‘অনুতাপ’ বলতে আমরা কি বুঝাই?

লেবীয় ২৬, দ্বিতীয় বিবরণ ২৮ – মানুষের সিদ্ধান্তের ফলে আশীর্বাদ অথবা অভিশাপ

“যদি তোমরা আমার সব নিয়ম মান এবং আমার আদেশ পালন করে চল তবে সময়মত আমি বৃষ্টির ব্যবস্থা করব … ৬ দেশে তখন আমি শান্তি দেব। তোমরা শান্তিতে ঘুমাবে; কারও কাছ থেকে কোন ভয়ের কারণ তোমাদের থাকবে না … আমি তোমাদের তখন দয়ার চোখে দেখব এবং বংশবৃৃদ্ধি করে তোমাদের লোকসংখ্যা বাড়িয়ে তুলব, আর তোমাদের সংগে আমি আমার ব্যবস্থা ঠিক রাখব … ১৩ কাঁধের জোয়াল ভেংগে ফেলে আমিই তোমাদের মাথা উঁচু করে হাঁটবার অবস্থায় এনেছি। ১৪ কিন্তু তোমরা যদি আমার কথা না শোন এবং এই সব আদেশ পালন না কর … ১৬ তবে … আমি তোমাদের উপর হঠাৎ কোন দেহ ক্ষয় করা রোগ এবং ভীষণ রকমের জ্বর নিয়ে আসব। এই সব রোগে তোমাদের দেখবার ক্ষমতা এবং গায়ের শক্তি কমতে থাকবে …” (লেবীয় ১৬:৩-১৩,১৪-১৬,২৩)।

এই পদগুলোতে পুরাতন নিয়মের মৌলিক শিক্ষার একটি সারাংশ পাই: মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাস্তব ফলাফল, উভয় ভাল এবং খারাপ দিকে। এখানে অনুতাপ সম্বন্ধে কি শিখতে পারি?

  • অবাধ্যতার পাশ থেকে (ডানে দেখানো) আমি কিভাবে বাধ্যতার পাশে (বামে দিখানো) আসতে পারি? মৃত্যু, অমঙ্গল ও অভিশাপের চেয়ে আমি কিভাবে জীবন, মঙ্গল ও আশীর্বাদ পেতে পারি? উত্তর হল: অনুতাপ দ্বারা। শুধুমাত্র অনুতপ্ত হলে আমরা ঈশ্বরের থেকে বিছিন্ন অবস্থা থেকে ঈশ্বরের সহভাগিতায় আসতে পারি।
  • যে কোন মুহূর্তে অনুতপ্ত হওয়া যায়। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দিয়েছেন যে মানুষ অনুতপ্ত হলে তিনি ক্ষমা করে গ্রহণ করবেন। তাঁরই দয়ায় অনুতাপ সব সময় সম্ভব ও কার্যকারী।
  • অনুতাপ শব্দ এখানে সারাংশ হিসাবে ব্যবহৃত: নিজের দোষ বুঝা, দায়িত্ব নেওয়া, ক্ষমা চাওয়া, মন পরিবর্তন করে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে রাজি হওয়া, তাঁর চরিত্র অনুসারে আচরণ করা, ঈশ্বরের চরিত্র, ইচ্ছা ও বাক্যের অধীনের আসা।
  • অনুতাপ হল অন্তরে এমন পরিবর্তন যা পরবর্তীতে পরিবর্তিত মনোভাব ও আচারণে প্রকাশ পায় – এবং প্রমাণ পায়।
  • অনুতাপের মানে হল কথা বলা, বেশি আবেগ প্রকাশ করা বা চোখের জল ফেলা এমন নয়। এগুলো অবশ্যই থাকতে পারে, কিন্তু তা আবশ্যক না। আবশ্যক হল জীবনের পরিবর্তন।
যিহিষ্কেল ১৮:১-৩২ – মানুষের সিদ্ধান্ত কি, তা তার আচার-ব্যবহারে প্রকাশিত

“১০ এখন মনে কর, সেই লোকের একটা অত্যাচারী ছেলে আছে। সে রক্তপাত করে কিম্বা অন্য কোন খারাপ কাজ করে যা তার বাবা কখনও করে নি। সে পাহাড়ের উপরকার পূজার স্থানগুলোতে খাওয়া-দাওয়া করে। সে প্রতিবেশীর স্ত্রীকে নষ্ট করে। ১২ সে গরীব ও অভাবীদের অত্যাচার করে … ১৩ সেই ছেলে কি বাঁচবে? সে বাঁচবে না। এই সব জঘন্য কাজ করেছে বলে সে মরবেই মরবে। সে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী হবে।
১৪ “আবার ধর, সেই ছেলের একটা ছেলে আছে। সে তার বাবাকে এই সব পাপ করতে দেখেও তা করে না … ১৭ সে তার বাবার পাপের জন্য মরবে না; সে নিশ্চয়ই বাঁচবে … ২০ সৎ লোক তার সততার ফল পাবে এবং দুষ্ট লোক তার দুষ্টতার ফল পাবে। ২১ কিন্তু যদি একজন দুষ্ট লোক তার সব পাপ থেকে ফিরে আমার সব নিয়ম-কানুন পালন করে আর ন্যায় ও ঠিক কাজ করে তবে সে নিশ্চয়ই বাঁচবে, মরবে না। ২২ সে যে সব অন্যায় করেছে তা আমি আর মনে রাখব না। সে যে সব সৎ কাজ করেছে তার জন্যই সে বাঁচবে। ২৩ দুষ্ট লোকের মরণে কি আমি খুশী হই? বরং সে যখন তার কুপথ থেকে ফিরে এসে বাঁচে তখনই আমি খুশী হই। ২৪ “কিন্তু যদি একজন সৎ লোক তার সততা থেকে ফিরে পাপ করে এবং দুষ্ট লোকের মত জঘন্য কাজ করে তবে সে কি বাঁচবে? তার কোন সৎ কাজই তখন আমি মনে করব না। তার অবিশ্বস্ততা ও পাপের জন্যই সে মরবে।
৩০ সেইজন্য হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি তোমাদের প্রত্যেকের আচার-ব্যবহার অনুসারে বিচার করব। তোমরা ফেরো, তোমাদের সমস্ত অন্যায় কাজ থেকে মন ফিরাও; তাহলে পাপের জন্য তোমরা ধ্বংস হবে না। ৩১ তোমাদের সমস্ত অন্যায় তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে দূর কর এবং তোমাদের অন্তর ও মন নতুন করে গড়ে তোল। কেন তোমরা মরবে? ৩২ আমি কারও মৃত্যুতে খুশী হই না। তোমরা মন ফিরিয়ে বাঁচ।”

  •  এইপদগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রাংশ, যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের গুরুত্ব ও ফলাফল প্রকাশ পায়। পরিবারের ভাল না মন্দ আদর্শ পেলাম বা কোন পরিস্থিতি আমি নিজেকে খুঁজে পাই না কেন, আমি সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম – এবং আমার সিদ্ধান্তে চরম গুরুত্ব আছে।
  • যেমনলেবীয় ২৬ এবং দ্বিতীয় বিবরণ ২৮ পদগুলোতেও দেখা যায়, অনুতাপ মানে একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, যা তার জীবনে পরিবর্তিত আচার-ব্যবহারে প্রকাশ পায়। যদি একজনের জীবনের কোন পরিবর্তন ঘটে না তবে প্রকৃতপক্ষে অনুতাপ বলতে কিছু হয় নি, যত কান্না করলাম না কেন।
  • এই পদগুলোতে অতি পরিষ্কারভাবে ঘোষাণ করা হয়েছে ঈশ্বর কি চান: তিনি চান যেন মন্দ মানুষ মন ফিরায় এবং পরিবর্তিত হয়, যেন তাদের বিচার করার আর প্রয়োজন নেই। মানুষকে বিচার করায় ঈশ্বরের কোন আনন্দ নেই, মানুষ অনতপ্ত হয়ে ভাল হলে এটাতেই তাঁর আনন্দ।
যিরমিয় ৬:১৩-১৯ – তারা লজ্জায় লাল হতে জানেই না
“ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সবাই লাভের জন্য লোভ করে; এমন কি, নবী ও পুরোহিত সবাই ছলনা করে। … ১৫ তারা কি তাদের সেই জঘন্য কাজের জন্য লজ্জিত? না, তাদের কোন লজ্জা নেই; তারা লজ্জায় লাল হতে জানেই না। সেইজন্য তারা তাদের মধ্যে পড়বে যারা শাস্তি ভোগ করবে। আমি যখন তাদের শাস্তি দেব তখন তাদের নত করা হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” যিরমিয় ৪৪:৪-৫ ঈশ্বর হাত ধরে অনুরোধ করেন যেন লোকেরা মন ফিরায় “আমি বারে বারে আমার দাসদের, অর্থাৎ নবীদের পাঠিয়েছি; তারা বলেছে যে, তারা যেন সেই জঘন্য কাজ না করে যা আমি ঘৃণা করি। ৫ কিন্তু তারা তাতে কানও দেয় নি, মনোযোগও দেয় নি; তারা তাদের দুষ্টতা থেকে ফেরে নি কিম্বা দেব-দেবতাদের কাছে ধূপ জ্বালানোও বন্ধ করে নি।”
  • উভয় শাস্ত্রাংশে ঈশ্বর গুরুত্বের ও আবেগের সঙ্গে লোকদেরকে অনুরোধ করেন যেন তারা অনুতপ্ত হয়, যেন তারা নষ্ট না হয়, যেন তাদের বিচার করতে না হয়।
  • ঈশ্বর দয়া দেখাতে এবং তাদের পুনরায় গ্রহণ করতে অতি ইচ্ছুক, কিন্তু মানুষেরা ইচ্ছুক নয়।
যোয়েল – অনুতাপ দ্বারা সব কিছুর পরিবর্তন
  • এই ছোট ভাববাণীতে যোয়েল লোকদেরকে জরুরীভাবে অনুতপ্ত হতে বলেন – কারণ অনুতপ্ত হলেই বর্তমান পরিস্থিতি অর্থাৎ সংকোট পরিবর্তিত হতে পারে। আশা আছে! কিন্তু অনুতপ্ত হতে হবে।
  • তিনি অনেক আদেশ দিয়েই লোকদেরকে গুরুত্ব দিয়ে অনুতপ্ত হতে বলেন: “শুন! কান দাও! কান্ন্কাটি কর! বিলাপ কর! চট পরে শোক প্রকাশ কর! উপাসনা ঘরে সভা ডাক! ”
  • তিনি প্রতিজ্ঞা দেন যে অনুতপ্ত হলে ঈশ্বর তাঁর দয়ায় পুনরুদ্ধার অবশ্যই ঘটাবেন (যোয়েল ২:২৫): “সদাপ্রভু বলছেন, “আমার বিরাট সৈন্যদল যা আমি তোমাদের মধ্যে পাঠিয়েছিলাম তারা … যত বছর ধরে তোমাদের ফসল খেয়েছে তা আমি শোধ করে দেব।”
  • তিনি মসীহ সম্বন্ধীয় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বাণী প্রকাশ করেন: “রক্ষা পাবার জন্য যে কেউ সদাপ্রভুকে ডাকবে সে রক্ষা পাবে”। সেই সময়ে অর্থাৎ যীশুর সময়েও অনুতাপই হবে সেই একটি প্রয়োজনীয় কাজ, সেই সব কিছু পরিবর্তনকারী বিষয় (যোয়েল ২:৩২)।
মার্ক ১:১৪-১৫ – সুসমাচারের সারাংশ

“যীশু গালীল প্রদেশে গেলেন। সেখানে তিনি এই কথা বলে ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করতে লাগলেন, ১৫ “সময় হয়েছে, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে। আপনারা পাপ থেকে মন ফিরান এবং এই সুখবরে বিশ্বাস করুন।”

  • যীশুর মধ্য দিয়েই “ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে”। নতুন রাজা সিংহাসনে উঠেছেন বলে এখন মানুষ হিসাবে আমাদের এই নতুন বাস্তবতা অনুসারে আমাদের জীবন সাজাতে হবে। আমাদের মন পরিবর্তন করতে হবে এবং এই নতুন পরিস্থিতির অধীনের থাকতে হবে।
  • আমাদের ভাগ্য ভাল যে এই রাজা দয়ালু, নম্র ও মঙ্গলময়, তাই তাঁর আগমন সত্যি সুখবর!
মথি ৯:৯ – মথির আহ্বান

“যীশু যখন সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন তখন পথে মথি নামে একজন লোককে কর্‌ আদায় করবার ঘরে বসে থাকতে দেখলেন। যীশু তাঁকে বললেন, “এস, আমার শিষ্য হও।” মথি তখনই উঠে তাঁর সংগে গেলেন।”

  • মথির জীবনে অনুতপ্ত হওয়ার আদর্শ দেখতে পাই: জীবন পরিবর্তন, আচার-ব্যবহারের পরিবর্তন, প্রাধান্যের পরিবর্তন: মথি হিসাব জমা দিয়ে যীশুর অনুসরন করেন না, তিনি হিসাব ও টাকা-পয়সা, সব ফেলে রেখে যীশুর অনুসরনকারী হন।
লূক ১৯:১-১০ আনন্দ এবং জীবনের নতুন কেন্দ্র

সক্কেয়ের আহ্বানও অনুতাপের একটি আদর্শ:

  • সে যীশুকে দেখতে চায়। সে এই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার জন্য ধনী হিসাবে তার মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার বাদ দেয় এবং একটি গাছে ওঠে।
  • যীশু যখন তাকে গ্রহণ করেন তিনি অতি আনন্দিত।
  • তিনি তা উৎযাপন করার জন্য বড় ভোজের আয়োজন করেন।
  • তার আচার-ব্যবহারে তার অনুতাপ দেখা যায়: সে এখন আগের চেয়ে ভিন্ন কিছুতে প্রাধান্য দেয়, বিশেষভাবে টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে। যীশুই তার নতুন কেন্দ্র হয়ে গেছেন।
লূক ১৫:১১-৩২ – হারানো পুত্রের দৃষ্টান্ত
  • এই অতি পরিচিত দৃষ্টান্ততে আমরা মানুষের অযোগ্যতা দেখি: যদিও আমরা অনুতপ্ত হয় – পিতা ঈশ্বর যে আমাদের পুনরায় গ্রহণ করেন, তা অদ্ভুৎ দয়া ছাড়া আর কিছু না। অনুতাপের কারণে পুনরায় গ্রহণ, এটি মানুষের কোন অধিকার নয়, আমাদের হাতে ‘চাবি’ও নয়। অনুপ্ত হলে ঈশ্বরের দয়া পেতে আমরা দাবি করতে পারি না, পরিস্থিতির পরিবর্তনও দাবি করতে পারি না।
  • অনুতাপ কার্যকারী কারণ ঈশ্বর অতি দয়ালু। তিনি বলেছেন যে, অনুতপ্ত মানুষ তিনি গ্রহণ করবেন। এই দৃষ্টান্ত ঈশ্বরের অদ্ভুৎ পীতৃহৃদয় প্রকাশিত।
  • দৃষ্টান্ত আরো দেখায় বড় ভাইয়ের অনুতাপের প্রয়োজনীয়তা। তার বাবার চরিত্রের বিষয়ে বড় ভাইয়ের দৃষ্টি ভুল এবঙ এমন কি অপমানদায়ক। সে দাসের মনোভাবে কাজ করেন, পুত্রের মনোভাবে নয়। বড় ভাই রূপক অর্থ আমাদের সবার হৃদয়ে কঠোর হওয়ার প্রলোভন বুঝায় (আইনবাদ, legalism)।

অনুতাপের বিষয়ে এবং অনুতপ্ত না হওয়ার বিষয়ে যীশুর চ্যালেঞ্জ

মথি ২১:২৯-৩২ ধু’টি ছেলের দৃষ্টান্ত

“ধরুন, একজন লোকের দু’টি ছেলে ছিল। লোকটি তাঁর বড় ছেলের কাছে গিয়ে বলল, ‘আজ তুমি আংগুর ক্ষেতে গিয়ে কাজ কর। ২৯ উত্তরে ছেলেটি বলল, ‘আমি যাব না।’ কিন্তু পরে সে মন ফিরিয়ে কাজে গেল। ৩০ লোকটি পরে অন্য ছেলেটির কাছে গিয়ে সেই একই কথা বলল। অন্য ছেলেটি উত্তরে বলল, ‘আমি যাচ্ছি,’ কিন্তু গেল না। ৩১ এই দু’জনের মধ্যে কে বাবার ইচ্ছা পালন করল?” তখন ধর্ম-নেতারা উত্তর দিলেন, “প্রথম জন।”

  • প্রথম ছেলে তার পিতার আদেশ সরাসরি অগ্রহ্য করে, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি অনুতপ্ত হয়ে পিতার ইচ্ছামত কাজ করে। কিন্তু দ্বিতীয় ছেলে যদিও মুখে মুখে পিতার আদেশ মেনে নেয়, পরিবর্তীতে সে তা বাস্তবে করে না। যে ছেলে আসলে তার পিতার ইচ্ছা অগ্রাহ্য করে সেই সুপারিশ পায়।
  • এই দৃষ্টান্ত দেখায় যে ‘মুখের কথা’ যথেষ্ট নয়, আসলটা হল পরিবর্তিত আচার-ব্যবহার। যীশু এই দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা করেন: “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, কর-আদায়কারীরা এবং বেশ্যারা আপনাদের আগে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকছে, কারণ যোহন ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলবার পথ দেখাবার জন্য আপনাদের কাছে এসেছিলেন, আর আপনারা তাঁকে বিশ্বাস করেন নি। কিন্তু কর্‌- আদায়কারীরা এবং বেশ্যারা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। এ দেখেও আপনারা মন ফিরিয়ে তাঁকে বিশ্বাস করেন নি” (মথি ২১:৩১-৩২)।
মথি ২৩:১৩

“ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা লোকদের সামনে স্বর্গ-রাজ্যের দরজা বন্ধ করে রাখেন। তাতে নিজেরাও ঢোকেন না আর যারা ঢুকতে চেষ্টা করছে তাদেরও ঢুকতে দেন না।”

  • এই পদ (এবং আগের পদ থেকে) পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, দৃষ্টান্তের যে ছেলে কথা বলে কিন্তু তা অনুসারে কাজ করে না, তা ইস্রায়েলকে বুঝায়, ফরীশীদের বা ধার্মিকদের বুঝায়। যে ছেলে প্রথম পিতার আদেশ অগ্রাহ্য করে কিন্তু পরবর্তীতে বাধ্য হয় সে কর-আদায়কারীদের এবং বেশ্যাদের বুঝায়, অধার্মিকদের এবং পরজাতিদের বুঝায়।
  • নিজেই অনুতপ্ত না হওয়াই পাপ, অন্যদের অনুতাপের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা আর অনেক বড় পাপ।
অনুতাপ বা কি? অনুতাপ কি নয়?

অনুতাপ বলতে আমরা ঠিক কি বুঝি? অনুতাপের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ আছে যা সত্যিকার অর্থ অনুতপ্ত হতে গেলে প্রয়োজন। একটি অংশ করে যদি বাকি অংশ করি না তবে এখনও অনুতাপ সম্পূর্ণভাবে হয় নি:

  • আফসোস, খারাপ লাগা, দুরাবস্থায় থাকা: আমি আমার খারাপ সিদ্ধান্তের ফলাফল ভোগ করছি, নিজেকে দুরাবস্থায় খুঁজে পাই এবং আফসোস লাগে, তা এখনও অনুতাপ নয়। অনেকে আছে যারা খুব কষ্টে আছে কিন্তু যদি কেউ তাদেরকে মন ফিরাতে, দায়িত্ব নিতে বা ভিন্ন আচরণ করতে চ্যালেঞ্জ করেন তবে তারা কোন মতে তা মেনে নিতে রাজি না।
  • পাপ স্বীকার: আমি মুখ দিয়ে স্বীকার করি কি কাজ করেছি, তা অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তা এখনও অনুতাপ নাও হতে পারে। হয়তো আমি ধরা খেয়েছি এবং চাইলেও একটি বিষয় আর অস্বীকার করা যায় না। হয়তো আমি স্বীকার করি যে আমি ‘তা করেছি’ কিন্তু আমি তার জন্য কোন দায়িত্ব নেই না: হয়তো আমি অন্যদের দোষ দেই, হয়তো আমি পরিস্থিতিকে দোষ দেই, হয়তো আমি এমন কি ঈশ্বরকে দোষ দেই। আমি হয়তো চিন্তা করি যে ‘বিষয়টি অতি বড় ব্যাপার নয়’ অথবা যে ‘সবাই করে’ বা ‘না করা সম্ভব নয়’। আমি প্রকৃতপক্ষে আমার আচরণের জন্য দোষ বা লজ্জা গ্রহণ করি নি। আমি আমার আচরণ এখনও ঈশ্বরের দৃষ্টিতে দেখি নি, তাঁর সাথে এখনও রাজি হয় নি। উদাহরণস্বরূপ আদম ও হবা স্বীকার করে যে তারা নিষিদ্ধ ফল খেয়েছে কিন্তু দু’জনই তাদের আচারণের জন্য দায়িত্ব নেয় না (আদি ৩:১২-২৩)।
  • ক্ষতিপূর্ণ করতে প্রত্যাখ্যান: আমার আচরণের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার একটি অংশ হল স্বীকার করা যে অন্য মানুষ আমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি যতদূর সম্ভব পূরণ করতে আমাকে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। এই দায়িত্ব যদি অস্বীকার করি তবে এখনও সম্পূর্ণভাবে অনুতপ্ত হই নি। হয়তো আমাকে সবার সামনে এই ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। যত লোকদের সামনে আর একজনকে অপমানিত করেছি বা খারাপ আচরণ করেছি তত লোকদের সামনে ক্ষমাও চাওয়া দরকার। যদি একজনকে সবার সামনে অপমানিত করেছি তবে তার কাছে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ‘আমি দুঃখিত’ বলা যথেষ্ট নয়। লজ্জা লাগলেও যদি আমি মনেপ্রাণে সবার সামনে ক্ষমা চাই তবে তা আমার জীবনে এই খারাপ অভ্যাস বা মনোভাব ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করবে। উদাহরণ: চুরি বা অন্যায় লাভ করলে আমাকে অবশ্যই সেই পরিমাণে টাকা বা জিনিসটি বা তার পরিবর্তে দাম ফেরত দিতে হয়। চুরি বা ঠকানোর পরে ক্ষতিপূরণ করলে মোশির আইন-কানুন অনুসারে পাঁচ ভাগের একভাগ বাড়িয়ে দিতে হবে (লেবীয় ৬:৫), হতে পারে মালিককে যে কষ্ট (আর্থিক, ব্যবহারিক ও আবেগ দিক দিয়ে) দেওয়া হয়েছে, তার কারণে। যাত্রাপুস্তক দু’টি অধ্যায় ধরে ক্ষতিপূর্ণের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (যাত্রা ২১-২২)।
একটি সাবধানবাণী
  • বর্তমান যুগে অনেক মণ্ডলীতে প্রচারের সাড়া হিসাবে লোকদের বেদীর কাছে এগিয়ে আসতে বলা হয় (altar calls) যেন তারা চেতনা পেয়ে ও অনুতপ্ত হয়ে আত্ম-সমর্পণ করে।
  • এই ধরণের সময়ে প্রায়ই আবেগের প্রকাশ (কান্নাকাটি, জোরে প্রার্থনা) অনুতাপের চিহ্ন হিসাবে ধরা হয়।
  • যদিও তা সব ভাল এবং অনেক বার প্রয়োজন, একটি বিষয়ে সাবধানবাণী দেওয়া দরকার: এভাবে করতে করতে কিছু লোক সারাংশে আসে যে ‘সামনে যাওয়া কান্ন করে প্রার্থনা করা’ই হল অনুতাপ। যদিও সামনে গিয়ে কান্না ও প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ জীবনে আমার আচার-ব্যবহার পরিবর্তিত হয় না ততক্ষণ পর্যন্ত অনুতাপ বলতে কিছু হয় নি।
  • বেদীতে এসে প্রকৃতপক্ষে কিছু ঘটেছে কিনা, তা সেই সময়ের আবেগ দেখে প্রমাণ পায় না বরং পরবর্তী সকাল থেকে যখন কেউ দেখে না তখনই আমার আচার-ব্যবহার দ্বারাই প্রমাণিত হয়।
    অনুতাপ করার সময় লোকেরা চোখের জল ফেলে অথবা নাও ফেল। কথা, আবেগ ও আবেগ প্রকাশ অনেক বার ভাল ও সাহায্যকারী হতে পারে, কিন্তু মনে করবেন না যে তা-ই সব কিছু। অনুতাপে আবেগ প্রকাশ আবশ্যক নয়, কিন্তু জীবনে পরিবর্তন আবশ্যক।

‘অনুতাপ’ শব্দ নিয়ে অধ্যয়ন