ধর্ম ১১ – নতুন নিয়মে নেতৃত্ব – একজন ব্যক্তি নিয়ে অধ্যয়ন: আন্দিয়
আন্দ্রিয়ের পরিবার
- আন্দ্রিয় হলেন শিমোন পিতরের আপন ভাই। আন্দ্রিয়ের নাম গ্রীক, যার অর্থ হল ‘পুরুষালী’ (‘manly’)।
- তার বাবার নাম ছিল যোনা (মথি ১৬:১৭) বা যোহন (যোহন ১:৪২, ২১:১৭)।
- আমাদের কোনো তথ্য নেই তিনি বিবাহিত ছিলেন কিনা বা তার সন্তান ছিল কিনা, যদিও তাই মনে করা যায়। তার ভাই পিতর বিবাহিত ছিলেন (মথি ৮:১৪, মার্ক ১:৩০ ও লূক ৪:৩৮)।
- তিনি ছিলেন বৈৎসৈদার শহরের বাসিন্দা। বৈৎসৈদা ছিল গাওলানিতীয়া এলাকায় গালীল সাগরের পাড়ে একটি গ্রীক শহর (যোহন ১:৪৪)। আবারও উল্লেখ আছে যে তিনি গালীল সাগরের পাড়ে কফরনাহূম নামে একটি শহরে বাস করতেন (মার্ক ১:২৯)। হয় আন্দ্রিয়ের পরিবারের দু্ইটি শহরে বাড়ী ছিল, না হয় তারা বৈৎসৈদা থেকে কফরনাহূমে সরে আসলেন।
- হতে পারে আন্দ্রিয় তার ভাই পিতরের মত একটি গালীলের স্বরাঘাতে কথা বলতেন (মার্ক ১৪:৭০) এবং তার ভাইয়ের মত তিনিও শিক্ষিত ছিলেন না বরং সাধারণ লোক (প্রেরিত ৪:১৩)। তবুও ভাল যিহূদী ছেলে হিসাবে আন্দ্রিয় অবশ্যই পড়তে ও লিখতে শিখতেন। যেহেতু গালীলে অনেক অযিহূদীও বাস করতেন, তিনি হয়তো কিছুটা গ্রীক ভাষাও পারতেন।
- আন্দ্রিয় তার ভাই পিতরের মত জেলে ছিলেন (মার্ক ১:১৬) যদিও তার ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখ নেই যে তিনি পিতর, সিবদিয় এবং তার ছেলেরা যাকোব ও যোহনের সাথে মাছের ব্যবসা করতেন (লূক ৫:১০)।
বাপ্তিস্মদাতা যোহনের অনুস্মরণকারী হিসাবে আন্দ্রিয়
- আন্দ্রিয় যোহন বাপ্তিস্মদাতার প্রচার শুনেন ও তার অনুস্মরণকারী হয়ে যান। চিন্তা করা যায় তার যোহনের সাথে বেশ ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল (যোহন ১:৩৫)।
- এইটা দেখে চিন্তা করা যায় যে আন্দ্রিয় ছিলেন প্রথম শিষ্যদের মধ্যে সবচেয়ে খোলা, সবচেয়ে অনুসন্ধানকারী, সবচেয়ে আগ্রহী, সবচেয়ে অনুপ্রাণিত।
- তিনি বুঝতে পারেন যে যোহনের প্রচার ঈশ্বরের কাছ থেকে ও তা সত্য। তিনি কেবলমাত্র যোহন থেকে বাপ্তিস্ম নেন নি বরং তিনি তার অনুস্মরণকারীও হয়ে যান।
- আন্দ্রিয় যোহনের ঘোষণা শুনেন যে ‘একজন আসছেন’ (যোহন ১:৩০), ‘আমি তাঁর জুতার ফিতাটা পর্যন্ত খুলে দেবার যোগ্য নই’ (যোহন ১:২৭), যার বিষয়ে ‘নবী যিশাইয় বলেছেন, মরু-এলাকায় একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে’ (যোহন ১:২৩), যিনি ‘পবিত্র আত্মা ও আগুনে তোমাদের বাপ্তিস্ম দেবেন’ (মথি ৩:১১)।
যোহন ১:৩৫-৩৬ ‘পরের দিন যোহন ও তাঁর দু’জন শিষ্য আবার সেখানে ছিলেন। ৩৬ এমন সময় যীশুকে হেঁটে যেতে দেখে যোহন বললেন, ‘ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষ-শিশু।’
- সম্ভবত আন্দ্রিয় যীশুর বাপ্তিস্মের সময়ে উপস্থিত ছিলেন না কারণ উপস্থিত থাকলে চিন্তা করা যায় তিনি সাথে সাথে যীশুর পিছনে যেতেন।
- বরং তিনি পরের দিনে যোহন বাপ্তিস্মের সঙ্গে দেখা করে আগের দিনের আশ্চর্য ঘটনার পুনরালোচনা এবং যীশু সম্বন্ধীয় যোহনের ঘোষণা পুনরায় শুনেন: ‘ঐ দেখ ঈশ্বরের মেষ-শিশু, যিনি মানুষের সমস্ত পাপ দূর করেন’ (যোহন ১:২৯) এবং ‘আমি তা দেখেছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্র’ (যোহন ১:৩৪)।
- অথবা হয়তো আন্দ্রিয় যীশুর বাপ্তিস্মতে উপস্থিত ছিলেন এবং সব কিছু দেখেছিলেন ও শুনেছিলেন কিন্তু তিনি যোহনের সাথে তা নিয়ে কথা বলতে চান অথবা তার আশীর্বাদ পেয়ে যীশুর অনুস্মরণকারী হতে চান।
- যা নিশ্চিতভাবে জানা যায় তা হল যে যীশুর বাপ্তিস্মের পরের দিনে, যখন যীশু হেটে পার হন, যোহন স্বার্থহীনভাবে তার সে দুইজন উপস্থিত শিষ্যদের যীশুর দিকে পাঠান ও পুনরায় ঘোষণা করেন: ‘ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষ-শিশু’ (যোহন ১:৩৬)। দুইজন শিষ্য সাথে সাথে যীশুর অনুস্মরণকারী হয়ে যান।
যোহন ১:৩৭-৩৮ ‘যোহনকে এই কথা বলতে শুনে সেই দু’জন শিষ্য যীশুর পিছনে পিছনে যেতে লাগলেন। ৩৮ যীশু পিছন ফিরে তাঁদের আসতে দেখে বললেন, “তোমরা কিসের খোঁজ করছ?” যোহনের শিষ্যেরা জিজ্ঞাসা করলেন, “রব্বি (অর্থাৎ গুরু), আপনি কোথায় থাকেন?”
- যীশুকে জিজ্ঞাসা করা কোথায় তিনি থাকেন হল, তাকে আবার খুঁজে বের করার একটি পদ্ধতি (যেহেতু ভ্রাম্যমান শিক্ষকরা ঘুরতে থাকে)। আন্দ্রিয় প্রথম সে বড় খবর যা তিনি যোহনের মুখ থেকে শুনেছেন তার ভাই পিতরকে এবং তার বন্ধুদের জানাতে চান। আবারও তিনি হয়তো পরে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের কাছে ফিরে গিয়ে সব বিষয়ের পুনরালোচনা করতে চান।
যোহন ১:৩৯ ‘যীশু তাঁদের বললেন, ‘এসে দেখ।’ তখন তাঁরা গিয়ে যীশু যেখানে থাকতেন সেই জায়গাটা দেখলেন এবং সেই দিন তাঁর সংগেই রইলেন। তখন প্রায় বিকাল চারটা।’
- যীশুর উত্তর হল একটি খোলা নিমন্ত্রণ তার সঙ্গে আরো পরিচিত হতে ও সম্পর্কে আগাতে। যীশু নিশ্চিত করেন যে আন্দ্রিয় অন্যদের খবর দেওয়ার পরে তাঁকে আবার খুঁজে পাবেন, এটি ব্যবহারিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
- যিহূদী সংস্কৃতিে ধর্ম গুরু ও তার শিষ্য ছিল একটি প্রচলিত বিষয়। তা অনুসারে আন্দ্রিয়ের প্রতি যীশুর প্রস্তাব হল একটি গুরু-শিষ্য সম্পর্কে আসার প্রস্তাব, একটি দীর্ঘ দিনের ও ঘনিষ্ট সম্পর্কের প্রস্তাব।
- ‘এসে দেখ’ মানে যে যীশু তাদের নিজের জীবনে আসতে নিমন্ত্রণ দেন: দেখার, শোনার, একসাথে জীবন-যাপন করার ও সব কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করার। যীশু তাদের ‘৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত’ কোনো পরিচর্যা বা ধর্ম ক্লাশ করান না বরং তিনি তাদের যেমন তেমনভাবে একসাথে জীবন কাটানোর নিমন্ত্রণ দেন। যীশু দূর থেকে নেতৃত্ব দেন না, তিনি আবেগের দিকে নিজেকে আলাদা রাখেন না বরং একসাথে জীবন-যাপন করা দ্বারা শিক্ষা দেন।
যোহন ১:৪০-৪১ ‘যোহনের কথা শুনে যে দু’জন যীশুর পিছনে পিছনে গিয়েছিলেন তাঁদের একজনের নাম ছিল আন্দ্রিয়। ইনি ছিলেন শিমোন- পিতরের ভাই। ৪১ আন্দ্রিয় প্রথমে তাঁর ভাই শিমোনকে খুঁজে বের করলেন এবং বললেন, “আমরা মশীহের (অর্থাৎ খ্রীষ্টের) দেখা পেয়েছি।’
- আন্দ্রিয় সাথে সাথে তার ভাই শিমোনের সাথে দেখা করেন তাকে যীশুর কাছে নিয়ে যাওয়া জন্য। তিনি উত্তেজিত, নিশ্চিত ও বাধা মানবে না। যোহনের ঘোষণা অনুসারে (যাকে তিনি বিশ্বাস করেন) তিনি লাফিয়ে উপসংহারে নামেন যে তারা (তার সঙ্গে আর কে?) মশীহকে খুঁজে পেয়েছেন।
- যীশু আন্দ্রিয়কে একটি নিমন্ত্রণ দিলেন তাঁর জীবনে আসতে এবং আস্তে আস্তে সব কিছু পরীক্ষা করে দেখতে। এর চেয়ে বেশ ভিন্ন আন্দ্রিয়ের সাড়া: তিনি সে বোমা ফাটার মত শক্তিশালী, সরাসরি ও একটু তাড়াহুড়া উপসংহার ভাইয়ের উপরে ফেলে দেন। অপরদিকে যীশু শুধুমাত্র শিষ্যদের বহুদিন ধরে শিষ্যত্ব দিয়ে এবং মশীহ সম্বন্ধীয় বিস্তারিত শিক্ষা দেওয়ার পরে মশীহের বিষয় তুলেন।
- আন্দ্রিয় তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট সম্পর্কগুলি সরাসরিভাবে, আবেগীয়ভাবে এবং একটু জোর করে ব্যবহার করেন তাদের যীশুর দিকে নিয়ে আসতে:
যোহন ১:৪২ ‘আন্দ্রিয় শিমোনকে যীশুর কাছে আনলেন। যীশু শিমোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি যোহনের ছেলে শিমোন, কিন্তু তোমাকে কৈফা বলে ডাকা হবে।’ এই নামের অর্থ পিতর, অর্থাৎ পাথর।’
- আন্দ্রিয় হয়তো একটু জোর করেছেন তার ভাই পিতরকে যীশুর কাছে নিয়ে আসতে, কিন্তু তা অনুমোদন ও সমর্থন পায় যখন যীশু পিতরকে এমন একটি দর্শন ও ভবিষ্যদ্বাণী দেন যাতে তার জীবন পরিবর্তন হবে।
- আন্দ্রিয় কি একটু কষ্ট পান যে তার ভাই তার চেয়ে একটি ‘বিশেষ বা শক্তিশালী আহবান’ পান? অথবা তিনি খুশি, যে তার ভাই তার সাথে আছেন এই অনুসন্ধানে? অথবা মশীহকে পাওয়ার আলোতে এই ধরণের হিংসার চিন্তা অতি ক্ষুদ্র বলে সহজে বাদ দিতে পারেন?
- আন্দ্রিয় এখানে কোনো বাধা দেখেন না, মানেনও না। তার লজ্জা নেই, তার অহংকারও নেই, তার কৌশল নেই, তিনি যা করেন তা খোলাভাবে ও সরাসরিভাবে করেন। তিনি যা বুঝেছেন, তা অন্যদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করতে হবে বলে এগিয়ে যান। তিনি মানুষকে যীশুর সাথে যুক্ত করার কাজে যথেষ্ট সফল।
- হতে পারে এই ঘটনা যীশুর গালীলের পরিচর্যার শুরুদিকে, যখন যোহন বাপ্তিস্মদাতাকে এখনও গ্রেফতার করা হয় নি।
আন্দ্রিয়ের আহবান
- বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে গ্রেফতার করার পরে, যখন পিতর ও আন্দ্রিয় গালীল সাগরে মাছ ধরছে, যীশু তাদের ডাকেন যেন তারা তার সঙ্গে চলে এবং মানুষ-ধরা জেলে হয়ে যান (মথি ৪:১৮, মার্ক ১:১৭):
মার্ক ১:১৬-২০ ‘একদিন যীশু গালীল সাগরের পার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি শিমোন ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয়কে সাগরে জাল ফেলতে দেখলেন। সেই দু’জন ছিলেন জেলে। ১৭ যীশু তাঁদের বললেন, “আমার সংগে চল। আমি তোমাদের মানুষ-ধরা জেলে করব।” ১৮ তখনই তাঁরা জাল ফেলে রেখে যীশুর সংগে গেলেন। ১৯ সেখান থেকে কিছু দূরে গেলে পর তিনি সিবদিয়ের দুই ছেলে যাকোব ও যোহনকে দেখতে পেলেন। তাঁরা তাঁদের নৌকায় বসে জাল ঠিক করছিলেন। ২০ যীশু তাঁদের দেখামাত্র ডাক দিলেন, আর তাঁরা তাঁদের বাবা সিবদিয়কে মজুরদের সংগে নৌকায় রেখে যীশুর সংগে গেলেন।’
- আগের ঘটনা, দেখা ও নিমন্ত্রণের পরে যীশু এখন পিতর ও আন্দ্রিয়কে আহবান দেন (খেয়াল করুন যে এখন পিতরের নাম আগে দেওয়া)।
- মাঝখানে কি ঘটল? পিতর ও আন্দ্রিয় কি এই ধরণের একটি পরিষ্কার আহবানের আশায় অপেক্ষা করেছিলেন? অথবা প্রথম দেখার উত্তেজনা একটু কমে যাওয়ার পরে এখন আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে? অথবা যীশু কি তাদের চিহ্ন দেন যে এখন আসলে শুরু? অথবা দুইজন ইতিমধ্যে তার অনুস্মরণকারী কিন্ত যীশু মনে করে যে তাদের তারপরেও এভাবে আহবান করা প্রয়োজন।
- লূক তার সুসমাচারে আরো বিস্তারিত কথা বলেন: যীশু পিতরের নৌকায় থেকে সাগরের পাড়ে দাঁড়ানো লোকদের শিক্ষা দেন। যীশু তখন পিতরকে আর একবার জাল ফেলতে বলেন যদিও তারা সারা রাত পরিশ্রম করার পরেও কোনো মাছ পান নি। যখন তারা যীশুর কথা অনুসারে আর একবার চেষ্টা করেন, তারা অনেক মাছ পান (লূক ৫:১-১১)।
- সে দুই জোড়া ভাই (পিতর ও আন্দ্রিয়, যাকোব ও যোহন) পরস্পরকে আগে থেকে চিনেন। কেউ কেউ বলেন যে যাকোব ও যোহনের মা, সিবদিয়ের স্ত্রী হলেন যীশুর মায়ের আপন বোন বা cousin (এই কথার ভিত্তি হল ক্রুশের কাছে দাঁড়িয়ে মহিলাদের দুইটি তালিকার তুলনা (মথি ২৭:৫২, যোহন ১৯:২৫)। কিন্তু নিশ্চয়তার সঙ্গে তা বলা যায় না।
- পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে যীশু দুইজন দুইজন করে ভাইদের ডাকেন এবং তিনি তাদের একই সময়ে ডাকেন। পরে যখন ১২ শিষ্যদের বা প্রেরিতদের তালিকা দেওয়া হবে, তারা সব সময় এইভাবে সাজিয়ে উল্লিখিত: পিতর ও আন্দ্রিয়, যাকোব ও যোহন
- এই দুইটি পরিবারের কেমন লাগল যে তারা একই দিনে দুইজন ছেলে ‘হারায়’? তাদের জন্য এইটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ? বা একটি উৎসর্গ যা তারা করতে রাজি? চিন্তা করা যায় যে সিবদিয়ের মাছ ব্যবসায় লাগানো কর্মীও ছিল, তাই ছেলেদের হারাতে এত ভয়ের বিষয় ছিল না? অথবা বাবা-মায়েরা ছিলেন গর্বিত যে তাদের ছেলেদের আহবান দেওয়া হয়েছে? হয়তো তাদের হৃদয়ে একই সময়ে বিভিন্ন ধরণের আবেগ ছিল, বিশেষভাবে যখন পরিষ্কার হয়ে যায় যে এই আহবানের সাথে কষ্টও আসবে। যেমন মরিয়মের ও কষ্ট লাগল যখন তিনি আরো বুঝতেন তার ছেলের আহবান মানে কি।
মার্ক ১:২১-৩২ ‘যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা কফরনাহূম শহরে গেলেন। পরে বিশ্রামবারে যীশু সমাজ-ঘরে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। ২২ লোকেরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তিনি ধর্ম-শিক্ষকদের মত শিক্ষা দিচ্ছিলেন না বরং যাঁর অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতই শিক্ষা দিচ্ছিলেন। ২৩ সেই সময় মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন লোক সেই সমাজ-ঘরের মধ্যে ছিল।… ২৫ যীশু তখন সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিয়ে বললেন …২৬ সেই মন্দ আত্মা তখন…তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল। ২৭ এই ঘটনা দেখে লোকেরা এমন আশ্চর্য হল যে, তারা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগল, ‘এই সব কি ব্যাপার? এই অধিকার-ভরা নতুন শিক্ষাই বা কি? এমন কি, মন্দ আত্মাদেরও তিনি আদেশ দেন আর তারা তাঁর কথা শুনতে বাধ্য হয়।’ ২৮ এতে গালীল প্রদেশের সব জায়গায় যীশুর কথা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ল। ২৯ পরে তাঁরা সমাজ-ঘর থেকে বের হয়ে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়ীতে গেলেন। যাকোব এবং যোহনও তাঁদের সংগে ছিলেন। ৩০ শিমোনের শাশুড়ীর জ্বর হয়েছিল…৩২ সেই দিন সূর্য ডুবে গেলে পর সন্ধ্যাবেলা লোকেরা সব রোগীদের ও মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদের যীশুর কাছে আনল।’
- অল্পক্ষণের মধ্যে সে আহবান প্রাপ্ত শিষ্যরা নিজেকে খুব আশ্চর্য ঘটনাগুলির মাঝখানে পান: নতুন একটি শিক্ষা, অধিকারের সঙ্গে শিক্ষা, মন্দ-আত্মা তাড়ানো, সুস্থতার কাজ, যীশুর জনপ্রিয়তা ও সুনাম। অবশ্যই তাদের মধ্যে ছিল উত্তেজনা, আনন্দ, গর্ব ও কৃতজ্ঞতা।
- কিন্তু শুরু থেকে যীশুর সাথে কাজ করা মানে একটি ঝামেলার পথে পা দেওয়া: যীশু ঠিক বিশ্রামবারে মন্দ আত্মা তাড়ানো ও পিতরের শাশুড়িকে সুস্থতা দান করেন, যে দিনে কাজ করা নিষেধ। লোকেরা শুধুমাত্র বিশ্রামবার শেষ হওয়ার পরে (সন্ধ্যায়) তাদের রোগী নিয়ে আসতে সাহস পায়।
- শিষ্যদের পরিবারগুলিও নিজেকে সবার মনোযোগ ও দৃষ্টিতে আবার খুঁজে পায়: সমাজ গৃহের ঘটনার পরে যীশু পিতরের পরিবারের বাড়ীতে যান, তাদেরই ঘরে তিনি বিশ্রামবারে কাজ করেন, তাদেরই বাড়ী এখন অসুস্থদের কেন্দ্র হয়ে গেছে ও অনুসরণকারীদের দেখা করার স্থান। চাইলে বা না চাইলে শিষ্যদের পরিবারের উপরও অনেক প্রভাব পড়ছে।
যীশুর পরিচর্যার সময়ে আন্দ্রীয়
- সুসমাচারগুলিতে আন্দ্রিয়ের নাম এত বেশি আসে না। যীশু তাকে ১২ শিষ্যদের একজন হিসাবে ডেকেছেন বলে তার নাম প্রেরিতদের তালিকা আসে (মথি ১০:২, মার্ক ৩:১৮, লূক ৬:১৪, প্রে ১:১৩):
- মথি পুস্তকে সিরিয়াল এভাবে: শিমোন ও ভাই আন্দ্রিয়, যাকোব ও ভাই যোহন
- মার্ক পুস্তকে সিরিয়াল এভাবে: শিমোন, যাকোব ও ভাই যোহন, আন্দ্রিয়
- লূক পুস্তকে সিরিয়াল এভাবে: শিমোন ও ভাই আন্দ্রিয়, যাকোব ও যোহন
- প্রেরিত পুস্তকে সিরিয়াল এভাবে: শিমোন, যাকোব ও ভাই যোহন, আন্দ্রিয়
- এই তালিকাগুলি দেখে বুঝা যায় যে যীশু শিষ্যদের দুইজন দুইজন করে রেখেছিলেন। কিন্তু মার্ক সুসমাচার তার চেয়ে সে তিন জন সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি শিষ্যদের একসাথে দেখায়।
- আন্দ্রিয়ের কেমন লাগত যে তিনি তাদের মধ্যে একজন নন? তিনি তো সব কিছু শুরু করে দিয়েছিলেন, তিনি পিতর, এবং এক রকম অন্যদের নিয়ে এসেছিলেন? অথবা তিনি খুশি ছিলেন যে তারা আছেন?
- আসলে, এক সময় এই চারজন ভাইদের (শিমোন ও আন্দ্রিয়, যাকোব ও যোহন) একসাথে দেখা যায়, যখন যীশু যিরূশালেমের ধ্বংসের বাণী দেন এবং তারা চারজন একটা ব্যাখ্যা চান:
মার্ক ১৩:৩-৪ ‘পরে যীশু যখন উপাসনা-ঘরের উল্টাদিকে জৈতুন পাহাড়ের উপরে বসে ছিলেন তখন পিতর, যাকোব, যোহন ও আন্দ্রিয় তাঁকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, ৪ ‘আপনি আমাদের বলুন, কখন এই সব হবে? কোন্ চিহ্ন দেখে আমরা বুঝতে পারব এই সব পূর্ণ হবার সময় এসেছে?’
- আমরা জানি না আন্দ্রিয়ের খারাপ লেগেছিল যে তিনি তিন জনদের মধ্যে নয়, কিন্তু আমরা জানি যে তার মনোভাব ও ব্যক্তিত্ব এমন আকর্ষনীয় ছিল যে তিনি সফল হন অনেক লোকদের আকৃষ্ট করতে, তাদের কাছে নিয়ে আসতে এবং তাদের যীশুর সাথে পরিচিত ও যুক্ত করতে:
যোহন ৬:২-৫ ‘অনেক লোক যীশুর পিছনে পিছনে যেতে লাগল… ৫ তিনি ফিলিপকে বললেন, ‘এই লোকদের খাওয়াবার জন্য আমরা কোথা থেকে রুটি কিনব?’ ৬ ফিলিপকে পরীক্ষা করবার জন্য তিনি ঐ কথা বললেন, কারণ কি করবেন তা তিনি জানতেন। ৭ ফিলিপ যীশুকে বললেন, ‘ওরা যদি প্রত্যেকে অল্প করেও পায় তবু দু’শো দীনারের রুটিতেও কুলাবে না।’ …৯ আন্দ্রিয় যীশুকে বললেন, ‘এখানে একটা ছোট ছেলের কাছে পাঁচটা যবের রুটি আর দু’টা মাছ আছে, কিন্তু এত লোকের মধ্যে ওতে কি হবে?’

- মরুভূমিতে যখন অনেক লোক যীশুর কাছে আসে, তিনি করুনায় তাদের ফিরে পাঠান না, যদিও তিনি জানেন যে শিঘ্রই খাবারের অভাব পড়বে।
- মথি ১৪:১৫, লূক ৯:১২ ও মার্ক ৬:৩৫-৩৬ পদে শিষ্যরা যীশুর কাছে প্রস্তাব করে লোকদের ছেড়ে দিতে যেন তারা কোথাও খাবার কিনতে যেতে পারে।
- যোহন তার সুসমাচারে যোগ দেন যে আসলে যীশুই প্রথম ফিলিপকে বলেন যে একটি সমস্যা হতে যাচ্ছে (যোহন ৬:৫)।
- হতে পারে পরিচর্যার ব্যস্ততার মধ্যে শিষ্যরা সমস্যাটি মাত্র বুঝেন যখন তাদের নিজেদেরই ক্ষুধা লাগতে শুরু করে। তারা দেখেন যে লোকেরাও ক্ষুধার্ত হয়ে যাচ্ছে, কেউ কিন্তু চলে যেতে চাচ্ছে না যদিও দেরী হয়ে যাচ্ছে। হয়তো ফিলিপের সবচেয়ে কম খেয়াল আছে তাই যীশু তাকে সমস্যাটি দেখান। একবার আলোচনা শুরু হলে সবাই বুঝে যে তারা আসলেই সমস্যয় পড়ে যাচ্ছে, এবং তারা আরো দুশ্চিন্তায় পড়ে, যখন যীশু তাদের বিষয়টি সমাধান করতে বলেন।
- একবার আন্দ্রিয়ের সমস্যা নিয়ে খেয়াল আছে, তিনি খুঁজতে ও দেখতে থাকেন কত কি যে আছে। তিনি একটি ছেলে পেয়েছেন যার কম পক্ষে কিছুটা খাবার আছে, তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন এবং তাকে রাজি করেছেন এগিয়ে আসতে ও তার খাবার দিয়ে দিতে, যদিও তিনি জানেন না, এই কাজের কোনো লাভ হবে কিনা।
- আবারও আমরা আন্দ্রিয়কে দেখি, মিশুক, অন্যদের নিয়ে চিন্তাশীল ও লোকদের সাথে যুক্ত; তিনি সহজে মিশতে পারেন, সহজে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন, সহজে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যান অন্যদের চোখে।
- হয়তো ছেলেটি তার খাবার কাউকে দেখাতে চাইল না। অথবা সে চারিদিকে অবস্থা না বুঝে তার খাবার গোপন রাখে নি।
- যে কোনোভাবে আন্দ্রিয় তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, তার চোখে বিশ্বাসযোগ্য হয়েছেন এবং তাকে যীশুর কাছে নিয়ে তাঁর সাথে পরিচিত করেছেন।
- হয়তো আরো লোকদের কিছুটা খাবার ছিল, কিন্তু তারা তা পরিস্থিতির কারণে লুকিয়ে রেখেছেন। পরে যখন সবাই আনন্দ করে যীশুর আশ্চর্য যোগান করা খাবার খায়, তাদের মুখে রুচি কম থাকবে ও তারা চেতনা পাবে।
যোহন ১২:২০-২৩ ‘সেই পর্বে যারা উপাসনা করতে এসেছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রীকও ছিল। ২১ তারা ফিলিপের কাছে এসে তাঁকে অনুরোধ করে বলল, “এই যে শুনুন, আমরা যীশুকে দেখতে চাই।” ফিলিপ ছিলেন গালীল প্রদেশের বৈৎসৈদা গ্রামের লোক। ২২ ফিলিপ গিয়ে কথাটা আন্দ্রিয়কে বললেন। পরে আন্দ্রিয় আর ফিলিপ গিয়ে যীশুকে বললেন। ২৩ যীশু তখন আন্দ্রিয় ও ফিলিপকে বললেন, “মনুষ্যপুত্রের মহিমা প্রকাশিত হবার সময় এসেছে।’
- এই গল্প হল যীশুর পৃথিবীর শেষ সপ্তার একটি ঘটনা। দেখা যাচ্ছে যে শিষ্যদের মধ্যে আর একজন হল বৈৎসৈদার লোক: ফিলিপ। হয়তো তিনিও আন্দ্রিয়ের একজন বন্ধু যাকে তিনি যীশুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন?
- বৈৎসৈদায় (যেমন সারা গালীল এলাকাও) যিহূদীদের পাশে অনেক গ্রীক ভাষার লোকও বাস করত। এখানে কিছু গ্রীক ভাষার যিহূদীরা যারা উদ্ধার পর্বের জন্য যিরূশালেমে এসেছেন তারা যীশুর সাথে দেখা করতে চায়। তারা ফিলিপের কাছে প্রথম আসে, হয়তো কারণ তার নাম গ্রীক অথবা কারণ তিনি হয়তো অন্য শিষ্যদের চেয়ে ভালভাবে গ্রীক পারতেন।
- কিন্তু ফিলিপ, যখন তাদের অনুরোধ শুনেন, তিনি প্রথম তা আন্দ্রিয়ের সাথে শেয়ার করেন, এবং তার উৎসাহ ও সমর্থন পেয়ে (হতে পারে) তারা একসাথে লোকদের নিয়ে গিয়ে যীশুর সাথে পরিচয় করে দেন।
- শুনে যে এখন অন্য ভাষার লোক তার অনুসন্ধান করছে যীশু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন যে ‘মনুষ্যপুত্রের মহিমা প্রকাশিত হবার সময় এসেছে ‘, যে ‘বীজ মাটিতে পড়ে যদি না মরে তবে একটাই বীজ থাকে, কিন্তু যদি মরে তবে প্রচুর ফসল জন্মায়’ (যোহন ১২:২৪), যে তিনি ভবিষ্যৎ কষ্টভোগ নিয়ে দুশ্চিন্তিত (যোহন ১২:২৭), যে তিনি নিজেকে পিতার ইচ্ছার অধীনে রাখবেন ‘পিতা, তোমার মহিমা প্রকাশ কর’ (যোহন ১২:২৭) যেমন তিনি কয়েকদিন পরে গেৎশিমানী বাগানে প্রার্থনা করবেন।
- এই মুহূর্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা আরো বুঝা যায় কারণ স্বর্গস্থ পিতা ঈশ্বর সে সময়ই স্বর্গ থেকে তার রব শোনান (এইটা তৃতীয় বার, যীশুর বাপ্তিস্ম ও রূপান্তরের পরে): ‘আমি আমার মহিমা প্রকাশ করেছি এবং আবার তা প্রকাশ করব’ (যোহন ১:২৮)।
- ঐসময় হয়তো শিষ্যরা যীশুর কথার গুরুত্ব তেমন বুঝতে পারেন নি এবং আমাদের বলা হয় নি, যীশু এই গ্রীক ভাষার লোকদের ঠিক কি বলেন, কিন্তু আবারও আমরা আন্দ্রিয়কে দেখি কিভাবে তিনি তার মিশুক মনোভাব, স্বাগতম জানানোর ব্যক্তিত্ব ও লোকদের প্রতি খেয়াল ও যত্ন দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: লোকদের যীশুর কাছে নিয়ে আসা।
আন্দ্রিয়ের পরের জীবন ও মৃত্য



- প্রেরিত পুস্তকে আমরা আন্দ্রিয়ের প্রথম মণ্ডলীতে ভূমিকা ও পরের পরিচর্যার কাজে আমরা কোনো বর্ণনা পাই না।
- কিন্তু মণ্ডলীর ঐতিহ্য তার বিষয়ে বেশ কিছু কথা পাওয়া যায়:
- মণ্ডলীর ইতিহাসবিদ ইউসেবিয়াস (Eusebius) তার সে পুস্তকে ‘মণ্ডলীর ইতিহাস’ মণ্ডলীর আদিপিতা ওরিগেনের কথা উদ্ধৃতি করে বলেন যে আন্দ্রিয় স্কুথিয়া (Scythia) এলাকায় প্রচার করতেন (আজকের জর্জিয়া, রাশিয়া ও ইউক্রেইন দেশে)।
- ‘নেষ্টরের ইতিহাস’ নামে একটি পুস্তক বলে যে তিনি কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে, নদী নিয়েপার (Dnjeper) পাড়ে আজকের কিয়েভ্ (Kiev) শহরে প্রচার করেছেন। সেখান থেকে তিনি আজকের নোভ্গরদ শহর (Novgorod) পর্যন্ত গেলেন (আজকের রাশিয়া ও উক্রেইন দেশ)।
- রোম শহরের ইপ্পোলিটাস (Hippolytus of Rome) বলেন যে আন্দ্রিয় রোমীয় প্রদেশ থ্রেকিয়ায় (আজকের বুলগেরিয়া, গ্রীস ও তুরষ্ক দেশ) প্রচার করতেন।
- আপোক্রিফার ‘আন্দ্রিয়ের কার্যক্রম’ নামে একটি পুস্তক (১০০-২০০ খ্রিঃ) উল্লেখ করেন যে তিনি কনস্ট্যাণ্টিনোপল এলাকায় (Byzantinum) প্রচার করতেন (আজকের তুরস্ক দেশে, ইস্তাম্বুল শহরের এলাকায়)।
- সিলূকিয়া শহরের বাসিল (Basil of Seleucia) উল্লেখ করেন যে আন্দ্রিয় থ্রেকিয়া, স্কুথিয়া এবং আখায়ায় (গ্রীস) পরিচর্যা করতেন।
- আরো গল্প আছে যেখানে আন্দ্রিয়ের পরিচর্যা জর্জিয়ায়, সাইপ্রাস দ্বীপে, মাল্টা, রুমানিয়া ও স্কটল্যাণ্ডে উল্লেখ করা আছে। আজ পর্যন্ত ইউক্রেইন দেশ, রুমানিয়া দেশ ও রাশিয়া আন্দ্রিয়কে তাদের ‘সুরক্ষাকারী সাধু’ (patron saint) হিসাবে সম্মান করে।
- তার মৃত্যু সম্বন্ধে বলা আছে যে তিনি গ্রীসে আখায়া এলাকা পাত্রাস্ শহরে (Patras, পেলোপোনেশিয়ান উপদ্বীপের উত্তরের পাড়ে) শহীদ মৃত্যুবরণ করেন। তাকে একটি ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল যার চেহারা ছিল X। একটি গল্প বলে যে তিনি এই ক্রুশে তিন দিন বেঁচেছিলেন।
- আন্দ্রিয়ের হাড় বিভিন্ন জায়গায় সম্মানের সঙ্গে সুরক্ষিত রাখা আছে: পাত্রাস শহরে তার নামে একটি গির্জা নির্মান হয়েছে ‘সাধু আন্দ্রিয় বাসিলিকা’। কিছু হাড় কন্টান্টিনপেল শহরের ‘পবিত্র প্রেরিতদের গির্জায়’ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল (আজকে: তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহর)।
- ১২০৮ খ্রিষ্টাব্দে কনস্ট্যাণ্টিনোপল শহর মুসলমানদের দ্বারা দখল হওয়ার আগে আন্দ্রিয়ের হাড়গুলি ইটালীতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আমাল্ফি (Amalfi) ‘Sant’ Andrea Dome’ নামে একটি গির্জায় রাখা হয়।
- যখন ১৪৬১ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানরা করিন্থ দখল করে, সেখানকার পাত্রাস শহর থেকে আন্দ্রিয়ের খুলি ইটালীতে এনে পোপ পিয়াস ২-এর কাছে দেওয়া হয়। তিনি হাড়গুলি ভ্যাটিকানে সুরক্ষিত রাখেন ও সেখানে আজ পর্যন্ত দেখা যায়।
- আরো বেশ কিছু গির্জা দাবী করে যে তাদের আন্দ্রিয়ের কিছু হাড় আছে, যেমন স্কটল্যাণ্ড দেশে এডিনবার্গ শহরে St. Mary’s Roman Catholic Cathedral এবং পোল্যাণ্ড দেশে ওয়ারশ শহরে Church of St. Andrew ও St. Albert।
সারাংশ
- অবাক লাগে যে যতবার আন্দ্রিয়ের নাম নতুন নিয়মে উল্লিখিত, তত বারই তিনি কিছু লোকদের যীশুর কাছে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দেন! মাত্র ব্যতিক্রম হল প্রেরিতদের তালিকার ক্ষেত্রে।
- আন্দ্রিয়ের ব্যক্তিত্ব, স্বভাব-চরিত্র ও মনোভাব সম্বন্ধে তা কি দেখায়? হতে পারে তিনি ছিলেন খোলা মনের, আগ্রহী, মিশুক, মজা ও বন্ধুত্বের লোক। এমন একজন যিনি সহজে অন্যদের সাথে মিশতেন, যিনি পার্থক্য করতেন না, যার কাছে নির্ভয়ে আসা যায়, যিনি অন্যদের সাথে সংযুক্ত থাকেন, যিনি লোকদের চোখে বিশ্বাসযোগ্য, যিনি অন্যদেরকেও সুসম্পর্কে গুরুত্ব দেন।
- বোধ হচ্ছে যে তিনি অন্য নেতাদের চেয়ে বেশ ভিন্ন ছিলেন (যেমন বার্ণবা, পৌল, তীত, তীমথিয়ের চেয়ে) এবং তার ভাই পিতরের চেয়েও অনেক ভিন্ন। কিন্তু ঈশ্বর আন্দ্রিয়ের ব্যক্তিত্ব, দান ও মনোভাব খুব শক্তিশালীভাবে এবং খুব ফলবানভাবে ব্যবহার করেন।
- স্বাগতম জানানোর লোকদের কাছে মণ্ডলীতে স্বাগত জানাচ্ছি!