ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, যেমন বাইবেল আমাদের বলে, তা সমাজে ক্ষেত্রগুলোর জন্য কিভাবে ভিত্তি স্থাপন করে? সমাজের ক্ষেত্রে ত্রিত্ব ঈশ্বর কিভাবে প্রকাশিত? এখানে কিছু প্রাথমিক চিন্তা দেওয়া হয়েছে:
অর্থনীতি
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা অর্থনীতি ক্ষেত্রের জন্য কিভাবে ভিত্তিস্বরূপ?
- এই ক্ষেত্রে দানশীলতা, বড় মন, যোগান এবং নিজের ও অন্যের জন্য ভাল কিছু তৈরি করা প্রকাশ পায়। এই মনোভাব ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যেও দেখা যায়: স্বার্থহীনতা আছে, পরস্পর্কে মানা, পরস্পর্কে গুরুত্ব, প্রাধান্য ও সেবা দান।

সরকার
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা সরকারের ক্ষেত্রের জন্য কিভাবে ভিত্তিস্বরূপ?
- ত্রিত্ব ঈশ্বর মানে যে স্বগস্থ পিতা, যীশু ও পবিত্র আত্মা একসাথে সর্বশক্তিমান।
- তাই ক্ষমতা ও অধিকার তাদের সবারই, একসাথে। আমরা এখানে মৌলিক চিন্তা পায় যে মানুষের ক্ষেত্রেও (এবং আরো বেশি) একসাথে ক্ষমতার অধিকারই হওয়া ভাল।
- তাই বাইবেলে আমরা দলীয় নেতৃত্ব দেখি যেমন দবোরা ও বারক (বিচার ৪-৫), মোশি, হারোণ ও মিরিয়ম (মীখা ৬:৪), পিতর ও যোহন (প্রেরিত ৩-৪), ৭জন পরিচালক (প্রেরিত ৬), ইত্যাদি।
- তাই বাইবেলে আমরা দেখি যে সরকারি ক্ষমতাও ভাগ করা দরকার।
- যিশাইয় ৩৩:২ “সদাপ্রভুই আমাদের ন্যায়বিচারক ও আমাদের আইনদাতা; সদাপ্রভুই আমাদের রাজা, তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন” এপদে সরকারের ৩টি ভূমিকা বা বিভাগ দেখা যায়: আইনদাতা (legislative), নির্বাহী (executive) এবং বিচারক (judiciary)। যদি এমন
- কি নিখুঁত ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে ক্ষমতা শুধুমাত্র একজনের নয়, তবে পতিত মানুষ দ্বারা তৈরি সরকারে ক্ষমতা ভাগ করা আর কত না গুরুত্বপূর্ণ।
- ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সেই সুশৃঙ্ক্ষলা দেখা যায়, তা সরকারের প্রাথমিক দায়িত্বের জন্য আদর্শ: আইন-শৃঙ্ক্ষলা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।
- ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরণ এই পদে একটু করে প্রকাশ পায় “আসুন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে মানুষ তৈরি করি” (আদি ১:২৬)। এখানে আমরা উঁচু থেকে নিচ্ দিকে আদেশ দেখি না (তুই কর্!) বরং প্রস্তাব, খোলা আলোচনা, একসাথে সিদ্ধান্ত নেওয়া দেখা যায়। যদি ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে মানুষের মধ্যে আমাদের কি এই আদর্শ অনুসারে আগানো উচিত নয়?
- যেহেতু ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে প্রত্যেকজনের তাঁর সত্যিকারের ভূমিকা আছে, মানুষের মধ্যেও বিভিন্ন ভূমিকা ও দায়িত্ব থাকে। ত্রিত্ব ঈশ্বর যেমন সুশৃঙ্ক্ষলভাবে, একতায় ও একই উদ্দেশ্যে কাজ করে, আমাদেরও এমন করা উচিত।
পরিবার
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা অর্থনীতি ক্ষেত্রের জন্য কিভাবে ভিত্তিস্বরূপ?
- ঈশ্বর যে ত্রিত্ব হন, তা দেখায় যে অনন্তকাল আগে থেকে ঈশ্বেরর মধ্যে সম্পর্ক, অর্থাৎ সুসম্পর্ক উপস্থিতি। সম্পর্ক, পরিবার ও সমাজ, এইগুলো সব ঈশ্বরকে নিয়েই শুরু। তাই সম্পর্ক, পরিবার ও সমাজ ঈশ্বরের মধ্যে ভিত্তি, উৎস ও আদর্শ পায়। সম্পর্ক, পরিবার ও সমাজ, এসব হল ঈশ্বর থেকে দেওয়া, ভাল ও উৎযাপনের বিষয়।
- ত্রিত্ব ঈশ্বর ভালবাসার চক্রে আছে এবং ঈশ্বর এই চক্র খুলে আমাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চান।
- ভালবাসা হল অধিকারের ভিত্তি।
- নেতৃত্ব দান মানে ভালবাসা, পরস্পর্কে বুঝা, স্বীকার করা ও প্রাধান্য দেওয়া।
- ভিন্নতা, ভিন্ন অবদান, ভিন্নভাবে অংশগ্রহণ, একে অপরের পরিপূর্বক হওয়া এবং একতা, এসব ঈশ্বরের মধ্যে উপস্থিত এবং এভাবে অনুমোদিত ও উৎযাপনের বিষয়।
- ভিন্ন ব্যক্তি যদি এক হয় তবে নতুন জীবন শুরু। ভিন্নতা ও একতা নতুন জীবনের উৎস। নতুন জীবন, বৃদ্ধি, আলাদা হওয়া, ছড়িয়ে পড়া, এসব হল ভাল এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রের জন্য কিভাবে ভিত্তিস্বরূপ?
- ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে আইন-শৃঙ্ক্ষলা, একতা, উদ্দেশ্য, নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। ঠিক তেমনি তাঁর সৃষ্টিও এক এক দিন এক এক রকম নয়, বরং সুশৃঙ্ক্ষল ও আইন দিয়ে চালিত, যা বিজ্ঞানের ভিতি। বিজ্ঞান তো মানে সব কিছুর মধ্যে আইন বা সূত্র খুঁজে পাওয়া।
- ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে যে ভিন্নতা আছে, তার কারণে সৃষ্টিও হল বিন্নতার বা বৈচিত্র্যের বিষয় (উদাহরণ: পৃথিবীতে ৩০’০০০ ধরণের ফল গাছ আছে, এক কিমি সমযুদ্র সৈকতের মধ্যে ৭০০০এর উপরে ধরণের ঝিনুক ও সামুক পাওয়া গেছে)। ঈশ্বরের মধ্যে ভিন্ন তা আছে, অশেষ বিন্নতা ঈশ্বর দ্বারা স্থাপিত একটি অদ্ভূত বাস্তবতা। বিভিন্ন ধরণ, বিভিন্ন রং, বিভিন্ন গন্ধ, বিভিন্ন স্বাদ, বিভিন্ন কণ্ঠস্বার, এসব হল ত্রিত্ব ঈশ্বরের একটি প্রকাশ এবং বিজ্ঞান সেগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করে।
- ত্রিত্ব ঈশ্বর নতুন জীবন ও বৃদ্ধি চান, যার ফলে বিজ্ঞান প্রয়োজন পড়বে। অল্প মানুষ একসাথে বাস করলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেশি প্রয়োজন নেই, কিন্তু বৃদ্ধি হলে তা আবশ্যক।
যোগাযোগ
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা যোগাযোগ ক্ষেত্রের জন্য কিভাবে ভিত্তিস্বরূপ?
- যেহেতু ঈশ্বর ত্রিত্ব, তাঁর তিনজন ব্যক্তির মধ্যে অনন্তকাল আগে যোগাযোগ উপস্থিতি। তাই ব্যক্তিত্ব এবং যোগাযোগ উভয় ত্রিত্ব ঈশ্বর দ্বারা অস্থিত্ব ও গুরুত্ব পায়।
- যোগাযোগ দাবি করে যে আমাদের মনের বাইরে সত্য বা বাস্তবতা বলতে কিছু আছে। কিছু না থাকলে তবে যোগাযোগ করার কিছু থাকত না। কথার অর্থ ও গুরুত্ব আছে।
শিক্ষা
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা শিক্ষার ক্ষেত্রের জন্য কিভাবে ভিত্তিস্বরূপ?
- যেহেতু ঈশ্বর ত্রিত্ব, তার মধ্যে প্রকাশ পায় যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা। মানুষের যোগাযোগ ও অথ্যদানের গুরুত্ব ও প্রকাশ পায়।
- ত্রিত্ব ঈশ্বর তাঁর মধ্যে পরামর্শ করেন (আদি ১:২৬), তাই পরামর্শ, শিক্ষা ও তথ্য দান মানুষের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ।
চারুকলা ও বিনোদন
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা চারুকলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রের জন্য কিভাবে ভিত্তিস্বরূপ?
- ত্রিত্ব ঈশ্বেরর মধ্যে ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য অনুমোদিত এবং উৎযাপনের বিষয়। তিনিই সৃজনশীল, এবং তিনি নতুন এবং ভিন্ন কিছু তৈরি করার আনন্দ পান (আদি ১:৩১)। তিনি পাঁচটি ইন্দ্রিয় এবং তা দ্বারা সৃষ্টির উৎযাপনের স্থাপনকারী।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে সম্পর্ক
ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর হন, তা থেকে আমরা বুঝতে পারে যে
- সব ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ, সব ক্ষেত্র সম্পর্কিত এবং একে অন্যের পরিপূর্বক।
- প্রত্যেকটি ক্ষেত্র প্রয়োজন এবং তার নির্দিষ্ট ভূমিকা, অবদান ও অধিকার আছে।
- ভিন্নতায় একতা হল জীবন, বৃদ্ধি ও সৌন্দর্য। এসব ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে ভিত্তি পায়।