ইচ্ছা ও জ্ঞানের বিষয়ে সমস্ত পদ দেওয়া হয়েছে, এমন নয়। বরং কয়েকটি পদ বেছে নিয়ে নিচে এই বিষয়ে কিছু চিন্তা বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
লূক ১১:৯-১৩
“এইজন্য আমি তোমাদের বলছি, চাও, তোমাদের দেওয়া হবে; খোঁজ কর, পাবে; দরজায় ঘা দেও, তোমাদের জন্য খোলা হবে। ১০ যারা চায় তারা প্রত্যেকে পায়; যে খোঁজ করে সে পায়; আর যে দরজায় ঘা দেয় তার জন্য দরজা খোলা হয়। ১১ তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কে আছে, যে তার ছেলে রুটি চাইলে তাকে পাথর দেবে, কিম্বা মাছ চাইলে সাপ দেবে, ১২ কিম্বা ডিম চাইলে বিছা দেবে? ১৩ তাহলে তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে যারা স্বর্গস্থ পিতার কাছে চায়, তিনি যে তাদের পবিত্র আত্মাকে দেবেন এটা কত না নিশ্চয়!”
- লূক ১১:১-১৩ পদে একটি ধারাবাহিকতা দেখা যায়: যীশু প্রার্থনা করেন > শিষ্যেরা যীশুকে প্রার্থনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে > যীশু ‘প্রভুর প্রার্থনা’ শেখান > যীশু একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিনতিতে ধৈর্য্য ধরার বিষয়ে উৎসাহিত করেন > তিনি দরজায় ঘা দিতে, চাইতে ও খোঁজ করতে বলেন > ঈশ্বর যা ভাল তা-ই দেন, এর নিশ্চয়তা দেন > ঈশ্বর পবিত্র আত্মা দান করেন। এখানে ঘটনা ও কথার ধারাবাহিকতা বা ক্রমবৃদ্ধি লক্ষ্য করুন:
- যীশু প্রার্থনার অভ্যাসের আদর্শ দেখান (লূক ১১:১ক), শিষ্যেরা প্রশ্ন করা তিনি পর্যন্ত অপেক্ষা করেন (লূক ১১:১খ), তারা প্রার্থনা শেখার অনুরোধ করেন (লূক ১১:১গ), তারা ভাল কিছু চেয়েছেন বলে তিনি সাথে সাথে তাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে পার্থনা সম্বন্ধে শিক্ষা দান করেন (লূক ১১:২-৪)। তারা চেয়েছে এবং তিনি প্রয়োজনটি মিটিয়েছেন।

- যীশু শিষ্যদের উদ্যোগ গ্রহণে অনুমোদন দান করেন এবং তাদের চাওয়ার বিষয়কেও অনুমোদিত করেন (লূক ১১:৯-১৩)।
- ঈশ্বর মঙ্গলময়। যা ভাল তিনি তা-ই দান করেন। যদি আমরা “যা সত্যি, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য” তা চাই (ফিলিপীয় ৪:১০) এবং ধৈর্য্য ধরে সমর্পিত হতে থাকি তবে আমরা তা লাভ করি, এই বিষয়ে ঈশ্বরের কোন আপত্তি বা বাধা নেই।
- বিষয়টি যদি এত সরল, তবে কেন আমরা তা অতি কঠিন কিছু মনে করি?
- চাও! ঘা দাও! খোঁজ কর! ভাল কিছু পেতে হলে পিছনে লেগে থাকতে হয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষ হিসাবে আমরা চাইতে সংকোচ বোধ করি, আমরা দরজায় আঘাত দিতে লজ্জা পাই, আমরা যে কিছু খুঁজছি (যেমন একটি চাবি), অন্যরা তা না দেখুক।
- কেন আমরা লজ্জা পাই? যদি আমি চাই তবে আমি স্বীকার করি যে, আমার কিছু প্রয়োজন, আমার এই জিনিস নেই, আমার জ্ঞান নেই, বরং ঘাটতি বা অভাব আছে এবং এখনও তা সমাধান করতে সক্ষম হই নি।
- আমরা কেন জিজ্ঞাসা করতে চাই না? ভাল উত্তর পাব কি না, তা নিশ্চিত জানি না, তাই জিজ্ঞাসা করতে চাই না। হয়তো যে ধরণের উত্তর পাব, সেই উত্তর ভাল নাও লাগতে পারে। অথবা উত্তর নিয়ে কি করব, তা বুঝে উঠতে পারি না।
- অথবা চাওয়ার চেয়ে বেশি উত্তর পাব, এই ভয় থাকতে পারে। চাওয়া মানে নিজেকে খুলে রাখা, নিজের প্রয়োজন স্বীকার করা, আমার নির্ভরতা দেখানো, আমার জ্ঞানের অভাব এবং সমস্যা সমাধান করার অক্ষমতা প্রকাশ করা।
- চাওয়া মানে টানাটানি বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা অন্তুষ্টতি প্রকাশ্যে আনা, সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রনে আছে, এমন নয় – তা স্বীকার করা।
- এমন অভাবে ভুগছি যা আমাকে এগিয়ে আসতে বাধ্য করেছে।
- দরজায় ঘা দেওয়া মানে স্বীকার করা, যে আমার প্রবেশ করার ক্ষমতা বা অধিকার নেই, তবুও প্রবেশ করতে চাই।
- চাওয়ার বিষয়ের মত তা আমার প্রয়োজন, অভাব, অসমর্থতা বা অক্ষমতা প্রকাশ করে।দরজা না খোলার ভয়ে আমরা চাই না কেউ দেখুক যে, আমরা ঘা দিচ্ছি।
- আমরা চাই না কেউ দেখুক আমরা ফোন দিচ্ছি কিন্তু কেউ উত্তর দেয় না।
- আমরা ট্রেন দাঁড়িয়ে দেখে আর দৌড় দেই না ভয়ে যে, ট্রেনে আর উঠতে না পেরে অনেকে তার সাক্ষী হবে।
- একজন সম্মানিত লোককে আমরা দরজায় ঘা দিতে দেই না, এর আগেই আমরা অবশ্যই দরজা বা গেট খোলা রাখি।
- খোঁজ করার বিষয় প্রায় একই। আবারও আমরা আমাদের প্রয়োজন, অভাব, অসমর্থতা বা অক্ষমতা স্বীকার করতে চাই না। পাব না এই ভয়ে আমরা খোঁজও করি না, বিশেষভাবে যদি অনেক লোকদের সম্মুখে কিছু খুঁজতে হয়। আমরা মুর্খ মানুষের মত নিষ্ফল হতে চাই না।
- এইসব হল বিরক্তিকর, ভয়ের বা লজ্জার বিষয়, বিশেষভাবে সবার সামনে ঘটলে।
- আমরা অহংকারী বলে এইসব মেনে নিতে চাই না।
- আমরা অভাবী বা নিষ্ফল হতে চাই না, সবার দৃষ্টিতে অভাবী হওয়া আরো খারাপ বিষয়।
- আমাদের দৃষ্টিতে এইটি হল নিয়ন্ত্রণ হারানোর মত এবং আমরা এইসব ঘৃণা করতে থাকি।
- আমরা নিজেকে স্মার্ট, স্বনির্ভর, জ্ঞানী, কৌশলী, আত্মি-বিশ্বাসী ও দক্ষ হিসাবে দেখাতে চাই।
- ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দেন যে, প্রায় যে কোন কিছু পেতে পারি – যদি আমরা তা চাই। যদি আমরা আকাঙ্ক্ষী ও নম্র, সৎ ও সমর্পিত, যদি আমরা নিজের অহংকার, সংকোচ, লজ্জাভাব ও ভয়ের চেয়ে অন্য কিছু আরো গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, তাহলে দরজা খোলা। যদি আমরা চাই, ঘা দেই বা খোঁজ করি আমরা দেখাই যে, আমার সুনাম ও অহংকার রক্ষা করার চেয়ে এবং অন্যদের মন্তব্য এড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে অন্য একটি বিষয় আরো গুরুত্বপূর্ণ।
- সেই ভাল বিষয়ের পিছনে লেগে থাকব, যে যা-ই বলুক না কেন।
- এই ধরণের সংকোচ, লজ্জা বা অহংকারের বিপরীত হল ছেলেমেয়েদের স্বাধীন মনোভাব: তাদের না জানার কোন লজ্জা নেই, তাদের না পাওয়ার কোন ভয় নেই। শিশুরাই আকাঙ্ক্ষী, কৌতুহল, ইচ্ছুক, সংকোচমুক্ত ও সাহসী, তারা অধিকাংশ বিষয় অনুসন্ধানের যোগ্য মনে করে, অধিকাংশ অনুসন্ধানে মজা পায়।
- ছেলেমেয়েদের চেয়ে আমরা কত সংকোচের ও ভয়ের মানুষ হয়েছি, তা আমাদের দেখায় যে, আমরা ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা নিয়ে মনে মনে সন্দেহ করছি। ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখাই প্রয়োজন ও ভাল, কারণ তিনি প্রকৃতপক্ষে যা ভাল তা-ই দিতে আগ্রহী। ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা বুঝলে আমরা চেষ্টা করার সংকোচ, ব্যর্থ হওয়ার ভয়, নিজেকে লজ্জায় ফেলার অনিচ্ছা অতিক্রম করতে সক্ষম হব। ‘আমার কারোর উপর নির্ভর করতে হয় না’, ‘সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রনে আছে’, ‘লজ্জায় পড়ব না’, ‘আমার বিষয়ে অন্যদের খারাপ চিন্তা করতে দিব না’… এই ধরণের চিন্তা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই এগুলোর কারণে আমি যেন নিজেকে বঞ্চিত না করি।
- এই পদগুলো হল নম্র, খোলা ও আকাঙ্ক্ষী হওয়ার আহ্বান। নিজেদেরকে খোলাভাবে প্রকাশ করা (যোগাযোগ), নতুন কিছু শেখার আকাঙ্ক্ষা (শিক্ষা), অনুসন্ধান করার ও নতুন কিছু আবিষ্কার করার আনন্দ (বিজ্ঞান), সৃষ্টিকে ভালবাসা ও ভাল কিছু পাওয়ার অনুমোদন (অর্থনীতি), ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা (ধর্ম) এবং সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ (শিল্প ও বিনোদন), এই সব ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর এইসব করার আদেশ দেন।
- এই পদগুলোতে আমরা বিনতি প্রার্থনারও অনুমোদন পাই। অন্যদের জন্য (এবং নিজের জন্য) প্রার্থনা করার সময়ে আমরা ঠিক ঈশ্বরের মঙ্গলময়তার উপর নির্ভর করে ভাল কিছু চাই এবং এর পিছনে লেগে থাকি।
- এইজন্য অপ্রয়োজনীয় সংকোচ অস্বীকার কর! ভয় অতিক্রম কর! অর্থবিহীন অহংকার ত্যাগ কর! সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারব, আর কারও দরকার পড়বে না, অন্যদের মন্তব্য এড়িয়ে যাওয়া যাবে, এই সব মিথ্যা আর বিশ্বাস করবে না! যা ভাল তার অনুসন্ধান কর! ঈশ্বরের সৃষ্টি নিয়ে আনন্দ কর! ঈশ্বরের মঙ্গলময়তার উপর ভরসা রাখ! এবং তিনিই “তোমার মনের ইচ্ছা ও হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন” (গীত ৩৭:৪)।
যোহন ৮:৩১-৩২
“যে যিহূদীরা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল যীশু তাদের বললেন, “আমার কথামত যদি আপনারা চলেন তবে সত্যিই আপনারা আমার শিষ্য। ৩২ তা ছাড়া (কেরী: “আর”) আপনারা সত্যকে জানতে পারবেন, আর সেই সত্যই আপনাদের মুক্ত করবে।”
- এই পদগুলো হল যীশুর বিস্তারিত শিক্ষার একটি অংশ।
- প্রকৃতপক্ষে যীশুর শ্রোতারা শিক্ষাটি ভালভাবে গ্রহণ করে না বরং বিভিন্নভাবে তর্ক করে। সম্পূর্ণ আলোচনা বিরক্তিকর এবং হতাশার হয়ে ওঠে।
- তবুও কিছু লোক বিশ্বাস করে (যোহন ৮:৩০) এবং তাদেরই কাছে যীশু উল্লিখিত দু’টি পদ বলেন (যোহন ৮:৩১-৩২)।
- এই পদগুলো বলার পরে আলোচনাটি আরো তর্কের হয়ে যায় (যোহন ৮:৩৩-৫৮) এবং শেষে যিহূদী শ্রোতারা পাথর কুড়িয়ে যীশুকে মেরে ফেলার চিন্তা করে (যোহন ৮:৫৯)।
- এই দু’টি পদ তাহলে এমন শ্রোতাদের কাছে বলা হয়েছে যারা যীশুর কথা শুনে বিশ্বাস করেছে। কিভাবে তারা বিশ্বাসে এগিয়ে যেতে পারে, এইজন্য যীশু তাদেরকে এই কথাটি বলেন।
- যীশু এখানে কয়েকটি মূল শব্দ সংযুক্ত করে যাচ্ছেন: যীশুর কথামত চলা > সত্যি যীশুর শিষ্য হওয়া > সত্য জানা > মুক্ত হওয়া।

- ‘আমার কথামত চলা’ যীশু এটাকে ‘আমার শিষ্য হওয়া’র সাথে সংযুক্ত করেন। শুধুমাত্র যদি আমি যীশুর কথামত চলি তবে তাঁর শিষ্য হতে পারি। বাধ্যতা হল শিষ্যের আবশ্যক গুন।
- যীশু আরো সংযোগ দেখান: শিষ্য যদি হই তবে সত্যকে জানতে পারব। সত্যকে শুধুমাত্র জানা যায় যদি আমি শিষ্য হই, অর্থাৎ যদি আমি যীশুর কথামত চলি।
- এইটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: শুধুমাত্র যারা সত্যে বাধ্য থাকতে রাজি, তারাই সত্য জানবে, তারাই সত্যকে সত্য হিসাবে চিহ্নিত করে রাখতে এবং বুঝতে পারবে।
- সত্যকে জানা ও সঠিক জ্ঞান অর্জন তাহলে ব্রেনের বুদ্ধি বা যুক্তির (IQ) উপর নির্ভর করে না। বরং সত্যকে জানা ও সঠিক জ্ঞান অর্জন করা ইচ্ছুক হৃদয়ের উপর নির্ভর করে।
- ভিন্নভাবে যদি বলি: যদি সত্য আমাকে চেতনা দিতে না পারে, যদি আমি সত্যকে মেনে নিতে বা পালন করতে রাজি না থাকি তবে আমি সত্য জানবই না, বুঝবও না।
- সত্যের অনুসন্ধান দক্ষতার বিষয় নয়, ব্রেনের ক্ষমতারও বিষয় নয়। সত্য জানা ও সত্য পালন করা, এই দু’টি বিষয় আলাদা করা যায় না।
- কি অদ্ভুত বিষয়! আমাদের বর্তমান যুগর চিন্তার চেয়ে তা কত ভিন্ন!
- যোহন তার প্রথম চিঠিতে (১ যোহন) একই বিষয় ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করেন: ঈশ্বরকে জানা মানে ঈশ্বরের বাধ্য থাকা মানে ঈশ্বরকে ভালবাসা।
- জানা = বাধ্য হওয়া = ভালবাসা। অপর পক্ষে যদি আমি সত্য পালন না করি তবে সত্যকে জানি না, ভালবাসিও না।
- এমন একটি জ্ঞান আছে, যা ঈশ্বরকে খুঁজে পাচ্ছে না, বুঝতে পারেও না (১ করিন্থীয় ১:১৮-২৫)।
- ঈশ্বরের জ্ঞান পেতে চাইলে ও ঈশ্বরের সত্য জানতে চাইলে ইচ্ছুক ও বাধ্য হৃদয় থাকা আবশ্যক।
- সত্য জানার শর্ত হল বাধ্যতা। জ্ঞান অর্জনের শর্ত হল বাধ্য হৃদয় ও ইচ্ছুক মন। ইচ্ছা >>> জ্ঞান।
১ বংশাবলি ২৮:৯-১০
“আর তুমি, আমার ছেলে শলোমন, তুমি তোমার বাবার ঈশ্বরকে সামনে রেখে চলবে এবং তোমার অন্তর স্থির রেখে ও মনের ইচ্ছা দিয়ে তাঁর সেবা করবে, কারণ সদাপ্রভু প্রত্যেকটি অন্তর খুঁজে দেখেন এবং চিন্তার প্রত্যেকটি উদ্দেশ্য বোঝেন। তাঁর ইচ্ছা জানতে চাইলে তুমি তা জানতে পারবে (ইংরেজিতে “if you seek him he will be found by you”), কিন্তু যদি তুমি তাঁকে ত্যাগ কর তবে তিনিও তোমাকে চিরকালের জন্য অগ্রাহ্য করবেন। ১০ এখন মনোযোগী হও, কারণ উপাসনা করবার জন্য একটা ঘর তৈরী করতে সদাপ্রভু তোমাকেই বেছে নিয়েছেন। তুমি শক্তিশালী হও এবং কাজ কর।”
- এই পদগুলোতে আমরা একই তিনটি বিষয় আবারও দেখতে পাই:
- ঈশ্বরকে এবং তাঁর ইচ্ছাকে জানা (জ্ঞান)
- স্থির অন্তর ও মনের ইচ্ছা (ইচ্ছা)
- উদ্দেশ্য: ঈশ্বরকে সেবা করা (বাধ্যতা)।
- এই পদগুলোতে আবারও ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা দেখা যায়: যারা সত্য জানতে চায়, যারা আগ্রহী ও মনোযোগী এবং যারা ধৈর্য্য ধরে সমর্পিত হতে থাকে, তাদের কাছে ঈশ্বর নিজেকে বিশ্বস্তভাবে প্রকাশিত করবেন: “তুমি তা জানতে পারবে”, ইংরেজিতে “তুমি তাঁকে খুঁজে পেতে পারবে”।
- শলোমনের উপর ঈশ্বরের আহ্বান অত্যন্ত স্পষ্ট হলেও শলোমনকে এখন গুরুত্ব দিতে হবে (“মনোযোগী হও”) এবং ধৈর্য্য ধরে সমর্পিত হতে হবে (“শক্তিশালী হও এবং কাজ কর”)। ঈশ্বর সাহায্য করতে ইচ্ছুক, কিন্তু আমাদেরও ইচ্ছুক থাকতে হবে। আমরা গুরুত্ব না দিলে ঈশ্বর থেকে দেওয়া একটি চমৎকার আহ্বান বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। রাজা শলোমন তার জীবনের শেষের দিকে অবিশ্বস্ত হয়েছিলেন (১ রাজা ১১:১১)।
গীত ২৫:৪-৫
“হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে জানাও, আমাকে তোমার পথে চলতে শিখাও। ৫ তোমার সত্যে আমাকে পরিচালনা কর আর আমাকে শিক্ষা দাও, কারণ তুমিই আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর; সব সময় তোমার উপরেই আমি আশা রাখি।”
- যীশু যা লূক ১১:৯ পদে করতে বলেছেন, দায়ূদ এখানে ঠিক তা-ই করেন: সৎ-সরলভাবে, ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে তিনি নম্রতার সঙ্গে নিজের আকাঙ্ক্ষা ঈশ্বরের কাছে প্রকাশ করেন: “তোমার পথ আমাকে জানাও, আমাকে তোমার পথে চলতে শিখাও”। তিনি ঈশ্বরকে আরো জানতে চান, তাঁর কাছ থেকে আরো শিক্ষা লাভ করতে চান – যেন তিনি বাধ্য হয়ে ঈশ্বরের পথে চলতে পারেন।
- দায়ূদ এখানে শিশুর মত ঈশ্বরের কাছে আসেন, তিনি সংকোচ ও ভয় মুক্ত, সৎভাবে নিজের হৃদয় প্রকাশ করেন এবং নিজের প্রয়োজন সৎভাবে স্বীকার করেন। দায়ূদ গুরুত্ব দেন না ‘অন্যরা কি বলবে’ (২ শমূয়েল ৬:২১-২২, মীখলের আপত্তিতে দায়ূদের উত্তর)। তিনি হৃদয় খুলে দিয়ে আবেগের সঙ্গে নিজেকে ঈশ্বরের হাতে সমর্পিত করেন এবং সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা তাঁর উপর ছেড়ে দেন। দায়ূদ এইভাবে করেন যদিও রাজা ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে তার জীবন-যাপনের ধরণ সবার চোখে পড়ে। নিজের সম্মান রক্ষা করতে তিনি ব্যস্ত, এমন নয়। আমরা মনে করি বড় নেতা হিসাবে নিজেকে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপনা করতে হয় এবং সব সময় নিজের মান-সম্মান রক্ষা করতে হয়। যদি দায়ূদ রাজা হিসাবে সেই শিশুর মত মনোভাব ধরে রাখতে পেরেছিলেন তবে কেন আমরা তা করতে পারব না?
- আর একটি বিষয়: দায়ূদ এই মনোভাব তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন (২ শমূয়েল ২২-২৩) যদিও তার ছেলে শলোমন তা করতে সক্ষম হন নি। দায়ূদের লেখা শেষ গীতে আমরা সেই একই সৎ-সরল, সংকোচ ও লজ্জামুক্ত মনোভাব দেখতে পাই। প্রকৃতপক্ষে দায়ূদের এই মনোভাব চমৎকার।
হিতোপদেশ ২:১-১০
“ছেলে আমার, তুমি যদি আমার কথা শোন আর তোমার অন্তরের মধ্যে আমার সব আদেশ জমা করে রাখ, ২ যদি সুবুদ্ধির কথায় কান দাও আর বিচারবুদ্ধির দিকে মনোযোগ দাও, ৩ যদি বিবেচনা-শক্তিকে ডাক আর চিৎকার করে ডাক বিচারবুদ্ধিকে, ৪ যদি রূপা খুঁজবার মত করে সুবুদ্ধির খোঁজ কর আর গুপ্তধনের মত তা খুঁজে দেখ, ৫ তাহলে সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় কি, তা তুমি বুঝতে পারবে আর ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান পাবে; ৬ কারণ সদাপ্রভুই সুবুদ্ধি দান করেন, তাঁর মুখ থেকেই জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি বের হয়ে আসে। ৭ খাঁটি অন্তরের লোকদের জন্য তিনি উপস্থিত বুদ্ধি জমা করে রাখেন; যারা সততায় চলাফেরা করে তিনি তাদের ঢাল হন, ৮ যেন তিনি ন্যায়বিচার বজায় রাখতে পারেন, আর তাঁর ভক্তদের পথ রক্ষা করতে পারেন। ৯ যদি তুমি আমার কথা শোন, তাহলে বুঝতে পারবে কোনটা উপযুক্ত, ন্যায্য ও সৎ আর বুঝতে পারবে মংগলের সমস্ত পথ; ১০ কারণ সুবুদ্ধি তোমার অন্তরে ঢুকবে, আর জ্ঞান তোমার প্রাণে আনন্দ দেবে।”

- ইব্রীয়তে হিতোপদেশ ২:১-১০ পদ হল একটি বাক্য মাত্র, যাতে কোন দাড়ি নেই। এই পদগুলো হল “যদি … তবে” (শর্ত ও ফলাফল) প্রকাশ করার একটি উক্তি।
- লক্ষ্য করুন শুরুর দিকে মানুষের সেই প্রয়োজনীয় মনোভাব কিভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: “তুমি যদি আমার কথা শোন আর তোমার অন্তরের মধ্যে আমার সব আদেশ জমা করে রাখ, ২ যদি সুবুদ্ধির কথায় কান দাও আর বিচারবুদ্ধির দিকে মনোযোগ দাও, ৩ যদি বিবেচনা-শক্তিকে ডাক আর চিৎকার করে ডাক বিচারবুদ্ধিকে, ৪ যদি রূপা খুঁজবার মত করে সুবুদ্ধির খোঁজ কর আর গুপ্তধনের মত তা খুঁজে দেখ …”।
- এই পদগুলো হল মনে-প্রাণে মনোযোগী হওয়ার এবং এই বিষয়ে অত্যন্ত প্রাধান্য দেওয়ার একটি শক্তিশালী আহ্বান।
- লক্ষ্য করুন পরবর্তীতে আদেশে বাধ্য হওয়ার পুরুস্কার ও আশীর্বাদের কত বড় তালিকা দেওয়া হয়েছে: “৫ তাহলে সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় কি, তা তুমি বুঝতে পারবে আর ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান পাবে; ৬ কারণ সদাপ্রভুই সুবুদ্ধি দান করেন, তাঁর মুখ থেকেই জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি বের হয়ে আসে। ৭ খাঁটি অন্তরের লোকদের জন্য তিনি উপস্থিত বুদ্ধি জমা করে রাখেন; যারা সততায় চলাফেরা করে তিনি তাদের ঢাল হন, ৮ যেন তিনি ন্যায়বিচার বজায় রাখতে পারেন, আর তাঁর ভক্তদের পথ রক্ষা করতে পারেন। ৯ যদি তুমি আমার কথা শোন, তাহলে বুঝতে পারবে কোনটা উপযুক্ত, ন্যায্য ও সৎ আর বুঝতে পারবে মংগলের সমস্ত পথ; ১০ কারণ সুবুদ্ধি তোমার অন্তরে ঢুকবে, আর জ্ঞান তোমার প্রাণে আনন্দ দেবে।”
- আবারও: ঈশ্বর মঙ্গলময় এবং যা ভাল তা তিনি অবশ্যই দান করবেন।
- এই তালিকায় আমাদের দেখানো হয়েছে আমাদের কি কি অত্যন্ত প্রয়োজন: ভক্তিপূর্ণ ভয়, জ্ঞান, সুবুদ্ধি, বিচার বুদ্ধি ইত্যাদি।
- এই পুরুস্কারগুলো একে অন্যকে আরো শক্তিশালী করে তোলে: ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয়, প্রজ্ঞা ও সুবুদ্ধি থাকলে সেগুলো আমাদেরকে সাহায্য করে যেন আমরা সঠিক বিষয়ের অনুসন্ধান করি।
- যেন আমরা চোখে পড়ার অনুসন্ধানগুলো (যেমন খ্যাতি, সুনাম) এবং অনুপযুক্ত অনুসন্ধান (যৌনতা, দমন, টাকা-পয়সা) ত্যাগ করতে শিখি।
- এই পদগুলোতে ঈশ্বরের চমৎকার একটি প্রতিজ্ঞা পাওয়া যায়: এই জগতে তাঁর ইচ্ছা অনুসারে জীবন-যাপন করা জটিল ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের বিষয় হলেও তিনি আমাদেরকে অবশ্যই সেই প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা ও উপস্থিত বুদ্ধি দান করবেন।