ধর্ম ১৫ – আদিপুস্তক থেকে ভিত্তি

আদিপুস্তকে এবং বিশেষভাবে আদিপুস্তক ১-৩ অধ্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে ঈশ্বর মানুষকে সেই অতি প্রয়োজনীয় ভিত্তিক সত্যগুলো প্রকাশ করেন: তিনি কে, তিনি কেমন এবং জীবন, মহাবিশ্ব, পৃথিবী, প্রকৃতি, মানুষ ও পাপ কিভাবে শুরু হয়েছিল। এরজন্য এই অধ্যায়গুলো যত্ন সহকারে অধ্যয়ন করার লাভ আছে:

আদি ১:১

আদি ১:১  ‘সৃষ্টির শুরুতেই ঈশ্বর মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।’ 

আদি ১:১  ‘আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন।’ (কেরী)

  • এই বাক্যটি অনেক ভিত্তিক, তাই তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার:
  • ইব্রীয়তে বাক্যেটির (এবং বাইবেলের) প্রথম শব্দ হল ‘ঈশ্বর’, যা অবশ্যই উপযুক্ত: ‘Elohim beresit bara …’ ‘এলোহিম’ হল ইব্রীয় শব্দ যা সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে বুঝায়। সব কিছু ঈশ্বর দ্বারা ও ঈশ্বরের কারণে শুরু হয়েছে।
  • এই বাক্য নিয়ে আরো চিন্তা করি:
ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেনমহাকাশ / আকাশমণ্ডল এবংপৃথিবী
স্রষ্টাসৃষ্টসৃষ্ট
আগে থেকে ছিলেনএখানেই শুরুএখানেই শুরু
তাঁর শুরু নেইশুরু আছেশুরু আছে
অনন্ত, আগে থেকে উপস্থিতআগে থেকে অনন্ত নয়আগে থেকে অনন্ত নয়
তাঁর মত আর কেউ নেই, এক জাতঅনেক জিনিস / জাতঅনেক জিনিস / জাত
মালিকতাঁর সম্পত্তিতাঁর সম্পত্তি
অধিকারীতাঁর অধীনেতাঁর অধীনে
জীবন-দাতা, অস্তিত্ব-দাতাজীবন / অস্তিত্ব পাচ্ছেজীবন / অস্তিত্ব পাচ্ছে
উৎস, তাঁর উৎস নেইতাঁর দ্বারা বিদ্যমানতাঁর দ্বারা বিদ্যমান
স্বতন্ত্রতাঁর উপর নির্ভরশীলতাঁর উপর নির্ভরশীল
কারণফলাফল, উৎপন্নফলাফল, উৎপন্ন
সৃষ্টিকর্তাসৃষ্টিকর্তাকে প্রকাশিত করেসৃষ্টিকর্তাকে প্রকাশিত করে
  • ঈশ্বরের মত আর কেউ নেই। তিনি অদ্বিতীয়।
  • সৃষ্ট মানুষ হিসাবে কাকে ভয় করব? কাকে আরাধনা করব? কাকে মানব?
    • শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তাকে, যিনি সব সৃষ্টির পিছনে আছেন, কিন্তু কখনও সৃষ্ট জিনিসকে আরাধনা করব না।
    • গাছ, নদ-নদী, সূর্য, তারা, আত্মা, মানুষ, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান কোন কিছুই আমার জীবনে ঈশ্বরের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়, তা করার যোগ্য নয়।
    • এইসব জিনিস বা মানুষ ঈশ্বর নয়। ঈশ্বরের কাছ থেকে আমার যা প্রয়োজন তা দেওয়ার এইগুলির ক্ষমতা নেই। এইগুলি আমার জীবন চালিয়ে নিতে পারে না, জীবনের মূল্য, জীবনের অর্থ বা আহবান দিতে পারে না। এইগুলি ভাল, কিন্তু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট জিনিস মাত্র। যদি আমি এইগুলিকে ‘ঈশ্বর’ বানাই, আমি ব্যর্থ হব, এইগুলি ঈশ্বরের ভূমিকা পূর্ণ করতে পারে না।
    • আরাধনা, বিশ্বাস, সম্পূর্ণ নির্ভরতা, নিঃশর্ত অনুগত্য শুধুমাত্র ঈশ্বরের। আমার জীবন, আমার পরিচয়, আমার সত্তা, আমার মূল্য, আমার জীবনের অর্থ শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছ থেকে আসতে পারে। ঈশ্বর ছাড়া অন্য কোথাও এগুলি খুঁজলে তা আমাকে পাপে, ব্যর্থতায়, হতাশায় ও কষ্টভোগের দিকে নিয়ে যাবে।
  • এই বিষয়ের আর একটি প্রয়োগ: সৃষ্টি জিনিসকে ভয় না করা। মানুষ, ভূত, আত্মাদের ভয় করার প্রয়োজন নেই, আসলে তারাও আমার সহ-সৃষ্টি।
  • মাঝে মধ্যে লোকেরা ‘বহির্জাগতিক প্রাণ’ নিয়ে অনেক উত্তেজিত হয়ে যায়। এগুলি নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। যদি আসলে এই ধরণের কিছু থাকে, তবে সেগুলিও আমাদের সহ-সৃষ্টি মাত্র। যদি তাদের সৎজ্ঞান বা বিবেক না থাকে, তবে তারা পৃথিবীর জীবজন্তুর মত; যদি তাদের সৎজ্ঞান ও বিবেক থাকে, তবে তারা মানুষের মত এবং ঈশ্বর তাদেরকে একই আইন ও একই দায়বদ্ধতায় রাখবেন।
  • একটি প্রশ্ন যার উত্তর আমরা সরাসরি এই পদে পাইনা, তা হল: কেন ঈশ্বর মহাকাশ, পৃথিবী বা মানুষ সৃষ্ট করেন? আমরা সাধারণত এই উত্তর দেই:
    • যেন মানুষ তাঁকে আরাধনা ও সম্মান করে
    • কারণ ঈশ্বরের সহভাগিতা প্রয়োজন
    • রাজা হতে চাইলে প্রজা লাগবে, মানে কতৃত্ব করার জন্য মানুষ প্রয়োজন
    • যেন মানুষ তাঁকে সেবা করে
  • এখন প্রশ্ন হচ্ছে উত্তরগুলি কতটা উপযুক্ত বা ভাল?
  • ভুলে যাবেন না: ঈশ্বর অনন্তকাল আগে ছিলেন, যখন কিছুই সৃষ্টি হয়নি তখনও তিনি ছিলেন। তিনি আমাদের আরাধনা, বাধ্যতা, সেবা ও সহভাগিতা পাওয়ার আগেও ছিলেন।
  • ঈশ্বরের ‘কোনো কিছু প্রয়োজন’ তা নয়। ঈশ্বর ‘কিছু পাওয়ার উপর নির্ভর করেন’, তা নয়। ঈশ্বর হওয়ার জন্য তাঁর আমাদের আরাধনা প্রয়োজন, তা নয়; তিনিই ঈশ্বর। তাঁর কিছু করার জন্য আমাদের প্রার্থনার প্রয়োজন নেই, মানুষের প্রার্থনা করার আগে থেকেই তিনি কাজ করতেন।
  • ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেন নি কিছু পাওয়ার জন্য। তিনিই পূর্ণতা, জীবন, অস্থিত্ব, আলো, সৌন্দর্য, সব কিছু তাতেই পাওয়া যায়।
  • তিনি সৃষ্টি করেন নি কিছু পাওয়ার জন্য বরং কিছু দেওয়ার জন্য: তিনি জীবন, অস্থিত্ব ও অধিকার দান করেন।
  • তিনি দানশীল ও বড় মনের। তিনি চান যে তাঁর পাশাপাশি আরো জিনিস থাকুক। তিনি নিজের পাশাপাশি অন্য প্রাণী, ব্যক্তি, ক্ষমতা সৃষ্টি করেন; পাওয়ার জন্য না, দেওয়ার জন্য। এটা হল তাঁর চরিত্র।
  • হ্যাঁ, তিনি আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চান, তিনি আমাদের আরাধনায় আনন্দ পান, কিন্তু আমাদের আরাধনা হচ্ছে না তাঁকে চালানোর জন্য সে জ্বালানি। এই যে তিনি মানুষ মানে ক্ষুদ্র আমাদের তাঁর হৃদয় স্পর্শ করার ও তাঁকে খুশি করার যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তা হচ্ছে আমাদের প্রতি তাঁর দান (কি আশ্চর্য!)। তিনি আমাদের তাৎপর্য ও আহ্বান দেন। আসলে আমরা যে মানুষ হিসাবে ঈশ্বরক কিছু দিতে পারি, তা হচ্ছে ঈশ্বরের নম্রতা।
  • আমরা অনেক বার বলি, সৃষ্টির আগে ঈশ্বরের কোন সহভাগিতা ছিল না, তাই তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। কথাটা কি ঠিক? মানুষ সৃষ্টি করার আগে ঈশ্বর কি একা ছিলেন?
  •  

ঈশ্বর ত্রিত্ব ঈশ্বর

  • আদি ১:১  “আদিতে ঈশ্বর… সৃষ্টি করিলেন।”                ঈশ্বর          > স্বর্গস্থ পিতা।
  • আদি ১:২  “ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে চলাফেরা করছিলেন।”    ঈশ্বরের আত্মা  > পবিত্র আত্মা।
  • আদি ১:৩  “ঈশ্বর বললেন, “আলো হোক।”                    ঈশ্বরের বাক্য   > পুত্র, যীশু।
  • যোহন যখন কাব্যিকভাবে সৃষ্টির পুনরালোচনা করেন, তিনি এভাবে বলেন: (যোহন ১:১-৩) “প্রথমেই বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সংগে ছিলেন এবং বাক্য নিজেই ঈশ্বর ছিলেন। আর প্রথমেই তিনি ঈশ্বরের সংগে ছিলেন। সব কিছুই সেই বাক্যের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল, আর যা কিছু সৃষ্ট হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কোন কিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্ট হয় নি।”
  • যোহন পরিষ্কারভাবে বলেন ‘ঈশ্বরের বাক্য’ কে (যোহন ১:১৪): সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন। পিতা ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হিসাবে তাঁর যে মহিমা সেই মহিমা আমরা দেখেছি। তিনি দয়া ও সত্যে পূর্ণ।  যীশু, ঈশ্বরের  বাক্য।”
  • কলসীয় চিঠিতে পৌল এভাবে বলেন (কলসীয় ১:১৬-১৭): কারণ আকাশে ও পৃথিবীতে, যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সব কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। মহাকাশে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে তাদের সবাইকে তাঁকে দিয়ে তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনিই সব কিছুর আগে ছিলেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু টিকে আছে।”
  • তাই ঈশ্বর যে ত্রিত্ব ঈশ্বর তা বাইবেলের প্রথম ৩টি পদেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
  • তাছাড়া: ইব্রীয় ভাষায় আদি ১:১ পদ সে শব্দ সৃষ্টিকর্তা বুঝায় ‘এলোহিম’ (Elohim) আসলে একটি বহুবচন!
  • H430 ‘ĕlôhı̂ym אֱלֹהִים – ‘eloah’ H433-এর বহুবচন; specifically used (in plural thus, especially with the article) of the supreme God.
  • যদিও ত্রিত্ব ঈশ্বর শুধুমাত্র নতুন নিয়মের পূর্ণভাবে প্রকাশিত, পুরাতন নিয়মে নানা পদে ত্রিত্ব ঈশ্বর সম্বন্ধীয় কথা পাওয়া যায়। কিছু উদাহরণ:
  • আদি ১:২৬ক  “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি।’ খুব পরিষ্কারভাবে বহুবচন ব্যবহৃত যেখানে আমরা তা পাওয়া আশা করতাম না।”
  • দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪ হল যিহূদীদের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ, যা যিহূদী বিশ্বাসের সারাংশ হিসাবে দৈনিক উদ্ধৃতি করা হচ্ছে:  “ইস্রায়েলীয়েরা, শোন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এক।”  (আক্ষুরিকভাবে: ‘তারাই এক’)। আশ্চর্য বিষয় যে যিহূদী একেশ্বরবাদের কেন্দ্রে একটি পদ আছে যেখানে একটি বহুবনচ পাওয়া যায়!
  • যিশাইয় ৯:৬ পদে ত্রিত্ব ঈশ্বর সম্বন্ধীয় আর একটি আশ্চর্য কথা পাওয়া যায়: ‘এই সমস্ত হবে, কারণ একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন…আর তাঁর নাম হবে…শক্তিশালী ঈশ্বর, চিরস্থায়ী পিতা।”
  • গীত ১১০:১  দায়ূদ বলেন যে: সদাপ্রভু (যিহোবা) আমার প্রভুকে (আদন) বললেন, “যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি, ততক্ষণ তুমি আমার ডান দিকে বস”। 
  • মার্ক ১২:৩৬ পদে যীশু তার অতিনিশ্চিত ফরীশী শ্রোতাদের কাছে এই পদটি উদ্ধৃতি করেন।
  • হিতোপদেশ ৩০:৪যিশাইয় ৪২:১ পদও দেখুন…এবং আরো আছে।

সারাংশ: ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তা নতুন নিয়মের কোনো নতুন বিষয় নয় বরং তা সারা বাইবেলে পাওয়া যায়।

  • কিন্তু ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তার অর্থ বা সংজ্ঞা কি? আসলে তা অন্যদের বুঝানো কঠিন এবং মাঝের মধ্যে খ্রিষ্টানরা মনে করে ‘ঈশ্বর ত্রিত্ব না হলে আরো ভাল হত’।
  • কিন্তু ঈশ্বর ত্রিত্ব, আপনার পছন্দ হলে বা পছন্দ না হলেও, আপনি তা ব্যাখ্যা করতে পারলে বা না পারলেও। ঈশ্বর ‘ত্রিত্ব’ হওয়ার জন্য আমাদের মতামত বা অনুমতি নেন নি। তিনি ত্রিত্ব, এবং যদিও আমাদের সীমিত মস্তিষ্কে তা বোঝা কঠিন, তবুও এই বাস্তব কথায় অভ্যস্ত হলে ভাল।
  • অধ্যায়নের সামনে এগিয়ে গেলে আমরা দেখব ত্রিত্ব ঈশ্বর সহজে ব্যাখ্যা করতে না পারলেও, এটা হল একটি ভিত্তিক সত্য যার প্রতিফলন অনেক বিষয়ে দেখা যায় এবং যা বাইবেলীয় চিন্তার জন্য খুবই ভিত্তিক।
  • তাই পিতা ঈশ্বর, পুত্র ঈশ্বর ও পবিত্র আত্মা ঈশ্বর; তিন ব্যক্তি কিন্তু একজন ঈশ্বর। আরো বিস্তারিত জানার জন্য মণ্ডলী ১৩ ত্রিত্ব ঈশ্বর দেখুন।
  • এখন অধ্যায়নের জন্য আমরা ত্রিত্ব ঈশ্বর কেন্দ্রিক আর একটি বিষয় দেখব: ঈশ্বর যেহেতু ত্রিত্ব তিনি সম্পর্কের ঈশ্বর। ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে অনন্তকাল আগে থেকেই সুসম্পর্ক আছে। যদিও আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে আরো অনেক উপযুক্ত বর্ণনা দিতে পারি (যেমন: ‘তিনি সর্বশক্তিমান’), তবুও ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তা হচ্ছে সবচেয়ে ভিত্তিক বিষয় যা ঈশ্বর সম্বন্ধে বলা যায়।
  • যদি ঈশ্বর ত্রিত্ব, যদি ঈশ্বর সম্পর্কের ঈশ্বর তবে তাদের মধ্যে কি ধরণের সম্পর্ক আছে?
  • নতুন নিয়মের অনেক পদ মনে পড়ে। যীশুর বাপ্তিস্মের সময় আমরা ত্রিত্ব ঈশ্বরের পরিষ্কার ছবি পাই: যীশু পিতার বাধ্যতায় বাপ্তিস্ম নিচ্ছেন, স্বর্গস্থ পিতার রব শোনা যায়, ‘তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমার উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট’ এবং পবিত্র আত্মা যীশুর উপরে নেমে আসেন (লূক ৩:২১-২২)।
  • অথবা পাহাড়ে যীশুর রূপান্তরের সময়ে স্বর্গ থেকে পিতা আবারও তার রব শোনান: ‘এই সময় একটা মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল, আর সেই মেঘ থেকে এই কথা শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমরা এঁর কথা শোন’ (মার্ক ৯:৭)।
  • যোহন ১৪:৯ পদে যীশু বুঝান যে ‘তাঁকে দেখা’ মানেই ‘পিতাকে দেখা’যোহন ১৪:৭ পদে ‘যীশুকে জানা’ মানেই ‘পিতাকে জানা’। যোহন ৫:১৭ পদে যীশু কাজ করেন যেমন পিতা কাজ করেন। যোহন ৫:১৯ পদে যীশু শুধুমাত্র করেন যা তিনি পিতাকে করতে দেখেন। যোহন ৫:২১ পদে ‘পিতা যেমন মৃতদের জীবন দিয়ে উঠান ঠিক তেমনি পুত্রও যাকে ইচ্ছা করেন তাকে জীবন দেন’যোহন ৫:২৩ পদে‘পুত্রকে যে সম্মান করে না, যিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাকেও সে সম্মান করে না’
  • যীশু পবিত্র আত্মার বিষয়ে শিক্ষা দেন, যিনি তাঁর পরিবর্তে আসবেন (যোহন ১৪:১৬, ১৪:১৮), যিনি শিষ্যদের যীশুর কথাগুলি স্মরণ করিয়ে দেবেন (যোহন ১৪:২৬), যিনি শিষ্যদের পথ দেখিয় পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন (যোহন ১৬:১৩, ১৪:২৭, ১৪:২৬), যিনি সাহায্যকারী হবেন (যোহন ১৪:১৬), যিনি তাদের যীশুর চেয়ে বড় কাজ করতে শক্তি দেবেন (যোহন ১৪:১২) … এবং পবিত্র আত্মা যীশু তাঁর সম্বন্ধে যা কিছু বলেছেন তা সব পূর্ণ করেন।
  • যখন যীশু লাষারের কবরে প্রার্থনা করেন পিতা সাথে সাথে তার উত্তর দেন। পিতা যীশুকে তাঁর রব শোনানো দ্বারা বাপ্তিস্মের সময়, রূপান্তরের সময় এবং যোহন ১২:২৮ পদে অনুমোদিত করেন।
  • সারাংশে বলা যায় ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্কের মান এমন:
    • তারা পরস্পর্কে সুপারিশ ও সম্মান করেন।
    • তারা পরস্পর্কে প্রাধান্য দেন ও মানেন।
    • তারা পরস্পরের প্রতিনিধিত্ব ও ব্যাখ্যা করেন।
    • তারা পরস্পরের কাছে বশীভূত ও বাধ্য।
    • তারা একই মনে, একই প্রাণে, একই উদ্দেশ্যে কাজ করেন, যদিও তারা ভিন্ন ভূমিকা পালন করেন।
    • তারা একই নয়, কিন্তু তারা একতায়।
  • ঈশ্বর যখন যীশু দ্বারা আমাদের পরস্পর্কে ভালবাসতে (যোহন ১৫:১২) ও পরস্পর্কে প্রাধান্য দিতে (ফিলিপীয় ২:৩) আদেশ দেন, তিনি আমাদের এমন একটি আদেশ দেন যা ত্রিত্ব ঈশ্বর তাদের মধ্যে অনন্তকাল আগে থেকেই পূর্ণ করে এসেছেন।
  • ঈশ্বর এমন কোনো আদেশ দেন না যা তিনি নিজেই পালন করতে রাজি নন। এর প্রয়োগ: যা আপনি করতে রাজি না, তা আর একজন করতে বলবেন না।
  • যদি এই ধরণের উঁচু মানের সম্পর্ক ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যেই উপস্থিত, তবে তা অবশ্যই মানুষের সম্পর্কের জন্য আদর্শ ও মানদন্ড। কি উঁচু মানদন্ড!
  • খেয়াল করুন যে আমরা ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্য কোনো উচু-নীচু পাই নি। তদের মধ্যে ভিন্নতা আছে, কিন্তু তারা একতায়ই থাকেন।

মহাকাশ ও পৃথিবী

ইব্রীয় শব্দ ‘মহাকাশ’ হল שָׁמֶה    שָׁמַיִם  ‘shamayim shameh’ (‘সামায়ীম-সামে’) একটি বহুবচন।

ইব্রীয়তে ‘মহাকাশ’ বলতে’ শুধুমাত্র একটি শব্দ আছে, কিন্তু শব্দটি ভিন্নভাবে ব্যবহৃত, প্রধানত ৪টি ব্যবহার বুঝা যায়:

যেখানে পাখি উড়ে ও মেঘ ভাসেSky‘আকাশ‘ (আমরা তা ‘পৃথিবীর অংশ’ হিসাবে দেখি)
যেখানে চাঁদ, সূর্য, তারা আছেUniverse‘মহাবিশ্ব’ (আমরা তা পৃথিবীর অংশ হিসাবে দেখি)
আত্মার জগতSpiritual world‘আত্মিক জাগত’
যেখানে ঈশ্বর রাজত্ব করেনHeaven‘স্বর্গ’

এই ৪ ভাবে শব্দের ব্যবহার যদি আমরা খেয়াল করি, তবে বেশ কিছু ‘ঝামেলা’ সমাধান হয়ে যায়।

কিছু উদাহরণ:
  • আদি ১:২৬  মানুষদের রাজত্বের অধিকার দেওয়া ‘স্বর্গের পাখি’দের উপর (> ১ ‘আকাশ’)।
  • দ্বিতীয় বিবরণ ৪:১৯ স্বর্গের তারা, সূর্য, চাঁদ পূজা করো না (> ২ ‘মহাবিশ্ব’)।
  • ইফিষীয় ৬:১২  স্বর্গীয় স্থানে মন্দ আত্মিক ক্ষমতাগুলি উল্লিখিত (> ৩ ‘আত্মিক জগত’)।
  • ইয়োব ১:৬  শয়তান ঈশ্বরের সামনে আসে ও কথা বলে (> ৩ ‘আত্মিক জগত’)।
  • মথি ৬:১০  যীশু: ‘তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক।’ (> ৪ ‘স্বর্গ, মানে সেখানে ঈশ্বরের রাজত্ব’)।
  • কিন্তু অধিকাংশ সময় ‘মহাকাশ ও পৃথিবী’ পার্থক্য হিসাবে ব্যবহৃত না বরং একসাথে সমস্ত সৃষ্টি বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত, যেমন আদি ১:১ পদ।
  • বর্তমানের ভাষারীতিতে ও আধুনিক মণ্ডলীর চিন্তা অনুসারে আমরা সাধারণত ‘১’‘২’ একসাথে করে পৃথিবীর অংশ হিসাবে ভাবি। এই অনুসারে আমরা বুঝি: এক পাশে আছে ‘আত্মার জগত ও স্বর্গ’ (= আত্মিক জগত) এবং অন্য পাশে আছে পৃথিবী, আকাশ ও মহাবিশ্ব (= বস্তু জগত)।
  • আধুনিক মণ্ডলীতে অনেক বার এভাবে বুঝানো হয়: ‘আত্মিক জগত = ভাল’ এবং ‘বস্তু জগত ও শরীর = খারাপ’। আমরা এই ধরণের কথা বলি, ‘আমাদের জাগতিক হওয়া উচিত না, আমাদের আত্মিক হওয়া উচিত’…’এই শরীর আমাকে প্রলোভনে ফেলতে থাকে’…’এই বস্তু জগত যে কোনোভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে’…’আমরা আত্মা হিসাবে একটি আত্মিক স্বর্গে যাব’…’যীশু ফিরে আসবেন এবং আমাদের এই বস্তু জগত থেকে তুলে নিয়ে স্বর্গে নিয়ে যাবেন’…’এই জগতের জন্য কাজ করা মানে জাগতিক কাজ’…’শুধুমাত্র আত্মিক কাজ করলে আত্মিক হওয়া যায়’।
  • কিন্তু এই কথাগুলি কি আসলে বাইবেলীয়? সরাসরি উত্তর হচ্ছে: না! কিভাবে এই চিন্তাগুলি ঠিক নয়?
  • যদি বস্তু জগত খারাপ হয়, তবে কেন ঈশ্বর এই বস্তু জগত সৃষ্টি করেছেন, আজ পর্যন্ত এর অস্থিত্ব দিচ্ছেন? এবং কেন ঈশ্বর এই জগতকে ‘অতিউত্তম’ বলেছেন (আদি ১:৩১)? যদি এই শরীর আমাকে খালি প্রলোভনে ফেলতে থাকে, কেন ঈশ্বর তা সৃষ্টি করেছেন ও প্রত্যেক মুহূর্তে জীবন দিচ্ছেন? যদি শরীরের কারণে আমরা পাপ করি, তবে শয়তান যার শরীর নেই ও শুধুমাত্র আত্মা আছে, সে কিভাবে পাপ করল? যদি ‘আত্মিক = ভাল’, তবে কেন মন্দ আত্মা ও শয়তান বলতে কিছু আছে?  যদি ‘মাংসের কার্য’ (কেরী) গালা ৫:১৯-২১ মানে মাংস বা শরীরের বিষয় হয়, তবে কেন তালিকার অর্ধেক উল্লিখিত বিষয়ের সাথে শরীরের কোন সম্বন্ধ নেই (যেমন ‘শত্রুতা, ঝগড়া, লোভ, রাগ, স্বার্থপরতা, অমিল, দলাদলি, হিংসা’)? যদি শরীর মন্দ ও বস্তু জগত ধ্বংস হবে, তবে ঈশ্বর কেন যীশুকে পুনরুত্থানের পরে একটি চমৎকার শরীর দিয়েছেন? যদি এই পৃথিবী ধ্বংসের পথে ও গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে কেন ঈশ্বর একটি নতুন মহাকাশ ও একটি নতুন পৃথিবী তৈরি করবেন (প্রকাশিত ২১:১)?
  • আমাদের চিন্তাগুলি আসলে বেশি পরিষ্কার না। কিছু ভিত্তিক বাইবেলীয় সত্যগুলি পুনরায় স্থাপন করা দরকার:
    • ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন     উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগত
    • ঈশ্বর চেয়েছেন         উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগতকে
    • ঈশ্বর                  উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগতকে ‘উত্তম’ বা ‘চমৎকার’ বলেন।
    • ঈশ্বর                  উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগতকে জীবন দিয়ে যাচ্ছেন।
    • পাপ ঢুকে পড়েছে      উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগতে
    • উদ্ধারের প্রয়োজন      উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগতের
    • ঈশ্বর                 উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগতকে বিচার করবেন।
    • ২ পিতর ৩:৭         উভয়ই আত্মিক জগত এবং বস্তু জগত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে।
    • ১ করি ১৫:৪২,৫১     আমরা সবাই বদলে যাবে, সেই দেহ এমন যে আর কখনও নষ্ট হবে না।
    • কলসীয় ১:২০         ঈশ্বর সমস্ত কিছু (দৃশ্য বা অদৃশ্য) মিলনে আনবেন / সম্মিলিত করবেন।
    • রোমীয় ৮:১৭-২৩     ঈশ্বরের সন্তানদের সঙ্গে পৃথিবীকেও উদ্ধার করা হবে।
    • প্রকাশিত ২১:১        আত্মিক জগতপৃথিবী উভয় নতুন করে সৃষ্টি করা হবে।
  • তাই ‘আত্মা = ভাল’, কথাটি সত্য নয়, বরং মন্দ ও ভাল আত্মা (বা দূত) উভয় আছে।
  • তাই ‘বস্তু জগত / শরীর = খারাপ’, কথাটি সত্য নয়। ঈশ্বর আমাদের বস্তু জগত এবং শরীর দিয়েছেন এবং শরীরকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করা যায়, তা যীশু আমাদের দেখিয়েছেন। ‘কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন…’
  • তাই পৌল যখন আমাদের আদেশ দেন ‘আত্মিক হও’ তার অর্থ এই নয়: ‘আত্মা হও’ বরং তার অর্থ হল ‘পবিত্র আত্মা দিয়ে পরিচালিত হও’ জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে, ব্যবহারিক বা এমনই।
  • আমাদের খ্রিষ্টান হিসাবে নতুন করে এই বস্তু জগতকে উপযুক্তভাবে ভালবাসতে, যত্ন নিতে ও তার গুরুত্ব দিতে শিখতে হবে।
  • এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য বিজ্ঞান ০৯ দেখুন।

সৃষ্টির গল্পের তিনটি অংশ

আদি ১:১        ১ম অংশ ও সারাংশ  –  প্রধানত দেখায় কে সৃষ্টি করেছেন
আদি ১:২-২:৪   ২য় অংশ            –  প্রধানত দেখায় কি কি সৃষ্টি হয়েছে
আদি ২:৫-২৫    ৩য় অংশ           –  প্রধানত দেখায় মানুষকে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে

আদি ১:২-১:২৭              কিছু গুরত্বপূর্ণ ও পুনরুক্তি বিষয়

  • এই পদগুলিতে কি কি শব্দ পুনরূক্ত করা হয়েছে? কয়েকটি উদাহরণ দেখি:
  • ঈশ্বর প্রতিদিন দিনের শেষে তাঁর নিজের কাজ মূল্যায়ন করেন এবং ‘চমৎকার’ বা ‘উত্তম’ বলেন
  • ঈশ্বর যদি তাঁর নিজের কাজ মূল্যায়ন করেন > মূল্যায়ন ভাল ও প্রয়োজনীয় বিষয়
  • ঈশ্বর যদি তাঁর নিজের কাজ নিয়ে আনন্দ করেন > আমাদেরও নিজদের ভাল কাজ নিয়ে আনন্দিত হওয়া উচিত
  • ঈশ্বর সমস্ত সৃষ্টিকে ভাল বলেন, এর মধ্যে আছে উভয় আত্মিক জগত ও বস্তু জগত
  • এই মহাবিশ্বরের সৃষ্টি ছিল না একটি ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ অথবা একটি ‘দুর্ঘটনা’ অথবা দেবতাদের মধ্যে যুদ্ধের একটি অনিচ্ছাকৃত ফলাফল (যেমন গ্রীক কাহিনীতে পাওয়া যায়), সৃষ্ট হল ঈশ্বরের একটি একটি ইচ্ছাকৃত, প্রকল্পিত, উদ্দেশ্যপূর্ণ, আনন্দ ও যত্ন নিয়ে সাধন করা বিষয় যা উৎযাপন করা দরকার!
  • ‘আলাদা করা হয়েছে’: ঈশ্বর প্রথম অধ্যায়ে ৪ বার ও দ্বিতীয় অধ্যায়ে আর একবার একটি থেকে আলাদা করে দুইটি তৈরি করেন (differentiation): ১:৪ পদে আলো ও অন্ধকার, ১:৬ পদে জল ও ফাঁকা জায়গা, ১:৯ পদে সমুদ্র ও ভূমি, ১:১৮ পদে রাত ও দিন এবং ২:২১ পদে পুরুষ ও মহিলা।
  • আলাদা হওয়া তাহলে ভাল বিষয়। ভিন্ন হওয়া তাহলে ভাল বিষয়। পরস্পরের সম্পূরক হওয়া তাহলে ভাল বিষয়।
  • ঈশ্বর প্রকল্পিত ও শৃংখলভাবে একটির পর আরেকটি তৈরি করেন: প্রথমে তিন ধরণের বাসস্থান (জল, আকাশ, ভূমি) এবং পরে তার জন্য প্রাণী (জলে বাস করা প্রাণী, আকাশে উড়তে পারা প্রাণী, ভূমির উপরে হেটে বেড়ানো প্রাণী)।
  • ঈশ্বর বিভিন্ন জাত সৃষ্টি করেন। প্রত্যেকটি প্রাণী ‘তার জাত অনুসারে’ বৃদ্ধি পাবে। কলা কমলা নয়, কমলা কাঁঠাল নয়, কাঁঠাল হওয়া প্রয়োজনও নেই। কুকুর বিড়াল নয়, বিড়াল ছাগল নয়, ছাগলও হওয়ার প্রয়োজন নেই।
  • এর গুরুত্ব কি? আমরা ভাল বা সৌন্দর্য নিয়ে অনেক সরু সংজ্ঞা দেই (যেমন: বিউটি পার্লারে প্রত্যেকটি কনেকে ‘একই ধরণে’ সাজানো হয়। অথবা সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সব প্রতিযোগির সাজার ধরণ প্রায় একই ধরণের)।
  • ঈশ্বর আমাদের এই সৌন্দর্যের সরু সংজ্ঞায় রাজি নন, তিনি চান না যে ‘সব কিছু এই ধরণের হোক’। বরং তিনি অসংখ্য ভিন্ন জাত চান। উদাহরণ: ৩০,০০০ ধাণের গাছের আছে। ফিলিপাইনে একটি সমুদ্র-সৌকতে ৭০০০ ধরণের সামুক ও ঝিনুক গুনার পরে বিজ্ঞানীরা গুনা বাদ দিয়েছেন। এখনও প্রত্যেক বছর অনেক নতুন নতুন জাত আবিষ্কার হচ্ছে এবং তালিকায় যোগ হচ্ছে। তা ছাড়া ঈশ্বর প্রত্যেক জাতের ভিতরে অসংখ্য বৈচিত্র তৈরি করেছেন। উদাহরণ: প্রত্যেক মানুষের আঙ্গুলে ছাপ ভিন্ন, প্রত্যেকের রেটিনার ছবি ভিন্ন, প্রত্যেকের জিন ভিন্ন, এমন কি প্রত্যেকের আমিষও ভিন্ন।
  • তিনি সব কিছু ‘মূল কপি’ হিসাবে বানান, আমরা সব কিছুর কপি বানাতে চাই। ঈশ্বর একজন ঐশ্বরীয়া রায়, একজন শাহরুখ খান তৈরি করেছেন, একজনই তৈরি করেছেন তাদের মত আর একজনের দরকার নেই। প্রবাদ আছে: ‘সব মানুষ মৌলিক হিসাবে জন্ম নেয়, অধিকাংশ মানুষ প্রতিলিপি হিসাবে মারা যায়’।
  • তাই ঈশ্বর আমাকে যেভাবে তৈরি করেছেন (যে চেহারা, যে দান, যে লিঙ্গ, যে ব্যক্তিত্ব) এবং যে অবস্থায় রেখেছেন (যে পরিবারে, যে জাতিতে, যে দেশে) সেটাকে প্রয়োগ হিসাবে হৃদয়ের গভীরে গ্রহণ করতে হবে।
  • এখানে একটি কঠোর সাবধানবাণীও আছে: যিশাইয় ৪৫:১০-১১ পদে ঈশ্বর খুব শক্তিশালীভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন: ‘ধিক্‌ সেই লোককে, যে তার বাবাকে বলে, ‘তুমি কি জন্ম দিয়েছ?’ কিম্বা তার মাকে বলে ‘তুমি কি প্রসব করেছ?’ “সদাপ্রভু, যিনি ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন, যিনি তার সৃষ্টিকর্তা, তিনি এই কথা বলছেন, ‘তোমরা কি ভবিষ্যতের ঘটনা সম্বন্ধে আমাকে জিজ্ঞাসা করছ? আমার সন্তানদের সম্বন্ধে কিম্বা আমার হাতের কাজের বিষয়ে কি আমাকে আদেশ দিচ্ছ?’
  • ঈশ্বর যা সৃষ্টি করেছেন তা নিয়ে অভিযোগ করেন না! নিজেকে নিয়েও না, অন্যদের নিয়েও না! আপনার অভিযোগ করার অধিকার নেই। অভিযোগ করা মানে সৃষ্টিকর্তাকে অপমান করা। আপনি কে যে এই ধরণের দুঃসাহস রাখেন?
  • ঈশ্বর বড় ধরণের স্বাধীনতা নিয়ে আসতে চান: আমার আর কারও মত হওয়া দরকার নেই। আমি যেমন আছি তিনি আমাকে তেমনি চেয়েছেন। চাপ গ্রহনও করব না, চাপ দিবও না। অহংকার নেই, লজ্জাও নেই।
  • আর একটি পুনরূক্ত শব্দ হল ‘বীজ’ এবং ‘আশীর্বাদ করলেন যেন সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে’ (আদি ১:২২ পদে জলের ও আকাশের প্রাণীদের কাছে, আদি ১:২৮ মানুষের কাছে)। ঈশ্বর চান সংখ্যা বৃদ্ধি পাক, নতুন প্রজন্মগুলি হোক, বৃদ্ধি হোক, উন্নয়ন হোক!

সময় নিয়ে চিন্তা

  • সময় জাতীয় শব্দের অনেক পুনরুক্তি পাওয়া যায়: “সন্ধা হল…সকাল হল…প্রথম দিন… দ্বিতীয় দিন…তৃতীয় দিন…”। এর গুরুত্ব কি?
  • আদিতে বা শুরুতে শুধুমাত্র মহাকাশ ও পৃথিবীর শুরু হয়েছে তা নয়, বরং সময় বা ইতিহাসেরও সাথে সাথে শুরু হয়েছে।
  • সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  • বিশ্বে মূলতঃ সময় সম্বন্ধীয় দুই ধরণের চিন্তা পাওয়া যায়: ‘চক্রাকার সময়’ (Cyclical time) বা ‘রৈখিক সময়’ (Linear time)।
  • পূর্ব দিকের দেশীগুলোয় (হিন্দু, বৌদ্ধ) সময় চক্রাকার এই চিন্তা প্রচলিত। মানুষ যে এমন চিন্তা করবে তা বেশ স্বাভাবিক, কারণ প্রকৃতিতে আমরা অনেক বিষয় দেখি যা চক্রে চলে। যেমন: দিন-রাত, চাঁদের পরিবর্তন, বাৎসরিক ঋতু, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি।
  • কিন্তু বাইবেল বলে সময় এগিয়ে যায়। আদিপুস্তকে দেখি, প্রথম দিনের পর দ্বিতীয় দিন এবং প্রথম দিন আর কখনও ফিরে আসে না। কেন এটা এত গুরুত্বপূর্ণ?
  • সময় যদি চক্রে চলে তবে মাঝখানে যা কিছু ঘটুক না কেন অবশেষে সব কিছু আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
  • এর অর্থ হল: মানুষের প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, আচরণ, প্রচেষ্টা বা শ্রম শেষে নিসফল হবে, জীবনের ও কাজের কোনো মূল্য নেই, ব্যক্তির প্রভাব অস্থায়ী, পরিবর্তন বা উন্নয়ন আসলে অসম্ভব, আশা নেই। ‘যা হবার হবে’। আমি ভাগ্য দিয়ে পরিচালিত, আমি বাস্তবতার একটি সামান্য বিষয় মাত্র, আমি অক্ষম, আমি পরিস্থিতির শিকার মাত্র।
  • এগুলি একটি দেশের ন্যায় বিচারের উপর প্রভাব ফেলবে: যদি মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন অংশ না থাকে, তবে তার জন্য দায়িত্ব বা দায়বদ্ধতাও তেমন নেই। যদি ‘সব কিছু আগের মত হয়ে যায়’ তবে কোন অপরাধের প্রমাণও তদন্ত করে খুঁজে বের করা সম্ভব না; ঘটনা মুছে গেল, ‘কিছুই হয় নি’।
  • কিন্তু যদি সময় এগিয়ে যায়, তবে এর অর্থ যে আমার আজকের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের উপর একটি প্রভাব ফেলবে এবং নতুন একটি বাস্তবতা সৃষ্টি করবে। আজকের প্রত্যেক ছোট বিশ্বস্ততা, সেবা ও বাধ্যতা একটি অনন্তকালীন প্রভাব ফেলবে। তাই মানুষের সিদ্ধান্ত, কাজ, প্রচেষ্টা ও শ্রমের একটি অতুলনীয় গুরুত্ব আছে। যা ভবিষ্যতে হবে তা আজকে ঠিক করা হচ্ছে। উদাহরণ: যীশুকে গ্রহণ করে একটি অনন্তকালীন পরিত্রাণ পাই।
  • তাই মানুষের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মানুষের প্রভাব ফেলার অথবা কিছু ঘটানোর ক্ষমতা আছে, পরিবর্তন ও উন্নয়ন সম্ভব, আশা আছে, ফলে দায়বদ্ধতাও থাকবে। ঈশ্বরের সঙ্গে আমি একটি ভিন্নতা তৈরি করতে পারি, ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারি। সব কিছু গুরুত্বপূর্ণ।
  • চিত্রণ: যদি আমি একটি পাথর পুকুরে ছুড়ে মারি, পাথরটি কি কোনো কিছু না করে পানিতে বিলীন হয়ে যাবে… না পাথরটি এমন ঢেউ তৈরি করবে যা অনন্তকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে?

ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য

  • সৃষ্টি সৃষ্টিকর্তাকে প্রকাশিত করে। উদাহরণ: কেউ যদি দুপুরের খাবার রান্না করে, তা খেয়ে আমি রাধুনী সম্বন্ধে কিছু বুঝব। আপনার পরে টয়লেট ব্যবহার করে আমি আপনার সম্বন্ধে কিছু বুঝব।
    • সৃষ্টি সুন্দর                                   >  ঈশ্বর সৌন্দর্য পছন্দ করেন। ঈশ্বরই সুন্দর।
    • সৃষ্টি শক্তিশালী                                >  ঈশ্বর শক্তিশালী।
    • সৃষ্টির মধ্যে অনেক ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য দেখা যায়  >  ঈশ্বর কত বিচিত্র! ঈশ্বর কত ভিন্ন!
  • হ্যাঁ। ঈশ্বরের মধ্যে বৈচিত্র্য বা ভিন্নতা আছে: তিনি ত্রিত্ব ঈশ্বর, তিনজনই ভিন্ন ব্যাক্তি কিন্তু একজন ঈশ্বর।
  • আসলে অবাক লাগার কিছু নেই: সৃষ্টি, ঈশ্বরেরই হাতের কাজ, তা তাঁকে প্রকাশ বা প্রফলিত করে। ঈশ্বরের মধ্যে বৈচিত্র্য আছে, তাই তাঁর সৃষ্টিতে বৈচিত্র্য পাওয়া আশ্চর্য লাগার কিছু নেই। তাই আমরা পায়: হাজার হাজার ধরণের স্বাদ, গন্ধ, মসলা, রং, চেহারা, আকার-আকৃতি, কর্ম ইত্যাদি।
  • আবারও: ৩০,০০০ হাজার ধরণের গাছ, ৭,০০০ হাজার ধরণের ঝিনুক ও সামুক আছে এবং প্রত্যেক বছর আরও অনেক নতুন নতুন আবিষ্কৃত জাত তালিকায় যোগ দেওয়া হচ্ছে। সাথে সাথে জাতের মধ্যেও: একই গাছের দুই পাতা একই নয়, কোনো দুইটি তুষারকণা একই নয়, কোনো দুইটি মানুষের আমিষ একই নয়।
  • এই আশ্চর্য বৈচিত্র্য বা ভিন্নতার আসল শিকড় কোথায়? ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যেই। তাই বৈচিত্র্য বা ভিন্নতা ভাল বিষয়। ঈশ্বর শুধুমাত্র বিচিত্র বা ভিন্ন হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন তা নয়, তিনি তা আদেশ ও উৎযাপন করতে বলেছেন … এবং তিনি নিজেই তা উৎযাপন করেন:
  • ‘এর পরে আমি প্রত্যেক জাতি, বংশ, দেশ ও ভাষার মধ্য থেকে এত লোকের ভিড় দেখলাম যে, তাদের সংখ্যা কেউ গুণতে পারল না। সাদা পোশাক পরে তারা সেই সিংহাসন ও মেষ-শিশুর সামনে খেজুর পাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল’  (প্রকাশিত ৭:৯)।
  • আমরা সৃষ্টির আশ্চর্য বৈচিত্র্য দেখে ত্রিত্বের মূল সুর খুঁজে পাই। আমরা জানালা দিয়ে তাকালে ঈশ্বরের ত্রিত্বের স্বাদ পাই এবং ত্রিত্ব গুরুত্বপূর্ণ।
  • এখানে ইসলামের সাথে আমরা পার্থক্য পাই: ইসলামে শুধুমাত্র একটি পবিত্র ভাষা, একটি সংস্কৃতি, একটি পবিত্র স্থান, শুধুমাত্র এক ধরণের পোষাক, চুল, দাড়ি ও নামাজের ধরণ আছে… যা এই ধর্মকে অনেক একতা ও শক্তি দেয়, কিন্তু এখানে বৈচিত্র্য সমর্থিত না বরং দুঃশ্চিন্তার বিষয়।

অনুক্রম

  • অনুক্রম হল: ঈশ্বর > মানুষ > জীব-জন্তু > গাছ-পালা > জড় বস্তু। তা ভিন্নভাবে ভাগ করা যায়:
    • এক দিকে  –  সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর            –  অন্য দিকে সৃষ্টি বা সৃষ্ট যত কিছু।
    • এক দিকে  –  ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে মানুষ  –  অন্য দিকে ঈশ্বরকে প্রফলিত করা জীব-জন্তু, গাছ-পালা,…।
    • এক দিকে  –  প্রাণী                     –  অন্য দিকে জড় বস্তু (পাথর, নদী, গ্রহ ইত্যাদি)।

মানুষ

  • আদি ১:২৬  পদে আমরা ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে যে ধরণ যোগাযোগ তা সম্পর্কে এবং তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া একটু বুঝতে পারি: ‘(আসুন) আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মাণ করি’। লক্ষ্য করুন: ‘তুই কর!’ এই ধরণের কোনো কথা নয় বরং যোগাযোগ, প্রস্তাব, আলোচনা, একমতে আসা, একসাথে সিদ্ধান্ত। কি আদর্শ!
  • আদি ১:২৬-২৭  ‘আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি। তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী, পশু, বুকে-হাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত পৃথিবীর উপর রাজত্ব করুক। পরে ঈশ্বর তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে।’
  • মানুষ যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি হয়েছে তার অর্থ কি?
  • ঈশ্বর মানুষকে ব্যক্তি হিসাবে তৈরি করেছেন, তিনি তাদের ব্যক্তিত্ব, আত্ম-সচেতন হওয়ার ক্ষমতা, মন, চিন্তা, যুক্তি, চেতনা, আবেগ, স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে তারা ঈশ্বরের মত, আর এটা হচ্ছে ঈশ্বরের দান তাদের জন্য।
  • মানুষ কোন ক্ষেত্রে ঈশ্বরের মত নয়? ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা, মানুষ সৃষ্ট। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, মানুষের সীমিত ক্ষমতা আছে। ঈশ্বর সর্বজান্তা, মানুষের সীমিত জ্ঞান আছে। ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, মানুষ মাত্র এক সময়ে এক স্থানে থাকতে পারে। ঈশ্বর অসীম, মানুষ সীমিত।
  • কিন্তু আমাদের ‘ঈশ্বর দেখতে কেমন’ তা মানুষের চেহারার দিকে তাকিয়ে কোনো উপসংহারে আসা উচিত নয়। ২য় আজ্ঞা (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৮-১০) অনুসারে ঈশ্বরের দৃশ্যমান উপস্থাপনা, ঈশ্বর নিয়ে ছবি বা মূর্তি তৈরি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
  • যীশুর আসা থেকে, যখন ঈশ্বর এক ধরণের ‘দৃশ্যমান’ হয়েছিল, ছবি বা মূর্তির বারণ বাদ যায়। কিন্তু খেয়াল করুন, সারা নতুন নিয়মে যীশুর চেহারা বা তিনি দেখতে কেমন ছিলেন তার একটিও বর্ণনা পাওয়া যায় না। ঈশ্বর চেয়েছেন বর্ণনা না থাকুক! বর্ণনা থাকলে আমরা অবশ্যই অন্য রকম মতবাদ তৈরি করতাম: ‘যীশুর চোখ বাদামী রঙ্গের ছিল, তাই শুধুমাত্র বাদামী রঙ্গের চোখের মানুষ পরিত্রাণ পাবে’ অথবা এই ধরণের আরও কোন উল্টাপাল্টা মতবাদ তৈরি করতাম!
  • আদি ১:২৭ পদে বাইবেলের লেখার ধরণ গদ্য থেকে পদ্য হয়ে যায় (বিষয়টি খুব আশ্চর্যের ও সুন্দর!), ৩ লাইনই সমান্তরাল:
    1. পরে ঈশ্বর তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন।
    2. হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন,
    3. সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে।’
  • সমান্তরাল লাইনগুলি পরিষ্কারভাবে বুঝায় যে পুরুষ ও মহিলা উভয় ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি।
  • এখানে আমরা বাইবেলে লিঙ্গের প্রথম উল্লেখ পায়। আমাদের লিঙ্গ নিয়ে অনেক বিভেদ তৈরি করি (কে চুল লম্বা রাখবে বা কে রান্না করবে ইত্যাদি)। কিন্তু খেয়াল করুন: ঈশ্বর প্রথম যখন লিঙ্গের বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি আসলে কি নিয়ে বলা বলেন? কোন বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই?
আদি ১:২৬ঈশ্বর পুরুষ সৃষ্টি করেনঈশ্বর মহিলা সৃষ্টি করেন
আদি ১:২৬ঈশ্বর চেয়েছেন যেন পুরুষ থাকুকঈশ্বর চেয়েছেন যেন মহিলা থাকুক
আদি ১:২৭পুরুষ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টিমহিলা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি
আদি ১:২৮ঈশ্বর পুরুষকে আশীর্বাদ করেনঈশ্বর মহিলাকে আশীর্বাদ করেন
আদি ১:২৮ঈশ্বর পুরুষকে কর্তৃত্ব করার অধিকার দেনঈশ্বর মহিলাকে কর্তৃত্ব করার অধিকার দেন
  • আমরা লিঙ্গের সংজ্ঞা দেই সাধারণত দুই লিঙ্গের ভিন্নতা দেখিয়ে। ঈশ্বর লিঙ্গের পরিচয় করার ক্ষেত্রে একটাও পার্থক্য উল্লেখ করেন নি বরং তিনি বলেন তাদের উভয়ই একসাথে কি মিল আছে। আদিপুস্তক ১ অধ্যায় থেকে কোনো পার্থক্য বা ভিন্নতা বা উঁচু-নীচু কিছুই পাওয়া যায় না।
  • এমন কি আদি ২:২৩ পদেও যখন আদম প্রথম হবাকে দেখেন, তিনি বলেন না ‘এত লম্বু চুল!’ বরং তিনি বলেন: ‘এবার হয়েছে। এঁর হাড়-মাংস আমার হাড়-মাংস থেকেই তৈরী। পুরুষ লোকের দেহের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবে’ । আবারও: এখানে কোন পার্থক্যের উপর জোর দেওয়া হয় নি বরং তাদের মিল, সমতা ও পরস্পরের জন্য উপযুক্ততা প্রকাশ করা হয়েছে (মনে আছে আদি ২:২০ পদ অনুসারে, জীব-জন্তুদের মধ্য থেকে আদমের উপযুক্ত কাউকে পাওয়া যায় নি!)। আদম মূলত বলেন, ‘অবশেষে আমার মত একজন পেলাম!’। আদিপুস্তক ১ এবং অধ্যায় লিঙ্গের পার্থক্য নিয়ে কথা আসে না বরং দুই লিঙ্গের মিল, সমতা ও পরস্পরের উপযুক্ততার কথা আসে।

ঈশ্বর কেন দুই লিঙ্গের মানুষ সৃষ্টি করেছেন?

  • সাধারণত আমরা উত্তরে বলি: জন্মদানের জন্য, যেন ছেলেমেয়ে হয়।
  • এই উত্তর অবশ্যই ঠিক। ঈশ্বর ঠিক করেছেন যে দুই লিঙ্গের সুসম্পর্ক থেকে একটি বাচ্চা সৃষ্টি হয়।
  • কিন্তু এই উত্তরই কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর? আসলে প্রকৃতিতে বংশ বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার নানা ধরণের পদ্ধতি দেখা যায় যা দুই লিঙ্গের উপর নির্ভরশীল নয় (যেমন কিছু সামুক)। এমন প্রাণীও আছে, যা শুরুদিকে পুরুষ হিসাবে থাকে ও পরে মহিলা হয়ে যায়। তাই জন্মদানের জন্য দুই লিঙ্গের প্রয়োজন ছিল, তা এইভাবে বলা যায় না।
  • আরো ভিক্তিক ভাবে আবার প্রশ্ন করি: কেন ঈশ্বর লিঙ্গের সৃষ্টি করেছেন?
  • আদি ২:২১-২২ পদে আমরা বর্ণনা পায় কিভাবে ঈশ্বর পঞ্চম বার ‘একটি থেকে আলাদা করে দুইটি’ সৃষ্টি করেন (যেমন আদি ১ অধ্যায়ে ৪বার করেছিলেন): তিনি আদমের পাজর থেকে মহিলা তৈরি করেন। আসলে ‘আদম’ (H121 אָדָם) শব্দটি ইব্রীয়তে একটি বহুবচন(!), তাই ইংরেজীতে শব্দটির অনুবাদ করা হয় ‘মানব জাতি’ (humankind) হিসাবে। বাংলায় আমরা বলতে পারতাম ‘আদামরা’। আদিপুস্তক ১ অধ্যায়ে ‘আদম’ শব্দটি সব সময় বহুবচন হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। শুধুমাত্র আদি ২:২৩ পদে প্রথম বার পাওয়া যায়, ‘আদম’ শব্দটি একবচন হিসাবে পাওয়া যায় যখন আদম মহিলাকে (একবচন) দেখে। বাংলায় আমরা একবচনে বলা শব্দটিকে বলতে পারতাম ‘আদামা’। সে বলে:  ‘এবার হয়েছে। এঁর হাড়-মাংস আমার হাড়-মাংস থেকেই তৈরী। পুরুষ লোকের দেহের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবে’ । ‘আদম’ থেকে ‘আদামা’, ইব্রীয়তে ‘ঈষ’ H376 אִישׁ ‘ı̂ysh’ থেকে ‘ঈষা’ H802 אִשָּׁה  ‘ishshâh’।
  • আদি ২:২১ পদে বলা হয়েছে যে আদমের পাজর থেকে মহিলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাক্যটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা দ্বারা পরিষ্কারভাবে একটি অনুভূমিক ছবি দেখানো হয়েছে। পাজর থেকে পাজর মানে তারা পাশা-পাশি দাঁড়ানো, তারা সমান। যদি মহিলা পা থেকে অথবা মাথা থেকে সৃষ্টি হত তবে একটি উঁচু-নীচু ছবি দেখানো হত।
  • যদি আমরা আমাদের পাপেপূর্ণ হৃদয়ে শুনি যে মানুষকে ভাগ করা হয়েছে, তখন সাথে সাথে আমরা প্রশ্ন করি: ‘কে কি পেল?’, ‘কে বেশি পেল?’, ‘কে উপরে?’, ‘কে নীচে?’। এই প্রশ্নগুলি আমাদের পাপেপূর্ণ হৃদয় থেকে আসে, কিন্তু আদিপুস্তকের লেখায় এমন কোন কিছু পাওয়া যায় না।
  • আসল প্রশ্ন যা আমাদের করা উচিত তা হল: কেন ঈশ্বর দুইটি লিঙ্গ সৃষ্টি করেছেন? দুইজন মানুষ সুসম্পর্কের মধ্যদিয়ে ঈশ্বর সম্বন্ধে কি প্রকাশ করতে পারে, যা একজন মানুষ একা কখনও প্রকাশ করতে পারে না? মানুষ কারই প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি??
  • ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রতিমুর্তিতে একজন! একজন একা ত্রিত্ব ঈশ্বরকে কিভাবে প্রকাশিত করবে? তা সম্ভব না। সম্পর্কের মধ্যদিয়ে দুইজন মানুষ ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রকৃতি সম্বন্ধে এমন কিছু প্রকাশ করতে পারে যা একজন মানুষ একা কখনই প্রকাশ করতে পারে না। কেন দুই লিঙ্গ? কারণ মানুষ মানে আমরা হচ্ছি এই পৃথীবিতে ত্রিত্ব ঈশ্বরের সর্বোচ্চ প্রকাশ।
  • চিন্তা করুন: একজন মানুষ একা দ্বীপে বসে আছে। সে কিভাবে ভালবাসা প্রকাশ করবে? সে কিভাবে সেবার মনোভাব দেখাবে? সে অন্যদের সম্মান করে কিনা, তা কিভাবে বুঝা যাবে? সে যে ন্যায্য, তা কিভাবে দেখা যাবে? আসলে এগুলি দেখা বা বোঝা সম্ভব না, কারণ এই চরিত্র ও আচরণ বোঝার জন্য দুজন লোকের প্রয়োজন। কিন্তু লোকটির চরিত্র ও আচরণ দেখার বা বোঝার মত দ্বীপে আর কেউ নেই।
  • আবারও আমরা ঈশ্বর যে ত্রিত্ব সে সত্য বাস্তবতায় খুঁজে পাই: এইবার মানুষের লিঙ্গের মাধ্যমে।
  • ত্রিত্ব ঈশ্বরকে প্রকাশ কারার জন্য লিঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে: ভিন্নতা কিন্তু একতা … পারস্পরিক প্রেম, সেবা ও সম্মান… ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে যে মনোভাব বিরাজমান তাই যেন মানুষের মধ্যদিয়ে প্রকাশিত হয়।
  • বিষয়টি আমাদের উপর ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয় নিয়ে আসা উচিত: আমার প্রত্যেক সম্পর্কগুলী ত্রিত্ব ঈশ্বরকেই প্রকাশ করার কথা…আমি কি তাঁকে উপযুক্তভাবে উপস্থাপন করি? পরস্পরের সাথে আমার সম্পর্কগুলি কি এত উঁচু মানের?
  • ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে যে উঁচু মানের সম্পর্ক আছে, তা হচ্ছে আমাদের জন্য মানদন্ড ও আদর্শ। প্রাথমিকভাবে বিবাহ সম্পর্কের জন্য, কিন্তু আসলে সমস্ত মানবীয় সম্পর্কের জন্য প্রযেজ্য: প্রেম করা, সম্মান করা, প্রাধান্য দেওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা, সেবা করা, মেনে নেওয়া ও বাধ্য থাকা।
  • আদি ২:১৮ ‘মানুষটির পক্ষে একা থাকা ভাল নয়।’, বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য প্রিয় পদটির নতুন একটি অর্থ: এর মানে না যে বিবাহ করা আবশ্যক (যীশুও বিয়ে করেন নি কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করেছেন) বা যে বিয়ে না করলে আমি ‘মাত্র অর্ধেক মানুষ’। বরং এর অর্থ হচ্ছে যে মানুষ সম্পর্ক ছাড়া বাঁচতে পারে না, পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক রাখার জন্যই তৈরি হয়েছে; আমরা সম্পর্কের ঈশ্বর, ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি।
  • আদি ২:১৮ আরো বলে ‘আমি তার জন্য একজন উপযুক্ত সংগী তৈরী করব।’ কেরী: ‘আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্মাণ করি।’  ইব্রীয়তে ‘উপযুক্ত সঙ্গী’ বা ‘অনুরূপ সহকারিণী’ শব্দটি  נֶגֶד  עֵזֶר ‘ezer neged’ বা ‘এসের্ নেগেড্’  শব্দ হিসাবে আসে। শব্দটির অর্থ আসলে কি?
  • ‘এসের্’ শব্দের অনুবাদ হতে পারে: সঙ্গী, সহকারী, সাহায্যকারী। আমরা যদি ‘সাহায্যকারিণী’ শব্দটি শুনি মনের মাঝে এই ছবিটি আসে: একটি আয়া বা বুয়া। কিন্তু সাবধান! আমরা যদি একটি শব্দের প্রকৃত অর্থ বুঝতে চাই, তবে বাইবেলে শব্দটি আর কোথায় ও কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তা দেখা দরকার: ‘এসের্’ শব্দ পুরাতন নিয়মে ১৬ বার ব্যবহৃত, এক বার শব্দটি স্ত্রী সম্বন্ধীয় (আদি ২:১৮), এক বার একজন রাজনৈতিক উদ্ধারকর্তা সম্বন্ধীয় এবং ১৪ বার শব্দটি ঈশ্বর নিজেকেই বুঝান। যেমন গীত ৭০:৫ পদ: ‘হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে ত্বরা কর; তুমিই আমার সহায় (‘এসের্’) ও আমার নিস্তারকর্তা’ বা সাধারণ অনুবাদে: “হে ঈশ্বর, তুমি শীঘ্র আমার কাছে এস। তুমি তো আমার সাহায্যকারী ও উদ্ধারকর্তা’। তাই ‘এসের্’ মানে না ‘বুয়া’ বরং ‘এসের্’ এমন একজনকে বুঝায় যার সাহায্য করা ও সাথে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আছে। ‘এসের্’ কোনো দুর্বল শব্দ নয় বরং শক্তিশালী শব্দ।
  • ‘নেগেড’ শব্দের অনুবাদ হল: অনুরূপ, উপুক্ত, যার মিল আছে, সঙ্গী, একই ধরণের, তার মত একজন।
  • আদি ২:২০ পদে ঈশ্বর আদমকে জীব-জন্তুদের মধ্যে সঙ্গী খুঁজতে দেন কিন্তু ‘আদমের জন্য উপযুক্ত একজন’ পাওয়া যায় না। ঈশ্বর আদমকে বুঝান যে একজন ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে মানুষের জন্য’ শুধুমাত্র একজন ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে মানুষই’ উপযুক্ত।
  • আদম যখন হবাকে প্রথমবার দেখে তিনি বলেন: ‘এবার হয়েছে। এঁর হাড়-মাংস আমার হাড়-মাংস থেকেই তৈরী। পুরুষ লোকের দেহের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবে’  (আদি ২:২৩‘এবার হয়েছে’ মানে আগে (জীব-জন্তুদের মধ্যে) হয় নি। তাঁর মোট কথা হল: ‘অবশেষে আমার মত একজনকে পেলাম!’।
  • সারাংশ: আদিপুস্তক ১ অধ্যায়ে আমরা দেখলাম লিঙ্গের পার্থক্যও নিয়ে কোন কথা নেই বললেই চলে, কিন্তু পুরুষ ও মহিলা যা একসাথে আছে, তার উপর অনেক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে: দুইজনই ঈশ্বরের হাত ও ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি, দুইজনই ঈশ্বরের প্রতিমুর্তিতে সৃষ্টি, দুইজনই আশীর্বাদিত , দুইজনকেই অধিকার দেওয়া হয়েছে, তারা একই মাংসের, তাদের মধ্যে মিল ও সমতা আছে এবং তারা পরস্পরের জন্য উপযুক্ত। কি ইতিবাচক দৃষ্টি!

মানুষ ও সৃষ্টির সম্পর্ক

  • আদি ১:২৬ বা ১:২৮ পদ বলে: ‘তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী, পশু, বুকে-হাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত পৃথিবীর উপর রাজত্ব করুক।’
  • ঈশ্বর, যিনি আসল অধিকারী, মালিক ও কর্তা, তিনি এখানে অধিকার ও নেতৃত্ব মানুষকে দিয়েছেন, দিয়েছেন পুরুষ এবং মহিলা উভয়কে। ঈশ্বর অধিকার বা ক্ষমতা দান করেন।
  • ‘রাজত্ব’ বা ‘কর্তৃত্ব করা’ মানে কি? আমরা মনে করি এর অর্থ হল অন্যদের কাজ করতে বলা। দৃষ্টান্ত: আদম হবাকে বলে: ঝাঁড়ু দাও! হবা বলে, আমিও রাজত্ব করি, বানর, তুমি ঝাঁড়ু দাও! বানর কিছু বুঝে না, করেও না।
  • হ্যাঁ, মানুষকে পৃথিবীর উপরে অধিকার ও নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা এখন পৃথিবীর দেখাশুনাকারী, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তারা ধনাধক্ষ্য, তারা ঈশ্বরের প্রতিনিধি কিন্তু তাদেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে এই পৃথিবীতে চাষ করতে, দেখাশুনা করতে ও উন্নত করতে (আদি ২:১৫)।
  • বাইবেলে সব সময়: অধিকার = নেতৃত্ব = দায়িত্ব = কাজ = দায়বদ্ধতা। বাইবেলে এমন কিছু পাবেন না: ‘পদ পেলাম কিন্তু কাজ করি না’।
  • তাই আমরা এখানে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কের সংজ্ঞা পাই: প্রকৃতি মানুষের অধীনে। অধিকার দেওয়া হয়েছে।
  • কিন্তু দেখাশুনাকারী হিসাবে আমি আসল মালিক ঈশ্বরের প্রতি দায়বদ্ধ, মালিকের সম্পত্তি নষ্ট করার অধিকার মানুষে নেই: অধিকারের সীমানা আছে।

পূর্বে, আত্মা পূজা, হিন্দু ও বৌদ্ধ চিন্তা: মানুষ প্রকৃতির অধীনে, প্রকৃতিকে পূজা করে

পশ্চিমা ও অবিশ্বাসের চিন্তা: প্রকৃতি মানুষের অধীনে, মানুষ রাজত্ব করে

বাইবেলীয় চিন্তা: মানুষের প্রকৃতির উপরে অধিকার আছে, দায়বদ্ধতাও আছে

  • দৃষ্টান্ত: পূর্ব দেশের কৃষকেরা এমনভাবে চাষবাদ করে যাতে কোন আত্মা অপমানিত না হয়। আত্মা অপমানিত বা বাচ্চা অসুস্থ হলে, বিভিন্ন আত্মার কাছে উৎসর্গ করে।
  • দৃষ্টান্ত: পশ্চিমা দেশের অবিশ্বাসী। ঈশ্বর বা অনন্ত জীবন বলতে কিছু নেই, শুধুমাত্র বাস্তবতা হল এই জীবন, তাই এখুনি পছন্দের মত জীবন-যাপন করতে হবে, তা করার জন্য যা প্রয়োজন, তা অর্জন করব। পরে কি হবে তা আমার বিষয় নয়।
  • বাইবেল অনুসারে মানুষকে সীমানা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। আদেশও দেওয়া হয়েছে: এই পৃথিবীতে বিনিয়োগ করতে, চাষ করতে, উন্নত করতে, আবিষ্কার করতে, গবেষণা করতে, নতুন কিছু চেষ্টা করতে, আরো ভাল করতে, বৃদ্ধি করাতে। এমন কি বিজ্ঞান চর্চা করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ০৩ ভিত্তি শিক্ষা দেখুন।

মানুষের কাজ

  • আদি ১:২৬, ২৮  রাজত্ব, কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মানে কাজও করা।
  • আদি ২:১৫  ‘যাতে তিনি তাতে চাষ করতে পারেন ও তার দেখাশোনা করতে পারেন।’
  • আদি ২:১৯  জীব-জন্তু আদমের কাছে আনা হচ্ছে যেন নাম দেয়। মানে গবেষণা বা শ্রেণীবদ্ধকরণের কাজ দেওয়া হয়েছে।
  • তাই পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে পাপ-মুক্ত চমৎকার ও সুঅবস্থার পৃথিবীতে বাস করার একটি অংশ ছিল কাজ। ঈশ্বর কাজ করতে বলেন। কাজ ভাল। ঈশ্বর ভাল ছাড়া কোনো আদেশ দেন না।
  • তাই কাজ পাপের ফল না, পাপের শাস্তিও না, প্রতিশোধও না, অভিশাপও না। পাপ ছিল পরমদেশে বা এদন বাগানে থাকার অংশ। তাই বুঝতে পারি স্বর্গেও আমরা কাজ করব (!), কারণ স্বর্গে একটাও ভাল বিষয় বাদ দেওয়া হবে না 🙂
  • কাজের গুরুত্ব কি? কাজ করার অর্থ বা উদ্দেশ্য কি?
    • যা প্রয়োজন (খাবার, বস্ত্র, ঘর-বাড়ী), উপকারী (বাল্ব, ফ্যান, বাল্টি) ও যা সুন্দর (অলংকার, ফ্যাশন, শিল্পকলা) তা তৈরি করা।
    • নিজের ও পরিবারের জন্য যোগান দেওয়ার জন্য।
    • অন্যদের সেবা করার জন্য। সমাজের জন্য প্রয়োজনীয়, উপকারী ও সুন্দর জিনিস তৈরি করার জন্য।
    • ঈশ্বরকে গৌরব দেওয়ার জন্য।
  • কাজ আমাকে গুরুত্ব, সন্তুষ্টি, তৃপ্তি, সম্মান দেয়। কাজ দ্বারা আমার কিছু করার ও দান করার ক্ষমতা থাকে।
  • সব ধণের কাজ একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ: আদম কৃষক, অব্রাহাম রাখাল, আমোষ ডুমুড় গাছ কাটার লোক, যীশু কাঠমিস্ত্রী, পিতর জেলে, পৌল তাম্বু প্রস্তুতকারক ছিলেন।
  • দৃষ্টান্ত: সরকারী অফিসের চেয়ার নিয়ে গল্প। পশ্চিমা দেশে বড় সাহেব সবার আগে কাজে আসেন, সবার পরে চলে যান। আরো বিস্তারিত জানার জন্য অর্থনীতি ০৪ কাজ ও বিশ্রাম দেখুন।

পূর্বে, আত্মা পূজা, হিন্দু ও বৌদ্ধ চিন্তা: কাজ মানে বোঝা; আমার আত্মা, দেহ ও জগতে আটকিয়ে আছে বলে কাজ করি। কাজ সম্মানের বিষয় নয়, এই জগত আমার কাজের যোগ্য নয়। প্রয়োজন মেটাতে পারলে আর কাজ করব না।

শ্চিমা ও অবিশ্বাসের চিন্তা: কাজ প্রয়োজন ও ভাল কারণ তা দ্বারা আমি আমার মনের মত জীবন-যাপন করতে পারি।

বাইবেলীয় চিন্তা: উপরে যেমন দেওয়া আছে, সব কাজ মূল্যবান, কাজের কোনো ভাগ নেই। এই জগত ও জগতের মানুষ আমার কাজ ও বিনিয়োগের যোগ্য।

সংখ্যা বাড়িয়ে তোলা বা বৃদ্ধি

  • আদি ১:২২  জলে ও আকাশের জীব-জন্তুর কাছে আদেশ: ফলবান হও ও সংখ্যাবৃদ্ধি কর।
  • আদি ১:২৮  মানুষের কাছে আদেশ: ফলবান হও ও সংখ্যাবৃদ্ধি কর।
  • আসুন বাঙ্গালীদের জন্য হাততালি দেই কারণ তারা এই আদেশটি মনে-প্রাণে পালন করছে!
  • কিন্তু বাংলাদেশের আদিবাসীদের এই বৃদ্ধি দেখে কেমন লাগে?
  • আমরা সবাই এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি যে বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা হল জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
  • বাইবেল এই বিষয়ে যা বলে ও আমাদের প্রচলিত আধুনিক চিন্তা সম্পূর্ণ ভিন্ন… এখন আমরা কি করব?
  • কেউ কেউ বলে যে আদেশটি যখন দেওয়া হয়েছিল তখন পৃথিবীতে মানুষ কম ছিল এবং সব জায়গা খালি ছিল। কিন্তু এখন অতিরিক্ত মানুষ হয়ে গেছে। ঈশ্বর কি আদেশটি কখনও ফেরত নিয়েছেন?
  • দ্বিতীয় বিবরণ ১:১০-১১ –  যখন ইস্রায়েলের লোকসংখ্যা ২০ লক্ষ ছিল (এটা যাত্রা ১২:৩৭ পদ থেকে অনুমান করে বলা যেখানে ৬ লক্ষ পুরুষের কথা উল্লেখ আছে), মোশি প্রার্থনা করেন যেন ইস্রায়েলের জনসংখ্যা আর এক হাজার গুণ বৃদ্ধি পায়। মোশির কথা আক্ষুরিকভাবে নিলে শুধুমাত্র এক জাতি ইস্রায়েলের জনসংখ্যা ২০০ কোটি হয়ে যেত! পৃথিবীর লোকসংখ্যা বর্তমানে ৭০০ কোটি হিসাবে ধরা হয়।
  • আমরা বলি: অতিরিক্ত জনসংখ্যা = সমস্যা। ঈশ্বর বলেন: জনসংখ্যা = আশীর্বাদ।
  • অবশ্যই: যখন অন্যায়ভাবে আদিবাসীদের জমি দখল করা হয় ও তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়, তা অবশ্যই সমস্যা। সাথে সাথে কিছু মহিলারা পঞ্চমবার গর্ভবতী এর কারণ নয় যে তারা আরও বাচ্চা চায়, বরং প্রথম ৪টি সন্তানই ছিল মেয়ে সন্তান।
  • কিন্তু তারপরেও: যদি আমরা বাইবেলে এমন কিছু পাই যা আমাদের গতানুগতিক চিন্তার উদ্ধে, তবে কি করব?
  • থোমাস মাল্টাস (Thomas Malthus) ১৭৯৮ সালে বলেছিলেন: যেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধি গানিতিক হারে হচ্ছে কিন্তু খাবারের উৎপাদন সরল রৈখিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই শিঘ্রই সারা পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। তার ভবিষদ্বাণী ছিল যে ১৮৯০ সাল হচ্ছে এই সর্বনাশের সময়।
  • কিন্তু এটা সত্য হয়নি। অবশ্যই পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যার খাদ্যের প্রয়োজন আমরা এক শতাব্দি আগের উৎপাদিত খাদ্য দ্বারা কখনও মেটাতে পারতাম না, কিন্তু বর্তমানে উৎপাদিত খাদ্য দ্বারা পৃথিবীর মোট লোকদের খাওয়ানো সম্ভব।
  • আসলে একটি দেশের ধন-সম্পত্তি বা অর্থনৌতিক অবস্থা কিসের উপর নির্ভরশীল?
    • খনিজ-সম্পদের উপর? – কিন্তু জাপান বা সুইজারল্যান্ডের কোনো খনিজ-সম্পদ নেই, ভারতের সব ধরণের আছে।
    • উপনিবেশের উপর? – কিন্তু দমনকারী দেশ যেমন পর্টুগাল গরীব, এবং অন্যদের অধীনের থাকা জায়গা (যেমন সিঙ্গাপুর) ধনী। আবারও এমন দেশ আছে যা কারও অধীনের ছিল না (যেমন থাইল্যান্ড) কিন্তু ধনী না, এবং এমন দেশ যা কখনও দমন করে নি, কিন্ত ধনী (যেমন সুইজারল্যান্ড)।
    • জমির পরিমাণ ও উর্বরতা উপর? – সিঙ্গাপুর ও হংকং-এর জমি বা চাষাবাদ নেই কিন্তু ধনী। ইতিহাসেও এরকম অনেক পরিবর্তন দেখা যায়: রোমীয়রা টুনিসিয়া বা মিসর শস্যের কারণে দখল করেছিল কিন্তু এখন চাষাবাদ কম।
  • তেল: এখন একটি বড় বিষয় ও যুদ্ধের কারণ, কিন্তু ১৫০ বছর আগে কেউ জানত না, এই দুর্গন্ধযুক্ত তরল কোনো কাজে লাগে।
  • অবশ্যই দুইচার কথায় এই ধরণের জটিল বিষয় শেষ করা সম্ভব নয়, কিন্তু বাইবেল থেকে একটি চিত্র পাওয়া যায় (যা আমাদের চিন্তা থেকে অনেক ভিন্ন)। ঈশ্বর মূলত বলেন:
    • যে সম্পদ তিনি দিয়েছেন (জমি, খনিজ-সম্পদ, আবিষ্কৃত বা অনাবিষ্কৃত খনিজ)।
    • যে আইন তিনি দিয়েছেন ও যে আইন-শৃংখলা তিনি নিয়ে আসতে পারেন।
    • যে বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও পরিশ্রম করার ক্ষমতা তিনি মানুষকে দিয়েছেন।
    • যে অসাধারণ প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি তিনি দিতে রাজি যদি আমরা তাঁকে অন্বেষণ করি।
    • যে আশীর্বাদ তিনি নিশ্চিত দেবেন যদি আমরা বাধ্য হই।
  • উপরের পয়েন্ট সব একসাথে যথেষ্ট হবে যে কোনো যুগে সে সময়ের জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে।
  • আমাদের এক নম্বর সমস্য লোকসংখ্যা না বরং অন্যায়, যুদ্ধ, স্বার্থপরতা ও ভুল চিন্তা।

এদন বাগানে ভাল-মন্দ জ্ঞানের গাছ

  •  আদি ২:১৬-১৭ – বাগানে সমস্ত গাছ থেকে খাওয়ার অনুমতি আছে কিন্তু শুধুমাত্র একটি গাছ থেকে খাওয়া নিষিদ্ধ: ভাল-মন্দ জ্ঞানের গাছ।
  • আদি ২:১১-১৪ – একটি নদী উল্লেখ আছে যা ৪ ভাগে ভাগ হয়: পীশোন (হবীলা দেশের চারপাশ দিয়ে), গীহোন (কূশ দেশের চারপাশে, হতে পারে নীল নদী), হিদ্দেকল (অশূর দেশের পূর্ব দিক দিয়ে, Tigris) ও ফরাৎ (Euphrates)। যদিও এই তথ্য আধুনিক ভূগোলের সাথে সম্পূর্ণ মেলানো যায় না, তবে খুব পরিষ্কার বুঝা যায় যে এদন বাগান অনেক বড় ছিল (হতে পারে বর্তমানের ইরাক থেকে ইথিওপিয়া পর্যন্ত)!
  • তারা একটি বিরাট বাগানে আছে, তারা ক্ষুধার্ত না এবং একটি গাছ ছাড়া সব গাছ থেকে খেতে পারে।
  • কিন্তু কেন ঈশ্বর এই গাছটি সৃষ্টি করেছেন? গাছটি না থাকলে কি আরো ভাল হত না?
  • গাছটি কিসের জন্য দেওয়া? আমাদের প্রলোভিত করার জন্য? আমাদের পরীক্ষা করার জন্য? আমাদের ফাঁদে ফেলার জন্য? আমাদের বিদ্রোহী হৃদয় প্রকাশিত করার জন্য? আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বুঝানোর জন্য? ঈশ্বর চান না আদম-হবা পাপ করুক, কিন্তু গাছটি ঠিকই উপস্থিত। কেন?
  • চিন্তা করুন: পানি কি ভাল? আগুন কি ভাল? যৌন সম্পর্ক কি ভাল?… এগুলির উত্তর নির্ভর করে: কোন সময়ে, কোন পরিমাণে, কিভাবে, কার সাথে, ইত্যাদি।
  • একটি কলম দিয়ে চাইলে হয়তো একজনকে মেরে ফেলা যায়। তাই আমরা কি সব কলম নিষিদ্ধ করব?
  • আসলে দেখা যায় যে একটি বাস্তব পৃথিবীতে যে কোনো কিছুর একটি উপযুক্ত ও উপকারী ব্যবহার আছে, কিন্তু একটি ভুল বা মন্দ ব্যবহারও আছে। সব কিছু নিষেধ করা মানে বাস্তব পৃথিবীতে কিছুই করা সম্ভব নয়।
  • আমরা কি চাই? আমরা একটি প্রলোভন-মুক্ত, ঝুঁকি-মুক্ত, দায়িত্ব-মুক্ত, দায়বদ্ধতা-মুক্ত পৃথিবী চায়, যেখানে পাপ করা সম্ভব না। আমরা বলি: গাছ না থাকলে ভাল হোত।
  • কিন্তু যদি আমি একটি বিষয়ের ভুল ব্যবহার নিষেধ করি বা অসম্ভব করি, তবে তার সঠিক ও উপযুক্ত ব্যবহারও সাথে বাতিল করছি। মন্দ যদি অসম্ভব, পাপ যদি অসম্ভব, তবে ভালও অসম্ভব। মন্দ বাতিল করতে গেলে ভালও বাতিল হবে। মন্দ কিছু করা অসম্ভব বাস্তবায়িত করতে গেলে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা বাতিল হয়ে যাবে।
  • গাছটি সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা বুঝায়। ঈশ্বর মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা দিয়েছেন। মানুষের কিছু ঘটানোর ক্ষমতা আছে। যেন মানুষ ভাল কিছু করতে পারে, যেন ভাল সিদ্ধান্ত বলতে কিছু থাকলে মন্দ করার স্বাধীনতার দিতে হবে।
  • যদি আমি পাপ করতে না পারি, তাহলে আমার সামনে বেছে নেয়ার মত কোনো দুইটি পথ নেই। তার মানে, তখন ভালও পছন্দ করতে পারব না।
  • ঝুঁকিমুক্ত পৃথিবী হল একটি অবাস্তব পৃথিবী বা পুতুলের পৃথিবী। এমন পৃথিবীর মানে হচ্ছে, আমরা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা দিচ্ছি, আমরা জীব-জন্তু হতে চাইছি যাদের: চেতনা নেই, নৈতিকতা নেই, সিদ্ধান্ত নেই, দায়বদ্ধতা নেই। গরুদের জগতে স্বাগতম!
  • অথবা এমন পৃথিবী চাই যেখানে মানুষের সিদ্ধান্তের একটি অর্থ আছে, মানুষ আসলে কিছু করতে পারে তা ভাল হোক বা মন্দ হোক। এটাই হচ্ছে সেই অদ্ভূত বিষয়: ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর মঙ্গলময়তা বুঝে স্বাধীন হৃদয়ে তাঁর বাধ্য হই। তিনি জোর করবেন না, আমাদের স্বাধীনতা নষ্টও করবেন না। তাঁর চোখে আমাদের স্বাধীন হৃদয়ে ভালটা পছন্দ করা এমন মূল্যবান বিষয় যে তার জন্য তিনি ঝুঁকি নিতেও রাজি, পাপ করা অসম্ভব না বানাতে রাজি, কষ্টভোগ ও অন্যায় মেনে নিতে রাজি এবং ক্রুশে তার জন্য মারা যেতেও রাজি। ভুলে যাবেন না: তিনিই মূল্য দিয়েছেন। এত অতুলনীয় মূল্য তিনি আমাদের ছোট হৃদয়ের উপর দিয়েছেন … এইটা সে সম্মান, সে ভার, সে ক্ষমতা যা তিনি আমাদের দিয়েছেন। আমরা তাঁর সাথে ঝগড়া করতে পারি যে তাঁর এই ঝুঁকি নেওয়া উচিত (কিন্তু মনে রাখেন: গরু হতে চাইলে ঝগড়াও আর করা যাবে না!) … অথবা আমরা তাঁকে আরাধনা করতে পারি সে অতুলনীয় সম্মান ও গুরুত্ব যা তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন।

শয়তানের উপস্থিতি

  • আদি ৩:১ পদে আমরা সাপকে পাই। সাপ কথা বলতে পারে না। জীব-জন্তু তর্কা-তর্কি করতে পারি না। তাই এটা পরিষ্কার যে এখানে অন্য কিছু উপস্থিত। প্রকাশিত ২০:২ পদে যে সাপ কথা উল্লেখ, তার আরেকটি নাম শয়তান।
  • শয়তান উপস্থিত। তার কথা শুনে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে সে মন্দ: সে ঈশ্বরের বাক্যের বিরুদ্ধে কথা বলে ও মানুষকে প্রলোভনের ফেলতে চেষ্টা করে।
  • কিন্তু কোথা থেকে এই মন্দ বা শয়তান এলো? মন্দ কোথা থেকে আসল? আদি ১ অধ্যায়ে ঈশ্বর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে ভাল বলেছেন। তাই মন্দ কিছু তো থাকার কথা না। ঈশ্বর কি শয়তানকে সৃষ্টি করেছেন? কিন্তু কিভাবে সম্ভব যে একজন ভাল ঈশ্বর মন্দ কিছু সৃষ্টি করেন?
  • মন্দ কোথা থেকে আসল? এই প্রশ্নের ৩টি মৌলিক উত্তর দেওয়া সম্ভব:
  • অদ্বৈতবাদ (Monism, প্রথম ছবি: ঈশ্বর ভাল। ঈশ্বর সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। ঈশ্বর তাহলে শয়তানেরও সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু এভাবে বললে সমস্যা: যিনি মন্দ তৈরি করেন, তিনিও মন্দ।
  • দ্বৈতবাদ (Dualism, দ্বিতীয় ছবি: ঈশ্বর ভাল। তিনি কখনও মন্দ কিছু তৈরি করেন না। তিনি শয়তানকে বানান নি। কিন্তু এভাবে বললে সমস্যা: যদি ঈশ্বর শয়তানকে তৈরি করেন নি, তবে শয়তান এমনি আছে। মানে তার কোনো শুরু নেই, শয়তান ঈশ্বরের মত অনন্ত ও স্বনির্ভর। অর্থাৎ, শয়তান ঈশ্বরের মত। তাই না চাইলেও আমি দুইজন ঈশ্বর পাচ্ছি, একজন ভাল, একজন মন্দ, যারা অনন্তকাল সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, অথবা কোনো রকম মিলিয়ে আছে (য়িংয়াং চিহ্ন, ছবি ডানে)।
  • বাইবেলীয় চিন্তা (তৃতীয় ছবি): ঈশ্বর ভাল। ঈশ্বর সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। এমন কিছু নেই যা তাঁর দ্বারা সৃষ্টি হয় নি। তাই ঈশ্বর শয়তানের সৃষ্টিকর্তা। শয়তান অনন্ত বা সয়ং নয়। ঈশ্বর যখন শয়তান সৃষ্টি করেছিলেন, তাকে চমৎকার ও ভাল অবস্থায় সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর যেমন মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন, একই ভাবে তিনি দূত বা আত্মাদেরও দিয়েছেন। দূতদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গিয়েছে (যাদের শয়তান ও মন্দ আত্মা বলি)। কেউ কেউ ভাল থেকে গেছে (তাদেরকে স্বর্গদূত বলি)। ঈশ্বর মন্দ তৈরি করেন নি, কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং তিনি মন্দ করতে পারা অসম্ভব বানান নি।
  • বাইবেলে ও বিশেষভাবে যীশুর জীবনে আমরা একবারও পাই নি, যে মন্দ আত্মাদের মন ফিরাতে বলা হয়েছে, এই সুযোগ শুধুমাত্র মানুষকে দেওয়া হয়েছে। কেন?
  • কারণ হতে পারে দূত বা আত্মারা ঈশ্বরের পবিত্রতা, মঙ্গলময়তা ও সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে বুঝেই বিদ্রোহ করেছে, তাই তাদের সিদ্ধান্ত স্থায়ী।
  • কিন্তু মানুষ হিসাবে আমাদের পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা আস্তে আস্তে চেতনা দিয়ে, কিছু অভিজ্ঞতা দিয়ে, আমাদের হৃদয়ে তাঁর রব শুনে ঈশ্বর সম্বন্ধে বুঝতে পারি। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দেওয়া আছে এবং অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

শয়তান মানুষকে প্রলোভিত করে

  • আদি ৩:১ পদে শয়তান বলে: “ঈশ্বর কি সত্যি তোমাদের বলেছেন যে, বাগানের সব গাছের ফল তোমরা খেতে পারবে না?”  … শয়তান এখানে ঈশ্বরের বাক্যকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে, বিভ্রান্তিতে ফেলে (সব গাছ নিষিদ্ধ নয়) এবং ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে (বেচারা, সব গাছ নিষিদ্ধ? কি খাবে??)। শয়তান তাদের দৃষ্টি যা অনুমোদিত তা থেকে সরিয়ে যা নিষিদ্ধ তার উপর নিয়ে যায়।
  • আদি ৩:২-৩ পদে হবার উত্তর থেকে বুঝা যায় যে, তিনি ভাল করে জানেন ঈশ্বরের আদেশ কি। তিনি সাথে সাথে শয়তানের বিভ্রান্তি দূর করেন (সব গাছ নিষিদ্ধ না, শুধুমাত্র একটি গাছ নিষিদ্ধ)। তিনি ভাল উত্তর দেন, শুধুমাত্র একটি বিষয়: তিনি ঈশ্বরের কথার সাথে আরও কিছু যোগ দেন: ‘তোমরা তার ফল খাবেও না, ছোঁবেও না’, কিন্তু ঈশ্বর শুধু ফল খেতে মানা করে ছিলেন (আদি ২:১৬-১৭)।
  • এইটা কি সমস্যা? নিয়ম আর একটু কঠোর করলে কি সমস্যা আছে? অনেক বার আমরা ঈশ্বরের আইনের সাথে কিছু যোগ দেই (ফরীশীদের বিষয় দেখুন)।
  • এটা তখনই সমস্যা হিসাবে দাঁড়ায় যখন হবা আদি ৩:৬ পদে ফল ছুঁয়ে পাড়বে, এবং ছোঁয়াতেও যখন কিছু ঘটিনি তখন তিনি তা খাবেন। কিন্তু সব মিলিয়ে বলতে হবে যে হবা ভালই উত্তর দিয়েছেন।
  • আদি ৩:৪-৫ শয়তান বলে: ‘কখনও না, কিছুতেই তোমরা মরবে না।’  শয়তান এখন সরাসরি ঈশ্বরের বাক্যের বিপরীত কথা বলে, এবং ঈশ্বরকে মিথ্যাবাদী বানায়।
  • এই ধরণের দুসাহসের কথা বললে অবশ্যই একটি কুটিল চাল চালতে হবে: ‘ঈশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা সেই গাছের ফল খাবে সেই দিনই তোমাদের চোখ খুলে যাবে। তাতে ভাল-মন্দের জ্ঞান পেয়ে তোমরা ঈশ্বরের মতই হয়ে উঠবে’। আসলে মানুষ ইতিমধ্যে  ‘ঈশ্বরের মত’  বা  ‘ঈশ্বরের প্রতিমুর্তিতে’  (আদি ১:২৭) তৈরি।
  • শয়তান ঈশ্বরকে স্বার্থপরতা দিয়ে চালিত হিসাবে দেখায়: ঈশ্বর মানুষের ভাল বা উন্নতি বা জ্ঞান বৃদ্ধি চান না, তিনি তাদের নিচু রাখতে চান যেন তারা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে না দাঁড়ায়।
  • এই পর্যন্ত আদম ও হবা ঈশ্বর কাছ থেকে কি ধরণের ব্যবহার দেখেছেন? ঈশ্বর তাদের সৃষ্টি করেছেন, আশীর্বাদ করেছেন ও কর্তৃত্ব দিয়েছেন। ঈশ্বরের চেয়ে শয়তানকে বিশ্বাস করার তাদের কোনো কারণ নেই।
  • কেন তারা বিষয়টি ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসেন নি? ‘ঈশ্বর, কেন এই গাছ নিষিদ্ধ? আমাদের কি ভাল-মন্দ বুঝা প্রয়োজন না? গাছের ফলের মধ্যদিয়ে না বুঝালে আর কি উপায়ে ভাল-মন্দ বুঝতে পারব? তুমি কি আমাদের শেখাবে?
  • শয়তানের কৌশল বা প্রলোভনগুলি এখনও একই ধরণের: বিভ্রান্তিকর, অর্ধ-সত্য, ঈশ্বরের বাক্য ও ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্ট করা, মিথ্যা প্রতিজ্ঞা দেওয়া, আমাদের আকাঙ্খাগুলির ভুল ব্যবহার ও আমাদের মিথ্যা বুঝিয়ে রাজি করানো, যে নিজের জন্য ব্যবস্থা না করলে ঈশ্বর কিছু করবেন না।
  • মানুষের যা এখানে করা উচিত ছিল তা হল ঈশ্বরের বাক্য ও মঙ্গলময়তা স্থির থাকা, তাঁর কাছে ফিরে যাওয়া। একটু বিশ্বাস ও একটু বাধ্যতা। আজ পর্যন্ত ঈশ্বর এটাই আমাদের থেকে আশা করছেন।

পাপ

  • আদি ৩:৬ পদে হবা কিছু ফল পাড়েন, খান ও আদমকে দেন, যিনিও খান।
  • খেয়াল করুন শয়তানের কোনো ক্ষমতা নেই যে ফলটি তাদের মুখে ঢুকিয়ে দিতে বা গিলাতে। তার মাত্র ক্ষমতা হল ‘কথা বলা’ বা ‘প্রতারণা করা’। আমরা শুধুমাত্র যখন ঈশ্বরের চেয়ে শয়তানকে বিশ্বাস করি তখন আমরা শয়তানকে ক্ষমতা দেই। তা ছাড়া তার কোনো ক্ষমতা নেই।
  • অনেক সময় আমাদের মনে এধরণের ছবি থাকে যে: আদম অন্য জায়গায় ছিল। মহিলা (হবা) পাপে পড়ার পরে তার কাছে ফল নিয়ে যায় এবং তাকে সেগুলি খেতে রাজি করায়, কিন্তু আদম জানে না সে কি খায়।
  • এটা থেকে শিক্ষা নেওয়া হয় যে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে সহজে প্রলোভনে পড়ে, সে পুরুষদের চেয়ে বেশি পাপী এবং মহিলারা পুরুষদের সংকটে ফেলে।
  • এরকম দৃষ্টির সমর্থনে আদি ৩:১৭ পদ উদ্ধৃতি করা হয়: আদমকে ধমক দেওয়া হয় যে সে স্ত্রীর কথা শুনেছিল।
  • কিন্তু এধরণের দৃষ্টির বিরুদ্ধে বলা যায়: আদি ৩:৬ পদে সাধারণ ও কেরী অনুবাদে দেওয়া আছে ‘সেই ফল তিনি তাঁর স্বামীকেও দিলেন এবং তাঁর স্বামীও তা খেলেন’ আসলে অনুবাদে একটি বাক্য বাদ দেওয়া হয়েছে, যা ইব্রীয়তে আছে এবং যা অন্য বাংলা অনুবাদগুলিতে  (জুবিলী, WBTC) ঠিকই আছে: ‘সেই ফল তিনি তাঁর স্বামীকেও দিলেন যিনি তার সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁর স্বামীও তা খেলেন’। আসলে যখন সাপ মহিলার সাথে কথা বলে আদম তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি আপত্তিও উঠায় না, প্রতিরোধও করে না বরং স্ত্রীর সাথে যোগ দিয়ে ফল খায়।
  • আদি ৩:৯-‌১৩ পদে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে ঈশ্বর পুরুষ ও মহিলা উভয়কে দোষী হিসাবে ধরেন। আসলে তিনি আগে পুরুষের সাথে কথা বলেন।
  • এক মিনিট একটু চিন্তা করুন: আদম যদি আসলে কিছু না জেনে সেই গাছের ফল খেতেন, তার জন্য কি তার পাপ হত? পাপ মানে কি? – পাপ মানে হচ্ছে জেনে শুনে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাওয়া। আদম না জেনে খেলে তার হৃদয়ে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো চেতনা থাকত না, তাই তা পাপ হত না।
  • তাই এই গল্প পাপের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার পার্থক্য হিসাবে আসে না, বরং দেখায় যে দুইজনই মিথ্যা পছন্দ করেছে, দুইজনই ফল খেয়েছে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গেছে এবং ঈশ্বর দুইজনকেই দোষী হিসাবে ধরেন।

তাই আসল ছবি এখানে:

পাপের পরে যা ঘটে

  • আদি ৩:৭-১৩ পদে আমরা পাপের ফলাফল দেখি।
  • আদি ৩:৭  ‘তাদের চোখ খুলে গেল’ … এবং আরো বুঝা যায় যে তারা মারা গেল না। তাহলে কি শয়তানের কথা ঠিক ছিল (আদি ৩:৫) এবং ঈশ্বর মিথ্যা হুমকি দিয়ে ছিলেন (আদি ২:১৬)?? আমাদের আরও সাবধাণভাবে বিষয়গুলি দেখতে হবে:
  • আদি ৩:৭ পদ অনুসারে  ‘তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা উলংগ অবস্থায় আছেন।’  পাপের ফলে তারা এখন জানে যে তারা  ‘উলংগ’ । তার মানে কি?
  • আদি ২:২৫ পদে যখন এখনও সব কিছু সুঅবস্থায় আছে আমরা এই বর্ণনা পায়:  ‘তখন আদম এবং তাঁর স্ত্রী উলংগ থাকতেন, কিন্তু তাতে তাঁদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না’ । পুরান পাপী আমরা যখন এই ধরণের কথা শুনি মনে করি যে তারা একটু বেশিই সহজ-সরল, মুর্খ, নির্দোষ, নিষ্পাপ, ‘কিছুই বুঝে না’, বাচ্চার মত ছিল। কিন্তু সাবধান!
  • এই কথার অর্থ আসলে কি? কেন তাদের কোনো লজ্জাবোধ ছিল না? – কারণ তাদের লজ্জা করার মত কি ছিল, বলেন? তারা স্বাধীন ও সৎ, তারা খারাপ কিছু করে নি, তাদের লজ্জা করার কিছু নেই। তারা তাদের শরীর নিয়ে লজ্জা করবে? কেন করবে, ঈশ্বরই তো শরীর দিয়েছেন!
  • এইটা নিষ্পাপের সৌন্দর্য্যতা: কোনো লজ্জা নেই, কোনো ভয় নেই, লুকানোর কিছু নেই, ভান করার কিছু নেই। শুধুমাত্র খোলামেলা সম্পর্ক, সৎ ও স্বচ্ছ সম্পর্ক। আসলে আমরা সবাই এরকম সম্পর্কের জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষী: এমন একটি সম্পর্ক যেখানে আমি যেমন আমাকে তেমনি গ্রহণ করা হয়, আমি যেমন আমাকে সেই অবস্থায়ই ভালবাসা হয়, যেখানে আমি ‘আমি’ হতে পারি।
  • আমরা এরকম সম্পর্ক পাওয়ার জন্য বিয়ে করি (তবুও অনেক বার তা পাই না)। আমরা তা আসলে পাই যীশুতে: যীশু আমাদের আমরা যেমন আমাদের তেমনই গ্রহণ করেন, আমাদের শুচি করেন, আামাদের লজ্জা ধুঁয়ে ফেলেন, আমাদের একটি নতুন শুরুর সুযোগ দেন যেন আমরা আবার সৎ, নম্র ও স্বাধীন হতে পারি।
  • পাপের কারণে লজ্জা। পাপের কারণে ভয়। পাপের কারণে লুকানো ও ঢেকে দেওয়া। লজ্জা মানে: নিজের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া: নিজেকে নিয়ে আর শান্তি বোধ করি না, নিজেকে নিয়ে আর আরাম লাগে না, নিজেকে নিয়ে আর ভাল লাগে না। তাই নিজেকে লুকাই, নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপনা করি, মুখশ পড়ি, ভান করি। কারণ যদি সৎ হই, যদি লোকে আসলে জানত আমি কে, তাহলে আমাকে অগ্রাহ্য করত। তাই আমি লুকাই, আমি প্রতিদ্বন্দ্বিত করি, আমি তুলনা করি, আমি অন্যদের তুচ্ছ করা দ্বারা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা আত্ম-বিশ্বাস, সাহস ও শান্তি হারিয়েছি। আমরা আজ পর্যন্ত এতে ভুগচ্ছি।
  • আদি ৩:৭ পদে আছে ‘তাদের চোখ খুলে গেল’ , এর অর্থ কি? তাদের জ্ঞান বেড়ে গেল। তাদের কি ধরণের জ্ঞান বেড়ে গেল? – তারা এখন জানে যা আগে জানত না, লজ্জা, ভয়, চেতনার পীড়া। প্রত্যেক পাপ আমাদের এক ধরণের ‘অভিজ্ঞতা’ (জ্ঞান) দেয়, কিন্তু এই সব জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ভাল না।
  • আদি ৩:৮-১১ পদে আমরা দেখি যে তারা এখন ঈশ্বরকে ভয় পায়, তাঁর সঙ্গে আর সহভাগিতা চায় না, অথবা নিজেদের আর যোগ্য মনের করে না। পাপের কারণে তারা এখন ঈশ্বরকে এড়িয়ে যায়। তাতে বুঝা যায় যে ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। এটা হল ‘আত্মিক মৃত্যুর’ সংজ্ঞা। তারা মারা গেল, আত্মিক দিক দিয়ে, যেমন ঈশ্বর বলে ছিলেন।
  • আর একটি বিষয়: সর্বজান্তা ঈশ্বর কাছ থেকে গাছের পিছনে নিজেকে লুকানো কি আসলে বুদ্ধিমান কাজ? তাদের জ্ঞান কি আসলে বেড়ে গেছে? একদিকে হ্যাঁ, কিন্তু অন্যদিকে তাদের জ্ঞান কমে গেছে। তারা মনে করে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে, তারা পাপের অজুহাত দেখায়, পাপের কারণ ব্যাখ্যা করতে শুরু করবে ইত্যাদি। যদি আমরা অন্ধকারকে পছন্দ কি, তবে আমরা পাপের চেতনা কম পাব। উদাহরণ: একজন মাতাল লোক আসলে মনে করে যে আর একটু মদ খাওয়া যায়, ক্ষতি হবে না। আদম হবার প্রজ্ঞার পরিচয় দিত যদি তারা নিজে থেকে এগিয়ে এসে পাপ স্বীকার করত ও মাফ চাইত, কিন্তু তা তারা করে না।
  • আদি ৩:৯  পদে থেকে বুঝা যায় যে মানুষ নয়, ঈশ্বরই তাদের পেছনে লেগে থাকেন ও যোগাযোগ শুরু করেন:  ‘তুমি কোথায়?’  এর অর্থ এই নয় যে ঈশ্বর আসলে জানেন না তারা কোন গাছের পিছনে আছে! এই প্রশ্ন হল চেতনাদায়ক প্রশ্ন: তুমি কোথায়? এখন তোমার কেমন লাগছে? কেন তুমি ওখানে? পাপ তোমাকে কোথায় নিয়ে গেছে দেখতো?
  • আদি ৩:১০  পদে আদম উত্তর দেয়, কিন্তু সে শুধুমাত্র ‘লক্ষ্যগুলি’ বা ‘পাপের ফলাফলগুলি’ স্বীকার করে, আসল বিষয় স্বীকার করে না। সে কি এখনও বুঝে না কোন কারণে কি হয়েছে? অথবা এটা নিজেকে লুকানোর আর একটি পদ্ধতি?
  • আদি ৩:১১ আদম ও হবা এগিয়ে আসে না বা বিষয়টি বুঝতে বা স্বীকার করতে রাজি না। বরং ঈশ্বর তাদের আসল কারণে ফিরিয়ে নিয়ে যান:  ‘যে গাছের ফল খেতে আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম তা কি তুমি খেয়েছ?’  ঈশ্বর বুঝান কোন কারণে কি হয়েছে।
  • কেন ঈশ্বর এমন করেছেন? কারণ ঈশ্বর চান যেন তারা সত্য বুঝে (যদিও শয়তান আদি ৩:৫ পদে ঈশ্বর সম্বন্ধে বিপরীত দাবী করেছেন)। ঈশ্বর এমন করেছেন এই আশায় যেন তারা নিজেরা এগিয়ে আসে, পাপ স্বীকার করে, দায়িত্ব নেয় , মাফ চায় ও অনুতপ্ত হয়। চেতনার পীড়া আসলে ঈশ্বরের দয়া: তিনি আমাদের অনুতপ্ত হতে ডাকছেন।
  • আদি ৩:১২ পদে আদম উত্তর দেন: ‘যে স্ত্রীলোককে তুমি আমার সংগিনী হিসাবে দিয়েছ সে-ই আমাকে ঐ গাছের ফল দিয়েছে আর আমি তা খেয়েছি।’  আদম যা হয়েছে তা স্বীকার করে কিন্তু শুধুমাত্র ইতিমধ্যে যতদূর বলা হয়েছে সে পর্যন্তই। সে কোনো দায়িত্ব নেয় না, মাফও চায় না বরং সে হবাকে দোষ দেয়। সে নিজেকে ‘রক্ষা করার জন্য’ এখন স্ত্রীকে ত্যাগ করতে রাজি, এটার মধ্য দিয়ে সে তার স্বার্থপরতা ও দায়িত্বহীনতা প্রকাশ করে। তাতে বুঝা যায়: মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে।
  • শুধু তাই নয়, আদম আসলে ঈশ্বরকে দোষ দেয়: ‘যে স্ত্রী তুমি আমাকে দিয়েছে’। এইটা কি প্রজ্ঞার কাজ? আবারও বুঝা যায় যে জ্ঞান অনেক ক্ষেত্রে কমেছে।
  • আদি ৩:১৩  পদে ঈশ্বর একইভাবে হবার সাথে কথা বলেন। হবা তার স্বামীর চেয়ে ভাল উত্তর দেয় নি:  ‘ঐ সাপ আমাকে ছলনা করে ভুলিয়েছে আর সেইজন্য আমি তা খেয়েছি’ । হবা সাপকে বা পরিস্থিতিকে দোষ দেয় (এবং তা দ্বারা ঈশ্বরকে দোষ দেন, যিনি এই পরিস্থিতি ঘটতে দিয়েছেন)। হবাও কোনো দায়িত্ব নেয় না, মাফও চায় না।
  • ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া, শয়তানকে দোষ দেওয়া, মানুষকে দোষ দেওয়া বা পরিস্থিতিতে দোষ দেওয়া, এগুলির সব অর্থ একই: এগুলি বলে আসলে আমরা ঈশ্বরকে দোষ দেই, যিনি এইগুলি ঘটতে দেন। আমাদের সব তিক্ততা আসলে ঈশ্বরের উপরে। আসল বিষয় হচ্ছে: আমরা দায়িত্ব নেই না, আমরা নম্র হই না, আমরা মাফ চাই না, তাই আমরা নিজের জন্য অনুতাপের দরজা বন্ধ করে দেই। ক্ষমা চাইলে ঈশ্বর ক্ষমা করেন, কিন্তু আমরা ক্ষমা চাই না।

পাপের ফলাফলগুলি

  • আদি ৩:১৭-১৯  আদমের কাছে ঈশ্বরের কথা: তার কাজ এখন কঠোর পরিশ্রমের কাজ হবে, বেঁচে থাকা এখন কঠিন বিষয় হবে। তাতে বুঝা যায়: প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে।
  • আদি ৩:১৭  ঈশ্বর মানুষকে অভিশাপ দেন না, শয়তানকে এবং মাটিকে অভিশাপ দেওয়া হয়। অভিশাপ মানে কি? তা কি ঈশ্বরের বিশেষ শাস্তি? অথবা তা হল পাপের কারণে স্বাভাবিক ফলাফলের বর্ণনা?
  • আদি ৩:১৯  পদে আমরাও শারীরিক মৃত্যুর ঘোষণা পাই:  ‘যে মাটি থেকে তোমাকে তৈরী করা হয়েছিল সেই মাটিতে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তোমাকে খেতে হবে। তোমার এই ধুলার দেহ ধুলাতেই ফিরে যাবে’ । মৃত্যু ঈশ্বরের সৃষ্টির অংশ ছিল না, কিন্তু এখন পাপের ফলাফল হিসাবে মৃত্যু বাস্ততার অংশ হয়েছে। নতুন নিয়মে পৌল একই কথা বলেন  ‘পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু ‘  (রোমীয় ৬:২৩)। এখন শারীরিক সমস্যা, দুর্বলতা, রোগ, দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, অভাব ইত্যাদি ঘটা শুরু করবে।
  • আদি ৩:১৬  হবার কাছে ঈশ্বরের কথা: সন্তান প্রসব এখন হবে বেদনাপূর্ণ কাজ। তিনি আরো বলেন: ‘স্বামীর জন্য তোমার খুব কামনা হবে, আর সে তোমার উপর কর্তৃত্ব করবে।’  প্রথমবার আমরা অমিল বা পার্থক্য বা উঁচু-নীচুর চিন্তা পেলাম।
  • এই পদের দুইটি ব্যাখ্যা করা সম্ভব:
    • হয়তো এটা আগে এমন ছিল না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের আদেশ ও ইচ্ছায় এমন হয়েছে: স্বামী এখন স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব করুক। একটি আদর্শ খ্রিষ্টান পরিবার হল এমন পরিবার যেখানে স্বামী রাজত্ব করেন এবং স্ত্রী সব ক্ষেত্রে তার বশীভুত থাকেন।
    • এটা পাপের ফলাফল হিসাবে যা ঘটবে তার বাস্তব বর্ণনা কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছা এমন নয়। হ্যাঁ, পাপ আক্রান্ত পৃথিবীতে এখন স্ত্রীর উপরে স্বামীর দমন দেখা যাবে, কিন্তু তা ভাল না। একটি আদর্শ খ্রিষ্টান পরিবার হল এমন পরিবার যেখানে উঁচু-নীচু ও দমন কম দেখা যাবে বরং আদি ১ অধ্যায়ে যেমন দেখা যায়, ত্রিত্ব ঈশ্বরের মত সম্পর্ক যেখানে থাকবে।
  • বিভিন্ন খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। যারা মনে করেন যে হবার দোষ বেশি ছিল তারা সাধারণতা ১ নম্বর ব্যাখ্যা দেন এবং তারা বলেন, স্ত্রী বেশি পাপ করেছে তাই তাকে এখন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আদম সুবিধা পায়, হবা শাস্তি পায়। ঈশ্বর এখন উঁচু-নীচু কাঠামো চান।
  • কিন্তু যারা ২ নম্বর ব্যাখ্যা ঠিক মনে করেন তারা বলে: ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে কি সম্পর্ক পরিবর্তীত হয়েছে? ঈশ্বরের ইচ্ছা কি পরিবর্তন হয়েছে? না। যীশু এসেছেন পাপ ও পাপের ফলাফল তুলে নিতে। তাই তার উদ্ধারের একটি ফল হবে যে আমাদের বিবাহ সম্পর্ক আরো ভাল হয়ে যাওয়া।
  • এর সমর্থনে চিন্তা করেন: যখন মার্ক ১০:১-৯ পদে ফরীশীরা ঈশ্বরের কাছে আসে ও তাঁর সমর্থন চান যে মোশির আইন অনুসারে তাদের স্ত্রীদের ত্যাগ করার অধিকার আছে। যীশু তাদের সাথে একমত হন না বরং তাদের  ‘কঠিন মন’  নিয়ে দোষ ধরেন। তিনি তাদের আদি ২:২৪ পদে নিয়ে যান (পাপের আগের অবস্থায়! ঈশ্বর যা আসলে চেয়েছেন তা বুঝাতে):  ‘সৃষ্টির আরম্ভে…’। যীশু তাই পাপ ও কঠিন মন বা হৃদয় বাস্তব হিসাবে স্বীকার করেন। কিন্তু যদি আমরা ঈশ্বর আসলে কি চেয়েছেন বুঝতে চাই, তবে আমাদের আদি ১ অধ্যায় পড়তে হবে, আদি ৩ অধ্যায় না।
  • আদি ৩:১৫  ‘আমি তোমার ও স্ত্রীলোকের মধ্যে এবং তোমার বংশ ও স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আসা বংশের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করব। সেই বংশের একজন তোমার মাথা পিষে দেবে আর তুমি তার পায়ের গোড়ালীতে ছোবল মারবে।’
  • ঈশ্বর মহিলার বংশ, মানে মানুষের বংশে একটি উদ্ধারকর্তা দিবেন যিনি শয়তানকে পরাজিত করবেন। এটাই হল বাইবেলে সর্বপ্রথম যীশু বা মশীহ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী। ‘তার পায়ের গোড়ালীতে ছোবল মারবে’  বুঝায় যে যীশুর শয়তানের হাতে ক্রুশে অনেক কষ্টভোগ করবেন। ‘তোমার মাথা পিষে দেবে’  মানে যীশু শয়তানকে পরাজিত করবেন।
  • এটা দিয়ে ঈশ্বরের দয়ার হৃদয় প্রকাশিত হয়েছে: মানুষ ঈশ্বরকে অকারণ অবিশ্বাস করেছে, তাঁর মঙ্গলময়তা ও বাক্য নিয়ে সন্দেহ করেছে, তারা অবাধ্য হয়েছে ও সব প্রচেষ্টার পরেও মাফ চায় নি, তারপরেও ঈশ্বর একজন উদ্ধারকর্তা দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে পাপ ও পাপের ফলাফল একদিন সমাধান করা হবে।
  • ঈশ্বর তাদের আর একটি ছবি দেখিয়েছেন: আদি ৩:২১  ‘আদম ও তাঁর স্ত্রীর জন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর পশুর চামড়ার পোশাক তৈরী করে তাঁদের পরিয়ে দিলেন।’  এখানে আমরা ইতিহাসের প্রথম মৃত্যু বা রক্তপাত পাই। চামড়ার কাপড় বানাতে গেলে একটি পশু মারতে হবে। রক্তপাত ছাড়া পাপের লজ্জা ঢেকে দেওয়া সম্ভব না। আবারও:  ‘পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু’ (রোমীয় ৬:২৩)।  ‘রক্তপাত না হলে পাপের ক্ষমা হয় না’  (ইব্রীয় ৯:২২)। এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলি তাদের চোখের সামনে তুলে ধরা হয়। এই সত্যগুলি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে যখন ঈশ্বর তার উৎসর্গ পদ্ধতি স্থাপন করবেন (লেবীয় ১-৭)। কিন্তু তার পূ্র্ণতা শুধুমাত্র তখনই আসবে যখন যীশু ক্রুশে মারা যাবেন।

সারাংশ

  • পাপের কারণে …
    1. নিজের সাথে সম্পর্ক        ভেঙ্গে যায়  >  লজ্জা, ভয়, লুকানো, ভান, অশান্তি, আত্ম-সন্দেহ, হতাশা, মানসিক রোগ, আত্ম-ঘৃণা, আত্ম-যন্ত্রণা, আত্ম-হত্যা।
    2. ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক       ভেঙ্গে যায়  >  এইটা হল ‘আত্মিক মৃত্যুর’ সংজ্ঞা। আত্মিক মৃত্যু সাথা সাথে ঘটে। > চেতনা অগ্রাহ্য, মিথ্যা গ্রহণ, প্রতালনা, দেবতাপূজা।
    3. অন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক  ভেঙ্গে যায়  >  সার্থপরতা, আঘাত, দমন, অত্যাচার, হিংস্রতা।
    4. প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক       ভেঙ্গে যায়  >  পৃথিবীতে পরিবর্তন, অনুর্বর, অভাব, রোগ, মৃত্যু, দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, ধ্বংস।
  • কিন্তু ঠিক একইভাবে যীশুর পরিত্রাণ সব ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে (এবং আরো করবে):
    1. ঈশ্বরের সাথে    … আমাদের ক্ষমা, গ্রহণ, পরিত্রাণ, পুত্রত্ব ও উত্তরাধিকার দেওয়া হয়েছে।
    2. নিজের সাথে     … যীশু লজ্জা, আত্মা-সন্দেহ, অশান্তি, তুলনা, হিংসা, প্রতিদ্বান্দ্বিতা তুলে নেন ও সুস্থ করেন।
    3. অন্যদের সাথে   … যীশু শত্রুতা তুলে নিয়েছেন বলে আমরা পরস্পরের ভাই; পরস্পরকে প্রেম, সম্মান ও সেবা করতে সমর্পিত।
    4. প্রকৃতির সাথে    … আমাদের আবার পৃথিবীর দেখাশুনাকারী ও উন্নয়নকারী হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
  • রোমীয় ৮:১৭-২৩  সৃষ্টি মানুষদের অধীনের দেওয়া হয়েছে বলে (আদি ১:২৮) যখন মানুষ পাপে পড়েছে, পৃথিবীকেও ক্ষয়ের পথে পাঠানো হয়েছে। যখন খ্রিষ্টেতে মানুষ সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার হবে, তখন সাথে পৃথিবীকেও সম্পূর্ণ নতুন করা হবে।
পাপের ফলাফল বুঝানোর জন্য একটি ব্যবহারিক উদাহরণ
  • ধরুন: রূবেল নামে এক গ্রাম্য নেতার ছেলে ও তার কয়েকজন বন্ধু আপনার ছোট বোনকে ধর্ষণ করেছে। ফলে আপনার ছোট বোনের জীবনে কি কি ফলাফল আসবে? আপনার উপরে কি কি ফলাফল আসবে? আপনার বাবার উপরে কি কি ফলাফল আসবে? আপনার সবচেয়ে ছোট বোনের উপরে কি কি ফলাফল আসবে?
  • এখন গ্রামটিতে একদল খ্রিষ্টান প্রচারক আসল সুসমাচার দেওয়া জন্য। তারা প্রচার করল যীশু যেকোনো পাপ ক্ষমা করতে পারেন। প্রচার শুনে একজন যুবক সামনে আসল ও কান্না করে স্বীকার করল যে সে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। তার নাম রূবেল।
  • ঈশ্বর তাকে কি ক্ষমা করবেন? সে কি স্বর্গে যাবে? আপনার তা কেমন লাগবে? আপনার পরিবারের উপরে থেকে কি ধর্ষণের ফলাফল চলে যাবে?
  • পাপের জন্য যীশু ক্রুশে মারা গেছেন: ক্রুশে ঈশ্বরের ন্যায্যতা (অপরাধের জন্য শাস্তি) এবং ঈশ্বরের দয়া (পাপীর জন্য ক্ষমা) উভই মিটেছে।
  • যদি প্রচার দল রূবেলকে ভালভাবে শিষ্যত্ব করে, তবে তারা তাকে কি করতে অনুপ্রাণিত করতেন?
    • ক্ষমা চাইতে।
    • তার আচরণের ও তার ফলাফলের জন্য দায়িত্ব নিতে।
    • যতদুর সম্ভব ক্ষতিপূরণ দিতে।
    • নিজকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে যেন তাকে দেশের আইন অনুসারে শাস্তি দেওয়া হয়।