ল্যান্ডা লিয়া কোপের চিন্তা যোগ দেওয়া হয়েছে
পারিপার্শ্বিক অবস্থা
  • ফরীশীদের সাথে যীশুর কিভাবে দ্বন্দ্ব হয়, এর উদাহরণ আমরা ৪টি সুসমাচারেই দেখি।
  • তবে একটি গল্প রয়েছে যা মাত্র যোহন লিখিত সুসমাচারে পাওয়া যায়, যেখানে যীশু এবং ফরীশীদের সাথে একটি বিষয়ে দ্বন্দ্ব ঘটে, যখন তারা তাঁর সামনে একটি ব্যভিচারী স্ত্রীলোককে দাঁড় করায়।
  • যীশুর পরিচর্যার কোন পর্যায়ে এই ঘটনা ঘটে? এই উত্তর দেওয়া সহজ না, কারণ যোহন তার সুসমাচার সময় অনুসারে সাজান নি বরং যিহূদীদের বিভিন্ন পর্ব অনুসারে সাজিয়েছেন।
  • যোহন লিখিত সুসমাচারে এই ঘটনার ঠিক পরে যীশু নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী দেন (যোহন ৮:২১-৩০) এবং পরবর্তীতে জন্ম থেকে অন্ধ একজনকে সুস্থতা দানের মধ্য দিয়ে ফরীশীদেরকে আরো উস্কিয়ে তোলেন (যোহন ৯)।
  • এই সব ঘটনা যিরূশালেমে ঘটে।
  • এর ঠিক পরে যীশু যিরূশালেম ছেড়ে চলে যান এবং আবার ফিরে এসে তিনি মৃত লাসারকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তোলেন (যোহন ১১), গাধার উপর চড়ে যিরূশালেমে প্রবেশ করেন (যোহন ১২:১২-১৯) এবং এরপর তিনি তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর আগে তাঁর শিষ্যদের সাথে সময় কাটান (যোহন ১৩-১৯)।
  • তাই চিন্তা করা যায় যে, যীশু ও ব্যভিচারী স্ত্রীলোকের ঘটনাটি হল যীশুর পরিচর্যার শেষের দিকে একটি ঘটনা, কিন্তু তাঁর জীবনের শেষ সপ্তাহের ঘটনা নয়।
ঘটনার ঠিক আগে ও পরে কি ঘটে
  • যোহন লিখিত সুসমাচার অনুসারে, যীশু অনেক দিন ধরে সবার সামনে পরিচর্যা-কাজ করে যাচ্ছেন যীশুর ভাইয়েরা তাঁকে জনপ্রিয়তা রক্ষা করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে (যোহন ৭:১-৫), তবুও যীশু তাদের সাথে না গিয়ে বরং একটু পরে কুঁড়ে-ঘরেরপর্ব পালন করার জন্য যান (যোহন ৭:১)।
  • মোশির আইন-কানুন অনুসারে, কুঁড়ে-ঘরের পর্বে সব যিহূদীদের যিরূশালেমে আসতে হয়, তাই পর্বের কারণে যিরূশালেম শহর ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকাগুলো দেশ এবং বিদেশ থেকে আসা যিহূদীদের দিয়ে পরিপূর্ণ।
  • এই পর্বে যীশু দাঁড়িয়ে জোরে ঘোষণা করেন যে, তিনি জীবন জলের উৎস (যোহন ৭:৩৭)। যারা তাঁর কাছ থেকে জল খাবে, তাদের অন্তর থেকে এই “জীবিত জলের নদী বইতে থাকবে”
  • মশীহ যে আসবেন, এই আশা অনেক যিহূদীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। অপর পক্ষে, অনেকে যীশুর বিষয়ে সন্দেহও করে (যোহন ৭:৪০-৪৪)।
  • ফরীশীরা ও পুরোহিতেরা ইতিমধ্যে যীশুকে গ্রেফতার করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে (যোহন ৭:৩২) কিন্তু সেনারা যীশুর কথা শুনে তাকে প্রেফতার করতে রাজি না, সেনাদের বক্তব্য: “লোকটা যেভাবে কথা বলে সেইভাবে আর কেউ কখনও বলে নি” (যোহন ৭:৪৬)।
  • কুঁড়ে-ঘরের পর্ব ৮ দিন ধরে পালন করা হত। যীশু সময়টি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন:
পরিস্থিতি যোহন ৮:১-৪

“১ এর পরে লোকেরা প্রত্যেকে যে যার বাড়ীতে চলে গেল, কিন্তু যীশু জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। ২ পরের দিন খুব সকালে যীশু আবার উপাসনা-ঘরে গেলে পর সমস্ত লোক তাঁর কাছে আসল। তখন যীশু বসে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। ৩-৪ এমন সময় ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা একজন স্ত্রীলোককে যীশুর কাছে নিয়ে আসলেন। স্ত্রীলোকটি ব্যভিচারে ধরা পড়েছিল। ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা সেই স্ত্রীলোকটিকে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যীশুকে বললেন, …।”

  • যীশু ভোর সকালে উপাসনা-ঘরে ইচ্ছুক ও আগ্রহী লোকদের কাছে শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
  • তাদের মধ্যে সম্ভবত এমন লোক ছিল যারা অত্যন্ত আশাবাদী যে, যীশুই হলেন মশীহ এবং শীঘ্রই তিনি তাঁর রাজ্য বিস্তার করবেন।
  • আবার, হতে পারে এমনও কিছু লোক ছিল যারা যীশুকে ভ্রান্ত মনে করত।
  • অথবা, হয়তো কেউ কেউ তাঁকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বেও ছিল।
  • যা হোক, পরবর্তী ঘটনার অনেক সাক্ষী আছে।
  • হঠাৎ করে পুরোহিতেরা ও ফরীশীরা একজন মহিলা যীশুর সামনে দাঁড় করায় এবং তাকে ব্যভিচারের দোষে অভিযুক্ত করে।
  • যীশুর সময়ে সাধারণত ব্যভিচারের মামলা কিভাবে চলত? আমরা নির্দিষ্ট কিছু জানি না।
মামলার উপস্থাপনা যোহন ৮:৪-৬

“ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা সেই স্ত্রীলোকটিকে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যীশুকে বললেন,“গুরু, এই স্ত্রীলোকটি ব্যভিচারে ধরা পড়েছে।” ৫ আইন-কানুনে মোশি এই রকম স্ত্রীলোকদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে আমাদের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আপনি কি বলেন?” ৬ তাঁরা যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্যই এই কথা বললেন, যাতে তাঁকে দোষ দেবার একটা কারণ তাঁরা খুঁজে পান।”

  • ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা এই ঘটনাটি যীশুকে “পরীক্ষা করার জন্যই” ব্যবহার করতে চান।
  • তারা ইতিমধ্যে উপসংহারে এসেছেন যে, যীশু হলেন ভণ্ড এবং প্রতারক, একারণে তাঁর মুখ অবশ্যই বন্ধ করা দরকার (যোহন ৭:৩২, ৪৫-৫২)।
  • তারা শুনে এসেছেন যে, যীশু আইন ভাঙ্গেন, তাই তারা এখন এমন একটি ঘটনা ঘটাতে চেষ্টা করেন যাতে যীশু যিরূশালেমে সকলের চোখের সামনেই আইন ভাঙ্গবেন।
  • তারা যীশুকে বলেন যে, মহিলাটি “ব্যভিচারে ধরা পড়েছে“।
  • হয়তো ধর্ম-শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি ব্যভিচারের সাক্ষী হলেন এবং সেই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেন যে, এই বিষয় নিয়ে তারা যীশুকে চ্যালেঞ্জ করবে তবে এর তুলনায় সম্ভাবনা অনেক বেশি যে, সম্পূর্ণ ঘটনা ছিল খুবই পরিকল্পিতভাবে ইচ্ছাকৃত ও নির্দিষ্টভাবে সাজানো একটি ঘটনা।
  • সম্ভাবনা বেশি যে, এই ব্যভিচার রিতিমতভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা ছিল এবং ধর্ম নেতারা তা জানতেন কিন্তু সাবধানবাণী বা পরামর্শ দিতেন না এবং প্রতিরোধের চেষ্টাও করতেন না।
  • হয়তো তারা একটি ব্যভিচার রত অবস্থার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাই যখন সেই সময় উপস্থিত হয়, তারা জানতে পেরে সঠিক সময়ে কামরায় ঢুকেছিলেন, ইত্যাদি। লজ্জার বিষয়, গল্পটি।
  • মোশির আইন-কানুন অনুসারে, ব্যভিচারের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই সমানভাবে দোষী এবং মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২২)।
  • কিন্তু এখানে নেতারা পুরুষ লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে মাত্র মহিলার বিরুদ্ধে মামলা চাপিয়েছেন।
  • যদি আইন বেছে বেছে একজনের বিরুদ্ধে চাপানো হয় কিন্তু আর একজনের বিরুদ্ধে নয় তবে এটাও হল অন্যতম একটি অন্যায়, এবং যা আইনের উদ্দেশের বিরুদ্ধে।
  • সবচেয়ে খারাপ সম্ভবনা হতে পারে যে, মহিলার সাথে ব্যভিচার করা পুরুষ লোকটি ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীদের সাথে হাত মিলিয়ে এই ব্যভিচার পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে এবং মহিলাটিকে এভাবে ইচ্ছাকৃত ব্যবহার করা হয়েছে।
তারা ঠিক কিভাবে যীশুকে সংকটে ফেলার চেষ্টা করে?
  • যীশু প্রায় নিজেকে স্বর্গস্থ পিতার প্রতিনিধি হিসাবে দাঁড় করান (যোহন ৫-৬ অধ্যায়)।
  • আইন-কানুন ব্যভিচারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদেশ দেয়, তাই যদি যীশু এখানে দয়া দেখাতে চান তবে তাঁকে এখানে ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, যার অর্থ এই যে, তিনি নিজের কথা উল্টিয়ে দেন।
  • যীশুর জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ ছিল যে, তিনি সবাইকে বিশেষভাবে দুর্বল ও পাপী লোকদের কাছে অদ্ভুত দয়া দেখান এবং তাদের যেমন তেমন (যে কোন পরিস্থিতিতে) গ্রহণ করেন।
  • নেতারা এখানে যীশুকে একটি কঠোর বিচারে বাধ্য করতে চেষ্টা করে যেন তাকে হয় আপোষ করতে হবে, না হয় তাঁকে তাঁর জনপ্রিয়তা হারাতে হবে।
  • কিন্তু আর একটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যদি তারা যীশুকে মহিলার মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করতে বাধ্য করতে পারে তবে এটি অন্যদিকে হবে একটি ফাঁদস্বরূপ।
  • রোমীয় আইন অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অধিকার মাত্র রোমীয় অফিসারদের হাতে ছিল, যেমন যীশুর মামলায় দেখা যায় (পিলাতের অনুমতি ছাড়া কোন মৃত্যুর শাস্তি এগিয়ে যায় না)।
  • এই অধিকার কোনো স্থানীয় নেতাদের হাতে ছিল না, একজন সাধারণ নাগরিকের হাতে তো অবশ্যই ছিল না।
  • এছাড়া রোমীয় আইন অনুসারে, ব্যভিচার কোন আইন বিরোধী অপরাধ ছিল না, অর্থাৎ রোমীয়দের চোখে ব্যভিচার প্রকৃতপক্ষে কোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল না।
  • যদি যীশু মহিলাটির মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করতেন, তবে তিনি রোমীয় আইন অনুসারে নিজেই মৃত্যুর শাস্তির যোগ্য অপরাধে দোষী হতেন।  রোমীয় আইন মহিলার মৃত্যু একটি ইচ্ছাকৃত নর-হত্যা, অর্থাৎ একটি খুন হিসাবে দেখত। তাই এভাবে নেতারা যীশুর উপর খুনের দোষ চাপিয়ে তাঁকে রোমীয় শাসনের কাছে সমর্পিত করতে পারবেন।
  • নেতাদের ব্যবহারের অন্যতম একটি নেতিবাচক দিক: যদিও মোশির আইন-কানুন অনুসারে ব্যভিচারের শাস্তি ছিল একটি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ, তবুও যিহূদীরা অনেক শতাব্দ ধরে মৃত্যুদণ্ড আর বিস্তার করে নি।
  • ঈশ্বর ইস্রায়েলকে সরকার নিযুক্ত করার অধিকার দেন (দ্বিতীয় বিবরণ ১:৯-১৮), সাথে তিনি তাদেরকে আইন-কানুন পরিবর্তন করার অনুমতিও দেন, উদাহরণস্বরূপ ১ শমূয়েল ৮ অধ্যায়ে দেখা যায়, ইস্রায়েল নির্বাচিত ও প্রতিনিধি গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্র স্থাপন করে।
  • এই পরিবর্তন আনার খারাপ ফলাফল কি হবে, ঈশ্বর এই বিষয়ে তাদেরকে কঠোর সাবধানবাণী দেন, কিন্তু যখন তারা তারপরেও রাজতন্ত্র চায়, ঈশ্বর তা ঘটতে দেন।
  • অন্যতম উদাহরণ হলেন রাজা দায়ূদ: যখন তিনি বৎশেবার সাথে ব্যভিচার করেন এবং বৎশেবার স্বামী ঊরিয়কে খুন করান, সেই সময় তিনি নিজের বিরুদ্ধে কোনো মৃত্যুর শাস্তি ঘটান না। যদি ইস্রায়েল জাতি তখনও মোশির আইন-কানুন অনুসারে চলত তবে তা হওয়ার কথা ছিল।
  • নতুন নিয়মের একটি উদাহরণ হলেন যোষেফ: যখন যোষেফ জানতে পারেন যে, তার বাগদত্তা-স্ত্রী মরিয়ম গর্ভবতী তখন তিনি মরিয়মের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন না (যেভাবে আইন-কানুন অনুসারে আবশ্যিক মৃত্যদণ্ড মরিয়মের হওয়ার কথা, দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২৩-২৪) বরং তিনি বিবাহের প্রতিজ্ঞা বাতিল করতে চেষ্টা করেন।
  • এই আচরণ বা ব্যবহারের জন্য বাইবেল যোষেফকে “সৎ লোক” অথবা “ধার্মিক” বলে অভিহিত করে (মথি ১:১৯)।
যীশু কিভাবে সাড়া দেন? – যোহন ৮:৬

“তখন যীশু নীচু হয়ে আংগুল দিয়ে মাটিতে লিখতে লাগলেন।”

  • কেন যীশু নীচু হন? কেন তিনি তাদের মুখমুখী হয়ে সাড়া দেন না? কেন তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উত্তর দেন না? নীচু হয়ে তিনি কি লেখেন?
  • হতে পারে, নীচু হয়ে লেখার এই আচরণ দ্বারা যীশু তাঁর মুহূর্তের চাপ, রাগ ও দাবির শক্তি ভাঙ্গতে চেষ্টা করেন।
  • তিনি সময় তৈরি করেন যেন চেতনা এবং পবিত্র আত্মা লোকদের অন্তরে কথা বলতে সুযোগ পান। এছাড়া সম্ভাবনা বেশি যে, তিনি এই মুহূর্তে নিজেই পবিত্র আত্মার সাহায্য ও স্বর্গস্থ পিতার পরিচালনা অন্বেষণ করেন এবং উপস্থিত লোকদের চেতনা পাওয়ার জন্য পিতার কাছে বিনতি করেন।
  • যীশু আঙ্গুর দিয়ে কি লেখেন? হয়তো তিনি অন্যদের পড়ার মত কিছু লেখেন না বরং সময় তৈরি করার জন্য লেখেন।
  • অন্যতম একটি সম্ভাবনা হল: যোহন সুসমাচারের কিছু হস্তলিখিত দলিল পাওয়া যায় যাতে ৬ পদ এভাবে দেওয়া হয়েছে: “এবং তিনি তাদের সবারই পাপ লিখে রাখলেন”
  • হয়তো যীশু তাদের চেতনার জন্য এমন কোন আইন আঙ্গুল দিয়ে লেখেন, যা বাস্তবিকপক্ষে তারাই অমান্য করছেন অথচ নিজেদেরকে শাস্তির উপযুক্ত হিসাবে স্বীকার করেন না।

“৭ কিন্তু তাঁরা যখন কথাটা বারবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন তখন তিনি উঠে তাঁদের বললেন, “আপনাদের মধ্যে যিনি কোন পাপ করেন নি তিনিই প্রথমে ওকে পাথর মারুন।’ ৮ এর পরে তিনি নীচু হয়ে আবার মাটিতে লিখতে লাগলেন। ৯ এই কথা শুনে সেই নেতাদের মধ্যে বুড়ো লোক থেকে আরম্ভ করে একে একে সবাই চলে গেলেন।”

  • তারা এত কষ্ট করে এত স্মার্ট একটি ফাঁদ তৈরি করেছেন যে, এই সুযোগ হারাতে কোনভাবেই তারা রাজি না।
  • তারা মনে করে যে, তারা যীশুকে একজন আইন-বিরোধী অপরাধযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে প্রমাণিত করতে পারবেন এবং এভাবে তাকে ধরতে তারা সমর্পিত।
  • তাদের প্রচেষ্টা দেখে যীশু তাদের উত্তর দেন: “আপনাদের মধ্যে যিনি কোন পাপ করেন নি তিনিই প্রথমে ওকে পাথর মারুন।”
  • একটি সরল, নম্র ও গভীর অর্থের বাক্য দিয়ে তিনি তাদের ফাঁদ ভেঙ্গে দেন:
  • তিনি তাদেরকে নিজের হৃদয় পরীক্ষা করতে চ্যালেঞ্জ করেন।
  • তিনি তাদের আত্ম-ধার্মিকতা অনাবৃত করেন: “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচার কোরো না।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ কোন স্ত্রীলোকের দিকে কামনার চোখে তাকায় সে তখনই মনে মনে তার সংগে ব্যভিচার করল” (মথি ৫:২৭-২৮)।
  • অবশ্যই তারা এত ধার্মিক নন যে, তারা কামনার চিন্তার উর্ধ্বে রয়েছেন, অথবা মনে মনে পাপের উর্ধ্বে আছেন।
  • যীশু তাদের কঠিন হৃদয় চ্যালেঞ্জ করেন: তারা এই ব্যভিচার ঘটতে দিয়েছিলেন, তারা তা ঘটতে লক্ষ্য রেখেছিলেন, কিন্তু তারা তা প্রতিরোধ করেন নি, বিপরীতে এই দু’জনকে চেতনাও দেন নি। তারা ধার্মিকতা বিস্তারের জন্য এসব করেছেন, এমন নয়।
  • যীশু চ্যালেঞ্জ করেন যে তারা মোশির আইন বেছে বেছে তাদের প্রয়োজন ও সুবিধা অনুসারে প্রয়োগ করে।
  • তারা ব্যভিচারী স্ত্রীলোকটির মৃত্যু চান কিন্তু দ্বিতীয় বিবরণে আরও অনেক আইন আছে, যার বিস্তার বা শাস্তির জন্য তারা কিছু করে না।
  • তাদেরই প্রয়োজন অনুসারে তারা মহিলাকে দোষী বানায় কিন্তু পুরুষ লোকটিকে ছেড়ে দেয়।
  • বেছে বেছে তারা মহিলার দোষ ধরে কিন্তু নিজেদের দোষ তারা ধরে না।
  • রোমীয় আইনের বিষয়েও যীশু তাদের ফাঁদ ভেঙ্গে দেন:
  • মোট কথা তিনি তাদেরকে বলেন ‘যদি তোমরা এখানে ঈশ্বরের আইন বিস্তার করার জন্য এত সমর্পিত, তবে তোমরা নিজেরাই রোমীয় আইন ভেঙ্গে খুনী হয়ে যাও!’
  • ‘এবং যদি তা-ই কর তবে তোমরা নিজেরাই নিজেদের অপরাধী প্রমাণিত করছ এবং এই অবস্থায় অন্যের বিচার করার অধিকার তোমাদের কি করে থাকে?’
  • যীশু আবারও নীচু হয়ে মাটিতে লিখতে শুরু করেন।
  • যীশু এখানে সবার সামনে বিতর্ক করে নিজের জয় প্রকাশ করতে চান না।
  • নেতাদের লজ্জিত করা যীশুর উদ্দেশ্য নয় বরং তাদের চেতনা দেওয়াই তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য।
  • তবুও যীশুর কথাগুলো ধারালো, তিনি তাদের সরু মতবাদ এবং ভুল উদ্দেশ্য দেখিয়ে দেন।
  • অবশেষে চেতনা তাদের হৃদয়ে কাজ করতে শুরু করে।
  • একজনের পর একজন স্ত্রীলোকটিকে ও যীশুকে ছেড়ে চলে যান, হয়তো রাগে – অথবা লজ্জায়।

“৯ যীশু কেবল একা রইলেন আর সেই স্ত্রীলোকটি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ১০ যীশু উঠে সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তাঁরা কোথায়? কেউ কি তোমাকে শাস্তির উপযুক্ত মনে করেন নি?” ১১ স্ত্রীলোকটি উত্তর দিল, “না হুজুর, কেউই করেন নি।” তখন যীশু বললেন, “আমিও করি না। আচ্ছা যাও; পাপে জীবন আর কাটায়ো না।”

  • যীশু মহিলার কাছে বিচারক হিসাবে কথা বলেন না বরং এমন একজন হিসাবে কথা বলেন যিনি যত্নশীল এবং তার মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করেন।
  • যীশু সৎ, ধার্মিক ও পাপহীন, তাই এই স্ত্রীলোকটিকে বিচার করার তাঁর নৈতিক অধিকার থাকত।
  • যীশুর ধার্মিকতা মহিলাকে বিচার করবে না বরং তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা এই ধার্মিকতা স্ত্রীলোকটিকে প্রস্তাব করা হবে।
  • তবুও যীশু মহিলাটিকে তার অনৈতিক জীবনের বিষয়ে সংশোধন করেন “পাপে জীবন আর কাটায়ো না”
  • ব্যভিচার আসলে পাপ, ব্যভিচার সবাইকে ঠকায়, তা জীবন ধ্বংস করে।
  • প্রথমে যীশু স্ত্রীলোকটিকে পাপের শাস্তি থেকে মুক্ত করেছেন, এখন তিনি তাকে পাপের ক্ষমতা থেকে মুক্ত করতে চান।
  • তিনি চান যেন স্ত্রীলোকটি ব্যভিচারের দোষ, ক্ষতি এবং ক্ষমতা থেকে উদ্ধার পায় এবং যেন সে অনুগ্রহ ও পবিত্রতায় পূর্ণ নৈতিকভাবে একটি আর্শীবাদের জীবন-যাপন শুরু করে