নতুন নিয়মের সব পুস্তকের মধ্যে যাকোব চিঠিতে সবচেয়ে বেশি যিহূদী ভাব দেখা যায়। লক্ষ্য করুন – এমন অনেক বিষয় যা নতুন নিয়মের অন্যান্য চিঠিতে পাওয়া যায়, তা এই চিঠিতে পাওয়া যায় না (যেমন: সুসমাচার প্রচার করা, যিহূদী-অযিহূদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ভ্রান্ত শিক্ষার বিষয়ে সাবধানবাণী ইত্যাদি)। বরং লেখক যিহূদী পাঠকদের উৎসাহিত করেন যেন তারা মনে-প্রাণে ঈশ্বরের অনুসরণকারী হয়।
লেখক তার নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন যে তিনি “ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস যাকোব” (যাকোব ১:১), অর্থাৎ তিনি প্রৈরিতিক অধিকার দাবি করেন না। তবে কোন যাকোব এই চিঠির লেখক? যীশুর বারোজন শিষ্যের মধ্যে যাকোব নামে দুইজন আছেন। একজন হলেন সিবদিয়ের ছেলে (যোহনের ভাই), কিন্তু তিনি বেশ তাড়াতাড়ি, অর্থাৎ ৪৪ খ্রীষ্টাব্দে শহীদ মৃত্যুবরণ করেন (প্রেরিত ১২:১-২)। একারণে সম্ভাবনা বেশি যে তিনি চিঠির লেখক নন। কেউ কেউ চিন্তা করে যে যীশুর অন্যতম শিষ্য যাকোব (আলফেয়ের পুত্র) এই চিঠির লেখক, কিন্তু মণ্ডলীর ইতিহাসে এর উল্লেখ নেই। তাই সম্ভাবনা বেশি এবং মণ্ডলীর ইতিহাস থেকেও এই একই সাক্ষ্য পাওয়া যায় যে, যীশুর আপন ভাই যাকোব চিঠিটি লিখেছেন। যাকোব ছিলেন যীশুর পরে মরিয়ম ও যোষেফের সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সন্তান (মার্ক ৬:৩, মথি ১৩:৫৫)। যীশুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রথমদিকে যীশুর অনুসরণকারী ছিলেন না (মার্ক ৩:২১, মথি ৬:৪, ১২:৪৬, যোহন ৭:২-১০)। কিন্তু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পরে মরিয়ম ও যাকোব (ও যীশুর অন্যান্য ভাই-বোন) বিশ্বাসী হয়ে প্রথম মণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত হন। যখন পিতর ও যোহন যিরূশালেমের বাইরে প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেই সময় যাকোব যিরূশালেম মণ্ডলীর সম্মানিত নেতা ও “স্তম্ভ” হয়ে যান (গালা ১:১৯, ২:৯, ২:১২)। প্রেরিত পুস্তকে উল্লিখিত যিরূশালেম সভায় তিনি নেতৃত্ব দেন এবং তিনি সেই সভার শেষ উপসংহারও করেন (৪৯ খ্রীঃ, প্রেরিত ১৫:১৩-২১)।
যাকোব “পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়া যিহূদী জাতির বারোটি গোষ্ঠীর লোকদের” কাছে লেখেন। সম্ভবত এটা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া বিশ্বাসী যিহূদীদের বুঝায়। চিঠির দুইটি বিষয়ের কারণে অনেকে বলে যে চিঠিটি বেশ আগে লেখা হয়েছে (৩০-৪০ খ্রীঃ): পুস্তকটিতে যিহূদী-অযিহূদীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কোন উল্লেখ নেই এবং মণ্ডলী তখনও যিহূদীদের সমাজ গৃহে একত্রিত হত (যাকোব ২:২)। অপর দিকে চিঠিতে উল্লিখিত কিছু বিষয়ের কারণে আবারও কেউ কেউ বলে যে চিঠিটি বেশ পরে লেখা হয়েছে (৫০-৬০ খ্রীঃ): বিশ্বাসীদের আগ্রহ অনেকটা কমে গেছে, যা প্রেরিত পুস্তকে প্রথম মণ্ডলীর বৃদ্ধির বর্ণনার সাথে মিল নেই। যাকোব ৬২ খ্রীষ্টাব্দে যিরূশালেমে শহীদ মৃত্যুবরণ করেন। সুতরাং চিঠিটি ৬২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে।
যাকোব তার চিঠিতে পুরাতন নিয়মের হিতোপদেশ পুস্তক থেকে এবং পর্বতে যীশুর দত্ত উপদেশ থেকে অনেক চিন্তা ও কথা ব্যবহার করেন। তিনি মণ্ডলীর দুর্বলতা ও ব্যবহারিক সমস্যাগুলো শক্তিশালী রূপক ও ধারালো চ্যালেঞ্জ দিয়ে সমাধান করতে চেষ্টা করেন:
- বিশ্বাস যদি দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনে প্রমাণিত না হয় তবে সেই বিশ্বাস মৃত। যীশুর কথা স্মরণ করে যাকোব পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করেন যে, বাক্য শোনা যথেষ্ট নয় বরং বাক্যের মত কাজও করতে হবে (যাকোব ১:২২)। বিশ্বাস করা যথেষ্ট নয়, কারণ এমন কি মন্দ আত্মারাও তা-ই করে (যাকোব ২:১৯)!
- যদি বিশ্বাসীরা বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা বা কষ্টে পড়ে তবে তাদের ধৈর্য ধরে এটা শিক্ষা লাভ ও বিশ্বাস বৃদ্ধির সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করা উচিত (যাকোব ১:২-৪)। পরীক্ষার সময়ে ঈশ্বরকে সন্দেহ করার চেয়ে (যাকোব ১:২-৪, ৫:৭-১১) স্মরণ করা উচিত যে, যা ভাল ঈশ্বর শুধু তা-ই দান করেন (যাকোব ১:১৭)। পাপ দ্বারা আক্রান্ত পৃথিবীতে যত মন্দ ঘটুক না কেন, ঈশ্বর তা বিপরীত দিকে বিশ্বাসীর মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করেন (যাকোব ১:১২-১৬)।
- ঈশ্বর সমস্ত প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বুঝার ক্ষমতার উৎস। যদি বিশ্বাসীর প্রজ্ঞার অভাব থাকে, সে অবশ্যই ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রজ্ঞা চাইতে পারে (যাকোব ১:৫-৭)। যুক্তি-তর্কে নিজের মতামত প্রমাণিত করা, তা প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার নয়। বরং এমন প্রজ্ঞা ঈশ্বরীয় যদি এটি “প্রথমতঃ খাঁটি, তারপর শান্তিপূর্ণ; তাতে থাকে সহ্যগুণ ও নম্রতা”। ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা অন্যের মঙ্গল খোঁজে এবং একতা রক্ষা করতে সমর্পিত (যাকোব ৩:১৩-১৮)।
- বিশ্বাসীরা যদি ধনী ও গরীবদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করে তবে তারা বিশ্বাসী হলেও সুখবর এবং যীশুর সেই পার্থক্য ও সীমানা বাতিল করার কাজ এখনও বুঝে নি (যাকোব ২:১-৭)। শক্তিশালীদের ভয় পেয়ে বা তাদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা করে যদি তাদেরকে ভাল ব্যবহার দেখাই তবে আমার উদ্দেশ্য ঠিক নয়।
- যাকোব ধনীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা তাদের দক্ষতা, আয় করার ক্ষমতা, সম্পত্তি রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার ক্ষমতার উপর অতি নির্ভরশীল না হয় (যাকোব ৪:১৩-১৬) বরং যেন তারা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে। অন্যায় পথে লাভ কোন মতেই চলবে না (যাকোব ৫:১-৬)।
- ঈশ্বরের উপর সৎ-সরলভাবে বিশ্বাস রাখা এবং যে কোন পরিস্থিতিতে তাঁর প্রতি আস্থা রাখার মনোভাবে ঈশ্বর খুশি হন, যেমন: পরীক্ষায় পড়লে (যাকোব ১:২-৪), পাপ করলে (যাকোব ৫:১৫), অসুস্থ হলে (যাকোব ৫:১৩-১৫) অথবা দৈনন্দিন বিষয়ে (যাকোব ৫:৭-১১)। সন্দেহ না করে বরং হৃদয়ে বিশ্বাস ধরে রেখে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করাই হল ঈশ্বরকে খুশি করার মনোভাব।
- যেহেতু আমাদের মুখের কথা খুব শক্তিশালী এবং এমন কি আঘাতকারী হতে পারে, একারণে যাকোব পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা নিজেদের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করে (যাকোব ৩:১-৯)। একই মুখ থেকে উভয় ভাল এবং খারাপ কথা, আশীর্বাদ এবং অভিশাপের কথা বের হওয়া গ্রহণযোগ্য নয় (যাকোব ৩:১০-১২)। নিজের কথা বা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করাই আবশ্যক (যাকোব ৫:১২)।
মোট কথা, যাকোব পাঠকদের মনে-প্রাণে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবন-যাপন করতে উৎসাহ দেন (যাকোব ৪:৭): ঈশ্বরকে অনুসরণ করা (যাকোব ৪:১-৪), নম্র হওয়া (যাকোব ৪:৬) এবং মন্দের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তাদের প্রতি ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষা দেখে যেন তারাও ঈশ্বরের প্রতি আগ্রহী হয় (যাকোব ৪:৫-৬)।
নতুন নিয়মের সব লেখার মধ্যে যাকোব চিঠিতে সবচেয়ে বেশি যিহূদী ভাব থাকে। এই চিঠিতে অনেক বিষয় নেই যা নতুন নিয়মের অন্য চিঠিতে পাওয়া যায় (যেনম প্রচার করা, যিহূদী-অযিহূদীদের মধ্যে তর্ক, ভ্রান্ত শিক্ষা ইত্যাদি)। বরং লেখক তার সে যিহূদী পাঠকদের উৎসাহিত করেন যেন তারা মনে-প্রাণে ঈশ্বরের অনুস্মরণকারী হয়।
যাকোব তার চিঠিতে পুরাতন নিয়মের হিতোপদেশ পুস্তক থেকে এবং যীশুর পর্বতে উপদেশ থেকে বেশি কিছু নীতি ও শব্দ ব্যবহার করেন।
চিঠির লেখক যাকোব
লেখক নিজের পরিচয় দেন “ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস যাকোব” হিসাবে (যাকোব ১:১)। নতুন নিয়মে যাকোব নামে চারজনকে উল্লেখ করা হয়েছে। কোন যাকোব এই চিঠির লেখক?
- বারো শিষ্যদের মধ্যে সিবদিয়ের ছেলে ও যোহনের ভাই যাকোব (মথি ৪:২১)। বারো শিষ্যদের মধ্যে তিনি প্রথমে (৪৪ খ্রীষ্টাব্দে) হেরোদ আগ্রিপ্প-১-এর হাতে শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেন (প্রেরিত ১২:১-২), তাই সম্ভাবনা কম যে তিনি যাকোব চিঠির লেখক।
- বারো শিষ্যদের মধ্যে আলফেয়ের পুত্র যাকোব (মথি ১০:৩, প্রেরিত ১:১৩)। সাধারণত প্রেরিতরা তাদের লেখায় তাদের প্রৈরিতিক অধিকার বা দাবি করেন, কিন্তু যাকোব চিঠির শুরুতে আমরা তা পায় না, লেখক শুধুমাত্র দাবি করেন যে তিনি “যীশুর দাস”। তা ছাড়া এই যাকোবকে উল্লেখ করার সময় তাকে সিবদিয়ের পুত্র যাকোব থেকে আলাদা করার জন্য “আলফয়ের পুত্র” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু যাকোব চিঠিতে আমরা তা পায় না।
- আর একজন যাকোব আছেন, বারো প্রেরিতদের মধ্যে যিহূদার বাবা (লূক ৬:১৬, প্রেরিত ১:১৩)। তার সম্বন্ধে কোন কিছু জানা যাচ্ছে না, মণ্ডলীতে একটি ভূমিকা ছিল কিনা, তার ও উল্লেখ নেই। একটি পুস্তক বাইবেলের সংগ্রহে আসার জন্য লেখকের সাধারণত চোখের সাক্ষী বা প্রেরিতের ঘনিষ্ট সহকর্মী হতে হয়, তাই এই সম্ভাবনা কম যে এই যাকোব পুস্তকের লেখক।
- যীশুর আপন (শৎ-)ভাই যাকোব, যোষেফ ও মরিয়মের যীশুর পরে প্রথম ছেলে (মার্ক ৬:৩, মথি ১৩:৫৫)। মণ্ডলীল আদিপিতাদের লেখায় তাকে পরিষ্কারভাবে যাকোব চিঠির লেখক হিসাবে চিহ্নিত রাখা হয়। তার জীবন সম্বন্ধে আমরা কিছুটা জানকে পারি নতুন নিয়ম থেকে, আরো কিছু তথ্য পাওয়া যায় মণ্ডলীর আদিপিতাদের লেখাগুলি থেকে:
লেখক যাকোবের জীবন
- মার্ক ৬:৩, মথি ১৩:৫৫ যাকোব ছিলেন যীশুর পরে মরিয়ম ও যোষেফের সাধারণভাবে কন্সীভ করা সন্তানদের মধ্যে বড়। যীশু তার বড় (শৎ-ভাই)। তার তিনজন ছোট ভাই এবং কম পক্ষে দুইটি ছোট বোন আছে।
- মার্ক ৩:২১ যখন যীশুর পরিবার তাঁকে বাধা দিতে আসে, হতে পারে যাকোব উপস্থিত। বাবা যোষেফের নামের শেষ উল্লেখ পাওয়া যায় যখন যীশুর বয়স বারো বছর (লূক ২:৪১)। হতে পারে যোষেফ বেশ তাড়াতাড়ি মারা যান এবং যীশু পরিচর্যা করার সময় তার নাম আর উল্লিখিত নয়। যীশু পরিচর্যা শুরু করার পরে যাকোব ছিলেন তার পরিবারের প্রধান সমর্থনকারী।
- মার্ক ৩:৩১-৩৫, মথি ১২:৪৬ যীশুর মা ও ভাইয়েরা যীশকে দেখতে আসেন কিন্তু যীশু সব শ্রোতাদের ফেলে রেখে তাদেরকে সময় দেন না। হতে পারে তারা তাতে বেশ অপমানিত হলেন।
- মার্ক ৬:৪ যীশু বলেন যে ভাববাদীরা (এবং তিনিই তাদের মধ্যে একজন) নিজের পরিবারে, আত্মীয়-স্বজনে ও নিজের গ্রামে বেশি সম্মান পান না।
- যোহন ৭:২-১০ যীশুর ভাইয়েরা পরিচর্যা আরো সফল করার ক্ষেত্রে যীশুকে পরামর্শ দেন, সম্ভাবনা বেশি যাকোব এখানে কথা বলেন। সুসমাচারের লেখক ঘটনাটি নিয়ে এই মন্তব্য করেন: “আসলে যীশুর ভাইয়েরাও যীশুর উপর বিশ্বাস করতেন না ”।
- প্রেরিত ১:১৪ বিশ্বাসীরা যখন একত্রিত হয় এবং যীশুর আদেশ অনুসারে পবিত্র আত্মার জন্যা অপেক্ষা করেন “যীশুর মা মরিয়ম” এবং তাঁর “ভাইয়েরা” তাদের মধ্যে উপস্থিত। তাই আমরা বুঝতে পারি যে যদিও তাদের সময় লেগেছে যীশুকে মসীহ হিসাবে গ্রহণ করতে, তারা এই সময় যীশুর অনুসরণকারী হয়ে গেছে।
- ১ করি ১৫:৫-৭ পৌল উল্লেখ করেন যে যীশু পুনরুত্থানের পরে “যাকোবের সাথে” দেখা করেছেন। এই যাকোব প্রেরিতদের পাশাপাশি উল্লেখ করেন বলে আমরা বেশ নিশ্চিত, যা এইটি হল যীশুর ভাই যাকোব।
- প্রেরিত ১২:১৭ একজন স্বর্গদূত যখন পিতরকে জেল থেকে মুক্ত করেন পিতর গিয়ে “James and to the believers”, দের খবর পাঠান। সিবদিয়ের ভাই যাকোব এইমাত্র শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেছেন বলে এইটি হলেন যীশুর ভাই যাকোব, যিনি ইতিমধ্যে যিরূশালেম মণ্ডলীর একজন নেতা।
- গালা ১:১৯-২০ পৌল যখন ৩৭ খ্রীষ্টাব্দে তার মন পরিবর্তনের তিন বছর পরে অবশেষে যিরূশালেমে যান তিনি শুধামাত্র পিতর আর যাকোবের সাথে দেখা করেন।
- গালা ২:৯ ৪৭ খ্রীষ্টাব্দে পৌরের আর একটি যিরূশালেমে প্রদর্শনের সময় তিনি “পিতর, যোহন ও যাকোবের” সাথে দেখা করেন যাদের যিরূশালেম মণ্ডলীর “স্তম্ভ” বলা হয়।
- গালা ২:১২ প্রায় ৪৭ খ্রীষ্টাব্দে কিছু লোক “যাকোবের কাছ থেকে” আন্তিয়খিয়ায় আসে এবং পিতরের উপর এমন প্রভাব ফেলে (সরাসরিভাবে অথবা পরোক্ষভাবে হোক) যে তিনি নিজেকে অযিহূদী বিশ্বাসীদের থেকে আলাদা করেন। বোধ হয় যাকোব দাবি করতেন অযিহূদী বিশ্বাসী হতে চাইলে তাদের অবশ্যই আইন-কানুন (এবং সুন্নত) পালন করতে হবে।
- প্রেরিত ১৫ ৪৯ খ্রীষ্টাব্দে যিরূশালেমে প্রেরিতদের সভায় যখন আইন-কানুন পালন করার বিষয় নিয়ে আলোচনা, সাক্ষ্য শোনা এবং পুরাতন নিয়ম থেকে শিক্ষা বিবেচনা করা হয়, যাকোব তার মন পরিবর্তন করেন। তিনি সভার শেষ বিদ্ধান্ত দেন যাতে বুঝা যায় যে তিনি এই সময়ে প্রধান নেতাদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেছেন – এবং যে তিনি আগে সুন্নত দাবি করার পক্ষে ছিলেন।
- প্রেরিত ২১:১৮ যখন পৌল ৫৭ খ্রীষ্টাব্দে তার তৃতীয় প্রচার যাত্রা থেকে যিরূশালেমে ফিরে আসেন এবং সঙ্গে যিরূশালেম মণ্ডলীর জন্য একটি দানও পাঠানো হয়, যাকোব প্রস্তাব করেন যে পৌল সে চারজন ভাইয়েরা যারা শপথ করেছেন তাদের জন্য যেন তিনি উৎসর্গের খরব বহন করেন। পৌল যাকোবের পরামর্শ অনুসারে করেন।
- মণ্ডলীর ইতিহাস যীশুর ভাই যাকোব ছিলেন যিরূশালেমের মণ্ডলীর প্রধান নেতা। তিনি এমন ধার্মিক, ন্যায্য ও প্রার্থনাশীল ছিলেন যে তার শুধুমাত্র বিশ্বাসীদের মধ্যে সুনাম ছিল না, এমন কি যিহূদীরাও তাকে সম্মান করত। তাকে বলা হত “ন্যায়বান যাকোব” এবং গল্প ছিল যে তিনি এত প্রার্থনা করতেন যে তার হাটু উঠের হাটুর মত মোটা ছিল।
- যাকোব ১:১ তার নামের চিঠিতে যখন যাকোব নিজের পরিচয় দেন তিনি বলেন না “যীশুর ভাই” বরং “যীশুর দাস”। তার সে নম্রতা দেখে আমরা বুঝতে পারি যে তিনি যীশুর কাছে আর কোন বিশেষ প্রবেশ দাবি করেন না (যেমন মার্ক ৩:৩১-৩৫ পদে করতেন)। তিনি বিষয়টি আসলেই বুঝলেন।
- মণ্ডলীর আদিপিতা হেগেসিপ্পাস > যাকোবের বিষয়ে বলেন যে তিনি সারা জীবন নাসিরীয় শপথ পালন করতেন, জন্ম থেকে পবিত্র ছিলেন, কোন রকম আঙ্গুর-রস বা মদ খেতেন বা মাংস খেতেন না, মাথার চুল কামিয়ে ফেলতেন না, শরীরে কোন মলম মাখতেন না, স্নানও করতেন না। তার হাটু ছিল উঠের মত শক্ত ও মোটা কারণ তিনি যিরূশালেমের মন্দিরে তার জাতির জন্য এত প্রার্থনা করতেন।
- যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাস ফ্রাভায়াস > যিহূদীদের হাত দ্বারা ৬২ খ্রীষ্টাব্দে যিরূশালেমে যাকোবের শহীদ মৃত্যু উল্লেখ করেন।
যিরূশালেমের মণ্ডলীর নেতা হিসাবে এবং একজন হিসাবে যিনি তার ধার্মিকতার কারণে এমন কি বিরুদ্ধীয় যিহূদীদের সম্মান পেতেন, তিনি তার চিঠিতে অধিকারের সঙ্গে যিহূদী বিশ্বাসীদের মনে প্রাণে যীশুর অনুসরনকারী হতে চ্যালেঞ্জ করেন।
প্রেরিত পুস্তকে যিরূশালেম সভার সময় যাকোবের কথা (প্রেরিত ১৫:১৩-২৯) এবং যাকোব চিঠির মধ্যে গীক ভাষায় কিছু ভাষার মিল পাওয়া যায়:
- যাকোব ১:১ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি <=> প্রেরিত ১৫:২৩ আপনাদের মংগল হোক।
- যাকোব ২:৭ আমার ভাইয়েরা <=> প্রেরিত ১৫:১৩ ভাইয়েরা, শুনুন।
- যাকোব ১:২৭ দেখাশোনা করা (to visit) <=> প্রেরিত ১৫:১৪ বেছে নেওয়া (to visit)
- যাকোব ১:২৭ নোংরামি থেকে নিজেকে পরিষ্কার রাখা <=> প্রেরিত ১৫:২৯ এই সব থেকে দূরে থাকা
ঃযাকোব চিঠির পাঠকরা
যাকোব তার চিঠি “পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়া যিহূদী জাতির বারোটি গোষ্ঠীর লোকদের” কাছে লেখেন (যাকোব ১:১)। “পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়া যিহূদী” এই কথা ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিহূদীদের বাবিলে নির্বাসন নেওয়া থেকে প্রচলিত। রোমীয়দের সময় পর্যন্ত যিহূদীরা রোম রাজ্যের প্রায় সব শহরগুলিতে ছড়িয়ে গিয়ে সেখানো যিহূদী সমাজ ও সমাজ গৃহ স্থাপন করেছিল। কিন্তু কথাটি রূপকভাবে মণ্ডলীকেও বুঝায় যারা স্তিফানের মৃত্যুর পরে সে অত্যাচারে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন সেখানে বাস করে (প্রেরিত ৮:১)।
“যিহূদী জাতির বারোটি গোষ্ঠীর লোকেরা” এই কথার অর্থ কি? আক্ষুরিকভাবে নিলে যাকোব শুধুমাত্র যিহূদী বা যিহূদী বিশ্বাসীদের কাছে লেখেন কিন্তু অযিহূদী বিশ্বাসীদের কাছে নয়। যাকোব ২:২১ পদে তিনি অব্রাহামকে বলেন “আমাদের পূর্বপুরুষ”, তাই তা অবশ্যই যিহূদীদের বুঝায়। কিন্তু কথাটি রূপকভাবে ব্যাখ্যা করলে অবশ্যইও সম্ভব: সব বিশ্বাসীরা (যিহূদী বা অযিহূদী হোক) হলেন “আব্রাহামের বংশধর” (গালা ৩:৭)। তাই হতে পারে যাকোব অযিহূদী বিশ্বাসীদেরও অন্তর্ভুক্ত রাখেন এবং “বারো গোষ্ঠীর লোক” বলে “ঈশ্বরের সব লোক” বুঝান।
যাকোব কি এমন যিহূদীদের কাছেও লেখেন যারা যীশুকে এখনও গ্রহণ করেন নি? যিহূদীদের মধ্যেও যাকোবের যথেষ্ট সম্মান ছিল তা অবশ্যই সম্ভব। হয়তো তিনি তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করেন কিন্ত যাকেব ২:১ পদে তিনি পাঠকদেরক “যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস” করা লোক হিসাবে কথা বলেন।
যাকোব চিঠির লেখার তারিখ
যাকেব এই চিঠি কখন লিখেছিলেন? সাধারণতা চিঠি লেখার জন্য দুইটি তারিখ প্রস্তাব করা হয়, অথবা বেশ আগে (৩০-৪০ খ্রীঃ) অথবা পরে (৫০-৬২ খ্রীঃ)। যারা আগের তারিখ মনে করে তারা কারণ হিসাবে দেখায় যে পুস্তকে যিহূদী-অযিহূদীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কোন উল্লেখ নেই এবং মণ্ডলী এখনও যিহূদীদের সমাজ গৃহে একত্রিত হয় (যাকোব ২:২)। যারা পরের তারিখ মনে করে তারা কারণ হিসাবে দেখায় যে চিঠিতে উল্লিখিত কিছু বিষয়গুলি (সিথিল হয়ে পড়ে, গরীবদের খারাপ ব্যবহার দেখানো) সে অতি আগ্রহী ও শক্তিশালী মণ্ডলী যার বর্ণনা আমরা প্রেরিত পুস্তকে পায়, তার সাথে মিল নেই। যাকোবের পাঠরা যে নতুন বিশ্বাসী, তা চিঠি পড়লে মনে হয় না। যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাস ফ্লাভিয়াস উল্লেখ করেন যে যিহূদী-রোমীয় যুদ্ধের আগে (প্রায় ৫০-৬৬ খ্রীঃ) ধনী ও গরীবদের মধ্যে যথেষ্ট সমস্যা ছিল, এবং তা নিয়ে চিঠিতে যাকোব ২:৬ পদেও উল্লেখ। কিন্তু ওপর পক্ষে আবার বলা যায় যে তা যে কোন যুগে সমস্যা হতে পারে। যাকোব ২:১৪-১৬ পদে যখন যাকোব অভাীয় ভাইদের উল্লেখ করেন (“একজন ভাই যার ঘরে খারাব নেই”) তখন তা হয়তো সম্রাট ক্লৌদিয়ের রাজত্বের সময়ে সে দুর্ভিক্ষের বুঝায় (৪৫-৪৭ খ্রঃ) অথবা তা বুঝায় যিহূদী-রোমীয় যুদ্ধের আগে সে অর্থনৈতিক সমস্যা যার মধ্যে দিয়ে যিহূদীরা গিয়েছিল। যিরূশালেমে ৬২ খ্রীষ্টাব্দে যোহন শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেন, তাই চিঠি অবশ্যই এর আগে লেখা হয়েছে।
যাকোবের লেখার ধরণ
যাকোব চিঠি পড়লে বোধ হচ্ছে যে তা মৌখিক প্রচার হিসাবে লেখা হয়েছিল। তিনি বার বার পাঠকদের “আমার ভাইয়েরা” বলে ডাকেন (যাকোব ১:১, ১:১৬, ১:১৯, ২:১, ২:৫, ২:১৪, ৩:১, ৩:১০, ৩:১২, ৪:১১, ৫:৭, ৫:৯, ৫:১০, ৫:১২, ৫:১৯) অথবা তিনি পাঠকদের মধ্য কিছু লোকদের নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে কথা বলেন যেমন: “ধনীরা, তোমরা শোন” (যাকোব ৫:১), , “হায় মূর্খ!” (যাকোব ২:২০) ও “দু’মনা লোকেরা” ও “পাপীরা, তোমরা নিজেদের শুচি কর” (যাকোব ৪:৮)।
যে বিষয়ে যাকোব গুরুত্ব দেন সেগুলি তিনি চিঠিতে নানা জায়গায় আবার তুলে কথা বলেন এবং এভাবে “তাঁতের কাজের মত” মূল বিষয় বার বার উল্লেখ করেন। তা ছাড়া তিনি শক্তিশালী রূপক ব্যবহার করেন যেমন: “সে বাতাসে দুলে ওঠা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত; বাতাসই তাকে ঠেলে নিয়ে যায়” (যাকোব ১:৬), “ধনী লোক … সে ঘাসের ফুলের মতই ঝরে পড়ে যাবে” (যাকোব ১:১০), “তারপর কামনা পরিপূর্ণ হলে পর পাপের জন্ম হয়, আর পাপ পরিপূর্ণ হলে পর মৃত্যুর জন্ম হয়” (যাকোব ১:১৫), “ঘোড়াকে বশে রাখবার জন্য আমরা তার মুখে লাগাম দিই, আর তখন তাকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে চালিয়ে নিতে পারি … জাহাজ যদিও অনেক বড় আর জোর বাতাস সেটা ঠেলে নিয়ে যায় তবুও মাত্র ছোট একটা হাল দিয়ে নাবিক সেটাকে যেদিকে খুশী সেই দিকে নিয়ে যেতে পারে … জিভ্ও তেমনি” (যাকোব ৩:৩-৫), “মানুষ সব রকম পশু, পাখী, বুকে-হাঁটা প্রাণী ও সাগরের প্রাণীকে দমন করে রাখতে পারে এবং রেখেছে, কিন্তু কোন মানুষ জিভ্কে দমন করে রাখতে পারে না” (যাকোব ৩:৭)।
যাকোব উপমা হিসাবে ছোট গল্পও ব্যবহার করেন যোমন: একজন ধনী বা একজন গরীব মণ্ডলীতে এসে ভিন্ন ব্যবহার পায় (যাকোব ২:১-৭) অথবা ধনীরা যেন কাঁদে কারণ … ক্ষেতে যে মজুরেরা ফসল কেটেছে কিন্তু মজুরি দেওয়া হয় নি সে মজুরি “এখন চিৎকার করে তোমাদের দোষী করছে” (যাকোব ৫:১-৬)।
পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে যাকোব পুরাতন নিয়মের হিতোপদেশ পুস্তক এবং পর্বতে যীশুর উপদেশ দিয়ে বেশি প্রভাবিত। আসলে যদি আমরা যাকোব চিঠি থেকে যীশুর একটি দু্ইটি কথা বদ দিতাম (যাকোব ১:১, ২:১, ৫:৭) তবে যাকোব পুস্তক পুরাতন নিয়মে হিতোপদেশ ও উপদেশক পুস্তকের পাশাপাশি রেখে বেশ ভাল খাপ খেত। বেশ কয়েকটি শব্দ বা মূল বিষয় যা কমবেশি প্রত্যেকটি নতুন নিয়মের চিঠিতে উল্লিখিত সেগুলি যাকোব চিঠিতে নেই: সুসমাচার, মসীহ, যীশু যে মানুষ হয়েছেন, ক্রুশ, পুনরুত্থান, স্বর্গারোহন, পবিত্র আত্মা, অনন্ত জীবন, পরিব্রাণ, আশা, উদ্ধার বা পবিত্রকরণ। যাকোব পুস্তকে বেশি মতবাদও নেই, তার চেয়ে নানা ব্যবহারিক ও সাধারণ বিষয় নিয়ে কথা হয় যেমন: প্রলোভন, লোভ, ঝগড়া-ঝাতি, কাজ বা প্রচেষ্টার উপরে নির্ভর করা, প্রজ্ঞা, কথা বলা, দরিদ্রতা, ধন, ধর্ম, প্রার্থনা, স্বার্থপরতা, ধৈর্য্য ধরা ও বিশ্বাস করা। এই ধরণের বিষয়ে যাকোব চিঠিতে ৫৪টি ছোট আদেশ আছে, যাতে যাকোবের অধিকারও বুঝায়।
যাকোব পাঁচ বার পুরাতন নিয়ম থেকে উদ্ধৃতি তুলেন: যাকোব ১:১১ উদ্ধৃতি করে যিশাইয় ৪০:৬-৮, গীত ১০২:৪,১১; যাকোব ২:৮ উদ্ধৃতি করে লেবীয় ১৯:৮; যাকোব ২:১১ উদ্ধৃতি করে যাত্রা ২০:১৩-১৪, দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৭-১৮; যাকোব ২:২৩ উদ্ধৃতি করে আদি ১৫:৬; যাকোব ৪:৬ উদ্ধৃতি করে গীত ১৩৮:৬, হিতো ৩:৩৪)। তা ছাড়া তিনি পুরাতন নিয়মের নান পুস্তক থেকে কথা, বিষয় বা রূপক নেন, যেমন পঞ্চমপুস্তক, যিহোশূয়, ১ রাজাবলি, ইয়োব, গীতসংহিতা, হিতোপদেশ, উপদেশক, যিশাইয়, যরমিয়, দানিয়ের এবং বারো ছোট ভাববাদী পুস্তকের মধ্যে ৭টি পুস্তক থেকে। তা ছাড়া তিনি পুরাতন নিয়মের ব্যক্তিদের উল্লেখ করেন যেমন অব্রাহাম, রাহব, ইয়োব ও এলিয়।
যাকোব পুস্তকে এবং পর্বতে যীশুর উপদেশের মধ্যো বেশ ভার মিল পাওয়া যায়:
- যাকোব ১:২-৪ পরীক্ষার মধ্যেও আনন্দ <=> মথি ৫:১০-১২
- যাকোব ১:৪ ধৈর্যগুণকে পুরোপুরিভাবে কাজ করতে দাও <=> মথি ৫:৪৮
- যাকোব ১:৫ ঈশ্বর থেকে ভাল কিছু যাচ্ঞনা করতে থাকে <=> মথি ৭:৭
- যাকোব ১:১১ ধনীরা ঘাসের মত স্থায়ী নয় <=> মথি ৬:৩০
- যাকোব ১:১৭ পিতা থেকে ভাল দান আসে <=> মথি ৭:১১
- যাকোব ১:২০ রাগের বিষয়ে কথা <=> মথি ৫:২২
- যাকোব ১:২২ যারা বাক্য শুনে ও পালন করে <=> মথি ৭:২৪
- যাকোব ২:১০ সম্পূর্ণ আইন পালন করতে হবে <=> মথি ৫:১৯
- যাকোব ২:১৩ যে দয়া করে বিচারে দয়া পায় <=> মথি ৫:৭
- যাকোব ২:১৪ বিশ্বাস বনাম কাজ <=> মথি ৭:২১-২৭
- যাকোব ৩:১২ গাছের ফল নিয়ে প্রশ্ন <=> মথি ৭:১৬
- যাকোব ৩:১৭-১৮ ধন্য যারা শান্তি আনার জন্য পরিশ্রম করে <=> মথি ৫:৯
- যাকোব ৪:৪ জগতকে বন্ধু হওয়া মানে ঈশ্বরের শত্রু হওয়া <=> মথি ৬:২৪
- যাকোব ৪:১০ নম্ররা ধন্য <=> মথি ৫:৫
- যাকোব ৪:১১-১২ অন্যদের বিচার না করা <=> মথি ৭:১-৫
- যাকোব ৫:২ পোকা ও মরচে ধন নষ্ট <=> মথি ৬:১৯-২১
- যাকোব ৫:১০ ভাববাদীরা আদর্শস্বরূপ <=> মথি ৫:১২
- যাকোব ৫:১২ শপথ না করা ভাল <=> মথি ৫:৩৩-৩৭
- যাকোব মথি সুসমাচার থেকে উদ্ধৃতি করেন বলা যায়, কিন্ত তার চেয়ে এমন ভাব আছে যে তিনি পাহাড়ের তার বড় ভাইয়ের কথা স্মরণ করছেন।
যে বিষয় যাকোব সংশোধন করেন
মণ্ডলীর নানা ব্যবহারিক সমস্যা ও দুর্বলতার নিয়ে যাকোব দয়ালুভাবে কিন্তু একই সাথে বেশ কড়াভাবে পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করেন:
বিশ্বাসের ফল হতে হয় ভাল কাজ
পাহাড়ে যীশুর প্রচারের কথা তুলে যাকোব পাঠকদের চ্যলেঞ্জ করেন যে বাক্য শোনা যথেষ্ট নয়, তাদেরকে বাক্য পালনও করতেই হবে (যাকোব ১:২২)। তিনি ঘোষণা করেন যে কাজ ছাড়া বিশ্বাস মৃত (যাকোব ২:১৭, ২:২৬)। তিনি প্রমাণ করেন যে বিশ্বাশ শুধুমাত্র ভাল কাজে দৃশ্যমান ও প্রমাণিত হয়ে যায় (যাকোব ২:১৮)। বাধ্যতা ছাড়া বিশ্বাস হল কা মন্দ আত্মারাই করে (যাকোব ২:১৯)। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়, বিশ্বাস অনুসারে কাজও করতে হবে। যেমন অব্রাহাম বিশ্বাস করেই তার পুত্রকে উৎসর্গ করতে রাজি ছিলেন এবং রাহব ঝুঁকি হলেও গুপ্তচরদের লুকিয়ে রেখেছিলেন (যাকোব ২:২৩-২৫)। ব্যবহারিক দৈনন্দিন জীবনের যদি বিশ্বাস কোন পার্থক্য তৈরি না করে তবে বিশ্বাসের ক্ষমতা কি? যাকোব আইনকে স্বাধীনাতর আইন বলেন এবং আয়নার সাথে তুলনা করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে যারা ধৈর্য্য ধরে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে চলে তারাই ধন্য (যাকোব ২:২৫)।
ঈশ্বরই একটি সৎ-সরল বিশ্বাসের মনোভাবে খুশি হন, তিনি খুশি হন যদি তাঁর লোকেরা সন্দেহ না করে বরং তাঁকে বিশ্বাসের সঙ্গে ডাকে (যাকোব ১:৫-৭), পরীক্ষায় বা অভাবে হোক (যাকোব ১:২-৪), পাপে হোক (যাকোব ৫:১৫), অসুস্থতায় হোক (যাকোব ৫:১৩-১৫), দৈনন্দিন ছোট বিষয়ে হোক (যাকোব ৫:৭-১১)।
পরীক্ষা বা প্রলোভন
যাকোব চান যেন বিশ্বাসীরা পরীক্ষা বা প্রলোভন ধৈর্য্য শেখার, আরো পরিপক্ক হওয়ার এবং আরো পূর্ণতা লাভ করার একটি সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে (যাকোব ১:২-৪)। পরীক্ষা বা প্রলোভনে পড়লে সন্দেহ না করে এবং অস্থির না হয়ে (যাকোব ১:৭, ৫:৭-১১) বরং বিশ্বাসীর প্রার্থনায় ঈশ্বরকে ডাকতে এবং যে কোন বিষয়ে তাঁর উপর নির্ভর করা আবশ্যক (যাকোব ১:৫, ৫:১৩-১৬)। ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে প্রলোভনে ফেলে না কিন্তু মানুষের অন্তরের কামনাগুলি তাকে অবশ্যই প্রলোভনে ফেলতে পারে (যাকোব ১:১৪)। ঈশ্বর শুধুমাত্র ভাল জিনিস দান করেন, যেমন প্রজ্ঞা ও বুঝার ক্ষমতা (যাকোব ১:১৭)। আমাদের পতিত পৃথিবীতে যে মন্দ ঘটনা ঘটে এমন কি সেগুলিো ঈশ্বর তাঁর মঙ্গল পরিকল্পনায় ঘুরি নিয়ে আসতে সক্ষম (যাকোব ১:১২-১৬)।
জগতের প্রজ্ঞা বনাম ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা
ঈশ্বর নিজেই হলেন সমস্ত প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বুঝার ক্ষমতার উৎস। যদি বিশ্বাসীর এগুলির অভাব থাকে তবে সেগুলি পাওয়ার সে ঈশ্বরকে অনুরোধ করতে পারে এবং ঈশ্বর তা অবশ্যই বড় মনে যোগান করবেন (যাকোব ১:৫-৭)।
কিন্তু প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বুঝার ক্ষমতা তর্কাকর্তিতে বা স্বার্থপরভাবে নিজেকে প্রমাণিত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা ঠিক নয়। যাকোব ৩:১৫-১৭ পদে যাকোব জগতের ও ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার পার্থক্য বর্ণনা করেন: জগতের প্রজ্ঞা হল মন্দ ইচ্ছা ও মন্দ আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তাতে গোলমাল, ঝগড়া-ঝাতে, উঁচু-নীচু ভাব ও স্বার্থপরতা থাকে। কিন্তু ঈশ্বর কাছ থেকে যে প্রজ্ঞা আসে হল খাঁটি, শান্তিপূর্ণ, তাকে সহ্যগুণ ও নম্রতা থাকে, করুণাময়, ভণ্ডামিশূন্য ও সৎ কাজে পূর্ণ (যাকোব ৩:১৭-১৮)। ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা চালাকি, স্মার্ট যুক্তি-তার্ক, নিজেকে প্রমাণিত করা বা মতবাদ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করে না, বরং তা কথা শুনতে রাজি ও শান্তি রক্ষা করতে চেষ্টা করে। বিভিন্ন মণ্ডলীদের মধ্যে আমাদের আধুনিক মতবাদের ঝগড়া-বিবাদ থেকে তা কত ভিন্ন!
ধনী ও গরীবদের বিষয়ে কথা
যাকোব শক্তিশালীভাবে বলেন: যদি আমরা বিশ্বাসী হিসাবে একজন ধনী এবং একজন গরীব লোকের প্রতি ভিন্ন ব্যবহার করি তবে আমরা এখনও সুসমাচার সম্বন্ধে কিছু বুঝি নি (যাকোব ২:১-৭)। একজনের কাছে ভাল ব্যবহার দেখালেম কারণ তাকে নিয়ে ভয় পাই বা আশা করি যে তিনি আমাকে সুবিধা দেবেন, তা ঠিক নয়। একইভাবে একজন গরীব গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে বা সে আমাকে ক্ষতি করতে পারবে না বলে তার প্রতি খারাপ ব্যবহার করা ঠিক নয়। যীশু তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা সব মানুষদের মধ্যে তফাৎ বাদ দিয়েছেন এবং সবাই এক করেছেন, সুসমাচারের এই ভিত্তিক সত্যকে আমি অগ্রাহ্য করি যদি আমার ব্যবহারে পক্ষপাতিতা থাকে (গালা ৩:২৮)।
যাকোব ধনীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা তাদের ধন বাড়ানোর, তাদের ধন-সম্পদ রক্ষা করার এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারার ক্ষমতা নিয়ে অতি নিশ্চিত না হয় (যাকোব ৪:১৩-১৬) বরং যেন তারা প্রত্যেক মুহূর্তে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে। অন্যায় লাভ দ্বারা ধনী হওয়া একেবারে গ্রহণযোগ্য নয় (যাকোব ৫:১১-১৬)। এমন ধন যা অন্যদের সেবা করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা না হয় তাও সমস্যা (যাকোব ৫:২-৩)।
জিহ্বা
মানুষের কথাবার্তা কত শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক হতে পারে বলে যাকোব বিশ্বাসীদের চ্যলেঞ্জ করেন যেন তারা তাদের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করে (যাকোব ৩:১-৫ক)। তিনি জিহ্বা একটি ঘোড়ার লাগাম এবং জাহাজের হালের সাথে তুলনা করেন, একটি ছোট অংশ কিন্তু অত্যস্ত প্রভাব ও ক্ষমতাশালী। তিনি জিহ্বা আরো একটি আগুনের সাথে তুলনা করে যা একটি সম্পূর্ণ জগল পুড়িয়ে ফেলতে পারে, এমন কিছু যা পোষ মানে না, যা জ্বালা করে, যা মন্দ ও বিষাক্ত (যাকোব ৩:৫খ-৮)।
একই জিহ্বা দ্বারা উভয় ভাল ও খারাপ কথা বলা, উভয় আশীর্বাদ ও অভিশাপ করা ঠিক নয় (যাকোব ৩:১০-১২)। মুখে যা বলি তা অনুসারে করা অত্যন্ত আবশ্যক: তোমাদের “হ্যাঁ” “হ্যাঁ” হোক এবং “না” “না” হোক। বিশ্বাসীর সাধারণ কথা এমন বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্য হওয়া দরকার যে আর শপথ করা দরকার নেই (যাকোব ৫:১২)। যীশুর মত তার বিশ্বাসীদের ‘শুনতে আগ্রহী’ হওয়া উচিত এবং কথা তাড়াতাড়ি না বলা উচিত (যাকোব ১:১৯-২০)।
যাকোব তাদের তাও বলেন যে শুধুমাত্র মুখে যীশুতে বিশ্বাস ঘোষণা করা যথেষ্ট নয়, সাথে জীবনের একটি পরিবর্তন দেখা দেওয়া দরকার: ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা ও অন্যদের সেবা (আগে দেখুন ‘বিশ্বাসের ফল হতে হয় ভাল কাজ’)।
মোট কথা যাকোব বিশ্বাসীদের উৎসাহিত করেন যেন তারা ঈশ্বরের বাক্যকে নম্র অন্তরে গ্রহণ করে (যাকোব ১:২১), যেন তারা আসলে ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেয় (যাকোব ৪:১-৪), যেন নম্র হয় (যাকোব ৪:৬), যেন তাদের প্রতি ঈশ্বরের আগ্রহ বুঝে তারা সাড়ায় ঈশ্বরের প্রতি আগ্রহী হয় (যাকোব ৪:৫-৬), যেন তারা তাদের জীবন দ্বারা পৃথিবীতে মন্দতাকে চ্যালেঞ্জ করে (যাকোব ৪:৭) এবং যেন তারা গুরুত্বের সঙ্গে ও মনেপ্রাণে ঈশ্বের অনুসরন করে (যাকোব ৪:৭-১০)।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।