বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ০১ – পয়ঃনিষ্কাশন
বিজ্ঞান ও বাইবেল
- বাইবেল বিজ্ঞান শেখানোর কোন পাঠ্যপুস্তক নয় যা খুটিনাটি তথ্য ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়।
- কিন্তু বাইবেল এমন কিছু নিয়ে কথা বলে যা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য ও সঠিক।
- তাছাড়া বাইবেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য ভিত্তি স্থাপন করে (‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ০৩’ দেখুন)।
- বিজ্ঞানের কোন কোন বিষয় বাইবেলে পাওয়া যায়? – পরিষ্কার-পরিছন্নতা, স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি, ভূগোল, ইতিহাস, চাষ, আবহাওয়া বিজ্ঞান, ইত্যাদি।
দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১২-১৪ পায়খানার জন্য ব্যবস্থা
“পায়খানার জন্য ছাউনির বাইরে তোমাদের একটা জায়গা ঠিক করে নিতে হবে। তোমাদের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে মাটি খুঁড়বার জন্য একটা কিছু রাখতে হবে। পায়খানা করবার আগে তোমরা সেটা দিয়ে গর্ত করে পায়খানা মাটি চাপা দিয়ে দেবে। তোমাদের রক্ষা করবার জন্য এবং তোমাদের শত্রুদের তোমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের ছাউনির মধ্যে ঘুরে বেড়ান। সেইজন্য তোমাদের ছাউনি পবিত্র অবস্থায় রাখতে হবে যাতে তোমাদের মধ্যে জঘন্য কিছু দেখে তিনি তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন।”
কি কি আদেশ দেওয়া হয়েছে?
- ছাউনির বাইরে।
- নির্দিষ্ট, চিহ্নিত স্থানে।
- একটি লাঠি বা যন্ত্র দ্বারা মাটিতে একটি গর্ত খুড়তে হবে।
- পায়খানা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।



আদেশগুলি কোন উদ্দেশ্যে?
- যেন দূর্গন্ধ ছড়িয়ে না পড়ে।
- যেন নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়।
- যেন পরবর্তীতে অন্যদের স্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি তৈরি না করে।
- যেন ঈশ্বরের উপস্থিতি না হারাই (দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১৪)।
- যেন ছাউনি পবিত্র থাকে (দৈনন্দিন ব্যবহারিক বিষয় ও ঈশ্বরের বিষয় যুক্ত আছে)।

কেন আদেশটি দেওয়া হয়েছে? প্রধান কারণ কি কি?
- জীবাণু সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য > রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য।
- মুখ দিয়ে সংক্রামিত রোগ বন্ধ করার জন্য (পায়খানা > পা > হাত > মুখ / পায়খানা > পশু > পা > হাত > মুখ)।
- পানিবাহিত রোগ বন্ধ করার জন্য (পায়খানা > পানি > ধোঁয়ার বা খাবার পানি > মুখ)।
আদেশ পালন করলে কি ধরণের রোগ প্রতিরোধ বা সংক্রমণ কমানো যায়?
- সব ধরণের ডায়রিয়া। বহুবছর ধরে ডায়রিয়া ছিল শিশু মারা যাওয়ার এক নম্বর কারণ (০-৫ বছর বয়স)। এটা ব্যাক্টিরিয়ার কারণে হোক (কলেরা, bacterial dysentry, Shigella), ভাইরাসের কারণে হোক (Rotavirus) বা এ্যমিবার কারণে (Amoebic dysentry) হোক।
- সব ধরণের কৃমি (কেচো কৃমি, বক্র কৃমি, চাবুক কৃমি, ফিতা কৃমি, Strongyloides, …)।
- টায়ফয়েড (Salmonella typhi)।
- হেপাটাইটিস এ (কিছু ক্ষেত্রে)।
- পোলিও (কিছু ক্ষেত্রে)।
চিন্তা করুন যদি বাংলাদেশে এই সব রোগ না থাকত তবে কেমন হত! এত সরল আদেশ বা পদ্ধতি কত পার্থক্য করতে সক্ষম!
পায়খানার বিভিন্ন প্রচলিত পদ্ধতি
- ‘খোলা স্থানে পায়খানা’: এটা সবচেয়ে খারাপ পদ্ধতি। ছাউনির বাইরেও না, নির্দিষ্ট স্থানেও না, মাটিতে গর্তও না, মাটি দিয়ে ঢাকাও না।
- নালায় পায়খানা: নির্দিষ্ট স্থান, কিন্তু গর্তে না বরং পানিতে। পশু ও মাছির প্রবেশের সুযোগ। পায়খানা ঢাকা না।
- ঝুলন্ত পায়খানা: নির্দিষ্ট স্থান, কিন্তু গর্তে না, ঢাকা না > পানি, পশু, মাছির অবাধ প্রবেশ।
- পিট ল্যাট্রিন (Pit latrine): আরো ভাল যেহেতু নির্দিষ্ট স্থান, মাটিতে গর্ত, কিন্তু ঢাকা না > মাছির অবাধ প্রবেশ।
- বায়ু চলাচলকারী পিট ল্যাট্রিন (Ventilation improved pit latrine): খুব ভাল, মাছি যদিও ঢুকতে পারে পাইপের উপরের নেটের কারণে আর বের হতে পারে না।
- ফ্লাশ টয়লেট: ভাল, কিন্তু পায়খানা মাটিতে চাপা ফেলা হয় না বরং পানিতে ফেলা হয়। যদি পানি সেপটিক ট্যাংকে যায়, ভাল।
- পানি ভিত্তিক পদ্ধতি না মাটি ভিত্তিক পদ্ধতি ভাল?







পায়খানা ব্যবস্থার গুরুত্ব
- বিষয়টি কি গুরুত্বপূর্ণ? বর্তমান সময়ে? আধুনিক পৃথিবীতে?
- উদাহরণ: ইউরোপে শিশু মারা যাওয়ার হার (মোটামুটিভাবে)।
- পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও শিশু মারা যাওয়ার হারের সাথে পরস্পর সম্পর্ক আছে।
- আমরা বলি: ওষুধের কারণে শিশু মারা যাওয়ার হার কমে গেছে। কিন্তু: প্রথম Antibiotic (জীবাণুরোধক) আবিষ্কার কখন? পেনিসিলিন, ১৯৪১-১৯৪৩ সাল থেকে পাওয়া যায় > তার আগে হার কমে আসল।
- সুইজারল্যান্ডে স্থায়ী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রথম ১৯৩০ সালের দিকে।
- পায়খানার জন্য সুব্যবস্থা হলো গণস্বাস্থ্যের একটি প্রধান বিষয়।
গণস্বাস্থের ৪টি স্তম্ভ (4 pillars of public health)
- বিশুদ্ধ খাবার পানি।
- পয়ঃনিষ্কাশন ও ময়লার ব্যবস্থা।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
- পুষ্টি।
- এই ৪টি বিষয়ের যদি সুব্যবস্থা করা যায়, কমবেশী ৯০ ভাগ রোগ এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে।
- শুধুমাত্র ১০% রোগের জন্য এর চেয়ে বড় ব্যবস্থা বা চিকিৎসা প্রয়োজন।
- এইটা সুখবর: এই ধরণের সহজ ও সস্তা পদ্ধতির মাধ্যমে গণস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বড় পার্থক্য নিয়ে আসা যায়! এমন না যে ডাক্তার না হলে সুস্থ থাকা যায় না। এমন না যে হাসপাতাল বসানোর টাকা না থাকলে সুস্থ থাকা যায় না।
‘আত্মিক কাজ’ মানে কি?
- ঈশ্বরের পায়খানা ব্যবস্থা সম্বন্ধে কি চিন্তা আছে? তিনি এই ধরণের ব্যবহারিক বিষয় কি দৃষ্টিতে দেখেন? গণস্বাস্থ্যের জন্য চিন্তা করা কি ‘জাগতিক কাজ’? বা তা কি ‘আত্মিক কাজ’? > ঈশ্বর পায়খানার সুব্যবস্থার জন্য চিন্তিত! গণসাস্থ্যের জন্য কাজ হলো তাঁর ইচ্ছা! এইটা ‘আত্মিক’ কাজ!
- ঈশ্বর এই ধরণের আদেশ পালন করার জন্য আমাদের কিভাবে উৎসাহ দেন? তার উপস্থিতি দিয়ে: তিনি আমাদের মধ্যে বাস করতে চান (দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১৪)।
- কিভাবে জানব যে ঈশ্বর উপস্থিত? শক্তিশালী আরাধনায় তিনি কি উপস্থিত? অভিষিক্ত প্রচারে তিনি কি উপস্থিত? > ঈশ্বর এখানে বলেন যে টয়লেট পরিষ্কার হলেই তিনি উপস্থিত!
- আপনি টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরে টয়লেটের অবস্থা কেমন থাকে?
- আপনি কি মনে করেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়? আপনি কি মনে করেন এই ব্যাপারটির সাথে আত্মিক জীবনের কোন মিল নেই? আপনি কি ‘ঈশ্বরের চেয়ে আত্মিক’? > যদি ঈশ্বর এই ব্যাপারে গুরুত্ব দেন, আপনারও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
- আমরা প্রার্থনা করি: ‘প্রভু, তুমি আমাকে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা কর! কিন্তু ঈশ্বর বলেন: ‘আরে! হাত ধোও!’
- আমরা আশ্চর্য কাজ দেখতে চাই, ঈশ্বর আমাদের কারণ ও ফলাফল শেখাতে চান, প্রজ্ঞা ও স্বনিয়ন্ত্রন শেখাতে চান।
- ঈশ্বর আমাদের অযত্ন ও অলসতার জন্য কোন আশ্চর্য কাজ করতে রাজী নন। যেখানে আমার কিছু করার নেই এমন পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করলে, তার জন্য ঈশ্বর আশ্চর্য কাজ করবেন।
বুঝে বাধ্য হওয়া বা না বুঝে বাধ্য হওয়া?
- রোগ সংক্রমণে জীবাণুর ভূমিকা আবিষ্কার করা হয়েছে মাত্র ২০০ বছরও হয় নি।
- ইস্রায়েলীয়রা কি জীবাণু সম্বন্ধে জানত? ঈশ্বর তাদের জীবাণু সম্বন্ধে বুঝিয়েছেন? > না।
- এই আদেশ পালন করলে ইস্রায়েলীয়দের স্বাস্থ্য অন্য জাতিদের চেয়ে অনেক ভাল হবে, যদিও তারা তার কারণ বুঝত না।
- আদেশ বা আইনের পিছনের কারণগুলি না বুঝে পালন করলে কি কোনো লাভ আছে? হ্যাঁ।
- আইন পালনে কাজ হয়, কারণ বুঝে বা না বুঝে: বস্তু জগতে আচরণের ফলাফল বাস্তবে প্রকাশিত হয়।
- তাই ঈশ্বরের আইনে অন্ধভাবে বাধ্য হব? হ্যাঁ ও না।
- ‘হ্যাঁ’ এই অর্থে: বাধ্যতা ঠিকই একটি আশীর্বাদ নিয়ে আসে, আমি তার কারণ বুঝি বা না বুঝি।
- ‘না’ এই অর্থে: যে ঈশ্বর অবশ্যই চান যে আমি তাঁর আইন আরও ভালভাবে বুঝি ও বুঝে আইনের প্রতি আরো মনে প্রাণে বাধ্য হই।
- ‘অন্ধভাবে বাধ্য হওয়া’ নিয়ে সমস্যা কি?আমি আদেশকারীকে কঠিন মনে করতে পারি।
- পালন না করার প্রলোভন বেশি থাকবে।
- পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার কিছু বলার থাকবে না।
- আমি ভালভাবে শেখাতে পারব না।
পরবর্তীতে আরো আবিষ্কার
- এই আইন যদি আমরা ২০০ বছর আগে পড়তাম, তার একটাও কারণ আমরা দেখাতে পারতাম না।
- মেডিকেল বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে বলে আমরা এখন আইনের পিছনে বিভিন্ন কারণ বুঝতে পারি।
- তা যদি হয়: এমন আইন আছে আমরা এখনও যার কোন কারণ দেখি না, তা সম্বন্ধে কি বলব?
- আমাদের ঈশ্বরের বাক্যকে ও তাঁর আইনকে সম্মান করা দরকার যদি তা বুঝি অথবা নাও বুঝি।
- ঈশ্বরের বাক্য ও আইনকে আরো বুঝার জন্য আমাদের আকাঙ্খা থাকা দরকার।
- হয়তো আরও ৫০ বছর পরে আমরা এই আইনের পিছনের কারণগুলি আবিষ্কার করতে পারব।