পৌল দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়া থিষলনীকীয় মণ্ডলীকে নিশ্চয়তা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন এখনও ঘটে নি। তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা অত্যাচারেও বৃদ্ধি পেতে এবং পরিশ্রম দ্বারা নিজের খরচ বহন করতে থাকে।
থিষলনীকীয় মণ্ডলীর স্থাপন
পৌল, সীল ও তীমথিয় একটি দল হিসাবে দ্বিতীয় প্রচার যাত্রায় বের হন (৫০-৫২ খ্রীঃ)। পৌল একটি দর্শনে ম্যাসিডোনিয়ার একজনের ডাক শোনেন এবং দলটি এই দর্শনে সাড়া দিয়ে এশিয়া মাইনর থেকে ম্যাসিডোনিয়া ও গ্রীসের দিকে রওনা দেন।
ফিলিপী শহরে একটি মণ্ডলী স্থাপন করার পরে তারা পশ্চিম দিকে রোমীয় মহাসড়ক ‘ভিয়া এগ্নাটিয়ায়’ যাত্রা করে থিষলনীকীয়া শহরে পৌঁছান। থিষলনীকীয়া ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর এবং রোম রাজ্যের ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশের সদর দপ্তর।
পৌল তাঁর অভ্যাস অনুসারে প্রথমে থিষলনীকীয়ায় যিহূদীদের সমাজ গৃহে প্রচার করেন। ফলে বেশ কিছু যিহূদী এবং অনেক গ্রীক লোক বিশ্বাসী হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কিছু প্রধান মহিলারাও ছিলেন (প্রেরিত ১৭:৪)। এভাবে থিষলনীকীয় মণ্ডলী স্থাপিত হয়।
যে যিহূদীরা পৌলের প্রচার অগ্রাহ্য করেছে, তারা ঝামেলা বাধিয়ে পৌলকে শহর-প্রশাসকদের সামনে টেনে আনে। সম্রাটের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী বলে তারা পৌলকে দোষারোপ করে: “যে লোকেরা সারা দুনিয়া তোলপাড় করে তুলেছে তারা এখন এখানেও উপস্থিত হয়েছে” (প্রেরিত ১৭:৬-৭)। বিশ্বাসীরা পৌল ও সীলকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেয়, শুধুমাত্র লাজুক যুবক সহকর্মী থিমথীয় থাকতে পারেন এবং এভাবে তিনি প্রথম বার একটি মণ্ডলীর দেখাশোনার দায়িত্ব নেন (প্রেরিত ১৭:১০)।
মণ্ডলীর স্থাপন সম্বন্ধে ১ থিষলনীকীয় চিঠি থেকে কিছুটা তথ্য যোগ দেওয়া যায়: পৌল যখন শহরে থাকেন বিশ্বাসীরা পবিত্র আত্মার শক্তি ও তাঁর নিশ্চয়তা অবিজ্ঞতা লাভ করে (১ থিষ ১:৫)। পৌল এবং তার দল দিনরাত উভয় পরিচর্য্যা এবং আয় যোগানের ক্ষেত্রে পরিশ্রম করেন, যেন তারা এই নতুন মণ্ডীর জন্য বোঝা হয়ে না যায় (১ থিষ ২:৯, ৩:৮)। এতে পৌলের সততা ও নীতি প্রমাণিত কারণ হতে পারে তিনি সহজে প্রধান মহিলাদের অনুরোধ করে টাকার ব্যবস্থা করতে পারতেন (প্রেরিত ১৭:৪)।
একটি ছোট মজার বিষয়: প্রেরিত ১৭:৬ পদে লূক যখন শহর-প্রশাসকদের উল্লেখ করেন তিনি গ্রীক ভাষার “পোলিতার্খ” (‘politarch’) শব্দ ব্যবহার করেন। কিছু পণ্ডিতরা বলে যে রোমীয় প্রশাসনে এই নামে কোন ভূমিকা ছিল না এবং এভাবে লূকের লেখার সঠিকতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতেন। কিন্তু পরে খোদাই করে একটি লেখা থিষলনীকীয় শহরে ভিয়া এগ্নাটিয়ায় একটি তোরনে আবিষ্কার করা হয়েছে যাতে শহরের নেতাদের বুঝানোর জন্য “পোলিতার্খ” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে: “পোলিতার্খদের সময়ে …”। লেখাটি এখন ব্রিটিশ যাদুঘরে দেখা যায় (নিচের ছবিগুলো দেখুন)। পরে এই ধরণের লেখা আরো ৩৪টা আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে ১৯টা থিষলনীকীয়া শহরে এবং কমপক্ষে ৩টা যা নিশ্চিত প্রথম শতাব্দীর। তাই নিশ্চয়তার সাথে বলা যায় যে লূক প্রেরিত ১৭:৬ পদে সঠিক শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
পৌল ও সীল তাড়াতাড়ি বিরিয়া শহরে চলে যান। যখন সেখানেও অত্যাচার শুরু হয় তখন পৌল এথেন্স ও করির্থ শহরে চলে যান (প্রেরিত ১৭:১৩-১৫)।সেখানে কিছুদিনের মধ্যে সীল ও তীমথিয় তার সঙ্গে যোগ দেন। থিষলনীকীয় মণ্ডলী অনেক তাড়াতাড়ি স্থাপিত এবং অত্যাচারিতও হয়েছে বলে পৌল তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তিত। তাই তিনি খোঁজ নেওয়ার জন্য তীমথিয়কে সেখানে ফিরে পাঠান (১ থিষ ৩:১-৫)। তীমথিয় আবার পৌলের কাছে ফিরে এসে তাকে মণ্ডলীর অবস্থা নিয়ে খবর দেন, যার উত্তরে পৌল ১ থিষলনীকীয় চিঠি লেখেন।
তীমথিয় চিঠিটি পৌঁছিয়ে ফিরে এসে আবারও মণ্ডলীর বিষয়ে পৌলকে সংবাদ দেন যে অত্যাচার আরো বেড়ে গেছে এবং এখনও অনেক বিশ্বাসীরা নিজের হাতে পরিশ্রম করতে রাজি না। তা ছাড়া অনেকে ভীত কারণ কেউ কেউ পৌলের নামে বলেছিল যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন ইতিমধ্যে ঘটে গেছে এবং তারা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে (২ থিষ ২:১-২)। তীমথিয়ের কাছ থেকে এই সংবাদ শুনে পৌল ২ থিষলনীকীয় চিঠি লেখেন।
তাই সারাংশ করে বলা যায় যে পৌল, সীল ও তীমথিয় ৫০ খ্রীষ্টাব্দে করিন্থ থেকে এই চিঠি লেখেন, হতে পারে মণ্ডলীর স্থাপনের অল্প কয়েক মাসের মধ্যে। বোধ হয় যে তীমথিয় আবার থিষলনীকীয়ায় ফিরে গিয়ে এই দ্বিতীয় চিঠি পৌঁছান কারণ পৌল ও সীলের মুখ সেখানে দেখালে আরো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
থিষলনীকীয় মণ্ডলীর অবস্থা
থিষলনীকীয়ায় সেই নতুন বিশ্বাসীদের কেমন লাগে যখন পৌল, সীল ও তিমথিয় অল্পক্ষণের উপস্থিতি ও শিক্ষা দিয়ে চলে যান? তীমথিয় অবশ্য আর একটু সময় কাটান কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ থাকেন না। পৌলের পরিদর্শন ঘূর্ণিঝড়ের মত ছিল কিন্তু এখন একটি খুব নতুন মণ্ডলী (যার নেতৃত্বও খুবই নতুন) নিজেকে যথেষ্ট চাপ এবং উভয় যিহূদী ও গ্রীকদের অত্যাচারের সম্মুখে খুঁজে পায়।
কিন্তু তা ছাড়া আরো সমস্যা চলছে: কিছু লোক মণ্ডলীতে প্রবেশ করে দাবি করে যে তারা পৌলের অনুমতি সাপেক্ষে বা তার একটি চিঠি পেয়ে কথা বলে। তারা পৌলের নাম উল্লেখ করে শিক্ষা দিচ্ছে যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন ইতিমধ্যে ঘটে গেছে (২ থিষ ২:১-২)। তাই তারা বিশ্বাসীদের ঘাবড়াছে যে তারা যীশুর দ্বিতীয় আগমন থেকে বঞ্চিত হয়েছে (এবং যারা প্রভুতে মারা গেছে তারাও বঞ্চিত হয়েছে) – ভয়ংকর ও উত্তেজনার কথা।
মণ্ডলী এই অবস্থায় আছে বলে সহজে বুঝা যায় পৌল তার ২ থিষলনিকীয় চিঠিতে কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেন:
- তিনি মণ্ডলীকে তাদের বিশ্বাস, পরিত্রাণের নিশ্চয়তা এবং যীশুতে বৃদ্ধির পাওয়ার জন্য প্রশংসা করেন। ইতিমধ্যে তারা অন্য মণ্ডলীগুলির জন্য আদর্শ ও উৎসাহ হয়েছে।
- পৌল তাদের নিশ্চয়তা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন এখনও হয় নি, তারা তা থেকে বঞ্চিতও হয় নি। তিনি তাদের শিক্ষা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমনের আগে আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা অবশ্যই ঘটবে যেন তারা ভবিষ্যতে এই ধরণের ভ্রান্ত শিক্ষা শুনে উত্তেজিত হয়ে না যায়।
- পৌল তাদের বিশ্বাসে বৃদ্ধি পেতে এবং আরো পবিত্রভাবে জীবন-যাপন করতে উৎসাহিত করেন। তার একটি আবশ্যক অংশ হল যে তারা পরিশ্রম করে নিজের জন্য আয় উপার্জন করে।
মণ্ডলীকে প্রশংসা ও উৎসাহ দান
থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা স্থির বিশ্বাস ও পরস্পকে ভালবাসায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অত্যাচার ও দুঃখকষ্ট সহ্য করেছে বলে পৌল তাদেরকে প্রশংসা করেন। তিনি তাদের আরো দেখান যে কষ্টের অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলেও ঈশ্বর তাদেরকে অন্য মণ্ডলীদের উৎসাহিত করার জন্য ব্যবহার করছেন (২ থিষ ১:৩-৪)।
পৌল তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন যে ঈশ্বর তাদের দুঃখকষ্ট অবশ্যই দেখেন এবং যারা বর্তমানে তাদের অত্যাচার করছে তাদেরকে ঈশ্বর যীশুর দ্বিতীয় আগমনের সময় অবশ্যই বিচার করবেন। তিনি তাদের আরো নিশ্চয়তা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগম তাদেরই জন্য হবে উদ্ধার, সান্ত্বনা এবং খ্রীষ্টের সঙ্গে চমৎকার ও বাধাহীন সহভাগিতা। কিন্তু যারা সত্য শুনেও তা অগ্রাহ্য করেছিল তাদের জন্য যীশুর দ্বিতীয় আগমন মানে ঈশ্বর থেকে বঞ্চিত হওয়া। অত্যাচারীদের জন্য যীশুর দ্বিতীয় আগমন হবে ভয়ংকর একটি বিষয় (২ থিষ ১:৬-১০)। পৌল প্রার্থনা করেন যেন মণ্ডলী ঈশ্বরের চমৎকার আহ্বানের যোগ্যভাবে জীবন-যাপন করে এবং যেন যীশু তাদের মধ্যে গৌরবান্বিত হন (২ থিষ ১:১১-১২)। যীশুর দ্বিতীয় আগমন থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে তাদের এই ভয় পৌল এভাবে ভেঙ্গে দেন।
তার পরিবর্তে তিনি তাদেরকে পরিত্রাণ ও আহ্বানের নিশ্চয়তা দিয়ে তাদের উৎসাহিত করেন যেন তারা বিশ্বাসী হিসাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে (২ থিষ ২:১৩-১৫)। তিনি তাদেরকে ঈশ্বরের ভালবাসা, দয়া ও আশার নিশ্চয়তা দেন (২ থিষ ২:১৬)। তিনি প্রার্থনা করেন যেন ঈশ্বর তাদের অন্তরে উৎসাহ দান করেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভাল কাজে ও কথায় স্থির রাখেন (২ থিষ ২:১৭)। তিনি তাদের প্রার্থনা যাচ্ঞা করেন (২ থিষ ৩:১) এবং তার বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে তারা বাধ্যতায়, ভালবাসায় ও ধৈর্যে বৃদ্ধি পাবে (২ থিষ ৩:৩-৫)। চিঠিতে পৌল বার বার তাদের জন্য তার আকাঙ্ক্ষা, ভালবাসা ও আশা প্রকাশ করেন এবং তাদেরকে ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করেন।
এমন লোক যারা পৌলের নামে ভ্রান্ত শিক্ষা দেয়
পৌল চিঠিটিতে আর একটি বিষয় তুলে ধরেন যে কেউ কেউ তার নামেই ভ্রান্ত শিক্ষা বা মিথ্যা ভাববাণী দিয়েছিল। হতে পারে তারা নিজেকে আরো অধিকার দেওয়ার এবং বিশ্বাসীদের উপরে প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে এই ধরণের দাবি করেছিল। পৌল বিশ্বাসীদের বুঝান যে তিনি একটি চিঠি নিজের হিসাবে চিহ্নিত রাখার জন্য সব সময় একটি অনুচ্ছেদ নিজের হাতে লেখেন যেন মণ্ডলী নিশ্চিত হতে পারে যে এই কথাগুলো আসলেই তার (২ থিষ ৩:১৭, গালা ৬:১১)। পৌল তাদের নিশ্চয়তা দেন যে তিনি কখনও শিক্ষা পরিবর্তন করবেন না, আগের শিক্ষার বিপরীত কিছু দাবি করবেন না। তিনি তাদের অস্থিরতা কাটিয়ে বলেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন এখনও ঘটে নি (২ থিষ ২:২-৩)।
যীশুর দ্বিতীয় আগমনের আগেই আর কি কি ঘটবে?
১ থিষলনীকীয় চিঠিতে পৌল তাদের বলেছিলেন যে যীশু নিশ্চিত আসবেন যদিও আমরা তার তারিখ নির্দিষ্টভাবে জানি না। তিনি তাদের আরো বলেছিলেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমনে বিশ্বাসীরা জীবিত থাকুক বা আগে মারা যাক, তা কোন পার্থক্য করবে না কারণ সব বিশ্বাসীদেরই উঠানো এবং যীশুর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
যীশুর দ্বিতীয় আগমন হয়ে গেছে এমন ভ্রান্ত কথার কারণে পৌল তার ২ থিষলনীকীয় চিঠিতে নিচের বিষয়ে শিক্ষা দেন:
পৌল বিশ্বাসীদের পুনরায় নিশ্চয়তা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন অবশ্যই ঘটবে এবং সেই সময়ে যীশু এক মুহূর্তে একটি সার্বিক বিজয় অর্জন করবেন (২ থিষ ২:৮)। কিন্তু পৌল বলেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমনের আগে আরো অনেক কিছু ঘটবে: পাপ-পুরুষ আসবে, তাকে এক সময় পর্যন্ত বাধা দেওয়া হবে, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সে অনেক ক্ষতি করবে এবং শেষে যীশু তাঁর মুখের ফুঁ দিয়ে তাকে ধ্বংস করবেন।
পৌল “পাপ-পুরুষের” বিষয়ে বলেন যে সে পাপ করবে (যেমন তার নাম বুঝায়), “ভিষণ বিদ্রোহ” ঘটবে এবং তাকে ধ্বংসে সমর্পিত করা হবে (২ থিষ ২:৩)। সে “ঈশ্বর বলে যা কিছু আছে সেই সমস্তের বিরুদ্ধে আর উপাসনা করবার মত সব কিছুর বিরুদ্ধে” দাঁড়াবে এবং “সে নিজেকে বড় করে দেখাবে; এমন কি, সে ঈশ্বরের উপাসনা-ঘরে বসে নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করবে” (২ থিষ ২:৪)। এই মুহূর্তে তাকে বাধা দিয়ে রাখা হচ্ছে এমন সময় পর্যন্ত যখন সে প্রকাশিত হবে (২ থিষ ২:৬)। যখন পাপ-পুরুষকে বাধা আর দেওয়া হবে না তখন সে প্রকাশিত হবে – তার শয়তানের শক্তি দিয়ে, তার সব রকম মিথ্যা চিহ্ন এবং আশ্চর্য ও শক্তির কাজ দিয়ে এবং তার দুষ্ট ছলনার মধ্য দিয়ে (২ থিষ ২:৯-১০)। পৌল বলেন যে এই মুহূর্তে পাপ-পুরুষকে বাধা দেওয়া হচ্ছে, একজন বাধাদানকারী বা বাধা দেওয়ার মত কিছু (২ থিষ ২:৬)। পরে সেই বাধাদানকারী সরে যাবে বা সরিয়ে দেওয়া হবে যার কারণে পাপ-পুরুষ প্রকাশিত হবে (২ থিষ ২:৭)। কিন্তু পরে “যীশু তাঁর মুখের নিঃশ্বাসে তাকে ধ্বংস করবেন এবং তাঁর মহিমাপূর্ণ উপস্থিতির দ্বারা তার শক্তি শেষ করে দেবেন” (২ থিষ ২:৮)। তাই গল্পটিকে সারাংশ করে এভাবে বর্ণনা করা যায়:
ছবি
বাধাদানকারী পাপ-পুরুষ যীশু
কিন্তু পাপ-পুরুষ ও বাধাদানকারী বলে পৌল কাদের বুঝান? বাইবেল পণ্ডিতরা প্রশ্নের উত্তরে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দেন, কিন্তু আসলে বিষয়টি পরিষ্কার না – এবং প্রত্যেক প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি করা যায়।
পাপ-পুরুষ কে? ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে: পাপ-পুরুষ শয়তান, একজন যিহূদী ভ্রান্ত মসীহ যিনি নিজেকে উপাসনা ঘরে বসান, মন্দ সৈরাচ্চার রাজারা (যেমন: সিলূকীয় রাজা আন্তিয়খিয়াস এপিফানেস যাকে দানিয়েল ১১:২১-৩৯ পদে বর্ণনা করা হয়েছে, কয়েক বছর আগের রোমীয় সম্রাট কালিগুলা, যিনি নিজের মূর্তি যিরূশালেমের উপাসনা ঘরে রাখতে চেয়েছিলেন, রোমীয় সম্রাট নীরো, নীরো নিয়ে সেই গল্প যে তিনি মৃত্যু থেকে উঠেছিলেন) অথবা সেই খ্রীষ্টারী (Antichrist)। তবুও ২ যোহন ৭ পদে খ্রীষ্টারী শব্দ বহুবচনে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ‘সেই খ্রীষ্টারী’ বলা যাবে না।
বাধাদানকারী বা কে? ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে: বাধাদানকারী পবিত্র আত্মা, সুসমাচার, প্রেরিতরা, সত্যিকার শিক্ষকরা, ঈশ্বরের আইন, রোম সরকার দ্বারা বিস্তার করা আইন, ঈশ্বর দ্বারা পাঠানো একজন প্রধান দূত অথবা মার্ক ১৩:১০ পদে উল্লিখিত সেই শর্ত যে সমস্ত জাতিগুলো সুসমাচার না পাওয়া পর্যন্ত পৃথিবী শেষ হবে না।
মোট কথা: আমরা জানি না পাপ-পুরুষ ও বাধাকারী বলতে পৌল কাকে বুঝিয়েছেন তবুও তিনি বলেন যে থিষলনীকীয়রা ভালই জানে। প্রকাশিত বাক্যের সাথে তেমন কোন মিল না থাকার কারণে পরিষ্কার কোন উত্তর পাওয়া যায় না।
যদিও আমরা পাপ-পুরুষ ও বাধাদানকারীর পরিচয় দিতে পারি না, তাদের উল্লেখ করার পিছনে পৌলের উদ্দেশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট: তিনি একটি ভিত মণ্ডলীকে স্থিরতা ও শান্তি দান করেন এই বলে যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন এখনও ঘটে নি, তারা তা থেকে বঞ্চিতও হয় নি বরং তা ঘটার আগে আরো বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে। তিনি তাদের নিশ্চয়তা দেন যে যীশু অবশ্যই ফিরে আসেন এবং মন্দের উপর তাড়াতাড়ি ও সম্পূর্ণভেবে জয়লাভ করবেন।
কথার মাঝে একটি কঠিন পদও পাওয়া যায়: “এইজন্য ঈশ্বর তাদের কাছে এমন এক শক্তি পাঠাবেন যা তাদের ভুল পথে নিয়ে যাবে, যেন তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে” (২ থিষ ২:১১)। এই কথায় অনেকে বিঘ্ন পায় – কেন ঈশ্বর এই ধরণের ঘটনা ঘটাবেন? আগের পদ পড়লে এর উত্তর পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় (২ থিষ ২:১০): “উদ্ধার পাবার জন্য তারা সত্যকে ভালবাসে নি এবং তা গ্রহণও করে নি। এইজন্য ঈশ্বর তাদের কাছে …“। শুধুমাত্র যারা সত্যকে সত্য হিসাবে বুঝার পরেও তা ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রাহ্য করেছে তাদেরই কাছে ঈশ্বর সেই ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার শক্তি পাঠাবেন। কথাটি যাত্রাপুস্তকে ফরৌণের গল্প স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে তিনি সত্য পেলেও এবং অনেক শক্তিশালী প্রমান দেখলেও নিজের হৃদয় বার বার কঠিন করে সত্যকে অগ্রাহ্য করতে থাকেন – ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বার বার তাই করেন। শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বর তার হৃদয় আরো কঠিন করতে শুরু করেন।
সারাংশ করে বলা যায় যে ২ থিষ ২:১-১২ এই অনুচ্ছেদ হল নতুন নিয়মের সবচেয়ে কঠিন অনুচ্ছেদের মধ্যে একটি এবং আমরা খুটিনাটি বিষয় বেশি ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম নই। কিন্তু অনুচ্ছেদের মূল চিন্তাটি যথেষ্ট পরিষ্কার এবং তা নতুন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকের শিক্ষার সাথে মিলে: যীশুর দ্বিতীয় আগমন নিশ্চিত ঘটবে এবং যীশু এসে তিনি মন্দের উপরে সম্পূর্ণভাবে ও চিরস্থায়ী একটি বিজয় লাভ করবেন। কিন্তু তা ঘটতে আর একটু দেরি আছে।
কেউ যদি কাজ করতে না চায় তবে সে যেন না খায়
পৌল তার চিঠির শেষ অংশে এমন একটি সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করেন যা নিয়ে তিনি ইতিমধ্যে ১ থিষলনীকীয় চিঠিতে কথা বলেনছিলেন: বিশ্বাসীদের নিজের আয় উপার্জন করার জন্য কাজ করা দরকার। তাদের এমন আদর্শ নাগরিক হওয়া দরকার যারা পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, স্বচালিত, যারা কারোর উপর নির্ভরশীল নয় বরং যাদের দানশীল হওয়ার ক্ষমতা আছে। উভয় ১ম ও ২য় থিষলনীকীয় চিঠিতে পৌল বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দেন তাদের মধ্যে থাকার সময়ে তিনি এবং তার দল কি ধরণের আদর্শ আচরণ করেছিলেন: প্রেরিত হিসাবে তারা লোকদের দান দাবি করতে পারতেন, কিন্তু তারা তা করেন নি। বরং তারা পরিচর্যার পাশাপাশি পরিশ্রম করে তাদের খরচ নিজেরাই বহন করেছিলেন যেন নতুন মণ্ডলীর উপর কোন আর্থিক চাপ সৃষ্টি না হয়। পৌল বলেন যে “আমরা অলস ভাবে চলি নি, কিম্বা দাম না দিয়ে কারও খাবার খাই নি। আমরা দিনরাত পরিশ্রম আর কষ্ট করেছি” (২ থিষ ৩:৭-৮)।
যদিও প্রেরিতেরা পরিশ্রমের আদর্শ দেখিয়েছিলেন, যদিও পৌল ১ম থিষলনীকীয় চিঠিতে তাদের এই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং যদিও তীমথিয় এই বিষয়ে তাদেরকে অবশ্যই আরো উৎসাহিত করেছিলেন তবুও থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা নিজেরা আয় উপার্জন করতে রাজি না। এরজন্য পৌল ২ থিষলনীকীয় চিঠিতে আরো কঠোর ভাষা ব্যবহার করে তদের কাজ করতে সরাসরি আদেশ দেন (২ থিষ ৩:৬)। যারা আদর্শ দেখা, শিক্ষা ও উৎসাহ পাওয়া (১ থিষ), আদেশ ও সাবধানবাণী পাওয়ার পরেও (২ থিষ ৩:৬,১৫) কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করে, পৌল তাদেরকে মণ্ডলীতে বিশ্বাসীদের সহভাগিতা থেকে বের করতে বলেন (২ থিষ ৩:৬,১৪) – সেই আশায় যে তারা বুঝতে পারবে বিষয়টি আবশ্যক এবং লজ্জা পেয়ে তাদের ব্যবহার পরিবর্তন করবে। পৌল তাদের শাস্তি দিতে বা স্থায়ীভাবে বের করতে চান না বরং তিনি চান যেন তারা অনুতপ্ত হয় এবং মণ্ডলী তাদের পুনরায় গ্রহণ করে।
পৌল এই বিষয়ে কঠোর কারণ তিনি ভালভাবে জানেন যে অলসতা লোকদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষতি করে:
- কাজ না করা মানে সময়, শ্রম, সংস্থান ও দক্ষতার খারাপ ব্যবহার বা তার ধনাধক্ষ্য না হওয়া।
- কাজ না করা মানে অনুপযুক্ত ব্যবহারে প্রলোভিত হওয়া (“অন্যের ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত থাকা” ২ থিষ ৩:১১)।
- কাজ না করা মানে অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া যা দ্বারা আপোষ করার প্রলোভান বাড়ে (১ থিষ ৪:১২)।
- কাজ না করা মানে দায়িত্বহীন হওয়া যা দ্বারা পরিবারে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
- কাজ না করা মানে হলে বিশ্বাসীর অন্যদের সাহায্য, আশীর্বাদ বা দান করার ক্ষমতা নেই, তিনি সমাজে একটি গঠনকারী নাগরিক হতে সক্ষম নয়।
- কাজ না করা মানে নিজের সম্ভাবনা বা আহ্বান পূর্ণ না করা যার কারণে ঈশ্বর, অন্য মানুষ ও বিশ্বাসী নিজেই বঞ্চিত হয়ে যায়।
যে বিশ্বাসী কাজ করে না সে এখনও বুঝতে পারে নি ঈশ্বর তার উপর, তার দান-দক্ষতার উপর ও তার সময়ের উপর কত মূল্য দিয়েছেন। অলস হওয়া মানে মানুষ হিসাবে নিজের মূল্য না বুঝা, নিজের শ্রমের মূল্য না বুঝা এবং নিজের আহ্বান না বুঝা। পরিশ্রম, বিশ্বস্ততা ও ধৈর্য ছাড়া কোন আহ্বান পূর্ণ হয় না। পৌল চান যেন থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা বৃদ্ধ পায়, নিজেকে কাজে লাগায় এবং এভাবে উন্নত, শক্তিশালী ও ফলবান হয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
থিষলনীকীয় মণ্ডলীর স্থাপন
পৌল, সীল ও তীমথিয় একটি দল হিসাবে দ্বিতীয় প্রচার যাত্রায় বের হয় (৫০-৫২ খ্রীঃ)। পৌল একটি দর্শনে ম্যাসিডোনিয়ার একজনের ডাক শুনেন এবং দলটি এই দর্শনের সাড়া দিয়ে এশিয়া মাইনর থেকে ম্যাসিডোনেয়া ও গ্রীসের দিকে রওনা দেন।
ফিলিপী শহরের একটি মণ্ডলী স্থাপন করার পরে তারা পশ্চিম দিকে রোমীয় মহাসড়ক “ভিয়া এগ্নাটিয়ায়” যাত্রা করে থিষলনীকীয়া শহরে পৌঁছায়। থিষলনীকীয়া ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর এবং রোম রাজ্যের ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশের সদর।
পৌঁল তাঁর অভ্যাস অনুসারে প্রথম থিষলনীকীয়ায় যিহূদীদের সমাজ গৃহে প্রচার করেন। ফলে বেশ কিছু যিহূদী এবং অনেক গ্রীক লোক বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে কিছু প্রধান মহিলারাও, বিশ্বাসী হয়ে যায় এবং এভাবে থিষলনীকীয় মণ্ডলী স্থাপিত (প্রেরিত ১৭:৪)।
যে যিহূদী পৌলের প্রচার অগ্রাহ্য করেছে, তারা সমস্যা উস্কিয়ে পৌলকে শহর-প্রশাসকদের সামনে টেনে আনে। সম্রাটের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী বলে তারা পৌলকে দোষারোপ করে: “যে লোকেরা সারা দুনিয়া তোলপাড় করে তুলেছে তারা এখন এখানেও উপস্থিত হয়েছে” (প্রেরিত ১৭:৬-৭)। বিশ্বাসীরা পৌল ও সীলকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেয়, শুধুমাত্র লাজ্জুক যুবক সহকর্মী থিমথীয় থাকতে পারেন এবং এভাবে প্রথম বার তাকে একটি মণ্ডলীর দেখাশুনার দায়িত্ব নিতে হয় (প্রেরিত ১৭:১০)।
মণ্ডলীর স্থাপস সম্বন্ধে ১ থিষলনীকীয় চিঠি থেকে কিছুট তথ্য যোগ দেওয়া যায়: পৌল যখন শহরে থাকেন বিশ্বাসীরা পবিত্র আত্মার শক্তি ও তাঁর নিশ্চয়তা দান করে (১ থিষ ১:৫)। পৌল এবং তার দল দিন নাত পরিশ্রম করে, পরিচর্য্যা এবং আয় যোগানের ক্ষেত্রে, যেন তারা এই নতুন মণ্ডীর জন্য বোঝা হয়ে না যায় (১ থিষ ২:৯, ৩:৮)। এতে পৌলের সততা ও নীতি প্রমাণিত কারণ হতে পারে তিনি সহজে প্রধান মহিলাদের অনুরোধ করে টাকা আয়োজন করতে পারতেন (প্রেরিত ১৭:৪)।
একটি ছোট মজার বিষয়: প্রেরিত ১৭:৬ পদে লূক যখন শহর-প্রশাসকদের উল্লিখিত করেন তিনি গ্রীক ভাষার “পোলিতার্খ” (‘politarchs’) শব্দ ব্যবহার করেন। কিছু পণ্ডিতরা বলে যে রোম সরকারে এই নামে কোনো ভূমিকা ছিল না লূকের লেখার সঠিকতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতেন। কিন্তু পরে খোদায় করে একটি লেখা থিষলনীকীয় শহরে ভিয়া এগ্নাটিয়ায় একটি তোরনে আবিষ্কার করা হয়েছে যাতে শহরের নেতাদের বুঝানোর জন্য “পোলিতার্খ” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে: “পোলিতার্খদের সময়ে …”। লেখাটি এখন ব্রিটিশ যাদুঘড়রে দেখা যায় (নিচের ছবিগুলো দেখুন)। পরে আরো এই ধরণের লেখাগুলি আরো ৩৪টা আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে ১৯টা থিষলনীকীয়া শহরে এবং কমপক্ষে ৩টা যা নিশ্চিত প্রথম শতাব্দের। তাই লূক সঠিক শব্দটি ব্যবহার করেনছেন প্রেরিত ১৭:৬ পদে।
পৌল ও সীল তাড়াতাড়ি বিরিয়া শহরে চলে যান। যখন সেখানেও অত্যাচার শুরু হয় পৌল এথেন্স ও করির্থ শহরে চলে যান (প্রেরিত ১৭:১৩-১৫) যেখানে কিছুক্ষণের মধ্যে সীল ও তীমথিয় তার সঙ্গে যোগ দেন। থিষলনীকীয় মণ্ডলী অনেক তাড়াহুড়া স্থাপিত এবং অত্যাচারিতও হয়েছে বলে পৌল তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তিত। তাই তিনি তীমথিয়কে খোঁজ নেওয়ার জন্য সেখানে ফিরা পাঠান ১ থিষ ৩:১-৫)। তীমথিয় আবার পৌলের কাছে ফিরে এসে তাকে মণ্ডলীর অবস্থা নিয়ে খবর দেন, যার উত্তরে পৌল ১ থিষলনীকীয় চিঠি লেখেন।
তাই সারাংশ করে বলা যায় যে পৌল, সীল ও তীমথিয় ৫০ খ্রীষ্টাব্দে করিন্থ থেকে এই চিঠি লেখেন, হতে পারে মণ্ডলীর স্থাপনের অল্প কিছু মাসের মধ্যে। বোধ হয় যে তীমথিয় আবার থিষলনীকীয়ায় ফিরে গিয়ে চিঠিটি পৌঁছান কারণ পৌল ও সীলের মুখ সেখানে দেখালে আরো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
থিষলনীকীয় মণ্ডলীর অবস্থা
থিষলনীকীয়ায় সে নতুন বিশ্বাসীদের কেমন লাগে যখন পৌল, সীল ও তিমথিয়ের অল্পক্ষণের উপস্থিতির ও শিক্ষার পরে চলে যান? তীমথিয় অবশ্যই আর একটু সময় কাটান কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ থাকেন না। পৌলের পরিদর্শন ঘূর্ণিঝড়ের মত ছিল কিন্তু এখন একটি খুব নতুন মণ্ডলী (যার নেতৃত্বও খুবই নতুন) নিজেকে যথেষ্ট চাপ ও স্থানীয় লোকদের দ্বারা (যিহূদী হোক বা গ্রীক হোক) অত্যাচারের সম্মুখীন খুঁজে পায়।
কিন্তু তা ছাড়া আরো সমস্যা চলছে: কিছু লোক মণ্ডলীতে প্রবেশ করে দাবি করে যে তারা পৌলের অধিকারে কথা বলে অথবা তারা পৌলের একটি চিঠিতে মণ্ডলীর জন্য নির্দেশনা পেয়েছে। তারা পৌলের নাম দাবি করে শিক্ষা দিচ্ছে যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন ইতিমধ্যে ঘটে গেছে (২ থিষ ২:১-২)। তাই তারা বিশ্বাসীদের ঘাবড়াছে যে তারা যীশুর দ্বিতীয় আগমন মিশ করে তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং যারা প্রভুতে মারা গেছে তারাইও বঞ্চিত হয়েছে – ভয়ংকর ও উত্তেজনার কথা।
মণ্ডলী এই অবস্থায় আছে বলে সহজে বুঝা যায় পৌল তার ২ থিষলনিকীয় চিঠিতে কি বড় বিষয় তোলেন:
- তিনি মণ্ডলীকে তাদের বিশ্বাস, পরিত্রাণের নিশ্চয়তা এবং যীশুতে বৃদ্ধির পাওয়ার জন্য প্রশংসা করেন। ইতিমধ্যে তারা অন্য মণ্ডলীগুলির জন্য আদর্শ ও উৎসাহ হয়েছে।
- পৌল তাদের নিশ্চয়তা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন এখনও হয় নি, তারা তা মিশ করে নি বা তা থেকে বঞ্চিতও হয় নি। তিনি তাদের শিক্ষা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমনের আগে আর বেশ কয়েকটি ঘটনা অবশ্যই ঘটবে যেন তারা ভবিষ্যতে এই ধরণের দাবি শুনে উত্তেজিত হয়ে না যায়।
- পৌল তাদের বিশ্বাসে বৃদ্ধি পেতে এবং আরো পবিত্রভাবে জীবন-যাপন করতে উৎসাহিত করেন। তার একটি আবশ্যক অংশ হল যে তারা পরিশ্রম করে নিজের জন্য আয় করে।
মণ্ডলীকে প্রশংসা ও উৎসাহ দান
থিষলনীকীয় বিশ্বাসীদের স্থির বিশ্বাস ও পরস্পকে ভালবাসায় বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য পৌল তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অত্যাচার ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার জন্য তাদেরকে প্রশংসা করেন। তিনি তাদের আরো দেখান যে কষ্টের অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলেও ঈশ্বর তাদেরকে অন্য মণ্ডলীগুলোদের উৎসাহিত করার জন্য ব্যবহার করছেন (২ থিষ ১:৩-৪)।
পৌল তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন যে ঈশ্বর তাদের দুঃখ-কষ্ট অবশ্যই দেখেন এবং যারা এখুনি তাদের অত্যাচার করে তাদেরকে ঈশ্বর যীশুর দ্বিতীয় আগমনের সময় অবশ্যই বিচার করবেন। তিনি তাদের আরো নিশ্চয়তা দেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগম তাদেরই জন্য হবে উদ্ধার ও সান্ত্বনা এবং খ্রীষ্টের সঙ্গে চমৎকার ও বাধাহীন সহভাগিতা। কিন্তু যারা সত্য শুনলেও তা অগ্রাহ্য করেছিল তাদের জন্য যীশুর দ্বিতীয় আগমন মানে ঈশ্বর থেকে বঞ্চিত হওয়া। অত্যাচারীদের জন্য যীশুর আসা হবে ভয়ংকর একটি বিষয় (২ থিষ ১:৬-১০)। পৌল প্রার্থনা করেন যেন মণ্ডলী ঈশ্বরের চমৎকার আহ্বানের যোগ্যভাবে জীবন-যাপন করে এবং যেন যীশু তাদের মধ্যে গৌরবান্বিত হন (২ থিষ ১:১১-১২)।
যীশুর দ্বিতীয় আগমন থেকে যে তারা বঞ্চিত হয়েছে এই ভয় পৌল এভাবে ভেঙ্গে দেন বরং তিনি তাদের পরিত্রাণ ও আহ্বানের নিশ্চয়তা দিয়ে তাদের উৎসাহিত করেন যেন তারা বিশ্বাসী হিসাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে (২ থিষ ২:১৩-১৫)। তিনি তাদেরকে ঈশ্বরের ভালবাসা, দয়া ও আশার নিশ্চয়তা দেন (২ থিষ ২:১৬)। তিনি প্রার্থনা করেন যেন ঈশ্বর তাদের অন্তরে উৎসাহ দান করবেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভাল কাজে ও কথায় স্থির রাখবেন (২ থিষ ২:১৭)। তিনি তাদের প্রার্থনা যাচ্ঞা করেন (২ থিষ ৩:১) এবং বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে তারা বাধ্যতায়, ভালবাসায় ও ধৈর্যে বৃদ্ধি পাবে (২ থিষ ৩:৩-৫)। চিঠিতে পৌল বার বার তাদের জন্য তার আকাঙ্ক্ষা, ভালবাসা ও আশা প্রকাশ করেন এবং তাদেরকে ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করেন।
এমন লোক যারা পৌলের নামে ভুল শিক্ষা দেয়
পৌল চিঠিটিতে আর একটি বিষয় তুলে ধরেন: কেউ কেউ তার নামেই ভুল শিক্ষা বা মিথ্যা ভাববাণী দিয়েছিল। হতে পারে তারা নিজেকে আরো অধিকার দেওয়ার এবং বিশ্বাসীদের উপরে প্রভাব ফেলার জন্য এই ধরণের দাবি করত। পৌল বিশ্বাসীদের বুঝান যে তিনি একটি চিঠি নিজের হিসাবে চিহ্নিত রাখার জন্য সব সময় একটি অনুচ্ছেদ নিজের হাতে লেখেন যেন মণ্ডলী নিশ্চিত জানে যে কথা আসলে তারই (২ থিষ ৩:১৭, গালা ৬:১১)। পৌল তাদের নিশ্চয়তা দেন যে তিনি কখনও শিক্ষা পরিবর্তন করবেন না, আগের শিক্ষার উল্টা কিছু দাবি করবেন না। তিনি তাদের অস্থিরতা কেটে বলেন যে দ্বিতীয় আগমন এখনও ঘটে নি (২ থিষ ২:২-৩)।
যীশুর দ্বিতীয় আগমনের আগেই আর কি কি ঘটবে?
১ থিষলনীকীয় চিঠিতে পৌল তাদের বলেছিলেন যে যীশু নিশ্চিত আসবেন, যদিও আমরা তার তারিখ নির্দিষ্টভাবে জানি না। তিনি তাদের আরো বলেছিলেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমনে একজন জীবিত থাকুক বা আগে মারা যাক, তা কোন পার্থক্য করবে না কারণ সব বিশ্বাসীদের উঠানো হবে এবং যীশুর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
যীশুর আগমন হয়ে গেছে সে ভ্রান্ত কথার কারণে পৌল তার ২ থেষলনীকীয় চিঠিতে নিচের বিষয়ে শিক্ষা দেন:
পৌল বলেন যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন অত্যন্ত নিশ্চিত এবং যে যীশু তাড়াতাড়ি ও সম্পূর্ণভাবে জয় করবেন (২ থিষ ২:৮)। কিন্তু দ্বিতীয় আগমন ঘটার আগেই বেশ কিছু ঘটনার ঘটতে হবে: একজন “পাপ-পুরুষ” দেখা দেবে। এক সময় পর্যন্ত একজন “বাধাকারী” তাকে এখনও বাধা দেবে কিন্তু পরে বাধাকারী তাকে আর বাদ দিবে না বলে সে উল্টাপাল্টা কাজ করবে। পরে যীশু এসে তাঁর মুখের সরল একটি ফু দিয়ে পাপ-পুরুষকে একেবারে ধ্বংস করবেন।
চিঠিতে বুঝা যায় পৌল নিশ্চিত যে থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা ভালভাবে বুঝে তিনি “পাপ-পুরুষ” ও “বাধাকারী” বলে কাকে বুঝায়, কিন্তু আমরা যারা আমরা অনেক পরে চিঠিটি পড়ছি আমাদের জন্য তা আর পরিষ্কার না।
পৌল “পাপ-পুরুষের” বিষয়ে বলেন যে সে পাপ করবে (যেমন তার নাম বুঝায়), “ভিষণ বিদ্রোহ” ঘটবে এবং তাকে ধ্বংসে সমর্পিত করা হবে (২ থিষ ২:৩)। সে “ঈশ্বর বলে যা কিছু আছে সেই সমস্তের বিরুদ্ধে আর উপাসনা করবার মত সব কিছুর বিরুদ্ধে” দাঁড়াবে এবং “সে নিজেকে বড় করে দেখাবে; এমন কি, সে ঈশ্বরের উপাসনা-ঘরে বসে নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করবে (২ থিষ ২:৪)। এই মুহূর্তে তাকে বাধা দিয়ে রাখা হচ্ছে এমন সময় পর্যন্ত যখন সে প্রকাশিত হবে (২ থিষ ২:৬)। যখন পাপ-পুরুষকে বাধা আর দেওয়া হবে না তখন তা প্রকাশ পাবে তার শয়তানের শক্তি দিয়ে, তার সব রকম মিথ্যা চিহ্ন এবং আশ্চর্য ও শক্তির কাজ দেয়ে এবং তার দুষ্ট ছলনার মধ্য দিয়ে (২ থিষ ২:৯-১০)। পৌল বলেন যে এই মুহূর্তে পাপ-পুরুষকে বাধা দেওয়া হচ্ছে, একজন বাধাকারী বা বাধা দেওয়ার মত কিছু (২ থিষ ২:৬)। পরে সে বাধাকারী সরে যাবে বা সরিয়ে দেওয়া হবে যার কারণে পাপ-পুরুষ প্রকাশিত হবে (২ থিষ ২:৭)। কিন্তু পরে “যীশু তাঁর মুখের নিঃশ্বাসে তাকে ধ্বংস করবেন এবং তাঁর মহিমাপূর্ণ উপস্থিতির দ্বারা তার শক্তি শেষ করে দেবেন” (২ থিষ ২:৮)। তাই গল্পটিকে সারাংশ করে এভাবে বর্ণনা করা যায়:
ছবি
বাধাকারী পাপ-পুরুষ যীশু
কিন্তু পাপ-পুরুষ ও বাধাকারী বলে পৌল কাদের বুঝান? বাইবেল পণ্ডিতরা প্রশ্নের উত্তর হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দিলেন, কিন্তু আসলে বিষয়টি পরিষ্কার না – এবং প্রত্যেক প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি তুলা যায়।
“পাপ-পুরুষ” কে? ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে: পাপ-পুরুষ শয়তান, একজন যিহূদী ভ্রান্ত মসীহ যিনি নিজেকে উপাসনা ঘরে বসান, মন্দ সৈরাচ্চার রাজারা (যেমন: সিলূকীয় রাজা আন্তিয়খিয়াস এপিফানেস যাকে দানি ১১:২১-১৯ পদে বর্ণনা করা হয়েছে, কিছু বছর আগের রোমীয় সম্রাট কালিগুলা, যিনি নিজের মূর্তি যিরূশালেমের উপাসনা ঘরে রাখতে চেয়েছিলেন, রোমীয় সম্রাট নীরো, নীরো নিয় সে গল্প যে তিনি মৃত্যু থেকে উঠেছিলেন) অথবা সে খ্রীষ্টারী (Antichrist)। তবুও ২ যোহন ৭ পদে খ্রীষ্টারী শব্দ বহুবচনে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ‘সেই খ্রীষ্টারী’ বলা যাবে না।
“বাধাকারী” বা কে? ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে: বাধাকারী পবিত্র আত্মা, সুসমাচার, প্রেরিতরা, সত্যিকার শিক্ষকরা, ঈশ্বরের আইন, রোমীয় আইন, ঈশ্বর দ্বারা পাঠানো একজন প্রধান দূত অথবা মার্ক ১৩:১০ পদে উল্লিখিত সে শর্ত যে সমস্ত জাতেগুলি সুসমাচার না পাওয়া পর্যন্ত পৃথিবী শেষ হবে না।
মোট কথা: আমরা জানি না পাপ-পুরুষ ও বাধাকারী বলতে পৌল কাকে বুঝিয়েছেন তবুও তিনি বলেন যে থিষলনীকীয়রা ভালই জানে। প্রকাশিত বাক্যের সাথে তেমন কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না তাই এভাবেও পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
যদিও আমরা “পাপ-পুরুষ” ও “বাধাকারীর” পরিচয় দিতে পারছি না, তাদের উল্লেখ করার পৌলের উদ্দেশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট: তিনি একটি ভিত মণ্ডলীকে স্থিরতা ও শান্তি দান করেন বলে যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন ঘটে নি, তারা তা থেকে ব্যর্থ হয় নি বরং যে তা ঘটার আগে আর বেশ কিছু ঘটতে হবে। তিনি তাদের নিশ্চয়তা দেন যে যীশু অবশ্যই ফিরে আসেন এবং মন্দের উপর তাড়াতাড়ি ও সম্পূর্ণভেবে জয়লাভ করবেন।
কথার মাঝে একটি কঠিন পদও পাওয়া যায়: “এইজন্য ঈশ্বর তাদের কাছে এমন এক শক্তি পাঠাবেন যা তাদের ভুল পথে নিয়ে যাবে, যেন তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে” (২ থিষ ২:১১)। এই কথায় অনেকে বিঘ্ন পায় – কেন ঈশ্বর এই ধরণের কাজ করবেন? এর উত্তর পরিষ্কার বুঝা যায় আগের পদ পড়লে (২ থিষ ২:১০): “উদ্ধার পাবার জন্য তারা সত্যকে ভালবাসে নি এবং তা গ্রহণও করে নি। এইজন্য ঈশ্বর তাদের কাছে … “। শুধুমাত্র যারা সত্যকে সত্য হিসাবে বুঝার পরেও তা ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রাহ্য করেছে তাদের কাছে ঈশ্বর সে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার শক্তি পাঠাবেন। এই কথা যাত্রাপুস্তকে ফরৌণের গল্প স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে তিনি সত্য পেলে এবং অনেক শক্তিশালী প্রমান দেখলেও নিজের হৃদয় বার বার কঠিন করে সত্যকে অগ্রাহ্য করতে থাকেন – ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বার বার তাই করেন। শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বর তার হৃদয় আরো কঠিন করতে শুরু করেন।
সারাংশ করে বলা যায় যে ২ থিষ ২:১-১২ এই অনুচ্ছেদ হল নতুন নিয়মের সবচেয়ে কঠিন অনুচ্ছেদের মধ্যে একটি এবং আমরা খুটিনাটি বিষয় বেশি ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম নই। কিন্তু অনুচ্ছেদের মূল চিন্তাটি যথেষ্ট পরিষ্কার এবং তা নতুন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকের শিক্ষার সাথে মিলে: যীশুর দ্বিতীয় আগমন নিশ্চিত ঘটবে এবং এসে যীশু মন্দের উপরে সম্পূর্ণভাবে ও চিরস্থায়ী একটি জয় লাভ করবেন। কিন্তু তা ঘটতে আর একটু দেরি আছে।
কেউ যদি কাজ করতে না চায় তবে সে যেন না খায়
তার চিঠির শেষ অংশে পৌল এমন একটি সমস্যার সংশোধন করতে চেষ্টা করেন যা নিয়ে তিনি ইতিমধ্যে ১ থিষলনীকীয় চিঠিতে কথা বলেনছিলেন: বিশ্বাসীদের নিজের আয় অর্জন করার জন্য কাজ করা দরকার। তাদের এমন আদর্শ নাগরিক হওয়া দরকার যারা পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, স্বচালিত, যারা কারোর উপর নির্ভরশীল নয় বরং যাদের দানশীল হওয়ার ক্ষমতা আছে। উভয় ১ম ও ২য় থিষলনীকীয় চিঠিতে পৌল বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দেন তাদের মধ্যে থাকার সময়ে তিনি এবং তার দল কি ধরণের আদর্শ আচরণ করেছিলেন: প্রেরিত হিসাবে তারা লোকদের দান দাবি করতে পারতেন, কিন্তু তারা তা করেন নি। বরং তারা পরিচর্যার পাশাপাশি পরিশ্রম করে তাদের খরচ নিজেই বহন করেছিলেন যেন নতুন মণ্ডলীর উপর কোন চাপ সৃষ্টি না হয়। প্রেরিতরা যথেষ্ট কষ্ট করেছিল, পৌল বলেন যে তারা “আমরা অলস ভাবে চলি নি, কিম্বা দাম না দিয়ে কারও খাবার খাই নি। আমরা দিনরাত পরিশ্রম আর কষ্ট করেছি” (২ থিষ ৩:৭-৮)।
যদিও প্রেরিতরা পরিশ্রমের আদর্শ দেখিয়েছিলেন, যদিও পৌল ১ থিষলনীকীয় চিঠিতে তাদের এই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং যদিও থিমথীয় এই বিষয়ে অবশ্যই আরো উৎসাহ করেছিলেন তবুও থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা নিজের আয় অর্জন করতে রাজি না। এরজন্য পৌল ২ থিষলনীকীয় চিঠিতে আরো কঠোর ভাষা ব্যবহার করে তদের কাজ করতে সরাসরি আদেশ দেন (২ থিষ ৩:৬)। যারা আদর্শ দেখা, শিক্ষা ও উৎসাহ পাওয়া (১ থিষ), আদেশ ও সাবধানবাণী পাওয়ার পরেও (২ থিষ ৩:৬,১৫) কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করে, পৌল তাদেরকে মণ্ডলীতে বিশ্বাসীদের সহভাগিতা থেকে বের করতে বলেন (২ থিষ ৩:৬,১৪) – সেই আশায় যে তারা বুঝতে পারবে যে বিষয়টি আবশ্যক এবং লজ্জা পেয়ে তাদের ব্যবহার পরিবর্তন করবে। পৌল তাদের শাস্তি দিতে না স্থায়ীভাবে বের করতে চান না, বরং তিনি চান যেন তারা অনুতপ্ত হয় এবং মণ্ডলী তাদে পুনরায় গ্রহণ করে।
পৌল এই বিষয়ে কঠোর কারণ তিনি ভাল জানেন যে অলসতা লোকদেরকে নানা ক্ষেত্রে ক্ষতি করবে:
- কাজ না করা মানে সময়, শ্রম, সংস্থান ও দক্ষতার খারাপ ব্যবহার বা ধনাধক্ষ্য না হওয়া।
- কাজ না করা মানে অনুপযুক্ত ব্যবহারে প্রলোভিত হওয়া (“অন্যের ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত থাকা”, ২ থিষ ৩:১১)।
- কাজ না করা মানে অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া যা দ্বারা আপোষ করার প্রলোভান বাড়ে (১ থিষ ৪:১২)।
- কাজ না করা মানে দায়িত্বহীন হওয়া যা দ্বারা পরিবারে নানা ধরণের সমস্যা হয়।
- কাজ না করা মানে যে বিশ্বাসীর অন্যদের সাহায্য, আশীর্বাদ বা দান করার ক্ষমতা নেই, তিনি সমাজে একটি গঠনকারী নাগরিক হতে সক্ষম নয়।
- কাজ না করা মানে নিজের সম্ভাবনা বা আহ্বান পূর্ণ না করা যা দ্বারা ঈশ্বর, অন্য মানুষ ও বিশ্বাসী নিজেই বঞ্চিত হয়ে যায়।
যে বিশ্বাসী কাজ করেন না সে এখনও বুঝতে পারে নি ঈশ্বর তার উপর, তার দান-দক্ষতার উপর ও তার সময়ের উপর কত মূল্য দিয়েছেন। অলস হওয়া মানে মানুষ হিসাবে নিজের মূল্য না বুঝা, নিজের শ্রমের মূল্য না বুঝা এবং নিজের আহ্বান না বুঝা। পরিশ্রম, বিশ্বস্ততা ও ধৈর্য ছাড়া কোন আহ্বান পূর্ণ হয় না। পৌল চান যেন থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা বৃদ্ধ পায়, নিজেকে কাজে লাগায় এবং এভাবে উন্নত, শক্তিশালী ও ফলবান হয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।