পরিবার ০৪ – বহুবিবাহ
আদিপুস্তক থেকে ভিত্তি
- আদি ২:১৮-২৫ ঈশ্বর শুরু থেকে একবিবাহ স্থাপন করেছেন। এটিই তাঁর চিত্র, আদর্শ ও চূড়ান্ত মানদণ্ড।
- আদি ১:৩১ ঈশ্বর যখন মানুষ, লিঙ্গ এবং একবিবাহ স্থাপন করেছেন, তাঁর মূল্যায়ন ছিল: “অতি উত্তম” বা “চমৎকার”।
পুরাতন নিয়মে বহুবিবাহের ইতিহাস
- বাইবেলে বহুবিবাহের বাস্তবতা বর্ণনা করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে ক্ষতি সীমিত রাখার কিছু আইন দেওয়া হয়েছে।
- বাইবেলে একবারও কোন সুখী ও শান্তিপূর্ণ বহুবিবাহের পরিবার দেখা যায় না। সাধারণত লোকেরা ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত হলে তারা একবিবাহের ক্ষেত্রেও সমর্পিত হয়।
- বাইবেলে ১ম বহুবিবাহ, সাথে প্রতিশোধের মনোভাব।

- আদি ৪:১৯-২৪ “লেমকের দু’টি স্ত্রী ছিল। তার একজনের নাম আদা, অন্যজনের নাম সিল্লা।…একদিন লেমক তার দুই স্ত্রীকে বলল, “আদা আর সিল্লা, তোমরা আমার কথা শোন; লেমকের স্ত্রীরা, আমার কথায় কান দাও। যে লোক আমাকে জখম করেছে, অর্থাৎ যে যুবক আমার গায়ে হাত তুলেছে, আমি তাকে খুন করেছি। কয়িনকে খুন করবার প্রতিশোধ যদি সাতগুণ হয়, তবে লেমককে খুন করবার প্রতিশোধ হবে সাতাত্তর গুণ।”
- লেমক কয়িনের মধ্য দিয়ে আদমের ষষ্ঠ প্রজন্ম। তার চরিত্রে দেখা যায় হিংস্রতা ও তীব্র প্রতিশোধের মনোভাব। এবং এইটা নিয়ে সে অহংকার করত।
- এখানে বহুবিবাহ ও হিংস্রতার মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। কিভাবে যুক্ত? আত্ম-দমনের অভাব? নিজেকে দেখানো? আত্ম-কেন্দ্রিক মনোভাব? নিয়ন্ত্রণ করার আকাঙ্ক্ষা? জীবনের মূল্য না দেওয়া?
- বহুবিবাহকে বলা যায় নিজের স্বার্থের জন্য অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করা বা কষ্ট দেওয়া।
- আদি ৬:২,৫,১১ – নোহের প্লাবনের কারণগুলোর মধ্যে একটি ছিল যৌনতা ও বহুবিবাহ
- “ঈশ্বরের সন্তানেরা এই মেয়েদের…যার যাকে ইচ্ছা তাকেই বিয়ে করতে লাগল।…পৃথিবীতে মানুষের দুষ্টতা খুবই বেড়ে গেছে, আর তার অন্তরের সব চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই কেবল মন্দের দিকে ঝুঁকে আছে।…পৃথিবী অত্যাচার-অবিচারে ভরে উঠেছে।”
- আদি ৭:৬, ৯:১ নোহের জাহাজে ৪টি একবিবাহের দম্পতি রক্ষা পায়।
- আদি ৭:৯-১০ জাহাজে সব পশু-পাখি জোড়ায় জোড়ায় উঠানো হয়।
- আদি ৯:১ চারটি একবিবাহের দম্পতিকে আবারও ফলবান হওয়ার আদেশ দেওয়া হয় (আদি ১:২৮)।
- আদি ১১:২৯ ঈশ্বর একবিবাহের দম্পতিকে আহবান করেন যারা নিঃসন্তান হলেও ২য় বিবাহ করেন নি।
- আদি ১৬:৩ সারা অব্রাহামকে ২য় স্ত্রী নিতে বলেন। গালাতীয় ৪:২১-৫:১ পদে এটিকে বলা হয় ‘মাংস অনুসারে’, ভুল প্রচেষ্টা যার উপরে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা স্থাপন করতে রাজী না।
- আদি ১৭:১৮-১৯ ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা, আহবান ও মসীহকে ২য় স্ত্রী দ্বারা আনবেন না। “আহা, ইশ্মায়েলই যেন তোমার দয়ায় বেঁচে থাকে!’ তখন ঈশ্বর বললেন, ‘তোমার স্ত্রী সারার সত্যিই ছেলে হবে…তার ও তার বংশের লোকদের জন্য আমি আমার চিরকালের ব্যবস্থা চালু রাখব।”
- আদি ২১:২১, ২৫:১৩ ইশ্মায়েল, যার অন্তত ১৩টি সন্তান ছিল, একবিবাহে ছিলেন কিনা তা পরিষ্কারভাবে বলা যায় না।
- আদি ২৪ অধ্যায় প্রতিজ্ঞার সন্তান ইসহাকের জন্য একজন স্ত্রী
- আদি ২৫:১-৬ শুধুমাত্র হাগার চলে যাওয়া এবং সারার মৃত্যু পর অব্রাহাম আবার বিয়ে করেন।
- আদি ২৬:৩৪, ২৮:৯ এষৌ দুজন হিত্তীয় স্ত্রী গ্রহণ করার কারণে অশান্তি সৃষ্টি হয়। পরে তিনি ৩য় স্ত্রী গ্রহণ করেন।
- আদি ২৯ যাকোব তার মামা লাবনের প্রতারণায় বহুবিবাহের শিকার হন।
- আদি ৩০ লেয়া ও রাহেলের প্রসব প্রতিযোগিতার কারণে আরো দুজন উপস্ত্রী যুক্ত হয়।
- আদি ৩৫:২২ রূবেণ অব্রাহামের উপস্ত্রী বিলহার সাথে ব্যভিচার করেন।
- আদি ৩৮:২,১৬ যিহূদা একজন কনানীয় মহিলাকে বিয়ে করেন এবং পতিতার সাথে শয়ন করেন।
- আদি ৪১:৪৫ যোষেফের একজন মিসরীয় স্ত্রী ছিল। দেখা যায়, যে লোক যত ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত ততবেশি এক বিবাহে সমর্পিত।
- যাত্রা ২, গণনা ১২:১ মোশির প্রথম স্ত্রী সিপ্পরা, তার ২য় স্ত্রী একটি কূশীয় (হতে পারে তখন মোশি বিপত্নীক ছিলেন)।
- যাত্রা ২১:১০ মোশির আইন: প্রথম স্ত্রীর অধিকার সুরক্ষা: “সেই মনিব সেই দাসীকে বিয়ে করবার পরেও যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তবুও সে তার খোরাক-পোশাক দিতে বাধ্য থাকবে এবং দেহের দিক থেকে তার যা পাওনা তা-ও তাকে দিতে হবে।”
- দ্বি বি ১৭:১৭ মোশির আইন: ভবিষ্যৎ রাজা বেশী স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না।
- দ্বি বি ২১:১৫-১৭ মোশির আইন: বহুবিবাহে প্রথম সন্তানের উত্তরাধিকার সুরক্ষা করতে হবে।
- বিচারকর্তৃগণ ৮:৩০-৩২, ৯ গিদিয়োনের বহুবিবাহের কারণে ৭০ জন ছেলে জন্ম নেয়। তার এক ছেলে অবীমেলক ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করেন, একজন বাদে তার সমস্ত ভাইকে খুন করেন এবং একটি গৃহ যুদ্ধ ঘটায়।
একটি বহুবিবাহের বাস্তব চিত্র: শমূয়েলের অভিভাবক ইলকানা ও হান্না
- ১ শমূয়েল ১:১-১১ “ইল্কানা নামে একজন লোক…ইল্কানার দুইজন স্ত্রী ছিল; একজনের নাম হান্না আর অন্যজনের নাম পনিন্না। পনিন্নার ছেলেমেয়ে হয়েছিল কিন্তু হান্নার কোন ছেলেমেয়ে হয় নি।…ইল্কানা…হান্নাকে দিতেন দুই ভাগ, কারণ তিনি হান্নাকে ভালবাসতেন। সদাপ্রভু কিন্তু হান্নাকে বন্ধ্যা করে রেখেছিলেন। সদাপ্রভু তা করেছিলেন বলে তাঁর সতীন তাঁকে খোঁচা মেরে কথা বলে তাঁর মন অস্থির করে তুলত। …তাই তিনি কান্নাকাটি করতেন আর কিছুই খেতেন না। এ দেখে তাঁর স্বামী ইল্কানা তাঁকে বলতেন, “হান্না, তুমি কেন কাঁদছ? কেন কিছু খাচ্ছ না? কেন তোমার এত দুঃখ? আমি কি তোমার কাছে দশটা ছেলের চেয়েও বেশী নই?”…মনের কষ্টে হান্না সদাপ্রভুর কাছে খুব কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি সদাপ্রভুর কাছে মানত করে বললেন, “হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তুমি যদি তোমার এই দাসীর মনের কষ্টের দিকে চেয়ে দেখ এবং আমার প্রতি মনোযোগ দাও…তোমার এই দাসীকে একটা ছেলে দাও।”
- হান্না ছিলেন একজন ঈশ্বর ভক্ত মহিলা। যদিও তার স্বামীও ঈশ্বর ভক্ত ছিলেন, তাকে ভালবাসতেন ও তার যত্ন নিতেন, তবুও বহুবিবাহের কারণে হান্নার জীবন ছিল কষ্টের।
- ইলকানা ঈশ্বর ভক্ত হলেও হান্নাকে উস্কানো ও কষ্ট দেওয়ার বিষয়ে পনিন্নাকে থামাতে পারেন নি।
- ইলকানা বলেন “আমি কি তোমার কাছে দশটা ছেলের চেয়েও বেশী নই?” এই কথাটি ভাল লাগত যদি তারা নিঃসন্তান দম্পতি হিসাবে এই কষ্ট একসাথে বহন করতেন।
- যদিও তিনি খারাপ উদ্দেশ্যে তা বলেন নি, তার অন্য স্ত্রীর সন্তান থাকার কারণে এই কথাটা কষ্ট দায়ক হয়ে দাঁড়ায় ।

পুরাতন নিয়মে বহুবিবাহের বাকি ইতিহাস
- ২ শমূয়েল ৩:৭ শৌলের বহুবিবাহ
- ২ শমূয়েল ৩:২-৫, ৫:১৩-১৬ দায়ূদের বহুবিবাহ
- মিখল (যাকে অন্য পুরুষের কাছে দেওয়া হয়েছিল, দায়ূদ জোরপূর্বক ফিরিয়ে নিয়ে আসেন) যিষ্রিয়েলের অহীনোয়ম (তার মধ্য দিয়ে প্রথম ছেলে অম্নোন), নাবলের বিধবা অবীগল (তার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ছেলে কিলাব), গশূরের মাখা (তার মধ্য দিয়ে তৃতীয় ছেলে অবশালোম), হগীত (তার মধ্য দিয়ে চতুর্থ ছেলে আদোনিয়), অবীটল (পঞ্চম ছেলে শফটিয়) এবং ইগলা (তার মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ ছেলে যিত্রিয়ম)। দায়ূদ আরো স্ত্রী এবং উপস্ত্রী গ্রহণ করেন (যেমন বৎশেবা), যাদের মধ্য দিয়ে আরো ১১জন ছেলে জন্ম নেয়।
- তার কম পক্ষে ১৭ জন ছেলে ও ২০ থেকে ৩০ জন স্ত্রী ও উপস্ত্রী ছিল।
- ২ শমূয়েল ১১ বহুবিবাহ করার পরেও দায়ূদের ব্যভিচার বন্ধ হয় নি, বরং বলা যায় বহুবিবাহের কারণে ব্যভিচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল।
- ২ শমূয়েল ১৫:১৬ অবশালোমের কাছ থেকে পালানোর সময় দায়ূদ ১০জন উপস্ত্রীকে রেখে চলে যান। তাতে বুঝা যায় বহুবিবাহের পরিবারে একজন স্ত্রীর মূল্য নেই।
- ২ শমূয়েল ১৬:২২, ২০:৩ ফিরার পর দায়ূদ সেই উপস্ত্রীদের দেখাশুনা করতেন কিন্তু স্ত্রীর মর্যাদা আর দেন নি।
- ২ শমূ ১৩-১৫, ১ রাজা ১-২ বহুবিবাহের কারণে দায়ূদের পরিবারে বিবাদ, চাপ প্রয়োগ, ধর্ষণ ও খুন:
- অম্নোন তার সৎ-বোন তামরকে ধর্ষণ করেন, কিন্তু দায়ূদ এর বিচার করেন না।
- অবশালোম তার সৎ-ভাই অম্নোনকে খুন করে প্রতিশোধ নেন এবং পালিয়ে যান।
- যোয়াব অবশালোমকে ফিরিয়ে আনেন কিন্তু দায়ূদ তাকে এড়িয়ে যান।অবশালোম তার পিতা দায়ূদের প্রতি রাগান্বিত হন, বিদ্রোহী হয়ে ক্ষমতা দখল করেন। যুদ্ধে তিনি মারা যান।
ইস্রায়েলের সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান রাজা শলোমন পতিত হন বহুবিবাহের কারণে
১ রাজা ১১:১-৬ “রাজা শলোমন ফরৌণের মেয়েকে ছাড়া আরও অনেক বিদেশী স্ত্রীলোকদের ভালবাসতেন। তারা জাতিতে ছিল মোয়াবীয়, অম্মোনীয়, ইদোমীয়, সীদোনীয় ও হিত্তীয়। তারা সেই সব জাতি থেকে এসেছিল যাদের সম্বন্ধে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, “তোমরা তাদের বিয়ে করবে না, কারণ তারা নিশ্চয়ই তোমাদের মন তাদের দেব-দেবতাদের দিকে টেনে নেবে।” কিন্তু শলোমন তাদেরই ভালবেসে আঁকড়ে ধরে রইলেন। তাঁর সাতশো স্ত্রী ছিল, যারা ছিল রাজপরিবারের মেয়ে; এছাড়া তাঁর তিনশো উপস্ত্রী ছিল।…শলোমনের বুড়ো বয়সে তাঁর স্ত্রীরা তাঁর মন দেব-দেবতাদের দিকে টেনে নিয়েছিল।…তিনি সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের ও অম্মোনীয়দের জঘন্য দেবতা মিল্কমের সেবা করতে লাগলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ শলোমন তা-ই করলেন। তাঁর বাবা দায়ূদ যেমন সদাপ্রভুকে সম্পূর্ণভাবে ভক্তি করতেন তিনি তেমন করতেন না।”
- রাজা শলোমন দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৪-২১ পদের প্রত্যেকটি আইন (বেশী স্ত্রী, বেশী ঘোড়া, অতিরিক্ত সম্পদ না থাকুক ও অতিরিক্ত সম্মান দাবী না করুক) অমান্য করেন ।
- ৭০০ স্ত্রী ও ৩০০ উপস্ত্রী থাকার কারণে তার অবশ্যই কয়েকশ সন্তান ছিল (সংখ্যা উল্লেখ নেই)। এত সন্তানদের মধ্যে তিনি হয়তো ১০ থেকে ১২ জনের জন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যত্ন, শিক্ষা ও শিষ্যত্ব দিতে পারেন, কিন্তু সবার জন্য নয়।
- বাস্তবে ভবিষ্যৎ রাজা ও রাজকুমাররা তাদের প্রতিমাপূজারী বিদেশী মায়ের মাধ্যমে শিষ্যত্ব পান। রহবিয়ামের মা হলো অম্মোনীয় নয়মা (১ রাজা ১৪:২১)।
- বিবাহের প্রথম নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় কুম্রান স্ক্রলে যা কুম্রান ধর্ম শিক্ষকদের দ্বারা লিখিত (কমবেশি ২০০-৫০ খ্রিঃপূঃ)। তারা বিবাহ করতেও নিরুৎসাহিত করত।
মোশির আইনে বহুবিবাহের ক্ষতিকে সীমিত রাখা
বহুবিবাহে প্রথম সন্তানের অধিকার
দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৫-১৭ “এমন হতে পারে যে, একজন লোকের দু’জন স্ত্রী আছে, আর তাদের একজনকেই সে ভালবাসে অন্যজনকে নয়। তাদের দু’জনেরই যদি ছেলে হয় আর প্রথম ছেলের জন্ম হয় সেই স্ত্রীর গর্ভে যাকে সে ভালবাসে না, তবে সম্পত্তি উইল করে দেবার সময়ে যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেকে বাদ দিয়ে অন্য স্ত্রীর ছেলেটিকে প্রথম ছেলের পাওনা অধিকার দেওয়া চলবে না, কারণ যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেটিই আসলে তার প্রথম ছেলে। যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেকে তার সম্পত্তি থেকে অন্য যে কোন ছেলের চেয়ে দ্বিগুণ ভাগ দিয়ে সেই ছেলেই যে প্রথম ছেলে তা তাকে স্বীকার করতে হবে। সেই ছেলেই তার বাবার পুরুষ-শক্তির প্রথম ফল। প্রথম ছেলের অধিকার তারই পাওনা।”
- বহুবিবাহে পক্ষপাতিত্ব থাকলেও প্রথম সন্তানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বহুবিবাহে প্রথম স্ত্রীর অধিকার ও দাসী স্ত্রীর অধিকার
যাত্রা ২১:১০ “সেই মনিব সেই দাসীকে বিয়ে করবার পরেও যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তবুও সে তার খোরাক-পোশাক দিতে বাধ্য থাকবে এবং দেহের দিক থেকে তার যা পাওনা তা-ও তাকে দিতে হবে। সে যদি এই সব কর্তব্য না করে তবে কোন টাকা না নিয়েই তাকে চলে যেতে দিতে হবে।”
- বহুবিবাহে স্ত্রীদের স্বামীর প্রতি অধিকার আছে, যদিও সে দাসী স্ত্রী হয়।
- স্বামীকে আদেশ দেওয়া হয়েছে তার সব স্ত্রীদের খাবার ও কাপড়ের ব্যবস্থা করা (দাসী স্ত্রীকেও) এবং বিবাহের সমস্ত অধিকার দেওয়ার। আইনে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ নয় কিন্তু প্রত্যেক স্ত্রীর বৈবাহিক অধিকার পূরণ করতে হয়।
- যদি দাসী স্ত্রীকে তার অধিকার দেওয়া না হয়, তবে অবশ্যই স্বাধীন হিসাবে ছেড়ে দিতে হবে এবং স্বামী কোন অর্থনৈতিক দাবী করতে পারবে না (ঋণ, দাসত্ব মোচন খরচ হলেও)।
- দাসী স্ত্রীর জন্য যদি বৈবাহিক অধিকার থাকে তবে অবশ্যই স্বাধীন স্ত্রীর ক্ষেত্রেও আছে।
নতুন নিয়মে একবিবাহ
মথি ১:১৮-২৫ যীশু জন্ম নেন একবিবাহের পরিবারে।
- সারা নতুন নিয়মে প্রেরিত বা মণ্ডলীর নেতাদের মধ্যে একজনেরও বহুবিবাহের কথা উল্লেখ নেই।
১ করিন্থীয় ৯:৫ প্রেরিতদের নিজের স্ত্রীকে নিয়ে প্রচার (একবচন)।
- মণ্ডলীর নেতাদের মাত্র একজনই স্ত্রী থাকুক
তীত ১:৫-৬ “প্রত্যেক শহরের মণ্ডলীতে প্রধান নেতাদের কাজে বহাল কোরো। মণ্ডলীর প্রধান নেতাকে এমন হতে হবে যেন কেউ তাঁকে দোষ দিতে না পারে। তাঁর মাত্র একজনই স্ত্রী থাকবে। তাঁর ছেলেমেয়েরা যেন খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হয়, যেন তারা নিজেদের খুশীমত না চলে এবং অবাধ্য না হয়।”
১ তীমথিয় ৩:২ “পরিচালককে সেইজন্য এমন হতে হবে যেন কেউ তাঁকে দোষ দিতে না পারে। তাঁর মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে। তিনি নিজেকে দমনে রাখবেন এবং তাঁর ভাল বিচারবুদ্ধি থাকবে।”
- বহুবিবাহ একজন লোককে নেতা হতে বাধা দেয় কারণ নেতা হিসাবে তার আদর্শ হওয়া প্রয়োজন।
১ করিন্থীয় ৭:১৭-২৪ “কাজেই, প্রভু যাকে যে অবস্থায় রেখেছেন এবং ঈশ্বর যাকে যে জন্য ডেকেছেন, সেই অনুসারেই সে চলুক।”
- পদটি যারা বহুবিবাহে আবদ্ধ নতুন বিশ্বাসী হিসাবে তাদের দিকে নির্দেশ করে স্ত্রীদের যেন পরিত্যাগ না করে (তাদের প্রতি অন্যায় হবে) এবং যেন আরো স্ত্রী গ্রহণ না করে। কারণ তাদের জীবন থেকে বহুবিবাহ মুছে ফেলা সম্ভব নয় কিন্তু যেন নতুন করে আর বহুবিবাহে আবদ্ধ না হয়। সমাজকে পরিবর্তন করতে গেলে সময় লাগে।
১ করিন্থীয় ৭:২ “কিন্তু চারদিকে অনেক ব্যভিচার হচ্ছে, সেইজন্য প্রত্যেক পুরুষের নিজের স্ত্রী থাকুক আর প্রত্যেক স্ত্রীর নিজের স্বামী থাকুক।”
- এই পদের অর্থ এই নয় যে বিবাহ আবশ্যক বরং বিবাহকে এবং একবিবাহকেই সমর্থন করে।
- করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ে অধিকার এবং দায়িত্বের নির্দেশনাগুলো সমানভাবেই স্বামী এবং স্ত্রীকে বলা হয়েছে।
- এই পদগুলো মণ্ডলী এবং খ্রীষ্টিয় সমাজের জন্য ভিত্তিস্বরূপ। এর কারণে শুধুমাত্র খ্রিষ্টান ধর্মে বহুবিবাহ বেআইনি। (ব্যতিক্রম: মর্মোন নামে পশ্চিমা দেশের একটি ভ্রান্ত দল)।
- কিভাবে বহুবিবাহ সবার জন্য ক্ষতিস্বরূপ।


এক হাজার মহিলাদের মধ্যে একজনকেও ভাল পাই নি
উপদেশক ৭:২৬-২৮ “আমি দেখলাম, মৃত্যুর চেয়েও তেতো হল সেই স্ত্রীলোক, যার অন্তর একটা ফাঁদ ও জাল আর হাত দু’টা শিকল। যে লোক ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে সে তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, কিন্তু পাপীকে সে ফাঁদে ফেলবে। উপদেশক বলছেন, “দেখ,…তখন আমি হাজারজনের মধ্যে একজন খাঁটি পুরুষলোককে পেলাম, কিন্তু তাদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোককেও খাঁটি দেখতে পাই নি।”
- শলোমন নারীকে বলে “তেতো”, তার জীবনে বহুবিবাহের স্বাদ ছিল গভীর তিক্ততা। তার বিবাহে কোন আনন্দ, সমতা, সহভাগিতা, প্রেমের সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব নেই।
- শলোমনের দৃষ্টিতে মহিলারা হল ফাঁদ, শিকল, মানসিক চাপ, কৌশলে চালনা, প্রতারণা ও ক্লান্তির উৎস। বহুবিবাহের কারণেই একজন স্ত্রী অনিচ্ছাকৃত ভাবে এইরকম হয়ে যায়। যেহেতু সন্তান ও তার বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য সব
- সময় স্বামীকে কাছে পায় না, সেজন্য একবার পেলে সব কিছু নিশ্চিত ও দাবী করতে হয়।
- বহুবিবাহের কারণে শলোমনের কাছে নারীদের এই বিকৃত ছবি। তার কথায় কোন সম্মান, দয়া, মমতা নেই। তিনি তাদের বুঝেন না, তাদের অধিকার স্বীকার করেন না, তাদের প্রয়োজনের গুরুত্ব দেয় না ও বহুবিবাহের কারণে তাদের এই পরিস্থিতি বুঝেন না।
- বহুবিবাহ অবশ্যই মহিলাদের ঠকায় কিন্তু পুরুষদেরকেও সত্য বন্ধুত্ব, অংশীদারিত্ব, নির্ভরতা, সমতা, সহভাগিতা, সিদ্ধান্তে সাহায্য ইত্যাদি থেকেও বঞ্চিত করে। এছাড়া বিবাহের মানসম্পন্ন সম্পর্ক থেকেও বঞ্চিত হয় যার শেষ ফল একাকীত্ব ও অবিশ্বাস, এবং সে তার স্ত্রী থেকে নয় বরং বন্ধু ও পরিবারের কাছ থেকে সঙ্গ খোঁজেন।
- বহুবিবাহে স্ত্রীর ভূমিকা শুধুমাত্র যৌনসম্পর্কে সীমাবদ্ধ এবং (আশা করা যায়) সন্তান প্রসবে। যেমন ইসলামিক লেখায় পাওয়া যায়: স্বামী তার বাগানে বীজ বুনেন ও ফসলের আশা করে।

- বহুবিবাহে পুরুষের দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে বলে স্ত্রীর কথার গুরুত্ব বা ভার থাকে না। বহুবিবাহে একজন স্ত্রীর ক্ষমতা কম থাকে।
- বহুবিবাহের ফলাফল হল অধিক সন্তান হার, যার ফলে অর্থনৈতিক চাপ,দারিদ্রতা, অবহেলিত স্ত্রী ও অশিক্ষিত বা ত্যাজ্য সন্তান।
বাইবেলে একবিবাহ রূপকভাবে ঈশ্বর ও তাঁর জাতি ইস্রায়েলের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে (হোশেয়, …)। এই ছবি থেকে প্রকাশ পায় একবিবাহের গুরুত্ব। বহুবিবাহের ছবিতে ঈশ্বর অন্য দেবতাদের মধ্যে একজন হিসাবে থাকতেন। - মোশির আইনে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ নয়। কেন? বহুবিবাহ নিষেধ করা সহজ হত কিন্তু আইন হৃদয় পরিবর্তন করতে অক্ষম। বহুবিবাহ নৈতিক নয় কিন্তু পুরাতন নিয়মে নিষিদ্ধ নয়। নতুন নিয়মের প্রভাবে অনেক সমাজে এটি এখন নিষিদ্ধ।
- বহুবিবাহ মানসম্পন্ন সম্পর্ক ও পারিবারিক জীবনের মান কমিয়ে দেয়, এমন কি ধ্বংস করে। এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ভাল আদর্শ হয় না, এটি ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়।
- পরমগীত ৮:১২ পদটি টিটকারি দেওয়ার মত? (এখানে ইংরেজি অনুবাদ রাখা হয়েছে পরিষ্কার বুঝানোর জন্য): “My vineyard, my very own, is for myself; you, O Solomon, may have the thousand, …”
- পরমগীত কি শলোমনের লেখা না তাঁর কাছে লেখা, তা নিশ্চিত বলা যায় না। যদি পরমগীত তাঁর কাছে লেখা হয় তবে পদটি বহুবিবাহে আসক্ত শলোমনের বিপক্ষে একটি টিটকারি।
উপসংহার
- বহুবিবাহ ব্যভিচারের চেয়ে ভাল, কারণ বহুবিবাহ কম পক্ষে সামাজিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সম্পর্ক।
- পুরাতন নিয়মে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ না কিন্তু অনুমোদিতও নয়। বরং বাস্তবিক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর ফলে যে ক্ষতি হয় তার প্রতিরোধে আইন দেওয়া আছে (প্রথম স্ত্রীর ও প্রথম সন্তানের অধিকার সুরক্ষা)।
- বহুবিবাহের সমস্যা কি?
- অসমতা, পুরুষ ও মহিলার জন্য ভিন্ন মানদণ্ড।
- অনবরত প্রতিযোগিতা ও তুলনা, যা একবিবাহে কখনও হত না।
- স্বামীর হাতেই বেশি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা।
- সমতা ও গভীর সম্পর্ক প্রতিরোধ করে যা স্বামীকেও ঠকায়।
- ডেভিড হ্যামিল্টন বলেন: ‘শয়তান মহিলাদের লজ্জা দ্বারা ও পুরুষদের অহংকার দ্বারা ধ্বংস করে।’
- সম্পূর্ণ বাইবেলে একটিও শান্তিপূর্ণ, সুখী ও পরিপূর্ণ বহু-বিবাহের পরিবারের কথা উল্লেখ নেই।
- যীশু সংশোধন করেন: “কিন্তু এ-ও লেখা আছে যে, সৃষ্টির আরম্ভে ‘ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন।” … বিবাহ বিচ্ছেদের এই পদটিতে যীশু যেভাবে উত্তর দেন তা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাদেরকে প্রথম নকশায় ফিরিয়ে নিয়ে যান: আদি ১ ও ২ অধ্যায়। প্রশ্নকারীরা আইন চাপাতে চেষ্টা করে তাদের স্বার্থের জন্য কিন্তু যীশু তাদের দেখায় আইনের পিছেনে ঈশ্বরের হৃদয় ও উদ্দেশ্য। তা বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বহুবিবাহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
- কোন ধর্ম বহুবিবাহের অনুমতি দেয় ও চর্চা করে? ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, যিহূদী, মর্মোন এই ধর্মগুলি। শুধুমাত্র খ্রিষ্টান ধর্মে নিষিদ্ধ।
- ভারতীয় দার্শনিক বিশাল মঙ্গলবাদি বলেন ‘এই পৃথিবীতে মহিলাদের জন্য সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যবস্থা হল একবিবাহ।’
- একটি ধর্মকে মূল্যায়ন করুন যেভাবে সবচেয়ে দুর্বলদের সাথে আচরণ করা হয় তার ভিত্তিতে (গরীব, মহিলা, বিকলাঙ্গ, সমাজের বাইরের লোক)।
- ছেলে ও মেয়ে সন্তান জন্মের হার প্রায় সমান ৫০:৫০, যদিও বাঁচার হার নির্ভর করে দেশের উপর। পরিসংখ্যান দেখলে বহুবিবাহ হল অভিলাষ ও স্বার্থপরতা।
- বহুবিবাহের আর একটি চিত্র হল একটি পরিবারে অধিক সন্তান।
- বহুবিবাহের আর একটি চিত্র হল বিবাহের ক্ষেত্রে লিঙ্গের সমানুপাত নিয়ে সমস্যা। ছেলে ও মেয়ে সন্তান জন্মের হার প্রায় সমান, তাই পুরুষরা কয়েকটি বিবাহ করলে মহিলার অভাব পড়ে। তার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্যও বাড়ে।
- বহৃবিবাহে অনেক বার অতিরিক্ত পরিমাণে সন্তান থাকে, প্রত্যেকটি সন্তানের সঙ্গে বাবা কিভাবে সম্পর্ক রাখবেন? কিভাবে সময় দেবেন? অনেক দেশে বিবাহের সঙ্গে সংযুক্ত হল দরিদ্রতা ও বাচ্চাদের অবহেলা।

বহুবিবাহের মানচিত্র
- খেয়াল করুন যে বহুবিবাহের মানচিত্র ও দারিদ্রতার মানচিত্রের মধ্যে অনেক মিল আছে।
