যোগাযোগ ০৫ – যীশুর কথা বলার ধরণ: কূয়ার কাছে শমরীয় মহিলা

যোহন ৪:৫-৬
“তিনি শুখর নামে শমরিয়ার একটা গ্রামে আসলেন। যাকোব তাঁর ছেলে যোষেফকে যে জমি দান করেছিলেন এই গ্রামটা ছিল তারই কাছে। সেই জায়গায় যাকোবের কূয়া ছিল। পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যীশু সেই কূয়ার পাশে বসলেন। তখন বেলা প্রায় দুপুর।”
- যিহূদী গালীল ও যিহূদিয়ার মাঝখানের এলাকা হল শমরিয়া। শমরিয়রা ছিল যিহূদী ও অযিহূদী মিশানো একটি জাতি (২ রাজা ১৭:২৪)।
- শমরিয়দের বিশ্বাস ছিল যিহূদী ধর্ম ও দূর থেকে আনা বিভিন্ন দেবতা পূজার একটি মিশানো ধর্ম (২ রাজা ১৭:২৫-৩৪,৪১)।
- যিহূদীরা শমরিয়দের নীচু চোখে দেখতেন যেহেতু তারা ‘মিশানো রক্তের’ ও খাঁটি যিহূদী ধর্মের নয়।
- যিহূদীরা সরুবাব্বিলের নেতৃত্বে ফেরা থেকে (৫৩৬ খ্রীঃপূঃ) যীশুর সময় পর্যন্ত এই দুই জাতিদের মধ্যে অনবরত শত্রুতা ছিল (ইষ্রা ৪, নহিমিয় ৪)। উদাহরণ: ১২০ খ্রীঃপূঃ যিহূদী হাস্মনীয় রাজা হুর্কানাস-১ (Hyrcanus-I) শমরিয়দের মন্দির ধ্বংস করেন।
- যিহূদীরা গালীল থেকে যিহূদিয়ায় গেলে শমরিয়া এলাকা হয়ে না গিয়ে বরং যর্দন নদীর উপত্যকা হয়ে যেত যদিও তা আরো লম্বা যাত্রা ছিল।
- একজন যিহূদী তারপরেও শমরিয়া হয়ে যাত্রা যদি করত, শমরিয়রা তাকে এইভাবে কষ্ট দিত: যিহূদীর মুখ যদি যিরূশালেমের দিকে থাকত (দক্ষিণে যাওযার সময়) তারা তাকে তামাষা করত, মুখ যদি গালীলের দিকে থাকত, তারা হাত তালি দিত (উত্তরে যাওয়ার সময়)। এই শত্রুতা মনোভাবের সম্মুখীন যীশুকেও হতে হয়েছে লূক ৯:৫২-৫৩ পদে: “কিন্তু যীশু যিরূশালেমে যাচ্ছেন বলে সেই গ্রামের লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করল না।” শিষ্যরা যখন শাস্তি হিসাবে শমরীয়দের উপরে স্বর্গ থেকে আগুন নেমে আনতে চান, যীশু তাদেরও শত্রুতার মনোভাবের বিষয়ে ধমক দেন (লূক ৯:৫৪-৫৫)।
যোহন ৪:৬-৮
“সেই জায়গায় যাকোবের কূয়া ছিল। পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যীশু সেই কূয়ার পাশে বসলেন। তখন বেলা প্রায় দুপুর। যীশুর শিষ্যেরা খাবার কিনতে গ্রামে গেছেন; এমন সময় শমরিয়ার একজন স্ত্রীলোক জল তুলতে আসল। যীশু তাকে বললেন, “আমাকে একটু জল খেতে দাও।”
- সংস্কৃতি অনুসারে অবস্থাটি আসলে ঠিক না, একজন অপরিচিত পুরুষ ও মহিলা একা আলোচনা করছেন।
- যোহন আমাদের জানিয়েছেন কখন তা ঘটে: দুপুরে। তা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এত গরম দেশে কোনো মহিলা দুপুরে জল আনার জন্য বের হত না।
- মহিলাটি ‘সমাজের বাইরের’ একজন, সে একজন ‘খারাপ মহিলা’, লজ্জা প্রাপ্ত লোক।
- অন্য মহিলারা সকালে বা সন্ধায় যখন সবাই পানি আনতে যায় তাঁকে বাদ দেওয়া হত
- অন্য মহিলাদের কথার চেয়ে দুপুরের রোদ সহ্য করা সহজ মনে করে।
- যীশু বুঝতে পারেন যে মহিলাটি ‘খারাপ’। মহিলাটি জানে যে যীশু জানবেন যে সে ‘খারাপ’।
- মহিলাটি আশা করেছিল যে কেউ কূয়ায় থাকবে না, কিন্তু দেখা গেল একজন পুরুষ বসে আছেন। তাঁকে দেখে মহিলা চিন্তা করবে যে হয় যিহূদী লোকটি অহংকারে তার উপস্থিতি অস্বীকার করবে, না হয় তাকে তুচ্ছ করে কথা বলবে বা বাজে প্রস্তাব দেবে। মহিলাটি দুইটি ধরণের ব্যবহার পেতে অভ্যস্ত, দুইটি খারাপ লাগে।
যোহন ৪:৭
“যীশু তাকে বললেন, “আমাকে একটু জল খেতে দাও।”
- যীশুই মহিলার সাথে কথা বলা শুরু করেন।
- যীশু তার সাথে কথা বলা মানে ৩টি নিয়ম ভাঙ্গা বা ৩টি বাধার বিরুদ্ধে যাওয়া: যিহূদী-শমরিয় শত্রুতা, পুরুষ-মহিলার দূরে থাকা, সম্মানিত লোক-সমাজের বাইরের লোক।
- যীশু সাহায্য চান, তিনি একটি সেবা কাজের অনুরোধ করেন, এমন কিছু যা করার মহিলার ক্ষমতা আছে।
- তাতে যীশু দেখান যে তিনি মহিলার হাত থেকে কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
- তাতে যীশু মহিলাকে ক্ষমতা দেন, তার অনুরোধ পূর্ণ করতে অথবা প্রত্যাখ্যান করতে।
যোহন ৪:৯
- যীশুর কথা শুনে মহিলার মনে কি চিন্তা চলবে?
- ‘এই লোক অন্যদের মত নয়, তিনি কেন আমার সাথে কথা বলেন?’
- ‘সাবধান থেকো, সামনের কথা হবে একটি খারাপ প্রস্তাবের।
- ‘এই যে একজন ধার্মিক লোক যিনি নিজের কাছে প্রমাণ করতে চান যে আমি খারাপ’।
“সেই শমরীয় স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “আমি তো শমরীয় স্ত্রীলোক। আপনি যিহূদী হয়ে কেমন করে আমার কাছে জল চাইছেন?”
- মহিলা উত্তর দিয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। হতেও পারে সে ‘অন্য রকম কথা’ শুনতে অভ্যস্ত ও তার কথার ধার আছে। সে যীশুর কথা বলার উদ্দেশ্যকে চ্যালেঞ্জ করেন। হতেও পারে তার কথার অর্থ কম বেশি:
- ‘আমি মুর্খ নই…আমাকে এই ধরণের কথা বলা যাবে না …আমি নিজেকে রক্ষা করতে জানি!’
যোহন ৪:১০
“যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে উত্তর দিলেন, “তুমি যদি জানতে ঈশ্বরের দান কি আর কে তোমার কাছে জল চাইছেন তবে তুমিই তাঁর কাছে জল চাইতে আর তিনি তোমাকে জীবন্ত জল দিতেন।”
- যীশু কথা বলতে থাকেন ও মহিলাকে আরো আলোচনায় আনতে চেষ্টা করেন।
- যীশু তাঁর পরিচয়ের বিষয়ে কথা তুলেন।
- যীশু মহিলার চিন্তা ‘আমি নিজেকে রক্ষা করতে জানি’কে চ্যালেঞ্জ করেন।
- যীশু মহিলার মনে আরো প্রশ্ন ও চিন্তা উঠান।
- যীশু আলোচনাকে ব্যবহারিক বিষয় থেকে উচু স্তরে নিয়ে আসেন।
যোহন ৪:১১-১২
“স্ত্রীলোকটি বলল, “কিন্তু আপনার কাছে জল তুলবার কিছুই নেই আর কূয়াটাও গভীর। তবে সেই জীবন্ত জল কোথা থেকে পেলেন? আপনি আমাদের পূর্বপুরুষ যাকোবের চেয়ে তো বড় নন।”
- মহিলার মধ্যে কি চলছে? হতেও পারে অনেক কিছু একসাথে:
- সে আলোচনায় আরো অংশ গ্রহণ করেন এবং সেও এখন যীশুর রূপক ভাষা দিয়ে কথা বলেন।
- সে যীশুকে ‘স্যার’ বলে। হতেও পারে তাতে টিটকারী প্রকাশিত: ধনীরা জল তোলায় ব্যস্ত না।
- হয়তো সে ‘স্যার’ বলে সম্মান দেখান কারণ সে বুঝতে পেরেছে: যীশু তাকে সম্মানের সঙ্গে দেখেন।
- সে যীশুর পরিচয়ের বিষয়ের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে।
- সে যীশুর ‘বড় কথা’, তাঁর অহংকার’, ‘তাঁর অনুযুক্ত কথা’কে চ্যালেঞ্জ করে।
- সে সৎভাবে তার আগ্রহ প্রকাশ করে যদিও তার বেশি আশা নেই যে সে যা চায় তাই পাবে।
যোহন ৪:১৩-১৪
“তখন যীশু বললেন, “যে কেউ এই জল খায় তার আবার পিপাসা পাবে। কিন্তু আমি যে জল দেব, যে তা খাবে তার আর কখনও পিপাসা পাবে না। সেই জল তার অন্তরের মধ্যে উথলে-ওঠা ফোয়ারার মত হয়ে অনন্ত জীবন দান করবে।”
- যীশু একসাথে দুই স্তরে কথা বলছেন
- তিনি প্রতিজ্ঞা দেন: আর পিপাসা পাবে না, স্থায়ী একটি সমাধান, জীবন, খাঁটি অবস্থা, এমন কি অনন্ত জীবন।
- তিনি এই লজ্জায় অভ্যস্ত মহিলার মধ্যে একটি গভীর আকাঙ্খা জাগান।
- তিনি বিশ্বাস করেন যে এই মহিলা আত্মিক বিষয় বুঝতে পারে ও তা তার কাছে প্রমাণও করেন।
- তিনি একজন খারাপ মহিলা ও দুর্নামের পাপীকে স্বর্গের প্রস্তাব দিচ্ছেন।
- কিন্তু যীশুর রূপক ভাষা চাইলে অন্যদিকেও বুঝা যায়: ‘জল’ ও ‘পান করা’ রূপকভাবে যৌন সম্পর্কও বুঝায় যেমন হিতো ৫:৬-৮ অথবা পরমগীত ১:২ অথবা ৫:১ পদে।
- তাই যীশুর রূপক ‘খারাপ কথা’ বা ‘খারাপ প্রস্তাব’ও হতে পারে। মনে হয় যীশু ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরণের ‘দুই দিকের’ রূপক ব্যবহার করেন।
যোহন ৪:১৫
“এতে স্ত্রীলোকটি যীশুকে বলল, “আমাকে তবে সেই জল দিন যেন আমার পিপাসা না পায় আর জল তুলতে এখানে আসতে না হয়।”
- মহিলাটি এখন সরাসরি তার প্রয়োজন ও তার আকাঙ্খা প্রকাশ করে।
- সে শেষে ‘নিজেকে রক্ষা’ বাদ দিয়ে সৎ হয়ে সরাসরি অনুরোধ করে।
- মহিলাটি আলোচনা আবার ‘নীচের স্তরে’ নিয়ে আসে। কেন? হয়তো যীশুকে পরীক্ষা করার জন্য?
- কথার অর্থও এই যে সে নিজের লজ্জা ও তার ‘সমাজের বাইরের’ অবস্থা সৎভাবে প্রকাশ করে।
- বোধ হয় যীশুর কথায় ও মনোভাবে এমন ভিন্ন কিছু পেয়েছে যাতে তার মনে আশা জেগেছে।
- হয়তো সে যীশুকে সরাসরি চ্যালেঞ্জও করে: ‘ঠিক আছে, দেখি আপনি আমার জন্য কি করতে সক্ষম?
যোহন ৪:১৬
“যীশু তাকে বললেন, “তবে যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডেকে আন।”
যীশুর এই কথায় আলোচনা একটি নতুন মোড় নেয়।
- অবশেষে যীশু প্রমাণ করেন যে তিনি কোনো ‘অনুপযুক্ত প্রস্তাব’ করবেন না। তিনি – খুব উপযুক্তভাবে – তার স্বামীকে আনতে বলেন। তা হল সম্মানজনক প্রস্তাব।
- যীশু এখানে মহিলাকে সুযোগ দেয় ‘সম্মানের সঙ্গে’ নিজেকে আলোচনা থেকে বের করতে: মহিলা খুব সহজেই বলতে পারে: ‘অবশ্যই তাকে নিয়ে আসব।’ এবং পরে সে আর ফিরবে না।
- যীশু এখানে মহিলাকে প্রায় ‘প্রলোভন’ দেখান, লজ্জা ছাড়া আলোচনা থেকে মুক্ত হতে।
- যীশু কথাটি দ্বারা মহিলার সামনে দুইটি পথ তুলে ধরেন: ‘লজ্জা ছাড়া’ চলে যাওয়া অথবা নিজের লজ্জা প্রকাশ করা। যীশু তাকে জোর করেন হয় সম্পূর্ণ সৎ হতে হবে, অথবা সে আশা যা সে আলোচনার মাধ্যমে পেয়েছে, তা ছেড়ে দিতে হবে, যীশু সে সম্মান তাকে দেখিয়েছে, তা ছেড়ে দিতে হবে।
- যীশু এখানে মহিলাকে হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছে এই আশায় যে মহিলা লজ্জা গ্রহণ করবে এবং আরো গভীর সম্পর্ক চাইবে ও আরো সৎ হতে রাজী হবে।
- যীশু এখানে ‘জ্ঞানের কথা’ নামে পবিত্র আত্মার একটি দান ব্যবহার করেন (১ করি ১২:৮)।
যোহন ৪:১৭
“স্ত্রীলোকটি বলল, “কিন্তু আমার স্বামী নেই।”
- মহিলাটি ‘লজ্জা ছাড়া’ চলে যাওয়ার চেয়ে লজ্জা পেতে রাজী আছে।
- যীশুকে (এবং সে আশা ও মূল্য যা তিনি দিয়েছেন) হারানোর চেয়ে সে সৎ হতে ও লজ্জা গ্রহণ করতে রাজি হয়।
- মহিলার উত্তরে বুঝা যায় যে যীশুকে সে সম্মান ও ভাল মনোভাব-আচরণ দেখিয়েছেন তার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে…’এই লোক আসলে ভিন্ন!’
যোহন ৪:১৮
“যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ তোমার স্বামী নেই, কারণ এর মধ্যেই তোমার পাঁচজন স্বামী হয়ে গেছে, আর এখন যে তোমার সংগে আছে সে তোমার স্বামী নয়। তুমি সত্যি কথাই বলেছ।”
- যীশু এখানে প্রমাণ করেন যে তার মধ্যে ঈশ্বর থেকে আসা অসাধারণ জ্ঞান আছে। তাঁর পরিচয়ের বিষয়ে তিনি আগে কি দাবি করলেন, তাও সাথে সাথে প্রমাণ করেন।
- কিন্তু কথাটি লজ্জা-দায়কও। কেন যীশু মহিলাটিকে আরো লজ্জায় ফেলেন?
- যীশু তাকে সম্পূর্ণ সৎ হতে ও বাস্থবতার সম্মুখীন হতে বাধ্য করেন।
- সাথে সাথে কিন্তু তা আশাবাণী হিসাবেও দাঁড়ায়: যীশু শুরু থেকে জানতেন সে কি ধরণের মহিলা কিন্তু তারপরেও তিনি তার সাথে কথা বলেছেন ও তাকে সম্মান দেখিয়ে মূল্য দিয়েছেন। যীশু জানতেন কিন্তু তিনি তাকে অন্যদের মত অগ্রাহ্য করেন নি!
যোহন ৪:১৯-২০
“তখন স্ত্রীলোকটি যীশুকে বলল, “আমি এখন বুঝতে পারলাম আপনি একজন নবী। “
- মহিলাটি এখন সম্পূর্ণ সৎ, সে নিজেকে আর লুকায় না, আর এড়িয়ে যায় না।
- মহিলাটি উপসংহারও টানে: যীশুর অসাধারণ ক্ষমতা আছে। যীশু যিনি হতে দাবি করেছেন সত্যিই তিনি তা হন।
“আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই পাহাড়ে উপাসনা করতেন, কিন্তু আপনারা বলে থাকেন যিরূশালেমেই লোকদের উপাসনা করা উচিত।”
- সে একটি আত্মিক বা ধর্মীয় প্রশ্ন করতে সাহস পায়। তাতে প্রমাণিত যে এই ‘খারাপ’ মহিলা এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করে যা কেউ মনে করে না যে সে চিন্তা করে। তাকে মূল্য দেওয়া হয়েছে বলে সে এগিয়ে আসে।
- যীশু তাকে অগ্রাহ্য করেন নি বলে তার প্রশ্ন এখন হয়ে গেছে: আরাধনা কিভাবে করব? এই ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক কিভাবে রাখব?
- তাকে গ্রহণ করা হয়েছে বলে সে এখন ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কের পথ খুঁজে।
যোহন ৪:২১-২৪
“যীশু তাঁকে বললেন, “শোন, আমার কথায় বিশ্বাস কর, এমন সময় আসছে যখন পিতা ঈশ্বরের উপাসনা তোমরা এই পাহাড়েও করবে না, যিরূশালেমেও করবে না। তোমরা যা জান না তার উপাসনা করে থাক, কিন্তু আমরা যা জানি তারই উপাসনা করি, কারণ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার উপায় যিহূদীদের মধ্য দিয়েই এসেছে। কিন্তু এমন সময় আসছে, এমন কি, এখনই সেই সময় এসে গেছে যখন আসল উপাসনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার উপাসনা করবে। পিতাও এই রকম উপাসনাকারীদেরই খোঁজেন। “
- যীশু তার কাছে এখন সরাসরি সত্য প্রকাশ করেন: পরিত্রান, নতুন রাজ্য ও মশীহ যিহূদীদের দ্বারা, কিন্তু শুধুমাত্র যিহূদীদের জন্য, তা নয়, বরং সবার জন্য।
- যতজন আগ্রহী, ততজনকে স্বাগতম জানানো হচ্ছে। সবাই: শমরীয়রা, মহিলারা, সমাজের বাইরে লোকেরা …তার মত লোকেরাও।
- স্বর্গস্থ পিতা এমন লোকদের খোঁজেন যারা তাঁর অন্বেষণ ও আরাধনা করবে।
- যীশু মহিলাকে চ্যালেঞ্জ করেন যেন সে আগের আঘাত, লজ্জা, নীচু ভাব, জাতীয় শত্রুতা ও অন্যদের বাদ দেওয়ার মনোভাবকে অগ্রাহ্য করে পরিবর্তে যীশুকে সাড়া দেন।
যোহন ৪:২৫-২৬
“তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “আমি জানি, মশীহ, যাঁকে খ্রীষ্ট বলা হয়, তিনি আসছেন। তিনি যখন আসবেন তখন সবই আমাদের জানাবেন।”
- মহিলার কথা প্রমাণ পায় যে তার আত্মিক জ্ঞান, বুঝার ক্ষমতা ও আকাঙ্খা আছে।
- সে বুঝতে পেরেছে যে শমরীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
“যীশু তাকে বললেন, “আমিই তিনি, যিনি তোমার সংগে কথা বলছেন।’
- যীশু এখন মহিলার কাছে তাঁর মশীহ হিসাবে পরিচয় প্রকাশ করেন। এত পরিষ্কারভাবে যীশু নিজেকে আর কারও কাছে প্রকাশ করেন নি।
- তিনি মহিলাকে ‘জীবন্ত জল’ ও অনন্ত জীবন দেন, এখন, কারণ তিনি শুধুমাত্র নবী নন, তিনি মশীহ। এবং মশীহ ইতিমধ্যে তাকে গ্রহণ করেছেন। এবং সে মশীহ সমস্ত সীমানা, বাধা, অগ্রাহ্য, লজ্জা ও ‘বাইরে রাখার মনোভাব’ বাতিল করে দেবেন।
যোহন ৪:২৮-৩০
“তোমরা একজন লোককে এসে দেখ। আমি জীবনে যা করেছি সবই তিনি আমাকে বলে দিয়েছেন। তাহলে উনিই কি সেই মশীহ?” এতে লোকেরা গ্রাম থেকে বের হয়ে যীশুর কাছে আসতে লাগল।”
- মহিলা ‘লজ্জিত, সমাজের বাইরে’ আর নয় বরং এক মুহূর্তে রাজদূত ও সত্যের ঘোষণাকারী হয়ে যায়।
- সে তার দুশ্চিন্তা ও ভয় ভুলে পাত্র রেখে চলে যায় … কি যায়-আসে? সে তো যে কোনোভাবে ফিরে আসবে।
- তার সে আগের লজ্জা এখন আর নেই। লজ্জার অতীত এখন হয়ে গেছে যীশুর অনুগ্রহের প্রমাণ ও সাক্ষ্য।
- যদিও সে লোকদের কাছ থেকে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার পেয়েছে তবুও সে তাদেরকে সত্য জানায়।
- মহিলাটি যীশুর ‘আলোচনার পদ্ধতি’ও সাথে সাথে কাজে লাগায়: সে লোকদের একটি প্রশ্ন দিয়ে কথা বলে।
- সে জীবন্ত জল পেয়েছে এবং ইতিমধ্যে সে জীবন্ত জল তার মধ্যে একটি জলের কূপ বা স্রোত হয়ে গেছে যা অন্যদের জীবন্ত জল দেয়।
যোহন ৪:৩২
“যীশু তাঁদের বললেন, “আমার কাছে এমন খাবার আছে যার কথা তোমরা জান না।”
- যীশু মহিলার ‘জল’ খেয়ে সন্তুষ্ট। সে তাকে রূপকভাবে ‘পান করতে দিয়েছে’।
যোগাযোগের জন্য কি নীতি?
- সঠিক মনোভাবের শক্তি: মূল্য, গ্রহণ, সম্মান ও গুরুত্ব দান।
- একটি ‘নিরাপদ পরিস্থিতি’ কত গুরুত্বপূর্ণ: লোকেরা গ্রহণ ও সম্মান পেলে তারা নিজেকে খুলতে সাহস পায়।
- যীশুর মত ধাপে ধাপে লোকদের চিন্তা ও আগ্রহ জাগানো, প্রশ্ন উঠানো, আশা ও সত্য দেওয়া দরকার।
- ‘খুশি করার জন্য’ কথা বলবেন না, তার চেয়ে বরং চ্যালেঞ্জ করেন, সৎ হতে সাহায্য করেন, বাস্তবতার সম্মুখীন হতে উৎসাহ দেন।