ধর্ম ০৬ – নতুন নিয়মে নেতৃত্ব – একজন ব্যক্তি নিয়ে অধ্যয়ন: তীত
নতুন বিশ্বাসী হিসাবে তীত
গালাতীয় ২:১-৩ পৌল যিরূশালেমে যাওয়ার গল্প উল্লেখ করেন ৪৭ খ্রীঃ
গালাতীয় ২:১-৩ ‘চৌদ্দ বছর পরে আমি বার্ণবার সংগে আবার যিরূশালেমে গেলাম, আর তীতকেও সংগে নিলাম। ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশিত হবার পরে আমি সেখানে গেলাম। যে সুখবর আমি অযিহূদীদের কাছে প্রচার করে থাকি তা বললাম। মণ্ডলীর গণ্যমান্য লোকদের কাছে সেই সব গোপনেই বললাম, কারণ আমার ভয় হচ্ছিল যে, হয়তো আমি অনর্থক পরিশ্রম করছি বা করেছি। কিন্তু অযিহূদী (অন্য অনুবাদে: ‘গ্রীক’) হলেও আমার সংগী তীতকে সুন্নত করাবার জন্য বাধ্য করা হয় নি।’
- তীত ছিলেন অযিহূদী, হতে পারে একজন গ্রীক। তাই তিনি সুন্নত করা লোক ছিলেন না। হতে পারে তিনি আন্তিয়খিয়ায় বেশ শুরুর দিকে একজন দেবতা পূজা থেকে ধর্মান্তরিত বিশ্বাসী।
- পৌল তীতের মধ্যে নেতৃত্বের দান দেখেন। যখন আন্তিয়খিয়া মণ্ডলী দুর্ভিক্ষের কারণে যিরূশালেম মণ্ডলীর জন্য একটি দান তোলে পৌল তা পৌঁছানোর জন্য তীতকে সাথে নিয়ে যান। এই দুর্ভিক্ষ ৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট ক্লৌদিয়ের রাজত্বে ঘটে ও তার উল্লেখ রোমীয় ইতিহাসেও পাওয়া যায়।
- পৌল, বার্ণবা ও তীত ছিলেন আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর সে বেঁছে নেওয়া লোক, যারা টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য এবং যারা এমন ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে অনেক টাকা নিয়ে একটি যাত্রার ঝুঁকি নিতে রাজি।
করিন্থীয় মণ্ডলীর সাথে পৌলের দ্বন্দ্ব মধ্যস্থকারী তীত
১ ও ২ করিন্থীয় করিন্থীয় মণ্ডলীর সাথে পৌলের দ্বন্দ্ব তীতের মধ্যস্থকারীর ভূমিকা ৫৫ খ্রীঃ
- ৫৫ খ্রিষ্টাব্দে, যখন পৌল ইফিষ শহরে পরিচর্যা করেন, তখন তিনি খবর পান যে করিন্থীয় মণ্ডলীতে নানা ধরণের বড় সমস্যা চলছে (১ করি ১:১১, ১৬:১৭-১৮)। তাতে তিনি তাদের একটি চিঠি পাঠান (১ করিন্থীয়) যা দ্বারা তিনি কিছু জরুরী বিষয়ে পরামর্শ দিতে চান, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজেই তাদের সাথে দেখা করতে পারেন।
- করিন্থীয়রা সে চিঠিটি ভালভাবে মেনে নেয় না। পৌল তা শুনে তার আগের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে জরুরী ভাবে করিন্থীয় মণ্ডলীর সাথে দেখা করতে যান।
- মণ্ডলীতে আসলেই বড় সমস্যা চলছে। পৌল এইগুলো সমাধান করতে সক্ষম হন না, বরং দণ্ড এমন পর্যায় চলে যায় যে পৌলের মোটামুটি করিন্থ থেকে পালিয়ে এশিয়ায় ফিরতে হচ্ছে।
- এই অবস্থায় নিয়ে অতি দুশ্চিন্তিত পৌল তার সহকর্মী তীতকে তার প্রতিনিধি হিসাবে করিন্থে পাঠান সে আশায় যে তীতকে দ্বারা তিনি মণ্ডলীর সাথে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করতে পারবেন।
- তীত এই কঠিন পরিস্থিতিতে করিন্থে গিয়ে মণ্ডলীর সাথে সম্পর্ক আবার স্থাপন করে একটি মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হন। তীত করিন্থ ছেড়ে পৌলের সাথে দেখা করতে যান যেন তিনি তাকে পৌলের প্রতি করিন্থীয় মণ্ডলীর মন পরিবর্তনের সুখবর দিতে পারেন।
- পৌল এই খবর শুনে অনেক সান্ত্বনা পান ও তীতের হাত দিয়ে করিন্থীয়দের আর একটি চিঠি পাঠান (২ করিন্থীয়)। এই চিঠি দ্বারা এবং তীতের পুনরায় পরিদর্শন দ্বারা করিন্থীয় মণ্ডলী শেষে আবার পৌলের সাথে দেখা করতে আরো প্রস্তুত হবে ।
২ করি ২:১৩ ‘কিন্তু তবুও আমি মনে শান্তি পাই নি, কারণ আমার বিশ্বাসী ভাই তীত সেখানে ছিলেন না। সেইজন্য ত্রোয়ার লোকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি ম্যাসিডোনিয়ায় চলে গেলাম।’
২ করি ৭:৬-৭ ‘তবে ঈশ্বর, যিনি দুঃখিতদের সান্ত্বনা দান করেন, তিনি তীতের আসবার মধ্য দিয়ে আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। কেবল তা-ই নয়, তীত নিজে তোমাদের দ্বারা সান্ত্বনা পেয়েছেন বলে আমরাও সান্ত্বনা পেয়েছি। তোমাদের আগ্রহ ও দুঃখের কথা তিনি আমাদের বলেছেন এবং জানিয়েছেন যে, তোমরা আমার জন্য খুব চিন্তা-ভাবনা করছ, আর তাতে আমি আরও আনন্দ পেয়েছি।’
২ করি ৭:১৩-১৫ ‘এর মধ্য দিয়ে আমরা সান্ত্বনা পেয়েছি। সেই সান্ত্বনার সংগে তীতের আনন্দ দেখে আমরাও আনন্দিত হয়েছি, কারণ তোমাদের সকলের কাছ থেকে তিনি মনে খুব শান্তি পেয়েছেন। আমি খুশী হয়েছি, কারণ তোমাদের নিয়ে আমি তাঁর কাছে গর্ব করেছিলাম, আর তাতে আমাকে লজ্জা পেতে হয় নি। তার বদলে তোমাদের কাছে বলা আমাদের সব কথা যেমন সত্যি ছিল, তেমনি তীতের কাছে তোমাদের নিয়ে আমাদের গর্বও সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। তোমরা সবাই যেভাবে ভয় ও সম্মানের সংগে তাঁকে গ্রহণ করে বাধ্যতা দেখিয়েছিলে, তা মনে করে তোমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা আরও বেড়ে গেছে।’
- ২ করি ৭:১৪ পদ পড়ে অনুমান করা যায় যে এই কঠিন গল্পের ভিতরে পড়ার আগে তীত করিন্থীয়দের সঙ্গে পরিচিত হন নি। তবুও পৌল তাকে পাঠান। কেন ঠিক তাকে? পৌল তো তীতের পরিবর্তে একজন পরিচিত কর্মী পাঠাতে পারতেন (যেমন সীলকে বা তীমথিয়কে, যারা মণ্ডলীর সহ-স্থাপক)।
- পরিষ্কার হয়ে যায় যে পৌল তীতকে অনেক নির্ভরযোগ্য মনে করেন ও তাকে অনেক বিশ্বাস করেন। না হলে তিনি তাকে এমন একটি জরুরী সময়ে পাঠাতে পারেন না। আসলে করিন্থীয়দের নিয়ে সে দণ্ড ছিল পৌলের জীবনে সবচেয়ে সংগ্রামের মধ্যে একটি (যতদূর আমরা জানি)। যখন পৌল অতি দুশ্চিন্তিত, যখন তিনি নিজে আর ফিরে যেতে পারেন না, তিনি তীতকে পাঠান।
- তা দেখে আমরা তীতের স্বভাব-চরিত্র সম্বন্ধে কি শিখতে পারি?
- তীত ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত , মাথা ঠাণ্ডা, সূক্ষ ও কূটনীতিক লোক। তিনি পৌলের সাথে এক মন ও এক হৃদয়, কিন্তু তার স্বভাব-চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব এমন যে তিনি এই মুহূর্তে পৌলের চেয়ে ‘গ্রহণযোগ্য’। তিনি ছিলেন একজন ভাল যোগাযোগকারী, চমৎকার শ্রোতা, মাথা ঠাণ্ডা লোক। তার এমন একটি ন্যায্যতা ও ভাব ছিল যার কারণে লোকেরা সহজে তাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে, এমন একটি কথা বলার ধরণ যাতে লোকেরা সহজে অপমানিত হয় না, যাতে তারা মনে করে তাদের বুঝা হয়, তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়, এমন একজন পরামর্শদাতা যিনি লোকদের মধ্যে ভালটা দেখতে পান ও তাদের উৎসাহিত করতে সক্ষম।
- আরো বুঝা যায় যে তীত ছিলেন যথেষ্ট সাহসী, সহানুভূতির লোক, যত্নশীল, বিশ্বস্ত, ইচ্ছুক, আশাবাদী, যিনি সহজে অপমান বোধ করেন না। না হলে তিনি এমন একটি জটিল দ্বন্দ্ব নামতেন না। তারা এমন কি পৌলকে আর মানে না, আর একজন কি মানবে? এখানে ব্যর্থতার, সুনাম হারানোর ও অপমানের পাত্র হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কাজটি মাত্র সাহসী ধরণের লোকদের জন্য, ইতিমধ্যে অনেক আঘাত ও ক্ষতি হয়েছে, লড়াই ও নিন্দার কোনো অভাব নেই। তিনি তারপরেও যান।
- এই মণ্ডলীর বিষয়ে পৌলের সব কিছুর পরেও একটি আশা ও ইতিবাচক দৃষ্টি আছে (২ করি ৭:১৪) এবং তীত এই আশাবাদী দৃষ্টি গ্রহণ করতে রাজি। হয়তো পৌলের কষ্ট দেখে তিনি – যেভাবে হোক – তাকে সাহায্য ও তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে রাজি। হয়তো তার বিশ্বস্ততা বিশ্বাসীদের প্রতি (যে কোনো বিশ্বাসীদের প্রতি)। এই কাজে সফল হতে গেলে তার সম্পূর্ণ বাস্তব হতে হয়, কিন্তু যদি তিনি অতি সহজে খারাপটি বিশ্বাস করতে রাজি, তবে তিনি এখানে সাহায্য করতে পারেন না। এখানে একজন অতি সরল বা সাদাসিধা লোকও সাহায্য করতে পারবে না, একজন অসূয়ার লোকও সাহায্য করতে পারবে না। তীতের ঈশ্বরের উদ্ধারের ক্ষমতার উপরে বিশ্বাস আছে এবং মানুষের জন্য আশা। তিনি আনন্দিত যখন করিন্থীয়রা সঠিক দিকে সাড়া দেয় (২ করি ৭:১৫), তিনি একজন ভাল লোক যিনি ভাল দেখে আনন্দ করে ও তা সমর্থন করে। তীত একজন বিশ্বাসযোগ্য লোক যিনি অন্যদের বিশ্বাসযোগ্য মনে করতে রাজি।
২ করি ১২:১৭-১৮ ‘আমি যাদের তোমাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদের কারও দ্বারা কি তোমাদের ঠকিয়েছি? আমি তীতকে যাবার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, আর তাঁর সংগে সেই ভাইকেও পাঠিয়েছিলাম। তীত কি তোমাদের ঠকিয়েছেন? কখনও না। আমি আর তীত কি একই মনোভাব নিয়ে একইভাবে কাজ করি নি?
- এই চিঠির শেষ কথা হিসাবে পৌল নিজেকে (এবং যাদেরকে তিনি পাঠান) করিন্থীয় বিশ্বাসীদের কাছে দায়বদ্ধ করে রাখেন। তিনি করিন্থীয়দের অনুমতি, এমন কি আদেশ দেন তার দ্বারা পাঠানো তীতের স্বভাব-চরিত্র ও আচরণ মূল্যায়ন করতে।
- এখানে আবারও বুঝা যায় তীতের চরিত্র-আচরণের বিষয়ে পৌলের কত যে বিশ্বাস আছে। তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে এমন কি একটি অতি জটিল পরিস্থিতিতে ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে তীতের ব্যবহার অনিন্দনীয় ছিল।
১ ও ২ করিন্থিয় একটি জটিল সময়ে তীত দান তোলার বিষয় দেখাশোনা করেন ৫৫-৫৬ খ্রীঃ
- ঠিক যখন পৌলের করিন্থীয় মণ্ডলীর সঙ্গে এই দণ্ড চলছে এবং সে নকল ‘বিশেষ প্রেরিতরা’ (২ করি ১১:৫) মণ্ডলী প্রায় দখল করতে সক্ষম হয়, তখন একটি বড় টাকা-পয়সার দান তোলার কাজও চলছে। হয়তো এই টাকা-পয়সার কারণেই সে ‘বিশেষ প্রেরিতেরা’ এই মণ্ডলীর পিছনে লেগে আছে।
- কিছু মাস ধরে করিন্থ শহরের এবং চারিদিকে আখায়া এলাকার মণ্ডলীগুলি অভাবে পড়া যিরূশালেম মণ্ডলীর জন্য টাকার দান তুলছে (২ করি ৯:২)। ম্যাসিডোনিয়ার মণ্ডলীগুলিও যোগ দিয়েছিল ও খুব ত্যাগ-স্বীকার করে টাকা তুলতে শুরু করেছে (২ করি ৮:৩-৪)।
- সে নকল ‘বিশেষ প্রেরিতদের’ প্রভাবে মণ্ডলীর দানশীলতা কমে গেল। হয়তো তারা শিক্ষা দিত যে টাকা-পয়সা দূরের লোকদের জন্য জমানো দরকার নেই। হয়তো তারা টাকার কিছু অংশ নিজের জন্য দখল করেছিল অথবা পৌলের সুনাম নষ্ট করার জন্য সে নিন্দা তারা চালিয়ে দিল তার ফলে দানশীলতা কমে গেল।
- পৌল এখনও বলে যে টাকার দান তোলা হল একটি ভাল ও যোগ্য কাজ (২ করি ৮:১৯), কিন্তু তিনি কোনো রকম এই দানকে নিজের হাতে নেবেন না (২ করি ৮:২০-২১, ৮:১৬)। তিনি আগেও বলেছিলেন যেন তার উপস্থিতিতে দান তোলা না হোক বরং মণ্ডলী তা রীতিমত করুক, হয়তে যেন তার দ্বারা মণ্ডলীর উপরে কোনো চাপ না হয় (১ করি ১৬:২)। তিনি আরো নির্দেশনা দিয়েছিলেন যেন ম্যাসিডোনিয়া ও আখায়ার মণ্ডলীর দান তাদের নিজের নিযুক্ত লোকদের হাত দ্বারা যিরূশালেমে পাঠানো হয় (১ করি ১৬:৩)।
- এমন একটি সময়ে যখন বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে, যখন অনেক ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে, যখন সন্দেহ ও নিন্দা প্রচলিত ছিল, পৌল টাকা-পয়সায় হাত দিতে প্রজ্ঞার কাজ মনে করেন না, বিশেষভাবে এত বড় একটি দানের বিষয়ে। তাই তিনি কাজটি তীতের নেতৃত্বে সমর্পিত করেন।
- আবারও দেখা যায় পৌলের কত বিশ্বাস আছে তীতের উপরে। তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে এই বিষয়েও তীতের আচরণ-ব্যবহার অনিন্দনীয় হবে:
২ করি ৮:১-৬ ‘ম্যাসিডোনিয়ার মণ্ডলীগুলো… খুব আগ্রহের সংগে আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিল যেন ঈশ্বরের যে লোকেরা অভাবের মধ্যে আছে তাদের অভাব মিটাবার কাজে তারা অংশগ্রহণ করবার সুযোগ পায়।… এ দেখে আমরা তীতকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলাম, দান করবার যে কাজ তিনি তোমাদের মধ্যে আরম্ভ করেছিলেন তা যেন তিনি শেষ করেন।’
২ করি ৮:১৬-১৭ ‘তোমাদের জন্য আমার অন্তরে যে আগ্রহ আছে, ঠিক সেই আগ্রহ ঈশ্বর তীতের অন্তরেও দিয়েছেন বলে আমি তাঁকে ধন্যবাদ দিই। তীত আমাদের অনুরোধ মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা এই যে, তিনি নিজের ইচ্ছায় খুব আগ্রহের সংগে তোমাদের কাছে যাচ্ছেন।’
২ করি ৮:২৩ ‘তীতের সম্বন্ধে আমার যা বলবার আছে তা এই-তিনি আমার সংগী এবং আমার সংগে তিনি তোমাদের জন্য কাজ করেন। আর অন্য ভাইদের সম্বন্ধে আমার যা বলবার আছে তা এই-মণ্ডলীগুলো তাঁদের বেছে নিয়ে পাঠাচ্ছে। এই ভাইদের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের গৌরব হয়।’
- তীতের স্বভাব-চরিত্রের সম্বন্ধে এখানে পরিষ্কার বুঝা যায় যে পৌল তাকে টাকা-পয়সার ক্ষেত্রেও প্রজ্ঞাবান, দক্ষতাশীল ও বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন। তীত পৌলের লোক, কিন্তু তিনি নিজেও এমন সৎ লোক যে সবার দৃষ্টিতে তিনি বিশ্বাসযোগ্য ও প্রমাণিত।
মণ্ডলী-স্থাপনকারী, শিষ্যত্ব দানকারী ও মুক্ত করার তীত
তীত ১:৫ ক্রীট দ্বীপের মণ্ডলীগুলো তীতের যত্নে সমর্পিত করেন পৌল ৬৩-৬৪ খ্রীঃ (?)

- প্রেরিত পুস্তকে যেহেতু তার উল্লেখ নেই আমরা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি না কোন সালে পৌল তীতের সঙ্গে ক্রীট দ্বীপে মণ্ডলীগুলি স্থাপন করেন। সম্ভাব্য তারিখ হল ৬৩-৬৪ খ্রীঃ, প্রেরিত পুস্তকের সময়ের পরে যখন পৌলকে রোমে বন্ধন থেকে মুক্ত করা হয় ও তিনি মণ্ডলী স্থাপন করার কাজে আর একবার বের হন।
- বোধ হচ্ছে যে কোনো জরুরী কারণে পরিকল্পনার আগে পৌলকে ক্রীট দ্বীপ ছেড়ে যেতে হয় যদিও মণ্ডলী স্থাপন করার কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। পৌল এই সময়ে নিশ্চয়তার সঙ্গে ক্রীট মণ্ডলীর পরিচর্যা তার বিশ্বস্ত সহকর্মী তীতের হাতে সমর্পিত করেন। তিনি তীতকে দিক-নির্দেশনা এবং বিশ্বাসীদের চোখে তাকে অধিকার দেওয়ার জন্য তীত চিঠি লিখে রেখে যান: ‘ক্রীট দ্বীপে যে কাজ এখনও অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে তা ঠিক করবার জন্যই আমি তোমাকে ক্রীট দ্বীপে রেখে এসেছি।… প্রত্যেক শহরের মণ্ডলীতে প্রধান নেতাদের কাজে বহাল কোরো’ (তীত ১:৫)।
- পৌল তীতের কাছে বেশ কয়েকটি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন: প্রত্যেক শহরে প্রাচীনদের নিযুক্ত করা (তীত ১:৫), ভ্রান্ত শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করার জন্য (অধিকাংশটা যিহূদী, তীত ১:১১), উপযুক্ত ও সত্য শিক্ষা দেওয়া (তীত ২:১), সব কিছুতেই একটি ভাল কাজের আদর্শ হওয়া (তীত ২:৭), হালকা মনোভাবে নয় বরং সৎ উদ্দেশ্যে এমন শিক্ষা দেওয়া যাতে কেউ দোষ ধরতে না পারে (তীত ২:৭-৮), শাসনকর্তাদের অধীনে থাকার আদেশ স্মরণ করিয়ে দেওয়া (তীত ৩:১) এবং তর্কের লোকদের সাবধান করা ও প্রয়োজন হলে তাদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করা (তীত ৩:৯-১১)। তীতকে এই সব কাজগুলি এমন মণ্ডলীতে করতে হয় যা এখনও বেশি শিষ্যত্ব পায় নি এবং যা একটি ভক্তিহীন ক্রীট সংস্কৃতি ও কিছু যিহূদীদের দ্বারা প্রভাবিত। তীতকে ভালই চ্যালেঞ্জ দিলেন পৌল!
- এইসব কাজের জন্য যে অধিকার তীতের দরকার, পৌল তা অনুমোদিত করেন (তীত ২:১, ২:২৫)। তীতের অধিকার কোথা থেকে আসে? তিনি এমন একজন লোক যিনি যা প্রচার করেন তা নিজেও পালন করেন।
- তীত হলেন একজন সুবুদ্ধির ও সুবিচারের লোক, যিনি লোকদের মধ্যে ভাল চরিত্র, মনোভাব, দক্ষতা ও দান দেখতে পান এবং তাদের নেতৃত্বের জন্য মুক্ত করেন। তার বুঝার, বাস্তব বিচার করার, উৎসাহ ও আশা দান করার ক্ষমতা আছে।
- ক্রীট দ্বীপের মণ্ডলীর অবস্থা এবং তীতের প্রতি দেওয়া দায়িত্বগুলি দেখে আমরা বুঝতে পারি, তার উপরে পৌলের কত বিশ্বাস ছিল। কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ভালভাবে নেওয়ার ক্ষমতা আছে বলে পৌল তীতের উপর নির্ভর করা ও তাকে তার প্রতিনিধি হিসাবে রাখার কোনো সংকোচ নেই।
- তীতই হলেন পৌলের ‘মণ্ডলী ঠিক করার লোক’!
প্রেরিত ও নতুন সীমানা জয় করার ভূমিকায় তীত
২ তীমথিয় ৪:১০ পৌলের জীবনের শেষে তীত ৬৪-৬৫ খ্রীঃ
- মৃত্যুর আগে পৌলের শেষ চিঠিতে (২ তীমথিয়) তিনি তার প্রিয় সহকর্মী তীমথিয়কে তার বেশ কঠিন অবস্থায় জানান: পৌল একা হয়ে পড়েছেন।
- পৌল হতাশ কারণ তিনি স্থাপনীয় লোকদের থেকে কোনো সমর্থন পাচ্ছেন না (২ তীমথিয় ৪:১৬), কারণ কিছু সহকর্মীরা পরিচর্যা ছেড়ে চলে যান যেমন দীমা (২ তীমথিয় ৪:৯) এবং কারণ কিছু অবিশ্বাসী যথেষ্ট বিরুদ্ধ কাজ ও ক্ষতি করছে, যেমন অ্যালেক্সান্ডার (২ তীমথিয় ৪:১৪)।
- পৌল কমবেশি একা যাতে তার যথেষ্ট কষ্ট লাগে: শুধুমাত্র লূক তার সঙ্গে আছেন (২ তীমথিয় ৪:১১)। তিনি তীমথিয়কে তাড়াতাড়ি আসতে বলেন (২ তীমথিয় ৪:৯), তিনি জানেন যে আর বেশি দিন বেঁচে থাকবেন না (২ তীমথিয় ৪:৬-৮)।
- পৌলের জন্য আনন্দের বিষয় হল সে কর্মীরা যাদের তিনি কোথায় পাঠালেন বা যারা নিজেই নতুন জায়গায় গেলেন, যদিও তাদের অনুপস্থিতি পৌলের জন্য কঠিন: ক্রীষ্কেন্ত গালিতীয়ায় গেলেন (২ তীমথিয় ৪:১০), তুখিককে তিনি ইফিষে পাঠিয়েছেন (১ তীমথিয় ৪:১২) এবং তীত দালমাতিয়ায় গেলেন (২ তীমথিয় ৪:১০)।
- এই পদ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় না পৌল তীতকে পাঠিয়েছেন অথবা তীত নিজেই এই পরিকল্পনা নিলেন।
- পৌলের জীবনের শেষে, যখন তিনি জানেন যে জেল থেকে আর মুক্তি পাবেন না বরং তাকে মেরে ফেলা হবে (২ তীত ৪:৬-৭), তখন তার শিষ্যরা ও সহকর্মীরা ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছেন: তীত দালমাতিয়া নামে একটি নতুন এলাকা গিয়ে নতুন পরিচর্যা শুরু করে দিচ্ছেন (গ্রীসের উত্তরে, আদ্রিয়াটিক সাগরের পূর্ব পাড়ে, যেখানে সারা নতুন নিয়মে কোনো উল্লেখ নেই যে কেউ গেছে)।
- পৌলের সে বহু বছরের শিষ্যত্ব, সহকর্মী, বিশ্বস্ততা ও বিশ্বাস দ্বারা একজন নতুন চমৎকার প্রেরিত তৈরি হয়েছে, যিনি এমন জায়গায় যাবেন যেখানে পৌল নিজেও যান নি।