পুরাতন নিয়ম

আদিপুস্তক ১-৩ আদিপুস্তক থেকে ভিত্তি > একবিবাহ স্থাপিত
  • আদি ১:২৬-২৭     পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয়ই ঈশ্বর দ্বারা এবং ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি।
  • আদি ১:২৮         পুরুষ ও স্ত্রীলোককে একসাথে আশীর্বাদ এবং পৃথিবীর উপর রাজত্য করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একে অন্যের উপর রাজত্য করবে, এ ধরণের অধিকার কারও দেওয়া হয় নি।
  • আদি ২:১৬-১৭     পুরুষ ও স্ত্রীলোককে একই আদেশ, নির্দেশনা ও সাবধানবাণী দেওয়া হয়।
  • আদি ২:২০-২২     পুরুষ ও স্ত্রীলোক হল একই হাড় ও একই মাংসের, পরস্পরের জন্য উপযুক্তভাবে তৈরি।
  • আদি ২:২৪   পুরুষ ও স্ত্রীলোক পরস্পর্কে স্বাধীনভাবে পছন্দ করে। বিবাহ স্থাপন করার জন্য ‘বিয়ে দেওয়ার’ মত মা-বাবা লাগে না। বিবাহের অস্থিত্ব ও অধিকার স্বামী-স্ত্রীর সিদ্ধান্ত দ্বারা সৃষ্টি। যেখানে জন্ম নিলাম সেই পরিবারের চেয়ে বিবাহ দ্বারা স্থাপিত নতুন পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হবে (আদি ২:২৪)। ঈশ্বর একবিবাহ স্থাপন করেন, অর্থাৎ একজন স্বামী এবং একজন স্ত্রী পরস্পর্কে পছন্দ করে।
  • আদি ২:২৫    পুরুষ ও স্ত্রীলোকের সম্পর্ক কেমন? তারা খোলামেলা যোগাযোগ করে। এখানে কোন লজ্জা, ভান, লুকানো, ভয়, কৌশল বা বিভেদ নেই। তারা একজন অন্যের প্রতি নিজেকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করে। কোন আত্ম-রক্ষা করা বা ‘ছেঁকে বলা’ প্রয়োজন নেই। তারা শান্তিতে ও স্বাধনতায় একসাথে বাস করে।
  • আদি ৩:৭-১৩   পাপ করার সাথে সাথে চলে আসে লজ্জা, ভয়, ভান, লুকানো, প্রতারণা, বিভেদ, কৌশল, দোষারোপ, আত্ম-রক্ষায় অন্যকে ব্যবহার, নিজেকে প্রাধান্য দেওয়া ও স্বাথপরতা।
  • আদি ৩:১৬ পাপের সাথে চলে আসে স্বার্থপরতা, তুলনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, দ্বন্দ্ব, উঁচু-নীচু ভাব, দোষারোপ এবং অন্যের উপর দমন করার প্রচেষ্টা। “স্বামী তোমার (স্ত্রীর উপর) কর্ত্তৃত্ব করবে”, এই কথার অর্থ কি?
  • অনেকে এভাবে ব্যাখ্যা করে: “কর্ত্তৃত্ব করবে” মানে কর্ত্তৃত্ব করুক। অর্থাৎ তা হল ঈশ্বরের আদেশ, ঈশ্বর এখন চান যেন স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের উপর কর্ত্তৃত্ব করে তাদের নিয়নন্ত্রণে রাখে। যারা এই ব্যাখ্যা করে, তারা সাধারণত আদি ৩:৬ পদের উল্লেখ করে এইও বলে যে, মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি প্রলোভিত হয়, বেশি পাপ করে এবং ফলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। কে তা করবে? > স্বামীরা।
  •  
  • কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পাপ বা প্রলোভনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে এত পার্থক্য আছে? পুরুষেরা কি পাপ কম করে? প্রলোভিত কম হয়? আসলে তো পুরুষ ও মহিলা উভয় একইভাবে প্রলোভিত হয় এবং উভয় ঠিকই পাপ করে। আদি ৩:৬ পদ বলে যে, “তখন তিনি কয়েকটি ফল পেড়ে তা খেলেন। তিনি তাঁর সেই স্বামীকেও কয়েকটি ফল দিলেন, যিনি তাঁর সঙ্গেই ছিলেন ও তিনিও তা খেলেন” (বাংলা সমকালীন সংস্করণ), অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন যখন শয়তান তার সাথে কথা বলে। স্বামী স্ত্রীকে এখানে রক্ষা করেন নি, আপত্তি উঠান নি, বাধাও দেন নি, বরং তিনি নিজেইও ফলটি খান। তাই পাপের ক্ষেত্রে লিঙ্গের বড় পার্থক্য বলতে এখানে কিছু দেখা যায় না। ঈশ্বর পরবর্তীতে তাদের দু’জনকে দায়বদ্ধ করে রাখেন এবং উভয়কে শাস্তি দেন (আদি ৩:৭-১৯)। যদি পাপের ক্ষেত্রে দুই লিঙ্গের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে পার্থক্য থাকত তবে আমরা তা নতুন নিয়ম অনুতাপ ও ক্ষমার ক্ষেত্রেও দেখতাম। কিন্তু কি দেখা যায়? “সবাই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু খ্রীষ্ট যীশু মানুষকে পাপের হাত থেকে মুক্ত করবার ব্যবস্থা করেছেন” তারা (রোমীয় ৩:২৩-২৪)। নতুন নিয়মে কি বলা হয়েছে যে, পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের পরিত্রাণ বেশি দরকার??
  • কিন্তু আবারও আদি ৩:১৬ পদের ব্যাখ্যায় ফিরে আসি: “স্বামী তোমার (স্ত্রীর উপর) কর্ত্তৃত্ব করবে” এই পদের অর্থ তাহলে কি? আর একটি ব্যাখ্যা এই: “কর্ত্তৃত্ব করবে” মানে ঠিক তাই, স্বামীরা কর্ত্তৃত্ব করবে, অর্থাৎ তা আদেশ নয় বরং একটি দুঃখজনক ভবিষ্যদ্বাণী, পাপের ফলে এখন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে প্রায়ই কি ঘটবে। কথাটি তাহলে ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশ করে না বরং তা হল পাপ-আক্রান্ত পৃথিবীতে এখন কি দেখা যাবে, এর বাস্তব বর্ণনা: মানুষের হৃদয় স্বার্থপর হয়ে গেছে বলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে এখন দ্বন্দ্ব ও দমন এবং প্রায়ই স্ত্রীদের নির্যাতন দেখা যাবে।
  • এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যার সমর্থনে কি বলা যায়? আসলে তা আদিপুস্তক ১ ও ২ অধ্যায়ের সাথে আরো মিলে, যেখানে আমরা লিঙ্গের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য বা উঁচু-নীচু দেখি নি: তারা উভয় ঈশ্বরের ইচ্ছায় ও তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি (আদি ১:২৭), তারা একসাথে ঈশ্বরের আশীর্বাদ, আহ্বান ও পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করার অধিকার পায় (আদি ১:২৮), পাজর থেকে সৃষ্টি একটি সমতার ছবি তৈরী করে: তারা পরস্পরের জন্য ‘পাশে দাঁড়ানোর লোক’ (আদি ২:২০-২৩) এবং আদমের মুখ থেকে প্রথম কথায় (আদি ২:২৩) তিনি লিঙ্গের কোন পার্থক্য প্রকাশ করেন না বরং তিনি তাদের মধ্যে মিল ও উপুক্ততা উৎযাপন করে কথা বলেন। দেখা যায় যে, পাপের আগে আমরা লিঙ্গের কোন পার্থক্য, কোন অসমতা, উঁচু-নীচুর কোন কিছু পাই না, শুধুমাত্র পাই তাদের মিল, পরস্পরের জন্য তাদের উপযুক্ততা – এবং একসাথে তাদের উঁচু আহ্বানের কথা।
  • আর একটি বিষয়: যখন ফরীশীরা স্ত্রীদের বিচ্ছেদ করার অধিকারের বিষয়ে যীশুর কাছে আসেন (মার্ক ১০:১-১২, মথি ১৯:১-১২) তখন খেয়াল করেন যীশু কি উত্তর দেন। তিনি তাদেরকে আইন-কানুন স্বার্থপরভাবে ব্যবহার করার দোষ দিয়ে আদিপুস্তক ১ ও ২ অধ্যায় উল্লেখ করে তাদেরকে বলেন যে, “তাই ঈশ্বর যা একসঙ্গে যোগ করেছেন মানুষ তা আলাদা না করুক”। যীশু তার উত্তরে আদি ১:২৭২:২৪ উদ্ধৃতি করেন, অর্থাৎ ঈশ্বরের ইচ্ছা ও হৃদয় বুঝার জন্য তিনি তাদেরকে আদি ৩ অধ্যায়ে নিয়ে না গিয়ে বরং আদিপুস্তক ১ ও ২ অধ্যায়ে নিয়ে যান। হ্যাঁ, মানুষের কঠিন হৃদয়ের কারণে মোশি পরবর্তীতে বিচ্ছেদের আইন দিলেন। তা হল ‘ক্ষতি কামানোর’ একটি আইন: স্ত্রীকে বিচ্ছেদ করতে গেলে তা যেন আইন-গতভাবে হোক (যেন স্ত্রী আইনগতভাবে পুনরায় বিয়ে করতে পারে)। অর্থাৎ আইনটি হল সর্বনিম্ন ন্যায্যতা রক্ষা করার একটি আইন, কিন্তু তা ঈশ্বরের আসল ইচ্ছা বুঝার আইন নয়। ঈশ্বরের আসল ইচ্ছা বুঝতে গেলে আদিপুস্তক ১ ও ২ অধ্যায়ে ফিরে যেতে হয়। একইভাবে আদি ৩:১৬ পদ বুঝতে গেলে আদিপুস্তক ১ ও ২ অধ্যায়ে ফিরে যেতে হয়।
আদিপুস্তক ১২-৫০ অধ্যায় অব্রাহামের পরিবার > স্বেচ্ছায় বিবাহ
  • আদি ১১:৩০            যদিও অব্রাহামের স্ত্রী সারা বন্ধা তবুও অব্রাহাম ৮৭ বছর পর্যন্ত একটি ছেলে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। শুধুমাত্র ৮৭ বছর বয়সে তিনি অবশেষে সন্তানের আশায় দ্বিতীয় স্ত্রী নেন।
  • আদি ১৭:১৯            অব্রাহামের দ্বিতীয় স্ত্রী হাগার দ্বারা যদিও ছেলে সন্তান জন্ম নেয় (ইশ্মায়েল) তবুও ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা এই সন্তানের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসতে রাজি না। ঈশ্বর প্রথম একবিবাহে সমর্পিত, তিনি সারাকে বাদ পড়তে দেবেন না।
  • আদি ২৪:৮,৫৮          ইসহাককে বিবাহ করার প্রস্তাব শুনে রিবিকার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে তিনি তাকে বিয়ে করতে চান কিনা।
  • আদি ২৪:৬৫-৬৭, ২৬:৮  ইসহাক ও রিবিকার বিবাহ সম্পর্কে আকর্ষণ ও প্রেম থাকে।
  • আদি ২৫:১              যখন ইসহাকের স্ত্রী রিবিকার সন্তান হয় না তখন ইসহাক তার বাবা অব্রাহামের মত দ্বিতীয় স্ত্রী না নিয়ে বরং ঈশ্বরের কাছে তার স্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করতে থাকে।
  • আদি ২৯:১৭-২০         যাকোব রাহেলকে ভালবাসেন এবং তার জন্য ৭ বছর পরিশ্রম করতে রাজি আছেন। তার মামা লাবনের প্রতারণা দ্বারা তাকে বহুবিবাহে বাধ্য করানো হয়, যদিও তা পরবর্তিতে মোশির আইন-কানুনে নিষেধ করা হয় (লেবীয় ১৮:১৮)। 
প্রজ্ঞার সাহ্যিত্ব
  • গীত ১২৮:৩    আশীর্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তির বর্ণনা এভাবে দেওয়া হয়: “তোমার বাড়ীর ভিতরের ঘরে তোমার স্ত্রী ফলে ভরা আংগুর গাছের মত হবে।
  • “ফলে ভরা আঙ্গুর গাছের মত” – স্ত্রীকে কেন এই রূপক দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে? আঙ্গুর গাছ মানে সবুজ, সতেজ, সুঅবস্থা, বৃদ্ধি, ফলবান হওয়া ইত্যাদি। হতে পারে এই রূপক এমন কি “আঙ্গুর রস” বা “মদের” আশক্ত করার বিষয়ও বুঝায়, অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত দেয়।
  • হিতো ৫-৭    ব্যভিচারের বিষয়ে সাবধানবাণী: ব্যভিচার মানে লুকিয়ে খারাপ কাজ করা, ভান করা, অল্পকালীন আনন্দ পাওয়া কিন্তু দীর্ঘদিনের জন্য মাত্র সমস্যা, বিপদ, লজ্জা, শাস্তি। ব্যভিবার ঝামেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
  • হিতো ৫:১৫-১৯   “তোমার নিজের জমা করা জল থেকেই তুমি জল খাও; তোমার নিজের কূয়ার টাটকা জল খাও। তোমার নিজের ফোয়ারার জল কেন বাইরে উপ্‌চে পড়বে? তোমার স্রোতের জল কেন গিয়ে পড়বে রাস্তায় রাস্তায়? তোমার সন্তানেরা তোমার একারই থাকুক, ব্যভিচারিণীদের তাতে ভাগ না থাকুক, তোমার ফোয়ারায় আশীর্বাদ থাকুক, তোমার যৌবনের স্ত্রীকে নিয়েই তুমি আনন্দ কর। সে ভালবাসাপূর্ণ হরিণী, সৌন্দর্য-ভরা হরিণী; তারই বুক তোমাকে সব সময় সন্তুষ্ট রাখুক, তুমি সব সময় তার ভালবাসায় মেতে থেকো।”
  • এখানে লেখক ব্যভিচারের বিপরীত দিকে দেখিয়ে একটি সুখী বিবাহের ছবি আঁকে: স্বামী এবং স্ত্রীর সুসম্পর্ক, বন্ধুত্ব এবং সন্তুষ্ট হওয়ার মত যৌনস্পর্ক। এখানে একটি একবিবাহ, অর্থাৎ বিশ্বস্ত ও পরস্পরের কাছে সম্পর্পিত বিবাহকে উৎযাপন করা হয়, যাতে বন্ধুত্ব, একতা এবং নিজেকে দান করার মনোভাব থাকে।
  • পরমগীত, ঠিক আগের পদগুলোর মত। কিছু বিষয়গুলো যা পরমগীতে যোগ দেওয়া হয়:
    • টেন্সন: একজনেরই সঙ্গে সমর্পিত ভালবাসার সম্পর্ক (একবিবাহ) বনাম বহুবিবাহ।
    • স্বামী-স্ত্রী পরস্পর্কে বার বার ডাকে, কথা বলে, আমন্ত্রণ দেয়, একসাথে সময় কাটাতে ও সম্পর্কে আগাতে প্রস্তাব দেয়। উভয় স্বামী এবং স্ত্রী উদ্যোগ নিতে থাকে, স্বক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসে ও পরস্পর্কে খুঁজে বের করে। পরমগীত দেখায় যে বিবাহে বন্ধুত্ব, কথাবার্তা বলা, একসাথে সময় কাটানো, একসাথে বের হওয়া, ‘রোমেন্টিক’ হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন যেন যৌন সম্পর্কও ভাল হতে পারে।
    • পরমগীত ৮:৬-৭ “সীলমোহরের মত করে তুমি আমাকে তোমার অন্তরে আর তোমার হাতে রাখ; কারণ ভালবাসা মৃত্যুর মত শক্তিশালী, পাওনা ভালবাসার আগ্রহ মৃতস্থানের মতই হার মানে না। তা জ্বলন্ত আগুনের মতই জ্বলতে থাকে, জ্বলতে থাকে জোরালো শিখার মত। এখানে শক্তিশালী রূপক দ্বারা দেখানো হয় যে বিবাহে ও যৌনতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে নামলে তাতে হালকাভাব আর নেওয়া যাবে না। কেন এখানে ভালবাসা মৃত্যু ও মৃতস্থানের সাথে তুলনা করা হয়? কারণ মৃত্যু কাউকে ‘ফেরত দেয় না’, মৃতস্থান থেকে আর কেউ ফিরে আসে না, অর্থাৎ এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে নামলে পরে তা ভাঙ্গা যায় না বা তা হালকাভাবে নেওয়া যায় না। ফিরে যাওয়া যায় না। “বন্যার জলও ভালবাসাকে নিভাতে পারে না; সব নদীও পারে না তা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে।” ভালবাসা শক্তিশালী, দৃঢ়, সহজেই ছাড়ে না। ভালবাসার সাথে অন্যের উপর দাবি আসে। “ভালবাসার জন্য যদি কেউ তার সব কিছু দিয়েও দেয় তবে তা হবে খুবই তুচ্ছ।” ভালবাসা মানে নিজেকে স্বেচ্ছায় দান করা, ভালবাসা কেনা যায় না, বিক্রিও করা যায় না। যদি কেউ ভালবাসা কিনতে চায় তা হল হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।
  • উপদেশক ৯:৯    “তোমার জীবনের সেই সব দিনগুলো তোমার স্ত্রী, যাকে তুমি ভালবাস, তার সংগে আনন্দে কাটাও” বিবাহ নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টি।
  • উপদেশক ৭:২৬-২৮   স্ত্রীলোকদের বিষয়ে শলোমনের নিচু দৃষ্টির একটি মারাত্মক বর্ণনা, যা তার সীমানার বাইরে বহুবিবাহ দ্বারা তৈরি।
হিতোপদেশ ৩১:১০-৩১ – গুণবতি, প্রশংসাযোগ্য স্ত্রী
  • একটি প্রশংসা ও সম্মানযোগ্য ঈশ্বরীয় স্ত্রীলোক কেমন, তার বর্ণনা এখানে দেওয়া হয়। লক্ষণীয় বিষয় যে স্ত্রীলোকটি হল শক্তিশালী, দক্ষতাশালী স্ত্রীলোক, কাজে ব্যস্ত ও তার অধিকার বুঝার লোক। স্ত্রীলোকটি দুর্বল, অক্ষম, অসহায় বা স্বামীর উপর অতি নির্ভরশীল নয়, ‘পিছনে থাকা’ বা ‘নিজের গুরুত্ব না জানা’ কোন স্ত্রীলোক নয়।
  • স্ত্রীলোকটি পরিশ্রমী, সাহসী ও প্রজ্ঞাবান। সে তার ভূমিকা, তার মূল্য, তার অধিকার, তার সুযোগ বুঝে। সে পরিকল্পনা করে, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে, উদ্যোগ নেয়, ঝুঁকি নিতে জানে, উৎপাদনশীল, উন্নতকারী, পাব্লিক অঙ্গনে কাজ করতে জানে, আইনি লেনদেন জানে, নিজেকে চালাতে এবং অন্যদের নেতৃত্ব দিতে জানে। সে কাজ করে, উৎপন্ন করে, ব্যবস্থা করে, দান দেয়, কাজ দেয় ও কাজের ফল উৎযাপন করে।
  • অনেক বার আমরা ঈশ্বরীয় স্ত্রীলোক একজন বশীভূত স্ত্রী বুঝায় যে বাসায় স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
  • হিতোপদেশের স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে বলা হয় যে তার স্বামী তার উপর উপর বিশ্বাস রাখে বা নির্ভর করে (হিতো ৩১:১১)। গুণবতি স্ত্রীর স্বামী সব স্ত্রীলোকদের সম্মানের চোখে দেখে “অনেক স্ত্রীলোক তাদের যোগ্যতা দেখিয়েছে” (হিতো ৩১:২৯) এবং এই ধরণের স্ত্রীর স্বামী হিসাবে নিজেকে ধন্য মনে করে। সবার চোখে স্বামীরা সম্মান ও গুরুত্ব পায় “তার স্বামী শহরের ফটকে সম্মান লাভ করেন”। শহরের ফটক ছিল যেখানে বিচার করা হত বা যে কোনো আইনগত কাজ করা হত।
মালাখি ২:১৩-১৬ – ঈশ্বর বিবাহ বিচ্ছেদ, অর্থাৎ চুক্তি ভেঙ্গে দেওয়াকে ঘৃণা করেন
  • ঈশ্বর এখানে ইস্রায়েলীয়দের চেতনা এবং ধমক দেন: তারা নিজেদেরকে ধার্মিক লোক হিসাবে উপস্থাপনা করে, কিন্তু তারা আসলে ঈশ্বরীয়ভাবে জীবন-যাপন করে না। তারা যৌবনকালের স্ত্রীকে অবহেলা করে, তার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ঈশ্বর এই ধরণের ব্যবহার কোনমতে গ্রহণ করবেন না।
  • ঈশ্বর তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন, তারা বিবাহের দিনে কি চুক্তিতে রাজি হল, কি প্রতিজ্ঞা দিল, শুরুতে তাদের বিবাহিত জীবন কত মিষ্টি ছিল।
  • স্ত্রীলোককে এখানে ‘স্বামীর সঙ্গী’ বলা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ থাকা উচিত, তারা একসাথে সময় কাটাবে, তারা পরস্পরের জীবন অংশ পাবে এবং তারা একসাথে সিদ্ধান্ত নেবে।
  • এছাড়া এই পদগুলোতে বিবাহের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং ঈশ্বরীয় সন্তান থাকার বিষয়ের মধ্যে সংযোগ করা হয়। এবং তাই তো: এমন সন্তান যা মা-বাবার মধ্যে জগড়া-বিভাদ দেখে, হয়তো নির্যাতন বা বিবাহ বিচ্ছেদ দেখে, এই ধরণের সন্তান সারা জীবন ধরে এই বিষয়ে ভোগে। তারা ভাঙ্গা আত্ম-বিশ্বাস, হীনমনতা, ভয়, অস্থিরতা, বিশ্বাস ও সাহসের অভাবে ভোগে, জগড়া যে সমাধান বা মিমাংশা করা যায়, যে আশা তাদের নেই। অবশ্যই সন্তান বড় হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে, কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদ প্রাপ্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য প্রকৃতপক্ষে সব কিছু আরো কঠিন।
  • বিবাহ বিচ্ছেদ এখানে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বা ‘চুক্তি ভাঙ্গা’, এবং এমন কি ‘অত্যাচার’ বা ‘হিংস্রতার’ সাথে যুক্ত করা হয়: ঈশ্বর যা এক করেছেন যদি আমরা আলাদা করি তবে তা ‘অত্যাচারের’ মত এবং এটা বড় বটি দিয়ে মাংস কেটে ফেলার মত, এমন কিছু যা দু’পাশের জন্য বিরাট ক্ষতি নিয়ে আসবে (আদি ২:২৪, মথি ১৯:৬, মার্ক ১০:৯)।
  • এই পদগুলো থেকে বুঝা যায় যে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ‘ধার্মিক হওয়া’ মানেই ‘প্রতিবেশীর প্রতি’, অর্থাৎ এখানে স্ত্রীর প্রতি ন্যায্য ব্যবহার করা।
  • “তোমরা যৌবনকালের স্ত্রী”র প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ো না। যৌকনতালের স্ত্রী মানে যখন স্ত্রী আরো যুবতি ছিলেন, হয়তো আরো সুন্দরি ছিলেন। ঈশ্বর স্ত্রীলোকদের সুরক্ষিত করে রাখেন এমন সময় যখন তাদের বয়স বাড়ে, যখন তারা তাদের career অথবা অন্য সুযোগ ছেড়ে দিয়েছে যেন তারা ছেলেমেয়ে ও সংসার দেখাশোনা করতে পারে। পরিবারে প্রাধান্য দিয়েছে বলে অনেক বার তাদের কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও বেতন কম, অনেক বছর পরে পুনরায় চাকরী জীবনে নামা কঠিন হতে পারে। ঈশ্বর ঘৃণা করে যখন স্ত্রীলোকদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়, যখন চুক্তি বা কথা ভাঙ্গা হয়, যখন তাদেরকে খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়, অবহেলা করা হয় অথবা বাদ দেওয়া হয়। স্বামীর চেয়ে প্রায়ই স্ত্রীর অবস্থা আরো জটিল বা ঝুঁকিপূর্ণ এবং তারা বেশি অন্যদের উপর নির্ভরশীল। তাই ঈশ্বর তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান।
  • ঈশ্বর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘৃণা করেন, অর্থাৎবিবাহ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ও গভীর আঘাত হয়, তা তিনি ঘৃণা করেন। বিবাহ বিচ্ছেদ হল ঈশ্বরকে ভুল উপস্থাপনা করা। ঈশ্বর বিচ্ছেদ প্রাপ্ত মানুষকে ঘৃণা করেন না, আঘাত প্রাপ্ত লোকদেরকে তিনি অবশ্যই ঘৃণা করেন না।
  • “ঈশ্বর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘৃণা করেন” এই কথা দ্বারা প্রাই নির্যাতিত পাত্রকে চাপ দেওয়া হয় যেন সে সহ্য করতে থাকে। কিন্তু এই পদগুলোতে ঈশ্বর তা করেন না। তিনি তার চেয়ে যে পাত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ব্যবহারের কারণে বিবাহ ভেঙ্গে যাওয়া হুমকিতে পড়েছে। মোশির আইন-কানুন অনুসারে (যাত্রা ২১:১০) যদি একজন পাত্র উল্লিখিত ব্যবহার করেন, তবে নির্যাতিত পাত্র নির্দোষভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারে: ব্যভিচার এবং অর্থনৈতিক বা আবেগের দিক দিয়ে অবহেলা (তার মধ্যে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন)।
  • যে শপথ, যুক্তি বা কথা আমরা করলাম, ঈশ্বর আমাদের অবশ্যই এতে দায়বদ্ধ করে রাখেন। মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না (লেবীয় ১৯:১২)! আমাদের মুখের কথা বা প্রতিজ্ঞা বিশ্বাসযোগ্য হতেই হয় যেমন ঈশ্বরের কথাই বিশ্বাসযোগ্য। আমাদের ‘হ্যাঁ’ যেন ‘হ্যাঁ’ হয়, আমাদের কথায় যেন ভার থাকে।

নতুন নিয়ম

ইফিষীয় ৫:২১-৩৩, কলসীয় ৩:১৮-১৯ – স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক
  • এই সম্পূর্ণ শাস্ত্রাংশ (ইফিষীয় ৫:২১-৬:৪) গ্রীক ভাষায় একটি বাক্য মাত্র, অর্থাৎ কোনো দাড়ি নেই।
  • ইফিষীয় ৫:২১ “খ্রীষ্টের প্রতি ভক্তির দরুন তোমরা একে অন্যকে মেনে নেওয়ার মনোভাব নিয়ে চল … তোমরা যারা স্ত্রী, … তোমরা নিজের নিজের স্বামীর অধীনতা মেনে নাও … ছেলেমেয়েরা, … তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল … তোমরা যারা দাস, তোমরা … ভয় ও সম্মানের সংগে অন্তর থেকে তোমাদের এই জগতের মনিবদের বাধ্য হয়ো।”
  • এমন কি অনেক ক্ষেত্রে ক্রিয়া বাদ দেওয়া হয়েছে (এটাকে ‘এলিপ্সিস্’ বলা হয়), অর্থাৎ সব কিছু সেই প্রথম ক্রিয়ার উপর ঝুলিয়ে আছে: “একে অন্যকে মেনে নেওয়া মনোভাবে চল” বা কেরী অনুবাদে “একজন অন্য জনের বশীভূত হও”। গ্রীকে বাক্য তাই এইভাবে: “একজন অন্য জনের বশীভূত হও … ঠিক তেমনি স্ত্রী স্বামীদের … ছেলেমেয় মাবাবাদের … এবং দাস মনিবদের”

• তাই প্রধান আদেশ (যার উপর সব ঝুলিয়ে আছে) হল: “একজন অন্য জনের বশীভূত হও”। পরস্পর্কে মেনে নেওয়া, পরস্পর্কে সম্মান, গুরুত্ব ও প্রাধান্য দেওয়া হল প্রধান আদেশ।
• বশীভূত হওয়া হল এমন মনোভাব যেখানে আমি স্বেচ্ছায় অন্যের প্রয়োজন নিজের প্রয়োজনের চেয়ে গুরুত্ব দেই। আমি স্বেচ্ছায় নিচেকে এবং নিজের প্রয়োজনগুলো অন্যের নিচে রাখি। এর অর্থ এইও: শুরু থেকে আমি যে অন্যের চেয়ে নিচে আছি, তা নয়। তা হয়ে বশীভূত হওয়ার কিছু থাকত না। বশীভূত হওয়া হল এমন কিছু যা দু’জন সমান লোকদের মধ্যেই স্বেচ্ছায়ভাবে ঘটে। উভয় স্বামী এবং স্ত্রীকে আদেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা একজন অন্য জনের বশীভূত হয়, অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর এবং স্ত্রী স্বামীর।
• প্রধান আদেশ দেওয়ার পরে ৩টি উদাহরণ দেওয়া হয়: স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে-মাবাবা এবং দাস-মনিব।
• এখানে স্ত্রীদেরকে স্বামীর বশীভূত হতে এবং সম্মান করতে বলা হয় এবং স্বামীদের স্ত্রীদেরকে যীশু যেমন ঠিক তেমনি ভালবাসতে বলা হয়েছে। যীশুর ব্যবহার তাই আদর্শ ও মাপকাঠি।
• যীশু কিভাবে পিতার বশীভূত হলেন এবং তাঁকে সম্মান দেখিয়েছেন? > তিনি পিতার ইচ্ছা মেনে নিলেন, তাঁকে প্রকাশিত করলেন, তাঁর প্রতিনিধিত্ব করলেন এবং প্রত্যেক মুহূর্তে বাধ্য ছিলেন (যেমন গেৎশিমানী বাগানে দেখা যায়)।

  • যীশু কিভাবে মানুষদের ভালবাসেছেন? > তিনি যত্নশীল ছিলেন, স্বার্থহীনভাবে সেবা করেছেন, গড়ে তুলেছেন, নিজের হৃদয় প্রকাশ করেছেন এবং নিজের জীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের জন্য। এই ধরণের ভালবাসা ১ করি ১৩ অধ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।
  • যদি স্বামী স্ত্রীকে বাস্তবে এই মনোভাবে ভালবাসেন তবে স্ত্রীর জন্য বশীভূত হওয়া বেশ সহজ হয়।
  • স্ত্রী ভালবাসার ব্যবহার না পেয়ে তারপরেও বশীভূত হবে? হ্যাঁ, কিন্তু তা অনেক কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
  • বশীভূত হওয়ার আদেশ দেখলে আমরা উপসংহারে আসি: স্বামী স্ত্রী থেকে বশীভূত হতে দাবি করতে পারে। স্বামী স্ত্রীকে জোর করতে পারে এই বিষয়ে। কিন্তু “ভালবাসা খারাপ ব্যবহার করে না, নিজের সুবিধার চেষ্টা করে না” (১ করি ১৩:৫)। একই বিষয় কলসীয় ৩:১৯ পদে এভাবে দেখানো হয়েছে: “তার সঙ্গে কোঠর ব্যবহার করো না”। দমন, দাবি বা জোর করা চলবে না, অন্যকে বশীভূত বানানোর কোনো আনন্দ বা সন্তোষ থাকা ঠিক হবে না।
  • পরস্পরের প্রতি বশীভূত হওয়ার আদেশের অবশ্যই সীমানা আছে – প্রত্যেক আদেশের একটি সীমানা আছে। যদি আমার স্বামী বা আমার স্ত্রী আমাকে দেবতা পূজার দিকে নিয়ে যেতে চায় তবে বশীভূত হওয়া চলবে না (দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:৬)। এছাড়া কোন অনৈতিক আচরণের দাবিতে বাধ্য হওয়া চলবে না, কোন বেআইনি আচারণে বাধ্য হওয়া যাবে না, অন্যের অনৈতিক আচরণে চুপও থাকা যাবে না।
  • ইফিষীয় ৫:২৮-২৯ পদ বলে যে স্ত্রীকে ভালবাসা মানেই নিজেকে ভালবাসা। একজন স্বামী যদি স্ত্রীকে গুরুত্ব, সম্মান ও ভালবাসা না দেয় তবে সে নিজেকে ক্ষতি করে।
  • পৌলের সমসাময়িক গীক বা রোমীয়দের স্বামী ও স্ত্রীর ব্যবহারের বিষয়ে কি নিয়ম ছিল? কিছু লেখাগুলো তাদের সেই নিয়মবলি বর্ণনা করা হয়। কিন্তু সেগুলো পৌলের নিয়মের চেয়ে অনেক ভিন্ন: গ্রীক ও রোমীয় চিন্তা অনুসারে একটি বিবাহে সব অধিকার স্বামীর এবং সব দায়িত্বগুলো স্ত্রীর।
  • তার চেয়ে পৌল কত ভিন্ন চিন্তা দেখান: উভয় স্বামীর ও স্ত্রীর অধিকার এবং দায়িত্ব আছে। পৌল স্ত্রীদের আদেশ দেন (প্রায় চার পদ ধরে) এবং স্বামীদের আদেশ দেন (প্রায় ৯ পদ ধরে)। এছাড়া যীশু স্বামীদের একটি অত্যন্ত উঁচু মানদণ্ডে দায়বদ্ধ করেন: যীশু যেমন মণ্ডলীকে ভালবেসেছেন ঠিক তোমনি স্বামীর স্ত্রীকে ভালবাসা উচিত।
  • একজন স্বামী স্ত্রীর অধীনতা দাবি করতে পারে না, কিন্তা তাকে অবশ্যই স্ত্রীকে ভালবাসতে হবে। একজন স্ত্রী স্বামীর ভালসাবা দাবি করতে পারে না, কিন্তু তাকে অবশ্যই স্বামীকে সম্মান করতে হবে। পৌলের কথা ‘দাবি করার মত বিষয়ের তালিকা’ নয়, পৌলের কথা বরং ‘প্রয়োজনীয় আচার-মনোভাবের আদেশ’। ‘আমি কি পেতে বা দাবি করতে পারি?’ পৌল তা দেখান না। তিনি বরং দেখান ‘আমার কি করা দরকার?’। একজন স্বামী যদি স্ত্রীকে গুরুত্ব না দেয় কিন্তু সে ইফিষীয় ৫ পদ দাঁড় করিয়ে তার স্ত্রীর অধীনতা দাবি করে তবে তা হল পৌলের কথা সম্পূর্ণ ভুল ব্যবহার করা।
  • একটি উদাহরণ: একজন স্ত্রী তার স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে একজন পুরোহিতের পরামর্শ চায় এবং তাকে বলা হয় যে, ‘বাইবেল বলে তার সব কিছু সহ্য করতে হবে’।
  • ঈশ্বর তাহলে কি চান? ঈশ্বর স্বামী-স্ত্রীর শক্তিশালী সম্পর্ক চান, ভালবাসায় ও সম্মানে। তিনি চান যেন শান্তি, একতা, সুসম্পর্ক, আন্তুরিকতা, সমতা ও পরস্পর্কে সমর্থন করার মনোভাব থাকে, এমন একটি পরিবেশ যেখানে দু’জনের স্বাধীনতা ও উৎসাহ থাকে।
  • কেন পৌল ইফিষীয় (এবং কলসীয়) চিঠিতে স্ত্রীদের বশীভূত থাকার আদেশ দিতে প্রয়েজন মনে করেন? হতে পারে গ্রীক ও রোমীয় সংস্কৃতির চেয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে স্ত্রীলোকেরা অনেক নতুন স্বাধীনতা এবং এমন কি পরিচর্যা করার সুযোগ পেয়েছিল। পুরুষ ও স্ত্রীলোক একসাথে আরাধনা করে বা পরিচর্যা করে (১ করি ১১:৫), তা গ্রীক ও রোমীয় জগতে একদম নতুন ছিল। হতে পারে স্ত্রীলোকেরা হঠাৎ করে মূল্য, গুরুত্ব ও স্বাধীনতা পেয়ে তা একটু বেশিও ব্যবহার করত। এই বিষয়ে চমৎকার একটি বই পড়ুন: ‘Why not women?’ by D.J. Hamilton)
  • কেন গ্রীক ও রোমীয়দের মধ্যে – এবং পৃথিবীর অধিকাংশ সংস্কৃতিতে পুরুষদের উচ্চতর বলে প্রাধান্য ও
    অধিকর দেওয়া হয়? হতে পারে তা পুরুষের শারীরিক ক্ষমতার কারণে। স্ত্রীলোকদের শারীরিক গঠন ভিন্ন এবং গর্বভস্থা, জন্মদান ও শিশুদের যত্ন নেওয়ার কারণে তাদের বিভিন্ন সময়ে সুরক্ষা ও সমর্থন প্রয়োজন। পৃথিবীতে মাতৃতান্ত্রিক সাংস্কৃতিও পাওয়া যায়, তবুও কম।
  • আর একটি চিন্তার বিষয়ে: মোশির ১০ আজ্ঞাতে, আইনের সারাংশ, দু’ই লিঙ্গের কাছে আলাদা আদেশ বলতে কিছু নেই। স্বামীরা যে নিজের ইচ্ছা বিস্তার করতে পারে, এই সম্বন্ধে আইন-কানুনে কিছু নেই।
  • মোট কথা: ইফিষীয় ৫ পরস্পরে বশীভূত হতে বলেন, এবং হ্যাঁ, স্ত্রীদের নিজের স্বামির বশীভূত হতে বলে। সমস্ত স্ত্রীলোকেরা সব ক্ষেত্রে কে কোন পুরুষের বশীভূত যে হতে হবে, তার কোনো আদেশ নেই।
১ পিতর ৩:১-৭ নরম ও শান্ত স্বভাব

“সেইভাবে তোমরা যারা স্ত্রী, তোমরা প্রত্যেকে স্বামীর অধীনতা মেনে নাও, যেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস না করলেও তোমাদের চালচলন খ্রীষ্টের দিকে তাদের টানে। এতে তোমাদের একটি কথাও বলতে হবে না, ২ কারণ তারা নিজেরাই তোমাদের পবিত্র জীবন আর ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখতে পাবে। ৩ নানা রকম চুলের বেণী, গয়নাগাটি বা সুন্দর সুন্দর কাপড়-এই সব বাইরের সাজ-পোশাক দিয়ে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ো না, ৪ বরং যার সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে যাবে না সেই নরম ও শান্ত স্বভাব দিয়ে তোমাদের অন্তরকে সাজাও। ঈশ্বরের চোখে সেটাই বেশী দামী। ৫ আগেকার যে ঈশ্বরভক্ত স্ত্রীলোকেরা ঈশ্বরের উপরে আশা রাখতেন তাঁরা নিজের নিজের স্বামীর অধীনে থেকে এভাবেই নিজেদের সাজাতেন; ৬ যেমন সারা অব্রাহামের বাধ্য ছিলেন এবং তাঁকে প্রভু বলে ডাকতেন। তোমরা যদি কোন রকম ভয়কে নিজের উপর কাজ করতে না দিয়ে যা ভাল তা-ই কর তবে এটাই প্রমাণ হবে যে, তোমরা সারার যোগ্য সন্তান।”

  • এই পদগুলোতে আবারও স্ত্রীদের স্বামীর বশীভূত হতে বলা হয়েছে। অধীনতা মেনে নেওয়ার আদেশের আবারও (যেমন সব জায়গায়) সীমানা দেওয়া আছে: ঈশ্বরকে অস্বীকার পর্যন্ত বশীভূত হওয়া দরকার নেই, অনৈতিক বা বেআইনি আচরণ পর্যন্ত বশীভূত হওয়া দরকার নেই, বরং অনৈতিক বা বেআইনি আচরণ প্রতিরোধ করা উচিত।
  • এখানে আর একটি বিষয় দেখানো হয়েছে: স্বামী অবিশ্বাসী হলেও (অর্থাৎ যদি মাত্র স্ত্রী বিশ্বাসী হয়ে যায়) স্ত্রী তার বশীভূত হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। নীতিটি এই: যে অবস্থা আমি নিজেকে খুজে পাই, সেখানে থেকে আমি ঈশ্বরীয় ব্যবহার দেখাব, সেবা করব, আমার ভূমিকা সর্বোচ্চভাবে পালন করে ঈশ্বরের জন্য সাক্ষী হব। এই ক্ষেত্রে তা একটি দেশের নাগরিক হওয়া মত: আমি দেশের আইনের প্রতি বাধ্য থাকব, আমার ভূমিকা গঠনমূলকভাবে পালন করব এবং আমার অধিকার উপযুক্তভাবে কাজে লাগাব।
  •  ১ পিতর ৩:৪ পদে বর্ণনা করা সেই “নরম ও শান্ত স্বভাব” মনোভাব কি? এর অর্থ এই নয় যে একটি হাসিখুশি বা প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব খারাপ, বরং এখানে দেখানো হয়েছে বরং এমন একজন যে তার নিজের ব্যক্তির ও তার ভূমিকার ক্ষেত্রে শান্তিতে আছে। এর বিপরীত হত একটি অতিচিন্তিত, অখুশি, অসন্তুষ্ট, অভিযোগকারী ও দাবিকারী ব্যক্তি, এমন কেও যে অন্যদের কথা বা আবেগ দ্বারা নিজের ইচ্ছায় বাধ্য করতে চায়।
  • পিতর এখানে বাহ্যিক সৌন্দর্য ও ধনের উপস্থাপনার চেয়ে ঈশ্বরীয় মনোভাবকে আদর্শ হিসাবে দাঁড় করান। স্ত্রীলোকদের এখানে এমন কিছু দ্বারা বিচার বা মূল্যায়ন করা হয় না যার ক্ষেত্রে তাদের তেমন কিছু করার নেই (যেমন সুন্দরি মুখ)। বরং তাদের এমন কিছু দ্বারা মূল্যায়ন বা করা হয়, যা সবার জন্য সম্ভব। জগতের সৌন্দর্যের আদর্শের সাথে প্রতিযোগিতা করা থেকে স্ত্রীলোকেরা মুক্ত, এমন একটি আদর্শ যা কঠোর ও অস্থায়ী।
  • একজন স্ত্রীলোককে জগতের সৌন্দর্যের আদর্শ অনুসারে বিচার করিও না! স্ত্রীলোকেরা: এই ধরণের মূল্যায়ন থেকে কোনো চাপ গ্রহণ করবেন না!
১ করিন্থীয় ৭:১-১১ – একবিবাহ, বিবাহ বাধ্যতামূলক নয়, ত্যাগ না করার আদেশ

“তোমরা আমাকে যে সব বিষয় সম্বন্ধে লিখেছ এবার তার উত্তর দিচ্ছি। যদি কেউ বিয়ে না করে তবে সে ভালই করে; ২ কিন্তু চারদিকে অনেক ব্যভিচার হচ্ছে, সেইজন্য প্রত্যেক পুরুষের নিজের স্ত্রী থাকুক আর প্রত্যেক স্ত্রীর নিজের স্বামী থাকুক। ৩ দেহের দিক থেকে স্ত্রীর যা পাওনা, তার স্বামী তাকে তা দিক; সেইভাবে স্ত্রীও স্বামীকে দিক। ৪ স্ত্রীর দেহ তার নিজের নয়, তার স্বামীর। একইভাবে স্বামীর দেহ তার নিজের নয়, তার স্ত্রীর। ৫ একে অন্যের সংগে দেহে মিলিত হতে অস্বীকার কোরো না; তবে কেবল প্রার্থনা করতে সুযোগ পাবার জন্য একমত হয়ে কিছুকাল আলাদা থাকতে পার। তার পরে আবার একসংগে মিলিত হয়ো, যেন নিজেদের দমনের অভাবে শয়তান তোমাদের পাপের দিকে টানতে না পারে। ৬ এই কথা আমি তোমাদের আদেশ দিয়ে বলছি না বরং অনুমতি দিয়েই বলছি। ৭ যদি সবাই আমার মত হত! কিন্তু ঈশ্বরের কাছ থেকে এক একজন এক একটা দান পেয়েছে। একজনের দান এক রকম, আবার অন্যজনের দান আর এক রকম।
৮ অবিবাহিত আর বিধবাদের আমি বলছি, তারা যদি আমার মত থাকতে পারে তবে তাদের পক্ষে তা ভাল। ৯ কিন্তু যদি তারা নিজেদের দমন করতে না পারে তবে বিয়ে করুক, কারণ দেহের কামনায় জ্বলে-পুড়ে মরবার চেয়ে বরং বিয়ে করা অনেক ভাল। ১০ যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের আমি এই আদেশ দিচ্ছি-অবশ্য আমি দিচ্ছি না, প্রভুই দিচ্ছেন-স্ত্রী যেন স্বামীর কাছ থেকে চলে না যায়। ১১ কিন্তু যদি সে চলেই যায় তবে আর বিয়ে না করুক কিম্বা স্বামীর সংগে আবার মিলিত হোক। স্বামীও তার স্ত্রীকে ত্যাগ না করুক।”

  • করিন্থ শহরে যৌনতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পাপ প্রচলিত ছিল। ফলে কিছু বিশ্বাসীরা উপসংহারে এসেছে যে যৌনতাই খারাপ, আসলে স্ত্রীলোকেরাই হল সমস্যা। একারণে কেউ কেউ বলত “কেউ যদি বিয়ে না করে তবে ভালই করে” (১ করিন্থীয় ৭:১)। করিন্থীয় মণ্ডলীতে দু’ই ধরণের ভুল চিন্তা প্রচলিত ছিল: কেউ কেউ স্ত্রীলোকদের ব্যবহার করত (১ করিন্থীয় ৫:১, ৬:১৫) এবং অপর পক্ষে কেউ কেউ স্ত্রীলোকদের খারাপ মনে করে এড়িয়ে চলত। পৌল দু’ই দিকে তাদের সাথে একমত নন: স্ত্রীলোকেরাই যে সমস্য, এমন নয়। বিবাহে যৌনসম্পর্ক যে সমস্য, তাও না। সমস্যা হল যৌন ক্ষেত্রে পাপ: ব্যভিচার, পরিবারের মধ্যে ব্যভিচার, পতিতার কাছে যাওয়া ইত্যাদি।
  • ১ করিন্থীয় ৭:২ পদ হল নতুন নিয়মে বিবাহের জন্য অতি মৌলিক একটি পদ: স্বামীর নিজের স্ত্রী থাকুক (একজনই!) এবং স্ত্রীর নিজের স্বামী থাকুক (একজনই!)। পৌল এখানে আদিপুস্তক থেকে আসা আদর্শ পুনরায় স্থাপন করেন: বিবাহ ভাল, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক ভাল, স্ত্রীলোকেরা এড়িয়ে যাওয়া মত ব্যক্তি নয়।
  • ১ করিন্থীয় ৭:৩-৭ পদগুলোতে পৌল স্বামী ও স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব বর্ণনা করেন, এবং তিনি তা একদম সমান্তরালভাবে করেন। স্বামীর যে অধিকার, স্ত্রীরও তা আছে। স্বামীর যে দায়িত্ব, স্ত্রীরও তা আছে। গ্রীক ও রোমীয়দের বিবাহ সম্বন্ধীয় নিয়মবলি বলত যে সব অধিকার স্বামীর এবং সব দায়িত্ব স্ত্রীর। তার তুলনায় পৌলের কথা কত না অদ্ভূত!
  • বিবাহের মধ্যে যৌন সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক, থাকা উচিত। শুধুমাত্র দু’ইজন রাজি হয়ে প্রার্থনার জন্য যৌন সম্পর্ক বন্ধ করা যায়, কিন্তু সীমিত সময়ের জন্য ও স্বেচ্ছায় মাত্র (১ করিন্থীয় ৭:৫)।
  • ১ করিন্থীয় ৭:৭-৮ পদে পৌল দেখান যে বিবাহ আবশ্যক নয়, পুরুষদের জন্য না (এটা গ্রীক বা রোমীয় সংস্কৃতিতে সম্ভব ছিল) এবং স্ত্রীলোকদের জন্যও না (এটি একদম নতুন!)। যিহূদীদের প্রচলিত চিন্তা ছিল যে বিবাহ ভাল, এব! যে বিবাহ না করা ও সন্তান না নেওয়াই হল পাপ (আদি ১:২৮)। তাই পৌল এখানে বিশেষভাবে স্ত্রীলোকদের এমন স্বাধীনতা দেন, যা তাদেরকে যিহূদী, গ্রীক ও রোমীয় সংস্কৃতিতে কোন মতে দেওয়া হত না। অদ্ভূত বিষয়!
  • ১ করিন্থীয় ৭:১০-১১ পদে পৌল স্বামী-স্ত্রীদের বলেন যেন তারা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ না হয়। গ্রীক বা রোমীয় আইন অনুসারে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশ সহজ ছিল: আলাদা হলেই তা বিচ্ছেদ হিসাবে গুনা হত। বিশ্বাসীরা যারা এই ধরণের করেছিল পৌল তাদের বিবাহটি পুনরায় মিলনের জন্য চেষ্টা করতে বা খোলা থাকতে বলেন। যদি পাত্র জোর করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান এবং অন্য দিকে নতুন বিবাহ করে তবে এই নিয়ম বাতিল? হতে পারে তাই।
১ করিন্থীয় ৭:১২-১৬ – যে বিবাহে আছ, তাতে থেকো!

“অন্য সবাইকে অবশ্য প্রভু বলছেন না কিন্তু আমি বলছি, যদি কোন ভাইয়ের খ্রীষ্টে অবিশ্বাসী স্ত্রী থাকে আর সেই স্ত্রী তার সংগে থাকতে রাজী থাকে, তবে সেই স্বামী যেন তাকে ত্যাগ না করে। ১৩ আবার যদি কোন স্ত্রীলোকের খ্রীষ্টে অবিশ্বাসী স্বামী থাকে আর সেই স্বামী তার সংগে থাকতে রাজী থাকে, তবে সেই স্বামীকে যেন সে ত্যাগ না করে; ১৪ কারণ স্ত্রীর মধ্য দিয়ে সেই অবিশ্বাসী স্বামীকে আর স্বামীর মধ্য দিয়ে সেই অবিশ্বাসী স্ত্রীকে ঈশ্বর বিশেষ চোখে দেখেন। তা না হলে তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো অশুচি হত; কিন্তু আসলে ঈশ্বর তাদের বিশেষ চোখে দেখেন। ১৫ কিন্তু যদি সেই অবিশ্বাসী স্বামী বা স্ত্রী চলে যেতে চায় তবে সে চলে যাক। এই রকম অবস্থায় সেই বিশ্বাসী ভাই বা বোন কোন বাঁধাবাঁধির মধ্যে থাকে না। ঈশ্বর তো আমাদের শান্তিতে থাকবার জন্যই ডেকেছেন। ১৬ স্ত্রী, তুমি কি করে জান যে, তোমার স্বামীকে তুমি উদ্ধার করতে পারবে না? স্বামী, তুমি কি করে জান যে, তোমার স্ত্রীকে তুমি উদ্ধার করতে পারবে না?”

  • এখানে এমন লোকদের কথা বলা হয় যারা বিশ্বাসী হয়েছে কিন্তু তাদের স্বামী বা স্ত্রী বিশ্বাসী হয় নি।
  • আবারও পৌল বলেন যেন তারা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ না হয়। যদি অবিশ্বাসী স্বামী বা স্ত্রী বিবাহ না ভাঙ্গে, তবে বিশ্বাসীরও বিবাহকে ভাঙ্গা উচিত না। হতে পারে করিন্থীয় বিশ্বাসীদের ‘অতিরিক্ত’ আচারণের দিকে প্রবণতা ছিল – পৌল তাদের এখানে বলেন যেন তারা ‘অপ্রয়েজনীয়’ বা ‘পাগল’ কিছু না করে বরং তারা নিজেদেরকে যে অবস্থায় খুঁজে পায়, সেই অবস্থায় যেন তারা থাকে।
  • পৌল আগে বলেছিলেন যে যৌন সম্পর্ক ‘শারীরিক বিষয় মাত্র’ নয়, তা আত্মিক বিষয়ও বটে (১ করি ৬:১৯)। তাই যদি হয় তবে একটি প্রশ্ন ওঠে: যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন বিশ্বাসী হয়েছে, কিন্তু অন্যজন হয় নি, তবে বিশ্বাসী পাত্র কি যৌন সম্পর্কে নিজেকে দূষিত করে? তা কি আপোষ করার মত বিষয়? পৌল উত্তরে বলেন: না (১ করিন্থীয় ৭:১৪), ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই।
  • এছাড়া পৌল তার আশা প্রকাশ করেন যে বিশ্বাসী পাত্রের ভাল ব্যবহার দেখে অবিশ্বাসী পাত্রও যীশুকে গ্রহণ করবে।
  • পৌলের এসব কথার অর্থ এই নয় যে, বিশ্বাসী অবিশ্বাসীকে বিবাহ করা অনুমোদিত। তিনি এমন লোকদের কথা বলেন যারা বিবাহিত অবস্থায় বিশ্বাসী হয়েছে এবং এভাবে সেই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
১ করিন্থীয় ৭:১৭-২৪ – যে অবস্থায় ঈশ্বর আমাদের ডেকেছেন, সেই অবস্থা থাকুক

“কাজেই, প্রভু যাকে যে অবস্থায় রেখেছেন এবং ঈশ্বর যাকে যে জন্য ডেকেছেন, সেই অনুসারেই সে চলুক। এই আদেশ আমি সমস্ত মণ্ডলীতে দিয়ে থাকি। কোন সুন্নত-করানো লোককে কি ডাকা হয়েছে? তবে সে সুন্নতের চিহ্ন মুছে না ফেলুক। ১৮ কোন সুন্নত-না-করানো লোককে কি ডাকা হয়েছে? তবে তার সুন্নত করানো না হোক। ১৯ সুন্নত করালেই বা কি আর না করালেই বা কি, ঈশ্বরের আদেশ পালন করাই হল আসল কথা। ২০ ঈশ্বর যাকে যে অবস্থায় ডেকেছেন সে সেই অবস্থাতেই থাকুক। ২১ তোমাকে যখন ডাকা হয়েছিল তখন কি তুমি দাস ছিলে? সেইজন্য দুঃখ কোরো না; অবশ্য যদি স্বাধীন হবার সুযোগ পাও তবে তা গ্রহণ কোরো। ২২ দাস থাকা অবস্থায় প্রভু যাকে ডেকেছেন সে প্রভুর দ্বারা স্বাধীন হয়েছে। সেইভাবে যাকে স্বাধীন অবস্থায় ডাকা হয়েছে সে খ্রীষ্টের দাস হয়েছে। ২৩ অনেক দাম দিয়ে তোমাদের কেনা হয়েছে; মানুষের দাস হয়ো না। ২৪ ভাইয়েরা, ঈশ্বর যাকে যে অবস্থায় ডেকেছেন সে ঈশ্বরের সামনে সেই অবস্থাতেই থাকুক।”

  • যদিও এখানে বিবাহ করার বা না করার বিষয় সরাসরি উল্লেখ নেই, কথাটি একটি বিবাহ সম্বন্ধীয় অধ্যায়ে পাওয়া যায়। তাই তা বিবাহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
  • পৌল এখানে স্বাধীনতা দেন: সুন্নত থাকলে বা না থাকলে সমস্যা নেই, স্বাধীন বা দাস হলে সমস্যা নেই, বিবাহিত থাকলে বা না থাকলেও সমস্যা নেই। পৌল চান না যেন বিশ্বাসীরা তাদের অবস্থা সীমানা বা বাধা হিসাবে দেখে, বরং তারা যেন অবস্থা বা পরিবেশে দোষ না দিয়ে বরং যে কোনো অবস্থায় ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে চলে এবং তা সুযোগ হিসাবে দেখে। পৌল দেখান যে, এমন কোন ‘অবস্থা’ বা ‘পরিস্থিতি’ নেই যা বিশ্বাসীকে আটকাতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাসী সঠিক মনোভাবে চলে।
  • দাস বা স্বাধীন হওয়ার বিষয়ে ইতিহাস থেকে একটি সাক্ষ্য: ধীরে ধীরে খ্রিষ্টান ধর্ম কিভাবে রোম রাজ্যে উঁচু শ্রেণীর পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছাল? উত্তর হল: বিশ্বাসী দাসদের দ্বারা। উদাহরণ: পের্পেটুয়া নামে একজন উঁচু শ্রেণীর মহিলা শহীদ সুসমাচার পেয়েছিলেন তার দাসই থেকে ।
১ করিন্থীয় ৭:২৫-৩৫ – বিবাহ করা আবশ্যক না, অবিবাহিত থাকার সুপারিশ
  • এখানেও পৌল পুরুষদের কাছে যা বলেন ঠিক তা-ই স্ত্রীলোকদের কাছেও বলেন। এখানেও পৌল বিশ্বাসীদেরকে বিবাহ করার বা না করার স্বাধীনতা দেন।
  • ১ করি ৭:২৬ পদে তিনি “ভীষণ দুঃখ-কষ্টের সময়” উল্লেখ করেন যা “আসছে”, ২৯ পদে তিনি বলেন “সময় খুবই কম”, ৩১ পদে তিনি বলেন “জগতের রূপ বদলে যাচ্ছে”। পৌলের কথায় এখানে একটি ‘জরুরী ভাব/বিষয়’ পাওয়া যায়, যা তিনি বিবাহ না করার একটি কারণ হিসাবে দেখান। তিনি কি মনে করেন যীশুর দ্বিতীয় আগমন হতে যাচ্ছে? ৪০-৬০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে বিভিন্ন দুর্ভিক্ষ দেখা গেল, হয়তো এর জন্য পৌল তা বলেন।
১ করিন্থীয় ৭:৩৬-৪০-  বিপত্নীক বা বিধবার বিষয়, নিজেই পছন্দ করার স্বাধীনতা

“যদি কেউ মনে করে সে তার অবিবাহিতা মেয়ের প্রতি ন্যায্য ব্যবহার করছে না, যদি মেয়েটির বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবার মত হয় আর যদি সে তাকে বিয়ে দেবার দরকার মনে করে, তবে সে নিজের ইচ্ছামতই কাজ করুক। মেয়েটির বিয়ে হোক, তাতে কোন পাপ হয় না। ৩৭ কিন্তু যে লোকের মন স্থির, যার উপর কোন চাপ নেই বলে সে নিজের ইচ্ছামতই কাজ করতে পারে, সে যদি তার মেয়েকে অবিবাহিতা রাখবে বলেই ঠিক করে থাকে তবে সে ভালই করে। ৩৮ তাহলে দেখা যায়, যে তার মেয়েকে বিয়ে দেয় সে ভাল করে, আর যে তাকে বিয়ে না দেয় সে আরও ভাল করে।
৩৯ স্বামী যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনই স্ত্রী তার কাছে বাঁধা থাকে। কিন্তু যদি স্বামী মারা যায় তবে সে যাকে ইচ্ছা তাকে বিয়ে করতে পারে, অবশ্য সেই লোক যেন প্রভুর হয়। ৪০ কিন্তু আমার মতে সে যেমন আছে যদি তেমনই থাকে তবে সে আরও সুখী হয়। আমার মনে হয় যে, আমি ঈশ্বরের আত্মার মধ্য দিয়েই এই কথা বলছি।”

  • বিধবাদের (এবং অবশ্যই বিপত্নীকদেরও) পুনরায় বিবাহ করার অধিকার আছে। কিন্তু তাদের যে পুনরায় বিবাহ করতে হবে, এমন নয়। এখানে পৌল যিহূদীদের নিয়মের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা দেন। যিহূদীদের সংস্কৃতি অনুসারে একজনের ভাই যদি মারা যায় এবং ভাইয়ের বিধবার যদি ছেলে-সন্তান না থাকে তবে তাকে বিবাহ করা উচিত।
  • পৌল এখানে উল্লেখ করে যে, হয়তো সবাই বিবাহ না করতে “মন স্থির” করতে সক্ষম নয়। করিন্থ শহরের মত একটি অতি অনৈতিকতা দিয়ে ভরা জায়গায় তার সম্ভাবনা অবশ্যই বেশি। তাই পৌল বিবাহ করার অনুমতি বা সুপারিশ দেন।
  • ল্যান্ডা কোপ থেকে উদ্ধৃতি: “যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সঠিক কারণেই বিয়ে না করি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বিবাহ অস্থিরতায় ভুগবে।”
  • ১ করিন্থীয় ৭:৩৯ পৌল এখানে একজন বিধবাকে (এবং সাথে যে কোনো স্ত্রীলোককে) নিজের পছন্দ অনুসারে বিবাহ করতে। মাত্র একটি শর্ত আছে: যেন সে একজন “প্রভুর লোক”, অর্থাৎ একজন বিশ্বাসী পুরুষকে পছন্দ করে বিবাহ করে।

অন্য দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে তুলনা

বাইবেলীয় চিন্তার চেয়ে অনেক ভিন্ন দৃষ্টি: গ্রীক দর্শনে স্ত্রীলোকদের ও বিবাহের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গী
  • পৌলের দয়ালু কথা ও নির্দেশনা চেয়ে গ্রীক দৃষ্টিভঙ্গী অনেক ভিন্ন ছিল: গ্রীক কাহিনী অনুসারে এমন একটি সময় ছিল যখন মাত্র পুরুষ ছিল, কোন স্ত্রীলোক ছিল না) এবং পুরুষেরা সুখে ও শান্তিতে একসাথে বাস করত।
  • যখন প্রমিথিউস নামে একজন মরণশীল পুরুষ দেব-দেবতাদের থেকে আগুন চুরি করেছিল, দেব-দেবতারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রমিথিউসের জন্য একটি মারাত্মক শাস্তি তৈরি করে: তারা একটি স্ত্রীলোক সৃষ্টি করে, যার নাম প্যান্ডোরা। প্যান্ডোরা অনেক সুন্দরি ও আকর্ষণীয়, সে ‘সেই মিষ্টি বীষ’ যা প্রমিথিউস পরিতহত করতে সক্ষম নয়। বরং সে প্যান্ডোরাকে গ্রহণ করবে এবং এই স্ত্রীলোক দ্বারা সে ধ্বংস হয়ে যাবে।
  • গ্রীক কাহিনীতে আরো পাওয়া যায় যে, পুরুষেরা দেব-দেবতাদের থেকে উৎপন্ন হয়েছে, কিন্তু স্ত্রীলোকেরা জীব-জন্তু থেকে উৎপন্ন হয়েছে, আসলে তারা ১০টি ভিন্ন ধরণের জীব-জন্তু থেকে আসে। ১০টি ধরণের জীব-জন্তুর মধ্যে মাত্র একটি ধরণের জীব-জন্তু থেকে ভাল স্ত্রীলোক উৎপন্ন হয়। তা হল মৌমাছি। বাকি ৯টি ধরণের জীব-জন্তু থেকে খারাপ স্ত্রীলোকেরা আসে।
  • গ্রীক সংস্কৃতিতে স্ত্রীলোকেরা কমবেশি সারা জীবন বাসার ভিতরে কাটাত। আসলে গ্রীক বাসায় আলাদা করা ‘স্ত্রীলোকদের ঘরগুলো’ ছিল। গ্রীক স্ত্রীলোকেরা মাত্র ‘প্রসংশাযোগ্য’ বলা হতে যখন তারা দৃষ্টিপাতের বাইরে থাকত, চুপ থাকত এবং কোনো দাবি না করত।
  • গ্রীক কাহিনীতে স্ত্রীলোকদের বেশিরভাগ নিজেই কোন আচরণ করতে না। তারা ছিল পুরুষদের পুরস্কার বা তারা ছিল পুরুষদের যুদ্ধ করার কারণ (যেমন: ত্রোয়ার যুদ্ধ ব্রিসেইস্ নামে একটি স্ত্রীলোকের জন্য ঘটে)। তাদের অনেক বার অসম্ভব ধরণের অবস্থায় ফেলা হত, যেমন নিজের স্বামীর খুনীর প্রেমিকা হওয়া ইত্যাদি।
  • গ্রীক কাহীনির চেয়ে স্ত্রীলোকদের বিষয়ে বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গী কত চমৎকার, ন্যায্য ও সম্মানজনক।
বাইবেলীয় চিন্তার চেয়ে অনেক ভিন্ন দৃষ্টি: রোমীয় দর্শনে স্ত্রীলোকদের ও বিবাহের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গী
  • স্ত্রীলোকদের বিষয়ে রোমীয় দৃষ্টিভঙ্গী আরো নীচু ছিল। রোমীয়দের একটি প্রধান দেবতা ছিল মঙ্গল (Mars বা Ares), যুদ্ধ, ক্ষমতা, দখল ও বিজয়ের দেব। রোমীয়দের একটি প্রদান দেবী ছিল শুক্ল (Venus বা Aphrodite), যৌনতা, প্রলোভন, সৌন্দর্য্য ও পতিতাদের দেবী। এই ধরণের দেব-দেবতা পূজা করলে অবাক লাগে না যে রোমীয় সমাজে যৌন ক্ষেত্রে অনেক অনৈতিকতা চলত।
  • বিবাহের বিষয়ে রোমীয়দের একদম নীচু চিন্তা ছিল। ব্যাভিচার ছিল অত্যন্ত সাধারণ এবং রোমীয়রা বলত যে ‘পুরুষদের স্ত্রী দরকার ছেলে-মেয়ে উৎপন্ন করার জন্য এবং প্রণয়িনী বা উপপত্নী দরকার আনন্দ-ভোগের জন্য’।
  • সম্রাট জুলিয়াস্ কৈসরের বিষয়ে বলা হত ‘তিনি সব স্ত্রীদের স্বামী এবং সব স্বামীদের স্ত্রী’।
  • এমন কি ছেলে-মেয়েদের বেশি গুরত্ব ছিল না। নদীর পাড়ে শিশু ত্যাগ বা শিশুকে নষ্ট করা রোমীয় সমাজে বেশ প্রচলিত ছিল, বিশেষভাবে যদি শিশু মেয়ে। এমন কি যাদের রোম শহরের স্থাপকারী হিসাবে ধরে হত (Romulus ও Remus), তাদেরই কাহীনি বলে যে, তাদেরকে টিবের নদীর পাড়ে ত্যাক করা হয়েছিল এবং একটি নেক্রেবাঘ তাদের খাওয়িয়ে বাচিঁয়েছিল।