বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ০৪ – পুষ্টি

 
আদি ১:২৯-৩০         প্রথমে মানুষ গাছ-পালা জাতীয় খাবার খেত

এর পরে ঈশ্বর বললেন, দেখ, পৃথিবীর উপরে প্রত্যেকটি শস্য ও শাক-সবজি যার নিজের বীজ আছে এবং প্রত্যেকটি গাছ যার ফলের মধ্যে তার বীজ রয়েছে সেগুলো আমি তোমাদের দিলাম। এগুলোই তোমাদের খাবার হবে। ৩০ পৃথিবীর উপরের প্রত্যেকটি পশু, আকাশের প্রত্যেকটি পাখী এবং বুকে-হাঁটা প্রত্যেকটি প্রাণী, এক কথায় সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর খাবারের জন্য আমি সমস্ত শস্য ও শাক-সবজি দিলাম।আর তা-ই হল।

  • মানুষের খাবার: শস্য, শাক-সবজী, গাছ যার বীজ আছে। এখানে শস্য ও বীজে গুরুত্ব দেওয়া হল কারণ মানুষের হজম শুধুমাত্র শস্য ও বীজ থেকে গ্লুকোজ পেতে পারে (যেহেতু মানুষের শরীরে 1,4 beta Amylase enzyme নেই, যা সেলুলোজ থেকে গ্লুকোজ নিয়ে আসতে পারে)। শাক-সবজী বা গাছও খাওয়া যায়। মানুষের খাবার গাছ-পালার মধ্যে সীমাবদ্ধ, মানুষ তৃণভোজী প্রাণী।
  • পশুদের খাবার: শস্য ও শাক-সবজী (ইংরেজি: সমস্ত সবুজ গাছ-পালা)। বীজের উপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় নি কারণ কিছু পশু গাছ-পালার সেলুলোজ (cellulose) থেকে গ্লুকোজ (glucose) পেতে পারে। পশুর খাবার গাছ-পালার মধ্যে সীমাবদ্ধ। পশুও তৃণভোজী প্রাণী।
  • প্রথম খাবারের নিয়মে কোনো পশুকে খাওয়া হয় না, কোনো পশুর জীবন নষ্ট করা হয় না। এখানে পশু যে জীবন্ত প্রাণী (ইব্রীয়: যাদের ‘প্রাণ’, ‘প্রাণবায়ু’, ‘জীবন বায়ু’ বা breath of life আছে, তার উল্লেখ)।
  • গাছ-পালা যার বীজ আছে, তা কত আক্ষরিক? তাতে কি মাশরুম খাওয়া উপযুক্ত মনে করা হয় না?
  • শাক-সবজী এবং বীজ, এর মধ্যে মানুষের সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়: প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (fatty acids) ও শর্করা (carbohydrates), আমিষ (protein), ভিটামিন (vitamins) ও খনিজ (minerals)।
  • ঈশ্বর এখানে মানুষের খাবার হিসাবে ভেজেট্যারিয়ান খাবার ঠিক করেন বা এমন কি ভেজান (vegan) খাবার ঠিক করেন (পশু থেকে দুধ বা ডিম ও নিষেধ)? যেহেতু মানুষ ও পশুদের মধ্যে স্তন্যপায়ীরা বুকের দুধ খায়, বুঝা যায় যে এই পদগুলি ভেজান (vegan)-এর চেয়ে ভেজেট্যারিয়ান (vegetarian) খাবারের কথা বলে।

আদি ৯:১-৫            সব কিছু খাওয়ার অনুমতি, সব ধরণের মাংস খাওয়ার অনুমতি

‘ঈশ্বর নোহ আর তাঁর ছেলেদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা দ্বারা সংখ্যায় বেড়ে ওঠো এবং পৃথিবী ভরে তোলো। ২ পৃথিবীর সব জীবজন্তু, আকাশের পাখী, বুকে-হাঁটা প্রাণী, আর সমুদ্রের মাছ তোমাদের ভীষণ ভয় করে চলবে। এগুলো তোমাদের হাতেই দেওয়া হল। ৩ জীবন্ত ও ঘুরে বেড়ানো সমস্ত প্রাণীই তোমাদের খাবার হবে। খাবার হিসাবে আমি আগে যেমন তোমাদের শস্য ও শাক-সবজী দিয়েছিলাম তেমনি এখন এই সবও তোমাদের দিলাম; ৪ কিন্তু প্রাণ সুদ্ধ, অর্থাৎ রক্ত সুদ্ধ মাংস তোমরা খাবে না। ৫ কেউ যদি তোমাদের খুন করে তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের রক্তের বদলে তার রক্ত, অর্থাৎ তার প্রাণ দাবি করব, সে পশু হোক বা মানুষ হোক। মানুষের প্রাণ যে মানুষ নেয় তারও প্রাণ নিতে হবে- এ-ই আমার দাবি। ৬ ঈশ্বর মানুষকে তাঁর মত করেই সৃষ্টি করেছেন; সেইজন্য কোন মানুষকে যদি কেউ খুন করে তবে অন্য একজনকে সেই খুনীর প্রাণ নিতে হবে।’

  • নোহের পরিবারকে নিয়ে ঈশ্বর একটি নতুন শুরু দেন। সৃষ্টির গল্পের সাথে মিল রেখে ঈশ্বর তাদের আবারও আদেশ দেন ফলবান হতে ও পৃথিবী ভরাতে (আদি ১:২৮)। ঈশ্বর আদি ১:২৯ পদও উল্লেখ করেন কিন্তু শস্য, শাক-সবজী ও বীজের পাশাপাশি পশুর মাংস খাওয়ার অনুমতি দেন।
  • কেন এখানে পশুর মাংস মানুষের খাবার হিসাবে যোগ দেওয়া হয়? কিছু কারণ হতে পারে:
  • সৃষ্টির শুরুতে মানুষ জীবিত প্রাণীদের (যাদের প্রাণ-বায়ু আছে) যেমন সম্মান করত (যেমন আদি ১:৩০ পদে দেখা যায়), পরবর্তীতে পাপে পতনের ফলে সেই সম্মান আর করত না: কয়িন ইতিমধ্যে আদি ৪:৮ পদে মাত্র পশু মেরে ফেলে নি, একজন মানুষকে মেরে ফেলেছিল। আদি ৪:২৩-২৪ লেমক দাবী করেন (ও এই তার দাবী নিয়ে অহংকার করেন) যে যদি কেউ তাকে মার দেয় তবে লোকটিকে মেরে ফেলার অধিকার আছে, তাতে বুঝা যায় যে মানুষের জীবনের জন্য, এবং আরো বেশি পশুর জীবনের জন্য সম্মান অনেক কমে গেল। আদি ৬:৪ পদে উল্লিখিত ‘পুরানো দিনের নাম-করা শক্তিশালী লোক’, দেখায় যে মানুষদের মধ্যে যুদ্ধ প্রচলিত হয়েছিল। মানুষের জীবনকে আর গুরুত্ব দেওয়া হত না, পশুর জীবন আরো কম গুরুত্ব দেওয়া হত। আদি ৬:৫ পদে বুঝা যায় যে জীবিত প্রাণীর জন্য আর কোনো সম্মান নেই: সদাপ্রভু দেখলেন পৃথিবীতে মানুষের দুষ্টতা খুবই বেড়ে গেছে, আর তার অন্তরের সব চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই কেবল মন্দের দিকে ঝুঁকে আছে।’ খুব জোড়ের সঙ্গে বলা হয়েছে যে সমাজের অবস্থা আসলে সব দিক দিয়ে খুব খারাপ হয়েছিল। তা যদি হয় তবে চিন্তা করা যায় যে মানুষ সে সময় মাত্র পশু মেরে ফেলে খেত না, হয়তো এমন কি মানুষ মেরে ফেলেও খেত (cannibalism)। হতে পারে  মানুষের জীবিত প্রাণীর জন্য ও পশুর জন্য আর সম্মান নেই, তারা মাংস খেতে অভ্যস্ত হয়েছে। হতে পারে তার কারণে ঈশ্বর  আদি ৯:৩ পদে শস্য, শাক-সবজী ও বীজের পাশাপাশি মাংস খেতে  অনুমোদিত করেন। ঈশ্বর মানুষকে পশুর মাংস খাওয়ার অনুমতি দেন, কিন্তু সাথে মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা করেন:
  • ঈশ্বর কয়েক ভাবে মানুষের জীবনের মূল্য নিশ্চিত করেন: আদি ৯:২ তিনি পশুদের উপরে মানুষের ভয় দেন: যখন পশুদের শিকার বা আক্রমণও করা হয়, তাদের মানুষকে নিয়ে ভয় থাকবে। আদি ৯:৫-৬ পদে ঈশ্বর প্রত্যেকটি মানুষের মৃত্যুর জন্য হিসাব চান, মানুষ মানুষকে মেরে ফেললে বা পশু মানুষকে মেলে ফেললে। আদি ৯:৬ পুনরায় বলা হয় যে মানুষ পশু নয়, বরং মানুষ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি। ঈশ্বর তাঁর প্রিয় পশুগুলি মানুষের কারণে উৎসর্গ করেন।
  • কিন্তু একটি নিচের স্তরে ঈশ্বর পশুর প্রাণের গুরুত্বও রক্ষা করেন: যদিও এখন পশুর মাংস এখন খাওয়া অনুমোদিত, তার রক্ত, যেখানে জীবন অবস্থিত, তা খাওয়া নিষিদ্ধ (আদি ৯:৪)। তাই যদিও মাংস খাওয়া এখন অনুমোদিত, একটি সীমানা টানা হয় এবং একটি নিয়ম পালন করতে হয়, যাতে জবাইকারীকে প্রাণীর জীবনের মূল্যকে সম্মান করতে হয়।
  • আদি ৯:১-৬ পদে ঈশ্বর মানুষের (যিনি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি) জীবনের মূল্য এবং পশুর জীবনের মূল্যের পার্থক্য দেখায়: একজন মানুষকে মেরে ফেলা নিষেধ কিন্তু একটি পশু জবাই করা যায়। মানুষের জীবনে নষ্ট করা যাবে না, সেটা মানুষের দ্বারা বা পশুর দ্বারাই হোক।
  • খেয়াল করুন যে নোহ ও তার পরিবার (কম পক্ষে জাহাজে থাকার সময়ে) তৃণভোজী মাত্র ছিলেন: তারা প্রত্যেক জীব-জন্তু থেকে একটি জোড়া নেন (আদি ৬:২), শুধুমাত্র উৎসর্গ দেওয়ার কারণে তারা কিছু শুচি পশুদের ৭টা নেন (আদি ৮:২০)।
  • প্লাবন ও নোহের জাহাজের গল্প একটি বিষয় দেখায়: শুধুমাত্র মানুষকে রক্ষা করা হয় না, খুব ইচ্ছাকৃত ভাবে ও সাবধাণভাবে জীব-জন্তুদেরও রক্ষা করা হয়। গাছ-পালা যে কোনোভাবে প্লাবনে বাঁচবে।
  • আদিপুস্তক ৯ অধ্যায়ে কোন নিয়ম পাওয়া যায় না, জীব-জন্তুদের মধ্যে কোনটা খাওয়া অনুমোদিত, কোনটা খাওয়া অনুমোদিত নয়, যেমন পরে লেবীয় ১১ অধ্যায়ে ও দ্বিতীয় বিবরণে ১৪ অধ্যায়ে পাওয়া যায়।
  • আদি ১:২৬১:২৮ পদে সৃষ্টিকে মানুষের অধীনে রাখা হয়। যখন মানুষ পাপ করতে শুরু করে কষ্ট, ক্ষতি ও মৃত্যুও শুরু: আদি ৩:১৭ পদে ‘তোমার দরুন মাটি অভিশপ্ত হল।’ আদি ৩:১৯ পদে মৃত্যুর নিশ্চয়তা দেখানো হয়েছে ‘তোমার এই ধুলার দেহ ধুলাতেই ফিরে যাবে’ পৌল একই বিষয় রোমীয় ৮:২০-২৩ পদে বর্ণনা করেন এবং সাথে যীশু দ্বারা এসে পুনরুদ্ধারের আশা ঘোষণা করেন: ‘কারণ সৃষ্টি অসারতার বশীকৃত হইল (কেরী)…ঈশ্বরই তাঁকে বিফলতার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তার সংগে সংগে এই আশ্বাসও দিয়েছেন যে, ২১ ধ্বংসের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে…২২ আমরা জানি যে, গোটা সৃষ্টিটাই যেন এক ভীষণ প্রসব-বেদনায় এখনও কাতরাচ্ছে।’
  • সে সময় থেকে দেখা যায় যে জীব-জন্তুর মাংস খাওয়া হচ্ছে (আদি ১৮:৭, ২৭:৩, ৩৮:১৭, যাত্রা ১৬:৩ ইত্যাদি)।

লেবীয় ১-৮ অধ্যায়                    উৎসর্গ: পশুদের আর একটি ব্যবহার

  • যদিও উৎসর্গ পদ্ধতিতে অনেক উৎসর্গ ও পশুর রক্তপাত দাবী করা হয়, উৎসর্গগুলি আসলে পশুর প্রাণীর গুরুত্ব ধরে রাখে (পশু মানুষের পরিবর্তে দাঁড়ায়) এবং প্রাণের ও রক্তের জন্য সম্মান নিশ্চিত করে (কঠোর নিয়ম, গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান)।
  • উৎসর্গ পদ্ধতিতে অনেক পশু উৎসর্গ আছে যদিও কিছু শস্য উৎসর্গও আছে): পোড়ানো উৎসর্গ, যোগাযোগ বা শান্তির উৎসর্গ, পাপ উৎসর্গ ও দোষ উৎসর্গ সব একটি পশুর মৃত্যু দাবী করে (লেবীয় ১-৮ অধ্যায়)। শস্য উৎসর্গ ও ঢালন উৎসর্গ আছে কিন্তু সেগুলি পশু উৎসর্গের সাথে দেওয়া হয় (গণনা ২৮-২৯ অধ্যায়)।
  • উৎসর্গ পদ্ধতিতে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে মানুষের পরিবর্তে পশু রাখা হয়: উৎসর্গকারী পশুর মাথায় হাত  রাখে ও পশুর গলা নিজের হাতে কাটে (লেবীয় ১:৪)। পশুর রক্ত জমা হয় ও তা নিয়ে অনেক নিয়ম অনুসারে প্রায়শ্চিত্ত করা হয় (লেবীয় ১:৫)। যদিও যোগাযোগ উৎসর্গে উৎসর্গকারী পশুর মাংস খায়, পশুর রক্ত কখনও খাওয়া হয় না বরং ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা হয়।
  • তাই পশু উৎসর্গ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগপ্রবণ পদ্ধতি যাতে ঈশ্বর পশুদের ব্যবহার করে মানুষের পাপকে ঢেকে দেওয়ার জন্য।

লেবীয় ৭:২৩-২৭                          চর্বি খাওয়া নিষিদ্ধ?

‘তোমরা গরু, ছাগল বা ভেড়ার কোন চর্বি খাবে না। ২৪ মরা পশুর কিম্বা বুনো জন্তুর ছিঁড়ে ফেলা পশুর চর্বি তোমরা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু তা খেতে পারবে না। ২৫ যে সব পশু দিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা যায় তার চর্বি যে খাবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। ২৬ কোন পাখী বা পশুর রক্ত খাওয়া তোমাদের চলবে না, তা তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন। ২৭ যদি কেউ রক্ত খায় তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।’

  • সব ধরণের রক্ত উৎসর্গে (পোড়ানো, যোগাযোগ, পাপ ও দোষ উৎসর্গ) চর্বি ও চর্বিযুক্ত নাড়িভুঁড়ি পোড়ানোর নিয়ম আছে। তাই চর্বি খাওয়া হয় না, উৎসর্গকারী খায় না, পুরোহিতও খায় না (লেবীয় ৩:৩-৫)।
  • লেবীয় ৭:২৩-২৭ পদগুলিতে চর্বি খাওয়া কি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে? পদে উল্লিখিত হল গরু, ছাগল ও ভেড়া (সাধারণ পশু), এমন একটি পশু যা এমনি মারা গেছে (অশুচি) বা এমন একটি পশু যাকে বুনো জন্তুরা ছিঁড়ে ফেলেছে।
  • কিন্তু যদি মাংস খাওয়ার জন্য একটি গরু, ছাগল বা ভেড়া জবাই করা হয়, তবে এসময়ও চর্বি খাওয়া কি নিষিদ্ধ? ঠিক পরের পদে (লেবীয় ৭:২৬) রক্ত খাওয়া নিষেধ করা হয় এবং রক্ত খাওয়া জবাই করা পশুর ক্ষেত্রেও নিষিদ্ধ। তাই ধারণা করা যায় যে রক্তের মত চর্বিও সব সময় খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু যেহেতু লেবীয় ১-৭ অধ্যায় উৎসর্গ সম্বন্ধীয়, অধিকাংশ লোক মনে করে যে শুধুমাত্র উৎসর্গের ক্ষেত্রে চর্বি খাওয়া নিষিদ্ধ।
  • আধুনিক বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি যে যারা পশুর চর্বি (highly saturated fats) ও সেভাবে ক্যালোরিও বেশি খায়, তারা আরো সহজেই হৃদরোগ, স্ট্রোক, উঁচু রক্তের চাপ, ক্যান্সার (মলে বা বুকে), অতিরিক্ত ওজন এবং নানা ধরণের অন্য রোগে আক্রান্ত হয়।
  • অবশ্যই মাংসের মধ্যেও কিছুটা চর্বি আছে যা চোখে দেখা যায় না কিন্তু দৃশ্যমান চর্বি কেটে বাদ দিলে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে লাভজনক।

লেবীয় ১৭:১-৯                         শুধুমাত্র তাম্বুর সেই একমাত্র বেদীতে উৎসর্গ

যদি পোড়ানো-উৎসর্গ কিম্বা অন্য কোন উৎসর্গ করতে গিয়ে তা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবার জন্য মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে না আনে, তবে সেই লোককে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।’

  • ঈশ্বর নিষেধ করেন যে সবাই ‘তার পিছনের উঠানে নিজের হাতে উৎসর্গ দেয়। বরং তিনি একটি অতি নির্দিষ্ট ও কোঠর কেন্দ্রীয় পদ্ধতি বসিয়ে দেন যেন যেখানে মাত্র আইনে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুরোহিত উৎসর্গ দেন।
  • কেন ঈশ্বর তা করেন? এভাবে ইস্রায়েল জাতি একটি আত্মিক কেন্দ্র পায়, সহভাগিতা ও একতা উৎসাহ পায় এবং ইস্রায়েলীয়দের উৎসর্গগুলি আস্তে-আস্তে অন্য জাতিদের দেবতাপূজারী উৎসর্গের মত হওয়ার প্রতিরোধ করা হয়।

লেবীয় ১৭:১০-১৬                       পশু বা জন্তুর প্রাণ ও রক্তের জন্য সম্মান

১৩ কোন ইস্রায়েলীয় কিম্বা তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যদি খাওয়ার মত কোন পশু বা পাখী শিকার করে আনে তবে তাকে তার রক্ত বের করে সেই রক্ত মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হবে, ১৪ কারণ সমস্ত প্রাণীর প্রাণ রয়েছে তার জীবন্ত দেহের রক্তে।’

  • যদি উৎসর্গ নয় কিন্তু মাংস খাওয়ার জন্য একটি পশু জবাই করা হয় তবে রক্ত (যেহেতু রক্তই জীবন) ঢেলে তা মাটিতে ঢেকে রাখতে হবে। যেমন উৎসর্গের ক্ষেত্রেও, সাধারণ জবাইয়ের ক্ষেত্রেও রক্ত সম্মান ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। যেমন একটি মৃত দেহকে সম্মানের সঙ্গে মাটিতে দাফন করা হয়, ঠিক তেমনি রক্তকেও সম্মান পূর্বক মাটিতে ঢেকে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
  • আবারও বলা হচ্ছে যে প্রাণীর জীবন রক্তে এবং যদিও মাংস খাওয়ার জন্য একটি পশুকে জবাই করা অনুমোদিত তবুও পশুর রক্তকে, অর্থাৎ পশুর জীবনকে সম্মানের সঙ্গে দেখতে হয়।
  • আধুনিক বিজ্ঞানও সাবধান বাণী দেন যখন রক্ত বা রক্ত দিয়ে তৈরি জিনিস ব্যবহৃত। খুব সাবধাণভাবে ও নিয়ম পালন করে তা করতে হয় যেন গ্রহণকারী জীবাণু বা অন্য ক্ষতিকর কিছু না পায়।

লেবীয় ১১ অধ্যায়, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ অধ্যায়                   শুচি ও অশুচি জন্তুর তালিকা

  • এই অধ্যায়গুলিতে কিছু জীব-জন্তুকে শুচি বলা হয় (তাই সেগুলি খাওয়া যায়) এবং কিছু জীব-জন্তুকে অশুচি বলা হয় (তাই সেগুলি খাওয়া নিষেধ)। ঈশ্বর কেন এই আইনগুলি দেন?
  • এখানে বিভিন্ন মতামত আছে। ভিত্তিক ভাবে দুইটি উত্তর দেওয়া সম্ভব: আইন দেওয়ার কারণ হল আত্মিক কারণ বা ব্যবহারিক কারণ। নীচে কিছুটা সম্ভাব্য আত্মিক ও ব্যবহারিক কারণ দেখানো হয়:

১ আত্মিক কারণ

  • খাবারের আইনের উদ্দেশ্য হল পরীক্ষা করে দেখা ইস্রায়েল ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য কিনা      > উদ্দেশ্য: বাধ্যতা
  • খাবারের আইনের উদ্দেশ্য হল ইস্রায়েল জাতিকে অন্য জাতিদের থেকে আলাদা করা                                                    > উদ্দেশ্য: আলাদা হয়ে পবিত্রতা
  • খাবারের আইনের উদ্দেশ্য হল ইস্রায়েলীয়দের চারিদিকের অনৈতিক দেবতা পূজা থেকে দূরে রাখা কারণ এই পূজাগুলিতে এই ধরণের জিনিস উৎসর্গ দেওয়া হত বা খাওয়া হত                                    > উদ্দেশ: পূজা এড়িয়ে গিয়ে পবিত্রতা     
  • যখন বলা হয় ‘ঐ জীব-জন্তু অশুচি’, তাই তা খেলে বা তা স্পর্শ করলে মানুষ অশুচি হত। কিন্তু ‘অশুচি’ মানে কি?
  • অশুচি মানে কি পাপ-পূর্ণ? অশুচি মানে কি মন্দ? অশুচি মানে কি অনৈতিক? অশুচি মানে কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক? অশুচি মানে কি জীবাণুতে দূষিত?
  • যদিও লেবীয় ১১ অধ্যায় পবিত্রতার উল্লেখ নেই, পুরা লেবীয় পুস্তকে তা হল একটি প্রধান বিষয়, যেমন ‘আমি সদাপ্রভু পবিত্র বলে তোমাদেরও পবিত্র হতে হবে; আর আমিই তোমাদের আমার নিজের লোক হওার জন্য সব জাতি থেকে আলাদা করে নিয়েছি’ (লেবীয় ২০:২৬)।
  • হয়তো মানুষদের চিন্তায় ‘পাপ-পূর্ণ’, ‘মন্দ’, অনৈতিক’, ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক’ বা ‘দূষিত এই সব শব্দের মধ্যে এখনও কোনো পার্থক্য নেই?

২ বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে ব্যবহারিক কারণ

  • এই জীব-জন্তুদের অশুচি বলা হয় কারণ এইগুলি খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল না
    • > উদ্দেশ্য: আরো ভাল পুষ্টি                  > আরো ভাল স্বাস্থ্য
    • > উদ্দেশ্য: রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ        > আরো ভাল স্বাস্থ্য
  • ঈশ্বর চেয়েছেন যেন ইস্রায়েল এমন একটি আদর্শ জাতি হয় যাতে অন্য জাতিরা আকৃষ্ট হবে। ইস্রায়েলের আহবান ছিল একটি যাজকীয় রাজ্য হতে (যাত্রা ১৯:৪-৬), একটি মধ্যস্থতাকারী জাতি, একটি দেশ এমন ভাল, ন্যায্য ও সুস্বাস্থ্যের যেন অন্য জাতিরা ঈশ্বরের আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়: ‘এগুলো পালন করবার মধ্য দিয়ে অন্যান্য জাতির লোকদের সামনে তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রকাশ পাবে। তারা এই সব নিয়মের বিষয় শুনে বলবে, ‘জাতি হিসাবে এরা সত্যিই মহান এবং জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান।’ ৭ এমন আর কোন মহান জাতি আছে যাদের দেব-দেবতারা তাদের কাছে থাকে, যেমন করে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকলে তাঁকে কাছে পাওয়া যায়?’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৬-৭)।
  • তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা মেনে…তাঁর আদেশে কান দাও ও তাঁর দেওয়া সমস্ত নিয়ম পালন কর, তাহলে মিসরীয়দের উপর আমি যে সব রোগ এনেছিলাম তা তোমাদের উপর আনব না।’…’মিসর দেশে যে সব রোগ দেখে তোমরা ভয় পেতে, তিনি সেই সবই তোমাদের উপর আনবেন আর সেগুলো তোমাদের ছাড়বে না।’ (যাত্রা ১৫:২৬, দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৬০)।
  • তাই ইস্রায়েল জাতির হওয়ার কথা পবিত্র, আলাদা, ভিন্ন, ন্যায্য, প্রজ্ঞাপূর্ণ, সুস্বাস্থ্যের, ফলবান, বহুসংখ্যক, মহান ও সুঅবস্থার একটি দেশ। একটি দেশ যা আশীর্বাদে পূর্ণ এবং যা অন্যদের জন্য আশীর্বাদের কারণ।

এই ধরণের জীব-জন্তু না খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ কি হতে পারে?

  • এমন জীব-জন্তু নিষিদ্ধ (অশুচি হিসাবে ঘোষিত) যা অশুচি কিছু খায়: অশুচি জীব-জন্তু খেলে > ভিন্ন ধরণের দূষণ (জীবাণু, দূষক, অধিবিষ বা উপবিষ) হজম করলে বড় জন্তুর দেহের মধ্য তা ছড়াতে পারে; অথবা ঘনঘন অশুচি জিনিস খেলে দেহে দূষণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
  • এমন জীব-জন্তু খাওয়া নিষিদ্ধ (অশুচি হিসাবে ঘোষিত) যা পচা বা মরা কিছু খায় > বড় জন্তুর দেহের মধ্যে জীবাণু বা রোগ ছড়াতে পারে বা দূষণ বা কলুষিত করণ ঘনঘন হয়ে উঠতে পারে।
  • খাদ্য শৃঙ্খল বা food chain (বড় জীব-জন্তু এমন জীব-জন্তু খায় যা ইতিমধ্যে অন্য জীব-জন্তু খেয়েছিল): খাদ্য শৃঙ্খল যত লম্বা (যত ধাপ আছে), পর্যায়ক্রমে শেষের জীব-জন্তুর মধ্যে তা ঘনঘন দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।
    • তৃণভোজী প্রাণীর ক্ষেত্রে খাদ্য শৃঙ্খল ছোট (মাত্র ২ ধাপ)
    • মাংসাশী প্রাণীর ক্ষেত্রে খাদ্য শৃঙ্খল লম্বা (কম পক্ষে ৩ ধাপ, অনেক বার ৪, ৫ বা ৬ ধাপ)
  • হয়তো কিছু জলের প্রাণী নিষিদ্ধ কারণ ইস্রায়েল ছিল গরম একটি দেশ ও সমুদ্র থেকে কিছু দূরে। হয়তো কাকরা, চিংড়ি, শামুক ইত্যাদি নিষিদ্ধ (অশুচি হিসাবে ঘোষিত) ছিল কারণ সেগুলি শুকানো বা গুদাম করা যায় না, তাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আধুনিক যুগে যেমন রেফ্রিজেরেশন করা হয়, সেই রকম কিছু তখন ছিল না।
  • হয়তো ইস্রায়েল যাযাবর ধরণের জীবন-যাপন করার কারণে কিছু ধরণের মাংস গুদাম করা কঠিন ছিল।
  • আর একটি কারণ হতে পারে যে একটি জীব-জন্তু নিষিদ্ধ (অশুচি হিসাবে ঘোষিত কারণ জীব-জন্তুটি মানুষ যা খায় তা খায়। ফলে এই জীব-জন্তু মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দাঁড়ায়।
  • প্রত্যেক উল্লিখিত জীব-জন্তু নিয়ে এক একটা করে কথা নীচে পাওয়া যায়।

লেবীয় ১১:১-৮, দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:৩-৮                      শুচি বা অশুচি ভূমির জীব-জন্তু

ভূমির উপর বাস করা জীবজন্তুর মধ্যে যেগুলো জাবর কাটে আর সেই সংগে যেগুলোর খুর পুরোপুরি দু’ভাগে চেরা কেবল সেগুলোর মাংসই তোমরা খেতে পারবে।…উট জাবর কাটলেও তার খুর চেরা নয়, সেইজন্য তা তোমাদের পক্ষে অশুচি। শাফনও জাবর কাটে কিন্তু তার খুর চেরা নয়, সেইজন্য তা-ও তোমাদের পক্ষে অশুচি। খরগোস জাবর কাটলেও তার খুর চেরা নয়, সেইজন্য তা-ও অশুচি। শূকরের খুর একেবারে দু’ভাগে চেরা, কিন্তু সে জাবর কাটে না, তাই তা তোমাদের পক্ষে অশুচি।…তোমরা খেতে পারবে…’

শুচি

  • লেবীয় পুস্তক: যারা জাবর কাটে এবং যাদের খুর পুরোপুরি দু’ভাগে চেরা
  • দ্বিতীয় বিবরণ: গরু, ভেড়া, ছাগল, হরিণ, কৃষ্ণসার, চিতি-হরিণ, বুনো ছাগল, পিছন-সাদা হরিণ, সাদা হরিণ এবং পাহাড়ি ভেড়া (ox, sheep, goat, deer, gazelle, roebuck, wild goat, ibex, antelope, mountain sheep
  • অন্য জীব-জন্তু যা শুচি তালিকায় উঠানো যেত: bison, moose, antelope, caribou, giraffes, buffalo

সম্ভাব্য কারণ

  • এই সব শুচি জীব-জন্তু হল সব তৃণভোজী যারা ঘাস বা গাছ-পালা জাতীয় জিনিস খায়।
  • পৃথিবীর বড় ভাগ ভূমিতে ঘাস হয় যেখানে আলো বাশস্য,  সবজি চাষ করার জন্য যথেষ্ট বৃষ্টি নেই বা  ভূমি এত উঁচু বা আবহাওয়া এত ঠাণ্ডা যে শস্য, আলু বা সবজি আর হয় না (নিষ্পাদপ প্রান্তর savannahs, pampas)। এই ধরণের ভূমি সরাসরি মানুষের জন্য খাবার তৈরি করা যায় না, কিন্তু গরু, ছাগল বা ভেড়ার মাধ্যমে এই ভূমিগুলি মানুষের জন্য মাংস বা দুধ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে (Dairy Council Digest, Jan.–Feb. 1973)।
  • বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে ঘাস-খাওয়া-পশুর মাংস শস্য-খাওয়ানো-পশুর মাংসের চেয়ে ভাল কারণ তার মধ্যে চর্বি কম, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাছাড়া মাংস উৎপাদন করতে গেলে পশুকে শস্য খাওয়ানোর চেয়ে ঘাস খাওয়ানো সস্তা। তাছাড়া গরু এমন জমি থেকে বাঁচতে পারে যাতে মানুষের জন্য খাবার উৎপাদন হয় না। তাই ঘাস খাওয়ালে পশু মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বিত হিসাবে দাঁড়ায় না। তাই ঘাসের জমি এভাবে ব্যবহার করা হল অর্থনীতি, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী বা উপযুক্ত।
  • BSE (Mad cow disease) হল গরুর একটি মারাত্মক রোগ যা মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে। রোগটি এভাবে শুরু হয়েছিল: বাছুরকে ঘাস বা শস্য না খাওইয়ে বরং গরুর মাংসের উৎপাদনে যা (যেমন গরুর ব্রেন বা স্নায়ু) বাকি পড়ে তা খাওয়ানোর ফলে!

অশুচি

  • লেবীয় পুস্তক: উট, খরগোস, শাফন, শুকর
  • দ্বিতীয় বিবরণ: উট, খরগোস, শাফন, শুকর

সম্ভাব্য কারণ        

  • শুকর হল সর্বগ্রাসী, তাই শুকর যে কোনো কিছু খায়, এমন কি মাংস, পচা জিনিস, মরা জিনিস, ময়লা, পায়খানা, মানুষের পায়খানাও। শুকর মানুষের মত সেলুলোজ থেকে গ্লুকোজ পেতে পারে না, তাই সবুজ পাতা থেকে বাঁচতে পারে না। আধুনিক যুগে শুকর পালকে তাদেরকে বেশিরভাগ ভূট্টা ও শস্য খাওয়ানো হয় (New Standard Encyclopedia, 1993), তাই তারা মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দাঁড়ায়। আমেরিকায় মোটামুটি পাঁচ ভাগ ভুট্টা শুকরকে খাওয়ানো হয়।
  • যেহেতু পৃথিবীর লোকসংখ্যা এবং খাবারের দাম বিশ্বে ব্যাপকভাবে বাড়ছে সেহেতু উর্বর জমি এভাবে মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা প্রজ্ঞার কাজ নয়। যে জমিতে মাত্র ঘাস হয় তা মাংসের জন্য ব্যবহার করা ভাল, কিন্তু যেখানে মানুষের জন্য শস্য, আলু বা সবজি উৎপাদন করা যায় সেখানে শুকরের খাবার উৎপাদন করা ঠিক নয়।
  • শুকরের মাংস খাওয়ার আর একটি সমস্যা হল Trichinosis (Trichinella spiralis) নামে একটি রোগের সংক্রমণ। এই ছোট কৃমি মানুষ এবং পশুর পেশির মাংসে ঢুকে। মোটামুটি ৬ কোটি মানুষ (পৃথিবীর শতকরা ১ ভাগ লোকসংখ্যা) এই রোগে আক্রান্ত (Gerald Tortora, Microbiology, 5th ed., 1995)। যেহেতু পৃথিবীতে শুকর মাংস হল সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খাওয়া মাংস এই পরিসংখ্যান অবাক লাগার কিছু নয় (World Book Encyclopedia, 1995)। অনেক মাংসাশী বা সর্বগ্রাসী জীব-জন্তু এই জীবাণুতে আক্রান্ত। ভাল্লুক, সিন্ধুঘোটক এবং বন্য শুকর থেকে অনেক মানুষের কাছে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে (Baron, Medical Microbiology, 1993)। জীবাণুটি আরো পাওয়া যায় কাঠবিড়ালি, ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর, খরগোস, শিয়াল ও ঘোড়ার মাংসতে এবং নানা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী জন্তুতে (Nestor, Microbiology 1995; Benenson, Control of Communicable Diseases in Man, 12th ed., 1975)। ঈশ্বর এইগুলি সব অশুচি জীব-জন্তু বলে তা খাওয়ার জন্য নিষেধ করেছেন।
  • শুকর মাংস খাওয়ার আর একটি বড় সমস্যা হল শুকরের ফিতাকৃমি (Taenia Solium) যাতে পৃথিবীর ৩ ভাগ লোকসংখ্যা (১৮ কোটি মানুষ) আক্রান্ত (Tortora)। যদিও গরু ও মাছ খেলে ফিতাকৃমিও পাওয়া যায় (যাতে পেট ব্যথা হয়) কিন্তু শুকরের ফিতাকৃমি আর অনেক বিপজ্জনক। শুকর ফিতাকৃমির লার্ভা (larva) মানুষের অন্তর থেকে হৃদয়, চোখ ও ব্রেনে ছড়িয়ে যেতে পারে ও শেষে মানুষের মৃত্যু ঘটায় (Morello, Microbiology in Patient Care, 5th ed., 1994)। যেখানে শুকর মানুষের পায়খানা খায় বিষয়টি সবচেয়ে বিপজ্জনক। ফিতাকৃমি সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত করে যেখানে পরিষ্কার-পরিছন্নতা কম (বিশেষভাবে পাকা পায়খানা নেই) এবং যেখানে শুকরের মাংস খাওয়া হয়, যেমন মেক্সিকো, ল্যাটিন আমেরিকা, স্পেন, পর্তুগাল, আফ্রিকা, ভারত, পূর্ব দক্ষিণ এশিয়া ও চীনে (Baron, Medical Microbiology, 1994)।
  • যদি মাংস খুব ভালভাবে সিদ্ধ করা হয় তবে শুকরের মাংস এবং অন্যান্য অশুচি জন্তুর মাংস থেকে জীবাণুর ক্ষতি কমানো যায়।

লেবীয় ১১:৯-১২, দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:৯-১০                  শুচি বা অশুচি জলে বাস করা প্রাণী

‘সমুদ্র ও নদীর জলে যে সব প্রাণী বাস করে তাদের মধ্যে যাদের ডানা এবং গায়ে আঁশ আছে সেগুলো তোমরা খেতে পারবে…’

শুচি

  • যাদের ডানা এবং গায়ে আঁশ আছে, যেমন trout, tuna, salmon, halibut, bluegills, sunfish, cod fish, flounder, perch, herring, sardines, bass, smelt, mackerels

অশুচি

  • যাদের গায়ে আঁশ নেই, যেমন মাগুর মাছ, পাঙ্গাস, পাঁকাল, হাঙ্গর, শুশুক, অনেক বিষাক্ত মাছ
  • যাদের ডানা নেই যেমন চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, কাঁকড়া, খোলাত্তয়ালা মাছ, শামুক, ঝিনুক, shellfish, molluscs

সম্ভাব্য কারণ

  • যে মাছের আঁশ ও ডানা আছে সাধারণত তারা পানিতে স্বাধীনভাবে সাতার কাটতে জানে।
  • অধিকাংশ নিষিদ্ধ বা অশুচি জন্তু হল এমন জন্তু যা তলায় থাকে অথবা যা অশুচি, পচা বা মরা জিনিস খায়।
  • দেখা যায় অধিকাংশ মাছ যার বিষ আছে তাদের আঁশ নেই। বরং তাদের পরিবর্তে আছে চামড়া, কূর্চ, ক্ষুদ্র শক্ত লোম, কাঁটা, bristles, spines, thorns, boxlike bony coverings থাকে (US Navy manual, Survival on land and Sea, 1944)।
  • বিষাক্ত সামুদ্রিক প্রাণীর আঁশ নেই। তাদের মধ্যে আছে ৪ ধরণের হাঙর, ৫৮ ধরণের stingrays, ৪৭ ধরণের পাঙ্গাস, ৫৭ ধরণের  scorpion fish, ১৫ ধরণের toad fish আঁশ নেই (Caras, Venomous Animals of the World, 1974).
  • অশুচি বা নিষিদ্ধ Eels রাতের বেলায় শিকার করে খায়, পচা ও মরা জিনিষ খায় (predatory scavengers), ‘মোটামুটি এমন কিছু নেই যা খায় না, মরা হোক বা জীবিত হোক’ (International Wildlife Encyclopedia, 1990)। খোলাত্তয়ালা মাছের(eel) রক্তে একটি বিষাক্ত পদার্থ আছে যা মানুষের চোখে বা যে কোনো শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি (mucous membrane) পড়লে বিপজ্জনক (Encyclopedia of Aquatic Life, 1988)G
  • তাই ঈশ্বরের আইন-কানুন লোকদের দেখায় কি ধরণের মাছ খাওয়ার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু শুচি মাছও যথেষ্ট সিদ্ধ বা ভেজে খাওয়া উচিত। মাছের টাটকা মাংস খেলে (যেমন sushi বা sashimi খাবারে) বা এমন মাছের মাংস খেলে যা সম্পূর্ণ সিদ্ধ বা ভাজা হয় নি তবে কয়েক ধরণের ফিতাকৃমি ও ফ্লূক (flukes) ছড়াতে পারে  (Black, Microbiology, 1993)।
  • Lobsters তলায় হাটে ও কোনো পচা, মরা বা জীবিত জিনিস খায় (Encyclopedia of Aquatic Life)। তারা তলায় বাসকারী ছোট জন্তু, পচা ও মরা জিনিস খায় (Encyclopaedia Britannica, 1995)। যারা গলদা চিংড়ি শিকার করে মরা মাছের মাংস লোভনীয় বস্তু হিসাবে ব্যবহার করে। গলদা চিংড়ির লম্বা পূর শুঙ্গেও গায়ে চুলের মত স্নায়ু বা সেন্সর আছে যা দ্বারা তারা মরা জিনিস থেকে ছড়ানো নির্দিষ্ট রাসায়নিক অণু (chemical molecules) বুঝতে পারে যাতে তারা অন্ধকারেও তাদের খাবার খোঁজে পায় (New Standard Encyclopedia, 1993)। Lobsters মাঝের মধ্যে একটি মরা মাছ খুড়ে বালিতে রেখে দেয় এবং পরে বার বার ফিরে এসে টুকরা করে মাছটি শেষ করে (International Wildlife Encyclopedia).
  • কাঁকড়াও ময়লা, পচা বা মরা জিনিস খোঁজে খায়। যে কাঁকড়া মানুষ খায় সে মরা মাছ সবচেয়ে পছন্দ করে কিন্তু মরা মাছ না পেলে যে কোনো পচা বা মরা মাংস খায় (International Wildlife Encyclopedia)।
  • সাধারণ চিংড়ি কাদায় বা বালির তলায় থাকে। চিংড়ি রাতের বেলা পানির তলায় ঘুরে যে কোনো ময়লা, পচা, মরা বা জীবিত জিনিস খায় (Encyclopedia of Aquatic Life)।
  • কাঁকড়া, বাগদা চিংড়ি, শামুক বা চিংড়ি যদি টাটকা বা আচার হিসাবে খাওয়া হয় বা যথেষ্ট সিদ্ধ বা ভাজা হয় নি তবে বিভিন্ন ধরণের জীবাণু ছড়াতে পারে যেমন লিভার ফ্লুক (liver flukes)। পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ায় গ্রাম অঞ্চলে শতকরা ৮০ ভাগ লোকসংখ্যা লিভার ফ্লুকে আক্রান্ত (Black)।
  • বোধ হয় ঈশ্বর এই জীব-জন্তুগুলি মানুষকে খাওয়ানোর জন্য নয় কিন্তু একটি অন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকার জন্য সৃষ্টি করেছেন: তারাই হল পুকুরে, নদীতে বা সমুদ্রের তলায় ময়লা জমানোর বা নোংরা কমানোর জন্তু।
  • ঝিনুকও অশুচি বা নিষিদ্ধ (যেমন বিভিন্ন ধরণের ঝিনুক, clams, oysters, mussels and scallops)। তারা এক নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পানি ঝেঁকে খায়। তারা এক দিনে অনেক পানি পাম্প করে তাদের শ্লেষ্মা-আছন্ন ফুলকায় পার করে এবং তাতে ছোট গাছ জাতীয় টুকরা, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আটকিয়ে খায় (Encyclopedia Americana, “Molluscs”)। তাই তারা ছোট ছোট নোংরা বা পচে যাওয়া জিনিস খায় (International Wildlife Encyclopedia)। ঝেঁকে খাওয়া জন্তুরা পানি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। তাই তারা নোংরা পানিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ভারী ধাতু, প্ল্যাঙ্কটন দ্বারা তৈরি স্নায়ুর অধিবিষগুলি (nerve toxins from plankton)  ঝেঁকে জমায় ও নিজের দেহের মধ্যে ঘনঘন করে রাখে। তাই এইগুলি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য  বিপজ্জনক (International Wildlife Encyclopedia, Black)।
  • রোগ সংক্রমণে তাদের ভূমিকা কত বেশি? আমেরিকার সরকার বলে যে দেশের সামুদ্রিক খাবার থেকে রোগের ৮৫ ভাগ কারণ হল বিভিন্ন ধরণের টাটকা ঝিনুক খাওয়া (American Food and Drug Administration, FDA Consumer, June 1991)।
  • দেখানো হয়েছে যে ঝিনুক molluscs খাওয়ার সাথে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যের সমস্যা সম্পর্কিত, যেমন কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ, নোর্ভাক ভাইরাস (Norwalk virus), সাল্মোনেল্লা (Salmonella) এবং খোলাত্তয়ালা মাছ দ্বারার বাত ব্যাধিগ্রস্ত বিষণ (paralytic shellfish poisoning, U. C. Berkeley Wellness Letter Feb. 1994)।

লেবীয় ১১:১৩-২৩, দ্বিতীয় বিবরণ ১৪;১১-২০                        শুচি বা অশুচি পাখি বা পোকা

কতগুলো পাখীও আছে যেগুলো ঘৃণার জিনিস বলে তোমাদের ধরে নিতে হবে, আর সেইজন্য সেগুলো তোমাদের খাওয়া চলবে না। সেগুলো হল ঈগল, শকুন, কালো শকুন, ১৪ চিল, সব রকমের শিকারী বাজ, সব রকমের কাক, উট পাখী, লক্ষ্মীপেঁচা, গাংচিল, সব রকমের বাজ পাখী, ১৭ কালপেঁচা, হাড়গিলা, হুতুম পেঁচা, ১৮ সাদা পেঁচা, মরু-পেঁচা, সিন্ধুবাজ, ১৯ সারস, সব রকমের বক, হুপ্‌পু পাখী আর বাদুড়। ২০ “যে সব চার পায়ে হাঁটা পোকা উড়ে বেড়ায় সেগুলোকে ঘৃণার জিনিস বলে ধরে নিতে হবে। ২১ তবে তার মধ্যে যেগুলোর হাঁটু আছে বলে মাটির উপর লাফিয়ে বেড়াতে পারে সেগুলোর কোন কোনটা তোমরা খেতে পারবে। ২২ সেগুলো হল সব রকমের পংগপাল, বাঘা-ফড়িং, ঝিঁঝি কিম্বা ঘাস-ফড়িং।’

অশুচি

  • ঈগল   (Eagle, Hierraaetus, Aquila, Haliaeetus) ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী (marmot, খরগোশ (hare, rabbit), কাঠবিড়ালি, marten, শিয়াল), বিভিন্ন ধরণের পাখি, যুবক স্তন্যপায়ী (হরিণ, ভেড়া) খায়।
  • শকুন, কার্বন গহ্বন (Vulture, Gyps, Aegypius, Gypaetus, Neophron)… মরা জন্তু বা মাংস, হাড়, ময়লা খায়।
  • বকপাখি (Osprey, Pandion haliaetus) … বেশিরভাগ মাছ খায়, কিছুটা ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, উভচর, পাখি বা মেরুদণ্ডহীন প্রাণী (invertebrate) খায়।
  • বাজপাখি (Buzzard, Buteo) … ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী (ইঁদুর, খরগোশ), সরীসৃপ, পোকা, মরা মাংস, কৃমি, পাখি খায়।
  • kite
  • কাক (Raven, Corvus) … কৃমি, পোকা, ছারপোকা, ফড়িং, প্রজাপতি, মাকড়সা, শতপদ, সহস্রপদ, শামুক, ইঁদুর, ডিম, পাখির বাচ্চা, খোলাওয়ালা মাছ, কাঁকড়া, মরা মাংস, মাছ খায়।
  • উটপাখি (ostrich)
  • চিল (Hawk, night hawk, Accipiter) … পাখির বাচ্চা খায়।
  • শঙ্খচিল (Sea gull, Larus) … মাছ, জলের মেরুদণ্ডহীন প্রাণী, জলের পোকা, মরা মাছ, মাছের কলকারখানার ময়লা খায়।
  • ছোট পেঁচা (Little owl, Athene noctua) … ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী (বিশেষভাবে ইঁদুর), মেরুদণ্ডহীন প্রাণী (কৃমি, জোক, প্রজাপতি), ছোট সরীসৃপ, উভচর খায়।
  • পেটুক (Cormorant, Phalacrocorax carbo) … মাছ খায়
  • বড় পেঁচা, মরুভূমির পেঁচা (Great owl, desert owl, Tyto, Otus, bubo, Surnia) … ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী (বিশেষভাবে ইঁদুর), কিছুটা উভচর, ছোট সরীসৃপ (ব্যাং), পোকা (ফড়িং, bugs, প্রজাপতি, ঘুর্ঘুরে পোকা, মাটিতে থাকা মেরুদণ্ডহীন প্রাণী (শামুক, কৃমি), পাখি (ছোট থেকে বড় পর্যন্ত, পায়রা, কাক, মুরগি), ছোট জন্তুর বর্গভুক্ত প্রাণী (rodents) যেমন খরগোশ (hare, rabbit), মাছ খায়।
  • জলমুরগি (Water hen, Bonasa, Lagopus, Tetrao, Alectoris, Porzana parva, নিশ্চিতভাবে অনুবাদ করা যায় না) … মেরুদণ্ডহীন প্রাণী, মাঝেমাঝে বীজ, বাদাম, সবজি খায়।
  • সারস (Stork, Ciconia) … কৃমি, পোকা, উভচর, সরীসৃপ (ব্যাং) খায়।
  • চক্রবাক (Heron, Nycticorax) … মেরুদণ্ডহীন প্রাণী (শামুক, কৃমি), উভচর, ছোট মাছ খায়।
  • ঝুঁটিত্তয়ালা পাখি (Hoopoe, Upupa epops … পোকা (ফড়িং, ঘুর্ঘুরেপোকা, প্রজাপতি ও তাদের শূককীট), মাকড়সা, কৃমি, শামুক, মাঝের মধ্যে সরীসৃপ (ব্যাং) খায়।
  • এক ধরণের বাদুড়… পোকা, মেরুদণ্ডহীন প্রাণী খায়। অন্য ধরণের বাদুড় আছে যারা ফল খায়।

শুচি

  • ফড়িং (Locust, Bald locust, Cricket, Grasshopper) … মধ্যপ্রাচ্য দেশে সেগুলি খাওয়া হয়।
  • অন্য শুচি পাখি যা তালিকায় উঠানো যেত: মুরগি, Turkey, তিতির (Partridge), চড়ুই, ঘুঘু, finch …

সম্ভাব্য কারণ

  • এমন পাখি নিষিদ্ধ যা শিকারি, যা অশুচি জীব-জন্তু বা টাটকা মাংস ও রক্ত খায় বা যা মরা মাংস খায়। কারণ তাতে রোগ বা জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে। তাছাড়া এই ধরণের পাখির খাদ্য শৃঙ্খল লম্বা।
  • শিকারি পাখি ছোট জীব-জন্তুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বলে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে কিন্তু মানুষের খাবার হিসাবে তারা ভাল নয়।
  • মাছ শিকারের পাখি দূষিত পানির মাছ খেতে খেতে তাদের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক অধিবিষ বা পদার্থ (toxic chemicals) জমতে থাকে। তাই তা খাবার হিসাবে অনুপযুক্ত।
  • এই পাখির মধ্যে কয়েকটি পাখি পচা বা মরা মাংস খায়, যেমন শকুন ও শঙ্খচিল।
  • এই তালিকার অধিকাংশ পাখি অশুচি জীব-জন্তু খায়, তারা শাক-সবজি বা বীজ-বাদাম খায় না। কিন্তু মাছ শিকার পাখিদের মধ্যে কয়েকটি আছে যারা শুচি মাছ খায়।

লেবীয় ১১:২৪-৩০, ৪২-৪৫            অশুচি বুজে হাটা প্রাণী                        swarming animals

২৭ চার পায়ে হাঁটা জীবজন্তুর মধ্যে যেগুলো থাবায় ভর করে চলে সেগুলো তোমাদের পক্ষে অশুচি।…২৯ যে সব ছোটখাটো প্রাণী মাটির উপর ঘুরে বেড়ায় সেগুলোর মধ্যে বেজী, ইঁদুর, সব রকমের গিরগিটি; ৩০ তক্ষক, গোসাপ, টিকটিকি, রক্তচোষা এবং কাঁকলাস তোমাদের পক্ষে অশুচি।৪২ মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো ছোটখাটো কোন প্রাণীই তোমরা খাবে না। সেগুলো সবই ঘৃণার জিনিস- সেগুলো পেটের উপর ভর দিয়েই চলুক আর চার পায়ে বা অনেক পায়েই হাঁটুক।

অশুচি

  • চার পায়ে হাটা জীব-জন্তু যেমন বিড়াল, সিংহ, বাঘ, panther, চিতা বাঘ, gepard lynx, leopard, কুকুর, শিয়াল, নেকড়ে বাঘ, civet ইত্যাদি)।
  • বেজি, ইঁদুর, সব রকমের গিরগিটি, তক্ষক, গোসাপ, টিকটিকি, রক্তচোষা, কাঁকলাস, crocodile, chameleon

সম্ভাব্য কারণ

  • চার পায়ে হাটা জীব-জন্তু সাধারণত মাংসাশী, তারা অনেকে অশুচি জীব-জন্তু খায়, তারা টাটকা রক্ত ও মাংস খায় (রোগ বা জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা), তারা দুর্বল, অসুস্থ বা এমনি মারা যাওয়া জীব-জন্তু খায়। তাদের খাদ্য শৃঙ্খল বেশ লম্বা।
  • তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ছোট জীব-জন্তুদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে (যেমন: নেকড়ে বাঘ ও পাহাড়ি সিংহ হরিণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে)। তাছাড়া তারা শিকারে সাধারণত দুর্বল, অসুস্থ বা বুড়ো প্রাণী বেশি পায়, তাই তারা প্রাণীর জাতকে সুস্থ করে রাখে।
  • কিছু দিন আগে দক্ষিণ চীনে সারস (SARS) মহামারি ছড়িয়ে পড়ল। খোঁজে বের করা হয়েছে যে এই মহামারির শুরু ছিল দক্ষিণ চীনে একটি জায়গা যেখানে মানুষ civet cats খেতে পছন্দ করে।
  • খরগোশকেও একই তালিকায় উঠানো যেত। তার দ্বারা তুলারিমিয়া (Tularaemia) নামে একটি রোগ মানুষকে আক্রান্ত করে।

লেবীয় ১১:২৪-৩০          অশুচিতা কিভাবে ছড়ায়

গুলো দিয়ে তোমরা অশুচি হবে। যে কেউ তাদের মৃতদেহ ছোঁবে…যদি কেউ তাদের কোন একটার মৃতদেহ হাত দিয়ে তোলে… ৩১এদের মরা দেহ যে ছোঁবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। ৩২ এগুলোর যে কোন একটা মরে কোন জিনিসের উপর পড়লে সেটা অশুচি হবে- সেটা কাঠ, কাপড়, চামড়া কিম্বা চট যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন আর যে কোন কাজেরই হোক না কেন। … ৩৩ এগুলোর মধ্যে কোন একটা যদি কোন মাটির পাত্রের মধ্যে পড়ে তবে তার ভিতরকার সব কিছু অশুচি হয়ে যাবে। সেই পাত্রটা ভেংগে ফেলতে হবে। ৩৪ সেই পাত্রের জল যদি কোন খাওয়ার জিনিসের উপর পড়ে তবে সেই খাওয়ার জিনিসও অশুচি হয়ে যাবে। সেই পাত্রের মধ্যে যদি কোন পানীয় থাকে তবে তা-ও অশুচি হয়ে যাবে। ৩৫ এগুলোর মরা দেহ কোন কিছুর উপর পড়লে তা-ও অশুচি হয়ে যাবে। এগুলো কোন তন্দুরে বা কোন চুলায় পড়লে তা ভেংগে ফেলতে হবে। … ৩৬ তবে সেগুলো যদি কোন ফোয়ারা কিম্বা কূয়ার মধ্যে পড়ে তবে সেই ফোয়ারা বা কূয়া অশুচি হবে না… ৩৭ জমিতে বুনবার জন্য রাখা কোন বীজের উপর যদি এগুলোর কোন মরা দেহ পড়ে তবে তা অশুচি হবে না; ৩৮ কিন্তু বীজের উপর জল দেওয়া হলে পর যদি তা পড়ে তবে সেই বীজ তোমাদের পক্ষে অশুচি হবে।’

  • রোগ বা জীবাণুর সংক্রমণ হয় সরাসরি ছোঁয়া দ্বারা, ছোঁয়া জিনিস দ্বারা, তরল জাতীয় জিনিস দ্বারা
  • বিজ্ঞান ০২ – ‘শরীরের স্রাব ও রোগ সংক্রমণ’ দেখুন।

হিতোপদেশ                   অতিরিক্ত খাওয়া, মধু খাওয়া

  • ‘তুমি মধু পেলে পরিমাণ মত খেয়ো, বেশী খেলে বমি করবে’ (হিতো ২৫:১৬)।
  • বেশী মধু খাওয়া ভাল নয়; গৌরব পাবার জন্য চেষ্টা করাও ভাল নয়’ (হিতো ২৫:২৭)।
  • ‘যে ছেলে আইন-কানুন মানে সে বুদ্ধিমান, কিন্তু যে ছেলে পেটুকদের সংগী সে তার বাবার জন্য অসম্মান নিয়ে আসে’ (হিতো ২৮:৭)।
  • এখানে অতিরিক্ত খাওয়ার বিরুদ্ধে, অসম খাবারের বিরুদ্ধে (unbalanced diet), বেশি মিষ্টি খাওয়ার বিরুদ্ধে এবং একটি প্রিয় বা অভিলাষের জিনিস বেশি খাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। আধুনিক বিজ্ঞান এই নীতিগুলি সমর্থন করে।
  • বেশি মিষ্টি খেলে বিশেষভাবে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, কিন্তু সাধারণভাবেও অতিরিক্ত ওজন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, যার ফলে উচ্চ রক্ত চাপ, স্ট্রোক, হৃদরোগ ইত্যাদি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

যিহিষ্কেল ৪:৯                 যিহিষ্কেল নাটকীয় চিহ্ন দেখানোর সময়ে কি খেলেন

তুমি গম, যব, শিম, মসুর ডাল, বাজ্‌রা ও জনার নিয়ে একটা পাত্রে রাখবে এবং সেগুলো দিয়ে তোমার জন্য রুটি তৈরি করবে। যে তিনশো নব্বই দিন তুমি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে তখন তা খাবে।

  • ঈশ্বর যিহিষ্কেলের খাবার আদি ১ অধ্যায় অনুসারে ঠিক করেন। যিহিষ্কেল সর্বমোট ৪৩০ দিনে অর্থাৎ এক বছর ও তিন মাস তা পালন করে, দৈনিক এই নিয়ম অনুসারে।
  • যে খাবার উল্লিখিত যিহিষ্কেল আমিষ, কিছু ফ্যাটি এসিড, কিছু ভিটামিন ও কিছু খনিজ পাবে।
  • এই নাটকীয় চিহ্ন ইস্রসায়েলের ও যিহূদার উপরে ঈশ্বরের বিচার দেখায় (নির্বাসন)। নাটকীয় চিহ্ন দেখায় যে এই দুই জাতির উপরে অভাব আসবে, অভিলাস আর থাকবে না কিন্তু ঈশ্বর তাদের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি বা যোগান নিশ্চিত করবেন।

দানিয়েল ১:৫-১৫            দানিয়েল পড়াশুনার সময় কি খেলেন

রাজা তাঁর খাবার থেকে তাদের প্রতিদিনের পরিমাণ মত খাবার ও আংগুর-রস দেবার নির্দেশ দিলেন। …দানিয়েল কিন্তু মনে মনে ঠিক করলেন যে, তিনি রাজার খাবার ও আংগুর-রস দিয়ে নিজেকে অশুচি করবেন না। এইভাবে যাতে নিজেকে অশুচি করতে না হয় সেইজন্য তিনি প্রধান রাজকর্মচারীর কাছে অনুমতি চাইলেন। ঈশ্বর সেই রাজকর্মচারীর মনে দানিয়েলের জন্য দয়া ও মমতা দিলেন।…১০ অন্য যুবকদের চেয়ে কেন তোমাদের রোগা দেখবেন?…১২ “আপনি দয়া করে দশ দিন আপনার এই দাসদের পরীক্ষা করে দেখুন; আপনি আমাদের কেবল শাক-সব্‌জি ও জল খেতে দেবেন।…১৫ দশ দিনের শেষে দেখা গেল রাজার খাবার খাওয়া যুবকদের সকলের চেয়ে তাঁরা আরও সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হয়েছেন।

  • যখন ৬০৫ খ্রিঃপূঃ বাবিল প্রথম বার যিরূশালেম দখল করে তারা অনেক যিহূদীদের জোর করে নির্বাসনে নিয়ে যায়, যেমন দানিয়েল ও তার তিনজন বন্ধুরা। বাবিল ছিল সে দিনের শক্তিশালী দেবতাপূজারী রাজ্য।
  • দানিয়েল ও তার বন্ধুরা ছিল দখল করা উঁচু শ্রেণীর যুবকরা। অনেক সাম্রাজ্য দখল করা এলাকা থেকে কিছু ভাল ঘরের যুবক নিয়ে তাদের সাম্রাজ্যের শাসন, ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিত এবং তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিত যেন তারা নতুন সরকার অন্তর থেকে গ্রহণ করে এবং এমন লোক হয়ে যায় যারা দখল করা জাতিকে শাসন করতে সাহায্য করবে। ‘এই যুবকদের বাবিলীয়দের ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেন। ৫…এইভাবে তাদের তিন বছর শিক্ষা দেবার পরে তারা রাজার কাজে নিযুক্ত হবে’ (দানিয়েল ১:৪-৫)। দানিয়েল ও তার বন্ধুদের ‘বাবিলীয় লোক’ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
  • দানিয়েল অনুমতি নেন যেন তারা আদি ১ অধ্যায়ের মত খেতে পারে: শাক-সবজি। হতে পারে তার মধ্যে শস্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
  • হতে পারে নির্বাসনে আসার আগে দানিয়েলের পরিবার যিরূশালেমে এত সীমিত ভাবে খাবার খায় নি, যিহূদীরা অবশ্যই মাংস খেত। কিন্তু এখানে দানিয়েল তা অনুরোধ করেন।
  • তা ছাড়া দানিয়েল যখন পরে রাজার কর্মী হিসাবে কাজ করেন তিনি রীতিমত মাংস খেতেন। তা দানিয়েল ১০:২-৩ পদ থেকে বুঝা যায় যেখানে দানিয়েল একটি বিশেষ উপবাস রাখেন: ‘সেই তিন সপ্তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন ভাল খাবার আমি খাই নি, মাংস বা আংগুর-রস মুখে দিই নি এবং তেলও মাখি নি’। তার অর্থ এইও যে দানিয়েল তার পরের জীবনে সাধারণত মাংস ও আংগুর-রস খেত।
  • কেন তাহলে তিনি এই ৩ বছরের প্রশিক্ষণের সময় এত কষ্ট করেন যেন মাংস খেতে না হয়? উত্তর দেওয়া আছে: ‘নিজেকে অশুচি করবেন না’
  • দানিয়েলের ভয় যে রাজবাড়ীতে যদি তিনি মাংস খান তবে তিনি ঠিক করতে পারবেন না তা কি ধরণের মাংস ছিল। হয়তো শুকরের মাংসও খাওয়ানো হত, বা রক্ত সহ মাংস, অপরিষ্কারভাবে প্রস্তুত করা মাংস অথবা এমন মাংস যা আগে দেবতার কাছে উৎসর্গ করা হয়েছিল।
  • তা প্রতিরোধ করতে গেলে সবচেয়ে সহজ পথ হল মাংস না খাওয়া, যেহেতু দানিয়েলের ক্ষমতা নেই বাবিলের রাজবাড়ীর রান্না ও খাওয়া-দাওয়া পরিবর্তন করতে।
  • কিন্তু পরে, যখন দানিয়েল উঁচু পদের সরকারী অফিসার এবং তিনি তার নিজের সংসার চালাতে সক্ষম, তিনি আবার যিহূদীদের সাধারণ নিয়ম অনুসারে তৈরি মাংস ও দ্রাক্ষা-রসও খাবে।
  • তাই এমন নয় যে দানিয়েল এখানে সবার জন্য প্রযোজ্য একটি নতুন খাবারের ধরণ বসান।
  • কিন্তু আমরা দানিয়েল থেকে শিখতে পারি আমরা একটি দেবতাপূজারী পরিস্থিতিতে একটু সৃজনশীল হলে ও ত্যাগ-স্বীকার করতে রাজি হলে কিভাবে ঈশ্বরের নিয়মে তারপরেও সমর্পিত হওয়া যায়।

যিশাইয় ৬৬:১৭                             

যারা শূকর ও ইঁদুরের মাংস আর অন্যান্য জঘন্য জিনিস খায় এবং অনুষ্ঠান-পরিচালকের পিছনে পিছনে পূজার বাগানে যাবার জন্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করে রাখে ও শুচি করে, তারা একসঙ্গে শেষ হয়ে যাবে।

  • যিশাইয়ের একটি ভবিষ্যদ্বাণী যা বুঝা কঠিন। এখানে অশুচি মাংস খাওয়া দেবতা পূজার সাথে উল্লিখিত আছে। আগের মত যিহূদী খাবারের নিয়ম ঘোষণা করা হয়েছে।

মার্ক ৭:১-২৩, মথি ১৫:১-২০         অশুচি খাবারের বিষয়ে যীশুর কথা

যারা যিরূশালেম থেকে এসেছিলেন এমন কয়েকজন ফরীশী ও ধর্ম-শিক্ষক যীশুর কাছে একত্র হলেন। তাঁরা দেখলেন, যীশুর শিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন হাত না ধুয়ে অশুচিভাবে খেতে বসেছেন।…সেইজন্য ফরীশী ও ধর্ম-শিক্ষকেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “পুরানো দিনের ধর্ম-শিক্ষকদের দেওয়া যে নিয়ম চলে আসছে আপনার শিষ্যেরা তা মেনে চলে না কেন?…১৪ এর পরে যীশু লোকদের আবার তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “আপনারা সবাই আমার কথা শুনুন ও বুঝুন। ১৫ বাইরে থেকে যা মানুষের ভিতরে যায় তা মানুষকে অশুচি করতে পারে না, বরং মানুষের মধ্য থেকে যা বের হয়ে আসে তা-ই মানুষকে অশুচি করে।”…১৮ তোমরা কি বোঝ না যে, বাইরে থেকে যা মানুষের ভিতরে ঢোকে তা তাকে অশুচি করতে পারে না? ১৯ এর কারণ হল, তা তো তার অন্তরে ঢোকে না কিন্তু পেটে ঢোকে এবং পরে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।” এই কথাতেই যীশু বুঝিয়ে দিলেন যে, সব খাবারই শুচি। ২০ যীশু আরও বললেন, “মানুষের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা- ই মানুষকে অশুচি করে, ২১ কারণ মানুষের ভিতর, অর্থাৎ অন্তর থেকেই মন্দ চিন্তা, সমস্ত রকম ব্যভিচার, চুরি, খুন, ২২ লোভ, অন্যের ক্ষতি করবার ইচ্ছা, ছলনা, লমপটতা, হিংসা, নিন্দা, অহংকার এবং মূর্খতা বের হয়ে আসে। ২৩ এই সব মন্দতা মানুষের ভিতর থেকেই বের হয়ে আসে এবং মানুষকে অশুচি করে।’

  • ফরীশীরা যীশুকে পরীক্ষা করে দেখে ও তাঁর সাথে তর্ক করার জন্য এসেছে। তারা তাঁর দোষ ধরে কারণ তিনি শিষ্যদের ‘পুরানো দিনের ধর্ম-শিক্ষকদের দেওয়া নিয়ম’ বাধ্য হতে বলেন না। তারা ঠিকই খেয়াল করেছে যে যীশু শিষ্যদের এই নিয়ম পালন করতে বলেন না।
  • ফরীশীরা (যাদের নামের অর্থ ‘আলাদা করা লোক’) খুব জোরের সঙ্গে শিক্ষা দিত যে দেবতাপূজারী রোম রাজ্যে যিহূদীরা নিজেকে আলাদা করার জন্য ও পবিত্র জীবন-যাপন করার জন্য, ধর্ম-শিক্ষকদের খাবারের এই নিয়মগুলি, শুচি-অশুচি নিয়মগুলি এবং বিশ্রামবার অবশ্যই পালন করতে হবে।
  • তারা বিশ্বাস করত যে তা হল এই পরিস্থিতিতে যিহূদীদের পবিত্র থাকার একমাত্র পথ। তারা আরো বিশ্বাস করত যে যদি সব যিহূদীরা এক দিনও সম্পূর্ণ বাধ্য হত, তবে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞাত মশীহকে পাঠাতেন এবং মশীহ রোমীয়দের পরাজিত করে একটি খাঁটি যিহূদী দেশ স্থাপন করতেন।
  • যে ‘পবিত্র হওয়া’ মানে ‘অযিহূদীদের থেকে আলাদা হওয়া’, যীশু তাদের এই কথায় কোনো রকম রাজি না। যীশু পাপী মানুষ, অশুচি বা অসুস্থ মানুষ, অযিহূদীদের সাথে অনেক মিশতেন, তিনি মোশির আইন-কানুন পালন করতেন কিন্তু তিনি ধর্ম-শিক্ষকদের দ্বারা এই ভারী যোগ দেওয়া নিয়মগুলি বা ঐতিহ্যগুলি মানে রাজি না (যার মধ্যে একটা ছিল হাত ধোঁয়া অতি নির্দিষ্ট নিয়ম)।
  • ফরীশীরা মনে করে যে আসল সমস্যা হল ‘পরিস্থিতি’ বা ‘দেবতাপূজারী রোমীয়দের উপস্থিতি’। যীশু তার চেয়ে বলেন যে আসল সমস্যা হল আমাদের পাপী হৃদয়। তিনি বলেন যে বাহ্যিক বিষয় বা আচরণ আমাদের অশুচি করে না বরং আমাদের হৃদয়ে যে মন্দ আছে, তা আমাদের অশুচি করে ফেলে।
  • যীশু সম্পূর্ণ নতুন একটি সংজ্ঞা দেন ‘ধার্মিক হওয়া’ মানে কি, ঈশ্বর আসলে কিসের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন যে তারা নিয়মের বাহ্যিক খুটিনাটি পালনে এত গুরুত্ব দিয়েছেন যেন তারা আর বুঝে না আইন অনুসারে ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে আসলে কি চেয়েছেন। যিহূদীরা যে এমন আদর্শ দেশ হবে যে অন্য জাতিরা ঈশ্বরের আলোর প্রতি আকৃষ্ট হবে, আইনের এই ভিত্তিক কথা ফরীশীরা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে। যা থেকে গেছে তা হল যিহূদীদের একটি জাতীয় অহংকার, ‘নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা’, আত্ম-ধার্মিকতা, এমন একটি মনোভাব যা ঈশ্বর কখনও চান নি।
  • যীশুর সে কথা যে ‘নিজেকে ঈশ্বরের জন্য আলাদা করা’ তা হল হৃদয়ের বিষয়, এবং পৌল ২ করি ৬:১৭ইফিষীয় ৫:৫ পদে তা পুনরালোচনা করেন।
  • কিন্তু ফরীশীদের সাথে এই তর্কের অর্থ কি এই যে যীশু সমস্ত শুচি অশুচি নিয়ম বাদ দিয়েছেন? মার্ক উপসংহারে বলেন যে ‘সব খাবারই শুচি’ (মার্ক ৭:১৯)।
  • এর অর্থ কি এই যে তিনি সাথে সাথে সমস্ত পরিষ্কার-পরিছন্নতার নিয়মগুলিও বাদ দিতে বলেছেন?
  • হ্যাঁ, এই নিয়মগুলি পদ্ধতি হিসাবে বাদ হবে। হ্যাঁ, এই নিয়মগুলির পালন আর ধার্মিক হওয়ার জন্য বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দাবী করা হবে না। কিন্তু নিয়মগুলি বৈজ্ঞানিক, মেডিকেল বা পরিষ্কার-পরিছন্নতার ক্ষেত্রেও বাতিল?

লূক ১১:৩৭-৪১              যীশু ফরীশীদের ধমক দেন

একজন ফরীশী যীশুকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন।…৩৮ সেই ফরীশী যখন দেখলেন খাওয়ার আগে যীশু ধর্মের নিয়ম মত হাত ধুলেন না তখন তিনি অবাক হলেন। ৩৯ প্রভু তাঁকে বললেন, তবে শুনুন, আপনারা, অর্থাৎ ফরীশীরা থালা ও বাটির বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে থাকেন, কিন্তু আপনাদের ভিতরটা লোভ ও মন্দতায় ভরা। ৪০ আপনারা মূর্খ! যিনি বাইরের দিক তৈরি করেছেন তিনি কি ভিতরের দিকও তৈরি করেন নি? ৪১ আপনাদের থালা-বাটির ভিতরে যা আছে তা-ই বরং ভিক্ষার মত দান করুন; দেখবেন, সব কিছুই আপনাদের কাছে শুচি হবে।’

  • ফরীশী নেতাদের সাধারণ তর্কাতর্কির চেয়ে এই ফরীশীর মনোভাব ভিন্ন। তিনি জানার আগ্রহ থেকেই  যীশুকে নিমন্ত্রণ দিয়েছেন। তিনি ‘অবাক’ হন (খারাপ কিছু আশা করেন নি) যে যীশু ধর্মের নিয়ম অনুসারে হাত ধোন নি । কিন্তু তারপরেও যীশু ফরীশীকে ‘খুশি করার জন্য’, ‘গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য বা ‘অপমান না করার জন্য’ কোনো প্রচেষ্টা করেন না। বরং তিনি সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেন, ধমকও দেন ও ফরীশীদের লোভ, মন্দতা ও অন্ধতার বিষয়ে দোষ ধরেন।
  • যীশু এখানে ‘ভিক্ষার মত দান করা’ হৃদয়ের ভাল মনোভাব ও দান হিসাবে ধরেন এবং বলেন যে সব কিছু এর উপর নির্ভরশীল: যদি আমার কাজ ও মনোভাব ভাল তবে ‘সব কিছুই আপনাদের কাছে শুচি হবে’ । যীশু তাই বলেন যে একজনের কাজ, মনোভাব বা উদ্দেশ্য ঠিক হলে, তবে সে ‘আইন পূর্ণ’ করছেন, যদিও সে পরবর্তীতে যোগ দেওয়া নিয়ম পালন করে না।

প্রেরিত ১০:১-৪৮ (১১:১-১৮)  যাফো শহরে পিতরের দর্শন

‘১৩ তার পরে তিনি শুনলেন কে যেন তাঁকে বলছেন, পিতর, ওঠো, মেরে খাও। ১৪ পিতর বললেন, না, না, প্রভু, কিছুতেই না। অপবিত্র বা অশুচি কোন কিছু আমি কখনও খাই নি। ১৫ তখন তিনি আবার শুনলেন, ঈশ্বর যা শুচি করেছেন তাকে তুমি অপবিত্র বোলো না।২৮ তখন তিনি তাদের বললেন, “আপনারা তো জানেন যে, একজন যিহূদীর পক্ষে একজন অযিহূদীর সংগে মেলামেশা করা বা তার সংগে দেখা করা আমাদের ধর্মের আইন-কানুনের বিরুদ্ধে। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কাউকে অপবিত্র বা অশুচি বলা আমার উচিত নয়।… ৩৪ তখন পিতর বলতে আরম্ভ করলেন, আমি এখন সত্যিই বুঝতে পারলাম ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান। ৩৫ প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে যারা তাঁকে ভক্তি করে এবং তাঁর চোখে যা ঠিক তা-ই করে তিনি তাদের গ্রহণ করেন।

  • ঈশ্বর এখানে খাবারের আইন (যাতে যিহূদীরা খুব বাধ্য ছিল) রূপকভাবে ব্যবহার করেন পিতর ও মণ্ডলীকে পরিত্রাণের ইতিহাসে নতুন একটি যুগ শুরু হয়েছে, তা বুঝানোর জন্য: অযিহূদীদের আর ‘অশুচি’ বলা হবে না, তারা যিহূদীদের মত একই বিশ্বাসে পরিত্রাণ পায়।
  • কেন ঈশ্বর পিতরকে এই সম্পূর্ণ নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঠিক খাবার নিয়ম দ্বারা বুঝান? হতে পারে কারণ খাবারের নিয়ম ছিল খুবই পরিচিত ও পালন করা একটি নিয়ম যা যিহূদী চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ঈশ্বর তবে তা চমকানোর জন্য ব্যবহার করেন।
  • কিন্তু ব্যবহারিক খাবারের বিষয়ে কথাটি কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে? যদি বিশ্বাসে অযিহূদীদের গ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে (কোনো নিয়ম পালন করা দ্বারা নয়), তবে এই নিয়ম পালন করার জন্য আর দাবী করা হচ্ছে না।

প্রেরিত ১৫:১-২৯ যিরূশালেমে প্রেরিতদের সভা: স্বাধীনতা ও বিবেচনা

‘১৯ যাকোব আরও বললেন, “এইজন্য আমার মতে যে অযিহূদীরা ঈশ্বরের দিকে ফিরছে তাদের কষ্ট দেওয়া আমাদের উচিত নয়।…২৮ পবিত্র আত্মা আর আমরা এটাই ভাল মনে করলাম যে, এই দরকারি বিষয়গুলো ছাড়া আর কোন কিছুর দ্বারা আপনাদের উপর যেন বোঝা চাপানো না হয়। ২৯ সেই দরকারি বিষয়গুলো হল-আপনারা প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খাবেন না, রক্ত খাবেন না, গলা টিপে মারা পশুর মাংস খাবেন না এবং কোন রকম ব্যভিচার করবেন না। এই সব করা থেকে দূরে থাকলে আপনারা ভাল করবেন। বিদায়।’

  • প্রেরিতদের সভার মূল সিদ্ধান্ত হল যে অযিহূদীদের যিহূদীদের নিয়ম আর পালন করা দরকার নেই।
  • তার অর্থ এইও যে যিহূদীদের গ্রহণযোগ্যতার জন্যও নিয়মগুলি আর পালন করা দরকার নেই যদিও নিয়ম পালন করা নিষেধ না: অভ্যাস বা সংস্কৃতি বা স্বাস্থ্যের কারণে তারা সেগুলি পালন করার বাধা নেই।
  • নতুন স্থাপিত যিহূদী-অযিহূদী মিশানো মণ্ডলী যেন একসাথে বাস করতে পারে এবং যিহূদীদের অতিরিক্ত কষ্ট দেওয়া না হয় তবে প্রেরিতদের সভা অযিহূদীদের অনুরোধ করে যেন তারা যিহূদীদের বিবেচনায় নীচের ৪টি বিষয় থেকে দূরে থাকে:
    • ১) প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার যেন না খায় (পৌল এই বিষয়ে রোমীয় ১৪ অধ্যায়ে আরো শিক্ষা দেন)
    • ২) রক্ত যেন না খায়।
    • ৩) গলা টিপে মারা পশুর মাংস যেন না খায় (তা কি পূজার বিষয়? বা রক্তের বিষয়ের মত?)।
    • ৪) যেন তারা কোনো রকম ব্যভিচার না করে।
  • কেন ব্যভিচার (একটি নৈতিক বিষয়) এখানে খাবারের বিষয়ের মত আসে?
  • হতে পারে কারণ দেবতা পূজার সাথে এইগুলি সব সম্পর্কিত ছিল: দেবতা পূজায় উৎসর্গ করা মাংস, গলা টিপে মারা ও অনৈতিকতা (মন্দিরে অনুষ্ঠানে মন্দির পতিতাদের সাথে ব্যভিচার)।
  • ঐ যুগে এমন কি সাধারণ ক্রয়-বিক্রয় বা কাজের ক্ষেত্রে চুক্তি ছিল দেবতা পূজার সাথে সম্পর্কিত: প্রত্যেক পেশায় একটি সুরক্ষাকারী দেবতা ছিল যার নামে ও যার মন্দিরে ব্যবসার চুক্তি করা হত। তখন ধর্ম ও সাধারণ জীবন ছিল সম্পূর্ণ সম্পর্কিত বিষয়।

রোমীয় ১৪:১৩-১৭         স্বাধীনতা কিন্তু অন্যদের বিবেচনা করা

এইজন্য আমরা যেন আর একে অন্যের দোষ না ধরি, বরং এমন কোন কাজ করব না বলে ঠিক করি, যা দেখে কোন ভাই মনে বাধা পেতে পারে বা পাপে পড়তে পারে। ১৪ প্রভু যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছি বলে আমি ভাল করেই জানি যে, আসলে কোন খাবারই অশুচি নয়, কিন্তু কেউ যদি কোন খাবারকে অশুচি মনে করে তবে তা তারই কাছে অশুচি। ১৫ কোন খাবারের জন্য যদি তুমি তোমার ভাইয়ের মনে দুঃখ দাও তবে তো তুমি আর ভালবাসার মনোভাব নিয়ে চলছ না। যে ভাইয়ের জন্য খ্রীষ্ট মরেছিলেন, খাবারের জন্য তার সর্বনাশ কোরো না। ১৬ তোমাদের কাছে যা ভাল, কেউ যেন তার নিন্দা করতে না পারে। ১৭ ঈশ্বরের রাজ্যে খাওয়া-দাওয়া বড় কথা নয়; বড় কথা হল, পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে সৎ পথে চলা আর শান্তি ও আনন্দ।

  • পৌল এখানে দেখান যে ঈশ্বরের হৃদয় ও ইচ্ছাকে দুই দিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: উভয় নিয়ম পালনে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে এবং অতিরিক্ত স্বাধীনতায় চললে।
  • মূল বিষয় নিজের ধার্মিকতা রক্ষাও নয়, ‘নিজের স্বাধীনতা’ও নয়। মূল বিষয় হল ঈশ্বরকে এবং প্রতিবেশীকে ভালবাসা। তা করতে গেলে কিছু সময়ে অন্যদের বিবেচনায় একটি স্বাধীনতা ত্যাগ করা প্রয়োজন হবে।
  • তাই পৌল এখানে অযিহূদীদের অতি-স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করেন যার কারণে মণ্ডলীতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল: নিজের স্বাধীনতার জন্য (যদিও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে) মণ্ডলীর একতা নষ্ট করা উচিত না বরং পরস্পরকে ভালবাসায় প্রাধান্য দেওয়া এবং এমন কিছু না করা যাতে অন্যের বিবেক আঘাত পায়।
  • আগের অনুচ্ছেদ দেখুন: রোমীয় ১৪:৩-৪ পদে ‘আমিষভোজী যেন নিরামিষভোজীকে তুচ্ছ না করে এবং নিরামিষভোজী যেন আমিষভোজীর দোষ না ধরে, কারণ ঈশ্বর তো সেই দু’জনকেই আপন করে নিয়েছেন। ৪ তুমি কে, যে অন্যের চাকরের বিচার কর? সে দাঁড়িয়ে আছে, না পড়ে গেছে, তা তার মনিবই বুঝবেন। কিন্তু সে দাঁড়িয়েই থাকবে, কারণ প্রভুই তাকে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারেন।”

১ করিন্থীয় ৮, ১০:২৫-২৮         স্বাধীনতা কিন্তু অন্যদের বিবেচনা করা

  • ১ করিন্থীয় ৮ অধ্যায়ে পৌল এখানে করিন্থীয়দের সংশোধন করেন: তাদের অতি স্বাধীনতার কারণে কিছু দেবতা পূজা থেকে আসা বিশ্বাসীরা তাদের বিবেকের বিরুদ্ধে গিয়েছে। তিনি বলেন যে নিমন্ত্রণে মাংস পেলে কোনো প্রশ্ন না উঠাতে যেন বিবেক নিয়ে সংগ্রাম বা খারাপ সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয় না উঠে (১ করিন্থীয় ১০:২৫-২৮)।

কলসীয় ২:১৬                         নিয়ম পালনের উপরে নির্ভর করার বিষয়ে সাবধান বাণী

সেইজন্য খাওয়া-দাওয়া বা ধর্মীয় কোন পর্ব কিম্বা অমাবস্যা বা বিশ্রামবার নিয়ে তোমাদের দোষ দেবার অধিকার কারও নেই।

  • কিন্তু তিনি আবারও নিয়মে অতি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে একটি সাবধানবাণী দেন। বিশ্রামদিন পালন ও খাবারের নিয়মগুলিতে অনেকদিন ধরে অতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, বিশেষভাবে ফরীশীদের দৃষ্টিতে।

১ তীমথিয় ৪:১-৫                     নিয়ম পালনের উপরে নির্ভর না করার বিষয়ে সাবধান বাণী

ভবিষ্যতে কিছু লোক খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যাবে এবং ছলনাকারী আত্মা ও মন্দ আত্মাদের শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়বে। বিবেক অসাড় হয়ে গেছে এমন সব মিথ্যাবাদী লোকদের ভণ্ডামির জন্য এই রকম হবে। এরা মানুষকে বিয়ে না করবার আদেশ দেয় এবং কোন কোন খাবার খেতে মানা করে। কিন্তু বিশ্বাসীরা, যারা ঈশ্বরের সত্যকে জেনেছে, তারা যেন ধন্যবাদ দিয়ে খায় সেইজন্যই তো ঈশ্বর এই সব খাবার সৃষ্টি করেছেন। ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিস ভাল, তাই কোন জিনিস খারাপ মনে করে বাদ দেওয়া উচিত নয়; কিন্তু তা যেন ধন্যবাদ দিয়ে গ্রহণ করা হয়, কারণ ঈশ্বরের বাক্য ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তা শুচি হয়।

  • আবারও নিয়ম পালনে অতি গুরুত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে পৌলের করা একটি সাবধানবাণী।
  • নিয়মগুলিতে অতি গুরুত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে পৌলের ব্যবহারিক পরামর্শ হল:

নতুন নিয়ম খাবারের বিষয়ে কি নির্দেশনা দেয়?           > কৃতজ্ঞতা ও ঈশ্বরকে গৌরব দেওয়া

  • যোহন ৬:১১       ‘এর পরে যীশু সেই রুটি কয়খানা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং যারা বসে ছিল তাদের ভাগ করে দিলেন।’
  • প্রেরিত ২৭:৩৫    ‘এই কথা বলে পৌল রুটি নিয়ে তাদের সকলের সামনেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তা ভেংগে খেতে লাগলেন।’
  • রোমীয় ১৪:৬-৭   ‘বিশেষ কোন একটা দিন যে পালন করে সে তো প্রভুকে খুশী করবার জন্যই তা করে। যে সব কিছু খায় সে প্রভুকে খুশী করবার জন্যই খায়, কারণ সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়। যে সব কিছু খায় না সে প্রভুকে খুশী করবার জন্যই খায় না, আর সেও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়।’
  • ১ করি ১০:৩০-৩১ ‘আমি যদি ধন্যবাদ দিয়ে খাই তবে যে খাবারের জন্য আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি তার জন্য কেন আমার নিন্দা করা হবে? ৩১ সেইজন্য তোমরা খাওয়া-দাওয়া কর আর যা-ই কর, সব কিছু ঈশ্বরের গৌরবের জন্য কোরো।’
  • ১ তীমথিয় ৪:৪-৫ ‘ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিস ভাল, তাই কোন জিনিস খারাপ মনে করে বাদ দেওয়া উচিত নয়; কিন্তু তা যেন ধন্যবাদ দিয়ে গ্রহণ করা হয়, কারণ ঈশ্বরের বাক্য ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তা শুচি হয়।’

প্রকাশিত ২:২০-২২ থুয়াতীরায় অতিরিক্ত স্বাধীনতা

তবুও তোমার বিরুদ্ধে আমার এই কথা বলবার আছে যে, তুমি ঈষেবল নামে সেই স্ত্রীলোকের অন্যায় সহ্য করছ। এই ঈষেবল নিজেকে নবী বলে। তার শিক্ষার দ্বারা সে আমার দাসদের ভুলায় যেন তারা ব্যভিচার করে এবং প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খায়। ২১ ব্যভিচার থেকে মন ফিরাবার জন্য আমি তাকে সময় দিয়েছিলাম কিন্তু সে মন ফিরাতে রাজী হয় নি। ২২ সেইজন্য আমি তাকে বিছানায় ফেলে রাখব, আর যারা তার সংগে ব্যভিচার করে তারা যদি ব্যভিচার থেকে মন না ফিরায় তবে তাদের ভীষণ কষ্টের মধ্যে ফেলব।

  • থুয়াতীরা ‘ঈষেবল’ নামে একটি ভ্রান্ত শিক্ষিকার প্রভাবে পড়েছে যে হতে পারে শিক্ষা দিত যে স্থানীয় দেবতা পূজায় অংশ গ্রহণ করতে বিশ্বাসীকে ক্ষতি করে না (অনুষ্ঠানে বা মন্দিরে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিতে যার অংশ সাধারণত ছিল দেবতাকে উৎসর্গ করা মাংস খাওয়া ও মন্দিরের পতিতার সাথে ব্যভিচার)। হতে পারে সে ‘খ্রিষ্টে স্বাধীনতা’ দেখিয়ে বলেছে যে এই ধরণের ব্যবহারে সমস্যা নেই। পৌল এই অতি-স্বাধীনতা নিয়ে সাবধানবাণী দেন: তা হল ‘মিশানো ধর্ম’ (syncretism)  এবং মন না ফিরালে তা বিশ্বাসীকে ধ্বংস করে দেবে।

নতুন নিয়মে ‘শুচি’ এবং ‘অশুচি’ শব্দের ব্যবহার

  • ‘শুচি’ শব্দের অর্থ হতে পারে ‘সুস্থ’ যেমন লূক ৫:১৩ পদে: ‘যীশু হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি শুচি হও।” আর তখনই সে ভাল হয়ে গেল।’
  • ‘শুচি’ শব্দের অর্থ ‘পরিষ্কার’, ‘দূষিত নয়’ হতে পারে যেমন লূক ১১:৩৯ পদে: ‘প্রভু তাঁকে বললেন, “তবে শুনুন, আপনারা, অর্থাৎ ফরীশীরা থালা ও বাটির বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে থাকেন…।’
  • ‘শুচি’ শব্দের অর্থ হতে পারে ‘নৈতিক’ যেমন যোহন ১৩:১০ পদে: ‘যীশু তাঁকে বললেন, “যে স্নান করেছে তার পা ছাড়া আর কিছুই ধোওয়ার দরকার নেই, কারণ তার আর সব কিছু পরিষ্কার (কেরী অনুবাদে: ‘সে ত সর্বাঙ্গে শুচি’) আছে। তোমরা অবশ্য পরিষ্কার আছ, কিন্তু সকলে নও’। অথবা যোহন ১৫:৩ পদে: ‘আমি যে কথা তোমাদের বলেছি তার জন্য তোমরা আগেই পরিষ্কার হয়েছ’। একইভাবে ‘অশুচি’ শব্দের অর্থ হতে পারে ‘অনৈতিক’, ‘মন্দ’ যেমন ২ পিতর ১৮ বা ইফিষীয় ৫:৫ পদে।
  • ‘শুচি’ শব্দের অর্থ হতে পারে ‘পরিষ্কার বিবেক’ যেমন প্রেরিত ১৮:৬ পদে: ‘কিন্তু যিহূদীরা যখন পৌলের বিরুদ্ধে কথা বলে তাঁকে অপমান করতে লাগল তখন পৌল…বললেন, “আপনাদের রক্তের দায় আপনাদের নিজেদের মাথার উপরেই থাকুক। এই বিষয়ে আমার কোন দোষ নেই (কেরী অনুবাদে: ‘আমি শুচি)। এখন থেকে আমি অযিহূদীদের কাছে যাব।’
  • ‘অশুচি’ শব্দও মন্দ আত্মার বর্ণনায় ব্যবহৃত ‘অশুচি আত্মা’ যেমন: মথি ১০:১, ১২:৪৩, মার্ক ১:২৩, ১:২৬-২৭, ৩:১১, ৩:৩০, ৫:২, ৫:৮, ৫:১৩, ৬:৭, ৭:২৫, লূক ৪:৩৩, ৪:৩৬, ৬:১৮, ৮:২৯, ৯:৪২, ১১:২৪, প্রেরিত ৫:১৬, ৮:৭, ১ করিন্থীয় ৭:১৪, ২ করিন্থীয় ৬:১৭, প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৩ পদে।
  • ‘অশুচি’ শব্দ ব্যবহৃত যখন পুরাতন নিয়মের মত একটি বিষয় ‘অশুচি’ হতে থাকে, যেমন প্রেরিত ১০:১৪, ১০:২৮, ১১:৮, রোমীয় ১৪:১৪, ইব্রীয় ৯:১৩, প্রকাশিত ১৮:২ পদে।

সারাংশ

  • নতুন নিয়মে পুরাতন নিয়মের খাবারের, পরিষ্কার-পরিছন্নতার ও আনুষ্ঠানিক নিয়ম বাতিল করা হয়েছে ও এই নিয়মের প্রতি বাধ্যতা অযিহূদী বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে আর দাবী করা হচ্ছে না।
  • এই নিয়মের প্রতি বাধ্যতা যিহূদী বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেও আর দাবী করা হচ্ছে না, কিন্তু যদি তারা এইগুলি পালন করতে থাকে, তা সমস্যা নেই।
  • মণ্ডলীর ইতিহাসে লেখা আছে যে যীশুর ভাই যাকোব যিরূশালেম মণ্ডলীর নেতা হয়ে যান এবং এমন ধার্মিক জীবন করেন যে বিশ্বাসীরা, যিহূদীরা, এমন কি ফরীশীরা তাকে অনেক সম্মান করত।
  • কিন্তু যীশু সক্রিয়ভাবে ও পরিষ্কারভাবে যিহূদী নিয়মগুলির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় বিশেষভাবে যেখানে সেগুলি ক্লান্তি, বিভেদ, নিজেকে আলাদা করা, তর্ক, আত্ম-ধার্মিকতা বা অন্যদের তুচ্ছ করার মনোভাব সৃষ্টি করে। যদিও যীশু নিয়মগুলি পালন করা নিষেধ করেন না তবুও তিনি দেখান যে নিয়মের উপর অতি গুরুত্ব দিলে আইন-কানুনের পিছনে ঈশ্বরের ইচ্ছা ও হৃদয় কি, তা বুঝার ক্ষমতা বাড়ে না বরং কমে যায়।
  • নতুন নিয়মের চিঠিগুলিতে করা সাবধানবাণী আছে যে নিয়মে অতি গুরুত্ব দিলে বিশ্বাসীরা ভুল জিনিসের উপর আশা রাখবে ও নির্ভর করবে এবং তাতে ক্ষতি ও বিভেদ হয়।
  • নতুন নিয়মের মণ্ডলী পুরাতন নিয়ম থেকে এই বড় পরিবর্তন ও নতুন স্বাধীনতা বুঝেছে এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী তা ধরে রেখেছে। কিন্তু ওপাশে আবারও কড়া সাবধানবাণী দিয়েছে যেন বিশ্বাসীরা দেবতা পূজা বা মন্দ কাজের সাথে হাত না মিলায়।
  • পুরাতন নিয়মে খাবারের নিয়মগুলি পালন করা বা না করা, তা আর ধার্মিকতার বা নৈতিকতার বিষয় নয়।
  • পুরাতন নিয়মের খাবারের নিয়মগুলি কি স্বাস্থ্যের বা মেডিকেল কারণে অথবা ব্যবহারিক কারণে তারপরেও পালন করা ভাল?
  • হতে পারে, হ্যাঁ। কিন্তু পালন করলে সাবধান থাকতে হবে যেন অন্য বিশ্বাসীদের বিচার না করি বা এই বিষয়ে অতি গুরুত্ব না দেই (কারণ তা ঈশ্বরের চোখে বড় বিষয় নয়), যেন আত্ম-ধার্মিক না হই, যেন সেগুলি অন্যদের উপর না চাপাই, যেন তা ‘আসল বিষয়’ মনে না করি।
  • যারা নিয়ম পালন করতে চায়: খেয়াল করুন যে শুধুমাত্র শুকর ও চিংড়ী খাওয়া বাদ দিলে আইন-কানুনও পূর্ণ হয় না। আধুনিক ভাল কোনো রেস্তোরাঁ বা ভালভাবে চালানো সংসারেও আইনগুলি পূর্ণভাবে পালন করা হয় না। আধুনিক যিহূদীরা যারা তা আসলে পালন করে, তাদের দুইটা রান্না-ঘর আছে এবং তারা খুব জটিল পদ্ধতি পালন করে।
  • নিয়মের চেয়ে আইন-কানুনের পিছনে ঈশ্বরের নীতি বুঝা ও পালন করা দরকার: খাবার নিয়ম বিচারের, অহংকারের, তুচ্ছ করার বা বিভেদের কারণ হতে দিয়ো না। কিন্তু যদি পারি স্বাস্থ্যের সুরক্ষার কারণে অবশ্যই মোটামুটি খাবারের চেয়ে ভাল মাণের খাবার খাব। কিন্তু ভুলে যাব না যে তাতে ধার্মিকতা বা অধার্মিকতা প্রকাশ পায় না।

যে তথ্যের উৎসর্গ ব্যবহার করা হয়েছে

Douglas S. Winnail – তার উপসংহারে একমত না হলেও তার লেখায় অনেক ভাল বৈজ্ঞানিক, মেডিকেল ও ব্যবহারিক তথ্য পাওয়া যায়।

Ernest L. Martin – তার মতবাদ বা উপসংহার ভাল কিন্তু আত্মিক বিষয়ে অতি গুরুত্ব দেওয়ার কারণে বৈজ্ঞানিক, মেডিকেল বা ব্যবহারিক কারণগুলি দেওয়া হয় না।