যোগাযোগ ০৮ – যীশুর কথা বলার ধরণ: পদের প্রতি লোভী শিষ্যরা

মথি ১০:৩৫-৪৫ ও মথি ২০:২০-২৮

মার্ক ১০:৩৫ “পরে সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও যোহন যীশুর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আমাদের ইচ্ছা এই যে, আমরা যা চাইব আমাদের জন্য আপনি তা-ই করবেন।”
মথি ২০:২০ “পরে সিবদিয়ের দুই ছেলেকে তাঁদের মা সংগে করে নিয়ে যীশুর কাছে আসলেন এবং তাঁর কাছে কিছু চাইবার উদ্দেশ্যে তাঁকে প্রণাম করলেন।”

  • “যীশুর কাছে এসে বললেন” … পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে কাজটি তারা আগে পরিকল্পনা করে রাজি হয়ে এখন করছেন।
  • দুইজন একসাথে আসেন, তাই বুঝা যায় যে তারা আগে পরস্পরের কাছে তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন এবং এই কৌশল নিয়ে আলোচনা করে তা করতে রাজি হয়েছেন। হয়তো তারা অনুভব করেন যে একজন নিজের জন্য পদ চাওয়ায় স্বার্থপরতা বেশি প্রকাশিত, তার চেয়ে দুইজন দাবি করতে গেলে আর একটু ভাল হয়।
  • মথি আমাদের জানান যে তারা তাদের দাবি একজন মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেন: তাদের মা। একজন ভাল মা যদি তার দুইজন ছেলের জন্য ভাল কিছু চান, তাকে কে না বলতে পারে? এতে আরো পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে ঘটনাটি পরিকল্পিত ও কৌশলী ছিল।
  • কেন মার্ক মাকে উল্লেখ করেন না? কারণ বিষয়টি একই হয়ে দাঁড়ায়, সরাসরি হোক বা মায়ের মাধ্যমে হোক: দুইজনই লোভ করে কৌশল করছেন। তাদের চিন্তা ভুল, তাদের মায়ের চিন্তাও ভুল।
  • যোহন ও যাকোব ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী, তারা সক্রিয়ভাবে ও পরিকল্পিতভাবে নিজের ভূমিকা ও উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে চান। তারা ‘ক্ষমতার লড়াই’ জানেন, তারা জানেন কিভাবে রাজনৈতিক খেলা করতে হয়।
  • তারা কেন মনে করেন এই ধরণের দাবি তারা করতে পারেন? হয়তো কারণ তারা প্রথম শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন, যীশু তাদের বিশেষ ঘটনার সময়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন (যায়ীরের কন্যাকে জীবনে ফিরে আনা, রূপান্তর), যীশুর প্রতি তাদের আনুগত্য তারা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেছেন (শমরীয় গ্রামের উপরে আগুন চাওয়া), তারা ‘অভ্যন্তরীণ বৃত্ত’, তারা যীশুর সবচেয়ে কাছের লোক, যোহন বিশেষভাবে।
  • যোহন ও যাকোব প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিন্তা করেন এবং অন্যদের চেয়ে সুবিধা পাওয়ার মনোভাব দেখান। কিন্তু বলতে হয় যে অন্য শিষ্যদের চিন্তাও কোনোভাবে ভিন্ন ছিল না। তাদের রাগের প্রতিক্রিয়া থেকে তা প্রকাশিত হয়।
  • যোহন ও যাকোব যা মনে করেন তা অধিকাংশ যিহূদীরাও মনে করে: মশীহ অত্যাচারী ও দেবতাপূজারী রোমীয়দের পরাজিত করবেন ও তাড়াবেন এবং তিনি একটি জয়ী ও ধার্মিক যিহূদী রাজ্য স্থাপন করবেন।
  • যোহন ও যাকোবের পদ-মর্যাদা পাওয়ার দাবি থেকে বুঝা যায় যে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস আছে যীশু শীঘ্রই পরাক্রমে তাঁর রাজ্য স্থাপন করবেন। – যীশু আসলে তা-ই করেন, যদিও তিনি তা ভিন্নভাবে করেন।

মার্ক ১০:৩৫ “গুরু, আমাদের ইচ্ছা এই যে, আমরা যা চাইব আমাদের জন্য আপনি তা-ই করবেন।”

  • তারা দাবি প্রকাশ করার আগে নিশ্চয়তা চান যে, যীশু তাদের দাবি পূর্ণ করবেন (‘একটি খালি চেকে সই করা’)। যীশুর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বিশ্বাস আছে বলে তারা এই অগ্রিম নিশ্চয়তা পেতে চান।
  • তাদের কথাটিতে আরো বুঝা যায় যে পদ-মর্যাদা চাওয়ার দাবি নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা লজ্জা কাজ করে, তারা বিষয়টি সরাসরি বলতে চান না, তাদের ভাল লাগে না বরং একটু সংকোচ বোধ হয়। তারা ভালই জানেন যে অন্যরা তা শুনে খুশি হবে না।
  • একটু লজ্জা লাগলেও তারা এগিয়ে যান। তাদের পদ-মর্যাদা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এত বেশি যে তারা তাদের লজ্জা বা সংকোচ অতিক্রম করেন।

মার্ক ১০:৩৫ “গুরু, আমাদের ইচ্ছা এই যে, আমরা যা চাইব আমাদের জন্য আপনি তা-ই করবেন।”

  • তারা দাবি প্রকাশ করার আগে নিশ্চয়তা চান যে, যীশু তাদের দাবি পূর্ণ করবেন (‘একটি খালি চেকে সই করা’)। যীশুর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বিশ্বাস আছে বলে তারা এই অগ্রিম নিশ্চয়তা পেতে চান।
  • তাদের কথাটিতে আরো বুঝা যায় যে পদ-মর্যাদা চাওয়ার দাবি নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা লজ্জা কাজ করে, তারা বিষয়টি সরাসরি বলতে চান না, তাদের ভাল লাগে না বরং একটু সংকোচ বোধ হয়। তারা ভালই জানেন যে অন্যরা তা শুনে খুশি হবে না।
  • একটু লজ্জা লাগলেও তারা এগিয়ে যান। তাদের পদ-মর্যাদা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এত বেশি যে তারা তাদের লজ্জা বা সংকোচ অতিক্রম করেন।

 

মার্ক ১০:৩৬ যীশু বললেন, “তোমাদের জন্য আমি কি করব? তোমরা কি চাও?”

  • যীশু তাদের প্রশ্ন বা অনুরোধটি অগ্রাহ্য করেন না। কিভাবে তা কৌশলে উপস্থাপনা করা হয় (মায়ের দ্বারা ও অগ্রিম নিশ্চয়তা চাওয়া) তা নিয়েও তিনি আপত্তি উঠান না।
  • কিন্তু যীশু অগ্রিম নিশ্চয়তাও দিতে রাজি না। তিনি মাত্র জানতে চান তারা কি চান।
  • কোনো আবেগপ্রবণ চাপ, কোনো প্ররোচনা, কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে, ‘না’ বললে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে’, মাকে ‘না’ বলা যায় না ইত্যাদি – যীশু এই ভিত্তিতে তাঁর উত্তর বা সিদ্ধান্ত করেন না। বরং অনুরোধ বা দাবি আসলে কি, এই ভিত্তিতে তিনি তা করেন।
  • কে চাচ্ছে বা কিভাবে চাওয়া হচ্ছে, তা দেখে যীশু উত্তর দেন না বরং কি চাওয়া হচ্ছে, তা অনুসারে।

 

মার্ক ১০:৩৭ “তাঁরা বললেন, “আপনি যখন মহিমার সংগে রাজত্ব করবেন তখন যেন আমাদের একজন আপনার ডানপাশে ও অন্যজন বাঁপাশে বসতে পারে।” (মথি ২০:২১ ‘আপনার রাজ্যে‘).

  • অবশেষে তারা দাবি করে ফেলেন: তারা যীশুর রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা, নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও উঁচু ধরণের মর্যাদা চান।
  • আসলে তারা যীশুর পাশাপাশি সর্বোচ্চ পদগুলি দাবি করেন, সম্মানের পদ, রাজত্ব, যীশুর প্রধান প্রতিনিধি হিসাবে। এটি কোনো সামান্য বা সাধারণ দাবি নয়, এটি হল অহংকারী ও আত্ম-কেন্দ্রিক দাবি।

মার্ক ১০:৩৮ “যীশু বললেন, “তোমরা কি চাইছ তা জান না। যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খেতে যাচ্ছি তাতে কি তোমরা খেতে পার? কিম্বা যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করতে যাচ্ছি তা কি তোমরা গ্রহণ করতে পার?”

  • যীশুর উত্তর অনেক ভিন্ন: তারা নীল আকাশ দাবি করেছেন, যীশু বাস্তবতায় উত্তর দেন। তারা সম্পর্ক ব্যবহার করে আবেগীয়ভাবে চাপ দিচ্ছেন, যীশু তাদের উপর বিরক্ত হন না, তাদের না বলতে বা অখুশি করতে ভয় পান না, পদ-মর্যাদার উপর তাদের যে লোভ যীশু নিজের সুবিধার জন্যও ব্যবহার করেন না।
  • যীশু তাদের পদ-মর্যাদা, রাজত্ব করা ও নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা দেখে তাদের ধমক দেন না, বরং তিনি দেখান এই ধরণের উঁচু নেতৃত্ব বা রাজত্ব করার ক্ষমতার জন্য কত চরিত্র, বিশ্বস্ততা, সেবাও ত্যাগস্বীকার দরকার হবে। যীশু যুক্ত করেন যা তারা যুক্ত করেন নি, তাই তিনি বলেন “তোমরা কি চাইছ তা জান না”। আসলে। তাই তো।
  • তারা পদ-মর্যাদা, ক্ষমতা, সম্মান, প্রভাব ও সুবিধার কথা চিন্তা করেন, কিন্তু যীশু তাদের দেখান এই উঁচু ধরণের নেতৃত্ব মানে কি: কত দায়িত্ব, কত শর্ত, চমৎকার চরিত্রের কত প্রয়োজন ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ কত আবশ্যক। তারা পদ চান, কিন্তু দায়িত্ব চান না। যীশু উত্তরে বলেন যে ঈশ্বরের রাজ্যে এই দুইটি বিষয় সব সময় যুক্ত আছে। ‘দায়িত্ব ছাড়া পদ-মর্যাদা’ বলতে ঈশ্বরের রাজ্যে কিছু নেই।
  • যীশু নেতৃত্বকে কিসের সাথে যুক্ত করেন? যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খেতে যাচ্ছি … রূপকটির অর্থ হল স্বার্থহীনতা, বাধ্যতা, কষ্টভোগ মেনে নেওয়ার প্রস্তুত, আত্ম-ত্যাগ, এমন কি জীবন দেওয়া।
  • “যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করতে যাচ্ছি তা কি তোমরা গ্রহণ করতে পার?” রূপকটির অর্থ কি? বাপ্তিস্ম শব্দের অর্থ হল ‘ডুবে যাওয়া, সম্পূর্ণ জলে সিক্ত করা’। এখানে জল কিন্তু ‘কষ্টভোগ’ বা ‘যন্ত্রণা ভোগ করা’ বুঝায়।
  • যীশু কিছু দিন পরে গেৎশিমানী বাগানে প্রার্থনায় এই একই রূপক নিজের বিষয়ে ব্যবহার করবেন (মথি ২৬:৩৯, মার্ক ১৪:৩৬)। ইতিমধ্যে যীশু তাঁর ক্ষ্টভোগ ও মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী দিতে লাগলেন (মার্ক ৮:৩১, ৯:৩০-৩২) যদিও শিষ্যরা তা শুনতে বা বুঝতে রাজি না।
  • যীশু বলেন যে যোহন ও যাকোব এই ধরণের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত নন, তারপরেও তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন: “তা কি তোমরা গ্রহণ করতে পার?” তিনি তাদের মনে চিন্তা জাগাতে চান, যেন তারা যা চেয়েছেন তা নিয়ে আরও অনেক গভীরভাবে চিন্তা করেন।

 

মার্ক ১০:৩৯ “তাঁরা বললেন, “হ্যাঁ, পারি।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খাব তোমরা অবশ্য তাতে খাবে, আর যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করব তা তোমরাও গ্রহণ করবে”

  • হয়তো তারা এখনও বোঝেন না তাই এই বড় কথা বলে ফেলেন (“তোমরা কি চাইছ তা জান না”) অথবা তারা এখন নিজের কৌশলে লজ্জা পাচ্ছেন কিন্তু তা থেকে বের হওয়ার পথ না দেখে আগাতে থাকেন।

 

মার্ক ১০:৩৯ “তাঁরা বললেন, “হ্যাঁ, পারি।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খাব তোমরা অবশ্য তাতে খাবে, আর যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করব তা তোমরাও গ্রহণ করবে”

  • না বুঝে দাবি করা থেকে বা লজ্জা লাগলেও, যীশু তাদের কথা দয়ার সঙ্গে ও খুব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন।
  • কিন্তু যীশুর কথা ভবিষ্যদ্বাণীও: যোহন ও যাকোব আসলে ভবিষ্যতে ঈশ্বরের জন্য নিজের জীবন দান করবেন, তারা যীশুর অনুসরণকারী হয়ে কষ্টভোগ করবেন।
  • ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে পূর্ণ হয়, তা খেয়াল করুন: যাকোব ৪৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প ১-এর হাতের দ্বারা শিরশ্ছেদ হয়ে শহীদ মৃত্যুবরণ করবেন (প্রেরিত ১২:১)। তিনি হলেন যীশুর এগার শিষ্যদের মধ্যে প্রথম শিষ্য যিনি শহীদ মৃত্যুবরণ করেন (যদিও স্তিফানের শহীদ মৃত্যু আরো আগে)।
  • কিন্তু যাকোবের ভাই যোহন হলেন যীশুর এগারজন শিষ্যদের মধ্যে একমাত্র শিষ্য, যিনি বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন এবং সাধারণ মৃত্যুবরণ করেন। মণ্ডলীর ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে যোহন কমবেশি ৯৬-১০০ খ্রিষ্টাব্দে ইফিষ শহরে সাধারণভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
  • যদিও দুই ভাইয়ের জীবন এত ভিন্ন, যীশু দুইজনের সম্বন্ধে-ই বলেন “যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খাব তোমরা অবশ্য তাতে খাবে, আর যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করব তা তোমরাও গ্রহণ করবে”
  • এই কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ঈশ্বরের চোখে শহীদ মৃত্যুবরণ এবং একটি বিশ্বস্ত দীর্ঘদিনের বাধ্যতার জীবন উভয় একইভাবে মূল্যবান। ঈশ্বর শহীদ মৃত্যুবরণকে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ততা ও ত্যাগস্বীকারের জীবনের চেয়ে বড় বলেন না। আমাদের কারও একটি শহীদ মৃত্যু খোঁজা দরকার নেই, যদিও কিছু বিশ্বাসীরা ঈশ্বরকে এইভাবে গৌরবান্বিত করবেন।

মার্ক ১০:৪০ “কিন্তু আমার ডান বা বাঁপাশে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই। ঐ জায়গাগুলো যাদের জন্য ঠিক করা আছে তারাই তা পাবে।”

  • যীশু তাদের দাবি পূর্ণ করেন না। তিনি বলেন যে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেবেন না। তাহলে কে নেবেন এই সিদ্ধান্ত? হয়তো স্বর্গস্থ পিতা? অথবা সিদ্ধান্ত মানুষের জীবন অনুসারে নেওয়া হবে?
  • যীশু তাঁর ভূমিকা, তাঁর কাজ ও তাঁর অধিকার জানেন, তিনি তাঁর অধিকারের সীমানাও জানেন। ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে আছে একতা, সুসম্পর্ক ও শান্তি। তাদের মধ্যে কোনো ভূমিকা দখল বা নিজেকে প্রমাণিত করার আগ্রহ নেই।
  • “যাদের জন্য ঠিক করা আছে” এর অর্থ কি? হয়তো কারও জন্য একটি বিশেষ অনুগ্রহ? বা ঈশ্বরের পছন্দ? বা মানুষ কি ধরণের জীবন-যাপন করেছে, তার ফলাফল?

মার্ক ১০:৪১ “বাকী দশজন শিষ্য এই সব কথা শুনে যাকোব ও যোহনের উপর বিরক্ত হলেন।”

  • যাকোব ও যোহনের পদ দখল করার কৌশল ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিকল্পনা যার ফলে অন্য শিষ্যরা কম গুরুত্বপূর্ণ পদ-মর্যাদা ও ভূমিকা পায়। তাই অবাক লাগার কিছু নেই যে অন্য শিষ্যরা বিরক্ত হয়ে যান।
  • হতে পারে তাদের রাগের আর একটি কারণ হল যে যোহন ও যাকোব তাদের চেয়ে অনেক চালাক ও তাদের আগেই এই বুদ্ধি করেছেন।
  • হতে পারে তাদের রাগ হল লজ্জা ঢেকে দেওয়ার একটি রাগ, কারণ তারাও মনে মনে একই ধরণের চিন্তায় ব্যস্ত ছিলেন। এখন যোহন ও যাকোব ধরা পড়ল কিন্তু একইভাবে বাকি দশজনও ধরা পড়তে পারত।
  • তাদের রাগ দেখে আর একটি বিষয় বুঝা যায়: বাকি দশজন এবং যাকোব ও যোহনের সবার চিন্তার ধরণ একই: তারা সকলে মনে করেন যে পদ-মর্যাদা, ভূমিকা ও নেতৃত্ব হল ত্যাগস্বীকার বা সেবার উপরে নির্ভরশীল নয়, তা চরিত্র-ব্যবহারের বিষয় নয় বরং তা হল ক্ষমতার লড়াই ও রাজনৈতিক চালাকির বিষয়।

মার্ক ১০:৪২ “তখন যীশু সবাইকে একসংগে ডেকে বললেন, “তোমরা জান যে, অযিহূদীদের শাসনকর্তারা অযিহূদীদের প্রভু হয় এবং তাদের নেতারা তাদের উপর হুকুম চালায়।”

  • যীশু তাদের লজ্জা, রাগ ও বিরক্তি ব্যবহার করেন তাদের একটি অতি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখানোর জন্য। আসলে এখন বিষয়টি উঠে আসলেও সবার মনে এই একই বিষয় বহুদিন ধরে চলছিল। শিষ্যদের মধ্যে কে সবচেয়ে বড়, এই তর্কাতর্কি মাত্র কিছুদিন আগে ঘটেছিল (মার্ক ৯:৩৩-৩৭)।
  • যীশু ভাল জানেন যে তাদের সবার মনে এই একই ভুল চিন্তা চলছে, তাই তিনি সবাইকে শিক্ষা দিতে শুরু করেন। তাতে যীশু তাদের মধ্যে পার্থক্য কমান: যারা ‘চিন্তা অনুসারে কাজ করে ফেলেছেন’ (যাকোব ও যোহন) এবং যারা মাত্র মনে মনে চিন্তাটি করেছিলেন (দশজন শিষ্যরা)। মূল বিষয় হল হৃদয়ের একটি ভুল মনোভাব যা সবার মধ্যে উপস্থিত।
  • এই কথা দিয়ে যীশু যাকোব ও যোহনকে চেতনা দেন কারণ তারা ঠিকই স্বপ্ন দেখেছিলেন কিভাবে তারা অন্যদের “উপর হুকুম চালায়”
  • কিন্তু এই কথা দিয়ে যীশু একই সময়ে অন্যদেরকেও চেতনা দেন যে তাদের ‘উপযুক্ত রাগ’ তেমন উপযুক্ত নয় এবং তাতে প্রকাশ পায় যে তাদের হৃদয়ে ও মনে ঠিক একই ভুল চিন্তা চলছে।
  • যীশু এখানে একটি পাপ-আক্রান্ত জগতের বাস্তব বর্ণনা দেন: মানুষ মানুষকে দমন করবে ও তা নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সাধারণ ও প্রয়োজনীয় মনে করবে। ঈশ্বর ছাড়া মানবীয় হৃদয় এমন।

মার্ক ১০:৪৩-৪৪ “কিন্তু তোমাদের মধ্যে তা হওয়া উচিত নয়, বরং তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায় তাকে তোমাদের সেবাকারী হতে হবে, ৪৪ আর যে প্রথম হতে চায় তাকে সকলের দাস হতে হবে। ৪৫ মনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।”

  • বাংলা অনুবাদে: “তা হওয়া উচিত নয়” … কেরী: “তোমাদের মধ্যে সেইরূপ নয়”: সেইরূপ নয়, সেইরূপ না হোক, সেইরূপ হওয়া উচিত নয়।
  • যীশু একটি সম্পূর্ণ অন্য ধরণের নেতৃত্ব দাবি করেন: স্বার্থহীন সেবা ও অন্যদের প্রাধান্য দেওয়া। আত্ম-গুরুত্ব, আত্ম-অভিলাষ বা স্ব-রাজ্যাভিষেক বা দমন চলবে না।

মার্ক ১০:৪৫ “মনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।”

  • যে নেতৃত্বের ধরণ যীশু দাবি করেন সে ধরণের নেতৃত্ব ঈশ্বর সব সময় দান করেন। যীশুর জীবনে তা সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
  • যীশু এমন কিছু দাবি করেন না বা করতে আদেশ দেন না যা তিনি নিজে করতে রাজি না। যীশু এই স্বার্থহীন ও ত্যাগস্বীকারের নেতৃত্বের আদর্শ সম্পূর্ণভাবে দেখিয়েছেন, এমন নেতৃত্ব যা অন্যদের জীবন পরিবর্তন করে।
  • সেবার কথা উল্লেখ করা দ্বারা যীশু তার নিজের অধিকার, রাজ্য বা রাজত্ব করার অধিকার কমান না। শিষ্যদের নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও তিনি কোনোভাবে নিরুৎসাহিত করেন না। কিন্তু যীশু নেতৃত্বের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত করে ফেলেন ও ঈশ্বরের ধরণের নেতৃত্ব ব্যাখ্যা করেন।
  • যখন যীশু পৃথিবী ছেড়ে স্বর্গে চলে যান তখন তিনি পবিত্র আত্মা রেখে যান, এবং সাথে এগারজন পরিবর্তিত শিষ্য। এই এগারজন পরে পৃথিবীকে পরিবর্তন করে ফেলে। পবিত্র আত্মার পরিচালনায় তাদের লেখা হয়ে যায় অধিকারগত বাইবেল। তাদের কাজ হয়ে যায় ইতিহাস। তার এমন নেতৃত্ব দেবেন যার ইতিবাচক প্রভাব আজ পর্যন্ত শেষ হয় নি।
  • আমি কি সঠিক নেতৃত্বের জন্য দাম দিতে রাজী অথবা আমি কি এখনও ‘বড় সাহেব’ হতে চাই?