যিশাইয় ২৮:২৩-২৯
“শোন, আমার কথায় কান দাও; আমি যা বলি তা মন দিয়ে শোন। ২৪ চাষী বীজ বুনবার জন্য কি অনবরত চাষ করে? সে কি সব সময় ঢেলা ভাংগে আর জমিতে মই দেয়? ২৫ মাটির উপরটা সমান করলে পর সে কি কালোজিরা এবং জিরা বোনে না? সে কি সারি সারি করে গম, জায়গামত যব আর ক্ষেতের সীমানায় জনার লাগায় না? ২৬ তার ঈশ্বরই তাকে নির্দেশ দেন এবং তাকে ঠিক পথ শিক্ষা দেন। ২৭ কালোজিরা ভারী যন্ত্র দিয়ে মাড়াই করা হয় না, কিম্বা জিরার উপর দিয়ে গাড়ির চাকা গড়ানো হয় না, বরং লাঠি দিয়ে কালোজিরা ও জিরা মাড়াই করা হয়। ২৮ অনেক দিন ধরে কেউ গম মাড়াই করতে থাকে না, তাতে তা নষ্ট হয়ে যায়; মাড়াই করবার সময় সে তার উপর দিয়ে এমনভাবে গাড়ির চাকা ও ঘোড়া চালায় যাতে তা নষ্ট না হয়। ২৯ এই সব জ্ঞান সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছ থেকে আসে। তাঁর পরামর্শ আশ্চর্য ও তাঁর জ্ঞান চমৎকার।”
- এই পদগুলোতে যিশাইয় তার শ্রোতাদের মনোযোগী হতে এবং গুরত্বের সঙ্গে শুনতে আহ্বান করেন।
- এমন একটি বিষয় যা তারা সাধারণ জীবন থেকে ভালভাবে বুঝতে পারে (কিভাবে চাষ করতে হয়, বিভিন্ন ধরণের ফসল কিভাবে কাটা ও প্রস্তুত করতে হয়), যিশাইয় তাদেরকে তা বিবেচনা করতে এবং ঈশ্বরের চরিত্র সম্বন্ধে কিছু উপসংহারে আসার জন্য চ্যালেঞ্জ করেন।
- যিশাইয় এখানে ইস্রায়েলীয়দের ব্যবহারিক জ্ঞান ব্যবহার করেন। তারা জানে, কি ধরণের বীজ কিভাবে বপন করতে হয়, কিভাবে বৃদ্ধি করাতে হয়, কিভাবে কাটতে হয়, কিভাবে প্রতিক্রিয়া করতে হয়।
- ভাল ফল পাওয়ার জন্য কাজের প্রত্যেকটি ধাপের একটি উপযুক্ত সময় ও সময়কাল আছে।
- একবার প্রয়োজনীয় কাজ বা কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে পৌঁছানো হয়, কাজটি সমাপ্ত করা হয় (যিশাইয় ২৮:২৪)।
- প্রত্যেক ধরণের বীজের জন্য উপযুক্ত একটি প্রক্রিয়া আছে: সঠিক জায়গা, সঠিক মাটি, লাগানোর সঠিক ধরণ ইত্যাদি (যিশাইয় ২৮:২৫)।
- প্রত্যেকটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি আছে, যন্ত্রপাতির একটি উপযুক্ত ব্যবহার ও শক্তির প্রয়োগ আছে (যিশাইয় ২৮:২৬)।

- সাধারণ লোকদের সাধারণ জ্ঞান হল ভাল ও মূল্যবান বিষয় – এবং ঈশ্বর দ্বারা দেওয়া একটি বিষয় (যিশাইয় ২৮:২৬,২৯)। ঈশ্বর তাই চাষীদের ব্যবহারিক জ্ঞান, দক্ষতা, পরিশ্রম ও উপস্থিত বুদ্ধি ভাল বিষয় হিসাবে স্বীকার করেন। এগুলো “সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছ থেকে আসে” যাঁর “পরামর্শ আশ্চর্য ও তাঁর জ্ঞান চমৎকার।”
- যেমন চাষীরা এসব বুঝে ও পালন করে, ঠিক তেমনি তা ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য: তিনি জানেন কোন সময়ে কোথায় ঠিক কি ধরণের কাজ করতে হয়। তিনি জানেন কিভাবে ভাল, কার্যকারী ও সফল হওয়া যায়। তাঁর পথ ও কৌশল, তাঁর সময় ও কাজের ধরণ চমৎকার। যিশাইয় শ্রোতাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখে, যেন তারা ঈশ্বরকে তাদের চেয়েও জ্ঞানী হিসাবে দেখে, তাঁকে সমস্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দক্ষতার উৎস হিসাবে মেনে নেয়। ঈশ্বর আশ্চর্য পরামর্শদাতা, তাঁর পথ চমৎকার।
যিশাইয় ২৯:৯-১৬
“তোমরা অবাক ও আশ্চর্য হও; চোখ বন্ধ করে অন্ধ হও; মাতাল হও, কিন্তু আংগুর-রস খেয়ে নয়; টলতে থাক, কিন্তু মদের দরুন নয়; ১০ কারণ সদাপ্রভু তোমাদের উপর একটা গাঢ় ঘুম এনেছেন; তোমাদের চোখ যে নবীরা, তোমাদের সেই চোখ তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন আর তোমাদের মাথা যে দর্শকেরা, তোমাদের সেই মাথা তিনি ঢেকে দিয়েছেন। ১১ এই গোটা দর্শনটাই তোমাদের কাছে কেবল সীলমোহর করা জড়ানো বইয়ের মত হয়েছে। যে পড়তে জানে তাকে যদি সেই বইটা দিয়ে বলা হয়, “দয়া করে এটা পড়ুন,” তবে উত্তরে সে বলবে, “আমি পারব না, কারণ এটা সীলমোহর করা হয়েছে।” ১২ কিম্বা যে পড়তে জানে না তাকে বইটা দিয়ে যদি বলা হয়, “দয়া করে এটা পড়ুন,” তবে উত্তরে সে বলবে, “আমি পড়তে জানি না।” ১৩ প্রভু বলছেন, “এই লোকেরা মুখেই আমার উপাসনা করে আর মুখেই আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের অন্তর আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। তারা কেবল মানুষের শিখানো নিয়ম দিয়ে আমার উপাসনা করে। ১৪ কাজেই আমি আবার চমৎকার আশ্চর্য কাজ দিয়ে এই লোকদের হতভম্ব করে দেব; তাতে জ্ঞানীদের জ্ঞান নষ্ট হয়ে যাবে আর বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি অদৃশ্য হবে।” ১৫ ধিক্ সেই লোকদের, যারা সদাপ্রভুর কাছ থেকে তাদের পরিকল্পনা লুকাবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। তারা অন্ধকারে তাদের কাজ করে আর ভাবে, “কে আমাদের দেখছে? কে জানতে পারবে?” ১৬ তোমাদের কেমন উল্টা বুদ্ধি! তোমরা তো কুমার আর মাটিকে একই সমান ধরছ! যে তৈরী করছে তার তৈরী জিনিস কি তার বিষয় বলতে পারে, “সে আমাকে তৈরী করে নি”? পাত্র কি কুমারের বিষয়ে বলবে, “সে কিছুই জানে না”?

- যদি মানুষ ঈশ্বরের বাক্য অগ্রাহ্য করতে থাকে, যদি তারা “মুখেই উপাসনা করে” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তর ঈশ্বর থেকে দূরে থাকে, যদি ভাববাদীদের দেওয়া বাণীতে গুরুত্ব না দেয়, তবে শেষে এমন অবস্থায় পড়বে যেখানে তারা অন্ধের মত হয়ে যায়, ঘুমানোর মত হয়ে যায়।
- শুরুর দিকে আমি ‘চাই না’, ‘গুরুত্ব দেবই না’, ‘মানবই না’, ‘করবই না’।
- শেষের দিকে আমি ‘বুঝি না’, ‘পারি না’, ‘চাইলেও আর পারি না’।
- এর ফলাফল কিন্তু খুব ক্ষতিকারক।
- মানুষ হিসাবে আমাদের জ্ঞান ও চেতনা অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আছে।
- বুঝা এবং চাওয়া, এই দু’টি বিষয়ের শক্তিশালী সংযোগ আছে।
- শেষ পর্যায়ে ‘আমি জানতাম না’, এই অজুহাত আর চলবে না।
যিশাইয় ৩০:১৯-২২
“হে সিয়োনের লোকেরা, তোমরা যারা যিরূশালেমে বাস কর, তোমাদের আর কাঁদতে হবে না। সাহায্যের জন্য কাঁদলে তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের দয়া করবেন। তিনি শোনামাত্রই উত্তর দেবেন। ২০ যদিও প্রভু তোমাদের অল্প রুটি আর অল্প জল দিয়েছেন, তবুও তোমাদের শিক্ষক প্রভু আর লুকিয়ে থাকবেন না; তোমরা নিজেদের চোখেই তাঁকে দেখতে পাবে। ২১ ডানে বা বাঁয়ে কোথাও যাবার সময় তোমরা পিছন থেকে তাঁর এই কথা শুনতে পাবে, “এটাই পথ; তোমরা এই পথেই চল।” ২২ তখন তোমরা তোমাদের রূপা ও সোনা দিয়ে মুড়ানো মূর্তিগুলো অশুচি করবে; তোমরা সেগুলো নোংরা কাপড়ের মত ফেলে দিয়ে বলবে, “দূর হ, দূর হ!”
- বুঝার ক্ষমতা, শিক্ষা এবং পরিচালনা হল ঈশ্বরের দয়ার দান। যতজন খোলা, ইচ্ছুক এবং গুরত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, যত জন তাদের প্রয়োজন বুঝতে পারে, ততজনই ঈশ্বর থেকে যা দরকার, তাই পাবে। ঈশ্বর রীতিমত, ব্যক্তিগতভাবে এবং ঘনিষ্ট সম্পর্ক থেকে কথা বলেন এবং কথা বলতে থাকবেন।
- ঈশ্বরের দয়ায় আমরা বুঝার ক্ষমতা এবং সঠিক দৃষ্টি লাভ করতে পারি, যা দ্বারা আমাদের জীবনে স্থিরতা এবং বিভিন্ন বিপদ বা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার ক্ষমতা তৈরি হয়।
- ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দেন যে, তিনি প্রয়োজনের সময়ে সাহায্যকারী প্রকাশ অবশ্যই দেবেন: আমরা চোখ দিয়ে যা দেখি তা কান দিয়েও শুনি এবং তা পালন করা আমাদের জন্য হবে সম্ভব ও প্রজ্ঞার কাজ।
- ঈশ্বরের কাছ থেকে বুঝার ক্ষমতা, পরিচালনা ও প্রকাশ পেয়ে আমরা তাঁকে সত্যিকারভাবে আরাধনা করতে শিখব এবং স্বেচ্ছায় আমাদের জীবন থেকে বিভিন্ন মিথ্যা দেবতা ত্যাগ করতে সমর্পিত হব।
যিশাইয় ৪৪:১৮-২০
“সেই লোকেরা কিছু জানেও না, বোঝেও না। তাদের চোখ বন্ধ বলে তারা দেখতে পায় না আর মন বন্ধ বলে তারা বুঝতেও পারে না। ১৯ কেউ একটু চিন্তা করে না; কারও জ্ঞান বা বুদ্ধি নেই যে বলে, “আমি এর এক ভাগ দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছি, তার কয়লার উপর রুটি সেঁকেছি আর মাংস ঝল্সে নিয়ে খেয়েছি। তাহলে কি এর বাকী অংশ দিয়ে আমি ঘৃণার জিনিস তৈরী করব? কাঠের খণ্ডকে কি আমি মাটিতে পড়ে প্রণাম করব?” ২০ সে ছাই খাওয়ার মত কাজ করে এবং তার ঠগ অন্তর তাকে বিপথে নেয়। সে নিজেকে উদ্ধার করতে পারে না বা বলেও না, “আমার ডান হাতের এই জিনিসটা কি মিথ্যা নয়?”
- এখানে এমন ব্যক্তির গল্প দেওয়া হয়েছে যে কাঠ থেকে দেবতার মূর্তি তৈরি করে, কাঠের বাকি টুকরা দিয়ে আগুন জ্বালায়। ঈশ্বর এখানে সাধারণ বুদ্ধি বা যুক্তির ভিত্তিতে এর মুর্খতা প্রমাণ করে দেখান। সরল অথবা অশিক্ষিত মানুষেরাও এই বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে।
- কাঠের মূল অংশ থেকে দেবতা বানিয়ে তা আরাধনা করা, সাথে কাঠের টুকরা দিয়ে আগুন জ্বালানো, এর কি লাভ আছে? কাঠের এক অংশ যদি আমি নিজের সুবিধার মত ব্যবহার করি, তবে বাকি কাঠের উপর ভরসা রাখব কেন? এমন কিছু যা আমি নিজের হাত দিয়ে বানাতে পারি তা আমার জীবনকে বহন করতে কি সক্ষম হবে? আমাকে কি রক্ষা করতে পারবে? দেবতা যদি এমন হয় তবে তা অস্বীকার করাও চলে।
যিশাইয় ৪৫:১৮-১৯
“সদাপ্রভু, যিনি মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই ঈশ্বর; যিনি পৃথিবীর আকার দিয়েছেন ও তৈরী করেছেন, তিনিই তা স্থাপন করেছেন। তিনি বাস করবার অযোগ্য করে পৃথিবী সৃষ্টি করেন নি, বরং লোকেরা যাতে বাস করতে পারে সেইভাবেই তা সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলছেন, “আমিই সদাপ্রভু, আর কেউ নয়। ১৯ কোন অন্ধকার দেশের কোন জায়গা থেকে আমি গোপনে কথা বলি নি। যাকোবের বংশকে আমি বলি নি, ‘তোমরা মিথ্যাই আমাকে ডাক।’ আমি সদাপ্রভু ন্যায্য কথা বলি; যা ঠিক তা-ই ঘোষণা করি।”
- “বাস করবার অযোগ্য করে পৃথিবী”, ইব্রীয় ভাষায় এখানে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা হল Strong’s H8414 (পুরাতন নিয়মে ২০ বার ব্যবহৃত), যার অর্থ হল ‘খালি স্থান, মরুভূমি, শূণ্যতা, নির্জনতা, অসার, আকারবিহীন, কিছু নেই, এলোমেলো, বিভ্রান্তি’, ইংজেরীতে ‘chaos’।
- এই একই শব্দ আদি ১:২ পদেও ব্যবহৃত “পৃথিবীর উপরটা তখনও কোন বিশেষ আকার পায় নি, আর তার মধ্যে জীবন্ত কিছুই ছিল না।”
- আদিপুস্তকের সৃষ্টির গল্পের মত, যিশাইয় এই পদগুলোতেও পার্থক্য দেখান: ঈশ্বরের সৃজনশীল আচরণ দ্বারা কিভাবে খালি স্থান, শূণ্যতা বা বিভ্রান্তি এমন একটি সৃষ্টিতে পরিণত হয়, যাতে শৃঙ্খলতা, সৌন্দর্য ও ধারাবাহিকতা থাকে।

- এখানে দেখানো হয় যে, মানুষ নীতিহীন, সূত্র ছাড়া, উৎশৃঙ্খল বা এলোমেলোর জগতে বাস করতে পারে না। যেখানে নিয়ম-নীতি নেই, প্রাকৃতিক আইন নেই, ধারাবাহিকতা নেই, কারণ ও ফলাফল নেই, সেখানে মানুষ জীবন-যাপন করতে অক্ষম। তারা এই ধরণের জগতে অনিরাপত্তায় ভুগত, বিভ্রান্তি ও অর্থহীনতায় ভুগত, কি আচরণ করা উচিত তা বুঝে উঠতে পারত না। মানুষের জন্য শৃঙ্খলা অত্যন্ত প্রয়োজন, এমন একটি বাস্তব পৃথিবী যা নিয়ম-নীতি অনুসারে চলে, যেখানে আচরণের ফলাফল দেখা যায়, যেখানে গতকাল যা ঠিক ছিল, তা আজকেও ঠিক। যদি এই জগতে যে কোন মুহূর্তে যে কোন কিছু ঘটতে পারে, যদি এক এক দিন এক এক রকম চলে, যদি কোনো ধারাবাহিকতা, স্থিরতা, ঠিক-ঠিকানা না থাকে, তবে মানুষের জন্য বিভ্রান্তি, দিক-নির্দেশহীনতা, অর্থহীনতা, অক্ষমতা ও অকার্যকারীতা ছাড়া আর কিছু থাকবে না। ঈশ্বর জানেন মানুষের কি প্রয়োজন, তিনি জানেন মানুষের জন্য এই ধরণের জগতে বেঁচে থাকা সম্ভব না।
- তাই ঈশ্বর সুশৃঙ্খল আবাসযোগ্য পৃথিবী সৃষ্টি করেন, তিনি অস্থিত্ব ও জীবন দান করেন, তিনি নিয়ম-নীতি, প্রাকৃতিক আইন ও অর্থ দান করেন। ঈশ্বর মানুষকে প্রকাশ ও প্রজ্ঞা, বুঝার ক্ষমতা, বুদ্ধি ও আচরণ করার ক্ষমতা দান করেন।

- ঈশ্বর সত্যকে প্রকাশ করেন। যা বাস্তব, ন্যায্য ও প্রয়োজন, তা তিনি ঘোষণা করেন: “আমি সদাপ্রভু ন্যায্য কথা বলি; যা ঠিক তা-ই ঘোষণা করি।”
- ঈশ্বর আমাদের সত্য বা বাস্তবতা বুঝতে সাহায্য করেন, তিনি আমাদের বলেন কি ঠিক, কি বাস্তব, কি উপকারী, কি কার্যকারী, কি ভাল ফল নিয়ে আসে।
- এখানে দেখানো হয় যে, বাস্তবতা ও নৈতিকতা সংযুক্ত: যা করা ঠিক ও উপযুক্ত, তা করা কার্যকারী ও বাস্তবে ফলবান। যা উচিত নয়, যদি আমি তা-ই করি তবে আমি বাস্তবতা নিয়ে মোচড় করি বা প্যাঁচ লাগাতে চেষ্টা করি, যার ফলাফল হল এলোমেলো, উৎশৃঙ্খলা, অশান্তি, অকার্যকরতা, ফলহীনতা, ভাঙ্গন বা ক্ষতি।
- ঈশ্বর মানুষকে একটি অবাস্তব শূণ্যস্থানে রাখেন নি, যেখানে নিয়ম-নীতি, বাস্তবতা বা নৈতিকতা নেই, যেখানো বিভ্রান্তি ছাড়া কিছু নেই।
- যা আমাদের জানা প্রয়োজন, তিনি আমাদের কাছে তা প্রকাশ করেছেন যেন আমরা এই পৃথিবীকে বুঝতে পারি, তাতে উপযুক্তভাবে বাস ও আচরণ করতে পারি।
যিশাইয় ২৮:৯-১৩
‘“সে কাকে শিক্ষা দিচ্ছে? তার বাণী কার কাছে ব্যাখ্যা করছে? যারা দুধ খাওয়া ছেড়েছে, বুকের দুধ থেকে যাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের কাছে কি? ১০ তা হল, ‘এটা কর, ওটা কর, এই নিয়ম মান, ঐ নিয়ম মান, এখানে আছে, ওখানে আছে।’ ” ১১ বেশ, তাহলে সদাপ্রভু বিদেশীদের মুখের অদ্ভুত ভাষা দিয়ে এই লোকদের কাছে কথা বলবেন। ১২ তিনি তাদের বলেছিলেন, “এটাই সেই বিশ্রামের জায়গা, ক্লান্ত লোকেরা এখানে বিশ্রাম করুক। দেখ, এই সেই আরামের জায়গা।” কিন্তু তারা তা শুনল না। ১৩ কাজেই তাদের কাছে সদাপ্রভুর কথা হবে, “এটা কর, ওটা কর, এই নিয়ম মান, ঐ নিয়ম মান, এখানে আছে, ওখানে আছে,” যাতে তারা গিয়ে পিছন দিকে পড়ে যায় আর আঘাত পেয়ে ফাঁদে ধরা পড়ে।”
- যতজন শিখতে ইচ্ছুক, ততজনকে ঈশ্বর অবশ্যই শিক্ষা দান করবেন, তাকে বিষয়টি বুঝিয়েও দেবেন (যিশাইয় ২৮:১৩)। অল্প বয়স থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তিনি তা করতে সমর্পিত।
- শিক্ষা দানে সময় প্রয়োজন, তা ধীরে ধীরে, অল্প অল্প করে করা দরকার, এক বিষয়ের উপর আর এক বিষয় গঠন করার মত, স্বক্রিয়ভাবে, ধারাবাহিকভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে।
- সত্যিকারের শিক্ষা, সত্যের জ্ঞান ও বুঝার ক্ষমতার বৃদ্ধি যদি থাকে তবে তা মানুষের জীবনে শান্তি, বিশ্রাম, স্থিরতা, সুস্থতা ও পুনরুদ্ধার নিয়ে আসে। মানুষ যদি বাস্তবতা না বুঝে, পৃথিবী কেমন চলে যদি বুঝতে অক্ষম, তবে সে এই পৃথিবীকে ভয়ংকর ও শক্রুতাভরা স্থান মনে করবে যেখানে এক এক দিন এক এক রকম চলে। ফলে সে বিভ্রান্তিতে, ভয়ে, অকার্যকরতায় ও হতাশায় ভুগবে।
- মানুষ চাইলে শিক্ষা বা প্রকাশ প্রত্যাখ্যান করতে পারে, ঈশ্বরের কাছ থেকে শিক্ষা, অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা বা বাস্তবতা থেকে শিক্ষা হোক। যদি না চাই তবে দেখতেও পাব না, বুঝতেও পারব না, জানতেও পারব না। এটি করা সম্ভব, কিন্তু তা ভয়ংকর একটি অবস্থা।

যিশাইয় ৫০:৪-৭
“প্রভু সদাপ্রভু আমাকে শিক্ষিতদের জিভ্ দিয়েছেন যাতে আমি কথার দ্বারা ক্লান্ত লোকদের সাহায্য করতে পারি। তিনি আমাকে প্রত্যেক দিন সকালে জাগিয়ে দেন আর আমার কানকে সজাগ করেন যাতে আমি একজন শিষ্যের মত শুনি। ৫ প্রভু সদাপ্রভু আমার কান খুলে দিয়েছেন এবং আমি অবাধ্য হই নি, পিছিয়েও যাই নি। ৬ যারা আমাকে মেরেছে আমি তাদের কাছে আমার পিঠ পেতে দিয়েছি আর যারা আমার দাড়ি উপ্ড়িয়েছে তাদের কাছে আমার গাল পেতে দিয়েছি। যখন আমাকে অপমান করা ও আমার উপর থুথু ফেলা হয়েছে তখন আমি আমার মুখ ঢেকে রাখি নি। ৭ প্রভু সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য করেন বলে আমি অপমানিত হব না। কাজেই আমি চক্মকি পাথরের মতই আমার মুখ শক্ত করেছি, আর আমি জানি যে, আমি লজ্জিত হব না।”

- শিক্ষক হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি শিক্ষার্থীদের বুঝতে পারেন, তাদের মত হন এবং তাদের সেবা-যত্ন নেন ও তাদেরকে সাহায্য করতে আগ্রহী থাকেন।
- ঈশ্বরই আমাদের সজাগ করে কান খুলে দেন যেন আমরা অন্যদের কথা শুনি, লোকদের অবস্থা বুঝতে পারি, নিজকে তাদের স্থানে রাখতে পারি এবং মূল্যবান কিছু দান করে তাদের প্রয়োজন মেটাই।
- শিক্ষক হিসাবে আমাদের নম্রতা ও আগ্রহ থাকা দরকার। গ্রহণ করা, নিজেকে অধীনে রাখা এবং কষ্ট করতে রাজি হওয়া, এই ধরণের মনোভাব শিক্ষকদের দরকার।
- এভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের স্থানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে বুঝতে পারব, সাহায্য ও শিক্ষা দিতে সক্ষম হব।
- এইভাবে নম্রতার সঙ্গে শিক্ষা দান খুব কার্যকারী ও ফলবান হবে, ঈশ্বর তা প্রতিজ্ঞা করেন: “আমি জানি যে, আমি লজ্জিত হব না।”