বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ০৯ – মাহকাশ ও পৃথিবী
ভূমিকা
- আদি ১:১ ‘সৃষ্টির শুরুতেই ঈশ্বর মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।’
- আদি ১:১ ‘আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন। (কেরী)
- ‘মহাকাশ ও পৃথিবী’ কথাটি সরল, কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের চিন্তা বেশি পরিষ্কার না।
- যেমন: ‘পৃথিবী’ ঠিক কি বুঝায়? অথবা আরো কঠিন: ‘মহাকাশ’ ঠিক কি বুঝায়? ইংরেজিতে শব্দটির অনুবাদ হল ‘Heaven’, তাই মহাকাশ ও স্বর্গ কি একই জিনিস? ‘স্বর্গীয়’ শব্দের অর্থ কি? ‘জগত’ বা ‘জাগতিক’ শব্দের অর্থ কি? ‘আত্মিক জগত’ বা ‘আত্মিক’ শব্দের অর্থ কি?
- তা ছাড়া: মানুষ হিসাবে আমরা কি পৃথিবীর অংশ? বস্তু জগতের অংশ? না কি আত্মিক জগতের অংশ? উভয়ই? আমরা কি আত্মা ও শরীর? কেরী অনুবাদে ‘মাংস’ শব্দের অর্থ কি? ‘মাংস’ মানে কি শরীর?
- যখন মানুষ পাপ করে তবে কি ঘটে? মহাকাশের উপরে এর প্রভাব কি? পৃথিবীর উপর এর প্রভাব কি?
আমরা বিষয়টি সাধারণত কিভাবে বুঝি
- আমরা অনেকে বিশ্বাস করি যে ‘আত্মিক জগত বা শরীর = খারাপ’ এবং ‘আত্মিক জগত = ভাল’।
- আমরা এই ধরণের কথা বলি: ‘জাগতিক হইয়ো না, বরং আত্মিক হও’…’এই শরীর আমাকে প্রলোভনে ফেলে’…’এই বস্তু জগত যে কোনোভাবে নষ্ট হয়ে যাবে’…’আমরা স্বর্গে যাব, আমরা আত্মা হিসাবে একটি আত্মিক স্বর্গে যাব’…’যীশু ফিরে আসবেন এবং আমাদের এই বস্তু জগত থেকে তুলে নেবেন’…’এই জগতের জন্য কাজ করা মানে জাগতিক কাজ করা’…’শুধুমাত্র আত্মিক কাজই আত্মিক’
- মাংস বা শরীর তো পাপ পূর্ণ? পৃথিবী বা বস্তু জগত নিয়ে কেন ব্যস্ত থাকব? বস্তু জগত কি ভাল শুরু পরে ব্যর্থ হয়ে গেছে? বস্তু জগত কি অস্থায়ী নয়? বস্তু জগতকে কি বিচার ও ধ্বংস করা হবে না?
- সমর্থনে আমরা এই ধরণের পদ উদ্ধৃতি করি: রোমীয় ৮:৩ ‘কারণ ব্যবস্থা মাংস দ্বারা দুর্বল হওয়াতে যাহা করিতে পারে নাই, ঈশ্বর তাহা করিয়াছেন, নিজ পুত্রকে পাপময় মাংসের সাদৃশ্যে এবং পাপার্থক বলিরূপে পাঠাইয়া দিয়া মাংসে পাপের দণ্ডাজ্ঞা করিয়াছেন।’ তাই মাংসই খারাপ। শরীরই খারাপ।
- এই শরীর থেকে কি যীশু আমাদের রক্ষা করেন নি? রোমীয় ৭:২৪ ‘দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?’ তাই দেহ হল আমার সমস্যা এবং দেহ ফেলে চলে যাওয়াই ভাল।

- যোহন ১৭:১৬ ‘তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।’ যীশু তো তাই বলেছেন।
- জাগতিক বিষয়ের পিছনে না দৌড়াতে কি যীশু বলেন নি? লূক ১২:২৯-৩০ ‘কি খাওয়া-দাওয়া করবে ভেবে ব্যস্ত হইয়ো না বা অস্থির হইয়ো না।’
- যীশু কি আমাদের এই ধ্বংসের পথে বস্তু জগত থেকে তুলে নেবেন না? ১ থিষ ৪:১৬-১৭ ‘প্রভু নিজেই স্বর্গ থেকে নেমে আসবেন…আমাদেরও আকাশে প্রভুর সংগে মিলিত হবার জন্য তাদের সংগে মেঘের মধ্যে তুলে নেওয়া হবে।’
- এই জগতকে কি ঈশ্বর বিচার ও ধ্বংস করবেন না? ২ পিতর ৩:১০ ‘পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তা সবই পুড়ে যাবে।’
- যদি আপনি একজন ইভানজেলিকেল বা ক্যারিসম্যাটিক বিশ্বাসী হন, আপনার চিন্তা মোটামুটি এই ধরণের:
- ‘ঈশ্বর মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন কিন্তু পরে পাপ ঢুকেছে ও পৃথিবী খারাপ হয়েছে। কিন্তু ভাল যে যীশু এসেছেন আমাদের পরিত্রাণ দিতে এবং তিনি পবিত্র আত্ম পাঠিয়েছেন যেন আমরা আত্মিক জীবন-যাপন করতে পারি, যদিও এই শরীর আমাদের এখনও প্রলোভনে ফেলে। কিন্তু যখন যীশু ফিরে আসবেন (যত তাড়াতাড়ি তত ভাল) তখন তিনি আমাদের আত্মাগুলি এই মন্দ ও ধ্বংসের পথে জগত থেকে তুলে স্বর্গে নিয়ে যাবেন। সেখানে আমরা একটি আত্মিক স্বর্গে আত্মা হিসাবে আত্মিক জীবন-যাপন করব। তাই মাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিত্রাণ পাওয়া কারণ তাতে আমরা নিশ্চিত যে স্বর্গে যেতে পারি।’
- মোটামুটিি এটা আমরা সত্য হিসাবে ধরে রাখি। কিন্তু মাঝের মধ্যে এমন বাইবেল পদ পড়ি, যা আমাদের এই ‘পরিষ্কার ছবির’ সাথে মিলে না।
আমাদের পরিষ্কার ছবি নিয়ে সমস্যা কি কি?
- এমন পদ আছে যা ভিন্ন কিন্তু বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নয়। যেমন ২ শমূয়েল ২১:১০ পদে আমরা ‘স্বর্গের পাখি’ পাই, যদিও অনেক বার ‘আকাশের পাখি’ হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে। আচ্ছা, ভাল বিষয়, পাখিরাও স্বর্গে থাকবে। পাখি নিয়ে মনে হয় কারও আপত্তি নেই।
- একইভাবে আমরা বাইবেলে ‘স্বর্গের তারা’ পাই (যেমন আদি ২২:১৭), যদিও অনেক বার ‘আকাশের তারা’ হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে। যদি তারা স্বর্গে তবে ঈশ্বর কোথায়? তারার ওপাড়ে? যদি আমরা দূরবীন দিয়ে ঈশ্বরকে না দেখি তবে তা কি প্রমাণ করে যে ঈশ্বর নেই? তা তো আমরা মনে করি না।
- কিন্তু আরো সমস্যা আছে: ঈশ্বর তো স্বর্গে আছেন। ভাল কথা। কিন্তু কি করে সম্ভব যে ইয়োব পুস্তকে দোষারোপকারী শয়তান ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত (ইয়োব ১:৬-৭)? শয়তানকে কি সে সময় এখনও স্বর্গ থেকে তাড়ানো হয় নি? যীশু পরে বলেন যে তিনি শয়তান স্বর্গ থেকে পড়তে দেখেছেন (লূক ১০:১৮)? কিন্তু কেন প্রকাশিত বাক্যে ১২:৭-৮ পদে আমরা তাকে আবার স্বর্গে পাই? না এই কথা তবে কোন সময় সম্বন্ধীয়?
- যদি এই বস্তু জগত খারাপ, কেন ঈশ্বর তা সৃষ্টি করেছেন ও ‘অতি উত্তম’ বা ‘চমৎকার’ বলেছেন (আদি ১:৩১)? এবং কেন তিনি এই বস্তু জগতকে আজ পর্যন্ত জীবন ও অস্তিত্ব দান করতে থাকেন?
- যদি এই শরীর আমাকে খালি প্রলোভনে ফেলতে থাকে তবে কেন ঈশ্বর আমাদের একটি শরীর দিয়েছেন?
- যদি এই শরীর আমাকে খালি প্রলোভনে ফেলতে থাকে তবে কি করে সম্ভব যে শয়তান (যে আত্মা হয় ও যার শরীর নেই) প্রথম পাপ করেছে?
- যদি ‘আত্মিক = ভাল’ তবে কেন সুসমাচারগুলিতে আমরা মন্দ আত্মা পাই? যদি শয়তান আত্মা হয় তবে আসুন আমরা তার মত ‘আত্মিক’ হব… না কি??
- যদি ‘মাংস = শরীর’ এবং শরীর আমাদের এক নম্বর সমস্যা হয়, তবে কেন গালাতীয় ৫:১৯-২১ পদে যখন ‘মাংসের কার্য সকল’ উল্লিখিত তবে তালিকার বড় অংশ এমন পাপ যা শরীর নিয়ে সম্পর্কিত নয়, যেমন ‘প্রতিমা-পূজা, যাদুবিদ্যা, শত্রুতা, ঝগড়া, লোভ, রাগ, স্বার্থপরতা, অমিল, দলাদলি, হিংসা’ ? হ্যাঁ, অবশ্যই, আমরা হয়তো আর একজনের খাবার নিয়ে হিংসা করতে পারি (শারীরিক প্রলোভন) কিন্তু আমরা সবাই জানি যে পেট ভরার পরেও আমাদের হিংসা বন্ধ হয় না, তাই তা কি আসলে শারীরিক বিষয়?
- তা ছাড়া: যদি শরীর খারাপ এবং বস্তু জগত বলতে আর কিছু থাকবে না, তবে কেন ঈশ্বর যীশুকে শারীরিকভাবে পুনরুত্থিত করেন এবং আমাদের প্রতিজ্ঞা দেন, যে আমরাও একদিন শারীরিকভাবে পুনরুত্থিত হব? খেয়াল করেন যীশু পুনরুত্থানের পরে কত কষ্ট করে শিষ্যদের প্রমাণ করেছেন যে তিনি ‘ভুত’ বা ‘আত্মা মাত্র’ নন?
- অথবা এই ধরণের পদ তাহলে কিভাবে বুঝব: যিশাইয় ১৩:১৩ যেখানে লেখা আছে যে ঈশ্বর আকাশমণ্ডলকে কম্পিত করবে ও তার ক্রোধ দেখাবে?
- অথবা সে বিখ্যাত পদ ২ পিতর ৩:১০, যা থেকে আমরা জানি যে পৃথিবীকে ধ্বংস করা হবে, আপনি কি খেয়াল করেছেন যে আসলে লেখা আছে যে উভয় মহাকাশ এবং পৃথিবীকে ধ্বংস করা হবে?
- যদি এই বস্তু জগত মানুষকে সংকটে ফেলে এবং যদি অবশেষে যীশু আমাদের এই বস্তু জগত থেকে রক্ষা করে তুলে স্বর্গে নিয়ে যাবেন, তবে কেন ঈশ্বর একটি ‘নতুন মহাকাশ এবং একটি নতুন পৃথিবী’ পুনরায় সৃষ্টি করবেন (প্রকাশিত ২১:১)। কত বার আমরা এই পদ শুনেছি, কিন্তু খেয়াল করেছেন যে পৃথিবীও নতুন করা হবে? শেষে মাত্র স্বর্গ থাকবে না, পৃথিবীও থাকবে।
- সারাংশ হিসাবে বলা যায় যে যত পরিষ্কার আমরা বিষয়টি মনে করলাম তত পরিষ্কার নয়, আসলে যথেষ্ট প্রশ্ন বা এলোমেলো আছে। কিভাবে আমরা বিষয়টি ঠিকমত বুঝতে পারব?
বাইবেলে ‘মহাকাশ’ ও ‘পৃথিবী’ শব্দের ব্যবহার এবং অর্থ কি?
আদিপুস্তক ১:১ পদে ব্যবহৃত সে ‘মহাকাশ’ শব্দ এবং সে ‘পৃথিবী’ শব্দ নিয়ে যদি অধ্যয়ন (word search) করা হয় তবে খুঁজে পাওয়া যায় যে:
- ‘পৃথিবী’ H776 אֶרֶץ ‘erets (বাংলায় এরেৎস্) এই শব্দটি পুরাতন নিয়মে ২৫০৫ বার ব্যবহৃত। শব্দটির অর্থ হল ‘পৃথিবী, দেশ, ভূমি, জমি’।
- ‘মহাকাশ’ বা ‘আকাশমণ্ডল’ হল H8064 שָׁמֶה שָׁמַיִם ‘shamayim shameh’ (বাংলায় ‘সামায়ীম-সামে‘)। শব্দটি হল একটি বহুবচন। আকাশ বা স্বর্গ বুঝানোর জন্য ইব্রীয়তে এই শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। শব্দটি পুরাতন নিয়মে ৪২১ বার ব্যবহৃত। কিন্তু তাহলে শব্দটির অর্থ ঠিক কি? এই শব্দ নিয়ে সমস্ত ৪২১টি পদ বের করে ও দেখে বুঝা যায় যে শব্দটি প্রাথমিকভাবে ৪টি অর্থে ব্যবহৃত।

১. সামায়ীম সামে = আকাশ (sky)
- সামায়ীম সামে (Heavens) অনেক বার ‘আকাশ’ বুঝায়, যেখানে পাখিরা উড়ে এবং সেখানে মেঘ ভাসে। কিছু উদাহরণ নিম্নে:
- আদি ১:২০ ‘ঈশ্বর বললেন, “জল বিভিন্ন জীবন্ত প্রাণীর ঝাঁকে ভরে উঠুক, আর পৃথিবীর উপরে আকাশের মধ্যে বিভিন্ন পাখী উড়ে বেড়াক।’
- আদি ২৭:২৮ ‘ঈশ্বর যেন তোমাকে আকাশের শিশির দেন, আর তোমার জমিতে উর্বরতা দেন; তাতে তুমি প্রচুর ফসল আর নতুন আংগুর-রস পাবে।’
- যিশাইয় ৫৫:১০-১১ ‘বৃষ্টি ও তুষার আকাশ থেকে নেমে আসে আর পৃথিবীকে জল দান না করে সেখানে ফিরে যায় না…ঠিক তেমনি আমার মুখ থেকে বের হওয়া বাক্য নিষ্ফল হয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে না।’

২. সামায়ীম সামে = মহাবিশ্ব (universe)
- সামায়ীম সামে (Heavens) অনেক বার ‘মহাবিশ্ব’ বুঝায়, যেখানে সূর্য, চাঁদ আর তারা অবস্থিত। কিছু উদাহরণ নিম্নে:
- আদি ১:১৫ ‘আকাশ থেকে সেগুলো পৃথিবীর উপর আলো দিক।” আর তা-ই হল।’
- গীত ৮:৩ ‘আমি যখন তোমার হাতে গড়া আকাশের দিকে তাকাই আর সেখানে তোমার স্থাপিত চাঁদ আর তারাগুলো দেখি’
- আদি ১৫:৫ ‘ঈশ্বর অব্রাহামকে বলেন: ‘আকাশের দিকে তাকাও এবং যদি পার ঐ তারাগুলো গুণে শেষ কর।’

৩. সামায়ীম সামে = আত্মিক জগত (spiritual world)
- সামায়ীম সামে ও বুঝাতে পারে ‘আত্মাদের জগত’ (বা যা আমরা আজকাল ‘আত্মিক জগত’ বলি) যেখানে ভাল ও মন্দ আত্মা উভয় অবস্থিত। তাই এই অর্থে শয়তান আত্মা হিসাবে ‘ঈশ্বরের সামনে’ আছে যদিও সে ঈশ্বরকে মানে না। কিছু উদাহরণ:
- দানিয়েল ৪:৩৫ ‘ পৃথিবীর সমস্ত লোক তাঁর কাছে যেন কিছুই নয়। তিনি স্বর্গদূতদের ও পৃথিবীর লোকদের নিয়ে তাঁর ইচ্ছামত কাজ করেন।’
- ১ রাজা ২২:১৯-২০ নবী মীখায় যিহূদার রাজা যিহোশাফৎ ও ইস্রায়েলের রাজা আহাবকে বলেন: ‘আমি দেখলাম, সদাপ্রভু তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন এবং তাঁর ডান ও বাঁ দিকে সমস্ত স্বর্গদূতেরা রয়েছেন।…কে আহাবকে ভুলিয়ে সেখানে নিয়ে যাবে যাতে সে মারা যায়?…শেষে একটি আত্মা এগিয়ে এসে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যাব।’
- আদি ২৮:১২,১৭ ‘তিনি স্বপ্নে দেখলেন…একটা সিঁড়ি দাঁড়িয়ে আছে এবং তার মাথাটা গিয়ে স্বর্গে ঠেকেছে। তিনি দেখলেন ঈশ্বরের দূতেরা তার উপর দিয়ে ওঠা-নামা করছেন…তিনি জায়গাটার নাম দিলেন বৈথেল (যার মানে “ঈশ্বরের ঘর”)।’
- ইয়োব ১:৬ ‘একদিন স্বর্গদূতেরা সদাপ্রভুর সামনে গিয়ে উপস্থিত হলেন আর শয়তানও তাঁদের সংগে উপস্থিত হল।’
যদি সামায়ীম সামে = আত্মিক জগত, তবে ঈশ্বর কোথায়?
- কিছু পদ বলে যে ঈশ্বর স্বর্গে আছেন: গীত ১১:৪ ‘কিন্তু সদাপ্রভু স্বর্গে তাঁর পবিত্র বাসস্থানে আছেন’ ।
- যোহন ৪:২৪ পদে বলা হয় যে ঈশ্বর আত্মা।
কিন্তু অনেক পদ আছে যা বলে যে ঈশ্বর সামায়ীম সামে-এর এবং পৃথিবীর বাইরে বা ঊর্ধ্বে। কিছু উদাহরণ:
- ঈশ্বর বাইরে থেকে ‘সামায়ীম সামে‘ এবং পৃথিবী দেখেন: গীত ১১৩:৫-৬ ‘আর কে আছে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর মত? তিনি আকাশেরও অনেক উপরে বাস করেন আর নীচু হয়ে মহাকাশ ও পৃথিবীর দিকে তাকান।’
- ঈশ্বর বা যীশু ‘সামায়ীম সামে‘এর চেয়ে মহান: ইফিষীয় ৪:১০ ‘যিনি নেমেছিলেন তিনিই সব কিছু পূর্ণ করবার জন্য আবার আকাশ থেকেও অনেক উপরে উঠেছেন।’
- ঈশ্বর উভয় ‘সামায়ীম সামে‘ এবং পৃথিবীকে কথা বলেন: যিশাইয় ১:২ ‘হে আকাশ শোন, হে পৃথিবী শোন, সদাপ্রভু বলছেন।’
- ঈশ্বর ‘সামায়ীম সামে‘ এবং পৃথিবীতে তার আইন-কানুন স্থাপন করছেন: ইয়োব ৩৮:৩৩ … ‘আকাশের আইন-কানুন কি তুমি জান? পৃথিবীতে কি সেই আইন-কানুন স্থাপন করতে পার?’
- ঈশ্বর আশ্চর্যভাবে কাজ করেন উভয় ‘সামায়ীম সামে‘ এবং পৃথিবীতে: দানিয়েল ৬:২৭ … ‘তিনি রক্ষা ও উদ্ধার করেন; তিনি আকাশে ও পৃথিবীতে চিহ্ন হিসাবে নানা আশ্চর্য কাজ করেন।’
- সারাংশে বলা যায় যে ঈশ্বর সমস্ত সৃষ্টির (‘সামায়ীম সামে‘ এবং পৃথিবী) ঊর্ধ্বে, তার চেয়ে মহান, কিন্তু তাতে হাত দেন। ঈশ্বর আত্মা, কিন্তু তাঁকে ‘আত্মিক জগতের মধ্যে’ আটকানো যায় না। তিনি স্বর্গে আছেন, কিন্তু তিনিও স্বর্গের চেয়ে ঊর্ধ্বে।

৪. সামায়ীম সামে = স্বর্গ = যেখানে ঈশ্বর রাজত্ব করেন (Heaven)
- কিন্তু আমাদেরও বলা হয় যে পিতা ঈশ্বর স্বর্গে আছেন, তিনিই ‘আমাদের স্বর্গস্থ পিতা’ (মথি ৬:৯-১০)।
- এখানে ‘সামায়ীম সামে‘ সে জায়গা বুঝায় যেখানে ঈশ্বর সম্পূর্ণভাবে রাজত্ব করেন, যেখানে তার ইচ্ছা আসলে পূর্ণ হয়: ‘তোমার রাজ্য আসুক। তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক।’
- যেখানে ঈশ্বর রাজত্ব করেন, যেখানে তাঁকে সম্পূর্ণভাবে মানা হয়, যেখানে সব কিছু তাঁর ইচ্ছা অনুসারে চলে সেখানেই স্বর্গ, সেখানেই ঈশ্বরের রাজ্য বা স্বর্গরাজ্য উপস্থিত।
- স্বর্গে থাকে সে পুরষ্কার, স্বর্গে আছে জীবন-পুস্তক যাতে আমাদের নাম লেখা আছে, স্বর্গে থাকে যা ভাল, ন্যায্য, উপযুক্ত, প্রশংসাযোগ্য ও পবিত্র।
- ঈশ্বর রাজত্ব করেন যেখানে, সেখানে স্বর্গ। তাই বলা যায় যে বাধ্য ও ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয়ে চলার বিশ্বাসীর হৃদয় ঈশ্বরের জন্য ‘স্বর্গ’ 🙂
- সারাংশ: আমরা দেখলাম যে ‘সামায়ীম সামে‘ Heavens (যা আদি ১:১ পদে ‘মহাকাশ’ বা ‘আকাশমণ্ডল’ হিসাবে অনুবাদিত) প্রাথমিকভাবে ৪ অর্থে ব্যবহৃত: ‘আকাশ’ (যেখানে পাখি উড়ে ও মেঘ ভাসে), ‘মহাবিশ্ব’ (যেখানে চাঁদ, সূর্য, তারা), ‘আত্মিক জগত’ এবং ‘স্বর্গ’ (যেখানে ঈশ্বর রাজত্ব করেন)।
‘সামায়ীম সামে‘ এবং পৃথিবীর সম্পর্ক
এই দুটি শব্দের অধ্যয়ন করতে করতে একটি বিষয় চোখে পড়ে: আমরা অনেক বার ‘সামায়ীম সামে‘ এবং ‘পৃথিবী’ বিপরীত হিসাবে দেখি। কিন্তু আসলে অধিকাংশ পদগুলিতে ‘সামায়ীম সামে’ এবং ‘পৃথিবী’ একসাথে বা এক বিষয় হিসাবে উল্লিখিত ‘সম্পূর্ণ সৃষ্টি’ বুঝানোর জন্য। কিছু উদাহরণ:
- আদি ১৪:২২ ‘উত্তরে অব্রাম সদোমের রাজাকে বললেন, “যিনি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সেই মহান ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে হাত তুলে আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি…’
- দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৪ ‘আকাশ ও তার উপরকার সব কিছু এবং পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব কিছুই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর।’
- যিহোশূয় ২:১১ ‘এই সব শুনে আমাদের অন্তরের সব আশা-ভরসা ফুরিয়ে গেছে এবং আপনাদের ভয়ে সবাই সাহস হারিয়ে ফেলেছে। আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই স্বর্গের এবং পৃথিবীর ঈশ্বর।’
- নহিমিয় ৯:৬ ‘কেবল তুমিই সদাপ্রভু। তুমিই আকাশ, মহাকাশ ও তার মধ্যেকার সব কিছু, পৃথিবী ও তার উপরকার সব কিছু এবং সাগর ও তার মধ্যেকার সব কিছু তৈরি করেছ। তুমিই সকলের প্রাণ দিয়েছ।’
ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা ও জীবনদাতা
- যিশাইয় ৪২:৫ ‘সদাপ্রভু ঈশ্বর আকাশ সৃষ্টি করে মেলে দিয়েছেন; তিনি পৃথিবী ও তাতে যা জন্মায় তা সব বিছিয়ে দিয়েছেন; তিনি সেখানকার লোকদের নিঃশ্বাস দেন আর যারা সেখানে চলাফেরা করে তাদের জীবন দেন।’
ঈশ্বর জীবন, অস্থিত্ব, নিঃশ্বাসদাতা, প্রথমেই এবং অনবরত ভাবে
- যিশাইয় ৪৮:১৩ ‘আমি নিজের হাতে পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করেছি আর ডান হাতে আকাশকে বিছিয়ে দিয়েছি; আমি ডাকলে এদের সবাই একসংগে দাঁড়ায়।’
ঈশ্বর স্থাপন, রাজত্ব ও নিয়ন্ত্রণ করেন, হাত দেন
- যিরমিয় ২৩:২৪ ‘কেউ কি এমন গোপন জায়গায় লুকাতে পারে যেখানে আমি তাকে দেখতে পাব না? আমি কি স্বর্গ ও পৃথিবীর সব জায়গায় থাকি না?’
ঈশ্বর সর্বজান্তা ও সর্বত্র বিরাজমান
- যিরমিয় ৩২:১৭ ‘হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি তোমার মহাশক্তি ও ক্ষমতাপূর্ণ হাত দিয়ে মহাকাশ ও পৃথিবী তৈরি করেছ। তোমার পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নেই।’
সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা, এখনও একইভাবে সর্বশক্তিমান
- লূক ১০:২১ ‘তখন যীশু পবিত্র আত্মার দেওয়া আনন্দে আনন্দিত হয়ে বললেন, “হে পিতা, তুমি স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু।’
- প্রেরিত ১৭:২৪-২৬ ‘ঈশ্বর, যিনি এই পৃথিবী ও তার মধ্যে যা আছে সব কিছু তৈরি করেছেন, তিনিই স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু। তিনি হাতে তৈরি কোন মন্দিরে বাস করেন না। তাঁর কোন অভাব নেই, সেইজন্য মানুষের হাত থেকে পূজা গ্রহণ করবারও তাঁর দরকার নেই, কারণ তিনিই সব মানুষকে জীবন, প্রাণবায়ু আর অন্যান্য সব কিছু দান করেন। তিনি একজন মানুষ থেকে সমস্ত জাতির লোক সৃষ্টি করেছেন যেন তারা সারা পৃথিবীতে বাস করে। তারা কখন কোথায় বাস করবে তাও তিনি ঠিক করে দিয়েছেন।’
দেবতার চেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর, জীবনের উৎস, অস্তিত্ব থাকার অধিকার দানকারী
ঈশ্বর, জাতিগুলির চালক, জমি ও সীমানা রক্ষাকারী ঈশ্বর, নিজেকে প্রকাশ করার ঈশ্বর
- তাই বুঝা যায় যে ‘সামায়ীম সামে’ এবং ‘পৃথিবীর’ অনেক মিল আছে, আমাদের চিন্তার চেয়েও বেশি:
- উভয়ই ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্ট (আদি ১:১)
- উভয়কেই ঈশ্বর চেয়েছেন (আদি ১:১)
- উভয়কেই ঈশ্বর জীবন, অস্তিত্ব বা নিঃশ্বাস দিতে থাকেন (যিশাইয় ৪৫:২)
- উভয়েরই উপর তিনি তাঁর মালিকানা ও প্রভুত্ব দাবী করেন (আদি ১৪:২২)
- উভয়েরই উপর ঈশ্বর রাজত্ব করেন (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৪)
- উভয়ই (বস্তু এবং আত্মিক জগত) পাপে পড়েছে (আদি ৩:১,৬)
- উভয়ই পাপে আক্রান্ত ও পাপের ফলাফল তাতে দেখা যায়
- উভয়কেই ঈশ্বর বিচার করবেন (যিশাইয় ১৩:১৩)
- উভয়কেই ঈশ্বর ধ্বংস করবেন (২ পিতর ৩:১০)
- উভয়কেই ঈশ্বর নতুন করে সৃষ্টি করবেন (প্রকাশিত বাক্য ২১:১)
- আমরা বলি: আমরা একটি পাপ-আক্রান্ত ও মন্দ বস্তু জগত থেকে আত্মিক জগতে ‘পালাব’, কিন্তু ঈশ্বর বলেন যে উভয় বস্তু এবং আত্মিক জগতের উদ্ধারের প্রয়োজন। তিনি প্রতিজ্ঞা দেন যে উভয় উদ্ধার করা ও নতুন করা হবে। নতুন হয়ে পৃথিবী বা বস্তু জগত অনন্তকালীন হবে। এবং অবশেষে ‘স্বর্গ’ মানে ‘ঈশ্বর সব কিছুর উপর (বস্তু বা আত্মিক) রাজত্ব করবেন’।
আমরা বস্তু জগতের বিষয়ে ঈশ্বরকে দোষ দেই

- প্রায় বিশ্বাসী হিসাবে আমরা মনে মনে অভিযোগ করি যে আমাদের এই ঝামেলার বস্তু জগতে রাখা ঠিক ছিল না। আমরা সরাসরি এভাবে বলি না, কিন্তু আসলে আমরা ঈশ্বরের দোষ ধরি যে তিনি আমাদের এমন জায়গায় রেখে দিয়েছেন, যেখানে আমরা টিকে থাকতে পারি না, যেখানে আমরা প্রলোভনে পড়তে থাকি, বিশেষভাবে এই শরীরের কারণে।
- যদিও ঈশ্বরের সৃষ্টি শুরুতে পাপ মুক্ত ছিল, আদম ও হবা তারপরে এমন প্রলোভনে পড়েছেন যে তারা পাপ করেছিলেন। এবং কেন ঈশ্বর এই ‘ঝামেলার গাছ’কে ইদোন বাগানে রাখলেন? কেন তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রলোভন বানিয়েছেন, কেন তিনি এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যেখানে আমরা পাপ করি? আমরা মনে মনে ঈশ্বরের দোষ ধরি যে তিনি আমাদের এভাবে ‘ব্যর্থ হওয়ার পথে’ পাঠিয়েছেন।
- কিন্তু একটু চিন্তা করুন: পানি কি ভাল বিষয়? আগুন কি ভাল বিষয়? যৌন সম্পর্ক কি ভাল বিষয়?…তা নির্ভর করে কোন সময়ে, কোন পরিমাণে, কিভাবে, কার সাথে ইত্যাদি।
- একটি কলম দিয়ে চাইলে হয়তো একজনকে মেরে ফেলা যায়। তাই আমরা কি সব কলম নিষিদ্ধ করব?
- আসলে দেখা যায় যে একটি বাস্তব পৃথিবীতে প্রত্যেকটি বিষয়ের বা জিনিসের একটি উপযুক্ত ও উপকারী ব্যবহার আছে, কিন্তু একটি ভুল বা মন্দ ব্যবহারও আছে। সব কিছু নিষেধ করা মানে বাস্তব পৃথিবীকে নিষেধ করা।
- আমরা কি চাই? আমরা একটি প্রলোভন-মুক্ত, ঝুঁকি-মুক্ত, দায়িত্ব-মুক্ত, দায়বদ্ধতা-মুক্ত পৃথিবী চায়, যেখানে পাপ করা সম্ভব না। আমরা বলি: গাছ না থাকা ভাল!
- কিন্তু যদি একটি বিষয়ের ভুল ব্যবহার নিষেধ করা হয় বা তা অসম্ভব করা হয়, তবে তার সঠিক ও উপযুক্ত ব্যবহারও সাথে বাতিল করতে হয়। মন্দ যদি অসম্ভব, পাপ যদি অসম্ভব, তবে ভালও অসম্ভব। মন্দ বাতিল করতে গেলে, ভালও বাতিল হয়ে গেল। মন্দ অসম্ভব বানাতে গেলে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাতিল হয়ে যায়।
- গাছটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বুঝায়। ঈশ্বর মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। মানুষের কিছু ঘটানোর ক্ষমতা আছে। যেন মানুষ ভাল করতে সক্ষম হয়, যেন ভাল সিদ্ধান্ত বলতে কিছু থাকবে, মানুষকে মন্দ করার স্বাধীনতাও দিতে হবে। যদি মানুষ পাপ করতে অক্ষম, যদি মানুষের পায়ের সামনে দুইটি পথ নেই, তবে মানুষ ভালটা পছন্দ করতেও সক্ষম হবে না।
- আমরা সে ঝুঁকি-মুক্ত পৃথিবী চাই, কিন্তু এই ধরণের পৃথিবী হল অবাস্তব পৃথিবী বা একটি পুতুলের জগত: মন্দ করা যায় না, আসলে কিছুই করা যায় না, স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাদ হয়ে গেছে। আমরা জীব-জন্তু হতে চাই: চেতনা নেই, নৈতিকতা নেই, সিদ্ধান্ত নেই, দায়বদ্ধতা নেই। গরুদের মধ্যে স্বাগতম।
- ঈশ্বর আম বাতিল করেন না, কারণ কারও কারও এতে এলার্জি আছে। ঈশ্বর যৌন সম্পর্ক বাতিল করেন না কারণ ধর্ষণ করা সম্ভব। ঈশ্বর আমাদের পুতুল বা গরু বানাবেন না কারণ মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
- ঈশ্বর চেয়েছেন যেন মানুষের সিদ্ধান্তের ক্ষমতা থাকুক, মানুষ যেন আসলেই কিছু করতে পারে, ভাল হোক বা মন্দ হোক।
- এইটা সে অদ্ভুত বিষয়: ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর মঙ্গলময়তা বুঝে স্বাধীন হৃদয় থেকে বাধ্য হই। তিনি জোর করেন না, আমাদের স্বাধীনতা নষ্ট করতে রাজিও না। আমাদের স্বাধীন হৃদয় থেকে ভালটা পছন্দ করা তাঁর চোখে এমন মূল্যবান যে তিনি তার জন্য ঝুঁকি নিতে রাজি, পাপ অসম্ভব না বানাতে রাজি, কষ্টভোগ ও অন্যায় মেনে নিতে রাজি এবং ক্রুশে তার জন্য মারা যেতে রাজি।
- ভুলে যাবেন না: তিনিই মূল্য দিয়েছেন। এত অতুলনীয় মূল্য তিনি আমাদের ছোট হৃদয়ের উপর দিয়েছেন! এইটা সে সম্মান, সে ভার, সে ক্ষমতা যা তিনি আমাদের দিয়েছেন।
- আমরা তাঁর সাথে ঝগড়া করতে পারি যে তাঁর এই ঝুঁকি নেওয়া উচিত ছিল না (কিন্তু মনে রাখেন: গরু হতে চাইলে ঝগড়াও আর করা যাবে না!)। অথবা আমরা তাঁকে আরাধনা করতে পারি সে অতুলনীয় সম্মান ও গুরুত্ব যা তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন।
- আসুন আমরা অবাক হই কত হাজার আনন্দ ও আনন্দভোগ করার সুযোগ ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন যা নিষিদ্ধ নয়। যা নিষিদ্ধ, আসুন আমরা চেষ্টা করি তা নিষেধ করার কারণ বুঝতে, কারণ একটিও ভাল বিষয় ঈশ্বর নিষিদ্ধ করেন নি।
- এইটা হল ‘পূর্ণ জীবন’ করার একটি ডাক, এই পৃথিবী ও আমাদের মানবীয় জীবন আনন্দভোগ করার ডাক, কৃতজ্ঞতায় ও পরিপক্কতায়। আসুন আমরা ঈশ্বরকে দোষ আর না দেই যা তিনি ঠিক করেছেন, তার জন্য।
- ব্রিটিশ লেখক সি.এস. লূয়িস্ (C.S. Lewis) এই দৃষ্টান্ত বলেন: আমারা বলি ‘ঘোড়া অনেক বড় ও ভয়ংকর!’ ঈশ্বর বলেন: ‘চালাতে শিখো!’
সামায়ীম সামে = স্বর্গ = যেখানে ঈশ্বর রাজত্ব করেন
- ভবিষ্যৎ ও যীশুর দ্বিতীয় আগমন সম্বন্ধে অধিকাংশ বিশ্বাসীদের অনেক ভয় ও দুশ্চিন্তা আছে। ‘সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে’, ‘অনেক কষ্টের সময় আসবে’ আমরা প্রায়ই বলি। এই ধরণের বাইবেল পদ অবশ্যই পাওয়া যায়।
- কিন্তু তার পাশাপাশি বাইবেলে অনেক অদ্ভুত, শক্তিশালী ও ইতিবাচক প্রতিজ্ঞাও আছে, যাতে একটি চিন্তার চেয়ে চমৎকার পুনরুদ্ধার বর্ণনা করা হয়:
- সমস্ত কিছুকে পরিবর্তন করা হবে (১ করি ১৫:৫১-৫৩)
- সমস্ত কিছুকে ক্ষয় থেকে মুক্ত / নতুন জন্ম / স্বাধীন হবে (রোমীয় ৮:১৯-২২)
- সমস্ত কিছুকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা বা পুনঃস্থাপন হবে (প্রেরিত ৩:২১)
- সমস্ত কিছুকে মিলিত করে খ্রীষ্টের শাসনের অধীনে আনবেন বা সমস্তই খ্রীষ্টেই সংগ্রহ করা যাইবে (ইফিষীয় ১:৯-১০)
- সমস্ত কিছুকে খ্রীষ্টের পায়ের তলায় রেখেছেন এবং তাঁকে সব কিছুর অধিকার দিয়েছেন বা তাঁহার চরণের নিচে বশীভূত করিলেন (ইফিষীয় ১:২২)
- সমস্ত কিছুকে সম্মিলিত করেন বা নিজের সংগে মিলন চান (কলসীয় ১:২০)
- সমস্ত কিছু, মহাকাশ ও পৃথিবীকে নতুন করা হবে (প্রকাশিত বাক্য ২১:১)

- মহাকাশ এবং পৃথিবী, বস্তু জগত এবং আত্মিক জগত, দৃশ্য এবং অদৃশ্য সব কিছুকে নতুন জীবন দেওয়া হবে। এই নতুন জীবন হবে ঈশ্বরের ইচ্ছা ও রাজত্বের অধীনে থাকা একটি পূর্ণ জীবন।
- বলা যায় যে ‘সব কিছু স্বর্গ হয়ে যাবে’, সব কিছু ঈশ্বরের রাজত্বের অধীনে আসবে। অন্য কথায়: স্বর্গ বিস্তার হবে উভয় বস্তু ও আত্মিক জগতের উপর।
- কিন্তু ইতিমধ্যে বিষয়টি বাস্তব: যীশু ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তার করেছেন, এক পরিমাণ পর্যন্ত, উভয় বস্তু ও আত্মিক জগতের উপর: যে দিন থেকে যীশু পৃথিবীতে পা দিয়েছেন সে দিন থেকে ‘স্বর্গ রাজ্য’ তাঁর মধ্যে এবং বিশ্বাসীদের হৃদয়, জীবন, কথা ও আচরণের মধ্যেও উপস্থিত।
- যতদূর আমরা বাধ্য হই তত দূর ঈশ্বর আসলে রাজত্ব করেন। যত বেশি আমাদের মনোভাব ও ব্যবহার তাঁর প্রতিনিধিত্ব করি (সত্য বলা, ভালবাসা দেখানো, সেবা করা) ততবেশি তার রাজ্য উপস্থিত।
- বলা যাবে যে প্রত্যেক ‘চমৎকারভাবে করা কাজ’, প্রত্যেক ‘যত্ন নেওয়া বাচ্চা’, প্রত্যেক ‘ন্যায় বিচার’, প্রত্যেক ‘ভাল ব্যবস্থাপনা’, প্রত্যেক সৌন্দর্য এবং প্রত্যেক কার্যকর উৎপাদনে তাঁরই রাজ্য উপস্থিত এবং বিস্তারিত।
- ‘তোমার রাজ্য আইসুক’ তা হল প্রত্যেকজনের জীবনের জন্য একটি ডাক; কিন্তু জাতিদের জন্য, পেশাগুলির জন্য, সংস্থাগুলির জন্যও একটি ডাক: যত বেশি ঈশ্বরের ইচ্ছা মানা হয়, যত বেশি সত্য অনুসারে কাজ করা হয়, যত বেশি ঈশ্বরের চরিত্র দেখানো হয়, তত বেশি তাঁর রাজ্য উপস্থিত।
- খেয়াল করুন যিশাইয় ১১:৯ ও হবককূক ২:১৪ পদে সে অদ্ভুত প্রতিজ্ঞা: ‘কারণ সমুদ্র যেমন জলে পরিপূর্ণ থাকে তেমনি সদাপ্রভুর বিষয়ে জ্ঞানে পৃথিবী পরিপূর্ণ হবে।’
এই অধ্যয়নের প্রয়োগ
- এই অধ্যয়ন থেকে কি শিখব?
- ঈশ্বর তাঁর সে বস্তু জগতের প্রতি সমর্পিত, এবং আমাদের ও তা হওয়া উচিত। তিনি এই বস্তু জগত, মহাবিশ্ব ও মানুষের শরীর সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তাতে জীবন দিতে থাকেন। তিনি এই সৃষ্টি নিয়ে লজ্জা করেন নি, আফসোসও করেন না, তার জন্য মাফও চান নি; এবং আমাদেরও একই মনোভাব থাকা উচিত।
- চাইলে বলা যায় যে এই অধ্যয়ন ‘বস্তু জগতের জন্য বিজ্ঞাপন’: ঈশ্বর এই বস্তু জগতকে চান, তিনি তা উদ্ধার করতে চান, তিনি তা তাঁর ভাল নীতি ও ইচ্ছা অনুসারে চালাতে চান, তিনি চান যেন তাঁর বিশ্বাসীরা এই জগতকে ভালবাসবে ও তার জন্য চমৎকারভাবে কাজ করে।
- তিনি বস্তু জগতের সৃষ্টির জন্য অজুহাত দেখান নি। ঠিক তেমনে আমাদেরও কোনো অজুহাত দেখানো দরকার নেই যখন আমরা এই জগতের জন্য কাজ করি। আমাদের এই ভুল চিন্তা বাদ দেওয়া দরকার যে ‘এই জগতের জন্য কাজ = জাগতিক কাজ, আত্মিক কাজ নয়’।
- ঈশ্বর মানুষকে সর্বপ্রথম এই পৃথিবীর দেখাশোনা করার ‘চাকরী’ দিয়েছেন। তিনি মানুষকে পৃথিবীর উন্নয়নকারী, পৃথিবীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পৃথিবীর উত্তরাধিকার প্রাপ্ত পুত্র হিসাবে রেখেছেন, যারা ‘বাবার পৃথিবীর’ জন্য কাজ করবে (আদি ১:২৮)।
- ঈশ্বর আমাদের এই পৃথিবীর উপর অধিকার ও তার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন, যেন আমরা জমি চাষ, উৎপাদন, উন্নয়ন, গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রচেষ্টা করি। আমরা অক্ষমও না, আমরা ‘বেচারা’ও না। পরিশ্রমে আশীর্বাদ ও ফল থাকবে। অবশ্যই সময় দরকার। অগ্রিম চিন্তা ও পরিকল্পনা করা আবশ্যক। আজকের সিদ্ধান্ত আগামীকালের উপর, এমন কি সামনের প্রজন্মের উপরে প্রভাব ফেলবে। বাস্তব পৃথিবী তো, দীর্ঘ দিনের চিন্তা করুন! উন্নতি করার চিন্তা করুন! নীতির চিন্তা করুন!
- ঈশ্বরের পরিত্রাণ মানে না ‘এর চেয়ে ভাল জায়গায় পালানোর সুযোগ’ বরং মানে মন ও হৃদয় পরিবর্তনের সুযোগ, যেন আমরা বিশ্বাসী হিসাবে জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রকে ঈশ্বরের রাজত্বের অধীনে এনে ফলবান হতে শিখি।
- বিশ্বাসীরা পৃথিবীতে নিজের শক্তিতে কোনো ‘কল্পনার স্বর্গ’ বানাতে সক্ষম হবে না, কিন্তু তারপরেও আমাদের বলা হয়েছে যেন আমরা ঈশ্বরের রাজ্য এখানেই বিস্তার করি, যেন আমরা সত্য খুঁজি ও তাঁর ইচ্ছা অনুসারে এখানে কাজ করি: ‘তোমার রাজ্য আসুক। তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক।’ (মথি ৬:১০)।
- যেহেতু স্বর্গ মাত্র না, এই পৃথিবীও ঈশ্বরের রাজত্বের অধীনে আনানো দরকার, সৎ ব্যবহার আবশ্যক। যদি আসলে যীশুর রাজত্বের বৃদ্ধির কোনো শেষ হবে না ‘একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে… শাসন করবার ভার তাঁর কাঁধের উপর থাকবে…তাঁর শাসনক্ষমতা বৃদ্ধির ও শান্তির শেষ হবে না’ (যিশাইয় ৯:৭) তবে অকার্যকারিতা, অবহেলা, দুর্নীতি, সুবিধাবাদী, আইনের অসমান প্রয়োগ, স্বেচ্ছায় ক্ষমতার ব্যবহার ও অন্যায় লাভ চলবে না। সুপরিচালনা শেখা যায় ও তার সুফল অবশ্যই দেখা যাবে।
- তা ছাড়া: সব কিছু গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর সব কিছু গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং আমাদেরও এভাবে চিন্তা করা দরকার। সব কিছুর একটি স্থান, একটি ভূমিকা আছে। সব কিছু তাঁর সত্য ও নীতি অনুসারে চালানো দরকার। সচ কিছু তাঁর শাসনের অধীনে আনা হবে। সব কিছু তাঁর সঙ্গে মিলনে আনা হবে (কলসীয় ১:২০)।
- কখনও মনে করবেন না যে ঈশ্বরের চিন্তা বা মন ছোট। তিনিই বড় মনের। এর জন্য সরু চিন্তা বাদ দেন। ঈশ্বর আমাদের মধ্যে বড় মন ও বড় হৃদয় তৈরি করতে চান।