বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ০২ – শরীরের স্রাব ও রোগ সংক্রমণ
লেবীয় ১৫ অধ্যায় – শরীর থেকে স্রাব নিঃসরণ
ক্ষরণ বা স্রাব (discharge): তরল জাতীয় এমন কিছু যা শরীর থেকে বের হয় (পায়খানা, প্রস্রাব, রক্ত, বীর্যপাত, থুথু, চোখের জল, ঘাম ইত্যাদি)
- লেবীয় ১৫:২-১২ পুরুষের রোগের কারণে স্রাব।
- লেবীয় ১৫:১৬-১৮ পুরুষের সাধারণ স্রাব (বীর্যপাত)।
- লেবীয় ১৫:১৯-২৪ মহিলাদের সাধারণ স্রাব (মাসিক)।
- লেবীয় ১৫:২৫-৩০ মহিলা রোগের কারণে স্রাব।
- শুচি ও অশুচির পার্থক্য করা হচ্ছে।
কিভাবে একজন শুচি থেকে অশুচি হয়? – শুচি > অশুচি
- কি কি বা কে অশুচি?
- এমন একজন যার স্রাব হচ্ছে।
- যে কোন জিনিস যা সে স্পর্শ করে।
- যে কোন জিনিস বা ব্যক্তি যে জিনিসটি ধরে।
- তাই অশুচি অবস্থায় ছোঁয়ার বা স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণ হয় বা একজনের থেকে আর একজনের কাছে যায়।
- কি কি অশুচি?
- পায়খানা, প্রস্রাব, রক্ত, বীর্যপাত, থুথু – লেবীয় ১৫ অধ্যায়
- লাশ, হাড়, কবরস্থান – গণনা ১৯:১৬, ৩১:১৯
- চামড়ায় ঘা, ক্ষত, কোন অংশ কাটা, চামড়ার রোগ – লেবীয় ১৩ অধ্যায়
- ছত্রাক (Fungus) – লেবীয় ১৪ অধ্যায়
- যুদ্ধে লুট করা মাল – গণনা ৩১:১৯-২০
- যে কোন জিনিস বা ব্যক্তি যে এই তালিকার কোন কিছু স্পর্শ করে।

কিভাবে অশুচি অবস্থা থেকে আবার শুচি হওয়া যায়? – অশুচি > শুচি
- কিভাবে একটি ব্যক্তি বা জিনিস আবার শুচি হয়ে যায়?
- ধোয়ার মাধ্যমে (কাপড়, কাঠের পাত্র)।
- বাদ দিয়ে বা ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে (মাটির পাত্র)।
- আগুন দিয়ে পুড়িয়ে (ধাতুর জিনিস)।
- অশুচি থেকে শুচি হওয়া যায় কিভাবে?
- প্রথমত শুচি ও অশুচি জিনিস আলাদা করা।
- ধোয়া, স্নান, ইত্যাদি।
- সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করা।



আসলে ‘অশুচি’ মানে কি?
- কেন এসব আদেশ? অথবা এর আগে চিন্তা করুন।
- ‘অশুচি’ মানে কি? মানে ‘খারাপ’? ‘মন্দ’? ‘পাপের কাজ’? ‘অবৈধ’? ‘অপবিত্র’?
- একটি শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করা কি ‘খারাপ কাজ’?
- স্বামী-স্ত্রীর যৌন-সম্পর্ক কি ‘মন্দ’?
- একটি মহিলার মাসিক কি ‘অপবিত্র’?
- একটি রোগীকে সেবা করা কি ‘অবৈধ’?
- একটি মৃত আত্মীয়কে শেষ স্নান দেওয়া কি পাপের কাজ? … না!
- তাহলে ‘অশুচি’ মানে কি? উত্তর সরল: অশুচি মানে ‘অপরিষ্কার’, ‘হতে পারে দূষিত’, ‘জীবাণুও থাকতে পারে’।
আইনটির গুরুত্ব কি?
- কেন ‘হতে পারে’ বা ‘হয়তো’ বলা? – কারণ ময়লা বা জীবাণু চোখে দেখা যায় না। পরীক্ষা করা যায়, কিন্তু তা হল কষ্টসাধ্য বিষয় ও দামী। আর এই সুযোগটি আমরা মাত্র ২০ বছর আগে পেয়েছি।
- এইজন্য, নিশ্চিত না বলে ধারণা করা হচ্ছে যে জীবাণু উপস্থিত।
- মানুষের শরীরের স্রাবে সহজে জীবাণু থাকতে পারে, বিশেষভাবে যদি রোগ বা আঘাতের কারণে কোন রকম স্রাব হয়।
- মরা মানুষ অশুচি কেন? – কারণ তাদের মারা যাওয়ার কারণ আমরা নাও জানতে পারি। যেহেতু মৃত মানুষের দেহে পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাই তা অশুচি।
- জীবাণু বেশিরভাগ স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, যদিও বাতাস দিয়ে অথবা পোকামাকড় (যেমন: মশা, মাছি, …) বা জন্তুর মাধ্যমে (যেমন: ইঁদুর, পাখি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি) ছড়াতে পারে।
- কেন অশুচি থেকে শুচি হওয়ার নিয়মগুলি দেওয়া হয়েছে? এটা কিভাবে কার্যকারী?
- যা অশুচি আলাদা রাখা > যেন জীবাণু আরও ছড়িয়ে না পড়ে।
- ধোয়া, স্নান, পরিষ্কার করা > যেন উপস্থিত জীবাণু নষ্ট হয়।
- সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা > যেন উপস্থিত জীবাণু মারা যায়।
- অধিকাংশ জীবাণু একবার শরীর থেকে বের হয়ে গেলে অল্প কিছুক্ষণ পরে এমনিই তা নষ্ট হয়ে যায়।





বর্তমানে আমরা এগুলি (অশুচি থেকে শুচি) কিভাবে করে থাকি?
- আমদের আজকাল সাবান ও এন্টিসেপ্টিক আছে যা দ্বারা জীবাণু মেরে ফেলা যায় (লাইফবয়, ডেটল, স্যাভলন, হেক্সিসল ইত্যাদি)।
- এন্টিসেপ্টিক জীবাণু মেরে সংক্রমণ বন্ধ করে…এন্টিবায়োটিক শরীরে উপস্থিত জীবাণু মেরে ফেলে।
- তাই আধুনিক জগতে আমাদের অনেক ‘তাড়াতাড়ি কার্যকারী পদ্ধতি’ আছে যা আগে ছিল না কিন্তু নীতিমালা একই: জীবাণুর সংক্রমণ বন্ধ করতে হয় ও জীবাণু নষ্ট করতে হয়।
- উদাহরণ: একজন ডাক্তার যতবার রোগী স্পর্শ করেন ততবার অশুচি হয়ে যান। তাই প্রত্যেক রোগী দেখার পরে এন্টিসেপ্টিক ব্যবহার করা উচিত।
- উদাহরণ: একটি শিশুর যত্ন নেয়া। শিশুর প্রস্রাব বা পায়খানা পরিষ্কার করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, বিশেষভাবে খাবার বানানোর আগে।
- উদাহরণ: একটি মৃত মানুষকে সম্মানের সঙ্গে শেষ স্নান করানো, কিন্তু পরে নিজের ক্ষেত্রেও পরিষ্কার-পরিছন্নতা রক্ষা করা আবশ্যক।
প্রয়োগ
আধুনিক সময়ে এর প্রয়োগ কি হতে পারে? ধরুন আপনার ডায়রিয়া হয়েছে। তাই আপনাকে কি করতে হবে?
- নীতিমালা: নিশ্চিত করা যেন কেউ আপনার মাধ্যমে রোগে আক্রান্ত না হয়। যেন কারও ক্ষতি না করি, যেন অন্যদেরকে ঝুঁকিতে না ফেলি।
- নীতিমালা: রোগীর নিজ দায়িত্ব অন্যদের তার রোগ সম্পর্কে জানা তা নিশ্চিত করা। অন্যরা তা জানবে না আপনার কি রোগ হয়েছে, অন্যদের পক্ষে তা নিশ্চিত করা সম্ভবও না।
- নীতিমালা: রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা ভাল। আগের যুগে চিকিৎসা করার সুযোগই ছিল না।
- সে একই নীতিমালা নতুন নিয়মের ভাষায় বললে কেমন হবে?
- মার্ক ১২:৩১ “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।”
- ফিলিপীয় ২:৩“নিজের লাভের আশায় বা অহংকারের বশে কিছু কোরো না, বরং নম্রভাবে অন্যকে নিজের চেয়ে বড় স্থান দাও।”
- রোমীয় ১৪:১৯-২০“এইজন্য যা করলে শান্তি হয় এবং যার দ্বারা আমরা একে অন্যকে গড়ে তুলতে পারি, এস, আমরা তারই চেষ্টা করি। কোন খাবারের জন্য ঈশ্বরের কাজ নষ্ট কোরো না। সব খাবারই শুচি, কিন্তু কেউ কিছু খেয়ে যদি অন্যের মনে বাধার সৃষ্টি করে তবে তা খাওয়া তার পক্ষে অন্যায়।”
নতুন নিয়মের চিন্তা
- কিন্তু যীশু যখনরোমীয় ১৪:১৯-২০ পদে ফরীশীদের সাথে তর্ক করেন, তিনি কি শুচি-অশুচির নিয়ম বাদ দিতে বলেন?
- আসলে: যীশু ও ফরীশীদের অধিকাংশ তর্ক মোশির নিয়ম-কানুন সম্বন্ধে না বরং পরে যুক্ত করা ও মানুষের বানানো নিয়ম বা ঐতিহ্য নিয়ে।
- যীশু তাদের দোষ ধরেন: আইনের আসল উদ্দেশ্য না বুঝে নিজেকে ধার্মিক মনে করা ও নিয়মের প্রতি অন্ধভাবে বাধ্য হওয়া।
- যীশু তাদের দোষ ধরেন: তাদের দৃষ্টিতে ‘অশুচি’ শব্দের অর্থ হয়ে গেছে ‘মানুষকে অগ্রাহ্য করা’ বা মানুষকে নিচু চোখে দেখা’। উদাহরণ: কুষ্ঠরোগীদের কাছ থেকে মানুষেরা দূরে থাকত, কিন্তু আইন তা বলে না। আইন শুধুমাত্র বলে যে কুষ্ঠরোগী অশুচি, তাই তাকে স্পর্শ করার পরে শুচি হওয়ার নিয়ম মানতে হবে।
শুচি অশুচি নিয়মের পিছনে ঈশ্বরের হৃদয়
- চিন্তা করুন: এই নিয়ম পালন করলে ইস্রায়েলের গণস্বাস্থ্য কত প্রভাবিত হত!
- ইস্রায়েলের অবস্থা যদি অন্য দেশদের চেয়ে এত ভাল থাকত, তা অন্য জাতিদের কাছে কি প্রকাশ করত?
- নিজের জাতির জন্য ঈশ্বরের হৃদয় কি? অন্য জাতিদের জন্য তাঁর হৃদয় কি?
- দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১৫ “সদাপ্রভু সব রোগ থেকে তোমাদের মুক্ত রাখবেন। মিসরে যে সব ভীষণ রোগ তোমরা দেখেছ তা তিনি তোমাদের উপর হতে দেবেন না।”
- দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৬-৮ “এগুলো (আদেশ) পালন করবার মধ্য দিয়ে অন্যান্য জাতির লোকদের সামনে তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রকাশ পাবে। তারা এই সব নিয়মের বিষয় শুনে বলবে, ‘জাতি হিসাবে এরা সত্যিই মহান এবং জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান।’ এমন আর কোন মহান জাতি আছে যাদের দেব-দেবতারা তাদের কাছে থাকে, যেমন করে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকলে তাঁকে কাছে পাওয়া যায়? এমন আর কোন মহান জাতি আছে যাদের নিয়ম ও আইন-কানুন তোমাদের কাছে আজকে আমার দেওয়া নিয়ম-কানুনের মত ন্যায়ে ভরা?”

আধুনিক উদাহরণ
ধরুন আপনি একটি ঘূর্ণিঝড়ের পরে একটি চরে আটকে পড়লেন। সব যোগাযোগ বন্ধ। কোন ওষুধ বা এন্টিসেপ্টিক নেই। সেখানে একটি পরিবার কলেরায় আক্রান্ত। কি করবেন? – লেবীয় পুস্তক ১৫ অধ্যায়ে দেওয়া নিয়ম ছাড়া কোন উপায় নেই।