যোগাযোগ ০২ – চুক্তি ও শপথ

দ্বিতীয় বিবরণ ৫:২০ মিথ্যা সাক্ষ্য
‘কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না।’
- মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না, আদালতেও না, কোনো সময় না, কোথাও না, কারও বিরুদ্ধেও না।
দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:২১-২৩ শপথ, মানত বা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা
‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে যদি তোমরা কোন মানত কর তবে তা পূরণ করতে দেরি কোরো না…তা পূরণ না করলে তোমাদের পাপ হবে; ২১ কিন্তু মানত না করলে পাপ হবে না। ২৩ তোমরা মুখ দিয়ে যে মানতের কথা উচ্চারণ করবে তা তোমাদের পূরণ করতেই হবে, কারণ তোমরা নিজের ইচ্ছায় নিজের মুখেই … সেই মানত করেছ।’
- এখানে একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা সুরক্ষিত আছে, শপথ বা মানত না করার। মানুষের কাছে হোক বা ঈশ্বরের কাছে হোক, যদি শপথ বা মানত করি তবে অবশ্যই তা রক্ষা করতে হবে।
লেবীয় ১৯:১২ মিথ্যা প্রতিজ্ঞা
‘আমার নাম নিয়ে মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করে তোমাদের ঈশ্বরের নামের পবিত্রতা নষ্ট করা চলবে না। আমি সদাপ্রভু।’
- ঈশ্বরের নামে প্রতিজ্ঞা করা মানে নিজের কথার গুরুত্ব বাড়ানো। যেহেতু এই শপথের সঙ্গে আমি ঈশ্বরের চরিত্রকে যুক্ত করি, তাই এটাকে হালকাভাবে হাল্কাভাবে নেওয়া যাবে না: অবশ্যই শপথ পালন করতে হবে।
লেবীয় ২৭:১-৩৪ ঈশ্বরের কাছে করা শপথ বা মানত পূর্ণ করা
‘যদি কেউ কোন বিশেষ মানত পূরণের জন্য নিজেকে কিম্বা অন্য কোন লোককে সদাপ্রভুর কাছে উৎসর্গ করে, তবে সেই উৎসর্গের বদলে যে মূল্য দিতে হবে তা এই …পুরুষ…মহিলা…পশু…অশুচি পশু…জমি…’
- লেবীয় পুস্তকে একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় আছে কিভাবে ঈশ্বরের কাছে করা শপথ পূর্ণ করতে হবে।
- আবারও: শপথ না করলে চলে, কিন্তু একবার শপথ করলে, তা অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে।
যিহোশূয় ৯, ২ শমূয়েল ২১:১-১৪ কেস স্টাডি: গিবিয়োনীয়দের সাথে শান্তি চুক্তি
যিরীহো এবং অয় শহরের দখলের পরে গিবিয়োন হল পরবর্তী শহর যা ইস্রায়েল দখল করবে।
- গিবিয়োনের বাসিন্দা হল হিব্বীয় জাতির লোক (যিহোশূয় ৯:১৯), যে ৭টি জাতি ধ্বংস করার আদেশ ঈশ্বর ইস্রায়েলকে দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এটি একটি জাতি (যাত্রা ৩:৮)।
- গিবিয়োনীয়রা যিহোশূয়ের কাছে এসে ছলনা করল যে তারা দূর দেশ থেকে এসেছে। তারা যিহোশূয়কে ভুলিয়ে তার কাছ থেকে একটি শান্তির চুক্তি বের করে নেয়।
- মিথ্যা দিয়ে চুক্তি এমন একটি জাতির সঙ্গে যার ধ্বংসের আদেশ ঈশ্বর দিয়েছিলেন … এমন একটি চুক্তি যিহোশূয়ের কি রক্ষা করা উচিত? ঈশ্বর কি তাকে এই চুক্তিতে দায়বদ্ধ রাখবেন?
- যিহোশূয় নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করে এই শান্তি চুক্তি রক্ষা করেন (যিহোশূয় ১০:৬-৭)।
- ঈশ্বর কি এর সাথে একমত? যিহোশূয়ের কি তা করা উচিত ছিল?
- এক সময় রাজা শৌল এই ৩৫০ বছর আগের চুক্তি ভেঙ্গে অনেক গিবিয়োনীয়দের মেরে ফেলেন।
- উত্তরে ঈশ্বর রাজা দায়ূদের সময় ইস্রায়েলের উপর ৩ বছরের দুর্ভিক্ষ পাঠান।
- দায়ূদ দুর্ভিক্ষের কারণ জানার জন্য ঈশ্বরকে অন্বেষণ করেন। উত্তর অনুসারে দায়ূদ গিবিয়োনীয়দের কাছে মাফ চান ও তাদের দাবী অনুসারে ক্ষতিপূরণ করেন। তাই ৩৫০ বছর পরেও ঈশ্বর ইস্রায়েলকে এই চুক্তিতে দায়বদ্ধ রাখেন।
চুক্তিতে বিশ্বস্ততার গুরুত্ব
- একবার চুক্তি করলে তা রক্ষা করতে হয়, এমন কি যদিও চুক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা হয়েছে। উদাহরণ: ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ। একবার শপথ করলে তার জন্য ঈশ্বর আপনাকে দায়বদ্ধ রাখবেন
মালাখি ২:১৬ বিবাহ চুক্তি
‘আমি স্ত্রীকে ত্যাগ করা ঘৃণা করি, কাজেই তোমরা তোমাদের অন্তরের বিষয়ে সাবধান হও, বিশ্বাসঘাতকতা কোরো না।’
লেবীয় ১৯:১৩, দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৪-১৫ কাজের চুক্তি
‘মজুরের দিনের পাওনা দিনেই দিয়ে দিতে হবে; তা সকাল পর্যন্ত আট্কে রাখা চলবে না।
লেবীয় ১৯:৩৫-৩৬, দ্বিতীয় বিবরণ ২৫:১৩-১৬ মৌখিক ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি
‘কোন কিছু লম্বায় কিম্বা ওজনে কিম্বা পরিমাণে কতখানি তা মাপতে গিয়ে তোমরা অন্যায় কোরো না।’
আমোষ ১:৯ জাতীয় চুক্তি
‘সদাপ্রভু বলছেন, “সোরের তিনটা পাপ…দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ ভাইয়ের সংগে ভাইয়ের চুক্তি অগ্রাহ্য করে সে কতগুলো গ্রামের সমস্ত লোককে বন্দী করে ইদোমের হাতে তুলে দিয়েছে।’
- ঈশ্বর তাঁর প্রত্যেকটি কথায় বিশ্বস্ত, তিনি প্রত্যেকটি প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেন, তিনি চুক্তি রক্ষাকারী ঈশ্বর … এজন্য আমাদেরও তার মত হতে হবে: বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য, চুক্তি ও প্রতিজ্ঞা রক্ষাকারী, শপথ পালনকারী
বিচারক ১১:৩১-৩৬ কেস স্টাডি: যিপ্তহের বেপরোয়া শপথ
- যিপ্তহ, ইস্রায়েলের একজন বিচারক, যিনি নিখুঁত না হলেও ঈশ্বর ইস্রায়েলকে অম্মোনীয়দের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাকে ব্যবহার করেছেন।
- যুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি শপথ করে বলেন: ‘তুমি যদি আমার হাতে অম্মোনীয়দের তুলে দাও তবে …ফিরে আসবার সময় যে আমাকে এগিয়ে নেবার জন্য বাড়ী থেকে দরজার বাইরে আসবে সে-ই সদাপ্রভুর হবে। তাকে দিয়ে আমি একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করব।’
- যুদ্ধে জয়লাভের পর তিনি নিজের শহরে ফিরে আসার পর তার আপন মেয়ে তালে তালে নেচে নেচে তাকে নিতে এগিয়ে আসে। যিপ্তহ শোক করেন কিন্তু নিজেকে এই শপথ রক্ষার দায়ী মনে করেন।
- তার মেয়ে উত্তরে বলে ‘বাবা, তুমি সদাপ্রভুকে কথা দিয়েছ। কাজেই তোমার কথা অনুসারে আমার প্রতি যা করবার তা কর, কারণ সদাপ্রভু তোমাকে তোমার শত্রু অম্মোনীয়দের উপর প্রতিশোধ নিতে দিয়েছেন।’ যিপ্তহ তাই করেন!
- মুখের কথার উপরে তারা কত গুরুত্ব বা সম্মান দেন, তা দেখে আমাদের আশ্চর্য হওয়া উচিত!
- কিন্তু আইন-কানুন শপথ থেকে মুক্তির একটি উপায় বর্ণনা করে: দায়ীত্ব নেওয়া ও পরিবর্তে একটি উৎসর্গ বা দান দেওয়া (লেবীয় ২৭:১-২)। এইটা যিপ্তহের করা উচিত ছিল।
শপথ বনাম সাধারণ ভাষা
- কেন আমরা শপথ করি? > আমার বাক্যের গুরুত্ব বা ভার নিশ্চিত করার জন্য, আমার সমর্পণ ঘোষণা করার জন্য, নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য, বিশেষভাবে যখন লোক আমার কথা নিয়ে সন্দেহ করে।
- অনেক বার একটি শপথের দ্বারা আমি অতিরিক্ত জোর ও প্রতিজ্ঞাও দেই, নিজেকে, অন্যদেরকে ও ঈশ্বরকে বুঝানোর (convince) জন্য।
- এইভাবে আমি আরো সংকটে পড়ি: যত বেশি আমি অনির্ভরযোগ্য, তত কম মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে, তত বেশি আমি শপথ দিয়ে আমার নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করি। আবারও কথার মুদ্রাস্ফীতি ঘটে: আমি বেশি বেশি বলি কিন্তু সবার চোখে তার অর্থ কম মনে হয়।
- তাহলে শপথ করা কি মন্দ?… না, কারণ ঈশ্বর নিজেই শপথ করেন দ্বিতীয় বিরণ ২৯:১২ ও ইব্রীয় ৬:১৭ পদে। শপথ সমস্যা নয়, শপথ পালন না করা হল সমস্যা।
- মথি ৫:৩৩-৩৭ ‘কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, একেবারেই শপথ কোরো না। ৩৭ তোমাদের কথার ‘হ্যাঁ’ যেন ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’ যেন ‘না’ হয়; এর বেশী যা, তা শয়তানের কাছ থেকে আসে।”
- হয় আপনি বিশ্বস্ত ও আপনার কথা বিশ্বাসযোগ্য > তাহলে শপথ করার প্রয়োজন নেই।
- না হয় আপনি অবিশ্বস্ত ও বিশ্বাসযোগ্য নন > তাহলে আরো সাবধান, শপথ করবেন না, যেহেতু পালন করবেন না।
- এই ক্ষেত্রে আমাদের ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয় প্রয়োজন! এমন কি আমাদের সাধারণ দিনে সাধারণ কথারও নির্ভরযোগ্যতা থাকা দরকার। তাহলে আমাদের প্রতিজ্ঞা, চুক্তি, শপথ ও মানতের ক্ষেত্রে তা কত নির্ভরযোগ্যতা আবশ্যক!
- কথার নির্ভরযোগ্যতা ও চুক্তি রক্ষা করা হল ঈশ্বরের অপরিবর্তনীয় মাপকাঠি।
ছোটবেলায় আঘাতের কারণে হৃদয়ে করা শপথ
- অনেক সময় যখন আঘাত পাই, আমরা মনে মনে কঠোর শপথ করি। এই শপথগুলি পরবর্তিতে আমাদের প্রভাবিত করে, এমন কি পরিচালনাও করে, যদিও আমরা তার সম্পর্কে সচেতন থাকি না।
- ‘আমি ওদের মিথ্যা প্রমাণ করব’ ‘এটা কোনো দিন করতে পারব না’ ‘আর কোনো দিন তার সাথে খোলা মনে মিশব না’, ‘এটা আর কোনো দিন হতে দেব না’ ‘আর কোনো দিন সেখানো যাব না’ ‘আর কখনও এই ঝুঁকি নেব না’
- এই হৃদয়ের শপথগুলি আমাকে শক্তিশালীভাবে পরিচালনা করে, যদিও এই শপথ আমার মনে নেই অথবা শপথের পুনরায় মূল্যায়ন করলে তাতে রাজী হতাম না।
- অনেক বার এই শপথগুলি ছোটবেলায় ‘বেঁচে থাকার জন্য’ প্রয়োজনীয় ছিল, কিন্তু পরে এইগুলি আমাকে সীমিত করে রাখে বা পঙ্গু করে ফেলে।
- তা হলে ঈশ্বরের কাছে এসে এই শপথগুলির জন্য ক্ষমা চান এবং সাহায্য চান এই শপথগুলি ভাঙ্গতে। সচেতনভাবে ও ক্রমাগতভাবে শপথের মিথ্যাগুলির পরিবর্তে সত্য স্থাপন করেন।