সরকার ০৮ – নতুন নিয়মে সরকারের বৈধতা সম্বন্ধীয় শিক্ষা

সরকারের বৈধতা ও প্রদান ভূমকিতা – রোমীয় ১৩:১-৭

রোমীয় ১৩:১“প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক” (কেরী)

রোমীয় ১৩:১“প্রত্যেকেই দেশের শাসনকর্তাদের মেনে চলুক”(সাধারন)

  • কর্তৃত্ত্ব, সরকার, আইনের প্রতি বাধ্য হওয়ার জন্য নাগরিকদের ঈশ্বর আদেশ দেন।
  • ঈশ্বর বলেন যে, প্রতিটি দেশে সরকার প্রয়োজন!
  • কোন সরকার না থাকার চেয়ে যে কোন ধরণের সরকার থাকা ভাল। সরকার ছাড়া দেশে অরাজকতা, নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা (anarchy) সৃষ্টি হয় এবং যা সবচেয়ে নিষ্ঠুর।
  • বিদ্রোহ এবং আইন ভাঙ্গা হল পাপ।

রোমীয় ১৩:১-২‘কারণ ঈশ্বর যাঁকে শাসনকর্তা করেন তিনি ছাড়া আর কেউই শাসনকর্তা হতে পারেন না। ঈশ্বরই শাসনকর্তাদের নিযুক্ত করেছেন; এইজন্য শাসনকর্তার বিরুদ্ধে যে দাঁড়ায় সে ঈশ্বরের শাসন-ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়। যারা এই রকম করে তারা নিজেদের উপরে শাস্তি ডেকে আনে।’

  • সকল কর্তৃত্ব ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে, যার সমস্ত ক্ষমতা, বৈধতা ও যথার্থতা আছে।
  • সকল কর্তৃত্ত্ব ও অধিকার ঈশ্বরের দ্বারা স্থাপিত হয় (রাজনৈতিক, আত্মিক বা পিতা-মাতার কর্তৃত্ত্ব)।
  • কোন কর্তৃত্ত্ব না থাকার চেয়ে কর্তৃত্ত্ব থাকা ভাল (খারাপ হলেও)।
  • হয়তো প্রত্যেক শাসক ঈশ্বরের ইচ্ছায় ক্ষমতা পাননি (জোর করে ক্ষমতা দখল) কিন্তু সরকারের প্রয়োজন আছে, তা ঈশ্বর বলেন (যে রকমই শাসক হোক না কেন)।
  • যখন পৌল এই আদেশ দেন (৫৬ খ্রিঃ), নীরো সবেমাত্র সম্রাট হিসাবে অভিষিক্ত হয়েছেন (!)। সরকার বা একজন নেতা পছন্দ কি না সেটা ব্যাপার নয়, তাকে মানতে হবে।
  • অধিকার থাকা মানে কি ? কোন শর্তে একজনের অধিকার থাকে? ক্ষমতা ও অধিকার কি একই বিষয়? যে কেউ সিংহাসনে বসে তারই কি এমনি এমনি অধিকার চলে আসে?
  • কিন্তু বাইবেল অনুসারে জনগণের ইচ্ছা দ্বারা শাসন করার অধিকার আসে (দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৩)। তাহলে নতুন নিয়মের সময়ের কোন সরকারের কি কোন অধিকার ছিল? যদি নির্বাচনের দ্বারা না হয়ে থাকে তাহলে কি সর্বসম্মতিতে হয়েছিল?
  • কিন্তু মন্দ সরকার কি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে? ধরুন একটি সরকার তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বা মানুষের অধিকার অস্বীকার করছে। এই মন্দ সরকারের প্রতি কি বাধ্য হতে হবে? বাধ্যতার সীমা কি?
 

রোমীয় ১৩:৩-৪‘যারা ভাল কাজ করে শাসনকর্তাদের ভয় করবার কোন কারণ তাদের থাকে না, কিন্তু যারা অন্যায় করে তারাই ভয় করে। শাসনকর্তাকে ভয় না করে কি তোমরা চলতে চাও? তাহলে যা ভাল তা-ই করতে থাক। তাতে তোমরা তাঁর কাছ থেকে প্রশংসা পাবে। তোমাদের মংগলের জন্যই তিনি ঈশ্বরের সেবাকারী হিসাবে কাজ করেন। তোমরা যদি অন্যায় কর তাহলে ভয় কর, কারণ অন্যায়কারীদের শাস্তি দেবার অধিকার তাঁর আছে। তিনি তো ঈশ্বরের সেবাকারী; যারা অন্যায় কাজ করে তাদের তিনি ঈশ্বরের হয়ে শাস্তি দেন।’

  • এটি মূলত যুক্তিসঙ্গত সরকারের সংজ্ঞা। বেশীরভাগ সরকার যুক্তিসঙ্গত হয়। না হলে সরকার নিজেকে ক্ষতি করবে বা নিজের স্থান নষ্ট করবে।
  • ঈশ্বর যে উদ্দেশ্যে পুরাতন নিয়মে সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা এখানে আবারও উল্লিখিত: অন্যায়কারীদের শাস্তি দেওয়া এবং যারা অন্যায় করে তাদের ভয় দেখানো।
  • পাপীদের দয়া দেখানো বা দুষ্টদের প্রশ্রয় দেওয়া সরকারের কাজ নয়, বরং সবার অধিকার রক্ষা করা।
  • সরকারের প্রতি বাধ্যতার কোন ব্যতিক্রম আছে? বাধ্যতার সীমা কোথায়? কখন নাগরিকদের অবাধ্যতা গ্রহণযোগ্য এবং সঠিক? বাইবেলে কি কোন উদাহরণ আছে?
  • উদাহরণ: যিহূদী পরিষদের প্রতি পিতর ও যোহনের অবাধ্যতা (প্রেরিত ৪:৮, ১৯-২০)। যিহূদী পরিষদ কি রাজনৈতিক অথবা আত্মিক কর্তৃত্ত্ব? সরকারের আদেশ কি ‘অজুহাত’ হিসাবে ব্যবহার করা যায়?

রোমীয় ১৩:৫“এইজন্য তোমরা শাসনকর্তাদের অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য। ঈশ্বরের শাস্তির ভয়েই যে কেবল তাঁদের অধীনতা স্বীকার করবে তা নয়, তোমাদের বিবেক পরিষ্কার রাখবার জন্যও তা করবে।”

  • সরকারকে ভয় করুন। বুঝুন যে ঈশ্বর চান যেন সরকার থাকে। এটার সাথে একমত হোন এবং হৃদয় থেকে এটার প্রতি বাধ্য হোন।
  • পৌলের মতে অন্ধভাবে ভয়ের কারণে বাধ্য থাকা যথেষ্ট নয়, যদিও এইটা সমস্যায় না পড়ার জন্য যথেষ্ট।
  • পৌল সরকারের প্রতি বাধ্যতার জন্য বিবেককে পরিচয় করিয়ে দেন। কি হবে যদি বিবেক আমাকে বাধ্য হতে না বলে?

রোমীয় ১৩:৬-৭“আর সেইজন্যই তো তোমরা কর্‌ দিয়ে থাক, কারণ কর্‌-আদায়কারীরা তাঁদের কাজের দ্বারা ঈশ্বরের সেবা করছেন।যাঁর যা পাওনা তাঁকে তা দাও। যিনি কর্‌ আদায় করেন তাঁকে কর্‌ দাও; যিনি শুল্ক আদায় করেন তাঁকে শুল্ক দাও; যাঁকে শ্রদ্ধা করা উচিত তাঁকে শ্রদ্ধা কর; যাঁকে সম্মান করা উচিত তাঁকে সম্মান কর।”

  • এটি দেখায় সেবা প্রদানের জন্য কর দাবী করা সরকারের অধিকার আছে।
  • শুধুমাত্র যা তাদের পাওনা (মানে আইনসঙ্গত যা তাদের পাওনা), ঘুষ না, শুধুমাত্র যা বৈধ।
কর আদায়কারী, সৈন্য এবং বাপ্তিস্মদাতা যোহন – লুক ৩:১২-১৪

কয়েকজন কর্‌-আদায়কারী বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার জন্য এসে যোহনকে বলল, “গুরু, আমরা কি করব?” তিনি তাদের বললেন, “আইনে যা আছে তার বেশী আদায় কোরো না।” কয়েকজন সৈন্যও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আর আমরা কি করব?” তিনি সেই সৈন্যদের বললেন, “জুলুম করে বা অন্যায়ভাবে দোষ দেখিয়ে কারও কাছ থেকে কিছু আদায় কোরো না এবং তোমাদের বেতনেই সন্তুষ্ট থেকো।”

  • যোহন সরকারের কর আদায়ের অধিকারকে অস্বীকার করেন না > এইটা সরকারকে সমর্থন করেন।
  • যোহন সৈন্যদের বলেন না যে তাদের সৈন্য হওয়া উচিত নয় > সৈন্যেকে সমর্থন করেন।
  • যোহন পদের, ভুমিকার, কর্তৃত্ত্বের, ক্ষমতার অপব্যবহার তুলে ধরেন যেমন: অফিস বহির্ভুত ফি, ঘুষ, হুমকি, অভিযোগ, মিথ্যা দিয়ে বাধ্য করা, চাঁদাবাজি, হয়রানি….
  • প্রত্যেক পদ, ভূমিকা, কর্তৃত্ত্বের নিজস্ব প্রলোভন বা অপব্যবহারের পথ আছে, কিন্তু নীতিমালা একই: ক্ষমতার অপব্যবহার নিষেধ, এমনকি স্বার্থপর ভাবে ব্যবহার করা নিষেধ।
  • বেতনে সন্তুষ্ট এবং নিজের কাজের সীমার মধ্যে থাকার আদেশ।

 

যীশু এবং মন্দিরের কর – মথি ১৭:২৪-২৭
  • যীশু মন্দিরের কর দেন, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে, এটা ঐচ্ছিক। অথবা এটা কি ঈশ্বর হিসাবে তার জন্য আলাদা নিয়ম? অথবা তিনি কি শুধুমাত্র পিতরকে পুত্রত্বের বিষয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য তা বলেন?
  • এখানে বিষয়টি হল মন্দিরের কর (ধর্মী বিষয়), কিন্তু যীশু তাঁর ব্যাখায় ‘রাজার’ বিষয়ে বলেন। তাহলে করের ক্ষেত্রে ধর্ম ও রাজনীতি কি একই নিয়মে চলে? এর অর্থ কি সরকারের করও কি ঐচ্ছিক?
 
কৈসরকে কর দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন – মথি ২২:১৫-২২, মার্ক ১২:১৩-১৭, লুক ২০:২০-২৬

‘তারা হেরোদের দলের কয়েকজন লোকের সংগে নিজেদের কয়েকজন শিষ্যকে যীশুর কাছে পাঠালেন। তারা যীশুকে বলল, “গুরু, আমরা জানি আপনি একজন সৎ লোক। ঈশ্বরের পথের বিষয়ে আপনি সত্যভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। লোকে কি মনে করবে না করবে তাতে আপনার কিছু যায় আসে না, কারণ আপনি কারও মুখ চেয়ে কিছু করেন না। তাহলে আপনি বলুন, মোশির আইন- কানুন অনুসারে রোম-সম্রাটকে কি কর্‌ দেওয়া উচিত? আপনার কি মনে হয়?”

  • ফরীশীরা ও হেরোদীয়রা এখানে সৎ অন্বেষণকারীর ভাব দেখিয়ে যীশুকে ফাঁদে ফেলে।
  • তারা বানিয়ে বানিয়ে মিষ্টি কথা বলে। এভাবে মিথ্যা বলা ধার্মিক মানুষ হিসাবে ফরীশীদের জন্য নিষেধ।
  • ফরীশীরা ও হেরোদীয়রা শত্রু ছিলেন কিন্তু এখানে হাত মিলিয়ে কাজ করেন কারণ উভয়ই যীশুর বিপক্ষে।
  • তাদের মধ্যেকার একটা ঝগড়ার প্রশ্ন নিয়ে আসে: রোমীয়রা কি বৈধ কর্তৃত্ত্ব? হেরোদ‍ীয়রা বলে ‘হ্যাঁ’। ফরীশীরা বলে ‘না’।
  • এটা একটা ফাঁদ, যদি যীশু বলেন ‘হ্যাঁ’, তাহলে যিহূদীরা তাঁকে দেশোদ্রোহী হিসাবে দেখবে। যদি বলেন ‘না’ তাঁকে ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হবে, যিনি একটি সহিংস আন্দোলনের পক্ষে।

যীশু তাঁদের ভণ্ডামি বুঝতে পেরে বললেন, “আপনারা কেন আমাকে পরীক্ষা করছেন? আমাকে একটা দীনার এনে দেখান।” তাঁরা একটা দীনার আনলে পর যীশু তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এর উপরে এই ছবি ও নাম কার?” তাঁরা বললেন, “রোম-সম্রাটের।”

  • যীশু বোকা না, তিনি ফাঁদটি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন।
  • যীশু তাদের মত না, তিনি কোন মাখন বা তেল ব্যবহার করেন না, প্রতারণা করেন না, তিনি সোজাসুজি, সৎভাবে তাদের গোপন বিষয় প্রকাশ করেন।
  • যীশু একটি দ্বিবিভক্ত প্রশ্ন (হ্যাঁ? না?) সরিয়ে ফেলেন এবং ভাবতে শুরু করার মত, তাদের আগ্রহ জাগানোর মত, একটি ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেন।

‘যীশু তাঁদের বললেন, ‘যা সম্রাটের তা সম্রাটকে দিন, আর যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দিন।’ যীশুর এই কথায় তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন।’

  • তারা এই উত্তর চাতুরীপূর্ণ মনে করে না বরং আশ্চর্য, নীরব ও লজ্জিত হয়।
  • তাদের মাথায় কি কি চিন্তা আছে, যার সাথে যীশু একমত নন? > সম্রাটের কর্তৃত্ত্ব মেনে নেওয়া মানে ঈশ্বরের কর্তৃত্ত্ব অস্বীকার করা।
  • সম্রাট ও ঈশ্বর এই উভয় নেতৃত্ত্বকে যীশু বৈধ ও প্রয়োজনীয় হিসাবে ঘোষণা করেন, যদিও দুই নেতৃত্ব ভিন্ন ধরণের। যীশু কিন্তু একেবারে নির্দিষ্ট করেন না, কি কাকে দেও‍য়া উচিত।

তিবিরিয় দীনারের মুদ্রা

মুদ্রার এক পাশে: = সম্রাট তিবিরি‍য়, অগাষ্টাস এর পুত্র (‘Ti(berius) Ceasar Divi Aug(usti)’)।

মুদ্রার বিপরীত পাশে: রোমের প্রধান ভ্রান্ত দেবীর চিহ্ন (একটি সন্ন্যাসিনী কুমারী চিত্রিত), সম্রাটকে ডাকছে ‘রোম ধর্মের প্রধান পুরোহিত’ Pontifex Maximus’ (= High Priest of the Roman religion)।

  • এর মানে ঈশ্বর এবং সরকার উভয়ের ভিন্ন ও বৈধ ভুমিকা দেখাচ্ছেন, কিন্তু সীমালঙ্ঘনও নিষেধ করেন: সরকার যা দাবী করতে পারে তার সীমা।

সরকারের যা দাবি করার অধিকার আছে:

  • দায়িত্ব অনুসারে কাজ পূর্ণ করতে কর দাবী করতে পারে।
  • দেশের আইনের প্রতি বাধ্যতা দাবী করতে পারে।
  • আইন অনুসারে বশীভূত হতে দাবী করতে পারে।

সরকারের যা দাবি করার অধিকার নেই:

  • মানুষের চিন্তা ও সিদ্ধান্তের উপর নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার নেই।
  • নিঃশর্ত, নৈতিক বাধ্যতা চাওয়ার অধিকার নেই।
  • আরাধনা দাবী করার অধিকার নেই… সেই সময়ে উঠে আসা সম্রাট পূজাকে যীশু অগ্রাহ্য করেন, যা পরবর্তীতে প্রত্যাখান করলে মৃত্যুদণ্ডের কারণ হয়ে দাঁড়াত (প্রথম শতাব্দীর শেষার্ধে)।
 
যীশু এবং বিদ্রোহী আন্দোলন – যোহন ৬:১৫

“এতে যীশু বুঝলেন, লোকেরা তাঁকে জোর করে তাদের রাজা করবার জন্য ধরতে আসছে। সেইজন্য তিনি একাই আবার সেই পাহাড়ে চলে গেলেন। সন্ধ্যা হলে পর যীশুর শিষ্যেরা সাগরের ধারে গেলেন,”

  • যীশু ভালভাবেই জানেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবেই বিদ্রোহ, উগ্র স্বাধীনতা-আন্দোলন এড়িয়ে যান।
  • তিনি এই আন্দোলনের মশীহ, উদ্ধারকারী নেতা হতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেন নি।
  • তাঁর কৌশল: কেন্দ্রস্থান এড়িয়ে গালীলের প্রান্ত এলাকায় শিক্ষা দিতে থাকেন, তিনি ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন, প্রয়োজন মত এড়িয়ে যান, লোকদের না বলার নির্দেশনা দেন, যাতে লোকদের গভীরভাবে শিষ্য করতে, শিক্ষা দিতে যথেষ্ট সময় পান।
 
যীশু এবং গেৎশিমানীতে উগ্রতা – মথি ২৬:৫২, যোহন ১৮:৮-১১, লুক ২২:৪৭-৫৩

“তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার ছোরা খাপে রাখ। ছোরা যারা ধরে তারা ছোরার ঘায়েই মরে।”

  • যীশু নিজে উগ্রতা দেখান না একই সংগে শিষ্যদেরও উগ্র হতে দেন না।

‘তখন যীশু বললেন, ‘আমি তো আপনাদের বলেছি যে, আমিই সেই। যদি আপনারা আমারই খোঁজে এসে থাকেন তবে এদের চলে যেতে দিন।” এটা ঘটল যাতে যীশুর বলা এই কথাটা পূর্ণ হয়, ‘যাদের তুমি আমাকে দিয়েছ তাদের একজনকেও আমি হারাই নি।’ শিমোন-পিতরের কাছে একটা ছোরা ছিল। পিতর সেই ছোরাটা বের করে তার আঘাতে মহাপুরোহিতের দাসের ডান কানটা কেটে ফেললেন। সেই দাসের নাম ছিল মল্ক। এতে যীশু পিতরকে বললেন, ‘তোমার ছোরা খাপে রাখ। পিতা আমাকে যে দুঃখের পেয়ালা দিয়েছেন তা কি আমি গ্রহণ করব না?’

  • যীশু যুক্তি দেখিয়ে নিশ্চিত করেন যাতে শিষ্যেরা ধরা না পড়ে।
  • যীশু ঈশ্বরের ইচ্ছা জানেন এবং তা গ্রহণ করেন। তিনি অজ্ঞ নন, আবার শিকারও হন না।

‘যীশু বললেন, ‘থাক্‌, আর নয়।’ এই বলে তিনি লোকটির কান ছুঁয়ে তাকে ভাল করলেন।’

  • যীশু সহিংসতার ফলে যা ক্ষতি তা ‍ঠিক (সুস্থ) করেন। এই সময়ও তিনি ভালবাসা, দয়া সেবা দিতে থাকেন।
 
সরকারের বিষয় নিয়ে বিশ্বাসীদের প্রতি নির্দেশনা – তীত ৩:১-২

‘ঈশ্বরের লোকদের মনে করিয়ে দাও যেন তারা শাসনকর্তা ও যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তাদের অধীনে থাকে, বাধ্য হয় ও লোকদের সব রকম উপকার করবার জন্য প্রস্তুত থাকে। তারা যেন কারও নিন্দা না করে বা ঝগড়াঝাঁটি না করে, বরং তারা যেন শান্ত স্বভাবের হয় এবং সকলের সংগে খুব নম্র ব্যবহার করে।’

  • বশীভূত থাকা , বাধ্য হওয়া, আইন পালন করা, গঠনমূলক ও অংশগ্রহকারী হও‍য়ার আদেশ… স্ব-নিয়ন্ত্রিত হও‍য়া, সহজেই অপমানিত না হওয়া, সুবিবেচক হওয়া, ভদ্র হওয়া, স্বীকৃতি দান করার আদেশ… সরকারের ক্ষেত্রে কিন্তু যেকোন পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
 
সরকারের জন্য প্রার্থনা – ১ তীমথিয় ২:১-১০

“‘প্রথমেই আমি বলছি, সকলের জন্য ঈশ্বরের কাছে যেন মিনতি, প্রার্থনা, অনুরোধ ও ধন্যবাদ জানানো হয়। এইভাবে রাজাদের জন্য আর যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তাদের সকলের জন্য প্রার্থনা করতে হবে, যাতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখিয়ে এবং সৎ ভাবে চলে আমরা স্থির ও শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারি। আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের চোখে তা ভাল এবং এতেই তিনি খুশী হন। তিনি চান যেন সবাই পাপ থেকে উদ্ধার পায় এবং খ্রীষ্টের বিষয়ে সত্যকে গভীরভাবে বুঝতে পারে। … আমি চাই যেন সব জায়গায় পুরুষেরা রাগ বা ঝগড়ার মনোভাব না রেখে খাঁটি অন্তরে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে। আমি এটাও চাই যেন স্ত্রীলোকেরা ভদ্রভাবে ও ভাল বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে উপযুক্ত কাপড়-চোপড় পরে। তারা যেন নানা রকমে চুলের বেনী বেঁধে, সোনা ও মুক্তার গয়না পরে আর দামী দামী কাপড়-চোপড় দিয়ে নিজেদের না সাজায়।”

  • সরকারের জন্য বিশ্বাসীদের ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ দেওয়া, বিনতী ও প্রার্থনা করা দরকার – রাগ না করে তর্ক না করে এবং নিজেকে প্রদর্শন না করে।
  • গঠনমূলক, অংশগ্রহণমূলক, দায়িত্বশীল, দানশীল, আশীর্বাদের কারণ হওয়ার আদেশ।
  • সরকারের কার্যক্রম হল: যাতে লোকেরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখিয়ে, স্থির ও শান্তিপূর্ণ জীবন কাটানোর সুযোগ পায়। এটা সুসমাচার প্রচার ও তা জানানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
  • সরকারের কাজ হলো আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা > যার ফল হবে শান্তি, মানবাধিকার রক্ষা > যা সুসমাচার ছড়িয়ে পড়তে ও জীবনের উন্নতিলাভ করতে সুযোগ দেবে।
  • সরকারের অবশ্যই জীবন, নিরাপত্তা, সম্পত্তি, বিবেক, স্বা‌ধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার দিতে হবে।