মথি ৪:১

“এর পরে পবিত্র আত্মা যীশুকে মরু-এলাকায় নিয়ে গেলেন যেন শয়তান যীশুকে লোভ দেখিয়ে পাপে ফেলবার চেষ্টা করতে পারে।”

  • এই পদে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে যীশু পবিত্র আত্মার পরিচালনায়ই মরু-এলাকায় গেলেন, যেখানে পরবর্তীতে তার প্রলোভন বা পরীক্ষা হয়। তাঁর প্রলোভন বা পরীক্ষা হল ঈশ্বরের ইচ্ছা ও পরিচালনা অনুসারে একটি ঘটনা।
  • এই পদের ঠিক আগে কি ঘটল, তা আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য করা দরকার: যীশু বাপ্তিস্ম নিলেন এবং স্বর্গ থেকে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শোনা গেল “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁর উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট” (মথি ৩:১৭)।
  • এটা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, প্রলোভন বা পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া মানে না যে আমি ভুল বা পাপ করেছি। প্রলোভিত হওয়া পাপ নয়। প্রলোভিত হওয়া দোষ নয়, শাস্তি নয়, বিচার নয়, ঈশ্বরের অসন্তোষের প্রমাণও নয়। ঈশ্বরের সন্তুষ্টতা ও ভালবাসা প্রকাশিত হওয়ার পরেই যীশু পরীক্ষা নামেন।
মথি ৪:২

“সেখানে চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত উপবাস করবার পর যীশুর খিদে পেল।”

  •  যিহূদীরা রীতিমত উপসাব রাখতেন কিন্তু পবিত্র আত্মার পরিচালনায় যীশুর এই উপবাস অবশ্যই চরম একটি উপবাস।
  • মেডিকেল জ্ঞান অনুসারে একজন স্ববল সুসাস্থ্যের মানুষ যদি শূন্য ক্যালোরির উপবাস করেন, তবে ৪১ বা ৪২ দিন থেকে স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি ঘটবে এবং পরবর্তীতে খেলেও মারা যাওয়ার হার তীব্রভাবে বেড়ে যায়।
  • এই চরম উপবাস যীশুকে শারীরিক ও মানসিকদিক দিয়ে শেষপ্রান্তে রাখে।

প্রথম প্রলোভন

মথি ৪:৩

“তখন শয়তান এসে তাঁকে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে এই পাথরগুলোকে রুটি হয়ে যেতে বল।”

  • মায়া-মমতা নেই বলে শয়তান যীশুকে এই চরম দুর্বলতার মুহূর্তে আক্রমণ করে।
  • ঠিক কি নিয়ে শয়তান যীশুকে প্রলোভন দেখান? ঠিক কি করতে যীশুকো প্রলোভিত করেন?
  • শয়তান প্রাথমিকভাবে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে যীশুর পরিচয়কে আক্রমণ করে: “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও …”। শয়তান যীশুকে নিজের বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলতে চায়, সন্দেহ সৃষ্ট করে যীশুকে নিজেকে প্রমাণিত, অর্থাৎ একটি অলৌখিক কাজ সাধন করার প্রলোভনে ফেলে।
  • সম্ভবত শয়তানের কথায় দোষারোপ করার প্রলোভনও লুকিয়ে থাকে: ‘যদি তুই ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র হতা তবে কেন তোমারে এত কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে যেতে হত?’ কথাটি এভাবে ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা ও প্রজ্ঞারও একটি আক্রমণ: ‘যদি ঈশ্বর তোরে ভালবাসত, তিনি কি এই ধরণের উপবাস দাবি করত না’।
  • আরো বলা যায় যে, যীশুকে এখানে তাঁর অলৌখিক কাজ করার ক্ষমতা (পাথর থেকে রুটি তৈরি) নিজের প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার করতে প্রলোভনে ফেলা হয়। পবিত্র আত্মার পরিচালনায় নয় বরং নিজের প্রয়োজন বা বুদ্ধিতে, আত্ম-নির্ধারিত একটি আশ্চর্য কাজ।
  • প্রলোভন হল মনে করা যে, পিতার চেয়ে আমি জানি আমার কি দরকার, নিজের কৌশলে নিজের জন্য নিয়ে আসা; ঈশ্বরের পথ, আদেশ, প্রজ্ঞা ও মঙ্গলময়তা সন্দেহ করে নিজের জন্য ‘প্রয়োজন’ যা, তার ব্যবস্থা করতে। আদম ও হবা ঠিক এই প্রলোভন পড়ে পাপ করেছিলেন।
মথি ৪:৪

“যীশু উত্তরে বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখের প্রত্যেকটি কথাতেই বাঁচে।”

  • শয়তান তার প্রথম প্রলোভন একটি বাস্তব ও ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজন দিয়ে শুরু করে: মানুষের অবশ্যই খাবার দরকার এবং যীশু আসলে অনাহারে মারা যাওয়ার দিকে চলে এসেছেন। যীশু তা জানেন এবং স্বর্গস্থ পিতা তা অস্বীকার করেন না।
  • যীশু এখান অনেক চাপ পেলেও দাঁড়ান: তিনি ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে তার পরিচয়কে সন্দেহ করতে বা প্রমাণ করতে অস্বীকার করেন। তিনি ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা, প্রজ্ঞা বা যত্ন সন্দেহ করতে অস্বীকার করেন। তিনি নিজের প্রয়োজন মেটানোর বিষয় নিজের হাতে নিতে অস্বীকার করেন।
  • যীশু এখানে দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩, পদ উদ্ধৃতি করেন, যেখানে মোশি ইস্রায়েল জাতিকে স্মরণ করান মরু-এলাকায় থাকার সময়ে কিভাবে ঈশ্বর আশ্চর্য যোগান দিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলেন “খিদেয় কষ্ট দিয়ে এবং যে মান্নার কথা তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের জানা ছিল না তা খাইয়ে তিনি তোমাদের অহংকার ভেংগে দিয়েছেন। এতে তিনি তোমাদের এই শিক্ষা দিতে চেয়েছেন যে, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, কিন্তু সদাপ্রভুর মুখের প্রত্যেকটি কথাতেই বাঁচে।”
  • এখানে নম্র থাকা, অর্থাৎ অহংকার না করা মানে ঈশ্বরকে ঠিক করতে দেওয়া, আমরা কি খাই বা না খাই (“খিদেয় কষ্ট দিয়ে” এবং চমৎকার, মিষ্টি ও অলৌকিক “মান্না খাইয়ে” উভয় দিয়ে)। আমাদের জীবন ঈশ্বরের পরিচালনায় রাখা, তাঁর উপর নির্ভর করা, যা তিনি যোগান দেন, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, অভাবেও তাঁর উপস্থিতি ভুলে না যাওয়া এবং মঙ্গল পরিকল্পনার জন্য তাঁর উপর আস্থা রাখা, এটা সেই মনোভাব যা যীশু দেখান – এবং যা আমাদেরও দেখানো দরকার।
  • নম্রতা এখানে আর একটি বিষয়ে প্রকাশ পায়: আমরা যেন বুঝি যে, খাবারের তুলনায় আমাদের ঈশ্বরের বাক্য আরো দরকার আছে “কেবল রুটিতেই বাঁচে না”। এখানে স্বীকার করা হয় যে, খাবার অবশ্যই দরকার, কিন্তু কেবল খাবার দরকার, এমন নয়। খাবারের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে: ঈশ্বরের বাক্য জানা, তাঁর ইচ্ছা, পথ ও চরিত্র সম্বন্ধে বুঝতে সময় ও হৃদয় দেওয়া হল অন্যান্য প্রয়োজনগুলো মেটানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • আসল বিষয় হল: আমার জীবনে কি প্রাধান্য পায়? আমি কি ঈশ্বরের চেয়ে ভাল জানি আমার কি প্রয়োজন? আমি কি আমার প্রয়োজন, আমার স্বাস্থ্য, আমার নিরাপত্তা ও আমার সম্পূর্ণ জীবন নিয়ে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে পারি? ঈশ্বর কি উভয় মঙ্গলময় ও প্রজ্ঞাবান? আমি কি ‘বাস্তব প্রয়োজন’, ‘সাধারণ বুদ্ধি’, ‘ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজন’, ‘পাওয়া অধিকার’, ‘আরো ভাল জানা’, ‘আত্ম-নির্ধারিত আচরণ’, ‘নিজের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া’ বা ‘কেন ঘটছে তা জানা’ – এসব আমি কি ছেড়ে দিতে পারি?
  • যীশু পিতার পথ নিয়ে সন্দেহ করতে অস্বীকার করেন, তিনি ‘আরো ভাল জানা’ প্রত্যাখ্যান করেন, তিনি আত্ম-মায়াদয়া এবং নিজেকে ‘বেচারা’ মনে করার চিন্তা অগ্রাহ্য করেন, তিনি অধিকার দাবি করার মনোভাব এড়িয়ে যান, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ক্ষোভও ছেড়ে দেন। যীশু ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা, প্রজ্ঞা বা আদেশ নিয়ে সন্দেহ করেন না, ঈশ্বর যা দিয়েছেন (তাঁর বাক্য) এবং ঈশ্বর যা দেন নি (খাবার), তাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। ঈশ্বর যে বাক্য দিয়েছেন, তা হয়তো বাইবেলে ঈশ্বরের চরিত্রের প্রকাশ বুঝায়, অথবা ঈশ্বরের কথা “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র” বুঝায়, অথবা পবিত্র আত্মার বর্তমান পরিচালনা বুঝায়।

দ্বিতীয় প্রলোভন

মথি ৪:৫-৬

“তখন শয়তান যীশুকে পবিত্র শহর যিরূশালেমে নিয়ে গেল এবং উপাসনা-ঘরের চূড়ার উপর তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে লাফ দিয়ে নীচে পড়, কারণ পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ঈশ্বর তাঁর দূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেন; তাঁরা তোমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে।”

  • শয়তান যীশুকে ছেড়ে দেন না। আগে আমরা দেখলাম যে, ভাল করলেও আমরা প্রলোভনে পড়তে পারি (“ইনিই আমার প্রিয় পুত্র এঁর উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট”)। এখন আমরা আরো দেখতে পাই যে, একটি পরীক্ষায় ভালভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আর পরীক্ষা আসবে না। প্রকৃতপক্ষে এর বিপরীত: যত মনে করি যে, ভাল করার পরে আর পরীক্ষায় না পড়ার অধিকার আছে, তত বেশি পরবর্তী পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
  • আবারও শয়তান তার প্রলোভন একই কথা দিয়ে শুরু করে: “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও …”। এখানে শয়তান আবারও যীশুকে তাঁর নিজের পরিচয় সম্বন্ধে সন্দেহে ফেলে তা প্রমাণ করার প্রলোভন দেখায়।
  • এবার শয়তান নিজেই পবিত্র শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি করে: গীত ৯১:১০-১২ “সেজন্য তোমার কোন সর্বনাশ হবে না, তোমার বাড়ীর উপর কোন আঘাত পড়বে না; কারণ তিনি তাঁর দূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেন যেন সব অবস্থায় তাঁরা তোমাকে রক্ষা করেন। তাঁরা হাত দিয়ে তোমাকে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে।”
  • এই অতি চমৎকার গীত বর্ণনা করে যে, কিভাবে ঈশ্বর তাঁর লোকদেরকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা, দুর্দশা বা আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন।
  • যীশুকে অন্যভাবে প্রলোভিত করার জন্য শয়তান গীতটি ব্যবহার করে: যীশুর প্রতি ঈশ্বরের যত্ন বা সমর্পণ আছে কিনা? তা প্রমাণিত হোক! ঈশ্বর তো বলেছিলেন যে, তিনি যীশুতে সন্তুষ্ট, তাই শয়তান এমন একটি গীত উপস্থাপনা করে যাতে বলা হয়েছে “ভালবাসা দিয়ে যে আমাকে আঁকড়ে ধরেছে, তাকে আমি রক্ষা করব” (গীত ৯১:১৪)।
  • ঈশ্বর কি যীশুকে ভালবাসেন? অবশ্যই। ঈশ্বর কি যীশুকে অলৌকিকভাবে রক্ষা করতে সক্ষম? অবশ্যই। ঈশ্বর কি যীশুর প্রতি সমর্পিত? অবশ্যই।
  • এখানে শয়তান ঠিক কি নিয়ে যীশুকে প্রলোভিত করতে চেষ্টা করে? সম্ভবত: এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রচেষ্টা করা হয় যেখানে ঈশ্বরকে নিজের ক্ষমতা দেখাতে হয়, এমন একটি অতি জরুরী অবস্থা যেখানে ঈশ্বরকে তাঁর সমর্পণ বা ভালবাসা একটি নির্দিষ্ট পথে দেখাতে বাধ্য করা হয়। এভাবে ঈশ্বরের বাক্যকে স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবহার করা হয়, ঈশ্বরের বাক্যকে ‘তাঁরই বিরুদ্ধে’ ব্যবহার করা হয়।
  • যীশু প্রথম প্রলোভনে ঈশ্বরের বাক্যের উপর প্রাধান্য দিয়ে জয়ী হয়েছেন। হয়তো একারণে শয়তান এখানে ঈশ্বরের বাক্যকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় বিকৃত করতে চেষ্টা করে।
  • অথবা দ্বিতীয় ও প্রথম প্রলোভন প্রায় একই বিষয়: ঈশ্বরের ইচ্ছা বা পরিচালনার বাইরে গিয়ে এমন কিছু ঘটানো যা আমি প্রয়োজন মনে করি (খাবার হোক বা সুরক্ষা হোক)। প্রলোভন হল নিজের কৌশলে বা বুদ্ধিতে চলা, ‘আমি জানি আমার কি দরকার’ এবং ঈশ্বরকে তাতে রাজি করানো।
  • অথবা প্রলোভন হতে পারে আত্মিক অহংকার: যীশুকে এইমাত্র “প্রিয় পুত্র” বলা হয়েছে এবং তিনি কঠোর প্রলোভনে চমৎকারভাবে সাড়া দিয়েছেন, তাই আত্মিক অহংকার করা সহজ।
  • অথবা প্রলোনের মধ্যে আরো বিষয় আছে?
মথি ৪:৭

“যীশু শয়তানকে বললেন, “আবার এই কথাও লেখা আছে, তোমার প্রভু ঈশ্বরকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।”

  • যীশু উত্তরে আবারও পবিত্র শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি করেন (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১৬): “তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে পরীক্ষা করতে যেয়ো না, যেমন তোমরা মঃসাতে করেছিলে।” এই পদে মোশি ইস্রায়েল জাতিকে তাদের ইতিহাসের একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন, যখন ইস্রায়েল সুফ সাগরে পার হওয়ার পরে মরু-এলাকায় জলের অভাবে পড়েছিল (যাত্রা ১৭:১-৭)। তারা মোশির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে: “আমরা যাতে জলের অভাবে মারা যাই সেইজন্যই কি আপনি আমাদের এবং আমাদের ছেলেরমেয়েদের ও পশুগুলো মিসর থেকে নিয়ে এসেছেন?” মোশি ঈশ্বরের কাছে কান্না করেন: “আর একটু হলেই তো তারা আমাকে পাথর মারবে”। ঈশ্বর মোশিকে আদেশ দেন তার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করে জলের যোগান দিতে। মোশি জায়গাটির নাম রাখেন মঃসা (যার মানে “পরীক্ষা”) এবং মরীবা (যার মানে “ঝগড়া”)।
  • অবশ্যই ইস্রায়েল জাতির জল প্রয়োজন, তা হল বাস্তব ও ন্যায়সঙ্গত। সমস্যা তাহলে কি? ইস্রায়েল জাতির মনোভাব নিয়ে সমস্যা আছে:
    • তারা বলে যে, ঈশ্বর নয় বরং মোশি প্রস্থান ঘটিয়ে তাদেরকে মিসর দেশ থেকে নিয়ে এসেছেন।
    • তারা মনে করে যে তাদের “না” বলার ক্ষমতা ছিল না, তাদেরকে “নিয়ে আসা হয়েছে”। তারা মোশিকে দোষারোপ করে বলে যে তিনি যা করেছেন তা মন্দ উদ্দেশ্যে করেছেন, যদিও মোশি ঠিক তাদের মত মরু-এলাকায় আটকানো এবং পিপাসিত।
    • তারা বিশ্বাসশূণ্য দৃষ্টি থেকে কথা বলে। তারা মিসরের উপর ১০ আঘাত এবং সুফ সাগরের অদ্বিতীয় উদ্ধার নিজের চোখে দেখেছে এবং প্রতিদিন মান্না খাচ্ছে কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো বিশ্বাস নেই যে ঈশ্বর তাদের বর্তমান প্রয়োজন মেটাতে পারেন। পূর্বের উদ্ধারের জন্য কোনো কৃতজ্ঞতা নেই, দৈনিক যোগানের কোনো খেয়াল নেই, তারা ঈশ্বরের ক্ষমতা ও বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে কিছু শেখে নি এবং তাঁর মঙ্গলময়তার প্রমাণও স্মরণ করে নি।
  • তারা মাত্র বর্তমান প্রয়োজন বুঝে, তারা স্বার্থপরভাবে মুহূর্তের যোগান দাবি করে, তা না হলে তাদের সারাংশ হল: ঈশ্বর ভাল নন। যীশুর প্রথম ও দ্বিতীয় প্রলোভন ছিল এই: ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা নিয়ে সন্দেহ করি কিনা।
  • যীশু মনোভাব ছিল এর তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি নিজের জন্য কিছু দাবি করেন না, তিনি ঈশ্বরকে তাঁর মঙ্গলময়তা প্রমাণ করতে বাধ্যও করেন না। তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং পরিচালনার মধ্যে সমর্পিত থাকেন।

তৃতীয় প্রলোভন

মথি ৪:৮-৯

“তখন শয়তান আবার তাঁকে খুব উঁচু একটা পাহাড়ে নিয়ে গেল এবং জগতের সমস্ত রাজ্য ও তাঁদের জাঁকজমক দেখিয়ে বলল, “তুমি যদি মাটিতে পড়ে আমাকে প্রণাম করে তোমার প্রভু বলে স্বীকার কর তবে এই সবই আমি তোমাকে দেব।”

  • যখন শয়তান এই পদে দাবি করে যে জগতের সমস্ত রাজ্য তারই, তখন যীশু তা সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেন না। ফলে অনেকে মনে করে যে জগতের সমস্ত রাজ্য শয়তানের। কিন্তু শয়তান অহংকারী ও মিথ্যাবাদী, তাই তার কথা হূবহূ নেওয়ার বিষয়ে সাবধান।
  • জগতের সমস্ত রাজ্যগুলো যীশুর হবে, প্রকৃতপক্ষে এটিই হল যীশুর জন্য ঈশ্বরের একটি প্রতিজ্ঞা: “পরে সপ্তম স্বর্গদূত তাঁর তূরী বাজালেন। তখন স্বর্গে জোরে জোরে বলা হল, “জগতের রাজ্য এখন আমাদের প্রভু ও তাঁর মশীহের হয়েছে” (প্রকাশিত ১১:১৫)। তাই তা বাস্তবে হবে, কিন্তু প্রশ্ন হল কিভাবে তা পূর্ণ হবে।
  • শয়তান এখানে যীশুকে মহিমা পাওয়ার একটি ‘সহজ পথ’ দেখিয়ে প্রলোভিত করতে চেষ্টা করে, ধৈর্য, বিশ্বস্ততা, সেবা, কষ্টভোগ ও জীবন দান বাদ দিয়ে চূড়ান্ত উদ্দেশ্যে পৌঁছানো।
  • এই ক্ষেত্রে ৩টি প্রলোভনের মিল দেখা যায়: ৩টি প্রলোভন হল ঈশ্বরের ইচ্ছা বা পরিচালনার চেয়ে অন্য একটি পথ পছন্দ করা, অর্থাৎ বাধ্য ও বশীভূত না হয়ে ভাল কিছু অর্জন করা: প্রথম প্রলোভনে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, দ্বিতীয় প্রলোভনে সুরক্ষা, তৃতীয় প্রলোভনে ভবিষ্যৎ মহিমা।
মথি ৪:১০

“তখন যীশু তাকে বললেন, “দূর হও, শয়তান। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরকেই ভক্তি করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে।”

  • শয়তানের এই প্রলোভন শুনে যীশু শয়তানকে সরাসরি শয়তান বলে অবিহিত করে উত্তর দেন। ফিল্মে যখন যীশুর প্রলোভন দেখানো হয়, তখন একটি সাপকে শয়তান হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু হতে পারে, প্রলোভনগুলো কোনো সাপ বা ব্যক্তি দিয়ে বলা কথা হিসাবে নয় বরং সেগুলো ‘নিজের চিন্তা’র মত করে যীশুর কাছে এসেছিল। যেভাবেই হোক, এই তৃতীয় প্রলোভন শুনে যীশু সরাসরি শয়তানকে“দূর হও, শয়তান!” বলে ধমক দেন। এই কথা শুনে যে, “তুমি যদি মাটিতে পড়ে আমাকে প্রণাম করে তোমার প্রভু বলে স্বীকার কর” এখানে এটি পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত যে, আসলেই শয়তান উপস্থিত।
  • শয়তান যীশুকে যে প্রলোভন দেখায় (ঈশ্বরের ই্চ্ছার বা পরিচালনার বাইরে গিয়ে নিজের পথে ব্যবস্থা করতে), শয়তান নিজেই ঠিক একই প্রলোভনে পড়েছিল যখন সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। অহংকার, স্বার্থপরতা ও নিজের কৌশলকে প্রাধান্য দিয়েই শয়তান প্রথম পাপ করে।
  • কিন্তু যীশু এই পথে পা বাড়াবেন না। তিনি নম্র ও বাধ্য থাকেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা ও পরিচালনা ছাড়া নিজের প্রয়োজন বা নিজের বুদ্ধিতে কিছু না করে বরং সম্পূর্ণভাবে পিতার উপর নির্ভর করে সমর্পিত থাকেন।
  • যীশু শাস্ত্রের আর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে উত্তর দেন (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১৩): “তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরকেই ভক্তি করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে”। শুধুমাত্র স্বর্গস্থ পিতা বাধ্যতার ও ভরসার যোগ্য। যীশু ঈশ্বরের বাক্য এবং তাঁর চরিত্র জানেন।
মথি ৪:১১

“তখন শয়তান তাঁকে ছেড়ে চলে গেল, আর স্বর্গদূতেরা এসে তাঁর সেবা-যত্ন করতে লাগলেন।”

  • শয়তানের যীশুর অধিকারে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়।
  • তৃতীয় প্রলোভনে পার হওয়ার সাথে সাথে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। স্বর্গদূত এসে যীশুর প্রয়োজন মেটায় – যীশু খাবারে প্রাধান্য না দেওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যে। যীশু সুইয়ের ছিদ্রতে পার হয়েছেন।
  • আমাদের ক্ষেত্রেও শয়তান প্রায়ই এমন সময়ে আমাদের প্রলোভনে ফেলে যখন ঈশ্বরের উত্তর খুব কাছাকাছি এসে গেছে।