সরকার ০৯ – ইস্রায়েলের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা


নির্বাচিত ও প্রতিনিধিত্বের সরকার                                                দ্বিতীয় বিবরণ ১:৯-১৫

  • ১৪৪৬-৪৫ খ্রিষ্টপূর্বের মধ্যে ঈশ্বর ইস্রায়েলের জন্য নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্বের সরকার স্থাপন করেন।
  • এটা আসলে কতটুকু নির্বাচনমূলক একটি পদ্ধতি ছিল? এটা কি একটি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি শক্তিশালী পরিবার ছিল যারা বংশগতভাবে নেতৃত্ব চালিয়ে যেত?
  • বাইবেলে বিভিন্ন নেতাদের নামের তালিকা দেখলে বোঝা যায়, নেতৃত্ব কি প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটি পরিবারের হাতে ছিল নাকি বিভিন্ন পরিবার থেকে এসেছিল:

বংশের প্রধানগণ (সৈন্য গনণা)                ১৪৪৫ খ্রিঃপূঃ                    গণনা ১:৫-১৫

১ রুবেণ ইলীষুর শদেয়ূর ছেলে
২ শিমিয়োন শলুমীয়েল সূরীসদ্দয়ের ছেলে
৩ যিহুদা নহশোন অম্মীনাদবের ছেলে
৪ ইষাখর নথনেল সূয়ারের ছেলে
৫ সবূলূন ইলীয়াব হেলোনের ছেলে
৬ ইফ্রয়িম ইলীশামা অম্মীহূদের ছেলে
৭ মনঃশি গমলীয়েল পদাহসূরের ছেলে
৮ বিন্যামিন অবীদান গিদিয়োনির ছেলে
৯ দান অহীয়েষর অম্মীশদ্দয়ের ছেলে
১০ আশের পগীয়েল অক্রণের ছেলে
১১ গাদ ইলীয়াসফ দ্যূয়েলের ছেলে
১২ নপ্তালি অহীবঃ ঐননের ছেলে

গোষ্ঠীর নেতাগন, যাদের গুপ্তচর হিসেবে পাঠানো হ‍য়   ১৪৪৫ খ্রিঃপূঃ        গণনা ১৩:৪-১৬

১ রুবেণ শম্মূয় সক্কূরের ছেলে
২ শিমিয়োন শাফট হোরির ছেলে
৩ যিহূদা কালেব যিফুন্নির ছেলে
৪ ইষাখর যিগাল যোষেফের ছেলে
৫ সবূলূন গদ্দীয়েল সোদির ছেলে
৬ ইফ্রয়িম হোশেয় নূনের ছেলে
৭ মনঃশি গদ্দি সূষির ছেলে
৮ বিন্যামীন পলটি রাফুর ছেলে
৯ দান অম্মীয়েল গমল্লির ছেলে
১০ আশের সথুর মীখায়েলের ছেলে
১১ গাদ গ্যূয়েল মাখির ছেলে
১২ নপ্তালি নহবি বপ্সির ছেলে

যর্দনের পূর্বের এলাকা ভাগ করার সময়ের নেতাগণ     ১৪০৫ খ্রিঃ পূঃ        গণনা ৩৪:১৬-২৮

১ রুবেণ    
২ শিমিয়োন শমূয়েল অম্মীহূদের ছেলে
৩ যিহূদা কালেব যিফুন্নির ছেলে
৪ ইষাখর পলটিয়েল অসসনের ছেলে
৫ সবূলূন ইলীষাফণ পর্ণকের ছেলে
৬ ইফ্রয়িম কমূয়েল শিনের ছেলে
৭ মনঃশি হন্নীয়েল এফোদের ছেলে
৮ বিন্যামীন ইলীদদ কিশলোনের ছেলে
৯ দান বুক্কি যগলির ছেলে
১০ আশের অহীহূদ শলোমির ছেলে
১১ গাদ    
১২ নপ্তালি পদহেল অম্মীহূদের ছেলে

যদিও এই ৩টি নামের তালিকা শুধুমাত্র ৪০ বছরের তবুও শুধুমাত্র একটি নাম দুইবার উল্লেখ: যিফুন্নির ছেলে কালেব, যিনি ছিলেন বিশ্বস্ত গুপ্তচর। কিন্তু খেয়াল করুন একবারও নেতার ছেলে নেতা হন নি

প্রত্যেক বংশে নেতৃত্ব একটি শক্তিশালী পরিবারের হাতে থাকে নি, বরং নেতারা বংশের বিভিন্ন পরিবার থেকে এসেছিল।

যিহোশূয়ের কাছে মোশির নেতৃত্ত্ব হস্তান্তর

মোশি লেবীয় গোষ্ঠীর লোক (যাত্রা ২:১-১০, ৬:১৪-২৫), যিহোশূয় ইফ্রয়িম গোষ্ঠীর লোক (গণনা ১৩:৮,১৬)। এই ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে মোশির ছেলেরা নেতৃত্ব পায় নি। তারা যে নেতৃত্বের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন বা তাদের কোন রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার কোন উল্লেখ নেই। যিহোশূয় আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বস্ততার মাধ্যমে নেতৃত্বে আসেন এবং তার নেতৃত্বের বিষয় ঈশ্বর সমর্থন করেন (গণনা ২৭:১৮-২০, দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১৪-১৫)।

 

বিচারকর্তৃগণের সময়ে ইস্রায়েলের নেতৃত্ব

অৎনীয়েল যিহুদা বংশ বিচারকর্তৃগণ ৩:৯
এহূদ বিন্যামিন বংশ বিচারকর্তৃগণ ৩:১৫
শমগর    
দবোরা ইফ্রয়িম বংশ বিচারকর্তৃগণ ৪:৫
বারাক নপ্তালি বংশ বিচারকর্তৃগণ ৪:৬
গিদিয়োন মনঃশি বংশ বিচারকর্তৃগণ ৬:১১, যিহোশূয় ১৭:২
তোলয় ইষাখর বংশ বিচারকর্তৃগণ ১০:১
যায়ীর গাদ বংশ বিচারকর্তৃগণ ১০:৩
যিপ্তহ গাদ বংশ বিচারকর্তৃগণ ১১:১
বসন যিহূদা বংশ বিচারকর্তৃগণ ১২:৮
এলোন সবূলূন বংশ বিচারকর্তৃগণ ১২:১১
অবদোন ইফ্রয়িম বংশ বিচারকর্তৃগণ ১২:১৩-১৫
শিমশোন দান বংশ বিচারকর্তৃগণ ১৩:২

নেতৃত্ব বিভিন্ন বংশ থেকে এসেছিল, এখানে তা খুবই পরিষ্কার বুঝা যায়। কালানুসারে নেতৃত্ব মোটামুটি প্রত্যেক বংশ থেকে এসেছিল। শুধুমাত্র রুবেণ, শিমিয়োন ও আশের বংশ বিচারক হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে নি। শুধুমাত্র একবার নেতৃত্ব পর পর একই বংশ থেকে এসেছিল (গাদ বংশের যায়ীর > গাদ বংশের যিপ্তহ)। বিচারকর্তৃগণ পুস্তকে যায়ীর সম্বন্ধে তেমন কিছু উল্লেখ নেই, যিপ্তহের নিয়োগে যায়ীরের কোন হাত ছিল না (বিচার ১১:১-১১)।

অবীমেলকের রাজা হওয়ার প্রচেষ্টা                                                   বিচার ৯

ইস্র‌ায়েল যখন গিদিয়োনকে রাজা হিসেবে চায় তখন তিনি তা থেকে নিজেকে দূরে রেখে প্রজ্ঞার পরিচয় দেন (বিচার ৮:২২)। কিন্তু তার ছেলে অবীমেলক নিজেকে রাজা হিসেবে বসানোর চেষ্টা করেন, এমন কি তার নিজের অনেক ভাইকে খুনও করেন। তার রাজত্ব শীঘ্রই ভেঙ্গে যায় (বিচার ৯)।

 

বিচারক শমূয়েল এবং তার ছেলেরা                                                  ১ শমূয়েল ৮

শমূয়েল একজন মহান সৎ ভাববাদী ও বিচারক ছিলেন (১ শমূয়েল ১২:৩-৫)। যখন তিনি বৃদ্ধ হন, তিনি তার ছেলেদের বিচারক পদে নিয়োগ দেন (১ শমূয়েল ৮:১-২)। এটি বিচারকদের ইতিহাসে একবারও হয় নি। খুবই তাড়াতাড়ি সমস্যা দেখা দেয়: তার ছেলেরা দূর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন (১ শমূয়েল ৮:৩)। এই হতাশা হল ইস্রায়েলীয়দের রাজা চাওয়ার একটি কারণ।

 

ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইস্রায়েলীয়রা একজন রাজা দাবি করে                          ১ শমূয়েল ৮

একজন রাজা চাওয়া মানে একটি রাজতন্ত্র চাওয়া। রাজতন্ত্র মানে নেতৃত্ব পিতার কাছ থেকে ছেলেদের কাছে যায় (সে যোগ্য হোক বা অযোগ্য হোক)। রাজতন্ত্রে এসে একটি প্রশ্ন উঠে আসে “কোন পরিবার রাজত্ব করবে”?

> ১ম রাজা শৌল               বিন্যামিন বংশ           ১ শমূয়েল ১৩:১৩১৪

ঈশ্বর চেয়েছিলেন শৌল এবং তার পরিবারের রাজত্ব যেন চিরকাল স্থায়ী হয়। কিন্তু যখন শৌল বারবার পাপ করতে থাকেন এবং অনুতাপ করেন না, ঈশ্বর এই পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন।

> ২য় রাজা দায়ূদ               যিহুদা বংশ              ১ শমূয়েল ১৬:১২, ২ শমূয়েল ৭:১৭

ঈশ্বর ভাববাদী শমূয়েল দ্বারা দায়ূদকে রাজা হওয়ার জন্য অভিষিক্ত করেন। অনেক বিশ্বস্ততা এবং সততা দেখানোর পরে, ঈশ্বর নাথন ভাববাদীর দ্বারা দায়ূদ ও তার পরিবারকে চিরস্থায়ী রাজত্ব করার প্রতিজ্ঞা দেন।

> রাজা যারবিয়াম               ইফ্রয়িম বংশ             ১ রাজাবলি ১১:৩৮

দায়ূদের নাতি, শলোমনের ছেলে রহবিয়াম যখন ঈশ্বরের অবাধ্য হন, ঈশ্বর তার কাছ থেকে ১০ বংশকে ছিঁড়ে’ আলাদা করে ফেলেন এবং তাদেরকে ইফ্রয়িম বংশের যারবিয়ামের কাছে দেন। তিনি তার কাছে প্রতিজ্ঞা করে বলেন, “আমি দায়ূদের মতই তোমার বংশে রাজপদ স্থায়ী করব”। যদিও মূল চুক্তি দায়ূদের রাজবংশের সাথে হয়েছিল, ঈশ্বর এখানে স্বাধীনভাবেই অন্য একটি বংশকে নেতৃত্বের প্রতিজ্ঞা দেন। প্রতিজ্ঞাটি শর্তযুক্ত: ‘যদি তুমি … আমার পথে চল” যারবিয়াম তা করেন নি এবং ফলে তার বংশের রাজত্ব স্থায়ী হয় নি।

আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই যে ইস্রায়েলের রাজতন্ত্র খুবই দ্রুত আরও খারাপের দিকে যায় কারণ রাজতন্ত্রে নির্বাচিত বা প্রতিনিধিত্ব সরকার থাকে না এবং যোগ্য বা দক্ষ লোককে প্রাধান্য দেওয়া হয় না।

 

প্রথম ছেলে বনাম পরের ছেলেরা

বাইবেলে নেতৃত্ব কি শুধুমাত্র প্রথম ছেলের হাতে যায় (যেমন অনেক সংস্কৃতিতে হয়)?

আদি ২১:১২         ১ম পুত্র ইশ্মায়েল নয়, ২য় পুত্র ইসহাকের মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতি তৈরী ও মশীহের আগমন।

আদি ২৫:১৯         ১ম পুত্র এষৌ নয়, ২য় পুত্র যাাকোবের মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতি তৈরী ও মশীহের আগমন।

আদি ৪৮:২২     প্রথম পুত্র মনঃশি নয়, ২য় পুত্র ইফ্রয়িম খ্যাতি ও নেতৃত্ব লাভ করে।

পুরাতন নিয়ম        ১ম পুত্র রুবেণ নয় বরং ৪র্থ পুত্র যিহুদা খ্যাতি ও নেতৃত্ব লাভ করে। তার মধ্য দিয়ে মশীহের আগমন।

১ শমূ ১৬:১২     বড় ৭ ভাই রাজা হিসেবে অভিষেক পায় নি, ৮ম ছেলে দায়ূদ অভিষেক পান। তার মধ্য দিয়ে মশীহের আগমন।