বিশ্রামের বিষয়ে কত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে!
- ইব্রীয় এবং গ্রীক ভাষায় বেশ কয়েকটি শব্দ আছে যা বাংলায় ‘বিশ্রাম’ বুঝায়। বামে দেওয়া তালিকা দেখুন। বেশিরভাগ শব্দগুলোর কয়েকটি অর্থ বা সম্ভাব্য অনুবাদ আছে (যেমন: বসবাস করা, থাকা, শোয়া ইত্যাদি)। তারপরেও অবাক লাগার বিষয় ঈশ্বর বাইবেলে ‘বিশ্রাম’ ও ‘বিশ্রাম করা’ এই বিষয়ে কত গুরুত্ব দেন! প্রায় ৪১৭ পদে বিশ্রাম বিষয় একভাবে না অন্যভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি ‘ঘুম’, ‘ঘুমানো’ ধরণের শব্দগুলো এই অধ্যয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হত তবে পদের সংখ্যাটি আরো বৃদ্ধি পেত।
- মানুষের আহ্বান, পেশা, কাজ, পরিশ্রম, প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও নেতৃত্ব দানের বিষয়ে বাইবেলে অবশ্যই অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং মনে-প্রাণে কাজ করা অনেক প্রশংসা পায়। তবুও তাও বলতে হয় যে, বিশ্রাম করার বিষয়ও অনেক গুরুত্ব পায়।
শারীরিক বা ব্যবহারিক বিশ্রাম <=> আত্মিক বিশ্রাম
- ‘বিশ্রাম’ বাইবেলে আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করা হয়, যেমন শারীরিক বিশ্রাম, শান্ত পরিবেশ, সুরক্ষিত দেশ।
- পাশাপাশি ‘বিশ্রাম’ রূপক বা আত্মিক অর্থেও প্রায়ই ব্যবহৃত, অর্থাৎ ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগিতা ও সুসম্পর্ক।
- প্রকৃতপক্ষে বলা যায় যে, আক্ষরিক অর্থে ‘বিশ্রাম’ এবং রূপক বা আত্মিক অর্থে ‘বিশ্রাম’ – এই দু’টি বিষয় সব সময় সংযুক্ত:

- আত্মিক বিশ্রাম > ব্যবহারিক বিশ্রাম: বিশ্রামবারে প্রভুর উদ্দেশ্যে সময় আলাদা করে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে সুসম্পর্কে থাকতে পারি ও শান্তিপূর্ণ জীবন করতে সক্ষম হই। ধার্মিক জীবনের ফলে আমরা বহুদিন দেশে টিকে থাকাতে পারি।
- ব্যবহারিক বিশ্রাম > আত্মিক বিশ্রাম: কিন্তু অপরদিকে যদি দেশের সীমানা সুরক্ষিত হয়ে না থাকে, যদি সরকারের স্থিরতা নেই, যদি সমাজে ন্যায্যতা না থাকে এবং প্রতিবেশিদের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকে তবে সবাই ‘নিজের ডুমুর গাছের নিচে’ শান্তিতে বাস করতে পারবে না। ঈশ্বরের ‘শালোম’ এখনও স্থাপিত হয় নি।
আদি ২:২-৩ – ঈশ্বর বিশ্রাম বার স্থাপন করেন এবং নিজেই পালন করেন
“ঈশ্বর তাঁর সব সৃষ্টির কাজ ছয় দিনে শেষ করলেন; তিনি সপ্তম দিনে সৃষ্টির কোন কাজ করলেন না। ৩ এই সপ্তম দিনটিকে তিনি আশীর্বাদ করে নিজের উদ্দেশ্যে আলাদা করলেন, কারণ ঐ দিনে তিনি কোন সৃষ্টির কাজ করেন নি।”
- ঈশ্বর নিজে শুরু থেকেই বিশ্রাম বারের অনুশীলন স্থাপন করেন এবং তা নিজেই পালন করেন: তিনি এক দিন বিশ্রাম করার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখেন।
- ঈশ্বর বিশ্রাম বার পালন করেন এবং আমাদেরও তা পালন করা উচিত। আমরা মনে করি বিশ্রামের জন্য যথেষ্ট সময় নেই। কিন্তু পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, ঈশ্বর মনে করেন বিশ্রাম করার জন্য যথেষ্ট সময় আছে। আমাদেরও তা মেনে নেওয়া ভাল হবে।
- ঈশ্বর ক্লান্ত বা দুর্বল হন না এবং এই অর্থে তাঁর বিশ্রাম দরকার নেই, তবুও তিনি বিশ্রাম বার পালন করেন। এটা দ্বারা বিশ্রাম বারের অনুশীলন আরো গুরুত্ব পায় (গীত ১২১:৪ “যিনি ইস্রায়েলীয়দের পাহারা দেন তিনি তো ঘুমে ঢুলে পড়েন না, ঘুমানও না”, যিশাইয় ৪০:২৮ “তিনি দুর্বল হন না, ক্লান্তও হন না; তাঁর বুদ্ধির গভীরতা কেউ মাপতে পারে না”।
- ঈশ্বর হলেন বিশ্রামদাতা এবং সমস্ত বিশ্রামের উৎস। ঈশ্বরের এই বর্ণনা আমরা বিভিন্ন পদে পাই, যেমন : যিশাইয় ৪০:২৯-৩১ “তিনি দুর্বলদের শক্তি দেন আর শক্তিহীনদের বল বাড়িয়ে দেন। ৩০ অল্পবয়সীরা পর্যন্ত দুর্বল হয় ও ক্লান্ত হয় আর যুবকেরা উছোট খেয়ে পড়ে যায়, ৩১ কিন্তু যারা সদাপ্রভুর উপর আশা রাখে তারা নতুন শক্তি পাবে। তারা ঈগল পাখীর মত ডানা মেলে উঁচুতে উড়বে; তারা দৌড়ালে ক্লান্ত হবে না, তারা হাঁটলে দুর্বল হবে না” এবং মথি ১১:২৮ “তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব”। তাঁর বিশ্রাম দরকার নেই, প্রকৃতপক্ষে তিনি সমস্ত বিশ্রামের উৎস।
- ঈশ্বর তারপরেও বিশ্রাম দিন পালন করেন, যার অর্থ এই যে, বিশ্রাম বার মাত্র শারীরিক পুনরুদ্ধারের কারণে দেওয়া হয়েছে, এমন নয়। পাশাপাশি আরো কারণ আছে, যদিও মানুষের ক্ষেত্রে শারীরিক পুনরুদ্ধার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
- লক্ষ্য করুন যে, বিশ্রাম বার পাপে পতনের আগে স্থাপিত। বিশ্রাম বার যে পাপের কারণেই প্রয়োজন, এমন নয় এবং বিশ্রাম বার যে পাপ থেকে উদ্ধারের জন্যই স্থাপিত, এমনও নয়।
- পরমদেশে, অর্থাৎ ঈশ্বরের সঙ্গে সুসম্পর্কের সময়েই বিশ্রাম বার স্থাপিত। ঈশ্বর বিশ্রাম বার এমন একটি সময়ে স্থাপন করেন যখন মানুষের কাজ এখনও ঘাম ফেলা, ভীষণ পরিশ্রম ও নিষ্ফলতার বিষয়ে পরিণত হয় নি: আদি ৩:১৭ “তারপর তিনি আদমকে বললেন, “যে গাছের ফল খেতে আমি নিষেধ করেছিলাম তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনে তা খেয়েছ। তাই তোমার দরুন মাটি অভিশপ্ত হল। সারা জীবন ভীষণ পরিশ্রম করে তবে তুমি মাটির ফসল খাবে।”

তাহলে ঈশ্বর কেন বিশ্রামবার স্থাপন করেন?
- যদিও আদিপুস্তকে এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরিভাবে দেওয়া হয় নি, কিছু চিন্তা করা যায়:
- ঈশ্বর সৃষ্টি নিয়ে, অর্থাৎ তাঁর হাতের কাজ নিয়ে আনন্দ করার জন্যই বিশ্রামবার পালন করেন।
- ঈশ্বর তাঁর হাতের কাজ আরো মূল্যয়ন করেন (যদিও তিনি প্রতি সৃষ্টির দিনের পরেও তা করেন, আদি ১:১০)।
- সৃষ্টির সৌন্দর্য ও গুনমান উৎযাপন করার জন্য।
- কাজ ও বিশ্রাম উভয়কে মূল্য দেওয়ার জন্য, কার্যকারীতা ও উপভোগ উভয়কে মূল্য দেওয়ার জন্য, করা ও হওয়া উভয়কে মূল্য দেওয়ার জন্য, অর্জন ও থাকতে দেওয়া উভয়কে মূল্য দেওয়ার জন্য।
- মানব জাতিকে আদর্শ দেখানোর জন্য যেন আমরা তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি মানুষ হিসাবে ঠিক তাই করি।
- বিশ্রাম, অর্থাৎ নিজের প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও সংগ্রাম থেকে বিরত হওয়া, তা নতুন নিয়মে ঈশ্বরের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি হয়ে যায় “আমরা বিশ্বাস করেছি এবং তাঁর সেই প্রতিজ্ঞা করা বিশ্রামের জায়গায় এসেছি” (ইব্রীয় ৪:৩)।
- যদি বিশ্রাম নিতে প্রত্যাখ্যান করি, তবে তার কারণ কি হতে পারে? আমি অতিরিক্ত চাপ বা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, আমি মনে করি সব কিছু আমার উপর নির্ভরশীল, আমিই সব কিছুর উত্তর ও সমাধান, আমি সবাইকে খুশি করতে চেষ্টা করি, আমি নিজেকে প্রমাণিত করতে চেষ্টা করি, আমির নিজেকে নিয়ে এবং ঈশ্বরকে নিয়ে শান্তিতে নেই, আমি ঈশ্বরের উপর নির্ভর করি না বরং সব কিছু নিজের শক্তিতে ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করি।

বিশ্রাম হল পরিত্রাণের ছবি
- ইব্রীয় চিঠিতে লেখক ঈশ্বর থেকে বিশ্রাম (গ্রীক: katapausis’ ও ‘sabbatismos’), এই রূপক এভাবে বুঝিয়ে দেন: ঈশ্বরের কাছ থেকে বিশ্রাম পাওয়া মানে প্রতিজ্ঞাত দেশ লাভ করা, অর্থাৎ উত্তরাধিকার পাওয়া। কিন্তু তা শেষ কথা নয়: ‘”তাহলে দেখা যায়, ঈশ্বরের লোকদের জন্য বিশ্রামের সুযোগ আছে” (ইব্রীয় ৪:৯)। লেখক ব্যখ্যা করেন যে, আমরা ‘ঈশ্বরের বিশ্রাম’ আরো চূড়ান্তভাবে যীশু দ্বারা পাই যখন তিনি আমাদেরকে তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যু দিয়ে পরিত্রাণ, অনন্ত জীবন ও স্বর্গে থাকার অধিকার দান করেন। লেখক তার শ্রোতাদের বলেন: “এইজন্য এস, আমরা সেই বিশ্রাম পাবার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী হই। কেউ যেন সেই অবাধ্য ইস্রায়েলীয়দের মত ঈশ্বরকে অমান্য করে তাঁর দেওয়া বিশ্রাম থেকে বাদ না পড়ে” (ইব্রীয় ৪:১১)।
- বিশ্রামবার পালন তাহলে পরিত্রাণের ছবি: আমি নিজের পরিশ্রম বা প্রচেষ্টার উপর নির্ভর না করে বরং বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞার সঙ্গে যীশু যা অর্জন করেছেন, তা গ্রহণ করি এবং মাত্র তাঁর উপর নির্ভর করি। এইভাবে আমি ঈশ্বরের পুত্র হয়ে যাই, যা অপরিবর্তনশীল সম্পর্ক।
বিশ্রামবারে বস্তু জগতের অনুমোদন ও উৎযাপন
- বিশ্রামবার স্থাপনের আত্মিক অর্থের পাশাপাশি অন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থও দাঁড়ায়: ঈশ্বর এই সৃষ্টি, অর্থাৎ এই বস্তু জগতকে অনুমোদন, প্রশংসা, গুরুত্ব ও সম্মান দান করেন এবং তা আনন্দের সঙ্গে উৎযাপন করেন।
- এই বস্তু জগত ভাল, প্রাণীদের শারীরিক ক্ষমতা সীমিত, তাও ভাল। কাজ করা যায়, সফল হওয়া যায়, সৃষ্টির মঙ্গলময়তা উপভোগ করা যায় কিন্তু সঙ্গে মানুষ ক্লান্তও হয়ে পড়ে এবং বিশ্রাম, পুনরুদ্ধার, ঘুম, আরাম, সৌন্দর্য ও বিনোদন প্রয়োজন।
কাজ বনাম বিশ্রাম
- শনারী লরেন কানিংহাম বলেছিলেন: “বিশ্রাম বার পালন করা মানে আমার অসমাপ্ত কাজের বিষয়ে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা।”
- বিশ্রাম বার পালন করা মানে নিজেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে না করে বরং ঈশ্বরকে গুরুত্ব দেওয়া।
- এই ক্ষেত্রে দশমাংশ দেওয়া ও বিশ্রাম বার পালন করা কিছুটা মিল আছে: আমরা সহজেই নিজেকে ভুলিয়ে মনে করতে পারি যে, দশমাংশ না দিলে হাতে বেশি টাকা থাকবে। একইভাবে আমরা নিজেকে ভুলিয়ে বিশ্রাম বাদ দেই চিন্তা করে যে, বেশি সময় হাতে থাকবে। কিন্তু দেখা যায় ‘সময় চুরি করলে’ লাভ নেই, আমরা বাকি সময়ে কম কার্যকারী হই।
- ঈশ্বর ভারসাম্য রক্ষা করেন: কাজ এবং বিশ্রাম, উদ্দেশ্যে পৌঁছানো এবং সুসম্পর্ক, উৎপাদন এবং উৎপাদন করার ক্ষমতা, করা এবং হওয়া।
- বিশ্রাম করার আদেশে ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা এবং মানুষদের জন্য তাঁর দয়া ও উদারতা প্রকাশ পায়। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিশ্রাম, পুনরুদ্ধার, ঘুম, আরাম, সহভাগিতা ও আনন্দভোগের অনুমতি দেন, এমন কি এর আদেশই দেন। ঈশ্বর বড় মনের ঈশ্বর। তিনি আমাদের দাস বা কাজের লোক হওয়ার জন্য তৈরি করেন নি।
- ৭ দিনের সপ্তাহ এবং সাপ্তাহিক বিশ্রামবার হল সর্বজনীন ও বিশ্বব্যাপী। কিছু নেতা বা সরকার লোকদেরকে একটি ১০ দিনের বা ১২ দিনের সপ্তাহে বাধ্য করতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা নিষ্ফল হয়েছে (নেপোলিয়ন, সমাজতান্ত্রিক সরকার)।
- মজার বিষয় যে, ৭ দিনের সপ্তাহ এমন কি কিছু প্রাকৃতিক বিষয়ে প্রকাশিত: চাঁদের পর্যায় ৪ গুন ৭ দিন অনুসারে চলে এবং মহিলাদের মাসিকও সেই একই ২৮ দিনের মধ্যে হয়।
- বিশ্রাম করা মানে কি? ব্যবহারিকভাবে কি করলে বা না করলে বিশ্রাম হয়? বিভিন্ন লোকদের জন্য হয়তো ভিন্ন কিছু বিশ্রাম বা সতেজ হওয়া হিসাবে দাঁড়ায়। তা হতে পারে: ঘুম, কাজ না করা, প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো, প্রকৃতিতে সময় কাটানো, ব্যায়াম, সহভাগিতা, ঘুরে বেড়ানো, একা থাকা, বাজনা বা নাচ-গান উপভোগ করা, সৃজনশীল কিছু করা, নড়াছড়া করা, বাগানে কাজ করা ইত্যাদি। আপনার জন্য আরাম, সতেজ হওয়ার বা মন হালকা করার বিষয় কি?
- ঈশ্বরের জন্য কি বিশ্রাম হিসাবে দাঁড়ায়? যিশাইয় ৬৬:১-২ পদে ঈশ্বর বলেন: “সদাপ্রভু বলছেন, “স্বর্গ আমার সিংহাসন আর পৃথিবী আমার পা রাখবার জায়গা। তোমরা আমার জন্য কোথায় ঘর তৈরী করবে? আমার বিশ্রামের স্থান কোথায় হবে? এই সব জিনিস আমি নিজের হাতে তৈরী করেছি আর তাই এই সব হয়েছে। যে লোক নম্র, যার মন ভেংগে চুরমার হয়েছে এবং যে আমার কথায় কাঁপতে থাকে তাকে আমি ভাল চোখে দেখব”। এই পদগুলো থেকে বুঝা যায় যে ঈশ্বরের জন্য ‘বিশ্রামের স্থান’ হল নম্র ও ইচ্ছুক মানুষের হৃদয়!
- সকালে যেমন আমরা একটি ছোট নিরব ধ্যান বা প্রার্থনা বা ডিভোশন দিয়ে দিন শুরু করে নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত করি, ঠিক তেমনি সাপ্তাহিক বিশ্রামবারে আমরা সপ্তাহকে মূল্যায়ন করে একটি ধ্যান-প্রার্থনার সময় কাটাতে পারি, অর্থাৎ ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগিতা করে তাঁর রব শুনতে এবং তার পরিচালনা, সংশোধন বা উৎসাহ পেতে পারি।

যাত্রা ২০:৮-১১, দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১২-১৫ – চতুর্থ আজ্ঞা: বিশ্রাম বার পালন কর
“বিশ্রামবার আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে এবং তা পালন করবে। ৯ সপ্তার ছয় দিন তোমরা পরিশ্রম করবে এবং তোমাদের সমস্ত কাজ করবে, ১০ কিন্তু সপ্তম দিনটা হল তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বিশ্রামের দিন। সেই দিন তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়ে, তোমাদের দাস-দাসী, তোমাদের পশু বা তোমাদের শহর ও গ্রামে বাস-করা অন্য জাতির লোক, মোট কথা, কারও কোন কাজ করা চলবে না। ১১ সদাপ্রভু ছয় দিনে মহাকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং সেগুলোর মধ্যেকার সব কিছু তৈরী করেছিলেন, কিন্তু সপ্তম দিনে সেই কাজ আর করেন নি। সেইজন্য তিনি এই বিশ্রাম দিনটাকে আশীর্বাদ করে তাঁর নিজের জন্য আলাদা করেছিলেন।”
- মোশি দ্বারা ঈশ্বরের আইন-কানুনের সরাংশ হল ১০ আজ্ঞা। ১০ আজ্ঞা আইন-কানুনের মূল উদ্দেশ্য প্রকাশ করে। দেখা যায় যে, বিশ্রামের আদেশ ১০ আজ্ঞার মধ্যেই পাওয়া যায় (৪নং আজ্ঞা), এইভাবে তার গুরুত্ব দেখানো হয়েছে। ১০ আজ্ঞার মধ্যে বিশ্রাম করার আদেশ হল সবচেয়ে বড় ও বিস্তারিত আজ্ঞা। এই আজ্ঞার মধ্যে এমন কি আদিপুস্তকের উদ্ধৃতিও পাওয়া যায়।
- বিশ্রামবার পালন করার আজ্ঞার ভিত্তি হল আদি ২:১-৩, যেখানে ঈশ্বর নিজেই বিশ্রামবার স্থাপন ও পালন করেন।
- লক্ষ্য করুন যে বিশ্রাম বারের আদেশ সবার জন্য: তুমি, তোমার ছেলেমেয়ে, দাস-দাসী, অন্য জাতির লোকেরা এবং এমন কি চাষের পশু বিশ্রাম করুক। আজকে আমরা বিশ্রামবার পালন করাকে ব্যক্তিগত অনুশীলন হিসাবে দেখি কিন্তু ইস্রায়েল জাতির জন্য (এবং আধুনিক যিহূদীদের জন্যও) তা হল সবাই একসাথে পালন করার বিষয়।
- বিশ্রামবারের আজ্ঞা বাইবেলে এত গুরুত্ব পায় যে, এই বিষয়ে পরবর্তীতে অতিকঠোর নিয়ম বিস্তার করা হয়েছে। এই প্রলোভন যীশুর সময়ে ছিল, আমাদের সময়েও আছে। যীশু মথি ১২:৫ পদে বলেন: “এছাড়া আপনারা কি মোশির আইন-কানুনে পড়েন নি যে, বিশ্রামবারে উপাসনা-ঘরের পুরোহিতেরা বিশ্রামবারের নিয়ম ভাংলেও তাঁদের দোষ হয় না?” তিনি আরো ঘোষণা করেন যে, ‘“মানুষের জন্যই বিশ্রামবারের সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু বিশ্রামবারের জন্য মানুষের সৃষ্টি হয় নি। ২৮ তাই মনুষ্যপুত্র বিশ্রামবারেরও কর্তা।” (মার্ক ২:২৭-২৮)। ফরীশীরা বিশ্রামবারের নিয়মগুলোর অতিকঠোর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, যার ফলে বিশ্রাম বার লোকদের জন্য বোঝা হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের মনোযোগ মূল বিষয় থেকে সরিয়ে গিয়েছিল। যীশু এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লোকদেরকে বিশ্রামবারের উৎস, সত্যিকারের অর্থ এবং উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দেন। তা হওয়ার কথা ছিল আনন্দ ও উৎযাপনের বিষয়।
- আধুনিক যুগে আমরা বিশ্রামবারের আদেশ খুব হালকাভাবে নিচ্ছি এবং এর সামাজিক অনুশীলনেও বেশি গুরুত্ব দেই না, এই দিনের আনন্দ বেশি উপভোগও করি না। এখানে ব্যবহারিক বিষয়ও দাঁড়ায়: রান্না করে রাখলে এবং পরিষ্কার কাজ রেখে বিশ্রাম পালন করলে অনেক সময় মুক্ত হয়, বিশেষভাবে মহিলাদের জন্য।
কেন বিশ্রামবার এত গুরুত্বপূর্ণ?

- বিশ্রামবার ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার জন্য সময় মুক্ত ও সুরক্ষিত করে রাখে: তাঁর সাথে সহভাগিতা, প্রশংসা, প্রার্থনা, বিনতি, তাঁকে অন্বেষণ, বাইবেল পাঠ, সংশোধন ও পরিচালনা পাওয়া, আত্মিকভাবে সতেজ হওয়া, আত্ম-মূল্যায়ন ইত্যাদি।
- বিশ্রামবার পালনে শারীরিক উদ্ধারও ঘটে: ঘুম, আরামে থাকা, মন হালকা করা, চাপ, দায়িত্ব ও পঞ্জিকা থেকে মুক্ত থাকা।
- বিশ্রামবার পবিত্র, অর্থাৎ আলাদা করা একটি সময়, ভিন্ন একটি সময়, সমর্পিত, খাঁটি একটি সময়। আমাদের কি হওয়া উচিত, বিশ্রামবার এর একটি ছবিও বটে। বিশ্রামবার একটি ব্যবহারিক পদ্ধতি কিভাবে আমরা ঈশ্বরের জন্য আলাদা করা একটি জীবন করতে পারি।
- বিশ্রামবার আমাদের দেখায় যে, ঈশ্বর কঠোর না, প্রাথমিকভাবে যে তিনি আমাদের কাজ চান, তাও না। ঈশ্বর যত্নশীল, দয়ালু, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে ও সহভাগিতায় থাকতে আকাঙ্ক্ষী। আমরা দাস নই বরং সন্তান (গালাতীয় ৪:৭)।
- বিশ্রামবারে আমরা ঈশ্বরকে, প্রিয়জনদেরকে, প্রকৃতিকে এবং আমাদের হাতের কাজকে উপভোগ ও তা নিয়ে আনন্দ করতে সুযোগ পাই। বিশ্রামবারে আমরা পরিবারকে এবং অন্য বিশ্বাসীদের অর্থাৎ মণ্ডলীকে সময় দেওয়ার সুযোগ পাই।
যাত্রা ১৬:২৩, ৫-২৬,২৯ মান্নার ক্ষেত্রে বিশ্রামবারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও যোগান
- সিনাই পাহাড়ে ১০ আজ্ঞা ও আইন-কানুন দেওয়ার আগেই ঈশ্বর মান্নার যোগানের মাধ্যমে বিশ্রামবারের অনুশীলন স্থাপন করেন। মান্না, অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতির জন্য ঈশ্বরের আশ্চর্য যোগান ছয় দিন ধরে ভোর সকালে আকাশ থেকে পড়ে, কিন্তু ৭ম দিনে কোন মান্না পড়ে না। এর পরিবর্তে ষষ্ঠ দিনে দ্বিগুণ পরিমাণে মান্না পড়ে যেন সপ্তম দিনের জন্য যোগান নিশ্চিত হয়। ষষ্ঠ দিন ছাড়া অন্য কোন দিনে মান্না গুদাম করতে চাইলে তা পচে যায়।
- মান্নার পদ্ধতিতে প্রকাশ পায় যে, ঈশ্বর বাস্তব এবং ব্যবহারিক বিষয়ে সমর্পিত। বাস্তব পৃথিবীতে যা ঘটে, তা তাঁর আইনের সাথে মিল আছে। তিনি যা আদেশ করেন এর জন্য ব্যবস্থাও করেন।
- মান্না ইস্রায়েল জাতির জন্য একটি দৈনন্দিন, ব্যবহারিক, বাস্তব শিক্ষা বা প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়, এমন একটি পদ্ধতি যাতে সাথে সাথে আচরণের ফলাফল দেখা যায়, অর্থাৎ এমন একটি পদ্ধতি যা দ্বারা তারা বাধ্যতা ও ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা শিখতে পারে।
মোশির আইন-কানুনে বিশ্রামবার পালন করার পুনরুক্তি আদেশ
যাত্রা ৩১:১২-১৭ – বিশ্রামবারের পালন করার আদেশের পুনরালোচনা
- বিশ্রামবার পালন না করা হল মৃত্যুর শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
- ঈশ্বর বিশ্রামবার “চিহ্ন” বলেন “এই বিশ্রামবার বংশের পর বংশ ধরে তোমাদের ও আমার মধ্যে এমন একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে।” পরে তিনি আরো বলেন “এই দিনটা আমার ও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে চিরকালের জন্য একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, কারণ আমি ছয় দিনের মধ্যে মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি।”
- বিশ্রামবারের উদ্দেশ্য কি? এই বিষয়ে ঈশ্বর বলেন: “যার দ্বারা তোমরা বুঝতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু এবং আমিই তোমাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি।”
- বিশ্রামবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটা পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইস্রায়েলীয়রা তা জাতি হিসাবে পালন করবে। বিশ্রামবারের অনুশীলন তাদেরকে অন্য জাতিদের থেকে আলাদা করবে, তাদের পবিত্র করে তুলবে এবং একটি চিহ্ন হিসাবে কাজ করবে। বিশ্রামবার সম্বন্ধীয় আইনে অনেক শক্তিশালী ভাষা ব্যবহার করা হয়, প্রায় সুন্নতের আদেশের ভাষার মত, যা ইস্রায়েল জাতির সাথে ঈশ্বরের চুক্তির চিহ্ন (আদি ১৭)।
- নতুন নিয়মে আমরা দেখি যে, যারা নিজেদেরকে ধার্মিক ভাবে (যেমন ফরীশীরা), তারা তিনটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়: সুন্নত, বিশ্রামবার পালন এবং শুচি-অশুচি বিষয়ের নিয়ম। এগুলো হয়ে গেছে যিহূদীদের পরিচয়ের ও আহ্বানের মূল বিষয়, যিহূদীদের চেনার ও যিহূদী হওয়ার চিহ্ন। যীশু অপর পক্ষে চিহ্নের অনুশীলনের চেয়ে প্রথম থেকে চিহ্নের অর্থ ও উদ্দেশ্য কি ছিল, এর উপর গুরুত্ব দেন।
যাত্রা ৩৫:২-৩ বিশ্বামবারের আইনের পুনরালোচনা
লেবীয় ১৬:৩১,২৩:৩২ প্রায়শ্চিত্ত দিন (অর্থাৎ পাপ ঢাকার দিন) ছিল বিশ্রামবার ও উপবাসের দিন।
লেবীয় ২৩:১১,১৫ প্রথমে তোলা ফসলের পর্ব: প্রথম ফসলের আঁটি বিশ্রামবারে দোলানো হয়।
লেবীয় ২৩:২৪ শিংগা বাজানোর দিন হল বিশ্রামবার।
লেবীয় ২৩:৩৯ কুঁড়ে-ঘরের পর্ব হল বিশ্রামবার।
লেবীয় ২৪:৮ প্রতি বিশ্রামবারে উপাসনা-ঘরে সম্মুখ-রুটি বদলানো হয়।
গণনা ২৮:৯-১০ প্রতি বিশ্রামবারে সকালে ও বিকালে এক একটি করে পুরুষ ভেড়ার উৎসর্গ হয়।
দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১২-১৫ বিশ্রামবারের আইনের পুনরালোচনা।
এমন ঐতিহাসিক ঘটনা যা দ্বারা বিশ্রামবারের গুরুত্ব আরো প্রকাশ পায়
গণনা ১৫:৩২-৩৬ একজন পুরুষ বিশ্রামবারে কাঠ কুড়ায় > তাকে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়
- এই পদগুলোতে বিশ্রামবার অমান্য করার জন্য শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা বাইবেলের বিশ্রামবারের জন্য মৃত্যুদণ্ডের একমাত্র উল্লেখ। সম্ভবত পরবর্তী যুগে এই অপরাধের জন্য মৃত্যুর শাস্তি আর দেওযা হত না। অনেক শতাব্দীর পরে যখন নহিমিয় বিশ্রামবার অমান্যকারীদের প্রতিরোধ করেন তখন তিনি শাস্তির হুমকি দেন কিন্তু মৃত্যুদণ্ড বিস্তারের করেন না: “কিন্তু আমি তাদের সাবধান করে দিয়ে বললাম, “তোমরা দেয়ালের কাছে কেন রাত কাটাচ্ছ? তোমরা যদি আবার এই কাজ কর তবে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।” সেই থেকে তারা আর বিশ্রামবারে আসত না (নহিমিয় ১৩:২১)।
বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা জমির ক্ষেত্রেও প্রসারিত করা হয়
লেবীয় ২৫:১-৭ – জমিকে বিশ্রাম দেওয়ার আদেশ
“২ আমি যে দেশ তোমাদের দিতে যাচ্ছি সেই দেশে যাবার পরে তোমাদের দেখতে হবে যেন সেখানকার জমিগুলো সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামের সময় পায়। ৩ ছয় বছর তোমরা জমিতে বীজ বুনবে আর আংগুর গাছের ডাল ছেঁটে দেবে এবং ফসল তুলে আনবে। ৪ কিন্তু সপ্তম বছরে জমিগুলোকে বিশ্রামের সময় দিতে হবে। এটা হবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রাম। সেই সময় তোমরা জমিতে বীজ বুনবে না এবং আংগুর গাছের ডাল ছাঁটবে না। ৫ তখন জমিতে যা নিজে থেকে জন্মাবে তা তোমরা কেটে মজুত করবে না কিম্বা অযত্নের মধ্যে যে সব আংগুর হবে তা-ও তুলে আনবে না। জমিগুলোকে এক বছর বিশ্রাম দিতে হবে। ৬ বিশ্রাম-বছরে জমিতে যা নিজে থেকে জন্মাবে তা-ই তোমাদের নিজেদের, দাস-দাসীদের, তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির মজুর ও অন্যান্য লোকদের …”
- বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা মাত্র মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এমন নয় (তুমি, তোমার ছেলেমেয়ে, দাস-দাসী, অন্য জাতির লোক)। বরং তা পশুদের ক্ষেত্রে (গরু-গাধা) এবং এমন কি জমির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
- প্রকৃতপক্ষে জমিকে কিভাবে বিশ্রাম দেওয়া যায়? ৬ বছর ধরে চাষ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু ১ বছর চাষ না করে জমিকে বিশ্রাম দিতে হবে।
- এই আদেশের উদ্দেশ্য হল অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরতা যেন নষ্ট হয়ে না যায়, যেন বৃষ্টি দ্বারা খনিজ পূরণ করে জমির উর্বরতা সুরক্ষিত থাকে।
- জমির বিশ্রামের আইন ঈশ্বর গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন, তা নিচে দেওয়া পদগুলোতে প্রকাশ পায়: ঈশ্বর যখন ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে ইস্রায়েল জাতিকে নির্বাসনে পাঠান তখন নির্বাসনে থাকার সময়কাল নির্ধারণ করা হয় বিশ্রাম বছর কত যুগ ধরে আর পালন করা হয় নি, এই অনুসারে।

২ বংশা ৩৬:২০-২১ ৭০ – বছর নির্বাসন কারণ ৭০টি বিশ্রাম বছর পালন করা হয় নি (৭x৭০=৪৯০ বছর ধরে নিয়মটি আর পালন করা হয় নি)
“যারা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল তাদের তিনি বাবিলে নিয়ে গেলেন, আর পারস্য-রাজ্য ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত তারা নবূখদ্নিৎসর ও তাঁর বংশধরদের দাস হয়ে রইল। ২১ এই সময় ইস্রায়েল দেশ তার বিশ্রাম-বছরের বিশ্রাম ভোগ করল। যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে বলা সদাপ্রভুর বাক্যের সত্তর বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দেশের সমস্ত জমি এমনি পড়ে থেকে বিশ্রাম ভোগ করল।”
পুরাতন নিয়মের বিশ্রামবারের আরো উল্লেখ
২ রাজা ৪:২৩ লোকেরা অমাবস্যা বা বিশ্রামবারে ভাববাদীদের কাছে যেত।
২ রাজা ১১:৪-১২, ২ বংশা ২৩:৪-১১ রানী অথলিয়ার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র একটি বিশ্রামবারে ঘটে।
২ রাজা ১৬:১৮ বিশ্রামবারের উদ্দেশ্যে মন্দিরে যে চাঁদোয়া তেরি করা হয়েছিল আহস তা সরিয়ে রাখেন।
১ বংশা ৯:৩২ কোহাতীয়রা প্রতি বিশ্রামবারে তাম্বুতে বা উপাসনা-ঘরে রূটি বদলাতে থাকেন।
নহিমিয় ৯:১৪ নহিমিয়ের প্রার্থনা: ঈশ্বর ইস্রায়েলকে আইন-কানুন ও বিশ্রামবারের নিয়ম দিয়েছিলেন।
নহিমিয় ১০:৩১ নহিমিয়ের সময়ে চুক্তি: বিশ্রামবারে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।
নহিমিয় ১৩:১৫ যারা বিশ্রামবারে কাজ বা পরিশ্রম করে তাদের বিরুদ্ধে নহিমিয়ের সাক্ষ্য।
নহিমিয় ১৩:১৫-২২ নহিমিয় বিশ্রামবারে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেন।
গীত ৯২:১ “একটা গান। বিশ্রাম দিনের জন্য একটি গীত।”
যিশাইয় ৫৬:২ “ধন্য সেই লোক, যে … বিশ্রামবার অপবিত্র না করে … সে ধন্য।”
যিশাইয় ৫৬:৬-৭ “যে বিদেশীরা … বিশ্রামবার অপবিত্র না করে তা পালন করে … তাদের আমি আমার পবিত্র পাহাড়ে নিয়ে আসব … তাদের আনন্দ দান করব।”
যিশাইয় ৫৮:১৩-১৪ “যদি তোমরা বিশ্রামবার পালন কর ও আমার পবিত্র দিনে নিজেদের সন্তুষ্ট না কর, যদি বিশ্রামবারকে আনন্দদায়ক আর সদাপ্রভুর দিনকে সম্মানের যোগ্য মনে কর, যদি নিজেদের খুশীমত না চলে সেই দিনের সম্মান রাখ আর যা খুশী তা না কর বা বাজে কথা না বল তাহলে আমি তোমাদের পিতা যাকোবের অধিকার তোমাদের ভোগ করতে দেব।”
যিশাইয় ৬৬:২৩ “প্রত্যেক অমাবস্যায় ও বিশ্রামবারে সমস্ত লোক আমার সামনে এসে উপাসনা করবে।”
যির ১৭:২১-২৭ বিশ্রামবারে কোন বোঝা বহন করা যাবে না। বাধ্য হলে আশীর্বাদ, অবাধ্য হলে আগুন।
যিহিষ্কেল ৪৬:১ উপাসনা-ঘরের দর্শন: ভিতরের উঠানের ফটক বিশ্রামবার ছাড়া বন্ধ থাকবে।
যিহিষ্কেল ৪৬:৪ উপাসনা-ঘরের দর্শন: বিশ্রামবারে শাসনকর্তার (রাজ পুত্রের) উৎসর্গগুলো।
যিহিষ্কেল ৪৬:১২ বিশ্রামবারে উপাসনা-ঘরের ফটক খোলা হবে যেন শাসনকর্তা উৎসর্গ করতে পারেন।
আমোষ ৮:৫ “কখন বিশ্রাম দিন শেষ হবে যাতে বাজারে গম বেচতে পারি?” লোকদের ঠকানো।
শেষ কথা
- বিশ্রামবার সপ্তাহের ঠিক কোন দিন পালন করা উচিত, এই বিষয়ে তর্ক করা বা বিচ্ছেদ সৃষ্টি করার চেয়ে আসুন, আমরা সপ্তাহের এক দিন প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের জন্য কিছু সময় আলাদা করি! “যদি বিশ্রামবারকে আনন্দদায়ক আর সদাপ্রভুর দিনকে সম্মানের যোগ্য মনে কর … আমি প্রথিবীর সব উঁচু জায়গার অধিকার তোমাদের দেব” (যিশাইয় ৫৮:১৩-১৪)।
পুরাতন ও নতুন নিয়মে ‘বিশ্রাম’ ও ‘বিশ্রাম বার’ নিয়ে অধ্যয়ন
H7673 שָׁבַת shâbath ৭১ বার
অর্থ: বিশ্রাম করা, কাজ বা কষ্ট না করা (আক্ষরিক ও রূপক অর্থে), থামানো, থামতে দেওয়া, উৎযাপন করা, বর্থ হতে দেওয়া, বিশ্রাম বা পালন করা, না থাকা, দূর করা, রাখা, শুয়ে পড়ানো, শান্ত করা, ঘুম পাড়ানো, বিশ্রাম করানো, তুলে নেওয়া।
H 7676 שַׁבָּת shabbâth ১১ বার
ইব্রীয় H7673 শব্দ থেকে। অর্থ: বিরতি, বিশ্রাম বার’শাব্বাথ’।
H7677 שַׁבָּתוֹן shabbâthôn ১১ বার
ইব্রীয় H7676 শব্দ থেকে। অর্থ: বিশ্রামবার, বিশ্রাম করা, ছুটি, বিশেষ ছুটির দিন, শাব্বাথ।
G4521 σάββατον sabbaton ৬৮ বার
ইব্রীয় H7676 শব্দ থেকে। অর্থ: বিশ্রামবার, শাব্বাথ্, কাজ বা পেশা থেকে সাপ্তাহিক ছুটি, সপ্তাহ।
G4520 σαββατισμός sabbatismos ১ বার
ইব্রীয় H7676 ও গ্রীক G4521 শব্দ থেকে: বিশ্রাম, বিশ্রামবার, শাব্বাথ, রূপক অর্থ খ্রীষ্টেতে বিশ্বাসীকে ‘শান্তি’ বা ‘পরিত্রাণ’ বা ‘স্বর্গে থাকার অধিকার’।
H7674 שֶׁבֶת shebeth ৩ বার
ইব্রীয় H7673 থেকে: বিশ্রাম, থেমে যাওয়া, থামানো, বাধা দেওয়া, শান্তভাবে বসে থাকা, সময় পার হওয়া।
H5117 נוּחַ nûach ১৪৪ বার
অর্থ: বিশ্রাম করা, আক্ষরিক ও রূপক অর্থে একটি জায়গায় এসে সেখানে বাস করা, বাস করা, থাকা, পড়ে যাওয়া, রাখা, শান্ত হওয়া, থাকতে দেওয়া, সান্ত্বনা দেওয়া, প্রত্যাহার করা, মৈত্রীবদ্ধ হওয়া, শোয়া, শুয়ে পড়ে।
H4496 מְנֻחָה מְנוּחָה menûchâh menûchâh ২১ বার
অর্থ: বিশ্রাম করা, শান্তিতে বাস করা, শুয়ে পড়া, সান্ত্বনা, রূপক অর্থে বিবাহ, থাকা; শান্তিতে, আরামে, শান্তভাবে থাকা, বাস বা বিশ্রাম করা।
H4494 מָנוֹחַ mânôach ৭ বার
ইব্রীয় H5117 শব্দ থেকে: শান্ত, বসে থাকা, বাসা, বিশ্রামের স্থান।
H8252 שָׁקַט shâqaṭ ৪১ বার
অর্থ: বিশ্রাম করা, শুয়ে থাকা (প্রায়ই রূপক অর্থে), শান্ত হওয়া, শান্ত করানো, অলস সময় কাটানো, শান্তিতে থাকা, বিশ্রাম দেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া, বসবাস করা।
G373 ἀναπαύω anapauō ১২ বার
অর্থ: শুয়ে থাকা (আক্ষরিক ও রূপক অর্থে), থাকা, থেকে থাকা, সতেজ হওয়া, বিশ্রাম করা, বিশ্রাম দেওয়া।
G372 ἀνάπαυσις anapausis ৫ বার
গ্রীক G373 শব্দ থেকে: বিরতি, বিশ্রাম, বিনোদন।
G2664 καταπαύω katapauō ৪ বার
অর্থ: একটি জায়গায় এসে বাস করা, বসতি স্থাপন করা, উপনিবেশ করা, রূপক অর্থে ছেড়ে দেওয়া, না করা, থামা, বিশ্রাম দেওয়া।
G2663 κατάπαυσις katapausis ৯ বার
গ্রীক G2664 শব্দ থেকে। অর্থ: শুয়ে পড়া, শোয়া, থাকা, বাস করা, বিশ্রাম করা।
G2681 κατασκηνόω kataskēnoō ৪ বার
অর্থ: ছাউনি ফেলা, যাতায়াত করা, থাকা, বসবাস করা, বিশ্রাম করা।
G425 ἄνεσις anesis ৫ বার
গ্রীক G447 শব্দ থেকে: শিথিলকরণ, বিশ্রাম করা, শান্তি বা রেহায় পাওয়া, আরামে থেকে, স্বাধীনভাবে থাকা।