হিতোপদেশ হল প্রায় নয়শো প্রবাদের একটি সংগ্রহ, যাতে জীবনের ব্যবহারিক দৈনন্দিন বিষয়গুলো নিয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ের দৃষ্টি দেখানো হয়।
হিতোপদেশ হল প্রায় নয়শো প্রবাদ বা সহজে মনে রাখার নীতির একটি সংগ্রহ, যাতে জীবনের বিভিন্ন ধরণের ব্যবহারিক দৈনন্দিন বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। রাজা শলোমন, যিনি ইস্রায়েল এবং অন্যান্য জাতিদের মধ্যে তার প্রজ্ঞার জন্য বিখ্যাত (১ রাজা ৪:২৯), তিনি তিন হাজার প্রবাদ এবং এক হাজার গান লেখেন (১ রাজা ৪:৩২)। এইগুলো সব রক্ষিত হয় নি, কিন্তু হিতোপদেশ পুস্তক হল এইগুলোর মধ্যে কিছু প্রবাদের একটি সংগ্রহ। হিতোপদেশে শলোমনের প্রবাদের পাশাপাশি আরো জ্ঞানী লোকদের প্রবাদ দেওয়া আছে। এই জ্ঞানী লোকদের মধ্যে নাম দিয়ে উল্লিখিত আছেন আগুর ও রাজা লমূয়েল (হিতো ৩০:১, ৩১:১)। তাদের সম্বন্ধে আর তেমন কিছু জানা যায় না। সম্ভবত, শলোমনের রাজত্বের সময়ে হিতোপদেশের অধিকাংশ প্রবাদ সংগ্রহ করা হয়েছে (৯৭১-৯৩১ খ্রীঃপূঃ), কিন্তু হতে পারে পরবর্তীতে আরো প্রবাদ যোগ দেওয়া হয়েছিল (হিতো ২৫:১)।
হিতোপদেশ পুস্তকের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আইন-কানুন দেন না, যেমন তিনি মোশির পঞ্চপুস্তকে দিয়েছিলেন। আবারও তিনি এই পুস্তকের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের বাণী দেন না, যেমন ভাববাদীদের লেখায় পাওয়া যায়। একারণে হিতোপদেশ পুস্তকের যে কোনো প্রবাদ ‘ঈশ্বর থেকে দেওয়া একটি অপরিবর্তনশীল নীতি বা প্রতিজ্ঞা’ হিসাবে পড়া ঠিক হবে না। বরং প্রবাদগুলো দৈনিক বাস্তবতা বা মানুষের ব্যবহার সম্বন্ধীয় চালাকচতুর ও রসালো পর্যবেক্ষণ হিসাবে বুঝতে হয়। প্রবাদগুলো বর্ণনা করে যা অনেক বার ঘটে – কিন্তু তা যে সব সময় ঘটবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। একটি বিষয় সম্বন্ধে হিতোপদেশে বিভিন্ন প্রবাদ থাকতে পারে, যা একটি আর একটির পরিপূরক। প্রবাদের বিপরীত প্রবাদও পাওয়া যেতে পারে, যা দ্বারা একটি বিষয়ের বিভিন্ন দিক ও বিভিন্ন প্রয়োগ দেখানো হয়। যে কোনো একটি বিষয় সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা বুঝতে চাইলে, হিতোপদেশ পুস্তকে সেই বিষয়ে যতটা প্রবাদ পাওয়া যায়, সবগুলো একসাথে পড়তে হয়। এজন্য হিতোপদেশ পুস্তক বিষয়ভিত্তিকভাবে অধ্যয়ন করা ভাল।
হিতোপদেশ কি কি বিষয় নিয়ে কথা বলে? বিভিন্ন ধরণের বিষয়, যেমন: পরিবার সম্বন্ধীয় বিষয়গুলো (স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, আকর্ষণ, ব্যভিচার, সন্তান মানুষ করা, সন্তান শাসন করা ইত্যাদি), সরকার সম্বন্ধীয় বিষয়গুলো (একজন নেতার দায়িত্ব, আইন-শৃঙ্খলা, ন্যায় বিচার, অন্যায়, অধিকার ইত্যাদি), অর্থনীতি সম্বন্ধীয় বিষয়গুলো (পরিশ্রম, অলসতা, কৃপণ হওয়া, উদারতা, গরীবদের প্রতি ব্যবহার, লোভ, সঞ্চয়, উন্নয়ন ইত্যাদি), যোগাযোগ সম্বন্ধীয় বিষয়গুলো (সত্য বলা, মিথ্যা বলা, কথার ক্ষমতা, জিহ্বা, সংশোধন, প্রতারণা ইত্যাদি) এবং আর অনেক কিছু। তাই হিতোপদেশ পুস্তক গুরুত্ব দেয় সাধারণ, ব্যবহারিক ও দৈনন্দিন জীবনের উপরে।
হিতোপদেশ পুস্তককে প্রজ্ঞার সাহিত্য বলা হয় (যেমন ইয়োব ও উপদেশক পুস্তকেকেও) যার উদ্দেশ্য হল, সাধারণ লোকদের প্রজ্ঞা অনুসারে জীবন-যাপন শেখানো। কিন্তু প্রজ্ঞা আসলে কি? হিতোপদেশ পুস্তক অনুসারে প্রজ্ঞা সৃষ্টি হয় ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয় থেকে (হিতো ১:৭, ৯:১০)। বাইবেলে প্রজ্ঞা মানে না বুদ্ধি, জ্ঞানের দক্ষতা বা তালন্ত, বরং প্রজ্ঞা মানে নির্ভরশীল একটি নম্র হৃদয় ও ইচ্ছুক মন, এমন একটি মনোভাব যা সংশোধন গ্রহণ করতে রাজি এবং দৈনন্দিন জীবনে সত্য প্রয়োগ করতে আগ্রহী। প্রজ্ঞা সব সময় নৈতিক ব্যবহার করে এবং সব সময় ব্যবহারিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। প্রজ্ঞা মানে ভালটা ভাল হিসাবে বুঝা ও তা পছন্দ করা। প্রজ্ঞা হল সাধারণ জীবন-যাপন ভালভাবে করা, এমনভাবে যে, চারিদিকের লোকেরাও আশীর্বাদ পাবে। কে প্রজ্ঞা পেতে পারে? হিতোপদেশ উত্তরে বলে যে, সব ইচ্ছুক লোক তা পেতে পারে, যতজন ঈশ্বরের প্রতি বশীভূত হতে রাজি, যতজন শিখতে আগ্রহী ও সত্য প্রয়োগ করতে রাজি, ততজনই ঈশ্বরের প্রজ্ঞা পাবে। কিন্তু যারা অহংকারী, যারা অনিচ্ছুক এবং যারা নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় মনে করে, তারা প্রজ্ঞা পাবে না, প্রজ্ঞা বুঝবেও না।
তাই হিতোপদেশ হল একটি ব্যবহারিক মাধ্যম, যা দ্বারা সবাই প্রজ্ঞা পেতে পারে। হিতোপদেশ পুস্তকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কিভাবে মা-বাবা সন্তানকে শিক্ষা দেন (হিতো ২:১, ৩:১, ৪:১ ইত্যাদি), কিন্তু শুধুমাত্র যে ছোটদের প্রজ্ঞা শেখানো দরকার, এমন নয়। যারা সরল এবং যারা ইতিমধ্যে জ্ঞানী, উভয়ের জন্যই হিতোপদেশ প্রযোজ্য। যারা শিখতে চায় এবং যারা শেখাতে চায়, উভয়ের জন্যই হিতোপদেশ সাহায্যকারী। তাই এই পুস্তক হল পুরাতন নিয়মের সবচেয়ে ব্যবহারিক ও জনপ্রিয় পুস্তকের মধ্যে একটি এবং তা সহজেই প্রয়োগ করা যায়। হিতোপদেশ পাঠকদের মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ করে, তাদের বুঝার ও লক্ষ্য করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং তাদেরকে ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয়ে একটি প্রজ্ঞার জীবন গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে।
যেহেত হিতোপদেশ বিষয়ভিত্তিক ভাবে অধ্যয়ন করা দরকার, ত্রিশ মিনিটের সারাংশ দেওয়া হয় নি।
সরকার নিয়ে হিতোপদেশের অধ্যয়নের জন্য একই ওয়েবসাইটে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পৃষ্ঠায় “সরকার ১১ – সরকারের বিষয়ে হিতোপদেশ” দেখুন।