যোগাযোগ ০১ – মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না

দ্বিতীয় বিবরণ ৫:২০ ‘কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না।’
ঈশ্বর কি আদেশ দিয়েছেন?

  • আদালতে সাক্ষী হিসাবে আমাদের কথার সর্বোচ্চ গুরত্ব রয়েছে।
  • তাই বিশেষভাবে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া চলবে না।
  • কেন? > মিথ্যা সাক্ষ্য তদন্তকে বিভ্রান্ত করে ও ন্যায় বিচার প্রতিরোধ করে।

কিভাবে ঈশ্বর আইন-কানুনে মিথ্যা সাক্ষ্যকে নিরুৎসাহিত করেছেন?

দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৫ ‘যদি কারও বিরুদ্ধে দোষ বা অন্যায় করবার নালিশ আনা হয়, তবে মাত্র একজন সাক্ষী দাঁড়ালে চলবে না; দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথা ছাড়া কোন বিষয় সত্যি বলে প্রমাণিত হতে পারবে না।’

  • শুধুমাত্র দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথা মিল থাকলে তদন্তে তা প্রমাণিত হবে।
  • দুই বা তিনজন সাক্ষী যদি আগে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছে তবে তা কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়? > উকিলরা মিথ্যা সাক্ষীদের আলাদা করে প্রত্যেকজনকে এমন বেশি ছোট নির্দিষ্ট প্রশ্ন করেন যার উত্তর আগে থেকে ঠিক করা যায় না। এভাবে মিথ্যা সাক্ষীদের কথা বানানো গল্প হিসাবে প্রমাণ করা যায়।

 

দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৫-২০ ‘যদি কেউ ক্ষতি করবার মনোভাব নিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোন অন্যায় কাজের নালিশ আনে, ১৭ তবে সেই ব্যাপারে জড়িত সেই দু’জনকে তখনকার পুরোহিত ও বিচারকদের কাছে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়াতে হবে। ১৮ বিচারকেরা ব্যাপারটা ভাল করে তদন্ত করে দেখবে। যদি সে তার ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার দরুন মিথ্যাবাদী বলে ধরা পড়ে, ১৯ তবে সে তার ভাইয়ের প্রতি যা করতে চেয়েছিল তা-ই তার প্রতি করতে হবে। তোমাদের মধ্য থেকে এই রকমের মন্দতা শেষ করে দিতে হবে। ২০ এই কথা শুনে অন্য সব ইস্রায়েলীয়েরা ভয় পাবে এবং এই রকম অন্যায় আর কখনও তারা করবে না।’

  • যে পদ্ধতিতে ঈশ্বর মিথ্যা সাক্ষ্যকে নিরুৎসাহিত করেন তা হল: মিথ্যা সাক্ষী যদি মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়, তবে যে শাস্তি নির্দোষ ব্যক্তির উপর চাপাতে চেষ্টা করেছিল, সে শাস্তি তাকে দিতে হবে।
  • অপরাধ যত বড়, মিথ্যা সাক্ষী হওয়ার ঝুঁকিও তত বেশি।
  • এই আইন সব সময় প্রয়োগ করলে কেউ মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার আর সাহস করবে না।
  • সাক্ষ্য দেওয়ার আগে আদালতে শপথ করতে হয়: ‘যাহা বলিব সত্য বলিব, সমস্ত সত্য বলিব, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না’। শপথের এই তিনটি ভাগের গুরুত্ব কি?
    • ‘সত্য বলিব’ > যা কিছু বলা হবে, অবশ্যই তা সত্য সাক্ষ্য হতে হবে।
    • ‘সমস্ত সত্য বলিব’ > কোনো তথ্য বাদ দেওয়া যাবে না। উকিল জিজ্ঞাসা না করলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবশ্যই জানাতে হবে।
    • ‘সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না’ > কোনো ভুল তথ্য যুক্ত করা যাবে না। মিথ্যা বলা, ঘুরিয়ে বলা, বানানো গল্প বলা, অর্ধেক সত্য বলা, ভুলভাবে দোষ চাপানো চলবে না।
  • আইনটির উদ্দেশ্য হল সত্য বা বাস্তবতা খুঁজে বের করা, সাক্ষ্যের নির্ভরযোগ্যতা রক্ষা করা যেন ন্যায় বিচার হয়।

 

সাধারণ জীবনের পরিস্থিতিতে

যদিও আমাদের কথার সর্বোচ্চ ভার আদালতে, তবুও এই আইন দৈনিক জীবনের সাধারণ কথার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য: মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া, মিথ্যা না বলা, অস্বীকার না করা, অর্ধেক সত্য না বলা, অতিরিক্ত যুক্ত করে না বলা, বানানো কথা না বলা, সমালোচনা না করা, নিন্দা না করা (ক্ষতির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলা)।

 

বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা
যা সত্য নয়, তা বলা

  • ভাল উদ্দেশ্যে মিথ্যা বললে কেমন? অন্যকে খুশি করতে? অন্যকে উৎসাহিত করতে? মিথ্যা প্রশংসা? তোষামোদ?
  • ‘সাদা মিথ্যা’ কেমন? উদাহরণ: ‘তোমার কি এটা পছন্দ?’ ‘অবশ্যই। ‘আমি কেমন করেছি?’, ‘অসাধারণ!’
  • সংস্কৃতিতে যেমন প্রচলিত। উদাহরণ: ‘তুমি কি আসবে?’ ‘হ্যাঁ, অবশ্যই’
  • ভদ্র ভাষা কেমন? উদাহরণ: ‘স্যার, স্যার’… ‘শ্রদ্ধেয়’ ‘মাননীয়’
  • অতিরিক্ত বা বাড়িয়ে বলা? উদাহরণ: ‘হাজার বার ফোন দিলাম, ধরলে না’…’ক্ষিদায় মারা যাচ্ছি’
  • আবেগীয় ভাষা কেমন? উদাহরণ: ‘তুমি আমার জীবন’, ‘তোমাকে না পেলে মারা যাব’, ‘কখনও ফোন কর না’
  • রং মেখে গল্প বলা কেমন? উদাহরণ: ‘দুনিয়ার জ্যাম’

যা সত্য এবং যা বলা উচিত, তা না বলা

  • যা প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ এমন তথ্য না বলা।
  • একটি ভুল কথা বা ভুল চিন্তা সংশোধন না করা যদিও আমি সঠিকটা জানি।
  • অন্যায্যতা বা খারাপ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আপত্তি না উঠানো।
  • ‘কালো সত্য’, এমন কিছু বলা যা সত্য কিন্তু যা অন্যরা শুনে ভুল বুঝে ও যা দ্বারা মিথ্যা সন্দেহে পড়ে।

কিন্তু এর অর্থ কি যে সব সময় সব কিছু বলা উচিত? লোকের মুখের উপর কি সব সমালোচনা বা বিরক্ত প্রকাশ করা কি উচিত?

 

যীশু কিভাবে কথা বলতেন?

  • যীশু কি মানুষকে খুশি করার জন্য তাদের প্রশংসা করতেন? একটাও উল্লেখ নেই।
  • যীশু কি উৎসাহ দেওয়ার জন্য অর্ধেক-সত্য বলতেন? না, তিনি উৎসাহিত করতেন, কিন্তু শুধুমাত্র সত্য দ্বারা
  • যীশু কি তাঁর কথা দ্বারা মানুষকে অপমানিত করতেন? কেউ কেউ ক্রমাগতভাবে তাঁর কথায় অপমান বোধ করত।
  • যীশুকে কি কখনও ভুল বোঝা হয় নি? আসলে লোকেরা ক্রমাগতভাবে যীশুকে ভুল বুঝত।
  • যীশু কি মাঝে মধ্যে উত্তর নাও দিতেন? হ্যাঁ
  • যীশু কি তাঁর কথা বলার অধিকার সুরক্ষা করতেন? হ্যাঁ
  • যীশু কি অন্যদের কথা বলতে নিষেধ করতেন? মানুষকে নয় শুধুমাত্র মন্দ আত্মাদের

আমাদের কেমন কথা বলা উচিত তাঁর সর্বোচ্চ আদর্শ ও মাপকাঠি হলেন যীশু।
প্রজ্ঞার সাহিত্য থেকে কিছু বলা উচিত কিনা, তার ৩টি পরীক্ষা: তা কি সত্য? তা কি প্রয়োজনীয়? তা কি সাহায্যকারী?

 

মুখের কথার গুরুত্ব নিয়ে একটি ধ্যান

  • সৃষ্টি             সমস্ত কিছু সৃষ্টি হয়েছিল ঈশ্বরের শক্তিশালী জীবনদায়ী বাক্য দ্বারা
  • আদি ১:৩       “ঈশ্বর বললেন, ‘আলো হোক’। আর তাতে আলো হল।”
  • যোহন ১:১,৩   “প্রথমেই বাক্য ছিলেন।…সব কিছুই সে বাক্যের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল আর যা কিছু সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কোন কিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্টি হয় নি।’
  • সৃষ্টি             সমস্ত কিছুর অস্থিত্ব ও জীবন ঈশ্বরের শক্তিশালী বাক্যের দ্বারা এখনও টিকে আছে
  • ইব্রীয় ১:৩      “তাঁর শক্তিশালী বাক্যের দ্বারা সব কিছু ধরে রেখে পরিচালনা করেন।”
  • একজন মানুষের কাছে ঈশ্বরের বাক্য ও তাঁর প্রকাশের দ্বারা উদ্ধারের ইতিহাস শুরু (আদি ১২:১-৩, ১৫:১-৬, ১৫:১২-২১, ১৭:১-৮)।
  • যখন ইসহাক তার বড় ছেলে এষৌকে আশীর্বাদ দিতে চান তখন ছোট ভাই যাকোব তা ছলনা করে চুরি করেন। একবার আশীর্বাদ ঘোষণা হয়েছে, ইসহাক মনে করেন তা আর ফেরত নেওয়া সম্ভব না। ‘তাকে আশীর্বাদও করেছি, আর সে আশীর্বাদের ফল সে পাবেই’ (আদি ২৭:৩৩)।
  • আইন-কানুনের সারাংশ, ‘১০ আজ্ঞা’কে ইব্রীয় ভাষায় ‘১০টি শব্দ’ বলা হয় কারণ একটি শব্দে পুরা আদেশ প্রকাশিত।
  • গিবিয়োনীয়রা কৌশল করে যিহোশূয়ের সাথে একটি শান্তি চুক্তি করে। যদিও ঈশ্বর ইস্রায়েলকে গিবিয়োনীয়দের ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন তবুও যিহোশূয় শপথ করলেন বলে এই চুক্তি রক্ষা করতে বাধ্য (যিহোশূয় ৯)। ঈশ্বর পরের যুগেও ইস্রায়েলকে দায়বদ্ধ রাখেন এই চুক্তি পালন করতে (২ শমূ ২১:১-৩)।
  • বিচারক যিপ্তহ তারই একটি বেপরোয়া শপথের কারণে তার আপন মেয়েকে মেরে ফেলার জন্য নিজেকে বাধ্য মনে করেন (বিচার ১১:২৪-৪০), যদিও আইন অনুযায়ী বেপরোয়া শপথ ফিরিয়ে নেওয়া যায় (লেবীয় ২৭:১-২)। এই ঘটনা দেখায় যে ইস্রায়েলীয়রা মুখের কথা পালন করার উপরে কত গুরুত্ব দিত। এইটা কি শুধুমাত্র পুরাতন নিয়মের দাবী? না।
  • প্ররিত ৫:১-১১ অননিয় ও সাফীরার শুধুমাত্র পাপ হল জমি বিক্রি ও দানের অর্থের পরিমান নিয়ে মিথ্যা বলা। এমন না যে তাদের দান দিতে হয়। এমন নয় যে তারা সম্পূর্ণ পরিমাণ অর্থ দিতে দায়বদ্ধ। ‘বিক্রির আগে কি জমিটা তোমারই ছিল না? আর বিক্রির পরেও কি টাকাগুলো তোমার হাতেই ছিল না?…তুমি মানুষের কাছে মিথ্যা বল নি কিন্তু ঈশ্বরের কাছে মিথ্যা কথা বলেছ।’ (প্রেরিত ৫:৪)।

 

যীশুও আমাদের মুখের কথার শক্তি ও গুরুত্ব নিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন

  • মথি ১২:৩৬    ‘কিন্তু আমি আপনাদের বলছি, লোকে যে সব বাজে কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রত্যেকটি কথার হিসাব তাদের দিতে হবে।’
  • প্রত্যেকটি কথার জন্য হিসাব দিতে হবে! আমাদের কথার দ্বারাই আমাদের নির্দোষ বলা হবে বা দোষী বলা হবে!…আমরা কখনোই আমাদের কথার কত গুরুত্ব আছে তা নিয়ে চিন্তা করি না।
  • মথি ৫:৩৭     ‘তোমাদের ‘হ্যাঁ’ ‘হ্যাঁ’ হোক বা ‘না’ ‘না’ হোক।’
  • এমন কি ঈশ্বর দাবী করেন যে আমাদের প্রত্যেক দিনের কথাও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
  • প্রেরিত ১:৮    ‘তোমরা আমার সাক্ষী হবে।’
  • একজন শিষ্যের কাজ হল শুধুমাত্র সাক্ষী হওয়া, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া, যা দেখেছেন তাই বলা।
  • যাকোব জিভে্র ক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত শিক্ষা দেন: ‘ঘোড়াকে বশে রাখবার জন্য আমরা তার মুখে লাগাম দিই, আর তখন তাকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে চালিয়ে নিতে পারি। ৪ আবার দেখ, জাহাজ যদিও অনেক বড় আর জোর বাতাস সেটা ঠেলে নিয়ে যায় তবুও মাত্র ছোট একটা হাল দিয়ে নাবিক সেটাকে যেদিকে খুশী সেই দিকে নিয়ে যেতে পারে। ৫ জিভ্‌ও তেমনি; দেহের একটা ছোট অংশ হলেও তা অনেক বড় বড় কথা বলে। আবার অল্প একটুখানি আগুন কিভাবে একটা বড় জংগলকে জ্বালিয়ে ফেলতে পারে!’ (যাকোব ৩:৩-৫)।
  • তিনি জিভে্র ব্যবহার নিয়ে সাবধাণবাণী দেন: ‘এই জিভ্‌ দিয়ে আমরা আমাদের প্রভুর, অর্থাৎ পিতা ঈশ্বরের গৌরব করি, আবার এই জিভ্‌ দিয়ে তাঁর মত করে গড়া মানুষকে অভিশাপ দিই। ১০ আমাদের একই মুখ দিয়ে গৌরব আর অভিশাপ বের হয়ে আসে। আমার ভাইয়েরা, এই রকম হওয়া উচিত নয়।’ (যাকোব ৩:৯-১০)।
  • যাকোব আরো বলেন যে ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা তর্ক করে না, প্রতিযোগী,কর্কশ বা ধারালো না বরং ‘যে জ্ঞান স্বর্গ থেকে আসে তা প্রথমতঃ খাঁটি, তারপর শান্তিপূর্ণ; তাতে থাকে সহ্যগুণ ও নম্রতা; তা করুণা ও সৎ কাজে পূর্ণ, স্থির ও ভণ্ডামিশূন্য’ (যাকোব ৩:১৭)। যা ভিত্তিক নয় এমন মতবাদ নিয়ে তর্কাতর্কি করা ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা নয়।
  • প্রকাশিত ১২:১১   প্রকাশিত বাক্য বিশ্বাসীদের বিষয়ে বলে: ‘মেষ-শিশুর রক্ত ও নিজেদের সাক্ষ্য দ্বারা তারা তাকে হারিয়ে দিয়েছে। তারা নিজেদের অতিরিক্ত ভালবাসে নি বলেই তাদের জীবন দিতে তারা রাজী ছিল।’

যীশুও আমাদের মুখের কথার শক্তি ও গুরুত্ব নিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন

  • মথি ১২:৩৬    ‘কিন্তু আমি আপনাদের বলছি, লোকে যে সব বাজে কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রত্যেকটি কথার হিসাব তাদের দিতে হবে।’
  • প্রত্যেকটি কথার জন্য হিসাব দিতে হবে! আমাদের কথার দ্বারাই আমাদের নির্দোষ বলা হবে বা দোষী বলা হবে!…আমরা কখনোই আমাদের কথার কত গুরুত্ব আছে তা নিয়ে চিন্তা করি না।
  • মথি ৫:৩৭     ‘তোমাদের ‘হ্যাঁ’ ‘হ্যাঁ’ হোক বা ‘না’ ‘না’ হোক।’
  • এমন কি ঈশ্বর দাবী করেন যে আমাদের প্রত্যেক দিনের কথাও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
  • প্রেরিত ১:৮    ‘তোমরা আমার সাক্ষী হবে।’
  • কজন শিষ্যের কাজ হল শুধুমাত্র সাক্ষী হওয়া, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া, যা দেখেছেন তাই বলা।
  • যাকোব জিভে্র ক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত শিক্ষা দেন: ‘ঘোড়াকে বশে রাখবার জন্য আমরা তার মুখে লাগাম দিই, আর তখন তাকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে চালিয়ে নিতে পারি। ৪ আবার দেখ, জাহাজ যদিও অনেক বড় আর জোর বাতাস সেটা ঠেলে নিয়ে যায় তবুও মাত্র ছোট একটা হাল দিয়ে নাবিক সেটাকে যেদিকে খুশী সেই দিকে নিয়ে যেতে পারে। ৫ জিভ্‌ও তেমনি; দেহের একটা ছোট অংশ হলেও তা অনেক বড় বড় কথা বলে। আবার অল্প একটুখানি আগুন কিভাবে একটা বড় জংগলকে জ্বালিয়ে ফেলতে পারে!’ (যাকোব ৩:৩-৫)।
  • তিনি জিভে্র ব্যবহার নিয়ে সাবধাণবাণী দেন: ‘এই জিভ্‌ দিয়ে আমরা আমাদের প্রভুর, অর্থাৎ পিতা ঈশ্বরের গৌরব করি, আবার এই জিভ্‌ দিয়ে তাঁর মত করে গড়া মানুষকে অভিশাপ দিই। ১০ আমাদের একই মুখ দিয়ে গৌরব আর অভিশাপ বের হয়ে আসে। আমার ভাইয়েরা, এই রকম হওয়া উচিত নয়।’ (যাকোব ৩:৯-১০)।
  • যাকোব আরো বলেন যে ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা তর্ক করে না, প্রতিযোগী,কর্কশ বা ধারালো না বরং ‘যে জ্ঞান স্বর্গ থেকে আসে তা প্রথমতঃ খাঁটি, তারপর শান্তিপূর্ণ; তাতে থাকে সহ্যগুণ ও নম্রতা; তা করুণা ও সৎ কাজে পূর্ণ, স্থির ও ভণ্ডামিশূন্য’ (যাকোব ৩:১৭)। যা ভিত্তিক নয় এমন মতবাদ নিয়ে তর্কাতর্কি করা ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা নয়।
  • প্রকাশিত ১২:১১   প্রকাশিত বাক্য বিশ্বাসীদের বিষয়ে বলে: ‘মেষ-শিশুর রক্ত ও নিজেদের সাক্ষ্য দ্বারা তারা তাকে হারিয়ে দিয়েছে। তারা নিজেদের অতিরিক্ত ভালবাসে নি বলেই তাদের জীবন দিতে তারা রাজী ছিল।’

আরো ভিত্তিক চিন্তা: ঈশ্বরই যোগাযোগ, যীশুই ঈশ্বরের বাক্য

  • যীশুই ঈশ্বরের চুড়ান্ত বাক্য, তাঁর থেকে আসা শেষ কথা, তাঁর পূর্ণ প্রতিনিধি এবং তাঁর হুবহু প্রকাশ।
  • যোহন ১:১,১৪       ‘প্রথমেই বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সংগে ছিলেন এবং বাক্য নিজেই ঈশ্বর ছিলেন। …সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন। পিতা ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হিসাবে তাঁর যে মহিমা সেই মহিমা আমরা দেখেছি। তিনি দয়া ও সত্যে পূর্ণ।’
  • ইব্রীয় ১:২-৩         ‘কিন্তু এই দিনগুলোর শেষে তিনি তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে কথা বলেছেন। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে সব কিছুর অধিকারী হওয়ার জন্য নিযুক্ত করলেন। পুত্রের মধ্য দিয়েই তিনি সব কিছু সৃষ্টি করলেন। ৩ ঈশ্বরের সব গুণ সেই পুত্রের মধ্যেই রয়েছে; পুত্রই ঈশ্বরের পূর্ণ ছবি। পুত্র তাঁর শক্তিশালী বাক্যের দ্বারা সব কিছু ধরে রেখে পরিচালনা করেন।
  • যোহন ১৪:৯         ‘যে আমাকে দেখেছে সে পিতাকেও দেখেছে। তুমি কেমন করে বলছ, ‘পিতাকে আমাদের দেখান।’
  • কলসীয় ১:১৫-১৭    ‘এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য ঈশ্বরের হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান, ১৬ কারণ আকাশে ও পৃথিবীতে, যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সব কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। মহাকাশে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে তাদের সবাইকে তাঁকে দিয়ে তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৭ তিনিই সব কিছুর আগে ছিলেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু টিকে আছে।
  • ঈশ্বরই বাক্য। ঈশ্বরই যোগাযোগ। ঈশ্বরই প্রকাশ। যীশুই বাক্য, পিতা থেকে আসা সুখবর। যীশুই ঈশ্বরের অধিকারগত চুড়ান্ত প্রকাশ ও পিতার সত্যিকারের প্রতিনিধি।
  • কিভাবে আমরা মুখের কথাকে হাল্কাভাবে ব্যবহার করি যখন ঈশ্বর নিজেকেই বলেছেন যে তিনি ‘বাক্য’?
    ঈশ্বরের প্রত্যেকটি কথা সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য
  • যেমন ঈশ্বর অনন্ত, অপরিবর্তনীয় ও একদম বিশ্বাসযোগ্য, তেমন তাঁর বাক্য।
  • মথি ৫:১৮           ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আকাশ ও পৃথিবী শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না আইন-কানুনের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই আইন-কানুনের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না।’
  • যাকোব ১:১৭        ‘জীবনের প্রত্যেকটি সুন্দর ও নিখুঁত দান স্বর্গ থেকে নেমে আসে, আর তা আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে, যিনি সমস্ত আলোর পিতা। চঞ্চল ছায়ার মত করে তিনি বদলে যান না।
  • ইব্রীয় ১৩:৮          ‘যীশু খ্রীষ্ট কালকে যেমন ছিলেন, আজকেও তেমনি আছেন এবং চিরকাল তেমনি থাকবেন।’
  • ঈশ্বর বলেছেন, তিনি তা অবশ্যই পূর্ণ করবেন। ঈশ্বর চুক্তি রক্ষাকারী ও প্রতিজ্ঞা পূর্ণকারী ঈশ্বর।
  • ঈশ্বর বলেছেন, তা প্রতিরোধ করবে কে? তা নিষেধ করবে কে?
  • ঈশ্বর আমাদের বলেছেন বাস্তব কি, তার বিপরীত কি হতে পারে?

 

কথা বলার ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কলুষিত হয়েছে, পরিবর্তন প্রয়োজন

  • আমরা কোনোভাবেই আমাদের কথায় এত গুরুত্ব দেই না। আমরা কোনোভাবেই অন্যদের কথায় এত গুরুত্ব দেই না। কিন্তু ঈশ্বর যদি গুরুত্ব দেন, তবে আমাদের দৃষ্টি কি পরিবর্তন করা দরকার নেই?
  • এই ক্ষেত্রে ঈশ্বর ও বাইবেলীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। > আমাদের চিন্তা ও আচরণ পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের সংস্কৃতির চেয়ে ঈশ্বরের বাক্যকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
  • ঈশ্বরের প্রত্যেকটি কথাই নির্ভরযোগ্য। আমাদের কথাও নির্ভরযোগ্য হতেই হয়।

 

কিছু বাস্তবিক পদক্ষেপ

কিভাবে আমি আমার কথাকে নির্ভরযোগ্য করে তুলব? কিভাবে আমার কথার ভার রক্ষা করব? কিভাবে আমার মুখের প্রত্যেকটি কথার জন্য দায়বদ্ধ হতে শিখব?

  • > কথা কম বলা যায়। উত্তর নাও দেওয়া যায়। প্রত্যেক মতামতে একমত না হলেও চলে। প্রতিজ্ঞা না করলেও চলে। কিন্তু প্রতিজ্ঞা দিলে, তা পূরণ করুন! বলুন: ‘আমি নিশ্চিত নই’, ‘এখন বলতে পারছি না’, ‘নিশ্চিত হলে উত্তর দেব’, ‘আমি জানি না, তা সম্পূর্ণ সত্য কিনা’, ‘আমি একমত নই’, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করতে পারছি না’, ‘আমি এমন কিছু বলতে চাই না যা আমি রাখতে পারব কিনা নিশ্চিত নই’।
  • কথা শক্তিশালী। আমি মুখের কথার মালিক। আমার কথা কিভাবে ব্যবহার করি? প্রার্থনায়? উৎসাহে? প্রশংসায়? গুরুত্ব স্বীকার করতে? কৃতজ্ঞতায়? প্রজ্ঞায়? শিক্ষায়? সমর্থনে? পরামর্শ দানে? সংশোধনে?
  • সন্তান লালন-পালনে বাবা-মা হিসাবে আমরা সন্তানকে অনবরত আদেশ দেই, যার পালন নিশ্চিত করি না এবং পালন না করলে কোনো ফলাফল নেই। সন্তান ঠিকই শিখছে যে বাবা-মায়ের কথার কোনো ভার নেই। শুধুমাত্র চিৎকার করলে বা রাগ হলেই শুনতে হয়।
  • কোনো ক্ষেত্রে যদি কিছু করার কথা দেন (যেমন প্রতিজ্ঞা বা হুমকি) তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি সত্যি তা করবেন।
  • অনেক বার আমরা সন্তানদের সরাসরি মিথ্যাও বলি, না বুঝে যে তা দ্বারা আমরা নিজের কথার ভার কমাই।

 

মিথ্যা বললে আমাদের উপরে কি কি প্রভাব পড়ে?

  • আমরা অন্যদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা, সুনাম, নির্ভরতা, প্রভাব ও ক্ষমতা হারাই।
  • আমরা নিজের উপর লজ্জা, আত্ম-সন্দেহ ও নিরুৎসাহ নিয়ে আসি এবং আত্ম-বিশ্বাস ও আত্ম-সম্মান হারাই। যদি আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে না পারি, তবে আর একজন কিভাবে আমাকে বিশ্বাস করবে?
  • আমরা পরে সত্য বললেও অন্যদের চোখে আর নির্ভরযোগ্য হই না।
  • যদি আমরা নির্ভরযোগ্য না হই, কিভাবে অন্যদের নির্ভরযোগ্য মনে করব? আমরা সহজেই অন্যদের অবিশ্বাস করব, সন্দেহ করব যা আমাদের সম্পর্ককে আঘাত দেবে ও বন্ধুত্বের গভীরে যেতে প্রতিরোধ করবে।
  • সত্য ধমক ভাল লাগে না, কিন্তু তা দ্বারা চেতনা, স্বীকার, পুনরুদ্ধার, পরিবর্তন, বোধগম্যতা ও একে অন্যকে মূল্য দেওয়ার সুযোগ তৈরী হয়।
  • মিথ্যা প্রশংসা, ভাল উদ্দেশ্যে হলেও, আমার কথার ভার কমায়। কথার মুদ্রাস্ফীতি হয়, যত বেশি বলি তত বেশি ভার কমতে থাকে। ফলে আমি চাইলেও প্রশংসিত লোককে মূ্ল্য দিতে সক্ষম নই ..’ও তো সব সময় এইটা বলে’।
  • কথার মুদ্রস্ফীতিতে শেষে আমার কথার আর কোন অর্থ থাকে না, পরিবর্তন করার ক্ষমতাও থাকে না।
  • ঈশ্বর আমার কথার মূ্ল্য রক্ষা করতে চান। তিনি নিশ্চিত করতে চান যে আমার কথা বা সাক্ষ্যের ভার, গুরুত্ব, নির্ভরযোগ্যতা ও প্রভাব থাকুক।

‘প্রভু, আমাদের সাহায্য কর, তোমার মত কথা বলতে যেখানে প্রত্যেক কথা গ্রহণযোগ্য, অর্থপূর্ণ, বিশ্বাস-যোগ্য ও গঠনকারী।’