যোগাযোগ ১০ – ঈশ্বরের কথা বলার ধরণ: কয়িন

বাইবেলের শুরুতে আমরা দুই ভাইয়ের একটি ছোট গল্প পাই: কয়িন এবং হেবল। যদিও ঘটনাটি অতি দুখঃজনক, তার মধ্যে ঈশ্বর সম্বন্ধে – এবং মানুষ সম্বন্ধে – অনেক শিক্ষণীয় বিষয় পাওয়া যায়।

আদি ৪:১-৫ “আদম তাঁর স্ত্রী হবার কাছে গেলে পর হবা গর্ভবতী হলেন, আর কয়িন নামে তাঁর একটি ছেলে হল। তখন হবা বললেন, “সদাপ্রভু আমাকে একটি পুরুষ সন্তান দিয়েছেন।’ ২ পরে তাঁর গর্ভে কয়িনের ভাই হেবলের জন্ম হল। হেবল ভেড়ার পাল চরাত আর কয়িন জমি চাষ করত। ৩ পরে এক সময়ে কয়িন সদাপ্রভুর কাছে তার জমির ফসল এনে উৎসর্গ করল। ৪ হেবলও তার পাল থেকে প্রথমে জন্মেছে এমন কয়েকটা ভেড়া এনে তার চর্বিযুক্ত অংশগুলো উৎসর্গ করল। সদাপ্রভু হেবল ও তার উৎসর্গ গ্রাহ্য করলেন, ৫ কিন্তু কয়িন ও তার উৎসর্গ গ্রাহ্য করলেন না। এতে কয়িনের খুব রাগ হল আর সে মুখ কালো করে রইল।”

  • হয়তো হবা মনে করেছিলেন যে কয়িন হবে সে প্রতিজ্ঞাত উদ্ধারকর্তা (আদি ৩:১৫)। হয়তো হবা কয়িনকে এ কারণে (অথবা প্রথম সন্তান হওয়ার কারণে) প্রাধান্য দেন।
  • কয়িন চাষ করেন যেমন ঈশ্বর করতে বলেছিলেন (আদি ২:১৫), হেবল রাখাল হয়ে যান। যদিও রাখাল হওয়ার সরাসরি কোন আদেশ নেই, তা হল পৃথিবী নিজের অধীনে আনার একটি উপযুক্ত পদ। ঈশ্বরের আইন সরু কোনো আদেশ নয়।
  • দুই ভাই ঈশ্বরকে ঈশ্বর হিসাবে স্বীকার করেন ও তাদের হাতের কাজের ফল থেকে উৎসর্গ দেন।
    কেন হেবলের উৎসর্গ গ্রহণযোগ্য এবং কয়িনের উৎসর্গ গ্রহণযোগ্য নয়?
  • একটি সম্ভাব্য উত্তর হল: কারণ উৎসর্গ পশুর রক্তের উৎসর্গ হতে হয়, শস্য উৎসর্গ নয় যা হল মোশির উৎসর্গ পদ্ধতি ও আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে যীশুর মৃত্যুর একটি অগ্রিম ছবি।
  • এই কথা হয়তো ঠিক, কিন্তু আদি ২:১৫ পদ চাষকে অবশ্যই অনুমোদিত করে এবং নিজের হাতের কাজ থেকে উৎসর্গ দিতে চাওয়া হল উপযুক্ত একটি কাজ। তা ছাড়া মোশির আইন-কানুনে নানা ধরণের শস্য উৎসর্গ দেওয়ার আদেশ পাওয়া যায় (গণনা ২৮)। তা ছাড়া অজ্ঞতা বা ‘না জানা’ পাপ নয়।
  • অন্য একটি উত্তর হতে পারে: কারণ দুই ভাইয়ের মনোভাব ভিন্ন ছিল: ‘যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না?’ (আদি ৪:৭, কেরী অনুবাদ)। তাই ঈশ্বর বলেন যে কয়িন সদাচরণ করেন নি, ভাল করেন নি, তার মনোভাব ঠিক ছিল না।
  • যখন তার উৎসর্গ গ্রহণ করা হয় না, কয়িনের প্রতিক্রিয়া হল রাগ। তিনি জিজ্ঞাসা করেন না, কেন তার উৎসর্গ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ঈশ্বরকে অন্বেষণ করেন না, তিনি কোনো কারণ শুনতে রাজি না এবং ঈশ্বরের চিন্তা বুঝতে আগ্রহী নন।
  • কয়িন মন ফিরান না, মাফ চান না, তার মনোভাব পরিবর্তন করেন না, গল্প থেকে কিছু শেখেনও না।
  • তিনি রাগ করেন। তাতে কি প্রকাশ পায়? কয়িন মনে করে তার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে, বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। কিন্তু তা আসলে ঠিক কিনা, তা তিনি পরীক্ষা করে দেখতে রাজি নন। তিনি কোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নন এবং মনে করেন যে ‘ঈশ্বরই সমস্যা’। ঈশ্বর তার প্রতি অন্যায় করছেন, তাই তার রাগ করার অধিকার আছে। আমরা সবাই এই মনোভাব নিজের জীবন থেকে যথেষ্ট জানি।

 

১ যোহন ৩:১২ “আমরা যেন কয়িনের মত না হই। কয়িন শয়তানের লোক ছিল এবং তার ভাইকে সে খুন করেছিল। কেন সে তাকে খুন করেছিল? কারণ সে মন্দ কাজ করত, আর তার ভাই ন্যায় কাজ করত।”

  • যোহন পরিষ্কারভাবে কয়িনের মনোভাব ও আচরণের দোষ ধরেন, এমন না যে তিনি ‘জানতেন না’ বা যে ‘ঈশ্বর অন্যায় করেছেন’। কয়িন পাপ করেছেন, তিনি তার ভাইয়ের ভাল মনোভাব বা আচরণ দেখে বিরক্ত হয়েছেন।

আদি ৪:৬ “এই অবস্থা দেখে সদাপ্রভু কয়িনকে বললেন, “কেন তুমি রাগ করেছ আর কেনই বা মুখ কালো করে আছ?”

  • ঈশ্বর কয়িনের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন, কয়িন ঈশ্বরের কাছে আসেন না। ঈশ্বর চেষ্টা করেন তাকে যোগাযোগে আনার জন্য, তার চিন্তা ও চেতনা জাগানোর জন্য, অথবা কমপক্ষে ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করার জন্য। অন্তরে ‘আলাদা হওয়ার’ চেয়ে বা কিছু না বলার চেয়ে অভিযোগ করা বা ঈশ্বরের দোষ ধরেই ভাল।
  • ঈশ্বর বাস্তবতা বর্ণনা করেন: রাগ এবং কালো মুখ করা। যদিও কয়িনের যথেষ্ট খারাপ লাগছে, সে হয়তো বুঝেন নি যে তার আবেগ আসলে রাগ। ঈশ্বর তাকে তা বুঝতে, স্বীকার করতে ও তা নিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করেন।
  • ঈশ্বরের প্রশ্নের উদ্দেশ্য হল কয়িনকে সৎ হতে ও নিজেকে খুলতে সাহায্য করা, যেন তিনি বুঝতে পারেন কেন তার এবং ভাইয়ের উৎসর্গ ভিন্ন।

 

আদি ৪:৭ক “যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না?’ (কেরী)। ‘যদি তুমি ভাল কাজ কর তাহলে কি তোমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে না?”

  • ঈশ্বর পরিষ্কারভাবে বলেন সমস্যাটি কোথায়: সমস্যা এই নয় যে ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন বা যে তাঁর পছন্দ এক এক দিন এক এক রকম। মোট কথা ঈশ্বর সমস্যা নন, বরং কয়িনই সমস্যা, তার মনোভাব, তার আচরণই সমস্যা।
  • ঈশ্বর বলেন কেন কয়িনের উৎসর্গ গ্রহণযোগ্য ছিল না: সে সদাচরণ বা ভাল করেন নি, তার মনোভাব এবং হয়তো তার উদ্দেশ্য ঠিক ছিল না।
  • যে সত্য ও প্রকাশ কয়িনের পাওয়া প্রয়োজন, তা ঈশ্বর তাকে দেন।
  • কথাটি হল সান্ত্বনার কথা: কয়িন কিছু করতে পারেন, পথ খোলা আছে, তার ভুল মনোভাব স্বীকার করে নম্রতার সঙ্গে ঈশ্বরের কাছে আসলে ঈশ্বর তাকে অবশ্যই গ্রহণ করবেন। মন ফিরানো সম্ভব, ক্ষমা করা হবে, ঈশ্বর তো ঠিক এই কারণে কয়িনের সাথে যোগাযোগ করলেন যেন তিনি ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসেন।
  • কথাটি হল চ্যালেঞ্জের কথা: ঈশ্বরের বুঝায় যে কয়িন ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বিশ্বাস করতে পছন্দ করেছেন: তার হিংসার কোনো কারণ নেই, এখানে অপমানিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, ঈশ্বর তাকে অগ্রাহ্য করেন নি, তার বিরুদ্ধে অন্যায়ও করেন নি, কয়িনের এখানো ‘নিজের সম্মান রক্ষা করার’ মত কিছু নেই। ঈশ্বর কয়িনের মিথ্যা চিন্তাকে ‘সব অন্যদের দোষ’ বা ‘সব ঈশ্বরের দোষ’ চ্যালেঞ্জ করেন। তা শুনতে কয়িনের ভাল লাগবে না, কিন্তু তা শোনা আবশ্যক।

আদি ৪:৭খ “কিন্তু যদি ভাল কাজ না কর তবে তো পাপ তোমাকে পাবার জন্য তোমার দরজায় এসে বসে থাকবে; কিন্তু তাকে তোমার বশে আনতে হবে।’ কেরী: ‘তুমি তাহার উপরে কর্তৃত্ব করিবে।”

  • ঈশ্বর কয়িনকে দেখান যে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব, যে তার সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভরশীল এবং যে তার সিদ্ধান্তের ফলাফল আছে।
  • ঈশ্বর এখানে কয়িনের সে ‘বেচারা ভাব’ কেটে দেন: তিনি দেখান যে কয়িন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, কিন্তু যে তা হবে তারই সিদ্ধান্ত। কয়িন দাবী করতে পারবেন না যে তার আচরণ হল ‘ঈশ্বরের অন্যায়ের সরাসরি ফলাফল’। কয়িনের পাপকে বশে আনতে হবে বা তার উপর কর্তৃত্ব করতে হবে। যেহেতু ঈশ্বর তা আদেশ করেন, তা তার পক্ষে সম্ভব: কর্তৃত্ব কোরো! বশে আনো!
  • ‘পাপ তোমার দরজায় এসে বসে থাকে’ এই রূপক আরো দেখায় যে তার সে উৎসর্গ ও তার সে মনোভাব যদিও গ্রহণযোগ্য ছিল না, তা এখনও পাপ নয় বা ‘বড় সমস্যা’ নয়। কিন্তু কিভাবে কয়িন এখন ঈশ্বরের কথায় সাড়া দেবেন, তা আসলে সমস্যা হতে পারে। ঈশ্বর কয়িনকে উৎসাহিত করেন: এমন নয় যে ‘সব হারানো’, ‘আর সুযোগ নেই’ বা ‘আর উদ্ধার সম্ভব নয়’, বরং সব কিছু এক মুহূর্তে পিছানো যায়। ঈশ্বর তাকে তা করতে নি মন্ত্রণ করেন।
  • ঈশ্বর কিন্তু একটি কঠোর সাবধাণবাণীও দেন: যদি কয়িন তার সে চিন্তা ধরে রাখেন ও তার সে পথে আগান, তবে তিনি নিজেকে ‘পাপের পথে’ সমর্পিত করবেন, সে পাপে নিজেকে ছেড়ে দেবেন, সে পাপকে তার প্রভু বানাবেন।


আদি ৪:৮ “এর পর একদিন মাঠে থাকবার সময় কয়িন তার ভাই হেবলের সংগে কথা বলছিল, আর তখন সে হেবলকে আক্রমণ করে মেরে ফেলল।”

  • কয়িনের সাড়া – একজন নির্দোষ ভাইকে খুন – দেখায় তিনি সত্যের চেয়ে মিথ্যা ও নম্রতার চেয়ে অহংকার পছন্দ করেছেন: তিনি কথা শুনবেনও না, মানবেনও না।
  • কয়িন মনে করেন ঈশ্বর তার বিরুদ্ধে অন্যায় করেছেন, তাকে কারণ ছাড়া আঘাত করা হয়েছে। অন্যায় ভাব ধরে রেখে তিনি আর অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেন: একজন নির্দোষ ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন এমন কিছুর জন্য যা হেবলের ভুলও নয়। হেবল কিছু করেন নি। ঈশ্বরের দয়ালু ধমককে যদি অন্যায় বলা হয়, তবে কয়িনের খুন কি? অনেক বার ‘অন্যায়, অন্যায়’ ডেকে আমরা অন্যায়কারী হয়ে যাই।
  • হিংসা বিপজ্জনক। হিংসা আমাদের দৃষ্টি এমন বিকৃত করে যে আমাদের চিন্তা আর বাস্তব থাকে না। হিংসা আমাদের প্রতারণা করবে। পাপ আমাদের শাসন করবে যদি আমরা নিজের মন হিংসায় ছেড়ে দেই। সব সময় হিংসা করার কাউকে বা হিংসা করার বিষয় পাব। সব সময় আর একজন থাকবে যার আমার চেয়ে বেশি আছে।
  • কয়িন যা করেন তা হল ইচ্ছাকৃত, সক্রিয়, পরিকল্পিত খুন। এমন কোনো ‘পরিস্থিতির বিষয়’ নয় যাতে তার দোষ কমায়।
  • কিভাবে কয়িন বিরক্তির কারণে একেবারে খুনের পর্যায় চলে যান? হতে পারে তা এক মুহূর্তে হয় নি, বরং তিনি খারাপ চিন্তা মনে ধরে রেখে, ঈশ্বরের উপযুক্ত আপত্তি ও আশার পথ অস্বীকার করতে করতে, আত্ম-মায়াদয়া করতে করতে, আঘাতের ভাব ধরে রাখতে রাখতে তা হল। ‘আঘাত পেলাম’, ‘আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হচ্ছে’ চিন্তা ধরে রেখে সে নিজেকে ‘শিকার’ বা ‘বেচারা’ মনে করেন। কয়িন তার মন ও চিন্তা-ভাবনা হিংসায়, অহংকারে ও তিক্ততায় ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি কোনো কিছু বশে আনেন না, পাপের উপরে কর্তৃত্বও করেন না, তাই উল্টোদিকে তার ভুল চিন্তা এখন তাকে কর্তৃত্ব করছে।
  • কয়িনের খুন দেখায় যে তিনি তার আচরণ ও তার চিন্তা-ভাবনার জন্য কোনো দায়িত্ব নেন না। খুন করা মানে: ‘দোষ আমার নয়, দোষ তোমার’, ‘আমার প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার আছে।’


আদি ৪:৯ “তখন সদাপ্রভু কয়িনকে বললেন, “তোমার ভাই হেবল কোথায়?” কয়িন বলল, “আমি জানি না। আমার ভাইয়ের দেখাশোনার ভার কি আমার উপর?”

  • ঈশ্বর কয়িনের সিদ্ধান্ত বা আচরণ জোর করে থামান না, খুন এগিয়ে যায়। ঈশ্বর কয়িনের পিছনে পিছনে গেছেন, তিনি যোগাযোগ করেছেন, যুক্তি, সাবধাণবাণী ও আশা দেখিয়েছেন কিন্তু তিনি তাঁর ক্ষমতা খাঁটিয়ে খুন করা প্রতিরোধ করেন না!
  • ঈশ্বর মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন এবং তিনি কষ্ট পেলেও তা ফেরত নেন না।
  • এই পদে আবারও ঈশ্বর সক্রিয়ভাবে কয়িনকে অন্বেষণ করেন ও তার সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি একটি চেতনা-দায়ক প্রশ্ন দিয়ে কয়িনকে তার অন্যায় বুঝতে ও স্বীকার করতে সাহায্য করেন যেন কয়িন অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা পেতে পারেন।
  • কয়িন সরাসরি মিথ্যা বলেন ‘জানি না’ যদিও সে ভালই জানতেন। কয়িন তাতে নিজের আচরণ, দোষ ও দায়িত্ব নেওয়া অস্বীকার করেন, এমন কি উল্টোভাবে ঈশ্বরকে চ্যালেঞ্জ করেন: সে দাবী করেন যে ‘আমার ভাইয়ের নিরাপত্তা আমার বিষয় নয়’।


আদি ৪:১০ ‘তখন সদাপ্রভু বললেন, “এ তুমি কি করেছ? দেখ, জমি থেকে তোমার ভাইয়ের রক্ত আমার কাছে কাঁদছে।’

  • ঈশ্বর এখন কয়িনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেন, কথা বলেন ও তাকে দোষী হিসাবে ধরেন: ‘তুমি কি করেছ?’। কয়িন শিকার নন, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সত্য অস্বীকার করেছেন, তিনি খুন করেছে। ঈশ্বর কয়িনকে তার সিদ্ধান্তের ও আচরণের বাস্তবতার সম্মুখীন হতে বাধ্য করেন।
  • ঈশ্বরের প্রশ্নতে “তুমি কি করেছ?” ঈশ্বর দুঃখ প্রকাশ করেন: এত বড় অন্যায় ও সর্বোচ্চ ক্ষতি! ঈশ্বর খুনের জন্য উপযুক্ত আবেগ প্রকাশ করেন, কিন্তু কয়িনের সেই আবেগ নেই।
  • ঈশ্বর তাঁর প্রশ্ন দ্বারা কয়িনকে তার দোষ দেখিয়ে দেন: ‘তুমি কি করেছ, তা বুঝ!’ সামান্য একটি বিষয়ের জন্য কয়িন খুন করেছেন। এমন কিছু যা সহজে সমাধান করা যেত তিনি সর্বোচ্চ অপরাধ এবং অপরিবর্তনীয় মন্দতা করেছেন।
  • “রক্ত আমার কাছে কাঁদছে।” হেবলের বিরুদ্ধে যে অন্যায় ঘটেছে, তা বাস্তব, তা মুছে দেওয়া যাবে না, তা চুপ করানো যাবে না যদিও হেবল আর কথা বলতে পারে না। হ্যাঁ ‘হেবলকে ফিরে আনা যাবে না’ কিন্তু যে অপরাধ ঘটল, তাও অস্বীকার করা যাবে না।
  • যদিও কয়িন মিথ্যা বলেছেন ও সব কিছু অস্বীকার করেছেন, বাস্তবতা কথা বলে: তদন্ত করে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়। কয়িনের সিদ্ধান্তের ফলাফল আছে। তার পাপের আচরণ দ্বারা একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে যা অস্বীকার করলেও আর সরানো যাবে না।


আদি ৪:১১-১২ “জমি যখন তোমার হাত থেকে তোমার ভাইয়ের রক্ত গ্রহণ করবার জন্য মুখ খুলেছে তখন জমির অভিশাপই তোমার উপর পড়ল। ১২ তুমি যখন জমি চাষ করবে তখন তা আর তোমাকে তেমন ফসল দেবে না। তুমি পলাতক হয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে।”

  • ঈশ্বর বলেন নি ‘আমি তোমাকে অভিশাপ দেব’ বরং “জমির অভিশাপই তোমার উপর পড়ল”। তা কি ভিন্ন? ঈশ্বরের অভিশাপ ‘বিরক্তির জন্য যোগ দেওয়া শাস্তি’ নয়, বরং ‘বাস্তব সিদ্ধান্তের বাস্তব ফলাফল’। যে মাটিকে নির্দোষ রক্ত খেতে বাধ্য করা হয়েছে, যে মাটিকে জোর করা হয়েছে, সে মাটি এখন দূষিত এবং উর্বর হতে অস্বীকার করবে।
  • এখানে মাটিকে প্রায় ‘ব্যক্তির মত’ দেখানো হয়, যেমন লেবীয় ১৮:২৮ পদেও দেখা যায়।
  • মানুষের পাপ বস্তু জগতকে প্রভাবিত করবে: চাষ করায় আর আগের মত সুবিধা হবে না, উর্বরতা কমে যাবে। মাটির উপরে বসবাস করা মানুষের পাপ এবং মাটির উর্বরতা এখানে যুক্ত করা হয়েছে। এই বিষয় পরে মোশির আইন-কানুনে আরো পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হবে।
  • “পলাতক হয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে”। তা উর্বরতা কমে যাওয়ার কারণে ঘটবে: চাষী কয়িন এখন এই মাটি থেকে আর সুবিধা পাবেন না, তাই সে এখন চাষের চেয়ে একটু চোরের মত শিকার ও যা পান তা জমানো দ্বারা বাঁচবেন।
  • “পলাতক হয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে” কথাটি রূপক অর্থেও দাঁড়ায়: কয়িনের চেতনা তার দোষ ধরবে, ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে।
  • সে এখন মানুষের জন্য বিপজ্জনক বলে তাকে মানব সমাজ থেকে বের করা হবে (বাবা-মা, ভাই-বোন ও তাদের বংশধরেরা)। কয়িন সবাইকে অবিশ্বাস করেন ও সবাই তাকে নিয়ে ভয় পান। সে তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে মানবীয় সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত, তার আর শান্তির স্থান নেই।
  • পাপকরার মাধ্যমে সব সম্পর্কগুলি আঘাত গ্রস্ত হয়: ঈশ্বরের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে, নিজের সঙ্গে ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক।


আদি ৪:১৩-১৪ “তখন কয়িন সদাপ্রভুকে বলল, “এই শাস্তি আমার সহ্যের বাইরে। ১৪ আজ তুমি আমাকে জমি থেকে তাড়িয়ে দিলে, যার ফলে আমি তোমার চোখের আড়াল হয়ে যাব। পলাতক হয়ে যখন আমি পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব তখন যার সামনে আমি পড়ব সে-ই আমাকে খুন করতে পারে।”“

  • ঈশ্বর ‘আচরণের ফলাফল’এর বিষয়ে কথা বলেছিলেন, কয়িন ‘বেশি কষ্টদায়ক শাস্তি’ নিয়ে কথা বলেন। যতজন নিজের দোষ স্বীকার করতে, দায়িত্ব নিতে ও মন ফিরাতে অগ্রাহ্য করে ততজন ঈশ্বরের আচরণ খারাপ চোখে দেখবে, ততজন ঈশ্বরের শাস্তি ‘অন্যায্য’ মনে করবে, ঈশ্বর অতি বেশি দাবী করেন, তা মনে করবে।
  • “আজ তুমি আমাকে জমি থেকে তাড়িয়ে দিলে” কয়িনের এই কথা আসলে ঠিক নয়, ঈশ্বর তাকে তাড়ান নি, তার নিজের আচরণ তাকে তাড়িয়েছে, কিন্তু তিনি তা বুঝতে রাজি নন।
  • কয়িন পাপ স্বীকার করেন না, মন ফিরান না, ক্ষমা চান না, কোনো দায়িত্ব নেন না। তিনি এখনও মনে করেন যে ঈশ্বরই হলেন সমস্যা।
  • কয়িন দুশ্চিন্তিত যে একজন তাকে খুন করতে পারে, খুনী এখন নিজের বিষয়ে খুনের ভয় পান। যেমন লেখক J.R.R. Tolkien বলেছিলেন: ‘যারা নিজেই বিশ্বস্ত নয় তারা অন্য কাউকে বিশ্বস্ত মনে করবে না।’ কয়িন এখানে খুনী হলেও এমন একটি প্রতিরক্ষা দাবী করেন যা তিনি তার নির্দোষ ভাইকে দিতে রাজি ছিলেন না। তাতে বুঝা যায় যে যদিও কয়িন নিজের কথা ঠিকই মনে করেন, আসলে তার চিন্তায় কোনো যুক্তি বা ন্যায্যতা নেই, শুধুমাত্র আছে জেদ ও স্বার্থপরতা।


আদি ৪:১৫-১৬ “তখন সদাপ্রভু তাকে বললেন, “তাহলে যে তোমাকে খুন করবে তার উপর সাতগুণ প্রতিশোধ নেওয়া হবে।” এই বলে সদাপ্রভু কয়িনের জন্য এমন একটা চিহ্নের ব্যবস্থা করলেন যাতে কেউ তাকে হাতে পেয়েও খুন না করে। ১৬ এর পরে কয়িন সদাপ্রভুর সামনে থেকে চলে গিয়ে এদনের পূর্ব দিকে নোদ নামে একটা দেশে বাস করতে লাগল।”

  • ঈশ্বর কয়িনকে আবারও দয়া দেন। ঈশ্বর এখানে কয়িনের সাথে এক মত: জীবন মূল্যবান, কয়িনের জীবনও মূল্যবান। ঈশ্বর তা অস্বীকার করবেন না।
  • ঈশ্বর কেন (পরে যেমন আইনে আদেশ দেবেন) কয়িনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়ন করেন না (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৮)?
  • একটি সম্ভাব্য কারণ হল: ঈশ্বর মানুষকে নিজে বিচার করার চেয়ে মানুষের হাতে সমর্পিত করবেন (আদি ৬:৯)। কিন্তু তিনি তা ভবিষ্যতে মাত্র বলবেন।
  • আরও একটি সম্ভাব্য কারণ হল: এই মুহূর্তে মানুষের হাত দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া মানে যে নিজের পরিবারই কয়িনকে বিচার করবে কিন্তু পরে আইন-কানুনে পরিষ্কারভাবে বলা হবে যে বিচার পরিবারের নয় বরং সরকারের (দ্বিতীয় বিবণ ২১:১৮-২১)।
  • কেন ঈশ্বর ‘৭ গুণ শাস্তির’ বিষয় বলেন? কেন ‘এক বার’ না, যেমন পরে আইন-কানুনে বলা হবে (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:২১)? আসলে পরে দেখা যায় যে ঈশ্বরের এই বিশেষ দয়া ভুল বুঝা হবে এবং লেমক তা স্বার্থপরভাবে ব্যাখ্যা করবে (আদি ৪:২৩-২৪)। তাহলে কেন ঈশ্বর তা বলেন?
  • হয়তো কয়িনকে শক্তিশালীভাবে জীবনের অতুলনীয় মূল্য শেখানোর জন্য। জীবন সুরক্ষিত থাকতে হবে। সবার জীবন সুরক্ষিত থাকুক। ঈশ্বর দাবী করেন যে সবার জীবন সুরক্ষিত থাকুক।
  • কে সে লোক যাদের কয়িন ভয় পান? তারা নিজের পরিবারের লোক হবে, পরে জন্ম নেওয়া ভাই-বোন ও তাদের বংশধরেরা। কিছু বছর পরে তারা কয়িনকে আর চিনবে ন, জানবেও না।
  • “চিহ্ন”? তা কি ছিল? আমরা জানি না কিন্তু এমন কিছু যাতে পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত যে কয়িনকে মেরে ফেলা যায় না? এই শব্দ ও ছবি রূপকভাবে প্রকাশিত বাক্যে আবার ব্যবহার করা হবে, উভয় ইতিবাচকভাবে (বিশ্বাসীদের সুরক্ষা, প্রকাশিত ৭:৩) এবং নেতিবাচকভাবে (অবিশ্বাসীদের জন্য, প্রকাশিত ১৩:১৬)।
  • কয়িন ঈশ্বরের উপস্থিতি থেকে চলে যান। সে বলে যে “আমি তোমার চোখের আড়াল হয়ে যাব’ (আদি ৪:১৪)। কিন্তু ঈশ্বর কয়িনের থেকে নিজেকে আলাদা করেন নি বা নিজেকে লুকান নি। বরং ঈশ্বর কয়িনকে অন্বেষণ করেছেন, সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ শুরু করেছেন, যুক্তি ও চেতনা দিয়েছেন, দয়া ও আগানোর পথ দেখিয়েছেন।


সারাংশ

  • এই গল্পে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে, ঈশ্বর কত গুরুত্ব দিয়ে ও কষ্ট করে মানুষের পিছনে লেগে থাকেন: সক্রিয় অন্বেষণ, চেতনা দান, প্রয়োজনীয় প্রকাশ ও ব্যাখ্যা, পথ দেখানো ও সুযোগ দান। তিনি তা এমন কি অনিচ্ছুক মানুষের ক্ষেত্রেও করেন, যাতে তার দয়া প্রকাশ পায়।
  • ঈশ্বর সব সময় মানুষকে বাস্তবতায়, সততায় ও স্বাধীনতায় পরিচালনা করতে চান। আমরা যেন তাতে সাড়া দিতে অস্বীকার না করি!