২ যোহন চিঠির লেখক “বুড়ো নেতা” বা “প্রাচীন” হিসাবে নিজের পরিচয় দেন (২ যোহন ১)। তিনি অধিকারের সঙ্গে কথা বলেন। হতে পারে সিবদিয়ের ছেলে যোহন এই চিঠির লেখক, বারো শিষ্যদের মধ্যে শেষ শিষ্য যিনি তখনও জীবিত এবং অনেক বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। মণ্ডলীর ঐতিহ্য সে যোহনকে ২ যোহন চিঠির লেখক হিসাবে চিহ্নিত করে। ২ যোহন চিঠির প্রধান বিষয়ের ও ভাষার ক্ষেত্রে যোহনের অন্যান্য লেখাগুলির সাথে মিল আছে, যেমন যোহন লিখিত সুখবর, প্রকাশিত বাক্য এবং ১ ও ৩ যোহন।
মণ্ডলীর ঐতিহ্য অনুসারে যোহন ৭০ খ্রীষ্টাব্দে যিরূশালেমের ধ্বংসের পরে এশিয়া মাইনর প্রদেশে (আজকের তুর্কী দেশে) এশিয়ার সদর থানা ইফিষ শহরে বাস করেন। তিনি সেখানে ৯৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তার জীবনের শেষ অংশ কাটান। তিনি বারো শিষ্যদের মধ্যে শেষ জীবিত প্রেরিত হিসাবে অবশ্যই মণ্ডলীর জন্য স্তম্ভ ও নোঙ্গর ছিলেন। জীবিত চোখের সাক্ষী হিসাবে তার অনেক অধিকার ছিল, যদিও তিনি নিজেকে শুধুমাত্র “বুড়ো নেতা” বলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করেন (২ যোহন ১২) এবং হতে পারে সারা এশিয়া মাইনর প্রদেশে মণ্ডলীর স্থাপন ও বৃদ্ধি কাজে দেখাশোনা করেন।
তিনি একটি মিশুক চিঠি লেখেন “ঈশ্বর যাকে বেছে নিয়েছেন সেই মহিলা ও তার সন্তানদের কাছে” (২ যোহন ১)। হতে পারে তা রূপক অর্থে একটি নির্দিষ্ট মণ্ডলী বুঝায় (২ যোহন ১,১৩)। যোহন মণ্ডলীকে ভাল চিনে এবং তার খেয়াল আছে এইমাত্র কি ঘটনা ঘটেছিল। ভবিষ্যতে যেন এই ধরণের ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য তিনি তাদের এই চিঠি লেখেন।
এই মণ্ডলী না বুঝে একজন ভ্রান্ত শিক্ষক গ্রহণ করেছিল যে তাদের কাছে বেড়াতে এসেছিল। যোহন মণ্ডলীকে তাদের অতিথিপরায়ণ মনোভাবের জন্য প্রশংসা করেন। কিন্তু কি ধরণের ব্যক্তিদের তারা গ্রহণ করছে, এই বিষয়ে তিনি তাদের সাবধান হতে বলেন। যোহন মণ্ডলীকে বুঝিয়ে দেন একজন শিক্ষকের গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন কি শিক্ষা ধরে রাখা আবশ্যক: “যীশু খ্রীষ্ট যে মানুষ হয়ে এসেছিলেন” (২ যোহন ৭)। যোহনের এই কথা থেকে বুঝা যায় যে সে ভ্রান্ত শিক্ষক ছিল নস্টিক ধরণের। নস্টিসিসম দাবি করে যে ঈশ্বর, যিনি আত্মা, কখনও নিজেকে বস্তু জগতে বা মানুষের দেহে ঢুকে দূষিত করেন না। আরো দাবি করত যে খ্রীষ্ট মানুষ হিসাবে জন্ম গ্রহণ করেন নি বরং তিনি একটি আত্মা ছিলেন যা মানুষ হিসাবে দেখা দিতেন। অথবা যে খ্রীষ্ট-আত্মা বাপ্তিস্মের সময়ে যীশু নামে একজন মানুষের উপরে এসেছিলেন। এর বিরুদ্ধে যোহন বলেন যে যদি একজন অস্বীকার করে যে যীশু মানুষ ছিলেন তবে তার ঈশ্বরও নেই: “যারা খ্রীষ্টের দেওয়া শিক্ষার সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং সেই শিক্ষায় স্থির থাকে না তাদের অন্তরে ঈশ্বর নেই” (২ যোহন ৯)।
যোহন গুরুত্বের সঙ্গে বলেন যে বিশ্বাসীদের সত্য জানতে হবে, কিন্তু তাদের সত্য ধরে রাখতে ও সত্যের পথে চলতেও হবে। ভ্রান্ত শিক্ষা হল বিপজ্জনক এবং তা কোন মতে থাকতে দেওয়া যাবে না। এইজন্য তিনি এই আদেশ দেন: “যদি কেউ তোমাদের কাছে এসে সেই শিক্ষা না দেয় তবে তোমাদের বাড়ীতে তাকে গ্রহণ কোরো না এবং শুভেচ্ছাও জানায়ো না” (২ যোহন ১০-১১)। যোহন আরো বলেন যে সত্যের পথে চলা মানে অন্যদের প্রতি ভালবাসা দেখানো: যারা সত্যকে গ্রহণ করে ও সত্যের পথে চলে তারা ভালবাসার একটি জীবন গড়ে। তারা সত্য জানবে ও সত্যে থাকবে।
চিঠির লেখক
চিঠির লেখক নিজেকে “বুড়ো নেতা” বলে বর্ণনা করে (২ যোহন ১) এবং তিনি চিঠিতে আসলে অধিকারের ও বাবার উদারতার সঙ্গে কথা বলেন। মণ্ডলীর আদিপিতাদের লেখাগুলিতে চিঠির লেখক হিসাবে সিবদিয়ের ছেলে ও যাকোবের ভাই যোহন, বারো প্রেরিতদের মধ্যে একজন চিহ্নিত রাখা হয় যা এই বর্ণনার সাথে ভাল মিলে। মণ্ডলীর ইতিহাস অনুসারে ৭০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে যোহন ছাড়া সব প্রেরিতরা শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন, শুধুমাত্র যোহন বেঁচে আছেন। যখন ৭০ খ্রীষ্টাব্দে রোমীয়রা যিরূশালেমকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে যোহন যিরূশালেম ছেড়ে ইফিষ শহরে বাস করতে লাগলেন যা এশিয়া মাইনর প্রদেশে এশিয়া জেলার সদর থানা ও আজকের তুর্কী দেশে অবস্থিত। ইফিষ মণ্ডলীতে প্রায় ৫২ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত এবং ৫৩-৫৬ খ্রীষ্টাব্দে পৌল ইফিষ তার পরিচর্যার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করেন। পরে কিছু ক্ষণের জন্য তীমথিয় ইফিষ মণ্ডলীর দায়িত্ব নেন এবং ৭০-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যোহন ইফিষ শহকরে বাস করে তা তার পরিচর্যার কেন্দ্র করেন। বারো প্রেরিতদের মধ্যে শুধুমাত্র যোহন বেঁচে আছেন বলে যদিও যীশুর চোখের শেষ সাক্ষী হিসাবে যোহন মণ্ডলীর জন্য অবশ্যই স্তম্ভ ও নোঙ্গরের মত একজন অধিকারগত নেতা তবুও তিনি নিজেকে নম্রভাবে “বুড়ো নেতা” বলেন। তিনি এলাকায় ভ্রমণ করেন (২ যোহন ১২, ৩ যোহন ১৪) এবং হতে পারে তিনি সারা এশিয়া মাইনর প্রদেশের অস্থিত মণ্ডলীগুলি ও নতুন মণ্ডলীর স্থাপন করার কাজের দেখাশোনাকারী।
মণ্ডলীর আদিপিতাদের লেখার পাশাপাশে আর কি প্রমাণ আছে যে যোহন ২ যোহন নামে চিঠির লেখক? আসলে এই চিঠির এবং যোহনের অন্যান্য লেখাগুলির মধ্যে (যোহন সুসমাচার, ১ ও ৩ যোহন) অনেক মিল আছে – উভয় বিষয় এবং শব্দের ব্যবহারের মিল:
বিষয় বা শব্দ | যোহন সুসমাচার | ১ যোহন | ২ যোহন | ৩ যোহন |
সত্য | যো 1:14, যো 8:32, যো 14:6; যো 17:8,17-19 | 1 যো 1:6-8 2:27, 3:18, 4:1-6 | 2 যো 1, 3, 4 | 3 যো 3, 4, 8, 12 |
সত্যের দরুন তোমাদের ভালবাসি | 2 যো 1 | 3 যো 1 | ||
ছেলেমেয়ে সত্যের পথে চলছে | 2 যো 4 | 3 যো 4 | ||
যীশু, স্বর্গস্থ পিতার (শুধুমাত্র) পুত্র | যো 1:14, 1:34 | 1 যো 2:22-25 | 2 যো 3 | |
নতুন আদেশ, তারই আদেশ, নতুন আদেশ নয় | যো 13:3-4, 15:17 | 1 যো 2:7, 3:23 | 2 যো 5 | |
পরস্পরকে ভালবাস! | যো 13:34 | 1 যো 3:11 | 2 যো 5 | |
প্রথম থেকে / শুরুতে / প্রথমেই | যো 1:1-2 | 1 যো 1:1, 2:7 | 2 যো 5 | |
খ্রীষ্টে বা তাঁর শিক্ষায় স্থির থাকা | যো 15:4-10 | 1 যো 2:6, 3:6 | 2 যো 9 | |
আনন্দ পূর্ণ হবে | যো 16:24 | 1 যো 1:4 | 2 যো 4,12 | |
ছলনা, প্রতারণা, মিথ্যা | 1 যো 2:26 | 2 যো 7 | ||
খ্রীষ্টের শত্রু, ছলনাকারী, খ্রীষ্টারী | 1 যো 2:18, 22 | 2 যো 7 | ||
অতিথি পারয়ণ হওয়া | যো 2:1-11 | 2 যো 10-11 | 3 যো 5-8,10 | |
শেষ সুভেচ্ছা | 2 যো 12-13 | 3 যো 13-1 |
চিঠির পাঠকরা
যোহন “ঈশ্বর যাকে বেছে নিয়েছেন সেই মহিলা ও তার সন্তানদের কাছে” একটি স্নেহশীল চিঠি লেখেন (২ যোহন ১)। তার চিঠির শেষে (২ যোহন ১৩) তিনি শুভেচ্ছা হিসাবে বলেন “ঈশ্বরের বাছাই করা তোমার বোনের ছেলেমেয়েরা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে”। উভয় চিঠির শুরুতে এবং চিঠির শেষে আমরা একটি ‘মহিলা ও তার ছেলেমেয়ে’ পাই বলে অনেকে মনে করে যে “মহিলা” বলে যোহন একটি নির্দিষ্ট মহিলা বুঝান না বরং তিনি তা একটি নির্দিষ্ট মণ্ডলী বুঝানোর জন্য রূপক অর্থ ব্যবহার করেন। নতুন নিয়মে আমরা ২৩টা পদ পাই যেখানে সাধারণ বিশ্বাসীদের “ঈশ্বর যাদের বেছে নিয়েছেন” বা “বাছাই করা লোক” বলা হয়, যেমন রোমীয় ৮:৩৩ পদে “ঈশ্বর যাদের বেছে নিয়েছেন কে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে? ঈশ্বর নিজেই তো তাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করেছেন”। তাই সম্ভাবনা বেশি যে যোহন একটি নির্দিষ্ট মণ্ডলীর কাছে লেখেন এবং তিনি ইফিষ শহরে বাস করেন বলে চিঠির শেষে তাদের ইফিষীয় মণ্ডলীর সুভেচ্ছা পাঠাছেন।
চিঠি থেকে বুঝা যায় যে যোহন পাঠকদের ভালভাবে চেনেন এবং তিনি তাও জানেন যে কিছু দিন আগে মণ্ডলীটির কাছে একজন ভ্রান্ত শিক্ষক বেড়াতে এসেছিল। একারণেই যোহন তার চিঠি লেখেন। তিনি নিশ্চিত করতে চান যে বিশ্বাসীরা টিকে আছে এবং তিনি প্রতিরোধ করতে চান যে ভবিষ্যতে তারা একই সংকটে আর না পড়ে।
যোহন চিঠিটি ঠিক কোন সালে লিখেছিলেন তা নিশ্চিত বলা যায় না কিন্তু আমরা জানি যে তা ৭০-৯৮ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পড়ে। তিনি ঠিক কোন মণ্ডলীর কাছে চিঠিটি লেখেন তাও নিশ্চিত বলা যায় না, হতে পারে মণ্ডলী এশিয়া মাইনর প্রদেশে অস্থিত, সে এলাকা যার মণ্ডলীগুলি যোহন দেখালোনা করছেন। মণ্ডলীটির স্থাপনের গল্পও নিশ্চিত জানা যায় না। আমরা সাধারণভাবে বলতে পারি যে পৌল এশিয়া মাইনরের গালাতীয়া এলাকায় ৪৮ খ্রীষ্টাব্দ থেকে সুসমাচার প্রচার ও বিভিন্ন মণ্ডলী স্থাপন করেছিলেন। ইফিষ শহরে কম পক্ষে ৫২ খ্রীষ্টাব্দ থেকে মণ্ডলী উপস্থিত এবং যে পৌল তা ৫৩-৫৬ খ্রীষ্টাব্দে তার পরিচর্যার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করে। সে সময় উভয় প্রেরিতদের দ্বারা (যেমন পৌল, আকিলা, প্রিষ্কিল্লা, হতে পারে পিতর) এবং স্থানীয় ধর্মান্তিরতদের দ্বারা বিভিন্ন মণ্ডলীগুলি স্থাপিত হয়, যেমন ইপাফ্রা (কল ১:৭)। এই এলাকার মণ্ডলীগুলি পৌলের কাছ থেকে বেশ কিছু চিঠি পায় (যেমন ইফিষীয়, কলসীয়, ফিলীমন, ১ তীমথিয়, হতে পারে ২ তীমথিয়), পিতর থেকে চিঠি পায় (যেমন ১ পিতর ও হতে পারে ২ পিতর) এবং এখন যোহন থেকে চিঠি পায় (যোহন সুসমাচার, প্রকাশিত বাক্য, ১, ২, ৩ যোহন)।
নস্টিসিস্ম – একটি ভ্রান্ত শিক্ষা যা দ্বারা মণ্ডলী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন
চিঠি থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে একজন ভ্রান্ত শিক্ষক মণ্ডলীর কাছে এসেছিল এবং সেখানে প্রভাব ফেলেছিল (২ যোহন ৭-১১)। কি ধরণের ভ্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। যোহন বলেন “জগতে এমন অনেক লোক বের হয়েছে যারা ছলনা করে বেড়ায়। যীশু খ্রীষ্ট যে মানুষ হয়ে এসেছিলেন তারা তা স্বীকার করে না। এই রকম লোকেরাই ছলনাকারী ও খ্রীষ্টের শত্রু” (২ যোহন ৭)। যীশু যে মানুষ হয়ে আসেন নি, তা ছিল সে সময় নস্টিসিসম নামে একটি ভ্রান্ত শিক্ষার একটি মূল চিন্তা:
নস্টিসিসমের (gnosticism) বর্ণনা
নস্টিসিসম হল একটি মিশানো ভ্রান্ত শিক্ষা যা কিছু শতাব্দী ধরে মণ্ডলীকে খুব হয়রানি করছিল। প্রেরিত যোহন এবং মণ্ডলীর বেশ কয়েকজন আদিপিতাদের অধিকাংশ লেখাগুলো ছিল নস্টিসিসমের বিরুদ্ধে লেখা।
গ্রীক শব্দ ‘নসিস’ (gnosis) থেকে ‘নস্টিসিসম’ শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে। নস্টিসিসমের অনুসরণকারীদের বলা হত ‘নস্টিক’ (gnostic)। ‘নসিস’ শব্দের অর্থ হল ‘জ্ঞান’। যদিও নস্টিকদের মধ্যে বিভিন্ন দল ছিল, তাদের সবার এই ক্ষেত্রে মিল ছিল যে তারা জ্ঞানের উপরে খুব গুরুত্ব দিত। তারা ‘জ্ঞান’ বললে বুঝত: ‘গুপ্ত আত্মিক জ্ঞান, যা দ্বারা পরিত্রাণ পাওয়া যায়’।
নস্টিসিসম খুব গুরুত্বের সঙ্গে দাবি করত যে বস্তু জগত ও আত্মিক জগত সম্পূর্ণ আলাদা অর্থাৎ – বস্তু জগত মন্দ এবং আত্মিক জগত ভাল। তাই মানুষ বাস করে একটি দ্বিখন্ডিত বাস্তবতায়।
নস্টিসিসম আবার দাবি করত যে ‘সর্বোচ্চ কর্তা’ বলে কেউ আছেন যিনি সম্পূর্ণ ভাল এবং ‘আত্মা মাত্র’ – তাই খাঁটি আত্মা হিসাবে তিনি এই মন্দ বস্তু জগত থেকে এত দূরে ও এত আলাদা যে তার বস্তু জগতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে কোন জ্ঞানও নেই। এই কর্তার কোন ব্যক্তিত্ব নেই, তাকে জানা যায় না, চেনাও যায় না। নস্টিক চিন্তায় ‘জানা’ মানে ‘দমন করা’। সর্বোচ্চ কর্তাকে কেউ দমন করতে পারে না বলে কেউ তাকে জানতেও সক্ষম হয় না।
কিন্তু তা যদি হয়, এই বস্তু জগত কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? মন্দ কিভাবে তৈরি হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে নস্টিসিসম একটি খুব জটিল ব্যাখ্যা দেয় – সর্বোচ্চ কর্তা থেকে আত্মিক অগ্নিকণা বা রশ্মির মত কিছু বের হতে থাকে। নস্টিকেরা এই অগ্নিকণাগুলো বা রশ্মিগুলোকে ‘এ্যায়োন’ (aeon) বলে। সব এ্যায়োনদের একসাথে ‘প্লেরোমা’ (pleroma) বলা হত, নস্টিকেরা তা সর্বোচ্চ কর্তার পূর্ণতা হিসাবে মনে করত। নস্টিক চিন্তা অনুসারে এই অগ্নিকণাগুলো ভাল, কিন্তু সর্বোচ্চ কর্তার মত বেশি ভাল নয়, অর্থাৎ খুব খাঁটি রশ্মিগুলোর পাশাপাশি তুলনামূলক কম খাঁটি ধরণের রশ্মিও আছে, এমন কি কিছু মন্দ রশ্মিগুলোও পাওয়া যেত।
নস্টিসিসম বলে যে এই মন্দ রশ্মিগুলোর মধ্যে একজনই সর্বোচ্চ কর্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে দূর্ঘটনায় বস্তু জগত সৃষ্টি করে ফেলেছিল। কিছু নস্টিক শিক্ষক বলত যে বাইবেলের সৃষ্টিকর্তাই সেই মন্দ রশ্মি বা ‘এ্যায়োন’। তাই নস্টিকেরা পুরাতন নিয়ম খুব নিচু চোখে দেখত যদিও তারা নতুন নিয়ম থেকে বিভিন্ন চিন্তা গ্রহণ করত।
নস্টিসিসম আরো বলত যে প্লেরোমার মধ্য থেকে কিছু রশ্মিগুলো মন্দ বস্তুর মধ্যে আটকিয়ে পড়েছিল, এমন কি কিছু মানুষের দেহের মধ্যে আটকিয়ে পড়েছিল। তাই নস্টিসিসম বলে যে তিন ধরণের মানুষ আছে। তা হল:
- নস্টিক মানুষ (gnostic) এদের মধ্যে সর্বোচ্চ কর্তার একটি রশ্মি আছে। তারা ‘আত্মিক’ বা ‘আলোকিত’ এবং তাদের আশা আছে যে – জগতে নানা আত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করলে মৃত্যুর সময় তারা পুনরায় জন্ম থেকে মুক্ত হয়ে সর্বোচ্চ কর্তার সঙ্গে আবার এক হতে পারবে।
- সাইকিক মানুষ (psychic) এরা কম উন্নত মানুষ, এদের মধ্যে সর্বোচ্চ কর্তার রশ্মি থাকতেও পারে। এদের আলোকিত হওয়ার আশা আছে কিন্তু নিশ্চয়তা নেই। নস্টিকেরা মনে করত যে খ্রিষ্টানরা সাইকিক দলে পড়ে।
- হাইকিক মানুষ (hychic) এরা বস্তু মানুষ মাত্র, এদের মধ্যে সর্বোচ্চ কর্তার কোন রশ্মি নেই। এরা আলোকিত হতে পারে না। তাই এরা পরিত্রাণ পেতে পারে না বরং ধ্বংসে সমর্পিত।
নস্টিসিসম খ্রিষ্টান ধর্ম থেকে এই চিন্তা গ্রহণ করল যে – সেই সর্বোচ্চ কর্তা একজন উদ্ধারকর্তা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যার মধ্য দিয়ে সাইকিক বা নস্টিক মানুষ প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়। যাদের মধ্যে একটি ঐশ্বিক রশ্মি আছে, তারা জ্ঞান ও আত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করার মধ্য দিয়ে আলোকিত হতে সক্ষম হবে এবং তাদের দেহে আটকানো সে ঐশ্বিক রশ্মি মৃত্যুর সময়ে মুক্ত হয়ে সর্বোচ্চ কর্তার সাথে আবার এক হবে।
তাই নস্টিক চিন্তা অনুসারে পাপ-স্বভাব বা খারাপ আচরণ মানুষের প্রধান সমস্যা নয় বরং মানুষের সমস্যা হল ‘দেহ’ বা ‘বস্তু জগত’। নস্টিসিসম অনুসারে ‘পরিত্রাণ’ মানে না ‘যীশু দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার’ বরং ‘পরিত্রাণ’ মানে হল – মানুষ জ্ঞান লাভের মধ্য দিয়ে তার দেহে সে ঐশ্বিক রশ্মি আলোকিত করতে সক্ষম। এভাবে সে ‘আলোকিত’ বা ‘পরিত্রাণ প্রাপ্ত’ হয়ে যায়।
নস্টিসিসম অনুসারে মানুষের কি প্রয়োজন? মানুষের প্রয়োজন জ্ঞান লাভের মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ প্রকাশ পাওয়া, আলোকিত হওয়া ও আত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করা। কে তা পেতে সক্ষম হবে? শুধুমাত্র বিশেষ লোক তা পেতে সক্ষম হবে, সবাই না। তাই নস্টিসিসম ছিল ‘বিশেষ লোকদের গুপ্ত দল’। নস্টিকেরা অন্য মানুষদের আশাহীন বলে বাদ দিত। নস্টিকদের মধ্যে বিভিন্ন দল বা আলোকিত হওয়ার বিভিন্ন স্তর থাকত। ফলে নস্টিসিসমে অনেক উঁচু-নিচু ভাব ও যথেষ্ট অহংকার থাকত।
নস্টিকেরা দাবি করত – যারা আলোকিত স্তরে পৌঁছায় তারা পাপ দ্বারা আর আক্রান্ত নয় বা নিজেকে আর দোষী করতে সক্ষম হয় না। যদি পরিত্রাণ জ্ঞান, আত্মিক অভিজ্ঞতা বা আলোকিত হওয়ার উপর নির্ভর করে তবে তা নৈতিক ব্যবহার ও আচরণের উপর নির্ভর করে না। ফলে নস্টিকেরা নৈতিকতায় বেশি গুরুত্ব দিত না। নস্টিকেরা দাবি করত যে মানুষের দেহ মন্দ এবং মানুষের দেহ ও তার আত্মা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। তাই একজন মানুষের আত্মা একবার আলোকিত হলে তবে সে দেহ দিয়ে কি করে, তাতে কিছু যায় আসে না।
এই দ্বিখন্ডিত চিন্তা থেকে দুই ধরণের শিক্ষা তৈরি হল – একদিকে সন্ন্যাসী চিন্তা (দেহকে দমন করে ও কষ্ট দিয়ে মানুষ বস্তুর উপরে জয়ী হয়) অথবা অন্য দিকে উদারপন্থী চিন্তা (দেহ আত্মাকে দূষিত করতে পারে না, তাই দেহ নিয়ে যা চাই তাই করা যায়)।
যীশু সম্বন্ধে নস্টিসিসমের ব্যাখ্যা
নস্টিসিসম বিশ্বাস করতে পারে না যে ঈশ্বর মানুষ হলেন, কারণ পবিত্র আত্মা বা কোন সর্বোচ্চ কর্তা নিজেকে বস্তু শরীর দিয়ে দূষিত করবে না। তাহলে নস্টিকেরা যীশুর গল্প কিভাবে ব্যাখ্যা করত?
কিছু নস্টিকেরা বলত – যীশু ছিলেন ‘আত্মা মাত্র’ অর্থাৎ এমন একটি আত্মা যিনি নিজেকে ‘মানুষের মত’ প্রকাশ করতেন কিন্তু আসলে তাঁকে স্পর্শ করা যেত না বরং মাটির উপর হাঁটলেও তাঁর পায়ের ছাপ পাওয়া যেত না।
অন্য কিছু নস্টিকেরা দাবি করত – যীশু পবিত্র আত্মা দিয়ে জন্ম নেন নি বরং তিনি মরিয়ম ও যোষেফের সাধারণ সন্তান ছিলেন যদিও তিনি অন্য লোকদের চেয়ে একজন ধার্মিক ও প্রজ্ঞাপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তার বাপ্তিস্মের সময়ে তিনি ‘খ্রীষ্ট’ নামক আত্মা পান। অর্থাৎ খ্রীষ্ট-আত্মা পাওয়া যীশু ছিলেন প্রথম নস্টিক। তিনি এই মন্দ জগতের নন বলে প্রলোভিতও হন না, তিনি আঘাত বা ব্যাথা পান না, তিনি ছিলেন এমন একজন আত্মিক ব্যক্তি যাকে বস্তু জগত স্পর্শ করতে সক্ষম নয়। এই চিন্তাকে ‘ডোসিটিসিসম’ (doceticism) বলা হয়।
যীশুকে ক্রুশে দেওয়ার আগে খ্রীষ্ট-আত্মা তাকে ছেড়ে স্বর্গে চলে যান কারণ একজন আত্মাকে কষ্ট বা লজ্জা দেওয়া সম্ভব না। এই জগত তাঁকে দূষিত করতে পারে না, মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। যীশুর শারীরিক যন্ত্রণা ও ক্রুশে মারা যাওয়ার আগেই খ্রীষ্ট-আত্মা তাকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল কারণ কোন আত্মা যন্ত্রণা বা মৃত্যু দিয়ে দূষিত হতে পারে না।
নস্টিসিসম বাইবেলীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে
নস্টিসিসম হল একটি বিপজ্জনক ভ্রান্ত শিক্ষা যা মানুষের পাপ সমস্যা মনে করে না। নস্টিসিসমে পাপ স্বীকার, অনুতাপ, ক্ষমা চাওয়া ও জীবনকে পরিবর্তন করার কোন দাবি নেই। পবিত্র জীবন-যাপন, নৈতিক ব্যবহার, স্বার্থহীনতা, সেবা ও ভালবাসার গুরুত্ব নেই। নস্টিকেরা ভাল আচরণ ও চরিত্রের অনুসন্ধানী নয় বরং জ্ঞান, প্রকাশ ও আত্মিক অভিজ্ঞতার অনুসন্ধানী।
নস্টিসিসম অধিকাংশ মানুষকে নীচু চোখে দেখে, নিজেকে বিশেষ মনে করে, পার্থক্য করে ও অন্যদের বাদ দেয়। তাই নস্টিসিসম ‘আলোকিতদের’ অহংকার, স্বার্থপরতা ও অন্যদের নীচু চোখে দেখা উৎসাহিত করে, ‘সাইকিকদের’ (বিশ্বাসীদের) নিজের পরিত্রাণ নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং ‘হাইকিকদের’ (বাকি সব লোকদের) জন্য কোন আশা দেখায় না। তা হল সুসমাচারের ঠিক বিপরীত। সুসমাচার সব জাতিদের জন্য যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা আশার বাণী দেয়।
নস্টিসিসম মানুষের সিদ্ধান্ত, সুখবর শুনে সাড়া, মানুষের হৃদয় ও মনোভাব একটাতেও গুরুত্ব দেয় না। বরং কার মধ্যে ঐশ্বিক রশ্মি থাকে, তা নিয়ে ব্যস্ত। ফলে অহংকার, মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা ও নিজের জ্ঞান নিয়ে ব্যস্ত থাকার একটি মনোভাব উৎসাহিত করে। নস্টিসিসম অধিকাংশ লোকদের ‘আলো ছাড়া’, এমন কি ‘আশা ছাড়া’ মনে করে। তাই নস্টিসিসম পরিত্রাণ ও অনন্ত জীবন নিয়ে নিশ্চয়তা নষ্ট করে (কলসীয় পুস্তক দেখুন)।
জ্ঞান, প্রকাশ, বিশেষ আত্মিক অভিজ্ঞতা, আলোকিত হওয়ার অনুসন্ধান, গুপ্ত জ্ঞান, নিজেকে আলাদা মনে করা, তা সব লোকদের প্রতারণার ঝুঁকিতে, এমন কি অনৈতিকতার ঝুঁকিতেও ফেলে।
নস্টিসিসম বিশ্বাস করে না যে – যীশু ঈশ্বর, যিনি মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে এসেছেন (কেন একজন খাঁটি আত্মা এই মন্দ বস্তু জগতে নামবে?), যীশু পুনরুত্থিত হয়েছেন (কেন একটি খাঁটি আত্মা নতুন দেহ চাইবে?), যীশুর দ্বিতীয় আগমনে সব সৃষ্টির পুনরুদ্ধার ঘটবে (কেন ঈশ্বর একটি বস্তু জগত পুনরায় স্থাপন করবেন?)।
মণ্ডলীর কাছে যোহনের কথা
যোহন এমন একটি মণ্ডলীর কাছে চিঠি লিখছেন যারা অজান্তে একজন ভ্রান্ত শিক্ষককে তাদের সঙ্গে থাকতে এবং প্রভাব ফেলার সুযোগ দিয়েছিল। যোহন তাদের তাদের অতিথিপরায়নতার জন্য ও ভ্রাম্যমান শিক্ষকদের প্রতি আগ্রহের জন্য প্রশংসা করেন। কিন্তু তিনি তাদের সতর্ক করেন যে শিক্ষকদের গ্রহণ করার ক্ষেত্রের সাবধাণ হওয়া আবশ্যক। তিনি তাদের দেখান যে একজন শিক্ষকের সর্বনিম্ন কি বিষয় ধরে রেখে শিক্ষা দিতে হয়: “যীশু খ্রীষ্ট যে মানুষ হয়ে এসেছিলেন” তা তার অবশ্যই স্বীকার করতে হবে (২ যোহন ৭)। নস্টিসিসম তো ঠিক তা-ই অস্বীকার করে: যীশু সম্পূর্ণভাবে মানুষ হন নি, তিনি আত্মা হিসাবে দেহ নিয়ে এই জগতে আসেন নি।
যোহন সাবধাণবাণী দেন যে এই ধরণের শিক্ষক হল “ছলনাকারী ও খ্রীষ্টের শত্রু” (২ যোহন ৭) এবং তারা মন্দ কাজ করে (২ যোহন ১১)। তিনি আরো বলেন যে “যারা খ্রীষ্টের দেওয়া শিক্ষার সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং সেই শিক্ষায় স্থির থাকে না তাদের অন্তরে ঈশ্বর নেই। কিন্তু যে সেই শিক্ষায় স্থির থাকে তার অন্তরে পিতা এবং পুত্র দু’জনেই আছেন” (২ যোগন ৯)। এর নস্টিকদের শিক্ষা একদম অগ্রাহ্য করতে হবে।
যোহন তাদের সতর্ক করেন: “যদি কেউ তোমাদের কাছে এসে সেই শিক্ষা না দেয় তবে তোমাদের বাড়ীতে তাকে গ্রহণ কোরো না এবং শুভেচ্ছাও জানায়ো না। যে তাকে শুভেচ্ছা জানায় সে তার মন্দ কাজেরও ভাগ নেয়” (২ যোহন ১০-১১)। তাই একজন ভ্রান্ত শিক্ষককে সুযোগ দেওয়াই মানে সত্যের বিরুদ্ধে যাওয়া।
এই ভ্রান্ত শিক্ষক কতদিন মণ্ডলীর সঙ্গে ছিল? আমরা জানি নি সে কত দিন সেখানে কেটেছিল বা কতদূর প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু আমরা জানি যে যোহন একটি চিঠি লিখতে প্রয়োজন মনে করেন। তিনি ২ যোহন ৪ পদে বলেন যে “তোমার কয়েকটি ছেলেমেয়ে ঈশ্বরের সত্যের পথে চলছে দেখে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি”। তাই বুঝা যায় যে কিছু বিশ্বাসীরা এই লোকের শিক্ষাটিকে ভ্রান্ত হিসাবে অগ্রাহ্য করেছিল, কিন্তু সবাই তা-ই করেছেন, তা নয়। কম পক্ষে কিছু লোকেরা এই ভ্রান্ত শিক্ষকের প্রভাবে পড়ে সত্যকে ছেড়ে মিথ্যা গ্রহণ করেছিল। এর অর্থ এই নয় যে তারা পরিত্রাণ হারিয়েছে কিন্তু তারা ভুল পথে আগাছে এবং তাদের পরিবর্তিত হতেই হবে।
২ যোহন ১০ পদ দেখলে বুঝা যায় যে ভ্রান্ত শিক্ষক আর উপস্থিত নয়, কিন্তু তারপরেও যোহন প্রতিরোধ করতে চান যেন তারা ভবিষ্যতে একই ফাঁদে আর না পড়ে। তা ছাড়া মণ্ডলীতে যারা এই শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল তাদের শোনা দরকার যে এই শিক্ষা ঈশ্বর থেকে নয় বরং আসলে ভ্রান্ত। “বুড়ে নেতা” ও যীশুর চোখের সাক্ষী হিসাবে যোহন অধিকারের সঙ্গে তাদের এই নিশ্চয়তা দেন।
যোহন তাদের আরো বলেন “আমি তোমাদের কাছে গিয়ে মুখোমুখি কথা বলবার আশা করি” (২ যোহন ১২)। কথাটি থেকে বুঝা যায় যে যোহন এই মণ্ডলী নিয়ে চিন্তিত এবং যে তিনি তাদের সঠিক পথে ফিরে আনতে সমর্পিত।
সত্যে চলতে থেকো!
মণ্ডলীর বিষয়ে তার আনন্দ প্রকাশ দ্বারা যোহন তাদের অনুপ্রেরণা দেন “পিতা আমাদের যে আদেশ দিয়েছেন সেই অনুসারেই তোমার কয়েকটি ছেলেমেয়ে ঈশ্বরের সত্যের পথে চলছে দেখে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি” (২ যোজন ৪)। তা ছাড়া সব বিশ্বাসীদের কথা উল্লেখ করে তিনি তাদের আরো উৎসাহ দেন “কেবল যে আমি তোমাদের ভালবাসি তা নয়, কিন্তু যারা ঈশ্বরের সত্য জানতে পেরেছে তারা সবাই তোমাদের ভালবাসে” (২ যোহন ১)। হতে পারে সে ভ্রান্ত শিক্ষক তাদের বলেছেন যে তারাই সে ‘বাদ পড়ে গেছে লোক’ এবং যে তাদের যথেষ্ট জ্ঞান নেই। যোহন বিপরীত কথা দাবি করেন: পৃথিবীতে সব খ্রিষ্টানরা জানে ও বিশ্বাসে ধরে রাখে যে যীশুই মানুষ হয়ে এসেছিলেন। ঐ ভ্রান্ত শিক্ষক তাদের অন্যদের থেকে বিছিন্ন রাখতে চেষ্টা করেছে যেন তারা আরো তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
যোহন গুরুত্বের সঙ্গে দাবি করেন যে বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের সত্যকে জানতে হয়, ধরে রাখতে হয় ও সত্যে চলতে হয়। এই ছোট চিঠিতে তিনি পাঁচ বার ‘সত্য’ উল্লেখ করেন এবং আর তিন বার সত্যের বিপরীত: ‘ছলনা’। ছলনা বা ভ্রান্ত শিক্ষা খুব বিপজ্জনক বিষয় বলে তা একেবারে নির্মূল করতে হবে।
তিনি আরো বলেন যে ঈশ্বরের সত্য একটি ভালবাসার জীবনে প্রকাশিত: যাদের অন্তরে সত্য আছে তারাই ঈশ্বরের আদেশ মত ভালবাসার পথে চলবে এবং এভাবে সত্যকে ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।