওয়া যাবে না

 

গণনা ৩০:১-১৫ বন্ধকের বিষয়ে মানত দিলে তা পূর্ণ করতে হয়
“সদাপ্রভু আদেশ করেছেন যদি কোন লোক সদাপ্রভুর কাছে কোন মানত করে কিম্বা শপথ করে কোন প্রতিজ্ঞার দ্বারা নিজেকে বাঁধে, তবে সে যেন তার কথার খেলাপ না করে; সে যা বলেছে তা তাকে করতেই হবে। ৩ কোন অবিবাহিতা মেয়ে …”

  • যদি প্রতিজ্ঞা, কথা, চুক্তি বা শপথ করে কিছু বন্ধক দেওয়া হয় তবে তা পূর্ণ করা আবশ্যক। মুখের কথা রক্ষা করতে হবে। মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না (‘যোগাযোগ ০২’ দেখুন)।
 
অন্যায় কাজের একটি বর্ণনা হল জোর করে বন্ধক নেওয়া

ইয়োব ২২:৬ “তুমি অকারণে তোমার ভাইদের কাছ থেকে বন্ধক নিতে; তুমি লোকদের কাপড় খুলে নিয়ে তাদের উলংগ রাখতে। ২৪:৩ তারা অনাথদের গাধা নিয়ে যায় আর বিধবার গরু বন্ধক রাখে। ২৪:৯ অনাথ শিশুকে সেই দুষ্টেরা মায়ের বুক থেকে কেড়ে নেয় আর ঋণের জন্য গরীবের সন্তানকে বন্ধক রাখে।”

  • যখন ইয়োবের বন্ধুরা তার ব্যবহারে অভিযোগ দেয়, অন্যায়ভাবে বন্ধক নেওয়া এর মধ্যে একটি বিষয় হিসাব দাঁড়ায়। ইয়োবও এই ধরণের ব্যবহারকে মন্দ বলেন কিন্তু দাবী করেন যে তিনি তা করেন নি।

 

যিহিষ্কেল ১৮:৭, ১৮:২, ১৮:১৬, ৩৩:১৫
“সে কাউকে অত্যাচার করে না বরং ঋণীকে বন্ধকী জিনিস ফিরিয়ে দেয়। সে চুরি করে না, কিন্তু যাদের খিদে পেয়েছে তাদের খেতে দেয় এবং উলংগদের কাপড় দেয়।”
আমোষ ২:৮
“তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায়।”

  • ঈশ্বর ইস্রায়েলের দোষ ধরেন: তারা ধর্মকর্মও করে, অন্যদের জিনিস অন্যায়ভাবে বন্ধকও নেয়।

 

হিতোপদেশ ৬:১-৫, ১১:১৫, ১৭:১৮ কারও জন্য জামিন না হওয়া, বন্ধক না দেওয়া

  • এখানে ঈশ্বর কঠোর সাবধানবাণী দেন নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে সংকটে না ফেলতে: জামিন হলে নিজেকে আর একজনের ঋণে দায়বন্ধ করা বা অন্যভাবে টাকার প্রতিজ্ঞা করা (বন্ধক দেওয়া)।

 

হিতোপদেশ ২০:১৬, ২৭:১৩ কেউ যদি জামিন হয়, তার নিকট থেকে বন্ধক গ্রহণ করো
“যে লোক বিদেশী লোকের জামিন হয় তার পোশাক নিয়ে যাও; যে লোক অন্য কোন দেশের লোকের জামিন হয় তাকেই জামানতের জিনিস হিসাবে রেখো। …যে লোক বিদেশী লোকের জামিন হয় তার পোশাক নিয়ে নাও; যে লোক অন্য কোন দেশের লোকের জামিন হয় তাকেই জামানতের জিনিস হিসাবে রেখো।”

  • এখানে আর একজনের জিনিস বন্ধক নেওয়া দ্বারা তাকে অর্থনৈতিকভাবে চাপ দেওয়ার আদেশ। কেন?
  • কারণ জামিন হওয়া প্রজ্ঞার কাজ নয়, তাই তাকে কষ্টের মধ্য দিয়ে শেখাতে হবে যেন এই ধরণের ব্যবহার আর না করে। এখানে বন্ধক নেওয়া হল ভাল উদ্দেশ্যে: জামিনদারের জন্য সাবধানবাণী বা হুমকি।
 
বিভিন্ন ধরণের বন্ধক
  • ঋণ শর্তানুযায়ী শোধ করতে না পারলে ঋণদাতার কিছু বন্ধক নেওয়ার অধিকার আছে।
  • নিজের জীবন বন্ধকে দেওয়া যায়: আদি ৪৩:৯ যিহূদা তার ভাই বিন্যামিনের জন্য নিজের জীবন বন্ধক দেয়: “আমি নিজেই ওর জন্য জামিন রইলাম। ওর জন্য তুমি আমাকেই দায়ী কোরো। আমি যদি ওকে তোমার কাছে ফিরিয়ে না এনে দিই তবে চিরকাল আমি তোমার কাছে দোষী হয়ে থাকব।”
  • বন্ধক নেওয়া যায় চুক্তির পূরণ হওয়া পর্যন্ত। এমন কিছু বন্ধক নেওয়া যায় যার মূল্য বন্ধকদাতার কাছে মাত্র (স্মরণের জিনিস, ব্যক্তিগত বা প্রিয় জিনিস, আদি ৩৮:১৭-১৯ দেখুন।
  • টাকা পাওয়ার জন্য জমি বন্ধক দেওয়া যায়। যে কোন মুহূর্তে টাকা ফিরিয়ে জমির অধিকার ফেরত নেওয়া যায় (লেবীয় ২৫:২৩-২৮)। জমির ক্ষেত্রে বন্ধক স্থায়ী নয়: জুবিলী বছরে জমি আসল মালিকের হাতে ফিরে যায়।
  • আধুনিক যুগে আর একটি পদ্ধতি: একজনের কাছ থেকে টাকা ধার করার সময় একটি জিনিস বন্ধক দেওয়া হয়। ঠিকমত টাকা ফেরত না দিলে জিনিসের উপরে মালিকানা হারাতে হবে।
 
সারাংশ
  • বন্ধক নেওয়া নিষেধ না। ঋণদাতার একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত ঋণ গ্রহীতার সম্পত্তির উপরে অধিকার আছে।
  • শুধুমাত্র বন্ধক নেওয়া যায় যদি আমার জন্য তা প্রয়োজন। বন্ধক এমনভাবে নিতে হয় যাতে ঋণ গ্রহীতার সম্মান নষ্ট করা না হয়।
  • যা বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন (জাঁতা কিম্বা তার উপরের পাথরটা, রাতের বেলায় পোষাক) অথবা যা প্রয়োজন আয় করার জন্য (বিধবার গরু), তা বন্ধক নেওয়া নিষেধ, কারণ তার ফলে ঋণ গ্রহীতার আর কোন সুযোগ নেই ঋণ আসলে পরিশোধ করতে।
  • বন্ধক নেওয়ার উদ্দেশ্য: ঋণ গ্রহীতা অবিশ্বস্ত হলে যেন ঋণদাতা সংকটে না পড়ে বরং এক পরিমাণ পর্যন্ত রক্ষা পায়। কিন্তু ঋণদাতা নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য, ঋণ গ্রহীতাকে হয়রানি করার জন্য বা আরো ঋণে ফেলার জন্য বন্ধক নেওয়া নিষেধ।