ঈশ্বর যিনি সব ভাল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, উৎস ও দাতা
আদি ৪৯:২৫
“সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তোমাকে উপর থেকে আকাশের আশীর্বাদ আর মাটির তলা থেকে ফোয়ারার আশীর্বাদ দেবেন। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দিয়ে আর তার বুকে দুধ দিয়ে তিনি তোমাকে আশীর্বাদ করবেন।”
গীত ১৪৭:৮
“তিনি আকাশ মেঘে ঢাকেন; তিনি পৃথিবীর জন্য বৃষ্টির ব্যবস্থা করেন আর পাহাড়ের উপরে ঘাস জন্মাতে দেন।”
কি কি ধরণের সম্পদ পাওয়া যায়?
- ঈশ্বর নিজেই, তাঁর আশীর্বাদ, তাঁর প্রকাশ, তাঁর প্রজ্ঞা, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী, তাঁর জ্ঞান, তাঁর আইন-কানুন, তাঁর নীতি ইত্যাদি।
- মানুষ, মানুষের মন, জ্ঞান, বুদ্ধি, চিন্তা করা, মূল্যায়ন করা ও বুঝার ক্ষমতা, যুক্তি, ইচ্ছা, ইচ্ছার শক্তি, আবেগ, পরিকল্পনা, ধৈর্য, সময় ইত্যাদি।
- সূর্য, তাপ, রোদ, মাটি থেকে গরম পানি, আগ্নেয়গিরি থেকে তাপ ইত্যাদি।
- পানি, শিশির, কুয়াশা, ঝর্ণা, নদী, বিল, উৎসকূপ, নদীর ক্ষমতা, সাগর, ঢেউয়ের ক্ষমতা, জলবিদ্যুৎ।
- হওয়া, বাতাস, গ্যাসগুলো, ইত্যাদি।
- কাঠ, বায়ো গ্যাস, গ্যাস, আশঁ, কয়লা, তেল, তেল থেকে অন্যান্য পণ্য ইত্যাদি।
- গাছ-পালা > শস্য, বাদাম, পাতা, সবজি, ফল-মূল, কাঠ, জ্বালানি, সুগন্ধি, ওষুধ ইত্যাদি।
- জীব-জন্তু > মাংস, দুধ, ডিম, চামড়া, লোম, উল, সার, পরিশ্রম, তথ্যাবলী, পুষ্টিকর, ওষুধ, গবেষণা ইত্যাদি।
- পাথর, খোয়া, বালি, আকরিক, ধাতু, রাসায়নিক পদার্থ, তেজক্রিয় আকরিক, পারমাণবিক শক্তি।
এগুলো ছাড়া হয়তো আরো অনেক পদার্থ আছে যার ব্যবহার মানুষ এখনও শেখে নি। উদাহরণ: পৃথিবীর কিছু জায়গায় একটি দুর্গন্ধের কালো আটার মত তরল মাটি থেকে বের হত। ১৫০ বছর আগে পর্যন্ত কেউ তা মূল্যবান সম্পদ হিসাবে বুঝত না তবুও বিংশ শতাব্দীতে এই সম্পদের পিছনে মানুষ যুদ্ধও করেছে: তৈল। আর কত সম্পদ আছে, যার ব্যবহার আমরা এখনও শিখি নি, যার গুরুত্ব আমরা এখনও বুঝি নি?
সম্পদের বিষয়ে ভিত্তিক চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গী
বস্তু জগতকে কি দৃষ্টিতে দেখি? প্রাকৃতিক সম্পদ কি সীমিত?

পূর্বদিকের চিন্তা, আত্মাপূজারী, হিন্দু বা বৌদ্ধ চিন্তা
- এই বস্তু জগত বাস্তব নয়। অথবা যদি বাস্তব হয় তবে তার চেয়ে আত্মিক জগত আরো অনেক বাস্তব, গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান।
- তাই বস্তু জগত আমার জানার আগ্রহ, গবেষণা, পরিশ্রম ও যত্নের যোগ্য নয়।
- বস্তু জগতে নানা আত্মা উপস্থিত, প্রকৃতপক্ষে বস্তু জগত আত্মাদের দ্বারা চালিত। আত্মা সবখানে উপস্থিত বলে মানুষ হিসাবে আমার হস্তক্ষেপ করা, গবেষণা করা, ব্যবহার করা বা কাজে লাগানোর অধিকার নেই।
- বস্তু জগতে সব কিছু আত্মাদের দিয়ে চালিত মানে যে প্রকৃতি এক এক দিন এক এক রকম চলে, তা বুঝা যায় না, নিয়ন্ত্রণও করা যায় না। ধন-সম্পদ থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে, কিন্তু বৃদ্ধি পায় না, তৈরি করাও যায় না।

পশ্চিমদিকের চিন্তা, নস্টিক বা আধুনিক চিন্তা
- ঈশ্বর বলতে কিছু নেই, আত্মা বলতে কিছু নেই, তাই নৈতিকতা বা ভাল-মন্দ বলতেও কিছু নেই। বস্তু জগত হল মাত্র বাস্তবতা। অনন্ত জীবন নেই।
- পৃথিবী বা মহাবিশ্বের বাইরে থেকে কারও হস্তক্ষেপ নেই।
- বস্তু জগত হল সীমিত এবং ফলে সব ধন-সম্পদও সীমিত।
- জনসংখ্যা যদি বাড়তে থাকে তবে সবার জন্য সম্পদ কম পাওয়া যাবে।

বাইবেলীয় চিন্তা
- বস্তু জগত, যেমন আত্মিক জগতও বাস্তব, ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি, ভাল এবং আমাদের পরিশ্রম ও গবেষণার যোগ্য।
- এই বস্তু জগত ঈশ্বরের আশীর্বাদ, প্রকাশ ও হস্তক্ষেপের জন্য খোলা।
- ধন-সম্পদ হল ঈশ্বরের কাছ থেকে দান যা আবিষ্কার করা যায়, ব্যবহার করা যায় এবং মানুষের শ্রম দ্বারা বাড়ানো যায়।
- মানুষ ঈশ্বরের কাছে, অর্থাৎ নৈতিক আইনের কাছে তাদের আচরণ, যেমন পৃথিবীর ধন-সম্পদের ব্যবহারের জন্য দায়বদ্ধ।
ঈশ্বর কি এই জগতে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম? করতে আগ্রহী? বাস্তবে করেন?

পূর্বদিকের চিন্তা, আত্মাপূজারী, হিন্দু বা বৌদ্ধ চিন্তা
- বস্তু জগতের চেয়ে আত্মিক জগত আরো বাস্তব, আরো গুরুত্বপূর্ণ ও যোগ্য।
- আত্মাগুলো নিজের স্বার্থের জন্য ইচ্ছামত পৃথিবীতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
- আত্মাগুলো পৃথিবীর বা মানুষের মঙ্গলে সমর্পিত নয়।

পশ্চিমদিকের চিন্তা, নস্টিক বা আধুনিক চিন্তা
- ঈশ্বর, আত্মিক জগত, নৈতিক নিয়ম, দায়বদ্ধতা বা অনন্ত জীবন বলতে কিছু নেই।
- হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম কেউ নেই, হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহীও কেউ নেই।
- মানব জাতি হল নিজেরই, নিজের মনিব, নিজের উদ্ধারকর্তা, নিজের সমস্যা।

বাইবেলীয় চিন্তা
- ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট বস্তু জগত, আত্মিক জগত এবং মানব জাতির প্রতি সমর্পিত।
- ঈশ্বর পৃথিবীতে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম, আগ্রহী এবং তিনি তা-ই করেন।
- ঈশ্বরের হস্তক্ষেপ এক এক দিন এক এক রকমের নয় বরং তা তাঁর দেওয়া নীতি অনুসারে ঘটে: তিনি প্রার্থনার উত্তর দেন। তিনি বাধ্যতায় আশীর্বাদ করেন।
• ঈশ্বর প্রকাশ, প্রজ্ঞা, সাহায্যকারী দৃষ্টিভঙ্গী, আইন-কানুন ও শৃঙ্খলা, দান ও দক্ষতা, সাহস ও দর্শন, সৃজনশীলতা ও সম্পদ দান করেন।
মানুষের অধিকার, দক্ষতা, কাজ ও প্রচেষ্টা কি ধরণের দৃষ্টিতে দেখি?

পূর্বদিকের চিন্তা, আত্মাপূজারী, হিন্দু বা বৌদ্ধ চিন্তা
- বস্তু জগতের উপর মানুষের ক্ষমতা নেই, বরং তারা বস্তু এবং আত্মিক জগতের অধীনে। তারা প্রকৃতি এবং তার মধ্যে উপস্থিত আত্মাদের পূজা করে ও মেনে চলে।
- প্রকৃতির মধ্যে আত্মাগুলো উপস্থিত তাই বস্তু জগতে যত কম হস্তক্ষেপ করা যায় তত ভাল। মানব জাতি আত্মার ভয়ে কাজ ও চাষ করে।
- বস্তু জগত যে কোন মুহূর্তে বিভিন্ন আত্মা দিয়ে প্রভাবিত, তাই প্রত্যাশা করে না যে
প্রকৃতি নিয়ম অনুসারে চলে এবং সেই নিয়ম আবিষ্কার করে ও কাজে লাগানো যায়। তাই হস্তক্ষেপ, কাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বা গবেষণায় নিরুৎসাহিত। এই বস্তু জগত মূল্যবান নয় বলে তা সেবা করা, যত্ম নেওয়া বা উন্নত করার প্রয়োজন নেই।

পশ্চিমদিকের চিন্তা, নস্টিক বা আধুনিক চিন্তা
- বস্তু জগতের উপরে মানব জাতির অবশ্যই অধিকার আছে। যারা করতে সক্ষম তাদের জন্য তা অনুমোদিত। প্রকৃতির জন্য ঈশ্বরের কাছে, পৃথিবীর কাছে বা ভবিষ্যতের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
- মানব জাতি বিশ্বাস করে যে বস্তু জগত প্রাকৃতিক আইন অনুসারে চলে যা আবিষ্কার করা যায়। নিজের প্রয়োজন বা স্বার্থের জন্য গবেষণা, বিজ্ঞান, দক্ষতা অর্জন, প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করি। মানব জাতির হস্তক্ষেপ ও পরিশ্রমের উদ্দেশ্য হল নিজের জন্য মনের মত জীবন অর্জন করা।

বাইবেলীয় চিন্তা
- ঈশ্বর মানব জাতিকে সৃষ্টির উপরে অধিকার দিয়েছেন, পরিশ্রম দ্বারা দক্ষতা সৃষ্টি, গবেষণা ও উন্নয়ন করা, পৃথিবী থেকে নিজের প্রয়োজন মেটানো এসব হল ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত ও উৎসাহিত।
- এই পৃথিবী মানুষের অধীনে দেওয়া, ঈশ্বরের উপহার হিসাবে মূল্যবান এবং মানুষের যত্ন, পরিশ্রম, গবেষণা ও প্রচেষ্টার যোগ্য।
- মানব জাতি কিন্তু ঈশ্বরের অধীনের পৃথিবীর দেখাশোনাকারী এবং পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের কাছে দায়ী। মানুষকে বিভিন্ন ধরণের দান, অধিকার ও দক্ষতা দেওয়া হয়েছে যেন তারা পরস্পর্কে সেবা করে।
সময়, ইতিহাস বা ভবিষ্যৎ কি ধরণের দৃষ্টিতে দেখি?

পূর্বদিকের চিন্তা, আত্মাপূজারী, হিন্দু বা বৌদ্ধ চিন্তা
- সময় চক্রে চলে। সব কিছু একদিন আবার আগের মত হয়ে যাবে। ইতিহাস এগিয়ে যায় না, কোথাও পৌঁছায়ও না। ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, আশা বলেতে কিছু নেই।
- মানুষ যত যা করবে না কেন, তা প্রকৃতপক্ষে কোনো পার্থক্য তৈরি করে না। পরিবর্তন বা উন্নয়ন নেই, তা যদি মনে করি তবে নিজেকে ভুলাই। পরিশ্রম, প্রচেষ্টা বা হস্তক্ষেপ আসলে নিঃস্ফল।

পশ্চিমদিকের চিন্তা, নস্টিক বা আধুনিক চিন্তা
- বস্তু জগত এবং পৃথিবীর খনিজ-সম্পদ সীমিত এবং পরিমান কমছে। সময় যত আগাবে তত সমস্যা হবে।
- কেউ কেউ পৃথিবীর ক্ষয় বা অবনতির গতি কমাতে চেষ্টা করে (পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলন)। কেউ কেউ নিজেদের জন্য যত সুযোগ-সুবিধা বা বিলাসিতার জীবন এখনও অর্জন করা যায়, তা অর্জন করতে চেষ্টা করে (আনন্দবাদ / hedonism)।
- ভবিষ্যৎ নেই। তারা পাই-চিত্র (সম্পদের বিতরণ) এবং গ্রাফ দেখায় (অমুক সম্পদ কবে শেষ হয়ে যাবে)

বাইবেলীয় চিন্তা
- সময় ঈশ্বরের হাতে এবং তিনিই ইতিহাসের কর্তা। এমন কিছু নয় যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ভবিষ্যৎ তাঁরই হাতে এবং তিনি সব কিছু তাঁরই উদ্দেশ্য অনুসারে একটি ন্যায্য বিচার এবং একটি চমৎকার পুনরুদ্ধারে নিয়ে যাবেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ হবে, তাঁর রাজ্য আসবে। ঈশ্বরের আকৃতি অনুসারে মানুষের সিদ্ধান্ত, পরিশ্রম, প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে। যা ভাল তা চিরকাল থাকবে।
সম্পদের কি অভাব আছে?
দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৭-৯ – অভাব, ঘাটতি নেই
“তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে চমৎকার দেশটিতে তোমাদের নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে রয়েছে পাহাড় ও উপত্যকা দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, ফোয়ারা আর মাটির তলার জল। ৮ সেখানে রয়েছে প্রচুর গম ও যব, আংগুর ও ডুমুর গাছ এবং ডালিম, জলপাইয়ের তেল আর মধু। ৯ সেই দেশে তোমরা পাবে প্রচুর খাবার এবং কোন কিছুরই অভাব তোমাদের থাকবে না। সেখানকার পাথরে রয়েছে লোহা। সেখানকার পাহাড় থেকে তোমরা তামা খুঁড়ে তুলতে পারবে।”
- ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে প্রতিজ্ঞা দেন: চাষের ক্ষেত্রে বা খনিজ-সম্পদের ক্ষেত্রে, কোনো অভাব হবে না।
- কেউ কেউ বলে যে, ঈশ্বর তা শুধুমাত্র তাঁরই জেতার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছেন, সবার জন্য না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে একটি আদর্শ জাতি হিসাবে আহ্বান করেছেন যেন তাদের দ্বারা প্রকাশিত হয় ঈশ্বর সব জাতিগুলোর জন্য কি করতে চান।
- এছাড়া লক্ষ্য করা দরকার যে, খনিজ-সম্পদের বিতরণের মানচিত্র দেখলে ইস্রায়েলের আসলে অতি বেশি কিছু নেই। ইস্রায়েল দেশের চেয়ে অন্যান্য অনেক দেশ আছে যাতে ঈশ্বর প্রচুর পরিমাণে খনিজ-সম্পদ দান করেছেন।
- তবুও ঈশ্বর ইস্রায়েল দেশকে ২০ বার এমন দেশ বলেন যেখানে “দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই” (যাত্রা ৩:৮,১৭,৩৩:৩, লেবীয় ২০:২৪, গনণা ১৩:২৭, ১৪:৮, ১৬:১৩-১৪, দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৩, ১১:৯, ২৬:৯,১৫, ২৭:৩, ৩১:২০, যিহোশূয় ৫:৬, যির ১১:৫, ৩২:২২, যিহিষ্কেল ২০:৬,১৫)। একটি উদাহরণ হিসাবে যাত্রা ৩:৮ “মিসরীয়দের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবার জন্য আমি নেমে এসেছি … । আমি তাদের সেই … দেশে নিয়ে যাব। দেশটা বেশ বড় এবং সুন্দর; সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই।” কেরী অনুবাদে “সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ”।
- আমরা এই সূত্রতে বিশ্বাসী: সীমিত খনিজ-সম্পদ + লোকসংখ্যার বৃদ্ধ = বিপর্যয়।
- আমরা পাই চিত্র এবং লোকসংখ্যার বৃদ্ধির গ্রাফ দেখে ভয় পাই এবং আমরা “অভাবের মানসিকতা” (scarcity mentality), তার তীব্র বিশ্বাসী।

- তবুও বাইবেলে কোনো রকম “অভাব হইবে” ধরণের চিন্তা নেই (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৭)। এছাড়া বাইবেলে লোকসংখ্যার বৃদ্ধির আদেশ এবং উৎযাপন পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় (আদি ১:২৬, ১:২৮, দ্বিবি ১:১০-১১)।
- আমরা এই বিষয়ে বাইবেলের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিন্তায় বাস করি। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে ‘বাংলাদেশের সমস্যা হল যে লোকসংখ্যা বেশি’।
- আমরা এই বিষয়টি কিভাবে বুঝতে পারি? এখানে কিছু চিন্তা দেওয়া হয়েছে:

অর্থনৈতিক অবস্থা, অর্থাৎ অভাব বা প্রাচুর্য কিসের উপর নির্ভর করে?
ঈশ্বরের বাধ্য হলে > আশীর্বাদ
লেবীয় ২৬:৩-৫ যদি তুমি বাধ্য হও > আশীর্বাদ, প্রাচুর্য, জীবন
“যদি তোমরা আমার সব নিয়ম মান এবং আমার আদেশ পালন করে চল তবে সময়মত আমি বৃষ্টির ব্যবস্থা করব। তাতে তোমাদের জমিতে পুরো ফসল হবে এবং গাছ-গাছড়ায়ও ফল জন্মাবে। ৫ তখন তোমাদের গম মাড়াই করা চলবে আংগুর তুলবার সময় পর্যন্ত এবং আংগুর তোলা চলবে বীজ বুনবার সময় পর্যন্ত। তোমরা তখন পেট ভরে খেতে পাবে এবং দেশের মধ্যে নিরাপদে বাস করবে।”
দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১৫-২৪ যদি তুমি বাধ্য না হও > অভিশাপ, অভাব, মৃত্যু
“কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথায় কান না দাও … ১৬ তোমাদের বাসস্থান ও ক্ষেত-খামারের সব কিছুতে তোমরা অভিশপ্ত হবে। … ২২ ক্ষয় রোগ, তিন রকমের মারাত্মক জ্বর, যুদ্ধ, গরম শুকনা বাতাস এবং ছাৎলা- এই সব সদাপ্রভু তোমাদের উপর নিয়ে আসবেন এবং তোমাদের কষ্ট দেবেন যতক্ষণ না তোমরা ধ্বংস হয়ে যাও। ২৩ তোমাদের মাথার উপরের আকাশ হবে ব্রোঞ্জের মত শক্ত, আর পায়ের তলার মাটি হবে লোহার মত শক্ত। ২৪ সদাপ্রভু এমন করবেন যাতে তোমাদের দেশে বৃষ্টির বদলে আকাশ থেকে ধূলা আর বালি পড়ে। সেগুলো তোমাদের উপর পড়বে যতক্ষণ না তোমরা শেষ হয়ে যাও।”
- বাইবেলে যথেষ্ট পদগুলোতে বলা হয়েছে যে, যদি আমরা ঈশ্বর ও তাঁর বাক্য বা আইনের প্রতি বাধ্য হই তবে তিনি আমাদের প্রচুর পরিমাণে আশীর্বাদ করবেন।
- বাধ্যতার-উপর-নির্ভরশীল-আশীর্বাদ – তা আসলে কিভাবে কাজ করে? দু’টি পথ আছে:
- আশ্চর্যভাবে: ঈশ্বর আশীর্বাদ করবেন মানে তিনি অলৌখিকভাবে যোগান দিবেন, তিনি হস্তক্ষেপ করে আবহাওয়া, মাটির উর্বরতা, বৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য, সফলতা ইত্যাদি দান করবেন।
- সাধারণভাবে: যদি আমরা তাঁর আইন পালন করি এবং ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গী ও মনোভাবে কাজ করি তবে আমাদের জীবনে পরিশ্রম, সমর্পণ, স্বনিয়ন্ত্রণ, সৃজনশীলতা, ধনাধক্ষতা, ন্যায্যতা, শান্তি, পরিষ্কার-পরিছন্নতা, প্রজ্ঞা, প্রকাশ ইত্যাদি থাকবে। এসব থাকলে আমাদের অভাবে পরার ভয় থাকবে না এবং আমরা অনেক সমস্যা অতিক্রম করতে পারব।
- উভয় পথে ঈশ্বর কাজ করেন। তিনি সত্য কার্যকারী ও বাস্তব। বাস্তব মানে যে, বাস্তবে তার সফল দেখা যাবে। সত্যে চললে বাস্তবে ভাল ফলাফল দেখা যাবে।
- দাতাকে স্বীকার করুন, কৃতজ্ঞ হন, যা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে আনন্দ করুন ও তা ভাল কাজে লাগান!
ন্যয্যতা ও আইন-শৃঙ্খলা
হিতো ১৩:২৩ “গরীবের জমিতে প্রচুর শস্য জন্মায়, কিন্তু অবিচারের ফলে তা কেড়ে নেওয়া হয়।”
- যদি একটি দেশে আইন-কানুন মানা হয়, অর্থাৎ সবাই আইন-শৃঙ্খলায় চলে, যদি মন্দ লোকদের দায়বদ্ধ করা হয় এবং সাধারণ লোক শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারে। যদি সাধারণ লোক তাদের পরিশ্রমের ফল পেতে পারে তবে পরিশ্রমী হওয়া, প্রচেষ্টা ও বুদ্ধি কাটানো, গবেষণা ও সৃজনশীল হওয়া এসবে উৎসাহ পায়। ফলে অর্থনৈতিক সুঅবস্থা, সম্পদের বৃদ্ধি ও বিজ্ঞানে উৎসাহিত হবে।
- অবশ্যই বিপরীতও ঠিক: যদি একটি দেশে আইন মানা না হয়, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া না হয় বরং অন্যায় চলতে থাকে, তবে তা পরিশ্রম, সঞ্চয়, দীর্ঘ-দিনের পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও ঝুঁকি নেওয়া এসবে নিরুৎসাহিত হবে। ফলে এই দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিজ্ঞানের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা হবে।
মানুষের বুদ্ধি, তালন্ত ও দক্ষতার ব্যবহার
উপদেশক ১০:১০ – লক্ষ্য করা ও বুদ্ধির ব্যবহার
“কুড়াল যদি ভোঁতা হয় আর তাতে ধার দেওয়া না হয়, তবে তা ব্যবহার করতে বেশী শক্তি লাগে, কিন্তু জ্ঞান ব্যবহার করে মানুষ সফল হয়।”
যিশাইয় ২৮:২৪-২৯ – কাজ করতে করতে শেখা
“চাষী বীজ বুনবার জন্য কি অনবরত চাষ করে? সে কি সব সময় ঢেলা ভাংগে আর জমিতে মই দেয়? ২৫ মাটির উপরটা সমান করলে পর সে কি কালোজিরা এবং জিরা বোনে না? সে কি সারি সারি করে গম, জায়গামত যব আর ক্ষেতের সীমানায় জনার লাগায় না? ২৬ তার ঈশ্বরই তাকে নির্দেশ দেন এবং তাকে ঠিক পথ শিক্ষা দেন। ২৭ কালোজিরা ভারী যন্ত্র দিয়ে মাড়াই করা হয় না, কিম্বা জিরার উপর দিয়ে গাড়ির চাকা গড়ানো হয় না, বরং লাঠি দিয়ে কালোজিরা ও জিরা মাড়াই করা হয়। ২৮ অনেক দিন ধরে কেউ গম মাড়াই করতে থাকে না, তাতে তা নষ্ট হয়ে যায়; মাড়াই করবার সময় সে তার উপর দিয়ে এমনভাবে গাড়ির চাকা ও ঘোড়া চালায় যাতে তা নষ্ট না হয়। ২৯ এই সব জ্ঞান সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছ থেকে আসে। তাঁর পরামর্শ আশ্চর্য ও তাঁর জ্ঞান চমৎকার।”
- দুটি শাস্ত্রাংশ সুন্দরভাবে দেখায় কিভাবে সাধারণ মানুষ তার দৈনন্দিন বিশ্বস্ত কাজ দ্বারা ব্যবহারিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। লক্ষ্য করুন যে, বাস্তব পৃথিবীতে ব্যবহারিক কাজ দ্বারা অর্জন করা জ্ঞান হল ঈশ্বর থেকে আসা জ্ঞান: “এই সব জ্ঞান সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছ থেকে আসে”।
- ঈশ্বর থেকে জ্ঞান অর্জন প্রকৃতিকে লক্ষ্য করা দ্বারাও আসে।
- এখানে ঈশ্বরের চমৎকার ও আইন-শৃঙ্খল সৃষ্টিকে দেখানো হয়, এমন একটি সৃষ্টি যাতে মানুষ প্রাকৃতিক আইন খুঁজে পেতে পারে, যাতে সব কিছু উপযুক্ত ও কার্যকারীভাবে চলে।
- আইন-শৃঙ্খল ঈশ্বর, আইন-শৃঙ্খল মানুষ, আইন-শৃঙ্খল পৃথিবী।
- আইন-শৃঙ্খল ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে যদি আমরা আইন-শৃঙ্খলভাবে জীবন-যাপন করি তবে আইন-শৃঙ্খল পৃথিবী তার ভাল ফল দেবে।
ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রকাশ ও প্রজ্ঞা
হিতো ২:১-৩,৯-১০- বিচার বুদ্ধি পাওয়ার জন্য ডাক
“ছেলে আমার, তুমি যদি আমার কথা শোন আর তোমার অন্তরের মধ্যে আমার সব আদেশ জমা করে রাখ, ২ যদি সুবুদ্ধির কথায় কান দাও আর বিচারবুদ্ধির দিকে মনোযোগ দাও, ৩ যদি বিবেচনা-শক্তিকে ডাক … ৯ যদি তুমি আমার কথা শোন, তাহলে বুঝতে পারবে কোনটা উপযুক্ত, ন্যায্য ও সৎ আর বুঝতে পারবে মংগলের সমস্ত পথ; ১০ কারণ সুবুদ্ধি তোমার অন্তরে ঢুকবে, আর জ্ঞান তোমার প্রাণে আনন্দ দেবে।”
দানিয়েল ১:১৭,২০ – ঈশ্বর থেকে জ্ঞানলাভ ও সুবুদ্ধি আসে
“এই চারজন যুবককে ঈশ্বর সব রকম সাহিত্য ও বিদ্যায় জ্ঞানলাভ করবার ও বুঝবার ক্ষমতা দিলেন; আর দানিয়েল সব রকম দর্শন ও স্বপ্নের বিষয় বুঝতে পারতেন। … ২০ জ্ঞান ও বুদ্ধির বিষয়ে প্রত্যেকটি ব্যাপারে রাজা তাঁদের জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা তাঁর সারা রাজ্যের মধ্যেকার সমস্ত যাদুকর ও ভূতের ওঝাদের চেয়ে দশগুণ ভাল।”
- যদি আমরা ঈশ্বরকে অন্বেষণ করি এবং আমাদের দান-তালন্ত অন্যদের সেবার জন্য ব্যবহার করতে সমর্পিত হই তবে ঈশ্বর আমাদের মানবীয় ক্ষমতার উর্দ্ধে প্রজ্ঞা, বুঝার ক্ষমতা ও প্রকাশ দিতে জানেন।
নতুন ধরণের অংক
- মানব জাতির জনসংখ্যা খুব বেশি হয়ে উঠেছে, এই দুশ্চিন্তা প্রচলিত। কিন্তু কিছুক্ষণ ধরে অনেকে বিপরীতমুখী দুশ্চিন্তা করতে শুরু করেছে:
- যদিও মানব জাতির লোকসংখ্যা এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে তবুও প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধির হার হ্রাস পাচ্ছে (গ্রাফ দেখুন)।
- স্থায়ী লোকসংখ্যার জন্য প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীর দু’টি সন্তান নিতে হবে, অর্থাৎ দু’জনের পরিবর্তে দু’জন জন্ম নেয়। এটাকে ‘replacement rate’ বলা হয়। অনেক দেশের এই হার ইতিমধ্যে ২এর চেয়ে ১.২ (ইউরোপ) বা এমন কি ১এর নীচে চলে গেছে (দক্ষিণ কোরিয়া)। বাংলাদেশের হার বর্তমানে ২, যা আসলে সবচেয়ে ভাল।
- বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে মোট লোকসংখ্যাও কমতে শুরু করেছে, যেমন চীনে। একবার লোকসংখ্যা এভাবে কমতে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়: বিদ্যমান লোকসংখ্যার গড় বয়স বাড়বে এবং কাজ করার লোকদের চেয়ে বুড়ো-বুড়ির সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে। ফলে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেবে : চাষ ও উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা ও সৈন্য, যে কোন ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে ।


যে দেশে আছি সেই দেশ সম্বন্ধে ঈশ্বর নির্দিষ্ট তথ্য দেন
দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৭ – নদী, ফোয়ারা, মাটির তলার জল, ফসল, খনির আকরিক
“তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে চমৎকার দেশটিতে তোমাদের নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে রয়েছে পাহাড় ও উপত্যকা
দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, ফোয়ারা আর মাটির তলার জল। ৮ সেখানে রয়েছে প্রচুর গম ও যব, আংগুর ও ডুমুর গাছ এবং ডালিম, জলপাইয়ের তেল আর মধু। ৯ সেই দেশে তোমরা পাবে প্রচুর খাবার এবং কোন কিছুরই অভাব তোমাদের থাকবে না। সেখানকার পাথরে রয়েছে লোহা। সেখানকার পাহাড় থেকে তোমরা তামা খুঁড়ে তুলতে পারবে।”
- ঈশ্বর এখানে ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশের একটি সুনির্দিষ্ট বর্ণনা দেন: দেশে পানির সরবরাহ, সম্ভাব্য ফসল (গম, যব, আংগুর, ডুমুর ইত্যাদি) এবং খনিজ-সম্পদ: পাথরের মধ্য থেকে লোহা ও তামা।
- আধুনিক যুগে চারিদিকের দেশগুলোর তুলনায় (যাদের অনেক তৈল থাকে) বর্তমান ইস্রায়েল খনিজ অতি বেশি নেই, কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা উৎপন্ন করে:
- খনিজ (মরু সাগর থেকে পটাশ, যা থেকে রাসায়নিক সার তৈরি), KBr (যা থেকে ব্রমীন ও ওষুধ তৈরি), ফসফেট (বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত)।
- ধাতু: কিছুটা তামা, ম্যাগনেসিয়াম এবং বিভিন্ন সংকর ধাতু।
- মাটি: কাদামাটি, খনিজ সমৃদ্ধ মাটি, বালি (যা থেকে কাচ তৈরি)।
- গ্যাস (সাগরে)।
- তৈল (চারিদিকের দেশের তুলনায় খুবই কম)।
- আপনার দেশের সম্পদ, সুযোগ ও সুবিধা সম্বন্ধে ঈশ্বর কি বলতে চাচ্ছেন? এমন কিছু আছে যা আমরা ব্যবহার করি না কারণ আমরা তা লক্ষ্য করতে বা গুরুত্ব দিতে শিখি নি?
ধনী হওয়ার কারণে ঈশ্বর থেকে সরে যাওয়ার সাবধানবাণী
দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১১-১৮
“তোমরা সতর্ক থাকবে যেন আজ আমি তাঁর যে সব আদেশ, নির্দেশ ও নিয়ম তোমাদের দিচ্ছি তা অমান্য করে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে না যাও। ১২ যদি তোমরা সতর্ক না থাক, তবে তোমরা যখন খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হবে আর সুন্দর সুন্দর বাড়ী-ঘর তৈরী করে সেখানে বাস করতে থাকবে, ১৩ যখন তোমাদের পালের গরু-ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে যাবে আর তোমাদের অনেক সোনা-রূপা হবে এবং তোমাদের সব কিছু বেড়ে যাবে, ১৪ তখন তোমরা অহংকারী হয়ে উঠবে এবং যিনি মিসর দেশের গোলামী থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন তোমাদের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তোমরা ভুলে যাবে। ১৫ তিনি তোমাদের এক বিরাট, ভয়ংকর, শুকনা, জলহীন এবং বিষাক্ত সাপ ও কাঁকড়া-বিছায় ভরা মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি শক্ত পাথরের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জল বের করেছেন। ১৬ তিনি সেই মরু-এলাকায় তোমাদের মান্না খেতে দিয়েছেন যার কথা তোমাদের পূর্বপুরুষেরা কখনও জানেন নি। তোমাদের পরীক্ষা করবার জন্য ও অহংকার ভেংগে দেবার জন্য তিনি তা দিয়েছিলেন যাতে শেষ পর্যন্ত তোমাদের মংগল হয়। ১৭ তোমরা হয়তো কেউ মনে মনে বলতে পার, ‘আমার নিজের শক্তিতে, নিজের হাতে কাজ করে আমি এই সব ধন-সম্পত্তি করেছি।’ ১৮ কিন্তু তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা ভুলে যেয়ো না; তিনিই এই সব করবার ক্ষমতা তোমাদের দিয়েছেন, আর এইভাবে তিনি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে ব্যবস্থার কথা শপথ করে বলেছিলেন তা তিনি এখন পূর্ণ করে চলেছেন।”
- এখানে ঈশ্বর সাবধানবাণী দেন, ধনী, দক্ষ, সফল এবং ‘স্বনির্ভর’ হলে কি কি ধরণের মনোভাব প্রলোভন হিসাবে দাঁড়াবে: আরাম, অহংকার, আত্ম-সন্তুষ্টি, আত্ম-শ্লাঘা, আত্ম-নির্ভরশীলতা, অতি নিশ্চিত বা নিরাপত্তার ভাব।
- কিভাবে তা প্রতিরোধ করব? দাতাকে স্বীকার করুন যিনি আমাদের জ্ঞান, তালন্ত, বুদ্ধি, দান-দক্ষতা, সুস্বাস্থ্য, কাজ করার ও ধন উৎপন্ন করার ক্ষমতা, সুযোগ ও পরিবেশ দান করেছেন। সুঅবস্থা বাড়লেও এই ঈশ্বরকে স্বীকার করতে থাকা, কৃতজ্ঞতার মনোভাব ধরে রাখা, তাঁকে ভয় করতে থাকা, ‘কোনা কাটা সমস্যা নেই’ – এই মনোভাব থেকে দূরে থাকা। যে সুযোগ-সুবিধা আমি পেয়েছি তা কিভাবে অন্যদের জন্য, বিশেষভাবে দুর্বল ও গরীবদের জন্য কিভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাতে ব্যস্ত হওয়া।
প্রাচীন যুগে ধাতুবিদ্যা
ইয়োব ২৮:১-৬
“রূপার খনি আছে আর সোনা পরিষ্কার করবার জায়গাও আছে। মাটি থেকে লোহা তোলা হয়, আর ধাতু-পাথর গলিয়ে বের করা হয় তামা। পৃথিবীর গভীরে ঘন কালো অন্ধকারে যা রয়েছে মানুষ অন্ধকার দূর করে সেই দামী পাথরের খোঁজ করে। মানুষের বাসস্থান থেকে দূরে যেখানে মানুষ যায় না সেখানে সে গর্ত খোঁড়ে, আর সেই গর্তের মধ্যে সে ঝুলতে ও দুলতে থাকে। যে পৃথিবীর উপরে ফসল জন্মে, মানুষ সেই পৃথিবীর গভীরে আগুন দিয়ে ভেংগে চুরমার করে। পৃথিবীর পাথরের মধ্যে নীলকান্তমণি থাকে, আর মাটির মধ্যে থাকে সোনা।”
হিতো ১৭:৩
“রূপা যাচাই করবার জন্য আছে গলাবার পাত্র আর সোনার জন্য আছে চুলা, কিন্তু সদাপ্রভুই অন্তর যাচাই করেন।”

- এই পদগুলোতে পাথর থেকে ধাতু উৎপাদন ও বিশুদ্ধকরণের প্রক্রিয়ার একটি বাস্তব বর্ণনা পাওয়া যায়: তাপ দিয়ে পাথর গলানো হয়, অবাঞ্ছিত উপাদান অক্সিডাইজড করা হয় এবং সরানো হয়।
- ধাতু উৎপাদনের এই প্রক্রিয়া বাইবেলে মানুষকে বিশুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত: বিভিন্ন ঘটনা, কষ্টভোগ ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর লোকদের আরো প্রকাশ, শক্তি ও পরিপক্কতা দান করেন: “কিন্তু আমি কোন্ পথে যাই তা তিনি জানেন; তিনি আমাকে যাচাই করলে আমি খাঁটি সোনার মতই হব” (ইয়োব ২৩:১০) … “কিন্তু তাঁর আসবার দিন কেউ সহ্য করতে পারবে না; তিনি উপস্থিত হলে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না; কারণ তিনি হবেন রূপা যাচাই করবার আগুন অথবা ধোপার সাবানের মত। ৩ যে লোক রূপা গলিয়ে খাঁটি করে তিনি তার মত হয়ে বসবেন। তিনি লেবীয়দের শুচি করবেন এবং সোনা ও রূপার মত করে তাদের খাঁটি করবেন” (মালাখি ৩:২-৩)।
সম্পদের ক্রয়-বিক্রয় ও ধন
প্রকাশিত বাক্য ১৮:১১-১৭ – ধনী ও দমনকারী বাবিল, অর্থাৎ রোমকে ধ্বংস
“পৃথিবীর ব্যবসায়ীরাও তার জন্য কাঁদবে আর দুঃখ করবে, কারণ তাদের জিনিসপত্র আর কেউ কিনবে না। ১২ তাদের সেই সব জিনিসপত্রের মধ্যে আছে-সোনা, রূপা, দামী পাথর ও মুক্তা; মিহি মসীনার কাপড়, বেগুনী রংয়ের কাপড়, রেশমী ও লাল কাপড়; অনেক রকম সুগন্ধি কাঠ ও হাতীর দাঁতের তৈরী নানা জিনিস; খুব দামী কাঠ দিয়ে তৈরী এবং পিতল, লোহা ও মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী নানা জিনিস; ১৩ দারচিনি, এলাচ, ধূপ, আতর ও গন্ধরস; আংগুর-রস, জলপাইয়ের তেল, ময়দা আর গম; গরু ও ভেড়া, ঘোড়া ও গাড়ী আর ক্রীতদাস।
১৪ সেই ব্যবসায়ীরা বলবে, “যে ফল তুমি লাভ করতে চেয়েছিলে তা তোমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে; তোমার সব ধন ও জাঁকজমক ধ্বংস হয়ে গেছে। লোকে আর কখনও সেই সব পাবে না।” ১৫ যারা এই সব জিনিসের ব্যবসা করে বড়লোক হয়েছিল সেই ব্যবসায়ীরা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকবে। ১৬ তারা কেঁদে কেঁদে দুঃখ করে বলবে, “হায়, হায়! মিহি মসীনার কাপড় আর বেগুনে ও লাল কাপড় পরা এবং সোনা, দামী পাথর ও মুক্তা দিয়ে সাজ-গোজ করা সেই নাম-করা শহর! ১৭ এত অল্প সময়ের মধ্যেই তোমার এমন মহা ধন-সম্পদ সব নষ্ট হয়ে গেছে!”
জাহাজের প্রধান কর্মচারীরা, জলপথের যাত্রীরা, নাবিকেরা এবং সমুদ্রে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তারা সবাই দূরে দাঁড়িয়ে থাকল।”
- এই পদগুলোতে বর্ণনা করা হয় কিভাবে ঈশ্বর লোভী, সুবিধাকারী, দমনকারী ও লোভী মানব সাম্রাজ্যদের বিচার করেন, সম্রাট থেকে শুরু করে সমস্ত ‘সুবিধাবাদী’ পর্যন্ত, যারা এই মন্দ সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে বা সুযোগ ধরে বিভিন্ন অন্যায় বা অত্যাচার দ্বারা ধনী হয়েছে।
যিশাইয় ৩:১৮-২৬ – ধনীদের ধন ও বিলাসিতা স্থায়ী হবে না
“সেই দিন প্রভু তাদের সুন্দর সুন্দর গয়নাগাঁটি কেড়ে নেবেন। তিনি তাদের নূপুর, মাথার টায়রা, চন্দ্রহার, ১৯ কানের দুল, বালা, জালি পর্দা, ২০ মাথার ঘোমটা, পায়ের মল, কোমরের রেশমী ফিতা, সুগন্ধির শিশি, তাবিজ, ২১ আংটি ও নাকের নোলক, ২২ সুন্দর সুন্দর লম্বা জামা, উপরের জামা, শাল, টাকার থলি, ২৩ আয়না, মসীনার ভিতরের কাপড়, পাগড়ী আর ওড়না কেড়ে নেবেন।
২৪ সুগন্ধের বদলে পচা গন্ধ, কোমর-বাঁধনির বদলে দড়ি, সুন্দর করে আঁচড়ানো চুলের বদলে টাক, দামী কাপড়ের বদলে ছালার চট, আর সৌন্দর্যের বদলে পোড়ার দাগ থাকবে। ২৫ তোমাদের লোকেরা তলোয়ারের আঘাতে আর যোদ্ধারা যুদ্ধে মারা পড়বে। ২৬ সিয়োনের ফটকগুলো বিলাপ ও শোক করবে; সিয়োন সব হারিয়ে মাটিতে বসবে।”
- এই পদগুলোতে ভাববাদী যিশাইয় তার সময়ের যিহূদার অতি আত্ম-নিশ্চিত উঁচু শ্রেণীর লোকদের চেতনা দিতে চেষ্টা করেন।
- প্রকৃতপক্ষে বাইবেলে ধন-সম্পদ বা ধনী হওয়ার বিরুদ্ধে কোন আদেশ নেই, এমন কি তা নিরুৎসাহিতও করে না।
- তবুও ধন যদি অন্যায় লাভ, ঠকানো, শোষণ বা হিংস্রতা দিয়ে অর্জন করা হয় তবে ঈশ্বর তা অবশ্যই বিচার করেন।
- যদি কিছুলোক অনেক ধনী হয়ে যায় কিন্তু চারিদিকে সবার অবস্থা খারাপ তবে তাও ঈশ্বরের অসম্মতি পায়। ধন বাড়লে সমস্যা নেই যদি অন্য লোকদেরও নিয়ে যাওয়া হয়।
সম্পদ হিসাবে জমি, উর্বরতা ও আবহাওয়া > বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ০৭ “জলবায়ুবিদ্যা” দেখুন!
বাইবেল অধ্যয়ন: বাইবেলে উল্লিখিত দামী পাথর






যিহি ২৮:১৩ অহংকারী সোর রাজার বর্ণনায় বিভিন্ন ধরণের হীরা উল্লিখিত, যা সব মহাপুরোহিতের বুকপাটার বর্ণনায় উল্লিখিত। এই বর্ণনা প্রায়ই শয়তান সম্বন্ধীয় বর্ণনা হিসাবেও ব্যাখ্যা করা হয়। সম্ভবত উল্লিখিত পাথরের মিল আরো বেশি এই রাজার অহংকার ও আত্ম-উচ্চারণ উপস্থাপনা করতে চায়।
প্রকাশিত ২১:১১ যিরূশালেমের উজ্জ্বলতা খুব দামী পাথরের মত, স্ফটিকের মত পরিষ্কার হীরার মত (প্রকাশিত বাক্য ৪বার)
বাইবেল অধ্যয়ন: বাইবেলে সোনার উল্লেখ ৪১৬ বার





বাইবেল অধ্যয়ন: বাইবেলে লোহার উল্লেখ ১০১ বার




