পরমগীত বাইবেলের পুস্তকগুলোর মধ্যে বিশেষ। পরমগীতে এমন সুক্ষ্ম বিষয়, এমন সুন্দর বর্ণনা, কামনার এমন প্রকাশ এবং ইন্দ্রিয় পরায়ণ এমন রূপক ভাষা পাওয়া যায়। একারণে পুস্তকটি কিভাবে বুঝতে হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছে।
পরমগীত পুস্তকের সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যা হল এই: পুস্তকটি কাহিনীভিক্তিক রূপক, অর্থাৎ পুস্তকটি হল মানুষের জন্য ঈশ্বরের প্রেমের একটি রূপক বর্ণনা।
- যিহূদীরা পুস্তকটিকে ইস্রায়েল জাতির জন্য ঈশ্বরের প্রেমের একটি আবেগময় বর্ণনা হিসাবে বুঝত। পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরকে অনেক বার একজন স্বামীর সাথে তুলনা করা হয়েছে (যেমন হোশেয় পুস্তকে), যার স্ত্রী (অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতি) ব্যভিচার করে। তাই এই ব্যাখ্যা স্বাভাবিক।
- খ্রিষ্টানেরা সাধারণত পরমগীত পুস্তকটিকে মণ্ডলীর জন্য যীশুর আবেগময় ও ত্যাগ-স্বীকারের প্রেমের একটি বর্ণনা হিসাবে ব্যাখ্যা করে। নতুন নিয়মে যীশু ও মণ্ডলীর সম্পর্ক একটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সাথে তুলনা করা হয়েছে (ইফিষ ৫:৩১-৩২, ২ করি ১১:১-২, প্রকাশিত ২১:২)। তাই এই ব্যাখ্যাও স্বাভাবিক।
এই দু’টি ব্যাখ্যা উপযুক্ত ব্যাখ্যা যদিও সম্ভাবনা বেশি যে, তা পুস্তকের প্রাথমিক অর্থ নয়, অর্থাৎ লেখক এই উদ্দেশ্যে পুস্তকটি লেখেন নি।
প্রাথমিকভাবে পরমগীত পুস্তকটি হল পুরুষ ও মহিলার মধ্যে আকর্ষণ, প্রেম, বিবাহ ও যৌনসম্পর্ক সম্বন্ধীয় একটি অতি সুন্দর ও প্রাণবন্ত কবিতা। রাজা শলোমনের নাম পুস্তকে কয়েক বার উল্লিখিত, তাই চিন্তা করা হয় যে, তিনি পুস্তকের লেখক, যদিও তাকে গল্পের নায়ক হিসাবেও পাওয়া যায়। ইস্রায়েল দেশে এবং এমন কি ইস্রায়েল দেশের বাইরেও শলোমন পণ্ডিত হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন এবং প্রজ্ঞা শেখানোর ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা ছিল। তাই চিন্তা করা হয় যে, শলোমন পরমগীত পুস্তকটি ইস্রায়েল জাতিকে আকর্ষণ, প্রেম, বিবাহ ও যৌন সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য লিখেছেন।
এই ব্যাখ্যা সবচেয়ে সরাসরি ব্যাখ্যা, কিন্তু তা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ওঠে: যদিও শলোমন অনেক ক্ষেত্রে খুবই প্রজ্ঞাবান ছিলেন তবুও মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি অনেক ভ্রান্ত ছিলেন এবং বিভিন্নভাবে পাপ করতেন। তিনি অসংখ্য বিবাহ করেছিলেন (তার ৭০০জন স্ত্রী ও ৩০০জন উপস্ত্রী ছিল)। তিনি ঈশ্বরের আদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেবতাপূজারী বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করেছিলেন ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন (১ রাজা ১১:৩)। মহিলাদের বিষয়ে শলোমনের অত্যন্ত নিচু দৃষ্টি ছিল (উপদেশক ৭:২৬,২৮)। তার পারিবারিক জীবন বলতে কিছু ছিল না এবং সম্ভাবত তিনি বহুসংখ্যক সন্তানদের অবহেলা করেছিলেন। এই সব বিষয়ে তিনি ইস্রায়েল জাতির জন্য খুব নেতিবাচক একটি উদাহরণ। ঈশ্বর অবশ্যই যে কোন একজনের দ্বারা কথা বলতে পারেন, যত পাপী হোক, কিন্তু তিনি কি এই পুস্তকে তাই করেছেন? একারণে কেউ কেউ পরমগীত পুস্তকের আর একটি ব্যাখ্যা দেয়: হয়তো পুস্তকটি শলোমনের দ্বারা লিখিত নয় বরং তার উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে। প্রথম পদের কথা “এই গান শলোমনের” (পরমগীত ১:১), এই পদের দু’টি অনুবাদ সম্ভব: “শলোমনের দ্বারা” অথবা “শলোমনের জন্য”। হয়তো শলোমনের প্রাসাদে একজন ঈশ্বর ভক্ত জ্ঞানী লোক ছিলেন, যিনি লক্ষ্য করছিলেন শলোমন কিভাবে মহিলা, বিবাহ ও পরিবারের ক্ষেত্রে খারাপ পথে চলে যাচ্ছেন। হয়তো তিনি শলোমনকে কেন্দ্র করে একটি সুন্দর প্রেমের কবিতা লেখেন যাতে শলোমনের জন্য যথেষ্ট তোষামোদ আছে কিন্তু যাতে একটি কঠোর চ্যালেঞ্জও পাওয়া যায়। হয়তো তিনি একজন প্রেমিক ও তার প্রেমিকা নিয়ে একটি অতি সুন্দর প্রেমের গান লেখেন, একটি একবিবাহের ঘনিষ্ঠ ও আবেগপূর্ণ সম্পর্ক, একটি অবিভক্ত মনোযোগ ও সমর্পণ, যাতে তৃতীয় কেউ থাকতে পারে না। হয়তো এই জ্ঞানী লোক বা শিল্পী শলোমনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান, তার জীবনের এই অবস্থার কারণে তিনি নিজেকে কিভাবে বঞ্চিত করছেন।
পরমগীত পুস্তকে একটু লুকানোভাবে বেশ কিছু টানাটানি বা সংগ্রাম পাওয়া যায়। গানের প্রেমিকা বা কনে বা স্ত্রী তার স্বামীর অবিভক্ত প্রেম পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেকে ৬০জন স্ত্রী ও ৮০জন উপস্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খুঁজে পান (পরম ৬:৮-১০, ৮:১৩)। তিনি স্বামীকে আবেগপূর্ণ আহ্বান করেন যেন তিনি তাকে “সীলমোহরের মত” তার অন্তরে রাখেন (পরম ৮:৬-৭)। পুস্তকে এই সংগ্রামের বিষয় দেখে বুঝা যায়, কেন এই জ্ঞানী লোক শলোমনের কাছে এই স্পর্শকাতর কথা পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন। ৬০জন স্ত্রী ও ৮০জন উপস্ত্রীর উল্লেখের অর্থ হয়তো এই যে, শলোমনের বয়স এখনও তেমন বেশি হয় নি, জীবনের শেষে তার ৭০০ স্ত্রী ও ৩০০ উপস্ত্রী থাকবে। হয়তো সেই জ্ঞানী লোক শলোমনের আর একটি বিবাহের অনুষ্ঠানে (৬১ নম্বর স্ত্রী হয়তো) এই গান উপস্থাপনা করেন। এই অর্থে পরমগীত পুস্তকটি হল একবিবাহের বা অবিভক্ত প্রেমের একটি উৎযাপন ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধে একটি লেখা, কারণ বহুবিবাহ মহিলাদের মূল্য কমায় এবং পুরুষদেরও ঠকায়।
যদিও পরমগীত অনেক খোলাখুলিভাবে আকর্ষণের, প্রেমের ও যৌনতার কথা বলে, তবুও তা নৈতিকতাকে সমর্থন করে: পুস্তকটিতে বিবাহের আগে যৌনতার কথাগুলো হল আবেগপূর্ণ কল্পনা (পরমগীত ১-২), এবং কবিতাটি শেষ হয়ে যায় একটি শক্তিশালী উৎসাহের মধ্য দিয়ে: যৌন ক্ষেত্রে যাদের স্বনিয়ন্ত্রণ আছে তারা সম্পর্কে স্থিরতা ও শান্তি নিয়ে আসে (পরমগীত ৮:৮-১০)।
যদিও পরমগীতে ইন্দ্রিয় পরায়ণ, আবেগপূর্ণ এবং এমন কি কামনার কথা পাওয়া যায়, তারপরেও পুস্তকটিতে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয় বন্ধুত্বের উপর, একসাথে সময় কাটানোর উপর, কথা ও যোগাযোগের উপর, সহভাগিতা, দুইজনের ভাগাভাগি ও স্বেচ্ছায় সাড়া দানের উপর। পরমগীতে প্রেমিক ও প্রেমিকা পরস্পরকে অনুরোধ, আহ্বান ও আমন্ত্রণ দিতে থাকেন। তারা স্বাধীন ইচ্ছায় পরস্পরের প্রতি সাড়া দিতে থাকেন। দাবি করা, অধিকার বিস্তার করা বা জোর করা, এসব এই গানে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র পাওয়া যায় নিজেকে স্বেচ্ছায় দানের কথা।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে খ্রিষ্টান ধর্মে একটি নেতিবাচক শিক্ষা প্রচলিত ছিল যে, যৌনতা শুধুমাত্র অনুমোদিত যদি তা প্রজনন বজায় রাখার জন্য করা হয়। পরমগীতে অন্য একটি সুর পাওয়া যায়: যদিও অবশ্যই যৌনতা দ্বারা প্রজনন বজায় রাখা হয় তবুও তা যৌনতার শুধুমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বরং স্বামী-স্ত্রীর আনন্দ ভোগ, সহভাগিতা ও একতার জন্যও তা দেওয়া হয়েছে।
যদিও ভিন্ন লোক এই পুস্তকের বেশ ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা করে, এই গানের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
পরমগীতের অনন্যতা
যদিও বাইবেলে কয়েকটি বিবাহের অনুষ্ঠানের বর্ণনা পাওয়া যায় এবং গীতসংহিতায় একটি গীত বিবাহ দিনে ব্যবহৃত হত (গীত ৪৫) তবুও পরমগীত পুস্তক তার চেয়ে অনেক ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে, পুস্তকটি বাইবেলের পুস্তকগুলোর মধ্যে অদ্বিতীয়। ঐযুগের অন্যান্য কিছু প্রেম কবিতার সংগ্রহগুলো পাওয়া যায়, যৌনতার বর্ণনা করার কবিতাও পাওয়া যায়, কিন্তু সেই লেখাগুলো পরমগীত থেকে বেশ ভিন্ন। যিহূদী রব্বী আকীবা পরমগীত পুস্তকের নাম দিতেন ‘মহাপবিত্র স্থান’ এবং যিহূদীরা ৩০ বছরের নিচের অবিবাহিত লোকদের পরমগীত একা পড়তে নিষেধ করত। তবুও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে খ্রিষ্টান লেখকেরা এই পুস্তকটি থেকে বেশি করে উদ্ধৃতি করতেন এবং মধ্যযুগে পরমগীত ছিল সবচেয়ে বেশি কপি করা লেখাদের মধ্যে একটা।
পরমগীত পুস্তকের ভাষা হল প্রাণবন্ত, বিলাসী, ইন্দ্রিয়পরায়ণ, আবেগপ্রবণ এবং এমন কি কামনা সরাসরি প্রকাশ করে। লেখাটিতে অনেক রূপক ভাষা ব্যবহৃত এবং প্রত্যেকটি রূপকের বিভিন্ন অনুবাদ দেওয়া সম্ভব (ভদ্র ভাষা থেকে কামনার ভাষা পর্যন্ত)। সাধারণত বাইবেলের অনুবাদক ভদ্রদিকে টেনে অনুবাদ করেছেন, কিন্তু পরমগীতের ভাষা আসলে অতি শক্তিশালী।
পরমগীত পুস্তকের বিভিন্ন ব্যাখ্যা
পরমগীত পুস্তকে ব্যবহৃত ইন্দ্রিয় পরায়ণ ভাষা ও শক্তিশালী রূপকের কারণে পুস্তকটি কিভাবে বুঝতে হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছে।
১ পরমগীত কাহিনীভিক্তিক রূপক
সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যা হল এই: পুস্তকটি কাহিনীভিক্তিক রূপক হিসাবে বুঝতে হয়, অর্থাৎ পুস্তক হল মানুষের জন্য ঈশ্বরের প্রেমের একটি রূপক বর্ণনা।
- যিহূদীরা পুস্তকটিকে ইস্রায়েল জাতির জন্য ঈশ্বরের প্রেমের একটি আবেগময় বর্ণনা হিসাবে বুঝে। পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরকে অনেক বার একজন স্বামীর সাথে তুলনা করা হয়েছে (যেমন হোশেয় পুস্তকে), যার স্ত্রী (অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতি) ব্যভিচার করে। তাই এই ব্যাখ্যা স্বাভাবিক।
- খ্রিষ্টানেরা সাধারণত পরমগীত পুস্তকটি মণ্ডলীর জন্য যীশুর আবেগময় ও ত্যাগ-স্বীকারের প্রেমের একটি বর্ণনা হিসাবে বুঝে। নতুন নিয়মে যীশু ও মণ্ডলীর সম্পর্ক একটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সাথে তুলনা করা হয়েছে (ইফিষ ৫:৩১-৩২, ২ করি ১১:১-২, প্রকাশিত ২১:২)। তাই এই ব্যাখ্যাও স্বাভাবিক।
এর বিরুদ্ধে বলতে হয় যে, বাইবেলে যেখানে একটি গল্প কাহিনীভিক্তিক রূপক হিসাবে বুঝতে হয় সেখানে তা পরিষ্কারভাবে কাহিনী হিসাবে ঘোষিত (বিচার ৯:৮-১৫, যিহিষ্কেল ১৬, গালা ৪:২৪)। পরমগীতে এই ধরণের ঘোষণা নেই। কাহিনীভিত্তিক রূপকের ব্যাখ্যা নিয়ে পরমগীতের ভাষা দেখেও প্রশ্ন ওঠে: ঈশ্বরের প্রেমের বর্ণনা দিতে গেলে এই ধরণের ভাষা কি উপযুক্ত: “তোমার গড়ন খেজুর গাছের মত, আর বুক দু’টা যেন আংগুরের দু’টা থোকা। আমি বললাম, “আমি খেজুর গাছে উঠব, আমি তার ফল ধরব” (পরমগীত ৭:৭)।
তাই যদিও পরমগীত পুস্তকটি কাহিনীভিত্তিক রূপক হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায় তবুও সম্ভাবনা কম যে, লেখক প্রাথমিকভাবে তা এভাবে বুঝাতে চেয়েছিলেন। অথচ এই ব্যাখ্যার কারণে অনেক চমৎকার বই, অদ্ভূত শিল্প এবং অনেক উৎসাহ তৈরি হয়েছে।
এই ব্যাখ্যাটি যিহূদীদের ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে অনেক প্রচলিত। কিন্তু এই অধ্যয়নে তার চেয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
২ আকর্ষণ, প্রেম, বিবাহ ও যৌন সম্পর্কের বিষয়ে ইস্রায়েল জাতির জন্য শলোমনের শিক্ষা
আবার অনেকে পরমগীত পুস্তক এই বলে ব্যাখ্যা করে: পুস্তকটি হল পুরুষ ও মহিলার মধ্যে আকর্ষণ, প্রেম, বিবাহ ও যৌন সম্পর্ক সম্বন্ধীয় একটি সুন্দর, প্রাণবন্ত কবিতা। সম্ভাবনা বেশি যে, পুস্তকটির লেখক হলেন রাজা শলোমন (পরম ১:১) যাকে পুস্তকে প্রধান নায়ক হিসাবেও পাওয়া যায়। ইস্রায়েল জাতি এবং এমন কি অন্য জাতিগুলোর মধ্যে শলোমন তার প্রজ্ঞার জন্য অতি বিখ্যাত ছিলেন, তাই পুস্তকটি হল আকর্ষণ, প্রেম, বিবাহ ও যৌন সম্পর্কের বিষয়ে শলোমনের একটি বর্ণনা, শিক্ষা বা আদর্শ প্রকাশ।
মহিলাদের প্রতি তার আকর্ষণের জন্য রাজা শলোমনের বেশ নাম ছিল (১ রাজা ১১:২) এবং তিনি হাজার পাঁচটা গান রচনা করেছিলেন (১ রাজা ৪:৩২), তাই পরমগীত এর মধ্যে একটি হতে পারে। এছাড়া শলোমন গাছের এবং “জীব-জন্তু, পাখী ও বুকে-হাঁটা প্রাণী ও মাছেরও বর্ণনা করেছেন” (১ রাজা ৪:৩৩) এবং পরমগীত পুস্তকে আসলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর কথা পাওয়া যায়।
পরমগীতের এই ব্যাখ্যাও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রচলিত ছিল কিন্তু ব্যাখ্যাটি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আপত্তি উঠানো যায়। শলোমন যদিও অনেক ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাবান ছিলেন, প্রেম ও বিবাহের ক্ষেত্রে তিনি কোন রকম আদর্শ নন: তার সীমানার বাইরে বহুবিবাহ (৭০০জন স্ত্রী ও ৩০০জন উপস্ত্রী), দেবতাপূজারী মহিলাদের প্রতি তার আকর্ষণ (১ রাজা ১১:১-৩), মহিলাদের সম্বন্ধে তার অতি নিচু চিন্তা (উপদেশক ৭:২৬,২৮), তার (সম্ভাবনা বেশি যে) অতি সংখ্যক সন্তান যারা তার অনুপস্থিতির কারণে কোন পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে পারে না। ঈশ্বর কি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরণের একজন পতিত মানুষের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষা দিতে পারেন? ঈশ্বর অবশ্য এমন একটি গাধার মধ্য দিয়ে কথা বলেছিলেন (গণনা ২২:২৮) কিন্তু তিনি কি প্রকৃতপক্ষে এই ক্ষেত্রে শলোমনকে শিক্ষক বা আদর্শ হিসাবে দাঁড় করতে চাইতেন?
৩ পরমগীত হল একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ প্রজ্ঞাবান লোক দিয়ে রচিত শলোমনের কাছে একটি সংবাদ
শলোমনের জীবন প্রেম ও বিবাহের ক্ষেত্রে আসলে আদর্শ নয় বলে কেউ কেউ পরমগীতের এই ব্যাখ্যা দেন: হয়তো গানটি শলোমন দ্বারা রচিত নয় কিন্তু শলোমনের জন্যই লেখা। পরমগীত ১:১ পদ বলে “এই গান শলোমনের”। ইব্রীয় ভাষায় এই পদের দু’টি অনুবাদ দেওয়া যায়: ‘শলোমন দ্বারা রচিত গান’ অথবা ‘শলোমনের জন্য গান’।
হয়তো পরমগীত শলোমনের কাছেই লেখা। হয়তো শলোমনের রাজপ্রাসাদে একজন ঈশ্বর ভক্ত জ্ঞানী লোক ছিলেন, যিনি শলোমনের জীবন এবং বিশেষভাবে বহুবিবাহ ও যৌন ক্ষেত্রে তার সীমার অতিক্রম দেখে অনেক দুশ্চিন্তা করেন। কিন্তু এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজাকে কিভাবে কথা বলা যায়? কিভাবে তাকে চেতনা বা সাবধানবাণী দেওয়া যায়? শলোমনকে তা এমন মিষ্টিভাবে বলতে হয়, যে তিনি তাতে কান দিতে রাজি হন। কিন্তু একই সাথে তাকে এমন কথা বলতে হয়, যাতে তিনি চেতনা পান এবং নিজের জীবন মূল্যায়ন করেন। পরমগীত ঠিক এই ধরণের একটি লেখা: অতি সুন্দর একটি কবিতা, যাতে তোষামোদ আছে, যাতে প্রেমের সৌন্দর্য উৎযাপন করা হয় কিন্তু যাতে বুঝা যায় যে, শুধুমাত্র একজনের কাছে সমর্পিত একটি একবিবাহের সম্পর্কে অধিক গভীরতা ও ঘনিষ্ঠতা থাকতে পারে।
আসলে পরমগীত যদিও অত্যন্ত সুন্দর, তার মধ্যে একটি টানাটানি বা টেন্সন প্রকাশিত: কনে রাজার অবিভক্ত আকর্ষণ ও মনোযোগের জন্য যুদ্ধ করেন কারণ তিনি নিজেকে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খুঁজে পান: ৬০জন স্ত্রী ও ৮০জন উপস্ত্রী (পরম ৬:৮-১০,১৩)। কনে অনুরোধ করেন, যেন শলোমন তাকে হৃদয়ের বা অন্তরের সীলমোহর করে ধরে রাখেন (পরম ৮:৬-৭)। কিছু চ্যালেঞ্জ করার মত পদও পাওয়া যায়, যেমন “আমার নিজের আংগুর ক্ষেত আছে, যা কেবল আমিই দিতে পারি। হে শলোমন, সেই বারো কেজি রূপা তোমারই থাকুক” (পরম ৮:১২)।
৬০জন স্ত্রী ও ৮০জন উপস্ত্রীর কথা থেকে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়, পুস্তকটি কোন সময় লেখা: সম্ভবত পুস্তকটি শলোমনের রাজত্বের শুরুর দিকে লেখা, যখন তিনি ইতিমধ্যে ৬০জন স্ত্রী গ্রহণ করেছেন, কিন্তু এখনও তার জীবনের শেষ অবস্থা তৈরি হয় নি (৭০০ স্ত্রী, ১ রাজা ১১:২)। হয়তো সেই ঈশ্বর ভক্ত জ্ঞানী লোক পরমগীতের গানটি ৬১ নম্বর স্ত্রীর সাথে বিবাহের অনুষ্ঠানের জন্য লিখে তা সবার সামনে উপস্থাপনা করেছেন। এই ব্যাখ্যা যদি ঠিক হয়, তবে পরমগীত হল একজন প্রেমিক ও একজন প্রেমিকার মধ্যে সমর্পিত বিবাহের একটি উৎযাপন এবং বহুবিবাহ নিয়ে একটি সাবধানবাণী, কারণ বহুবিবাহ মহিলাদের তুচ্ছ করে এবং পুরুষদেরও ঠকায়।
৪ পরমগীত হল বিভিন্ন প্রেম কবিতার একটি সংগ্রহ
আবারও কেউ কেউ বলে যে, পরমগীত হল ভিন্ন ভিন্ন যুগের ও ভিন্ন ভিন্ন লেখকের প্রেম কবিতাগুলোর একটি সংগ্রহ।
এই ব্যাখ্যায় অস্বীকার করা হয় যে পরমগীত পুস্তকের একটি সুন্দর সার্বিক কাঠামো আছে। এছাড়া অনেক প্রশ্ন থেকে যায়: কেন এই কবিতার সংগ্রহ? কার জন্য সংগ্রহ? কি অনুসারে কবিতাগুলো পছন্দ করা হয়েছে? এরকম একটি সংগ্রহ কেন লোকেরা ঈশ্বরের অধিকারগত বাক্য হিসাবে মানবে?
৫ পরমগীত হল শলোমনকে হাস্যকর বানানোর একটি কবিতা
এই আধুনিক ব্যাখ্যা অনুসারে পরমগীত হল একটি কবিতা, যেখানে একজন রাখাল এবং শলোমন দুইজন একটি সুন্দরী মেয়ের আকর্ষণ পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করেন এবং রাজা শলোমন জাঁকজমক থাকা সত্ত্বেও হেরে যান।
পরমগীতের ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা থাকলেও সবাই রাজি যে, কবিতাটি শলোমের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যিনি ৯৭১ থেকে ৯৩১ খ্রীষ্টপূর্বে যিরূশালেমে রাজত্ব করতেন। পরমগীত তাই সেই সময়ে লেখা।
পরমগীতে ব্যবহৃত ভাষা ও কাঠামো
পরমগীত পুস্তকটি বাতিদান কাঠামো অনুসারে সাজানো হয়েছে। আবাস-তাম্বুতে বাতিদানে মাঝের একটি শাখার বামে দানে ৩টি জোড়া শাখা থাকত। ঠিক তেমনি পরমগীতের প্রথম অংশের (ক১) মিল আছে শেষ অংশের সাথে (ক২), দ্বিতীয় অংশের (খ১) মিল আছে শেষের আগের অংশের সাথে (খ২) ইত্যাদি (চার্ট দেখুন)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা ঠিক মাঝখানে থাকে (ঘ), পরমগীতে তা হল বিবাহের অনুষ্ঠান ও প্রথম যৌনসম্পর্ক (পরম ৩:৬ – ৫:১ক)।
পরমগীতের রচনা এমন যে তা সহজেই একটি মঞ্চে নাটক হিসাবে উপস্থাপনা করা যায়। নাটকে দু’টি প্রধান চরিত্র থাকে (প্রেমিক ও প্রেমিকা) এবং একটি দল, যার সাথে প্রধান ব্যক্তি আলোচনা করে। গ্রীক নাটক ঠিক এইভাবে সাজানো।
যেমন পৃথিবীর অধিকাংশ প্রেমের গান, পরমগীত পুস্তকও পদ্যে অর্থাৎ কবিতা ভাষায় লেখা। পরমগীত পুস্তক সূক্ষ্ম বিষয় ও আবেগপ্রবণ রূপক ভাষা দিয়ে ভরা এবং একটি বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা বলার চেয়ে, তা পরমগীতে ছবির ভাষায় বা ইঙ্গিত দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাণবন্ত বর্ণনা পাওয়া যায়: পাহাড়-পর্বত, প্রাণী, গাছ-পালা, সুগন্ধী, মসলা বা সুস্বাদু খাবার এবং পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সেগুলোর উপভোগ (দৃষ্টি, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ ও স্পর্শ)।
পরমগীতের রূপক ভাষা রূপক হিসাবে বুঝুন! তা না করলে বিষয়টি একটু হাস্যকর হয়ে উঠে, যেমন পরমগীত ৪ ও ৬ অধ্যায়ের ভিত্তিতে আঁকা একটি দু’টি ছবিতে (বামে ও ডানে দেখুন)।
শলোমনের রাজপ্রাসাদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে বাস্তব চিন্তা
শলোমনের রাজপ্রাসাদের পরিস্থিতি কেমন ছিল? ধরুন তিনি ইতিমধ্যে ৬০জন স্ত্রী এবং ৮০জন উপস্ত্রী গ্রহণ করেছেন। ৬১ নম্বর স্ত্রীকে বিবাহ করার অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। চিন্তা করুন:
শলোমন আর একটি বিবাহ করলে তা আগের স্ত্রীদের উপরে কি প্রভাব ফেলে? আগের স্ত্রীরা কি আপত্তি উঠাচ্ছেন? না এতে অভ্যস্ত হয়েছেন? শলোমন নিজের স্ত্রীদের কি চোখে দেখেন? তার কি একজন স্ত্রীর সাথেও বিবাহের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে? শলোমন কাজের পরে সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে ফিরে আসেন – তা দেখতে কেমন? পারিবারিক জীবন বলতে তার কিছু ছিল? তার সন্তানেরা বাবার সাথে কত সময় পেত? শলোমন কি নিজের স্ত্রীদের নাম জানতেন? স্ত্রীদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল? স্ত্রী হিসাবে নিজ স্বামীর কাছে যাওয়ার অধিকার কি ছিল? নিজের স্বামীর মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য স্ত্রীরা কি করতেন? একবার স্বামীকে পেয়ে কিভাবে তারা তাদের বিষয় আগানোর জন্য কৌশল করতেন? রাজ প্রাসাদে অনবরতভাবে টেন্সন, তুলনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকত? স্ত্রীদের মধ্যে সম্পর্ক শলোমনের উপর কি প্রভাব ফেলত?
ধরুন আপনি ছিলেন ৫৫ নম্বর স্ত্রী। আপনিও সুন্দরী, আপনিও এক সময় শলোমনের প্রিয়া ছিলেন। এই যে শলোমনের সবচেয়ে নতুন স্ত্রী চলে আসছে। সুন্দরী আছে অবশ্যই, তাকে আপনি কি চোখে দেখেন? তার প্রতি কি ব্যবহার করবেন? তাকে ঘৃণা করবেন? বা মায়া লাগবে? তাকে সান্ত্বনা দেবেন যখন তাকেও বাদ দেওয়া হবে?
অথবা ধরুন আপনিই ৬১ নম্বর স্ত্রী। হয়তো আপনার বাবা আপনাকে স্ত্রী হিসাবে রাজাকে দিলেন। হয়তো আপনার বাবা মনে করেন, তিনি এভাবে সম্মান বা কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন। অথবা হয়তো শলোমনের সাথে আপনার একবার দেখা হল, আসলে তিনি চমৎকার ও হৃদয়গ্রাহী লোক। তার সাথে দেখার স্মৃতিতে এখনও আপনার মাথা ঘুরে। তিনি যে আপনার দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন, তাও হল মাথা ঘুরার বিষয়। এখন বিয়ের প্রস্তাব আসছে। আপনার কেমন লাগে? আপনার ভয় কি? অন্য স্ত্রীদের দিকে তাকিয়ে কি চিন্তা করেন? কতদিন প্রিয়া থাকবেন মনে করেন? স্বামী কত সময় দেখবেন মনে করেন? ১০ বছর পরে আপনার জীবন কেমন হবে?
অথবা ধরুন আপনি ছিলেন রাজা দায়ূদের একজন বন্ধু ও বিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী। আপনি ঈশ্বরকে ভালবাসেন এবং ইস্রায়েল জাতি একজন ঈশ্বর ভক্ত নেতার পরিচালনায় উন্নত হতে যাচ্ছে, তা দেখতে আপনার হৃদয়ে গভীর আনন্দ আছে। আপনি খুশি ছিলেন যখন দায়ূদ তার সন্তান শলোমনকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। আপনি প্রথম সারিতে বসে ছিলেন যখন শলোমন নতুন উপাসনা-ঘর উৎসর্গ করেছিলেন এবং সেই দিনে শলোমনের বিনতি প্রার্থনা এখনও আপনার কানে বাজছে। ঐসময় থেকে কিছু বছর চলে গেছে এবং আপনি – যেমন শলোমনের প্রাসাদে সবাই – আরো ধনী ও আরো প্রজ্ঞাবান হয়ে উঠেছেন। আসলেই এটা হল সোনার যুগ এবং আপনি গুরত্বের সঙ্গে প্রত্যেক মুহূর্তে ঈশ্বরকে তার জন্য সম্মান ও ধন্যবাদের উৎসর্গ দিতে থাকেন।
কিন্তু কিছু দিন ধরে আপনি রাজার জীবনে এমন কিছু দেখতে পান, যা আপনার তেমন ভাল লাগে না। প্রথমদিকে চিন্তা করেছিলেন তা সামান্য বিষয় মাত্র – একজন মহান রাজা যিনি তার মহা স্বাধীনতা ব্যবহার করেন, তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। কিন্তু সময় যেতে যেতে বিষয়গুলো ঘটতে থাকে এবং যা আপনি ব্যতিক্রম মনে করেছেন, তা এখন অভ্যাস হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে। আপনি ছোট মনের মানুষ নন এবং আপনি জানেন যে ইস্রায়েলের বর্তমান ধন ও আন্তর্জাতিক সুনাম হল ঈশ্বরের আশীর্বাদ। কিন্তু তারপরেও – বিষয়ের উপর বিষয়, বিলাসিতার উপর বিলাসিতা, বিবাহের উপর বিবাহ। শুধুমাত্র ইস্রায়েলীয় মেয়েদের সাথে মলোমনের বিয়ে হচ্ছে, তা না, তিনি বিদেশীনীদেরও বিয়ে করছেন, অন্য দেশের রাজকন্যাদের সাথে, দেবতাপূজারীদের সাথে। আপনার মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করে। এত বিয়ে? এত রিতিমত? এবং কার সাথে? রাজা কি করছেন?
তিনি কিভাবে তার সেই বড় পরিবারের দায়িত্ব বা যত্ন নিতে পারেন? তার স্ত্রীরা সারা দিন কি করছেন? অনেকে ইব্রীয় ভাষাও জানেন না, ঈশ্বরকে জানেন না, তাকে আরাধনাও করেন না। যে কর্মচারীরা স্ত্রীদের দেখাশোনা করেন, তাদের কাছ থেকে আপনি স্ত্রীদের মধ্যে সংগ্রাম ও কৌশল সম্বন্ধে বেশ কিছু রসাল গল্প শুনতে থাকেন। আসলে আপনি শলোমনের বেশ কিছু ছেলে ভালভাবে চিনেন কারণ তাদের শিক্ষা দানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছে। আপনি অনেক চেষ্টা করেন তাদের ভাল শিক্ষা দিতে এবং তাদের একজন ভাল পরামর্শদাতা হতে – কিন্তু তা কি আপনার দায়িত্ব হওয়ার কথা? ছেলেরা নিজের বাবাকে আসলে তেমন জানে না, তার সাথে বেশি সময়ও পায় না। তারা তাকে সম্মান করে এবং তারা তার সন্তান হওয়ায় গর্বিত, কিন্তু গর্ব এবং বাবার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হল দুটি ভিন্ন বিষয়। প্রথম তিন চারজন বাদে ছেলেরা আসলে বাবা-পরিত্যাক্ত, তাদের বাবা তাদেরকে ঈশ্বরের বিষয়ে কোন শিষ্যত্ব দেন না। পরিবর্তে তাদের মায়েরা তাদেরকে শিষ্যত্ব দেন, এবং তাদের দেবতাপূজারী চিন্তায় বড় করেন। সন্তানদের মধ্যে অনেকে ইব্রীয় পারে না, ঈশ্বরের আইন সম্বন্ধে বেশি জানে না এবং ইস্রায়েলে বড় হলেও ইস্রায়েলীয় সংস্কৃতিতে বড় হয় না। এসব কিছুর ফলাফল কি হবে?
এবং আপনি রাজার সেই সুন্দরী নতুন স্ত্রীদের দেখেন, একজনের পর একজন, অনবরত একটি স্রোত। ওদের নিয়ে কি হবে? কত দিন ওরা প্রিয়া থাকবে? তারা এই পরিস্থিতিতে কিভাবে টিকবে? – এবং ইস্রায়েলের উপর শলোমনের এই সীমার বাইরের বহুবিবাহ কি প্রভাব ফেলবে? রাজা তো কোনভাবে আদর্শ নন – এবং তিনিই এভাবে করলে তবে অন্যদেরকে কিভাবে নিষেধ করা যায়? কিন্তু বিষয়টি এইভাবে আগালে পরিবারগুলো ও জাতিকে নিয়ে কি হবে? ঈশ্বর বিবাহ ও পরিবারের জন্য কি চেয়েছেন, তা থেকে এসব তো অনেক দূরে। ঈশ্বরের আসল আদর্শ দেখানোর জন্য কি করা যায়? কিভাবে শলোমনের খারাপ প্রভাব প্রতিরোধ করা যায়? কিভাবে রাজাকে এই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলা যায়? তাকে সঠিকদিকে টানার জন্য কি করব?
পরমগীত পুস্তকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
নৈতিকতা সহ ভালবাসা
যদিও পরমগীত পুস্তকে খোলাখুলিভাবে লিঙ্গের মধ্যে আকর্ষণ, প্রেম ও যৌন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা হয় তবুও নৈতিকতা রক্ষা করেই তা করে। প্রিয়া যে শুধুমাত্র শরীরের মিলনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে, তা নয়, তিনি একটি সম্মানজনক, সমর্পিত, আইনগত প্রেম সম্পর্ক চান “হে আমার প্রিয়তম, তুমি আমাকে বল, কোথায় তোমার ভেড়ার পাল তুমি চরাও? তোমার ভেড়াগুলোকে দুপুরে কোথায় বিশ্রাম করাও? তোমার সংগী রাখালদের ভেড়ার পালের কাছে কেন আমি ঘোমটা দেওয়া বেশ্যার মত যাব?” (পরমগীত ১:৭)। ঘোমটা পড়া মহিলা যে ঘুড়ে বেড়ায়, সেই সময় তা পতিতা বুঝাত।
পরমগীত ৩:৬ পদের আগে, অর্থাৎ বিবাহের আগে যতবার প্রিয়া ভবিষ্যৎ বিবাহ সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন, তা হল তার স্বপ্ন, এখনও বাস্তব ঘটনা নয়। স্বপ্নগুলো এই কথা দিয়ে শেষ হয় “আমি কৃষ্ণসার ও মাঠের হরিণীদের নামে অনুরোধ করে বলছি, তোমরা ভালবাসাকে জাগায়ো না বা উত্তেজিত কোরো না যতক্ষণ না তার উপযুক্ত সময় হয়” (পরম ১:১২-২:৭, ৩:১-৫)। শুধুমাত্র বিবাহ অনুষ্ঠানের পরে (পরম ৩:৬-১১) নতুন স্বামী-স্ত্রীর প্রথমবার দেহের মিলন হয় (পরম ৪:১-৫:১ক)। পুস্তকটি একটি শক্তিশালী কথা দিয়ে সমাপ্ত হয় যে, যাদের স্বনিয়ন্ত্রণ আছে তারা একটি সম্পর্কে শান্তি ও স্থিরতা নিয়ে আসে (পরম ৮:৮-১০)।
ভালবাসার স্থায়ীত্ব নির্ভরশীল বন্ধুত্বের উপরে
যদিও পরমগীত পুস্তকে যৌন সম্পর্ক বেশ কয়েকবার বর্ণনা করা হয় তবুও পুস্তকটি দেখায় যে, শারীরিক প্রেম স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্বের উপর খুব নির্ভরশীল: একসাথে সময় কাটানো, ঘুরে বেড়ানো, কথা বলা, পরস্পরের চিন্তা, ইচ্ছা ও ব্যক্তিত্ব জানা, মূল্য দান, ব্যবহারিক বিষয়ে বিবেচনা, আবেগ প্রকাশ, সহভাগিতা ও পরস্পরের জীবনে অংশগ্রহণ (পরম ২:৮-১৫, ৭:১০-১৩, ৮:৫)।
ভালবাসা মানে স্বেচ্ছায় নিজেকে দান করা
লক্ষ্য করুন এই পুস্তকে প্রিয়া ও প্রিয় কত বার পরস্পরকে ডাকেন, অনুরোধ করেন ও আমন্ত্রন জানান: “প্রিয়া আমার, ওঠো … আমার, আমার সংগে এস। দেখ … ওঠো, এস; এস আমার সংগে। … আমার বাগানের উপর দিয়ে বয়ে যাও যাতে তার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আমার প্রিয় যেন তাঁর বাগানে এসে তার ভাল ভাল ফল খান। … প্রিয় আমার, চল, আমরা মাঠে যাই … চল, আমরা ভোর বেলাতেই আংগুর ক্ষেতে যাই … আমি সেখানেই তোমাকে আমার ভালবাসা দান করব” (পরম ২:১০-১৩, ৪:১৬, ৭:১১-১২)। প্রিয় ও প্রিয়া কথা বলেন, নিজেকে পরস্পরের কাছে প্রকাশিত করেন, প্রস্তাব দেন বা পরস্পরকে ডাকেন। একজন প্রস্তাব দিয়ে বা ডেকে আশা করেন যে, অন্যজন হৃদয় থেকে সাড়া দেবেন। এখানে দাবি করা, ধারণা করা, এমনি নিয়ে ফেলা বা জোর করা বলতে কিছু নেই, শুধুমাত্র আছে নিজেকে স্বেচ্ছায় ও স্বাধীন হৃদয় থেকে দান করা। যদিও তাদের প্রেমে লজ্জার ভাব আস্তে আস্তে কমে যায়, বরং তাদের প্রেম আরো পরিপক্ক ও সাহসী হয়ে যায় তবুও স্বার্থপর দাবি বা ‘নিজের অধিকার মনে করা’ এই মনোভাব পুস্তকে কোথাও দেখা যায় না। ভালবাসা জোর করে দখল করা যায় না, তা কেনাও যায় না: “ভালবাসার জন্য যদি কেউ তার সব কিছু দিয়েও দেয় তবে তা হবে খুবই তুচ্ছ” (পরম ৮:৭)।
ভালবাসা স্থায়ী হতে চায়
ভালবাসাই নিজেকে স্থায়ীভাবে সমর্পিত করতে চায় এবং অন্যের থেকে একটি স্থায়ী সমর্পণ খোঁজে। যে কোন দেশের প্রেমের গান শুনে কোথাও না কোথাও “চিরকাল তোমাকে ভালবাসব” ধরণের কথা পাওয়া যায়। ভালবাসা, বিবাহে ও যৌন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী নিজেকে অন্যের কাছে গভীরভাবে দান করেন, তাই পরে সম্পর্কটি ভাঙ্গলে তা খুবই কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়: “সীলমোহরের মত করে তুমি আমাকে তোমার অন্তরে আর তোমার হাতে রাখ; কারণ ভালবাসা মৃত্যুর মত শক্তিশালী, পাওনা ভালবাসার আগ্রহ মৃতস্থানের মতই হার মানে না। তা জ্বলন্ত আগুনের মতই জ্বলতে থাকে, জ্বলতে থাকে জোরালো শিখার মত” (পরম ৮:৬)। কেন এখানে ভালবাসা মৃত্যু ও মৃতস্থানের সাথে তুলনা করা হয়? কারণ মৃত্যু ও কবরস্থান – একবার একজনকে পেলে – তাকে কখনও ছেড়ে দেবে না। এই রূপকগুলো বুঝায় যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই উঁচুমানের, গভীর ও নিঃশর্ত আত্ম-দান একটি স্থায়ীত্ব দাবি করে।
ভালবাসা একক, অনন্য ও অবিভক্ত হতে চায় বহুবিবাহ বিরোধী
ভালবাসার আর একটি বৈশিষ্ট্য হল যে, ভালবাসা একক, অনন্য ও অবিভক্ত হতে চায়। আবারও যে কোন দেশের প্রেমের গানে কোথাও না কোথাও “শুধুমাত্র তুমি” পাওয়া যায়। স্বামী-স্ত্রী ধরণের ভালবাসা শুধুমাত্র একজনেরই কাছে দেওয়া যায়। অন্যদের বাদ দিয়ে প্রিয় বা প্রিয়াকে চাই এবং আরো চাই যে প্রিয় বা প্রিয়া অন্যদের বাদ দিয়ে আমাকে চায়। যদিও মানবীয় দুর্বলতা হয়তো একজনকে অন্যদিকে টানে তবুও ভালবাসা সব সময় স্বীকার করে যে, সত্যিকার ভালবাসা একজনেরই জন্য। শলোমনের যুগ ও সমাজের মত হয়তো আমাদের সমাজেও বহুবিবাহ অনুমোদিত, কিন্তু তারপরেও বহুবিবাহ মহিলাদের ঠকায় কারণ তা বিবাহ সম্পর্কে মহিলাদের ভূমিকা, গুরুত্ব ও রব কমায় – এবং তা পুরুষদের ঠকায় কারণ তারা সেই গভীর সমর্পণ ও সত্যিকারের অতিঘনিষ্ট সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত হয়। বহুবিবাহ এমন জায়গায় তুলনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে, যেখানে কখনও তুলনা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা উচিত ছিল না। বহুবিবাহে মহিলারা নিজেকে আরো দুর্বল অবস্থায় খুঁজে পায়, যেখানে তাদের স্বামীর মনোযোগ, যত্ন এবং এমন কি স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। বহুবিবাহে পুরুষদের হয়তো ক্ষমতা, বিলাসিতা ও যৌনতা বেশি দান করে, কিন্তু একটি সত্যিকারের পারিবারিক জীবন এবং সম্পর্কের ঘনিষ্টতা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে। স্মরণ করেন শলোমন তার বহুসংখ্যক স্ত্রীদের নিয়ে কত অসন্তুষ্ট: “আমি দেখলাম, মৃত্যুর চেয়েও তেতো হল সেই স্ত্রীলোক, যার অন্তর একটা ফাঁদ ও জাল আর হাত দু’টা শিকল। যে লোক ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে সে তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, কিন্তু পাপীকে সে ফাঁদে ফেলবে। … আমি যখন জ্ঞানের খোঁজ করছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না তখন আমি হাজার জনের মধ্যে একজন খাঁটি পুরুষ লোককে পেলাম, কিন্তু তাদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোককেও খাঁটি দেখতে পাই নি” (উপদেশক ৭:২৬,২৮)।
যারা মনে করে যে, পরমগীত পুস্তক শলোমনের কাছে এবং বহুবিবাহ বিরোধী লেখা, তারা কিছু রূপকের শক্তিশালী বিবাহ বিরোধী অর্থ দেয়: প্রিয়া, যিনি সংগ্রাম করেন যেন তিনি শলোমনের ‘আর একজন স্ত্রী মাত্র’ হয়ে না যান, তার প্রিয়ের এই প্রশংসা “কাঁটাবনের মধ্যে যেমন লিলি ফুল, মেয়েদের মধ্যে তেমনি আমার প্রিয়া” কেমন লাগবে? শলোমনের কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে যদিও এইমুহূর্তে তিনিই ‘প্রিয়া’। আবারও যখন শলোমন প্রথমবার প্রিয়াকে অনিচ্ছুক খুঁজে পান তার কোন সময় লাগে না অন্য স্ত্রীদের কাছে ফিরে যাওয়া – তার এই ব্যবহারে নতুন স্ত্রী একেবারে ভেঙ্গে পড়েন (পরম ৫:৬)। যখন শলোমন তার কাছে ফিরে আসেন তিনি তার নতুন স্ত্রী এমন হতাশায় খুঁজে পান যে, তিনি তাকে প্রশংসা করেন, কিন্তু এবার তিনি প্রিয়াকে সামরিক রূপক দিয়ে বর্ণনা করেন। হয়তো তিনি এভাবে স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করেন যে, শলোমনের উপরে তার আসলে ক্ষমতা আছে: “প্রিয়া আমার, তুমি তির্সা শহরের মত সুন্দরী, যিরূশালেমের মত চমৎকার; নিশান উড়ানো সৈন্যদলের মত তোমার জাঁকজমক। আমার দিক থেকে তোমার চোখ ফিরিয়ে নাও; ও দু’টা আমাকে ব্যাকুল করে তোলে। … মেয়েরা তাকে দেখে ধন্যা বলল আর রাণীরা ও উপস্ত্রীরা তার প্রশংসা করলেন। তাঁরা বললেন, “কে সে, যে ভোরের মত দেখা দেয়, চাঁদের মত সুন্দরী, সূর্যের মত উজ্জ্বল, আর নিশান উড়ানো সৈন্যদলের মত যার জাঁকজমক?” (পরম ৬:৪-৫,৯-১০)। কিন্তু আবারও: এই মুহূর্তে শলোমন তাকে সেই ৬০জন স্ত্রী, ৮০জন উপস্ত্রী ও অসংখ্য মেয়েদের চেয়ে আকর্ষণীয় বলেন (পরম ৬:৮-৯), কিন্তু আর কত দিন? নতুন স্ত্রী নিজেকে এমন অবস্থা খুঁজে পান যে, তিনি দুটি সৈন্যদলের সামনে নাচেন, একটি অতি দুর্বল ও সূক্ষ্ম ছবি (পরম ৬:১৩ উল্লিখিত “মহনয়িম” মানে ‘দুই সৈন্যদল’, সম্ভাবনা বেশি যে তা স্ত্রীদের ও উপস্ত্রীদের বুঝায়, যারা নতুন কনেকে দেখছে, পরম ৬:৮-৯)। নতুন স্ত্রী তাদের মধ্যে একজন হতে চান না বলে, তিনি এই কথা দাবি করেন “আমি আমার প্রয়েরই এবং তিনি আমারাই” (পরম ৬:৩) এবং তিনি শলোমনকে হাত ধরে অনুরোধ করেন “সীলমোহরের মত করে তুমি আমাকে তোমার অন্তরে আর তোমার হাতে রাখ” (পরম ৮:৬)। “সীলমোহর” এই রূপক বুঝায় যে, তিনি একটি আইন-গত, অধিকারগত, স্থায়ী, সুরক্ষিত সমর্পণ চান। “অন্তরে আর হাতে রাখ” এই রূপক হতে পারে বুঝায় যে, তাদের প্রেম যেমন অন্তরের বিষয়, তা যেন সবার সামনে ঘোষিত একটি সম্পর্ক হয়। হয়তো পরমগীতে ৮:১১-১২ সেই অপরিষ্কার পদগুলোও শলোমনকে একটি চ্যালেঞ্জ বা ধমকের মত দেওয়া হয়: “বাল্-হামোনে শলোমনের একটা আংগুর ক্ষেত আছে; তিনি সেটা দেখাশোনাকারীদের হাতে দিয়েছেন। তার ফলের দাম হিসাবে প্রত্যেককে বারো কেজি রূপা দিতে হয়। আমার নিজের আংগুর ক্ষেত আছে, যা কেবল আমিই দিতে পারি। হে শলোমন, সেই বারো কেজি রূপা তোমারই থাকুক, কিন্তু আড়াই কেজি থাকুক…”। “আঙ্গুর ক্ষেত” এই রূপক পরমগীতে বিভিন্ন পদে কনে নিজেকেই বুঝায়। তাই এখানে পুনরায় বলা হয় যে, ভালবাসা কেনা যায় না, অর্থাৎ বিবাহে একজন নিজেকে স্বেচ্ছায় দান করে (পরম ৮:৭)।
ভালবাসা হল ঈশ্বর থেকে আসা একটি দান
আকর্ষণ, ভালবাসা, বিবাহ এবং বিবাহে যৌন সম্পর্ক হল ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি, ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত এবং ঈশ্বর দ্বারা আশীর্বাদ প্রাপ্ত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যিহূদীদের এই ইতিবাচক দৃষ্টি বেশিরভাগ ছিল। কিন্তু খ্রিষ্টানদের মধ্যে অনেক শতাব্দী ধরে আকর্ষণ, বিবাহ, যৌন সম্পর্ক ও পরিবার নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টি ছিল – হতে পারে তা ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ে পৌলের মন্তব্যগুলোর কারণে। পরমগীতে ঈশ্বরের ইতিবাচক দৃষ্টি শক্তিশালীভাবে প্রকাশিত: ঈশ্বর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আকর্ষণ, ভালবাসা ও যৌনতা চেয়েছেন এবং তাতে আশীর্বাদ দিয়েছেন। বিবাহ, যৌনতা, সন্তান ও পরিবার সব হল ঈশ্বর দ্বারা উৎযাপন করা চমৎকার বিষয়, যেমন পুরাতন নিয়মে অন্যান্য লেখায়ও বলা আছে (উপদেশক ৯:৯, হিতো ৫:১৫-১৯)। খ্রিষ্টানদের বহুবছর ধরে একটি মতবাদ প্রচলিত ছিল যে, যৌন সম্পর্ক শুধুমাত্র অনুমোদিত যদি তা সন্তান নেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়। এরজন্য সন্তান নেওয়ার প্রতিরোধ পদ্ধতিও নিষিদ্ধ ছিল। পরমগীতে আমরা এই সরু দৃষ্টি পাই না। পরমগীতে বিবাহে যৌন সম্পর্ক অন্য উদ্দেশ্যেও করা যায়: স্বামী-স্ত্রীর একতা, আনন্দভোগ এবং নিজেকে স্বেচ্ছায় দান – সন্তান গর্ভে ধারণ হোক বা না হোক। অবশ্যই সন্তান হলে আরো আশীর্বাদ! আসলে মানব স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান এবং পুরুষ ও মহিলার শরীরের আকৃতি থেকেও বলা যায় যে, ঈশ্বর অবশ্যই চেয়েছেন যেন যৌন সম্পর্ক উভয় স্বামী ও স্ত্রীর জন্য আনন্দের বিষয় হয়।
যদিও এই সূক্ষ্ম পুস্তক নিয়ে বেশ ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা সৃষ্টি হয়েছে, পুস্তকটির সৌন্দর্য ও আকর্ষণ কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।