প্রথমদিকে ‘অধিকার’ শব্দ নিয়ে অধ্যয়ন থেকে উপসংহার হিসাবে কিছু নীতিমালা দেওয়া হয়েছে (১-৪ নং পৃষ্ঠা), পরবর্তীতে আসল অধ্যয়নটি দেখানো হয়েছে (৫-৮ নং পৃষ্ঠা):
কিছু ভিত্তিক নীতিমালা
- একনের অধিকার আছে, তার অর্থ কি? সংজ্ঞা: আইন অনুসারে যদি একজনকে সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা দান করা হয়েছে, অর্থাৎ যদি সে আইন অনুসারে রাজত্ব করে, তবে তাঁর অধিকার আছে।
- অধিকার এবং ক্ষমতা ভিন্ন বিষয়। ক্ষমতা মানে আমার শক্তি, স্বামর্থ, এমন ভাব বা প্রভাবে আছে যাতে আমি লোকদেরকে আমার ইচ্ছায় রাজি করাতে পারে, প্রয়োজন হলে হিংস্রতা দ্বারা। ক্ষমতা ও আইনের কোন সম্পর্ক নেই। ক্ষমতা হল ‘পারার বিষয়’, অধিকার হল ন্যায্যতা, উপযুক্ততা বা আইনের বিষয়।
- ঈশ্বর সমস্ত অধিকারের অধীকারী। তিনিই সমস্ত অধিকারের উৎস।
- অধিকার সব সময় একজনকে দেওয়া হয়। অধিকার ধরা যায় না, দখল করা যায় না, জোর করে আদায় করা যায় না। যদি একজন অধিকার দাবি করে তবে সে আসলে ক্ষমতা দখল করেছে। ক্ষমতা দখল করা যায়। অধিকার দখল করা যায় না।
- মানুষদের হাতে বিভিন্ন পরিমাণে বিভিন্ন ধরণের অধিকার দান করতে ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিছু অধিকার তিনি মানুষকে ব্যক্তি হিসাবে দিয়েছেন, কিছু অধিকার তিনি মানব প্রতিষ্ঠানে দিয়েছেন।

- ভিত্তিকভাবে ঈশ্বর চারটি জায়গায় অধিকার দান করেছেন:
- ব্যক্তি নিজের উপরে ব্যক্তি অধিকার
- পরিবার সন্তানদের উপরে মা-বাবাকে অধিকার
- সরকার লোকদের দ্বারা নিযুক্ত প্রতিনিধিদের কাছে অধিকার
- মণ্ডলী সদস্যদের উপরে আত্মিক নেতাদের অধিকার
- একজনের অধিকার আছে কিন্তু তার কোন ক্ষমতা নেই, এমন হতে পারে। একজনের ক্ষমতা আছে কিন্তু তার কোন অধিকার নেই, তাও হতে পারে।
- ঈশ্বরীয় ন্যায্যতা ও উপযুক্ত আইন-শৃঙ্খলা ঘটে যখন প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান তাদের অধিকার সত্যিকারভাবে ব্যবহার করে (সঠিক লোক সঠিক প্রতিষ্ঠা হিসাবে সঠিক বিষয়ের উপরে সিদ্ধান্ত নেয়)।
- মানুষকে দেওয়া অধিকারের সব সময় একটি সীমানা আছে।
- ৪টি মানব প্রতিষ্ঠা বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পরের উপরে প্রভাব ফেলে এবং একটি অন্যটির জন্য পরিপূরক, ভারসাম্য ও সংশোধন।
ঈশ্বরের অধিকার প্রাপ্ত ৪টি প্রতিষ্ঠা
১) একজন ব্যক্তিকে নিজের উপর অধিকার দেওয়া হয়েছে আদি ১-২
- এই বিষয়টি এমন ভিত্তিক বিষয় যে, মানুষ হিসাবে আমরা তা নিয়ে বেশি সচেতন নই।
- ঈশ্বর মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে, তাঁর সাদৃশ্যে, তাঁর মত সৃষ্টি করেছেন (আদি ১:২৬)। ঈশ্বর যেমন ব্যক্তি, ঠিক তেমনি আমরাও ব্যক্তি, অর্থাৎ ঈশ্বরের যেমন সচেতনতা, মন, আবেগ, ইচ্ছার শক্তি, আচরণ করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে, ঠিক তোমনি এইসব মানুষেরও আছে।
- মানুষ হিসাবে আমরা সব কিছুর উপর যে সার্বভৌম, এমন নয়। কিন্তু আামাদের কিছু না কিছুর উপর ক্ষমতা আছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের নিজের উপর ক্ষমতা বা অধিকার, অর্থাৎ সার্বভৌমতা আছে।
- নিজের উপর মানুষের ক্ষমতা বাস্তব বিষয়। ঈশ্বর তাঁর নিজের সার্বভৌমতা সীমিত করে রেখে মানুষকে উপর সার্বভৌম হতে দিয়েছেন। ঈশ্বর আমাদের নিয়ন্ত্রন করতে পারতেন, অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকটি চিন্তা, আবেগ, আকাঙ্ক্ষা, সিদ্ধান্ত ও আচরণ নির্ধারণ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা-ই করেন নি। তিনি আমাদের সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করবেন না, তিনি আমাদের আচরণের ফলাফলও মুছে ফেলবেন না। ঈশ্বর মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আচারণ করতে সক্ষম, আমরা এমন কি ঈশ্বরের নিজেই অগ্রাহ্য করতে পারি। এই ক্ষমতা কোথা থেকে আসলে? ঈশ্বর তা দিয়েছেন। ঈশ্বর আমাদের জোর করে বাধ্য করাবেন না। যদি মানুষ ঈশ্বরকে না চায় তবে চিরকালের জন্য তাকে ঈশ্বরের সঙ্গে চিরকাল থাকতে হবে, এমন নয়। ঈশ্বর থেকে আলাদা হওয়া যায়।
- মানুষের ইচ্ছার শক্তি ও সার্বভৌমতা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। যদি একজন লোক আমার শ্রবণে একটি কথা বলে, সেই কথা আমার মনে ‘নিজের চিন্তা যেমন’, তেমন চলে আসে না। তার সেই কথা ‘বাইরে থেকে আসা সংবাদ’ হিসাবে আমার মনে ঢুকে। জিজ্ঞাসা করলে ‘সে কি বলেছেন’ আমি তা পুনরুক্তি করে বলতে পারি, কিন্তু আমি এই কথার সাথে একমত, তা ভিন্ন প্রশ্ন। আমি হয়তো তার কথা গ্রহণ করি (একমত হই, বিশ্বাস করি, গুরুত্ব দেই) অথবা তার কথাকে সন্দেজনক লেবেল লাাগই অথবা তা অগ্রাহ্য করি (অমত বই, বিশ্বাস করি না, মেনে নেই না)। উদাহরণস্বরূপ: যদি খ্রিষ্টানরা লাউডস্পিকারে সুসমাচার সব জায়গায় প্রকাশিত করে তবে সবাই কি বিশ্বাসী হয়ে যায়? অথবা মসজিদ থেকে আজান শুনে কি সবাই আল্লাহভক্ত মুসলিম হয়ে যায? – এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত চিন্তা দেওয়া হয়েছে “যোগাযোগ ১২ – ভিত্তিক চিন্তা”।
- এই বিষয় আমরা যীশুর জীবনেও দেখি: তিনি সুসমাচার প্রচার করে, সত্য ঘোষণা করে, লোকদের সাথে আলোচনা করেন, পিতার ভালবাসা দেখান, আশ্চর্যকাজ দেখান, চমৎকারভাবে শিক্ষা দেন এবং যুক্তি ভিত্তিক প্রমাণ দেখান … কিন্তু সবাই কি বিশ্বাস করে? না, প্রকৃতপক্ষে অনেক লোক আছে যারা সব কিছুর পরেও তাঁকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে।
- মানুষের জন্য তাই হল আসল কাজ এবং প্রাথমিক চ্যালেজ্ঞ, নিজের উপর সঠিকভাবে রাজত্ব করা (ইংরেজিতে: আত্ম-রাজত্ব, self-government)। এটাই হল আসলে ‘যুদ্ধক্ষেত’। নিজের উপর আমাদের অধিকার বা সার্বভৌমতা দেওয়া হয়েছে বলে মানুষ হিসাবে আমাদের নিজেকে পরিচালনা করতে, সত্য বুঝতে এবং কারণ ও ফলাফল মানতে শিখতে হবে। আমার বাস্তব আচারণে বাস্তব ফলাফল হয়, তা আমার মেনে নিতে হবে, নিজের জীবনের জন্য দায়িত্ব নিতে হবে, লক্ষ্য স্থির করে সেইদিকে আগাতে হবে, যা মূল্যবান তার অনুসন্ধানে মূল্য দিতে শিখতে হবে, বসে সবে অন্যদের দোষারোপ না করতে শিখতে হবে। এটাই হল পরিপক্কতা, এইটাই হল আত্ম-পরিচালনা।

মানুষের সার্বভৌমতার সীমানা
- মানুষের এই সার্বভৌমতার সীমানা আছে:
- আমার সার্বভৌমতা নিজের উপর, আমার সার্বভৌমতা বিস্তার করা দ্বারা অন্যদের সার্বভৌমতা নষ্ট করতে আমার ঠিক হবে না। অন্যদের ইচ্ছা বাতিল করে তাদেরকে নিজের মত ব্যবহার করা, দমন করা, আঘাত দেওয়া বা প্রতারণা করা, তা গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়।
- আমার সার্বভৌমতা এই পৃথিবীতে নিজের আচরণের বাস্তব ফলাফল বাতিল করতে পারেন না, সরিয়ে দিতেও পারে না। ঈশ্বর আমাকে এই বাস্তব মহাবিশ্ব সম্ভন্ধে শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেন। আমি তাঁর এই শিক্ষা অমান্য করতে পারি, কিন্তু তার ফল ভোগ করতে হবে।
- মানুষ হিসাবে নিজেকে সৃষ্টি করি নি, আমার নিজেকে জীবন দেওয়ার ক্ষমতাও নেই এবং আমার সার্বভৌমতা ছিল ঈশ্বর থেকে একটি দান, একারণে মানুষের অধিকার নেই, নিজের জীবন বাদ দেওয়ার, অর্থৎ আত্ম-আঘাত বা আত্ম-হত্যা করার অধিকার আমাদের নেই। হয়তো আমাদের তা করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু তা করার অধিকার আমাদের নেই।
- এই সার্বভৌমতা হল আমাদের সম্মান, আমাদের সম্ভাবন, আমাদের প্রলোভন, আমাদের পরীক্ষা এবং আমাদের স্বাধীনতা – সব কিছু একসাথে! সার্বভৌমতার সাথে দায়বদ্ধতা আসে।
২) ছেলেমেয়েদের উপরে মা-বাবার অধিকার – আদি ১-২
ঈশ্বর এই অধিকার স্থাপন করেছেন। মানুষের সন্তানরা যেভাবে গর্ভে আসে, জন্ম নেয় এবং বহুবছর মা-বাবার উপর নির্ভরশীল হতে থাকে, তা দেখে বুঝা যায় ঈশ্বর কেন পরিবার এভাবে স্থাপন করেছিলেন।
যাত্রা ১০:১২, দ্বিবি ৫:১৬ “মিসর দেশের উপর তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। তাতে মাঠের সবুজ সব কিছু, অর্থাৎ শিলাবৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়া সব কিছু পংগপাল এসে খেয়ে ফেলবে।”
যাত্রা ২১:১৫ “বাবাকে কিম্বা মাকে যে আঘাত করে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে।
লেবীয় ২০:৯ “যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। সেই অশ্রদ্ধার দরুন সে নিজের মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী।”
দ্বিবি ২৭:১৬ “সেই লোক অভিশপ্ত, যে মা কিম্বা বাবাকে অসম্মান করে।”
ইফি ৬:১ “ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবেই তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল, কারণ সেটাই হওয়া উচিত।”
কল ৩:২০ “ছেলেমেয়েরা, তোমরা সব বিষয়ে মা-বাবার বাধ্য থেকো, কারণ এতে প্রভু খুশী হন।”

- ঈশ্বর পরিষ্কারভাবে পরিবার স্থাপন করেন যে জায়গা হিসাবে যেখানে মানব সন্তান জন্ম নেবে ও মানুষ হয়ে উঠবে। তিনি সন্তানদের উপর মা-বাবাদেরকে আসল অধিকার দান করেন।
- ছেলেমেয়েরা (বিশেষভাবে যখন তারা ছোট) বাস্তবভাবে তাদের ম-বাবার উপর নির্ভরশীল, তাদের দয়ায় তারা বাস করে। তারা খাবে যা মা-বাবা তাদের খাওয়াবে, তারা বাস করবে যেখানে মা-বাবা তাদেরকে রাখে, তারা জীবন-যাপন করবে যে পরিবেশ যা মা-বাবা তৈরি করবে এবং তারা মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত হবে।
- যদিও মানুষ হিসাবে মা-বাবার অবশ্যই দুর্বলতা আছে তবুও ঈশ্বর তাদের এই ভূমিকায় অনুমোদিত করেন:
লূক ১১:১৩ “তাহলে তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান”। - যদিও অনৈতিক এবং এমন কি হিংস্র মা-বাবা বলতে কিছু আছে তবুও ঈশ্বর দাঁড় করান যে, সব মিলিয়ে একটি সন্তানের সবচেয়ে ভাল অভিভাবক কোন প্রতিষ্ঠা (সরকার, মণ্ডলী, স্কুল, হোস্টিল) নয় বরং মা-বাবা। গড় মিলিয়ে মা-বাবা সব অন্য প্রতিষ্ঠার চেয়ে সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে ভাল করবে।
৩) সরকারের অধিকার – আদি ৯
- ঈশ্বর যখন কয়িনকে তার মনোভাব ও সম্ভাব্য আচরণের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেন, তখন ইতিমধ্যে অপরাধের প্রতিরোধ এবং পরবর্তীতে অপরাধের শাস্তির প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ পায় (আদি ৪:১-১৬)। লামেকের প্রতিশোধ নেওয়ার কথায় (আদি ৪:২৩-২৪) এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব দেখা দেওয়ার বিষয়ে “তারা ছিল পুরানো দিনের নাম-করা শক্তিশালী লোক” (আদি ৬:৪) আমরা বুঝতে পারি যে উপযুক্ত সরকার প্রয়েজন।
- কিন্তু শুধুমাত্র নোহের প্লাবনের পরে ঈশ্বর সরাসরি সরকারের প্রয়োজনীয় ভূমিকা সরাসরি প্রকাশ করেন। সম্ভবত সরকার স্থাপনের একটি কারণ হল যেন প্লাবনের আগের মত অবস্থা আর তৈরি না হয়। “ঈশ্বর মানুষকে তাঁর মত করেই সৃষ্টি করেছেন; সেইজন্য কোন মানুষকে যদি কেউ খুন করে তবে অন্য একজনকে সেই খুনীর প্রাণ নিতে হবে” (আদি ৯:৬)। মানুষ দ্বারা অপরাধী মানুষকে বিচার করা হোক, বাইবেলে সরকার সম্বন্ধীয় সর্বপ্রথম পদ।
- যখন অব্রাহামের পরিবার মিসরে গিয়ে একটি বড় জাতিতে পরিণত হয় তখন ঈশ্বর তাদেরকে মিসর থেকে উদ্ধারে করে সিনাই পাহাড়ে নিয়ে যান (যাত্রা ১৯)। যেখানে ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতি হিসাবে গঠন করেন, তিনি তাদেরকে মূল্যবোধ, সংবিধান, আইন-কানুন, যাজত্ব, উৎসর্গ পদ্ধতি, পর্ব, আত্মিক কেন্দ্র (মিলন তাম্বু) এবং সর্বপ্রথম নিযুক্ত সরকার দান করেন (যাত্রা ১৮:১৩-২৭, দ্বিতীয় বিবরণ ১:৯-১৮)।
- ইতিহাসে এই চরম মুহূর্তে ঈশ্বর মোশিকে নেতা হিসাবে ব্যবহার করেছেন, তার পাশে আছেন হারোণ (মহাপুরোহিত) এবং মিরিয়ম (মীখা ৬:৪) কিন্তু বেশ তাড়াতাড়ি ঈশ্বর আরো লোক রাজনৈতিক নেতৃত্বে নিয়ে আসেন: ইস্রায়েল প্রত্যেক গোষ্ঠি থেকে জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ লোকদের বেঁছে নেয় যারা স্থানীয় বিচারক (বিচার বিভাগ, judiciary) এবং কর্মচারী হিসাবে (নির্বাহী, executive) কাজ করেন। এই প্রক্রিয়ার বর্ণনা দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৩-১৮ এবং ১৬:১৮-২০ পদে পাই। আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য “সরকার ০১ – নেতা নিযুক্ত” এবং “সরকার ০২ – বিচারক” দেখুন।
- ঈশ্বর সরকারকে গঠন করার অধিকার জনগণকে দান করেন। রাজত্ব করার অধিকার ঈশ্বর থেকে (যিনি সব অধিকারের অধিকারী) জনগণের কাছে দেওয়া হয়। তারা প্রত্যেক গোষ্ঠি, দল বা সম্প্রদায়ের পক্ষে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। একটি সরকারের অধিকার কোথা থেকে আসে? উত্তর হলে সাধারণ লোকদের কাছ থেকে, অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছা কি, তা থেকে আসে।
- এইভাবে নিযুক্ত সরকারের প্রধান দায়ীত্ব হল ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করা, কারণ ন্যায় বিচার দ্বারা আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হয় (মানবীয় অধিকার সুরক্ষিত করা) এবং সবাইকে আইনের অধীনে আনা। নতুন নিয়মের ভাষায় তা হল মন্দদের বিচার করা যেন শান্ত্ মানুষ শাস্তিতে বাস করতে পারে (রোমীয় ১৩:১-৭)।
- তাই সরকার হল ঈশ্বর দ্বারা স্থাপিত একটি প্রতিষ্ঠা যার অধিকার আছে। সরকারের অধিকার নিচ থেকে, অর্থাৎ সাধারণ লোকদের থেকে আসে এবং তাদের প্রধান দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা।

সরকারের অধিকারের সীমানা
- সরকারের অধিকার নেই জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে, অর্থাৎ সাধারণ লোকদের মনের চিন্তা, চেতনা, মুখের কথা, ব্যক্তিগত জীবন-যাপন, স্বাধীনভাবে চলা-ফেরা, অন্যদের সাথে মিলিত হওয়ার ও ধর্মীয় অনুশীলনে হস্তক্ষেপ করা সরকারের জন্য নিষেধ। সরকারের দায়িত্ব হল নাগরিকদের মানবীয় অধিকার সুরক্ষিত রাখা।সরকার নাগরিকদের কাছ থেকে দেশের আইনের প্রতি বাধ্যতা দাবি করতে পারে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি দাবি করার অধিকার সরকারের নেই।
- পৌল তা এইভাবে প্রকাশ করেন: “যাঁর যা পাওনা তাঁকে তা দাও। যিনি কর্ আদায় করেন তাঁকে কর্ দাও; যিনি শুল্ক আদায় করেন তাঁকে শুল্ক দাও; যাঁকে শ্রদ্ধা করা উচিত তাঁকে শ্রদ্ধা কর; যাঁকে সম্মান করা উচিত তাঁকে সম্মান কর” (রোমীয় ১৩:৭)।
- সরকার নাগরিকদের থেকে কি দাবি করতে পারে বা না পারে, যীশু এই বিষয়ে একবার যিহূদী নেতাদের সাথে তর্ক করে বলেন: “যা সম্রাটের তা সম্রাটকে দিন, আর যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দিন।” যীশুর এই কথায় তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন” (মার্ক ১২:১৭)। সরকারি প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কর আদায় করার সরকারের অধিকার অবশ্যই আছে, কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে লোকদের বিশ্বাস, চেতনা বা অনুশীল নিয়ন্ত্রন করে, এই অধিকার সরকারের নেই। বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য “যোগাযোগ ০৬ – যীশুর কথা বলার ধরণ: ফরীশীরা ও হেরোদীয়রা” দেখুন।
মা-বাবার অধিকারের সীমানা
- যেমন ঈশ্বর থেকে দেওয়া সব অধিকারের ক্ষেত্রে, মা-বাবার অধিকারেরও সীমানা আছে:
দ্বিবি ১৩:৬-১১ পরিবার থেকে যদি দেবতা পূজার দিকে প্রভাব > পরিবারের চেয়ে ঈশ্বরকে প্রাধান্য দিতে হবে
- পরিবার থেকে প্রভাব, প্রলোভন, আদেশ, চাপ, আবেগীয় জোর যা আসুক না কেন > ঈশ্বরকে প্রাধান্য দিতে হয়
দ্বিবি ৫:১৭ “খুন করো না।”
- সন্তানের জীবনের উপর মা-বাবার কোন অধিকার নেই। সন্তানকে আঘাত করা, সন্তানকে হুমকি দেওয়া, সন্তানের জীবন খুঁকিতে ফেলা বা সন্তানকে মেরে ফেলা, এই অধিকার মা-বাবার নেই। সন্তান এমন কিছু করলেও যা পরিবারের জন্য লজ্জাজনক, সন্তানের জীবন নষ্ট করার অধিকার মা-বাবার নেই (honor killing নিষেধ)।
দ্বিবি ১৮:১০ সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা নিষেধ
লেবীয় ১৮:২১ ছেলেমেয়েদের মোলক দেবতার কাছে আগুনে পড়িয় উৎসর্গ করা নিষেধ
- মা-বাবার ধর্মীয় অনুশীলনের উদ্দেশ্যে সন্তানকে ক্ষতি, আঘাত, নির্যতন বা উৎসর্গ করার অধিকার নেই।
দ্বিবি ২৩:১৭-১৮ কোন ছেলেমেয়ে মন্দির বেশ্যা কাজে বাধ্য করা বা বিক্রি করা যাবে না
- ছেলেমেয়েদের যৌন কাজে বিক্রি করা চলবে না, তা ধর্মীয় বা অন্যান্য ক্ষেত্রে হোক।
লেবীয় ১৮:৬-২৩ কোন সন্তান বা নাতি-নাতনী যৌন সম্পর্কের জন্য ব্যবহার করা যাবে না
- মা-বাবা বা আত্মীয়দের সন্তানকে যৌন সম্পর্কে ব্যবহার করা বা কোনভাবে যৌন নির্যাতন করা নিষেধ।
- নতুন নিয়মের খ্রিষ্টান হিসাবে এই ধরণের ‘বিশ্রী’ বাইবেল পদ দেখে আমরা অবাক হই বা তার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে এই পদগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ: পরিবারে সন্তানের জীবন, নিরাপত্তা, যৌন ক্ষেত্রে সুরক্ষা, আত্মা, মনে ও শরীরে সুঅবস্থায় নিশ্চিত থাকাই হল আবশ্যক।
আদি ২:২৪ বিবাহ করতে গেলে মা-বাবা ছেড়ে তাই করতে হবে
- যদি আমার সন্তান বিবাহ করে তবে সেই নতুন সৃষ্টি পরিবারকে আগের পরিবারের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। মা-বাবা হিসাবে বিবাহিত সন্তানের উপর আগের মত দাবি করা ঠিক হবে না, প্রত্যেক বিষয়ে বাধ্যতাও চাওয়া ঠিক হবে না। মা-বাবার অধিকার ছিল এই সন্তানকে ভালবাসা, যত্ন নেওয়া, মানুষ করা এবং মেষে মুক্তি করা। মা-বাবা হিসাবে নতুন পরিবারের উপর অনুপযুক্ত চাপ দেওয়া উচিত না, সময়ের বা টাকার দাবি নিয়েও একদম সাবধান থাকেন। বাংলা সংস্কৃতিতে আমরা বলি “মাকে না বলা যায় না”। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে না বলা দরকার। আরো ভাল হত যদি মা-বাবা এই ধরণের দাবি আর না করত।
- মাবাবাকে সম্মান করার আদেশের বয়সের কোন সীমানা নেই, কিন্তু মা-বাবার প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশের বয়সের একটি সীমানা আছে। আরো বিস্তারিত চিন্তার জন্য “পরিবার ০৭ – মা-বাবার অধিকার ও মা-বাবার অধিকারের সীমানা” দেখুন।
৪) আত্মিক নেতাদের অধিকার আদি ১৪
- বাইবেলে আমরা কি ধরণের আত্মিক নেতৃত্ব দেখি? আসলে বেশ কয়েকটি ভিন্ন ভূমিকা দেখা যায়:
- একজনকে আত্মিক নেতা হিসাবে চিহ্নিত রাখা হয়, বাইবেলে এর প্রথম উল্লেখ হল অব্রাহাম ও মল্কীষেদক। মল্কীষেদক অব্রাহামের জন্য রুটি ও আংগুর-রস নিয়ে আসেন এবং তাকে আশীর্বাদ করেন। অব্রাহাম তাকে দশমাংশ দেন। মল্কীষেদককে শালেমের রাজা এবং “মহান ঈশ্বরের পুরোহিত” (আদি ১৪:১৭-২০)।
- এই গল্পের জন্য আদিপুস্তকে বেশি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। অব্রাহাম ৪জন রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় করেন এবং লোটকে উদ্ধার করেন। ফিরে আসার সময়ে অব্রাহাম সোদম রাজা থেকে কৃতজ্ঞতার কোন উপহার গ্রহণ করেন না, কিন্তু শালেমের রাজা মল্কীষেদককে অব্রাহাম রুটি ও আংগুর-রস গ্রহণ করেন এবং তাকে দশমাংশ দেন। এটা হল বাইবেলে দশমাংশের প্রথম উল্লেখ। ইব্রীয় পুস্কের লেকক মল্কীষেদককে যীশুর সঙ্গে যুক্ত করেন (রূপক না আক্ষরিক অর্থে হোক)। যদিও অব্রাহাম হলেন ঈশ্বরের আহ্বান, প্রতিজ্ঞা ও আশীর্বাদের পাত্র তবুও মল্কীষেদকের সাথে দেখা হওয়ার সময়ে অব্রাহাম তাকে ঈশ্বর থেকে একজন আত্মিক নেতা হিসাবে স্বীকৃতি দেন।
- সিনাই পাহাড়ে যখন লেবীয় গোষ্ঠির লোকেরা একটি খুব কঠিন পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের পক্ষে দাঁড়ায় তখন ঈশ্বর তাদেরকে ইস্রায়েলের প্রথম জাতের পরিবর্তে তাঁর সেবার জন্য আলাদা করেন (যাত্রা ৩২:২৯)। পরবর্তীতে ঈশ্বর মোশির ভাই হারোণকে প্রথম মহা পুরোহিত হিসাবে এবং হারোণের পরে তার সব বংশধরেরা পুরোহিত হিসাবে বেছে নেন। এই পরিবারকে ‘চিনকালের জন্য’ বাছিয়ে রাখর হয়। যাজকত্ব হয়ে যায় বংশগত ভূমিকা। এইভাবে ঈশ্বর যাজকত্ব স্থাপন করেন এবং তার ধারাবাহিকতা ও স্থিরতা নিশ্চিত করেন।
- পুরোহিতদের ভূমিকা ছিল লোকদের পক্ষ থেকে ঈশ্বরের কাছে বিনতি ও উৎসর্গ দান করা এবং ঈশ্বরের পক্ষ থেকে লোকদের কাছে আইনের শিক্ষা দেওয়া ও আদর্শ হওয়া। পুরোহিত হল মধ্যস্থকারী এবং বাধ্য, ঈশ্বরীয় ও পবিত্র জীবন-যাপন করা দ্বারা তারা লোকদের জন্য ঈশ্বরের প্রতিনিধি ভূমিকা পালন করতেন। সরকারের ক্ষেত্রে বা রাজত্ব করার ক্ষেত্রে পুরোহিতদের কোন ভূমিকা ছিল না, শুধুমাত্র যদি বিচারকেরা এটি মামলায় রায় দিতে না পারলে তবে তাদের পরামর্শদাতা ভূমিকা ছিল (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:৮-১৩, ২১:৫)। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য “মণ্ডলী ০১ – আত্মিক নেতৃত্ব: পুরোহিত” দেখুন।
- পরবর্তীতে ঈশ্বর ইস্রায়েলের বিভিন্ন গোষ্ঠ থেকে ভাবাবাদী পছন্দ করেন। যদিও পুরোহিতেরা ও ভাববাদীরা উভয় আত্মিক নেতারা, তারা বেশ ভিন্ন ভূমিকা পালন করেন এবং তাদের নিয়োগও সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুরোহিতেরা হল বংশগত বিষয়, পিতা থেকে পুত্রের কাছে আসে। পুরোহিতদের পরিচর্যা হল অনেক নিয়ম দিয়ে চালিত, এমন কি কাপড় পর্যন্ত সব কিছু নির্দিষ্টভাবে দেওয়া আছে। অপর পক্ষে ভাববাদীরা যে কোন গোষ্ঠির বা পরিবার থেকে আসে, তারা ব্যক্তিগত আহ্বান পেয়ে ভাববাদী ভূমিকা পালন করে। তাদের সংবাদ ও তাদের পরিচর্য্য এক এক ভাববাদী এক এক রকম।
- ভাববাদীদের ভূমিকা ছিল ঈশ্বরের পক্ষ হয়ে কথা বলা, লোকদেরকে তাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টি দেখানো, ঈশ্বরের হৃদয় উপস্থাপনা করা, পাপ নিয়ে চেতনা দান, অনুতপ্ত হওয়ার বাস্তব ফলাফল এবং অবাধ্য হওয়ার বাস্তব ফলাফল দেখানো। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য “মণ্ডলী ০৪ – আত্মিক নেতৃত্ব: ভাববাদী” দেখুন।

- নতুন নিয়মে আমরা দেখি ঈশ্বর কিভাবে তাঁর আত্মা দ্বারা বিশ্বাসীদের বিভিন্ন আহ্বান, তালন্ত ও ভূমিকা দান করেন। পৌল আত্মিক দানের বিষয়ে বলেন: “এই সমস্ত কাজ সেই একই পবিত্র আত্মা করে থাকেন। তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেইভাবেই এই সব দান প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে দেন” এবং “একই পবিত্র আত্মার দেওয়া বিশেষ দান ভিন্ন ভিন্ন রকমের। ৫ আমরা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে একই প্রভুর সেবা করি। ৬ আমাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন কাজ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু একই ঈশ্বর ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে কাজ করে থাকেন। ৭ সকলের মংগলের জন্যই এক এক মানুষের মধ্যে এক এক রকম করে পবিত্র আত্মা প্রকাশিত হন” (১ করিন্থীয় ১২:১১, ১২:৪-৭)। আত্মিক দানেগুলো বিশ্বাসীর যোগ্যতা অনুসারে দান করা হয়, এম নয়। এভাড়া পবিত্র আত্মা যে কোন দান যে কোন একজন বিশ্বাসীর মধ্যে দান করতে পারেন।
- যদিও মণ্ডলীর নেতৃত্বের জন্য (পরিচালক/অধক্ষ এবং ও পরিচারক/ডিকন উভয়) প্রয়োজনীয় গুনাবলি উল্লেখ করা হয় (তীত ১:৫-৯, ১ তীম ৩:১-১৩), তবুও লক্ষ্য করুন যে, নতুন নিয়মে ‘প্রেরিত’, ‘শিক্ষক’, ‘প্রাচীন’ এই ধরণের টাইটেলগুলো বেশ ঢিলাভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য “মণ্ডলী ০৫ – মণ্ডলীর নেতৃত্ব” দেখুন।
- সারাংশে বলা যায় যে ধর্মের ক্ষেত্রে আত্মিক নেতৃত্ব সরাসরি ঈশ্বরের মনোনয়ন থেকে আসে। তা জনগণের নির্বাচন বা বিশ্বাসীদের ভোট থেকে আসে না, তা প্রতিনিধিত্বমূলকও না, বরং ঈশ্বরের সার্বভৌম পছন্দ অনুসারে মাত্র। পুরোহিতদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আত্মিক নেতৃত্ব একজনের যোগ্যতার উপর নির্ভর করে না, আমি পুরোহিত হই না কারণ আমি ভাল, আমি পুরোহিত হই কারণ আমার বাবা পুরোহিত। ভাববাদীদের ক্ষেত্রে তা ছিল আহ্বান পাওয়ার বিষয়।
আত্মিক নেতাদের অধিকারের সীমানা
- লক্ষ্য করুন যে, বাইবেলে আত্মিক নেতাদের কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। তাদের হাতে এমন কোন ক্ষমতা বা যন্ত্র নেই যা দ্বারা লোকদের বাধ্যতায় আনা যায়। আত্মিক নেতার মাত্র ‘ক্ষমতা’ হল এমনভাবে জীবন-যাপন করা যাতে আমে আকর্ষণীয় আদর্শ হই এবং পবিত্র আত্মার চেতনা দানকারী ভূমিকা।
- যদি একজন এমন অনৈতিক আচরণ করে যাতে দেশের আইন-কানুন ভেঙ্গে সে অপরাধী হয়ে যায় তবে তার শাস্তি দেওয়া ধর্মের বা মণ্ডলীর কাজ নয়, বরং সরকারের কাঝ। তবুও অনেক ধরণের আচরণ ছিল (এবং আজ পর্যন্ত আছে) যা অনৈতিক কিন্তু দেশের আইন অনুসারে নিষিদ্ধ না (যেমন মিথ্যা বলা)।
- মাত্র ‘শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা’ যা আত্মিক নেতার ছিল হল একজনকে তার অনৈতিক আচরণের কারণে ‘ভক্তদের সমাজ থেকে বের করা’। পুরাতন নিয়মের এর একটি উদাহরণ: দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১-২ “যার অণ্ডকোষ থেঁৎলে দেওয়া কিম্বা পুরুষাংগ কেটে ফেলা হয়েছে সে সদাপ্রভুর লোকদের সমাজে যোগ দিতে পারবে না। “কোন জারজ লোক সদাপ্রভুর লোকদের সমাজে যোগ দিতে পারবে না; তার চৌদ্দ পুরুষেও কেউ তা করতে পারবে না”। নতুন নিয়মের এর একটি উদাহরণ হল ১ করিন্থীয় ৫:৫, যেখানে পৌল করিন্থীয় মণ্ডলীকে একজন অনৈতিক পুরুষকে মণ্ডলী থেকে বের করতে আদেশ দেন।
- একজন আত্মিক নেতা লোকদের একমত হওয়া দাবি করতে পারে না, তাদের চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না, লোকদের জোর করে বাধ্যতায়ও আনতে পারে না। একজন আত্মিক নেতার ভূমিকা হল শিক্ষা দান, আকর্ষণীয় আদর্শ দেখানো, বুঝিয়ে দেওয়া ও অনুরোধ করা, চ্যালেঞ্জ ও সংশোধন করা, কিন্তু এর পরে আর কিছু করার নেই, মানুষের সার্বভৌমতা, চেতনা ও চিন্তার স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা (ভাল এবং খারাপ সিদ্ধান্ত উভয়) আত্মিক নেতাকে মেনে নিতে হবে।
- এইভাবে সত্যিকার আত্মিক নেতৃত্ব ভ্রান্ত নেতৃত্ব থেকে সম্পূর্ণভাবে বিন্ন। ভ্রান্ত ধরণের নেতারা নিজের ইচ্ছা বিস্তার করার জন্য লোকদেরকে জোর করে বাধ্য করে নিয়ন্ত্রণ করে।
- পৌল পরিষ্কারভাবে বলেন: “সব কিছু যাচাই করে দেখো। যা ভাল তা ধরে রেখো” (১ থিষলনীকীয় ৫:২০-২১)। একজন মানুষের মন, চিন্তা, চেতনা, সিদ্ধান্ত ও আচরণের উপরে সেই ক্ষমতা, তা মানুষের নিজের হাতে থাকুক। ঈশ্বর এমন বলেছেন। প্রত্যেকজনের পরীক্ষা করে দেখতে হবে ‘বাইরে থেকে’ কি ধরণের সংবাদ বা প্রভাব আসে। যত সংবাদ ‘বাইরে থেকে’ একজন ব্যক্তির কাছে আসে, ততটা তার পরীক্ষা করে দেখা এবং বিষয়টি পবিত্র আত্মার অধীনের মূল্যায়নে আনা দরকার, এমন কি যদি সংবাদটা একজন আত্মি নেতার কাছ থেকে আসে।
- পৌল বিশ্বাসীদের কঠোর সাবধানবাণী দেন যেন তারা নিজের চেতনার বিরুদ্ধে কোন কিছু করে না (রোমীয় ১৪:১৩-২৩)। একজন ব্যক্তির জীবনের উপর সর্বোচ্চ অধিকারী কে? প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি নিজেই। ব্যক্তিকে নিজেকে যতদূর পারে ঈশ্বরের বাক্য এবং আত্মার বা চেতনার পরিচালনায় সমর্পিত করতে হয় এবং যতদূর পারে তা অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আত্মিক নেতার পরামর্শ যদি হয় নিজের চেতনার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে, তবে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
আত্মিক নেতৃত্বের প্রতি বশীভূত হওয়া এবং নিজের চেতনায় বাধ্য হওয়ার ভারসাম্য
- এই বিষয়ে খুব জটিল একটি ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। বাইবেলের নীতি হল যেন আমা আত্মিক নেতৃত্ব মেনে নেই এবং তাদের থেকে শিক্ষা লাভ করতে আগ্রহী হয়। অপর পক্ষে বাইবেলের নীতি এইও যেন বিশ্বাসী কখনও নিজের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ না করে।
- কিছু লোক আছে যারা কোন ধরণের নেতৃত্ব মানতে চায় না। তারা একটি মণ্ডলী থেকে আর একটি মণ্ডলী যায়, একজন নেতা থেকে আর একজন নেতার কাছে যায় এবং যতবার একজন আত্মিক নেতা তাকে শোনান যা তার আসলে শোনা দরকার, অর্থাৎ তাকে কোন চরিত্রের বা আচরণের বিষয়ে সংশোধন করেন তবে লোকটি সাথে সাথে নেতাকে খারাপ বলে চলে যায়। এভাবে এড়িয়ে যেতে যেতে এই ব্যক্তি নিজের বৃদ্ধি, আত্মিক উন্নয়ন, সম্ভাবনা ও অধিার সীমিত করে রাখেন।
- অপর পক্ষে কিছু আত্মিক নেতারা আছে যারা ‘ভাল উদ্দেশ্যে’ একজন অনুসরণকারীর উপরে অতিরিক্ত প্রভাব ফেলে অথবা এমন কি ক্ষমতা খাটান। খ্রীষ্টেতে বিশ্বাসী হলেও এইভাবে ধীরে ধীরে ভ্রান্তদলের মত অবস্থা তৈরি হয় যাতে অনুসরণকারীকে অন্তরে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম, নিরাপত্তাহীনতা, মিথ্যা নির্ভরতা, অতি বাধ্যতা এবং এমন কি অনৈতিকতায় পড়তে পারে। বিশেষভাবে অল্প বয়সের, অপরিপক্ক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবী বা অতি নির্ভর্শীল অনুসরণকারী এই ধরণের নেতৃত্ব অস্বীকার করতে সক্ষম নয় এবং এইভাবে তার জীবন একদম ধ্বংস হতে পারে।
- যে মণ্ডলীতে নেতৃত্বের বশীভূত হওয়ার উপর বেশি জোর দেওয়া হয় সেখানে বেশ কঠোর মতবাও প্রচলিত। যদিও কেউ এইভাবে পরিকল্পনা করে নি তবুও এই ধরণের মণ্ডলীতে আত্মিক নেতা নিজেকে ক্ষমতা ভুল ব্যবহারের প্রলোভনে ফেলেন এবং অনুসরনকারীদেরকে গভীর আঘাত ঘটে, সাথে নেতা নিজেকেও ধ্বংস করেন। বেশি ক্ষমতা মানে বেশি প্রলোভন। সেইজন্য প্রজ্ঞাবান নেতা নিজের জন্য সীমানা ও দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করেন।
এই চিন্তাগুলো নিচে দেওয়া অধ্যয়ন থেকে নেওয়া হয়েছিল:
বাইবেলে অধিকার শব্দ নিয়ে অধ্যয়ন
পুরাতন নিয়মের দু’টি ইব্রীয় শব্দ আছে যা বাংলায ‘অধিকার’ শব্দ দিয়ে অনুবাদ করা হয়
১) H8633 תֹּקֶף tôqeph 3x ইষ্টির ৯:২৯, দানিয়েল ১১:১৭
অর্থ: অধিকার, ক্ষমতা শক্তি।
ইষ্টের ৯:২৯ “সেইজন্য অবীহয়িলের মেয়ে রাণী ইষ্টের ও যিহূদী মর্দখয় পূরীমের এই নিয়ম স্থায়ী করবার জন্য এই দ্বিতীয় চিঠিটা সম্পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে লিখলেন।”
২) H 7235 רָבָה râbâh 224x
অর্থ: বেড়ে যাওয়া, অধিকার থাকা, উঠে নিয়ে আসা, বিস্তারিত হওয়া, বড় করে তোলা, চমৎকারভাবে করা।
হিহো ২৯:২ “ঈশ্বরভক্ত লোকদের সংখ্যা বাড়লে লোকে আনন্দ করে, কিন্তু দুষ্ট লোক শাসনকর্তা হলে লোকে কাত্রায়।”
নতুন নিয়মে ৭টি শব্দ আছে যা বাংলা বাইবেলে ‘অধিকার’ শব্দ দিয়ে অনুবাদ করা হয়েছে:
১) G1849 ἐξουσία exousia 103x
অর্থ: সামর্থ হওয়া, দক্ষতার, করার ক্ষমতা, সুযোগ-সুবিধা, শক্তি, স্বাধীনতা, হাফেজ হওয়া, প্রভাবে থেকে, প্রভাবিত করা, শক্তি, পরাক্রম। পদগুলোর তালিকা পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে দেওয়া হ
২) G715 κατεξουσιάζω texousiazo 2x মথি ২৫:২০, মার্ক ১০:৪২
অর্থ: অধিকার কাটানো, ক্ষমতা বিস্তার করা।
মথি ২০:২৫ “তখন যীশু শিষ্যদের ডেকে বললেন, “তোমরা এই কথা জান যে, অযিহূদীদের মধ্যে শাসনকর্তারা তাদের প্রভু হয় এবং নেতারা তাদের উপর হুকুম চালায়।”
মার্ক ১০:৪২ “তখন যীশু সবাইকে একসংগে ডেকে বললেন, “তোমরা জান যে, অযিহূদীদের শাসনকর্তারা অযিহূদীদের প্রভু হয় এবং তাদের নেতারা তাদের উপর হুকুম চালায়।”
৩) G1850 ἐξουσιάζω exousiazo 4x লূক ২২:২৫, ১ করি ৬:১২, ৭:৪
অর্থ: নিয়ন্ত্রণ করা, ক্ষমতা বিস্তার করা, ক্ষমতা খাটানো, নিজের অধীনে নিয়ে আসা।
লূক ২২:২৫ “যীশু তাঁদের বললেন, “অযিহূদীদের মধ্যেই রাজারা প্রভুত্ব করেন আর তাদের শাসনকর্তাদের উপকারী নেতা বলা হয়।”
১ করি ৬:১২ “তা ঠিক, তবে সব কিছুই যে মানুষের উপকার করে, তা নয়। কোন কিছু করা আমার পক্ষে অনুচিত নয় বটে, কিন্তু আমি কোন কিছুরই দাস হব না।”
৪) G1413 δυνάστης dunastēs 3x লূক ১:৫২, প্রেরিত ৮:২৭, ১ তীম ৬:১৫
অর্থ: শাসনকর্তা, প্রভু, উঁচু পদস্থের অফিসার, পরাক্রমশালী বা ক্ষমতাপূর্ণ একজন।
প্রেরিত ৮:২৭ “তখন ফিলিপ সেই দিকে গেলেন। পথে ইথিয়পিয়া দেশের একজন বিশেষ রাজকর্মচারীর সংগে তাঁর দেখা হল। সেই কর্মচারী ছিলেন খোজা। ইথিয়পিয়ার কান্দাকী রাণীর ধনরত্নের দেখাশোনা করবার ভার ছিল এই লোকটির উপর। ঈশ্বরের উপাসনা করবার জন্য সেই কর্মচারী যিরূশালেমে গিয়েছিলেন।”
৫) G247 ὑπεροχή huperoche 2x ১ করি ২:১, ১ তীম ২:২
অর্থ: অধিকার, প্রাধান্য, বড় হওয়া (চরিত্রের ক্ষেত্রে বা পদ-মর্যাদা ক্ষেত্রে), তুলনায় উঁচু পদস্থ হওয়া, শ্রেষ্ঠ বা চমৎকার একজন।
১ তীম ২:২ “এইভাবে রাজাদের জন্য আর যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তাদের সকলের জন্য প্রার্থনা করতে হবে, যাতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখিয়ে এবং সৎ ভাবে চলে আমরা স্থির ও শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারি।”
৬) G31 αὐθεντέω authenteo 1x ১ তীম ২:১২
অর্থ: সয়ং আচরণ করা, স্বনির্ভর হওয়া, দমন করা, ক্ষমতা দখল করা।
১ তীম ২:১২ “শিক্ষা দেবার ও পুরুষের উপর কর্তা হবার অনুমতি আমি কোন স্ত্রীলোককে দিই না। তার বরং চুপ করে থাকাই উচিত।”
৭) G2003 ἐπιταγή epitage 7x রোমীয় ১৬:২৬, ১ করি ৭:৬,২৫, ২ করি ৮:৮, ১ তীম ১:১, তীত ১:৩, ২:১৫
অর্থ: নিয়ম, আদেশ, নির্দেশ, অধিকার, অধিকারগত হওয়া।
তীত ২:১৫ “সেইজন্য পূর্ণ অধিকার নিয়ে তুমি এই সব বিষয়ে শিক্ষা দাও, উপদেশ দাও ও দোষ দেখিয়ে দাও। কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে।”